পূর্ব পাকিস্তানের সমস্যা কী ছিল ?
জামায়াতে ইসলামীর দৃষ্টিতে পূর্ব পাকিস্তানের সমস্যা কী ছিল ?
যেকোন সমস্যারই একাধিক বিশ্লেষণ হতে পারে। এবং সমাধানের ব্যাপারেও আন্তরিকতার সাথেই মতপার্থক্য থাকতে পারে। জামায়াতে ইসলামী তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তানের সমস্যাকে যেভাবে বিশ্লেষণ করেছে, তা যদি কেউ নিরপেক্ষভাবে বিবেচনা করে, তাহলে একথা উপলব্ধি করা সহজ হবে যে, জামায়াত কেন বাংলাদেশকে পশ্চিম পাকিস্তান থেকে আলাদা করার প্রয়োজন মনে করেনি। এ বিষয়ে জামায়াতের সাথে কেউ একমত হোক বা না হোক, জামায়াতের দৃষ্টি ভঙ্গিকে ভালোভাবে বুঝতে পারবে।
জামায়াত কখনোই সুবিধাবাদের রাজনীতি করে না এবং কোন প্রকারের ক্ষমতা দখলের রাজনীতিও জামায়াত করে না। ইসলামী জীবন বিধান বাস্তবায়িত করার উদ্দেশ্যেই জামায়াত কাজ করে যাচ্ছে।
জামায়াত স্বল্পমেয়াদী পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছে না বলে দেশকে ইসলামী আদর্শে গড়ে তুলবার যোগ্য নেতৃত্ব ও কর্মী বাহিনী তৈরি না করে ক্ষমতা গ্রহনে মোটেই আগ্রহী নয়। তাই রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে জামায়াতের বিরুদ্ধে একাত্তরের ভূমিকা সম্পর্কে যতো অপপ্রচারই চালানো হোক না কেন, তাতে কারো কোন উপকারে আসবে না। যারা ধীরচিত্তে জামায়াতের ভূমিকা বুঝতে চান, তাঁদের জন্যই এদেশের সমস্যা সম্পর্কে নিম্নরূপ বিশ্লেষণ পেশ করা হচ্ছে। ১৯৪৭ সালে যখন পাকিস্তান কায়েম হয়, তখন বর্তমান বাংলাদেশ এলাকা সবচেয়ে অনুন্নত ছিল। যেমনঃ
- ১। সশস্ত্র বাহিনীতে এ অঞ্চলের লোক ছিল না বললেই চলে।
- ২। পুলিশ বাহিনীতেও খুবই কম লোক ছিল বললেই চলে। তাই ভারত থেকে যেসব মুসলমান পুলিশ অপশন দিয়ে এসেছিলো, তারাই প্রথম দিকে থানাগুলো সামলিয়েছে।
- ৩। উচ্চপদস্থ সরকারী কর্মকর্তা মাত্র গুটি কয়েক ছিলেন।
- ৪। দুই তিনটা কাপড়ের কারখানা ছাড়া শিল্পের কিছুই ছিল না। এ এলাকার পাটেই কোলকাতার পাটকল চলতো। এখানে পাটের কারখানা ছিল না।
- ৫। বিদেশের সাথে বাণিজ্য করবার যোগ্য একটা সামুদ্রিক বন্দরও এখানে ছিল না।
- ৬। কোন মেডিকেল এবং ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয় ছিল না।
- ৭। ঢাকা শহর একটা জেলা শহর ছিল মাত্র। প্রাদেশিক রাজধানীর অফিস এবং কর্মচারীদের জন্য বাঁশের কলোনি তৈরি করতে হয়েছে। আর ইডেন মহিলা কলেজ বিল্ডিংকেই সেক্রেটারিয়েট ( সচিবালয় ) বানাতে হয়েছে।
