তৃতীয় পর্যায় (১৯৪৫–১৯৪৮)
আন্দোলনের অভ্যুদয় ও পরিণতি
এ পর্যায় ইখওয়ানের আন্দোলনের সবচেয়ে বেশি উল্লেখযোগ্য পর্যায়। এ সময়কালে আন্দোলন পূর্ণরূপে আবির্ভূত হয়ে এমন এক পরিণতির মুখোমুখি হয় যা বিশ্বের সকল ইসলামী আন্দোলনের জন্য সীমাহীন ভাবনার বিষয়ে পরিগণিত হয়। প্রথমে আমরা এ যুগের সেই কর্মতৎপরতার সংক্ষিপ্ত পরিচিতি পেশ করবো যা ইখওয়ান আন্দোলনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে আঞ্জাম দিয়েছে।
৮ সেপ্টেম্বর ১৯৪৫ সালে ইখওয়ানের জেনারেল কাউন্সিলের অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয় যেখানে ইখওয়ানের সকল সদস্যই অংশগ্রহণ করে। এ অধিবেশনে ইখওয়ানের গঠনতন্ত্রে ( সংবিধান ) ব্যাপক সংশোধনী আনা হয় এবং গঠনতন্ত্রকে উদ্দেশ্য ও কর্মনীতি হিসেবে পূর্ণাঙ্গ ও বর্ধিত রূপে দেয়া হয়। এ সংশোধনীর অধিকাংশই চিল ইমাম হাসানুল বান্নার ১৯৩৮ সালের পঞ্চম অধিবেশনে প্রদত্ত বক্তৃতার অভিপ্রায়। বায়আতের (শপথ নামা ) মাধ্যমে সংগঠনের আমীর এবং মুরশিদের আমের আনুগত্যের অঙ্গিকার তাজা করা হয়। মারুফ কাজে শ্রবণ ও আনুগত্যকে সর্বাবস্থায় অপরিহার্য গণ্য করা হয়। হাসানুল বান্নার প্রতি সার্বিক দিক থেকে নির্ভরতা পোষণ করা হয়। তাঁকে আজীবন মুরশিদে আম নির্বাচন করা হয়। পদচ্যুতি এবংয় পরিবর্তনের অধিকার দেয়া হয় কেবল প্রতিষ্ঠাতা পরিষদকে।
অভ্যন্তরীণ মজবুতি এবং দৃঢ় মনোবল আন্দোলনের প্রভাবকে আরো সম্প্রসারিত করে। ক বছরের মধ্যে এ আন্দোলন আধ্যাত্মিক, বৈষয়িক এবং সামরিক প্রশিক্ষণের দিক থেকে উন্নতির উচ্চ শিখরে উপনীত হয়। টাইম অব লন্ডনের দেয়া রিপোর্ট অনুযায়ী কেবল শ্রমিকদের মধ্যে ইখওয়ানের সদস্য সংখ্যা তিন থেকে ছয় লাখে বৃদ্ধি পায়। হাসানুল বান্নার হাসানুল বান্নার বর্ণনা মতে, টাইমস যে রিপোর্ট দিয়েছে তার পাঁচ লাখ ইখওয়ানের প্রতিনিধি। এ পাঁচ লাখ প্রতিনিধি সাত কোটি আরব এবং সারা বিশ্বের ত্রিশ কোটি মুসলমানের চিন্তাধারা এবং আশা আকাঙ্ক্ষার প্রতিচ্ছবি। ইখওয়ানের নায়েবে মুরশিদের আমের স্মারক অনুযায়ী যা কাউন্সিল অব ষ্টেটের কাছে পেশ করা হয়েছিল ১৯৪৮ সালে ইখওয়ানের কর্মী সদস্য সংখ্যা কেবল মিসরেই পাঁচ লাখ ছিল। এছাড়া শুভাকাঙ্ক্ষীর সংখ্যা ছিল এর কয়েকগুণ। শুধু মিসরেই এর শাখা ছিল ছয় হাজারের কাছাকাছি।
মিসরের বাইরেও ইখওয়ানের শাখা প্রতিষ্ঠিত হয়। সিরিয়ায় ১৯৩৭ সালে মোস্তফা সাবায়ীর (মরহুম) নেতৃত্বে ইখওয়ানের শাখা কায়েম হয়েছিল। অন্যান্য দেশেও কেন্দ্রের অধীনে শাখা প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৪৬ সালে ফিলিস্তিনে, প্রায় একই সময়ে জর্ডানে এবং সে বছরেই সুদানে ইখওয়ানের কনফারেন্স অনুষ্ঠিত হয় – যেখানে লেবানন, জর্ডান এবং ফিলিস্তিনের প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করেন। ১৯৪৬ সালের অক্টোবরে হাসানুল