তাহারাত
পবিত্রতা ঈমানের অঙ্গ
***************************
হযরত আবু মালিক আল-আশ’আরী (রা) হইতে বর্ণিত হইয়াছে, তিনি বলিয়াছেন, রাসূলে কারীম (স) ইরশাদ করিয়াছেনঃ পবিত্রতা ও পরিচ্ছন্নতা ঈমানের অঙ্গ। আর ‘আলহামদুলিল্লাহ’ আমলের পাল্লা পূর্ণ মাত্রায় ভরিয়া দেয়, ‘সুবহান আল্লাহ’ ও আলহামদুলিল্লাহ’ পূর্ণ করিয়া দেয় আকাশমন্ডল ও পৃথিবীকে। পরন্তু নামায জ্যোতি, সাদকা অনস্বীকার্য দলীল, ধৈর্য আলো এবং কুরআন হয় তোমার পক্ষের প্রমাণ, না হয় তোমার বিরুদ্ধের দলীল। প্রত্যেক মানুষেরই সকাল হয়, পরে সে নিজের সত্তারই বেচা-কেনা করে। অতঃপর সে হয় উহাকে (নিজেকে) মুক্তি দেওয়ার ব্যবস্থা করে, নতুবা উহাকে (নিজেকে) সে ধ্বংস করিয়া দেয়।
-মুসলিম
ব্যাখ্যাঃ হাদীসটি মূলত নবী করীম (স)-এর একটি ভাষণ। ইহাতে ইসলামের কয়েকটি মূলনীতি সন্নিবেশিত রহিয়াছে বিধায় ইহার গুরুত্ব অপরিসীম। এই ভাষণে তিনি দ্বীন-ইসলাম সংক্রান্ত অনেক তত্ত্বকথাই বর্ণনা করিয়াছেন। ভাষনটির শুধু প্রথম বাক্যই পবিত্রতা সংক্রান্ত। আর এই কারণেই সম্পূর্ণ হাদীসটি হাদীসের কিতাবসমূহে ‘তাহারাত’ পর্যায়ে উদ্ধৃত হইয়াছে। ******** অর্থ পবিত্রতা অর্জন।
হাদীসের শব্দ *********** অর্থ অর্ধেক। ইমাম তিরমিযী অপর একজন সাহাবী হইতে অন্য ভাষায় এই হাদীমটি বর্ণনা করিয়াছেন। সেই ভাষা হইলঃ
************ পবিত্রতা-পরিচ্ছন্নতা ঈমানের অর্ধেক।
মূলত ***** ও ***** শব্দদ্বয়ের অর্থ একই। আর উভয় ধরনের বর্ণনায় হাদীসের অর্থ হইল, পবিত্রতা ও পরিচ্ছন্নতা ঈমানের বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ।
কিন্তু হাদীসে পবিত্রতাকে ‘ঈমানের অর্ধেক’ বলা হইল কেন? ইহার জবাবে বলা হইয়াছেঃ পবিত্রতার যাহা সওয়াব তাহা ঈমানের সওয়াবের অর্ধেক পরিমাণ পর্যন্ত বৃদ্ধি পায়। বলঅ হইয়াছে, ঈমান যেমন পূর্ববর্তী সব ভুলত্রুটি ও গুনাহ খাতা দূর করিয়া দেয়, অযুও অনুরূপ কাজ করে। তবে ইহা ঈমান বৌাতিরেকে সহীহ হয় না। উহা যেহেতু ঈমানের উপর নির্ভরশীল, এই কারণে ইহা ‘ঈমানের অর্ধেক’ হওয়ার সমার্থবোধক হইল। আরো বলা হইয়াছে, এখানে ‘ঈমান’ বলিয়া ‘নামায’ বুঝানো হইয়াছে। আর ‘তাহারাত’-পবিত্রতা নামায শুদ্ধ হওয়ার অপরিহার্য শর্ত। ফলে ইহা ঈমানের অর্ধেকের সমান। আর ***** শব্দ বলিলে যে শাব্দিক অর্থে পুরাপুরি ‘অর্ধেক’ইহইতে হইবে,এমন বাধ্যবাধকতা কিছুই নাই। ইমাম নববীর মতে এই জওয়াবটি অধিক গ্রহণযোগ্য। ইমাম তুরপুশতী বলিয়াছেন,’ঈমান’ হইল শিরক হইতে পবিত্রতা, যেমন ‘তহুর’ হইল অযুহীন অবস্থঅ হইতে পবিত্রতা। ফলে এই দুইটি-ঈমান ও তাহারাত-উভয়ই পবিত্রতার ব্যাপার। উহাদের একটি মানুষের আভ্যান্তরীন দিকের সহিত সংশ্লিষ্ট, আর দ্বিতীয়টি বহিরাঙ্গের সহিত।
ইমাম গাজ্জালীর বিশ্লেষণে দেখানো হইয়াছে,’তাহারাত’ বা পবিত্রতার চারিটি পর্যায় রহিয়াছেঃ (ক) বাহ্যিক দিক অপবিত্রতা ও ময়লা-আবর্জনা হইতে পবিত্রকরণ। (খ) অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলিকে পাপ-গুনাহ ও অপরাধ হইতে পবিত্র করণ। (গ) খারাপ ও ঘৃণ্য চরিত্র হইতে অন্তরকে পবিত্রকরণ এবং (ঘ) আল্লাহ ছাড়া অন্য সব কিছু হইতে মন, অন্তর ও হৃদয়কে পবিত্রকরণ। আর নবী-রাসূল ও সিদ্দিকগণের পবিত্রতার ইহাই হইল মূল কথা। ইহার প্রত্যেকটি পর্যায়ে ‘তাহারাত’ হইল অর্ধেক কাজ। প্রত্যেক পর্যায়ে যেমন বর্জন ও ত্যাগ আছে, তেমনি আছে গ্রহণ ও অলংকরণ। এই হিসাবে বর্জন হইল অর্ধেক আমল। কেননা অপর অংশ উহারই উপর নির্ভরশীল। আল্লাহর নির্ভুল পরিচিতি ও তাঁহার মহানত্ব হৃদয়ে স্থান লাভ করিতে পারে না, যতক্ষণ পর্যন্ত আল্লাহ ছাড়া অন্য সব কিছু হৃদয় মন হইতে বিদায় গ্রহণ না করিবে। কেননা কাহারো হৃদয়ে এই দুইটি কখনো একত্রিত হইতে পারে না। অনুরূপভাবে হৃদয়-মন হইতে খারাপ চরিত্র ও পংকিল মানসিকতার বিলীন হওয়া এবং অতঃপর উহার উত্তম ও মহান চরিত্রগুণে অভিষিক্ত হওয়া বাঞ্ছনীয়। অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলির প্রথমে পাপ হইতে মুক্তি লাভ এবং পরে আল্লাহনুগত্যের গুণে অলংকৃত হওয়া আবশ্যক। আর ইহাদের প্রত্যেকটি পর্যায়ের জন্য জরুরী শর্ত হইল পরবর্তী জরুরী কাজ খুজিয়া লওয়া। অতএব বহিরাঙ্গের পবিত্রতার পর আত্মার (*****) পবিত্রতা, উহার পর হৃদয়ের (*****) পবিত্রতা এবং সর্বশেষে অন্তরলোকের গভীর গহনের পবিত্রতা। এই কারণে ‘তাহারাত’ বলিতে কেবলমাত্র বহিরাঙ্গের পবিত্রতাকে যথেষ্ট মনে করা মুলতই ভুল। কেননা তাহাতে এই পবিত্রতার আসল লক্ষ্য ও উদ্যেশ্য হারাইয়া ফেলার সমূহ আশংকা রহিয়াছে। *****
পবিত্রতা ও পরিচ্ছন্নতার এই গুরুত্ব বলার পর রাসূলে করীম (স) আল্লাহর তকবীহ করা ও হামদ করার সওয়াব উহার উন্নত মর্যাদার কথা বলিয়াছেন। তসবীহ অর্থাৎ ‘সুবহান আল্লাহ’ বলার তাৎপর্য হইল এই বিশ্বাস ও মনোভাব প্রকাশ করা ও উহার সত্যতার স্বাক্ষ্য দেওয়া যে, আল্লাহর মহান সত্তা তাহার- আল্লাহর প্রদত্ত মর্যাদার পক্ষে- হানিকর সব রকমের কথা ও ধারণা -বিশ্বাসের কুলষতা হইতে পবিত্র। হামদ অর্থাৎ আলহামদুলিল্লাহ বলার তাৎপর্য হইল এই দৃঢ় প্রত্যযের কথা প্রকাশ করা যে, যে সব সৌন্দর্য ও পরিপূর্ণতার কারণে একজনের প্রশংসা করা চলে, তাহা কেবলমাত্র মহান ‘আল্লাহ তা’য়ালার সত্তায় নিহিত। অতএব সমস্ত প্রশংসা ও তারীফ একমাত্র আল্লাহর জন্য। আল্লাহর আরোকমন্ডিত ও নিষ্পাপ সৃষ্টি-ফেরেশতাগণের দিন-রাত্রির একমাত্র কাজ হইল এই তসবীহ করা। কুরআন মাজীদেও তাঁহাদের এই কাজের কথা তাঁহাদের নিজেদের জবানীতেই বলা হইয়াছেঃ
**************************
হে আল্লাহ! আমরা তো কেবল তোমারই তসবীহ ও প্রশংসাকার্যে প্রতিনিয়ত ব্যতিব্যস্ত হইয়া রহিয়াছি।
