বাংলাদেশ ও জামায়াতে ইসলামী
বাংলাদেশের সাথে আমাদের সম্পর্ক
আল্লাহ পাকই সমস্ত পৃথিবীর স্রষ্টা। আমরা তার দাসত্ব কবুল করে মুস-লিম (অনুগত) হিসেবে পরিচয় দিতে গৌরব বোধ করি। মুসলিমের দৃষ্টিতে আল্লাহর গোটা দুনিয়াই তাঁর বাসভূমি। কিন্তু আমাদের মহান স্রষ্টা যে দেশে আমাদেরকে পয়দা করলেন, সে দেশের সাথে স্বাভাবিক কারণেই আমরা বিশেষ দরনের এক গভীর সম্পর্ক অনুভব করি। কারণ আমরা ইচ্ছে করে এদেশে পয়দা হইনি। আমাদের দয়াময় প্রভু নিজের সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে এদেশে পয়দা করেছেন। তাই আমাদের স্রষ্টা আমাদেরকে এদেশে পয়দা করাই যখন পছন্দ করেছেন, তখন এদেশের প্রতি আমাদের মহব্বত অন্য সব দেশ থেকে বেশী হওয়াই স্বাভাবিক।
মানুষ যে দেশের আবহাওয়ায় শৈশব থেকে যৌবন কাল পর্যন্ত পড়ে ওঠে, সে দেশের প্রকৃতির সাথে তার গভীর আত্মিক সম্পর্ক সৃষ্টি হয়। শিশু অবচেতনভাবেই যেমন তার-মাকে ভালবাসে, তেমনি জন্মভূমির ভালবাসাও মানব মনে স্বাভাবিকভাবেই সৃষ্টি হয়। তাই জন্মভূমিতেই মানুষ ঘধঃঁৎবধষ ঈরঃরুবহ (জন্মসূত্রে নাগরিক) হিসেবে গণ্য হয়। জন্মগত নাগরিকের দেশপ্রেম স্বভাবজাত বলে এটা প্রমাণ করার কোন প্রয়োজন ছাড়াই তাকে নাগরিক বলে স্বীকার করা হয়। কিন্তু এক দেশের অধিবাসী অন্য দেশে গিয়ে তার দেশ প্রেমের প্রমাণ না দেয়া পর্যন্ত তাকে নাগরিক গণ্য করা হয় না।
যারা এদেশেই পয়দা হয়েছে, তাদের সবার মধ্যেই দেশপ্রেম প্রকৃতিগতভাবেই আছে। এ দেশপ্রেমকে সঠিকভাবে বিকশিত করা ও সচেতনভাবে জাগ্রত করার অভাবে মানুষে মানুষে এর গভীরতার পার্থক্য হতে পারে। তাই সব দেশেই নাগরিকদের মধ্যে দেশাত্মবোধ জাগ্রত করার প্রচেষ্ট চলে। দেশপ্রেমের এ চেতনা প্রকৃত মুসলিম জীবনে অত্যন্ত সুস্পষ্ট। আল্লাহ তাকে যে দেশে পয়দা করেছেন, সে দেশের প্রতি গভীর কর্তব্যবোধ অন্যের চেয়ে সচেতন মুসলিমের মধ্যে বেশী হওয়াই উচিত। প্রত্যেক নবী যে দেশে পয়দা হয়েছেন, সে দেশেই তিনি তার দায়িত্ব পালন করেছেন। বাধ্য না হলে কোন নবীই দেশ ত্যাগ করেননি।
এসব অকাট্য যুক্তির ভিত্তিতে আমাদের জন্মভূমি হিসেবে বাংলাদেশের সাথে আমাদের গভীর ভালবাসার সম্পর্ক অত্যন্ত সজাগ ও সতেজ থাকতে হবে। আল্লাহর যমীনে আল্লাহর দ্বীন কায়েম করাই আমাদের পার্থিব প্রধান কর্তব্য। এ কর্তব্য পালনের সর্বাপেক্ষা উপযুক্ত যমীন হলো জন্মভূমি। জন্মভূমিতে এ কর্তব্য পালন করা সম্পূর্ণ অসম্ভব বলে প্রমাণিত না হওয়া পর্যন্ত অন্য দেশে হিযরত করাও জায়েয নয়। নবীগণও আল্লাহর নির্দেশ ব্যতীত হিযরত করেননি। হযত ইউনুস (আঃ) নির্দেশের পূর্বেই হিযরহ করায় আল্লাহ পাক তাঁর ভুল ধরিয়ে দিয়েছেন।
