জামায়াত অনলাইন লাইব্রেরি
  • নীড়
  • সংক্ষিপ্ত পরিচিতি
  • বিভাগ ভিত্তিক
    • আল কুরআন
    • আল হাদিস
    • ফিকাহ
    • ঈমান
    • ইসলাম
    • পারিবারিক জীবন ও সামাজিক সম্পর্ক
    • আন্দোলন ও সংগঠন
    • সীরাত ও ইতিহাস
    • সীরাতে সাহাবা
    • মহিলাদের বিশেষ বই
    • রাজনীতি
    • অর্থনীতি
    • বিবিধ
  • রুকন সিলেবাস
    • রুকন সিলেবাস (স্বল্প শিক্ষিত)
    • রুকন সিলেবাস (শিক্ষিত)
  • কর্মী সিলেবাস
  • বাৎসরিক পাঠ্যসূচি
    • বাৎসরিক পাঠ্যসূচি (শিক্ষিত)
    • বাৎসরিক পাঠ্যসূচি (স্বল্প শিক্ষিত)
  • উচ্চতর অধ্যয়ন
  • অডিও বই
  • অন্যান্য
    • দারসুল কুরআন
    • দারসুল হাদিস
    • আলোচনা নোট
    • বইনোট
    • প্রবন্ধ
    • কবিতা
    • বুলেটিন
    • স্মারক
    • ম্যাগাজিন
    • এপস
    • রিপোর্ট বই
    • ছাত্রী সিলেবাস
কোন ফলাফল নেই
সকল ফলাফল দেখুন
  • নীড়
  • সংক্ষিপ্ত পরিচিতি
  • বিভাগ ভিত্তিক
    • আল কুরআন
    • আল হাদিস
    • ফিকাহ
    • ঈমান
    • ইসলাম
    • পারিবারিক জীবন ও সামাজিক সম্পর্ক
    • আন্দোলন ও সংগঠন
    • সীরাত ও ইতিহাস
    • সীরাতে সাহাবা
    • মহিলাদের বিশেষ বই
    • রাজনীতি
    • অর্থনীতি
    • বিবিধ
  • রুকন সিলেবাস
    • রুকন সিলেবাস (স্বল্প শিক্ষিত)
    • রুকন সিলেবাস (শিক্ষিত)
  • কর্মী সিলেবাস
  • বাৎসরিক পাঠ্যসূচি
    • বাৎসরিক পাঠ্যসূচি (শিক্ষিত)
    • বাৎসরিক পাঠ্যসূচি (স্বল্প শিক্ষিত)
  • উচ্চতর অধ্যয়ন
  • অডিও বই
  • অন্যান্য
    • দারসুল কুরআন
    • দারসুল হাদিস
    • আলোচনা নোট
    • বইনোট
    • প্রবন্ধ
    • কবিতা
    • বুলেটিন
    • স্মারক
    • ম্যাগাজিন
    • এপস
    • রিপোর্ট বই
    • ছাত্রী সিলেবাস
জামায়াত অনলাইন লাইব্রেরি

চেতনার বালাকোট

অন্তর্গতঃ uncategorized
Share on FacebookShare on Twitter

সূচীপত্র

  1. প্রারম্ভিক কথা
  2. প্রকাশকের আরজ
  3. ইংরেজ বিরোধী মনোভাব
  4. আন্দোলন ও তার দৃষ্টিভঙ্গি
  5. জন্ম ও বংশ পরিচয়
  6. শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ
  7. তৎকালীন উপমহাদেশের রাজনৈতিক অবস্থা
  8. জীবনের মিশন
  9. ত্বরীকায়ে মুহাম্মাদী সা. আন্দোলন
  10. দাওয়াতে দ্বীন ও কর্মী সংগ্রহ অভিযান
  11. হজ্জের উদ্দেশ্য এবং সফরের সাংগঠনিক কাঠামো
  12. সংগঠনের মূলনীতি
  13. সংগঠন: প্রশিক্ষণ: ক্যাডার তৈরী
  14. জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহর ধারণা
  15. জিহাদের প্রস্তুতি ঘোষণা
  16. মুজাহিদ বাহিনী
  17. অর্থ সংগ্রহ পদ্ধতি
  18. আন্দোলনের বিরুদ্ধে মিথ্যা প্রচার
  19. মুহাম্মদ বিন আবদুল ওয়াহহাব নজদীর সাথে সামঞ্জস্য
  20. শরীয়তুল্লাহ ও তিতুমীরের আন্দোলন
  21. সীমান্তে জিহাদের কেন্দ্র স্থাপনের কারণ
  22. জিহাদের উদ্দেশ্যে হিজরত
  23. শিখ নির্যাতনের বিরুদ্ধে সশস্ত্র সংগ্রাম
  24. সীমান্তে মুজাহিদ প্রেরণের ব্যবস্থাপনা
  25. ইসলামী রাষ্ট্রের গোড়াপত্তন
  26. আন্দোলনের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র
  27. দ্বিতীয় হিজরত
  28. বালাকোট যুদ্ধ ও ঈমাম সাহেবের শাহাদাত
  29. আন্দোলনের পুনরুজ্জীবন
  30. সাইয়েদ আহমদ ব্রেলভী ও তার আন্দোলন সম্পর্কে সাইয়েদ আবুল আলা মওদুদীর পর্যালোচনা
  31. ব্যর্থতার কারণ
  32. প্রথম কারণ
  33. দ্বিতীয় কারণ
  34. তৃতীয় কারণ

