চেতনার বালাকোট
ইংরেজ বিরোধী মনোভাব
বার্মাসহ সমগ্র হিমালয়ান উপমহাদেশব্যাপী ব্রিটিশ আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হয় ১৮৮৫ খৃষ্টাব্দে। এশিয়া মহাদেশের এত বিরাট এলাকা এর আগে কখনো একক শাসনাধীনে আসেনি। হিন্দু ও মুসলমান এ দুটো জাতিই তখন এ অঞ্চলের প্রধান অধিবাসী ছিল। হিন্দু ছিল শতকরা সত্তর জন, আর মুসলমান চিল শতকরা ত্রিশ জন। সংখ্যালঘু হলেও মাত্র কয়েক বছর পূর্বে তারা এদেশের শাসনকর্তা চিল এমন একটা বোধ বা অনুভূতি মুসলমানদের হৃদয়ে জাগ্রত ছিল। অন্যদিকে হিন্দুরা মুসলমানদিগকে অস্পৃশ্য এবং বিদেশী মনে করতো।
এ উপমহাদেশের প্রকৃত অধিবাসী যে কারা, এ তথ্য খুঁজে বের করতে গিয়ে কয়েকটি মজার ব্যাপার প্রকাশ পেয়েছে। এখানকার অনার্য অধিবাসীরা আর্যদেরকে অনুপ্রবেশকারী বলে মনে করেছে। আর্য অনার্য অমুসলিমরা ইরান তুরানের মুসলমানদের বহিরাগত ভেবেছে। মুসলমান পাঠানরা মুসলমানদেরকে ভিনদেশী হিসেবে চিনেছে। আবার ব্রিটিশ আধিপত্যের সময় হিমালয়ান উপমহাদেশের অধিবাসী কি মুসলমান, কি হিন্দু সকলে একযোগে ইউরোপীয় খৃষ্টানদেরকে অন্যায় জবর-দখলকারী বলে চিহ্নিত করেছে। উপমহাদেশের প্রকৃত অধিবাসী যে কারা (যারা সরাসরি আকাশ থেকে এসে এ এলাকায় নেমেছে) সেকথা জানা সত্যিই দুঃসাধ্য ব্যাপারে।
লিখছিলাম ভিন্ন একটা প্রসঙ্গ। হিন্দুদের দৃষ্টিতে বহিরাগত মুসলমানদের পরিবর্তে জবর-দখলকারী খৃষ্টানদের শাসনে খুব একটা পার্থক্য ছিল না। স্থানীয় হিন্দুরা উপমহাদেশের খৃস্টান শাসনকে সহজভাবে মেনে নিয়েছিল। কিন্তু ব্রিটিশরা মুসলমানদের Attitude ভালোভাবে বুঝতে পেরেছিল যে তারা এত সহজে ব্রিটিশ শাসন মেনে নেবার পাত্র নয়। মুসলমানদের অসহযোগী মনোভাব আর হিন্দুদের অনুগত সমর্থন এ দুই নিয়েই শুরু হলো ব্রিটিশ শাসন। মুসলমানরা এ পরিবেশকে দারুল হরব এমন এলাকাকে বুঝায়, যেখানে ইসলামী জীবন ব্যবস্থা বাস্তবায়নের জন্য আন্দোলন চালিয়ে যাওয়া অথবা সেখান থেকে হিজরত করা মুসলমানদের জন্য ফরজ অবশ্য কর্তব্য হয়ে পড়ে। বিদেশী বেনিয়াদের সাথে ষড়যন্ত্র করে অনুগত হিন্দরা মুসলমানদেরকে শুধু রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা থেকেই বিচ্যুত করেনি, বরং তাদেরকে অর্থনৈতিক, সামাজিক, ধর্মীয়, শিক্ষা এবং সাংস্কৃতিক দিক থেকেও চরম দেউলিয়াপনার দিকে ঠেলে দিয়েছে। যে উপমহাদেশটি এতদিন আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে দারুল ইসলাম বা মুসলিম রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিত ছিল, ভাগ্যের নির্মম পরিণতিতে আজ তা মুসলমানদের উপর জুলুম অত্যাচার আর নিপীড়নের কেন্দ্রভূমিতে পরিণত হয়েছে।
