সরকার প্রদত্ত সুযোগ-সুবিধা
দ্বিতীয়ঃ বস্তুত মানুষ নিজে যদি কাজ করতে ও তার মাধ্যমে স্বীয় মৌলিক প্রয়োজন পূরণ পরিমাণ উপার্জন করতে সক্ষম হয়, তাহলে সে যেমন ভিক্ষা করবে না তেমনি কোনরূপ সরকারী সাহায্যের ও মুখাপেক্ষী হবে না। আর কাজ করাই যখন শরীয়তের দৃষ্টিতে বাঞ্ছনীয় এবং ভিক্ষা করা যখন ঘৃণ্য, পরিত্যাজ্য; আর ইসলামী রাষ্ট্রর যখন দায়িত্বই হলো যা শরীয়তের দৃষ্টিতে ভালো তাকে বাস্তবায়িত করা এবং যা শরীয়তের দৃষ্টিতে মন্দ তাকে নির্মূল করা তখন ইসলামী রাষ্ট্রর এ দায়িত্ব সু স্পষ্ট যে যখন ঘৃণ্য পরিত্যাজ্য আর ইসলামী রাষ্ট্রের যখন দায়িত্বই হলো যা শরীয়তের দৃষ্টিতে ভালো তাকে বাস্তবায়িত করা এবং যা শরীয়তের দৃষ্টিতে মন্দ তাকে নির্মূল করা তখন ইসলামী রাষ্ট্রর এ দায়িত্ব সুস্পষ্ট যে, নাগরিদের জন্যে কাজ করে উপার্জন করার পথ সুগম ও সহজ করে দেবে। অতএব নানা কাজের উদ্ভাবন করে বেকার লোকদের জন্যে কাজের ব্যবস্থা করা সরকারের অন্যতম প্রধান দায়িত্ব। সেই সাথে বায়তুলমালের ধন সম্পদ বিলাসিতায় বা বিনা প্রয়োজনে ব্যয় করা কিংবা অকল্যাণ কর কাজে অর্থ বিনিয়োগ করা বন্দ করতে হবে। নাগরিকদের কোনো না কোনো রোজগার বিনিয়োগের জন্যে বায়তুলমাল থেকে ব্যক্তিগত – দানের প্রয়োজন হলে তাও দিতে হবে। কেননা ভিক্ষা দানের অপেক্ষা দান খুবই শ্রেয়। ইমাম আবু ইউসুফ রা: বলেছেনঃ
*****আরবী******
খারাজি জমির মালিক যদি দরিদ্রতা বশত জমি চাষ করতে অক্ষম হয় তাহলে তাকে বায়তুলমাল থেকে ঋণ দিতে হবে, যেন সে শ্রম করে জমিতে ফসল ফলাতে পারে”। ইবনে আবেদীন ৩য় খন্ড, ৩৬৪ পৃ.
সাহায্য লাভের অধিকার
ব্যক্তি যদি কোন কাজ না পায় রুজি রোজগারের নিজস্ব কোনো উপায় না থাকে, তাহলে তার নিকটবর্তী ধনী সচ্ছল আত্মীয় তাকে সাহায্য করবে। তা করা তার উপর ওয়াজিব। দরিদ্র ব্যক্তি এভাবে নিজের ভরণ-পোষণের ব্যবস্থা করতে পারে। এও এক সামাজিক অর্থনৈতিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা এবং যে ব্যবস্থার মধ্যে পরিবারস্থ ও নিকটাত্মীয় লোকেরা শামিল রয়েছে এরূপ ব্যবস্থা কার্যকর করা ধনী ও সচ্ছল ব্যক্তির কেবল অনুগ্রহের ওপরই নির্ভরশীল নয়। বরং ইসলামী শরীয়তের দৃষ্টিতে এরূপ তার একান্তই কর্তব্য।
যাকাত
সমাজে যে ব্যক্তির অবস্থা এরূপ হবে যে, তার নিজের কোনো কামাই রোজগারের ব্যবস্থা নেই এবং তার নিকট আত্মীয়দের মধ্যে ও এমন কেউ নেই, যে তার ভরণ-পোষণের দায়িত্ব পালন করতে পারে। তার যাবতীয় প্রয়োজন পূরণের ব্যবস্থা করতে হবে যাকাত ফান্ড থেকে। কেননা, ধনীদের কাছ থেকে যে যাকাত আদায় হওয়া ইসলামী শরীয়তের মৌলিক ব্যবস্থা তা, এ শ্রেণীর গরীব রোকদেরই প্রাপ্য। আসলে শরীয়তের বিধান হলো, রাষ্ট্র সরকার, এ যাকাত আদায় করবে এবং তা পাওয়ার লোকদের মধ্যে সরকারী ভাবেই বণ্টন করবে। যাকাতের টাকা এ শ্রেণীর গরীবদের ছাড়া অন্যখাতে ব্যয় করা জায়েজ নয়। এ জন্যে আদায় ও বণ্টনের কার্যকর ব্যবস্থা ও বিভাগ কায়েম করা ইসলামী রাষ্ট্রের কর্তব্য।
