৪. ফেরেশতাদের প্রতি ঈমান
ফেরেশতাদের প্রতি ঈমানের উদ্দেশ্যে
ফেরেশতাদের প্রতি ঈমান প্রকৃতপক্ষে আল্লাহর প্রতি ঈমানের পরিপূর্ণতা এবং তার আবশ্যিক পরিশিষ্ট মাত্র। এর উদ্দেশ্যে শুধু ফেরেশতাদের অস্তিত্বের প্রতি স্বীকৃতি দানই নয়, বরং প্রকৃত লক্ষ্য হচ্ছে বিশ্বব্যবস্থায় তাদের সঠিক স্থান উপলব্ধি করা, যাতে করে আল্লাহর প্রতি ঈমান খালেছ তাওহীদের ওপর প্রতিষ্ঠিত হয় এবং শেরক ও গায়রুল্লাহর ইবাদাতের যাবতীয় মিশ্রণ থেকে তা মুক্ত হয়ে যায়।
পূর্বেই যেমন বলা হয়েছে, ফেরেশতাদের সম্পর্কে একটা মোটামুটি ধারণা সমস্ত জাতি ও ধর্মের মধ্যেই কোন না কোন রুপে বর্তমান রয়েছে। সেই ধারণার ওপরই বিভিন্ন ধর্ম বিভিন্ন রুপ প্রত্যয়ের ইমারত গড়ে তুলেছে। কারো মতে ফেরেশতাগণ প্রকৃতির সন্তান এবং প্রকৃতির এমন সব শক্তি, যারা বিশ্ব-ব্যবস্থার বিভিন্ন শাখা-প্রশাখা পরিচালনা করছে। কারো ধারণায়, তারা দেবতা, যাদের প্রত্যেকেই বিশ্বকারখানার এক একটি বিভাগের প্রধান, যেমন কেউ বাতাসের, কেউ বৃষ্টির, কেউ আলোর এবং কেউ তাপের ও কেউ আগুনের মালিক। কারো বিশ্বাস মতে, তারা আল্লাহর প্রতিনিধি ও মদদগার। কারো দৃষ্টিতে তারা বৈচিত্রের মালিক; কারো ধারণায়, তারা চেতনা মাত্র; কারো মতে, তারা আল্লাহর কল্পনা মাত্র। আর কেউবা তাদেরকে আল্লাহর সন্তান বলে মনে করে।
আবার কেউ তাদের জড় দেহ সত্তায় বিশ্বাসী। কেউ তাদেরকে বিমূর্ত ও অশরীরী বলে গণ্য করেছেন। কেউ তাদেরকে উজ্জ্বল নক্ষত্র ও গতিশীল জ্যোতিষ্কের সাথে একীভূত করে দিয়েছেন। আর কেউবা তাদের সম্পর্কে অন্যরুপ বিস্ময়কর কল্পনা গড়ে তুলেছে। মোটকথা ধর্মপ্রবর্তকদের মধ্যে ফেরেশতাদের সম্পর্কে এ ধারণা সাধারণভাবে প্রচলিত রয়েছে যে, তারা কোন না কোনভাবে আল্লাহর খোদাদায়ীতে শরীকদার। এ জন্যে তাদের কাছে প্রার্থনা করা হয়েছে; তাদেরকে প্রয়োজন পূরণকারী, অভিযোগ শ্রবণকারী ও সুপারিশকারী আখ্যা দেয়া হয়েছে। আর এই কারণে দুনিয়ার শেরকের আধিপত্য এতো প্রবল রয়েছে।
বিশ্বব্যবস্থায় ফেরেশতাদের স্থান : কুরআন একদিকে আল্লাহর অস্তিত্ব, গুণরাজি ও কার্যাবলীতে খালেছ ও পূর্ণাঙ্গ তাওহীদকে প্রতিষ্ঠিত করেছে, অন্যদিকে শেরকের দরজাকে চিরতরে বন্ধ করে দেয়ার জন্যে ফেরেশতাদের সম্পর্কে এক সঠিক ও বিশুদ্ধ ধারণা পেশ করেছে। কুরআন ফেরেশতাদের রহস্য সম্পর্কে কোন আলোচনা করেনি; কারণ এ আলোচনা নিতান্তই অবান্তর, এর ভেতরে কোনই সারবত্তা নেই। মানুষের জন্যে এর ভেতরে না কোন উপকার আছে, আর না মানুষ একে বুঝতে সক্ষম। এ ব্যাপারে আসল বিচার্য বিষয় ছিলো এই যে, বিশ্বব্যবস্থায় ফেরেশতাদের স্থান কি। কুরআন মজীদ এ প্রশ্নের অত্যন্ত সুস্পষ্ট জবাব দিয়েছে। বলা হয়েছে যে, ফেরেশতারা আল্লাহর সন্তান নয়, তাঁর কাজের অংশীদারও নয়, বরং তাঁর বান্দাহ ও গোলাম মাত্র।
