কুরআনের সাহায্যে বাড়ি ঘর সজীব রাখো
আরবী******
১২। হযরত আবু হুরাইরাহ ( রাঃ ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন- তোমরা নিজেদের ঘরকে কবরে পরিনত করো না। যে ঘরে সূরা বাকারা পাঠ করা হয় তা থেকে শয়তান পলায়ন করে। —- ( সহীহ মুসলিম )
এ হাদীসে দুটি বিষয়ের অবতারনা করা হয়েছে। এক, নিজেদের ঘরকে কবরস্থানে পরিনত করো না। এ কথার তাৎপর্য হচ্ছে- তোমাদের ঘরের অবস্থা যদি এই হয় যে, তাতে নামায পড়ার মতো কোন লোক নেই এবং কুরআন পড়ার মতো কোন লোকও নেই। আর কোনরূপেই এটা প্রকাশ পায় না যে, তাতে কোন ঈমানদার লোক বা কুরআন পাঠকারী বসবাস করে- তাহলে এরূপ ঘর যেন একটি কবরস্থান। এটা মৃত জনপদ। এটা জীবন্তদের জনপদ নয়।
দ্বিতীয় কথা হচ্ছে- যেহেতু সমস্ত পুরুষ লোক মসজিদে গিয়ে নামায আদায় করে থাকে – এজন্য রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি অয়া সাল্লাম বলেছেন, নিজেদের ঘরকে তোমরা কবরস্থান বানিও না। অর্থাৎ পুরা নামায মসজিদেই পড়ো না, বরং এর কিছু অংশ ঘরে আদায় করো। যদি ঘরে নামায না পড়ো তাহলে এর অর্থ হচ্ছে- আপনারা মসজিদকে ঠিকই জীবন্ত রেখেছেন, কিন্তু ঘর কবরস্থানের মতো হয়ে গেছে। এজন্য এমন ব্যবস্থা থাকা দরকার যাতে মসজিদও প্রাণচঞ্চল থাকবে এবং ঘরও জীবন্ত থাকবে। এজন্য ফরয নামায সমূহ মসজিদে জামায়াতের সাথে আদায় করা এবং সুন্নাত, নফল ও অন্যান্য নামায ঘরে আদায় করা পছন্দনীয় বলা হয়েছে। এতে উভয় ঘরেই প্রান চাঞ্চল্য বিরাজ করবে।
দ্বিতীয় বিষয় হচ্ছে এই যে, যে ঘরে সূরা বাকারা তেলাওয়াত করা হয় সেখান থেকে শয়তান পলায়ন করে। একদিকে রয়েছে সমস্ত কুরআন মাজীদের মর্যাদা, অপরদিকে রয়েছে প্রতিটি সুরার রয়েছে স্বতন্ত্র মর্যাদা ও বৈশিষ্ট্য। এখানে সূরা বাকারার মর্যাদা বর্ণনা প্রসঙ্গে বলা হয়েছে- যে ঘরে এই সূরা পাঠ করা হয় সেখান থেকে শয়তান ভেগে যায়। এটা কেন হয়? এর কারন হচ্ছে- সূরা বাকারার মধ্যে পারিবারিক জীবন এবং দাম্পত্য বিষয় সংক্রান্ত আইন- কানুন বিস্তারিতভাবে বর্ণিত হয়েছে। বিবাহ ও তালাকের সাথে সম্পর্কিত আইনও এ সূরায় পূর্ণাঙ্গভাবে বর্ণিত হয়েছে। সমাজকে সুন্দর ও সুস্থ রাখার যাবতীয় মূলনীতি এবং আইন- কানুন এ সুরার আলোচনার আওতায় এসে গেছে। এ জন্য যেসব ঘরে বুঝে শুনে সূরা বাকারা পাঠ করা হয় এবং তদানুযায়ী কাজ করা হয় সেসব ঘরে শয়তান প্রবেশ করে কখনো ঝগড়া- বিবাদ বাঁধাতে সফলকাম হতে পারে না। কিন্তু আল্লাহ তায়ালা মানব জীবনের সংশোধনের জন্যে যে পথ নির্দেশ দিয়েছেন – তা যাদের জানা নেই অথবা জানা আছে কিন্তু তাঁর বিরোধিতা করা হচ্ছে- শয়তান কেবল সেখানেই ফিতনা- ফাসাদ সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়। কিন্তু যে পরিবারের লোকেরা আল্লাহর হুকুম পালন সম্পর্কে অবগত এবং তদানুযায়ী জীবন যাপন করতে অভ্যস্ত- শয়তান সেখানে কোন পাত্তাই পায় না এবং কোন বিপর্যয় সৃষ্টি করতেও সক্ষম হয় না।
কুরআন মাজীদ কিয়ামতের দিন শাফায়াৎকারী হবে
আরবী*****
