সমকালীন পরিবেশঃ ইলম ও আমল
ইমাম তাকীউদ্দীন ইবনে তাইমিয়া হিজরি সপ্তম অষ্টম শতকের ইসলামী বিশ্বকে এক অভিনব জীবন রসে সমৃদ্ধ করেছিলেন। হিজরি ৬৬১ সনে তাঁর জন্ম। মৃত্যু ৭২৮ সনে। ৬৭ বছর জীবনকালে মৃতপ্রায় মুসলিম সমাজের চিন্তায় কর্মে এক সার্থক ও যুগান্তকারী বিপ্লব সৃষ্টি ছির তাঁর শ্রেষ্ঠ অবদান। তাঁর জীবনকালে তাতারী আক্রমণের প্রকৃতি পরিবর্তিত হলেও জোর কমেনি। এ আক্রমণের ধ্বংসকারিতা সমান তালে এগিয়ে যাচ্ছিল। তাতারীরা এ সময় মুসলমান হয়ে গিয়েছিল এই যা পার্থক্য।
বাগদাদ ধ্বংসের মাত্র পাঁচ বছর পর এবং তাতারীদের দামেস্কে প্রবেশের তিন বছর পর তাঁর জন্ম। তাই স্বাভাবিকভাবেই বলা যেতে পারে যে, বুদ্ধি ও বোধ শক্তির উন্মেষের পর পরই তিনি দেখেছেন চতুর্দিকে তাতারী আক্রমণে বিধ্বস্ত মজলুম পরিবার। আর্ত হতাশাগ্রস্ত মুসলিমের মুখচ্ছবি তাঁর সংবেদনশীল চিত্তকে বিপুলভাবে প্রভাবিত করেছিল। সাত বছর বয়সে তিনি স্বচক্ষে দেখলেন তাতারী আক্রমণের বিভীষিকা। তার নিজের শহর হারান আক্রমণ করলো তাতারীরা। তাতারীদের হাত তেকে নিষ্কৃতি লাভের জন্য শহরের অসংখ্য পরিবারের ন্যায় তাঁদের পরিবারও দামেস্কের পথে পাড়ি জমালো। পথের দুপাশে তিনি প্রত্যক্ষ করলেন তাতারী আক্রমণের ধ্বংসকারিতা। আগুনে পোড়া মানুষ, গাছপালা, পশু। জনবসতিগুলো অগ্নিদগ্ধ। পঙ্গু ছাড়া সমর্থ মানুষ কোথাও নেই। শস্যক্ষেত্রও বিধ্বস্ত। মোটকথা, ধ্বংসের এক বীভৎস নমুনা। তাঁর অসাধারণ স্মরণশক্তি শৈশবের এ চিত্রগুলো স্মৃতির মণিকোঠায় সংরক্ষিত রেখেছিল। যার ফলে পরবর্তীকালে তাতারীদের জুলুমের প্রতিবাদ করতে তিনি মোটেই পিছপা হননি। পরাক্রমশালী তাতারী সম্রাট কাজানের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে তার ও তার সৈন্যদের জুলুমের কাহিনী শানাতে তিনি একটুও বিচলিত হননি। এমনকি প্রয়োজনের সময় স্বহস্তে তরবারি নিয়ে তিনি জালেম তাতারীদের বিরুদ্ধে ঝাঁপিয়েও পড়েছেন।
তাতারী আক্রমণের ফলে মুসলমান সমাজের বহিরঙ্গে যে ব্যাপক বিশৃঙ্খলা ও শক্তিহীনতা দেখা দিয়েছিল তা ছিল অত্যন্ত ব্যাপক। ইতিপূর্বেকার আলোচনায় তা সুস্পষ্ট হয়েছে। এখন দেখা দরকার মুসলিম সমাজের অভ্যন্তরের অবস্থা কি ছিল।
ইলমে কালামের দুরবস্থা
গ্রীক দর্শনের মোকাবিলা করার জন্য ইলমে কালামের উদ্ভব হয়েছিল। গ্রীক দর্শনের চর্চা মুসলমানদের ঈমান ও আকীদায় যে বিভ্রান্তি ও দুর্বলতা সৃষ্টি করেছিল তা দূর করে তাকে সতেজ ও শক্তিশালী করাই ছিল এর লক্ষ। কিন্তু ধীরে ধীরে দর্শনের প্রকৃতি ও পদ্ধতি তার মধ্যে অনুপ্রবেশ করলো এবং ইলমে কালাম ধর্মীয় দর্শনে পরিণত হলো। বিষয়বস্তু, আলোচনা ও যুক্তি প্রয়োগ পদ্ধতি সবাই দর্শনের অনুরূপ। এরপরও আছে এমন সব অবান্তর আলোচনা যার সমাধানই মানুষের বুদ্ধির আয়াস সাধ্য নয়। আল্লাহর সত্তা, গুণাবলী এবং এমন বহু বিষয়, যা বুদ্ধির অগম্য, বুদ্ধির সহায়তায় সেগুলো প্রমাণ করার চেষ্টা। নবী ও রসূলগণের ব্যাখ্যায় সন্তুষ্ট না হয়ে এগুলোর ব্যাখ্যায় নিজেদের দুর্বল ও সীমিত বুদ্ধিবৃত্তি প্রয়োগ। এ প্রচেষ্টা বিষয়গুলোকে সুস্পষ্ট করার পরিবর্তে বরং আরো জটিল করে তুলেছিল। কুরআন আল্লাহর সত্তা ও গুণাবলীকে এমন সহজ ও সুস্পষ্ট ভাষায় বর্ণনা করেছে যে একজন সাধারণ লোকের পক্ষে তা অনুধাবন করা মোটেই কঠিন নয়। যে কোন যুগের যে কোন পরিবেশের জন্য এ বর্ণনা পদ্ধতি সহজতর। যে কোন পর্যায়ের বুদ্ধিবৃত্তির অধিকারী মানুষ কুরআনের এ বর্ণনা পদ্ধতি থেকেই তার আসল বক্তব্য বিষয় সহজে জেনে নিতে পারে।
কিন্তু দর্শনের প্রভাবে ইলমে কালাম এই সহজ বিষয়টিকে কঠিন করে দিয়েছিল। সুস্পষ্ট বিষয়টিকে জটিল করে তুলেছিল। সংশয় নিরসনের উদ্দেশ্যে অগ্রসর হয়ে কেবল সংশয় বৃদ্ধি করেছিল। তাই মুসলিম উম্মতের একটি বিরাট অংশ সব সময় ইলমে কালামের এ প্রচেষ্টাকে সুনজরে দেখেনি। এর বিরোধিতা করে এসেছে। কাজেই এ অবস্থার পরিবর্তনের জন্য কুরআন ও সুন্নাহর সঠিক ও সুস্পষ্ট ব্যাখ্যার প্রয়োজন ছিল। এমন ব্যাখ্যা যা সাধারণ ও বুদ্ধিজীবী সর্বশ্রেণীর মানুষের বোধগম্য এবং সবার ওপর প্রভাব বিস্তারে সক্ষম। কুরআন ও সুন্নাহর ওপর তাঁর ঈমান পর্বতের ন্যায় অটল হবার সাথে সাথে কুরআন, সুন্নাহ এবং আল্লাহর সত্তা ও গুণাবলী সম্পর্কে তাঁর ব্যাখ্যা ও যুক্তি হবে হৃদয়গ্রাহী ও পূর্ণাঙ্গ। প্রথম পর্যায়েই তা যেন শ্রোতা ও পাঠকের মন জয় করে নিতে পারে।
