জামায়াত অনলাইন লাইব্রেরি
  • নীড়
  • সংক্ষিপ্ত পরিচিতি
  • বিভাগ ভিত্তিক
    • আল কুরআন
    • আল হাদিস
    • ফিকাহ
    • ঈমান
    • ইসলাম
    • পারিবারিক জীবন ও সামাজিক সম্পর্ক
    • আন্দোলন ও সংগঠন
    • সীরাত ও ইতিহাস
    • সীরাতে সাহাবা
    • মহিলাদের বিশেষ বই
    • রাজনীতি
    • অর্থনীতি
    • বিবিধ
  • রুকন সিলেবাস
    • রুকন সিলেবাস (স্বল্প শিক্ষিত)
    • রুকন সিলেবাস (শিক্ষিত)
  • কর্মী সিলেবাস
  • বাৎসরিক পাঠ্যসূচি
    • বাৎসরিক পাঠ্যসূচি (শিক্ষিত)
    • বাৎসরিক পাঠ্যসূচি (স্বল্প শিক্ষিত)
  • উচ্চতর অধ্যয়ন
  • অডিও বই
  • অন্যান্য
    • দারসুল কুরআন
    • দারসুল হাদিস
    • আলোচনা নোট
    • বইনোট
    • প্রবন্ধ
    • কবিতা
    • বুলেটিন
    • স্মারক
    • ম্যাগাজিন
    • এপস
    • রিপোর্ট বই
    • ছাত্রী সিলেবাস
কোন ফলাফল নেই
সকল ফলাফল দেখুন
  • নীড়
  • সংক্ষিপ্ত পরিচিতি
  • বিভাগ ভিত্তিক
    • আল কুরআন
    • আল হাদিস
    • ফিকাহ
    • ঈমান
    • ইসলাম
    • পারিবারিক জীবন ও সামাজিক সম্পর্ক
    • আন্দোলন ও সংগঠন
    • সীরাত ও ইতিহাস
    • সীরাতে সাহাবা
    • মহিলাদের বিশেষ বই
    • রাজনীতি
    • অর্থনীতি
    • বিবিধ
  • রুকন সিলেবাস
    • রুকন সিলেবাস (স্বল্প শিক্ষিত)
    • রুকন সিলেবাস (শিক্ষিত)
  • কর্মী সিলেবাস
  • বাৎসরিক পাঠ্যসূচি
    • বাৎসরিক পাঠ্যসূচি (শিক্ষিত)
    • বাৎসরিক পাঠ্যসূচি (স্বল্প শিক্ষিত)
  • উচ্চতর অধ্যয়ন
  • অডিও বই
  • অন্যান্য
    • দারসুল কুরআন
    • দারসুল হাদিস
    • আলোচনা নোট
    • বইনোট
    • প্রবন্ধ
    • কবিতা
    • বুলেটিন
    • স্মারক
    • ম্যাগাজিন
    • এপস
    • রিপোর্ট বই
    • ছাত্রী সিলেবাস
জামায়াত অনলাইন লাইব্রেরি

চেতনার বালাকোট

অন্তর্গতঃ uncategorized
Share on FacebookShare on Twitter

সূচীপত্র

  1. প্রারম্ভিক কথা
  2. প্রকাশকের আরজ
  3. ইংরেজ বিরোধী মনোভাব
  4. আন্দোলন ও তার দৃষ্টিভঙ্গি
  5. জন্ম ও বংশ পরিচয়
  6. শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ
  7. তৎকালীন উপমহাদেশের রাজনৈতিক অবস্থা
  8. জীবনের মিশন
  9. ত্বরীকায়ে মুহাম্মাদী সা. আন্দোলন
  10. দাওয়াতে দ্বীন ও কর্মী সংগ্রহ অভিযান
  11. হজ্জের উদ্দেশ্য এবং সফরের সাংগঠনিক কাঠামো
  12. সংগঠনের মূলনীতি
  13. সংগঠন: প্রশিক্ষণ: ক্যাডার তৈরী
  14. জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহর ধারণা
  15. জিহাদের প্রস্তুতি ঘোষণা
  16. মুজাহিদ বাহিনী
  17. অর্থ সংগ্রহ পদ্ধতি
  18. আন্দোলনের বিরুদ্ধে মিথ্যা প্রচার
  19. মুহাম্মদ বিন আবদুল ওয়াহহাব নজদীর সাথে সামঞ্জস্য
  20. শরীয়তুল্লাহ ও তিতুমীরের আন্দোলন
  21. সীমান্তে জিহাদের কেন্দ্র স্থাপনের কারণ
  22. জিহাদের উদ্দেশ্যে হিজরত
  23. শিখ নির্যাতনের বিরুদ্ধে সশস্ত্র সংগ্রাম
  24. সীমান্তে মুজাহিদ প্রেরণের ব্যবস্থাপনা
  25. ইসলামী রাষ্ট্রের গোড়াপত্তন
  26. আন্দোলনের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র
  27. দ্বিতীয় হিজরত
  28. বালাকোট যুদ্ধ ও ঈমাম সাহেবের শাহাদাত
  29. আন্দোলনের পুনরুজ্জীবন
  30. সাইয়েদ আহমদ ব্রেলভী ও তার আন্দোলন সম্পর্কে সাইয়েদ আবুল আলা মওদুদীর পর্যালোচনা
  31. ব্যর্থতার কারণ
  32. প্রথম কারণ
  33. দ্বিতীয় কারণ
  34. তৃতীয় কারণ

