হযরত আলী (রা) এর শাহাদাত
জঙ্গে জামালের পর ইসলামী খেলাফতের লড়াই দুই ব্যক্তির মধ্যে আসিয়া সীমাবদ্ধ হয়। একজন হইতেছেন হযরত আলী ইবনে আবু তালেব এবং অন্যজন হইতেছেন আমির মোয়াবিয়া ইবনে আবু ছুফিয়ান (রা)। এঁদের মধ্যে তৃতীয় গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি ছিলেন আমর ইবনুল আস (রা)। রাজনৈতিক প্রজ্ঞা ও কূটনীতিতে ইনি বিশেষ খ্যাতি অর্জন করিয়াছিলেন।
সিফফীনের যুদ্ধ মুসলমানদের মধ্যে খারেজী নামক আর একটি নূতন রাজনৈতিক দল সৃষ্টি করিয়া দিয়াছিলেন। দলটি সম্পূর্ণরূপে রাজনৈতিক উদ্দেশে গঠিত হইলেও এর সঙ্গে ধর্ম-বিশ্বাসকে জড়িত করা হইয়াছিল। ইহাদের রাজনৈতিক বিশ্বাস ছিলঃ (আরবী*****) “রাষ্ট্রের সর্বময় কর্তৃত্ব একমাত্র আল্লাহর।”
অর্থাৎ, রাষ্ট্রীয় কর্তৃত্ব কোন ব্যক্তিকেন্দ্রিক হওয়া বাঞ্ছনীয় নয়। বর্তমান যুগের দৃষ্টিভঙ্গিতে উহাদিগকে নৈরাজ্যবাদী বলা যাইতে পারে। এই জন্য উহারা কুফা ও দামেশকের উভয় রাষ্ট্রশক্তিরই ঘোর বিরোধী ছিল।
মক্কায় বসিয়া খারেজীগণ ইসলামের ইতিহাস সম্পূর্ণরূপে পরিবর্তিহত করিয়া দেওয়ার ষড়যন্ত্র করিল। েএই জন্য তিন ব্যক্তি তিনটি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব গ্রহণ করে। আমর ইবনে বকর তামিমী শপথ করিল, “আমি মিসরের শাসনকর্তা আমর ইবনুল আসকে দুনিয়া হইতে বিদায় করিব। কারণ, বর্তমান রাষ্ট্রীয় বিপর্যয়ের মূল উদ্যোগতা তিনি।” বারক ইবনে আবদুল্লাহ তামিমী শপথ নিল, “আমি মোয়াবিয়া ইবনে আবু ছুফিয়ানকে হত্যা করিব, কারণ, তিনি সিরিয়ায় রাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করিয়া চলিয়াছেন।”
দুই ব্যক্তির শপথের পর মুহূর্তের জন্য মন্ত্রণাসভায় নীরবতা দেখা দিল। তৃতীয় ব্যক্তি কর্তৃক হযরত আলীকে হত্যা করার কল্পনা যেন সকলের অন্তরকেই একবার কাঁপাইয়া তুলিল। শেষ পর্যন্ত আবদুর রহমান ইবনে মুলজিম মুরাবী নীরবতা ভঙ্গ করিয়া বলিল, আমি হযরত আলীকে হত্যা করিব।
এই ভয়ানক ষড়যন্ত্র কার্যকর করার জন্য ১০ই রমজান তারিখ নির্দিষ্ট হইল। প্রথম দুই ব্যক্তি অকৃতকার্য হয়, কিন্তু আবদুর রহমান ইবনে মুলজিম কৃতকার্য হইল। নিম্নে ঘটনার বিবরণ দেওয়া হইল।
মক্কা হইতে রওয়া হইয়া আবদুর রহমান কুফায় পৌঁছিল। এখানেও খারেজীদের একটি বিরাট দল মওজুদ ছিল। আবদুর রহমান তাহাদের নিকট যাতায়াত করিত। একদিন তামীমুর রুবাব গোত্রের কতিপয় খারেজীর সহিত তাহার সাক্ষাৎ হইল। ইহাদের মধ্যে কাত্তাম বিনতে সাজনা নাম্নী এক পরমা সুন্দরী ছিল। আবদুর রহমান সহজেই সুন্দরীর প্রতি আসক্ত হইয়া উঠিল। নিষ্ঠুর প্রেমিকা বলিল, আমাকে পাইতে হইলে মোহরানা বাবদ যা দাবী করিব তাহা দিতে হইবে। ইবনে মুলজিম সহজেই রাজি হইয়া গেল। কাত্তাম মোহরানার শর্ত বলিলঃ “তিন সহস্র দেরহাম, একটি ক্রীতদদাস, একটি দাসী ও হযরত আলীকে হত্যা।” আবদুর রহমান বলিল, আমি প্রস্তুত আছি, কিন্তু আলীকে কি করিয়া হত্যা করিব?