(আরবী***************)
”কাফেররা বললো: দয়াময় কাউকে পুত্র বানিয়েছেন। পবিত্র সেই সত্তা। তারা (ফেরেশতা) তো তাঁর সন্মানিত বান্দাহ মাত্র, তাঁর সামনে এগিয়ে কথা পর্যন্ত বলতে পারে না। তারা শুধু ততোটুকুই করে, তিনি যা নির্দেশ দেন। যা কিছু তাদের সামনে এবং পিছনে রয়েছে, আল্লাহর তা সবই জানেন। তারা আল্লাহর মনঃপূতজন ছাড়া আর কারো পক্ষে সুপারিশ করতে পারে না।” –(সূরা আল আম্বিয়া : ২৬-২৮)
তারা হচ্ছে ব্যবস্থাপক বা কর্মসচিব (আরবী*******)। অর্থাৎ আল্লাহর তাদের ওপর যেসব কাজের দায়িত্ব অর্পণ করেন, তারা শুধু তারই ব্যবস্থাপনা করে থাকে। খোদায়ীর ব্যাপারে অংশীদার হওয়া তো দূরের কথা, তাদের মধ্যে এতটুকু শক্তি পর্যন্ত নেই যার কারণে একটি নড়তে পারে। তাদের কাজ হচ্ছে শুধু বন্দেগী, দাসত্ব ও আনুগত্য করা। তারা এক মুহূর্তের জন্যেও প্রার্থনা ও ওজিফা পাঠ থেকে বিরত হয় না, বরং প্রতিটি মুহূর্তেই নিজ প্রভুর স্তুতি ও পবিত্রতা বর্ণনায় অতিবাহিত করে।
(আরবী*************)
‘বিজলী প্রশংসার সাথে তাঁর পবিত্রতা বর্ণনা করে আর ফেরেশতাগণ সভয়ে তাঁর পবিত্রতা বর্ণনা করে।(সূরা আর রা’দ : ১৩)
”যা কিছু আসমানে রয়েছে এবং যা কিছু জমিনের বুকে বিচরণশীল, সবই আল্লাহর সামনে সেজদায় রত। আর ফেরেশতাগণও বিদ্রোহ বা অবাধ্যচরণ করে না তারা তাদের মহিমান্বিত প্রভুকে ভয় করে চলে এবং তাদেরকে যে নির্দেশ দেয়া হয়, তাই তারা পালন করে।” –(সূরা আন নাহল : ৪৯-৫০)
(আরবী*************)
“আসমান ও জমিনে যা কিছু আছে এবং যা তারঁ কাছে রয়েছে, সবই তাঁর। তারা (ফেরেশতা) তাঁর
বন্দেগীর প্রতি অবাধ্যাচরণ করে না, পরিশ্রান্ত হয় না, বরং দিন-রাত তাঁরই স্তুতিতে মশগুল থাকে এবং কখনো শৈথিল্য প্রদর্শন করে না।” –(সূরা আল আম্বিয়া : ১৯-২০)
(আরবী*************)
“আল্লাহর তাদেরকে যে আদেশ করেছেন, তারা কখনো তার বিরুদ্ধাচরণ করে না, তাদেরকে যে নির্দেশ দেয়া হয়, তারা শুধু তা-ই পালন করে।”
এ ধারণার মধ্যে শেরকের জন্যে কোনই অবকাশ নেই। কারণ যাদের সম্পর্কে খোদায়ীর কল্পনা করা যেত, তারা আমাদেরই মতো বাধ্য ও অনুগত বান্দাহ প্রতিপন্ন হয়েছে। তারপর আমাদের ইবাদাত বন্দেগী, বশ্যতা বাধ্যতা, সাহায্য ভিক্ষা ও নির্ভরতার কেন্দ্রবিন্দু আল্লাহর ছাড়া আর কে হতে পারে?
