জামায়াত অনলাইন লাইব্রেরি
  • নীড়
  • সংক্ষিপ্ত পরিচিতি
  • বিভাগ ভিত্তিক
    • আল কুরআন
    • আল হাদিস
    • ফিকাহ
    • ঈমান
    • ইসলাম
    • পারিবারিক জীবন ও সামাজিক সম্পর্ক
    • আন্দোলন ও সংগঠন
    • সীরাত ও ইতিহাস
    • সীরাতে সাহাবা
    • মহিলাদের বিশেষ বই
    • রাজনীতি
    • অর্থনীতি
    • বিবিধ
  • রুকন সিলেবাস
    • রুকন সিলেবাস (স্বল্প শিক্ষিত)
    • রুকন সিলেবাস (শিক্ষিত)
  • কর্মী সিলেবাস
  • বাৎসরিক পাঠ্যসূচি
    • বাৎসরিক পাঠ্যসূচি (শিক্ষিত)
    • বাৎসরিক পাঠ্যসূচি (স্বল্প শিক্ষিত)
  • উচ্চতর অধ্যয়ন
  • অডিও বই
  • অন্যান্য
    • দারসুল কুরআন
    • দারসুল হাদিস
    • আলোচনা নোট
    • বইনোট
    • প্রবন্ধ
    • কবিতা
    • বুলেটিন
    • স্মারক
    • ম্যাগাজিন
    • এপস
    • রিপোর্ট বই
    • ছাত্রী সিলেবাস
কোন ফলাফল নেই
সকল ফলাফল দেখুন
  • নীড়
  • সংক্ষিপ্ত পরিচিতি
  • বিভাগ ভিত্তিক
    • আল কুরআন
    • আল হাদিস
    • ফিকাহ
    • ঈমান
    • ইসলাম
    • পারিবারিক জীবন ও সামাজিক সম্পর্ক
    • আন্দোলন ও সংগঠন
    • সীরাত ও ইতিহাস
    • সীরাতে সাহাবা
    • মহিলাদের বিশেষ বই
    • রাজনীতি
    • অর্থনীতি
    • বিবিধ
  • রুকন সিলেবাস
    • রুকন সিলেবাস (স্বল্প শিক্ষিত)
    • রুকন সিলেবাস (শিক্ষিত)
  • কর্মী সিলেবাস
  • বাৎসরিক পাঠ্যসূচি
    • বাৎসরিক পাঠ্যসূচি (শিক্ষিত)
    • বাৎসরিক পাঠ্যসূচি (স্বল্প শিক্ষিত)
  • উচ্চতর অধ্যয়ন
  • অডিও বই
  • অন্যান্য
    • দারসুল কুরআন
    • দারসুল হাদিস
    • আলোচনা নোট
    • বইনোট
    • প্রবন্ধ
    • কবিতা
    • বুলেটিন
    • স্মারক
    • ম্যাগাজিন
    • এপস
    • রিপোর্ট বই
    • ছাত্রী সিলেবাস
জামায়াত অনলাইন লাইব্রেরি

ইসলামী রাষ্ট্র ব্যবস্থা

অন্তর্গতঃ উচ্চতর অধ্যয়ন, রাজনীতি
Share on FacebookShare on Twitter

সূচীপত্র

  1. ইসলামী শরীয়তে রাষ্ট্রের মর্যাদা
    1. রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য ইসলামের নির্দেশ
    2. শরীয়তের নির্দেশ পালন ও রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা
    3. আল্লাহর ইবাদাতের জন্যে ইসলামী রাষ্ট্র জরুরী
    4. প্রথম ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা
    5. রাষ্ট্রের নানা বিভাগ
    6. রসূলে ব্যক্তিত্বে নবুওয়াত ও প্রশাসকতার সমন্বয়
    7. দারুল ইসলাম
    8. ইসলামী রাষ্ট্রের প্রকৃতি ও লক্ষ্য
  2. রাষ্ট্র সংস্থা ও সংগঠন
    1. রাজনৈতিক অধিকার
    2. নির্বাচনের অধিকার
    3. জাতিই সার্বভৌমত্বের উৎস
    4. প্রত্যক্ষ নির্বাচন ও পরোক্ষ নির্বাচন
    5. আহলুল হল্লে ওয়াল আকদ
    6. বর্তমান সময়ে আহলুল হল্লে ওয়াল আকদ নির্বাচনের উপায়
    7. অলী আহাদ নিয়োগ
    8. পরামর্শ গ্রহণের রসূল স.-এর সুন্নাত
    9. পরামর্শ গ্রহণ না করা অপরাধ
    10. কোন কোন বিষয়ে পরামর্শ
    11. পরামর্শ গ্রহণ পদ্ধতি
    12. আধুনিক সময়ে পরামর্শ গ্রহণ পদ্ধতি
    13. পরামর্শ পরিষদ ও রাষ্ট্রপ্রধানের মধ্যে বিরোধ ও মতবৈষম্য হলে
    14. প্রথম পন্থাঃ শালিস নিয়োগ
    15. দ্বিতীয় পন্থাঃ সংখ্যাগুরুর মত মেনে নেয়া
    16. তৃতীয় পন্থাঃ রাষ্ট্রপ্রধানের নিজের মত গ্রহণ
    17. আমরা কোন পন্থা গ্রহণ করতে পারি
    18. রাষ্ট্রপ্রধানের সমালোচনার অধিকার ও দায়িত্ব
    19. রাষ্ট্রপ্রধানের পদচ্যুতি
    20. পদচ্যুত করার নিয়ম
    21. পঞ্চমঃ নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার অধিকার
    22. বর্তমানকালে প্রার্থী হওয়ার ব্যাপার
    23. সরকারী চাকরীতে ব্যক্তিগত প্রার্থী হওয়ার রীতি
    24. আধুনিক যুগে যোগ্য লোক নিয়োগের উপায়
  3. ব্যক্তি স্বাধীনতা ও মৌলিক অধিকার
    1. মৌলিক অধিকার বলতে কি বুঝায়?
    2. আলোচনার পদ্ধতি
    3. সাম্য ও সমতা
    4. ব্যক্তি স্বাধীনতা
    5. ব্যক্তির ইজ্জত-আব্রু রক্ষা করা সরকারি দায়িত্ব
    6. অমুসলিম ব্যক্তিস্বাধীনতা
    7. আকীদা ও ইবাদতের স্বাধীনতা
    8. বাসস্থানের স্বাধীনতা
    9. কর্মের স্বাধীনতা
    10. ব্যক্তিগত মালিকানা রাখার অধিকার
    11. মত প্রকাশের স্বাধীনতা
    12. ব্যক্তির মত প্রকাশের স্বাধীনতার সীমা
    13. শিক্ষাখাতের অধিকার
    14. ভরণ-পোষণের রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা লাভের অধিকার
    15. ব্যক্তির অধিকার আদায়ে শরীয়তের বিধান
    16. সরকার প্রদত্ত সুযোগ-সুবিধা
    17. সাহায্য লাভের অধিকার
    18. যাকাত
    19. বায়তুলমাল থেকে সাহায্য দান
    20. রাষ্ট্র এ সাহায্যদানে অক্ষম হলে
    21. নাগরিকদের ওপর রাষ্ট্রের অধিকার
    22. প্রথমতঃ আনুগত্য পাওয়ার অধিকার
    23. দ্বিতীয়ঃ রাষ্ট্রের প্রতিরক্ষার কাজে ঝাঁপিয়ে পড়া