রক্তপিপাসু প্রিয়া বলিল, অত্যন্ত গোপনে। “যদি তুমি কুতকার্য হইয়া ফেরত আসিতে পার তবে আল্লাহর সৃষ্টিকে বিপর্যয়ের হাত হইতে রক্ষা করিতে সমর্থ হইবে। স্ত্রী-পুত্র লইয়া সুখের সংসার গড়িতে পারিবে। যদি মারা যাও তবে জান্নাতের অনন্ত সুখ প্রাপ্ত হইবে।।” আবদুর রহমান আনন্দিত হইয়া কবিতা আবৃত্তি করিতে করিতে বিদায় হইল।
বিভিন্ন বর্ণনায় জানা যায়, হযরত আলী (রা) অন্তর্দৃষ্টি দ্বারা অনাগত দুর্ঘটনার কথা অনুমান করিতে পারিয়াছিলেন। তিনি আবদুর রহমান ইবনে মুলজিমকে দেখিয়াই মনে করিতেন, ইহার হাত যেন রক্তে রঞ্জিত হইবে। ইবনে সাদের এক বর্ণনায় দেখা যায়, তিনি বলিতেন, “আল্লাহর শপথ, রসূলে খোদা (সা) বলিতেন, আমার মৃত্যু হইবে হত্যার মাধ্যমে।”
আবদুর রহমান ইবনেস মুলজিম দুইবার তাঁহার নিকট বায়আতের জন্য উপস্থিত হয়, কিন্তু দুইবারই তিনি তাহাকে ফিরাইয়া দেন। তৃতীয় বার আগমন করিলে তিনি বলিতে লাগিলেন, “সবচাইতে ঘৃণ্য নরাধমকে কে ফিরাইয়া দিতেছে? (দাড়িতে হাত দিয়া বলিলেন) আল্লাহর শপথ, এই বস্তু নিশ্চয়ই রঙ্গিন হইয়া উঠিবে।”- (ইবনে সাদ)
কখনও সঙ্গীদের প্রতি বিরক্ত হইলে বলিতেন, “তোমাদের সবচাইতে হতভাগ্য ব্যক্তির আগমন ও আমাকে হত্যা করার ব্যাপারে কে অন্তরায় সৃষ্টি করিতেছে? হে খোদা, আমি উহাদের প্রতি উত্ত্যক্ত হইয়া উঠিয়াছি। আর উহারাও আমার প্রতি চরমভাবে বিরক্ত হইয়া গিয়াছে। আমাকে উহাদের কবল হইতে মুক্তি দাও; উহাদিগকেও আমার সান্নিধ্য হইতে মুক্তি দাও।”- (তাবাকাতে ইবনে সাদ, কামেল, ইবনে আসীর প্রভৃতি)
একদিন খুৎবা দিতে যাইয়া বলিলেন, “ঐ মহান শক্তির শপথ, যিনি বীজ, অঙ্কুর ও জীবন সৃষ্টি করিয়াছেন, উহা অবশ্যই এই বস্তু দ্বারা রঞ্জিত হইবে (দাড়ি ও মাথার প্রতি ইঙ্গিত করিলেন)। হতভাগ্য কেন বিলম্ব করিতেছে?”
লোকেরা নিবেদন করিল, আমীরুল মোমেনীন; আমাদিগকে তাহার নাম বলুন, এখনই তাহার দফা শেষ করিয়া দেই। বলিলেন, এমতাবস্থায় তোমরা এমন ব্যক্তিকে হত্যা করিবে, যে এখনও আমাকে হত্যা করে নাই।
লোকেরা বলিল, তবে আমাদের জন্য একজন খলিফা নির্বাচিত করিয়া যান। বলিলেন, না; আমি তোমাদিগকে সেই অবস্থায় ছাড়িয়া যাইতে চাই, যে অবস্থায় রসূলে খোদা (সা) তোমাদিগকে ছাড়িয়া গিয়াছিলেন।
লোকেরা নিবেদন করিল, এমতাবস্থায় আপনি আল্লাহর নিকট কি জওয়াব দিবেন? বলিলেন, বলিব- খোদা, আমি উহাদের মধ্যে তোমাকে ছাড়িয়া আসিয়াছি; যদি তুমি ইচ্ছা কর তবে উহাদের সংশোধন করিও; আর যদি ইচ্ছা কর উহাদের ধ্বং করিয়া দাও।
(মোসনাদে ইমাম আহমদ)
দুর্ঘটনার পূর্বে
হযরত আলীর দাসী উম্মে জাফরের বর্ণনা, হযরত আলী (রা) নিহত হওয়ার কয়েকদিন পূর্বে আমি একদিন তাঁহার হাত ধুইয়া দিতেছিলাম। তিনি মাথা উঠাইয়া দাড়িতে হাত রাখিলেন এবং বলিতে লাগিলেন, “আক্ষেপ তোর জন্য, তুই রক্ত দ্বারা রঞ্জিত হইবি।”- (ইবনে সাদ)