মানুষ ও ফেরেশতাদের তুলনামূলক মর্যাদাঃ কেবল এখানেই শেষ নয়। কুরআন মজীদ আরো সামনে এগিয়ে মানুষ ও ফেরেশতাদের তুলনামূলক মর্যাদাও বাতলে দিয়েছে – যাতে করে মানুষ তাদের মুকাবিলায় নিজের মর্যাদাকে ভালো মতো উপলব্ধি করতে পারে। আল্লাহর কালামে যেখানে আদম সৃষ্টির কথা উল্লেখ করা হয়েছে, সেখানে এ বিষয়টিকেও সুস্পষ্ট করে বলা হয়েছে। আল্লাহর তায়ালা যখন আদি মানব হযরত আদম (আ)-কে তাঁর খিলাফতের মর্যাদায় ভূষিত করেন, তখন ফেরেশতাদেরকে তাঁর সামনে সিজদা করতে আদেশ দেন, এবং ইবলিস ছাড়া সবাই তাকে সিজদা করে।(বাকার : ৪; আরাফ : ২; বনী ইসরাঈল : ৭; কাহাফ : ৭; ত্বা-হা :৭; সাদ : ৫) ফেরেশতারা তাদের স্তুতি ও পবিত্রতা কীর্তনের ভিত্তিতে আদম (আ)-এর মুকাবিলায় নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব দাবী করলো। তখন আল্লাহর তায়ালা তাদের দাবী প্রত্যাখান করলেন এবং পরীক্ষার সাহায্যে প্রমাণ করে দিলেন যে, তিনি আদম (আ)-কে তাদের চেয়ে বেশী জ্ঞান দিয়েছেন। ইবলিস তাঁর সৃষ্টির উপাদানকে শ্রেষ্ঠত্বের মাপকাঠি আখ্যা দিয়ে হযরত আদম (আ)-এর উচ্চ মর্যাদা স্বীকার করতে এবং তাঁর সামনে সিজদায় নত হতে অস্বীকার করলো। ফলে তাকে চিরকালের জন্যে আল্লাহর দরবার থেকে বিতাড়িত ও পথভ্রষ্ট করে দেয়া হলো।
এ জিনিসটি একদিকে মানুষের ভেতর আত্মসন্মানবোধ জাগিয়ে তোলে, অপরদিকে তার সমস্ত ইবাদাত স্পৃহাকে আল্লাহর পরস্তির কেন্দ্রস্থলে এনে জড় করে দেয়। এর থেকে প্রমাণিত হয় যে, বিশ্বজগতে একমাত্র আল্লাহর তায়ালা ছাড়া মানুষের চেয়ে আর কেউ শ্রেষ্ঠ নয়। ফেরেশতারা যদিও সম্মানিত বান্দাহ (আরবী*******) অন্যান্য বস্তুনিচয়ের চেয়ে শ্রেষ্ঠত্বের অধিকারী; কিন্তু মানুষের সামনে তারাও সিজদায় নত হয়েছে। কাজে মানুষের বন্দেগী ও সিজদার উপযোগী, তাঁর সাহায্যদানকারী ও প্রার্থনা শ্রবণকারী একমাত্র বিচক্ষণ আল্লাহর ছাড়া আর কে হতে পারে?
