দ্বিতীয় পর্যায়ে (১৯৩৯ – ১৯৪৫)
পরীক্ষার সূচনা
এ পর্যায় ছয় বছরের অন্তর্ভুক্ত। পৃথিবী এ বছরগুলোতে বিশ্বযুদ্ধের বারুদে আচ্ছন্ন ছিল। সে সময় ইখওয়ানের আন্দোলন চরম জুলুম নির্যাতনের শিকারে পরিণত হয়। এর পূর্বে এ আন্দোলনকে সংস্কারমূলক এবং দীনী প্রচেষ্টা মনে করে উপেক্ষা করা হতো। কিন্তু যখনি এর দাওয়াত জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্র নিজে আলোচনায় উদ্যত হলো এবং চিন্তাগত ও সামষ্টিক বিপ্লবের সাথে রাজনৈতিক ও শাসনতান্ত্রিক সংস্কারেরও দাবী তুললো তখন শাসক গোষ্ঠর কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়লো। এ স্তরে অগণিত অগ্নি পরীক্ষার মাঝেও আন্দোলনের দুটি ধারাতেই অস্বাভাবিক উন্নতি সাধিত হয়।
পরবর্তী পর্যায়ে এর অগ্রগতি ও উত্থানের কারণে এটাই ছিল যে, ইখওয়ানের চেষ্টা সংগ্রাম এবং গঠনমূলক কাজে উদ্বুদ্ধ হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও ছাত্ররা প্রভাবিত হয়ে এর বৈঠকসমুহে যোগদান করেন। বিশেষতঃ ফুয়াদুল আউযাল ও আর আহার বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন পেশার লোকেরাও দলে দলে যোগদান করতে শুরু করে। ব্যবসায়ী, শিল্পপতি, প্রকৌশলী, ডাক্তার, শিক্ষক, উকিল, মোটকথা বিভিন্ন শ্রেণির মানুষ এতে যোগদান করে। একদিকে দলের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড প্রশস্ত থেকে প্রশস্ততর হয়ে উঠে অপরদিকে শিক্ষা, সংস্কৃতি এবং দৈহিক প্রশিক্ষণের কাজেও বিভিন্ন রকম উন্নতি সাধিত হয়। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে শাখা প্রতিষ্ঠিত হয় এবং এদের মাঝে সুশৃঙ্খল পরিকল্পনা চালু করা হয়। এক কথায় এ দলটি দেশের ভেতর একটি শক্তিশালী সংগঠনের মর্যাদায় আত্মপ্রকাশ করে এবং বিরোধীদের চোখের কাটা হয়ে বিধতে থাকে।
সে সময়টা ছিল বিশ্বযুদ্ধের। স্থানীয় সরকারসমূহ স্বয়ং নিজের ইচ্ছায় এবং আধিপত্যবাদী শক্তির ইশারায় রাজনৈতিক দলগুলোর অনুসরণ করতে শুরু করে দেশে বিশৃঙ্খল আইন কানুন চালু হয় এবং সরকার ও দলগুলোর মধ্যে সংঘর্ষের সূচনা ঘটে। এস্তরে দেশে একের পর এক আটটি মন্ত্রী পরিষদ গঠিত হয়। আলী মাহের, হুসাইন সাবরী, হুসাইন সিররী, মুস্তফা নাহাস, আহমদ মাহের, নাকরাশী পাশা, ইসমাইল সিদকী এবং পুনর্বার নাকরাশী পাশার মন্ত্রী পরিষদ, আলী মাহের ও হুসাই সাবরীর শাসনামলে ইখওয়ান যথারীতি পত্র পত্রিকার মাধ্যমে দাওয়াতী মূলক এবং আমর বিলমারুফ ও নেহী আনিল মুনকারের কাজ করতে থাকে। বরং আলী মাহের যখন মিসরকে যুদ্ধ থেকে দূরে সরিয়ে রাখার প্রস্তাব পেশ করেন তখন ইখওয়ান বিনাশর্তে এ প্রস্তাবের পক্ষে সহযোগিতা করে।