কিন্তু সত্যিকার মুসলিমের বালবাসা তার জন্মভূমির ক্ষুদ্র এলাকায় এমন সীমাবদ্ধ থাকতে পারে না যে, অন্যান্য দেশকে সে ঘৃণা করবে। আল্লাহর দ্বীনকে বিজয়ী করাই তার পার্থিব জীবনের প্রধানতম কর্তব্য। এ কর্তব্যের তাকীদে তার জন্মভূমিতে দ্বীন কায়েম করার সাথে সাথে গোটা মানব সমাজে ইসলামের শান্তিময় জীবন বিধানকে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করতে হবে। এ দায়িত্ববোধ তাকে শুধু দেশপ্রেমিক হয়েই সন্তুষ্ট থাকতে দেয় না – তাকে বিশ্বপ্রেমিক হতে বাধ্য করে। আল্লাহর রাসূলই মুসলিম জীবনের শ্রেষ্ঠ আদর্শ। বিশ্বনবীর জীবনে আমরা দেশপ্রেমের যে নমুনা দেখতে পাই তা আমাদের চিরন্তন দিশারী। তিনি তার প্রিয় জন্মভূমিতে আল্লাহর রচিত জীবন বিধান কায়েমের চেষ্ট করে চরম বিরোধিতার ফলে আল্লাহর নির্দেশে তিনি মদীনায় হিজরত করেন এবং সেখান থেকে দ্বীনের জিবয়কে সম্প্রসারিত করে আবার জন্মভূমিতেই তা কায়েম করেন। তিনি “ইকামাতে দ্বীনের” এ দায়িত্ববোধ সমস্ত মুসলিমের মধ্যে এমন তীব্রভাবে জাগ্রত করেন যার ফলে তাঁর অনুসারীগণ সারা দুনিয়ার ইসলামের দাওয়াত নিয়ে ছড়িয়ে পড়েন।
(বাংলাদেশ ও জামায়াতে ইসলামী)
বাংলাদেশের জনগণের সাথে আমাদের সম্পর্ক
এক মায়ের সন্তানদের মধ্যে যেমন একটা বিশেষ ভ্রাতৃত্ববোধ জন্ম নেয়, তেমনি এক দেশে জন্মলাভের দরুনও দেশবাসীর মধ্যে পারস্পারিক একটা সম্পর্ক সৃষ্টি হয়। বিশেষ করে একই ভৌগোলিক এলাকার অধিবাসী বিদেশে একে অপরকে ভাইয়ের মতো আপন মনে করে। ভাসার ঐক্য তাদেরকে আরও আপন করে নেয়। এর সাথে ধর্মের ঐক্য থাকলে এ সম্পর্ক আরও গভীর হয়। ভাষা, ধর্ম বর্ণ ইত্যাদি মিলে এক দেশের অধিবাসীরা অন্য দেশের মানুষ থেকে ভিন্নতর এক ঐক্যবোধ নিজেদের মধ্যে অনুভব করে। মা-কে কেন্দ্র করে যেমন পারিবারিক ভ্রাতৃত্ব পড়ে উঠে, তেমনি জন্মভূমিকে কেন্দ্র করে দেশভিত্তিক জাতীয়তাবোধ জন্মে। তাই নিজ দেশের সকল মানুষই অন্য দেশের মানুষের তুলনায় অধিকতর আপন মনে হয়।
বাংলাদেশ মুসলিম, হিন্দু, খৃষ্টান, বৌদ্ধ ও উপজাতীয় প্রায় দশ* কোটি লোক বসবাস করে। বাংলাদেশী হিসেবে সবার সাথেই আমাদের ভালবাসার সম্পর্ক থাকতে হবে। আমাদের দেশের সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্নায় আমরা সমান অংশীদার। ধর্ম ও বর্ণ নির্বিশেষে সকল বাংলাদেশী আমাদের ভাই-বোন।
সবার কল্যাণের সাতেই আমাদের মঙ্গল জড়িত। এদেশে আমরা যে আদর্শ কায়েম করতে চাই এর আহবান সবার নিকটই পৌঁছাতে হবে। আমাদের সবারই স্রষ্টা আল্লাহ। তাঁর দেয়া আদর্শ অমুসলিমদের মধ্যে পৌঁছান আমাদেরই কর্তব্য। আল্লাহর সৃষ্ট সূর্য, চন্দ্র, আলো, বাতাস ইত্যাদি আমরা বেগম সমভাবে ভোগ করছি আল্লাহর দ্বীনের মহা নিয়ামতও আমাদের সবার প্রাপ্য। বংশগতভাবে মুসলিম হবার দাবীদার হওয়ায় দরুন আল্লাহর দ্বীনকে উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত নিজস্ব সম্পদ মনে করা উচিত নয়। অমুসলিম ভাইদেরও যে তাদের স্বার্থেই দ্বীন ইসলামকে জানা প্রয়োজন এবং গ্রহণযোগ্য কিনা বিবেচনা করা কর্তব্য সে বিষয়ে আমাদের দেশীয় ভাই হিসেবে তাদেরকে মহব্বতের সাথে একথা বুঝানো আমাদের বিরাট দায়িত্ব ও দ্বীনী কর্তব্য।
