আদাবে জিন্দেগী
ইউসুফ ইসলাহী
ইসলামী সংস্কৃতি
পবিত্রতা ও পরিচ্ছন্নতার নিয়ম
যারা পাক পবিত্র ও পরিচ্ছন্ন অবস্থায় থাকার চেষ্টা করে আল্লাহ তাদেরকে ভালবাসেন। রাসূল (সাঃ) বলেন, “পবিত্রতা ও পরিচ্ছন্নতা হলো ঈমানের অর্দ্ধেক”। অর্থাৎ আত্মার পবিত্রতা হলো ঈমানের অর্দ্ধেক, আর শারীরিক পবিত্রতা ও পরিচ্ছন্নতা হলো ঈমানের অর্দ্ধেক (উভয়টি মিলে হলো পরিপূর্ণ ঈমান)। আত্মার পবিত্রতা এই যে, আত্মাকে কুফরী, শির্ক, নাফরমানী, গোমরাহী ও অপবিত্রতা থেকে পবিত্র করে শুদ্ধ আকীদা-বিশ্বাস এবং পূত-পবিত্র চারিত্রিক গুণাবলী দ্বারা ভূষিত করবে। শরীরকে বাহ্যিক অপবিত্রতা থেকে পবিত্র ও পরিচ্ছন্ন করে রাখবে।
১. ঘুম থেকে উঠে হাত ধোয়া ব্যতীত পানির পাত্রে হাত দেয়া ঠিক নয়। কারণ, ঘুমের মধ্যে (পবিত্র বা অপবিত্র স্থানের) কোথায় হাত পড়ে তা জানা বা স্মরণ করা অনেক সময় সম্ভব হয় না।
২. গোসল খানায় প্রস্রাব করবেনা, বিশেষতঃ গোসলখানা পাকা না হলে সেখানে কখনও প্রসাব করবেনা। গোসলখানার ভিতরে পৃথক প্রসাব বা পায়খানার স্থান থাকলে প্রথোমক্ত কথা প্রযোজ্য হবেনা।
৩. পায়খানা বা প্রস্রাব করার সময় কেবলামুখি হয়ে বা কেবলা পেছনে দিয়ে বসবে না। পায়খানা বা প্রস্রাব ত্যাগ করার পর ঢিলা-কুলুখ বা পানি দিয়ে পবিত্রতা অর্জন করবে, তবে শুধু পানি দিয়েও পবিত্রতা অর্জন করা যায়। গোবর, ছাড়, কয়লা ইত্যাদি দিয়ে এস্তেজা করবে না। এস্তেজা করার পর সাবান অথবা মাটি দ্বারা ভাল করে হাত ধুয়ে নেবে।
৪. পায়খানা প্রস্রাবের বেগ হলে খেতে বসবে না। পায়খানা-প্রস্রাব থেকে অবসর হওয়ার পর খেতে বসবে।
৫. খাবার জন্য ডান হাত ব্যবহার করবে। অজুতেও ডান হাত ব্যবহার করবে। এস্তেঞ্জা ও নাক ইত্যাদি বাম হাত দ্বারা পরিষ্কার করবে।
৬. নরম জায়গায় এমনভাবে প্রস্রাব করবে যেন গায়ে প্রস্রাবের ছিটা না লাগে। সব সময় বসে প্রস্রাব করবে। তবে যদি প্রস্রাবের স্থান বসার মতো না হয় বা বসতে অক্ষম হয় তখন দাঁড়িয়ে প্রস্রাব করতে পারে। কিন্তু সাধারণ অবস্থায় এটা অত্যন্ত খারাপ অভ্যাস। বিনা ওজরে দাঁড়িয়ে প্রস্রাব করা অবশ্যই পরিহার করা উচিত।
৭. পুকুর, নদী, খাল ইত্যাদির ঘাটে, চলাচলের রাস্তায় ও ছায়াযুক্ত স্থানে (যে ছায়াযুক্ত স্থানে মানুষ বিশ্রাম নেয়) মলমূত্র ত্যাগ করবে না। এতে জনসাধারণের অসুবিধা হয় এবং এটা সভ্যতা ও শিষ্টাচারেরও পরিপন্থী।
৮. পায়খানায় খালি পায়ে বা খালি মাথায় যাবে না এবং পায়খানায় যাবার সময় এই দোয়া পড়বে।
اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنْ الْخُبُثِ وَالْخَبَائِثِ
“হে আল্লাহ! দুষ্ট পুরুষ স্ত্রী জাতীয় শয়তানদের অনিষ্টতা থেকে তোমার আশ্রয় প্রার্থনা করছি।“ (বুখারী-মুসলিম)
পায়খানা থেকে (অবসর হয়ে) বাইরে এসে এ দোয়া পাঠ করবে।
غُفْرَانَكَ اَلْحَمْدُ ِ للهِ الَّذِي أَذْهَبَ عَنِّي الْأَذى وَعَافَانِي
“সকল প্রশংসা আল্লাতর যিনি আমার কষ্ট দূর ও আমাকে সুস্থতা দান করেছেন।“ (নাসায়ী, ইবনু মাজাহ)
৯. নাক পরিষ্কার করা ও থুথু ফেলার জন্য সতর্কতা হিসাবে পিকদানী ব্যবাহর করবে অথবা এমন জায়গায় গিয়ে নিজের কাজ সেরে নিবে যেন কারো সমস্যার কারণ না হয়।
১০. বার বার নাকের মধ্যে আঙ্গুল দিয়ে ময়লা বের করবে না। নাক পরিষ্কার করার দরকার হলে আড়ালে গিয়ে ধীরস্থিরভাবে পরিষ্কার করে নেবে।
১১. রুমালে কফ-শ্লেষ্মা ইত্যাদি কচলানো জাতীয় অভ্যাস পরিত্যাগ করবে। এটা মারাত্মক ঘৃণ্য অভ্যাস, কিন্তু অনন্যোপায় হয়ে করলে দোষ নেই।
১২. মুখে পান বা খাদ্য নিয়ে এভাবে কথা বলবে না যে, পাশের ব্যক্তির গায়ে খাবারের ছিটা পড়ে এবং তার কষ্ট হয়। অনুরূপ অত্যধিক পান তামাকে অভ্যস্ত ব্যক্তি মুখ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার জন্য যথাসম্ভব চেষ্টা করবে। কথা বলার সময় নিজের মুখ সংযত রাখার চেষ্টা করবে। কথা বলার সময় নিজের মুখ সংযত রাখার চেষ্টা করবে।
১৩. অযু যথেষ্ট মনোযোগসহ করবে আর সর্বদা অযূ অবস্থায় থাকা সম্ভব না হলে অধিকাংশ সময় থাকার চেষ্টা করবে। পানি পাওয়া না গেলে তায়াম্মুম করবে। বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম বলে অযু আরম্ভ করবে এবং অযু করার সময় এ দোয়া পাঠ করবে।
أَشهَدُ أن لا إِلَهَ إلا اللهُ وَحْدَهُ لا شَرِيكَ لهُ، وأشهَدُ أنَّ مُحمَّدًا عبدُه ورسُولُه، اللَّهمَّ اجْعَلْنِي من التَّوَّابِينَ، وَاجْعَلْنِي من المُتطَهِّرينَ
“আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে আল্লাহ ছাড়া আর কোন ইলাহ নেই, তিনি একক ও অদ্বিতীয়, তাঁর কোন শরীক নেই। আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) আল্লাহর বান্দাহ ও রাসূল। হে আল্লাহ! তমি আমাকে অধিক তওবাকারী ও পবিত্রতা রক্ষাকারীদের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করে দাও।“
অযু থেকে অবসর হওয়ার পর এ দোয়া পাঠ করবে।
سُبْحـانَكَ اللّهُـمَّ وَبِحَمدِك أَشْهَـدُ أَنْ لا إِلهَ إِلاّ أَنْتَ أَسْتَغْفِرُكَ وَأَتوبُ إِلَـيْك (نسائى)
