জামায়াত অনলাইন লাইব্রেরি
  • নীড়
  • সংক্ষিপ্ত পরিচিতি
  • বিভাগ ভিত্তিক
    • আল কুরআন
    • আল হাদিস
    • ফিকাহ
    • ঈমান
    • ইসলাম
    • পারিবারিক জীবন ও সামাজিক সম্পর্ক
    • আন্দোলন ও সংগঠন
    • সীরাত ও ইতিহাস
    • সীরাতে সাহাবা
    • মহিলাদের বিশেষ বই
    • রাজনীতি
    • অর্থনীতি
    • বিবিধ
  • রুকন সিলেবাস
    • রুকন সিলেবাস (স্বল্প শিক্ষিত)
    • রুকন সিলেবাস (শিক্ষিত)
  • কর্মী সিলেবাস
  • বাৎসরিক পাঠ্যসূচি
    • বাৎসরিক পাঠ্যসূচি (শিক্ষিত)
    • বাৎসরিক পাঠ্যসূচি (স্বল্প শিক্ষিত)
  • উচ্চতর অধ্যয়ন
  • অডিও বই
  • অন্যান্য
    • দারসুল কুরআন
    • দারসুল হাদিস
    • আলোচনা নোট
    • বইনোট
    • প্রবন্ধ
    • কবিতা
    • বুলেটিন
    • স্মারক
    • ম্যাগাজিন
    • এপস
    • রিপোর্ট বই
    • ছাত্রী সিলেবাস
কোন ফলাফল নেই
সকল ফলাফল দেখুন
  • নীড়
  • সংক্ষিপ্ত পরিচিতি
  • বিভাগ ভিত্তিক
    • আল কুরআন
    • আল হাদিস
    • ফিকাহ
    • ঈমান
    • ইসলাম
    • পারিবারিক জীবন ও সামাজিক সম্পর্ক
    • আন্দোলন ও সংগঠন
    • সীরাত ও ইতিহাস
    • সীরাতে সাহাবা
    • মহিলাদের বিশেষ বই
    • রাজনীতি
    • অর্থনীতি
    • বিবিধ
  • রুকন সিলেবাস
    • রুকন সিলেবাস (স্বল্প শিক্ষিত)
    • রুকন সিলেবাস (শিক্ষিত)
  • কর্মী সিলেবাস
  • বাৎসরিক পাঠ্যসূচি
    • বাৎসরিক পাঠ্যসূচি (শিক্ষিত)
    • বাৎসরিক পাঠ্যসূচি (স্বল্প শিক্ষিত)
  • উচ্চতর অধ্যয়ন
  • অডিও বই
  • অন্যান্য
    • দারসুল কুরআন
    • দারসুল হাদিস
    • আলোচনা নোট
    • বইনোট
    • প্রবন্ধ
    • কবিতা
    • বুলেটিন
    • স্মারক
    • ম্যাগাজিন
    • এপস
    • রিপোর্ট বই
    • ছাত্রী সিলেবাস
জামায়াত অনলাইন লাইব্রেরি

শরীয়তী রাষ্ট্রব্যবস্থা

অন্তর্গতঃ uncategorized
Share on FacebookShare on Twitter

[পঁচিশ]

সূচীপত্র

  1. আমাদের কথা
  2. লেখকের ভূমিকা
  3. অনুবাদকের কথা
  4. ইমাম ইবনে তাইমিয়া (র)-এর সংক্ষিপ্ত জীবনী
  5. শরীয়তী শাসন কর্তৃত্বের দায়িত্ব ও কর্তব্য
  6. ক্ষমতা ও শাসন কর্তৃত্বের যোগ্যতা
  7. জনদরদি সাহসী নিষ্ঠাবান নেতৃত্ব
  8. ইসলামে রাষ্ট্রীয় নেতৃত্ব-কর্তৃত্বের লক্ষ্যঃ
  9. মাল-সম্পদ, ঋণ, যৌথ ব্যবস্থা, মুজারাবাত
  10. রাষ্ট্রীয় সম্পদ তিন প্রকার
  11. যাকাতের খাতসমূহ
  12. গণীমতের মালের আলোচনা এবং
  13. সরকারী আয়ের খাতসমূহ  
  14. ন্যায় বিচারঃ অপরাধের খোদায়ী দন্ডবিধি  
  15. ডাকাত-ছিনতাইকারীদের সাজা এবং যুদ্ধকালীন
  16. সরকার বা রাষ্ট্র প্রধান হত্যাকারীদের শাস্তি প্রসঙ্গ
  17. সাক্ষ্য কিংবা নিজ স্বীকারোক্তির ভিত্তিতে
  18. ব্যভিচারী ও সমকামীদের প্রস্তরাঘাতে সাজা
  19. মদ্যপায়ীদের সাজা
  20. অপবাদের শাস্তি
  21. যেসব অপরাধের সাজা অনির্ধারিত
  22. যে ধরনের কোড়া দ্বারা অপরাধীকে শাস্তি দেবে
  23. শাস্তি ও শাস্তি প্রাপ্তদের শ্রেণী বিভাগ
  24. ফরয–ওয়াজিবের উপর আমল ও হারাম থেকে রক্ষার জন্যেই শাস্তি
  25. অশ্লীলতা, হত্যাকাণ্ড, নিকটাত্মীয়, দুর্বল, পর সম্পদ জবর দখল থেকে দূরে থাকা
  26. জখমের কিসাস ও অঙ্গপ্রত্যঙ্গের কিসাস
  27. বিভিন্ন ধরনের মানহানির কিসাস
  28. যিনা–ব্যভিচারের অপবাদ দানকারীর শাস্তি প্রসঙ্গে
  29. স্বামী–স্ত্রীর পারস্পরিক সম্পর্ক ও অধিকার
  30. ধন–সম্পদের মীমাংসায় ন্যায়দণ্ড বজায় রাখা
  31. দেশ পরিচালনায় পরামর্শভিত্তিক ব্যবস্থা

স্বামী–স্ত্রীর পারস্পরিক সম্পর্ক ও অধিকার

স্বামী-স্ত্রীর সঙ্গমাধিকার, স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক, মোহর, খোরপোষ ও সাংসারিক বিষায়াদির পারস্পরিক হক এই পরিচ্ছেদের বিষয় বস্তু।

দাম্পত্য জীবনে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে পারস্পরিক সুসম্পর্ক বজায় রাখা এবং একে অপরের হক বা অধিকার যথাযথ আদায়কল্পে আল্লাহর হুকুমের উপর আমল করা উভয়ের উপর ওয়াজিব। মহান আল্লাহর বাণী হচ্ছে:

(আরবী***********)

“অতঃপর স্ত্রীকে হয় বিধিমত (নিজ সান্নিধ্যে) রেখে দেবে অথবা অথবা সদয়ভাবে মুক্ত করে দেবে।” (সূরা বাকারা: ২২৯)

স্বামী-স্ত্রীর উভয়ের উপর ফরয হলো- দাম্পত্য জীবনে খুশীমনে, প্রফুল্লচিত্তে একে অপরের অধিকার যথাযথ আদায়ের যত্নবান হওয়া। স্বামীর সম্পত্তিতে স্ত্রীর হক রয়েছে। স্বামীর জীবদ্দশায় তা হলো, মোহর ও খোরপোষ। দৈহিক অধিকার হলো, স্বামী বৈধ ও বিশুদ্ধ পন্থায় স্ত্রীর যৌন চাহিদা মিটাবে, তাকে যথাযথ ব্যবহার করবে। এ ব্যাপারে স্বামী যদি স্ত্রীর সাথে ‘ঈলা’ তথা- ‘মিল করবে না’ বলে কসম খায় তাহলে ঐ অবস্থায় সর্বস্তরের আলিমগণের সর্বসম্মত ঐকমত্যে স্ত্রী বিবাহ বিচ্ছেদের অধিকার পাবে। স্বামী যদি কর্তৃত পুরুষাঙ্গ বিশিষ্ট অথবা নপুসংসক হয় এবং সঙ্গমে অক্ষম হয়, তবুও স্ত্রীর সাথে সঙ্গম একই বিছানায় অবস্থান করা তার উপর ওয়াজি ব। কেউ কেউ বলেছেন, এর কারণ যদি জন্মগত হয় তার উপর সঙ্গম করা ওয়াজিব ন?য়। কিন্তু বিশুদ্ধ মত এটা যে, সঙ্গম করা ওয়াজিব। কুরআন হাদীস ও শরীয়তের মৌল নীতি (****) এ মতেরই সমর্থনকারী। নবী করীম (স) আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রা)-কে দেখলেন, তিনি বেশী পরিমাণে রোযা রাখেন এবং নামাযে অধিক সময় ব্যয় করেন, তখন হুযুর (স) বলেন যে, (আরবী***********) “তোমার উপর তোমার স্ত্রীরও হক রয়েছে।”