তাঁহার কোন কোন সঙ্গীও এই ষড়যন্ত্রের কথা আঁচ করিতে পারিয়াছিলেন। বনী মুরাদের একব্যক্তি আসিয়া বলিলেন, “আমীরুল মোমেনীন, সাবধানে থাকিবেন, এখানকার কিছু লোক আপনাকে হত্যার চেষ্টা করিতেছে।”
-(আল ইমামাতু ওয়াস সিয়াসুতু)
কোন গোত্রের লোক এই ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হইয়াছে, এই কথা জানাজানি হইয়া গিয়াছিল। একদিন নামায পড়িতেছিলেন,ম এমন সময় এক ব্যক্তি আসিয়া বলিল, “আমীরুল মোমেনীন, সাবধানে থাকিবেন। মুরাদ গোত্রের কিছু লোক আপনাকে হত্যার ষড়যন্ত্র করিতেছে।”- (ইবনে সাদ)
কে এইরূপ দুরভিসন্ধিতে লিপ্ত হইয়াছে, সেই কথাও প্রকাশ পাইয়া গিয়াছিল। আশ্আস্ একদিন ইবনে মুলজিমকে একটি নূতন তরবারি ধার দিতে দেখিলেন। জিজ্ঞাসা করিলেন, এখন তো কোন যুদ্ধ নাই, নূতন তরবারি ধার দিতেছ কেন?
ইবনে মুলজিম জওয়াব দিল, একটি জংলী উট জবেহ করিতে হইবে। আশ্আস ব্যাপারটি বুঝিতে পারিলেন এবং খচ্চরে আরোহণ করিয়া হযরত আলীর নিকট আগমন করতঃ বলিতে লাগিলেন, “আপনি কি ইবনে মুলজিমের দুঃসাহস ও ধৃষ্টতা সম্পর্কে কি জ্ঞাত আছেন? হযরত আলী (রা) জওয়াব দিলেন, কিন্তু সে তো এখনও আমাকে হত্যা করে নাই। -(আল-কামেল)
উবনে মুলজিমের দুরভিসন্ধির কথা এতটুকু প্রকাশ হইয়া গিয়াছিল যে, একদিন হযরত আলী (রা) স্বয়ং তাহাকে দেখিয়া আমর ইবনে মাদীকারেবের এই কবিতাটি আবৃত্তি করিতে লাগিলেন- (আরবী*****)
ইবনে মুলজিম বরাবরই নিজের সাফাই গাহিত, কিন্তু একদিন সে মুখ খুলিয়া বলিয়া ফেলিল, “যাহা হইবার তাহা অবশ্যই ঘটিবে।”
এই কথা শুনিয়া লোকেরা বলিতে লাগিল, আমীরুল মোমেনীন, আপনি যখন তাহাকে চিনিতে পারিয়াছেন তখন উহাকে হত্যা কেন করিতেছেন না? হযরত আলী (রা) বলিলেন, যে আমার হত্যাকারীরূপে নির্ধারিত তাহাকে আমি কি করিয়া হত্যা করি? (কামেল)
শাহাদাতের সকাল
হত্যার দুর্ঘটনা জুমার দিন ফজরের সময় সংঘটিত হয়। ইবনে মুলজিম সারারাত আশ্আস্ ইবনে কায়স কেন্দীর মসজিদে বসিয়া তাঁহার সহিত কথাবার্তা বলিয়া কাটাইয়া দেয়। সে কুফার শাবীব বাজরা নামক আর একজন খারেজীকে এই দুষ্কর্মের সঙ্গী করিয়া লইয়াছিল। রাত্রি শেষে উভয়েই তরবারি লইয়া রওয়ানা হয় এবং মসজিদের যে দরজা দিয়া সাধারণতঃ আমীরুল মোমেনীন প্রবেশ করিতেন সেই দ্বারে আসিয়া বসিয়া থাকে।
-(ইবনে সাদ)
সেই রাত্রে আমীরুল মোমেনীনের নিদ্রা আসিল না। হযরত হাসান (রা) বর্ণনা করেন, সকালবেলা আমি তাঁহার সহিত সাক্ষাৎ করিতে আসিলে বলিতে লাগিলেন, বৎস, রাত্রিভর একটুকুও ঘুমাইতে পারি নাই। একবার বসিয়া বসিয়াই একটু তন্দ্রার ভাব হইলে রসূলুল্লাহ (সা)-কে স্বপ্নে দেখিলাম। বলিলাম, ইয়া রসূলুল্লাহ, আপনার উম্মত দ্বারা আমি বড় কষ্ট পাইয়াছি। তিনি বলিলেন, দোয়া কর যেন আল্লাহ পাক উহাদের কবল হইতে মুক্তি দেন।– (কামেল)