ইসলামী রাষ্ট্রের গোড়াপত্তন

পেশওয়ার থেকে পাঞ্জতার আসার পর স্থানীয় সর্দারগণ সৈয়দ সাহেবকে অভ্যর্থনা জানান এবং তাঁর নিকট বাইয়াত গ্রহণ করার আগ্রহ প্রকাশ করেন। পাঞ্জতার ও তার পার্শ্ববর্তী বিরাট এলাকায় মুসলিম জনবসতি ছিল। সৈয়দ সাহেব বিভিন্ন দিক বিবেচনা করে সর্দারদেরকে সাধারণ বাইয়াত না করিয়ে শরীয়তের বাইয়াত করালেন এবং বললেন, এ এলাকার সব অধিবাসী মুসলমান। এখানে নির্বিঘ্নে শরীয়তের হুকুম চালু করা যায়। আপনারা যদি এ এলাকায় শরীয়তের আইন চালু করেন, তাহলে আমি এখানে থাকবো। আর না হয় অন্যত্র চলে যাবো। সৈয়দ সাহেবের এই শর্তের পরিপ্রেক্ষিতে ১২৪৪হিজরীর পহেলা শাবান পাঞ্জতারে আলেম ও স্থানীয় নেতৃবৃন্দের এক সভা আহবান করা হয়। সভায় সীমান্তের খান ও আমীরগণ চাড়াও প্রায় দুহাজার আলেম উপস্থিত হন। যীদার আশরাফ খান এবং হান্ডের খাবে খানও এ সভায় উপস্থিত ছিলেন। অত্র এলাকায় শরীয়তের আইন চালু করার ব্যাপারে এ সভায় সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। জুমার নামাজের পর সকল খান, আমীর ও আলেমগণ সৈয়দ সাহেবের নিকট শরীয়তের বাইয়াত গ্রহণ করেন। বাইয়াত গ্রহণের সময় লিখিত শপথ নামা পাঠ করানো হয়। শপথ নামায় ছিল: (১) শরীয়তের বিধি বিধান মেনে চলার প্রতিশ্রুতিতে স্বেচ্ছায় সৈয়দ সাহেবকে ঈমাম মনোনীত করে তাঁর হাতে বাইয়াত গ্রহণ করলাম। (২) এ এলাকায় শরীয়ত বিরোধী কাজ বন্ধ করে শরীয়তের হুকুম প্রতিষ্ঠা করবো। (৩) ঈমাম মনোনীত করার পর তার বিরোধিতা করা সাংঘাতিক অপরাধ। বিরোধিতার সীমা অতিক্রম করলে তার মোকাবিলায় অস্ত্র ধারণ সকল মুসলমানের উপর ফরজ। এতে শরীয়ত প্রতিষ্ঠাকারী কেউ মারা গেলে শহীদ, শরীয়ত বিরোধী কেউ মরা গেলে পাপী এবং দোযখী বলে গণ্য করা হবে। (৪) ইতোপূর্বেও আমরা বাইয়াত গ্রহণ করেছি। আজ আলেমদের সম্মুখে নতুন করে বাইয়াত গ্রহণ করলাম। সৈয়দ সাহেব আমাদের জন্য দোয়া করবেন, যেন আমাদের মরা বাঁচা শুধুমাত্র ইসলামের জন্য হয়।

এই ঐতিহাসিক বাইয়াতের পর সীমান্তের বিরাট এলাকায় ইসলামী শরীয়ত চালু হয়। ক্ষুদ্র একটি ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা লাভ করে, যার নেতৃত্বে ছিলেন সৈয়দ আহমদ ব্রেলভী। শরীয়তের বিধান চালু হবার পর পুরো এলাকায় শান্তি স্থাপিত হলো। একের উপর অপরের জুলুম বন্ধ হলো। জুলুম করে পলায়নের পথ বন্ধ হলো। কাজী নিযুক্ত করে বিচার ফায়সালা শুরু হলো। উৎপাদিত ফসলের একদশমাংশ(ওশর) আদায়ের ব্যবস্থা করা হলো। খারায ও যাকাত আদায় এবং বণ্টনের জন্য ব্যবস্থা গৃহীত হলো। এই ভাবে সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য হলেও এই উপমহাদেশের এক কোনে একটি ক্ষুদ্র ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। উইলিয়াম হান্টার এই ক্ষুদ্র ইসলামী রাষ্ট্রটিকে জেহাদি বসতি বলে আখ্যায়িত করেছেন।

পাঞ্জাতারকে নতুন ইসলামী রাষ্ট্রের রাজধানী হিসেবে গণ্য করা হলো। এই স্থানটি পাহাড়ের মধ্যবর্তী খুবই নিরাপদ স্থান। একটি খালের পূর্বতীরে অবস্থিত। পাঞ্জপীর, যীদা হয়ে খালটি হান্ডের মধ্য দিয়ে সিন্ধু নদে পতি হয়েছে। পাঞ্জতারের দক্ষিণ ও পূর্ব দিক সমতল ভূমি। দক্ষিণ পশ্চিম দিকে বাগে দেওয়ান শাহ নামের একটি বাগান ছিল। এরই পাশে কবরস্থান। অবশ্য এখন এসব কিছুই নেই। রাজধানীর আধা-মাইল উত্তরে খালের পশ্চিম পাড়ের একটি টিলায় কামান বসানো হয়। রাজধানীর পূর্ব পাশে একটি বিরাট গাছ ছিল, এখানে ঈদ ও জুমার নামাজ আদায় করা হতো। শরীয়তের বাইয়াতের সভা এ স্থানেই অনুষ্ঠিত হয়। এর পার্শ্ববর্তী জমি বালুকাময়। গিরিপথের চার পাঁচ মাইল দক্ষিণে পাঞ্জতার, আসা যাওয়ার পথ খালের তীর সংলগ্ন। দক্ষিণে খলিকালাই এর সম্মুখে একটি টিলা আছে। এখানে কামান বসিয়েই ইংরেজগন পাঞ্জতারকে ধ্বংস করেছিল। এর কিছু পশ্চিমে রাণীকোর্ট নামে আর একটি ঠিলা আছে। এখান থেকে রাজধানীর প্রতিটি ঘর বাড়ী পরিষ্কার ভাবে দেখা যেতো। মুজাহিদদের মধ্যে যাদের থাকার ঘর ছিল না, তাদের জন্য পরবর্তী সময়ে সৈয়দ সাহেব একটি বস্তি তৈরি করেছেন এবং এখানে একটি মসজিদও নির্মাণ করেন। সেই আবাদি এবং মসজিদের চিত্র আজও বিদ্যমান আছে। আবাদির চারিদিকে পাথরের প্রাচীর ছিল। প্রাচীরের চার কোনায় চারটি বুরুজ ছিল। প্রাচীরের দরজা ছিল পূর্ব দিকে। প্রথম অবস্থায় সৈয়দ সাহেব উত্তর পূর্ব দিকে বুরুজে অবস্থান করতেন। প্রয়োজনীয় লোকের একটি দল তার সাথে থাকতো।