কাজেই আল্লাহর সেরা সৃষ্টি এই মানুষেরও দিনরাত্র এই কাজেই অতিবাহিত হওয়া উচিত। এই কাজই হওয়া উচিত তাহাদের দিনরাত্রির একমাত্র ব্যস্ততা। তাহারা নিরবিচ্ছিন্নভাবে কেবল আল্লাহরই পবিত্রতা বর্ণনা করিবে এবং প্রত্যেকটি ব্যাপারে কেবল তাঁহারই প্রশংসা করিবে। এই কাজে তাহাদিগকে উদ্বুদ্ধ করার উদ্দেশ্যেই নবী করীম (স) আলোচ্য হাদীসে এই তসবীহ ও হামদ করার ফযীলত বয়ান করিয়াছেন। বলিয়াছেন, ‘সুবহান-আল্লাহ’ কালেমা আমলের তুলাদন্ডকে ভরিয়া দেয়। আর এই কালেমার সাথে ‘আলহামদুলিল্লাহ”- ও যদি মিলিত হয় তাহা হইলে এই দুইটি কালেমা’র ‘নূর’ আসমান যমীনের সমগ্র পরিমন্ডলকেই পরিপূর্ণ করিয়া দিবে, সমুজ্জল ও ভাস্বর করিয়া তুলিবে।
‘সুবহান আল্লাহ’ কালেমা দ্বারা আমলের তুলাদন্ড ভরিয়া যাওয়া এবং ‘সুবহান আল্লাহ’ ও ‘আলহামদুলিল্লাহ’ বাক্যদ্বয় দ্বারা আসমান ও যমীন পরিপূর্ণ করিয়া দেওয়ার প্রকৃত তাৎপর্য যে কি, তাহা উপলব্ধি করার মত জ্ঞান, চিন্তাশক্তি কিংবা অনুভূতি এই দুনিয়ায় মানুষকে দেওয়া হয় নাই। কিন্তু যেহেতু এই কথা রাসূলে কারীম (স) বলিয়াছেন এবং তাহার কথা নির্ভুল সূত্রে বর্ণিত হইয়াছে, তাই একথা আমাদিগকে সদা সর্বদা প্রস্তুত থাকিতে হইবে।
ইহার পর নবী করীম (স) নামায সম্পর্কে বলিয়াছেনঃ উহা নূর-নির্মল আলোকমালা। বস্তুত নামাযীর মধ্যে নামাযের প্রতিক্রিয়াস্বরূপ হৃদয়লোকে একটা জ্যোতির উদ্রেক হয় এবং যে সব নামাযী সত্যিকারভাবে নামায পড়ে, তাহারা ইহা নিঃসন্দে অনুভব করিতে পারে। নামাযের একটি মোক্ষম কল্যাণ এই যে, উহার সাহায্যে মানুষ সব অন্যায় ও লজ্জাকর কাজকর্ম হইতে বাচিতেঁ পারে। কুরআন মজীদে বলা হইয়াছেঃ
****************************************
নামাজ নামাযীকে সব লজ্জাকর ও ঘৃণ্য নিষিদ্ধ কাজ হইতে বিরত রাখে।
আর পরকালে নামাযের এই ‘নূর’ সেখানকার অন্ধকারাচ্ছন্ন পরিবেশকে আলোকোদ্ভাসিত করিয়া তুলিবে। কুরআন মাজীদে বলা হইয়াছেঃ
****************************************
আল্লাহর নেক বান্দাদের অগ্রভাগে এবং তাহাদের ডানদিকে তাহাদের আমলের ‘নূর’ দৌড়াইতে থাকিবে।
অতঃপর ‘সাদকা’ সম্পর্কে বলিয়াছেনঃ ‘উহা অকাট্য ও অনস্বীকার্য দলীল।’ দুনিয়ায় ইহার তাৎপর্য ইহাই হইতে পারে যে, সাদকা দানকারী বান্দা প্রকৃতই মুমিন ও মুসলমানরূপে প্রতীত। সাদকা বা দান-খয়রাতই হইল একজন লোকের ঈমানদার হওয়ার প্রমাণ। বস্তুত দিলের মর্মমূলে ঈমান না থাকিলে কোন লোকই স্বীয় ম্রমার্জিত অর্থ-সম্পদ সহজে অন্যকে দিতে পারে না। মানুষ অর্থব্যয়ে সাধারণ কার্পণ্যই দেখাইয়া থাকে। ইহাই মানুষের স্বাভাবিক প্রবণতা। পক্ষান্তরে পরকালে এই কথার তাৎপর্য এই দেখা যাইবে যে, সাদকা দানকারী নিষ্ঠাবান বান্দার সাদকাকেই তাহার নিৎসন্দেহে আল্লাহরস্তির অকাট্য প্রমাণ ও নিদর্শনরূপে মানিয়া লইয়া তাহাকে নানাবিধ নিয়ামত দিয়া ধন্য করা হইবে। তখন জবাবে তাহার দানশীলতাকে সে বাস্তব প্রমাণ হিসাবে পেশ করিবে। এই দানশীলতাই তখন তাহার এমন এক নিদর্শন হইয়া দৎাড়াইবে, যাহার দরুন সে সব রকমের জিজ্ঞাসাবাদ হইতে নিষ্কৃতি পাইয়া যাইবে। এই দান-সদকাই তাহার কল্যাণ লাভের কারণ হইবে।
ইহার পর ‘সবর’ বা ধৈর্য ধারণ সম্পর্কে বলিয়াছেন যে, উহা আলো এবং উজ্জ্বলতা। ‘সবর’ শব্দের অর্থঃ
************************************
মনের কামনা লালসা হইতে নিজেকে বিরত রাখা এবং যে সব ইবাদত করা কষ্টকর এবং যে সব ঘটনা-দূর্ঘটনায় বান্দাকে নানা কষ্ট ভোগ করিতে হয় তাহাতে বিশ্বাস স্থির রাখা।
কেহ কেহ মনে করিয়াছেন, এই ‘সবর’ অর্থ রোযা। কিন্তু ‘সবর’ শব্দের আসল অর্থ তো ‘রোযা নয়, বরং উহার আসলা অর্থ হইল, আল্লাহর বিধানের অধীন নফসের সব লালসা-কামনাকে দমন রাখা ও তাঁহার পথে সব রকমের দুঃখ-কষ্ট শান্ত মনে ও অক্ষুব্ধ চিত্তে বরদাশত করিতে থাকা।” আর এখানে এই অর্থই প্রযোজ্য। এই অর্থের দিক দিয়া ইহা ধর্মভিত্তিক গোটা জীবনকেই পরিব্যাপ্ত করে। নামায, রোযা, সাদকা,হজ্জ ও জিহাদ এবং সাধারণভাবে আল্লাহর দ্বীন ও আইন-বিধান পুরাপুরি পালন ব্যাপদেশে যাবতীয় দুঃখ-কষ্ট ভোগ করা সবই উহার অন্তর্ভুক্ত হয়। এই ‘সবর’ সম্পর্কেই রাসূলে করীম (স) ইরশাদ করিয়াছেন যে, উহা আলো ও উজ্জলতা। কুরআন মাজীদে সূর্যের আলোকে ***** (আলো) এবং চন্দ্রের ঔজ্জ্বল্যকে ***** ‘নূর’ বলা হইয়াছে-
******************************************
সেই মহান আল্লাহই সূর্যকে আলো এবং চন্দ্রকে উজ্জ্বল বানাইয়াছেন।
এই হিসাবে ‘সবর’ও ‘নামায’ – এর বিচ্ছুরিত আলোর মধ্যে ততখানি তারতম্য হইবে, যতখানি তারতম্য সূর্য ও চন্দ্রের আলোর মধ্যে। পরে ‘কুরআন’ সম্পর্কে বলিয়াছেনঃ ‘উহা তোমার পক্ষের প্রমাণ অথবা তোমার বিপক্ষের।’ অর্থাৎ কুরআন মাজীদ আল্লাহর কালাম, তাঁহারই দেওয়া হিদায়তের বিধান। কাজেই তোমরা যদি উহার যথাযথ মর্যাদা রক্ষা কর এবং উহা মানিয়া চল, তবে উহা তোমার পক্ষের-তোমার ঈমান ও আনুগত্যের সাক্ষী ও প্রমাণ হইবে। আর যদি তোমার আচরণ ও আমল উহার বিপরীত হয়, তাহা হইলে নিশ্চয়ই কুরআন মাজীদ তোমার বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিবে এবং উহাই তোমার বেঈমানী প্রমাণ করিয়া দিবে।
এইসব কথা বলার পর হাদীসের শেষ ভাগে রাসূলে করীম (স) বলিয়াছেনঃ প্রত্যেক মানুষই যে-অবস্থায় ও যে ব্যস্ততায় থাকুক ও নদনপাত করুক না কেন, প্রতিদিনই সে নিজের সত্তার ও নিজের মনের বেচা-কেনা অবশ্যই করে। এই বেচা কেনার মাধ্যমে হয সে নিজের মুক্তির ব্যবস্থা করে কিংবা উহাকে ধ্বংসের মুখে ঠেলিয়া দেয়। ইহার তাৎপর্য এই যে, মানুষের গোটা জীবনই এক ধারাবাহিক ব্যবসায় ও কেনা-বেচার জীবন। সে নিজেকে কাহারও না-কাহারও নিকট কিছুর বিনিময়ে অবশ্যই বিক্রয় করে এবং অন্য কাহারও না-কাহারো নিকট হইতে কিছু না-কিছু ক্রয় করে। সে যদি আল্লাহর বন্দেগী ও তাঁহার সন্তোষ-সন্ধানমূলক জীবন অতিবাহিত করে, তাহা হইলে সে নিজেকে আল্লাহর নিকট বিক্রয় করিল এবং উহার বিনিময়ে সে নিজের জন্য মহৎ কিছু উপার্জন করিল। আর সেই সঙ্গে সে নিজের পরকালীন মুক্তিরও ব্যবস্থা করিতে পারিল কিন্তু যদি সে ইহার বিপরীত আল্লাহকে ভুলিয়া লালসার দাসত্বমূলক জীবন যাপন করে, তাহা হইলে নিঃসন্দেহে সে নিজের ধ্বংসের আযোজন করিল এবং জাহান্নামকে নিজের চূড়ান্ত পরিণতিরূপে বাছাই করিয়া লইল।
