আযাদী আন্দোলনে আলেম সমাজের ভূমিকা
মাওলানা জুলফিকার আহমদ কিসমতি
লেখকের কথা
ইসলামী আন্দোলন এদেশে যতই এগিয়ে চলেছে, ততই এক শ্রেণীর লোক আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ ওলামায়ে কেরামের ব্যাপারে বেসামাল হয়ে উঠেছে। সাধারণ মানুষ ও যুব সমাজকে বিভ্রান্ত করার জন্যে আলেম সমাজের সংগ্রামী অতীতকে তারা ধামাচাপা দেবার চেষ্টা করছে। ঐসকল লোক নির্লজ্জের মতো বলে বেড়াচ্ছে যে, “আলেমরা এ যাবত কোথায় ছিলেন? তারাই আমাদের উন্নতি-প্রগতির পথে অন্তরায়”।
ওলামায়ে কেরামের রক্তপিচ্ছিল পথ বেয়ে আসা আজাদীর বদৌলতে যেসব লোক আজ বাড়ী-গাড়ীর অধিকারী হয়ে নিঃস্বার্থ সমাজসেবক আলেমদের বিরুদ্ধে এহেন অজ্ঞতাপূর্ণ উক্তি করে, মূলতঃ তাদের জবাব হিসেবেই এ বইখানা লিখতে শুরু করি; কিন্তু প্রয়োজনের তাকিদে দ্রুত প্রকাশের খাতিরে এবং কলেবর বৃদ্ধির আশংকায় অনেক মহৎ সংগ্রামী জীবন সম্পর্কেও বইটিতে আলোচনা করা সম্ভব হয়নি। এ ছাড়া ইসলাম ও আজাদী আন্দোলনের এমন অসংখ্য বীর মোজাহিদ আলেমের কথাও জানা যায়, যাদের ব্যাপারে বিস্তারিত তথ্যাবলী হাতের কাছে না পাওয়ায় সংক্ষিপ্তাকারেও তাদের সম্পর্কে কিছু আলোকপাত করা যায়নি।
অধীনের ক্ষুদ্র প্রচেষ্টায় যা কিছু পরিবেশিত হয়েছে, তাতে যদি কোনোরূপ তত্ত্ব ও তথ্যগত ভুল-ভ্রান্তি কারও নজরে পড়ে কিংবা কোনো মহৎ জীবনের তথ্য কারও জানা থাকে, সে ব্যাপারে অবহিত করলে কৃতার্থের সঙ্গে তা গ্রহণ করব এবং পরবর্তী সংস্করণে তা যোগ করতে চেষ্টা করব। পুস্তকখানা ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদেরকে তাদের ত্যাগী পূর্বসূরীদের প্রেরণায় উজ্জীবিত করে তুলুক –এটাই আল্লাহর কাছে দোয়া রইল।
পরিশেষে অসংখ্য শ্রদ্ধা ও শুকরিয়া আমার মোহতারাম বুজর্গ উস্তাদ হযরত মওলানা নুর মোহাম্মদ আজমী সাহেবের প্রতি যার সংস্পর্শ ও মূল্যবান উপদেশাবলী আমাকে এ জাতীয় কাজে যথেষ্ট সাহায্যও অনুপ্রেরণা যুগিয়েছে।
-লেখক ২০শে জুলই ১৯৭০
প্রকাশকের কথা
আজাদী আন্দোলনে আলেম সমাজের ভূমিকা কি ছিল –এ সম্পর্কে উর্দু ভাষায় অসংখ্য বই-পুস্তক থাকলেও বাংলা ভাষাভাষী পাঠক মহল দীর্ঘ দিন থেকে এ জাতীয় বই-পুস্তকের অভাব অনুভব করে আসছেন। বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদ, লেখক, সাংবাদিক ও কলামিষ্ট মওলানা জুলফিকার আহমদ কিসমতী সাহেব “আজাদী আন্দোলনে আলেম সমাজের সংগ্রামী ভূমিকা” বইখানা লেখার ফলে আমাদের দীর্ঘ দিনের একটি অভাব অনেকটা পূরণ হয়েছে বলে আমরা মনে করি। বই খানা সংক্ষিপ্ত হলেও ইংরেজদের দিল্লী দখলের পর থেকে ১৯৪৭ সালের আগষ্ট পর্যন্ত এক নজরে আলেমদের রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের একটি মোটামুটি চিত্র পাঠকের সামনে ভেসে ওঠে।
গ্রন্থখানার বিষয় বস্তুর গুরুত্বের প্রেক্ষিতেই কলকাতা থেকে প্রকাশিত “ইতিহাস অনুসন্ধান সিরিজ” ৫ম খণ্ডের ৫০ পৃষ্ঠা থেকে ৮৭ পৃষ্ঠায় “মুসলিম লীগ রাজনীতিঃ কয়েকটি প্রশ্নের বিশ্রেষণ” প্রবন্ধের লেখক অমালেন্দু দে স্থানে স্থানে “আজাদী আন্দেলনে আলেম সমাজের সংগ্রামী ভূমিকা”র বহু বরাত দিয়েছেন।