খৃষ্টবাদীদের ধৃষ্টতা
অন্যদিকে খ্রিস্টবাদও ইসলামের বিরুদ্ধে একটা নতুন অভিযান শুরু করেছিল। খৃষ্টবাদীরা নিজেদের ধর্মের শ্রেষ্ঠত্ব ও সত্যতা প্রমাণ এবং ইসলামের বিরুদ্ধে অপপ্রচারের আন্দোলন চালাতে লাগলো। মুসলমান ও ইসলামের বিরুদ্ধে তাদের এ দুঃসাহসে শক্তি যুগিয়েছিল তাদের একের পর এক ক্রুসেড যুদ্ধ এবং সিরিয়া, ফিলিস্তিন ও সাইপ্রাসে বসবাসকারী বিপুল সংখ্যক ইউরোপীয় বংশোদ্ভূত খৃষ্টান সম্প্রদায়। মুসলমানদের সাথে তাত্ত্বিক মোকাবিলা করার জন্য তারা নবুয়তে মুহাম্মদীর ওপর আক্রমণ করে নিজেদের ধর্মের শ্রেষ্ঠত্ব প্রতিপন্ন করার জন্য বই পুস্তক রচনা করে।
খৃষ্টানদের এ ইসলাম বিরোধ প্রচারণা, ধৃষ্টতা ও অপপ্রচারের জবাব দেবার জন্যও একজন শক্তিশালী আলেম ও যুক্তিবাদী লেখকের প্রয়োজন ছিল। খ্রিস্টবাদ ও অন্যান্য ধর্ম সম্পর্কে তার ব্যাপক পড়াশুনা ও বিপুল পাণ্ডিত্যের প্রয়োজন ছিল। ধর্মগুলোর তুলনামূলক জ্ঞান ও আসমানী কিতাবগুলোর বিকৃতির ইতিহাস ও ধারা সম্পর্কে তার এমন সুস্পষ্ট জ্ঞানের অধিকারী হবার প্রয়োজন যার মাধ্যমে তিনি ইসলামের শ্রেষ্ঠত্ব ও সত্যতা প্রমাণ করে অন্য ধর্মাবলম্বীদের সামনে ইসলামের দাওয়াত পেশ করতে পারেন। ইমাম ইবনে তাইমিয়া যে যুগে জন্মগ্রহণ করেছিলেন সে যুগে মুসলমানরা সারা দুনিয়ায় বাইরের ও বেতরের এমনি অসংখ্য সংকটের মোকাবিলা করছিল। ছশো সাড়ে ছশো বছর একটা জাতির সত্যের ওপর টিকে থাকা সহজ ব্যাপার ছিলনা। এজন্য একশো বছর সময় কালও অনেক বেশি বলে বিবেচিত হয়। অতীতের জাতিদের জন্য যে সব কারণে নবী ও রসূলগণের আবির্ভাব হতো সাড়ে ছশো বছর পর মুসলমানদের জন্য সে সব কারণই তৈরি হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু নবুয়তের সিলসিলা খতম হয়ে গিয়েছিল। এ অবস্থায় ইবনে তাইমিয়ার ন্যায় মুজাদ্দিদরাই দীনের পুনরুজ্জীবনের দায়িত্ব পালন করেন।
বাতেনী ফিতনা
সপ্তম হিজরি শতকের শেষার্ধে মুসলমানদের মধ্যে বাতেনীদের তৎপরতা ব্যাপকতা লাভ করে। হিজরি চতুর্থ শতেকের গ্রীক দর্শনের ছত্রছায়ায় এ ফিতনাটির জন্ম। পঞ্চম শতকে ইমাম গাযালী রহমাতুল্লাহি আলাইহি সর্বশক্তি দিয়ে এর মোকাবিলা করেন। কিন্তু ফিতনাটিকে নির্মূল করা তাঁর পক্ষে সম্ভব হয়নি। দেড়শ বছরের মধ্যে ফিতনাটি আবার তার বিপুল ভয়াবহতা নিয়ে মিল্লাতে ইসলামিয়ার ক্ষতি সাধনে প্রবৃত্ত হয়। বাতেনীদের ধর্মীয় বিশ্বাস ও শিক্ষাবলীর মধ্যে ইরানের অগ্নি উপাসকদের আকীদা বিশ্বাস, প্লেটোর চিন্তাধারা এবং ভয়াবহ রাজনৈতিক স্বার্থবাদিতার অশুভ সমাবেশ ঘটে। তাদের ইসমাইলি, হাশাশী, দ্রুযী, নুসাইরী প্রভৃতি শাখাগুলো মুসলমানদের বিরুদ্ধে সব সময় তৎপর থাকে। মুসলমান ও মুসলিম রাষ্ট্রগুলোর ওপর যে কোন বহিঃশত্রুর আক্রমণে তারা সবসময় সহায়তা করে এসেছে। এমনকি অধিকাংশ সময় তাদেরই তৎপরতা ও চক্রান্তে বাইরের শত্রুরা মুসলমানদের ওপর আক্রমণ করার সাহস পেয়েছে।
সিরিয়া ও ফিলিস্তিনে ইউরোপীয় খৃষ্টানদের ক্রুসেড যুদ্ধের সময় তারা ক্রসেডারদের সহায়তা করেছে। ক্রসেডাররা সিরিয়া দখল করার পর বাতেনীদেরকেই নিজেদের বিশ্বস্ত অনুচর ও বন্ধুর স্থান দেয়। রাষ্ট্রীয় পর্যায়েও তাদের সাহায্যের প্রতিদান দেয়। পরবর্তীকালে জঙ্গি সুলতানদের সিরিয়া পুনর্দখলের সময় এবং আইউবী সুলতানদের আমলেও তারা হামেশা ষড়যন্ত্র ও বিদ্রোহে লিপ্ত থাকে। অষ্টম শতকে তাতারীরা সিরিয়া আক্রমণ করলে তারা প্রকাশ্যে তাতারীদের সাহায্য করে। এর ফলে মুসলমানেরা ভয়াবহ ক্ষতির সম্মুখীন হন।
ইসলামের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, বাতেনীরা হামেশা মুসলমানদের মধ্যে ধর্মীয় নৈরাজ্য ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি, ইসলামের প্রতি মুসলমানদের আস্থা দুর্বল করে দেয়া, ইসলামের বিরুদ্ধে মুসলমানদের মনকে বিদ্রোহী করে তোলা এবং তাদের মধ্যে ইসলাম বিরোধী আকীদা বিশ্বাস প্রচারে নিয়োজিত থেকেছে। মুসলমানদের ধর্মীয় দুর্গটি শত্রুপক্ষের হাতে সোপর্দ করার জন্য তারা সবসময় গোয়েন্দাগিরি করে এসেছে।
