সমসাময়িক পরিস্থিতির পর্যালোচনা
সমালোচনার উপরিউক্ত গুরুত্বপূর্ণ দু’টি বিষয়ের উদ্ধুতির পর সংক্ষেপে তাঁর সমকালীন পরিস্তিতি সম্পর্কিত সমালোচনামূলক কয়েকটি উদ্ধুতি নিম্নে প্রদত্ত হচ্ছেঃ
১. সূফীবাদের একটি ত্রুটির সমালোচনা
“অনুভূতির পূজা সুফীদের জনপ্রিয়তা এ তাদের ভক্তদলে শামিল হাবার কারণে এর উদ্ভব হয়েছে। মাশরিক ও মাগরিবের সমগ্র এলাকায় এ জিনিসটি ছেয়ে আছে। এমনকি সুফীদের কথা ও কর্ম সাধারণ মানুষের মনের উপর কুরআন ও সুন্নাহ তথা সবকিছুর চাইতে অধিক আধিপত্যশালী। তাদের তত্ত্বকথা ও ইঙ্গিতসমূহ এত বেশী প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে যে, কেই এগুলোকে অস্বীকার কিংবা এর প্রতি আমল না দিলে সে জনপ্রিয়তা অর্জন করতে পারে না এবং ‘নেককার’ ও মুত্তাকীদের মধ্যে গণ্য হয় না। মিম্বরের উপর দাড়িয়েঁ এমন কোন ব্যক্তি নেই যে, সুফীদের ইশারা-ইঙ্গিত সম্বলিত বক্তুতা করে না। মাদ্রাসায় অধ্যাপনারত এমন কোন আলিমও নেই, যে তাদের কথায় বিশ্বাস ও দৃঢ় প্রত্যয় পোষণ না করে। অন্যথায় তারা নির্বোধ বিবেচিত হয়।
২. অযোগ্য পীর ও পীরজাদাদের কঠোর সমলোচনা
‘কোন যোগ্যতা ছাড়াই যেসব পীরজাদা বাপ-দাদার গদীনশীন হয়েছে, তাদেরকে আমি বলিঃ ‘তোমরা কেন এসব পৃথক পৃথক দল গঠন করে রেখেছো? তোমাদেরকে প্রত্যকেই নিজের নিজের পথে ( তরীকা) চলেছো কেন? আল্লাহতায়ালা মুহাম্মদ (সা) কে যে পথে বাতলিয়ে দিয়েছেন সেটি পরিত্যাগ করেছো কেন? তোমাদের প্রত্যেক এক একজন ইমামে পরিণত হয়েছে। মানুষকে নিজেদের দিকে আহ্বান জানাচ্ছে। নিজেদেরকেই হিদায়াতদানকারী ও হিদায়াতকারী মনে করছে অথচ নিজেই মানুষকে পথভ্রষ্ট করছে। পর্থিব স্বার্থের গরজে যারা মানুষকে ‘বয়’আত’ করায় তাদের প্রতি আমরা বিন্দুমাত্রও সন্তুষ্ঠ নই। আর যারা দুনিয়ার স্বার্থে ইলম হাসিল করে অথবা, মানুষকে নিজেদের দিকে আহ্বান করে, তাদের দ্বারা নিজেদের উদ্দেশ্য চরিতার্থ করে, তাদের প্রতিও আমরা সন্তুষ্ঠ নই। তারা সবাই দস্যু, দাজ্জাল, মিথ্যুক, প্রবঞ্চক ও প্রবঞ্চিত। (তাফহীমাত)।
বস্তুত এ কারণেই কেউ বলে যে, তাসাউফের বিরুদ্ধে ভারতে সর্বপ্রথম শাহ্ ওয়ালিউল্লাহই বিদ্রোহের বাণী উচ্চারণ করেছেন। অথচ প্রকৃত ব্যাপার তার বিপরীত। আসলে তিনি ইসলামের খাৎটি তাসাউফ যাকে কুরআনের ভাষায় ‘তাযকিয়ায়ে নাফস’ বলা হয়েছে তাকে বহিরাগত আবর্জনা মুক্ত করেছেন এবং ইসলামের দৃষ্টিতে যা নির্ভেজাল তাসাউফ তিনি তাই পেশ করেছেন। বলা বাহুল্য, শাহ ওয়ালিউল্লাহ যদি তথাকথিত তাসাউফের এরূপ সমালোচনা ও তার সঠিক রূপরেখা তুলে না ধরতেন, তাহলে পাশ্চাত্য লেখকরা যেভাবে একে “বিভিন্ন দেশ ও ধর্ম এমনকি ভারতীয় যোগীদের ভাবধারা থেকে ধার করা” পর্যন্ত বলে হালকা করার প্রয়াস পাচ্ছিল, তার ফলে আজ তার অস্তিত্ব থাকতো কিনা সন্দোহ।