আমাদের বর্তমান প্রজন্ম, ইসলামী আন্দোলনের কর্মীবৃন্দ বিশেষ করে ওলামায়ে কেরাম ও মাদ্রাসা ছাত্র যাদের একটি অংশ মাঝখানে রাজনীতি থেকে প্রায় বিচ্ছিন্ন ছিলেন, তাদের জন্য বর্তমান পরিস্থিতিতে বইখানা যথেষ্ট প্রেরণাদায়ক হবে বলে আমরা মনে করি। বইটির গুরুত্বের প্রতি লক্ষ্য করে আমরা এর তৃতীয় সংস্করণ প্রকাশ করলাম।
পাঠক সমাজে বহু সমাদৃত এই বইখানা পুনঃপ্রকাশের পর জাতীয় নেতৃবৃন্দ ও আলেম সমাজের আন্দোলনের ফলশ্রুতিতে অর্জিত স্বাধীন দেশে ৪৭ সাল থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলনের দীর্ঘ ইতিহাস সম্বলিত লেখকের আরেকখানা গ্রন্থ প্রকাশের আশা রইল।
-প্রকাশক
অভিমত
[এক]
মহানবী (সাঃ)-এর যুগ থেকে নিয়ে শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে বিভিন্ন ভূখণ্ডের খোদা-বিমুখ শাসক ও রাষ্ট্রশক্তির দাসত্ব-নিগঢ় থেকে মানবতাকে আজাদ করার জন্যে মুসলমানগণ যে সংগ্রাম করে আসছে, সেটাই প্রকৃত আজাদী সংগ্রাম। এ সংগ্রামে তারা জয়যুক্তও হয়েছে। সার বিশ্বে এক সময় শত শত বছর ধরে তাদেরই প্রভাব প্রতিপত্তি অধিক ছিল। কিন্তু শাসকদের অনেকের আদর্শচ্যুতি, ভোগবিলাস, আত্মবিলাস ও লোভলালসা হেতু এ জাতি তার শাসক সুলভ মর্যাদা ও প্রভাব-প্রতিপত্তি অনেকটা খুইয়ে বসে। পৃথিবীর বিভিন্ন মুসলিম ভূখণ্ড ইংরেজদের করতলগত হয়ে যায়। দীর্ঘ নির্যাতনের পর মুসলমানদের মধ্যে পরিশেষে দেখা দেয় আত্মজাগৃতি-ফিরে আসে সম্বিত। তারা ইংরেজ শক্তির অত্যাচার, উৎপীড়ন, জেল-জুলুম, ফাঁসিকে এতটুকুও পরোয়া না করে ধন-সম্পদ, আত্মীয়-স্বজন এমনকি নিজেদের জীবন কোরবান করেও পরিচালনা করেছেন মুসলমানদের আত্মনিয়ন্ত্রণ অধিকার প্রতিষ্ঠার সর্বাত্মক আন্দোলন ও সংগ্রাম।
পাক-ভারত-বাংলা উপমহাদেশে খ্রীষ্টীয় আঠার শতকের প্রথম হতে বিশ শতকের মধ্যভাগ পর্যন্ত আলেম সমাজ ইংরেজ ও তাদের দোসর শিখ-হিন্দু নেতৃত্বের বিরুদ্ধে যে সংগ্রাম করেছেন, তা এ দেশে ইসলামী মূল্যবোধের প্রাধান্য পুনঃপ্রতিষ্ঠার সর্বাত্মক আন্দোলনেরই এক গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায় ছিল।
এ অধ্যায়ে ইংরেজদের অমানুষিক জুলুম সীমাহীন উৎপীড়ন বেপরোয়া ফাঁসীদান এবং হিন্দুদের মুসলিম-নিধন যজ্ঞকে বিন্দুমাত্রও পরোয়া না করে যে মহান নেতৃবৃন্দ পাক-ভারতের উত্তর পশ্চিম সীমান্ত হতে আরম্ভ করে পূর্ব সীমান্ত পর্যন্ত দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলেছিলেন এবং প্রায় দু’শ বছর অবিরাম সংগ্রামের পর ঈপ্সিত আজাদী হাসিল করেছিলেন, তাঁদের মধ্যে যথাক্রমে সাইয়েদ আহমদ শহীদ বেরলভী, ইসমাইল শহীদ দেহলভী, হাজী শরীয়তুল্লাহ, হাজী শহীদ তিতুমীর (নেসার আলী), মওলানা বেলায়েত আলী, মওলানা ইয়াহহিয়া আলী, মওলানা জাফর থানেশ্বরী, মওলানা আহমদুল্লাহ, মওলানা