ইহার পর আমি দোয়া করিলাম, হে খোদা, আমাকে উহাদের চাইতে ভাল সঙ্গী দাও এবং উহাদিগকে আমার চাইতে নিকৃষ্ট সঙ্গীর কবলে পতিত কর।- )ইবনে সাদ)
হযরত হাসান (রা) বলেন, এই সময়ই ইবুনল বান্না মোয়াজ্জেন আসিয়া নামাজের জন্য ডাকিতে লাগিলেন। আমি পিতার হাত ধরিয়া তাঁহাকে উঠাইয়া মসজিদের দিকে যাইতে শুরু করিলাম। ইবনুল বান্না তাঁহার অগ্রে এবং আমি পশ্চাতে ছিলাম। দরজার বাহিরে আসিয়া তিনি ডাকিতে শুরু করিলেন, “লোকসকল, নামায!” বরাবর তাঁহার নিয়ম ছিল, লোকদিগকে তিনি মসজিদে আসার জন্য নিদ্রা হইতে জাগাইতেন।
অন্য এক বর্ণনায় আছে, মোয়াজ্জেনের ডাক শুনিয়াও তিনি উঠিলেন না। মোয়াজ্জেন দ্বিতীয়বার আসিল, কিন্তু এইবারও তিনি উঠিতে পারিলেন না। তৃতীয়বার ডাকার পর তিনি অতি কষ্টে নিম্নের মর্ম স্মবলিত কবিতা আবৃত্তি করিতে করিতে মসজিদের দিকে রওয়ানা হইলেন-
“মৃত্যুর অবশ্যই তোমার সহিত মিলিত হইবে।
মৃত্যুর জন্য কোমর বাঁধিয়া লও, কারণ
মৃত্যুকে ভয় করিও না; যদি মৃত্যু আসিয়া উপনীত হয়।” –(এহইয়াউল উলুম)
সম্মুখে অগ্রসর হওয়ার সঙ্গেই দুইটি তরবারি একত্রে চমকিতে দেখা গেল। সঙ্গে সঙ্গে একটি আওয়াজ শোনা গেল; “রাজ্য আল্লাহর, হে আলী, তোমার নয়।” শাবীবের তরবারি লক্ষ্যভ্রষ্ট হইল, কিন্তু ইবনে মুলজিমের তরবারি তাঁহার ললাটদেশে বিদ্ধ হইয়া মস্তিষ্ক পর্যন্তহ আসিয়া পৌঁছিল।” –(ইহ্ইয়াউল উলুম)
সঙ্গে সঙ্গে বলিতে লাগিলেন, আততায়ী যেন পলাইতে না পারে। আওয়াজ শুনিয়া চারিদিক হইতে লোক ছুটিল, কিন্তু ইহার ভিতর হইতেই শাবীব পলাইয়া যাইদে সমর্থ হয়।– (ইবনে সাদ)
আবদুর রহমান তরবারি ঘুরাইতে ঘুরাইতে ভীড়[ ঠেলিয়া দ্রুত অগ্রসর হইতে লাগিল। এইভাবে পলায়ন করার মুখেই মুগীরা ইবনে নওফাল নামক বিখ্যাত বীর পুরুষ দৌড়াইয়া গিয়া তাহার উপর পুরু কাপড় ফেলিয়া দিলেন এবং শূন্যে তুলিয়া মাটিতে আছড়াইয়া ফেলিলেন।– (কামেল)
আততায়ীর সহিত কথোপকথন
আহত আমীরুল মোমেনীনকে গৃহে পৌঁছানো হইল। তিনি আততায়ীকে ডাকাইলেন। তাহাকে সম্মুখে আনা হইলে বলিলেন, হে খোদার দুশমন, আমি কি তোর প্রতি কোন অনুগ্রহ করি নাই? সে বলিল, নিশ্চয়! বলিলেন, ইহার পরও তুই কেন এই কাজ করিলি? আততায়ী বলিতে লাগিল, আমি চল্লিশ দিন যাবত আমার তরবারি ধার দিতেছিলাম এবং আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করিতেছিলাম, ইহা দ্বারা যেন তাঁহার নিকৃষ্টতম সৃষ্টিকে হত্যা করিতে পারি।
আমীরুল মোমেনীন বলিলেন, “তুই এই তরবরি দ্বারাই নিহত হইবি। তুই-ই আল্লাহর নিকৃষ্টত সৃষ্টি।”-(তাবেরী)