( পলাশী থেকে বাংলাদেশ )
বঙ্গভঙ্গ আন্দোলন
এ দুরবস্থার প্রধান কারন এটাই ছিল যে, পূর্ব বাংলাকে ব্রিটিশ আমলে কোলকাতার পশ্চাদভূমি ( হিন্টারল্যান্ড ) বানিয়ে রাখা হয়েছিলো। এখানকার চাউল, মাছ, মুরগী, ডিম, দুধ, পাট এবং যাবতীয় কাঁচামাল কোলকাতার প্রয়োজন পূরণ করতো। আর কোলকাতার কারখানায় উৎপন্ন দ্রব্য এখানকার বাজারে বিক্রি করতো। তদুপরি শিক্ষা, চাকুরী, ব্যবসা ইত্যাদি অমুসলিমদেরই কুক্ষিগত ছিল।
ঢাকার নবাব সলিমুল্লাহর নেতৃত্বে পূর্ব বাংলা ও আসামের মুসলমানরা নিজেদের এলাকার এবং এর অধিবাসীদের উন্নয়নের প্রয়োজনে ঢাকাকে রাজধানী করে একটি আলাদা প্রদেশ করার আন্দোলন চালায়, যাতে কোলকাতার শোষণ থেকে মুক্ত হয়ে এ এলাকাটি উন্নতি করতে পারে। এ দাবীর যৌক্তিকতা স্বীকার করে ইংরেজ সরকার ১৯০৫ সালে ঢাকাকে রাজধানী করে পূর্ব বঙ্গ ও আসাম এলাকা নিয়ে একটি নতুন প্রদেশ গঠন করে। ১৯০৬ সালে এ নতুন প্রাদেশিক রাজধানীতে নবাব সলিমুল্লাহর উদ্যোগে নিখিল ভারত মুসলিম লীগের জন্ম হয়। এ সম্মেলনে গোটা ভারত বর্ষের বড় বড় মুসলিম নেতা যোগদান করায় ঢাকার গুরুত্ব আরও বেড়ে যায়।
( পলাশী থেকে বাংলাদেশ )
বঙ্গভঙ্গ বাতিল আন্দোলন
এ নতুন প্রদেশে মুসলমানদের প্রাধান্য প্রভাব ও উন্নতির যে বিরাট সম্ভাবনা দেখা দিলো, তাতে কোলকাতার কায়েমী স্বার্থে তীব্র আঘাত লাগলো। অমুসলিম রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, শিল্পপতি, ব্যবসায়ী, উচ্চপদস্থ সরকারী কর্মচারী ও অন্যান্য পেশাজীবীগণ “বাংলা মায়ের দ্বিখণ্ডিত” হওয়ার বিরুদ্ধে চরম মায়া কান্না জুড়ে দিলেন। অখণ্ড মায়ের দরদে তারা গোটা ভারতে তোলপাড় সৃষ্টি করলেন।
এ আন্দোলনে ব্যারিস্টার আব্দুর রাসুলদের মতো কিছু সংখ্যক মুসলিম নামধারী বুদ্ধিজীবিও শরীক হয়ে অখণ্ড বাংলার দোহাই দিয়ে বঙ্গভঙ্গের বিরুদ্ধে ময়দানে নেমে পড়েন। এ আন্দোলনের পরিনামে ১৯১১ সালে বঙ্গভঙ্গ রহিত হয়ে পূর্ব বাংলা আবার কোলকাতার লেজুড়ে পরিনত হয়। যদি বঙ্গভঙ্গ রহিত না হতো, তাহলে ১৯৪৭ সালে ঢাকাকে একটি উন্নত প্রাদেশিক রাজধানী হিসেবে এবং চট্টগ্রামকে পোর্ট হিসেবে রেডি পাওয়া যেতো। তাছাড়া শিক্ষা ও চাকুরীতে মুসলমানরা এগিয়ে যাবার সুযোগ এবং এ এলাকায় শিল্প এবং বাণিজ্য গড়ে উঠতো।