মুহাম্মদ হোসাইন আজিমাবাদী, মওলানা ওবায়দুল্লাহ সিন্ধী, শায়খুল হিন্দু মওলানা মাহমুদুল হাসান, মওলানা শাববীর আহমদ ওসমানী, মওলানা হোসাইন আহমদ মাদানী, মওলানা আজাদ সোবহানী, মওলানা হাসরাৎ মুহানী, মওলানা আতাউল্লাহ শাহ বুখারী, মওলানা আবদুল্লাহিল বাকী, মওলানা আবদুল্লাহিল কাফী, পীর দুদু মিঞা, পীর বাদশাহ মিঞা, মওলানা রুহুল আমীন, ফুরফুরার পীর মওলানা আবুবকর সিদ্দিক, শর্শিনার পীর মওলানা নেছারুদ্দীন সাহেব, মওলানা আবদুল হামীদ খান ভাষানী প্রমুখ আরেমের নাম সর্বাধিক উল্লেখযোগ্য। আর এ অধ্যায়ের শেষ প্রান্তে এসে, বিশ শতকের দ্বিতীয় দশকের শেষভাগ হতে যে বহু ইংরেজী শিক্ষিত মুসলিম নেতা এ সংগ্রামে শরীক হয়ে একে অধিকতর জোরদার করে তুলেছিলেন, তাদের মধ্যে সামীহুলমূলক, মওলানা মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ, শেরে বাংলা মওলভী এ কে ফজলুল হক, হোসাইন শহীদ সোহরাওয়ার্দী প্রমুখের নাম সর্বাগ্রে স্মরণীয়।
আজাদী আন্দোলনে “আলেম সমাজের সংগ্রামী ভূমিকা” –পুস্তিকায় বিশিষ্ট লেখক, সাংবাদিক মওলানা জুলফিকার আহমদ কিসমতী ইসলামী রাষ্ট্রের পুনঃ প্রতিষ্ঠার প্রয়াসে কিঞ্চিৎ আভাস মাত্র দিয়েছেন। বাংলা ভাষায় এ আন্দোলনের কোন বিশ্বস্ত ও প্রামাণ্য ইতিহাস আজও রচিত হয়নি বলে লেখকের এ প্রাথমিক প্রচেষ্টা সীমিত হলেও প্রকৃতির দিক দিয়ে যেমন মৌলিক, তেমনি অবদানের দিক থেকে প্রথম সারির। বিষয় ও বিন্যাসের কোথাও ত্রুটি বিচ্যুতি থাকলেও, পুস্তিকাখানি ইসলামী জনতার দৃষ্টিপথে তাদের শ্রদ্ধাভাজন নায়েবে নবী ওলামায়ে কেরামের চিরন্তন সংগ্রামের একটি দিক তুলে ধরবে বলেই আমার বিশ্বাস।
ইতি–
মুহাম্মদ আবদুল রাজ্জাক
[প্রধান অধ্যক্ষ] রিসার্চ একাডেমী,
ফরিদাবাদ, ঢাকা-৪
১০ই জুলাই ১৯৭০ইং
অভিমত
[দুই]
আলেমগণ নবী রাসূলদের ওয়ারিছ বা উত্তরাধিকারী। এ উত্তরাধিকার বিষয়-সম্পদের নয় –আল্লাহ প্রদত্ত জীন বিধানকে পূর্ণাঙ্গ রূপে মানব সমাজে প্রতিষ্ঠাকল্পে সংগ্রাম-সাধনা, ত্যাগ-তিতিক্ষা, কষ্ট-পরিশ্রম ও নিঃস্বার্থ আন্দোলনের। নবী-রাসূলগণ যেভাবে মানব জাতিকে মানুষের গোলামী, জুলুম, নিপীড়ন, শোষণ থেকে আজাদ করার জন্যে সংগ্রাম করেছেন, তাদেরকে আল্লাহর নিরপেক্ষ ইনসাফপূর্ণ আইন ও শাসন বিধান অনুসরণের আহবান জানিয়ে তাদের উভয় জাহানের ইনসাফপূর্ণ আইন ও শাসন বিধান অনুসরণের আহবান জানিয়ে তাদের উভয় জাহাদের মুক্তিপথ দেখিয়ে গেছেন, আলেমগণের এই উত্তরাধিকার দায়িত্বও একমাত্র এ পন্থায়ই সম্পাদিত হতে পারে। -এ ছাড়া অন্য কোন পন্থায় নয়। যুগে যুগে নবী-রসূলদের খাঁটি ওয়ারিছ তথা উত্তরাধিকারীরা ঐ একই পন্থায়ই তাদের উক্ত ওরাছাতের দায়িত্ব পালন করে গেছেন। তাঁরা নিজেদের কার্যাবলী দ্বারা আজকের ন্যায় এমনভাবে সমাজের সামনে ইসলামকে তুলে ধরেননি যাতে মনে হতো, ইসলাম শুধু মসজিদ-মাদ্রাসা ও এগুলোর সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদেরই পালনীয় বিষয়, -মসজিদের ইমাম বা মাদ্রাসায় শিক্ষিতদের সাথে রাষ্ট্র, সমাজ, দেশরক্ষা, যুদ্ধক্ষেত্র ও শিল্প কারখানায় কর্মরত মেহনতী মানুষ, দেশগড়া ও জাতীয় সমস্যাবলীর নেই কোনো সম্পর্ক।
