১০: বিভিন্ন সূরার ফযীলত সম্পর্কে রাসূল (সা) যা বলেছেন
সূরা ফাতিহা
আবু সাঈদ আল-মুয়াল্লা (রা) বলেন, আমি কি তোমাদেরকে এমন একটি সূরা শিক্ষা দিব না, যা কুরআনের সবচেয়ে মহান। রাসূল (সা) এ কথা বললেন এবং অত:পর সূরা ফাতিহা শিক্ষা দিলেন এবং বললেন যে, সাবউল মাছানী ও কুরআনে আযীম আমাকে দেয়া হয়েছে- এটিই তাই। (বুখারী)
আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা) থেকে বর্ণিত, একজন ফেরেশতা নবী (সা) কে বলেন, দুটি আলোর জন্য আনন্দ প্রকাশ করুন, যা আপনাকে দেয়া হয়েছে, অন্য কোন নবীকে দেয়া হয়নি। এর একটি হচ্ছে সূরা ফাতিহা এবং অপরটি হচ্ছে সূরা বাকারার শেষ আয়াত (২:২৮৫-৮৬)। (মুসলিম)।
হযরত আবু-হুরায়রা (রা) বলেন, আল্লাহর শপথ, যাঁর হাতে আমার আত্মা, সূরা ফাতিহার মত কোন কিছুই তাওরাতে অবতীর্ণ হয়নি, ইনজীলে নয়, যাবুরে নয়, কুরআনেও নয়। (তিরমিযী)
আবদুল মালিক ইবনে উমায়ের (রা) বলেন, প্রতিটি রোগে এটি এক নিরাময়। (দারিমী)
সূরা ফালাকও নাস
উকবা ইবনে আমির বলেন, এর মত কখনও দেখা যায়নি (মুসলিম)
কোন আশ্রয় প্রার্থনাকারী আশ্রয় প্রার্থনা করতে পারে না এই দুই সূরার মত অন্য কিছু দিয়ে। (আবু দাউদ)
অবু সাঈদ খুদরী (রা) বলেন, তোমাদের মধ্যে কেউ কি এক রাকআতে কুরআনের এক-তৃতীয়াংশ পড়তে পারবে? তিনি জিজ্ঞেস করলেন এবং নির্দেশ দিলেন, সূরা ইখলাস পড়, কারণ এটি কুরআনে তিন ভাগের এক ভাগ। (বুখারী, মুসলিম)
হযরত আয়েশা (রা)-এর বর্ণনা মতে, যে ব্যক্তি প্রতি নামাযে এই সূরা তিলাওয়াত করেন, তার সম্পর্কে রাসূল (সা) বলেন, তাকে বল যে, আল্লাহ তাকে ভালবাসেন। (বুখারী, মুসলিম)
সূরা কাফিরূন
আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা) এবং আনাস ইবনে মালিক (রা) বলেন, এটি কুরআনের চার ভাগের এক ভাগের সমান। (তিরমিযী)
সূরা নসর
আনাস (রা) বলেন, এটি কুরআনের চার ভাগের এক ভাগ। (তিরমিযী)
সূরা তাকাছুর
আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রা) জিজ্ঞেস করলেন, তোমরা কি একদিনে এক হাজার আয়াত তিলাওয়াত করতে পার না? অতঃপর বললেন, তোমাদের কেউ কি সূরা তাকাছুর পড়তে পার না? (বায়হাকী)
সূরা যিলযাল
আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা) ও আনাস ইবনে মালিক (রা) বলেন, এটি অর্ধেক কুরআনে সমান। (তিরমিযী)
আয়াতুল কুরসী (সূরা বাকারাঃ২:২৫৫)
উবাই ইবনে কাআব (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি জিজ্ঞেস করলেন, তোমরা কি জানো আল্লাহর গ্রন্থে কোন আয়াতটি শ্রেষ্ঠতম? এবং অতঃপর যখন বলা হলো তা হচ্ছে আয়তুল কুরসী, তখন তিনি অনুমোদন করলেন। (মুসলিম)
আমানার রাসূল (আল-বাকারা ২:২৮৫-৮৬)
আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা) বলেন, এর আগে কোননবীই এর মত কোন আলো নিয়ে আসেননি। (মুসলিম)
নুমান ইবনে বশীর (রা) বলেন, যে কোন গৃহে এটি তিলাওয়াত করা হোক না কেন, তিন রাত্রি পর্যন্ত শয়তান এর কাছেই আসতে পারে না। (তিরমিযী)
‘আইফা ইবনে আবদুল কিলাই (রা) বলেন, এটি আল্লাহর সিংহাসনের নিচে তাঁর কুরণার ভান্ডার থেকে উৎসারিত যা তিনি ওই উম্মতকে দিয়েছেন, দুনিয়া ও আখিরাতে এমন কোন কল্যাণ নেই, যা এতে অন্তর্ভূক্ত নয়। (দারিমী)