১৩। হযরত আবু উমামা ( রা ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছিঃ তোমরা কুরআন পড়ো। কেননা কুরআন তাঁর পাঠকদের জন্য কিয়ামতের দিন শাফায়াতকারী হয়ে আসবে। দুটি চাকচিক্যময় ও আলকিত সূরা- বাকারা ও আলে ইমরান পাঠ করো। কেননা এই সূরা দুটি কিয়ামতের দিন এমনভাবে আসবে যেন- দুটি ছাতা অথবা ছায়া দানকারী দুই খণ্ড মেঘ অথবা অথবা পাখির পালকযুক্ত দুটি প্রসারমান ডানা। তা নিজের পাঠকদের পক্ষ অবলম্বন করে যুক্তি প্রমান পেশ করতে থাকবে। তোমরা সূরা বাকারা পাঠ করো। কেননা তা গ্রহন করলে বরকত ও প্রাচুর্যের কারন হবে। এবং তা পরিত্যাগ করলে আফসোস, হতাশা ও দুঃখের কারন হবে। বিপথগামীরা এই সুরার বরকত লাভ করতে পারে না। – –( সহীহ মুসলিম )
এ হাদীসে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি অয়া সাল্লাম প্রথমে যে কথা বলেছেন তা হল “তোমরা কুরআন মাজীদ পাঠ করো”। কেননা তা কিয়ামতের দিন তাঁর পাঠকদের জন্যে শাফায়াতকারী হবে। একথার অর্থ এই নয় যে, তা মানুষের যাবতীয় বিপথ দূর করার জন্য অনমনীয় সুপারিশকারী হয়ে দাঁড়াবে বরং এর অর্থ হচ্ছে- যে ব্যক্তি দুনিয়ার জীবনে কুরআন পড়েছে এবং তদানুযায়ী নিজের জীবন সংশোধন করেছে- এই কুরআন কিয়ামতের দিন তাঁর শাফায়াতের কারন হবে। কিয়ামতের দিন আল্লাহ তায়ালার আদালতে এ কথা উত্থাপিত হবে যে, এই বান্দাহ তাঁর কিতাব পাঠ করেছে, তাঁর অন্তরে ঈমান বর্তমান ছিল, সে যখনই এই কিতাবের সাথে সম্পৃক্ত হয়েছে, তা পাঠ করতে নিজের সময় ব্যয় করেছে। এ জন্যই তা কিয়ামতের দিন আল্লাহর আদালতে পাঠকের জন্য শাফায়াতকারী হবে।
দ্বিতীয় যে কথাটি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন তা হল- কুরআন মাজীদের দুটি অতি উজ্জ্বল সূরা অর্থাৎ সূরা বাকারা ও সূরা আলে ইমরান পাঠ করো। এ সূরা দুটিকে যার ভিত্তিতে আলোকময় সূরা বলা হয়েছে তা হচ্ছে- এই দুটি সুরার মধ্যে আহলে কিতাব অর্থাৎ ইহুদী-খ্রিস্তানদের সামনে পূর্ণাংগভাবে যুক্তি প্রমান তুলে ধরা হয়েছে এবং মুশ্রিকদের সামনেও। অনুরূপভাবে মুসল্মান্দেরকেও এই সূরাদ্বয়ে তাঁদের ব্যক্তিগত এবং সামগ্রিক জীবনের পূর্ণাঙ্গ হিদায়াত দান করা হয়েছে। মোট কথা এই দুটি সূরায় কুরআন মাজীদের পূর্ণাঙ্গ শিক্ষা ব্যাপকভাবে বর্ণনা করা হয়েছে। এই জন্য বলা হয়েছে এই সূরা দুইটি পাঠ করো। কিয়ামতের দিন এই সূরা দুইটি এমনভাবে উপস্থিত হবে যেমন কোন ছাতা অথবা মেঘ খণ্ড অথবা পালক বিছানো পাখির পাখা। এই সূরাদ্বয় তাঁর পাঠকারীর স্বপক্ষে দলীল- প্রমান পেশ করবে, তাঁদের সাহায্য করবে। কিয়ামতের দিন যখন কারো জন্য ছায়া বাকী থকবে না তখন এই কঠিন মুহূর্তে কুরআন তাঁর পাঠকারীদের জন্য ছায়া হয়ে উপস্থিত হবে। অনুরূপভাবে এই সূরাদ্বয় কিয়ামতের দিন তাঁর পাঠককে বিপদ-মুসিবত থেকে উদ্ধারকারী এবং আল্লাহ তায়ালার দরবারে সাহায্যকারী হবে।
পুনরায় সূরা বাকারা সম্পর্কে বিশেষভাবে বলা হয়েছে – যে ব্যক্তি তা পাঠ করে তা তাঁর জন্য বরকত ও প্রাচুর্যের কারন হবে। আর যে ব্যক্তি তা পাঠ করে না তাঁর জন্য এটা আফসোসের কারন হবে। সে কিয়ামতের দিন আফসোস করে বলবে- দুনিয়াতে সূরা বাকারার মতো এতো বড় নিয়ামত তাঁর সামনে এসেছে কিন্তু সে তা থেকে কোন কল্যাণ লাভ করেনি। অতঃপর তিনি বলেছেন, বাতিলপন্থী লোকেরা এই সুরাকে সহ্য করতে পারে না। অর্থাৎ যে ব্যক্তির মধ্যে সামান্যতম অন্যায় ও অসত্যের পূজা মওজুদ রয়েছে সে এই সুরাকে বরদাশত করতে পারে না। কেননা এই সূরাদ্বয়ের মধ্যে প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত বাতিলের মূলোৎপাটনকারী বিষয়বস্তু বর্ণনা করা হয়েছে। যা কোন বাতিল পন্থী লোক বরদাশত করতে পারেনা।