বলাবাহুল্য, মুসলিম সমাজে ‘ওরাছাতুল আম্বিয়া’ বা নবীদের উত্তরাধিকারীদের এই অনুভূতি যখনই আলেমদের মধ্য থেকে লোপ পায় এবং জনসাধারণ মেহরাব-মিম্বর থেকে নামাজ-রোজা কয়েকটি বিশেষ আনুষ্ঠানিক ইবাদতের ব্যাপারেই শুধু ইমামদের ইমামতী বা নেতৃত্ব পেলেও তাদের স্বাস্থ্য, চিকিৎসা, পেটের সমস্যা, আবাসিক সমস্যার সমাধানের ব্যাপারে কোরআন-নির্দেশিত সমাধানের ইমামতি বা নেতৃত্ব থেকে তারা বঞ্চিত হয়, তখনই মানুষ ঐ সকল ব্যাপারে শূন্যতা পূরণের খেয়ালে বিদেশী ও বিজাতীয় মতাদর্শের আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়। ফলে তাদের এই পথভ্রষ্টতার জন্যে মূলতঃ কারা দায়ী হবে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। আমাদের সমাজ এই বিভ্রান্তিরই শিকার।
সুপরিচিত লেখক ও সাংবাদিক মওলানা জুলফিকার আহমদ কিসমতী এই উপমহাদেশে যে সব মহান সংগ্রামী আলেম যথার্থ ‘ওরাছাতুল আম্বিয়া’ হিসাবে নিজেদের দায়িত্ব পালন করে গেছেন এবং স্বাধীন ও শোষণহীন ইসলামী কল্যাণ রাষ্ট্র কায়েমের জন্য রক্তক্ষয়ী সংগ্রাম করে গেছেন, তাদের সংগ্রামী জীবনের বিস্মৃত সেই দিকটিকে সামনে তুলে ধরেছেন। এর ফলে সংক্ষিপ্তাকারে হলেও ইতিহাসের এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় আমাদের সামনে আসলো। ইসলামী আন্দোলনের সাথে সক্রিয় সংশ্লিষ্টতার কারণে লেখক নিজেও ইসলামের সংগ্রামী ভাবধারায় বিশ্বাসী। এ বইটির বিন্যাসে তার ছাপ সুস্পষ্ট। লেখকের এ বইটির বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, এদেশের আজাদী আন্দোলনে আলেম সমাজের আন্দোলন ও সংগ্রামকে তিনি মোগল পতন যুগে শাহ ওয়ালীউল্লাহর চিন্তাধারা থেকে নিয়ে দেশ স্বাধীন হওয়া পর্যন্ত পর্যায়ক্রমে ধারাবাহিকতার সঙ্গে পাঠক সমীপে তুলে ধরেছেন।
বইখানা সংক্ষিপ্ত হলেও একদিকে যেমন তা ঐতিহ্যবিস্মৃত এক শ্রেণীর ধর্মনিরপেক্ষ রাজনীতিক ও আধুনিক শিক্ষিত যুবকের সামনে “আলেমরা এতদিন কোথঅয় ছিলেন?” –তার সন্ধান দেবে, তেমনি আজকের ইসলামী আন্দোলনের সংগ্রামী তরুণ সমাজ, বিশেষ করে ওলামা ও মাদ্রাসা ছাত্রদেরকে নিজেদের ঐতিহ্য চেতনায় করে তুলবে উজ্জীবিত। নিরপেক্ষ দৃষ্টিভঙ্গিতে লিখিত এ বইটির আমি বহুল প্রচার কামনা করি।
-আবদুল মান্নান তালিব
বহু গ্রন্থ প্রণেতা ও
সম্পাদক –মাসিক পৃথিবী, ঢাকা
তাং ১/৭/৭০ ইং
প্রপ্
প্রথম সংস্করণের মুখবন্ধ