প্রথম পন্থাঃ শালিস নিয়োগ

এ পর্যায়ের প্রথম পন্থা হলো, ফিকাহবিদ, উত্তম সুস্থজ্ঞান ও বিবেকসম্পন্ন এবং রাষ্ট্র বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের একটা বিশেষ সংস্থা উদ্ভাবন করতে হবে। তাদের স্বতন্ত্র মান-মর্যাদা ও স্বাধীনতার ব্যাপারে পূর্ণ নিশ্চয়তা ও নিরাপত্তা দিতে হবে এবং তাদের ওপর কোনোরূপ প্রভাব বিস্তার করা চলবে না। বস্তুত পরামর্শ পরিষদ ও রাষ্ট্রপ্রধানের মাঝে মতবিরোধ দেখা দিলে তার চূড়ান্ত মীমাংসার এ-ই হতে পারে এক সুস্পষ্ট কর্মনীতি। অবশ্য এরূপ শালিস নিয়োগ করা হলে তাদের রায় মেনে নেয়া উভয় পক্ষের বাধ্যতামূলক হবে। হযরত ওমর ইবনুল খাত্তাব রা. থেকে বর্ণিত একটি ঘটনা এ পন্থার সুষ্ঠুতা নির্দেশ করে। একবার তিনি সিরিয়া রওয়ানা হয়েছিলেন। পথিমধ্যে তিনি জানতে পারলেন যে, সেখানে মহামারী দেখা দিয়েছে। তখন সেখানে যাওয়া উচিত হবে কিনা এ বিষয়ে তাঁরা একমত হয়ে কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারলেন না। অতঃপর তিনি তাঁর সঙ্গী আনসার মুসলমানদের কাছে পরামর্শ চাইলেন। কিন্তু তাঁদের মাঝেও মতবিরোধ দেখা দিল। তখন তিনি প্রাথমিক পর্যায়ে মুহাজির কুরাইশদের যেসব বৃদ্ধ ও অধিক বয়স্ক লোক ছিলেন, তাঁদের ডেকে পরামর্শ চাইলেন। তাঁরা সবাই বললেন, ফিরে যাওয়াই বাঞ্ছনীয়। তখন তাঁদের এ মত অনুযায়ী-ই আমল করা হলো। -তাফসীর আল মানার, ৫ম খণ্ড, ১৯৪-১৯৭ পৃষ্ঠা।

দ্বিতীয় পন্থাঃ সংখ্যাগুরুর মত মেনে নেয়া

এ পন্থার দৃষ্টিতে পরামর্শ পরিষদের অধিকাংশ যে মত পোষণ করে, সেই বতকেই মেনে নেয়া যেতে পারে, যদি তা স্বয়ং রাষ্ট্রপ্রধানের মতের বিপরীতও হয়। এ মতের সমর্থনে বলা যায়, নবী করীম স. উহুদ যুদ্ধে মুশরিকদের মুকাবিলা করার জন্যে মদীনার বাইরে যাওয়ার ব্যাপারে পরামর্শ নিয়েছিলেন এবং তখন তিনি অধিকাংশ লোকের মতই গ্রহণ করেছিলেন, যদিও মদীনার বাইরে গিয়ে প্রতিরোধ করার প্রতি তাঁর নিজের তেমন কোনো ঝোঁক ছিলো না। আর বস্তুতই এটা দোষের কিছু নয়। কেননা, সমাজের অধিকাংশ লোকই তাদের সামগ্রিক ব্যাপারে যা চিন্তা করে তা নির্ভুল হবে বলেই ধারণা করা যায়, যদিও নিশ্চয়তা কিছু নেই। কেননা, অনেক এ-ও দেখা যায় যে, বেশীর ভাগ লোক যা বলেছে, তা ভুল। আর নির্ভুল সত্য হলো তা, যা অল্পসংখ্যক লোকেরা প্রকাশ করে।

তৃতীয় পন্থাঃ রাষ্ট্রপ্রধানের নিজের মত গ্রহণ

তৃতীয় পন্থা এ হতে পারে যে, রাষ্ট্রপ্রধান সংশ্লিষ্ট লোকদের সাথে পরামর্শ করবে, বেশীর ভাগ লোক কি বলছে তাও তার সামনে উদঘাটিত হবে এবং কম লোকের মতও জানা যাবে। অতঃপর সে এ পরিপ্রেক্ষিতে নিজেই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে এবং তা-ই মেনে নেয়া হবে। সংখ্যাগুরুর ও সংখ্যালঘুর কোনো বাধ্যবাধকতা থাকবে না। এ পন্থার কিছুটা ইংগিত পাওয়া যায় নিম্নোক্ত আয়াতে। আল্লাহ তায়ালা নবী করীম স.-কে লক্ষ্য করে ইরশাদ করেছেনঃ