আমাদের আদি পিতা আদম (আঃ) ও আদি মাতা হাওয়া (আঃ)-এর সন্তান হিসেবে তো সকল মানুষই সবার ভাই-বোন। গোটা মানব জাতিকেই সে হিসেবে ভালবাসা কর্তব্য। বিশ্ব নবী মানবতার ভালবাসাই বাস্তবে শিক্ষা দিয়ে গেছেন। কিন্তু নিজের দেশের অধিবাসী হিসেবে বাংলাদেশের অমুসলিগণ বিশেষভাবে আমাদের ভালবাসার পাত্র।
ইসলামের দৃষ্টিতে মানুষে মানুষে কৃত্রিম কোন বিভেদ সৃষ্টি করা মহা অন্যায়। ভাষা, বর্ণ, দেশ, পেশা, ধনী বা গরীব হওয়া ইত্যাদির ভিত্তিতে মানুষে মানুষে শ্রেণীভেদ সৃষ্টি করা আল্লাহর নিকট মহাপাপ। আল্লাহ পাক মানুষের মধ্যে স্বাভাবিক কারণেই দু’টো শ্রেণীকে স্বীকৃতি দিয়েছেন। কুরআন পাকে বহুস্থানে তাদের পরিচয় পাশাপাশি সুস্পষ্টরূপে তুলে ধরেছেন। একটি শ্রেণী হলো আল্লাহর দাস, রাসূলের অনুসারী সচ্চরিত্র, ন্যায়পরায়ণ এবং মানবীয় সৎগ্রণাবলীর অধিকারী, অপরটি হলো নাফস্ (প্রবৃ্িত্ত) ও শয়তানের দাস এবং খোদাদ্রোহী ও জালিম। এ উভয় শ্রেণীর মধ্যে সব ভাষা, বর্ণ, দেশ ও পেশার আদম সন্তানই রয়েছে। দুনিয়ার সব ভাল মানুষ এক শ্রেণীর আর দুষ্টরা ভিন্ন শ্রেণীর সে হিসেবে বাংলাদেশেও সৎলোকগণ আমাদের বেশী আপন বটে, কিন্তু অন্যদেরকে ঘৃণা করাও নিষেধ। তাদেরকে সংশোধনের চেষ্টা করাও আমাদের কর্তব্য।
এক হিসেবে সমস্ত মানুষই বিশ্বনবীর উম্মত। নবীর উপর যে জনপদের মানুষের নিকট দ্বীনের দাওয়াত পৌঁছাবার দায়িত্ব অর্পিত হয়, সে এলাকার সব মানুষেই নবীর উম্মত। তাই সমস্ত মানুষই বিশ্বনবীর উম্মত। কিন্তু উম্মত হলেও তারা দু’শ্রেণীতে বিভক্ত। যারা নবীর দাওয়াত কবুল করে তাঁর অনুসারী হয়, তারা “উম্মত বিল ইজাবাত” (যারা দাওয়াতে সাড়া দিয়েছে) আর বাকী সবাই “উম্মত বিদ-দাওয়াত” (যাদের নিকট দাওয়াত পৌঁছাতে হবে)। বাংলাদেশের অমুসলিমদের “উম্মত বিদ-দাওয়াত” বিবেচনা করে আমাদেরকে তাদের প্রতি কর্তব্য পালন করতে হবে।
সুতরাং বাংলাদেশের সব মানুষকেই আমরা আল্লাহর মহান সৃষ্টি হিসেবে স্বাভাবিকভাবে ভালবাসবো। এ ভালবাসা শুধু তাদেরকে দ্বীন ও ঈমানের দিকে আনার জন্যই নয়। এদেশের মানুষ এত অভাবী যে, মানুষ হিসেবে বেঁচে থাকার উপযোগী সম্বলও অর্ধেক লোকের নেই। পুষ্টির অভাবে অর্ধেকের বেশী শিশু এবং বয়স্ক লোক দিন দিন দুর্বল হচ্ছে। সুচিকিৎসার সুযোগ অধিকাংশেরই নেই। মাথা গুঁজবার মতো একটু নিজস্ব ঠাঁই শতকরা ২৫ জনেরই নেই। শিক্ষার আলো অতি সীমিত। যে দেশের অর্ধেক লোক ভাত-কাপড়ের অভাবে জীর্ণ, সে দেশের অধিবাসী হয়ে আমাদের মনে যদি তীব্র বেদনাবোধ না জাগে, তাহলে রাসূলের প্রতি আমাদের মহব্বতের দাবী অর্থহীন। এদেশের মানুষকে বস্তুগত ও নৈতিক উভয় দিক থেকেই উন্নত করতে হবে। হাদীসে আছে, দারিদ্র মানুষকে কুফরীর দিকে নিয়ে যায়। অবশ্য অর্থও অনর্থের মূল বটে, কিন্তু মানুষের মৌলিক প্রয়োজন পূরণের ব্যবস্থা না হরে ঈমান বাঁবে কি করে ?