হিজরি পঞ্চম শতকে ইমাম গাযালী রঃ এ ফিতনাটির তাত্ত্বিক মোকাবিলা করেছিলেন। অষ্টম শতকে এসে এর কেবল তাত্ত্বিক মোকাবিলাই যথেষ্ট ছিল না বরং এই সংগে কার্যত একে নির্মূল ও নিশ্চিহ্ন করে মিল্লাতে ইসলামিয়াকে চিরকালের জন্য এর হাত থেকে নিষ্কৃতি দেবার প্রয়োজন ছিল।
ভ্রান্ত তাসাউফ ও শিরকের প্রসার
এ যুগে আর একটি ফিতনা প্রসার লাভ করেছিল তাসাউফপন্থীদের মধ্যে। ইতিহাসের বিভিন্ন পর্যায়ে বিভিন্ন জাতির চিন্তা ও কর্মধারার সংস্পর্শে এসে এবং এই সঙ্গে আসল ইসলামী চিন্তা ও কর্মধারা থেকে দূরে সরে যাওয়ার কারণে মুসলমানদের মধ্যে গ্রীক, ইশরাকী, বেদান্ত ও বৌদ্ধ মহানির্বানবাদী দর্শনের অনুপ্রবেশ ঘটেছিল। কয়েক শতকের প্রচার ও প্রচলনের ফলে ইসলামী আকীদা বিশ্বাসের বিভিন্ন পর্যায়ে এগুলোর সূক্ষ্ম অনুপ্রবেশ ঘটেছিল। এই অনৈসলামী আকীদাগুলোকে চিহ্নিত করে সেখান থেকে এগুলোকে ছেঁকে বের করে আনা মোটেই সহজতর ছিল না। নয়া প্লেটোবাদ, যোগবাদ, অদ্বৈতবাদ, সর্বেশ্বরবাদ, প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য জ্ঞানের সীমা নির্দেশ, একজনের বক্ষদেশ থেকে আরেকজনের বক্ষদেশে জ্ঞানের গোপন বিস্তার, কামেল পীর মুর্শিদ এবং আল্লাহর প্রেমে পাগল মাজযুবের জন্যে শরীয়তের আনুষ্ঠানিকতা মেনে চলার প্রয়োজন নেই, প্রবৃত্তি মুশরিকী চিন্তা বিশ্বাস আহলে তাসাউফদের একটি বিরাট অংশের মধ্যে অনুপ্রবেশ করেছিল। সাহাবায়ে কেরাম ও তাবেঈদের আমল থেকে খালেস ইসলামী তাসাউফের একটি ধারা চলে আসছিল। কিন্তু হিজরি অষ্টম শতকে এসে পৌছতে পৌছতে তার স্বচ্ছ কর্মধারায় আবর্জনা এমনভাবে মিশ্রিত হয়ে গেলো যে, আহলে ইলমদের এক বিরাট গোষ্ঠীও এই আবর্জনা ধোয়া পানি পান করেই নিজেদেরকে গৌরবান্বিত মনে করতে থাকলো। ফলে মুসলিম জনতার বিরাট অংশও যে তাদের অনুসারিতায় এ গোমরাহিতে লিপ্ত হয়েছিল তাতে সন্দেহ নেই।
এই সংগে দীর্ঘকাল তেকে অমুসলিমদের সংগে মেলামেশা, আজমী প্রভাব এবং উলামায়ে কেরামের গাফলতির কারণে মুসলিম জনগণের মধ্যে অনেক প্রকার মুশরিকী আকীদা বিশ্বাস ও কর্মধারা প্রসার লাব করেছিল। নির্ভেজাল তওহীদের ওপর বিভিন্ন ক্ষেত্রে আবরণ পড়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছিল। আল্লাহর ওলি ও তাঁর নেক বান্দাদের ব্যাপারে অমুসলিমদের ন্যায় মুসলমানরাও বাড়াবাড়ি করতে শুরু করেছিল। আল্লাহর মৃত নেক বান্দাদের কাচে ফরিয়াদ জানাতে এবং নিজের দিলের মাকসুদ পুরা করার জন্য তাদের মাজারে ধরনা দিতে ও তাদের কাছে মুনাজাত করতে সাধারণ মুসলমান তো দূরের কথা অনেক আলেমও একটুও ইতস্তত করতেন না। মুসলমানরা অমুসলিমদের পূজা পার্বণ, ধর্মীয় অনুষ্ঠানাদিতে উপস্থিত থাকতো, তাতে শরীক হতো এবং নিজেরাও তাদের বহু অনুষ্ঠান পালন করতো।
এই সব মুশরিকী জাহেলিয়াতের বিরুদ্ধে জিহাদ করার এবংয় খালেস তওহীদের দিকে পূর্ণ শক্তিমত্তা সহকারে মুসলমানদের আহবান জানাবার জন্য এমন একজন মর্দে মুজাহিদ আলেমের প্রয়োজন ছিল, যিনি তওহীদ ও শিরকের পার্থক্য সম্পর্কে সুস্পষ্টরূপে অবগত, যিনি জাহেলিয়াতের সবরকমের চেহারা সম্পর্কে সম্পূর্ণ ওয়াকিবহাল, যে কোন চেহারায় ও যে কোন পোশাকে জাহেলিয়াত উপস্থিত হোক না কেন, তাকে চিনে ফেলতে যার এক মুহূর্তও দেরী হবে না, যিনি তওহীদে খালেসকে উলামায়ে কেরামের কিতাব থেকে, জাহেল মুসলমানদের আমল থেকে এবং যুগের প্রতিষ্ঠিত রীতি রেওয়াজ থেকে নয় বরং সরাসরি কুরআন ও সুন্নাহ থেকে এবং সাহাবা ও তাবেঈগণের আমল ও জীবনধারা থেকে জেনেছেন ও গ্রহণ করেছেন। নির্ভুল আকীদা ও আমলটি জানার পর সেটি ঘোষণা করার ব্যাপারে তিনি কোন শাসকের রক্তচক্ষু ও বিশাল জনতার পর্বতপ্রমাণ বিরোধিতার পরোয়া করেন না।
উলামায়ে কেরামের দুর্বলতা