হিমালয়ান উপমহাদেশ দারুল হরব এ উপলব্ধির ফলেই এ অঞ্চলের মুসলমানেরা ইংরেজ শক্তির উপর বার বার বিক্ষোভে ফেটে পড়েছে। সতেরশো সাতান্নর পর থেকে শুরু করে পুরো একশতকেরও অধিককাল মুসলমানেরা দেশটিকে প্রজ্বলিত রেখেছিল বিদ্রোহের অনলে, এবং এর চরম বিস্ফোরিত রূপ দেখা দিয়েছিল আঠারশত সাতান্নর সারাদেশব্যপী গণ আন্দোলনে, এর পরে ছিল আঠারশত চৌষট্টির সীমান্ত অভিযান। সতেরশো পঁয়ষট্টির ফকির বিদ্রোহ দিয়ে এ সংগ্রাম অধ্যায়ের সূচনা। মাঝখানে তিতুমীরের বিদ্রোহ, হাজী শরীয়তুল্লাহ ও দুদুমিয়ার আন্দোলন, সৈয়দ আহমদ ব্রেলভীর অভ্যুদয় ও বালাকোটের যুদ্ধ, পাটনায় মাহ এনায়েত আলীর সংগঠন ও তার তৎপরতা, সিত্ত্বানা, মূল্কা ও পাঞ্জাবের যুদ্ধ সমূহ প্রভৃতির মাধ্যমে এর বিস্তৃতি এবং আঠারশত চৌষট্টির সীমান্ত অভিযান ও সর্বশেষ পাটনা, অম্বলার ষড়যন্ত্র মামলার মাধ্যমে সে সশস্ত্র সংগ্রাম অধ্যায়ের ঘটে পরিসমাপ্তি।
একদিকে মুসলমানদের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার অবসান, অপরদিকে বর্বর মারাঠাদের উপর্যুপরি আক্রমণ, পলাশীর প্রান্তরে ইংরেজদের বিজয়, পাঞ্জাবে শিখদের রাজনৈতিক উচ্চাভিলাষ, এসব পরিবেশ পরিস্থিতির সমন্বয়ে উপমহাদেশের অধিবাসীদের ঘাড়ে তাদের ভাগ্য নিয়ন্তা হিসেবে জগদ্দল পাথরের মত চেপে বসলো ইংরেজ আধিপত্যবাদ। নিজেদের চরম অবহেলার ফলে সবকিছু হারিয়ে ফেলার পর মুসলমানরা তাদের শেষ সম্বল ঈমান টুকু হারাতে রাজী হলনা। চারিদিকের প্রতিবন্ধকতা আর চাপের মুখে এবং অনুশোচনার তীব্র কষাঘাতে তাদের মধ্যে ঈমানী চেতনার বাণ ডাকলো। ঐক্য আর ঈমানী চেতনায় বলীয়ান হয়ে পুনরায় ইসলামী শাসন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে উপমাহদেশকে দারুল ইসলামে রূপান্তরিত করার জীবন মরণ সংগ্রামে অবতীর্ণ হলো মজলুম মুসলমানরা।
আন্দোলন ও তার দৃষ্টিভঙ্গি
মুসলমানদের অসহযোগিতা এবং বিদ্রোহ মনোভাব ক্রমে ক্রমে বৃদ্ধি পাওয়ার সাথে সাথে হিন্দুদের সহায়তায় তাদের উপর ব্রিটিশ নিপীড়নও বৃদ্ধি পেতে থাকে। ঐতিহ্যগতভাবে মুসলমানরা কোন সময় জুলুম নিপীড়নের সামনে মাথা নত করেনা। উপমহাদেশেও এই ঐতিহ্যের পূনঃ প্রদর্শন শুরু হলো। বিদ্রোহের দাবানল চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে। দেশে প্রতিকুল পরিবেশ থাকায় কৌশলগত কারণে সরাসরি রাজনৈতিক আন্দোলনের পথে অগ্রসর না হয়ে মুসলিম নেতৃবৃন্দ উপমহাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ধর্মীয় সংস্কার আন্দোলন শুরু করেন। প্রথম থেকেই আন্দোলনের ব্যাপারে তাদের একটা বিশেষ দৃষ্টিভঙ্গি ছিল, তা হচ্ছে এই যে, ইসলামের সত্যিকার আদর্শ থেকে বিচ্যুতিই হচ্ছে মুসলমানদের পতনের মূল কারণ। তাই কুরআন ও হাদিসের প্রতি কঠোর আনুগত্যকে ভিত্তি করেই তৎকালীন মুসলমানদের সংগঠনগুলো গড়ে উঠেছিল। এধরণের একটি আন্দোলনের নেতৃত্বে দিয়েছিলেন শহীদ সৈয়দ আহমদ ব্রেলভী রহ্মতুল্লাহ্।
জন্ম ও বংশ পরিচয়