এই বুরুজের সম্মুখস্থ খোলা-স্থানে একা একটি ঘর ছিল। এই ঘরেই সৈয়দ সাহেব আগত লোকদেরকে সাক্ষাৎ দান করতেনএবং প্রয়োজন বোধে মজলিশে শুরার বৈঠক বসতো। ক্রমান্বয়ে গাজীদের সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে থাকায় রাজধানীর পার্শ্ববর্তী স্থানে একটি আবাসিক এলাকা গড়ে তোলা হয়। গম পিষানোর জন্য এক বৃহদাকার কারখানা স্থাপন করা হয়। আবাসিক এলাকা ও কারখানা তৈরির সময় সকলে মিলে মিশে কাজ করেন, এমনকি সৈয়দ সাহেব নিজেও একজন সাধারণ গাজীর ন্যায় কাজ করতেন। একারণেই গাজীরাও শরীয়ত সম্মত যে কোন ধরণের কাজ করতে বিব্রত বা লজ্জা বোধ করতেন সৈয়দ সাহেব নিওে একই ব্যবস্থার অধীনে রেশন পেতেন।

আন্দোলনের নেতৃবৃন্দের এক বৈঠকে সৈয়দ সাহেব শারীরিক এবং সামরিক প্রশিক্ষণের জন্য একজন বিভাগীয় দায়িত্বশীল নিয়োগের ইচ্ছা ব্যক্ত করায় সকলেই সম্মত হলেন। সর্বসম্মতিক্রমে হামিদ আলী খান লাহোরিকে এ বিভাগের দায়িত্বশীল নিয়োগ করা হয়। তিনি ছিলেন যুদ্ধ বিদ্যায় পারদর্শী, অভিজ্ঞ, সতর্কবাণী এবং সাহসী। বিভিন্ন বর্ণনায় পাওয়া যায় যে, সৈয়দ সাহেব কখনো কখনো রাষ্ট্রীয় নির্দেশনামা জারী করেছেন। কোন জরুরী বিষয়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে হলে অথবা কোন এলাকার আমীরের ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হলে বা ব্যক্তি বিশেষের ক্ষতিকর কর্মতৎপরতার ব্যাপারে এসব নির্দেশ নামা জারী করা হতো। একদিন কোন এক ব্যাপারে সৈয়দ সাহেব রাগান্বিত হয়ে অসাবধানাবশতঃ জনৈক গাজীকে মরদূদ বলে ফেলেন। সাথে সাথে এ ব্যাপারে কেউ কোন কথা বললেন না। এ ঘটনার সময়ে উপস্থিত ব্যক্তিগণ রাতে এশার নামাজের পর সৈয়দ সাহেবকে তাঁর এই ত্রুটির কথা স্মরণ করিয়ে দেন। তিনি কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললেন, কোন মুসলমানকে এমন কথা বলা উচিৎ নয়। আমার খুব অন্যায় হয়ে গেছে। সাথে সাথেই তিনি সংশ্লিষ্ট গাজীকে ডেকে পাশে বসান এবং তার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেন।

আন্দোলনের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র

সুলতান মুহাম্মদ খানের শাসনের পর খাইবার থেকে আম্ব পর্যন্ত সমস্ত এলাকা সৈয়দ সাহেবের আয়ত্বে এসেছিল। ইসলামী রাষ্ট্রের শত্রু বলতে এতদঞ্চলে আর কেউ ছিলনা। এবার একটা বিরাট বাহিনী গঠন করে প্রথমে শিখদের বিরুদ্ধে পরে ইংরেজদের বিরুদ্ধে প্রত্যক্ষ এবং সশস্ত্র জিহাদ ঘোষণার পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছিল। কিন্তু পরিতাপের বিষয় যে স্থানীয় সর্দার মোল্লাদের সন্দেহপ্রবণতা, স্বার্থপরতা এবং অন্যায় পক্ষপাতিত্বের ফলে এই আশার আলো দেখতে দেখতেই নিভে গেল। তিন চার বছরের কঠোর পরিশ্রমের পর যে ঈপ্সিত চরম লক্ষ্যে পৌঁছার পথ উন্মুক্ত হয়ে এসেছিল, তা বরবাদ হয়ে গেল। উপমহাদেশের মুসলিম শাসন অবসানের পর ইসলামী আন্দোলনের উদ্দেশ্যে যে সম্পদ সমবেত করা হলো, ইউসুফ জাইর প্রান্তরে তা ধূলায় লুণ্ঠিত হয়ে গেলো। বহু গাজী সম্পূর্ণ অজ্ঞাত অবস্থায় জীবন বিসর্জন দিলেন। সৈয়দ সাহেব চার বছরের কেন্দ্র পরিবর্তন করে অন্যত্র চলে যেতে বাধ্য হলেন।

