চেতনার বালাকোট
শেখ জেবুল আমীন দুলাল
খোলাফায়ে রাশেদার প্রদীপ্ত পথ ধরে
যুগে যুগে আমরাই জেগেছি,
বুকে নিয়ে কুরআনের বিপ্লবী পয়গাম
বারে বারে দেশে দেশে লড়েছি
সত্যের সংগ্রাম করেছি।
নিশ্চয়ই আল্লাহ মুমিনদের জান ও মাল
জান্নাতের বিনিময়ে ক্রয় করে নিয়েছেন।
তারা আল্লাহর পথে সংগ্রাম করে মারে
এবং নিজেরাও নিহত হয়।
-সূরা আত তাওবাঃ ১১১
প্রারম্ভিক কথা
হিমালয়ান উপমহাদেশে সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী আন্দোলনে মুসলমানদের ঘনিষ্ঠ এবং সংগ্রামী ভূমিকা ইতিহাসে প্রোজ্জ্বল শিখার ন্যায় দীপ্তিমান। ব্রিটিশ বিতাড়নের আন্দোলনকে জোরদার করার জন্য বৈজ্ঞানিক কর্মসূচী সম্বলিত সংগঠন ও আধুনিক কলা-কৌশল প্রয়োগে মুসলিম নেতৃবৃন্দের প্রজ্ঞা আজও সকলকে বিস্ময়ে বিমূঢ় করে দেয়। শুধু তাই নয়, রাজনৈতিক ও সশস্ত্র সংগ্রামের পাশাপাশি পূর্নাঙ্গ সমাজ-বিপ্লবের উদ্দেশ্যে ইসলামী আন্দোলন গড়ে তোলার উজ্জ্বল দৃষ্টান্তও তাঁরা অনাগত তাঁরা অনাগত ভবিষ্যতের জন্য রেখে গেছেন।
এই অঞ্চলের মুসলিম মিল্লাতের ঈমানী প্রাণ প্রবাহ অক্ষুণ্ণ রাখার লক্ষ্যে হযরত শাহ্ ওয়ালিউল্লাহর র. রেখে যাওয়া কর্মসূচী অনুকরণ করেই হযরত সৈয়দ আহম্মদ ব্রেলভী ও তাঁর সঙ্গী সাথীরা পরবর্তী সময়ে এক ইসলামী আন্দোলন পরিচালিত করেছিলেন। সুদৃঢ় ব্যক্তিত্ব, প্রখর দূরদৃষ্টি, তীক্ষ্ণ প্রজ্ঞা ও বলিষ্ঠ নেতৃত্ব দ্বারা হযরত সৈয়দ ব্রেলভী উপমহাদেশে প্রচন্ড আলোড়ন সৃষ্টিকারী এক আন্দোলন গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছিলেন, যা কিনা উপমহাদেশের ব্রিটিশ বিরোধী রাজনৈতিক এবং ইসলামী আন্দোলনের ইতিহাসে এক অনন্য অধ্যায়ের সূচনা করেছে। শহীদ সৈয়দ আহমদ ব্রেলভী ত৭ার বাস্তব সাংগঠনিক কাঠামো ও কর্মসূচী, প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কর্মীবাহিনী এবং রণচাতুর্যের মাধ্যমে যে বিপ্লবের জোয়ার এনেছিলেন, তা ছিল আধুনিক সমাজ বিপ্লবেরই এক নবতর প্রক্রিয়া। সে বিপ্লব তদানীন্তন সাম্রাজ্যবাদী বেনিয়াদের সাধের মসনদ ভীত যেমনিভাবে প্রকম্পিত করে তুলেছিল তেমনিভাবে আজকের আধুনিক প্রযুক্তির যুগেও তার কর্মকৌশল এবং লৌকিক দৃষ্টিকোণ এখানকার ইসলামী আন্দোলনের যে কোন কাফেলার জন্য হতে পারে অনুপ্রেরণার এক সাবলীল উৎসব ধারা।
একটি স্বাধীন, সার্বভৌম, ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সৈয়দ আহমদ ব্রেলভী যে সব কর্মসূচী ও পদ্ধতি অবলম্বন করেছেন, তার একটা সংক্ষিপ্ত চিত্র তুলে ধরার প্রয়াস হচ্ছে এই পুস্তিকাখানি। মুসলিম পতনযুগের পর সীমাহীন প্রতিকূলতার রক্তপাথার পাড়ি দিয়ে উপমহাদেশের ইসলামী আন্দোলনের ধারাবাহিকতা সম্পর্কে আজকের ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদের সম্যক ধারণা দেয়ার