একটি জাতির জীবন অতীতের কীর্তি-কলাপ, শৌর্যবীর্য তার অগ্রগতির পথে আলোর দিশারীরূপে কাজ করে। জাতির আত্ম-প্রতিষ্ঠার সাধনা ও সংগ্রামে অতীত দিনের স্মৃতি যোগায় প্রেরনা। নিজেদের সংগ্রামী অতীতকে চেনা ও জানার জন্য তাই জাতীয় জীবনে ইতিহাসের গুরুত্ব অপরিসীম। যে জাতি নিজ ইতিহাস সম্পর্কে অজ্ঞ, তাকে পদে পদেই হতে হয় পরাশ্রয়ী। বিজাতীয় সভ্যতা, সংস্কৃতি ও ভাবধারার শিকারে পরিণত হয়ে ডোর-কাটা ঘুড়ির মতোই মহাশূন্যে ঘুরপাক থেকে হয় তাকে। উপমহাদেশের আজাদী আন্দোলনের ইতিহাস এই ভূ-খণ্ডের মুসলমানদের একটি গৌরবময় সংগ্রামী ইতিহাস। তৎকালীন মুসলিম শিক্ষিত ব্যক্তি তথা আলেম সমাজই এ আন্দোলনের সূচনা করেন। এবং পুরোভাগে থেকৈ ১৮৫৭ সাল পর্যন্ত এককভাবে এর নেতৃত্ব দেন। তারপরও উপমহাদেশে স্বতন্ত্র মুসলিম রাষ্ট্র পাকিস্তান প্রতিষ্ঠা পর্যন্ত অন্যান্য জাতীয় নেতৃবৃন্দের সঙ্গে তাতে সক্রিয়ভাবে তাঁরা জড়িত থাকেন। কিন্তু পরিতাপের বিষয় যে, এক শ্রেণীর লোক নানানভাবে আমাদের বংশধরদেরেকে সেই গৌরবময় ইতিহাস থেকে অন্ধকারে রাখতে চায়।
উপমহাদেশের আজাদ আন্দোলনে এই ভূ-খণ্ডের আলেম সমাজের কি ভূমিকা ছিল, এটা নিয়ে দেশ বিভাগের দীর্ঘ দিন পর কিছু লিখতে গিয়ে স্বাভাবিকভাবে প্রশ্ন জাগে যে, সত্যি কি ব্যাপারটি এমন যে, এ নিয়ে রীতিমতো গবেষণা করে এটা প্রমাণ করতে হবে? কেননা যে বিষয়টি দিবালোকের ন্যায় সুস্পষ্ট, সেটি কাউকে দেখিয়ে দেওয়ার জন্য হেজাক লাইটের ব্যবস্থা করা বা কারুর চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়ার দরকার হয় না। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস, তাই করতে হচ্ছে। ১৯৪৭ সালের পর থেকে আমাদের শাসকগোষ্ঠী বিশেষ করে পাকিস্তানের কর্ণধারগণ দেশকে সাহিত্যিক, সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সকল দিক থেকে এমন চরম বিভ্রান্তির পথে নিয়ে গিয়েছেন, যার ফলে মুসলিম যুবকদের মনে একথা বদ্ধমূল থাকা অসম্ভব হয়ে দাঁড়ায় যে, অবিভক্ত ভারতের আলেমগণই ছিলেন উপমহাদেশের মুক্তি-আন্দোলনের পুরোধা, তাঁরাই প্রথমে মুসলমানদের যাবতীয় স্বাধিকার প্রতিষ্ঠার দাবী করতে গিয়ে ইংরেজ শাসকদের হাতে অকথ্য জুলুম-নির্যাতন হাসিমুখে বরণ করে নিয়েছিলেন, ফাঁসিকাষ্ঠে ঝুলেছিলেন, দ্বীপান্তরে হয়েছিলেন নির্বাসিত। তাঁরাই আঘাতের পর আঘাত খেয়েও সফলতার দুর্জয় আকংখা নিয়ে ইংরেজদের বিরুদ্ধে বারংবার অস্ত্র ধারণ করেছিলেন। আর এমনিভাবে উপমহাদেশের মুসলমানদের মধ্যে অক্ষুন্ন রেখেছিলেন ইসলামী প্রেরণা, ইসলাশী শিক্ষা ও সংস্কৃতিবোধ। পাকিস্তান প্রতিষ্ঠাকালের মূল প্রতিশ্রুতি ইষলামী সমাজ ব্যবস্থা কায়েম করার কথা বিস্মৃত হয়ে যাওয়ায় দেশের শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতি, শিক্ষা, সাংবাদিকতা-প্রচার মাধ্যম যাবতীয় বাহনের বদৌলতে এমন সব যুবকও সৃষ্টি হয়েছে, যারা আজ ক্ষেত্র বিশেষে স্পষ্টরূপে একথা বলতে দ্বিধা করে না যে, আলেম সমাজই আমাদের সর্বনাশের মূল –এ সমাজের জন্য আলেমদের কোন দান নেই। শুধু তারাই নয়, যেই পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পটভূমি একমাত্র আলেমদের একক সংগ্রামে রচিত হয়েছিল, এমন কি এর সৃষ্টিতেও অন্যান্য জাতীয় নেতৃবৃন্দের সাথে যে সব আলেমের বিরাট অবদান রয়েছে, সেই দেশের শাসন-মসনদে সমাসীন বিলাস জীবন উপভোগকারী কোন কোন দায়িত্বশীল ব্যক্তিকে পর্যন্ত নির্লজ্জের মতো আলেমদের সমালোচনা করতে দেখা যায়। যদিও শত চিৎকার সত্ত্বেও জাতির নিঃস্বার্থ সেবক আলেমদের জীবন-মান উন্নত করার ব্যাপারে তাদের কোনরূপ মাথা ঘামাতে দেখা যায়নি।