সুতরাং সঙ্গম করা ওয়াজিব। কিন্তু কতদিন অন্তর এ সঙ্গম করতে হবে? এ ব্যাপারে মতভেদ রয়েছে। কেউ বলেছেন, অন্তত চার মাস অন্তর একবার সঙ্গম করা ওয়াজিব। কেউ বলেছৈন, না- বরং স্বামীর শক্তি এবং স্ত্রীর চাহিদা অনুপাতে ওয়াজিব, যেভাবে ওয়াজিব হয় খোরপোষ। বস্তুত এটাই হলে সঙ্গত মীমাংসা। পক্ষান্তরে স্ত্রীর উপরও স্বামীর অধিকার রয়েছে। অর্থাৎ যখন ইচ্ছা সে স্ত্রী ব্যবহর করতে পারবে। কিন্তু শর্ত হলো, স্ত্রীর যেন কোন ক্ষতি না হয় কিংবা অন্য কোন ওয়াজিব হক আদায় করতে অক্ষম না হয়। স্বামীকে তার মনে তৃপ্তিদায়ক মিলনের সুযোগ দেয়া স্ত্রীর কর্তব্য। অধিকন্তু স্বামীর অনুমতি কিংবা শরীয়তের অনুমতি ছাড়া স্ত্রীর স্বামীগৃহ ত্যাগ করা নিষিদ্ধ।

সাংসারিক কাজ-কর্মের ব্যাপারে ফকহীদের মতভেদ রয়েছে। যেমন বিছনা বিছানো, ঘরদোর ঝাড়ু দেয়া, ঘরবাড়ী পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা, ভাত-তরকারী ও রান্না-বান্না করা ইত্যাদির ব্যাপারে ইসলামী আইনবিদদের মধ্যে মতবিরোধ রয়েছে। কারও মতে স্ত্রীর উপর এসব কাজ করা ওয়াজিব। আবার কারও মতে ওয়াজিব নয়। অপর এক শ্রেণী বলেন, মধ্যম ধরনের সেবা করাটাই স্ত্রীর ওপর ওয়াজিব।

[ছাব্বিশ]

ধন–সম্পদের মীমাংসায় ন্যায়দণ্ড বজায় রাখা

ধন-সম্পদের মীমাংসা ন্যায়ের ভিত্তিতে করতে হবে, আচার-ব্যবহারে ন্যায়-নীতি অবলম্বন সুখ-শান্তির মূলমন্ত্র এবং দুনিয়া ও আখিরাত এ দ্বারাই পরিশুদ্ধ হয়।

আল্লাহ এবং তাঁর রাসূল(স)-এর নির্দেশ অনুসারে ধন-সম্পদের মীমাংসা ন্যায়-নীতির ভিত্তিতেই করতে হবে। যেমন, ওয়ারিশদের মধ্যে সুন্নাহর আলোকে মীরাস বন্টন করা কর্তব্য। অবশ্য যদিও এর কোন মাআলাতে মতভেদ রয়েছে। এমনিভাবে ণেদেন, আদান-প্রদানের ক্ষেত্রে যথা- ক্রয়-বিক্রয়, ইজারা, উকিল নিযুক্ত, শরীকী কারবার, হেবা, ওয়াক্‌ফ, ওয়াসীয়ত ইত্যাদির ন্যায়-ইনসাফের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত ফয়সালা করা ওয়াজিব। আর যে সকল লেনদেনে ক্রয়-বিক্রয় এবং হস্তগত করা শর্ত, সেসব ক্ষেত্রে ন্যায়-ইনসাফ কায়েম করা ওয়াজিব।কেননা ইনসাফের উপর জগতের স্থিতি নির্ভরশীল। এর অবর্তমানে ইহজগত ও পরজগতের স্বচ্ছতা- পরিশুদ্ধতা আসতেই পারে না। এ সকল ক্ষেত্রে ন্যায় ইনসাফের প্রয়োজনীযতা বিবেকবান মাত্রই বুঝতে সক্ষম। যেমন, ক্রয় করা বস্তুর মূল্য সঙ্গে সঙ্গে আদায় করা খরিদদারের উপর ওয়াজিব। অপর পক্ষে বিক্রেতার ওয়াজিব হলো বিক্রিত  মাল ক্রেতার হাতে সোপর্দ করে দেয়া। আর ওযনে কম-বেশী করা সম্পূর্ণ হারাম। কেনা-বেচার ক্ষেতে সত্য বলা, সটিক বিবরণ দেয়া ওয়াজিব।  পক্ষান্তরে মিথ্যা বলা, খিয়ানত করা, বিশ্বাস ভঙ্গ করা, ভেজাল দেয়া ও ধোঁকা দেয়া হারাম। ঋণ আদায় করা, ঋণদাতার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা ও তার প্রশংসা করা ওয়াজিব।

যে সমস্ত্র আচার-আচরণ, ব্যবহার কুরআন হাদীস দ্বারা নিষিদ্ধ, সাধারণত সেগুলোতে ন্যায-নীতি বা ইনসাফ কার্যকর হয় না, নিষিদ্ধ কর্মে কম-বেশী জুলুম ও অন্যায় হয়ে থঅকে। যেমন- অন্যায় আয়-উপার্জন করা, যথা, সুদ, জুয়াখেলা। এগুলো নবী করীম(স) কর্তৃক নিষিদ্ধ। সুতরাং সকল প্রকার জুয়া ও সুদ হারাম। অধিকন্তু ধোঁকা ও শঠতার মাধ্যমে বেচা-কেনা হারাম। উড়ন্তু পাখী (না ধরেই) বিক্রি করা, পানির নীচের মাছ না ধরেই বিক্রি করা, মেয়াদ ঠিক না করে বিক্রি করা, আন্দাজ-অনুমানে কোন জিনিস বিক্রি করা, খাঁটি বলে ভেজাল মাল নষ্ট মাল বিক্রি করা, খাওয়ার যোগ্য হওয়ার পূর্বেই ফল বিক্রি করা, নাজায়েয পন্থায় শরীকী কারবার করা, যেসব লেন-দেনেরফলে মুসলমানদের মধ্যে ঝগড়ার সৃষ্টি হয়, আর যাতে কোন না কোন প্রকারের ক্ষতিকর বিষয় বর্তমান থাকে, সন্দেহজনক বেচা-কেনা, আর সেসব বেচা-কেনা, যেগুলো কিছু লোক বৈধ ও ন্যায়ানুগ মনে করে আর কিছু লোক অন্যায় ও জুলুম মনে করে, এসব বেচা-কেনা ফাসেদ। রাষ্ট্রীয়ভাবে এগুলো বাতিল হওয়া ওয়াজিব ও জরুরী। তাই এগুলো থেকে বেঁচে থাকা অপরিহার্য। আল্লাহ বলেন:

(আরবী************)

“যদি তোমরা আল্লাহ এবং পরকালে বিশ্বাস কর, তবে তোমরা আল্লাহর আনুগত্য কর, রাসূল এবং তোমাদের মধ্যে যারা ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত তাদের আনুগত্য কর, কোন বিষয়ে তোমাদের মধ্যে মতভেদ ঘটলে সে বিষয়ে আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলের নীতি আদর্শের শরণাপন্ন হও। এটাই উত্তম এবং ব্যাখ্যায় সুন্দরতর।” (সূরা নিসা: ৫৯)

এক্ষেত্রে মূল নীতি হলো যেসব লেনদেন কাজ-কারবার কুরআন-সুন্নাহ অনুযায়ী হারাম সেগুলো হারাম। আর যে ইবাদত শরীয়তসম্মত ও কুরআন হাদীস দ্বারা প্রমাণিত সেটি ইবাদত। মহান আল্লাহ সেসব লোকের নিন্দা করেছেন, যারা এমন জিনিস নিজের উপর হারাম করে নিয়েছিল, যা প্রকৃতপক্ষে আল্লাহ হারাম করেননি। পক্ষান্তরে তারা এমন সব বস্তু নিজেদের জন্য জায়েয ও বৈধ করে নিয়েছিল, যেগুলো জায়েয হওয়া শরীয়তসম্মত কোন দলীল প্রমাণ ছিল না।

(আরবী************)

“হে আল্লাহ! আপনি যেই বস্তু হালাল করেছেন, সেইটি হালাল হিসাবে গণ্য করার সামর্থ্য আমাদের দান করুন। তেমনি আপনি যা হারাম করেছেন, সেইটি হারাম হিসাবে গণ্য করার তাওফীক আমাদের প্রদান করুন।”

আর তওফীক দিন খোদা সেই বিধি ব্যবস্থা মেনে চলার, যা তুমি বিধিবদ্ধ করে দিয়েছ।

[সাতাইশ]