মজার ব্যাপার এই যে, ১৯৪৭ সালে গোটা বাংলাদেশকে পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত করার পক্ষে বলিষ্ঠ যুক্তি থাকা সত্ত্বেও কংগ্রেসের প্রবল দাবীতে ব্রিটিশ সরকার বাংলাকে বিভক্ত করে পশ্চিম বঙ্গকে ভারতের হাতে তুলে দিলো। যে অমুসলিম নেতৃবৃন্দ ১৯১১ সালে বঙ্গভঙ্গ রহিত করিয়ে ছিলেন, তারাই ১৯৪৭ সালে বঙ্গভঙ্গ করিয়ে ছাড়লেন। স্বার্থ বড় বালাই।
( পলাশী থেকে বাংলাদেশ )
পূর্ব বাংলার উন্নয়ন
১৯৪৭ সালে পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত হবার পরেই পূর্ব বাংলার সার্বিক উন্নয়ন শুরু হয়। কেন্দ্রীয় এবং প্রাদেশিক সিভিল সার্ভিস, পুলিশ সার্ভিস ইত্যাদিতে মুসলমান অফিসার নিয়োগ শুরু হলো। অগনিত পদে মুসলিম যুবকরা ব্যাপকভাবে চাকুরী পেতে থাকলো। এমনকি সশস্ত্র বাহিনীতেও বেশ সংখ্যায় লোক ভর্তি হবার সুযোগ এলো।
অপরদিকে ব্যবসা বাণিজ্যের ময়দানে অমুসলিমদের স্থানে মুসলিমদের অগ্রযাত্রা শুরু হল। ভারত করে হিজরত করে আসা লোকেরাই অমুসলিম ব্যবসায়ীদের সাথে বিনিময়ের ভিত্তিতে দোকান ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান দখল করলো। শিল্প কারখানার পুঁজি এবং অভিজ্ঞতা নিয়ে মুহাজিররাই এ এলাকার উন্নয়নে লেগে গেলো। যদি পাকিস্তান না হতো এবং আমরা যদি অখণ্ড ভারতের অধীনেই থাকতাম, তাহলে আজ স্বাধীন বাংলাদেশ নামে কোন রাষ্ট্রের জন্ম হতো না। এ অবস্থায় এ এলাকার মুসলমানদের কী দশা হতো তা কি আমরা ভেবে দেখি ? আজ যারা জেনারেল, তাঁদের কয়জন নন-কমিশন অফিসারের উপর কোন স্থান দখল করার সুযোগ পেতেন ? সেক্রেটারির মর্যাদা নিয়ে আজ যারা সচিবালয়ে কর্তৃত্ব করছেন, তাঁদের কতজন সেকশন অফিসারের উপরে উঠতে পারতেন ? আজ যারা পুলিশের বড় কর্তা, তারা দারোগার বেশী হতে পারতেন কি ?
মুসলিম নামের অধিকারঃী হয়েও বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ে যারা বড় বড় মর্যাদার আসন অলংকৃত করছেন, তাদের কি এ সুযোগ ঘটতো? ডাক্তার ও ইঞ্জিনিয়ারদের যে বাহিনী এখন বিদেশে পর্যন্ত বিরাট সুযোগ পাচ্ছেন, তাদের মধ্যে শতকরা কতজন মেডিক্যাল ও ইঞ্জিনিয়ারিং- এ পড়ার সৌভাগ্য লাভ করতেন?
বাংলাদেশে এখন যেসব শিল্প-কারখানা রয়েছে পাকিস্তান না হলে তা কি সম্ভব হতো? আজ যারা বড় বড় ব্যবসায়ী হয়েছেন, তারা মাড়োয়ারীদের দাপটে কি মাথা তুলতে পারতেন?
আজ বাংলাদেশ বিশ্বে দি¦তীয় বৃহত্তম মুসলিম দেশ হিসেবে পরিচিত। পাকিস্তান হয়েছিল বলেই এটুকু পজিশন স¤ভব হয়েছে। তা না হলে আমরা ভারতের একটা প্রদেশের অংশ হয়েই থাকতে বাধ্য হতাম। একটা পৃথক প্রদেশের মর্যাদাও পেতাম না। [পলাশী থেকে বাংলাদেশ]
কেন সার্বিক উন্নয়ন হলো না?