এই সংগে ইমাম ইবনে তাইমিয়ার আবির্ভাবকালে মিল্লাতে ইসলামিয়ার সবচেয়ে বড় দুর্বলতা দেখা দিয়েছিল উলামায়ে কেরামের মধ্যে। উলামায়ে কেরামের মধ্যে ও দীনী শিক্ষায়তনগুলোতে এক প্রকার জড়তা ও স্থবিরতা বাসা বেঁধেছিল। নিজেদের ফিকহী পদ্ধতি, মযহাব ও নিজেদের ইমামের ফিকহী চিন্তার বাইরে গিয়ে কিছু করাকে তারা হারাম মনে করতেন। ফিকহকে কুরআন ও হাদিসের দৃষ্টিতে বিচার না করে কুরআন হাদিসকে নিজেদের ফিকহর দৃষ্টিতে বিচার বিশ্লেষণ করতেন। ফিকহর মতবিরোধের ক্ষেত্রে কুরআন হাদিসকে বিচারকের মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত করার পরিবর্তে সর্বাবস্থায় কুরআন হাদিসকে তার সাথে সামঞ্জস্যশীল করার প্রচেষ্টা চালানো হতো। (অথচ কুরআনে সুস্পষ্ট বলা হয়েছেঃ *******আরবী******অর্থাৎ কোন বিষয়ে তোমাদের মতবিরোধ হলে তোমরা আল্লাহর কিতাব ও ???) ইসলামী সমাজে অনেক নতুন নতুন সমস্যার উদ্ভব হয়েছিল, যেগুলো সমাধান করার জন্য নতুন ইজতিহাদের প্রয়োজন ছিল। কিন্তু তাদের দৃষ্টি সেদিকে ছিল না। তারা নিজেদের অক্ষম মনে করতো। এক্ষেত্রে কুরআন, হাদিস ও ফিকাহে গভীর পাণ্ডিত্যের অধিকারী ও ইজতিহাদের ক্ষমতাসম্পন্ন আলেমের প্রয়োজন ছিল।
জ্ঞান চর্চা ও মযহাবী সীমাবদ্ধতা
ইসলাম জ্ঞানচর্চাকে কেবল অনুমোদন ও উৎসাহ প্রদান করেই ক্ষান্ত হয়নি বরং জ্ঞানানুশীলন মুসলমানদের জন্য অপরিহার্য গণ্য করেছে। রাজবংশের উত্থান পতন, রাজশক্তির ভাঙ্গাগড়া, বড় ধরনের রাজনৈতিক বিপ্লব এবং যুদ্ধ বিগ্রহরে মধ্যেও মুসলমানদের জ্ঞানের চর্চা কখনো থেমে যায়নি। এমনকি খিলাফতে রাশেদার শেষের দিকে এবং উমাইয়া রাজবংশের স্থিতিশীলতা লাভ করার পূর্ব পর্যন্ত সারা ইসলামী বিশ্বে যে ব্যাপক নৈরাজ্য ও যুদ্ধ বিগ্রহ চলে, তখনো একদল লোক জ্ঞানচর্চায় নিজেদের উৎসর্গিত করে। হাদিস সংগ্রহ, হাদিসের দরস, ফিকহর আলোচনা, হাদিস ও ফিকহ গ্রন্থ প্রণয়ন, আরবী ব্যাকরণ, সীরাত, ইতিহাস প্রবৃত্তি শাস্ত্রের চর্চাও গ্রন্থ প্রণয়নের কাজ চলে স্বাভাবিক নিয়মে।
সাতশো হিজরিতে পৌছুতে পৌছুতে জ্ঞানচর্চা অনেক ব্যাপকতা লাভ করে। শাসক সমাজ হামেশা জ্ঞানানুশীলনে সহায়তা দান করেন। আইউবী ও মামলুক সুলতানগণ মিসর ও সিরিয়ায় বড় বড় জামেআ ও দারুল হাদিস কায়েম করেন। এসব শিক্ষা কেন্দ্রে ও বিশ্ববিদ্যালয়ে সারা ইসলামী বিশ্বের বিভিন্ন এলাকা থেকে অসংখ্য ছাত্র এসে শিক্ষালাভ করতে থাকে। এ শিক্ষায়তনগুলোর সাথে সাথে বড় বড় লাইব্রেরীও গড়ে ওঠে। এ লাইব্রেরীগুলোতে সকল শাস্ত্রের ও ইলমের বিপুল পরিমাণ গ্রন্থ সংগৃহীত হয়েছিল। ছাত্র শিক্ষক নির্বিশেষে বিদগ্ধ সমাজ সমানভাবে এ লাইব্রেরীগুলো থেকে ফায়দা হাসিল কর পারতো। এগুলোর মধ্যে কোন কোনটি এত বড় ছিল যে, সারা দুনিয়ার কিতাব এখানে সংগৃহীত ছিল বলে মনে করা হতো। এর মধ্যে একমাত্র ৬২১হিজরীতে আল কামেল মুহাম্মদ আইউবি প্রতিষ্ঠিত জামআ কামেলিয়ার লাইব্রেরীতে এক লক্ষ কিতাব সংগৃহীত ছিল।
সপ্তম অষ্টম হিজরিতে অনেক বড় বড় ও বিশ্ববিখ্যাত আলেমের আবির্ভাব ঘটে। আল্লামা তাকীউদ্দীন আবু আমার ইবনুস সালাহ (৫৭৭ -৬৩৪হিঃ) শায়খুল ইসলাম ইযযুদ্দীন ইবনে আবদুস সালাম (৫৭৮-৬৬০হিঃ) ইমাম মুহিউদ্দীন নববী (৬৩১-৬৭৬হিঃ) শায়খুল ইসলাম তাকীউদ্দীন ইবনে দাকীকুল ঈদ(৬২৫-৭০২হিঃ), আল্লামা আলাউদ্দিন আলবাজী(৬৩১-৭১২হিঃ) আল্লামা জামালুদ্দীন আবুল হাজ্জাজ আস সাযী (৬৫৪-৭৪২) হাফেজ ইলমুদ্দীন আলবারযালী(৬৬৫-৭৩৯হিঃ)এবং আল্লামা শামসুদ্দীন আযযাহাবী (৬৭৩-৭৪৮হিঃ) প্রমুখ বিশ্ববিখ্যাত আলেম, ফকীহ, মুহাদ্দিস, দার্শনিক ও কালাম শাস্ত্রবিদগণ এই যুগকে বিশিষ্টতা দান করেন। এ যুগের শ্রেষ্ঠ গ্রন্থ সমূহ এদের এবং সমকালীন শ্রেষ্ঠ পণ্ডিতদের দ্বারা লিখিত হয়।
এ যুগের শ্রেষ্ঠ গ্রন্থগুলোর মধ্যে আল্লামা তাকিউদ্দীন ইবনুস সালাহের মুকাদ্দামাহ, শায়খ ইযযুদ্দীন ইবনে আবদুস সালামের আলকাওয়াদেুল কুবরা, ইমাম নববীর মাজমু ও শারহে মুসলিম, ইবনে দাকীকুল ঈদের কিতাবুল ইমাম ও আহাকামুল আহকাম শারহে উমদাতিল আহকাম আবুল হাজ্জাজ আলমাযীর তাহযীবুল কামাল এবং আল্লামা যাহাবীর মীযানুল ইতিদাল ও তারিখুল ইসলাম সবচাইতে বেশি জনপ্রিয়তা অর্জন করে।
তবে এ সময়ের ইলম সম্পর্কে একটা কথা সুস্পষ্টভাবে বলা যায়। তা হচ্ছে এই যে, এ সময়ের জ্ঞানানুশীলনের মধ্যে ব্যাপকতা ছিল বেশি, গভীরতা ছিল তার তুলনায় অনেক কম। গভীর চিন্তা ও গবেষণার পরিবর্তে পূর্ববর্তীদের জ্ঞানের সংকলন ও তার ব্যাখ্যার প্রতি ঝোঁক ছিল বেশি। এ পর্যন্ত ফিকহী মযহাবগুলোর যে শক্তিশালী প্রাসাদ তৈরি হয়ে গিয়েছিল তার চার দেওয়ালের বাইরে আসার ক্ষমতা তাদের ছিল না। চার মযহাবকে মুখেই বেকল সত্য বলে মেনে নেয়া হয়েছিল কিন্তু কার্য ক্ষেত্রে দেখা যেতো প্রত্যেক মযহাবের অনুসারী কেবল নিজের মযহাবকেই অভ্রান্ত সত্য বলে মনে করছে। অন্য মযহাবের মধ্যে নিখাদ সত্য থাকতে পারে, এ কথা বলতে তাদের দ্বিধা ছিল। বড় জোর তারা এতটুকু মনে করতোঃ আমাদের ইমাম যে ইজতিহাদ করেছেন তা সম্পূর্ণ সত্য ও নির্ভুল, তবে তার মধ্যে ভুলের সম্ভাবনা আছে।