দেশ পরিচালনায় পরামর্শভিত্তিক ব্যবস্থা

আমীর, ক্ষমতাসীন ব্যক্তি ও শাসনকর্তার জন্য পরামর্শ গ্রহণ করা জরুরী। আল্লাহ পাক স্বীয় রাসূল (স)-কে হুকুম দিয়েছেন, (আরবী************) “তাদের সাথে গুরুত্বপূর্ণ ব ্যাপারে পরামর্শ করো।” যারা পরামর্শ গ্রহণ করে, আল্লাহ তাদের প্রশংসা করে: (আরবী************)

“ক্ষমতাসীন ব্যক্তিবর্গের পরস্পর পরামর্শ করা অপরিহার্য।”

স্বীয় রাসূল (স)-কে আল্লাহ নির্দেশ দিয়েছেন: (আরবী************)

“তুমি তাদেরকে ক্ষমা কর, তাদের জন্য মাগফেরাতের দু’আ কর এবং কাজে কর্মে তাদের সাথে পরামর্শ কর, আর কোন বিষয়ে তোমার ‘মত’ যদি সুদৃঢ় হয়ে যায়, তাহলে আল্লাহর উপর নির্ভর করবে। আল্লাহর উপর নির্ভরকারীদেরকে আল্লাহ ভালবাসেন।” (সূরা আলে ইমরান: ১৫৯)

হযরত আবু হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন: (আরবী************)

“স্বীয় সাহাবীগণের সাথে রাসুলুল্লাহ (স)-এর চাইতে অধিক পরামর্শ গ্রহণকারী দ্বিতীয় কেউ ছিলেন না।”

বলা হয়েছে, সাহাবা কিরাম এর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যেই রাসূলুল্লাহ (স)-কে পরামর্শ গ্রহণের হুকুম দেয়া হয়েছে। তদুপরি এটাও উদ্দেশ্য ছিল যে, পরবর্তী কালে যেন রাসূলুল্লাহ (স)-এর অনুসরণে পরামর্শ গ্রহণের ব্যাপারে একটি নীতিতে পরিণত হয়। ওহীর মাধ্যমে যে বিষয়টির মীমাংসা হয়নি, যেমন, যুদ্ধ-বিগ্রহ এবং খুটিনাটি বিষয়, সেক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত গ্রহণে মানুষের মতামত নেয়া জরুরী। স্বয়ং নবী করীম(স) যে ক্ষেত্রে পরামর্শ নিতেন, সে ক্ষেত্রে অন্যান্যরা তো আরো অধিক পরিমাণে পরামর্শের মুখাপেক্ষী। খোদ আল্লাহ (মানব সৃষ্টির প্রাক্কালে ফেরেশতাদের মতামত গ্রহণের ঘটনা দ্বারা বান্দাদেরও অনুরূপ করার দৃষ্টান্ত দেখিয়েছেন। যদিও তাঁর পরামর্শের দরকার হয় না) আল্লাহ পরামর্শ গ্রহণকারীদের প্রশংসা করেছেন। কাজেই ইরশাদ হচ্ছে:

(আরবী************)

“আল্লাহর নিকট যা আছে তা অতি উত্তম ও স্থায়ী। ঐ সমস্ত মুমিন-মুসলমান আর যারা তাদের পালনকর্তার উপর নির্ভর করে, সেই উত্তম ও স্থায়ী উপভোগ্য বস্তু তাদেরই জন্য। আর যারা গুরুতর পাপ ও অশ্লীল কার্য হতে বেঁচে থাকে এবং ক্রোধাবিষ্ট হয়েও অপরকে ক্ষমা করে দেয়, আর যারা তাদের পালনকর্তার আহ্বানে সাড়া দেয়, সালাত কায়েম করে এবং নিজেদের মধ্যে পরামর্শের মাধ্যমে কর্ম সম্পাদন করে এবং আমার প্রদত্ত জীবনোপকরণ থেকে তারা ব্যয় করে (তারাও ঐ উত্তম ও স্থায়ী উপভোগ্য বস্তুর অধিকারী)।” (সূরা শূরা: ৩৬-৩৮)

‘উলিল আমর’ তথা ক্ষমতাবান কর্তৃপক্ষ বা নেতা। পরামর্শ গ্রহণের মাধ্যমে এবং কুরআন, হাদীস ও ইজমা দ্বারা কোনো সিদ্ধান্তে উপনীত হলে, তখন এর বিপরীতে কারো অনুসরণ করা নিষেধ। গৃহীত সিদ্ধান্ত মেনে নেওয়া ও সে মুতাবিক কাজ করা ‘উলিল আমর’ এর জন্যও ফরয হয়ে দাঁড়ায়। দ্বীন ও দুনিয়ায় ছোট বড় সকল সমস্যা সম্পর্কেই একই নীতি। এ ক্ষেত্রে অন্য কারো অনুসরণ করা জায়েয নয়। এ প্রসঙ্গে আল্লাহর নির্দেশ হলো:

(আরবী************)

“হে ঈমানদারগণ, তোমরা আল্লাহর আনুগত্য কর এবং রাসূলের আনুগত্য করো আর তোমাদের মধ্যে যারা সামগ্রিক দায়িত্বসম্পন্ন সেসব নেতা-কর্তৃপক্ষের আনুগত্য কর।” (সূরা নিসা: ৫৯)

কিন্তু সৃষ্ট কোন সমস্যা সম্পর্কে যদি মুসলমানদের পরস্পরের মধ্যে মতবিরোধ দেখা দেয়, তবে এহেন পরিস্থিতিতে জনগণের কাছ থেকে পরামর্শ আহ্বান করা বিশেষ জরুরী। সুতরাং যে রায় ও যে পরামর্শ কুরআন-হাদীসের সাথে সামঞ্জস্যশীল ও নিকটবর্তী, তার উপরই আমল করবে। আল্লাহ পাকের হুকুম হচ্ছে:

(আরবী************)

কিন্তু সৃষ্ট কোন সমস্যা সম্পর্কে যদি মুসলমানদের পরস্পরের মধ্যে মতবিরোধ দেখা দেয়, তবে এহেন পরিস্থিতিতে  জনগণের কাছ থেকে পরামর্শ আহ্বান করা বিশেষ জরুরী। সুতরাং যে রায় ও যে পরামর্শ কুরআন-হাদীসের সাথে সামঞ্জস্যশীল ও নিকটবর্তী, তার উপরই আমল করবে। আল্লাহ পাকের হুকুম হচ্ছে:

(আরবী************)

“কোন বিষয়ে তোমাদের মধ্যে মতবিরোধ দেখা দিলে সে বিষয়ে আল্লাহ ও রাসূলের শরণাপন্ন হও। যদি তোমরা আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাসী হও। এটাই ভাল এবং পরিণতির দিক থেকেও উত্তম।” (সূরা নিসা: ৫৯)

“উলিল আমর” তথা ক্ষমতাসীন নেতৃত্ব দুই প্রকার। (১) শাসকবর্গ, (২) আলিমগণ। এঁরা যদি সৎকর্মশীল হন, তবে জনগণও সৎকর্মশীল হয়ে যাবে।কাজেই এ দু’শ্রেণীরই দায়িত্ব হলো- যাবতীয কাজ ও কথায় যাচাই করা- অনুসন্ধান করা। কুরআন-হাদীসের আলোকে সমস্যার সুষ্পষ্ট সমাধান পাওয়া গেলে তার উপর আমল করা ওয়াজিব। কঠিন কোন সমস্যা দেখা দিলে গভীর দৃষ্টিতে, অভিনিবেশ সহকারে উদ্ভূত সমস্যার চুলচেরা বিচার-বিশ্লেষণ করতে হবে যে, সিদ্ধান্ত দেয়ার ক্ষেত্রে আল্লাহ ও রাসূল (স)-এর অনুসরণ কি প্রকারে সম্ভব?