বান্নার নেতৃত্বে হজ্জের মওসুমে এক প্রতিনিধি দল মক্কায় যান এবং বিশ্বের বিশিষ্ট হাজীবৃন্দ ও ইসলামী চিন্তাবিদের সাথে সাক্ষাত করেন। ১৯৪৭ সালে ইরাকেও এ দাওয়াতের বীজ বপন করা হয় যা বিভিন্ন নামে আত্মপ্রকাশ করে। যার মূলধারায় অধিষ্ঠিত ছিলেন শায়খ মুহাম্মদ মাহমুদ আসসাওয়াফ। পাশ্চাত্য দেশগুলোর কনফারেন্স এবং আন্তর্জাতিক সম্মেলনেও ইখওয়ানের প্রতিনিধি দল অংশগ্রহণ করে।
দৈনিক পত্রিকা চালু
৫মে ১৯৪৬ সালে ইখওয়ান ইখওয়ানুল মুসলেমূন নামে একটি দৈনিক পত্রিকা চারু করে। সংবাদপত্রের জগতে এই প্রথম সাহসী ইসলামী পত্রিকার আত্মপ্রকাশ ঘটে। অন্যথায় বিশ বছর ধরে মিসরীয় সাংবাদিকতার ওপর জাহিলিয়াতের একচ্ছত্র আধিপত্য বজায় ছিল। এ দৈনিকটি শুধু মিসরেই নয় অন্যান্য আরব দেশেও ছড়িয়ে পড়ে এবং ক্রমে জনপ্রিয় হয়ে উঠতে থাকে। এটি অত্যন্ত নির্ভীকতার সাথে ইংরেজ উপনিবেশের রহস্য উম্মোচন এবং ঔপনিবেশিক চক্রের মাঝে ভীতির সঞ্চার করে।
বাণিজ্যিক কোম্পানি ব্যবস্থা
ইখওয়ান অর্থনৈতিক কোম্পানি ব্যবস্থাকেও বিভিন্ন জায়গায় সম্প্রসারিত করে এবং এ থেকে অস্বাভাবিক মুনাফা অর্জিত হতে থাকে। শ্রমিক শ্রেণীর মাঝে এর গ্রহণযোগৗতা বৃদ্ধি পায়। সামরিক প্রশিক্ষণকে মজবুত ভিত্তির ওপর সুসংহত করা হয়। এছাড়া বিভিন্ন সামরিক গ্রুপ গঠন করা হয়। এ যুগে শিক্ষা সংস্কৃতিরও যথেষ্টে সমৃদ্ধি ঘটে।
ইংরেজদের মুখোমুখি
একদিকে সংগঠন শক্তিশালী ও উত্তরণের এ পর্যায় পর্যন্ত পৌঁছে যার একটা মোটামুটি চিত্র আমরা উপরে পেশ করেছি। অপরদিকে দল রাজনৈতিক ময়দানে সাহসিকতার সাথে নেমে আসে। বিশ্বযুদ্ধ শেষ হতেই ইখওয়ান এ দাবী উত্থান করে যে, ইংরেজরা যুদ্ধকালীন সময় মিসরীয়দের সাথে যে ওয়াদা করেছিল তা তারা পূরণ করুক। এ ওয়াদা ছিল স্বাধীনতা প্রদানের। হাসানুল বান্না মাহমুদ ফাহমী নাকরাশী পাশার সাথে দেখা করে তার কাছে আবেদন জানালেন যে, হয় সরকার জাতীয় অধিকার প্রতিষ্ঠিত করুক এবং নীল উপত্যকার স্থায়িত্ব ও ঐক্যের স্বপ্নকে অর্থবহ করতে প্রস্তুত হোক, নয়তো জাতিকে ছেড়ে দেয়া হোক যাতে তারা জিহাদের মাধ্যমে নিজেদের আশা আকাঙ্ক্ষাকে পূর্ণ করতে পারে। এ সময় মিসরীয় জাতি নাজুক পরিস্থিতির মধ্যে নিমজ্জিত চিল। তাদের দৃষ্টিতে ইংরেজ সাম্রাজ্যের শৃঙ্খল থেকে মুক্ত হবার এটাই ছিল মোক্ষম সময়। হাসানুল বান্না ছিলেন জাতির কর্ণধার। তিনি স্বাধীনতার দাবীকে পূর্ণোদ্যমে তুলে ধরেন এবং স্বাধীনতা আন্দোলনের নেতৃত্ব দেন। নাকরাশী পাশা ঘাবড়ে গিয়ে ব্রিটিশ সরকারের কাছে একটি স্মারকলিপি পাঠান। কিন্তু ব্রিটিশ সরকার স্বাধীনতার দাবীর ব্যাপারে প্রকাশ্য স্বীকৃতির পরিবর্তে এর ডিপ্লোম্যাটিক জবাব পাঠায়। ইখওয়ানকে এই কলম আলোচনা রাজী করতে পারলো না। ইখওয়ানের আন্দোলনে শরীক হয়ে জনগণ ও ছাত্রসমাজ ইংরেজের বিরুদ্ধে বিশাল সমাবেশ প্রদর্শন করে এবং সেই রক্তাক্ত ঘটনা সংঘটিত