হাদীসটির প্রথম ও মূল প্রসঙ্গ ছিল পবিত্রতা ও পরিচ্ছন্নতার প্রকৃত মর্যাদা বর্ণনা্ পরবর্তী কথাগুলি মূলত উহার সহিত অপ্রাসঙ্গিক নহে। সামহ্রিকভাবে রাসূলে করীমের এই ভাষণটি দ্বীনী-যিন্দেগীর প্রেক্ষিতে অত্যান্ত মুল্যবান, সন্দেহ নাই।
প্রসাব-পায়খানা হইতে পবিত্রতা অর্জন
*********************************************
হযরত আবূ হুরায়রা (রা) হইতে বর্ণিত হইয়াছে, তিনি বলিয়াছেন, হযরত নবী করীম (স) ইরশাদ করিয়াছেনঃ আমি তোমাদের জনো পিতার সমতূল্য। আমি তোমাদিগকে প্রয়োজনীয় জ্ঞান শিক্ষা দিতেছি। অতএব তোমাদের কেহ যখন পায়খানায় যাইবে তখন যেন কিবলামুখী হইয়া এবং কিবলাকে পিছনে ফেলিয়া না বসে। কেহ তাহার ডান হাত দ্বারা পবিত্রতা লাভের কাজ না করে। এই জন্য তিনি তিন খন্ড পাথর ব্যবহার করার নির্দেশ দিতেন এবং গোবর ও হাড় ব্যবহার করিতে নিষেধ করিতেন।
-আবু দাউদ, ইবনে মাজাহ, দারেমী
ব্যাখ্যাঃ প্রস্রাব-পায়খানা মানুষের স্বাভাবিক প্রযোজনের ব্যাপার। ইহাতে শরীর নাপাক হয়, নামায পড়ার উপযুক্ত থাকে না। কাজেই একদিকে যেমন পায়খানা প্রস্রাবের জন্য বসিবার শরীয়তসম্মত নিয়ম জানিতে হইবে তেমনি জানিতে হইবে তজ্জনিত অবত্রতা হইতে পবিত্রতা অর্জনের নিয়ম। আলোচ্য হাদীসে নবী করীম (সা) তাহাই মিক্ষা দিয়েছেন। হাদীসটির মুরুতেই এই শিক্ষাদানের ব্যাপারে সমগ্র মুসলিম উম্মাতের মুকাবিলায় রাসূলে করীম (স) এর সঠিক মর্যাদার কথা বলা হইয়াছে। তিনি বলিয়াছেনঃ ‘আমি তোমাদের পিতার মত।’ এই কথাটি দ্বারা রাসূলের সঙ্গে মুসলমানদের সম্পর্ক স্পষ্ট করিয়া তোলা হইয়াছে, যেন মুসলমানরা তাঁহার নিকট তাহাদের দ্বীনী ব্যাপারে কোন কিছু জিজ্ঞাসা করিতে লজ্জা না পায। ঠিক যেমন পুত্র পিতার নিকট নিজের কোন অসুবিধার কথা বলা হইতে নিছক লজ্জার কারণে বিরত থাকে না, এখানেও ঠিক তেমনি। এখানে পিতা-পুত্রের দৃষ্টান্ত দিয়া নবী করীম (সা) প্রসঙ্গত একথাটিও স্পষ্ট করিয়া তুলিলেন যে, পিতার কর্তব্য হইল সন্তানদিগকে শিষ্টাচার শিক্ষা দেওয়া এবং সন্তানের কর্তব্য তাহা গ্রহণ ও পালন করা। সন্তানের কর্তব্য যেমন পিতার আদেশ-নিষেধ-উপদেশ পালন করিয়া চলা, তেমনি সর্বসাধারণ মুসলমানদের কর্তব্য রাসূলের কথা মানিয়া চলা। আর তাঁহার কর্তব্য সঠিক শিক্ষাদান।
এই হাদীসে পায়খানা-প্রস্রাবের উদ্দেশ্যে বসা ও উহার পবিত্রতা অর্জনের নিয়ম শিক্ষা দেওয়া হইয়াছে। হাদীমেসর মূল শব্দ ***** অর্থ নিচু স্থান্ পায়খানা-প্রস্রাবের জন্য বসার উদ্দেশ্যে সাধারণত নিচুস্থান নির্ধারণ করা হয় বলিয়া এই শব্দটি পায়খানা-প্রস্রাব করার স্থান এবং পায়খানা প্রস্রাব করা-এই উভয় অর্থ প্রকাশ করে। হাদীসে বলা হইয়াছে, তোমাদের কেহ যখন প্রস্রাব-পায়খানায় বসিবে তখন যেন কিবলামুখী হইয়া কিংবা কিবলাকে পিছনে ফেলিয়া না বসে। কেননা, ‘কিবলা’ বিশেষভাবে নামাযের জন্য একটি পবিত্র দিক। সেই দিকেই আল্লাহর ঘর-কাবা শরীফ। প্রস্রাব-পায়খানার দুর্গন্ধময় ও নাপাক আবর্জনাপূর্ণ স্থানে কিবলার মুখামুখি হইয়া বসা বা উহাকে পিছনে ফেলিয়া বসা অত্যান্ত বেয়াদবীমূলক কাজ। সেই কারণে রাসূলে করীম (সা)-এর এই নিষেধ সর্বত্রই পালনীয়।
‘ডান হাত দ্বারা পবিত্রতা লাভের কাজ করিবে না’ অর্থৎ পায়খানা বা প্রস্রাব করার পর উহা ময়লা পরিষ্কারের কাজে ডান হাত ব্যবহার করা নিষেধ। কেননা ডান হাতখানা বিশেষভাবে পানাহার ও অন্যদের সাথে মুসাফিদা ইত্যাদি কাজের জন্য নির্দিষ্ট। আর বাম হাত দেহের নিম্নাংশের কাজে ও ময়লা আবর্জনা ও অপবিত্রতা বিদূরণের কাজে ব্যবহৃত হওয়ার জন্য নির্দিষ্ট। *****
পায়খানা করিবার পর ময়লা সাফ করিবার জন্য নবী করীম (সা) সাধারণত তিনখানি পাথর খন্ড ব্যবহার করার নির্দেশ দিতেন। মনে রাখিতে হইবে যে, নবী করীম (সা) আরব দেশের অধিবাসী ছিলেন এবং আরব দেশ হইল ঊষর-ধূষর মরুভূমি। সেখানে সর্বত্র পানি পাওয়া যায় না। তাই জনসাধারণের পক্ষে এসব প্রস্তরখন্ড ব্যবহার না করিয়া কোন উপায় ছিল না। কিন্তু প্রস্রাব-পায়খানার ময়লা হইতে পবিত্র হওয়ার ইহাই একমাত্র ও সর্বত্র ব্যবহার্য উপায় নয় এবং নবী করীম (সা)-ও সব সময় প্রস্তরখন্ড দ্বারাই পবিত্রতা অর্জন করিতের এমন কথাও নয়। এই জন্য তিনি নিজে পানিও ব্যবহার করিতেন। এই পর্যায়ে হযরত আবু হুরাইরা (রা) বর্ণিত হাদীসটি অকাট্য প্রমাণ। তিনি বলিয়াছেনঃ
******************************
নবী করীম (সা) যখন পায়খানায় যাইতেন, তখন আমি তাহার জন্য একটি পাত্রে পানি লইয়া আগাইয়া যাইতাম। তিনি উহার দ্বারা ময়লা পরিষ্কার করিয়া পবিত্রতা লাভ করিতেন। পরে তিনি তাঁহার হাত মাটির উপর ঘষিতেন। ইহার পর আমি তাঁহার জন্য অপর এক পাত্রে করিয়া পানি লইয়া আসিলে তিনি উহার দ্বারা অযূ করিতেন।
প্রস্তর কিংবা মুষ্ক মাটি দ্বারাই যে ময়লা সাফ করিতে হইবে, এমন কোন শর্ত ইসলামী শরীয়তে নাই। নবী করীম (সা) নিজে অন্য কোন জিনিস ছাড়াও মুধু পানি দ্বারাই এই ময়লা পরিষ্কার করিয়াছেন। ইহাতে তাঁহার হাতে ময়লা লাগিয়া দুর্গন্ধের সৃষ্টি করিয়াছে। এই দুর্গন্ধ দূর করার উদ্দেশ্যে তিনি হাত মাটিতে ঘষিয়াছেন। মাটিতে ঘষিয়া কিংবা সাবান দ্বারাও হাত ধৌত করা যাইতে পারে। ইবনে মালিক ও ইবনে হাজার আল-আসকালানী প্রমুখ মুহাদ্দিস ‘ইস্তিনজা’ বা পায়খানা-প্রস্রাবের ময়লা ও দূর্গন্ধ দূর করিয়া পবিত্রতা অর্জনের’ এই পদ্ধতিকেই ‘সুন্নাত’ বলিয়াছেন। শুধু তাহাই নয়, প্রস্রাব-পায়খানা করিবার পর উহার ময়লা হইতে পবিত্রতা অর্জনের উদ্দেশ্যে কেবলমাত্র পানি ব্যবহার করা এবং পানির পূর্বে কোন পাথর খন্ড কিংবা মাটির ঢেলা ব্যবহার করা আল্লাহর নিকটও অত্যান্ত প্রশংসনীয় কাজ। কুবা’বাসীরা তাহাই করিতেন বলিয়া কুরআন মাজীদে তাঁহাদের প্রশংসা করা হইয়াছে। কেননা পূর্ণ মাত্রায় ময়লা পরিষ্কার করা ও পবিত্রতা অর্জন কেবলমাত্র পানি দ্বারাই সম্ভব। এই কারণে এই কাজে শুষ্ক গোবর কিংবা হাড় ব্যবহার করিতে স্পষ্ট নিষেধ করা হইযাছে কেননা উহার সাহায্যে প্রকৃতভাবে ময়লা পরিষ্কার করা যায় না।