*********আরবী*************

তুমি লোকদের সাথে পরামর্শ করো। অতঃপর তুমি যখন সিদ্ধান্তে পৌঁছবে, তখন আল্লাহর ওপর ভরসা করে কাজ করে দেবে।

-সূরা আলে ইমরানঃ ১৫৯

কাতাদাহ তাবেয়ী বলেছেনঃ

**********আরবী************

আল্লাহ তাঁর নবীকে কোনো বিষয়ে সিদ্ধান্ত করে তা করে যেতে এবং এ ব্যাপারে লোকদের পরামর্শের ওপর নয়- মহান আল্লাহর ওপর তাওয়াক্কুল করার নির্দেশ দিয়েছেন।-তাফসীরে কুরতুবী

এ পর্যায়ে একথাও মনে রাখতে হবে যে, মূলত রাষ্ট্রপ্রধানই জনগণের পক্ষ থেকে দায়িত্বশীল এবং তার কাজের জন্য জবাবদিহি তাঁকেই করতে হবে। কাজেই ইজতিহাদী ব্যাপারে তাঁকে কর্মের স্বাধীনতা দিতে হবে, অবশ্য যদি তা শরীয়তের অকাট্য নীতি ও আইনের বিপরীত কিছু না হয়। আর মানুষের জবাবদিহি করতে বাধ্য হওয়ার অর্থই হলো তাকে কর্মের স্বাধীনতা দেয়া, যেন সে নিজের মত ও রায় অনুযায়ী কাজ করতে পারে। কিন্তু তাকে যদি অপরের মতেই কাজ করতে হয়, তাহলে তার জবাবদিহির কথা-ই অর্থহীন হয়ে যায়। কাজ হবে অপরের মতের ভিত্তিতে, আর জবাবদিহি করতে হবে রাষ্ট্রপ্রধানকে একথাটিও অযৌক্তিক।

আমরা কোন পন্থা গ্রহণ করতে পারি

যদিও বাহ্যত এ শেষোক্ত পন্থাটি অধিক কার্যকর, সহজসাধ্য এবং নির্ভুল মনে হয়, কিন্তু তবু নান কারণে এ মতটি গ্রহণ করা সমীচীন হতে পারে না। কেননা রাষ্ট্রপ্রধানকে এভাবে কাজ করার সুযোগ দিলে সে চরম স্বেচ্ছাচারিতা শুরু করবে না তার কি নিশ্চয়তা আছে? আর একবার যদি কোনো রাষ্ট্রনায়ক স্বেচ্ছাচারিতা করার সুযোগ পায়, তাহলে জনমতের ভিত্তিতে কোনো কাজ সম্পন্ন হবে কোনো দিন তার আশা করা যায় না। তাই দ্বিতীয় পন্থা গ্রহণ করা-ই অধিকতর কল্যাণকর। অর্থাৎ রাষ্ট্রপ্রধান পরামর্শ পরিষদের অধিক সংখ্যক সদস্যদের মত অনুসারে কাজ করবে। অবশ্য এজন্যে কয়েকটি শর্ত অপরিহার্যঃ (১) রাষ্ট্রপ্রধান যদি অধিকাংশ লোকদের মতকে যথেষ্ট মনে না করেন তাহলে তাকে কোনো তৃতীয় পক্ষ বিচারকের-নিরপেক্ষ শালিসের কাছে বিরোধীয় বিষয়টি সম্পর্কে মীমাংসার জন্যে পেষ করবে। (২) এরূপ কোনো নিরপেক্ষ সংস্থার মীমাংসাকেও যদি যথেষ্ট মনে করা না হয়, তাহলে এ বিরোধীয় বিষয়টিকে নিয়ে গণভোট গ্রহণ করা যেতে পারে। জাতির জনগণ যদি রাষ্ট্রপ্রধানের মতের প্রতি সমর্থন জানায় তাহলে তার মতকেই গ্রহণ করা হবে। আর যদি তার বিপরীত হয়, যদি রাষ্ট্রপ্রধানের মতকে জাতির জনগণ প্রত্যাখ্যান করে, তাহলে রাষ্ট্রপ্রধান হয় জনগণের মতকে মেনে নিবে, কিংবা পদত্যাগ করবে। (৩) রাষ্ট্রপ্রধানকে বিশেষ বিশেষ অবস্থায়, যেমন যুদ্ধ কিংবা কঠিন কোনো জাতীয় সংকটপূর্ণ পরিস্থিতিতে কারো মত মানতে বাধ্য না করে তা নিজের মতেই কাজ করার স্বাধীনতা তাকে দেয়া হবে।

রাষ্ট্রপ্রধানের সমালোচনার অধিকার ও দায়িত্ব

রাষ্ট্রপ্রধানের কাজকর্মের প্রতি তীব্র তীক্ষ্ণ দৃষ্টি রাখা এবং সেই সাথে রাষ্ট্রের বড় বড় দায়িত্বপূর্ণ পদাধিকারী ব্যক্তিদের কার্যকলাপের প্রতি লক্ষ্য রাখা সামগ্রিকভাবে গোটা জাতির এবং ব্যক্তিগতভাবে প্রত্যেকটি নাগরিকের একান্ত কর্তব্য, এটা একটা বড় দায়িত্বও বটে। কেননা রাষ্ট্রপ্রধানের সাথে তাদের যে সম্পর্ক, তাকে এরূপ দৃষ্টি ও লক্ষ্য রাখাই হলো তার স্বাভাবিক দাবী। আর সে সম্পর্ক হচ্ছে উকিল হওয়ার সম্পর্ক। জাতি সম্মিলিতভাবে রাষ্ট্রপ্রধানকে যাবতীয় রাষ্ট্রীয় কার্যসম্পাদনের জন্যে উকিল নিয়োগ করে। জাতি এবং জাতির ব্যক্তিগণ হয় তা মুয়াক্কিল। আর প্রত্যেক মুয়াক্কিলেরই দায়িত্ব ও কর্তব্য হলো তার উকিলের কার্যকলাপের প্রতি তীক্ষ্ণ দৃষ্টি রাখা। অন্যথায় উকিল যেমন সঠিকভাবে কাজ করতে পারে না, তেমনি সে মুয়াক্কিলের মর্জির বিপরীত কাজও করে বসতে পারে।