জিহাদের প্রস্তুতি ঘোষণা

হজ্জ থেকে প্রত্যাবর্তনের পর একদিন সৈয়দ সাহেব রায়বেরেলীতে তাঁর সহকর্মীদের সাথে জিকির আজকারে মশগুল ছিলেন।এক পর্যায়ে তিনি সকলকে ডেকে বললেন, জিকির বন্ধ করুন, এখন থেকে জিহাদের জন্য প্রশিক্ষণের ব্যাপারে অধিকাংশ সময় ব্যয় করতে হবে। অনেকেই বিষ্মিত হলেন। প্রশ্ন উঠলো, যিকিরের মত নেকীর কাজ বাদ দিয়ে সামরিক প্রশিক্ষণের প্রয়োজন কি? উত্তরে সৈয়দ সাহেব বললেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে জিকির আযকারের চেয়ও গুরুত্বপূর্ণ কাজ আমাদের সামনে উপস্থিত। আল্লাহর নামে জিহাদের জন্য প্রস্তুত হতে হবে। জিহাদের সামনে অন্যসব নফল ইবাদত মূল্যহীন।জিকির আযকর হচ্ছে জিহাদের পরবর্তী কাজ। যদি কেউ সারাদিন রোজা রাখে এবং সারারাত ইবাদত করে এমন কি নফল নামাজ পড়তে পড়তে পা ফুলিয়ে ফেলে, তার স্থান ঐ ব্যক্তির সমান হবে না, যে ব্যক্তি কাফেরদের বিরুদ্ধে সশস্ত্র জিহাদের নিয়তে একঘন্টা প্রশিক্ষণ গ্রহণ করবে। কারণ জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহ হচ্ছে মারেফাতের সর্বোচ্চ স্তর। এটা আম্বিয়ায়ে কেরামের পদ্ধতি। প্রত্যেকটি মুসলমানই যেন জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহর নিয়ত রাখে এবং এ মহান দায়িত্বের কথা যেন কেউ কখনো ভুলে না যায়। এই ঘোষণার পর থেকেই আন্দোলনের কর্মীরা ক্রমান্বয়ে সামরিক প্রশিক্ষণ গ্রহণ করতে শুরু করেন।

মুজাহিদ বাহিনী

ত্বরীকায়ে মোহাম্মদী আন্দোলনের কর্মীদের মাঝে বিন্যস্ত স্তরগুলির মধ্যে মুজাহিদ স্তর ছিল সর্বোচ্চ। আল্লাহর দেয়া জীবন বিধানকে বাস্তবে প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্যে জানমাল কোরবান করার নিয়তে সদা প্রস্তুত থাকার জন্য সৈয়দ আহমদ মুজাহিদ স্তরের কর্মীদের নির্দেশ জারী করেছিলেন। যেমন কথা তেমন কাজ। পরবর্তী সময়ে দেখা গেছে যে, এ মুজাহিদ স্তরের কর্মীরা আন্দোলন ও সংগঠনের ভালো মন্দের সাথে নিজেদের ভাগ্যকে একাকার করে ফেলেছিলেন। উপমহাদেশের বিভিন্ন প্রদেশ থেকে আগত খোদার পথে জীবন উৎসর্গকারী একদল খাঁটি ঈমানদার নিয়ে গড়ে উঠেছিল সৈয়দ সাহেবের মুজাহিদ বাহিনী। এ আত্নত্যাগকারী কর্মীদের পক্ষে আন্দোলন এবং সংগঠন থেকে সরে দাঁড়ানো ছিল অসম্ভব। সৈয়দ সাহেব যদিও প্রায় সবসময় যিকির আযগার, নফল ইবাদত এবং ওয়াজ নসিহতে সময় অতিবাহিত করতেন, কিন্তু তিনি সর্বক্ষণ সৈনিক বেশে থাকতেন। প্রথম দেখায় অনেকে তাকে চাকুরীরত সৈনিক মনে করতো। তাঁর কোমরে সর্বদা পিস্তল এবং ছোরা বাঁধা থাকতো। ত্বরীকায়ে মোহাম্মদী আন্দোলন শুধু ধর্মীয় সংস্কারের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিলনা। ইসলামী জিহাদের দৃষ্টিভঙ্গিতে সৈয়দ সাহেব কর্মীদের গড়ে তুলেছিলেন। উল্লিখিত কারণে ইতিহাসে এ আন্দোলনের কর্মী বাহিনীকে কখনো কখনো মুজাহিদ বাহিনী বলেও আখ্যায়িত করা হয়েছে।

অর্থ সংগ্রহ পদ্ধতি

কর্মীরা সৈয়দ সাহেবকে ইমাম বলে সম্বোধন করতো, ইমাম সাহেব অর্থ সংক্রান্ত যাবতীয় বিষয় দেখাশুনা করার জন্য মৌলবি ইউসুফ কে কেন্দ্রীয় বায়তুল মালের দায়িত্বশীল নিযুক্ত করেন। বায়তুল মালের অর্থ সংগ্রহ করা, সংরক্ষণ করা, প্রয়োজনীয় খাতে খরচ করার এখতিয়ার ছিল মৌলবি ইউসুফের উপর। আয় ব্যয়ের সমস্ত হিসাব নিকাশও তাঁর কাছেই ছিল। সংগঠনের কর্মীদের পকেটের পয়সা এবং দেশব্যাপী ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা অগণিত সমর্থক ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের পক্ষ থেকে প্রদত্ত অর্থেই সংগঠনের আয়ের প্রধান উৎস ছিল। বড় বড় মুসলিম ব্যবসায়ীদের নিকট থেকে যাকাত আদায়ের ব্যবস্থা ছিল। আন্দোলনের গরীব কর্মীদের জন্য সাদকা ও ফেৎরা আদায় করা হতো। কর্মীদের প্রতিটি পরিবারে মুষ্টি চাউল রাখার নিয়ম চালু ছিল এবং তা অত্যন্ত আন্তরিকতা ও নিষ্ঠার সাথে আদায় করা হতো। এ সমস্ত চাউল বিক্রয় করে উপার্জিত টাকা আন্দোলনের কাজে ব্যয় করা হতো। এছাড়াও বিশেষ পরিস্থিতিতে মুসলমানদের নিকট থেকে এককালীন জরুরী অর্থ সংগ্রহ করা হতো। জরুরী পরিস্থিতিতে মুসলমান মহিলারা নিজেদের অলংকারাদী পর্যন্ত খুলে আন্দোলনের তহবিলে জমা দিয়েছে বলে ইতিহাসে রয়েছে।