অত্র এলাকায় সৈয়দ সাহেবের আগমনের পূর্বে স্থানীয় মোল্লাগণ জনসাধারণের নিকট থেকে চাঁদা সংগ্রহ করে সেটাকেই নিজেদের আয়ের উৎস হিসেবে ব্যবহার করতো। সৈয়দ সাহেবের আগমনের পর ওশর ব্যবস্থা প্রবর্তনের ফলে মোল্লাদেরকে চাঁদা দেয়ার নিয়ম বাতিল হয়ে গেল। এ কারণে তারা ভিতরে ভিতরে নিজেদের স্বার্থে সৈয়দ সাহেবের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র শুরু করে। ইসলামী বিধান প্রতিষ্ঠিত হবার পর স্থানীয় সরদারদেরও বেশ অসুবিধায় পড়তে হয়েছে। কারণ তখন আর তাদের ইচ্ছামত জনসাধারণকে শাসন এবং শোষণ করা সম্ভব ছিলনা। এখানে বিদেশী অর্থাৎ সৈয়দ সাহেবের জারীকৃত আইনের বাধনে তাদের চলতে হতো। এ অবস্থা তারা বেশীদিন সইতে পারলো না। ভিতরে ভিতরে সর্দারগণ সৈয়দ সাহেবের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের জাল বুনতে লাগলো। মোল্লা এবং সর্দারদের ষড়যন্ত্র শেষ পর্যন্ত একই সূত্রে মিলিত হয়ে সম্মিলিতভাবে কাজ শুরু হলো। গোপনে বিভিন্ন এলাকায় লোক প্রেরণ করে, ব্যক্তিগতভাবে যোগাযোগ করে এবং চিঠিপত্র দিয়ে ক্রমে ক্রমে ষড়যন্ত্রের জাল বিস্তার করা হলো। বিভিন্ন এলাকায় বিভিন্নভাবে অবস্থানরত গাজীদেরকে একই সাথে হত্যা করার চক্রান্ত হলো। ইংরেজ ও শিখদের সাথে গোপনে যোগাযোগ রক্ষা করা হলো। সৈয়দ সাহেবকে ইংরেজদের চর হিসেবে কাজ করার জন্য সীমান্ত এলাকায় পাঠানো হয়েছে বলে প্রচার করা হলো। প্রমাণস্বরুপ ইংরেজদের পক্ষ থেকে একটি ভুয়া চিঠি সীমান্তের সর্দারদের হাতে পৌছানো হলো। এই চিঠির ভিত্তিতে মোল্লারা জনসাধারণের নিকট প্রচার করলো যে, সৈয়দ সাহেবের সমর্থন করাতো দূরের কথা, তাঁর বিরোধিতা করাই হচ্ছে ইসলামের বড় খেদমত। এ ছাড়া স্থানীয় সর্দারগণ একটি যুবতীর কান কেটে তাকে অনাবৃত মাথায় ফরিয়াদিনী হিসাবে সৈয়দ সাহেবের বিচারের উদাহরনস্বরুপ বিভিন্ন অঞ্চলের জনসাধারণের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টির জন্য প্রেরণ করা হয়। মোটকথা বিভিন্ন দল বিভিন্ন স্বার্থে এখানে মিলিত হয়। স্থানীয় মোল্লাগণ আগের মত নিজেদের উপার্জনের পথ খোলাসা করার চিন্তায় ব্যস্ত ছিল। সর্দারগণ নিজেদের শাসন শোষণের পথ উন্মুক্ত করার জন্য উঠে পড়ে লেগেছিল। জনসাধারণ সর্দার ও মোল্লাদের প্রভাবে তাদের সাথে যোগ দিয়েছিল।