বিশেষত রাষ্ট্রপ্রধান যদি ইসলামী আদর্শের বিপরীত কোনো কাজ করে তখন তার প্রতি এরূপ দৃষ্টি রাখা সর্বাধিক কর্তব্য হয়ে পড়ে। এরূপ অবস্থায় রাষ্ট্রপ্রধানকে সঠিক পরামর্শ দান, সদুপদেশ দান, তার ভুল-ভ্রান্তি তার সামনে স্পষ্টভাবে বলে দিয়ে তাকে সংশোধন করা এবং তাকে সঠিক পথে পরিচালিত করা জাতির ও জাতির ব্যক্তিদের অবশ্য কর্তব্য। বস্তুত এ কাজ যদি সঠিকরূপে পালন করা না হয় তাহলে রাষ্ট্রপ্রধানের মারাত্মক ভুল করে বসার আশংকা রয়েছে। সে এতোখানি বিগড়ে যেতে পারে যে, শেষ পর্যন্ত সে গোটা জাতি ও রাষ্ট্রকেই ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিতে পারে। এজন্যে হাদীসে উদ্ধৃত হয়েছে, নবী করীম স. ইরশাদ করেছেনঃ

**********আরবী*********

দীন হলো নসীহত। আমরা বললামঃ কার জন্যে? তিনি বললেনঃ আল্লাহর জন্য, তাঁর কিতাবের জন্যে, তাঁর রসূলের জন্যে, মুসলিম (রাষ্ট্রীয়) নেতাদের জন্যে এবং মুসলিম জনগণের জন্যে। -মুসলিম শরীফ

এভাবে নসিহতের পরও যদি কোনো শুভ ফলোদয় না হয়, তাহলে রাষ্ট্রপ্রধানকে ঠিক পথে পরিচালিত করার জন্যে শক্তি প্রয়োগ করা আবশ্যক। জোর করে তাকে যুলুমের পথ থেকে, অন্যায় পথ থেকে এবং সর্বপ্রকারের বিপদ থেকে বিরত রাখা জাতির কর্তব্য। এ পর্যায়ে নবী করীম স. -এর নির্দেশ হলো।

**********আরবী*********

আল্লাহর নামে শপথ করে বলছি, তোমরা অবশ্যই ন্যায়ের আদেশ করবে। অন্যায়ের প্রতিরোধ করবে। যালেমের হাত শক্ত করে ধরে রাখবে, সত্য নীতির ওপর স্থির করে রাখবে এবং তাকে সত্য কাজ করতেই বাধ্য করবে। অন্যথায় মনে রাখবে, আল্লাহ তোমাদের মনকে পরস্পরের প্রতি খারাপ করে দেবেন। আর শেষ পর্যন্ত তোমাদেরকে পূর্ববর্তীদের মতো অভিশপ্ত করবেন।-আবু দাউদ

অপর এক হাদীসে বলা হয়েছেঃ

**********আরবী*********

লোকেরা যখন যালেমকে যুলুম করতে দেখবে, তখন যদি তারা তার দুহাত শক্ত করে না ধরে রাখে তাহলে আল্লাহর আযাব সাধারণভাবে সবাইকে গ্রাস করতে পারে। -রিয়াদুস সালেহীন

রাষ্ট্রপ্রধান ও রাষ্ট্রের অপরাপর দায়িত্বপূর্ণ পদাধিকারীদের প্রতি এরূপ তীক্ষ্ণ দৃষ্টি রাখার অধিকার একটা জাতীয় অধিকার। ইসলামী রাষ্ট্রে এ অধিকার পুরোপুরি রক্ষিত হয়েছে। বরং ইসলামী রাষ্ট্রের দায়িত্বশীলরা এ অধিকারের পূর্ণ প্রয়োগের জন্যে জনগণকে আহবান জানাতো। ইতিহাস এ পর্যায়ের অনেক ঘটনাকেই তার পৃষ্ঠায় স্থান দিয়েছে। হযরত আবু বকর সিদ্দিক রা. খলীফা নির্বাচিত হয়ে সর্বপ্রথম যে ভাষণ দিয়েছিলেন, তাতে তিনি স্পষ্ট ভাষায় বলেছিলেনঃ

**********আরবী*********

আমি ভালো করলে তোমরা সবাই আমার সহযোগিতা করবে। আর আমি যদি বাঁকা পথে চলতে শুরু করি, তাহলে তোমরা আমাকে সঠিক পথে চলতে বাধ্য করবে। -তাবকাতে কুবরা, ইবনে সায়াদ, ৩য় খণ্ড, ১৮৩ পৃষ্ঠা।

দ্বিতীয় খলীফা হযরত ওমর ফারুক রা.-এর এক ভাষণে উদ্ধৃত হয়েছেঃ

**********আরবী*********

তোমাদের মধ্য থেকে কেউ আমার মধ্যে কোনোরূপ বক্রতা লক্ষ্য করলে তা দূর করে দেয়া তার কর্তব্য।

তখন উপস্থিত লোকদের একজন বলে উঠলোঃ

**********আরবী*********

আল্লাহর কসম, তোমার মধ্যে কোনোরূপ বক্রতা দেখতে পেলে আমরা তোমাকে আমাদের তরবরীর সাহায্যেই ঠিক করে রাখবো।

একথা শুনে দ্বিতীয় খলীফা উচ্চস্বরে বলে উঠলেনঃ

**********আরবী*********

আল্লাহ হযরত মুহাম্মদ স. -এর উম্মতের মধ্যে এমন লোক সৃষ্টি করেছেন, যারা তাদের তরবারির দ্বারা ওমরকে ঠিক পথে চালাতে পারে, এজন্যে আল্লাহর লাখো শোকর।