বস্তুত যাকাত হচ্ছে গরীব লোকদের অর্থনৈতিক প্রয়োজন পূরণের জন্যে সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থার ভিত্তি। যাকাত আদায় করার জন্যে সরকারী ক্ষমতা প্রয়োগ করার প্রয়োজন দেখা দিলে তা করতেও কুণ্ঠিত হওয়া চলবে না যাকাত দিতে অস্বীকারকারীদের হযরত আবু বকর সিদ্দিক রা: সামরিক শক্তি প্রয়োগ করে ছিলেন। বস্তুত যাকাত আদায় এবং বিলি বণ্টনের সুষ্ঠু ব্যবস্থা করা হলে সমাজের কোনো গরীবই তার মৌলিক প্রয়োজন পূরণ থেকে বঞ্চিত থাকতে পারেনা, কেননা যাকাত গ্রহন করা হয় মূলধন, তারা মুনাফা, পণ্য দ্রব্য জমির ফসল (ওশর), ব্যবসায়ের পশু ও খনিজ দ্রব্য থেকে। বাংলাদেশ যদি রীতিমত হিসাব করে যাকাত আদায় করা হয় তাহলে তার পরিমাণ বছরে প্রায় একশ’ কোটিতে এসে দাঁড়াবে।
বায়তুলমাল থেকে সাহায্য দান
পূর্বোক্ত ব্যবস্থাসমূহে ও যদি জনগণের অভাব মেটানোর জন্যে যথেষ্ট না হয়, তাহলে রাষ্ট্র সরাসরি তার দায়িত্ব গ্রহন করবে এবং সব অভাবগ্রস্থ ব্যক্তির প্রয়োজন পূরণের দায়িত্ব পালন করবে। ব্যক্তির প্রতি সমাজ সমষ্টির যে দায়িত্ব, তা এভাবেই পালিত হতে পারে। অতএব বায়তুলমাল থেকে প্রত্যেক ব্যক্তিকেই গুরুত্ব আরোপ করা হবে। ইমাম ইবনে তাইমিয়া বলেছেনঃ
*****আরবী******
“ যাকাত দ্বারা যদি অভাব গ্রস্তদের অভাব মোচন সম্ভব না হয়, তাহলে রাষ্ট্রীয় কোষ থেকে তাদের জন্যে অন্যান্য কাজ বাদ দিয়েও অর্থ ব্যয় করতে হবে। ” আস সিয়াসাতুশ শারইয়া, ইমাম ইবনে তাইমিয়া, ৫৩ পৃ.
এমনকি রাষ্ট্র সরকার যদি এ দায়িত্ব পালন করতে প্রস্তুত না হয় তাহলে অভাবগ্রস্তরা সরকারের বিরুদ্ধে সর্ব সর্বোচ্চ আদালতে এজন্যে মামলাও দায়ের করতে পারে। তখন বিচারপতি সরকারকে এ কাজ করতে বাধ্য করবে। ইসলামী আইন বিশারদ ইবনে আবেদিন একথা স্পষ্ট ভাষায় ঘোষণা করেছেন। তিনি লিখেছেনঃ
*****আরবী******
“ বিচারপতি যেমন অক্ষম –দরিদ্র ব্যক্তির প্রয়োজন পূরণের জন্যে তার ধনী অভিভাবক বা নিকট আত্মীয়কে বাধ্য করবে। তেমনি রাষ্ট্রপ্রধানকেও বিচারের মাধ্যমে এজন্যে বাধ্য করবে। ” আত্ তাশরীউল ইসলামী, শায়ক মুহাম্মদ, অবু যোহরা। দরিদ্র জনগণের অভাব মেটানোর ব্যাপারে সরকারের দায়িত্বের কথা ইসলামের ইতিহাস থেকে ও প্রমাণিত হয়। হযরত ওমর রা: এ দায়িত্বে স্বীকৃতি দিয়েছেন। দূর্ভিক্ষকালে তিনি অভাব গ্রস্তদের জন্যে সরকারী পর্যায়ে খাবার তৈরি করিয়ে ঘোষণা করিয়ে দিয়েছিলেন এ বলে: “যার ইচ্ছা এ খাবার খেয়ে ক্ষুন্নিবৃত্তি করতে পারে, আর যার ইচ্ছা বায়তুলমাল থেকে তার ও তার পরিবারবর্গের প্রয়োজন পরিমাণ সামান সামগ্রী গ্রহন করতে পারে। ”
রাষ্ট্র এ সাহায্যদানে অক্ষম হলে