জন্যই আমার এই ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা। ১৯৭৯ সালের এপ্রিল মাসে সর্বপ্রথম এই পুস্তিকাখানি প্রকাশিত হয়েছিল। খুবই অল্প সময়ের মধ্যে এর সমস্ত কপি শেষ হয়ে যায়। ১৯৯৩ সালের এপ্রিল মাসে এর দ্বিতীয় সংস্করণ প্রকাশিত হয়। আজকের ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদের প্রয়োজনের প্রতি লক্ষ্য রেখে প্রফেসরস পাবলিকেশন্স পুস্তিকাটি পুণঃ প্রকাশের উদ্যোগ গ্রহণ করে। প্রথম ও দ্বিতীয় সংস্করণের অনেক ভুল ভ্রান্তি এ সংস্করণে সংশোধন করা হয়েছে। এর পরও যে কোন সংশোধন প্রয়াসকে স্বাগত জানাবো ইনশাআল্লাহ।
আমার এই ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা ইসলামী আন্দোলনের ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র কল্যাণে আসলেও আমার শ্রম সার্থক মনে করবো। আল্লাহ আমার এই প্রচেষ্টাকে কবুল করুন। আমিন।
নিবেদক
শেখ জেবুল আমিন দুলাল
অক্টোবর, ২০০৩
প্রকাশকের আরজ
সমস্ত প্রশংসা সেই আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের, যার অশেষ রহমতে আমরা উপমহাদেশে মুসলিম ইতিহাসের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার উপর লিখিত এ বইটির তৃতীয় সংস্করণ প্রকাশ করতে সক্ষম হলাম।
হাজার বছরের মুসলিম শাসনের পর এক প্রকার দুঃস্বপ্নের মত উপমহাদেশে ইংরেজ অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়। ইংরেজ শাসন প্রতিষ্ঠার কারণে মূলত মুসলমান ক্ষতিগ্রস্ত হয় সবচেয়ে বেশী। কিন্তু ওলামা ই কেরামরা ইংরেজ শাসনকে মেনে নেন কখনও। ১৭৫৭ থেকে ১৮৫৭ সালের সিপাহী বিপ্লব পর্যন্ত দীর্ঘ একশ বছর ব্যাপী উপমহাদেশের বিভিন্ন অংশে মুসলমানগণ আলিমদের নেতৃত্বে ব্যাপক ইংরেজ বিরোধী সশস্ত্র আন্দোলন শুরু করেন। এ সকল আন্দোলনের মধ্যে হযরত সৈয়দ আহমদ ব্রেলভীর নেতৃত্বাধীন মুজাহিদ আন্দোলন ছিল সর্বাগ্রে উল্লেখযোগ্য সশস্ত্র আন্দোলন। ইসলামী আদর্শে অনুপ্রাণিত এ আন্দোলনের বৈশিষ্ট্য ছিল দ্বীনি ভাবধারার উজ্জীবন ও সম্প্রসারণ এবং বিধর্মী শাসনের গোলামী থেকে মুক্তি লাভ। পূর্নাঙ্গ ইসলামী শাসন প্রতিষ্ঠা করা এবং আল্লাহর সর্বশ্রেষ্ঠ সৃষ্টি মানুষের উপর থেকে মানুষের প্রভুত্বকে খতম করে এক আল্লাহর প্রভুত্ব কায়েম করা। এই আন্দোলন কিছু দিনের জন্য হলেও উনবিংশ শতাব্দীর ক্রান্তিলগ্নে প্রকৃত খেলাফত আলা মিনহাজিন্নাবুয়াত নবীর তরীকা মোতাবেক খেলাফত প্রতিষ্ঠা করেছিল।
আমার দৃঢ় বিশ্বাস, এই পুস্তকখানা পড়ে বর্তমান ইসলামী আন্দোলনের ভাই ও বোনেরা সেই সব মর্দে মুজাহিদদের আন্দোলনের বিভিন্ন দিক সম্বন্ধে জানতে পারবেন। আমি আশা করি এই পুস্তক পড়ে আমরা ইসলামী আন্দোলনকে আরো দ্রুত এগিয়ে নিতে উজ্জীবিত হবো।
আল্লাহ আমাদের সকলকে তার দ্বীনের জন্য কবুল করুন।
আমিন।