ধর্ম ও ভাষা নির্বিশেষে বাংলাদেশের জনসাধারণের জন্য এ মমত্ববোধ ও দরদ না থাকলে আল্লাহর নবীর আদর্শের খেদমত কখনও সম্ভবপর নয়। জনগণের জন্য এ দরদী মনেরই দেশে সবচেয়ে বড় অভাব। জামায়াতে ইসলামীর কর্মীদের মধ্যেও যদি এ অভাব থাকে, তাহলে আর যাই হোক জনগণের খেদমত করার সত্যিকার যোগ্যতা আমাদের মধ্যে সৃষ্টি হবে না।
রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে সম্পর্ক
বাংলাদেশ যারা রাজনীতি করেন, তাদের সবাইকে আমরা এ কারণেই শ্রদ্ধা করি যে, তার্ওা দেশ সম্পর্কে চিন্তাÑভাবনা করেন, দেশকে উন্নত করতে চান, দেশের সমস্যাগুলোর সমাধানে আগ্রহী এবং জনগণের কল্যাণকামী। তারা শুধু নিজেকে নিয়েই ব্যস্ত নন, গোটা দেশের ভাল-মন্দ সম্পর্কে সজাগ দৃষ্টি রাখেন। এ ধরনের লোকদের সঠিক প্রচেষ্টায়ই একটি দেশ সত্যিকার উন্নতি লাভ করতে পার। যারা দেশ গড়ার চিন্তাই করে না, যারা কেবল আত্ম-প্রতিষ্ঠায়ই ব্যস্ত, তারা দেশের সম্পদ নয়, তারা দেশের আপদ। কিন্তু যারা শুধু আত্ম-প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য নিয়েই রাজনীতি করেন, তারা দেশের কলংক। আর যারা দৈহিক শক্তি বা অস্ত্রশক্তির বলে জনগণের উপর শাসক সেজে বসতে চায়, তারা দেশের ডাকাত।
সব রকম রাজনৈতিক দলের প্রতি সম্মানবোধ সত্ত্বেও সবার সাথে আমাদের সমান সম্পর্ক রক্ষা করা সম্ভব নয়। বিভিন্ন মানদন্ডে আমাদের দেশে রাজনৈতিক দলগুলোকে প্রধানত তিন শ্রেণীতে ভাগ করা যায় ঃ
১। যেসব দল ইসলামকে দলীয় আদর্শ হিসেবে স্বীকার করেন।
২। যেসব দল ধর্মনিরপেক্ষ মতবাদে বিশ্বাসী।
৩। যেসব দল সমাজতন্ত্রের আদর্শে দেশ গড়তে চায়।
আমরা যেহেতু ইসলামী আদর্শে বিশ্বাসী, সেহেতু প্রথম শ্রেণীভুক্ত দলগুলোর সাথে আমাদের আর্দশিক সম্পর্কের দরুন তাদের সংগে আমাদের নিুরূপ সম্বন্ধ বজায় রাখতে হবে ঃ
(ক) ইসলাম-বিরোধী শক্তির পক্ষ থেকে তাদের কারো উপর হামলা হলে আমরা ন্যায়ের খাতিরে পক্ষে থাকব ও হামলা প্রতিহত করতে সাহয্য করব।
(খ) ইসলামী দল হিসেবে যারা পরিচয় দেন, তাদের সাথে দ্বীনের ব্যাপারে সহযোগিতা করব। এ সহযোগিতার মনোভাব নিয়েই তাদেরকে দ্বীনী ভাই হিসেবে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেব।
(গ) ইসলামী দলের নেতা ও কর্মীদের জন্য যেসব বিশেষ গুণ অপরিহার্য, সে বিষয়ে কোন দলের মধ্যে কোন কমতি বা ক্রটি দেখা গেলে মহব্বতের সাথে সে বিষয়ে তাদেরকে সংশোধনের উদ্দেশ্যে ভুল ধরিয়ে দিব। অনুরূপভাবে আমাদের ভুল-ক্রটি ধরিয়ে দিলে কৃতজ্ঞতার সাথে তা কবুল করব।