রাষ্ট্রপ্রধানের পদচ্যুতি

আমরা ইতিপূর্বে বলেছি, ইসলামী রাষ্ট্রে রাষ্ট্রপ্রধানের আইনগত মর্যাদা হলো, সে হচ্ছে জাতির উকিল-জাতির সামগ্রিক কার্যাবলী সম্পন্ন করার জন্যে দায়িত্বশীল। এই যখন প্রকৃত অবস্থা তখন রাষ্ট্রপ্রধান তার দায়িত্ব বিরোধী কোনো কাজ করলে অথবা অক্ষমতা বা উপেক্ষার দরুন তার দায়িত্ব পালনে অসমর্থ হলে তাকে পদচ্যুত করার অধিকার জাতিকে অবশ্যই দিতে হবে। যে নিয়োগ করতে পারে সে বহিষ্কৃতও করতে পারে এটাই তো স্বাভাবিক! আর জাতির জনগণই রাষ্ট্রপ্রধান নিয়োগ করে, কাজেই তাকে পদচ্যুত করার অধিকারও জাতিরই থাকতে হবে। ইসলামী শরীয়তেও জনগণের এ অধিকার স্বীকৃত। আর ফিকাহর কিতাবে এ অধিকারের কথা স্পষ্ট ভাষায় ঘোষিত। এ অধিকারের ভিত্তি হলোঃ দায়িত্বের সীমালঙ্ঘন এবং দায়িত্ব পালনের অক্ষমতা। ফিকাহবিদগণ তাই লিখেনঃ

**********আরবী*********

উপযুক্ত কারণে রাষ্ট্রপ্রধানকে পদচ্যুত করার অধিকার জাতির রয়েছে। সে কারণের মধ্যে মুসলমানদের অবস্থা বিপর্যস্ত হওয়া এবং দীনের ব্যাপারটি লঙ্ঘিত বা উপেক্ষিত হওয়া বিশেষভাবে উল্লেখ্য। মুসলমানদের রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনা ও তার উন্নয়নের জন্যে রাষ্ট্রপ্রধানকে নিয়োগ করাও যেমন তাদেরই অধিকার ছিলো, এও তেমনি।

-আল মাওয়াকিফ, আন্ নযরীয়াতুস সিয়াসাতুল ইসলামীয়া।

আর প্রখ্যাত ফিকাহ ও রাজনীতিবিদ ইমাম ইবনে হাজার আন্দালুসী রাষ্ট্রপ্রধান প্রসঙ্গে লিখেছেনঃ

**********আরবী*********

রাষ্ট্রপ্রধানকে মেনে চলা ওয়াজিব ততক্ষণ পর্যন্ত, যতক্ষণ সে জনগণকে আল্লাহর কিতাব ও রসূল স.-এর সুন্নাত অনুযায়ী পরিচালিত করবে। সে যদি তা থেকে এক বিন্দু ভিন্ন পথে ধাবিত হয়, তাহলে তাকে সে পথ থেকে বিরত রাখা হবে এবং তার ওপর শরীয়তের অনুশাসন কার্যকর করা হবে। আর তাকে পদচ্যুত না করা হলে তার দুষ্কৃতি থেকে নিরাপদ থাকা যাবে না মনে করা হলে তাকে পদচ্যুত করা হবে এবং তার স্থানে অপর একজনকে নিয়োগ করা হবে।

পদচ্যুত করার নিয়ম

রাষ্ট্রপ্রধানকে পদচ্যুত করার যখন জাতির অধিকার রয়েছে, তখন এ কাজ তার সমকক্ষ লোকদের দ্বারা সম্পন্ন করানোই যুক্তিযুক্ত, তার সমকক্ষ হচ্ছে, আহলুল হল্লে ওয়াল আকদ। তারা শক্তভাবে ব্যাপারটিকে ধারণ করবে এবং এ পদচ্যুতির কাজটিকে বাস্তবায়িত করবে। কিন্তু রাষ্ট্রপ্রধান যদি তাদের কথা মেনে নিতে রাজী না হয়, তাহলে এরূপ অবস্থায় তাকে পদচ্যুত করার জন্যে শক্তি প্রয়োগ করা অবশ্যই বৈধ হবে। অবশ্য এ শক্তি প্রয়োগের জন্যে শরীয়তের মজবুত ভিত্তি থাকতে হবে। যেমন ইসলামের মৌল আদর্শ ও আইন-কানুন লঙ্ঘন করলে ইসলামের দৃষ্টিতে এ হবে সুস্পষ্ট কুফরী। আর হাদীসে এ পর্যায়েই ইরশাদ করা হয়েছে, হযরত উবাইদা ইবনে সামেত রা. বলেনঃ

***********আরবী************

নবী করীম স. আমাদের ডাকলেন, আমরা তাঁর হাতে বাইয়াত করলাম। আনন্দ ও দুঃখ, শান্তি ও কষ্ট এবং বিপদ-আপদ সর্বাবস্থায় আমরা তাঁকে মেনে চলবো। আর রাষ্ট্র-কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধতা করবো না। তবে যদি তাদের দ্বারা সুস্পষ্ট কুফরী অনুষ্ঠিত হতে দেখো, তাহলে তার সম্পর্কে পদক্ষেপ গ্রহণ করার জন্যে তোমাদের কাছে আল্লাহর পক্ষ থেকে অকাট্য দলীল বর্তমান রয়েছে।-বুখারী, ৯ম খণ্ড, ৮৫ পৃষ্ঠা।

কিন্তু মনে রাখতে হবে, রাষ্ট্রপ্রধানকে শক্তি প্রয়োগে পদচ্যুত করার পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য অপরিহার্য শর্ত হলোঃ শক্তি যথেষ্ট পরিমাণে থাকা দরকার আর সাফল্য ও বিজয়ের খুব বেশী সম্ভাবনা থাকতে হবে। অন্যথায় কোনোরূপ নিষ্ফল দুর্ঘটনা ঘটানো কিছুতেই জায়েয হতে পারে না। কেননা ন্যায়ের প্রতিষ্ঠা ও অন্যায়ের প্রতিরোধ-কাজের জন্যে জরুরী শর্ত হলো এই যে, একটি অন্যায়কে খতম করতে গিয়ে যেন তার চেয়েও বড় অন্যায় সৃষ্টির কারণ ঘটানো হয়। এজন্যে যে, তাতে করে অনাহুতভাবে শুধু রক্তপাতই করা হবে, দেশ ও জনগণের জীবনে তা কোনো কল্যাণই সৃষ্টি করতে পারবে না। আর ইসলামের দৃষ্টিতে অকারণ রক্তপাত ও জনজীবন বিপর্যস্ত করা সবচেয়ে বড় অন্যায় ও অপরাধ।