৩. শিক্ষা পদ্ধতির ক্রটির প্রতি নির্দেশ
“নিজেদেরকে ওলামা (শিক্ষিত) আখ্যাদানকারী জ্ঞানার্জনকারীদের বলিঃ “নির্বোধের দল, তোমরা গ্রীকদের জ্ঞান-বিজ্ঞান ও মানতিক-বালাগত তথা ন্যায়শাস্ত্র ও অলংকাল শাস্ত্রের গোলক ধাঁধাঁয় আটকে পড়েছো। আর ধরে নিয়েছো যে, জ্ঞান কেবল এগুলোতেই আছে। অথচ সত্যিকার বিদ্যা আল্লাহর কিতাবের সুস্পষ্ট আয়াতে এবং তাঁর রসূলের মাধ্যমে প্রমাণিত সুন্নাতের মধ্যে নিহিত। তোমরা পূর্ববর্তী ফকীহগণের খুটিঁনাটি ও বিস্তারিত বর্ণনাবলীতে ডুবে গিয়েছো। তোমরা কি জান না যে, আল্লাহ এবং তাঁর রসূল যা বলেছেন সেটিই একমাত্র হুকুম। তোমাদের বেশিরভাগ লোকের অবস্থা হচ্ছে এই যে, নবীর কোন হাদীস যখন তাদের নিকট পৌছে তখন তারা তার উপর আমল করে না।“
আলিম সমাজের প্রতি লক্ষ্য করে তিনি বলেছেনঃ “তোমরা আল্লাহর বান্দাদের জীবনের পরিধি সংকীর্ণ করে দিয়েছো। ইসলামের নমনীয়তাকে তোমরা উপেক্ষা করছো।“
৪. কুরআন-হাদীসের শিক্ষার প্রত গুরুত্ব আরোপ
ইমাম শাহ ওয়ালিউল্লাহর দৃঢ় বিশ্বাস ছিল যে, কুরআন ও সুন্নাহর প্রকৃত শিক্ষার ব্যাপক প্রচারের উপরই জাতির উন্নতি সম্পূর্ণরূপে নির্ভরশীল। এ জন্য তিনি এ দিকে বিশেষ মনোযোগ দান করেন এবং তদানীন্তন রাষ্ট্রভাষা ফার্সীতে কুরআন মজীদ ও ‘মুয়াত্তা-ই-ইমাম মালিক’- এর তরজমা করেন। অবশ্য পরবর্তীকালে উর্দু ভাষায় কুরআন মজীদের তরজমা ও তফসীর করেন।
কুরআন মজীদ অধ্যয়েনের পর যাতে হাদীসের জ্ঞান লাভ করা যায় তিনি তদ্রুপ শিক্ষার ব্যবস্থা করেছিলেন। একমাত্র শাহ্ ওয়ালিউল্লাহ্ এবং তাঁর পুত্র ও তাদেঁর শাগরিদদের প্রচেষ্টায়ই উপমহাদেশে ‘ইলমে হাদীসের ব্যাপক প্রসার ঘটে।
মিসরের প্রসিদ্ধ শিক্ষাবিদ, আল্লমা রশীদ রেযা এ সম্পর্কে বলেনঃ “মিসর, সিরিয়া, ইরাক, হিজায প্রভৃতি দেশে হিজরী দশম শতক থেকেই ‘ইলমে হাদীসে’র প্রচার হ্রাস পেতে থাকে। অথচ আমাদের ভারতীয় ভাইগণ বহু পরিশ্রমে উক্ত ইলেমকে জিন্দা রেখেছেন।“
৫. ইমাম সাহেবের প্রতি রক্ষণশীল ধর্ম ব্যবসায়ীদের হামলা