১৯৭৬ খ্রিষ্টাব্দের ২৯ শে নভেম্বর মোতাবেক ১২০১ হিজরির ৬ই সফর অযোধ্যার রায়বেরেলীর এক সৈয়দ পরিবারে সৈয়দ আহমদ জন্ম গ্রহণ করেন। বংশ পরিচয়ের দিক থেকে সৈয়দ আহমদের পিতা ছিলেন মুহাম্মদ ইরফান, তার পিতা মুহাম্মদ নুর, তার পিতা সৈয়দ মুহাম্মদ হুদা, তার পিতা সৈয়দ ইলমুল্লাহ, তাঁর পিতা সৈয়দ মুহাম্মদ ফাজায়েল, তাঁর পিতা সৈয়দ মুহাম্মদ মুয়াজ্জম, তাঁর পিতা সৈয়দ আলাউদ্দীন, তাঁর পিতা কুতুবুদ্দীন সানী, তাঁর পিতা সদরুদ্দীন সানী, তাঁর পিতা সৈয়দ আহমদ, তাঁর পিতা সৈয়দ আলী, তাঁর পিতা সৈয়দ কেওয়ামুদ্দীন, তাঁর পিতা সদরুদ্দীন, তাঁর পিতা কাজী রুকনুদ্দীন, তাঁর পিতা মীর নিযামুদ্দীন, তার পিতা কুতুবুদ্দীন, তাঁর পিতা সৈয়দ রশীদুদ্দীন, তাঁর পিতা হাসান, তাঁর পিতা ইউসুফ, তাঁর পিতা ঈসা, তাঁর পিতা হাসান, তাঁর পিতা আবু জাফর, তাঁর পিতা কাশেম, তাঁর পিতা আবু মুহাম্মদ আবদুল্লাহ, তার পিতা হাসান আল আজারুল জাওয়াদ, তার পিতা মুহাম্মদ সানি, তাঁর আবু মুহাম্মদ, তার পিতা মুহাম্মদ আল মেহদী নাফসে জাকিয়া, তাঁর পিতা আবদুল্লাহ আল মাহাজ, তাঁর পিতা হাসান মুসান্না, তাঁর পিতা হযরত ঈমাম হাসান রা., তাঁর পিতা হযরত আলী রা.।
শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ
বংশের নিয়ম অনুযায়ী সৈয়দ আহমদের চার বছর চার মাস, চারদিন, বয়স হলে তাঁকে মক্তবে পাঠানো হয়। তাঁকে শিক্ষিত করে গড়ে তোলার জন্য পরিবারের পক্ষ থেকে চেষ্টার কোন ত্রুটি করা হয়নি। কিন্তু লেখাপড়ায় তাঁর তেমন উৎসাহ ছিলনা। তিন বৎসর কাল মক্তবে যাতায়াত করে তিনি পবিত্র কোরআনের মাত্র কয়েকটি সূরা কণ্ঠস্থ এবং কয়েকটি আরবী বাক্য লেখা ছাড়া আর কিছুই শিখতে পারেননি। তিনি কি কারণে লেখাপড়ায় নিরুৎসাহী ছিলেন, তা জানা সম্ভব হয়নি। তবে তিনি ফরাসী ভাষায় বেশ পারদর্শী ছিলেন। ধরাবাঁধা লেখাপড়া যদিও তিনি করেননি, কিন্তু শরীয়াতের মৌলিক এবং খুঁটিনাটি বিধি নিষেধগুলি ভালোভাবেই জানতেন। অনায়াসে তিনি আরবী, ফরাসী বুঝতেন এবং কুরআন – হাদিসের সুন্দর ও আকর্ষণীয় ব্যাখ্যা করার ব্যাপারে পটু ছিলেন। বাল্যকাল থেকেই তিনি খেলা ধূলার প্রতি অধিক আগ্রহী ছিলেন। সঙ্গী সাথীদের নিয়ে দুটি দলে ভাগ করে একদলের দুর্গে আরেক দলের আক্রমণ চলতো, পাড়ার সমবয়স্ক বালকদের নিয়ে ইসলামী বাহিনী গঠন করে জিহাদের ময়দানের ন্যায় উচ্চস্বরে তাকবীর ধ্বনি তুলে মনগড়া কাফির সৈন্যদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়তেন।