আন্দোলনের বিরুদ্ধে মিথ্যা প্রচার

যখনই ইসলামী আন্দোলন ব্যাপকতার পথে পা বাড়ায়, তখনই এর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র শুরু হয়। এটা যেকোনো ইসলামী আন্দোলনের জন্য স্বাভাবিক নিয়মে পরিণত হয়েছে। অতীতের সমস্ত ইসলামী আন্দোলনের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে এর সত্যতা দিবালোকের মত পরিস্ফুটিত হয়ে উঠবে। বেশী অতীতে না গিয়ে বর্তমান বিশ্বে পরিচালিত ইসলামী আন্দোলনগুলোর প্রতি দৃষ্টিপাত করলেই স্পষ্টত: দেখা যাবে, যেসব স্থানে ইসলামী আন্দোলন দানা বেঁধে উঠেছে এবং একটু ব্যাপক আকার ধারণ করেছে, সেখানে শুরু হয়েছে অভ্যন্তরীণ, দেশীয়, এবং আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র। ত্বরীকায়ে মোহাম্মদী আন্দোলনের ক্ষেত্রে এর ব্যতিক্রম ঘটেনি। ইংরেজগণ আন্দোলনের ব্যাপকতা দেখে ক্রমেই ভীত হতে লাগলো এবং উপমহাদেশের মুসলমানদের বিরুদ্ধে গোপনে ষড়যন্ত্র আরম্ভ করে দেয়। যেখানে সৈয়দ আহমদ সরাসরি ব্রিটিশ শক্তির বিরুদ্ধে সংগ্রাম করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন, সেখানে কর্মীদের মধ্যে জিহাদের উদ্দীপনাকে নিস্তেজ করে দেয়ার জন্য ইংরেজগণ প্রচার করলো যে, সৈয়দ সাহেব ইংরেজদের শুভাকাঙ্ক্ষী এবং বন্ধু। দ্বিতীয়ত: সৈয়দ সাহেবের ধর্ম বিশ্বাস সম্পর্কেও বিভিন্ন ধরণের বিভ্রান্তি প্রচার করা হতো। বিশেষভাবে এই আন্দোলনকে ওয়াহাবী আন্দোলন বলে প্রচার চলতো এবং ওয়াহাবী আন্দোলন মুসলমানদের ঈমানের প্রতি হুমকি স্বরূপ বলে মিথ্যা ধারণা দেয়া হতো। সুন্নি মুসলমানদের মধ্যে ইংরেজরা সৈয়দ সাহেবকে সুন্নি বিরোধী একজন ওয়াহাবী বলে চিহ্নিত করার চেষ্টা করেছে। যার ফলশ্রুতিতে এখনো বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে ওয়াহাবী বনাম সুন্নি বিতর্ক চালু রয়েছে। তৃতীয়ত: শিয়া মতবাদের মধ্যে বেশ কিছু বিদয়াতী আনুষ্ঠানিকতা থাকায় সৈয়দ সাহেব ও তাঁর সাথীরা বিভিন্নভাবে এর বিরোধিতা করতেন। ইংরেজগণ এটাকে সুযোগ হিসেবে গ্রহণ করে শিয়া মতাবলম্বীদের মধ্যে সৈয়দ সাহেবের বিরুদ্ধে বিষেদগার করতো। চতুর্থত: ইংরেজগণ বিপুল পরিমাণ অর্থের বিনিময়ে সৈয়দ সাহেবের কয়েকজন সহচরকে ক্রয় করতে চেয়েছিল, কিন্তু সফল হয়নি। পঞ্চমত: ইংরেজগণ নিরক্ষর, অশিক্ষিত, অজ্ঞ, ধর্মান্ধ বলেও সৈয়দ সাহেবের বিরুদ্ধে প্রচার করতো।