সূরা বাকারা ও আলে ইমরান
ঈমানদার সম্প্রদায়ের নেতৃত্ব দেবে
আরবী*****
১৪। হযরত নাওয়াশ ইবনে সাময়া’ন ( রাঃ ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছিঃ কিয়ামতের দিন কুরআন মাজীদ এবং তদানুযায়ী আমলকারী লোকদের উপস্থিত করা হবে। তাঁদের অগ্রভাগে সূরা বাকারা এবং সূরা আলে ইমরান থাকবে। এ দুইটি যেন মেঘমালা অথবা মেঘের ছায়া- যার মধ্যে থাকবে বিদ্যুতের মতো আলোক অথবা সেগুলো পালোকে বিছানো পাখির পাখার ন্যায় হবে। এই দুইটি সূরা তাঁদের পাঠকারীদের স্বপক্ষে যুক্তি প্রমান পেশ করতে থাকবে। –( সহীহ মুসলিম )
পূর্ব হাদীসেও কিছুটা শাব্দিক পার্থক্য সহকারে একই বিষয়বস্তু বর্ণিত হয়েছে। এটাও হতে পারে যে, উভয় সাহাবীই একই সময় রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে এ হাদীস শুনে থাকবেন। এবং উভয়ে নিজ নিজ ভাষায় ভাষায় বর্ণনা করেছেন। আর এটাও হতে পারে যে, বিভিন্ন স্থানে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এই একই হাদীস বর্ণনা করে থাকবেন এবং দুই সাহাবীর বর্ণনা দুই ভিন্ন স্থানের সাথে সংশ্লিষ্ট হয়ে থাকবে। যাই হোক একথা সুস্পষ্ট যে, হাদীস দুইটির বিষয়বস্তু প্রায়ই এক।
পূর্ববর্তী বর্ণনায় শুধু কুরআন মাজীদ পাঠকারীদের উল্লেখ ছিল, কিন্তু এ হাদীসে তদানুযায়ী আমল করার কথাও বলা হয়েছে। পরিস্কার কথা হচ্ছে এই যে, কুরআন মাজীদ যদি সুপারিশকারী হয় তাহলে তা এমন লোকদের জন্যই হবে যারা কুরআন পাঠ করেই ক্ষান্ত হয়নি বরং তদানুযায়ী কাজও করেছে। যদি ধরে নেয়া হয় যে, কোন ব্যক্তি কুরআন মাজীদ তো ঠিকই পড়ে কিন্তু তদানুযায়ী কাজ করে না তাহলে কুরআন তাঁর পক্ষে দলীল হতে পারে না। এ হাদীসে পরিস্কার বলা হয়েছে- কুরআনের যেসব পাঠক তদানুযায়ী কাজ করে- কুরআন তাঁদের স্বপক্ষে দলীল হিসেবে দাঁড়াবে এবং তাঁদের সাহায্য ও সুপারিশ করবে। কিয়ামতের দিন যখন ঈমানদার লোকেরা আল্লাহর দরবারে হাজির হবে তখন তাঁদেরকে কুরআনই সেখানে নিয়ে যাবে। যখন তাঁদেরকে আল্লাহর সমীপে পেশ করা হবে তখন কুরআনই যেন তাঁদের পক্ষে মুক্তির সনদ হবে। আমরা যেন দুনিয়াতে এই কুরআন অনুযায়ী জীবিন যাপন করে এসেছি – এই অর্থেই নবী ( সাঃ ) এর এই হিদায়াতনামা। অন্য কথায় তাঁদের মুক্তির জন্য স্বয়ং এই কুরআনের সুপারিশই যথেষ্ট হবে। কেবল ঈমানদার সম্প্রদায়ের সাথেই এরূপ আচরন করা হবে। এই দিন কাফের এবং মুনাফিকদের সাথে কুরআনের কোন সম্পর্ক থাকবেনা। আর যেসব লোকেরা কুরআনের নির্দেশাবলী জানা সত্ত্বেও তাঁর বিরোধিতা করেছে কুরআন তাদেরও সহযোগী হবেনা।