শিখ ও ইংরেজগণ এই সুযোগের পূর্ণ সদ্ব্যবহার করে ইসলামী আন্দোলনের পৃষ্ঠে কুঠারাঘাত করার সিদ্ধান্ত নিল। সৈয়দ সাহেব ও তাঁর সাথীগণ এ ব্যাপারে পূর্বাভাস পেয়েও পরিস্থিতির বাস্তবতা আঁচ করতে পারেননি। ফলশ্রুতিতে বিভিন্ন স্থানে বিচ্ছিন্নভাবে অবস্থানরত গাজীদেরকে এই বিশ্বাসঘাতকের দল নির্মমভাবে হত্যা করে। কাউকে ঘুমের মধ্যে, কাউকে নামাজ পড়া অবস্থায়, কাউকে পথ চলতে, কাউকে গল্পের আসরে হত্যা করা হয়। লুট করা হয় বিভিন্ন স্থানে রক্ষিত ইসলামী রাষ্ট্রে খাদ্য গুদামসমূহ। ক্ষমতা লাবের জন্য মুসলমানেরা পরস্পর যে রক্ত ক্ষয় করেছে, ইসলামের ইতিহাসে আজও সে রক্তের দাগ মুছে যায়নি। কিন্তু পেশওয়ার এবং সীমান্তের ক্ষমতালোভী সর্দারগণ স্বার্থ-লিপ্সু মোল্লাগণ এবং এদের হাতের ক্রীড়নক স্থানীয় জনসাধারণ গাজীদের বিরুদ্ধে যে হীন ষড়যন্ত্র করেছিল, তা স্মরণ করলে আজও হৃদয় কেঁপে ওঠে। পরিতাপের বিষয় যে, এরা সবাই নিজেদেরকে মুসলমান বলে দাবী করতেন। উপমহাদেশকে শত্রুমুক্ত করে ইসলামী হুকুমত প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে মুসলমানদের স্বাধীনতা রক্ষা এবং সাধারণ মানুষের মুখে হাসি ফুটাবার একাগ্র বাসনা নিয়ে যারা নিজেদের সুখ শান্তি, পরিবার পরিজন, আত্নীয় স্বজন, ঘরবাড়ী পরিত্যাগ করে হাজার হাজার মাইল দূরে হিজরত করে এসেছিলেন, সেই মুসলমানরাই তাঁদের শিরোচ্ছেদ করে উৎসব করেছিল। এর চেয়ে হৃদয়বিদারক, মর্মান্তিক, নৃশংসতা আর কি হতে পারে? গাজীদেরকে যে করুন অবস্থায় হত্যা করা হয়েছে এর বিস্তারিত বিবরণ এই ক্ষুদ্র পুস্তিকায় দেয়া সম্ভব নয়। শুধু এখানে এতটুকুই লিখলাম, কয়েকজন গাজীকে হাজার হাজার মানুষ কুকুর বিড়ালের মত পিটিয়ে, কুপিয়ে, বর্শা দিয়ে খুঁচিয়ে হত্যা করেছে। এমনকি এই পাষণ্ডরা শহীদদের লাশে পদাঘাত করে বলেছে, ওঠ!নামাজ আদায়ের জন্য তাকীদ কর, ওশর আদায় কর।

এই করুণ পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে জিহাদের কেন্দ্র স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত হলো এবং সৈয়দ সাহেব ঘোষণা করলেন, যারা নিহত হয়েছেন তাঁরা সবাই শহীদ। আমি আমার জীবন আল্লাহর পথে উৎসর্গ করে রেখেছি। সামনে আরো অধিক বিপদ মুসিবত আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে। আমি সেদিকেই অগ্রসর হতে যাচ্ছি। যাঁরা এই অনাগত বিপদ মুসিবতকে ভয় পান, তারা যেন নিজ নিজ বাড়ীতে ফিরে যান। গাজীগণ একথা শুনে সকলেই কাঁদতে লাগলেন। প্রিয় ইমামকে জিহাদের ময়দানে একা চেড়ে যেতে কেউ রাজী হলেন না। এরপর সৈয়দ সাহেব নিজের স্ত্রী-দ্বয়কে অছিয়ত করেন, আমার জীবন যদি এই এবাদতেই শেষ হয়ে যায়, তবে তোমরা অন্য কোথাও বসতি স্থাপন না করে মক্কা অথবা মদিনা শরীফে চলে যাবে। কেননা এই ফেতনা ফ্যাসাদের যুগে এ ছাড়া অন্য কোনও ঈমান বাঁচিয়ে রাখা দায়। কষ্ট হলেও সেখানে বসত করা শ্রেয়।