সৈয়দ সাহেব নিজেই বলেছেন, শৈশব থেকেই আমি দৃঢ় বিশ্বাস পোষণ করতাম যে, আমি কাফিরদের বিরুদ্ধে জিহাদ করবো। মাঝে মাঝেই আমার কথা বার্তা, চাল চলনে এই মনোভাব প্রকাশ পেয়ে গেলে মুরব্বীগণ এটাকে বালকসুলভ কল্পনা বিলাস বলে উড়িয়ে দিতেন। শুধুমাত্র আমার মা কথাগুলো মনে প্রাণে বিশ্বাস করতেন। শৈশব থেকেই সৈয়দ আহমদ লেখাপড়ার চেয়ে জিহাদ এবং সৈনিক জীবনের প্রতি বেশী আসক্ত ছিলেন। তিনি নিয়মিত ব্যায়ামের মাধ্যমে শারীরিক যোগ্যতা অর্জনের চেষ্টা চালাতেন। এক বর্ণনামতে সৈয়দ আহমদ কিশোর ভাগনেকে পায়ের উপর দাঁড় করিয়ে প্রতিদিন পাঁচশতাধিক বার ডন করতেন। আল্লাহ তার শরীরে শক্তিও দিয়েছিলেন প্রচুর। সৈয়দ সাহেব সাঁতারেও ছিলেন সুদক্ষ। প্রবল স্রোতের প্রতিকুলে তিনি অনায়াসে সাঁতার কেটে যেতেন। ডুব দিয়ে তিনি এত দীর্ঘ সময় পানির নীচে থাকতে পারতেন যে, সে সময়ের মধ্যে সহজভাবে দুরাকাত নামাজ আদায় করা যায়।
সৈয়দ সাহেবের মা খুব সাহসী মহিলা ছিলেন। পুত্রকে ইসলামী আদর্শের সৈনিক রূপে গড়ে তোলার ব্যাপারে তাঁর যথেষ্ট অবদান ছিল। আমাদের মায়েদের মত তিনি পুত্রকে ঘরের মধ্যে আঁকড়ে ধরে থাকতেন না, বরং সৈয়দ সাহেবের কাজ কর্মে তার মা উৎসাহ দিতেন। একবার রায়বেরেলীতে ভয়াবহ হিন্দু মুসলিম দাঙ্গা বেধেছিল। মুসলমানগণ হিন্দুদের সাথে যুদ্ধ করার জন্য বিভিন্ন স্থান থেকে রওয়ানা হলেন। সৈয়দ সাহেব খবর পেয়ে বাড়ি থেকে তলোয়ার নিয়ে মায়ের অনুমতির জন্য অপেক্ষা করতে লাগলেন। তাঁর মা তখন নামাজ আদায় করছিলেন। সৈয়দ সাহেবের পালক মা যুদ্ধে যাওয়ার ব্যাপারে নিষেধ করলেন। কিন্তু নামাজ শেষ করে সৈয়দ সাহেবের আপন মা পুরো পরিস্থিতি শুনে সৈয়দ সাহেবের পালক মাকে বললেন, বোন ! নিঃসন্দেহে তুমি আহমদকে স্নেহ কর, কিন্তু সেই স্নেহ আমার স্নেহের সমান নয়। আমার হক তোমার হকের চেয়ে বেশী। আহমদকে যেতে দাও। এরপর পুত্রকে উদ্দেশ্য করে বললেন, বাবা যাও। শীঘ্র যাও ! আর শোন কখনো পশ্চাদনুসরণ করবেনা। যদি কর, তবে জীবনে আর তোমার মুখ দেখবোনা। সৈয়দ সাহেব চলে গেলেন। কিন্তু যুদ্ধ বাঁধার পূর্বেই সন্ধি হয়ে গেল। এখান থেকেই বোঝা যায়, সৈয়দ সাহেবের মা কিভাবে তাকে প্রতিপালন করছিলেন এবং কি ধরণের শিক্ষা দিয়েছিলেন, ঠিক তেমনিভাবে মা ছেলেকে ইসলামী আন্দোলনে ভবিষ্যৎ নেতা হিসেবে গড়ে তোলেন।
ঔষধের ব্যবহার সৈয়দ সাহেব খুব একটা পছন্দ করতেন না। একবার নাসিরাবাদের এক বাড়ীতে খাওয়ার সময় প্রচুর পরিমাণে কলিজা কারী খেয়ে অসুস্থতা বোধ করলেন এবং সাথীর কাছে অসুবিধার কথা জানালে সাথী তাঁকে হজমীর ঔষধ দিলেন। সৈয়দ সাহেব ঔষধ সেবন না করে নিজের জামা সাথীর হাতে দিলেন এবং দৌড়াতে লাগলেন। বহুদূর পর্যন্ত দৌড়ানোর পর একটি ছায়াযুক্ত গাছের নীচে চাদর বিছিয়ে শুয়ে একটু বিশ্রাম নিয়ে বললেন, সব ঠিক হয়ে গেছে। জ্ঞান বুদ্ধি হওয়ার পর থেকেই সৈয়দ আহমদ মানুষের সেবা করাকে নিজের কর্তব্য বলে ধরে নিয়েছেন। অক্ষম, বৃদ্ধ, এতিমদের প্রতি সবসময় তিনি সহানুভূতিশীল ছিলেন। প্রায়শই তিনি সঙ্গী সাথীদের নিকট ইয়াতীম মিসকীনদের সাহায্য করার গুরুত্ব এবং উপকারিতা