তিনি আরো বলেছেন, সূরা বাকারা ও সূরা আলে ইমরান ঈমানদার সম্প্রদায়ের আগে আগে থাকবে। এর কারন হচ্ছে- এই দুইটি আইন-কানুন সংক্রান্ত সূরা। সূরা বাকারায় ব্যক্তিগত এবং সামগ্রিক জীবনের জন্য আইনগত হিদায়াত দান করা হয়েছে। আর সূরা আলে ইমরানে মুনাফিক ও কাফের সম্প্রদায় এবং আহলে কিতাব সবার সম্পর্কে আলোকপাত করা হয়েছে। এ সূরায় উহুদ যুদ্ধের উপরও আলোকপাত করা হয়েছে। এ ভাবে এই সূরা দুইটি মুমিন জীবনের জন্য হিদায়াতের বাহন। কোন ব্যক্তি যদি এই সূরাদ্বয়ের শিক্ষা অনুযায়ী নিজের পারিবারিক জীবনকে সংশোধন করে নিজের অর্থনীতি এবং রাজনীতিকে তদানুযায়ী ঢেলে সাজায় এবং দুনিয়ায় ইসলামের সাথে যেসব ব্যাপারের সম্মুখীন হবে তাতেও যদি তারা এর হেদায়েত মোতাবেক ঠিক ঠিক কাজ করে তাহলে এরপর তাঁর ক্ষমা ও পুরস্কার পাওয়ার ব্যাপারে কোনরূপ ত্রুটি থাকতে পারেনা। অতএব, এ সূরা দুইটি হাশরের ময়দানে ঈমানদার সম্প্রদায়ের হেফাজত করবে। হাশরের ময়দানে যে বিভিষিকাময় পরিস্থিতি বিরাজ করবে এই সূরাদ্বয় তা থেকে তাঁদেরকে রক্ষা করবে এবং আল্লাহর আদালতে হাজির হয়ে তাঁদের স্বপক্ষে সাক্ষ্য প্রমান পেশ করবে।
কুরআনের সবচেয়ে বড় আয়াত আয়াতুল কুরসী
আরবী****
১৫। হযরত উবাই ইবনে কা’ব ( রাঃ ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন- হে আবুল মুনযির, আল্লাহ তায়ালার কিতাবে তোমার জানা কোন আয়াতটি সর্বশ্রেষ্ঠ? আমি বললাম- আল্লাহ এবং তাঁর রাসুলই ভালো জানেন। তিনি পুনরায় বললেন- হে আবুল মুনযির, আল্লাহ তায়ালার কিতাবে তোমার জানা কোন আয়াতটি সর্বশ্রেষ্ঠ? আমি বললাম- “আল্লাহু লা ইলাহা ইল্লা হুয়াল হাইয়্যুল কাইয়্যুম” আয়াত। রাবী বলেন- তিনি আমার বুকে মৃদু আঘাত করে বললেন – এই জ্ঞান তোমার জন্য মোবারক হোক এবং প্রাচুর্যময় হোক। ——–( সহীহ মুসলিম )
হযরত উবাই ইবনে কা’ব রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সেই সব সাহাবীদের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন যারা কুরআন সম্পর্কে সর্বাধিক জ্ঞান লাভের অধিকারী ছিলেন, কুরআন বিশেষজ্ঞ ছিলেন এবং সাহাবায়ে কেরামদের মধ্যে কুরআন সম্পর্কে সর্বাধিক অভিজ্ঞ লোকদের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন।
এ হচ্ছে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রশিক্ষন পদ্ধতির একটি দিক। সাহাবায়ে কেরাম দীনের কতটা জ্ঞান অর্জন করেছেন এবং কুরআনকে কতটা বুঝছেন তা জানার জন্য তিনি মাঝে মাঝে তাঁদেরকে বিশেষ বিশেষ প্রশ্ন করতেন। সাহাবাদের নীতি ছিল, তারা রাসুলুল্লাহর প্রশ্নের জবাব নিজেদের জ্ঞান অনুযায়ী দেয়ার পরিবর্তে আরো অধিক জানার লোভে আরজ করতেন, আল্লাহ এবং তাঁর রাসুলই অধিক ভালো জানেন। তাঁদের লক্ষ্য ছিল, তিনি নিজে তা বলে দিবেন এবং এতে তাঁদের জ্ঞানের পরিধি আরো বেড়ে যাবে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রশ্ন করার উদ্দেশ্য যদি সাহাবাদের আরো অধিক শেখানো হতো তাহলে সাহাবাদের বক্তব্য “আল্লাহ এবং তাঁর রাসুলই ভালো জানেন” – প্রশ্নের উত্তর তিনি নিজেই দিয়ে দিতেন। আর যদি তাঁর উদ্দেশ্য হতো সাহাবাগন আল্লাহর দ্বীন সম্পর্কে কি পরিমান জ্ঞানের অধিকারী হয়েছেন তা জানা- তাহলে তিনি প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে বরং তাঁর পুনরাবৃত্তি করতেন এবং তাঁদের কাছ থেকে উত্তর আশা করতেন। এখানে এই দ্বিতীয়টি উদ্দেশ্য ছিল। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উবাই ইবনে কা’ব ( রাঃ ) কে প্রথম দফা প্রশ্ন করলে তিনি উত্তরে বললেন- আল্লাহ এবং আল্লাহর রাসুল অধিক ভালো জানেন। যেহেতু রাসুলুল্লাহর লক্ষ্য ছিল উবাই ইবনে কা’বের জানামতে কুরআন মাজীদের কোন আয়াতটি সর্বাধিক ভারী- তা অবগত হওয়া, তাই তিনি পুনরায় একই প্রশ্ন করলেন। এর উত্তরে তিনি বললেন- আয়াতুল কুরসী হচ্ছে সবচেয়ে বড় আয়াত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর জবাবের সমর্থন করলেন।