দ্বিতীয় হিজরত

দ্বিতীয় হিজরতের পূর্বে শেষবারের মত সৈয়দ আহমদ ব্রেলভী পাঞ্জতারের লোকদের ডেকে কয়েকটি উপদেশ দিলেন। ফতেহ খান তোমাদের নেতা, তাঁকে ওশর দিবে। শরীয়তের নির্দেশ মেনে চলবে। ভারত থেকে আগত মুজাহিদদেরকে যত্ন করবে এবং নিরাপদে আমার নিকট পৌঁছে দেয়ার ব্যবস্থা করবে। এরপর সৈয়দ আহমদ জিহাদের নতুন কেন্দ্রের সন্ধানে চার বছরের ক্ষুদ্র ইসলামী রাষ্ট্র পরিত্যাগ করে হিজরত পর কাফেলা নদী অতিক্রম করে। এখান থেকে পিওয়ার পাহাড়ের খাড়াই আরম্ভ হয়। খুবই দুর্গম পথ। ঘোড়া উট পা পিছলিয়ে পড়ে যাচ্ছে। পদাতিকগণ খুব কষ্টে পথ অতিক্রম করছিলেন। কর্ণায় শিবির স্থাপিত হলো। বিশ্রামের পর কাফেলা সিন্ধু নদের তীরে কাচুল গ্রামে পৌছুলো। সিন্ধু নদ পার হতে তিনদিন সময় লাগলো। নদী পার হয়ে কাফেলা তাকুটে অবস্থান করে। আরো অগ্রসর হয়ে রাজদেউরীকে নতুন কেন্দ্র হিসেবে মনোনীত করা হয়। রাজদেউরী পাখলীর সমস্ত গিরি পথের মুখে থাকায় এটা কেন্দ্রের মর্যাদা পাবার অধিকারী ছিল। এখানে গম ভাঙ্গানো এবং লাকড়ি সংগ্রহ করা খুবই সুবিধাজনক ছিল। রাজদেউরী সকল খানদের যৌথ সম্পত্তি ছিল, এখানে অবস্থান করলে কোন খানেরই অসন্তুষ্ট হবার কারণ ছিল না। সৈয়দ সাহেব এখানে থাকার সিদ্ধান্ত নিলেন এবং গাজীদেরকে পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন এলাকায় অবস্থান নেয়ার জন্য ভাগ ভাগ করে পাঠিয়ে দিলেন। মুজাহিদগণ নিষ্ঠুরভাবে শহীদ হবার পর সৈয়দ সাহেব পাঞ্জতার পরিত্যাগ করে রাজদেউরী পৌঁছালে চারদিকে প্রচার হয়ে যায় যে, সৈয়দ বাদশাহ কাশ্মীর আক্রমণ করার জন্য অগ্রসর হচ্ছেন। অবশ্য এর পিছনে কারণও ছিল। সৈয়দ সাহেব রাজদেউরী পৌছতে পৌছতে মুজাহিদের অগ্রগামী দল ভোগরমঙ্গ এবং বালাকোট ছাড়াও কাশ্মীরের নিকটবর্তী শহর মুযাফফরাবাদের গিয়ে পৌঁছেছিলেন। পরিষ্কার মনে হচ্ছে যে, তারা কাশ্মীর প্রবেশ করবেন। এই সংবাদ পেয়ে রনজিৎ সিংহ তার পুত্র হরি সিংহকে সেনাপতি করে বিরাট বাহিনী সাথে দিয়ে হাযারা প্রেরণ করে। শ্যাম সিংহ এবং জাওয়াল সিংহকেও সাথে পাঠানো হলো। এরা সকলেই ছিল শিখ দরবারের অন্যতম সদস্য। যে কোনভাবেই হোক, সৈয়দ সাহেবকে কাশ্মীর প্রবেশে বাধা দেয়াই ছিল এদের প্রধান দায়িত্ব। শের সিংহ তার বাহিনী নিয়ে মানকিয়ারী পৌছুলো। মুজাহিদ বাহিনীর সুদৃঢ় অবস্থানের কারণে অপেক্ষাকৃত নিকটবর্তী শানাকিয়ার দুর্গ থেকে শিখ সৈন্যরা বের হবার সাহস পায়নি। এতে অত্র উপত্যকার অধিবাসীরা খুবই খুশী হয় এবং সানন্দে ওশর এনে সৈয়দ সাহেবের সামনে হাজির করে। এখানে আসার পর মুজাহিদগণ চারটি শর্তের ভিত্তিতে নতুন করে শপথ গ্রহণ করেন। শর্তগুলো হচ্ছে (১) কোন প্রকার অভাব অভিযোগই আল্লাহ ছাড়া আর কারুর নিকট প্রকাশ না করা (২) যা নিজের জন্য অপছন্দনীয়, অন্য মুসলিম বাইয়ের জন্যও তা অপছন্দনীয় মনে করা। নিজের পছন্দনীয় বস্তু অন্যের জন্য পছন্দ করা। (৩) নিজের অভাব অভিযোগের চেয়ে অন্যের অভাব অভিযোগকে গুরুত্ব দেয়া। (৪)প্রত্যেকটি কাজ শুধুমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য করা।