মযহাবের অনুসারীদের নিজের ও অন্যের মযহাব সম্পর্কে এই ছিল দৃষ্টিভঙ্গি। তারা নিজের মযহাবকে অন্য সমস্ত ফিকহী মযহাব থেকে শ্রেষ্ঠ এবং তার পেছনে আল্লাহর সমর্থন আছে বলে মনে করতো। নিজেদের মযহাবকে সত্য ও শ্রেষ্ঠ প্রমাণ করার জন্য তারা নিজেদের সমস্ত যোগ্যতা, ক্ষমতা, বুদ্ধিবৃত্তি ও লেখনী শক্তি নিয়োগ করতো। মযহাবের অনুসারীরা নিজেদের মযহাবকে কোন দৃষ্টিতে দেখতো তাকে কত ঊর্ধ্বে স্থান দিতো এবং নিজেদের মযহাব সম্পর্কে তারা কি ধারনা পোষণ করতো, সুলতান আলমালিকুয যাহের বেইবারসের একটি শাসন সংস্কার থেকে তা সহজেই অনুমান করা যায়। আগের শাসনতান্ত্রিক বিধান অনুযায়ী মিসর ও সিরিয়ায় কেবলমাত্র শাফেয়ী কাযীউল কুযাত (প্রধান বিচারপতি) নিযুক্ত ছিলেন। সুলতান বেইবারস সেস্থলে অন্য তিন মযহাবের কাযীউল কুযাত ও নিযুক্ত করেন এতে শাফেয়ী আলেমগণ ভীষণ বিক্ষুব্ধ হন। তারা নিজেদের অসন্তোষ প্রকাশ করেন। তারা মিসরকে একমাত্র শাফেয়ী কাযীউল কুযাতের অধীন দেখতে চাচ্ছিলেন। তারা মনে করতেন শাফেয়ী মযহাব মিসরে সবচাইতে প্রাচীন এবং এদেশের মাটিতে ইমাম শাফেয়ী রহমাতুল্লাহি আলাইহির সমাধিও রচিত হয়েছে। কাজেই এ দেশে একমাত্র শাফেয়ী মযহাবের অধিকারই ন্যায়সঙ্গত। তাই বেইবারসের মৃত্যুর পর তাঁর বংশের হাত থেকে শাসন ক্ষমতা স্থানান্তরিত হলে শাফেয়ী আলেমগণ এটাকে শাফেয়ী মযহাবের প্রতি তার বেইনসাফী অন্যায় আচরণের আল্লাহ প্রদত্ত শাস্তি হিসাবে চিহ্নিত করেন।
ফিকহ মযহাবের ক্ষেত্রেও একদিকে এই বাড়াবাড়ির সাথে সাথে আবার চলছিল কালাম শাস্ত্রকারদের বিরোধ। এ ক্ষেত্রে হাম্বলী ও আশআরীদের বিরোধ ছিল তুঙ্গে। ফিকহী মযহাবগুলোর অনুসারীদের নিজেদের শত বিরোধ স্বত্বেও পারস্পরিক মেলামেশা ও বাবের আদান প্রদানের ক্ষেত্রে তাদের মধ্যে কোন ভাটা পড়েনি। বরং তাদের অনেকের মধ্যে শিক্ষক ছাত্রের সম্পর্কও ছিল। তাই সেখানে পারস্পরিক সম্মানবোধের একটা সুযোগ ছিল। তারা পরস্পর বিতর্ক করতেন। কিন্তু সে বিতর্ক নিজের মযহাবকে শ্রেষ্ঠ ও সত্য প্রমাণ করার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকতো। কিন্তু হাম্বলী ও আশআরীদের মধ্যে বিরোধ কুফরি ও ইসলামের সীমান্তে চলে যেতো। তারা পরস্পরকে ইসলাম থেকে খারিজ করার চেষ্টায় সর্বশক্তি নিয়োগ করতেন। আকীদা বিশ্বাস নিয়ে মানতেক ও কালাম শাস্ত্রের গালভরা বুলি সহকারে যখন বিতর্কে নামা যায় তখন তাকে ইসলাম বা কুফরির সীমান্তে পৌঁছানো ছাড়া কোন উপায় থাকেনা। ধীরে ধীরে শাসক মাজ ও জনগণ সবাই এই বিতর্কে জড়িয়ে পড়তে থাকে এবং এর মধ্যে বেশ আনন্দ উপভোগ করতে শুরু করে।
অন্যদিকে তাসাউফের অবস্থাও ছিল আরও সঙ্গিন। বহুতর অনৈসলামী চিন্তা ভাবধারা ও পদ্ধতি এর মধ্যে অনুপ্রবেশ করে। অসংখ্য পেশাদার, মূর্খ ও বেদাতী সুফি এ পদ্ধতিতে বেশ জমিয়ে বসে। সাধারণ মানুষদের সাথে সাথে শিক্ষিত সাজের একটি বিরাট অংশও ভণ্ড ও গায়ের ইসলামী সুফিদের খপ্পরে পড়ে যায়। এভাবে মুসলমানদের দীন ও ঈমান বিরাট বিপদের সম্মুখীন হয়। দার্শনিকদের একটি দল অহি ও নবুয়তের শিক্ষা ও সীমানা ডিঙিয়ে স্বাধীন চিন্তার অনুবৃত্তিতে মেতে ওঠেন। একদল তো ধর্মকে দর্শনের লেজুড় হিসেবে দাঁড় করাবার চেষ্টা চালান। দার্শনিকদের এ উভয় দলই প্লেটো ও এরিস্টটলের ছিল অন্ধ অনুসারী। এ অবস্থার মধ্যে ইমাম ইবনে তাইমিয়া ঈমান, ইলম ও আমলের উজ্জ্বল মশাল হাতে এগিয়ে আসেন।
রাজনৈতিক ও সামাজিক অবস্থা
অষ্টম হিজরি শতকে মুসলিম মিল্লাত ভিতরে বাইরে এমন সব সমস্যায় জর্জরিত হয়েছিল, যা থেকে তাকে উদ্ধার করার জন্য একজন শক্তিশালী সংস্কারক, মুজাদ্দিদ ও মর্দে মুজাহিদের প্রয়োজন ছিল। এই সমস্যায় জর্জরিত বিভ্রান্ত মুসলিম সমাজকে যথার্থ ইসলামের পথে পরিচালিত করার যাবতীয় যোগ্যতা দিয়ে আল্লাহ তা আলা ইমাম ইবনে তাইমিয়া রহমাতুল্লাহি আলাইহিকে পাঠান।