পঞ্চমঃ নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার অধিকার

ব্যক্তির পদপ্রার্থী হওয়ার অধিকারঃ রাষ্ট্রের কোনো পদ বা সর্বসাধারণের কাজের বা কোনো বৃত্তির জন্যে প্রার্থী হওয়া-নিজেকে প্রার্থীরূপে দাঁড় করানোর অধিকার ব্যক্তির আছে কি?…থাকা উচিত কি? একথা নিঃসন্দেহ যে, এরূপ করার অধিকার ইসলামী রাষ্ট্রে নেই-থাকা উচিতও নয়। ইসলামী শরীয়তে এ একটা সাধারণ নিয়ম। সহীহ হাদীসে আবদুর রহমান ইবনে সামুরাহ রা. থেকে বর্ণিত হয়েছে, নবী করীম স. তাঁকে সম্বোধন করে ইরশাদ করেছেনঃ

********আরবী********

হে আবদুর রহমান ইবনে সামুরাহ! তুমি কোনো দায়িত্বপূর্ণ পদের জন্য প্রার্থী হবে না। প্রার্থী হওয়ার দরুন যদি তোমাকে কোনো পদে নিযুক্ত করা হয়, তাহলে তোমাকে তাতেই সোপর্দ করা দেয়া হবে। আর যদি প্রার্থী না হয়েও তমি তেমন কোনো পদে নিযুক্ত হও, তাহলে সে দায়িত্ব পালনে তোমাকে আল্লাহর পক্ষ থেকে সাহায্য করা হবে।-বুখারী, ৯ম জিলদ, ১১৪ পৃষ্ঠা।

কোনো প্রার্থী হওয়ার মানে তুমি পদ চাও, পদাধিকারী হওয়ার জন্যে তোমার মনে খাহেশ জেগেছে। কর্তৃত্বের জন্যে লোভ জেগেছে, আর ইসলামী শরীয়তে তা জায়েজ নয়।

কিন্তু কোনো পদের জন্যে অন্য ব্যক্তির নাম প্রস্তাব করা শরীয়তে সম্পূর্ণ জায়েয। কেননা, তাতে নিজের কোনো খাহেশ বা লোভের প্রশ্রয় থাকে না। এতে বরং জাতির দৃষ্টি কোনো যোগ্য ব্যক্তির প্রতি আকর্ষণ করা হয়। আর তা শুধু জায়েযই নয়, কর্তব্যও।

বর্তমানকালে প্রার্থী হওয়ার ব্যাপার

ব্যক্তির নিজের প্রার্থী হওয়া শরীয়তে অবৈধ একথা যেমন ঠিক, একটি সাধারণ নিয়ম হিসাবেই তা অনুসরণীয়, ঠিক তেমনি যদি প্রয়োজন তীব্র হয়ে দেখা দেয়, শরীয়তের দৃষ্টিতে তা করা কল্যাণকর মনে হয়, তাহলে তখন তা আর নাজায়েয হতে পারে না। আর বর্তমানকালে অনেক সময় জাতীয় ও রাষ্ট্রীয় ব্যাপারগুলো এমন জটিল হয়ে দেখা দিয়ে থাকে যে, অনেক ক্ষেত্রে প্রার্থী হয়ে না দাঁড়ালেও আবার চলে না। জনসাধারণকে ভালোভাবে জানতে হবে যে, সমাজের মধ্যে কোন লোকেরা সত্যিই নির্বাচিত হওয়ার যোগ্য। তা না জানতে পারলে জনসাধারণ নিজেদের থেকে যোগ্যতম লোকদের নির্বাচিত করতে সক্ষম হবে না। অথচ যাবতীয় রাষ্ট্রীয় পদে সমাজের সর্বোত্তম ও অধিক যোগ্য লোকদের নির্বাচিত করা একান্তই অপরিহার্য। অন্যথায় রাষ্ট্রীয় কঠিন ও জটিল ব্যাপারগুলো যথাযথভাবে আনজাম পেতে পারবে না। এরূপ অবস্থায় এক ব্যক্তির নিজেকে কোনো পদে নির্বাচিত হওয়ার জন্যে জনগণের সামনে পেশ করার অর্থ হবে জনগণকে জানিয়ে দেয়া ও কি ধরনের লোককে নির্বাচিত করতে হবে তা বুঝিয়ে দেয়া এবং সর্বাধিক যোগ্য ব্যক্তিকে নির্বাচিত করার সুযোগ করে দেয়া। অবস্থা যদি সত্যিই এরূপ হয়, তাহলে এভাবে ব্যক্তির প্রার্থী হওয়ার ব্যাপারটি অবৈধ বলে কিছুতেই উড়িয়ে দেয়া যেতে পারে না। এরূপ জাতীয় সংকটের অবস্থায় যোগ্য ব্যক্তিকে যে, জনগণের সামনে নিজেকে প্রার্থী রূপে উপস্থাপিত করার প্রয়োজন রয়েছে, তা হযরত ইউসুফ আ.-এর নিম্নোক্ত উক্তি থেকে অকাট্যভাবে প্রমাণিত হয়। তিনি মিসর দেশের এমনি এক সংকটকালে উদাত্ত কণ্ঠে ঘোষণা করেছিলেনঃ

*******আরবী**********

আমাকে দেশের যাবতীয় ধন-সম্পদের ওপর দায়িত্বশীল বানিয়ে দাও, আমি অধিক সংরক্ষণকারী ও বিষয়টি সম্পর্কে অধিক অবহিত।- সূরা ইউসুফঃ ৫৫

হযরত ইউসুফ আ.-এর মনে রাষ্ট্রক্ষমতা দখলের লোভ ছিলো, এমন কথা কিছুতেই ধারণা করা যায় না। নিশ্চয়ই অবস্থার জটিলতা নিরসনের উদ্দেশেই এ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিলেন। তাঁর উদ্দেশ্য ছিলো যেমন রাষ্ট্রীয় সংকট দূর করে সুষ্ঠু পন্থায় রাষ্ট্র পরিচালনার ব্যবস্থা করা, তেমনি রাষ্ট্রশক্তিকে আল্লাহর মর্জী মতো পরিচালিত করা। আর এ এমন একটা ব্যাপার, যা বর্তমানের যে কোনো রাষ্ট্র ব্যক্তিগত প্রার্থী হওয়াকে বৈধ করে দেয়।