এ বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই যে, পূর্ব বংগের সার্বিক উন্নয়ন না হওয়ার জন্য পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সরকারই প্রধানত দায়ী। ইংরেজ চলে যাবার পর প্রশাসনিক কর্মকর্তা হয়ে যারা কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক সরকার পরিচলনা করলেন তাদের মধ্যে পূর্ব বংগের কোন বড় কর্মকর্তা ছিল না। আর পাকিস্তান আন্দোলনের যেসব নেতা কেন্দ্রীয় সরকাররের নেতৃত্বে ছিলেন, তাদের মধ্যে পূর্ব বংগের যারা প্রতিনিধিত্ব করছিলেন, তার এত অনভিজ্ঞ ও দূর্বল ছিলেন যে, পূর্ব বংগের উন্নয়নের ব্যাপারে প্রথম থেকেই কেন্দ্রীয় সরকারের যতটা করণীয় ছিল তার সামান্য কিছুই আদায় করা সম্ভব হয়েছে।
বৃশি আমলে পূর্ব বংগ চরমভাবে অবহেলিত থাকার দরুন এ অঞ্চল শিল্প-বাণিজ্য, সেচ প্রকল্প, বন্দর সুবিধা, কৃষি উন্নয়ন, যোগাযোগ ব্যবস্থা, সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তা, পেশাগত শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান ইত্যাদি ক্ষেত্রে পশ্চিম পাকিস্তানের তুলনায় অনেক অনুন্নত ছিল। ঐ অবস্থায় পূর্ব বংগের উন্নয়নের প্রতি শুরু থেকেই বিশেষ মনোযোগ দেয়া কর্তব্য ছিল। এ কর্তব্য পালন করা হলে কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতি এখানকার জনগণের এমন আস্থা সৃষ্টি হতো, যা পাকিস্তানের ঐক্য ও সংহতিকে দৃঢ় করতে সক্ষম হতো।
পূর্ব বংগের সার্বিক উন্নয়নে কেন্দ্রীয় সরকারের অবহেলার জন্য শুধু পশ্চিম পাকিস্তানের কর্মকর্তাদের উপর দোষ চাপিয়ে দিয়ে আমাদের নিজেদের অযোগ্যতা ও দুর্বলতা ঢেকে রাখার যারা চেষ্টা করে আমরা তাদের সাথে একমত নই।
যারা নিজেদের পশ্চাদগামিতার জন্য শুধু অপরকে দোষী সাব্যস্ত করেই আপন দায়-দায়িত্ব শেষ করে, তারা নিজেদের দোষ ও ভুল দেখতে পায় না। তাদের পক্ষে সত্যিকার উন্নয়ন অর্জন করা সম্ভব হয় না। পাকিস্তান হবার পর এলাকার জনগণের অবস্থার সার্বিক উন্নয়ন না হওয়া এবং যে টুকু উন্নয়ন হয়েছে, তা দ্রুত না হওয়ার জন্য পাকিস্তানীদের উপর দোষ চাপাবার প্রবণতা এত প্রবল ছিল যে, সব ব্যাপারেই শুধ ুপশ্চিমের শোষণের দোহাই দেয়া হতো।
নিজেদের ন্যায্য অধিকার আদায়ের যোগ্যতা না থাকলে এক মায়ের পেটের ভাই-এর কাছেও ঠকতে হয়। যে ভাই ঠকায়, সে নিশ্চয়ই দোষী। কিন্তু সে তার স্বার্থ যেমন বুঝে নিচ্ছে, অপর ভাইও যদি নিজের অধিকার আদায় করার যোগ্য হয়, তাহলে আর ঠকতে হত না।