কুরআন-সুন্নাহর ইঙ্গিত কোন্‌ দিকে, সেটা লক্ষ্য করতে হবে। অত্যন্ত সতর্কতার সাথে বিচার-বিবেচনার পার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে। সময়ের স্বল্পতা, যাচাইকারীর দুর্লবাত, বিপরীতমুখী দলীল-প্রমাণ কিংবা অন্য কোন কারণে ত্বরিত সমাধান সম্ভব না হলে তবে এ ক্ষেত্রে ক্ষমতাবানদের কর্তব্য হলো- এমন ব্যক্তির অনুসরণ করা, যার প্রজ্ঞা, দূরদর্শিতা ও দীনদারী সর্বজন স্বীকৃত। এটাই হলো বিশুদ্ধ সমাধান।

এও বলা হয়েছে যে, কারো ‘তাকলীদ’ বা অনুসরণ জায়েয নয়।” উক্ত তিন পন্থাই ইমাম আহমদ প্রমুখের মযহাবে বর্ণিত রয়েছে। আর বিচারপতি ও ক্ষমতাসীনদের যে সকল গুণাবলী ও চরিত্রগত বৈশিষ্ট্য থাকা অপরিহার্য, সেগুলো আছে কিনা তাও লক্ষ্য করতে হবে। নামায-জিহাদ ইত্যাদি সকল ইবাদতে একই হুকুম যে, শক্তি-সামর্থ্য অনুযায়ী আমল ও কাজ-কর্ম করতে হবে। যদি সংশ্লিষ্টদের শক্তিতে না কুলায় এবং অপারগ হয়, তাহলে শক্তির বাইরে কাউকে হুকুম দেয়া আল্লাহর নীতি নয়।

এই একই মূলনীতির উপর তাহারাত-পাক-পবিত্রতা বিষয়াদিও প্রতিষ্ঠিত। যথা- প্রথমত  পানি দ্বারা পবিত্রতা হাসিল করার বিধান। কিন্তু পানি দুষ্প্রাপ্য হলে কিংবা ব্যবহারে ক্ষতির আশংকা থাকলে- যেমন, শীত অতি প্রচণ্ড ও তীব্র অথবা পানি ব্যবহার করাতে জখম বৃদ্ধি পাওয়ার আশংকা থাকলে, এমতাবস্থায় তাইয়াম্মুম দ্বারা পবিত্রতা হাসিলের বিধান রয়েছে। এ পরিপ্রেক্ষিতেই নবী করীম (স) ইমরান ইবনে হুসাইন (রা)-কে লক্ষ্য করে বলেছিলেন:

(আরবী************)

“নামায দাঁড়িয়ে পড়, যদি সম্ভব না হয় বসে বসে পড়। যদি বসারও সামর্থ্য না থাকে, তবে শুয়ে শুয়ে পড়।”

এমনিভাবে আল্লাহ পাক নামায যথাসময়ে আদায় করার হুকুম দিয়েছেন- যেভাবে সে অবস্থায় সম্ভব হয়। এ প্রসঙ্গে ইরশাদ হয়েছে:

(আরবী************)

“তোমরা সালাতের প্রতি যত্নবান হবে, বিশেষত মধ্যবর্তী সালাতের এবঙ আল্লাহর উদ্দেশ্যে তোমরা বিনীতভাবে দাঁড়াবে। যদি তোমরা দুশমনের আশংকা কর পদচারী অথবা আরোহী যে অবস্থায় হউক না কেন নামায পড়; আর যখন তোমরা নিরাপদ বোধ কর তবে আল্লাহকে স্মরণ করবে যেভাবে তিনি তোমাদেরকে শিক্ষা দিয়েছেঠন, যা তোমরা জানতে না।” (সূরা বাকারা: ২৩৮-২৩৯)

মহা আল্লাহ নামাকযকে নিরাপদ, ভীত, সুস্থ, রুগ্ন, ধনী, গরীব, মুকীম ও মুসাফির সকলের উপর ফরয করেছেন, যা কুরআন হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। অনুরূপভাবে পাক-পবিত্রতা, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্তা, সতর ঢাকা ও কেবলামুখী হওয়া ইত্যাদি নামাযের পূর্বশর্ত হিসেবে নির্ধারণ করে দিয়েছেন। কিন্তু যে ব্যক্তি এসব শর্ত পূরণে অক্ষম, তাকে এ থেকে নিষ্কৃতি দিয়েছেন। এমনকি যদি কারো নৌকা ডুবে যায়, চোর-ডাকাতরা তার মালামাল লুটে নেয়, তার পরিধেয় বস্ত্রাদি খুলে নেয় তবে এমতাবস্থায় সে অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে বিবস্ত্র হয়েই নামায আদায় করবে। এ অবস্থায় ইমাম সকলের মাঝখানে এমনভাবে দাঁড়াবে, যেন কারো সতর দৃষ্টিতে না পড়ে। যদি কারো কেবলা জানা না থাকে, তবে জ্ঞাত হওয়ার জন্য সাধ্যানুযায়ী চেষ্টা করবে আর চূড়ান্ত প্রচেষ্টার পরই নামায আদায় করবে। কোন একটা দিক, নির্দিষ্ট করার মত কোন প্রমাণ যদি সে না পায়, তবে যেভাবে সম্ভব যেদিকে সম্ভব মুখ করে নামায আদায় করবে, যেমনিভাবে নবী করীম (স)-এর সময়কালে নামায পড়া হয়েছিল।

জিহাদ, রাষ্ট্র পরিচালনা এবং সকল ধর্মীয় বিসয়ের এ একই অবস্থা। এ পরিপ্রেক্ষিতেই মূলনীতি ঘোষণা করে কুরআনে আল্লাহ পাক ইরশাদ করেছেন:

(আরবী************)

“(হে মুসলমানগণ) সাধ্যমত তোমরা আল্লাহকে ভয় করো।” (সূরা তাগাবুন: ১৬)

আর মহানবী (স) ইরশাদ করেছেন: (আরবী************)

“আমি যখন তোমাদের প্রতি কোন কাজের হুকুম করি তখন সাধ্যানুযায়ী তোমরা তার উপর আমল কর।”

তদ্রূপ ‘খবীছ’ তথা অপবিত্র, অখাদ্র ও দোষযুক্ত খাদ্য ও পানীয় পানাহারকে মহান আল্লাহ একদিকে তো হারাম ঘোষণা করেছেন, অপরদিকে তার পাশাপাশি এও বলেছেন:

(আরবী************)

“যে অনন্যোপায় অথচ অন্যায়কারী বা সীমালংঘনকারী নয় (সে জীবন রক্খা পরিমাণ মৃত জন্তুর গোশত খেলেও) তার কোন পাপ হবে না। আল্লাহ ক্ষমাশীল পরম দয়ালূ।” (সূরা বাকারা: ১৭৩)

তিনি আরো বলেছেন: (আরবী************)

“তিনি তোমাদের জন্য তোমাদের দীনে কঠিন কোন বিধান দেননি।” (সূরা হজ্জ: ৭৮)

অন্যত্র  বলেছেন: (আরবী************)

“আল্লাহ তোমাদেরকে কষ্ট দিতে চান না।” (সূরা মায়িদা: ৬)

সুতরাং মহান আল্লাহ তাই ফরয করেছেন যা মানুষের সাধ্যের আওতাভুক্ত। পক্ষান্তরে যা ক্ষমতা ও সামর্থ্যের বাইরে তা ওয়াজিব নয়। তাই অনন্যোপায় অবস্থায় যা ব্যতীত গত্যন্তর নেই, সেগুলো হারাম করেননি।সুতরাং গুনাহ্‌র পর্যায়ে পড়ে না বান্দা যদি নিরূপায় হয়ে এমন সীমিত আকারে হারাম বস্তু ব্যবহার বা কাজ করে, তবে তার কোন গুনাহ হবে না।

[আটাইশ]

ক্ষমতা গ্রহণ ও শাসন পরিচালনা মহান দীনী কাজ

ক্ষমতা গ্রহণ, হুকুমত ও শাসন পরিচালনা দ্বীনের বৃহত্তম স্তম্ভ এবং গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব বরং দীনের অস্তিত্ব ও স্থায়িত্ব এরি সাথে সংশ্লিষ্ট।

এ পর্যায়ে নবীকরীম (স)-এর ইরশাদ হলো: (আরবী************)

“তিন ব্যক্তি সফরে বের হলে, তারা একজনকে নেতা (ইমাম) নির্বাচন করে নিবে।” (আবু দাউদ)

ক্ষমতা গ্রহণ এবং রাষ্ট্র পরিচালনা দীনের বৃহত্তম এবং গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব, বরং দীনের অস্তিত্ব ও স্থিতি এরি সাথে সংশ্লিষ্ট। কেননা মানুষের জাতীয় ও সমষ্টিগত কল্যাণ ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা ব্যতীত সম্ভব নয়। কারো কারো প্রয়োজন ও চাহিদাতো এমন যে, এর সমাধান দল বা জামা’আত ছাড়া সম্ভবই নয়। যেহেতু জামা’আত ওয়াজিব ও অপরিহার্য, কাজেই জামা’আতের জন্য আমীরবা নেতা থাকাও ওয়াজিব।

হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রা) এর সুত্রে স্বীয় মুসনাদ গ্রন্থে ইমাম আহমদ বর্ণনা করেন- রাসূলুল্লাহ (স) বলেছেন:

(আরবী************)

“তিন ব্যক্তি যদি কোন মরুপ্রান্তরে সফর করে, তবে তাদের মধ্য হতে একজনকে নিজেদের আমীল বানিয়ে নেয়া একান্ত প্রয়োজন।” (মুসনাদে আহমদ)