মুহাম্মদ বিন আবদুল ওয়াহহাব নজদীর সাথে সামঞ্জস্য

বর্তমান সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদ এর পার্শ্ববর্তী একটি এলাকার নাম নজদ। এক সময়কার নজদ প্রদেশের রাজধানী ছিল এই রিয়াদ শহর। এখানে ১৭০৩ খ্রিষ্টাব্দে শেখ মুহাম্মদ বিন আবদুল ওয়াহহাব নামে একজন ইতিহাসখ্যাত সংস্কারকের জন্ম হয়। সে সময় সমস্ত মুসলিম বিশ্ব অজ্ঞতা, কুসংস্কার এবং অধঃপতনের চরম পর্যায়ে ছিল। মুহাম্মদ বিন আবদুল ওয়াহহাব দামেস্কের ইমাম ইবনে তাইমিয়া এবং তাঁর খ্যাতনামা ছাত্র হাফেজ ইবনুল কাইয়েমের রচনাবলী এবং বিপ্লবী বাব ধারার অনুসারী ছিলেন। মুসলিম জাহানের তৎকালীন ব্যাপক দুর্গতি বিশেষ করে ইসলামের কেন্দ্রভূমি আরব দেশে তাওহীদ বিরোধী ভাবধারা এবং শিরক বিদয়াতের ছড়াছড়ি দেখে তাঁর অন্তর কেঁপে ওঠে। আরবরা তখন নিজেদের গৌরব দীপ্ত সভ্যতা ও সংস্কৃতি সম্পর্কে অচেতন, রাষ্ট্রক্ষমতা থেকে বঞ্চিত, সবদিক থেকেই তখন তারা ছিল শোষিত নিপীড়িত, নৈতিক ও চারিত্রিক দিক থেকে ছিল অধঃপতনের চরম সীমায়। এই অবস্থায় পরিবর্তনের জন্য, মুসলমানদেরকে তাদের সঠিক মর্যাদায় অধিষ্ঠিত করার জন্য মুহম্মদ বিন আবদুল ওয়াহাব এক আন্দোলন গড়ে তোলেন। জনৈক মার্কিন ঐতিহাসিক LOTHROP STODDARD এর NEW WORLD OF ISLAM নামক গ্রন্থে এই আন্দোলন সম্পর্কে বলা হয়। ওয়াহাবী আন্দোলন একটি অনাবিল সংস্কার আন্দোলন ব্যতীত আর কিছুই নয়। অলৌকিকতার ধারণা সংশোধন, . সকল প্রকার সন্দেহ সংশয়ের নিরসন,  কুরআনের মধ্যযুগীয় প্রক্ষিপ্ত তফসির ও নব আবিষ্কৃত টীকা টিপ্পনীর প্রতিবাদ, বিদয়াত ও আউলিয়াগণের পূজার নিবৃত্তি সাধন এই আন্দোলনের উদ্দেশ্য ছিল। মোট কথা, ওয়াহহাবী আন্দোলন মানে ইসলামের প্রাথমিক ও মৌলিক শিক্ষার দিকে প্রত্যাবর্তন। অর্থাৎ কুরআন ও হাদিসের অনুসরণ, ইসলামের রুকন ফরজসমূহ দৃঢ়ভাবে পালন করা, নামাজ ও সিয়ামকে যথাযথভাবে আদায় করা, সহজ ও অনাড়ম্বর জীবনপ্রণালী অনুসরণ, রেশমি কাপড়ের ব্যবহার, খাদ্যের বিলাসিতা, মদ্যপান, আফিমও তামাক সেবন প্রভৃতি ক্ষতিকর জিনিস বর্জন করা।

এই মুহাম্মদ বিন আবদুল ওয়াহহাবের আন্দোলন পরিচালিত হয় প্রধানত: সাতটি মূলনীতির ভিত্তিতে।

(এক) আল্লাহর প্রতি দৃঢ় বিশ্বাস স্থাপন করা।

(দুই) মানুষের ও খোদার মধ্যবর্তী কারো অস্তিত্বে বিশ্বাস না করা। ওলি তো দূরের কথা, স্বয়ং রাসুলুল্লাহর সা. মধ্যবর্তী হওয়ার কোন অধিকার নেই।

(তিন) সরাসরি কুরআনের অর্থ ও শিক্ষা গ্রহণের অধিকার মুসলমান মাত্রেরই আছে এ কথায় বিশ্বাস করা।

(চার) মধ্যযুগে এবং বর্তমানে যেসব বাহ্যিক আচার অনুষ্ঠান ইসলামে ঠুকে পড়েছে, সেগুলি সরাসরি প্রত্যাখ্যান করা।

(পাঁচ) ইমাম মাহদীর আবির্ভাবের আশায় সর্বদা প্রস্তুত থাকা।

(ছয়) কার্যকরীভাবে কাফেরদের সাথে জিহাদ করা ফরজ, সার্বক্ষণিক সে বিষয়ে বিশ্বাস রাখা।

(সাত) অকুণ্ঠচিত্তে নেতার আনুগত্য করা।

সৈয়দ আহমদের ইসলামী আন্দোলন এবং মুহাম্মদ বিন আবদুল ওয়াহহাবের সংস্কার আন্দোলনের মূলনীতির সাথে অনেকটা সাদৃশ্য থাকার ফলে অসতর্কতা বশত: অনেকেই উপমহাদেশের এ আন্দোলনকেও ওয়াহহাবী আন্দোলন আখ্যা দিয়েছিল।

অবশ্য কেউ কেউ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে সাধারণ মুসলমানদেরকে আন্দোলন থেকে বিচ্ছিন্ন করার জন্য এ আন্দোলনকে ওয়াহহাবী তথাকথিত ঐতিহাসিকগণও সচেতনভাবেই হোক আর অবচেতনভাবেই হোক এ মারাত্মক ভুলটি করেছেন।