বর্ণনা করতেন। ১৮১৬ খ্রিষ্টাব্দে ইসলামী জ্ঞানার্জনের জন্য সৈয়দ সাহেব দিল্লীর বিখ্যাত আলেম শাহ আবদুল আজীজ দেহলবী সাহেবের নিকট আসেন। আলাপ পরিচয়ের পর জানা গেল যে, সৈয়দ আহমদের নানা এবং চাচা শাহ সাহেবের খুব ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলেন। এই সূত্রে সৈয়দ সাহেব শাহ সাহেবের নিকট বেশ সমাদৃত হলেন। শুধুমাত্র ইসলামী জ্ঞানার্জনের জন্য এত দীর্ঘ সফর করে দিল্লী পর্যন্ত আসায় শাহ সাহেব সৈয়দ আহমদের উপর আরো বেশী সন্তুষ্ট হলেন। এরপর একজন খাদেমের মাধ্যমে শাহ সাহেব তার ভাই মৌলভী আবদুল কাদের সাহেব আকবরাবাদী মসজিদ নামক একটি মসজিদে ইসলামী জ্ঞানের ক্লাশ নিতেন।
এই আকবরাবাদী মসজিদকে কেন্দ্র করে তাঁর দিল্লীর শিক্ষা জীবন শুরু হয়। প্রথমাবস্থায় তিনি এই মসজিদই অবস্থান করেন। জিহাদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা এই মসজিদে বসেই তিন গ্রহণ করেছিলেন। ঐতিহাসিকগণের ধারণা, সৈয়দ আহমদ ও তাঁর আরো কয়েকজন শিক্ষার্থী সাথীর যে দলটি এখানে ইসলামী জ্ঞানার্জন করেছিল, এর বহু পূর্ব থেকেই সম্ভবত: ইসলামী জ্ঞানার্জনের জন্য আরো অনেকগুলো দল এই মসজিদে এসেছে। দুঃখজনক হলেও সত্য যে, এই ঐতিহাসিক গুরুত্বপূর্ণ মসজিদটি এখন আর নেই। ১৬০৫ খ্রিষ্টাব্দে সম্রাট শাহজাহানের স্ত্রী ইয়ালুন্নিসা এই মসজিদটি নির্মাণ করিয়েছিলেন। আকবরাবাদী ছিল বেগমের একটা উপাধি। তাই মসজিদটিও আকবরাবাদী নামে পরিচিতি ছিল। মসজিদের মূল ভূমির উপর বর্তমান এডওয়ার্ড পার্ক অবস্থিত। এখানে সৈয়দ আহমদ তিন বছর শিক্ষা গ্রহণ করেন। শুধুমাত্র পড়ার সময় তিনি চোখে দেখতেন না, কিন্তু অন্য কোন সময় চোখে তার কোন অসুবিধা হতোনা। শিক্ষা জীবনে এটা ছিল তাঁর বিরাট অন্তরায়। এই অসুবিধার পরও তিনি ইতোমধ্যে মিশকাত শরীফসহ আরো বহু গ্রন্থ থেকে বিভিন্ন উপায়ে জ্ঞানার্জন করেন। প্রচলিত ধরা বাধা শিক্ষাপদ্ধতির প্রতি শৈশব থেকেই তিনি ছিলেন অন্যমনস্ক। এ ব্যাপারে তাঁর ব্যক্তিগত মতামত ছিল। বিরাট বিরাট গ্রন্থ পাঠ করা আলেম হওয়ার শর্ত নয়, বরং এ কথা জানতে হবে যে, কোন কাজে আল্লাহর সন্তুষ্টি এবং কোন কাজে তার অসন্তুষ্টি। হযরত আবু বকর রা.এবং হযরত ওমর রা. কখনো শরহে বেকায়া কিংবা হেদায়া কিতাব পাঠ করেননি। কিন্তু উল্লেখিত গ্রন্থের গ্রন্থকারগণ তাদেরকে নেতা মানতেন এবং সাহাবাদের কার্যাবলীকে দলীল হিসেবে গ্রহণ করেছেন। সৈয়দ আহমদ শুধুমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি অসন্তুষ্টির মাপকাঠিতে নিজের জীবন গড়ে তুলছিলেন। শুধুমাত্র এই উদ্দেশ্যেই জিহাদ করেন এবং শুধুমাত্র এই উদ্দেশ্যেই শাহাদাত বরণ করেন।