রাসলূল্লাহ (স) বলেন, দল যতই ক্ষুদ্র হোক, তারা একান্ত অস্থায়ী কিংবা সফররত যে কোন অবস্থাতে থাকুক, তাদের মধ্য হতে একজনকে আমীর নিযুক্ত করে নেয়া ওয়াজিব। এটা এজন্য যে, অন্যান্য সকল দলের পক্ষে যেন সতর্ক বাণীরূপে গণ্য হয় যে, ভ্রমণের উদ্দেশ্যে মাত্র তিন ব্যক্তি জমায়অতে হলেও যে ক্ষেত্রে নিজেদের আমীর বা নেতা নির্বাচন করা ওয়াজিব, সে ক্ষেত্রে অন্যান্য জামা’আতের উপর এ হুকুম কার্যকরী করা আরো অধিক প্রয়োজন। কেননা আল্লাহ পাক (****) (সৎ কাজের আদেশ) এবং (*****)  (অসৎ কাজের নিষেধ)-কে ওয়াজিব করে দিয়েছেন। আর আমীল ছাড়া অন্যদের পক্ষে এ দায়িত্ব সুষ্ঠুভাবে পালন করা সম্ভব নয়।

অনুরূপভাবে জিহাদ, ইনসাফ প্রতিষ্ঠা, হজ্জ পালন করা, জুম’আ ও দুই ঈদের নামায কায়েম করা, আর্ত-নির্যাতিতের সাহায্য, হদ কার্যকরী করা ইত্যাদি ফরয-ওয়াজিবসমূহ শক্তি, ক্ষমতা ও নেতার নেতৃত্ব ছাড়া বাস্তবায়িত করা সম্ভব নয়। এ সম্পর্কে রিওয়ায়েত করা হয়েছে: (আরবী************)

“নিশ্চয়ই (ন্যায়পরায়ণ) সুলতান বা শাসনকর্তা যমীনের বুকে আল্লাহর ছায়া স্বরূপ।”

উপরন্তু আরো বলা হয়েছে যে,  জালিম অত্যাচারী সুলতান বা শাসনকর্তার ষাড় বছরব্যাপী ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত খাতা, একরাত শাসকবিহীন থাকার তুলনায় উত্তম। বাস্তব অভিজ্ঞতাও একথার ইঙ্গিত দেয় যে, শাসকবিহীন জীবন-যাপনের চাইতে অত্যাচারী জালিম বাদশাহ বিদ্যমান থাকা অধিক বাঞ্ছনীয়। এরি পরিপ্রেক্ষিতে ফযল ইবনে ইয়ায, ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল প্রমুখ সলফে সালেহীন এ ধরনের উক্তি করেছেন:

(আরবী************)

“আমাদের দু’আ যদি অবধারিত কবূল হতো, তবে আমরা সুলতানের জন্য দু’আ করতাম।”

নবী করীম (স) বলেছেন:

(আরবী************)

“তিন জিনিসে আল্লাহ পাক তোমাদের উপর সন্তুষ্ট। এক: একমাত্র তাঁরই ইবাদত করবে, কাউকে তাঁর সাথে শরীক করবে না।[আমীর ও শাসক ব্যতীত জনগণ কোন অবস্থাতেই জীবন-যাপন করতে পারে না। যেহেতু এমতাবস্থায় একে অন্যের প্রতি জোর-জুলুম ও অন্যায়-অত্যাচার করবে। ফলে নিজেরা ধ্বংস হয়ে যাবে। কেননা অন্যায় উৎপীড়ন থেকে প্রতিরোধকারী ও রক্ষাকারী কেউ থাকবে না। দুর্নীতিপরায়ণ লোকেরা অবাধে নির্ভয়ে অত্যাচার চালিয়ে যাবে, একে অপরের মালামাল লুণ্ঠন করবে। অতঃপর তাদের মধ্যেও অরাজকতা ও বিশৃংখলা সৃষ্টি হবে। এভাবে তারা নিজেরাও ধ্বংস হবে আর অন্যদেরকে ধ্বংসেরমধ্যে নিয়ে ছাড়বে। সুতরাং এ কারণেই সুলতান তথা শাসক বর্তমান থাকা অতীব  জরুরী, যদিও সে জালিম হয়। এ পরপ্রেক্ষিতেই বলা হয়েছে, “ষাট বছর পর্যন্ত জালিম শাসকের অধীনে শাসিত হওয়া, শাসন কর্তাবিহীন এক রাত কাটানোর চাইতে উত্তম।”] দুই: আল্লাহর রশিকে সম্মিলিতভাবে দারণ করবে, বিচ্ছিন্ন হবে না। তিন: যে ব্যক্তিকে আল্লাহ তা’আলা তোমাদের শাসক নিযুক্ত করেন তাকে উপদেশ দেবে ও তোমরা তার মঙ্গল কামনা করবে।” (মুসলিম)

তিনি আরো বলেছেন: (আরবী************)

“তিন বিষয়ে মুসলমানের অন্তর কৃপণতা প্রদর্শনকরতে পারে না। (১) স্বীয় কাজ কর্ম আল্লাহর উদ্দেশ্যে পরম নিষ্ঠার সাথে সম্পাদন করায়, (২) দেশের শাসকবর্গের প্রতি হিতোপদেশ প্রদান করার বেলায় এবং (৩) মুসলমানদের জামা’আতকে আঁকড়িয়ে ধরার ক্ষেত্রে। কেননা তাদের দু’আ পশ্চাৎদিক থেকে তাদেরকে পরিবেষ্টন করে রাখে।” (আহলে সুনান)

সহীহ বুখারীতে নবী করীম (স)-এর হাদীস বর্ণিত হয়েছে:

(আরবী************)

“দীন হিতোপদেশের নাম, দীন হিতোপদেশর নাম দীন হিতোপদেশের নাম।” (বুখারী)

সাহাবীগণ আরয করলেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ (স), নসীহত কার জন্যে? তিনি বললেন, “আল্লাহর জন্য, তাঁর কিতাবের জন্য এবং তার রাসূলের উদ্দেশ্যে মুসলিম জনগণ, তাদের ইমাম তথা নেতৃবৃন্দকে।”

সুতরাং মুসলমানদের উচিত দীন ও আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের দৃষ্টিভঙ্গিতে সামনে রেখে ইসলামী নেতৃত্ব সৃষ্টি করা ও ইসলামী শাসন কায়েম করা, যার মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য অর্জন সম্ভব হয়। কেননা আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (স)-এর আনুগত্য করা সর্বোত্তম ইবাদত। কেননা আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (স)-এর আনুগত্য করা সর্বোত্তম ইবাদত। কিন্তু সময় এর মধ্যে ফিতনা-ফাসাদ ও বিশৃংখলা দেখা দেয়। রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় ছত্রছায়ায় ধন-সম্পদ লাভের আকাঙ্ক্ষা পোষণ করে আর এটাকে কাঙ্ক্ষিত সম্পদ অর্জনের মাধ্যম বানিয়ে নেয়। যার ফলে নিজের দীন ও আখিরাত বিনাশ করে (আরবী****) এর পাত্রে পরিণত হয়। যেমন, কাব ইবনে মালিক (রা) মহানবী (স)-এর হাদীস বর্ণনা করছেন। হুযূর (স) বলেন:

(আরবী**********)

“এমন দুটি ক্ষুধার্ত বাঘকে বকরীর পালে যেন ছেড়ে দেয়া হয়েছে যারা বকরীগুলো নিধন কাজে ব্যাপৃত রয়েছে। একটি হল- মানুষের সম্পদের মোহ ও লোভ, দ্বিতীয় হল- দীনের ক্ষেত্রে মান-মর্যাদাবোধ।” (তিরমিযী এটাকে হাদীসুন হাসানুন বলেছেন)

এ ব্যাপারে মহানবী (স) সতর্ক করে দিয়েছেন যে, সম্পদ ও ক্ষমতার মোহ দুটি এমন জিনিস যা দীন-ধর্মকে বিনাশ করে দেয়। আর বাস্তব ক্ষেত্রেও লক্ষ্য করা যায় যে, অধিকাংশ ফিতনা-ফাসাদ এ দুটি ক্ষুধার্ত বাঘের কারণেই সংঘটিত হয়ে থাকে। ক্ষুধার্ত এ বাঘ দুটিই প্রকৃতপক্ষে মানব পালকে ছিন্ন-ভিন্ন ও লুণ্ঠন করে ছাড়ে।

মহান আল্লাহ এমন ব্যক্তি সম্পর্কে সংবাদ দিয়েছেন, যার আমলনামা বাম হাতে অর্পণ করা হবে। আর এটা দেখে সে বলে উঠবে:

(আরবী**********)

“আমার ধন-সম্পদ আমর কোন কাজে আসে নাই। আমার ক্ষমতাও ‍অপসৃত হয়েছে।” (সূরা আল হাক্কা: ২৮-২৯)

রাজত্ব ও ক্ষমতালোভীদের পরিণাম ফিরাউনের ন্যায় এবং সম্পদ জমাকারীর অবস্থা কারূনের ন্যায় হয়ে থাকে।

মহান আল্লাহ কুরআন হাকিমে ফিরাউন ও কারূনের অবস্থার প্রতি ইঙ্গিত করে ইরশাদ করেছেন:

(আরবী**********)

“েএরা কি পৃথিবীতে ভ্রমণ করে না? তাহলে দেখতে পেত যে, এদের পূর্ববর্তীগণের পরিণাম কি হয়েছিল। পৃথিবীতে তারা ছিল এদের অপেক্ষা শক্তিতে ও কীর্তিতে প্রবল পরাক্রমশালী। অতঃপর আল্লাহ তাদেরকে শাস্তি দিয়েছিলেন তাদের অপরাধের জন্য এবং আল্লাহর শাস্তি থেকে তাদেরকে রক্ষা করার কেউ ছিল না।” (সূরা মু’মিন: ২১)

আল্লাহ আরো বলেন: (আরবী**********)

“ইহা আখিরাতের সেইআবাসযা আমি নির্ধারিত করি তাদেরই জন্য, যারা পৃথিবীতে নিজের শ্রেষ্ঠত্ব প্রতিষ্ঠা করতে ও বিপর্যয় সৃষ্টি করতে চায় না। আর শুভ পরণাম কেবল মুত্তাকীদের জন্য।” (সূরা কাসাস : ৮৩)

মানুষ সাধারণত চার প্রকারের হয়ে থাকে।

(১) সেসব লোক যারা উচ্চ মর্যাদা, নেতৃত্ব-কর্তৃত্ব ও সরদারী অভিলাষী আল্লাহর যমীনে এরা বিশৃংখলা ও বিপর্যয় সৃষ্টি করে থাকে। উচ্চ মর্যাদা ও নেতৃত্ব লাভের জন্য এরা কপটতা-শঠতা, ধোঁকাবাজি ইত্যাদি বৈধ বলে ধারণা করে। অথচ এটা কঠিন ও জঘন্যতম অপরাধ। এ জাতীয় রজা-বাদশাহ, রাষ্ট্রপতি ও দুষ্কৃতিকারী নেতৃবৃন্দ ফিরাউন ও ফিরাউনচক্রের দলভুক্ত। আল্লাহর ‍সৃষ্টি জগতে এরা নিকৃষ্টতম জীব। আল্লাহ তা’আলা বলেন:

(আরবী**********)

“নিশ্চয় ফিরাউন নিজ দেশে পরাক্রমশালী হয়েছিল এবং তথাকথিত অধিবাসীগণকে বিভিন্ন শ্রেণীতে বিভক্ত করে তাদের একটি শ্রেণীকে সে হীনবল করেছিল; ওদের পুত্রগণকে সে হত্যা করতো এবং নারীগণকে জীবিত রাখতো। সে ছিল বিপর্যয় সৃষ্টিকারী। (সূরা কাসাস: ৪)

ইবনে আব্বাস (রা)-এর রিওয়ায়েত ক্রমে সহীহ মুসলিমে বর্ণিত আছে, নবী করীম (স) ইরশাদ করেছেন:

(আরবী***********)

“যার অন্তরে বিন্দু পরিমাণ অহংকার বিদ্যমান, সে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না এবং সে ব্যক্তি জাহান্নামে প্রবেশ করবে না যার অন্তরে বিন্দু পরিমাণ ঈমান বর্তমান থাকে।” (মুসলিম)

কেউ একজন প্রশ্ন করলো, “হে রাসূলুল্লাহ (স)! এটা আমার বড় পছন্দ লাগে যে, আমার পোশাক-পরিচ্ছদ ও জামা-জুতা সুনদ্র দেখাক। তবে এটাও কি অহংকার ও গর্বের অন্তর্ভুক্ত।” জবাবে তিনি বললেন:

(আরবী***********)

“না- এটা গর্ব ও অহংকার নয়। বরং আল্লাহ তা’আলা সুন্দর, সৌন্দর্যকে তিনি ভালবাসেন। অহংকার হলো, সত্যকে অস্বীকার ও পদদলিত করা এবং মানুষকে নিকৃষ্ট ও ঘৃণিত মনে করা। এ হলো সে সকল লোকদের অবস্থা, যারা উচ্চাকাঙ্ক্ষী, নেতৃত্ব০করতঋত্ব, মান-মর্যাদার প্রত্যাশী এবং সমাজে বিপর্যয় সৃষ্টিকারী।”

(২) ঐ সকল লোক যারা পৃথিবীতে বিপর্যয় সৃষ্টিকারী এবং বিশৃংখলার হোতা বটে কিন্তু প্রকৃতপক্ষে উচ্চমর্যাদা, নেতৃত্ব-কর্তৃত্বের সাথে তাদের কোন সম্পর্ক নেই। যেমন- চোর-ডাকাত,  গুণ্ডা-বদমাশ ইত্যাদি। এ জাতীয অপরাধীগ?ণ সাধারণত সমাজে বিশৃংখলা সৃষ্টিকারী ও নিম্ন শ্রেণীর লোক হয়ে থাকে।

(৩) যে সকল লোক মান-মর্যাদা, ইয্‌যত-সম্মান কামনা করে কিন্তু তারা সমাজে বিশৃংখলা ও বিপর্যয় সৃষ্টিতে আগ্রহী নয়। এরা দীনদার শ্রেণীবুক্ত, যাদের নিকট দীন রয়েছে। আর এ দীনের দ্বারাই তারা মানুষের মধ্যে মান-সম্মান কামনা করে।

(৪) এ পর্যায়ে রয়েছে সে সকল লোক প্রকৃতপক্ষেই যারা জান্নাতের অধিকারী, তারা আল্লাহভক্ত ও হকপন্থী লোক। তারা মান-মর্যাদার অভিলাষী নয়। অধিকন্তু যমীনের বুকে তারা ফাসাদ সৃষ্টিকারীও নয়; তাসত্ত্বেও তারা উচ্চমর্যাদার অধিকারী। মেযন কুরআন করীমে ইরশাদ হয়েছে:

(আরবী***********)

“তোমরা হীনবল হয়ো না এবং দুঃখিত হয়ো না তোমরাই বিজয়ী থাকবে যদি তোমরা মুমিন হও।” (সূরা আলে ইমরান: ১৩৯)

তাতে আরো বলা হয়েছে: (আরবী***********)

“তোমরা বলহীন হয়ো না এবং সন্ধির প্রস্তাব করো না, তোমরাই বিজয়ী থাকবে; আল্লাহ তোমাদের সঙ্গে  আছেন, তিনি তোমাদের কর্মফল কখনো বিনষ্ট করবেন না।” (সূরা মুহাম্মদ: ৩৫)

আল্লাহ আরো বলেছেন: (আরবী***********)

“মান-মর্যাদা শক্তিতে আল্লাহ, তাঁর রাসূল এবং মুমিনদেরই জন্য।” (সূরা মুনাফিকূন: ৮)

মোটকথা, ক্ষমতাগর্বী ও অনেক উচ্চাকাঙ্ক্ষী এমনও রয়েছে, যারা সব চাইতে বেশী ঘৃণিত, লাঞ্ছিত ও পদদলিত, হীনতার  চরমে নিপতিত। পক্ষান্তরে অনেক উচ্চমর্যাদাশীল ব্যক্তিও রয়েছে, যারা ফিতনা-ফাসাদ ও বিপর্যয় সৃষ্টি করা থেকে দূরে থাকা সত্ত্বেও মর্যাদর শৈলচূড়ায় বিরাজমান। এটা এ কারণে যে, আল্লাহর সৃষ্টিকুলের উপর আধিপত্য বিস্তারের ধারণা পোষণ করাটা তাদের উপর জুলুমেরই নামান্তর। কেননা, গোটা মানব জাতি একই শ্রেণী একই গোত্রভুক্ত। এমতাবস্থায় এক বক্তি সমগোত্রীয়দের উপর আধিপত্য লাভের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে শক্তি ও কৌশল প্রয়োগে আত্মনিয়োগ করে, যাতে অন্যান্যরা তার অধিকার বলয়ে চলে আসে, এটা চরম অত্যাচার। কাজেই এ জাতীয লোকদের প্রতি সমাজে হিংসা-বিদ্বেষ ও ক্ষোভের উদ্রেক হওয়া স্বাভাবিক। পক্ষান্তরে ন্যায়পরায়ণ ব্যক্তির পক্ষে আপন ভাইয়ের উপর আধিপত্য সবিস্তার করা, তাকে মানবেতর জীবন-যাপনে বাধ্য করার কল্পনাও অচিন্তনীয়। অবশ্য অত্রাচারী জালিম ব্যক্তি চায় যে, সকলের উপর তার প্রাধান্য ও সরদারী কায়েম থাকুক। তাদের নিকটও বিবেক বুদ্ধি রয়েছে। তারা এটা লক্ষ্য করে যে, একজনকে তাদের অন্যের উপর মর্যাদা দেয়া হয়েছে। যেমন- (আরবী***********) আয়াতাংশে বর্ণিত হয়েছে। ইতিপূর্বে আরো বলা হয়েছে যে, আকার-আকৃতি  বিশিষ্ট মানব দেহের সংশোধন তার সেরা অংগে মস্তক ছাড়া সম্ভব নয়। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ পাকের ইরশাদ হলো:

(আরবী***********)

“তিনিই তোমাদেরকে দুনিয়ায় প্রতিনিধি করেছেন এবং যা তিনি তোমাদেরকে দিয়েছেন, সে সম্পর্কে পরীক্ষার উদ্দেশ্যে তোমাদের কতককে অপরের উপর মর্যাদায় উন্নত করেছেন।” (সূরা আন’আম: ১৬৫)

আল্লাহ আরো বলেছেন: (আরবী***********)

“তাদের পার্থিব জীবনে আমিই তাদের মধ্যে  জীবিকা বন্টন করি এবং একজনকে অপরের উপর মর্যাদায় উন্নত করি, যাতে একে অন্যের দ্বারা কাজ করিয়ে নিতে পারে।” (সূরা যুখরুফ: ৩২)

রাষ্টট্র ও ধন-সম্পদ সার্বিকভাবে আল্লাহর পথে নিয়োজিত রাখা এবং যথাযথরূপে দীনের কাজে ব্যয় করার জন্য ইসলামী শরীয়ত জোর নির্দেশ দিয়েছেন। রাষ্ট্রের উদ্দেশ্যও তাই যে, এর দ্বারা আল্লাহর নৈকট্য লাভ করা, দ্বিতীযত আল্লাহর দীন যেন কায়েম ও মজবুত হয়। সুতরাং আল্লাহর পথে যখন ধন-সম্পদ ব্যয় করা হবে, ফলশ্রুতিতে দ্বীন-দুনিয়া উভয় জাহানের কল্যাণ সাধিত হওয়া অবশ্যম্ভাবী। পক্ষান্তরে আমীর, সুলতান তথা শাসক যদি ইসলাম থেকে দূরে সরে থাকে, তাহলে জনগণের নৈতিক, চারিত্রিক ও আধ্যাত্মিক সকল দিক নষ্ট হওয়ার উপক্রম হয়।

আল্লাহ পাকের অনুগত বান্দাদের এবং গুনাহগার ও অবাধ্যদের মধ্যে পার্থক্য নির্দেশ করা যায় তাদের উদ্দেশ্য ও সৎকাজ দ্বারা। এ প্রসঙ্গে বুখারী-মুসলিমের হাদীসে হুযুর (স) থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, তিনি বলেন:

(আরবী***********)

“আল্লাহ তা’আলা তোমাদের আকৃতি চেহারা ও তোমাদের মালের প্রতি তাকান না, বরং তিনি তোমাদের অন্তর, তোমাদের আমলের প্রতিই লক্ষ্য করে থাকেন।” (বুখারী ও মুসলিম)

অধিকাংশ রাষ্ট্রপতি, শাসক, আমীর ও রঈস এবং দুনিয়ার মোহে আচ্ছন্ন। অর্থবিত্ত, কুলগৌরব, বুযুর্গী ইত্যাদিকে পার্থিব স্বার্থে ও দুনিয়াবী গরজে ব্যবহার করা হয়। তারা ঈমানের মূল ভাবধারা এবং পরিপূর্ণ দীন থেকে সরাসরি বঞ্চিত। অবশ্য তাদের কারো কারো মধ্যে দীনী চেতনাবোধ প্রবল বটে, কিন্তু যদ্বারা এর পরিপূর্ণতা হাসিল হয়, তা থেকে এরা অনবহিত ফলে তারা এ বিষয়গুলো পরিহার করে বসেছে। অপরপক্ষে তাদের কেউ হয়তো এর প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন, কিন্তু তা সত্ত্বেও তারা এ থেকে বিমুখ হয়ে  আছেন। আর তা এ জন্যে যে, রাষ্ট্র পরিচালনা, নেতৃত্ব, সরদারী ইত্যাদিকে তারা ইসলাম বিরোধী কার্যকলাপ বলে ধারণা করে নিয়েছেন। বস্তুতঃ তাদের বিশ্বাস হলো যে, এসব দীন ইসলামের পরিপন্থী কাজ। তাদের মতে দীন হলো অপমান ও লাঞ্ছনার নামান্তর। ইয্‌যত, সম্মান ও মর্যাদার উচ্চাসন থেকে এরা মূলত বঞ্চি ও মাহরূম।

ইহুদী, নাসারা ধর্মাবলম্বীদের অবস্থাও একই এবং প্রায় অভিন্ন। নিজেদের ধর্মকে তারা অসম্পূর্ণ মনে করে নিজেদেরকে অক্ষম অপরাধী ধারণা করে। তদুপরি দীন প্রতিষ্ঠার কাজে নানাবিধ আপদ-বিপদ লক্ষ্য করে হীনবল হয়ে যায়। দীনকে অপমানকর মনে করে তা পরিত্যাগ করে বসে। ফলে দীনের পরিসীমা সংকোচিত  হতে থাকে এবং এমনিভাবে দীন ধর্ম দ্বারা তাদের নিজেদের অথবা অপরের কোন কল্যাণ সাধিত হবার নয়, তাই মূল ধর্মকেই তারা বর্জন করে। এমনি দুটি দীন দুটি পথ একদা ছিল। একদল দেখলো তাদের নিজেদের দীনকে অসম্পূর্ণ উদ্দেশ্যে, তদুপরি দীন প্রতিষ্ঠায় শত বাধা বিঘ্ন দেখে তারা ভীত হয়ে যায়। ফলে দ্বীনী পথ সুকঠিন হয়ে পড়ে। দীনকে অপমানের বস্তু মনে করে তারা দীন পরিত্যাগ কর। তদুপরি দীন প্রতিষ্ঠার জন্য ক্ষমতা, ধন-সম্পদ ও রণ-কৌশল সম্পর্কিত জ্ঞান অপরিহার্য। তাদের দীন-ধর্ম তাদের চাহিদা পূরণ করতে কার্যত অক্ষম; তাই ঘৃণাভরে মূল ধর্মই ত্যাগ কর এত্থেকে তারা সরে দাঁড়ায়।

অপর পক্ষীয়রা রাষ্ট্র; অর্থবিত্ত, সামরিক উপায়-উপকরণ সংগ্রহ এবং প্রয়োজনে যুদ্ধ-বিগ্রহের দিক নির্দেশনা নিজেদের ধর্মীয় ব্যবস্থাপনায় বিদ্যমান দেখতে পায়; কিনতউ দীন প্রতিষ্ঠার দায়িত্ব আঞ্জাম দেয়া তাদের উদ্দেশ্য বহির্ভূত বিধায় আসল ধর্মকেই তারা বিসর্জন দিয়ে স্বস্তির নিঃস্বাস ফেলেছে। পক্ষ দুটি হলো (*****) (অভিশপ্ত) ইহুদী ও (*****) (পথভ্রষ্ট) নাসারা। ইহুদীরা তো (দ্বীনী) রাজত্ব, শাসন, সরদারী সব পরিত্যাগ করছে, খৃষ্টান নাসারাগণ মূল ধর্মই ছেড়ে দিয়েছে।

সুতরাং সিরাতে মুস্তাকীম (সরল-সহজ পথ) তাদেরই গমন পথ যাদের উপর আল্লাহর বিশেষ রহমত-করুণা নাযিল হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে ইরশাদ হয়েছে: (আরবী***********)

“এটা সে সকল লোকদের পথ যাদের উপর আল্লাহ বিশেষ অনুগ্রহ করেছেন। যেমন, নবী (আ), সিদ্দিকীন, শহীদ এবং সৎকর্মপরায়ণ মানুষ।”

হযরত মুহাম্মদ (স), তাঁর পর খুলাফায়ে রাশেধীন, সাহাবায়ে কিরাম এবং পরবর্তীকালে তাঁদের অনুগামীদের এই একই পথ, একই তরীকা ছিল।ভ

এ প্রসঙ্গে কুরআনের শাশ্বত বাণী হলো: (আরবী***********)