অপবিত্রতা কবর আযাবের কারণ
****************************************
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা) হইতে বর্ণিত হইয়াছে, তিনি বলিয়াছেনঃ নবী করীম (সা) দুইটি কবরের পাশ দিয়া যাইতেছিলেন। তখন তিনি বলিলেনঃ এই কবর দ্বয়ে সমাহিত লোক দুইটির উপর আযাব হইতেছে। আর তেমন কোন বড় গুনাহের কারণে এই আযাব হইতেছে না; (বরং খুবই ছোট-খাটো গুনাহের দরুন আযাব হইতেছে, অথচ ইহা হইতে বাচিঁয়া থাকা কঠিন ছিল না)।ইহাদের একজনের উপর আযাব হইতেছে মুধু এই কারণে যে, সে প্রস্রাবের মলিনতা ও অপবিত্রতা হইতে বাচিঁয়া থাকার অথবা পবিত্র ও পরিচ্ছন্ন হইয়া থাকার জন্য কোন চিন্তা বা চেষ্টাই করিত না। আর দ্বিতীয় জনের উপর আযাব হওয়ার কারণ এই যে, সে চোগলকুরী করিত। পরে রাসূলে করীম (সা) (খেজুর গাছে) একটি তরতাজা শাখা গ্রহণ করিলেন এবং উহাকে মাঝখান হইতে চিরিয়া দুই ভাগ করিলেন। পরে এক এক ভাগ এক একটি কবরের উপর পুতিয়া দিলেন। সাহাবা জিজ্ঞাসা করিলেনঃ হে রাসূল! আপনি এই কাজ করিলেন কি উদ্দেশ্যে? তিনি বলিলেনঃ আশা করা যায়, এই শাখাকন্ড দুইটি শুকাইয়া না যাওয়া পর্যন্ত এই দুই ব্যক্তির উপর আযাব অনেকটা লাঘব করিয়া দেওয়া হইবে।
-বুখারী, মুসলিম
ব্যাখ্যাঃ হাদীসটি হইতে প্রথমত জানা গেল যে, কবর আযাব হইতে পারে, হয় এবং ইহা সত্য। দুনিয়ার সাধারণ মানুষ বাহিরে থাকিয়া কবর আযাব দেখিতে বা অনুভব করিতে না পারিলেও নবী-রাসূলগণ আল্লাহর দেওয়া আধ্যাতিক শক্তির বলে তাহা স্পষ্ট অনুভব করিতে পারিতেন। অতএব ব্যক্তির গুনাহের কারণে কবরে যে আযাব হইবে, তাহাতে সন্দেহ নাই।
হাদীসে উল্লেখিত কবর দুইটিতে আযাব হওয়ার কথা বলিয়া উহার প্রত্যেকটির কারণ ব্যাখ্যা করা হইয়াছে। একটি কবরে আযাব হওয়ার কারণ সম্পর্কে রাসূলে করীম (সা) বলিয়াছেন, লোকটি প্রস্রাবের কদর্যতা হইতে বাঁচিয়া থাকিতে ও পবিত্র পরিচ্ছন্ন থাকিতে চেষ্টা করিত না।
************** এবং বুখারী শরীফে উল্লেখিত ***** এই তিনটি শব্দের একই অর্থ, একই মর্ম ও তাৎপর্য এবং তাহা হইল ‘পবিত্র হইত না।’
ইহা হইতে স্পষ্ট হয় যে, প্রস্রাব-পায়খানা ইত্যাদির কদর্যতা ও অপবিত্রতা হইতে বাঁচিয়া থাকা এবং নিজের দেহ ও পোশাককে এই সব ময়লা হইতে সুরক্ষিত রাখা আল্লাহ ত’আলার বিশেষ নির্দেশ। এই নির্দেশ পালন করিতে প্রস্তুত না হওয়া কিংবা এই ব্যাপারে অসতর্কতা অবলম্বন করা বড় অপরাধ এবং সেই জন্য কবরে আযাব ভোগ করিতে হইবে। দ্বিতীয় কবরটিতে আযাব হওয়ার কারণ সম্পর্কে নবী করীম (সা) বলিয়াছেন, সে চোগলখুরী করিত অর্থাৎ একজনের বিরুদ্ধে অন্যজনের নিকট কথা লাগাইত। আর ইহা যে াতি বড় নৈতিক গুনাহ তাতে সন্দেহ নাই। কুরআন মরীফের একটি আয়াতে বলা হইয়াছেঃ
********************************************
সেই ব্যক্তির কথা মানিও না, যে নির্ভিকভাবে মিথ্যা কথা বলে ও অসংকোচে কসম খাইয়া কথা বলে এবং দোষ সন্ধান ও চোগলখুরী করার কাজে ব্যস্ত থাকে।
প্রাচীন ধর্মগ্রন্ধে ব্যুপত্তি সম্পন্ন কায়াব আহবার বলিয়াছেন, তাওরাতে চোগলখুরীকে সবচাইতে বড় গুনাহ বলা হইয়াছে।
যে দুইটি গুনাহের কারণে এই দুই ব্যক্তি কবর আযাব ভোগ করিতেছিল, সেই দুইটি সম্পর্কে রাসূলে করীম (সা) বলিয়াছেনঃ
****************** লোক দুইটি কোন বড় ব্যাপারে আযাব ভোগ করিতেছে না।
ইহার অর্থ এই নয় যে, এই গুনাহ দুইটি বড় নয়-খুবই সামান্য ও নগন্য। না, তাহা নয়। বরং ইহার অর্থ এই যে, এই গুনাহ দুইটি এমন কাজ নয়, যাহা না করিলেই নয়, যাহা ত্যাগ করা খুবই কঠিন ব্যাপার্ বরং সত্য কথা এই যে, এই কাজ দুইটি না করিয়া খুব সহজেই চলা যাইতে পারে। যদি কেহ ইহা পরিত্যাগ করিবার সংকল্প গ্রহণ করে, তাহা হইলে তাহাকে সেইজন্য কোন বিশেষ কষ্ট স্বীকার করিতে হইবে না। কোররূপ অসুবিধায পড়িতে হইবে না। কোন ক্ষতিও হইবে না কিন্তু তাহা স্বত্তেও লোক দুইটি এই গুনাহ দুইটি করিয়াছে এবং তাহার ফরেই আজ কবরে তাহাদিগকে নিজ নিজ গুনাহের শাস্তিস্বরূপ আযাব ভোগ করিতে হইতেছে।
ইহ হইতে স্পষ্ট জানা গেল যে, কবর আযাব কিংবা জাহান্নামের আযাব যাহাকে ভোগ করিতে হইবে, তাহা হইবে তাহার নিজের ইচ্ছা মূলক গুনাহের কারণে। ইচ্ছামূলকভাবে গুনাহ না করিলে কাহাকেও আযাব ভোগ করিতে হইবে না।
কবর দুইটির উপর তরতাজা খেজুর শাখার খন্ড পুতিয়া দেওয়ার কারণ জিজ্ঞাসা করা হইলে নবী করীম (সা) বলিলেনঃ ‘এই শাখা-খন্ড সম্পূর্ণ শুকাইয়া না যাওয়া পর্যন্ত সম্ভবত কবর দুইটির আযাব লাঘব করা হইবে।’ এই কথার প্রকৃত তাৎপর্য কি? হাদীসের এক শ্রেণীর ব্যাখ্যাকার মনে করেন, কবরের উপর শাখা দুইটি পুতিয়া দেওয়ার কারণেই আযাব বন্ধ হইয়া যায়। কেননা উহা আল্লাহর তসবীহ পাঠ করিতে থাকে। আরএই তসবীহ পাঠের প্রভাবে কবরস্থ ব্যক্তিদ্বয়ের উপর আযাব কমিয়া যায়। আর শাখাদ্বয় তসবীহ করে, তাহার প্রমাণস্বরূপ তাঁহারা কুরআন শরীফের নিন্মোক্ত আয়াতাংশের উল্লেখ করেনঃ
**********************
প্রত্যেকটা জিনিসই আল্লাহর প্রশংসা সহকারে তসবীহ পাঠ করে।
প্রত্যেকটি জিনিসই আল্লাহর তসবীহ পাঠ করে ইহাতে সন্দেহ নাই। কিন্তু কেবলমাত্র সেই তসবীহ পাঠের কারণেই কবর আযাব মাফ হইয়া যাইবে, ইহা কোন্ দলীলের ভিত্তিতে বলা যাইতে পারে? যদি তাহাই হইত, তাহা হইলে তো নবী (সা) এমন একখন্ড খেজর শাখা যাহা দুইদিন পরই শুকাইয়া যাইবে, না পুতিয়া বড় কিংবা একটা পুরা গাছই পুতিয়া দিতে পারিতেন, যাহা কখনও শুকাইয়া যাইবে না এবং ইহার দরুন কখনো আযাবও হইতে পারিবে না। বস্তুত এইরূপ ধারণা ভিত্তিহীন এবং রাসূলে করীম (সা)-এর এই কাজের ব্যাখ্যাও নির্ভুল মানিয়া রওয়া যায় না। ইহাতে সন্দেহ নাই যে, এই হাদীসের এবং রাসূলে করীম (সা)-এর এই কাজের ব্যাখ্যাই সাধারণভাবে প্রচলিত। আর এই ব্রাখ্যার বলেই কবরের উপর খেজুর শাখা পুতিয়া দেওয়ার রেওয়াজ মুসলিম সমাজের সর্বত্র দেখা যায় শুধু তাহাই নয়, বর্তমানের বিদ’আত পন্থীরা এই ব্যাখ্যার বলেই সম্ভবত কবরে ফুলের তোড়া আ পুস্পমাল্য দিবার প্রথা চালু করিয়াছ্ অথচ ইহা সুস্পষ্ট বিদ’আত।