হয় যা মিসরের ইতিহাসে, হিংস্র ঘটনা নামে পরিচিত। এ বিক্ষোভ সমাবেশ এবং এ থেকে সৃষ্ট পরিণতির কারণে নাকরাশী পাশাকে মন্ত্রিত্ব থেকে পদত্যাগ করতে হয়। ইসমাইল সিদকী পাশা মন্ত্রিত্ব গ্রহণ করেন। ইখওয়ান ইংরেজদের প্রত্যাহরের দাবীকে অব্যাহত রাখে সভা সমাবেশ হতে থাকে। ইখওয়ানের প্রতিনিধিরা মিসরের গ্রাম গ্রামান্তরে ছড়িয়ে পড়ে এবং স্বাধীনতার আওয়াজকে বুলন্দ করে তোলে। ইখওয়ানের পত্রিকাগুলো এই অগ্নিশিখাকে আরো প্রজ্বলিত করে।চতুর্দিক থেকে ইংরেজদের বিরুদ্ধে জিহাদের ঘোষণা উচ্চারিত হয়। সিদকী ইসমাইল পাশার আগমনে বিক্ষোভ সমাবেশ আরো তীব্র আকার ধারণ করে। ইখওয়ানের সকল শক্তি স্বাধীনতা অর্জনের আন্দোলনে অবতীর্ণ হয়।
এমতাবস্থায় হাসানুল বান্না সর্বদলীয় মিটিং আহবান করেন, যেন একটি ন্যাশনাল বোর্ড গঠন করা যায়। যা জনগণকে ঐক্যবদ্ধ ও সংগঠিত করবে এবং গোটা জাতি একই আওয়াজে স্বাধীনতা অর্জনের লক্ষ্যে অগ্রসর হবে। কিন্তু আফসোস, রাজনৈতিক দলগুলো শুনেও না শুনার ভান করলো। নাসাদ পার্টির স্বাদেশিকতাবাদে দোলার সৃষ্টি হলো, না সাদ জগলুল পাশার শ্লোগান ওয়াতানু লিলজামি কোন কাজে এলো, আর না ওয়ফদ পার্টির গণতন্ত্রকামীর দাবী জনগণের খিদমতের জন্য অগ্রসর হলো।
হাসানুল বান্না রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের স্তিমিত মনোভাব দেখে নিজেই অগ্রসর হলেন এবং সিদকী পাশাকে পরামর্শ দিলেন যে, ব্রিটিশ সরকারের সাথে বিতর্ক আলোচনা পরহার করে সোজাসুজী জিহাদের পথ বেছে নিন। কিন্তু ইখওয়ান সরকারকে ব্রিটিশের তাবেদার প্রত্যক্ষ করে কঠোর সমালোচনা ও তিরস্কার করলো। এবং সরকারের ওপর দেশের সাথে গাদ্দারী ও সাম্রাজ্যবাদীদের সাথে বন্ধুত্বেরে অভিযোগ আরোপ করলো। ইখওয়ানের পত্রিকাগুলো স্পষ্ট ভাষায় লিখলো যে, সরকার ঔপনিবেশিক কোম্পানীগুলোর সাথে নমনীয় নীতি গ্রহণ করেছে, বেকার সমস্যা সমাধানে অক্ষম হয়ে পড়েছে এবং ইংরেজদের চাপের মুখে জিহাদ থেকে মুখ ফিরয়ে রেখেছে। সংবাদপত্রগুলো সির ইংরেজ আলোচনারও তীব্র নিন্দা সমালোচনা করে, সিদকী পাশার ওপর আক্রমণাত্মক ভাষা ব্যবহার করা হয় এবং ব্রিটিশ উপনিবেশের ওপর উঞ্চ প্রতিবেদন লেখা হয়, যাতে জনগণের আবেগ তেলে বেগুনে জ্বলে উঠে। এ সময় ইখওয়ান শাহ ফারুককে একটি মেমোরেন্ডাম পেশ করে। এতে বলা হয় যে, সিদকী পাশার মন্ত্রিত্ব জাতীয় দাবী পূরণে অক্ষম। ইখওয়ানের কেন্দ্রীয় দফতর প্রত্যেক শাখাকে ইংরেজদের সাথে অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক এবং সামাজিক সকল সম্পর্ক ছিন্ন করার নির্দেশ জারী করে।
সিদকী পাশার দমন অভিযান