(ঘ) কোন সময় যদি কোন ইসলামপন্থী দল আমাদের বিরোধিতা করেন, তবুও আমরা তাদের বিরোধিতা করব ন্ াপ্রয়োজন হলে বন্ধুত্বপূর্ণ ভাষার জয়য়াব দেব।
(ঙ) নির্বাচনের সময় তাদের সাথে দরকার হলে সমঝোতা করব।
দ্বিতীয় ও তৃতীয় নম্বরে উল্লেখিত দলগুলোর সাথে আমরা নিুরূপ সম্পর্ক রক্ষার চেষ্টা করবঃ
(ক) যেসব রাজনৈতিক দল সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে ইসলামকে জীবনাদর্শ মনে করে না, তাদের সাথেও আমরা কোন প্রকার শত্র“তার মনোভাব পোষণ করব না। দেশ ও জাতির কল্যাণের জন্য মত ও পথ বাছাই করার স্বাধীনতা সবারই থাকা উচিত। আমরা তাদের মত পথ বাছাই করার স্বাধীনতা সবারই থাকা উচিত। আমরা তাদের মত ও পথকে ভুল মনে করলে যুক্তির মাধ্যমে শালীন ভাষায় অবশ্যই সমালোচনা করব।
(খ) তাদের কেউ আমাদের প্রতি অশোভন ভাষা প্রয়োগ করলেও আমরা আমাদের শালীনাতার মান বজায় রেখেই জওয়াব দেব। গালির জওয়াবে আমরা কখনও গালি দেব না বা অন্যায় দোষারোপের প্রতিশোধ নিতে গিয়ে আমরা ন্যায়ের সীমা লংঘন করব না।
(গ) দেশের স্বার্থ ও জনগণের কল্যাণে তাদের যেসব কাজকে আমরা মঙ্গলজনক মনে করব, সে সব ক্ষেত্রে তাদের সাথে সহযোগিতা করব।
দেশের স্বার্থ এবং জনগণের কল্যাণের নামে সরকার ভুল করছেন বলে আন্তরিকতার সাথেই কেউ অনুভব করতে পারে। তাই সরকার তাদের কার্যকলাপের সমালোচনা পরামর্শ হিসেবে যদি গ্রহণ করেন, তাহলে দেশের মঙ্গল হতে পারে। যারা অন্ধভাবে সবসময় সরকারকে সমর্থন করে, তারা ব্যক্তি বা দলীয় স্বার্থে তা করতে পারে। আর যারা সব ব্যাপারেই বিরোধিতা করে, তারা বিরোধিতার জন্যই তা করে থাকে। আমরা এর কোনটাকেই গণতন্ত্রের সহায়ক ও দেশের জন্য কল্যানকর মনে করি না।
সত্যিকার বিরোধী দলের আদর্শ ভূমিকাই আমরা পালন করতে চাই। সরকারের ভাল কাজে সহযোগিতা করা এবং মন্দ কাজের দোষ ও ভুল ধরিয়ে দেয়াই আমাদের পবিত্র দায়িত্ব। সৎকাজে উৎসাহ দান ও অসৎকাজ থেকে ফিরিয়ে রাখার চেষ্টা এ ভূমিকারই অঙ্গ। বিরোধী দলীয় ভূমিকার নামে দেশে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করা ও অগণতান্ত্রিক পন্থায় সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করাকে আমরা জাতির সেবা মনে করি না। কিন্তু সরকার নিজেই যদি বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির পথ বেছে নেন বা ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য জনসমর্থনের পরিবর্তে অগণতান্ত্রিক পদক্ষেপ গ্রহণ করেন, তাহলে এর বিরুদ্ধে আন্দোলন করা আমাদের কর্তব্য মনে করব এবং তখন দেশ ও জনগণের স্বার্থে যে কোন ত্যাগ স্বীকার করা আমরা ফরয মনে করব।