পরীক্ষার ইন্ধনদাতা
হুসাইন সিররী পাশা ক্ষমতাসীন হওয়ার পর ইখওয়ানের ওপর চরম নির্যাতন নিপীড়ন নেমে আসে। আল ইখওয়ানের দাওয়াত যেভাবে রাতারাতি অগ্রগতি লাভ করছিল, তাতে ইংরেজদের স্বাধিকার বিঘ্নিত হচ্ছিল। হাসানুল বান্না পঞ্চম অধিবেশনে ( যা আগে বর্ণনা করা হয়েছে ) ইখওয়ানের যে পলিসি উল্লেখ করেন, তা ইংরেজদের জন্য এ বিশ্বাস সৃষ্টি করতে যথেষ্ট ছিল যে, এ আন্দোলন সমগ্র আরব বিশ্বে তাদের জন্য বাধার পাহাড় হয়ে দাঁড়াবে।
আদলী একিনের দাসতুর পার্টি অথবা মুস্তফা নাহাসের ওয়াফদ পার্টি নিঃসন্দেহে মিসরের স্বাধীনতা আকাঙ্ক্ষী ছিল। কিন্তু এ দুটি দলই ছিল স্বাদেশিকতাবাদী এবং এদের চিত্তাকর্ষক নীলভূমি পর্যন্তই সীমিত ছিল। অথচ ইখওয়ানের দাওয়াত এ সকল বন্ধন থেকে পবিত্র ছিল। ইখওয়ান সর্বদাই জাতীয় ঐক্যের পতাকাবাহী ছিল। আরব ঐক্যেরও পৃষ্ঠপোষক ছিল এবং ইসলামী ঐক্যও ছিল তাদের মিশন। জাতীয় অথবা আরবিয় ঐক্যকে তারা এ দৃষ্টিকোণ থেকে বিচার করতো না যা স্বাদেশিকতাবাদী বা জাতিপূজারীরা মনে করে থাকে। বরং তারা কেবলমাত্র ইসলামের উত্থান ও বিস্তৃতির লক্ষ্যে এ ঐক্যের পতাকাবাহী ছিল। হাসানুল বান্না উল্লিখিত অধিবেশনে এ কথা বর্ণনা করেন যে, ইসলাম ভৌগলিক সীমারেখা এবং রক্ত ও বংশীয় বন্ধনের প্রবক্তা নয়। ইসলাম সকল মুসলমানদেরই এক জাতি মনে করে এবংয় সকল ইসলামী দেশকে এক দেশ গণ্য করে, যদিও ভৌগলিক দিক থেকে একটি অপরটির দূরত্ব অনেক। ইসলামী দেশ ঐক্য বিভক্তির অযোগ্য। এর কোন একটি অংশের ওপর জুলুম সমস্ত অস্তিত্বের ওপর জুলুমের প্রবাহ সৃষ্টি করে। এ জন্যে ইখওয়ানুল মুসলেমূন ইসলামী ঐক্যকে অত্যন্ত পবিত্র এবং সম্মানের যোগ্য মনে করে। খিলাফতের ব্যাপারে তিনি ইখওয়ানের এ দৃষ্টিভঙ্গি বর্ণনা করেন যে, ইখওয়ানুল মুসলেমূন খিলাফতকে ইসলামী ঐক্যের প্রতীক এবং বিভিন্ন মুসলমান জাতির মধ্যে বন্ধুত্ব ও গভীর সম্পর্কের আলোকবর্তিকা মনে করে। এছাড়া খিলাফতের দৃষ্টিভঙ্গি ও এর পুনঃপ্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টাকে সর্বাধিক গুরুত্ব দেয়।
ইউরোপীয় রাষ্ট্রগুলোকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন ঃ ইখওয়ানুল মুসলেমূন সে সমস্ত সরকারকে যালিম মনে করে, যারা ইসলামী রাষ্ট্রসমূহের ওপর জুলুম করছে অথবা করে থাকে, এই আগ্রাসী শক্তিকে বল প্রয়োগে প্রতিহত করা প্রয়োজন।
এরই ভিত্তিতে ইখওয়ান ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা, আলজিরিয়ার স্বাধীনতা এবং সে সকল ইসলামী দেশের স্বাধীনতার জন্য কণ্ঠ উচ্চকিত করেছে যাদের ওপর আধিপত্যবাদের জঘন্য ছায়া বিস্তার করে আছে। আর এ উদ্দেশ্যেই মুসলমান জাতিকে তারা জিহাদের প্রতি উদ্বুদ্ধ করে।