সিদকী পাশা দিশাহীন হয়ে ইখওয়ানের ওপর চড়াও হয়। অসংখ্য লোককে গ্রেফতার করে। দৈনিক ইখওয়ানুল মুসলেমূনের প্রকাশনা বন্ধ করে দয়া হয়। নায়েবে মুরশিদে আমকেও গ্রেফতার করা হয়। (মুরশিদে আম হাসানুল বান্না সে সময় প্রতিনিধি দল সহ হজ্জে গমন করেন ) এ দমননীতির জবাব ইখওয়ানের পক্ষ থেকে দেশব্যাপী প্রতিবাদ ও নিন্দা জানানোর মাধ্যমে দেয়া হয়। কায়রো এবং ইস্কান্দারিয়ায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। একে অজুহাত বানিয়ে ইখওয়ান কর্মাদের বাড় ঘেরাও করে অত্যন্ত নির্দয়ভাবে তল্লাশী চালানো হয়। এমনকি বাড়ির মহিলাদেরকেও লাঞ্ছিত করা থেকে রেহাই দেয়া হয়নি। ব্যাপক হয়রানী ও ভীতি প্রদর্শন করা হয়। ইখওয়ানের যেসব কর্মী সরকারী অফিসে চাকরী করতো তাদের কিছু সংখ্যককে চাকরীচ্যুত করা হয় এবং অনেককেই দুর দূরান্তে বদলী করা হয়। গোটা মিসরে এ নিয়ে চরম আহাজারীর সৃষ্টি হয় এবং সিদকী পাশা ক্ষমতা তেকে পদত্যাগ করতে বাধ্য হন।
নাকরাশী পাশার মন্ত্রিত্বের দ্বিতীয় যুগ
১০ ডিসেম্বর১৯৪৬ সালে দ্বিতীয়বারের মতো নাকরাশী পাশাকে প্রধানমন্ত্রীত্বের পদ অর্পণ করা হয়। অবস্থার দাবী ছিল এবার কোন ধনীকে এ যুদ্ধক্ষেত্রের লাগাম দেয়া হোক। সাদ পার্টির সভাপতি মাহমুদ ফাহমী নাকরাশী পাশাকে এ ব্যাপারে পরীক্ষা নিরীক্ষা করছিলেন, তা যেন সময়মতো কাজে লাগালেন। যে তারিখে নাকরাশী পাশা এ মহান দায়িত্ব গ্রহণ করেন সেদিন সংবাদপত্রে ইমাম হাসানুল বান্নার একটি নিবন্ধ প্রকাশিত হয়। যার মূলকথা ছিল নতুন সরকারকে সংক্ষিপ্ত পথই বেছে নেয়া উচিত। তাদের জাতির আশা আকাঙ্ক্ষাকে সম্মান করা, ব্রিটিশদের সাথে আলোচনার নাটক সমাপ্ত করা এবং জিহাদের মাধ্যমে দেশের স্বাধীনতা সমস্যাকে সমাধান করা উচিত। হাসানুল বান্না সুদীর্ঘ ধারাবাহিক রচনার মাধ্যমে সরকারের ভুর নীতির প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। দেশের নিষ্ঠাবান নাগরিকদের হয়রানী করা, তাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে তালা লাগানো, তাদেরকে কারাগারে নিক্ষেপে করা, বিভিন্নভাবে তাদের পেছনে লাগা এবং তাও আবার এমন সময়ে যখন কিনা দেশে জোরপূর্বক আধিপত্য বিস্তারকারী শত্রুদের নির্যাতনের মাত্রা কয়েকগুণ বৃদ্ধি পাচ্ছিল, এটা বোকামি ছাড়া আর কি ! কিন্তু এ সমালোচনা দ্বারা নাকরাশী পাশা বিবেককে সতর্ক করার পরিবর্তে একে ইখওয়ানের সাথে গৃহ যুদ্ধ হিসেবে রূপান্তরিত করেন। এ যুদ্ধে ফিলিস্তিনের বিষয়টি আরো তিক্ততা সৃষ্ট করে। এ অভিযানে ইখওয়ান ছিল ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত। একদিকে এ সমস্যা তাদের উত্তরণ ও প্রভাবের কষ্টিপাথরে পরিণত হয় এবং অপরদিকে মিসর ও মিসরের বাইরে তাদের জনপ্রিয়তা ও খ্যাতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। ১২ ডিসেম্বর ১৯৪৭ সালে ইখওয়ান এক বিশাল বিক্ষোভ মিছিল বের করে এ মিছিল বের হয় আযহার থেকে। এতে নেতৃত্বে দেন স্বয়ং হাসানুল বান্না।তিনি গাড়ীতে চড়ে লাউড স্পীকার দ্বারা পথ নির্দেশনা ঘোষণা করছিলেন। ৬মে ১৯৪৮ সালে ইখওয়ানের ফাউন্ডেশন কাউন্সিলের অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়। এতে মিসর সরকার এবং সকল আরব রাষ্ট্রের কাছে দাবী করা হয় যে, ইসরাইলের বিরুদ্ধে জিহাদের ঘোষণা করা হোক এবং ফিলিস্তিনকে রক্ষার জন্য সম্ভাব্য সকল প্রচেষ্টা চালানো হোক।