ইবনে তাইমিয়ার দীনী সংস্কারমূলক কার্যাবলী অনুধাবন করার জন্য তাঁর যুগের রাজনৈতিক অবস্থার পর্যালোচনা একান্ত অপরিহার্য। এ প্রসঙ্গে ইতিপূর্বে তাতারীদের আক্রমণ ও ধ্বংসলীলার কথা কিছুটা বর্ণনা করা হয়েছে। এখন ইসলামী বিশ্বের যে এলাকায় তাঁর জন্ম হয় এবং তাঁর কর্মক্ষেত্র যে এলাকায় পরিব্যাপ্ত ছিল সেখানকার রাজনৈতিক অবস্থা সম্পর্কে কিছুটা অবহিতির প্রয়োজন। ইবনে তাইমিয়ার জন্মের তের বছর পূর্ব থেকে মিসর ও সিরিয়ার ওপর মামলুক সুলতানদের রাজত্ব শুরু হয়। এ মামলুক সুলতানরা ছিলেন সুলতান সালাহউদ্দিন আইউবীর রাজবংশের শেষ সুলতান আল মালিকুস সালেহ নজমুদ্দীন আইউবের (মৃঃ৬৪৭হিঃ) তুর্কী গোলাম। সুলতান নজমুদ্দীন আইউব তাদের বীরত্ব ও বিশ্বস্ততার পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হবার পর মিসরে বসবাস করার ব্যবস্থা করে দেন। ৬৪৭ হিজরিতে আল মালিকুস সালেহের ইন্তেকালের পর তুরান মাহ তাঁকে হত্যা করে নিজেই সিংহাসনে বসেন এবং আলমালিকুল মুঈয নাম গ্রহণ করেন। ৬৫৭ হিজরিতে ইযযুদ্দীন আইবকের গোলাম সাইফুদ্দীন কাতার সিংহাসন দখল করেন। এই মুসলিম সুলতানই সর্ব প্রথম অজেয় বলে কথিত তাতারীদেরকে পরাজিত করেন। পরের বছরে সুলতান নজমুদ্দীন আইউবের দ্বিতীয় গোলাম রুকনুদ্দীন বেইবারস সাইফুদ্দীন কাতারকে হত্যা করে সিংহাসন দখল করেন। তিনি আলমালিকুয যাহিদ উপাধি ধারণ করেন। বেইবারস অত্যন্ত শক্তিশালী সুলতান ছিলেন। একই সাথে তাতারী ও ক্রসেডারদের সাথে লড়াই করেন এবং উভয়কে পরাজিত করেন। বারবার পরাজিত করেন। এই সংগে ইসলামী বিশ্বের দুই প্রবল শত্রুর বিরুদ্ধে বিজয় মুসলমানদের মধ্যে তাঁর কর্তৃত্বের আসনকে সুপ্রতিষ্ঠিত করে দেয়।
তাঁরই শাসনামলে সিরিয়ায় ইমাম ইবনে তাইমিয়ার জন্ম হয়। ইমামের বয়স যখন পনের বছর তখন আল মালিকুয যাহির রুকনুদ্ধীন বেইবারসের ইন্তেকাল হয়। ইমাম তখন কৈশোর থেকে যৌবনে উত্তীর্ণ হতে চলেছেন। শৈশবে যেখানে তিনি দেখেছিলেন চতুর্দিকে হতাশা ও পরাজয়ের গ্লানি সেখানে যৌবনে পৌছতেই হতাশার মেঘ কাটতে শুরু করেছিল। মহান সুলতান সালাহউদ্দিন আইউবী যেমন হতাশাগ্রস্ত মিল্লাতের জড়তা ভেঙ্গে ক্রুসেডারদের বিরুদ্ধে মুসলমানদের সর্বাত্মক জিহাদের লিপ্ত করেছিলেন এবং ইসলামী বিশ্বে এক নতুন প্রাণবন্যা সৃষ্টি করেছিলেন তেমনি মালিকুয যাহির বেইবারস স্থবির অবসাদগ্রস্ত মিল্লাতের বুকে আর একবার প্রাণ সঞ্চার করেন। চতুর্দিকে তাতারী ও ক্রুসেডারদের বিরুদ্ধে একটি জিহাদের পরিবেশ সৃষ্টি হয়। ঐতিহাসিক ইবনে কাসির সুলতান সম্পর্কে লিখেছেনঃ বেইবারস ছিলেন তীক্ষ্ণ বুদ্ধিসম্পন্ন, উন্নত ও বলিষ্ঠ হিম্মতের অধিকারী সাহসী বাদশাহ। শত্রুদের সম্পর্কে তিনি কখনো গাফেল থাকতেন না। সব সময় তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত থাকতেন। তিনি বিক্ষিপ্ত ও বিশৃঙ্খল মুসলমানদের সুশৃংখলাবদ্ধ ও একত্রিত করেন। সত্যি বলতে কি, আল্লাহ তায়ালা তাঁকে এই শেষ যুগে ইসলাম ও মুসলমানদের সাহায্য সহযোগিতা দান এবং তাদের শক্তিশালী করার জন্য পাঠিয়েছিলেন। ফিরিঙ্গী, তাতারী ও মুশরিকদের চোখে তিনি কাটার মতো বিঁধতেন। তিনি মদ নিষিদ্ধ করে দেন। ফাসেক, ফাজের, গুণ্ডা, বদমাশদের দেশ থেকে বিতাড়িত করেন। দেশের কোথাও কোন বিপর্যয় বিশৃঙ্খলা দেখলে তা দূর না করা পর্যন্ত তিনি নিশ্চিন্ত হতে পারতেন না।
মালিকুয যাহির বেইবারসের রাজ্য যথেষ্ট বিস্তৃত ছিল। পূর্ব দিকে ফোরাত নদী থেকে দক্ষিণে সুদান পর্যন্ত ছিল তাঁর রাজ্যের শেষ সীমানা। মিসর ছিল এই রাজ্যের কেন্দ্রীয় এলাকা এবং কায়রো ছিল রাজধানী। কায়রোর গুরুত্ব এ সময় আরো বেড়ে গিয়েছিল বাগদাদ থেকে বিতাড়িত আব্বাসী খলীফাদের এখানে অবস্থানের কারণে। বাগদাদ তখনো ছিল তাতারীদের অধীনে। বাগদাদের তাতারী বাদশাহ ইসলাম গ্রহণ না করা পর্যন্ত তা অমুসলিমদের অধীনে থাকে। অন্যদিকে আব্বাসী খলিফাগণ তখন রাষ্ট্রীয় কর্তৃত্বহারা হলেও মুসলমানদের ওপর তাঁদের রূহানী কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত থাকে। কায়রো থেকেই তাঁরা ইসলামী বিশ্বে তাঁদের সেই রূহানী কর্তৃত্ব চালাতে থাকেন।
বেইবারস একজন মহান বাদশাহ ছিলেন সন্দেহ নেই। কিন্তু হাজার গুণাবলী ও সৎকর্ম স্বত্বেও তিনি ছিলেন একজন একনায়ক বাদশাহ। তাই মুসলমানদের মধ্যে জিহাদি চেতনা ফিরিয়ে এনে ইসলামের দুশমনদের শোচনীয় পরাজয় বরণে বাধ্য করে তিনি যেমন একদিকে একটি বিরাট দায়িত্ব পালন করেন তেমনি অন্যদিকে একনায়কতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থার কারণে তার আমলে জুলুম অত্যাচারের ঘটনাও কিছু ঘটে। কিন্তু এতদসত্বেও তাঁর আমলকে সামগ্রিকভাবে মুসলমানদের জাগরণের যুগ বলা যায়।