সত্যের ধারকরা যুগে যুগেই স্বার্থপর কিংবা রক্ষণশীলদের নির্যাতনের শিক্ষার হয়েছেন। ইমাম শাহ্ ওয়ালিউল্লাহ দেহলভীও এ থেকে রেহাই পাননি। এক শ্রেণীর মতলববাজ ধর্ম ব্যবসায়ী আলিম ও পীর ভবিষ্যতে নিজেদের স্বার্থ নষ্ট হবার আশংখায় ইমাম সাহেব কর্তৃক কুরআন তরজমা করণের প্রশ্নটিকে কেন্দ্র করে সাধারণ মুসলমানদেরকে তাঁর বিরুদ্ধে ক্ষেপিয়ে তোলে। তারা চিরাচরিত্র কায়দায় তাঁর বিরুদ্ধে ফতোয়াবাজিতে লিপ্ত হয়। এমনকি, একবার তিনি ফতেহপুর মসজিদে অবস্থানকালে এই গোঁড়া প্রকৃতির ধর্মব্যবসায়ীরা দলবদ্ধভাবে তাঁর উপর সশস্ত্র হামলা চালায়। ঐ সময় তাঁর নিকট শুধু একটি কাঠের টুকরা ছিল। তিনি তা হাতে নিয়ে ‘আল্লাহ আকবর’ ধ্বনি উচ্চারণ করে সকলকে স্তব্ধ করে দেন এবং তাদের মধ্য দিয়েই নিরাপদে স্বগৃহে প্রত্যাবর্তন করতে সক্ষম হন।
৬. শাসকদের প্রতি
-তোমরা আরাম আয়েশে লিপ্ত হয়ে সাধারণ গণমানুষকে পরস্পর সংগ্রামে লিপ্ত হবার সুযোগ দিচ্ছো। প্রকাশ্যে শরাব পান চলছে অথচ তোমরা বাধা দিচ্ছো না। প্রকাশ্যে ব্যভিচার, জুয়া ও শরাবের আড্ডা চালু হচ্ছে অথচ তোমরা এগুলো বন্ধ করো না। এ বিরাট দেশে কাউকে শরীয়তের আইন অনুযায়ী শাস্তি দেয়া হয়নি। তোমরা যাকে দুর্বল মনে করো তাকে খেয়ে ফেলো, যাকে শক্তিশাল মনে করো, তাকে ছেড়ে দাও। নানা রকম খাদ্যের স্বাদ গ্রহণ, স্ত্রীদের মান অভিমান এবং গৃহ-বস্ত্রের বিলাসিতার মধ্যেই তোমরা ডুবে গিয়েছো। একবার আল্লাহকে ভয় করো। তোমরা আমীর-ওমরাহরা নিজেদের কর্তব্য সম্পূর্ণ ভুলে গিয়েছো। যাদের রক্ষণাবেক্ষণের ভার তোমাদের উপর ন্যস্ত ছিল, তোমরা সেই জনগণের অবস্থার প্রতি মোটেই দৃষ্টি দিচ্ছো না। দায়িত্বহীনতার ফলে (সমাজের) এক শ্রেণীর লোক অপর শ্রেণীর উপর বেপরোয়া জুলুম চালিয়ে যাচ্ছে’’
৭. জিহাদের জন্য আহ্বান ও তার মূল লক্ষ্যের প্রতি নির্দেশ
“বর্তমান অবস্থায় মুসলিম রাষ্ট্র প্রধানদের পক্ষে শান্তি ও ন্যায়নীতি প্রতিষ্ঠাকল্পে আপোষহীন মনোবল নিয়ে আল্লাহর নির্দেশ অনুযায়ী জিহাদে ঝাপিয়েঁ পড়া দরকার। অত্যচারীরা পরাজিত না হওয়া পর্যন্ত সংগ্রাম অব্যাহত রাখা কর্তব্য। অন্যায়ের বিরুদ্ধে সংগ্রাম সফল হবার পর তাদের কর্তব্য সম্পর্কে সজাগ হবেন এবং সাধ্য মতো সংগ্রাম করে দুনিয়ায় আল্লাহর বিধান প্রতিস্ঠা করবেন, তখনই দেশের দিকে দিকে দেখা দিবে প্রকৃত শান্তি। তার ফলেই আমাদের জীবন হবে আনন্দমুখর ও সাফল্যমন্ডিত।“
৮. সৈনিকদের উদ্দেশ্য
“আল্লাহ তোমাদের জিহাদ করার জন্যে, সত্যের সুমহান বাণীকে বুলন্দ করার উদ্দেশ্যে এবং শিরক ও মুশরিকদের শক্তি খতম করার জন্য সৈনিকে পরিণত করেছেন। তোমরা ঐ কর্তব্যকে অবহেলা করে নিছক ঘোড়সওয়ারী ও অস্ত্রশজ্জা করাকেই নিজেদের পেশায় পরিণত করেছো। অর্থোপার্জন করার জন্যে তোমরা সেনাবাহিনীতে চাকরি নিয়েছো।“