ইখওয়ানুল মুসলেমূনের এ দৃষ্টিভঙ্গি ইংরেজদের জন্য অসহনীয় ছিল। হুসাইন সিররী পাশার ওপর ইংরেজ দূতাবাস এবং ইংরেজ সেনাপ্রধানের পক্ষ থেকে চাপ প্রয়োগ করা হয়। যার ফলশ্রুতিতে হুসাইন সিররীর সরকার প্রথমে ইখওয়ানের মুখপত্র সাপ্তাহিক আত তাআরুফ ও আশশিআ এবং মাসিক অলম্যানর পত্রিকা বন্ধ করে দেয়। এরপর তারা যে কোন ধরনের সাহিত্য প্রকাশে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। ইখওয়ানের প্রেস সিল মোহর করে দেয়া হয়। আন্দোলনের নেতৃবৃন্দকে বিভিন্ন জায়গায় নিক্ষিপ্ত করা হয়। ইমাম হাসানুল বান্নাকে কায়রো থেকে কানা এবং তাঁর সহকারী আহমদ আসসুকারীকে দামইয়াত পাঠানো হয়। যখন মিসরের পার্লামেন্টে সরকারের এই ঘৃণ্য পদক্ষেপের ব্যাপারে যোগাযোগ সৃষ্টি হয় তখন সরকার বাধ্য হয়ে এ দুজন সম্মানিত ব্যক্তিকে ফিরিয়ে আনার অনুমতি প্রদান করে। কিন্তু আবারো দ্বিতীয় বারের মতো প্রচণ্ড আক্রমণ চালিয়ে ইমাম হাসানুল বান্না ও ইখওয়ানের সেক্রেটারিকে গ্রেফতার করে সরকার তাদেরকে মুক্তি দেয়। এই নির্যাতন নিপীড়ন সাধারণ মানুষের দৃষ্টিকে আন্দোলনের প্রতি উদ্বুদ্ধ করে এবং এর সদস্য ও পৃষ্ঠপোষকের সংখ্যা অস্বাভাবিক ভাবে বৃদ্ধি পায়।
নাহাস পাশার দ্বিমুখী পলিসি
হুসাইন সিররী পাশার পর মুস্তফা নাহাস পাশার মন্ত্রী পরিষদ প্রতিষ্ঠিত হয়। মুস্তফা নাহাস পাশা ইখওয়ানের ব্যাপারে দ্বিমুখী নীতি গ্রহণ করেন। ইমাম হাসানুল বান্না ইসমাইলিয়ার নির্বাচনী এলাকা থেকে সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেতে চান। কিন্তু নাহাস পাশা অবস্থা বেগতিক দেখে হাসানুল বান্নার কাছে আবেদন জানান যে, তিনি যেন এ নির্বাচন থেকে বিরত হন। ইমাম বান্না নাহাস পাশার এ আবেদন মঞ্জুর করেন এবং ইখওয়ানের সাথে আপোষ নীতি গ্রহণ করে তিনি তাঁকে সম্মেলন অনুষ্ঠানের অনুমতি প্রদান করেন। সংবাদ পত্রগুলোকে পুনর্বহাল এবং প্রেসের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে দেন। কিন্তু এটা ছিল একটা সাময়িক চাল মাত্র। কিছুদিন পেরিয়ে যেতে না যেতেই নাহাস পাশাও গণতন্ত্রকামীদের দাবী দাওয়াকে তাকের ওপর রেখে ইখওয়ানকে দমনের টার্গেট গ্রহণ করে। ইখওয়ানের কেন্দ্রীয় দফতর ছাড়া এর সকল শাখা উপশাখা বন্ধ করে দেয়া হয়। সম্মেলন সমাবেশ প্রচার কার্য এবং সকল প্রকার তৎপরতার ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়। ইখওয়ানের ঐতিহাসিক মুহাম্মদ শাওকী যাকীর ভাষায়ঃ