শরীয়তুল্লাহ ও তিতুমীরের আন্দোলন

ইমাম সৈয়দ আহমদের আন্দোলন চলাকালীন সময়ে বাংলাদেশের ফরিদপুর ও তার পার্শ্ববর্তী এলাকায় ফারায়াজী আন্দোলন নামে অপর একটি ইসলামী সংস্কার আন্দোলন চলছিল, যার নেতৃত্বে ছিলেন হাজী শরীয়তুল্লাহ। এ আন্দোলনটি ত্বরীকায়ে মোহাম্মদী আন্দোলনের সাথে সামঞ্জস্যশীল ছিল। বাংলার মাটিতে যখন হাজী শরীয়াতুল্লাহ বিদ্রোহের বীজ বপন করছিলেন, সৈয়দ আহমদ ব্রেলভীর বিপ্লবাত্মক আন্দোলন যখন উত্তর ও দক্ষিণ ভারতের আকাশ মাটি তোলপাড় করছিল, তখন উপমহাদেশের পূর্ব প্রান্তে আর একজন মর্দে মুজাহিদ বিপ্লবের আগুন জ্বালিয়ে ছিলেন, নাম তাঁর সৈয়দ নিসার আলী, যিনি তিতুমীর নামে সমধিক খ্যাত। ১৭৮২ খ্রিষ্টাব্দে চব্বিশ পরগণা জেলার চাঁদপুর গ্রামে তিতুমীর জন্মগ্রহণ করেন। সৈয়দ আহমদ ব্রেলভী যখন মক্কায় হজ্জ্ব করতে যান, ঘটনাচক্রে তিতুমীরও সেবার মক্কা শরীফ গিয়েছিলেন। তিতুমীর সেখানে সৈয়দ সাহেবের সান্নিধ্য পান এবং তাঁর দীক্ষায় দীক্ষিত হয়ে ১৯২৭ খ্রিষ্টাব্দে দেশে ফিরে ইসলামী সংস্কার আন্দোলন শুরু করেন। তিতুমীরের এ সংস্কার আন্দোলন চব্বিশ পরগণা, ফরিদপুর ও নদীয়া জেলায় জোরদার হয়েছিল। ওদিকে আন্দোলনের চূড়ান্ত সফলতার পূর্বেই ১৮৪০ সালে হাজী শরীয়তুল্লাহ ইন্তেকাল করেন। তিনি জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত তাঁর আদর্শের প্রতি অবিচল ছিলেন। এদিকে ইংরেজদের তোপের মুখে তিতুমীরের বাঁশের কেল্লা উড়ে যায়। মোট কথা বাংলাদেশ অঞ্চলের বর্তমান ইসলামী আন্দোলন উড়ে এসে জুড়ে বসা কোন আন্দোলন নয়। শত শত বছরের উত্তরাধিকার লয়েছে এখানকার ইসলামী আন্দোলনের।

সীমান্তে জিহাদের কেন্দ্র স্থাপনের কারণ

 ত্বরীকায়ে মোহাম্মদী আন্দোলনের সদর দপ্তর পাটনা থেকে পরিবর্তনের প্রয়োজন দেখা দিল। কারণ এখানে থেকে আন্দোলন পরিচালনা করা গেলেও প্রত্যক্ষ জিহাদ পরিচালনা করা গেলেও প্রত্যক্ষ জিহাদ পরিচালনা অসুবিধাজনক। এছাড়া উপমহাদেশের সীমান্ত অঞ্চল ছাড়া এদিকে আর কোন স্বাধীন এলাকা না থাকায় কেন্দ্র পরিবর্তন করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হলো। সীমান্ত অঞ্চল ছাড়া উপমহাদেশের আর কোন এলাকা সৈয়দ সাহেবের পছন্দ হলো না। কারণ সীমান্ত অঞ্চলের সম্পূর্ণ এলাকা মুসলিম অধ্যুষিত ছিল। এলাকার জনসাধারণ যুদ্ধ বিদ্যায় ছিল পারদর্শী। তাদের একাগ্র সহযোগিতার আশায় সেখানে কেন্দ্র স্থাপনের সিদ্ধান্ত হয়। সত্যিকার অর্থে সীমান্তের অধিবাসীরা যদি সৈয়দ সাহেবকে একাগ্রচিত্তে সহযোগিতা করতো, তাহলে পাঞ্জাব থেকে শিখদের বিতাড়িত করা ছিল খুবই সহজ, পাঞ্জাব দখলে এল উপমহাদেশকে শত্রু-মুক্ত করার উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি হতো। এ সময় সীমান্তবাসীরা শিখদের অত্যাচার নিপীড়নের লক্ষ্যস্থলে পরিণত হয়েছিল। তাই অতি সহজে তাদেরকে জিহাদে উদ্বুদ্ধ করা যাবে বলে চিন্তা করা হয়েছে।

অতএব যারা পূর্বেই পরাধীন হয়ে গেছে, তাদের চেয়ে এদেরকে স্বাধীন রাখা অধিক প্রয়োজন ছিল। সীমান্তের উত্তর পশ্চিমের দূর দূরান্ত পর্যন্ত মুসলমান অধিবাসী ছিল, প্রয়োজনে তাদের সাহায্য পাওয়ার আশা ছিল। সাহায্য না করলেও বিরোধিতার কোন আশংকা ছিল না। সীমান্তের যে এলাকাকে কেন্দ্র করা হয়েছিল, ভৌগলিক অবস্থানের কারণে শুধুমাত্র একদিক থেকেই শত্রুর আক্রমণের সুযোগ ছিল। এছাড়া বাকী অন্য কোন দিক থেকে আক্রমণের কোন সুবিধা ছিলনা। অপরদিকে সৈয়দ সাহেব পাঞ্জাব অভিযানে অগ্রসর হলে মুসলমান ছাড়াও নিপীড়িত হিন্দু সম্প্রদায়ও স্বাগত জানাতো। ডান দিকের ভাওয়ালপুর, সিন্ধু এবং বেলুচ সরকারের পক্ষ থেকেও সাহায্যের আশা ছিল। এসব অনুকূল পরিবেশের প্রতি লক্ষ্য রেখে সীমান্তকে আন্দোলন এবং জিহাদের কেন্দ্র হিসেবে মনোনীত করা হয়েছিল। কিন্তু সীমান্তবাসীদের শেষ পর্যায়ের মোনাফেকির কারণে সমস্ত সাধনা ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়। এরপরও সাধারণ জ্ঞানে সৈয়দ সাহেবের সিদ্ধান্ত সর্বতোভাবে যুক্তভাবে যুক্তিসংগত, মজবুত এবং সঠিক ছিল।