আয়াতুল কুরসীর এই মহত্ত্ব এবং গুরুত্ব এই জন্য যে, কুরআন মাজীদের যে কয়টি আয়াতে একত্ববাদের পূর্ণাংগ বর্ণনা দেয়া হয়েছে- আয়াতুল কুরসী তাঁর অন্যতম। আল্লাহ তায়ালার সত্ত্বা এবং গুনাবলীর সর্বাঙ্গীণ বর্ণনা এক তো সূরা হাশরের শেষ আয়াতে রয়েছে, দ্বিতীয়ত সূরা ফুরকানের প্রাথমিক আয়াত এবং তৃতীয়ত সূরা ইখলাছ ও আয়াতুল কুরসীতে রয়েছে। হযরত উবাই ইবনে কা’ব ( রাঃ ) যখন এই জবাব দিলেন তখন রাসুলুল্লাহ ( সাঃ ) তাঁর বুকে মৃদু আঘাত করে বললেন- এই জ্ঞান তোমার জন্য কল্যাণকর হোক। বাস্তবই তুমি সথিকভাবে অনুধাবন করতে পেরেছ যে, এই আয়াতই কুরআন মাজীদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং বৃহৎ আয়াত। আল্লাহ তায়ালার সম্পর্কে সঠিক ধারনা দেয়ার জন্যই কুরআন মাজীদ নাযিল হয়েছে। মানুষ যদি আল্লাহ সম্পর্কে সঠিক ধারনা লাভ করতে না পারে তাহলে তাঁর বাকী সমস্ত শিক্ষাই সম্পূর্ণ বেকার এবং অর্থহীন হয়ে যায়। মানুষের মাঝে তৌহিদের বুঝ এসে গেলে দীনের ভিত্তি কায়েম হয়ে গেলো। এই পরিপ্রেক্ষিতে যে আয়াতের মধ্যে তৌহিদের বিষয়বস্তুকে সর্বোত্তম পন্থায় বর্ণনা করা হয়েছে তাই কুরআন মাজীদের সর্ববৃহৎ আয়াত।
আয়াতুল কুরসীর ফযিলত সম্পর্কে একটি বিস্ময়কর ঘটনা
আরবী*****
১৬। হযরত আবু হুরাইরাহ ( রাঃ ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন- রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাকে রমযানের ফিতরার সম্পদ সংরক্ষণের দায়িত্বে নিযুক্ত করলেন। একরাতে এক আগন্তুক আমার কাছে আসলো এবং ( স্তূপীকৃত ) শস্য ইত্যাদি হাতের আজল ভরে উঠাতে লাগলো। আমি তাঁকে ধরে ফেললাম এবং বললাম, আমি তোমাকে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নিকট পেশ করবো। সে বলতে লাগলো, আমি খুবই অভাবগ্রস্থ মানুষ, আমার অনেক সন্তান রয়েছে এবং আমার নিদারুন অভাব রয়েছে। আবু হুরাইরাহ ( রাঃ ) বলেন- আমি ( দয়া পরবশ হয়ে ) তাঁকে ছেড়ে দিয়েছি। যখন সকাল হল, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, হে আবু হুরাইরাহ, তুমি গত রাতে যাকে গ্রেফতার করেছিলে তাঁর খবর কি? আমি বললাম- হে আল্লাহর রাসুল, সে নিজের নিদারুন অভাবের কথা বর্ণনা করলো এবং বলল, তাঁর অনেক সন্তান – সন্তুতি রয়েছে। এ জন্য আমি দয়া পরবশ হয়ে তাঁকে ছেড়ে দিয়েছি। তিনি বললেন, সে তোমাকে মিথ্যা বলেছে এবং সে আবার আসবে। আমি নিশ্চিত হলাম যে, সে পুনরায় আসবে। কেননা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন যে, সে পুনরায় আসবে। অতএব তাঁর আসার প্রতীক্ষায় আমি ওঁত পেতে থাকলাম। পরবর্তী রাতে সে ফিরে এসে খাদ্য শস্য চুরি করতে লাগলো। আমি তাঁকে ধরে ফেললাম এবং বললাম, আমি অবশ্যই তোমাকে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নিকট হাজির করবো। সে বলল, আমাকে ছেড়ে