কিন্তু ব্যক্তিগত প্রার্থী হওয়া অবস্থার জটিলতার পরিপ্রেক্ষিতে বৈধ হলেও কোনো প্রার্থীর পক্ষেই কেবল নিজের প্রচার ও প্রতিদ্বন্দ্বীর বিরুদ্ধে কাদা ছোঁড়াছুঁড়ি জায়েয হতে পারে না। প্রার্থীর জন্যে বৈধ শুধু এতোটুকু যে, সে নিজের উদ্দেশ্য, লক্ষ্য ও আদর্শকে প্রচার করবে। সে রাষ্ট্রীয় পদে নির্বাচিত হলে রাষ্ট্র ও জনগণের জন্যে শরীয়তের ভিত্তিতে কি কি কল্যাণ সাধন করবে, তা-ই শুধু এতোটুকু যে, তা-ই শুধু সে প্রচার করবে, এর বেশী কিছু নয়।

বর্তমান সময়ে যেমন প্রার্থী হওয়ার প্রয়োজন তীব্র হয়ে দেখা দিতে পারে, তেমনি নিছক ব্যক্তিগত প্রার্থী হওয়ার পথ থেকে দূরে থাকাও সম্ভব হতে পারে। আর তার উপায় হলো দলীয় ভিত্তিতে প্রার্থী দাঁড় করানো নীতি অনুসরণ। এতে করে যেমন ব্যক্তিগতভাবে প্রার্থী হওয়া সম্পর্কে রসূলে করীম স.-এর নিষেধকে মান্য করা যায়, তেমনি হযরত ইউসুফ আ.-এর আদর্শও অনুসৃত হতে পারে।

সরকারী চাকরীতে ব্যক্তিগত প্রার্থী হওয়ার রীতি

সরকারী চাকরীতে নিয়োগের ব্যাপারে কোনো ব্যক্তিরই নিজস্বভাবে প্রার্থী হওয়ার রীতি ইসলামী শরীয়তের সমর্থিত নয়। এরূপ করার কোনো অধিকার ব্যক্তিকে দেয়া হয়নি। আসলে এ কাজটি সম্পন্ন হওয়া উচিত সরকারের নিজস্ব উদ্যোগক্রমেই। হাদীসে বর্ণিত হয়েছে, হযরত আবু মূসা আশয়ারী রা. বলেনঃ

আমি রসূলে করীম স.-এর খেদমতে হাজির হলাম। আমার সাথে আমার দুজন চাচাতো ভাইও সেখানে উপস্থিত হলো। তাদের একজন বললো, ইয়া রসূলাল্লাহ! আপনার ক্ষমতাধীন কোনো রাষ্ট্রীয় দায়িত্বপূর্ণ কাজে আমাকে নিযুক্ত করুন। অপরজনও এরূপ কথা বললো। তখন নবী করীম স. ইরশাদ করলেনঃ আল্লাহর নামে শপথ করে বলছি, এ রাষ্ট্রীয় কাজে আমি এমন কোনো লোককে নিয়োগ করবো না, যে তা পেতে চাইবে কিংবা সে জন্যে লোভ করবে।- তাইসীরুল উসুল, ১ম খণ্ড, ১৮ পৃষ্ঠা।

এ হাদীস থেকে স্পষ্ট জানা গেল, সরকারী দায়িত্বপূর্ণ পদে নিয়োগ লাভের কোনো অধিকার জনগণের নেই। কেননা যদি এ অধিকার থাকতোই, তাহলে তা পেতে চাওয়া থেকে বিরত রাখার কোনো কারণ থাকতে পারে না। বস্তুত এটা ব্যক্তির অধিকার নয় সরকারের ওপর, বরং সরকারের দায়িত্ব ও কর্তব্য ব্যক্তির প্রতি।

তাহলে সরকার জনগণকে এ পদে কি করে নিয়োজিত করবে? এখানেই সরকারের দায়িত্বের প্রশ্ন। সরকার প্রত্যেকটি কাজের জন্যে যোগ্যতম ব্যক্তিকে যাচাই-বাছাই করার একটা পন্থা উদ্ভাবন করতে পারে। এজন্যে যারা অধিক যোগ্য প্রমাণিত হবে, কোনোরূপ প্রার্থী হওয়ার রীতি অনুসরণ ছাড়াই সেই যোগ্য লোকদের নিয়োগ করা যেতে পারে। তবে এ পর্যায়ে হাদীসে যোগ্যতার সনদ ছাড়া অন্য কোনো কারণে আত্মীয়তা, স্বজনপ্রীতি, বন্ধুত্বতা, খাতির বা ঘুষ ইত্যাদি কোনো কিছুর দরুন কাউকে কোনো পদে নিয়োগ করা কিছুতেই উচিত নয়। নবী করীম স. ঘোষণা করেছেনঃ

**********আরবী***********

যে লোক মুসলমানদের রাষ্ট্রীয় দায়িত্বশীল হবে, সে যদি কোনো অধিক যোগ্য মুসলমানদের পরিবর্তে অপর কোনো ব্যক্তিকে সরকারী কোনো চাকরীতে নিয়োগ করে, তাহলে আল্লাহ ও তাঁর রসূলের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করে।- আস-সিয়াসাতুশ শারয়ীয়া, ইমাম ইবনে তাইমিয়া, ৪ পৃষ্ঠা।

এভাবে প্রত্যেকটি দায়িত্বপূর্ণ কাজে যোগ্যতম ব্যক্তিকে নিয়োগ করাই যখন সরকারী কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব, তখন যোগ্যতার মাপকাঠিকে সামনে তুলে ধরা একান্ত জরুরী। কিন্তু শরীয়তের দৃষ্টিতে সরকারী কর্মচারীদের যোগ্যতার মান কি?- বলা যায়, তাহলো শক্তি, কর্মক্ষমতা ও কার্য সম্পাদনে যোগ্যতা এবং বিশ্বস্ততা, আন্তরিকতা ও ঐকান্তিকতা। কুরআন মজীদের একটি আয়াত থেকে এ মানদণ্ডের কথাই জানতে পারা যায়। ইরশাদ হয়েছেঃ