অভাবগ্রস্ত লোকদের অর্থনৈতিক নিরাপত্তা বিধানে রাষ্ট্র যদি কখনো অক্ষম হয়ে পড়ে, রাষ্ট্রীয় কোষ যদি শূন্য হয়ে যায়, কিংবা বায়তুলমালে এমন পরিমাণ সম্পদ অবশিষ্ট থাকে, যা সমস্ত অভাবগ্রস্ত লোকের ভরণ-পোষণের ব্যবস্থা করতে যথেষ্ট নয়, তাহলে তাদেও অর্থনৈতিক নিরাপত্তা বিধানের দায়িত্ব সমাজের ধনশালী ব্যক্তিদের ওপর অর্পিত হবে এবং ‘ফরযে কেফায়া’ হিসাবে তা সমগ্র জাতির পক্ষ থেকেই তাদেও পালন করতে হবে। ইসলামী ফিকাহবিদগণ এ বিষয়ে স্পষ্ট করে বলেছেনঃ
*****আরবী******
“ যাকাত ও বায়তুলমালের সাধারণ অর্থ-সম্পদ যদি অসমর্থ হয়, তাহলে বস্ত্রহীনকে বস্ত্রদান ও অভুক্তকে অন্নদান প্রভৃতি জরুরী কাজে আনজাম দেয়ার দায়িত্ব পড়বে। তাদেও মধ্যে সচ্ছল ও সমর্থ লোকের ওপর। এ দায়িত্ব আদের জন্যে ফরযে কেফায়া হিসাবে অতিরিক্ত হিসাবে চাপবে” আলমিনহাজ, ইমাম নববী এবং তার শরাহঃ৭ম খন্ড, ১৯৪ পৃ.
একথার অর্থ নিশ্চয়ই এই যে, শীতল ও গ্রীষ্মেও উপযোগী বস্ত্র দিতে হবে, চিকিৎসার প্রয়োজন পূরণ ও এরই অন্তর্ভুক্ত বলে চিকিৎসকের মজুরী ও ঔষধের মূল্য দেয়ার ব্যবস্থা ও করতে হবে। অর অক্ষম ও পঙ্গু লোকদের খাদেম নিয়োগও এ পর্যায়েরই একটি কাজ। অতএব বায়তুলমাল যতক্ষণ অক্ষম থাকবে সমাজের ধনী লোকেরাই অভাবগ্রস্তদের প্রয়োজন পূরণে বাধ্য থাকবে। আর ধনী লোকেরা তা করতে যদি অস্বীকার করে, তাহলে সরকার তা করার জন্যে তাদেরকে আইনত বাধ্য করবে। ইমাম ইবনে হাযম এ পর্যায়ে লিখেছেনঃ
*****আরবী******
“ যাকাত ফান্ড রাষ্ট্রীয় কোষাগার দরিদ্র জনগণের প্রয়োজন পূরণে অক্ষম হলে তখন তাদেও পেট ভরা খাবার ও শীতল গ্রীষ্মেও উপযোগী পোশাক এবং বর্ষা, শীতের রৌদ্রতাপ ও পথচারীদের বাসস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে।
”—“ধাল মুহাল্লা ইবনে হাযম, ৬ষ্ঠ খন্ড ২৫৬ পৃ.
অমুসলিম নাগরিকের অর্থনৈতিক নিরাপত্তা
ইসলামী রাষ্ট্রে নাগরিকদের অর্থনৈতিক নিরাপত্তার ব্যবস্থা করার যে মহান দায়িত্ব গ্রহন করে, তা কেবল মুসলিম নাগরিকদের জন্যেই নির্দিষ্ট নয়। অমুসলিম নাগরিকদের জন্যে এ ব্যবস্থা গ্রহন করা ইসলামী রাষ্ট্রের দায়িত্ব। বস্তুত এ ব্যাপারে মুসলিম অমুসলিম কোন পার্থক্য করা হয় না। এ ব্যাপারে প্রমাণ হিসাবে সেনাপতি হযরত খালেদ ইবনে অলীদ রা: এর স্বাক্ষরিত এক চুক্তি নামার একটা অংশ এখানে উল্লেখযোগ্য। তাতে তিনি বলেছিলেনঃ
*****আরবী******
“ অমুসলিম নাগরিকদের মধ্যে যে লোক বার্ধক্য, পঙ্গুত্ব বা বিপদের কারণে অথবা স্বচ্ছতা থাকার পর দরিদ্র হয়ে পড়ার কারণে যদি এমন অবস্থায় পড়ে যায় যে, তার স্বধর্মীরা তাকে ভিক্ষা দিতে শুরু করেছে, তাহলে তার পক্ষ থেকে যিযিয়া নেয়া বন্ধ করা হবে এবং যতদিন ইসলামী রাষ্ট্রে বসবাস করবে ততদিন পর্যন্ত তার পরিবারবর্গকে বায়তুলমাল থেকে ভরণ-পোষণ করা হবে। ”–কিতাবুণ খারাজ, আবু ইউসূফ, ১৪৪ পৃ.