ইখওয়ান সরকারের নির্যাতন নিপীড়ন চরম ধৈর্য ও দৃঢ়তার সাথে মুকাবিলা করে। এমনকি নাহাস পাশার সরকারকে স্বয়ং কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়। ইখওয়ান ও নাহাস সরকারের সম্পর্ক স্বাভাবিক হয়ে উঠতে না উঠতেই সরকার তাদেরকে মুক্ত করে দেয় এবং তারা আবারো সক্রিয় হয়ে উঠে। কিন্তু এরপর সরকার তাদের বাকস্বাধীনতা হরণ করে। অতঃপর ধৈর্য, সহিঞ্চুতা এবং আশা পোষণকেই তারা অভ্যাসে পরিণত করে।
মোটকথা, ইখওয়ান এসব প্রবল বাধা বিপত্তি স্বত্বেও বিভিন্নভাবে সরকারকে উপদেশ ও দীক্ষা দানের কর্তব্য পালন করতে থাকে। অবশেষে ১৯৪৪ সালে নাহাস মন্ত্রীপরিষদ ভেঙ্গে দেয়া হয়।
ইখওয়ানের নির্বাচনে অংশগ্রহণ
নাহাস পাশার পর এলো আহমেদ মাহের। স্বীয় চিন্তাধারা ও দৃষ্টিভঙ্গির আলোকে তিনিও নির্যাতনকে নীতি হিসেবে গ্রহণ করলেন। ১৯৪১ সালের অধিবেশনে ইখওয়ান এ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে যে, ইখওয়ান নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে এবং ইসলামী আদর্শের শ্রেষ্ঠত্ব প্রতিষ্ঠায় সংগঠনের সর্বাধিক যোগ্য ব্যক্তিদের দাঁড় করাবে।
নাহাস সরকারের মন্ত্রিত্বের যুগে হাসানুল বান্না নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে চেয়েছিলেন কিন্তু নাহাস পাশার দ্বিমুখী নীতি প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়িয়েছিল এবং ইমাম বান্নাও যুক্তিসঙ্গতভাবে নির্বাচন থেকে বিরত থাকেন।আহমদ মাহেরের সময় ইখওয়ান যে কোন মূল্যে নির্বাচনে অংশ নেয়ার ঘোষণা প্রদান করে। কিন্তু আহমদ মাহেরের সরকার বা ইংরেজ সেনাবাহিনীর প্রধানরা কেউই এতে সন্তুষ্ট ছিল না।
হাসানুল বান্নাকে ইসমাঈলিয়া নির্বাচনী আসন থেকে প্রার্থী করা হয়। এতে সাধারণ মানুষ মিসরীয় নির্বাচনের ইতিহাসে এই প্রথমবারের মতো তাদের মনের মত প্রার্থীর পক্ষে কাজ করার সুযোগ পায়। শহর এলাকায় নির্বাচনী প্রচারকেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করা হয় প্রায় ষাটটির মতো। দেয়ালে পোষ্টার, জনতার মিছিল, স্কুল কলেজের ছাত্র প্রত্যেকেই ( ইসলাম পুনরুজ্জীবনের পতাকাবাহী ) হাসানুল বান্নার পক্ষে ভোট দেয়ার প্রচারণা মুখর ছিল। হাসানুল বান্নার বিজয় ছিল নিশ্চিত। কিন্তু মিসরীয় সরকার ইংরেজদের সন্তুষ্টি এবং দাসতুর পার্টির প্রার্থীকে বিজয়ী করার জন্য হাসানুল বান্নার বিরুদ্ধে সকল অস্ত্রই প্রয়োগ করে ইংরেজ বাহিনীর গাড়িগুলো প্রকাশ্যে রোধী প্রার্থীর পক্ষে তৎপরতা চালায়। সেনা কর্মকর্তা রা সেনা শিবিরের মিসরীয় কর্মচারীদের ব্যাপকহারে নির্বাচনী এলাকার বাইরে বিভিন্ন জায়গায় বদলী করে দেয়। ধোঁকা, প্রতারণা, চাপ প্রয়োগ, হতাশায় নিক্ষেপ এবং সন্ত্রাসমূলক সকল কৌশল বেছে নেয়া হয়। তবুও হাসানুল বান্না নিরংকুশভাবে বিজয় লাব করেন।