“হে আল্লাহ! তুমি মহান ও পবিত্র। তোমার প্রশংসা সহ আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, তুমি ছাড়া আর কোন ইলাহ নেই। আমি তোমার নিকট ক্ষমা চাই এবং (সব ত্যাগ করে) তোমার দিকেই প্রত্যাবর্তন করছি।“
রাসূল (সাঃ) বলেছেনঃ “কাল কিয়ামতের দিন আমার উম্মাতের চিহ্ন হবে এই যে, তাদের কপাল ও অযুর স্থানগুলো নূরের আলোয় ঝিকমিক করতে থাকবে। সুতরাং যারা তাদের আলো বাড়াতে চায় তারা যেন তা ইচ্ছামত বাড়িয়ে নেয়।“ (বুখারী ও মুসলিম)
১৪. নিয়মিত মেসওয়াক করবে। রাসূল (সাঃ)বলেছেনঃ “আমি যদি উম্মাতের কষ্টের কথা চিন্তা না করতাম, তাহলে প্রত্যেক অযুর সময় মেসওয়াক করার নির্দেশ দিতাম।“
একবার তাঁর নিকট কিছু লোক এসেছিল, যাদের দাঁত ছিল হলুদ, সুতরাং তিনি তাদেরকে মেসওয়াক করার নির্দেশ দিলেন।
১৫. কমপক্ষে সপ্তাতে একবার গোসল করবে। বিশেষ করে জুমআর দিন এবং পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন জামা-কাপড় পরিধান করে জুমআর নামাযে যাবে।
রাসূল (সাঃ) বলেছেনঃ “আমানতদারি মানুষকে জান্নাতে নিয়ে যায়।সাহাবীগণ জিজ্ঞেস করলেন, হে রাসূল (সাঃ)!আমানত দ্বারা আপনি কি বুঝাতে চান? তিনি বললেনঃ অপবিত্রতা থেকে পবিত্র হবার জন্য গোসল করা, আল্লাহ তাআলা এর চেয়ে আর কোন বড় আমানত নির্ধারণ করেননি। সুতরাং যখনই মানুষের গোসল করা আবশ্যক হয়ে পড়ে তখনই গোসল করবে।
১৬. অপবিত্র অবস্থায় মসজিদে প্রবেশ করবেনা এবং মসজিদের ভিতর দিয়ে যাতায়াতও করবে না। একান্ত প্রয়োজনে তায়াম্মুম করে মসজিদে যাবে অথবা মসজিদের ভিতর দিয়ে যাতায়াত করবে।
১৭. মাথার চুল তেল দিয়ে ও চিরুনী দিয়ে আঁচড়িয়ে রাখবে। দাড়ির সৌন্দর্য্য নষ্টকারী বর্দ্ধিত চুলগুলোকে কাঁচি দ্বারা ঠিক করে ছেঁটে নেবে। চোখে সুরমা লাগাবে। নখ কাটা ও পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখার চেষ্টা করবে এবং সাদাসিদে ভাবে যতদূর সম্ভব সৌর্ন্দর্য্য বর্ধনের চেষ্টা করবে।
১৮. হাঁচি দেয়ার সময় মুখে রুমাল দেবে যাতে অপরের গায়ে ছিটা না পড়ে। হাঁচির পর আলহামদুলিল্লাহ (সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্যে) বলবে, শ্রোতা ইয়ারহামুকাল্লাহ (আল্লাহ আপনার উপর দয়া করুন) বলবে, তার উত্তরে হাঁচিদাতা বলবে ইয়াহদীকাল্লাহ (আল্লাহ আপনার উপর দয়া করুন) বলবে, তার উত্তরে হাঁচিদাতা বলবে ইয়াহদীকাল্লাহ (আল্লাহ আপনাকে হেদায়েত করুন।)
১৯. ভাল সুগন্ধি ব্যবহার করবে, রাসূল (সাঃ) সুগন্ধিকে বেশী পছন্দ করতেন। তিনি সাধারণত ঘুম থেকে উঠার পর সুগন্ধি ব্যবহার করতেন।