তাঁহার কন্যা উম্মে কুলসুম চিৎকার করিয়া বলিলেন, হে খোদার দুশমন, তুই আমীরুল মোমেনীনকে হত্যা করিয়াছিস। আততায়ী বলিল, “আমি আমীরুল মোমেনীনকে হত্যা করি নাই; অবশ্য তোমার পিতাকে হত্যা করিয়াছি।” তিনি রাগান্বিত হইয়া বলিলেন, আল্লাহর অনুগ্রহে আমি আশা করি, আমীরুল মোমেনীনের একটি পশমও বাঁকা হইবে না। সে বলিল, ‘তবে আর কেন চিৎকার কর?’ পুনরায় বলিল, আল্লাহর শপথ, আমি দীর্ঘ একমাস যাবত এই তরবারিকে বিষ পান করাইয়াছি। তাহার পরও যদি উহা বিশ্বসঘাতকতা করে তবে খোদা উহার সর্বনাশ করিবেন।”-(ইবনে সাদ)
আমীরুল মোমেনীন হযরত হাসানকে বলিলেন, “এই ব্যক্তি বন্দী; উহার সহিত সদ্ব্যবহার কর। ভাল খাইতে দাও, নরম বিচানা দাও। যদি বাঁচিয়া থাকি তবে আমার রক্তের সবচেয়ে দাবীদার আমি হইব। ইহার নিকট হইতে প্রতিশোধ গ্রহণ করিব অথবা ক্ষমা করিয়া দিব। আর যদি মরিয়া যাই তবে উহাকে আমার পিছনেই প্রেরণ করিয়া দিও। আল্লাহর দরবারে উহার জন্য ক্ষমা চাহিব।”
“হে বনী আবদুল মোত্তালেব, দেখিও, এই ঘটনাকে কেন্দ্র করিয়া যেন মুসলমানদের মধ্যে রক্তপাত শুরু করিয়া দিও না। সাবধান! আমার হস্তা ব্যতীত আর কাহাকেও হত্যা করিও না।” হাসান! উহার এই আঘাতে যদি আমার মৃত্যু হয়, তবে উহাকে অনুরূপ আঘাত দ্বারা শেষ করিয়া দিও। উহার নাক, কান কর্তন করিয়া লাশ খারাপ করিও না। আমি রসূলুল্লাহ (সা) –কে বলিতে শুনিয়াছি, “সাবধান! নাক কান কাটিও না- যদিও সে কুকুর হয়।”-(তাবেরী)
অন্য এক বর্ণনায় আছে, “তিনি বলিলেন, যদি তোমরা ‘কেসাস’ (প্রতিশোধ) লইতে চাও তবে উহাকে সেইরূপ আঘাতেই হত্যা করিও, যেইরূপ আঘাতে সে আমাকে হত্যা করিয়াছে। আর যদি ক্ষমা করিয়া দাও তবে উহাই তাক্ওয়ার (খোদাভীতির) বিশেষ নিকটবর্তী।” –(কামেল)
“দেখিও, বাড়াবডিড় করিও না। কেননা, আল্লাহ বাড়াবাড়িকারীদেরকে পছন্দ করেন না।” –(ইবনে সাদ)
অন্তিম উপদেশ
উপরোক্ত উপদেশগুলি দেওয়ার পর তিনি সংজ্ঞাহীন হইয়া গেলেন। সংজ্ঞা ফিরিয়া আসার পর জুনদুব ইবনে আবদুল্লাহ আসিয়া বলিলেন, খোদা না করুন, আপনি যদি দুনিয়াতে না থাকেন, তবে কি আমরা হযরত হাসানকে খলিফা নির্বাচিত করিব? তিনি জওয়াব দিলেন, “আমি তোমাদিগকে এইরূপ নির্দেশ দিব না, নিষেধও করিতেছি না। তোমরা নিজেদের মঙ্গলের জন্য যাহা ভাল মনে কর, তাহাই করিও।”-(তাবেরী)
অতঃপর পুত্রদ্বয় হযরত হাসান ও হোসাইনকে ডাকিয়া বলিতে লাগিলেন, “আমি তোমাদের দুইজনকে খোদাভীতির উপদেশ দিতেছি। কখনও দুনিয়ার পশ্চাতে লাগিও না, যদিও এই দুনিয়া তোমার পশ্চাদ্ধাবন করে। যে বস্তু তোমার নিকট হইতে দূর হইয়া যাইবে তাহাতে দৃঢ় থাকিও না। সর্বদা সত্য ও ন্যায়ের পথে থাকবে। এতীমের প্রতি দয়া করিও। অসহায়ের সাহায্য করিও । আখেরাতের জন্য আমল করিও। অত্যাচারীর শত্রু ও নির্যতিতের সহকারী হইও। আল্লাহর কিতাব অনুসরণ করিও। আল্লাহর পথে চলার জন্য তিরস্কারকারীদের তিরস্কারের পরোয়া করিও না।”