একটি ষড়যন্ত্র
আজ প্রায় আড়াই যুগ পরেও [১৯৭০ইং] ঐ সকল সংগ্রামী আলেমের জীবনী সহ আমাদের জাতীয় ইতিহাস রচিত হতে পারলোনা কেন? হবে কিনা বলার উপায় নেই। কিন্তু আজ পর্যন্ত স্বাধীনতা আন্দোলনের অগ্রনায়ক ও এর পটভূমি রচনাকারী হিসাবে শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানের পাঠ্যপুস্তকে ও পত্র-পত্রিকায় যে সকল ব্যক্তিত্বের জীবনালেখ্য খুটিনাটি বিষয় সহ বিস্তারিত আলোচিত হয়ে থাকে, তন্মধ্যে গুটি কয়েক আলেম ছাড়া অধিকাংশের ব্যাপারে সরকারী পর্যায়ে কেন উপযুক্ত বই-পুস্তক রচিত ও ব্যাপকভাবে তাদের অবস্থা সম্পর্কে চর্চা হলো না? এটা কি কোন ষড়যন্ত্রের ফল? অবিভক্ত ভারতের নিগৃহীত ও নির্যাতিত মুসলমানদের মুক্তির দিশারী এ সকল ওলাময়ে কেরামের সংগ্রামী জীবন আমাদের যুব-সমাজের সামনে যথাযথ বিদ্যমান থাকলে কিছুতেই আজ এ রূপ প্রশ্ন দেখা দিতে পারতো না, যার ফলে আলেম সমাজের একটি বিরাট অংশও আজ নিজেদের অগ্রপথিকদের সংগ্রামী ঐতিহ্যকে বিস্মৃত হতো না এবং এদেশ সম্পূর্ণরূপে নিছক বস্তুবাদী শিক্ষিতদের খপ্পরে পড়ে বর্তমানের ন্যায় সামাজিক ও রাজনৈতিক অশান্তি দেখা দিতনা। জাতিকেও আদর্শিক সংঘাতের সম্মুখীন হতে হতো না। স্মরণ রাখা দরকার যে, জাতির শ্রদ্ধেয় পূর্বসূরীদের প্রতি এই অবজ্ঞত পারে।
সব চাইতে পরিতাপের বিষয় হচ্ছে এই যে, মুক্তি-সংগ্রামের অগ্রনায়কদের মধ্যেও নিদেন পক্ষে যে কয়েকজন আলেমের নাম ভারত-বিভাগের পর বিশেষভাবে আলোচিত হতে দেখা গেছে, তাদের সম্পর্কে কলম ধরতেও আমাদের আধুনিক লেখকগণ তেমন উদারতার পরিচয় দিতে পারছেন না। উপমহাদেশে মুসলমানদের ধর্মীয়, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক সার্বিক স্বার্থরক্ষার জন্যে স্বতন্ত্র রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলনের অন্যতম সংগ্রামী নেতা মরহুম মওলানা শাববীর আহমদ ওসমানী সম্পর্কেতো কিছু লেখা হয় না বল্লেই চলে, এমনকি উপমহাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের পথিকৃত শহীদে বালাকোট সাইয়েদ আহমদ শহীদ বেরলভী ও তাঁর ত্যাগী সংপিসাথীদের সম্পর্কে লিখতে গিয়েও যেন তাদের কলম এগুতে চায় না। তাঁরই শিষ্য বাংলার শহীদ তিতুমীর অর্থাৎ মওলানা হাজী নেছার আলী যে, ‘মওলানা’ ছিলেন এবং তদানীন্তন কালের একজন ত্যাগী মোজাহেদ ছিলেন, তাঁর এই পরিচয়টি দিতে তাঁরা কার্পণ্য দেখান। অথচ বাংলাদেশের ইসলামী আন্দোলনের এই আলেম নেতা বাংলার মুসলমান নিয়ে একমাত্র ইসলামের খাতিরে স্বাধিকার প্রতিষ্ঠায় ইংরেজদের সঙ্গে বীরের ন্যায় সংগ্রাম করে শাহাদাত বরণ করেছিলেন। তাঁর সংগ্রামী জীবনকে আমাদের সামনে যেভাবে তুলে ধরা হয়, তাতে