হযরত খালেদ রা: সেনাপতি হিসাবে এ চুক্তি স্বাক্ষর করে ছিলেন বং তখনকার খলীফা হযরত আবুবকর রা: এ চুক্তি মেনে নিয়েছিলেন। অতএব এ নীতি সম্পর্কে সকল সাহাবির ইজমা সম্পাদিত হয়েছে বলা চলে।
হযরত ওমর ইবনে আবদুল আজীজ রা: তার বসরার শাসন কর্তা অদি ইবনে আরতাদকে লিখে পাঠিয়েছিলেনঃ
*****আরবী******
“ তুমি নিজে লক্ষ্য করে দেখ, অমুসলিম নাগরিকদের মধ্য থেকে যে সব লোক বয়োবৃদ্ধ ও কর্মক্ষমতাহীন হয়ে পড়েছে এবং যার উপার্জন –উপায় কিছুই নেই, তুমি তাদের প্রয়োজন মত অর্থ রাষ্ট্রীয় বাইতুলমাল থেকে তাদের দাও। ” কিতাবুল আমওয়াল, আবু উবাইদ, ৪৫-৫৬ পৃ.
নাগরিকদের ওপর রাষ্ট্রের অধিকার
রাষ্ট্রের ওপর নাগরিকদের অধিকার সম্পর্কে আমরা ইতিপূর্বে বিস্তারিত অলোচনা করেছি। কিন্তু রাষ্ট্র নাগরিকদের এসব অধিকার যথাযথরূপে আদায় করতে পারে না, যদি নাগরিকগণ এ কাজে রাষ্ট্রের পূর্ণ সহযোগিতা না করে। আসলে রাষ্ট্র বাইরে থেকে আসা কোন জিনিস নয়, জনগণ গঠিত সংস্থারই অপর নাম রাষ্ট্র ও সরকার। এজন্যে জন-প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে জাতীয় ও রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব পালনের জন্যে যে সংস্থা গঠন করা হয়, সার্বিক ও নির্বিশেষ ভাবে সকলকেই বাস্তব সহযোগিতা করাতে হবে। জনগণের শক্তিই রাষ্ট্রের শক্তি। রাষ্ট্রের অস্তিত্ব জনগণের বাস্তব সহযোগিতার ওপর একান্তভাবে নির্ভরশীল। অতএব বলতে হবে, রাষ্ট্রের ও অনেক অধিকার রয়েছে জনগণের ওপর এবং সে অধিকার সমূহ জনগণকে অবশ্যই আদায় করতে হবে।
রাষ্ট্র হলো জনগণের ঘর, জনগণ এ ঘরেই বসবাস করে, জীবন যাপন করে। জনগণ রাষ্ট্রের নিরাপত্তায় নিশ্চিন্তে দিন যাপন করে। জনগণের খেদমত-জনকল্যাণে আত্মনিয়োগ করাই রাষ্ট্রের কাজ। এক কথায় রাষ্ট্র জনগণের খাদেম। রাষ্ট্র যেন বংশের পিতা-পৈত্রিক স্নেহ মমতা নিয়েই জনগণের খেদমত করতে হবে। যেমন পিতা স্নেহ মমতাভাজন হয়ে থাকে ছেলে সন্তান ও পারবারবর্গের প্রতি। তাই জনগণের কল্যাণ হলো জনগণের ওপর রাষ্ট্রের অধিকার অধিকার আদায়ে রাষ্ট্রের পূর্ণ সহযোগিতা করাই জনগণের দায়িত্ব ও কর্তব্য। দায়িত্ব পালনের ব্যাপারে বাস্তব সহযোগিতা নিয়েই এগিয়ে আসতে হবে দেশের জনগণকে। জনগণ যদি রাষ্ট্রের এ অধিকার পূর্ণ মাত্রায় ও যথাযথভাবে আদায় না করে তা হলে তার পরিণাম এই হবে যে, রাষ্ট্র তার দায়িত্ব পালনে অসমর্থ থেকে যাবে এবং তার সমূহ ক্ষতি জনগণকেই ভোগ করতে হবে। তার পরিণতিতে জন-জীবনে নেমে আসবে কঠিন বিপর্যয়ের ঢল। এ কারণে জনগণের ওপর রাষ্ট্রের প্রধানতম অধিকার হলো, জনগন রাষ্ট্রের আনুগত্য স্বীকার করবে, রাষ্ট্রের আদেশ ও নিষেধ মেনে চলবে। রাষ্ট্রের মর্যাদা ও অস্তিত্ব রক্ষার্থে যে কোনো কাজের জন্যে সতত প্রস্তুত থাকতে হবে। জনগণের ওপর রাষ্ট্রের এ অধিকার দু’টি সম্পর্কেই আমরা সর্ব প্রথমে আলোচনা করবো।
প্রথমতঃ আনুগত্য পাওয়ার অধিকার
এ পর্যায়ে আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেছেন:
*****আরবী******
“ হে ঈমানদার লোকেরা !তোমরা আনুগত্য স্বীকার করো আল্লাহর অনুগত হয়ে চলো রাসুলের এবং তোমাদের মাঝে দায়িত্বশীলদের ও”সূরা নিসা: ৫৯ আয়াতে উল্লেখিত ‘উলুল আমর’অর্থ রাষ্ট্রীয় দায়িত্বসম্পন্ন ব্যক্তিরা। অথবা ইসলামী আইন বিধানে পারদর্শী ব্যক্তিরা ”আহকামুল কুরআন লিল তাফসীরে কুরতুবী, ৫ম খন্ড, ২৫৯ পৃ.হাদিসে উদ্বৃত্ত হয়েছে, নবী করিম সা: ইরশাদ করেছেন
*****আরবী******
“মুসলিম নাগরিককে রাষ্ট্রের আনুগত্য অবশ্যই স্বীকার করতে হবে, তার আদেশ-নিষেধ অবশ্যই মেনে চলতে হবে সব ব্যাপারেই, তাই তারা পসন্দ করুক আর নাই করুক-যতক্ষণ না তাদের কোনো গুনাহ ও নাফরমানীর আদেশ করা হয়। শরহে সহীহ বোখারী, আল অসকালানী, ৩য় খন্ড ১০০ পৃ.