কোন কোন ব্যাখ্যাকার মনে করেন যে, ইহার সঠিক তাৎপর্য সম্ভবত তাহাই যাহা হযরত জাবির (রা) হইতে বর্ণিত মুসলিম মরীফের শেষ ভাগে উদ্ধৃত একটি দীর্ঘ হাদীসে বলা হইয়াছে।রাসূলে করীম (সা) অপর দুইটি কবরে আযাব হইতেছে জানিয়া আল্লাহর নিকট মাগফিরাতের শাফা’আত করিতে চাহিলেন, যেন আযাবের মাত্রা কম হইয়া যায় এবং এই উদ্দেশ্যে কবর দুইটির উপর তাজা ডাল বসাইয়া দিতে চাহিলেন যে, যতক্ষণ উহা সম্পূর্ণ শুকাইয়া না যায়, ততক্ষণ তাহাদের আযাব যেন কম হইয়া খাকে।
এই হাদীসের কথাগুলি হইতে স্পষ্ট জানা যায় যে, খেজুর শাখার তসবীহ পাঠের দরুনই কবর আযাব মাফ বা কম হওয়ার কথা নয়, বরং আল্লাহর নিকটকবর আযাবের মায়াফী চাহিয়া রাসূলে করীম (সা) যে শাফা’আত করিয়াছিলেন, তাহাতে আল্লাহ তা’আলা ডাল দুখারি পুতিয়া দিতে ও উহা শুকাইয়া না যাওয়া পর্যন্ত-সময়ের জন্য আযাব লাঘব হওয়ার অনুমতি জানাইয়াছিলেন। এই কারণেই সেই বিশেষ কবর দুইটির উপর খেজুর শাখা বসানো হইয়াছির। তাই বলিয়া যে কোন লোকের কবরের উপর তাজা খেজুর শাখা পুতিয়া দিলেই যে তাহার কবর আযাব লাঘব হইবে এমন কথা নিশ্চিত করিয়া বলা যায় না। রাসূলে করীম (সা)-এর এই কাজের নির্ভুল ও সঠিক বিম্লেষন সম্ভবত ইহাই। এই ব্যাখ্যা যেমন অপরাপর হাদীসের সহিত সামঞ্জস্যশীল, তেমন ইসলামের মৌলিক ও পূর্ণাঙ্গ ধারণার সহিতও ইহা সঙ্গতিপূর্ণ। ইমাম খাত্তাবী আবূ দাউদ-এর শরহে এই ব্যাখ্যাই পেম করিয়াছেন।
প্রস্রাব হইতে পবিত্রতা লাভের গুরুত্ব
******************************************
হযরত আবূ হুরায়রা (রা) হইতে বর্ণিত হইয়াছে। তিনি নবী করীম (সা) হইতে বর্ণনা করিয়াছেন, তিনি ইরশাদ করিয়াছেনঃ প্রস্রাব হইয়া থাকে বেশীরভাগ কবর আযাবের কারণ।
-মুসনাদে আহমদ
ব্যাখ্যাঃ ‘প্রস্রাবই বেশীর ভাগ কবর আযাবের কারণ হইয়া থাকে’ ইহার তাৎপর্য হইল, মানুষ সাধারণভাবে প্রস্রাবের ব্যাপারে খুব কম সাবধানতা অবলম্বন করিয়া থাকে। উহার অপবিত্রতা ও মলিনতাকে তেমন গুরুত্ব দেওয়া হয় না। প্রস্রাব করার পর উহা হইতে ভালোভাবে পবিত্র হওয়ার এবং পানি দিয়া দুইয়া ফেলিবার প্রযোজন অনেকেই মনে করে না। অথচ শরীয়তের দৃষ্টিতে প্রস্রাবও নাপাক এবং উহার নাপাকী হইতে পবিত্র থাকার বিশেষ আকশ্যকতা রহিয়াছে। প্রস্রাব করিলে অযূ বিনষ্ট হয়। সেই অবস্থায় নামায পড়া হইলে তাহা কিছুতেই কবুল হইতে পারে না। এই কারণে নবী করীম (সা) প্রস্রাবের অপবিত্রতা হইতে পবিত্রতা অর্জনের জন্য বিশেষ তাকীদ করিয়াছেন, ‘দারেকুতনী উদ্ধৃত একটি হাদীসে নবী করীম (সা) ইরশাদ করিয়াছেনঃ
***************************
তোমরা সকলে প্রস্রাবের মলিনতা ও অপবিত্রতা হইতে অবশ্যই পবিত্রতা অর্জন করিবে। কেননা সাধারণ ও বেশীর ভাগ করব আযাব এই কারণেই হইয়া থাকে।
এই হাদীসদ্বয় এবং এই পর্যায়ের অন্রান্য হাদীস স্পষ্টভাবে প্রমাণ করে যে, মানুষের প্রস্রাব-নাপাত ও অপবিত্র। এই ব্যাপারে ফিকাহবিদদের মধ্যে সম্পূর্ণ মতৈক্য ও ইজমা রহিয়াছে, আল্লামা নববী এই কথার উল্লেখ করিয়াছেন। এই ক্ষেত্রে বয়স্ক ও শিশুর প্রস্রাবের ব্যাপারে শুধু এতটুকু পার্থক্য করা যায় যে, বয়স্কদের প্রস্রাব হইতে পবিত্রতা লাভের জন্য খুব ভালোভাবে ধুইতে হয় এবং শিশুর প্রস্রাব কোন কিছুতে লাগিলে উহার উপর শুধু পানির ছিটা দিলেই বা সাধারণভাবে ধৌত করিলে চলে।
পায়খানা-প্রস্রাবের পূর্বের ও পরের দোয়া
**************************************
হযরত যায়দ ইবনে আরকাম (রা) হইতে বর্ণিত হইয়াছে, তিনি বলিয়াছেন, রাসূলে করীম (সা) ইরশাদ করিয়াছেনঃ প্রস্রাব-পায়খানার এ সব স্থান নিকৃষ্ট দরনের জীব-শয়তান ইত্রাদির-থাকার জাযগা। অতএব তোমরা যখন পায়খানা-প্রস্রাবখানায় প্রবেশ করিবে, তখন প্রথমেই এই দোয়া পড়িবেঃ ‘আমি সব খবীস ও খবীসানী হইতে আল্লাহর নিকট পানাহ্ চাহি।
-আবু দাউদ, ইবনে মাজাহ
ব্যাখ্যাঃ ফেরেশতাদের যেমন বিশেষ সম্পর্ক রহিয়াছে পবিত্র ও পরিচ্ছন্নতার সঙ্গে, আল্লাহর যিকর, ইবাদত ও ইবাদতের স্থান সমূহের সঙ্গে; অনুরূপভাবে ময়তানের মত সব খবীস সৃষ্টিগুলির বিশেষ সম্পর্ক রহিয়াছে অপবিত্রতা, ময়লা, আবর্জনা ও দূর্গন্ধময় স্থানগুলির সহিত। এই কারণে নবী করীম (সা) তাঁহার উম্মতের লোকদিগকে নির্দেশ দিয়াছেন যে, প্রকৃতির তাগীদে একজন যখন এই সব স্থানে যাইতে বাধ্য হইবে, তখন প্রথমেই যেন সে এই সব জায়গাপয় বসবাসকারী খবীস-খথবীসানীর দুষ্কৃতি ও অনিষ্টকারিতা হইতে আল্লাহর নিকট পানাহ্ চায় এবং তাহার পরই যেন সেইখানে প্রবেশ করে। নতুবা ইহার যে-কোন স্থানে মানুষ শয়তানের সংস্পর্শে আসিয়া উহার দ্বারা প্রভাবান্বিত হইয়া পড়িতে পারে।
***************************************
হযরত আয়েশা (রা) হইতে বর্ণিত হইয়াছে, তিনি বলিয়াছেন, নবী করীম (সা)-এর নিয়ম ছিল, তিনি যখন পায়খানা-পোস্রাবখানা হইতে কাজ সারিয়া বাহিরে আসিতেন, তখন বলিতেনঃ হে আল্লাহ আমি তোমার পরিপূর্ণ ক্ষমা ও মার্জনা প্রার্থনা করি।
-তিরমিযী, ইবনে মাজাহ্