বালাকোট যুদ্ধ ও ঈমাম সাহেবের শাহাদাত

১৮৩১ খ্রীষ্টব্দে কাগান ও কাশ্মীরের কয়েকজন মুসলমান সর্দার শিখদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য প্রাথমিকভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। পরে এ ব্যাপারে সাহায্যের জন্য তাঁরা সৈয়দ আহমদ ব্রেলভীর নিকট আবেদন জানান। মুসলমান ভাইদের সাহায্যের ডাকে সাড়া দিয়ে সৈয়দ সাহেব মুজাহিদ বাহিনীকে তৈরি হবার নির্দেশ দেন। সোজা পথে প্রতিবন্ধকতা থাকায় সৈয়দ সাহেব তার বাহিনী নিয়ে এক দুর্গম পথে কাশ্মীর রওয়ানা হন। শীতের তীব্রতা এবং পথ বন্ধুর হওয়ায় দীর্ঘদিন পর মুজাহিদ বাহিনী ঐ সনেরই এপ্রিল মাসের মেষ সপ্তাহে বালাকোট ময়দানে ক্লান্ত শ্রান্ত অবস্থায় উপস্থিত হন। এদিকে মুজাহিদ বাহিনীর অগ্রসর হবার সংবাদ পূবেই শিখ ছাউনিতে পৌঁছে গিয়েছিল। তাই পূর্ব থেকেই শের সিংহ তার বাহিনী নিয়ে মাটিকোট অবস্থান করছিল। সেখান থেকে বালাকোট অবস্থানকারীদের অবস্থা, সংখ্যা এবং গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করা সুবিধাজনক ছিল। মুজাহিদ বাহিনী বালাকোটে পৌছার পর পার্শ্ববর্তী এলাকায় পাহারারত মুজাহিদ বাহিনীর কয়েকটি টহল দলের সাথে শিখ টহল দলের মধ্যে কিছু বিচ্ছিন্ন সংঘর্ষ হয়েছিল। এসব সংঘর্ষের প্রায় সবগুলিতেই মুজাহিদগণ বিজয় লাভ করেছেন। কিন্তু শিখ শিবিরে শিখ সৈন্যদের সংখ্যা মুজাহিদ বাহিনীর চেয়ে বহু গুণে বেশী ছিল। পরিস্থিতি পর্যালোচনার জন্য মুজাহিদ শিবিরে শুরার বৈঠক বসল। শূরায় দুধরণের মতামত এলো। এক: মুজাহিদ বাহিনীকে বিশ্রাম করতে দেয়া এবংয় বাহিনী বৃদ্ধি করে পরে আক্রমণের উদ্দেশ্যে এখন আত্মরক্ষা করে নিরাপদ স্থানে সরে যাওয়া প্রয়োজন। দুই: শত্রুকে পৃষ্ঠ প্রদর্শন না করে আল্লাহর উপর ভরসা করে শত্রুর মোকাবিলায় অগ্রসর হওয়া। এতে বিজয় লাভ করলে গাজী এবং মৃত্যুবরণ করলে শহীদ। অতএব আত্মরক্ষার চেষ্টা না করে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হতে হবে। শেষ পর্যন্ত বৈঠকে দ্বিতীয় মতের পক্ষেরেই সিদ্ধান্ত গৃহীত হলো। জয় পরাজয়ের দায়িত্ব আল্লাহর উপর ছেড়ে দিয়ে মুজাহিদ বাহিনী যুদ্ধের জন্য তৈরি হতে থাকে। ১৮৩১ খ্রিষ্টাব্দে মে মাসের ৬ তারিখে সূর্যোদয় হলো। মাটিকোটের উত্তর দিকে শিখ সৈন্যদের অগ্রযাত্রা দেখা দিল। তাদের গতি বালাকোটের দিকে। ক্রমেই শিখদের সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে থাকে। মুজাহিদ শিবিরে এবং পার্শ্ববর্তী মুসলিম জনবসতিতে শিখদের বন্দুকের গুলী এসে পৌছতে লাগলো। এ পরিস্থিতিতে খুব ভোরে ভোরে খাওয়া দাওয়া সেরে নিয়ে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হবার নির্দেশ এলো। এমন সময় মুযাফফরাবাদের আমীর মাসুদ খানের একখানা গোপন চিঠি সৈয়দ সাহেবের হাতে পৌঁছানো হলো। চিঠির বিষয়বস্তু ছিল, যদি শিখ সৈন্যদের মোকাবিলা করতে পারবেন বলে মনে করেন, তবে সেখানেই থাকুন। অন্যথায় বারনা অথবা সতবনের খাল দিয়ে মুজাহিদ বাহিনীকে নিয়ে পাহাড়ের পিছনে চলে যান। এর আগেও নজফ খান একই ধরনের আরেকটি চিঠি সৈয়দ সাহেবের নিকট পাঠিয়েছিলেন। এবার সৈয়দ সাহেব নজফ খানের জন্য উত্তর লিকে পাঠালেন, আপনাদের দুখানা পত্র আমি পেয়েছি। আপনার পরামর্শও অবগত হলাম। আমাদের প্রতি আপনার যে হক ছিল, তা আপনি পালন করেছেন। আল্লাহ আপনাকে তার প্রতিদান দিন। কিন্তু আমাদের উদ্দেশ্য আল্লাহর সন্তুষ্টি বিধান, লোক কম বেশীর প্রশ্ন আদৌ আমাদের সামনে নেই। শূরার সিদ্ধান্তও তাই। তাছাড়া শত্রুর ভয়ে সরে যাওয়া ইসলাম কখনো অনুমোদন করেনা। আল্লাহর ইচ্ছা এই বালাকোটেই বাস্তবে পরিণত হবে। সৈয়দ আহমদ ব্রেলভী নিজেই আজকের যুদ্ধে সেনাপতির দায়িত্ব পালন করছেন। ছোট চোট গ্রুপ কমান্ডারদেরও প্রতি নির্দেশ হলো সমবেত আক্রমণ হবে। সকলেই নিজ নিজ ব্যূহর মধ্যে থেকেই গুলি চালাবে। যেহেতু শত্রু সৈন্য বেশী। সেহেতু বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয়ে নয়, সম্মিলিতভাবে আক্রমণ করলেই সুবিধা হবে। শিখ সৈন্যরা ক্রমে ক্রমে মুজাহিদ বাহিনীর দিকে স্রোতধারার মত অগ্রসর হতে থাকে। শিখ সৈন্যরা খুব কাছাকাছি পৌছলে ঈমাম সাহেব তকবীর ধ্বনি করে আক্রমণ করলেন এবং সকলকে আক্রমণের নির্দেশ দিলেন। মুজাহিদ বাহিনীর প্রথম আক্রমণ সহ্য করতে না পেরে শিখ বাহিনী পশ্চাদপসরণ করত: পাহাড়ের উপর আরোহণ করতে থাকে। মুজাহিদ বাহিনী তাদের পিছু ধাওয়া করতে করতে পাহাড়ের পাদদেশে উপস্থিত হয়। শিখ সেনাপতির উৎসাহে শিখ বাহিনী আবার সামনে অগ্রসর হতে শুরু করে। ইমাম সাহেব পুনরায় বিদ্যুতবেগে শত্রুর উপর ঝাঁপিয়ে পড়েন। শত্রুদের কেউ অস্ত্র ধারণ করলো, কেউ পলায়ন করলো। কিন্তু কোথায় পালাবে? তারা পাহাড় থেকে স্রোতের বেগে নামছিল, অতটা দৌড়ে পাহাড়ে উঠতে পারছিল না। যারা নিচে নেমে গিয়েছিল, তাদের প্রায় সকলেই নিহত হলো। উপর থেকে শিখ সৈন্যরা গুলী করছিল, বৃষ্টির মত গুলি। উভয় পক্ষে পাথর বিনিময়ও চলছে। অবশেষে অসংখ্য শিখ স্রোতের মত মুজাহিদ বাহিনীর উপর ঝাঁপিয়ে পড়লে প্রচণ্ড যুদ্ধ, হাতাহাতি এবং মল্ল যুদ্ধ শুরু হয়। এক একজন মুজাহিদ কোন বর্ণনা মতে ১০০ শিখ সৈন্যের সাথে মোকাবিলা করতে করতে শাহাদাত বরণ করেন। এক পর্যায়ে দুপুর ১১টা কি ১২টা দিকে গুলীর আঘাতে মারাত্মকভাবে আহত হয়ে মাটিকোটের খালের তীরে সৈয়দ সাহেব মানে সকলের ঈমাম শাহাদাত বরণ করেন। দিনটি ছিল ১৮৩১ খ্রিষ্টাব্দের ৬ইমে, রোজ শুক্রবার, ১২৪৬ হিজরির ২০জিলকদ।