এভাবে ফেরেশতাদের প্রতি ঈমান নির্ভুল খোদায়ী জ্ঞান ও বিচক্ষণতার ওপর প্রতিষ্ঠিত হলে আল্লাহর প্রতি ঈমানও একেবারে খালেছ, নির্ভেজাল ও পবিত্র হয়ে ওঠে।
ফেরেশতাদের প্রতি ঈমানের দ্বিতীয় উদ্দেশ্যে
কুরআন মজীদে ফেরেশতাদের আরো একটি মর্যাদার কথা বলা হয়েছে। তাহলো এই যে, আল্লাহর তায়ালা তাদের মাধ্যমে পয়গম্বরের কাছে তাঁর বাণী ও বিধি-ব্যবস্থা প্রেরণ করেন। এবং এ বানী যাতে সর্বপ্রকার ভেজাল, সন্দেহ ও আন্দাজ-অনুমান হতে পবিত্র থেকে নবীদের কাছে গিয়ে পৌছায় তাদের মাধ্যমেই সে ব্যবস্থা করে থাকেন। এ ফেরেশতাগণ প্রথমত নিজেরাই আজ্ঞানুবর্তী ও সৎ স্বভাব বিশিষ্ট। সর্ববিধ মন্দ প্রবৃত্তি ও স্বার্থপরতা থেকে মুক্ত ও পবিত্র। তারা আল্লাহর ভয়ে ভীত এবং তাঁর নির্দেশের দ্বিধাহীন অনুগত। এ কারণেই তাদের মাধ্যমে যে পয়গাম পাঠানো হয়, তার মধ্যে তারা নিজেরা কোনরুপ হ্রাস-বৃদ্ধি করে না। দ্বিতীয়ত তারা এতখানি শক্তিমান যে, তাদের এ বাণী পৌছানো এবং তত্ত্বাবধান কার্যে কোন শয়তানী শক্তি অণু পরিমাণ হস্তক্ষেপও করতে পারে না। এ বিষয়েটি কুরআন মজীদেরও বিভিন্ন জায়গায় বিবৃত করা হয়েছেঃ
(আরবী**************)
“এ এমন সন্মানিত, সমুন্নত ও পবিত্র গ্রন্থে (সহীফা) বিধৃত রয়েছে, যা অত্যন্ত সম্ভ্রমশালী ও পুণ্যবান লেখকদের দ্বারা লিপিবদ্ধ হয়েছে।” –(সূরা আবাসা: ১৩-১৬)
(আরবী**************)
“নিসন্দেহে এ এক সন্মানিত ফেরেশতার বর্ণনা যে অতি শক্তিমান, আরশ অধিপতির কাছেও অত্যন্ত মর্যাদা সম্পন্ন। অনুগত এবং বিশ্বাসভাজন।”
(আরবী***************)
“তিনি (আল্লাহ) অদৃশ্য বিষয়ে পরিজ্ঞাত। নিজ অদৃশ্য বিষয় সম্পর্কে কাউকে অবহিত করেন না – একমাত্র তাঁর পছন্দনীয় রসূল ছাড়া। অতপর তিনি তাঁর চারদিকে তত্ত্বাবধায়ক ফেরেশতা নিযুক্ত করেন – যাতে করে এ প্রতীতি জন্মে যে, বাণী বাহকগণ আপন প্রভুর বানীসমূহকে যথাযথভাবে পৌছিযে দিয়েছেন। আর আল্লাহর তায়ালা তাদের ওপর পরিব্যাপ্ত এবং প্রতিটি জিনিষ গণনা করে থাকেন।” –(সূরা আল জ্বিন : ২৬-২৮)
****************
“একে ‘রহুল কুদুস’ (পবিত্র আত্না) তোমার প্রভুর তরফ থেকে যথাযথভাবে নাযিল করেছেন।” –(সূরা আন নাহল : ১০২)
****************
“নিসন্দেহে এ রাব্বুল আলামীনের অবতীর্ণ কিতাব, যা নিয়ে রুহুল আমীন (বিশ্বস্ত আত্না) অবতরণ করেছেন।” –(সূরা আশ শুয়ারা : ১৯২-১৯৩)
***************
“নিশ্চয়ই এ সন্মানিত কুরআন, একটি গোপন দলিলে লিপিবদ্ধ রয়েছে। একে পবিত্র (ফেরেশতা) ছাড়া কেই স্পর্শ করতে পারে না। এ রাব্বুল আলামীনের পক্ষে থেকে অবতীর্ণ।” –(সূরা আল ওয়াকিয়া : ৭৭-৮০)