৬৭৬ হিজরিতে ১৮ বছর রাজত্ব করার পর মালিক বেইবারস ইন্তেকাল করেন। তাঁর ইন্তেকালের পর মুসলমানদের আবার দুর্দিন শুরু হয়। তাঁর ইন্তেকালের পর ৩৩বছরের মধ্যে ৯ জন সুলতান মিসরের সিংহাসনে বসেন। তাদের মধ্যে একমাত্র যিনি কিছুটা শক্তিমত্তার পরিচয় দিয়েছেন তিনি হচ্ছেন আল মালিকুল মনসুর সাইফুদ্দীন কালাউন। তিনি ৬৭৮ হিজরিতে তাতারীদের ওপর আক্রমণ চালিয়ে তাদের শোচনীয় পরাজয় বরণে বাধ্য করেন। এই সঙ্গে তিনি ক্রুসেডারদের বিরুদ্ধেও জিহাদ পরিচালনা করেন। ১৮৫ বছর পর তিনি ক্রুসেডারদের হাত থেকে তারাবিলাস উদ্ধার করেন। ১২ বছর পর্যন্ত তিনি অত্যন্ত শান শওকতের সাথে রাজত্ব করেন। ৬৮৯ হিজরিতে তাঁর মৃত্যুর পর মিসরের সিংহাসন ক্ষমতা লোভীদের হাতের পুতুলে পরিণত হয় এবং বছরে বছরে একর পর এক বাদশাহর পরিবর্তন হতে থাকে। অবশেষে ৭০৯ হিজরিতে আল মালিকুল মনসুরের পুত্র আল মালিকুন নাসের কালাউন তৃতীয় বার সিংহাসন দখল করেন। এবার তাঁর আসন স্থায়ী হয়। তিনি ৩২ বছর দোর্দণ্ড প্রতাপে শাসন চালিয়ে যান।
ইমাম ইবনে তাইমিয়া ছিলেন আসলে এই আল মালিকুন নাসের কালাউনের সমসাময়িক। তাঁরই আমলে ইমাম তাঁর তাত্ত্বিক ও সংস্কারমূলক কার্যাবলী শুরু করেন। এই সুলতান অনেকটা আল মালিকুয যাহির বেইবারসের যুগ ফিরিয়ে এনেছিলেন। বেইবারসের ন্যায় তিনিও অনেক উন্নত গুণের অধিকারী ছিলেন। মুসলমানদের মধ্যে আবার জিহাদি প্রেরণা সৃষ্টি করেন। তাতারীদের তিনি শোচনীয়ভাবে পরাজিত করে ইসলামের ইতিহাসে গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায়ের সংযোজন করেন।
সমাজে তুর্কী ও তাতারীদের প্রভাব
হিজরি অষ্টম শতকে ইমাম তাকীউদ্দীন ইবনে তাইমিয়া রহমতুল্লাহি আলাইহি যে সমাজে তাঁর সংস্কারমূলক কার্যাবলীর সূচনা করেন সে সমাজটির অনেক চরিত্রগত পরিবর্তন ঘটেছিল। শাসক সমাজ ছিলেন তুর্কী। তুর্কীরা নিজেদেরকে আরবদের চাইতে শ্রেষ্ঠ মনে করতো। সব ব্যাপারেই পায় তারা সাধারণ লোকদের থেকে নিজেদেরকে বিশিষ্ট হিসেবে চিত্রিত করতো। তাদের ভাষা ছিল তুর্কী। শুধু ইবাদতের ক্ষেত্রে এবং উলামা ও সাধারণ লোকদের সাথে যোগাযোগের সময় তারা আরবী ব্যবহার করতো।
তবে তুর্কী শাসকগণ আলেম ও সুফিদের শ্রদ্ধা করতেন, তাঁদের কথা মেনে চলতেন। মসজিদ ও মাদরাসা প্রতিষ্ঠায় উৎসাহ দেখাতে। সরকারী পদে লোক নিয়োগের ক্ষেত্রে তারা কোন বংশ বা শ্রেণীর প্রাধান্য দিতেন না। তবে শাসক সমাজ তুর্কী হবার কার স্বাভাবিকভাবেই বড় বড় সামরিক ও প্রশাসনিক দায়িত্বে তুর্কীদেরই নিযুক্তি হতো। তুর্কী ও তাতারীরাই ছিল বড় বড় জমিদার ও জায়গীরদার।
অন্যদিকে আবার শহরের অধিবাসীদের এক বিরাট অংশ ছিল তাতারী বংশোদ্ভূত। সাইফুদ্দীন তাতার, যাহের বেইবারস, নাসেরুদ্দীন কালাউন প্রমুখ তুর্কী বাদশাহগণ তাতারীদের সাথে যেসব যুদ্ধ করেছিলেন তাতে অসংখ্য তাতারী গ্রেফতার হয়। এই তাতারীরা পরবর্তীকালে ইসলাম গ্রহণ করে সিরিয়া ও মিসরে স্থায়ীভাবে বসবাস করতে থাকে। ঐতিহাসিক মিসরীয় বর্ণনা মতে যাহের বেইবারসের ময় মিসর ও সিরিয়ায় তাতারীদের সংখ্যা ছিল প্রচুর। তাদের রীতিনীতি ও আচার আচরণ সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে। তারা ইসলাম গ্রহণ করলেও নিজেদের বহু রীতি ও আচার অক্ষুণ্ণ রেখেছিল। নিজেদের জাতীয় বৈশিষ্ট্য তারা বজায় রেখেছিল। আসলে নওমুসলিম ইসলাম গ্রহণ করার পর নিজেদের অতীত আচার আচর, সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্য এমনকি জাহেলী আকীদা বিশ্বাস পুরোপুরি বিসর্জন দিয়েছে এবং জাহেলিয়াতের সবকিছু বাদ দিয়ে ইসলামকে শতকরা একশোভাগে গ্রহণ করেছে এর দৃষ্টান্ত ইতিহাসে বিরল। অবশ্য এটা ছিল একমাত্র রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবায়ে কেরামের বৈশিষ্ট্য। তাঁরা ইসলাম গ্রহণ করার পর তাঁদের জীবনধারা, চিন্তা আকীদা, আচার আচরণ সবকিছুকেই আল্লাহ ও রসূলের নির্দেশ অনুযায়ী পুনর্গঠিত করেন। জাতীয় ও গোত্রীয় বৈশিষ্ট্যের কোন তোয়াক্কাই তাঁরা করেননি। তাঁরা আল্লাহ ও রসুল যা হুকুম দিয়েছেন তাই করেছেন। আল্লাহ ও রসুল যেভাবে জীবন যাপন করতে বলেছেন সেভাবে জীবন যাপন করেছেন। তাঁদের জীবনে ইসলাম ও জাহেলিয়াতের সহ অবস্থান ছিল না। সেখানে শুধু ইসলামই ইসলাম ছিল। জাহেলিয়াত সেখান থেকে চির বিদায় নিয়েছিল। তাঁদের অবস্থা দেখে মনে হতো ইসলামের মধ্যে তাদের পুনর্জন্ম হয়েছে।
