চতুর্থ অধ্যায়
মুসলিম তরুণদের প্রতি উপদেশ
‘আলউম্মাহ’ ম্যাগাজিনে প্রকাশিত আমার প্রবন্ধে আমি মুসলিম তরুণ পুনর্জাাগরণের ইতিবাচক ও নেতিবাচক দিক নিয়ে আলোচনা করেছি। তাতে আমি পরিশেষে দু’টি বিষয়ের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছি।
প্রথম: এই পুনর্জাগরণ একটি স্বাভাবিক ও সুস্থ চেতনার ইঙ্গিতবাহী। এর মাধ্যমে আমরা প্রকৃতি ও মূলের দিকে অর্থাৎ ইসলামের দিকে ফিরে যাচ্ছি। ইসরামই হচ্ছে আমাদের জীবনে প্রথম ও শেষ। এখানেই আমরা বিপদে আশ্রয় নিই, এখানে থেকেই আমরা শক্তি সঞ্চয় করি।
আমাদের সমাজ পূর্ব ও পশ্চিমের কাছ থেকে ধার মতবাদ দিয়ে সমস্যা মাধানের চেষ্টা করেছে। কিন্তু আধ্যাত্মিক ও বৈষয়িক উন্নতিসহ সকল ক্ষেত্রে উন্নয়নের এই চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে। ফলে এখন আমাদের জনগণ ইসলামের অনিবার্য সমাধানে বিশ্বাস করে অথাৎ জীবনের সকল ক্ষেত্রে ইসলামী শারীয়াহর বাস্তবায়ন চায়। অতএব এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই যে, মুসলিম তরুণদের সাহস ও দৃঢ় সংকল্প নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে।
দ্বিতীয়: আমাদের কিছু কিছু তরুণের মধ্যে যে গোঁড়ামি রয়েছে তা হিংসা ও হুমকি দিয়ে পরিশুদ্ধ করা যাবে না। আল্লাহ্র দ্বীনের প্রতি এদের নিষ্ঠা ও আন্তরিকতায় আমাদের কোনো সন্দেহ থাকা উচিত নয়। একমাত্র প্রতিকার হচ্ছে সদিচ্ছা ও আন্তরনিকতা নিয়ে তাদের সাথে মেলামেশা করে তাদের মন-মানসিকতা উপলব্ধি করা এবং বুদ্ধিবৃত্তিক আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে ব্রান্ত ধারনা দূর করতে উদ্যোগী হওয়া।
আমি কেবল আল্লাহ্র সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষ্যে মুসলিম তরুণদের এ ব্যাপারে অনেক উপদেশ দিয়েছি। রাসূলুল্লাহ (সা) আমাদের শিক্ষা দিয়েছেন যে, ঈমানদারদের একে অপরের সাথে সর্বদা পরামর্শ করা উচিত এবং ধৈর্যের সাথে সৎকাজের আদেশ দেয়া এবং অসৎ ও অবাঞ্ছিত কাজ থেকে বিরত থাকা। ইহলৌকিক ও পারলৌকিক জীবনে পুরস্কার লাভের জন্যে এটি আবশ্যকীয় শর্ত। নিচে আমি আরো কিছু উপদেশ দিচ্ছি:
আমরা বিশেষজ্ঞ জ্ঞানের যুগে বাস করছি। জ্ঞানের একটি শাখায় ব্যুৎপত্তির মানে আরেকটি শাখায়ও পারদর্শী হওয়া নয়। যেমন একজন ইঞ্জিনিয়ারের সাথে চিকিৎসা বিষয়ে পরামর্শ করা যায় না অথবা একজন চিকিৎসকের সাথে আইনের পরামর্শ চাওয়া হাস্যকর। অতএব শারীয়ারহর জ্ঞানও সকলের সমান মনে করা ভুল। এটা ঠিক যে, ধর্মীয় জ্ঞানের শ্রেণী বিশেষের একচোটিয়া অধিকার ইসলাম স্বীকার করে না, যেমন খৃস্টানদের যাজক গোষ্ঠী রয়েছে বা হিন্দুদের ব্রাহ্মণবর্গ। কিন্তু ইসলাম ধর্মীয় জ্ঞানের জ্ঞানে বিশেষজ্ঞদের অস্তিত স্বীকার করে যারা কোনোভাবেই একটি বিশেষ গোষ্ঠী, শ্রেণী আ উত্তরাধিকারসূত্রে বংশগত নয়। বাস্তব কারণেই ধর্মীয় ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞ জ্ঞানের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে কুরআন বলেছে: “সকর মুমিনকে এক সাথে অভিযানে বের হওয়া উচিত নয়, তাদের প্রতিটি দলের এক অংশ বহির্গত হয় না কেন, যাতে তারা দ্বীন সম্বন্ধে জ্হান অনুশীলন করতে পারে এবং তাদের সম্প্রদায়কে সতর্ক করতে পারে, যখন তারা তাদের কাছে ফিরে আসবে, যাতে তারা সতর্ক হয়।” (৯:১২২)