তৎকালীন উপমহাদেশীয় মুসলমানদের জীবনে যে সমস্ত অনাচার বা বেদায়াত ঢুকে পড়েছিল, সেগুলো সংস্কারের ব্যাপারে তার আগ্রহ শিক্ষা গ্রহণকালীন সময় থেকেই ক্রমাগত বৃদ্ধি পেতে থাকে। বিশেষ করে তৎকালীন হিন্দু সমাজে প্রচলিত কুসংস্কারের প্রভাবে মুসলিম জাতি দুর্বলচেতা কাপুরুষ ও পঙ্গু হয়ে পড়ার কারণে তিনি আরো বেশী ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়েন। ১৮১৭ খ্রিষ্টাব্দে সৈয়দ আহমদ শাহ আব্দুল আজিজ দেহলবীর হাতে বাইয়াত গ্রহণ করেন। শাহ সাহেব সৈয়দ আহমদকে দোয়া করলেন, আল্লাহ তোমাকে বেলায়েতে আওলিয়া দান করুন। সৈয়দ আহমদ বেলায়েতে আম্বিয়া এবং বেলায়েতে আওলিয়া সম্পর্কে জানতে চাইলেন। শাহ সাহেব বললেন, বেলায়েতে আম্বিয়া মানে নবীদের দায়িত্ব-কর্তব্য ও বিধান প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে নির্ভীক, প্রয়োজনবোধে শত্রুর মোকাবিলায় জান মাল কোরবান করার জন্য প্রস্তুত থাকা, দাওয়াতে দ্বীনের জন্য যে কোন ধরনের প্রতিবন্ধকতাকে উপেক্ষা করা এবং সে উদ্দেশ্যে বিভিন্ন স্থানে যাতায়াত করা। এটাকে বলা হয়, কুরব বিল ফারায়েজ অর্থাৎ ফরজ আদায়ের মাধ্যমে আল্লাহর সান্নিধ্য লাভ। বেলায়েতে আওলিয়া মানে রাত দিন নামাজ, রোজা, জিকির, নফল এবাদত ইত্যাদিতে ব্যস্ত থাকা। লোকালয় ত্যাগ করে নির্জনে আল্লাহর স্মরণে সময় অতিবাহিত করা, শুধুমাত্র নিজেকে আল্লাহর সান্নিধ্যে পৌঁছানোর জন্য নফল এবাদতে মশগুল থাকা। এটাকে বলা হয় কুরব বিন নাওয়াফেল। অর্থাৎ নফল এবাদত বন্দেগীর মাধ্যমে আল্লাহর সান্নিধ্য লাভ।
১২২২ হিজরির শেষ অথবা ১২২৩ হিজরির প্রথম দিকে সৈয়দ আহমদ দিল্লী থেকে রায়বেরেলী ফিরে এলে আত্মীয় স্বজনরা তাঁকে বিয়ে করিয়ে দেন। সকলের ধারণা ছিল যে, হয়তো এবার সৈয়দ আহমদ সংসারের কাজ কর্মের প্রতি মনযোগী হবেন। নাসিরাবাদের বিবি জোহরার সাথে তাঁর বিবাহ হয়। ১২২৪ হিজরিতে সারা নামের তাঁর এক কন্যা জন্মগ্রহণ করে। নিজ বাড়ীতে গেলে সৈয়দ সাহেবের একটা বিশেষ কর্মসূচী ছিল। পার্শ্ববর্তী এলাকা সমূহ দাওয়াতী সফর, পারিবারিক, বংশীয় এবং গ্রামের বিভিন্ন ঝগড়া বিবাদ মীমাংসা করে পরস্পরের মধ্যে সখ্যতা স্থাপন, অনৈসলামিক এবং বেদআতী কাজসমূহ দূরীকরণের প্রচেষ্টা, বন্ধু বান্ধব এবং ভক্তদিগকে জিহাদের মন্ত্রে দীক্ষিত করা, নিজে ব্যক্তিগতভাবে ধর্মীয় কাজগুলোকে বিশেষ যত্ন সহকারে পরিপূর্ণ করা, ইত্যাদি ছিল তাঁর বাড়ি অবস্থানকালীন কর্মসূচীর অন্তর্ভুক্ত। ২৩ অথবা ২৪ বৎসর বয়সে সৈয়দ আহমদ দ্বীনের খেদমত করার উদ্দেশ্যে নওয়াব আমীর খান পিন্ডারীর সেনাবাহিনীতে অশ্বারোহী হিসেবে চাকুরী গ্রহণ করেন। এখানেই তিনি শারীরিক প্রশিক্ষণ এবং অস্ত্র চালনায় পারদর্শিতা অর্জন করেন।
তৎকালীন উপমহাদেশের রাজনৈতিক অবস্থা