ব্যাখ্যাঃ পায়খানা-প্রস্রাবখানা হইতে কার্য সমাধা করিয়া বাহির হইয়া আসিবার পর নবী করীম (সা) যে আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থণা করিতেন, ইহার কয়েকটি ব্যাখ্যা দেওয়া যাইতে পারে। তন্মেধ্যে সর্বাপেক্ষা সূক্ষ ও মর্মস্পর্শী ব্যাখ্যা এই হইতে পারে যে, মানুষের উদরে যে ময়লা-আবর্জনা সঞ্চিত হয়, উহা তাহার দেহে কর্মবিমুখতা ও ভারাক্রান্ততার সৃষ্টি করে। সময়মত উহা নির্গত না হইলে নানা প্রকার রোগের সৃষ্টি হওয়া আবশ্যম্ভাবী। পক্ষান্তরে স্বাভাবিক নিয়মে যদি উহা সম্পূর্ণ নির্গত হইয়া যায়, তাহা হইলে গোটা দেহ ও শরীর হালকা ও ভারমুক্ত এবং কর্মতৎপর হইয়া উঠে। তখন এক প্রকার মানসিক স্ফূর্তি অনুভূত হয়। প্রত্যেকটি মানুসই ইহার বাস্তব অভিজ্ঞতা লাভ করিয়া থাকে। আত্মিক ও আধ্যাতিক অনুভূতি সম্পন্ন মহান ব্যক্তিগণ নিজেদের গুনাহ খাতার ব্যাপারেও অনুরূপ অনুভূতি লাভ করিয়া থাকেন। ইহারা স্বাভাবিক নিষ্কর্মতা ও দুনিয়ার সব আভ্যান্তরীন ও বাহ্যিক ভারাক্রান্ততার তুলনায় গুনাহের বোঝা ভারাক্রান্ততা ও ক্লেশ অধিক অনুভব করিয়া থাকেন। আর গুনাহের বোঝা হইতে মুক্ত লাভের জন্য তাহারা-সাধারণ মানুষ নিজের উদরস্থ আবর্জনা-বোঝার নিষ্ক্রমণের জন্য যতটা চিন্তিত হইয়া থাকে, তাহার অপেক্ষা বেশী চিন্তা-ভারাক্রান্ত হইয়া থাকেন। এই জন্য নবী করীম (সা) যখন প্রকৃতির তাকীদ হইতে দায়িত্বমুক্ত হইতেন এবং মানবীয় প্রকৃতির অনুরূপ তাঁহার দেহ হালকা ও ভারমুক্ত মনে করিতেন তখন পূর্বোল্লেখিত আধ্যাত্মিক অনুভূতির তাগীদে আল্লাহর নিকট দোয়া করিতেন এই বলিয়া যে, হে আল্লাগ! তুমি যেরূপ দৈহিক ময়লা-আবর্জনার বোঝা হইতে আমাকে মুক্ত করিয়াছ এবং তদ্দরুন আমাকে শান্তি সুখ ও স্ফূর্তি দান করিয়াছ, অনুরূপভাবে আমার সমস্ত গুনাহ মাফ করিয়া দিয়া আমার আত্মাকে পবিত্র-পরিচ্ছন্ন ও গুনাহের বোঝা হইতে আমার স্কন্ধকে হালকা করিয়া দাও।
প্রশ্ন হইতে পারে, নবী করীম (সা)-এর সমস্ত গুনাহই তো মাপ করিয়া দেওয়া হইয়াছে। কুরআন মাজীদ স্পষ্ট ভাষায় ঘোষণা করিয়াছেঃ
***************************************
আল্লাহ তা’আলা তোমার পূর্বকৃত ও পরে কৃত গুনাহ-খাতা মাফ করিয়া দিবেন এই উদ্দেশ্যে
তাহা হইলে প্রতি পদে পদে এই ভাবে তাঁহার গুনাহ মায়াফীর জন্য আল্লাহর নিকট তাঁহার এত প্রার্থণা করার কি প্রয়োজন ছিল? প্রশ্নটির বিস্তারিত জওয়াব এখানে না দেওয়া গেলেও সংক্ষেপে এতটুকু বলা যায় যে, মায়াফী চাওয়ার তাঁহার নিজের প্রয়োজন না থাকিলেও সাধারণ মুসলমানদের সেই প্রযোজন রহিয়াছে এবং তিনি এইসব তাহাদিগকেই এই গুনাহ-মাফ চাওয়ার পদ্ধতি শিখাইয়াছেন ও সেইজন্য উৎসাহিত করিয়াছেন। কেননা তিনিই তো মুসলমানদের শিক্ষাগুরু। তিনি এই পদ্ধতি না শিক্ষা দিলে আর কে শিক্ষা দিবে?
ইবাদতে পবিত্রতা অর্জনের গুরুত্ব
***************************************
হযরত আব্দুল্লা ইবনে উমর (রা) হইতে বর্ণিত হইয়াছে, তিনি নবী করীম (সা) হইতে বর্ণনা করিয়াছেনঃ তিনি (নবী করীম (সা)) বলিয়াছেন, পবিত্রতা ব্যতীত কোন নামাযই কবুল করা হয় না।
-তিরমিযী
ব্যাখ্যাঃ পবিত্রতা অর্জন ব্যতীত কোন নামাযই কবুল করা হয় না, প্রত্যেক নামাযের পূর্বে পবিত্রতা অর্জন করা অপরিহার্য। পূর্বে পবিত্রতা অর্জন না করিয়া কোন প্রকারের নামায পড়িলে তাহা আল্লাহর নিকট গৃহীত হইবে না। হাসীসটির মোটামুটি বক্তব্য ইহাই।
মূল হাদীসের শব্দ হইল ******* (তুহুরুন)। ইহা হইতে অযূ করা এবং গোসল করা উভয় কাজই বুঝায়। আরবী অভিধানিকদের মতে ‘তুহুর’ শব্দের অর্থ ‘অযূ’ করা। আর ‘তাহাওর’ ***** শব্দের অর্থ সেই পানি, যাহা দিয়ে অযূ করা হয়। আর ‘কবুল’ শব্দের তাৎপর্য হইল নির্ভুল নিয়মে উহার পারন ও বিশুদ্ধ হওয়া এবং উহার বিনিময়ে প্রতিফল দান। অন্য কথায় আল্লাহর হুকুম পালনের দ্বারা স্বীয় দ্বায়িত্ব আদায় করা ও উহার জন্য নির্দিষ্ট ফল লাভ। এই ভাবে যে নেক কাজটি করা হয়, তাহা কবুল হয়, আর যাহা এই ভাবে করা হয় না, তাহা কখনও কবুল হয় না। বস্তুত নামায আল্লাহর সম্মুখে হাযির হওয়ার একটি অতীব পবিত্র ভাবধারাপূর্ণ ইবাদত। এই ইবাদত প্রকৃত পবিত্রতা অর্জন ব্যতীত কখনো কবুল হইতে পারে না। ইহার কারণ হইল আল্লাহ আ’আলা কুরআন মজীদে ঘোষণঅ করিয়াছেনঃ
*****************************
আল্লাহ তা’আলা কেবলমাত্র সেই লোকদের ইবাদত কবুল করেন যাহারা মনে আল্লাহর প্রতি আসীম ভয় রাখিয়া একান্তভাবে তাহারই ইবাদত করে।
আলোচ্য হাদীসটি এই কথারই প্রতিধ্বনি এবং ইহারই বাস্তব রূপ। ইহা অকাট্যভাবে প্রমাণ করে যে, নামাযের জন্য পূর্বেই ‘তাহারাত’ বা পবিত্রতা অর্জন করা ওয়াজিব।সমগ্র মুসলিম উম্মত এই বিষয়ে সম্পূর্ণ একমত যে, নামাযশুদ্ধ হওয়ার জন্য ‘তাহারাত’ বা পবিত্রতা পূর্বশর্ত। ‘তাহারাত’ ব্যতীত নামায পড়া সম্পূর্ণ হারাম-তাহা পানি ব্যবহার করিয়া কিংবা মাটির সাহায্যে তায়াম্মুম করিয়া অর্জন করা হইক।
‘তাহারাত’ ব্যতীত কোন নামাযই আল্লাহর নিকট গ্রহনযোগ্য হয় না। ইহা এক নিরংকুশ, সার্বিক ও চূড়ান্ত ঘোষণা। ফরয নামায কিংবা নফল নামায-পবিত্রতা ব্যতীত কবুল না হওয়ার ব্যাপারে সবই সমান। জানাযার নামাযও যেহেতু এক প্রকারের নামায, তাই উহাও ‘তাহারাত’ ব্যতীত কবুল হইবে না। অতএব জানাযার নামায পড়ার পূর্বেও যথারীতি পবিত্রতা অর্জন করিয়া রইতে হইবে। ইমাম বুখারী বলিয়াছেনঃ
*************************
পাক ও পবিত্র ব্যক্তি ছাড়া কেহ জানাযার নামায পড়িবে না।
তবে যদি কেহ মনে করে যে,এখন অযূ করিতে শুরু করিলে জানাযার নামায পা ওয়া যাইবে না, তবে তখন তায়াম্মুম করিয়াও উহা পড়া যাইবে।
ইমমি তাবারানী তাঁহার ‘আল-আসওয়াত’ গ্রন্থে এই হাদীসটির বর্ণনা দিয়াছেন এই ভাষায়ঃ
********* যাহার পবিত্রতা নাই, তাহার জন্য নামাযও (জায়েয) নাই।
ইমাম মাজাহ হযরত আবূ হুরায়রা কর্তৃক বর্ণিত হাদীস উদ্ধৃতি করিয়াছেন এই ভাষায়ঃ
*************************
অযূ না থাকিলে অযূ না করা পর্যন্ত কাহারো নামায আল্লাহ তা’আলা কবুল করেন না।
পবিত্রতা ও ইবাদত
***********************************
হযরত ইবনে উমর (রা) হইতে বর্ণিত হইয়াছে, রাসূলে করীম (সা) বলিয়াছেনঃ যাহার মধ্যে আমানত নাই তাহার ঈমানও নাই; যাহার পবিত্রতা নাই তাহার নামায গ্রহণযোগ্য হইতে পারে না; আর যাহার নামায নাই তাহার দ্বীনও নাই। দ্বীন-ইসলামে নামাযের স্থান বা গুরুত্ব তাহাই যাহা মানব-দেহেমস্তকের।
-আল-মু’জিমূসসগীর