৯. শ্রমজীবী ও সাধারণ মানুষের নৈতিক অবস্থার সমালোচনা
“বিশ্বস্ততা ও আমানতদারী তোমাদের নিকট থেকে বিদায় নিয়েছে। প্রতিপালক থেকে গাফিল এবং এ সংঙ্গে শিরকে লিপ্ত রয়েছো। তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি অবস্থা কিছুটা স্বচ্ছল সে নিজের খানাপিনা ও পরিচ্ছদে বেশী খরচ করে। ব্যয় অনুপাতে আয়ের পরিমাণ কম হওয়ায় অপরের অধিকার নষ্ট করে।“
১০. আলিম সমাজের প্রতি
“তোমরা আল্লাহর বান্দাদের জীবনের পরিধি সংকীর্ণ করে দিয়েছো। তোমরা ব্যাপকতার জন্যে আদিষ্ট –সংকীর্ণতার জন্য নয়।“
এভাবে তিনি মুসলিম সমাজে প্রচলিত অনেক কুসংস্কার ও ইসলামের সঙ্গে সম্পর্কশূন্য বহু রীতি-নীতিরও কঠোর সমালোচনা করেছেন। বিশেষ করে মনস্কামনা পূর্ণ করার উদ্দেশ্যে যারা পরলোকগত বুযুর্গের দরবারে গিয়ে তার নিকট কিছু চায়, তারা ব্যাভিচারের চাইতে বড় অপরাধে অপরাধী বলে উল্লেখ করেছেন। এই উদ্ধৃতিগুলো থেকে সহজেই অনুমান করা যায় যে, তিনি কত গভীরভাবে মুসলমানদের অতীত ও বর্তমানকে পর্যালোচনা করেছেন।
গঠনমূলক কাজ
গঠনমূলক কাজের মধ্যে তাঁর প্রথম গুরুত্বপূর্ণ কাজটি হলো, তিনি ফিকাহ্ তথা ইসলামী আইনশাস্ত্রে একটি যুক্তিপূর্ণ মধ্যপন্থা পেশ করেন। এতে সাধারণ রীতি অনুযায়ী একটি বিশেষ মতের প্রতি পক্ষপাতিত্ব ও অন্য একটি মতের সমালোচনা করা হয়নি। একজন গভীর অনুসন্ধানকারীর ন্যায় তিনি সকল ফিকাহ্ ভিত্তিক মাযহাবের নীতি-পদ্ধতি অধ্যয়ন করেন এবং পূর্ণ স্বাধীনভাবে রায় প্রদান করেন। শাহ্ ওয়ালিউল্লাহ্ মাযহাবী বিরোধের প্রবণতা হ্রাস এবং মাযহাব অনুসারীদের মধ্যে অনুসন্ধান ও ইজতিহাদের পথ উন্মুক্ত করেন। তিনি সকল মাযহাবের মধ্যে সমঝোতা, বিশেষ করে শাফেয়ী ও হানাফী মাযহাবদ্বয়কে একটি মাযহাবের রূপ দিতে প্রয়াসী ছিলেন। ‘তাফহীমাত’ এবং ‘হুজ্জাতুল্লাহিল বালেগা’ ও ‘আল ইনসাফ’-এ এ ব্যাপারে বিস্তারিত বর্ণনা করেছেন। বস্তুত এই মধ্যপ্রন্থা গ্রহণ করার ফলে বিদ্বেষ, সংকীর্ণতা, অন্ধ অনুসৃতি ও অনর্থক দীর্ঘ আলোচনায় সময় ক্ষেপণের অবসান ঘটে। আর এরই মাধ্যমে নানা মতের মুসলিমদের একটি গতিশীল জীবন্ত জাতি হিসেবে বিশ্বে দাঁড়ানো সম্ভব। এ জন্যেই শাহ্ ওয়ালিউল্লাহ্ ইজতিহাদের প্রয়োজনের উপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন।
ইজতিহাদ