অতএব জনগণের রাষ্ট্রানুগত্য প্রতিফলিত হবে প্রশাসকদের যাবতীয় আদেশ নিষেধ পালনের মাধ্যমে। জনগণের ওপর রাষ্ট্রের এ অধিকার শরীয়ত সম্মত এবং রাষ্ট্রের যাবতীয় আদেশ-নিষেধ জনকল্যাণ বিধানে কায়েম করা সংগঠনও প্রতিষ্ঠানসমূহের নিয়মশৃংখলা রক্ষা করা জনগণের কর্তব্য জনগণের রাষ্ট্রানুগত্য স্বেচ্ছামুলুক হওয়া বাঞ্ছনীয় এ জিনিষ জনগণের অন্তর থেকে ফুটে ওঠা উচিত। এজন্যে যেন রাষ্ট্রকে জোর –জবরদস্তি বা শক্তি প্রয়োগ করতে না হয় ত-ই শরীয়তের কাম্য। রাষ্ট্রীয় অনানুগত্যের ফলে রাষ্ট্রীয় জীবনে মহা অশান্তি-দুঃখ নেমে আসে। আনুগত্যহীন এ লোকদেরকে দমন ও বশ করার জন্যে রাষ্ট্রকে অকারণে ব্যস্ত হয়ে পড়তে হয়;বিদ্রোহীদের মূলোৎপাটনে রাষ্ট্রকে শক্তি ব্যয় করতে হয়। আর এ কাজে যে শক্তি ক্ষয় হয়, তা জনগণের কোন ইতিবাচক কল্যাণ সাধন করতে পারে না। এ ছাড়া ও অনানুগত্য ও বিদ্রোহের ভাবধারা জনগণের একাংশে দেখা দিলে তা গোটা জনসমাজে বিষ বাষ্পের মতো ছড়িয়ে পড়ে। সমাজে দেখা দেয় উচ্ছৃঙ্খলতা, অশান্তি ও বিপর্যয়। রাষ্ট্রের প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থা ও বিশ্বাস নষ্ট হয়। রাষ্ট্র যদি জনগণের ওপর এ জন্যে বলপ্রয়োগ করে তাহলে জনগণের মনে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে প্রতিরোধমুলক ভাবধারা জেগে ওঠে। আর রাষ্ট্রও প্রতিশোধ গ্রহণের উদ্দেশ্য পূর্ণ শক্তিতে জেনগণের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। ফলে যে রাষ্ট্র জনকল্যাণে নিযুক্ত থাকার উদ্দেশ্য গঠিত তা-ই গনবিরোধী ও দুর্ধর্ষ অত্যাচারী রাষ্ট্রর রূপ পরিগ্রহ করে বসে। এর ফলে রাষ্ট্র গঠনের উদ্দেশ্যই সম্পূর্ণ ব্যাহত হয়, নিষ্ফল, অর্থহীন হয়ে যায় যাবতীয় শক্তিও ক্ষমতা। আর শেষ পর্যন্ত তা ধ্বংস হতে ও বাধ্য হয়।
উপরোক্ত হাদিস থেকে একথাও প্রমাণিত হয় যে, জনগণকে সব ব্যাপারেই রাষ্ট্রের আনুগত্য করতে হবে—জনগণ পসন্দ করুক আর না-ই করুক। এ পর্যায়ে আর ও একটি হাদিস উল্লেখ্য। রাসূল সা: ইরশাদ করেছেনঃ “মুসলিম নাগরিকদের কর্তব্য হলো রাষ্ট্রের আনুগত্য করা –শুনা ও মেনে চলা। সব ব্যাপারে –তা তাদের পসন্দ হোক আর না-ই হোক”
রাষ্ট্র দেশের সব মানুষকে একই সময় খুশী করতে পারবেনা। সকলের মত সমর্থন নিয়ে কাজ করার ও রাষ্ট্রের সব সময় সম্ভবপর হয় না। আইন ও শাসনকার্য সকল ব্যক্তির মর্জীর উপর নির্ভরশীল হলে কোনো রাষ্ট্র কাজ করতে পারে না। রাষ্ট্রের সব কাজে প্রত্যেকটি ব্যক্তি সন্তুষ্ট হবে এমন কথা বলা যায় না। বরং দেখা যায়, একটি কাজে কিছু লোক সন্তুষ্ট হলে ও অপর কিছু লোক তাতে নিশ্চয়ই অসন্তুষ্ট হয়েছে। তাই সবাইকে খুশি ও রাজী করা রাষ্ট্রের কাজ নয়। সঠিকভাবে সমস্ত মানুষের কল্যাণের উদ্দেশ্যই রাষ্ট্রকে কাজ করতে হবে। আইন ও শাসন চালাতে হবে। অতএব রাষ্ট্রীয় কাজ কর্মকে খামখেয়ালীর মানদণ্ডে বিচার করা উচিত হবে না কখনো। আর মনমতো কাজ করাও রাষ্ট্রীয় আনুগত্যের পূর্ব শর্ত হওয়া উচিত হতে পারে না?