অবশেষে সাজানো আপত্তি অভিযোগের ভিত্তিতে নির্বাচনকে বাতিল ঘোষণা করে দ্বিতীয়বার নির্বাচনের আয়োজন করা হয়। এবার সেনাবাহিনী তাদের তৎপরতা কয়েকগুণ বৃদ্ধি করে। সীনার ইংরেজ গভর্নর হামর্যাসলি পাশা হাসানুল বান্নার সদস্যদেরকে সীনা ও আরীশের নির্বাচনী এলাকাগুলো থেকে বের করে দেয় এবং অন্য ক্যাম্প থেকে শ্রমিকদের এনে পর্যাপ্ত জাল ভোট প্রদান করে হাসানুল বান্নার নিশ্চিত বিজয়কে পরাজয়ে রূপান্তরিত করে। এটা যদিও ঘটেছে হাসানুল বান্নার ক্ষেত্রে কিন্তু ইখওয়ানের অপর প্রার্থীদের সাথেও একই আচরণ করা হয়। এবং কোন প্রার্থীকেই বিজয়ের মুখ দেখতে দেয়া হয়নি।
নাকরাশী পাশার প্রথম মন্ত্রিত্বের যুগ
আহমদ মাহের পাশা সম্মিলিত শক্তির সাথে যোগ দিয়ে জার্মানি ও ইতালির বিরুদ্ধে ঘোষণা করেন। ইখওয়ান এ সিদ্ধান্তের কঠোর বিরোধিতা করে। এবং আহমদ মাহেরের কাছে লিখিতভাবে এ সিদ্ধান্তের পক্ষে যুক্তি মিসরীয় জনগণও এ ঘোষণার তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে দেশের পরিপস্থি হতেই ঘোলাটে হয়ে যায়। এ অবস্থায় আহমেদ মাহের একজন খ্রিস্টানের গোলার আঘাতে নিহত হলে মাহমুদ ফাহমী নাকরাশী পাশা প্রধানমন্ত্রী নিযুক্ত হন। কিন্তু হাসানুল বান্না এবং ইখওয়ানের সেক্রেটারি জেনারেল ও কতিপয় কেন্দ্রীয় নেতাকে আহমদ মাহেরের হত্যার অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়। এ অভিযোগের প্রমাণ হিসেবে যা পেশ করা হয় তা হলো, ঘাতক খ্রিষ্টান লোকটি ঘটনার তদন্তের সময় একথা উল্লেখ করে যে, আহমদ মাহেরের যুদ্ধের ঘোষণা দেয়ার পূর্বে দেশের বুদ্ধিজীবী চিন্তাশীল মহলের কাছে পরামর্শ চাওয়া উচিত চিল। এদের মধ্যে সেই খ্রিষ্টান হাসানুল বান্নার নামও উচ্চারণ করে। ইখওয়ান গ্রেফতারীকে আদালতে চ্যালেঞ্জ করে এবং আদালত মুক্তিদানের নির্দেশ দেয়। হাসানুল বান্না মুক্তি পেয়েই নাকরাশী পাশার সাথে সাক্ষাত করেন এবং আহমদ মাহেরের হত্যায় গভীর শোক প্রকাশ করেন। নাকরাশী পাশার কাচে তিনি স্বাধীনভাবে কাজ করারও আবেদন জানান। কিন্তু তিন তা উড়িয়ে দেন। বিশ্বযুদ্ধ সমাপ্ত হওয়া পর্যন্ত (১৯৪৫)নাকরাশী পশার নীতি ইখওয়ানের ব্যাপারে ছিল মিশ্রিত। কঠোরতাও ছিল, আবার সহজভাবেও অনেক কিছু দেখা হতো।যদি সমাবেশের অনুমতি দেয়া হয় তো কাল সুদে আসলে তা আদায় করে নেয়া হতো। এরকম টানাটানির মাঝে সহসা বিশ্বযুদ্ধ বন্ধ হয় এবংয় পরিস্থিতি ভিন্নরূপ ধারণ করে।