এর থেকে জানা গেল যে, ফেরেশতাদের প্রতি ঈমান শুধু আল্লাহর প্রতি ঈমানের জন্যেই নয়, বরং কিতাবের প্রতি ঈমান এবং রসূলের প্রতি ঈমানের জন্যেও আবশ্যক। ফল কথা, ফেরেশতাদের প্রতি ঈমান আনার মানেই হলো, যে মাধ্যমটির দ্বারা আল্লাহর বাণী রসুলের কাছে পৌছে, তাকে বিশ্বস্ত ও নির্ভরযোগ্য বলে আমাদের স্বীকার করতে হবে। সে বাণী এবং তার প্রচারক নবীদের বিশ্বাস পরিপূর্ণই হতে পারে না, যতক্ষন না আল্লাহর এবং তার নবীদের মধ্যে যোগসূত্র রচনাকারী মাধ্যমটির প্রতি আমরা পুরোপুরি বিশ্বাস স্থাপন করবো।
তৃতীয় উদ্দেশ্যে
এছাড়া ফেরেশতাদের আরো একটি মর্যাদা কুরআন মজীদে বিবৃত হয়েছে। তাহলো এই যে, তারা আল্লাহর তায়ালার সাম্রাজ্যের কর্মচারী। গোটা বিশ্ব প্রকৃতির ব্যবস্থাপনা আল্লাহর তায়ালা যেসব কর্মচারীর দ্বারা সম্পাদন করাচ্ছেন, তারা হচ্ছে এ ফেরেশতা। দুনিয়ার রাষ্ট্রগুলোতে তাদের কর্মচারীদের (Services) যে মর্যাদা, আল্লাহর সাম্রাজ্যে তাদের মর্যাদা হচ্ছে ঠিক সেরুপ। তাদের মধ্যমেই তিনি কারো ওপর আযাব নাযিল করেন, আর কারো ওপর করেন রহমত। কারো প্রাণ সংহার করেন, কাউকে জীবন দান করেন। কোথাও বৃষ্টির বর্ষণ করান, কোথাও দুর্ভিক্ষ নামিয়ে দেন। তারা প্রতিটি মানুষের ক্রিয়াকান্ড, কথাবার্তা ও ধ্যান-ধারণা পর্যন্ত লিপিবদ্ধ করে চলেছে এবং প্রতিটি তৎপরতা পর্যবেক্ষণ করছে। মানুষ যতক্ষণ পর্যন্তআল্লাহর দেয়া অবকাশের মধ্যে কাজ করছে, এসব কর্মচারী তার সমস্ত ভালো-মন্দ বিষয় অবহিত থাকা সত্ত্বেও আল্লাহর নির্দেশে তার সাথে সহযোগিতা করতে থাকে। এবং তার সমস্ত কাজই সম্পাদন করে যায়। কিন্তু তার কার্যকাল শেষ হওয়া মাত্র তার খিলাফতের কারখানাটি চালিত করছিলো। যে বাতাসের জোরে একদা মানুষ বেঁচেছিলো, সহসা তাই তার লোকালয়কে বিপর্যস্ত করে দেয়। যে পানির দ্বারা মানুষ জীবন ধারণ করে, হঠাৎ তাই তাকে ডুবিয়ে মারে। যে মাটিতে মানুষ মায়ের কোলের ন্যায় নিশ্চিন্তে বসবাস করে, হঠাৎ তা-ই এক ঝাকুনিতে তাকে ধূনিস্মাৎ করে দেয়। একটি মাত্র নির্দেশের দেরী, সেটি আসার সাথে সাথেই খলিফা সাহেবের নিকটতম আর্দালী তার হাতে অমনি কড়া লাগিয়ে দেয়। এ চিত্রটি কুরআন মজীদের বিভিন্ন জায়গায় অত্যন্ত আঁকা হয়েছে।
এ দৃষ্টিতে ফেরেশতার প্রতি ঈমান হচ্ছে আল্লাহর প্রতি ঈমানের এক আবশ্যিক অংশ। এর মানে হলো, মানুষকে জগত সম্রাটের সাথে সাথে তার কর্মচারীদের প্রতিও স্বীকৃতি দিতে হবে। এছাড়া মানুষ এ বিশাল সাম্রাজ্যে নিজের মর্যাদাকে (Position), না সঠিকভাবে উপলদ্ধি করতে পারে, আর না সে মর্যাদা সম্পর্কে পূর্ণ সচেতন থেকে কাজ করতে পারে।