এরপর তিনি তৃতীয় পুত্র মোহাম্মদ ইবনে হানাফিয়ার প্রতি দৃষ্টিপাত করিয়া বলিলেন, “তোমার ভাইদের জন্য যে উপদেশ দিয়াছি তাহা অনুধাবন করিয়অছ তো? তিনি নিবেদন করিলেন, জি হাঁ? আবার বলিলেন, “আমি তোমাকেও এই উপদেশই দিতেছি। পুনরায় বলিতেছি, তোমার এই দুই ভাইয়ের বিরাট মর্যাদার কথা সর্বদা স্মরণ রাখিও। তাহাদের অনুগত থাকিও। তাহাদের পরামর্শ ব্যতীত কোন কাজ করিও না।” অতঃপর ইমাম হাসান-হোসাইনকে পুনরায় বলিলেন, “আমি তোমাদগকে তাহার সম্পর্কে অসিয়ত করিতেছি, সেও তোমাদের ভাই, তোমাদের পিতারই সন্তান। তোমরা জান তোমাদের পিতা তাহাকে ভালবাসেন।”
তৎপর ইমাম হাসানকে বলিলেন, “বৎস! আমি তোমাকে অসিয়ত করিতেছিঃ আল্লাহকে ভয় করিও। সময়মত নামায পড়িও, পরিমাণমত যাকাত আদায় করিও। ভালভাবে অজু করিও। কেননা, পবিত্রতা ব্যতীত নামায সম্ভবপর নহে। যাকাত অস্বীকারকারীর নামায কবুল হয় না। আর অসিয়ত করিতেছি, মানুষের ত্রুটি-বিচ্যুতি ক্ষমা করিও। ধর্মীয় ব্যাপারে যুক্তি-বুদ্ধির অনুসরণ করিও। প্রত্যেক ব্যাপারে ভালভাবে অনুসন্ধান করিও। কোরআনের সহিত গভীর সম্পর্ক রাখিও। প্রতিবেশীর সহিত সদ্ব্যবহার করিও। অশ্লীলতা হইতে দূরে থাকিও।”-(তাবারী)
তারপর সকল সন্তানদের ডাকিয়া বলিলেন, “আল্লাহকে ভয় করিও। অলস নিষ্কর্মা হইও না। নীচতা অবলম্বন করিও না। হে কোদা, আমাদের সকলকে হেদায়েতের পথে দৃঢ় রাখ। আমাকে ও তাহাদেরকে দুনিয়ার প্রতি নির্সক্ত করিয়া দাও। আমার ও তাহাদের জন্য আখেরাত এখানকার চাইতে ভাল করিয়া দাও।” –(আল-ইমামাতু ওয়াস সিয়াসাতু)
মৃত্যুর সময় তিনি নিম্নলিখিত অসিয়ত লিপিবদ্ধ করাইয়া ছিলেন: “ইহা আলী ইবনে আবু তালেবের অন্তিম বাণী। তিনি সাক্ষ্য দিতেছেন, এক আল্লাহ ব্যতীত আর কেহ উপাস্য নাই। মোহাম্মদ (সা) তাঁহার বান্দা ও রসূল। আমার নামায, আমার এবাদত, আমার জীবন, আমার মৃত্যু, সবকিছু আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের জন্য। তাঁহার কোন শরীক নাই। আমাকে এইরূপ নির্দেশ দেওয়া হইয়াছে এবং আমি সর্বপ্রথম তাঁহার প্রতি অনুগত। অতঃপর হে হাসান, আমি তোমাকে এবং আমার সমস্ত সন্তানকে উপদেশ দিতেছি, আল্লাহকে ভয় করিও। যখন মৃত্যুমুখে পতিত হইবে তখন ইসলামের উপরই মৃত্যুবরণ করিও। সকলে মিলিয়া আল্লাহর রশি দৃঢ়ভাবে ধারণ করিও। পরস্পরের মধ্যে অনৈক্য আসিতে দিও না। ” কেননা, আমি রসূলে খোদা আবুল কাসেম (সা) কে বলিতে শুনিয়াছি, “পরস্পরের সৌহার্দ্য বজায় রাখা রোযা-নামাযের চাইতে উত্তম। আত্মীয়-স্বজনের প্রতি লক্ষ্য রাখিও। তাহাদের উপকার করিও, আল্লাহ্ হিসাব সহজ করিয়া দিবেন। হাঁ, এতীম! এতীম!! এতীমের প্রতি বিশেষ দৃষ্টি রাখিও। উহারা কোন প্রকার ক্ষতিগ্রস্ত যেন না হয় এবং তোমাদের প্রতিবেশী। প্রতিবেশীর অধিকার সম্পর্কে সর্বদা সচেতন থাকিবে। কেননা, উহা তোমাদের নবীর অন্তিম উপদেশ। রসূলুল্লাহ (সা) সবসময় প্রতিবেশীর অধিকার সম্পর্কে উপদেশ দিতেন। এমনকি আমরা মনে করিতে লাগিলাম, শেষ পর্যন্ত বোধ হয় প্রতিবেশীর উত্তরাধিকার স্বীকৃত হইবে এবং দেখিও, কোরআন! কোরআনের উপর আমল করার ব্যাপারে যেন কেহ তোমাদে উপর প্রাধান্য লাভ করিতে না পারে। এবং নামায! নামায!! কেননা, উহা তোমাদের ধর্মের প্রধান স্তম্ভ। তোমাদের আল্লাহর ঘর সম্পর্কে কখনও উদাসীন থাকিও না।