তৎকালীন উপমহাদেশের মুসলমানগণ সত্যের পথ থেকে বহু দূরে সরে যায়। কুকর্ম আর অসত্যে পথে তারা বিরামহীন ভাবে ছুটে চলে। আরাম আয়েশ এবং হীন মনোবৃত্তি চরিতার্থ করার উপকরণ সংগ্রহ করা ব্যতীত আমীর ওমরাহদের আর কোন কাজ ছিল না। এর পরিণাম সম্পর্কে তারা ছিল সম্পূর্ণ উদাসীন। মোগল শক্তি তখন প্রায় বিধ্বস্ত। আড়ইশত বছরের আপ্রাণ চেষ্টা সাধনার পর একটুকরা একটুকরা করে মোগলরা যে বিশাল সাম্রাজ্য গঠন করেছিল, কাবুল থেকে আসাম, আরাকান এবং কারাকোরাম থেকে কুমারিকা অন্তরীপ পর্যন্ত এই পুরো অঞ্চলে মোগলদের বিজয় পতাকা উড্ডীন ছিল। ভোগ বিলাস, গৃহবিবাদ, এবং অরাজকতার মাধ্যমে এক একটি রাজ্য কেন্দ্র থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাচ্ছিল। এর মধ্যে যে কয়জন সচেতন তাজা প্রাণ এই নিরাশার অন্ধকারকে দুর করে আশার আলো জ্বালাবার আপ্রাণ চেষ্টা করেছিল – হায়দার আলী এবং টিপু সুলতান ছিলেন তাদের মধ্যে অন্যতম। মহীশুরের হায়দার আলী যে নতুন শক্তির পত্তন করলেন টিপু সুলতান তার শিরায় ইসলামের তাজা রক্ত প্রবাহিত করেন। কিন্তু বিরোধ এবং স্বার্থপরতার এত উপকরণ সঞ্চিত হয়েছিল যে, এই মুজাহিদদ্বয়ের প্রাণপণ চেষ্টা ও সফলতার মুখ দেখেনি। শুধুমাত্র ভবিষ্যৎ বংশধরদের জন্য উৎসাহে উদ্দীপনা এবং উৎসর্গের দুটি প্রদীপ শিখা হিসেবে তাঁদের কর্মতৎপরতা ইতিহাসে স্থান লাভ করলো। নিজেদের দুর্বলতার কারণে সে শক্তি মৃত্যুমুখে পতিত হলো।
এই সময় মোগল সাম্রাজ্যের এক বিরাট অংশে মারাঠাগণ হাঁটু গেড়ে বসে। একবার মোগল সিংহাসনই প্রায় তাদের দখলে চলে গিয়েছিল। পানি পথের যুদ্ধে আহমদ শাহ আব্দালী মারাঠাদের উপর চরম আঘাত হানেন। এরপর যদিও মারাঠাগণ ৪০/৫০ বছর টিকে ছিল, কিন্তু পূর্বাবস্থা আর ফিরে পায়নি এবং ক্রমে ক্রমে তারা ধ্বংস হয়ে যায়। পাঞ্জাবে রনজিৎ শক্তি সঞ্চয়ের মাধ্যমে তথাকথিত একটি রাষ্ট্রের নামে ত্রাস সৃষ্টিকারী এক বাহিনী গঠন করে। রনজিৎ সিং-এর মৃত্যুর চার পাঁচ বছরের মধ্যে তা নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়। সিন্ধুর শাসন ক্ষমতা চার জন আমীরের অধীনে ছিল। অযোধ্যায় শুজাউদ্দৌলা, দাক্ষিণাত্যে নিযাম এবং বাংলা-বিহার-উড়িষ্যায় নবাব আলীবর্দী খান। এদের ধারণা ছিল, সম্পূর্ণ উপমহাদেশ মুসলমানদের অধীনে না থাকলেও অন্ততপক্ষে নিজেদের এলাকাগুলো থাকলেই যথেষ্ট। পরবর্তী সময়ে সায়াদাত আলী খান লোভের বশবর্তী হয়ে অযোধ্যার অধিকাংশই ছেড়ে দিলেন। বাকী অংশও পরে তাঁর বংশধরদের হস্তচ্যুত হয়ে যায়। অভ্যন্তরীণ কোন্দল এবং অরাজকতার দরুন ক্ষয়প্রাপ্ত হতে হতে দাক্ষিণাত্যের সীমানাও প্রায় অর্ধেক হয়ে যায়। নবাব আলীবর্দী খানের ইন্তেকালের এক বছরের মধ্যেই বাংলা বিহার উড়িষ্যা ইংরেজদের হাতে চলে গেল। উপমহাদেশে ইংরেজ রাজত্বের ভিত্তিপ্রস্তর এখানেই স্থাপিত হলো। পরে ইংরেজগণ মারাঠা এবং নিযামের সাথে মিলিতভাবে মহিশুরের পতন ঘটালো। একাজ শেষ করে অল্প দিনের মধ্যেই মারাঠা, নিযাম এবং অযোধ্যাকে সাহায্যকারী হিসেবে শৃঙ্খলাবদ্ধ করে বাকী সকলকে পুতুলে পরিণত করে। এর পরপরই উপমহাদেশের কেন্দ্রস্থল দিল্লী হস্তগত করে ইংরেজগণ জেঁকে বসলো।