ব্যাখ্যাঃ হাদীসে ঈমান, দ্বীন-ইসলাম, পবিত্রতা, নামায ও আমানত বা বিশ্বাসপরায়ণতার গুরুত্ব এবং এই সবের পারস্পারিক ওতপ্রোত জড়িত হওয়ার কথা সংক্ষেপে অত্যান্ত সুন্দর করিয়া বর্ণনা করা হইয়াছে। প্রথমত বলা হইয়াছেঃ যাহার ঈমান নাই, সে কখনো আমানতদারী রক্ষা করিতে পারে না। অন্য কথায়, প্রত্যেক বেঈমান ব্যক্তিই খিয়ানতকারী-বিশ্বাসঘাতক। ঠিক ইহার বিপরীত- প্রত্যেক ঈমানদার ব্যক্তিই আমানতদার। ঈমান থাকিলেই একজন লোক আমানতদারী রক্ষা করিতে পারে। ইহা হইতে একথাও সুস্পষ্ট হইয়া উঠিল যে, প্রত্যেক ঈমানদার ব্যক্তিকে অবশ্যই আমানতদার হইতে হইবে, কাহারও মধ্যে আমানতদারী না থাকিলে, খিয়ানত কিংবা বিশ্বাসঘাতকতা দেখা দিলে বুঝিতে হইবে যে, তাহার হাজার ধার্মিকতার ছদ্মবেশের ান্তরালে সত্যিকার ঈমান বলিতে কোন জিনিসের অস্তিত্ব নাই। ঈমান যে কোন নিঃসম্পকৃ একক জিনিস নহে; বরং বাস্তব কর্মের সহিত সম্পর্কযুক্ত, তাহা সুস্পষ্টরূপে জানা যায়।
দ্বিতীয়ত বলা হইয়াছেঃ যাহার পবিত্রতা নাই, তাহার নামাযও নাই-অপবিত্র ব্যক্তির পক্ষে নামায পড়া জায়েয নহে। নামাযের পুর্বে অবশ্যই পবিত্রতা অর্জন করিতে হইবে। গোসল ওয়াজিব হইলে তাহা করিতে হইবে, অন্যথায় শুধু অযু করিয়াই নামায পড়িতে হইবে।
বস্তুত বিনা অযুতে নামায হয় না শুধু তাহাই নয়, বরং বিনা অযুতে নামায পড়া মস্তবড় অপরাধ।
তৃতীয়ত বলা হইয়াছেঃ যাহার নামায নাই, তাহার দ্বীনও নাই। বস্তুত নামায হইতেছে দ্বীন-ইসলামের অন্যতম প্রধান গুরুত্বপূর্ল স্তম্ভ। তাই নামায না পড়িলে দ্বীন-এর প্রসাদ ধুলিস্যৎ হইতে ও চূর্ণ-বিচূর্ণ হইয়া যাইতে আর কিছুই বাকী থা ক না।
নামাযের গুরুত্ব বুঝাইবার জন্য নবী করীম (সা) হাদীসের শেষাংশে একটি দৃষ্টান্তের উল্লেখ কারয়াছেন। তাহাতে বলা হইয়াছেঃ একটি দেহে সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ অংশ হইতেছে মস্তক। হাত, পা, কান ইত্যাদি কোন কিছুই না থাকিলে মানুষের মৃত্যু ঘচে না; কিন্তু কাহারও মস্তক ছিন্ন হইলে এক মুহুর্তেই প্রাণবায়ু নির্গত হইয়া যায। বস্তুত মস্তকবিহীন মানুষ বা প্রাণী যেমন ধারণা করা যায় না, নামাযহীন দ্বীনও অনুরূপভাবে ধারণার অতীত।
যে হাদীসে বলা হইয়াছে যে, ঈমানের সত্তরটিরও বেশী শাখা-প্রশাখা রহিয়াছে, উহার বাস্তব রূপ এই হাদীসে সুন্দরভাবে দেখিতে পাওয়া যায়। ঈমান হইতেছে মানুষের মনের বিশ্বাসের ব্রাপার, কিন্তু এই বিশ্বাস বাস্তব কমেৃর সহিত মোটেই নিঃসম্পর্ক নহে; বরং বাস্তব কর্মের সহিত ইহার এত দৃঢ় সম্পর্ক রহিয়াছে যে, কর্মের ভিতর দিয়া ঈমানের রূপায়ন হইতে না থাকিলে ঈমানের অস্তিত্ব আছে বলিয়াও বিশ্বাস করা যায় না। অনুরূপভাবে ঈমান না থাকিলে কোন কর্মই গহেণযোগ্য হইতে পারে না। তাই বলিতে হইবে যে, ঈমান ও আমল বিশ্বাস ও কাজ একটি অভিন্ন জিনিস না হইলেও উহা ঠিক বীজ ও বৃক্ষের মতই অবিচ্ছেদ্্য।
পুরুমাত্রায় পবিত্রতা অর্জনের মর্যাদা
************************************************
হযরত আবূ-আইয়ুব আনসারী, হযরত জাবির ও হযরত আনাস (রা) হইতে বর্ণিত হইয়াছে, যখন কুরআনের আয়াত “এই মসজিদে এমন সব লোক রহিয়াছে, যাহারা পুরুমাত্রায় পবিত্রতা অর্জন করিতে ভালোবাসে, আর আল্লাহ তা’আলাও পুরুমাত্রায় পবিত্রতা অর্জনকারীদিগকে ভালোবাসেন” নাযিল হইল, তখন নব করমি (সা) আনসার সমাজের লোকদিগকে সম্বোধন করিয়া বলিলেনঃ “হে আনসার সমাজের লোকেরা ! আল্লাহ তা’আলা পবিত্রতা, পরিচ্ছন্নতা ও পরিশুদ্ধতা অর্জনের ব্যাপারে তোমাদের প্রশংসা করিয়াছেন।’ আমি জানিতে চাহি, তোমাদের পবিত্রতা অর্জনের পদ্ধতি কি? তখন জবাবে তাঁহারা বলিলেনঃ (পবিত্রতা অর্জনের ব্যাপারে আমাদের পদ্ধতি হইল) আমরা নামাযের জন্য াযু করি, শরীর না-পাক হইলে হোসল করি এবং পানি দ্বারা প্রস্রাব-পায়খানায় শৌচ করি। ইহা শুনিয়া নবী করীম (সা) বলিলেন, হ্যা, ইহাই হইল কুরআনে তোমাদের প্রশংসা নাযিল হওয়ার কারণ। অতএব নিয়মিতভাবে এই পদ্ধতি অনুসরণ করিয়া চলাই তোমাদের কর্তব্য।
ব্যাখ্যাঃ উপরোদ্ধৃত হাদীসে কুরআন মাজীদের যে আয়াতাংশের উল্লেখ হইয়াছে উহা সূরা তওবার ১০৮ নং আযাতের শেষ অংশ। এই আয়াতাংশ ‘কূবা’ বাসী আনসারদের সম্পর্কে নাযিল হইয়াছে, তাহা রাসূলে করীম (সা)-এর কথা হইতেই জানা গেল। ইহাতে তাহাদের পবিত্রতা অজর্ন প্রবণতার যারপর নাই প্রশংসা করা হইয়াছে। আর এই প্রশংসা করিয়াছেন সয়ং আল্লাহ তা’আলা। এই প্রশংসা দেখিয়া নবী করীম (সা)-এর মনে ধারণা জন্মিয়াছিল যে, পবিত্রতা অর্জনের ব্যাপারে তাহারা যে পদ্ধতি অনুসরণ করে তাহা আল্লাহর বিশেষ পছন্দ হইয়াছে। তাই তিনি তাহা সরাসরি তাঁহাদের নিকট হইতে জানিয়া লইবার উদ্দেশ্যে ‘বূবা’র মসজিদে উপস্থিত হইলেন এবং তাহাদিগকে এই বিষযে জিজ্ঞাসা করিলেন। উত্তরে তাঁহারা যাহা বলিয়াছেন, তাহা আলোচ্য হাদীসে শুধু এতটুকুই উদ্ধৃত হইয়াছেঃ আমরা নামাযের জন্য অযু করি-অযু করিয়া নামায পড়ি। আর অযু তাঁহারা নিশ্চয় সেই নিয়মেই করিতেন যাহা নবী করীম (সা) তাঁহাদিগকে শিখাইয়াছিলেন। দ্বিতীয়ত বলিলেনঃ শরীর নাপাক হইলে আমরা গোসল করি ও গোসল করিয়া শরীর পবিত্র করিয়া লই। তৃতীয়ত বলিলেনঃ আমরা প্রস্রাব ও পায়খানার পর পানি দ্বারা শৌচ করি। হযরত আবু হুরাইরা (রা) বর্ণিত হাদীসে বলা হইয়াছে, এই আয়াত নাযিল হওয়ার পর নবী করীম (সা) নিজে বলিয়াছেনঃ
*************************************
এই আয়াতাংশ ‘কুবা’বাসীদের সম্পর্কে নাযিল হইয়াছে-তাহারা পানি দ্বারা শৌচ করে।
*******************************
ইবনে খুযায়মা উয়াইমার ইবনে সায়েদা ,হইতে বর্ণনা করিয়াছেন; নবী করীম (সা) ‘কুবা’র মসজিদে আসিলেন এবং লোকদিগকে বলিলেনঃ
*********************************************
আল্লাহ তা’আলা পবিত্রতা অর্জনের ব্যাপারে তোমাদের প্রশংসা করিয়াছেন-তোমাদের এই মসজিদ সংক্রান্ত বর্ণনা প্রসংঙ্গে। আমি জানিতে চাহি, তোমরা কিভাবে পবিত্রতা ার্জন কর?