দিন। কেননা আমি গরীব মানুষ এবং আমার বালবাচ্চা রয়েছে। আমি আর কখনো আসবো না। আমি পুনরায় দয়া পরবশ হয়ে তাঁকে ছেড়ে দিলাম। দ্বিতীয় দিন ভোরে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাকে বললেন, হে আবু হুরাইরাহ তোমার খবর কি? আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল, সে তাঁর কঠিন অভাবের কথা বর্ণনা করলো এবং বলল, তাঁর অনেক বাল-বাচ্চা রয়েছে। আমি দয়া পরবশ হয়ে তাঁকে ছেড়ে দিয়েছি। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন- সে তোমাকে মিথ্যা কথা বলেছে এবং সে পুনরায় আসবে। আমি তাঁর আসার অপেক্ষায় ওঁত পেতে থাকলাম। অতএব সে পুনরায় এসে খাদ্য শস্য চুরি করলো। আমি তাঁকে ধরে ফেললাম এবং বললাম, আমি অবশ্যই তোমাকে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে পেশ করবো। এটা তিনবারের শেষ বার এবং প্রতিবারই তুমি বলেছ, আমি আর আসবো না অথচ তুমি আসছ। সে বলল, আমাকে ছেড়ে দিন, আমি আপনাকে এমন কয়েকটি বাক্য শিখিয়ে দেব যার মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালা আপনাকে অশেষ কল্যাণ দান করবেন। রাতের বেলা আপনি যখন নিজের বিছানায় ঘুমাতে যাবেন তখন এই আয়াতুল কুরসী –“আল্লাহু লা ইলাহা ইল্লাহুয়াল হাইয়্যুল কাইয়্যুম” শেষ পর্যন্ত পাঠ করবেন। আপনি যদি এরূপ করেন তাহলে আল্লাহর পক্ষ থেকে সর্বদা আপনার জন্য একজন হিফাজতকারী নিযুক্ত থাকবে এবং ভোর হওয়া পর্যন্ত কোন শয়তান আপনার কাছে ভিড়তে পারবেনা। ( রাবী বলেন ) সে যখন আমাকে এটা শিখালো আমি তখন তাঁকে ছেড়ে দিলাম। ভোরবেলা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাকে বললেন- তোমার বন্দীকে কি করলে? আমি বললাম, সে আমাকে কয়েকটি কথা শিখিয়ে দিয়েছে। তাঁর দাবী হচ্ছে, এর দ্বারা আল্লাহ তায়ালা আমাকে উপকৃত করবেন। নবী ( সাঃ ) বললেন- “সে তোমাকে সত্য কথাই বলেছে, কিন্তু সে নিজে হচ্ছে ডাহা মিথ্যুক। তুমি কি জানো তুমি তিন রাত যাবত কার সাথে কথা বলেছ? আমি বললাম, না, আমি জানি না। তিনি বললেন- সে ছিল একটা শয়তান।” ( সহীহ বুখারী )
এখানে রমযানের যাকাত বলতে ফিতরার মাল বুঝানো হয়েছে। দিনের বেলা তা থেকে বিতরন করার পর যা অবশিষ্ট থাকতো রাতের বেলা তাঁর হেফাজতের প্রয়োজন দেখা দিত। একবার হযরত আবু হুরাইরাহ যখন এই মালের রক্ষনাবেক্ষনের দায়িত্বে নিযুক্ত ছিলেন তখন এই ঘটনা ঘটেছিল যার উল্লেখ এখানে করা হয়েছে।
এটা এমন সব ঘটনার অন্তর্ভুক্ত যে সম্পর্কে মানুষ কোন ব্যাখ্যা দিতে সক্ষম নয় যে, এটা কিভাবে ঘটলো। যাই হোক এধরনের ঘটনা একাধিকবার মানুষের সামনে ঘটেছে।
কুরআন মাজীদের ফযিলত সম্পর্কিত অধ্যায়ে এ হাদীস সন্নিবেশ করার কারন এই যে, শয়তান নিজেও একথা স্বীকার করে যে, যে ব্যক্তি রাতের বেলা আয়াতুল কুরসী পাঠ করে শয়ন করে তাঁর উপর শয়তানের কোন আধিপত্য চলে না।
এ কথা পূর্বেও বর্ণনা করা হয়েছে যে, কুরআন মাজীদের এমন কয়েকটি স্থান রয়েছে যেখানে আল্লাহ তায়ালার একত্ববাদকে সুন্দরভাবে বর্ণনা করা হয়েছে এবং তৌহিদের পরিপূর্ণ চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। যে ব্যক্তির মন মগজে আল্লাহ তায়ালার একত্ববাদের চিত্র অংকিত হয়ে গেছে তাঁর উপর শয়তানের আধিপত্য কি করে চলতে পারে? এই শয়তান তো তাঁর ধারে কাছে আসতে পারেনা।