এই সময় উপমহাদেশের মুসলমানদের জন্য মাত্র তিনটি পথ খোলা চিল। প্রথমত: সত্যের পথ ত্যাগ করে যুগের সাথে তাল মিলিয়ে চলা। দ্বিতীয়ত: সত্যের পথ পরিত্যাগ না করা এবং এ কারণে যত বিপদই আসুক না কেন ধৈর্যের সাথে তা সহ্য করে করে শেষ হয়ে যাওয়া। তৃতীয়ত: অসত্যের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো প্রথম পথ ছিল মৃত মুসলমানদের জন্য। দ্বিতীয় পথ ছিল মুসলমান হিসেবে বেঁচে থাকার আশায় তিলে তিলে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাওয়া। তৃতীয় পথ হচ্ছে পৌরুষের পথ। সৈয়দ আহমদ বেরেলভী মুসলমানদের এই দুর্যোগের দিনে তৃতীয় পথটাকেই বেছে নিলেন। এই সময় আমীর খান পিন্ডারী কাগজ পত্রে ইংরেজদের বশ্যতা স্বীকার করলেও মনে প্রাণে স্বাধীন ছিলেন। তার অধীনে প্রায় চল্লিশ হাজার সিপাহী এবং একশত চল্লিশটি তোপ ছিল। এটা ইংরেজদের জন্য একটা ভয়ের কারণ। এই বিরাট শক্তিকে ইসলামী আন্দোলনের কাজে লাগানোর জন্যই অনেক ভেবে চিন্তে সৈয়দ আহমদ আমীর খান পিন্ডারীর সেনাবাহিনীতে যোগদান করেন। যতদিন পর্যন্ত আমীর খান পিন্ডারীর মন স্বাধীন ছিল, সৈয়দ আহমদ ততদিন পর্যন্ত তাঁর সেনাবাহিনীতে ছিলেন। সৈয়দ সাহেব আশা করেছিলেন, একদিন না একদিন সুযোগ আসবেই। কিন্তু আমীর খান যেদিন সত্যিকারভাবে ইংরেজদের সাথে হাত মিলালেন সৈয়দ সাহেব সেদিন থেকেই পৃথক হয়ে গেলেন। কেননা তিনি যে আশা নিয়ে এখানে এসেছিলেন, তা পূর্ণ হবার সুযোগ আর অবশিষ্ট রইলনা।
জীবনের মিশন
সৈয়দ আহমদের প্রধান কাজ ছিল আল্লাহর বান্দাদেরকে তাওহীদের দিকে আহবান এবং তাদের চরিত্র সংশোধন করা।এটা ছিল জীবনের মিশন। তিনি যখন যেখানে যেতেন, শুধু এই কাজেই ব্যস্ত থাকতেন। তাঁর এই বিরতিহীন কাজের ফলে তিনি যে সেনাবাহিনীতে ছিলেন, সম্পূর্ণ বাহিনীর চরিত্রই পরিবর্তিত হয়ে গেল। পারস্পরিক ঝগড়া বিবাদ ছিলনা, সকলেই শরীয়তের অনুসরণ করতো, দাওয়াতে দ্বীন এবং সংশোধন করার সুযোগ পেলে সৈয়দ সাহেব তা কখনো হাতছাড়া করতেননা। তাঁর প্রধান উদ্দেশ্য ছিল মুসলমানদেরকে মুসলমান হিসেবে গড়ে তোলা। প্রাথমিক যুগের মুসলমানদের মত বর্তমান সময়ের মুসলমানদের মধ্যে জিহাদ ফি সাবিল্লিাহর উদ্দীপনা জাগ্রত করা এবং উপমহাদেশে বিশুদ্ধ ইসলামী শাসনব্যবস্থা প্রবর্তন করা। তাঁর চরিত্রে খোদাভীতি এবং শরীয়তের কঠোর আনুগত্য থকায় তাঁর নিকট দোয়ার জন্য বহু লোকের আগমন ঘটতো। চরিত্র সংশোধন এবং শরীয়তের আনুগত্যের স্বীকৃতি নিয়ে তবে তিনি তাদের জন্য দোয়া করতেন। সৈয়দ আহমদের জীবনীতে এ ধরণের বহু ঘটনার বিবরণ পাওয়া যায়। স্থানাভাবে এ পুস্তিকায় সে সব উদ্ধৃতি দেয়া সম্ভব হলো না।