তবে এ তাতারী ও তুর্কীদের দোষারোপ করা আমাদের উদ্দেশ্য নয়। কারণ তারা যে সময় ইসলামে প্রবেশ করেছিল সে সময়কার সমাজে পূর্ণাঙ্গ ইসলাম অনুপস্থিত ছিল। যে সমাজে ইসলামী শিক্ষা ও অনুশীলনের পূর্ণাঙ্গ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত ছিল না এবং নবাগতদের গ্রহণ করে তাদের জীবন ধারাকে সম্পূর্ণ পরিবর্তিত করে ফেলবে এবং নিজেদের সমস্ত আকীদা, বিশ্বাস, জাতীয় বৈশিষ্ট্য ও আচার আচরণ ত্যাগ করে স্বতঃস্ফূর্তভাবে খাঁটি মুসলমানে পরিণত হবে, একথা শুধু কল্পনাই করা যেতে পারে। বাস্তবে এর সাক্ষাত পাওয়া কোনক্রমেই সম্ভবপর নয়। তাই দেখা যায়, এই তুর্কী ও তাতারী বংশোদ্ভূত মুসলমানদের জীবনে ইসলাম ও জাহেলিয়াতের সহাবস্থান। পরবর্তীকালে বিশ্ব ইসলামের ইতিহাসে এর দুষ্ট প্রভাব ও অনিষ্টকারিতা দেখা যায় সুস্পষ্ট। ঐতিহাসিক মিকরিযূ তাতারী মুসলমানদের সম্পর্কে লিখেছেনঃ এই তাতারীরা শিক্ষালাভ করেছিল দারুল ইসলামে। তারা ভালোভাবে কুরআন শিখেছিল ইসলামর বিধান ও আইন কানুনগুলোও তারা পাকাপোক্তভাবে শিখে নিয়েছিল। কিন্তু তাদের জীবন ছিল হক ও বাতিলের সম্বিত রূপ। সেখানে যেমন ভালে জিনিস ছিল তেমনি তার পাশাপাশি ছিল খারাপ জিনিসও। তারা নিজেদের দীনি বিষয়াবলী যেমন নামায, রোযা, যাকাত, হজ্ব, আওকাফ, এতিমদের বিষয়াবলী, স্বামী স্ত্রীর বিরোধ, ঋণ বিষয়ক বিবাদ প্রভৃতি বিষয় কাজীর হাতে ন্যস্ত করতো। কিন্তু নিজেদের ব্যক্তিগত ও প্রাইভেট বিষয়াবলীতে চেংগীজী আচরণ ও ঐতিহ্য এবং আসসিয়অসার (তাতারী আইন)অনুসারী হতো। তারা নিজেদের জন্য হাজেব নামে একজন শাসক নিযুক্ত করতো। এই হাজেবরা তাদের দৈনন্দিন ঘটনাবলীতে সিদ্ধান্ত দিতো, শক্তিশালীদেরকে শৃঙ্খলা ও আইনের পাবন্দ রাখতো এবং আসসিয়াসা অনুযায়ী দুর্বলদেরকে তাদের অধিকার দান করতো। অনুরূপভাবে বড় বড় তাতারী ব্যবসায়ীদের বিষয়াবলীর ফায়সালাও আসসিয়াসা অনুযায়ী হতো। জায়গীর ও জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধে এই জাতীয় আইনের মাধ্যমেই তারা ফায়সালা করতো। এই তুর্কী বংশোদ্ভূত আজমী ও তাতারী নও মুসলিমদের চরিত্র, আচার আচরণ, সংস্কৃতি ও জীবন ধারার প্রভাব প্রাচীন আরব বংশোদ্ভূত ও অন্যান্য মুসলিম জনবসতির উপর পড়া অত্যন্ত স্বাভাবিক ছিল। ক্রুসেড যুদ্ধের ফলশ্রুতিতে যেমন দেখা যায় এশিয় ও ইউরোপীয় সভ্যতা সংস্কৃতির মিলন ও মিশ্রণ তেমনি তাতারীদের বিজয়ী ও বিজিত হওয়া উভয় অবস্থাই মুসলিম ও তাতারী সংস্কৃতির মিশ্রণের পথ উন্মুক্ত করে। যুদ্ধের ময়দানে জয় পরাজয়ের ন্যায় সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রেও জয় পরাজয় ঘটে এবংয় একে অন্যের প্রভাব গ্রহণ করে।
এই তাতারী প্রভাব গ্রহণ মুসলমান সমাজের জন্য মোটেই সুখকর হয়নি। বিশেষ করে তারা আসসিয়াসার মাধ্যমে যেভাবে ব্যক্তিগত বিষয়াবলীকে ইসলামী বিধি বিধানের আওতা বহির্ভূত রাখার চেষ্টা করে, তা সেকালের মুসলিম সমাজের ক্ষতির পসরাই বৃদ্ধি করেছিল মাত্র। কারণ খিলাফতে রাশেদার অবসানের পর মূল রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনা দীনের বাঁধনমুক্ত হবার প্রচেষ্টায় নিরত হয়। সাতশো বছরের একনায়কত্বমূলক রাজতান্ত্রিক শাসন দীন ও রাষ্ট্রের পৃথকীকরনের ব্যাপারটিকে অনেক দূর এগিয়ে নিয়ে গিয়েছিল। এ সময় তাতারীদের আসসিয়াসার ব্যবস্থাপনা মুসলমানদের দীন ও রাষ্ট্রের এই পৃথকীকরনের ব্যাপারটিকে আরও ত্বরান্বিত করেছিল। তাই তাতারীদের মুসলিম সমাজভূক্তি একদিকে যেমন মুসলমানদের রাজনৈতিক শক্তি বৃদ্ধি করেছিল তেমনি অন্যদিকে দীনি ক্ষেত্রে তাদের ক্ষতি বৃদ্ধিই করেছিল। ইসলামী সমাজে গোমরাহির পরিমাণ বেড়ে গিয়েছিল। এই গোমরাহি থেকে ইসলামী সমাজকে মুক্ত করার জন্য ইমাম তাকীউদ্দীন ইবনে তাইমিয়ার মতো মুজাদ্দিদের প্রয়োজন অপরিহার্য্য হয়ে উঠেছিল।