এই আয়াতুল কুরসী যদি কোন ব্যক্তি বুঝে পড়ে এবং এর অর্থ যদি সে হৃদয়ঙ্গম করতে পারে তাহলে শয়তান তাঁর ধারে কাছে আসারও দুঃসাহস করে না। আয়াতুল কুরসী স্বয়ং বরকত ও কল্যাণে পরিপূর্ণ। শুধু এর তেলাওয়াতও বরকত ও কল্যাণের কারন হয়ে দেখা দেয়। কিন্তু পাঠক যদি তাঁর অর্থ বুঝে পড়ে তাহলে তাঁর উপর শয়তানের কোন প্রভাবই খাটে না।
দুটি নূর
যা কেবল রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে দান করা হয়েছে
আরবী*****
১৭। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস ( রাঃ ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা জীব্রীল ( আঃ ) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে বসা ছিলেন। এসময় তিনি আকাশের দিক থেকে দরজা খোলার শব্দের অনুরূপ শব্দ শুনতে পেলেন। হযরত জিব্রাঈল ( আঃ ) নিজের মাথা উপরের দিকে উত্তোলন করে দেখলেন এবং নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে বললেন, এটা আসমানের একটি দরজা যা আজই প্রথম খোলা হয়েছে। এ দরজা ইতিপূর্বে আর কখনো খোলা হয় নি। ইত্যবসরে এই দরজা দিয়ে একজন ফেরেশতা নাযিল হয়। জিব্রাঈল ( আঃ ) বললেন, এ হচ্ছে এক ফেরেশতা- আসমান থেকে পৃথিবীর বুকে নেমে আসছে, ইতিপূর্বে এই ফেরেশতা আর কখনো পৃথিবীতে নাযিল হয়নি। এই ফেরেশতা এসে তাঁকে সালাম করে বলল, দুটি নূরের সংবাদ গ্রহন করুন, যা কেবল আপনাকে দেয়া হয়েছে এবং অন্য কোন নবীকে দেয়া হয়নি। তা হচ্ছে সূরা ফাতিহা এবং সূরা বাকারার শেষাংশ। এ দুটির একটি শব্দ পাঠ করলেও আপনাকে সেই নূর দান করা হবে। ——-( সহীহ মুসলিম )
এ হাদীস পড়তে গিয়ে মানুষের মনে প্রথম যে প্রশ্নের উদয় হয় তা হচ্ছে- আসমানের দরজা খুলে যাওয়া এবং তা থেক দরজা খোলার শব্দ আসার তাৎপর্য কি? এ প্রসঙ্গে সর্বপ্রথম একথা বুঝে নিতে হবে যে, আসমানের কোন দরজা খোলার শব্দ জিব্রাঈল ( আঃ ) অথবা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শুনেছিলেন, আমি বা আপনি নেই। দ্বিতীয় কথা হচ্ছে- আসমানি জগতের ঘটনাগুলো এমন পর্যায়ের যে, তা যথাযথভাবে তুলে ধরার মতো শব্দ মানবীয় ভাষায় নেই বা হতেও পারেনা। এজন্য এসব ব্যাপার বুঝানোর জন্যে বা মানুষের বোধ গম্যের কাছাকাছি আনার জন্য রূপক ভাষা বা উপমা ব্যবহার করা হয়ে থাকে। দুনিয়াতে যেভাবে দরজা খোলা হয় এবং এর যা অবস্থা হয় অনুরূপভাবে ঊর্ধ্ব জগতেরও অসংখ্য দরজা রয়েছে এবং সেগুলো যখন খোলা হয় তখন তাঁর মধ্য দিয়ে কোন কিছু যাতায়াত করে থাকে। এমন নয় যে, দরজা সব সময় খোলা থাকে এবং যখন তখন যে কেউ আসা যাওয়া করতে পারে। এ থেকে জানা গেলো যে, আসমানের কোন দরজা খোলা এবং তাঁর মধ্য দিয়ে উপর থেকে কোন ফেরেশতার নীচে আসার ঘটনা ঘটেছিলো, যাতে দরজা খোলার শব্দের মাধ্যমে বুঝানো হয়েছে। এই অবস্থাটা অবশ্যই অনুভূত হয়- কিন্তু তা কেবল আল্লাহর ফেরেশতা অথবা তাঁর রাসুলই অনুধাবন করতে পারেন। আমরা তা অনুভব করতে পারিনা। কেননা এগুলো মানুষের অনুভূতিতে ধরা পড়ার মতো কোন জিনিস নয়।