আল্লাহর পথে জেহাদ! আল্লাহর পথে স্বীয় জানমাল দিয়া জেহাদ করিও। যাকাত! যাকাত!! যাকাত তোমাদের প্রভুর ক্রোধকে ঠাণ্ডা করিয়া দেয় এবং তোমাদের নবীর যিম্মী! তোমাদের নবীর যিম্মী!! অর্থাৎ, ঐ সমস্ত অমুসলিম, যাহার তোমাদের সহিত বসবাস করে, তোমাদের সম্মুখে তাহাদের উপর যেন কোন প্রকার অত্যাচার হইতে না পার। তোমার নবীর সাহাবী! তোমাদের নবীর সাহাবী!! আল্লাহর রসূল (সা) তাঁহার সাহাবীদের সম্পর্কে বিশেষভাবে অসিয়ত করিয়া গিয়াছেন। ফকীর-মিসকিন! দরিদ্র অসহাস শ্রেণী!! তাহাদের তোমাদের জীবিকার অংশীদার করিয়া লইও এবং তোমাদের ক্রীতদাস! সর্বদা ক্রীতদাসের সহিত সদ্ব্যবহার করিও।
আল্লাহর সন্তুষ্টির ব্যাপারে যদি কাহারও পরোয়া না কর, তবে তিনি তোমাদিগকে শত্রুতের হাত হইতে রক্ষা করিবেন। খোদার সকল সৃষ্টির প্রতি দয়া-প্রীতি রাখিও। ভালভাবে কথা বলিও। আল্লাহ এইরূপই নির্দেশ দিয়াছেন। সৎকর্মে উৎসাহদান এবং অসৎ কর্ম প্রতিরোধ করিতে থাকিও। অন্যথায় সমাজের দুষ্ট শ্রেণীকে তোমাদের উপর প্রবল করিয়া দেওয়া হইবে। অতঃপর তোমরা দোয়া করিবে, কিন্তু তাহা আল্লাহর নিকট কবুল হইবে না। পরস্পরের মধ্যে অনৈক্য সৃষ্টি করিও না, অথবা পরস্পর হইতে বিচ্ছিন্ন হইয়া যাইও না। সততা ও খোদাভীতিকর ব্যাপারে পরস্পর পরস্পরের সাহায্য করিও, কিন্তু পাপ ও সীমালঙ্ঘনের ব্যাপার কেহ কাহাকেও সহায়তা করিও না। আল্লাহকে ভয় করিও। কেননা, আল্লাহর আজাব বড়ই ভীষণ। হে আহলে বায়দত. আল্লাহ তোমাদিগকে রক্ষা করুন এবং তাঁহার নবীর প্রদর্শিত পথে কায়েম রাখুন। আমি তোমাদিগকে আল্লাহর নিকট সমর্পণ করিতেছি। তোমাদের শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনা করিতেছি”
এরপর লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ বলিয়াই চিরদিনের মত তাঁহার যবান স্তব্ধ হইয়া যায়।– (তাবারী, ৬ষ্ঠ খণ্ড)
দাফনের পর
দাফনের পর দ্বিতীয় দিন হযরত ইমাম হোসাইন (রা) মসজিদে এই মর্মে খুৎবা দিলেনঃ
“লোকসকল, গতকণ্য তোমাদের মধ্য হইতে এমন এক ব্যক্তি বিদায় হইয়া গিয়াছেন, বিদ্যার ক্ষেত্রে পূর্বে তাঁহার সমকক্ষতা কেউ করিতে পারে নাই, না ভবিষ্যতে পারিবে। আল্লাহর রসূল (সা) তাঁহাকে পতাকা সমর্পণ করিতেন; আর তাঁহার হাতেই বিজয় আসিত। তিনি স্বর্ণ-রৌপ্য কিছুই রাখিয়া যাইতে পারেন নাই। কেবলমাত্র দৈনন্দিন ভাতা হইতে বাঁচাইয়া সতশত দেরহাম (এক দেরহাম প্রায় চারি আনা) পরিবার-পরিজনের জন্য রাখিয়া গিয়াছেন।” –(মোসনাদে হাসান)