জনগণ ইচ্ছা হলে রাষ্ট্রের আনুগত্য করবে, না হলে করবে না এরূপ মনোভাব কোনো রাষ্ট্রই চলতে পারে না। জনগণের ইচ্ছামূলক আনুগত্য রাষ্ট্র গঠন ও পরিচালনের অনুকূলে নয়, বরং তা তার সম্পূর্ণ পরিপন্থী। বস্তুত রাষ্ট্রের অধীন সব মানুষকেই আনুগত্য স্বীকার করতে হবে। অনুগত হয়ে থাকতে হবে। এ ব্যাপারে কাউকে কোনো বিশেষ সুযোগ সুবিধা দেয়া যেতে পারে না।
অতএব রাষ্ট্রের আনুগত্য আন্তরিকতা ও ঔকান্তিক নিষ্ঠা সহকারই হতে হবে। তাকে মনে করতে হবে যে, রাষ্ট্রর আনুগত্য করে সে আল্লাহ এবং তার রাসূল সা: এরই আনুগত্য করেছে। কেননা আল্লাই নাগরিকদের প্রতি নির্দেশ দিয়েছেন। অবশ্য তা আল্লাহ ও রাসূল স: এর আনুগত্যের ওপর ভিত্তিশীল, রাষ্ট্রকে এজন্যে আল্লাহর দেয়া বিধান অনুযায়ী কাজ করতে হবে। তাহলে জনগণ যেমন নামাজে ইমামের আনুগত্য করে থাকে, রাষ্ট্রীয় ব্যাপারেও তেমনি তারা মেনে চলবে রাষ্ট্র পরিচালক তথা প্রশাসন কর্তৃপক্ষকে।
মনে রাখতে হবে, ইসলামে এ রাষ্ট্রানুগত্য শর্তহীন নয়। হাদিসে সে জন্যে একটি মাত্র শর্তেরই উল্লেখ করা হয়েছে। সে শর্ত হলো, রাষ্ট্র এমন কাজ করার আদেশ দিতে পারবে না যা পালন করলে আল্লাহ ও তার রাসূল স: এর নাফরমানী করা হয়। এরূপ কোন কাজের নির্দেশ দিলে জনগণ তা করতে বাধ্য হবে না। কেননা, হারাম কাজে রাষ্ট্রের আনুগত্য কারাও হারাম। হাদিসে এ সম্পর্কে বলা হয়েছেঃ
*****আরবী******
কোনো নাফরমানীমূলক কাজের আদেশ করা হলে জনগণ তা ও শুনবে না, পালন করবে না।
প্রথমোক্ত আয়াতে তাফসীরে মুফাসসিরগণ একথাই বলেছেন স্পষ্ট ভাষায়। আল্লামা ইবনে কাসীর বলেছেনঃ
*****আরবী******
“ রাষ্ট্রীয় দায়িত্বসম্পন্ন লোকদের আনুগত্য করতে হবে সে সব কাজে যা করলে আল্লাহর আনুগত্য হবে। আল্লাহর নাফরমানীর কাজে কোনা আনুগত্য করা চলে না। কেননা আল্লাহর নাফরমাণীমুলক কাজে সৃষ্টির আনুগত্য করা যেতে পারে না। ” মু’মিন মহিলাদের ‘বায়আত’গ্রহনের ব্যাপারে আল্লাহ তায়ালা রাসূলে করীম স: কে সম্বোধন করে এরশাদ করেছেনঃ
*****আরবী******
হে নবী তোমার কাছে মুমিন মহিলারা যখন বায়আত গ্রহণের জন্যে আসবে তখন তুমি বায়আত গ্রহন করবে একথার ওপর যে তারা শরীক করবে না কোন কিছুকে আল্লাহর সাথে তারা চুরি করবে না তারা ব্যভিচার করবে না তারা তাদের সন্তানদের হত্যা করবে না তার মিথ্যা-মিথ্যে ও প্রকাশ্যে নির্লজ্জভাবে কারোর ওপর অকারণে দোষারোপ করবে না। এবং তারা ন্যায়সঙ্গত কাজে –হে নবী ! তোমরা নাফরমানী করবে না। এসব শর্তে তুমি তাদের কাছ থেকে বায়আত গ্রহন করলে তাদের জন্যে অআল্লাহর কাছে মাগফিরাত চাইবে। নিশ্চয়ই আল্লাহ ক্ষমাশীল ও দয়াবান। সুরা আলমুমতাহিনাঃ ১২