আমাদের সবচেয়ে বড় দুর্বলতা ছিল নিঃস্বার্থ, জনদরদী, সৎ ও যোগ্য নেতৃতে¦র অভাব। পূর্ব পাকিস্থানের উপর যত অবিচার হয়েছে এ জন্য প্রধানত দায়ী এখানকার ঐসব নেতা, যারা কেন্দ্রীয় সরাকারে শরীক থেকেও বলিষ্ঠ ভুমিকা পালন করেন নি। বিশেষ করে আইয়ুব আমলে যারা মন্ত্রিত্ব ও ব্যক্তিগত স্বার্থ পেয়ে গনতন্ত্রের বদরে একনায়কত্বকে সমর্থন করেছিল, তারা এদেশের জনগণকে রাজনৈতিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করার সাথে সাথে অর্থনৈতিক দিক দিয়ে পংগু করে রাখার জন্যও বিশেষভাবে দায়ী।
নওয়াব সিরাজুদ্দৌলার পরাজয়ের জন্য যারা শুধু লর্ড ক্লাইভকে গালি দেয়, তাদের সাথে একমত হওয়া যায় না। ক্লইভ তার জাতীয় স্বার্থের পক্ষে যোগ্য ভুমিকা পালন করেছে। মীর জাফরের স্বার্থপরতা ও বিশ্বাসঘাতকতার দরুনই যে আমরা পরাধীন হয়েছিলাম, তা থেকে শিক্ষা আজও আমরা নিচ্ছি না। পশ্চিম পাকিস্তানের ”ক্লাইভদের” চেয়ে পূর্ব পাকিস্তানের ”মীর জাফররাই” যে আমাদের অবনতির জন্য দায়ী, সে কথা উপলদ্ধি না করার ফলে আজও আমাদের ভাগ্যের কোন পরিবর্তন হচ্ছে না।
নিঃস্বার্থ নেতৃত্বের অভাব
সত্যিকার আদর্শবান, নিঃস্বার্থ জনদরদী, চরিত্রবান ও যোগ্য নেতৃত্বের অভাব দূর না হওয়া পর্যন্ত আমাদের অবস্থার উন্নতি হতে পারে না। আমাদের দেশে কোন পলিটিকেল সিস্টেম গড়ে ওঠার লক্ষণই দেখা যাচ্ছে না। এখানে রাজনীতি করা মানে যেকোন উপায়ে ক্ষমতা দখলের চেষ্টা। দলীয় নেতৃত্বের আসন দখল করাই রাজনৈতিক দল গছনের একমাত্র লক্ষ। ঐ আসন বেদখন হয়ে গেলে দল ভেংগে হলেও নেতা হবার রীতি এদেশে প্রচলিত হয়ে গেছে।
আসন দখল করাই রাজনৈতিক দল গছনের একমাত্র লক্ষ্য। ঐ আসন বেদখল হয়ে গেলে দল ভেংগে হলেও নেতা হবার রীতি এদেশে প্রচলিত হয়ে গেছে।
গনতন্ত্রর শ্লোগান আমাদের দেশে একনায়করাই বেশী জোরে দিয়ে থাকে। কারণ, রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যেও গণতান্ত্রিক রীতি ও পদ্ধতির যথেষ্ট অভাব রয়েছে। একনায়কত্ব ও গণতন্ত্রের বাহ্যিক চেহারায় যেন পার্থক্য স্পষ্ট নয়।
এ ধরনের রাজনৈতিক পরিবেশ আছে বলেই সেনাপতিরাও ক্ষমতা দখল করে রাজনৈতিক দল গঠন করার ডাক দিলে গণতন্ত্রের বহু তথাকথিত ধ্বজাধারী একনায় কেই গণতন্ত্রের নায়ক হিসেবে মেয়ে নেয।
জনঃস্বার্থ নেতৃত্ব থাকলে জনগণের সব অধিকারই অর্জন করা সম্ভব হতো। আর ঐ জিনিসের অভাব থাকায় বাংলাদেশ আলাদা রাষ্ট্রে পরিনত হওয়া সত্ত্বেও আমাদের দুর্দশা বেড়েই চলেছে। নিঃস্বার্থ নেতৃত্ব সৃষ্টির জন্য প্রয়োজনঃ
০১। নিষ্ঠার সাথে গণতন্ত্রের আদর্শ মেনে চলার অভ্যাস।
০২। সরকারী ও বিরোধী সব রাজনৈতিক দলের মধ্যে সত্যি কার গণতান্ত্রিক পদ্ধতির প্রচলন।
০৩। দেশ শাসনের উদ্দেশ্যে একটি গণতšিক রাজনৈতিক কাঠামো গড়ে তুলবার ব্যবস্থা।
০৪। আবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের নিশ্চয়তা বিধান।
০৫। যারা বিনা নির্বাচনে ক্ষমতা দখল করে তাদেরকে গনতন্ত্রের দুশমন মনে করা এবং তাদের নেতৃত্ব মানতে অস্বীকার করা। [পলাশী থেকে বাংলাদেশ]