দমন নির্যাতনের চরমসীমা
১৫ মে ১৯৪৮ সালে আরব লীগের তত্বাবধানে ফিলিস্তিনে আরব সেনাবাহিনী অবতরণ করে এবং ইহুদীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু হয়। ইখওয়ানের স্বেচ্ছাসেবকরা এ যুদ্ধে বীরত্ব, সাহসিকতা ও আত্মত্যাগের যে নযীর স্থাপন করে, তার বিস্তারিত বর্ণনা আলাদাভাবে দেয়ার দাবী রাখে। আমেরিকা ও ব্রিটেনের ইহুদী পত্রিকাগুলো এ নিয়ে সোচ্চার হয়ে উঠে এবংয় একে ইসরাইলের ন্যাশনাল হোম ভূলুণ্ঠিত হওয়া হিসেবে গণ্য করে।
এ অবস্থায় নাকরাশী পাশা দমে যান। ফারুক আলগ এ মোল্লাদের ক্রমবর্ধমান প্রভাবে অস্থির হয়ে পড়েন। কতিপয় বিদেশী দূতাবাস ফায়েদে (ব্রিটিশ ফৌজের মিসরীয় অবস্থান) কনফারেন্স করে সর্বসম্মতিক্রমে নাকরাশী পাশা কর্তৃক ইখওয়ানকে অবৈধ ঘোষণা করার দাবী উত্থাপন করে। অপরদিকে নাকরাশী পাশা এ ব্যাপারে পেরেশান ছিলেন। তিনিও স্বীয় প্রভুদের সন্তুষ্টি অর্জনের খাতিরে ৮ ডিসেম্বর ১৯৪৮ সালে সামরিক অর্ডিন্যান্সের ৬৩ ধারা মোতাবেক ইখওয়ানকে অবৈধ ঘোষণা করেন।
এটা ছিল তার জীবনের এক বড় নির্বুদ্ধিতা। অতঃপর এমন এক অস্বাভাবিক অবস্থার সৃষ্টি হয় যে, তিনি তওবাও ভুলে যান। সারা মিসরে জুলুমের বিস্তার ঘটে। সংগঠনের সকল কেন্দ্র ও অফিসগুলো সরকারি নিয়ন্ত্রয়ে নেয়া হয়। হাজার হাজার শিক্ষিত যুবককে কারাগারে নিক্ষেপ করা হয় এবং তাদের ওপর বিচিত্র রকম নির্যাতন চালানো হয় যা শুনে গা শিউড়ে উঠে। খোদ নাকরাশী পাশাও এক যুবকের হাতে নিহত হন। এরপর ইবরাহীম আবদুল হাদী পাশা প্রধানমন্ত্রীত্বের আসনে সমাসীন হন। তিনি যথার্থই তার অভাব পূরণ করেন। দীনের পতাকাবাহীদের সাথে তিনি এমন কিছুই করা বাদ রাখেননি যা একজন অমুসলিমের পক্ষেও করা কষ্টকর হতো।
হাসানুল বান্নার ভবিষ্যদ্বাণী
ইমাম হাসানুল বান্নাকে আল্লাহ মুমিনসুলভ বিচক্ষণতা দ্বারা ধন্য করেছিলেন। তিনি ছিলে একজন দায়ী। দাওয়াতের প্রতিটি মনযিল সম্পর্কে তিনি জ্ঞাত ছিলেন। এ পথের সকল প্রতিবন্ধকতার মোকাবিলা করতে হয় তাঁকে।
‘জান্নাতের পথ অতিক্রান্ত হয় যন্ত্রণা ও কষ্টের মাঝে’ নবীর এ শিক্ষার প্রতি ছিল তাঁর গভীর দৃষ্টি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অনেক আগে যখন নির্যাতন ও অগ্নিপরীক্ষার দূরতম চিহ্নও চিল না তখন তিনি তার এক প্রবন্ধে উল্লেখ করেন:
আমি তোমাদেরকে বলতে চাই যে, তোমাদের দাওয়াত এখনো অধিকাংশ লোকের কাছে পৌঁছেনি। যখন এ দাওয়াত ও তার উদ্দেশ্য লক্ষ্য তাদের কাছে সুস্পষ্ট হয়ে উঠবে তখন তারা তোমাদের পেছনে লাগবে। তোমাদের ওপর কঠিন শত্রুতার সাথে চড়াও হবে। সে সময় অত্যন্ত সংকটের মধ্য দিয়ে তোমাদেরকে অগ্রসর হতে হবে। বিভিন্ন ধরনের প্রতিবন্ধকতা তোমাদের পথরোধ করে দাঁড়াবে। তখনই তোমরা সঠিক অর্থে দাওয়াতের পতাকাবাহী দের কাতারে গণ্য হবে। প্রকৃত ইসলাম সম্পর্কে জনগণের অজ্ঞতা তোমাদের জন্য পথের কাটা হয়ে দাঁড়াবে। সরকারপস্থী উলামা মাশায়েখ তোমাদের ইসলাম এর ওপর অঙ্গুলি প্রদর্শন করবে। এবং তোমাদের জিহাদ নিয়ে প্রশ্ন তুলবে। সমাজপতি ও কর্তৃত্বশীল ব্যক্তিরা তোমাদেরকে সহ্য করতে পারবেনা। সব সরকারই নির্দ্ধিধায় প্রতিরোধ করবে। তোমাদের তৎপরতার ওপর বাধ্যবাধকতা আরোপ করবে। দস্যুরা প্রতিটি বর্শা দ্বারাই তোমাদের বিরোধিতা করবে। নিভিয়ে দেয়া হবে তোমাদের দাওয়াতের প্রদীপকে। দুশ্চরিত্র ও দুর্বল সরকার তোমাদের বিরুদ্ধে এ দস্যুদের সাহায্য করবে এবং সেই শক্তিই তাদের আশ্রয়দাতা সাজবে যারা তোমাদের দিকে জুলুম নির্যাতনের জন্যে অগ্রসর হবে। আপর একটি দল তোমাদের বিরুদ্ধে সন্দেহ সংশয় ও মিথ্যা অপবাদের ঝড় সৃষ্টি করবে এবং তোমাদের ভেতর নানান দোষ খুঁজে বেড়াবে। এছাড়া জনগণের সামনে তোমাদের তৎপরতাকে বিকৃতভাবে উপস্থাপন করবে। একে নিজের শক্তি ও কর্তৃত্বের অহংকারে পরিণত করবে। সম্পদের শক্তির ওপর হস্ত প্রসারিত করবে। নিঃসন্দেহে এসব তোমাদের জন্য পরীক্ষা হয়ে উদ্ভূত হবে। ঘরবাড়ী থেকে বিতাড়িত করা হবে। জন্মভূমির পরিবেশ থেকে বঞ্চিত হতে হবে। তোমাদের অফিসগুলো বাজেয়াপ্ত হবে। তোমাদের ঘরবাড়ীর তল্লাশী হতে পারে। তবে তোমাদের সাথে আল্লাহর এ ওয়াদা রয়েছে যে, শেষ পর্যন্ত মুজাহিদদেরকে তিনি সাহায্য করবেন এবং সৎ কর্মশীলদেরকে প্রতিদান দিয়ে ধন্য করবেন।
ইমাম বান্নার শাহাদাত
ইখওয়ানুল মুসলেমূন নিষিদ্ধ ঘোষিত হবার পর এর হাজা হাজার কর্মীকে গ্রেফতার করা হয়। কিন্তু তাদের নেতা ইমাম হাসানুল বান্নাকে গ্রেফতার করা হয়নি। যালিমরা তাঁর বিরুদ্ধে অন্য মতলব তৈরি করে রেখেছিল। মিসর ত্যাগ করতে তাঁকে প্রশাসনিকভাবে বাধা দেয়া হয়। এমনকি দেশের ভেতরেও সরকারের অনুমতি ছাড়া চলাফেরার ওপর বাধ্যবাধকতা আরোপ করা হয়। তিনি একটি ইক্ষু ফার্মে স্থানান্তরিত হবার অনুমতি চাইলে সেই আখ ক্ষেতও নজরবন্দী করে রাখা হয়। অতঃপর ১২ ফেব্রুয়ারি ১৯৪৯ সালে সন্ধ্যাবেলা এই সত্য ও সুন্দরের প্রতিচ্ছবি, বিশ্বাস ও আত্মপ্রত্যয়ের পাহাড়, দীনের মশালবাহী এবং ঈমানের পথে আহ্বানকারীকে শুবাবানুল মুসলিমীনের কেন্দ্রীয় অফিসের সামনে প্রকাশ্যে শহীদ করা হয়। অপরদিকে ইংরেজদের ঘরে আনন্দের জোয়ার বইতে থাকে। হত্যার দায়দায়িত্ব চাপানো হয় আলওয়াতানু লিলজামি এর পতাকাবাহী সাআদ পার্টির ওপর। অথচ প্রত্যক্ষদর্শীরা সেই গাড়ীর নাম্বার ( ১৯৭৯) পর্যন্ত উল্লেখ করে যাতে চড়ে আক্রমনকারীরা এসেছিল এবং গুলি করার পর সে গাড়ীতে করেই পালিয়ে যায়। পরে পরে এ তথ্য উদঘাটিত হয় যে, এ গাড়িটি ছিল ফৌজদারি অপরাধ শাখার ইনচার্জ লেফটেন্যান্ট মাহমুদ আবদুল মজিদের। তিন বছর যাবত এ ধরনের একটা প্রকাশ্য