রাসূলে করীম স: নিশ্চয়ই কখনো খারাপ কাজের নির্দেশ দিতেন না আল্লাহর নাফরমানীমূলক কাজ করতে বলতেন না। একথা সুস্পষ্ট কিন্তু তা সত্বেও কুরআনের পূর্বোদ্ধৃত মারূফ বা ন্যায়সঙ্গত কাজের শর্তের কথা স্পষ্ট ভাষায় উল্লেখ করা হয়েছে। এ থেকে এক সাথে দুটি কথা প্রমাণিত হয়ঃ আনুগত্য শর্তহীন হতে পারে না এবং আল্লাহ ও রাসূল স: এর নাফরমানীর আনুগত্য করা যেতে পারে না।
আল্লাহর নাফরমানীর আদেশ পালন করা যেতে পারে না তা করা হলে শরীয়তের সীমালঙ্ঘন করা হবে। সে জন্যে আদেশদাতা ও আদেশ পালন কারী উভয়কেই কঠিন শাস্তি ভোগ করতে হবে। নবী করীম স: জনৈক আনছারীর নেতৃত্বে একটি সেনাবাহিনী প্রেরণ করেছিলেন। লোকদেরকে সে আনসারীর আনুগত্য করার নির্দেশ দিয়েছিলেন। বিদেশে থাকাকালে সেনাধ্যক্ষ সাথের লোকদের ওপর অসন্তুষ্ট হয়ে তাদের কাষ্ঠ সংগ্রহ করার নির্দেশ দেয়। তা দিয়ে অগ্নিকুন্ড জ্বালানো হলে সবাইকে তাতে ঝাঁপ দেয়ার নির্দেশ দেয়। পরে এ ঘটনা রাসূল স: এর কাছে উল্লেখ করা হলে তিনি বলেনঃ
*****আরবী******
লোকেরা যদি সে অগ্নিকান্ডে ঝাঁপিয়ে পড়তো তাহলে তারা চিরদিন জাহান্নামী হতো। আসলে ন্যায় সংগত কাজেই নেতার আদেশের আনুগত্য করতে হবে নাফরমানী ও অন্যায় কাজে নয়। সহীহ বোখারী ১ম খন্ড ১১৩-১১৪ পৃ.
অন্যায়কারী অনাচারী ও অত্যাচারী রাষ্ট্র শাসকদের আনুগত্য স্বীকার করা এবং তাদের শরীয়ত বিরোধী কাজকর্মে মেনে নেয়া ও সমর্থন করার পরিণাম। অত্যন্ত মারাত্মক। দুনিয়া ও যেমন সে জন্যে দুঃখ ও লাঞ্ছনার সম্মুখীন হতে হয় তেমনি পরকালেও নিমজ্জিত হতে হবে কঠিন আযাবে। এ প্রসঙ্গে কুরআন মজীদে কিয়ামতের দৃশ্য তুলে ধরা হয়েছে।
*****আরবী******
লোকরা বলবে হে আমাদের রব আমরা দুনিয়া তোমাদের নেতৃবৃন্দের ও বড়দের আনুগত্য করেছি। ফলে তারা আমাদের গোমরাহ করেছে। অতএব হে রব তুমি আজ আমাদের দ্বিগুণ আযাব দাও এবং তোমর রহমত থেকে তাদের বহুদূর সরিয়ে দাও। সুরা আল আহযাবঃ৬৭-৬৮
অপর আয়াতে বলা হয়েছে
*****আরবী******
আল্লাহ যখন শাস্তি দিবেন তখন এরূপ অবস্থা দেখা দিবে যে দুনিয়াতে যে সব নেতা ও প্রধান ব্যক্তির অনুসরণ করা হতো তারা নিজ নিজ অনুসারীদের সাথে সকল সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন হওয়ার কথা ঘোষণা করবে। কিন্তু তা সত্বেও তারা অবশ্যই শাস্তি পাবে এবং তাদের সকল উপায়-উপাদানের সম্পর্ক ও কার্যকারণ ধারা ছিন্ন হয়ে যাবে। আর দুনিয়ায় যারা তাদের অনুসরণ করতো তারা বলবে হায় আমাদের যদি আবার সুযোগ দেয়া হতো