তথাকথিত ধর্মনিরপেক্ষ, আঞ্চলিক জাতীয়তাবাদী এ যুগের কোনো নেতার ছবিই ভেসে ওঠে। এথেকে এটাই সুস্পষ্ট হয়ে ওঠে যে, এদেশে সুপরিকল্পিত ষড়যন্ত্র সক্রিয়। এই মহলটি ইসলাম ও ইসলামী মূল্যবোধকে নষ্ট করার জন্যে যেভাবে অক্লান্ত চেষ্টা করে যাচ্ছে, তেমনিভাবে ভবিষ্যত বংশধর বিশেষ করে ইসলামী আদর্শের পতাকাবাহী যুবকবৃন্দ বিশেষ করে আলেম সমাজও যাতে তাদের সংগ্রামী পূর্বপুরুষদের গৌরবোজ্জ্বল কীর্তি সম্পূর্ণ অন্ধকারে থাকে, সেই চেষ্টায় তারা নিয়োজিত। অন্যথায় এর কি যুক্তি থাকতে পারে যে, এ পথের সামান্যতম দানও যাদের রয়েছে, তাদের জীবন কাহিনীও তারা যেখানে ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে বই-পুস্তক ও পত্র-পত্রিকায় লিখতে পারেন, সেক্ষেত্রে উপমহাদেশের আজাদী আন্দোলনের পটভূমি রচনাকারী ও মুসলিম রাষ্ট্র পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে সক্রিয় অংশ গ্রহণকারী বিশিষ্ট আলেম নেতাগণ তাদের লেখায় স্থান পান না?
এই লুকু চুরিরর মতলব যদি হয় ধর্মনিরপেক্ষতা চালু করা, এর খেসারত সুদূর ভবিষ্যতে একদিন নিজেদেরকে তো দিতে হবেই –গোটা দেশবাসীকেও দিতে হবে।
সব চাইতে অধিক দুঃখজনক ব্যাপার হচ্ছে এই যে, এপথের সর্বস্বীকৃত নেতাদেরকে আজ বিকৃতভাবে আধুনিক তরুণদের সামনে পেশ করার আত্মঘাতি প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। একথা অবিশ্বাস্য হলেও সত্য যে, পঞ্চাশের দশকের টেক্সট বুক বোর্ডের একটি ইতিহাস পুস্তকে উপমহাদেশের মুসলমানদের জাতীয় চেতনার উৎস সাইয়েদ আহমদ বেরলভী সম্পর্কে এই নির্লজ্জ ও বিকৃত তথ্য পরিবেশন করা হয় যে, তিনি নাকি “সীমান্তবর্তী শিখদিগকে বিব্রত রাখিয়া ইংরেজদের অধিকারকে সুরক্ষিত করিয়াছিলেন”। শুধু তাই নয়, তাঁর মোজাহেদ বাহিনীর সদস্যগণ নাকি “লুটতরাজ (দস্যুবৃত্তি) করে মুক্তিযোদ্ধাদের রসদ সংগ্রহ করিতেন”। এছাড়া তাঁর সংগঠন নাকি ছিলো –“শান্তিভঙ্গকারী দল”। এ থেকে কি এটাই প্রতীয়মান হয়না যে, পাকিস্তানী শাসক গোষ্ঠীর অযোগ্যতার সুযোগ নিয়ে তখনকার শিক্ষা ব্যবস্থায় শুরু থেকেই ইসলাম বিরোধী ইঁদুরেরা জেঁকে বসেছিল, যারা তলে তলে সুকৌশলে ইসলাম বিরোধী শিষ্য এ দেশে তৈরীতে নিয়োজিত ছিল।
উক্ত আন্দোলনে বাংলাদেশ থেকে যে সকল মুক্তিযোদ্ধা অংশ গ্রহণ করেছিলেন, তাদের নিয়ে আজ আমরা এতদিন যেখানে দলমত নির্বিশেষ সকলে গর্ব করে আসছি এবং এই গোটা বালাকোট আন্দোলনও এসব সংগ্রামী মোজাহেদের প্রেরণায় উদ্ধুদ্ধ হয়ে ৪৭-এর আজাদী আন্দোলন করেছি এবং এখনও যাবতীয় অন্যায় ও অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে সংগ্রাম করছি, তাদের সম্পর্কে যদি দেশের অগণিত শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানের লক্ষ লক্ষ ছাত্রকে এরূপ ভ্রান্ত ধারণা দেয়া হয়, তাহলে একে শুধু নিজস্ব ইতিহাসই নয় দস্তুর মতো এদেশ ও জাতির বিরুদ্ধে গোষ্ঠী বিশেষের ষড়যন্ত্র বলা র্ছাড়া উপায় থাকে কি?