জিহাদের উদ্দেশ্যে হিজরত

একাধারে দশমাস সকল দিকের প্রচার, জনসংযোগ এবং প্রস্তুতি গ্রহণের পর ১৮২৬ খ্রিষ্টাব্দের ১৭ই জানুয়ারি সোমবার সৈয়দ সাহেব হিজরতের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলেন। জীবনের চল্লিশটি বছর যে অঞ্চলে কাটিয়েছেন, সেখানকার প্রতিটি অলিগলির সাথে স্থাপিত ছিল অন্তরের সম্পর্ক, সকল আত্মীয় স্বজনের মায়া মমতা পরিত্যাগ করে ফরজ জিহাদ আদায়ের উদ্দেশ্যে সৈয়দ সাহেব পা বাড়ালেন। পিতা মাতার মহব্বত, সন্তান সন্ততির স্নেহ, বাড়ী ঘর, ধন সম্পদের মায়া, আত্মীয় স্বজন, বন্ধু বান্ধবের মমতা কি স্বেচ্ছায় পরিত্যাগ করা যায়? হ্যাঁ মর্দে মোমিন মুজাহিদের পক্ষে এটা সম্ভব, কারণ তাঁরা এ সব কিছুর ঊর্ধ্বে আল্লাহর ভালোবাসাকে স্থান দেয়। সতের পথের সৈনিকরা সবসময় এ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে। কোন প্রতিবন্ধকতা তাদের চলার পথে কাঁটা হয়ে দাঁড়াতে পারেনি। পীর মুরিদ এবং নযর নেওয়াজের মত আরাম আয়েশের পথ সৈয়দ সাহেবের জন্য ছিল উন্মুক্ত। কিন্তু তাঁর সামনে ছিল মহান প্রভুর সেই বাণী

(হে নবী) আপনি বলে দিন, তোমাদের পিতা, তোমাদের পুত্র, তোমাদের ভাই, তোমাদের স্ত্রী, তোমাদের ধন সম্পদ যা তোমরা (কষ্ট করে) উপার্জন করেছ, তোমাদের ব্যবসা বাণিজ্য যার ক্ষতিগ্রস্থতাকে তোমরা ভয় পাও, তোমাদের আকর্ষণীয় আবাসিক ভবন, সব কিছুকে কি তোমরা আল্লাহ, তাঁর রাসুল এবং জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহর চেয়ে অধিক ভালোবাসো? তাহলে সে সময় পর্যন্ত অপেক্ষা কর, যখন আল্লাহর সিদ্ধান্ত এসে হাজির হবে। (সুরা তওবা)

তাই সৈয়দ সাহেব তার প্রিয় সব কিছুকে পিছনে ফেলে শুধুমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহর পতে রওয়ানা হলেন। তিনি তাঁর গ্রামের সীমানা নির্ধারনী নদী পার হয়ে দুরাকাত শোকরানা নামাজ আদায় করলেন এই কারণে যে, সবকিছু পরিত্যাগ করে জিহাদের জন্য বের হবার ব্যাপারে আল্লাহ তাকে সুযোগ দিয়েছেন। হেকমত কারণে তিন সঙ্গী মুজাহিদদেরকে চারভাগে।ভাগ করে দু-একদিন পরপর এক একদল রওয়ানা করার নির্দেশ দিয়ে নিজে একটি দল নিয়ে প্রথমে রওয়ানা হয়ে গেলেন। এরপর থেকেই আঞ্চলিক প্রতিনিধিদের ব্যবস্থাপনায় বিভিন্ন এলাকা থেকে দলে দলে মুজাহিদ সীমান্তের দিকে যাত্রা শুরু করে। সফরের সময় বিভিন্ন স্থানে রাত্রি যাপন করলে মুজাহিদদের পাহারা দেয়ার ব্যবস্থা হতো। প্রত্যেক রাতের জন্য গোপন কোন স্থান নির্ধারণ করে মুজাহিদদের জানিয়ে দেয়া হতো। পাহারাদারেরা প্রশ্নের জবাবে রাতের অন্ধকারে ঐ শব্দটি হতো পরস্পরের পরিচয়ের মাধ্যম। আধুনিক যুদ্ধশাস্ত্রে যাকে কোড ওয়ার্ড আখ্যায়িত করা হয়।