‘মুসাফফা’ গ্রন্থের ভূমিকায় তিনি ইজতিহাদের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে বলেনঃ “ইজতিহাদ প্রতিযুগে ‘ফরযে কিফায়া’। এখানে ইজিতহাদ অর্থ হলো শরীয়তের বিধানাবল সম্পর্কে পূর্ণ জ্ঞানার্জন এবং সেগুলোর বিস্তারিত ও খুটিনাটি বিষয়ের ব্যাখ্যা অনুধাবন করে শরীয়তের আইন-কানূনকে যথাযথভাবে সংযোজন ও সংগঠন করা, তা কোন বিশেষ মাযহাব প্রণেতার অনুসারীও হতে পারে। আর ইজতিহাদ প্রতি যুগে ‘ফরযে কিফায়া’ হবার যে কথা বলছি তা এ জন্যে যে, প্রতি যুগে অসংখ্য স্বতন্ত্র সমস্যার সৃষ্টি হয়। সেগুলো সম্পর্কে আল্লাহর নির্দেশ জানা ওয়াজিব হয়ে পড়ে। আর ইতিপূর্বে যেসব বিষয় লিপিবদ্ধ ও সংকলিত হয়েছে। তা এ ব্যাপারে যথেষ্ট হয় না বরং তার মধ্যে নানান মতবিরোধও থাকে। শরীয়তের মৌল বিধানের প্রতি প্রত্যাবর্তন না করলে এ মত বিরোধ দূর করা সম্ভব হয় না। এ ব্যাপারে মুজতাহিদগণ যে পদ্ধতি নির্ধারণ করেছিলেন, তাও মাঝপথে প্রায় বিচ্ছিন্ন হয়ে থাকে। কাজেই এ ক্ষেত্রে ইজতিহাদ ছাড়া গত্যন্তর নেই।“
শাহ্ ওয়ালিউল্লাহ (রহ) ইজতিহাদের উপর কেবল জোরই দেননি, বরং বিস্তারিতভাবে ইজতিহাদের নিয়ম-রীতি, সংবিধান ও শর্তাবলীও বর্ণনা করেছেন। ‘ইযালাতুল খিফা’‘হুজ্জাতুল্লাহিল বালিগা’, ‘ইকদুল জীদ’, ‘আল ইনসাফ’, ‘বদুরে বাযেগা’, ‘মুসাফফা’ প্রভৃতি গ্রন্থে কোথাও তার নিছক ইঙ্গিত এবং কোথাও বিস্তারিত বর্ণনা রয়েছে। তার গ্রন্থ পাঠে মানুষ ইজতিহাদের কেবল রীতি নিয়মই শিখতে পারে না, এ বিষয়ে শিক্ষা লাভও করতে পারে।
উল্লেখিত কাজ দু’টি শাহ্ ওয়ালিউল্লাহর পূর্ববর্তী লোকেরাও করেছেন। কিন্তু যে কাজ তাঁর পূর্বে আর কেউ করেননি তা হলো এই যে, তিনি ইসলামের সমগ্র চিন্তা, নৈতিক সাংস্কৃতিক ও শরীয়ত ব্যবস্থাকে লিপিবদ্ধ আকারে পেশ করার চেস্টা করেছেন। এ কাজের ব্যাপারে তিনি তাঁর পূর্ববর্তীদের ছাড়িয়ে গেছেন। যদিও প্রথম তিন চার শতকে অনেক বেশী ইমামের আবির্ভাব হয়েছে এবং তাদেঁর কার্যাবলী পর্যালোচনা করলে স্পষ্ট দেখা যায় যে, তাদেঁর কার্যাবলী পর্যালোচনা করলে স্পষ্ট দেখা যায় যে, তাদেঁর চিন্তারাজ্যে ইসলামের জীবন ব্যবস্থার পূর্ণাঙ্গ চিত্র ছিল এবং অনুরূপভাবে পরবর্তী শতাব্দীগুলোতেও এমন অনেক অনুসন্ধানকারী গবেষকের সাক্ষাত পাওয়া যায়, যাদেঁর সম্পর্কে ধারণা করা যায় না যে, তাদেঁর চিন্তা রাজ্যও এ চিন্তা শূন্য ছিল। তবু তাদেঁর একজনও সুনিয়ন্ত্রিত ও যুক্তিপূর্ণ পদ্ধতিতে ইসলামী ব্যবস্থাকে একটি জীবন ব্যবস্থা হিসাবে লিপিবদ্ধ করার দিকে দৃষ্টি দেননি।