শাহাদাতের ঘটনা সংঘটিত হওয়া স্বত্বেও এ পবিত্র খুনের অপরাধীদের ধরা হয়নি। ২৩ জুলাই ১৯৫২ সালে সেনা বিপ্লবের পর এ ষড়যন্ত্রের সাথে জড়িত এগার জন আসামীকে গ্রেফতার করা হয়। এদের মধ্যে মাহমুদ আবদুল মজিদও ছিল, যে পরে লেফটেন্যান্ট থেকে লেফট্যানেন্ট কর্নেল হয়েছিল – মেজর মুহাম্মদ আলজায়ার ছিল যে গাড়ীর নামবার সনাক্তকারী সাক্ষীকে বলেছিল বান্নার খুনি মুক্ত স্বাধীন এবং তাই থাকবে। যে ব্যক্তিই তার অন্তরায় সৃষ্টি করবে, সে তার গ্রীবা মেপে দেখতে পারে। তোমরা স্ত্রী পরিজন রয়েছে, কেন তাদেরকে ইয়াতীম বানানোর জন্য উদগ্রীব হচ্ছো। বাদশা ফারুকের খাস পরিচারক মুহাম্মদ হাসান এবং সার্জেন্ট মেজর মুহাম্মদ মাহফুজের গাড়ীর ড্রাইভার ও এদের অন্তর্ভুক্ত ছিল।
এ সত্যদীপ্ত পুরুষকে শহীদ করার জন্য যে নাটক অভিনয়ের ব্যবস্থা করা হয় তার সংক্ষিপ্ত বর্ণনা শুনুনঃ
১২ ফেব্রুয়ারি ১৯৪৯ সালে জমিয়তে শুব্বাতুল মুসলিমীন এক্সিকিউটিভ কাউন্সিলের একজন সদস্য অধ্যাপক নাগী জমিয়তের ইয়ং বয়েজ শাখার সভাপতি অধ্যাপক মুহাম্মদ আল লাইসীকে হাসানুল বান্নার কাছে এ সংবাদ দিয়ে পাঠান যে, হাসানুল বান্না যেন আজ রাতে জমিয়তের দফতরে আমার সাথে সাক্ষাত করেন যেখানে ইখওয়ানুল মুসলিমূনের ব্যাপারে সরকারের নতুন সিদ্ধান্তের কথা যা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং সন্তোষজনক, তাকে অবহিত করা যেতে পারে। সংবাদের মধ্যে এটাও ছিল যে, আমার আত্মীয় ইবরাহ৮ীম আবদুল হাদী পাশা (প্রধান মন্ত্রী) আমাকে এ দায়িত্ব দিয়েছেন যেন হাসানুল বান্নাকে আমি এসব সিদ্ধান্তের ব্যাপারে অবহিত করি। সুতরাং অধ্যাপক মুহাম্মদ আল লাইসী ইমাম হাসানুল বান্নার বাড়ীতে গিয়ে তাঁর কাছে সংবাদরে বিস্তারিত বিরবণ পেশ করেন। কিন্তু মর্দে মুমিনের দূরদৃষ্টি এ মন ভোলানো সংবাদ দ্বারা কোন প্রকার ধোঁকা ও প্রতারণায় নিমজ্জিত হয়নি। বরং সাথে সাথে তিনি এ ব্যাপারটির গভীরতায় পৌঁছেন। সংবাদ শুনার পর হাসানুল বান্না বলেনঃ
এদের মনোভাব খারাপ। এরা আমার সাথে কোন ধরনের বোঝাপড়া চায়নি বরং আমি এই মাত্র খবর পেয়েছি যে, যে ব্যক্তির কৃষি ফার্মে গিয়ে আমি অবস্থান করতে চেয়েছিলাম, তাকেও গ্রেফতার করা হয়েছে।এমনকি তার বৃদ্ধাবস্থার প্রতিও নুন্যতম মানবিকতা প্রদর্শন করা হয়নি। তবু অধ্যাপক নাগীর মনোরঞ্জনের খাতিরে আমি উপস্থিত হবো।
ইমাম হাসানুল বান্না নির্ধারিত সময়ে জমিয়তে শুব্বানুল মুসলিমীনের অফিসে পৌঁছেন। অধ্যাপক নাগীর সাথে আলাপ হচ্ছিল যে প্রসঙ্গে হাসানুল বান্না বলেন যে, উল্লেখযোগ্য কোন কথাই হয়নি। হাসানুল বান্না আলাপ শেষে ট্যাক্সি ডাকেন। এ সাক্ষাৎপর্বে তাঁর সাথে তাঁর জামাতা এডভোকেট আবদুল করীম মানসুরও ছিলেন (যিনি বর্তমানে সৌদি আরবে বসবাস করছেন ) অধ্যাপক মুহাম্মদ আল লাইসী হাসানুল বান্নাকে ট্যাক্সি পর্যন্ত এগিয়ে দেয়ার জন্য বের হন। কিন্তু