“মুহাজির ও আনসারদের মধ্যে যারা সর্বপ্রথম ঈমানের দাবী অনুযায়ী অগ্রসর হয়েছিল তারা েএবং যারা সততার সাথে তাদের অনুসরণ করেছিল, আল্লা্হ তাদের প্রতি সুপ্রসন্ন হলেন এবং তারাও তাঁর প্রতি সন্তুষ্ট হলো। আর তিনি তাদের  জন্য প্রস্তুত করেছেন জান্নাত, যার তলদেশে ঝর্ণাসমূহ প্রবাহিত, যেখানে তারা হবে চিরস্থায়ী। এটা মহা সাফল্য।” (সূরা তওবা: ১০০)

সুতরাং  প্রত্যেক মুসলমানের পক্ষে দীন প্রতিষ্ঠার জন্য সাধ্যমত চেষ্টা করা ফরযে আইন বা অবশ্য কর্তব্য। যার উপর রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা ও শাসনভার ন্যস্ত, তার দায়িত্ব ও কর্তব্য এ ব্যাপারে সর্বাধিক। এ দ্বারা সে আল্লাহর আনুগত্য, ইকামতে দীন ও মুসলমানদের কল্যাণ সাধনের কাজ আঞ্জাম দিবে আর রাষ্ট্র ক্ষমতা লাভের পশ্চাতেও এই একই উদ্দেশ্য। কাজেই এ জন্য রাষ্ট্র ও শাসন ক্ষমতার হিফাযত জরুরী। সাধ্যমত হারাম জিনিস থেকে শাসক নিজে বেঁচে থাকবে এবং অপরকেও রক্ষা করতে তৎপর থাকবে। তার ক্ষমতার বাইরে কোন কিছুর জন্য তাকে জিজ্ঞেস করা হবে না।

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, অসৎ লোকদের ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত করা উচিত নয়। অবশ্য যে ব্যক্তি নেতৃত্ব ও সরদারীর মাধ্যমে দীন প্রতিষ্ঠা ও আল্লাতর পথে জিহাদ করার দায়িত্ব পালনে অপারগ, সে ততটুকু খিদমতই আঞ্জাম দিবে যতটুকু করতে সে সক্ষম। আন্তরিক ও নিষ্ঠার সাথে জাতীয় কল্যাণে নিজেকে নিয়োজিত রাখবে, উম্মতে  মুহাম্মদীর পরস্পরের মহব্বত ও মঙ্গলের জন্য আল্লাহর নিকট দু’আ করবে। অধিকন্তু সাধ্যমত কল্যাণ সাধনে ব্যাপৃত থাকবে। কেননা আল্লাহ পাক ক্ষমতার বাইরে কারো উপর দায়িত্ব চাপিয়ে দেন না বা হুকুম করেন না। আল্লাহর কিতাব কুরআনের পথ নিদের্শনায়ই দীনের প্রতিষ্ঠা সম্ভব। কেননা ইহা পথ প্রদর্শক।আর এ ব্যাপারে হাদীসে রাসূলের কার্যকরী ভূীমকা রয়েছে। এ দুটিকে পথ নির্দেশক বানিয়ে আল্লাহর সাহায্য অর্জন করা যেতে পারে । স্বয়ং আল্লাহও এ বিষয়ে কুরআনে হুকুম আহকাম বর্ণনা করেছেন।

সুতরাং প্রত্যেক মুসলমানের উপর ফরয হলো কুরআন হাকীম ও হাদীসে রাসূল (স)-কে সব কিছুর উপর প্রাধান্য দেয়া। অতঃপর একমাত্র আল্লাহরই নিকট সাহায্য ও মঙ্গল কামনা করতে থাকবে। স্বরণযোগ্য যে, দুনিয়া এজন্যই যে একে দীনের খিদমতে ব্যয় করা হবে। যেরূপ হযরত মু’আয েইবনে জাবাল (রা) বলেছেন:

(আরবী***********)

“হে বনী আদম! তুমি তোমার দনিয়ার ও সম্পদের মুখাপেক্ষী, তদ্রূপ আখিরাতেও তোমার সঞ্চয়ের তুমি মুহতাজ কিন্তু আখিরাতের সঞ্চয়ের তুমি অধিক মুখাপেক্ষী। কাজেই তুমি তোমাদের আখিরাতের অংশ নিয়েই কাজ শুরু কর। আর সঙ্গে সঙ্গে দুনিয়ার ভাগের জন্য কিছু চেষ্টা করো। কিন্তু যদি তুমি দুনিয়ার সম্পদের চেষ্টায় প্রথম মনোযোগ দাও, তবে তোমার আখিরাতের সম্পদ হারিয়ে বসবে, আর দুনিয়া তোমার জন্য বিপদজনক হয়ে দাঁড়াবে।”

তিরমিযী কর্তৃক রিওয়ায়েত কৃত নবী করীম (স)-এর হাদীস তাঁর উক্তির সমর্থন করে রাসূলুল্লাহ (স) ইরশাদ করেছেন:

(আরবী***********)

“যে ব্যক্তির এমতাবস্থায় ভোর শুরু হয় যে, আখিরাতের চিন্তাই হয় তার মূখ্য বিষয়, আল্লাহ পাক তার অবস্থা সুসংহত করে দেবেন এবং তার অন্তরে প্রাচুর্যের প্রশান্তি সৃষ্টি করে দেবেন আর দুনিয়া তার নিকট লাঞ্ছিতাবস্থায় হাযির হবে। পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি এমতাবস্থায় সকাল করে যে, দুনিয়াই হয় তার মূখ্য উদ্দেশ্য, আল্লাহ তার মালামাল বিচ্ছিন্ন করে দেবেন।  আর দারিদ্র্য তার চোখের সামনে উপস্থিত হবে। বস্তুত দুনিয়াতে সে পরিমসাণই পাবে, আল্লাহ পাক তার জন্য যে পরিমাণ লিখে রেখেছেন।”

প্রকৃতপক্ষে এ হাদীসের মূল ভাবধারা কুরআনে হাকীমেও নিহিত বিদ্যমান যেমন-

(আরবী***********)

“আমার দাসত্ব ও নিরঙ্কুষ আনুগত্যের জন্যই আমি সৃষ্টি করেছি মানুষ এবং জিনকে। তাদের নিকট থেকে আমি রিযক চাই না আর এও কামনা করি না যে, তারা আমার আহার্য যোগাচে। একমাত্র আল্লাহই রিয্‌ক দান করেন এবং তিনি প্রবল পরাক্রমশালী সত্তা।” (সূলা আজ জারিয়াত:” ৫৬-৫৮)

পরিশিষ্ট ও দু’আ

মহান আল্লাহর দরবারে আমরা এই বলে দু’আর হাত তুলছি, হে আল্লাহ! তুমি আমাদেরকে, আমাদের দীনী ভাইদেরকে এবং মুসলিম কাওমের সকলকে তোমার সেই প্রিয় বস্তু দান করো, যাতে তুমি সন্তুষ্ট।

(আরবী***********)

সমাপ্ত

Page 10 of 10
Prev1...910

© Bangladesh Jamaat-e-Islami

  • আমাদের সম্পর্কে
  • প্রাইভেসি পলিসি
  • যোগাযোগ
কোন ফলাফল নেই
সকল ফলাফল দেখুন
  • নীড়
  • সংক্ষিপ্ত পরিচিতি
  • বিভাগ ভিত্তিক
    • আল কুরআন
    • আল হাদিস
    • ফিকাহ
    • ঈমান
    • ইসলাম
    • পারিবারিক জীবন ও সামাজিক সম্পর্ক
    • আন্দোলন ও সংগঠন
    • সীরাত ও ইতিহাস
    • সীরাতে সাহাবা
    • মহিলাদের বিশেষ বই
    • রাজনীতি
    • অর্থনীতি
    • বিবিধ
  • রুকন সিলেবাস
    • রুকন সিলেবাস (স্বল্প শিক্ষিত)
    • রুকন সিলেবাস (শিক্ষিত)
  • কর্মী সিলেবাস
  • বাৎসরিক পাঠ্যসূচি
    • বাৎসরিক পাঠ্যসূচি (শিক্ষিত)
    • বাৎসরিক পাঠ্যসূচি (স্বল্প শিক্ষিত)
  • উচ্চতর অধ্যয়ন
  • অডিও বই
  • অন্যান্য
    • দারসুল কুরআন
    • দারসুল হাদিস
    • আলোচনা নোট
    • বইনোট
    • প্রবন্ধ
    • কবিতা
    • বুলেটিন
    • স্মারক
    • ম্যাগাজিন
    • এপস
    • রিপোর্ট বই
    • ছাত্রী সিলেবাস

@BJI Dhaka City South