সৈয়দ সাহেব রায়বেরেলীতে থেকে জিহাদের জন্যে রওয়ানা হওয়ার দশমাসের মধ্যে প্রায় তিন হাজার মাইল পথ অতিক্রম করেন। রায়বেরেলী থেকে বুন্দেলখন্ড, গোয়ায়ির, টোঙ্ক, রাজপুতনা, সিন্ধু. বেলুচিস্তানের মরুভূমি, বিপদ সঙ্কুল পাহাড় পর্বত এবং পানাহারের ভীষণ কষ্ট অতিক্রম করে পেশওয়ার হয়ে চরসাদ্দায় পৌঁছান। উপমহাদেশের ইতিহাসে দ্বীনকে বিজয়ী করার জন্য এমন ত্যাগ আর কষ্ট স্বীকার করার দ্বিতীয় উদাহরণ বিরল। যেমন ছিল ধৈর্যশীল নেতা, তেমনি কর্মী বাহিনী। সৈয়দ সাহেব এমনি একটি বজ্রকঠিন, ঐক্যবদ্ধ, তেমনি কর্মী বাহিনী। সৈয়দ সাহেব এমনি একটি বজ্রকঠিন, ঐক্যবদ্ধ, সুশৃঙ্খল, স্বার্থত্যাগী দল তৈরি করতে সক্ষম হয়েছিলেন। সীমান্তে পৌছার পর শিখদের সাথে ছোট খাট কয়েকটি যুদ্ধ সংগঠিত হয়। অতঃপর জিহাদের আমীর নির্বাচনের প্রশ্ন উঠলে হান্ডের পুকুর পাড়ে আন্দোলনের উচ্চপর্যায়ের দায়িত্বশীল এবং স্থানীয় নেতৃবৃন্দের এক যৌথ সভায় ১৮২৭ খ্রিষ্টাব্দের ১১ ই জানুয়ারি সৈয়দ সাহেবকে আমীর নির্বাচিত করা হয়। পরদিন জুমার খোতবায় সৈয়দ সাহেবের নাম সংযোজন করা হয়।

শিখ নির্যাতনের বিরুদ্ধে সশস্ত্র সংগ্রাম

সীমান্তের মুসলিম জনবসতির উপর শিখদের অত্যাচার বৃদ্ধি পাওয়ায় সৈয়দ সর্বপ্রথম ১৮১৪ খ্রিষ্টাব্দে শিখদের বিরুদ্ধে সশস্ত্র সংগ্রাম শুরু করেন। শিখদের জুলুমবাজি যখন সহ্যের সীমা অতিক্রম করে, এমনকি তারা যখন মসজিদে আযান দেয়া বন্ধ করে দেয়, গরু জবাইকে করে বেআইনী, ১৮২৬ খ্রিষ্টাব্দে সৈয়দ আহমদ কয়েক হাজার ঈমানদার মুসলমান মুজাহিদ নিয়ে শিখদেরকে আক্রমণ করেন। জালিম শিখ শক্তির বিরুদ্ধে এই জিহাদের মুজাহিদ বাহিনীর ব্যাপক উৎসাহ পরিলক্ষিত হয়। এই জিহাদের কেবল বাংলাদেশ থেকেই ১২ হাজার মুজাহিদ অংশগ্রহণ করে। সশস্ত্র সংগ্রামে মুজাহিদদের সামনে দুটি ফলাফল অবশ্যম্ভাবী ছিল।

এক. বিজয়ী হয়ে বেঁচে থাকলে গাজী,

দুই. বিজিত হয়ে মারা গেলে শহীদ।

যুগে যুগে মুসলমানরা এই মূলমন্ত্রের কারণেই নিজেদের জান মাল কোরবান করে খোদার পথে লড়বার জন্য প্রস্তুত হতে পেরেছিল। সৈয়দ আহমদের ইসলামী আন্দোলনও একই মূলমন্ত্রে পরিচালিত হচ্ছিল। মুসলমানদের শিবির ছিল পাহাড়ি এলাকায়। আর শিখরা ছিল সমতল অঞ্চলে। মাঝে মাঝে আক্রমণ পরিচালনা করে মুজাহিদরা শিবিরে ফিরে আসতো নিরাপদে। উইলিয়াম হান্টারের বর্ণনা অনুযায়ী শিখরা সমতল ভূমি ছেড়ে পাহাড়ি এলাকায় মুসলমানদের শিবির আক্রমণ করার সাহস পেতনা। ১৮২৯ খ্রিষ্টাব্দে সৈয়দ আহমদ এক প্রবল আক্রমণের মাধ্যমে শিখদের উপর বিজয় লাভ করেন। ১৮৩০ সালের জুন মাসে জেনারেল অলার্ড ও হরিশিং নালওয়ার শিখ বাহিনীর নিকট একবার পরাজিত হয়েও মুজাহিদ সৈন্যরা অকুতোভয়ে পুনরায় সমতল ভূমি দখল করে এবং সে বছরেই পেশওয়ার তাদের হস্তগত হয়।