পেছন থেকে পরিচারক অধ্যাপক লাইসীকে এ বলে ডাক দেয় যে,টেলিফোনে একজন তার সাথে কথা বলতে চান। কিন্তু অধ্যাপক লাইসী হাসানুল বান্না ও তার সাথীকে ট্যাক্সি উঠিয়ে দিয়ে ফিরে এসে টেলিফোন পর্যন্ত না পৌছতেই বাইরে গুলির আওয়াজ শোনা যায়। টেলিফোন রিসিভ না করেই তিনি সাথ সাথে বাইলে বেরিয়ে আসেন শব্দের উৎস জানতে। দেখলেন, অফিসের সামনে রোডের ওপর ওপর এক যুবক দাঁড়িয়ে আছে। যুবকটি লম্বা ও হালকা পাতলা গড়নের। গায়ে লম্বা কোর্ট এবং সাদা রুমাল দিয়ে মুখ বাধা, হাতে পিস্তল। অধ্যাপক লাইসী তাকে ধরবার জন্য জন্য চেঁচিয়ে উঠলেন। কিন্তু সে যুবকটি অধ্যাপক লাইসীকে লক্ষ্য করেও গুলি ছুড়লো। তবে দুর্ভাগ্যক্রমে গুলিটি লক্ষ্যচ্যুত হয়। লাইসী তাকে ধরবার জন্য ধাওয়া করলে সে আবারো গুলি ছুড়ে এবংয় পর পর দুবারই লাইসী অল্পের জন্য বেচে যান। ইতোমধ্যে যুবকটি সড়ক থেকে নেমে অন্যদিকে সরে পড়ে। তার অপেক্ষায় অন্য একটি লোক দাঁড়িয়ে ছিল। এরা দুজনই কালো রংয়ের মোটর সাইকেলে চড়ে পালিয়ে যায়। ইমাম হাসানুল বান্না গুলিবিদ্ধ হবার সাথে সাথে দ্রুত ট্যাক্সি থেকে নেমে জমিয়তে শুব্বানুল মুসলিমিনের অফিসে এ কথা বলতে বলতে প্রবেশ করেন যে, আমাকে হত্যা করা হয়েছে, আমাকে হত্যা করা হয়েছে। তৎক্ষণাৎ লাইসীও এসে পড়েন। টেলিফোন তখনো তার অপেক্ষা করছিল। মেজর মুহাম্মদ আল জাযযার (গোয়েন্দা পুলিশের রাজনৈতিক ব্রাঞ্চের অফিসার ) তার সাথে কথা বলছিলেন। লাইসী টেলিফোন উঠানো মাত্র তিনি তাকে জানালেন যে, হাসানুল বান্নার ওপর এইমাত্র জমিয়তের অফিসের সামনে হত্যামূলক গুলি হয়েছে। এরপর আল জাযযার জানতে চাইলেন, তিনি কি মারা গেছেন, নাকি এখনো জীবিত রয়েছেন? ঠিক তখনই হাসানুল বান্না হাসপাতালে রওনা হয়ে গেছেন। পরে লাইসীও তাঁর কাছে হাসপাতালে আসেন। মৃত্যু শয্যায় শায়িত অবস্থায় হাসানুল বান্নার মুখে অবিরাম কালিমা শাহাদত উচ্চারিত হচ্ছিল। কিছুক্ষণ পরে হাসপাতালে একজন যুবক এসে বললো আক্রমণ কারীদের গাড়ী যেখানে দাঁড় করানো ছিল আমি তার কাছেই দাঁড়িয়ে ছিলাম। গাড়ীটির নম্বর – ৯৯৭৯। এ হলো সেই যুবক যাকে পরবর্তীতে তার সন্তান ইয়াতীম হয়ে যাবার হুমকি দেয়া হয়েছিল।
হাসানুল বান্না শাহাদাত বরণ করার পর শহরে আতংক ও থমথমে অবস্থা বিরাজ করছিল। কিন্তু প্রতিশোধের আগুন তখনো জ্বলে উঠেনি। হাসপাতাল ঘিরে ফেলা হয়েছে। নিঃসঙ্গ শহীদের বৃদ্ধ পিতা শায়খ আব্দুর রহমান আহমদ বান্না একাকী জানাজা নামায আদায় করেন। মৃতদেহ তাঁর বাড়ীর পর্দানশীন মহিলারা শেষ আরাম-গাহে পৌঁছে দেন এবং আল্লাহর কোন বান্দার শোক মাতমের অনুমতিও ছিল না।
ইমাম হাসানুল বান্নার শাহাদতের পর হাংগামা, ধরপাকড় এবং বিশৃঙ্খলায় গোটা নীল উপত্যকা কেপে উঠে। যেখানে সেখানে ইখওয়ানের ওপর হয়রানী নির্যাতন চালানো হয়। আদালত কার্যক্রমের দীর্ঘ নাটক সাজিয়ে এদেরকে বিদ্রোহী সাব্যস্ত করা হয়।