এ হাদীসে দ্বিতীয় যে বিষয়টি বর্ণনা করা হয়েছে তা হচ্ছে- রাসুলুল্লাহকে যে ফেরেশতা সুসংবাদ দেয়ার জন্যে এসেছিলেন তিনি ইতিপূর্বে আর কখনো পৃথিবীতে আসেন নি। এর অর্থ হচ্ছে আল্লাহ তায়ালা তাঁকে এই বিশেষ পয়গাম পাঠানোর জন্যেই পৃথিবীতে পাঠিয়েছিলেন। অন্যথায় তিনি পৃথিবীতে যাতায়াতকারী ফেরেশতাদের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন না। তিনি এসে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে যে সুসংবাদ দিয়েছিলেন তা ছিল এই যে, আপনার কল্যাণ হোক। আপনাকে এমন দুইটি তুলনাহীন জিনিস দেয়া হয়েছে যা পূর্বে কোন নবীকেই দেয়া হয়নি। তাঁর একটি হচ্ছে সূরা ফাতিহা এবং অপরটি হচ্ছে সূরা বাকারার শেষাংশ।
ঘটনা হচ্ছে এই যে, সূরা ফাতিহার সামান্য কয়টি আয়াতের মধ্যে এতো বিরাট বিষয়বস্তুর বর্ণনা করা হয়েছে যে, পুরা কুরআন শরীফের সংক্ষিপ্ত সার এতে এসে গেছে। স্বয়ং রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বক্তব্য হচ্ছে- আমাকে বাক্য ও কথা দান করে হয়েছে যার মাধ্যমে বিরাট বিরাট বিষয়বস্তু কয়েকটি ছত্রেই আদায় হয়ে গেছে। বাইবেলের সাথে কুরআনের তুলনা করে দেখলে জানা যায় যে, কখনো কখন যে কথা বর্ণনা করতে বাইবেলের কয়েকটি পৃষ্ঠা খরচ করা হয়েছে তা কুরআনের একটি মাত্র ছত্রেই বর্ণনা করে দেয়া হয়েছে। বিশেষ করে সূরা ফাতিহা এই সংক্ষিপ্ততা এবং পূর্ণাংগতার দিক থেকে অগ্রগণ্য। তথাপি সূরা ফাতিহার এই স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যের অর্থ এই নয় যে, এই সুরার মধ্যে যে বিষয়বস্তু বর্ণিত হয়েছে তা ইতিপূর্বে কোন নবীর কাছে আসেনি। কথা এটা নয়, কারন সব নবীই সেই শিক্ষা নিয়ে আগমন করেছেন যা এই সূরায় বর্ণনা করা হয়েছে, পার্থক্য কেবল এই যে, এই সুরার মাত্র কয়েকটি আয়াতের মাধ্যমে ব্যাপক অর্থবোধক একটি সমুদ্রের সংকুলান করা হয়েছে এবং দীনের সার্বিক শিক্ষার সার সংক্ষেপ এতে এসে গেছে। এরূপ বিশেষ বৈশিষ্ট্য মণ্ডিত কোন জিনিস পূর্বে কোন নবীকে দেয়া হয়নি।
দ্বিতীয় নূর যার সুসংবাদ এই ফেরেশতা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে শুনিয়েছেন তা হচ্ছে সূরা বাকারার শেষ অংশ। এই আয়াতগুলিতে তৌহিদের পুরা বর্ণনা এবং নবী আলাইহিমুস সালামের যাবতীয় সংক্ষিপ্তসার বর্ণনা করা হয়েছে। এতে ইসলামী আকীদাহ পূর্ণরূপে বর্ণনা করা হয়েছে এবং ঈমানদার সম্প্রদায়কে বলে দেয়া হয়েছে হক ও বাতিলের সংঘর্ষে যদি সমগ্র কুফরী শক্তিও তাঁদের বিরুদ্ধে অবতীর্ণ হয় তাহলে কেবল আল্লাহর উপর ভরসা করেই তাঁদের মোকাবেলা করতে হবে এবং আল্লাহর কাছেই সাহায্য এবং বিজয়ের জন্যে দোয়া করতে হবে। এই শেষ অংশে উল্লেখিত অসাধারন বিষয়বস্তুর ভিত্তিতে তাঁকে এমন নূর বলা হয়েছে যা পূর্বে কোন নবীকে দেয়া হয়নি।
সূরা বাকারার শেষ দুই আয়াতের ফযিলত
আরবী*****
১৮। হযরত আবু মাসউদ ( রাঃ ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন- যে ব্যক্তি রাতের বেলা সূরা বাকারার শেষ দুই আয়াত পাঠ করবে তা তাঁর জন্য যথেষ্ট হবে। ———( সহীহ বুখারী ও মুসলিম )
অর্থাৎ এই দুইটি আয়াত মানুষকে যে কোন ধরনের অনিষ্ট থেকে রক্ষা করার জন্য যথেষ্ট। কোন ব্যক্তি যদি এই আয়াতগুলি ভালমতো হৃদয়ঙ্গম করে পড়ে তাহলে সে এর গুরুত্ব সঠিকভাবে উপলব্ধি করতে সক্ষম হবে।