তাহলে আজ এরা যেমন আমাদের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করে নিজেদের দায়িত্বহীন থাকার কথা প্রকাশ করেছে আমরা ও তাদের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করে দেখিয়ে দিতাম। আল্লাহ অবশ্যই তাদের সকল কাজ-যাকিছু তারা দুনিয়াতে করেছে—তাদের সামনে এমনভাবে উপস্থিত করবেন যে তারা শুধু লজ্জিত হবে ও দুঃখ করবে। কিন্তু জাহান্নামের গর্ত থেকে বের হবার কোন পথই তারা খুঁজে পাবে না। সুরা আল বাকারাঃ১৬৬-১৬৭
অর্থাৎ শরীয়তে আনুগত্যের সীমা নির্দিষ্ট করে দেয়া হয়েছে। মুসলিম উম্মত সে অনুগত্যের সীমাকে কখনোই এবং কিছুতেই লঙ্ঘন করতে পারে না করলে সে জন্যে আল্লাহর কাছে তাদের জবাবদিহি করতে হবে।
দ্বিতীয়ঃ রাষ্ট্রের প্রতিরক্ষার কাজে ঝাঁপিয়ে পড়া
রাষ্ট্রর প্রতিরক্ষার জন্যে প্রয়োজনীয় কাজে ঝাঁপিয়ে পড়া জনগণের দ্বিতীয় কর্তব্য জনগণের উপর রাষ্ট্রের দ্বিতীয় অধিকার। রাষ্ট্রের প্রতিরক্ষার জন্যে যে কোনো কাজ করাকে ইসলাম জিহাদ ফী সাবিলিল্লাহ বলা হয়েছে, কুরআন ও হাদিসে এ বিষয়ে প্রদত্ত উৎসাহ বাণীতে ভরপুর হয়ে রয়েছে। ইসলামে রাষ্ট্রের প্রতিরক্ষার কাজে পূর্ণ শক্তি প্রয়োগ করা জনগণের দীনী ফরয। এ কাজের বিরাট সওয়াবের কথা ঘোষিত হয়েছে কুরআন ও হাদিসে। আর যে লোক এ কাজে কুণ্ঠিত হবে, ইচ্ছা করে গাফলতি দেখাবে তার কঠিন আযাব হওয়ার কথাও বলা হয়েছে। কুরআনের নির্দেশ হলোঃ
*****আরবী******
বের হয়ে পড়ো একাকী বা দলবদ্ধভাবে—হালকাভাবে কিংবা ভারি-ভাবে এবং তোমরা তোমাদের ধন-সম্পদ ও জান প্রাণ দিয়ে জিহাদ করো আল্লাহর পথে। সুরা আত তাওবাঃ ৪১
হাদিসে হযরত আবু যার রা: থেকে বর্ণিত হয়েছে। তিনি বলেন, আমি বললাম
*****আরবী******
ইয়া রাসূল আল্লাহ কোন কাজ সর্বোত্তম? – তিনি বললেনঃ
*****আরবী******
আল্লাহর প্রতি ঈমান আনা এবং তার পথে জিহাদ করা। রিয়াদুস সালেহীন। পৃষ্ঠা ৪৬৯
দেশ রক্ষার জন্যে জিহাদের ব্যবস্থাপনা করা এবং প্রয়োজন মতো জনগণ এ কাজে যাতে করে যোগ দিতে পারে তার পথ উন্মুক্ত করা রাষ্ট্রের কর্তব্য। এ ব্যবস্থাপনা নিশ্চয়ই প্রয়োজন মতো এবং যুগোপযোগী হতে হবে। যুগোপযোগী শক্তি সামর্থ্য ও অস্ত্র-শস্ত্র সংগ্রহ করাতো রাষ্ট্রের পক্ষেই সম্ভব। আর জিহাদের এ ফরজ কেবলমাত্র মুসলিম নাগরিকদের উপর, অমুসলিমদের উপর তা ফরয নয়। কিন্তু অনুগত অমুসলিম নাগরিকও এতে মুসলমানদের সাথে শরীক হতে পারে। প্রতি রক্ষার এ দায়িত্ব পালনের জন্যেই ইসলামী রাষ্ট্রের অমুসলিম নাগরিকদের ওপর জিযিয়া কর ধার্য হয়ে থাকে। কিন্তু তারা যদি প্রত্যক্ষভাবে প্রতিরক্ষা কাজে অংশ গ্রহন করে, তা হলে এ জিযিয়া কর রহিত করা ইসলামী রাষ্ট্রের জন্যে সম্পূর্ণ জায়েয।
— সমাপ্ত—