যায়েদ ইবনে হোসাইন (রা) বর্ণা করেনঃ আমীরুল মোমেনীনের শাহাদাতের খবর কুলসুম ইবনে ওমরের মারফত মদীনায় পৌঁছে। খবর প্রচারিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই সমগ্র শহরে শোকের মাতম বহিয়া যায়। এমন কোন লোক ছিল না যে রোদন করে নাই। আল্লাহর রসূলের ইন্তেকালের পর যে অবস্থার সৃষ্টি হইয়াছিল, সেই অবস্থারই যেন পুনরাবৃত্তি হইল। একটু শান্ত হওয়ার পর সাহাবীগণ হযরত আয়েশার গৃহের দিকে চলিলেন। এই খবর শোনার পর উম্মুল মোমেনীনের কি অবস্থা হইয়াছে তাহা জানিতে সকলেই যাইয়া হযরত আয়েশার হুজরা প্রাঙ্গণে সমবেত হইলেন।
এখানে আসিয়া সকলেই দেখিলেন, দুর্ঘটনার খবর পূর্বেই পৌঁছিয়া গিয়াছে। উম্মুল মোমেনীন শোকে অধীন হইয়া পড়িয়া রহিয়াছেন। তাঁহার দুই গণ্ড অশ্রু প্লাবনে ভাসিয়া গিয়াছে। এই অবস্থা দেখিয়া সকলে ফিরিয়া আসিলেন।”
হযরত যায়েদ (রা) বলেন, দ্বিতীয় দিন প্রচারিত হইল, হযরত উম্মুল মোমেনীন (রা) রসূলে খোদা সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লামের রওজায় আসিতেছেন। খবর শুনিয়া মোহাজের ও আনসারগণ সম্মানার্থ সমবেত হইলেন। সকলে অগ্রসর হইয়া সালাম নিবেদন করিতে লাগিলেন, কিন্তু তিনি কাহারও সালামের জওয়াব দিতে পারিতেছিলেন না। শোকে তাঁহার মুখ বন্ধ হইয়া গিয়াছিল। পা যেন চলিতেছিল না। লোকেরা দলে দলে তাঁহার পশ্চাতে আসিতে লাগিল। অতি কষ্টে তিনি রওজা মোবারকে আসিয়অ আবেগজড়িত জণ্ঠে বলিতে লাগিলেনঃ
“ওগো হোদায়েতের নবী, তোমার প্রতি সালাম! আবুল কাসেম, আপনার প্রতি সালাম! আল্লাহর রসূল. আপনার এবং আপনার দুই বন্ধুর প্রতি সালাম। আমি আপনাকে আপনার প্রিয়তম আপনজনের মৃত্যুর সংবাদ শুনাইতে আসিয়াছি। আমি আপনার পরম স্নেহাসম্পদের স্মরণ তাজা করিতে আসিয়াছি। আল্লাহর শপথ, আপনার নির্বাচিত আপনজন নিহত হইয়া গিয়াছেন। যাঁহার সহধর্মিনী শ্রেষ্ঠতমা নারী ছিলেন, তিনি নিহত হইয়া্যেছন!!
যিনি ঈমান আনিয়াছিলেন এবং ঈমানের শপথে পূর্ণভাবে উত্তীর্ণ হইয়াছিলেন। আমি ক্রন্দনরতা, দুঃখ ভারাক্রান্তা। আমি তাঁহার উপর অশ্রু বিসর্জনকারিণী, অন্তর বিদীর্ণকারিণী। যদি কবর খুলিয়া যাইত তবে তোমার মুখেও এই কথাই উচ্চারিত হইত, তোমার শ্রেষ্ঠ স্নেহাস্পদ এবং শ্রেষ্ঠ ব্যক্তি নিহত হইয়া গিয়াছেন।”- (ইকদুল ফরীদ)
এক বর্ণনায় আছে, উম্মুল মোমেনীন হযরত আয়েশা (রা) আমীরুল মোমেনীনের শহীদ হওয়ার খবর শুনিয়া দীর্ঘশ্বাস ছাড়িয়া বলিতে লাগিলেন, এখন আরবগণ যাহা চায় সব করিতে পারে। উহাদের বাধা দেওয়ার মত কোন ব্যক্তি আর অবশিষ্ট রহিল না।– (ইস্তিয়াব)
হযরত আলীর বিখ্যাত শাগরেদ আবুল আসওয়াদ আদ্দোয়ালী মৃত্যুর সংবাদ শুনিয়া মর্সিয়া রচনা করিয়অছিলেন- (আরবী*****)