হযরত আবু ঘর (রা) বলেন, এটি শিখো এবং স্ত্রী ও সন্তানদের শিক্ষা দাও, কারণ এ হচ্ছে একটি আশীর্বাদ, একটি আবৃত্তি এবং একটি নিবেদন। (হাকিম)
সূরা বাকারা ও আলে ইমরান
হযরত আবু উমামা (রা) বলেন, উজ্জ্বল দীপ্তিমান দু’টি সূরা পাঠ কর। কারণ কিয়ামতের দিন তাদের সাথীদের জন্য সুপারিশ করতে করতে তারা দু’টি মেঘখন্ড, দু’টি ছায়া এবং দুই পাল পাখির মত ভেসে আসবে। (মুসলিম)
নাওয়াস ইবনে মামান (রা) বলেন, কিয়ামতের দিন কুরআনকে তার সংগীদের সাথে আনা হবে। যারা কুরআন অনুযায়ী কাজ করে থাকে তাদের সামনে থাকবে সূরা বাকারা এবং আলে-ইমরান। এদেরকে দু’টি কালো মেঘ খন্ড অথবা আলোধারন বা দুই পাল পাখির মত মনে হবে এবং এরা সাথীদের জন্য সুপারিশ করতে থাকবে। (মুসলিম)
সূরা বাকারা (২)
হযরত আবু হুরায়রা (রা) বলেন কুরআন তিলাওয়াত পরিত্যাগ করে তোমার বাড়ীকে কবরস্থানে পরিণত করা না। সেই বাড়ী থেকে শয়তান পলায়ন করে, যে বাড়ীতে সূরা বাকারা তিলাওয়াত করা হয়। (মুসলিম)
হযরত আবু ইমামা (রা) বলে, সূরা বাকারা তিলাওয়াত কর, কেনান এটা অবলম্বন করা আশীর্বাদ এবং ত্যাগ করা ত্রুটি। (মুসলিম)
হযরত আবু হুরায়রা (রা) বলেন, সবকিছুরই একটা ভান্ড থাকে আর কুরআনের ভান্ড হচ্ছে সূরা আল-বাকারা। (মুসলিম)
সূরা আল-আনআম (৪৮)
জাবির (রা) বলেন, এত অসংখ্য ফেরেশতা এ সূরা নাযিলের সময় অবতীর্ণ হন যে, তাদের দ্বারা আকাশের দিগন্ত ঢেকে যায়। (হাকিম)
সূরা কাহাফ (১৮)
হযরত আবু দারদা (রা) বলেন, যে, কেউ সূরা কাহাফের প্রথম দশ আয়াত শিখেন, সংরক্ষণ করেন ও আন্তরিকতার সাথে আমল করেন, তাকে দাজ্জাল থেকে হিফাযত করা হবে। (মুসলিম)
সূরা ইয়াসীন (৪৮)
হযরত আনাস (রা) বলেন, প্রত্যেক জিনিসের একটি হৃৎপিন্ড আছে এবং কুরআনের হৃৎপিন্ড হচ্ছে সূরা ইয়াসীন। যে কেউ এটি পাঠ করলে আল্লাহ তার জন্য দশটি কুরআন খতম লিখবেন। (তিরমিযী)
মাকিল ইবনে ইয়ামার (রা) বলেন, যিনি সূরা ইয়াসীন পড়েন এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি কামনা করেন, আল্লাহ তার অতীতের গুনাহ মাফ করে দেন। সুতরাং তোমরা মৃত্যুকালীন সময়েও এটি পাঠ কর। (বায়হাকী)
সূরা আল-ফাতহ (৪৮)
হযরত উমর (রা) বলেন, পৃথিবীতে যে কোন জিনিসের চাইতে আমি একে ভালোবাসি (বুখারী)।
সূরা আর-রহমান (৫৫)
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা) বলেন, প্রত্যেক জিনিসেরই একটি অলংকার থাকে এবং কুরআনের অলংকার হচ্ছে সূরা আর-রহমান। (বায়হাকী)
সূরা ওয়াকিয়া (৫৬)
যে কেউ প্রতি রাতে সূরা ওয়াকিয়া পাঠ করবেন, তিনি অভাবগ্রস্থ হবেন না।
সূরা আল-মূলক (৬৭)
আবু হুরায়রা (রা) বলেন, এই সূরার ৩০টি আয়াত একজন মানুষের জন্য তার গুনাহ মাফ না হওয়া পর্যন্ত তার জন্য মধ্যস্থতাকারীর কাজ করে। (আহমাদ, তিরমিযী, আবু দাউদ)
আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা) বলেন, রাসূল (সা) বলেছেন, আমি এটা পছন্দ করি যে, প্রত্যেক বিশ্বাসীর অন্তরে এ সূরা স্থান পাক (হাকিম)।
সূরা আল-আলা (৮৭)
হযরত আলী (রা) বলেন, তিনি এ সূরাটি ভালবাসেন। (আহমদ)