শুধু তাই নয়, টেক্সট বুক বোর্ডের উক্ত পুস্তকটির অপর এক স্থানে ইসলামী রেনেসাঁর অগ্রদূত মহামনীষী দার্শনিক ইমাম শাহ ওয়ালিউল্লাহ দেহলভীকেও কটাক্ষ করতে বাদ দেয়া হয়নি। পুস্তকটিতে তাঁর সম্পর্কে এভাবে মন্তব্য করা হয় যে, “আহমদ শাহ আবদালীর দিল্লী আক্রমণের পিছনে তৎকালীন ধর্মীয় নেতা শাহ ওয়ালিউল্লাহর আমন্ত্রণই কার্যত দায়ী। তিনি মারাঠা ও শিখ প্রাধান্য সহ্য করিতে পারিতেন না”। অথচ এ কথা ইতিহাস পাঠক মাত্রেরই জানার কথা যে, গাজী আবদালী ঐ সময় মুসলমানদের জীবন মরণ সন্ধিক্ষণে তাদেরকে শিখ-মারাঠাদের হাত থেকে রক্ষা করার জন্যেই এসেছিলেন এবং ঐতিহাসিক পানিপথের সর্বশেষ যুদ্ধে মারাঠা শক্তিকে সম্পূর্ণরূপে পর্যুদস্ত করে মুসলমানদেরকে বিজয়ের উচ্চাসনে প্রতিষ্ঠিত করে গেছেন। শাহ সাবেহের অভিপ্রায়ে যেই মুহুর্তে মোগল প্রশাসনের আমীরুল উমারা নজীবুদ্দৌলা আবদালীকে আমন্ত্রণ করে এনেছিলেন, সে সময় শিখ-মারাঠাদের তরবারীর আঘাতে মুসলমানরা খান খান হচ্ছিল, তাদের জানমালের ছিলনা কোন নিরাপত্তা। তাছাড়া মহাপ্রাণ আহমদ শাহ আবদালী যে ক্ষমতার লিপ্সা নিয়ে যে এ ডাকে সাড়া দেননি তার বড় প্রমাণ হলো, যুদ্ধজয়ের পরক্ষণেই দিল্লীর শাসকদের হাতে তিনি ক্ষমতা চেড়ে দিয়ে স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করেছিলেন।
যা হোক, দেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় ইসলাম বিরোধী ছদ্মবেশী মুনাফিকদের এ সব অশুভ তৎপরতা লক্ষ্য করেই দীর্ঘ দিন থেকে এ ব্যাপারে বিস্তারিত লেখার কথা চিন্তা করে আসছি। কিন্তু তার পূর্বেই সংক্ষিপ্তাকারে উপমহাদেশের আলেমদের সম্পর্কে একখানা ছোট্ট বইয়ের মাধ্যমে তাদের সমাজের সামনে তুলে ধরার জন্যে কিছু সমাজ দরদী মুরব্বীর পক্ষ থেকে তাগিদ আসে। বইখানা সংক্ষিপ্ত হলেও উপমহাদেশে ইষলামী রেনেঁসা থেকে ৪৭-এ স্বতন্ত্র ‘মুসলিম রাষ্ট্র পাকিস্তান প্রতিষ্ঠা’ পর্যন্ত এতে আলেমদের তৎপরতার একটি যোগসূত্র সুস্পষ্টরূপে পাঠক সমীপে ফুটে উঠবে। আশা করি, বই খানা দ্বারা সমাজের বিশেষ করে নানান বিভ্রান্তির শিকারে নিপতিত এক শ্রেণরি ছাত্র সমাজের মনে আলেম সমাজের অতীত সংক্রান্ত বিভ্রান্তির অপনোদন ঘটবে। এদ্বারা আজাদী ও ইসলামী আন্দোলনের সংগ্রামী মোজাহিদদের ত্যাগী জীবনের কিছুমাত্র যদি নতুন বংশধরদের জীবনে রেখাপাত করে এবং বিভ্রান্তির বেড়াজাল মুক্ত হয়ে দেশে একটি জনকল্যাণ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে তারা ইসলামী আন্দোলনকে সাফল্য মণ্ডিত করতে এগিয়ে আসেন, তা হলে নিজের পরিশ্রম কিছুটা হলেও স্বার্থক হয়েছে বলে মনে করবো।
-লেখক
সূরা ফাতিহা
بِسمِ اللَّهِ الرَّحمٰنِ الرَّحيمِ
الحَمدُ لِلَّهِ رَبِّ العٰلَمينَ
الرَّحمٰنِ الرَّحيمِ
مٰلِكِ يَومِ الدّينِ
إِيّاكَ نَعبُدُ وَإِيّاكَ نَستَعينُ
اهدِنَا الصِّرٰطَ المُستَقيمَ
صِرٰطَ الَّذينَ أَنعَمتَ عَلَيهِم غَيرِ المَغضوبِ عَلَيهِم وَلَا الضّالّينَ