*******আরবী******

তোমার পক্ষে উত্তম শ্রমিক হতে পারে সে-ই, যে লোক শক্তি সম্পন্ন ও বিশ্বস্ত। – সূরা আল কাসাসঃ ২৬

এখানে শক্তি অর্থ নির্দিষ্ট দায়িত্ব ও কর্তব্য পালনের যোগ্যতা, ক্ষমতা এবং তা কাজের বিভিন্নতার কারণে বিভিন্ন হতে পারে। অর্থাৎ যেমন কাজ ঠিক তেমন-সেই কাজ সুষ্ঠুরূপে আনজাম দেয়ার যোগ্য হতে হবে।

আর আমানত শব্দটি বুঝায়, কাজ ও দায়িত্বটির প্রতি ঠিক যেরূপ ব্যবহার হওয়া উচিত, যতখানি গুরুত্ব পাওয়া বাঞ্ছনীয় শরীয়তের দৃষ্টিতে, তার সাথে ঠিক সেরূপ আচরণ করা এবং তাকে ঠিক সেরূপই গুরুত্ব আরোপ করা। আর আল্লাহর কাছে জবাবদিহি করার ভয় মনে স্থান দিয়ে সে কাজকে অনুরূপভাবে আনজাম দেয়া। কাজ সম্পন্ন করার ব্যাপারে লোকভয় বা কোনোরূপ ব্যক্তিগত লোভ ও স্বার্থপরতাকে একবিন্দু প্রশ্রয় না দেয়া।

আধুনিক যুগে যোগ্য লোক নিয়োগের উপায়

একদিকে শরীয়তে পদপ্রার্থী হওয়া অবাঞ্ছনীয়, অপরদিকে প্রত্যেকটি কাজের জন্যে যোগ্য লোক সন্ধান করা সরকারী দায়িত্ব। বর্তমান যুগে এ দুয়ের মাঝে সামঞ্জস্য স্থাপনের পন্থা কি হতে পারে?

জবাবে বলা যায়, কাজের গুরুত্বের দৃষ্টিতে তাকে দুভাগে ভাগ করা যেতে পারে। সরকারের কতকগুলো কাজ থাকে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ উচ্চ পর্যায়ের, যাতে ব্যক্তির ক্ষমতা প্রয়োগের সুযোগ থাকে, থাকে নানাবিধ সুযোগ-সুবিধা লাভের অবকাশ। যেমন মন্ত্রীগণ, সেনাধ্যক্ষ ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান পরিচালনার নেতৃত্ব ও কর্তৃত্ব। এসব কাজের জন্যে রাষ্ট্রপ্রধানকে নিজ থেকেই উপরোক্ত গুণদ্বয়ের দৃষ্টিতে যোগ্য লোক সন্ধান করতে হবে। এছাড়া অন্যান্য হাজার হাজার সরকারী পদের জন্যে লোক নিয়োগের কাজ সম্পাদনের জন্যে লোকদের কাছে থেকে দরখাস্ত আহবান করা ছাড়া কোনো উপার দেখা যায় না। এজন্যে একটি বিশেষ বিভাগ খোলা যেতে পারে এবং বিভিন্ন কাজের জন্যে লোক সন্ধান করার দায়িত্ব এ বিভাগের ওপর অর্পণ করা যেতে পারে। কিন্তু এ বিভাগ থেকে বাছাই করা যোগ্য লোক নিয়োগের জন্যে রসূলে করীম স.-এর এ হাদীস অনুযায়ী নির্দেশ দিতে হবেঃ

*********আরবী********

দায়িত্বপূর্ণ বিষয়াদি যখন বিনষ্ট হতে থাকে, তখন তোমরা কিয়ামতের অপেক্ষা করো। জিজ্ঞেস করা হলো, কেমন করে তা বিনষ্ট হতে পারে? রসূলে করীম স. বললেন, দায়িত্বপূর্ণ কাজ যখন কোনো অযোগ্য লোকের উপর ন্যস্ত করা হয়, তখন তা বিনষ্ট হওয়ার অবস্থা দেখা দেয়।-তাইসীরুল উছুল, ১ম খণ্ড, ৩২ পৃষ্ঠা।

Page 4 of 7
Prev1...345...7Next

© Bangladesh Jamaat-e-Islami

  • আমাদের সম্পর্কে
  • প্রাইভেসি পলিসি
  • যোগাযোগ
কোন ফলাফল নেই
সকল ফলাফল দেখুন
  • নীড়
  • সংক্ষিপ্ত পরিচিতি
  • বিভাগ ভিত্তিক
    • আল কুরআন
    • আল হাদিস
    • ফিকাহ
    • ঈমান
    • ইসলাম
    • পারিবারিক জীবন ও সামাজিক সম্পর্ক
    • আন্দোলন ও সংগঠন
    • সীরাত ও ইতিহাস
    • সীরাতে সাহাবা
    • মহিলাদের বিশেষ বই
    • রাজনীতি
    • অর্থনীতি
    • বিবিধ
  • রুকন সিলেবাস
    • রুকন সিলেবাস (স্বল্প শিক্ষিত)
    • রুকন সিলেবাস (শিক্ষিত)
  • কর্মী সিলেবাস
  • বাৎসরিক পাঠ্যসূচি
    • বাৎসরিক পাঠ্যসূচি (শিক্ষিত)
    • বাৎসরিক পাঠ্যসূচি (স্বল্প শিক্ষিত)
  • উচ্চতর অধ্যয়ন
  • অডিও বই
  • অন্যান্য
    • দারসুল কুরআন
    • দারসুল হাদিস
    • আলোচনা নোট
    • বইনোট
    • প্রবন্ধ
    • কবিতা
    • বুলেটিন
    • স্মারক
    • ম্যাগাজিন
    • এপস
    • রিপোর্ট বই
    • ছাত্রী সিলেবাস

@BJI Dhaka City South