ইহার উত্তরে তাঁহারা বলিলেনঃ আমরা তো আর কিছুই জানি না। শুধু এতটুকু যে, পানি ব্যবহার করি ও পানি দ্বারা ধৌত করি।
অপর একটি বর্ণনার মতে তাঁহারা বলিলেনঃ ‘আমরা পায়খানার পর প্রথমে পাথর খন্ড ব্যবহার করি, অতঃপর পানি দ্বারা ধৌত করি। ****************************
হযরত ইবনে আব্বাস (রা) হইতে বর্ণিত হাদীসে বলা হইয়াছেঃ এই আয়াতটি যখন নাযিল হইল, তখন নবী করীম (সা) উয়াইম ইবনে সায়েদা (রা)-এর নিকট লোক মারফত জিজ্ঞাসা করিলেন, এই প্রশংসার কারণ কি? তিনি বলিলেনঃ
********************************************
হে রাসূল ! আমাদের পুরুষ ও মেয়েলোক নিজের লজ্জাস্থান ভালোভাবে ধৌত না করিয়া পায়খানা হতে বাহির হয না। ******************
মিসওয়াক করার রীতি
**************************************************
হযরত আবূ হুরায়রা (রা) হইতে বর্ণিত হইয়াছে, তিনি বলিয়াছেন, হযরত রাসূলে করীম (সা) ইরশাদ করিয়াছেনঃ আমি যদি আমার উম্মতের উপর কষ্টদায়ক মনে না করিতাম, তাহা হইলে তাহাদিগকে ইশার নামায বিলম্ব করিয়া পড়ার এবং প্রত্যেক নামাযের সময় মিসওয়াক করার জন্য আদেশ করিতাম।
-বুখারী, মুসলিম
ব্যাখ্যাঃ হাদীসের শব্দ ******** অর্থ, দাঁত মর্দন ও দাঁত পরিষ্কারকরণ। যে জিনিস দ্বারা উহা করা হয় তাহাকে বলা হয় মিসওয়াক।
হাদীসে মূলত দুইটি কথা বলা হইয়াছে। একটি হইল ইশার নামায বিলম্বে পড়া এবং দ্বিতীয়টি হইল প্রত্যেক নামাযের সময় মিসওয়াক করা-দাঁত মাজিয়া নির্মল, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ও দূগন্ধমুক্ত করা।
ইশার নামায একটু বেশী রাত্র হওয়ার পর-এক-তৃতীয়াংশ রাত্র অতিবাহিত হওয়ার পর-পড়া খুবই পছন্দনীয় কাজ। ইহাতে অনেক সওয়াব।
প্রত্যেক নামাযের সময় মিসওয়াক করা সম্পর্কে এই হাদীসে বিশেষ তাকীদ দেওয়া হইয়াছে। কিন্তু প্রত্যেক নামাযের সময় অর্থ, প্রত্যেক নামাযের জন্য যে অযু করা হয় সেই সময়। অর্থাৎ নামাযের অযু করার পূর্বেই এই মিসওয়াক করা বাঞ্ছনীয়। হযরত আবূ হুরায়রা বর্ণিত অপর এক হাদীসে এই কথাই বলা হইয়াছে। হাদীসটি এইঃ
******************************************
আমার উম্মতদের জন্য কষ্টদায়কজ হইবে মনে না করিলে আমি প্রত্যেক অযুর সময়ই মিসওয়াক করা ওয়াজিব করিয়া দিতাম।
– বুখারী, হাকেম, ইবনে খুযায়মা
এই পর্যায়ে অপর একটি হাদীস হইলঃ
*****************************************
আমার উম্মতের পক্ষে কষ্টদায়ক হইবে মনে না করিলে আমি তাহাদের জন্য প্রত্যেক নামাযের উদ্দেশ্যে পবিত্রতা অর্জনের সময় মিসওয়াক করা ওয়াজিব করিয়া দিতাম।
শেষোক্ত হাদীসদ্বয় হইতে ‘প্রত্যেক নামাযের সময় মিসওয়াক করার’ তাৎপর্য স্পষ্ট মহইয়া উঠিয়াছে এবং বুঝা গিয়াছে যে, ‘প্রত্যেক নামাযের সময়’ ার্থ প্রত্যেক নামাযের জন্য অযু করার সময়।
বস্তুত ইসলামে মিসওয়াক করা শুধু অযু বা নামাযের সময়ই নয়, সাধারণভাবেই প্রয়োজন বলিয়া ঘোষণা করা হইয়াছে। কেননা মুখের ময়লা ও দুর্গন্ধ পরিষ্কার করার জন্য ইহাই হইল একমাত্র উত্তম পন্থা। রাসূলে করীম (সা) ইহাকে নামাযের জন্য পবিত্রতা অর্জনের সময়ের জন্য বিশেষভাবে নির্দিষ্ট করিয়াছেন-উহার সহিত বাঁধিয়া দিয়াছেন এই কারণে যে, নামাযে আল্লাহর সম্মুখে দাঁড়ান হয়, দোয়া ও সূরা সমূহ পড়া হয়, আল্লাহর সঙ্গে সরাসরি কথা বলা হয়। ইহা অতীব পবিত্র কাজ এবং এ সময় মুখ নির্মল, দুর্গন্ধহীন ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকা একান্ত আবশ্যক। এই উপায়ে মানুষকে বাধ্যতামূলকভাবে মুখ পরিষ্কার করিতে প্রস্তুত করা হইল। কিন্তু প্রত্যেক নামাযের অযুর সময় মিসওয়াক করা যে অনেক কষ্টদায়ক কাজ। এই কারণে নবী করীম (সা) উহা করার জন্য অকাট্য নির্দেশ দেন নাই। যদি ইহা কষ্টদায়ক হইবে মনে না করিতেন তাহা হইলে তিনি অবশ্যই প্রত্যেক নামাযের অযুর সময় ইহা করার আদেশ দিতেন। আর তিনি আদেশ দিলে প্রত্যেক নামাযের সময় মিসওয়াক করা ওয়াজিব হইয়া যাইত এবং সেই ওয়াজিব তরক করিলে গুনাহ হইত।
ইহ স্পষ্ট হইয়া উঠে যে, নবী করীম (সা) তাঁহার উম্মতকে কষ্টদায়ক কাজের নির্দেশ দেন নাই। কেননা তিনি তাঁহার উম্মতকে সুখে-স্বচ্ছন্দে জীবন যাপনের সুযোগ দেওয়ার উদ্দেশ্যেই দুনিয়ার ইসলামের মানবিক বিধান উপস্থাপিত করিয়াছেন। কিন্তু তবুও ইহা যে অতীব সওয়াবের এবং আল্লাহর নিকট খুবই পছন্দনীয় কাজ, তাহাতে সন্দেহ নাই। যে নামাযের অযুতে এই মিসওয়াক করা হয়, সে নামাযের সওয়াব অনেক বেশী হইয়া থাকে। মুসনাদে আহমদে বর্ণিত হাদীসে তাই বলা হইয়াছেঃ
*********************************************
মিসওয়াক সহ অযু করিয়া যে নামায পড়া হয় তাহা মিসওয়াক না করা অযুসহ নামায অপেক্ষা সত্তরগুণ উত্তম ও অধিক সওয়াবের অধিকারী।
************************************************
হযরত হুযায়ফা (রা) হইতে বর্ণিত হইয়াছে, তিনি বলিয়াছেন, নবী করীম (সা) যখন রাত্রিকালে তাহাজ্জুদ নামাযের জন্য উঠিতেন, তখন তিনি সর্বপ্রথম মিসওয়াব করিয়া দাঁত পরিষ্কার করিতেন।
**************************************************
হযরত আয়েশা (র) হইতে বর্ণিত হইয়াছে, তিনি বলিয়াছেন, রাসূলে করীম (সা) ইরশাদ করিয়াছেনঃ মিসওয়াক করিলে যেমন মুখ প বত্র পরিচ্ছন্ন ও দূগর্ন্ধমুক্ত হয়, তেমনি ইহাতে আল্লাহর সন্তুষ্টিও লাভ হয়।
– শাফেয়ী, আহমদ, দারেমী, নাসায়ী
মোট কথা মিসওয়াক করা ও মুখ-দাঁত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ও দূর্গন্ধহীন করিয়া রাখা প্রত্যেক মুসলমানেরই সাধারণ কর্তব্য। বিশেষভাবে নামাযের পূর্বে ইহা করা একান্ত আবশ্যক। বৈষয়িক বা স্বাস্থ্যগত ও ধর্মীয় কাজ ওতপ্রোত, একই কাজের এ-পিঠ ও-পিঠ, একই যাত্রার দ্বৈতফল। বস্তুত ইসলামী বিধানের ইহাই বৈশিষ্ট্য-যদিও বৈষয়িকতা উহার আসল মূল্যায়ন নয়।