সৈয়দ সাহেবের শাহাদতের সংবাদ ছড়িয়ে পড়লে একজন মুজাহিদকেও জীবিত যুদ্ধের ময়দান থেকে ফিরিয়ে নেয়া যাবেনা এ কথা চিন্তা করে মুজাহিদদের মধ্য থেকেই কেউ একজন দূর থেকে চিৎকার করে বললেন, গাজীবৃন্দ, তোমরা এখানে কি করছ, আমিরুল মোমেনীনকে স্থানীয় মুসলমানগণ সতবনের পথে নিরাপদ স্থানে নিয়ে যাচ্ছে। এ শব্দ শুনে যেসব মুজাহিদ জীবিত ছিলেন, সকলের মনে আবার আশার আলো খেলে গেল। প্রাণ প্রিয় ইমামকে জীবন্ত স্বচক্ষে দেখার জন্য মরিয়া হয়ে সতবনের পথে দৌড়াতে লাগলেন মুজাহিদগণ। এতক্ষণে শিখ সৈন্যরা মুজাহিদ শিবির দলিত করে তাদের চিরাচরিত নিয়ম অনুযায়ী পার্শ্ববর্তী গ্রামে প্রবেশ করে। লুঠতরাজের পর গ্রামে অগ্নি সংযোগ করে নিজেদের গন্তব্যস্থানের দিকে যাত্রা করে। গ্রামগুলো থেকে তখন ধোয়া উঠছিল। তবে ঈমাম সাহেবের নিরাপদ স্থানে চলে যাওয়ার এ ঘোষণা কে বা করা দিয়েছিলেন অদ্যাবধি তা জানা যায়নি। বিভিন্ন বর্ণনামতে মুষ্টিমেয় মুজাহিদ বাহিনী শিখদের বিরাট রেজিমেন্টকে কমপক্ষে তিনবার পশ্চাদপসরণ করতে বাধ্য করেছিল। কিন্তু শত্রুপক্ষ বহু গু অধিক হওয়ায় শেষ পর্যন্ত মুজাহিদদের পরাজয় বরণ করতে হয়। এই যুদ্ধের পরও প্রায় তিনশত মুজাহিদ জীবিত ছিলেন। শিখ সৈন্যরা যুদ্ধক্ষেত্র পরিত্যাগ করলে মুসলিম অধিবাসীগণ মুজাহিদদের লাশ দাফন। একই মাসের ১৮ তারিখে অর্থাৎ মাত্র ১১ দিনের ব্যবধানে ইংরেজদের কামানের মুখে বঙ্গবীর তিতুমীরের বাঁশের কিল্লা উড়ে যায় এবং তিনিও সেখানে শহীদ হন। ইংরেজদের পরাধীনতা থেকে স্বাধীনতা লাভের জন্য প্রথম বাংলা ভাষাভাষী শহীদের গৌরব একমাত্র তাঁরই। লক্ষণীয় দিক হলো যে, সৈয়দ আহমদ ব্রেলভীর ত্বরীকায়ে মুহাম্মদী আন্দোলন তার শাহাদাতের পর সরাসরি ব্রিটিশ বিরোধী ভূমিকা পালন করে। আর বাংলাদেশের ফরায়েজী আন্দোলন এবং উদ্যোক্তাদের জীবদ্দশাতেই ব্রিটিশবিরোধী ছিল। কিন্তু এই তিনটি আন্দোলনের মধ্যে সাংগঠনিক মজবুতি এবং ক্যাডার পদ্ধতির কারণে সৈয়দ আহমদ ব্রেলভীর ত্বরীকায় মুহাম্মদী আন্দোলনই দীর্ঘস্থায়ী এবং সুদূর প্রসারী হয়েছিল।

 

Page 5 of 6
Prev1...456Next

© Bangladesh Jamaat-e-Islami

  • আমাদের সম্পর্কে
  • প্রাইভেসি পলিসি
  • যোগাযোগ
কোন ফলাফল নেই
সকল ফলাফল দেখুন
  • নীড়
  • সংক্ষিপ্ত পরিচিতি
  • বিভাগ ভিত্তিক
    • আল কুরআন
    • আল হাদিস
    • ফিকাহ
    • ঈমান
    • ইসলাম
    • পারিবারিক জীবন ও সামাজিক সম্পর্ক
    • আন্দোলন ও সংগঠন
    • সীরাত ও ইতিহাস
    • সীরাতে সাহাবা
    • মহিলাদের বিশেষ বই
    • রাজনীতি
    • অর্থনীতি
    • বিবিধ
  • রুকন সিলেবাস
    • রুকন সিলেবাস (স্বল্প শিক্ষিত)
    • রুকন সিলেবাস (শিক্ষিত)
  • কর্মী সিলেবাস
  • বাৎসরিক পাঠ্যসূচি
    • বাৎসরিক পাঠ্যসূচি (শিক্ষিত)
    • বাৎসরিক পাঠ্যসূচি (স্বল্প শিক্ষিত)
  • উচ্চতর অধ্যয়ন
  • অডিও বই
  • অন্যান্য
    • দারসুল কুরআন
    • দারসুল হাদিস
    • আলোচনা নোট
    • বইনোট
    • প্রবন্ধ
    • কবিতা
    • বুলেটিন
    • স্মারক
    • ম্যাগাজিন
    • এপস
    • রিপোর্ট বই
    • ছাত্রী সিলেবাস

@BJI Dhaka City South