সীমান্তে মুজাহিদ প্রেরণের ব্যবস্থাপনা

ব্রিটিশ, শিখ, হিন্দু, একই সাথে এ তিন শক্তির মোকাবিলায় জেহাদি বাহিনী সংগঠিত হতে লাগলো। আঞ্চলিক প্রতিনিধিরা উপমহাদেশের প্রতিটি শহরে আন্দোলনের সর্বশেষ খবরাখবর কর্মী, সমর্থক ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের ঘরে ঘরে পৌঁছে দিতেন। সারা উপমহাদেশ বিশেষ করে বাংলাদেশ অঞ্চল থেকে ব্যাপক হারে টাকা পয়সা সংগ্রহ হতে লাগলো আর দলে দলে মুজাহিদরা জেহাদি অঞ্চলে জড় হতে শুরু করে। সিন্ধু নদ থেকে বহু ভিতরের দিকে সিত্তানায় মুজাহিদরা হাজির হতে হতে স্থানীয় অধিবাসীরাও আন্দোলনে যোগদান করতে লাগলো। মুজাহিদদের ক্রমাগত অগ্রগতিতে ব্রিটিশ শক্তি শঙ্কা বোধ করে এবং উক্ত অঞ্চলে পুলিশি তৎপরতা বৃদ্ধি করে। অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে মুজাহিদগণ আত্মগোপন করতে থাকে এবং সিত্তানার পাহাড়ি অঞ্চলে জমায়েত হতে থাকে। অপর দিকে সোয়াত উপত্যকায়ও জেহাদি বসতি স্থাপিত হতে থাকে। এ সময় উপমহাদেশের বিভিন্ন এলাকায় আঞ্চলিক এলাকায় আঞ্চলিক প্রতিনিধিদের তৎপরতা বৃদ্ধি পায়। তারা নিজ নিজ অঞ্চলে ব্যাপক সফর শুরু করেন এবং মুজাহিদদেরকে জিহাদি অঞ্চলে প্রেরণের ব্যবস্থা করেন। উপমহাদেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে সীমান্ত পর্যন্ত কোন অসুবিধা ছাড়াই মুজাহিদদের পৌঁছানোর ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। এনায়েত উল্লাহ খান, আবদুল্লাহ এবং নঈম খানকে সদস্য করে তিন সদস্য বিশিষ্ট কমিটি এ কাজে নিয়োজিত ছিল। মুজাহিদদের যাত্রা পথে বিভিন্ন স্থানে বিশ্রাম থাকা খাওয়ার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা ছিল এই কমিটির তত্ত্বাবধানে। এছাড়া পথে মুজাহিদদের গতিবিধির ব্যাপারে খুবই গোপনীয়তা রক্ষা করা হতো। সংগঠনের গুরুত্বপূর্ণ এবং গোপনীয় কাগজ পত্র বিভিন্ন সময়ে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পৌঁছানো এবং সারা দেশ থেকে অর্থ সংগ্রহ করে জিহাদী অঞ্চলে পৌঁছানোর জন্য মাওলানা বেলায়েত আলী আযিমাবাদী, মাওলানা এনায়েত আলী আযিমাবাদী, মাওলানা কাসেম পানিপথি, মাওলানা সৈয়দ আওলাদ হাসান, সৈয়দ হামিদ উদ্দিন, মিয়া দ্বীন মুহাম্মদ ও পীর মুহাম্মদ প্রমুখ ব্যক্তিবর্গকে দায়িত্ব দেয়া হয়। মুজাহিদদের মধ্যে কয়েক শ্রেণীর লোক ছিল। প্রথমত: আন্দোলনের সাথে সরাসরি সম্পর্ক রাখার কারণে রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগে অভিযুক্তরা, দ্বিতীয়ত: জিহাদে উৎসাহ প্রদানকারীগণ, তৃতীয়ত: খ্রিষ্টানদের অধীনে নির্বিঘ্নে থাকা আদর্শ বিরোধী বলে অনুভবকারীরা। আন্দোলনের যে সমস্ত কর্মী সরকারী চাকুরীতে ছিলেন, বেতনের একটা নির্দিষ্ট অংশ প্রতিমাসে নিয়মিত জিহাদি বসতিতে প্রেরণ করতেন। এদের মধ্যে যারা অপেক্ষাকৃত সাহসী ছিলেন, সংগঠনের প্রয়োজনে মাঝে মাঝে চাকুরী থেকে ছুটি নিয়ে আন্দোলনের কাজে সময় ব্যয় করতেন। এ ব্যাপারে উইলিয়াম হান্টার তার দি ইন্ডিয়ান মুসলমানস গ্রন্থে উল্লেখ করেন, মুসলমান পেয়াদারা ১৮৩০ সাল থেকে ১৮৪৬ সাল পর্যন্ত মাঝে মাঝে বেশ কয়েক মাসের ছুটি নিয়েছে আন্দোলনের কাজের জন্য। ত্যাগ-তিতিক্ষা ও সাহসের এক অভূতপূর্ব নজীর স্থাপন করেছিল এই ত্বরীকায়ে মুহাম্মদী আন্দোলনের কর্মীরা।

 

Page 4 of 6
Prev1...3456Next

© Bangladesh Jamaat-e-Islami

  • আমাদের সম্পর্কে
  • প্রাইভেসি পলিসি
  • যোগাযোগ
কোন ফলাফল নেই
সকল ফলাফল দেখুন
  • নীড়
  • সংক্ষিপ্ত পরিচিতি
  • বিভাগ ভিত্তিক
    • আল কুরআন
    • আল হাদিস
    • ফিকাহ
    • ঈমান
    • ইসলাম
    • পারিবারিক জীবন ও সামাজিক সম্পর্ক
    • আন্দোলন ও সংগঠন
    • সীরাত ও ইতিহাস
    • সীরাতে সাহাবা
    • মহিলাদের বিশেষ বই
    • রাজনীতি
    • অর্থনীতি
    • বিবিধ
  • রুকন সিলেবাস
    • রুকন সিলেবাস (স্বল্প শিক্ষিত)
    • রুকন সিলেবাস (শিক্ষিত)
  • কর্মী সিলেবাস
  • বাৎসরিক পাঠ্যসূচি
    • বাৎসরিক পাঠ্যসূচি (শিক্ষিত)
    • বাৎসরিক পাঠ্যসূচি (স্বল্প শিক্ষিত)
  • উচ্চতর অধ্যয়ন
  • অডিও বই
  • অন্যান্য
    • দারসুল কুরআন
    • দারসুল হাদিস
    • আলোচনা নোট
    • বইনোট
    • প্রবন্ধ
    • কবিতা
    • বুলেটিন
    • স্মারক
    • ম্যাগাজিন
    • এপস
    • রিপোর্ট বই
    • ছাত্রী সিলেবাস

@BJI Dhaka City South