কুরআন ও সুন্নাহর যেসব বিষয়ে আমাদের জ্হান নেই তা বিজ্ঞ ও অবিজ্ঞ লোকদের কাছ থেকে শিখতে বলেছে: “তোমার পূর্বে আমি ওহীসহ মানুষই পাঠিয়েছিলাম, তোমরা যদি না জান তবে জ্ঞানীদের জিজ্ঞাসা করো।” (২১:৭)
এবং “যখন শান্তি অথবা শঙ্কার কোন সংবাদ তাদের কাছে আসে তখন তারা তা প্রচার করে থাকে। যদি তারা তা রাসূল অথবা তাদের মধ্যে যারা ক্ষমতার অধিকারী তাদের গোচরে আনত, তবে তাদের মধ্যে যারা তথ্য অনুসন্ধান করে তারা তার যথার্থতা নির্ণয় করতে পারত।” (৪:৮৩)
আরেকটি আয়াতে আল্লাহ্ বলেন, “সর্বজ্ঞের ন্যায় তোমাকে কেউই অবহিত করতে পারে না।” (৩৫:১৪)
রাসূলুল্লাহ (সা)-কে জানানো হলো যে, একজন আহত ব্যক্তিকে এই ফতোয়া দেয়া হয়েছে যে, অযু ও নামাযের আগে তার গোটা শরীর ধুয়ে ফেলতে হবে, যার ফলে তার মৃত্যু হয়েছে।তখন তিনি বললেন: “তারা তার মৃত্যু ঘটিয়েছে, আল্লাহ্ তাদেরও মৃত্যু ঘটান। সঠিক জানা না থাকলে তাদের কি জিজ্ঞাসা করা উচিত ছিল না?”এটা খুব বেদনাদায়ক যে, কোনো কোনো লোক অযোগ্য হওয়া সত্ত্বেও জটিল বিষয়েও য়তোয়া দিতে অভ্যস্ত যা অতীত বর্তমান আলিমদের ফতোয়ার বিরোধী। তারা আগের আলিমদেরকে অজ্ঞ বলতেও কসুর করে না। তারা দাবী করে ইজতিহাদের দরজা সকলের জন্যে খোলা। এটা সত্য, কিন্তু ইজতিহাদের কতকগুলো শর্ত আছে যা এদের মধ্যে নেই। আমাদের পূর্ববর্তীরা তো অনেক বিজ্ঞ লোককেও সতর্ক বিবেচনা ছাড়া তাড়াতাড়ি ফতোয়া দেয়ার জন্যে সমালোচনা করেছেন। তারা বলেন, “কিছু কিছু লোক এত দ্রুত ফতোয়া দেয় অথচ তা হযরত উমার (রা)-এর কাছে পেশ করা হলে তিনি বদরের যুদ্ধের অংশগ্রহণকারী সকলের সাথে পরামর্শ করতেন এবং তারা আরো বলেন, “তোমাদের মধ্যে যারা ফতোয়া দেয়ার ব্যাপারে দুঃসাহসী (পাপ করে) দোযখে যাওয়ার ব্যাপারেও।” গভীর জ্ঞানের অধিকারী হওয়া সত্ত্বেও তারা জটিল বিষয়ে বিজ্হ ব্যক্তিদের সাথে পরামর্শ করতেন। যেসব ফতোয়া মৌনভাবে দেয়া হতো ইসলামের প্রাথমিক যুগে সেগুলোকে সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত বলে মেনে নেয়া হতো। কারো কাছে ফতোয়া চাওয়া হলে তারা পারত পক্ষে বিরত থাকতেন। আবার কেউ কেউ জানেন না বলে এড়িয়ে যেতেন।
উতবান ইবনে মুসলিম (রা) বলেন যে, একবার তিনি ৩০ মাস উমর (রা)-এর সং্গী ছিলেন। সে সময় উমর (রা)-কে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হয় এবং তিনি প্রায়শ বলতেন যে, তিনি জানেন না। ইবনে আবু লায়লা (রা) ১২০ জন সাহাবীর, (এঁদের মধ্যে অধিকাংশই আনসার), সম্পর্কে বলেছেন, “তাঁদের মধ্যে একজনকে জিজ্হেস করা হলে তিনি আরেকজনকে দেখিয়ে দিতেন, তিনিও আরেকজনকে দেখিয়ে দিতেন, তিনিও আরেকজনকে, এভাবে পালাক্রমে চলতো যতক্ষণ না প্রশ্নকর্তা আবার প্রথম ব্যক্তির কাছেই ফিরে যেতো।”
আতা ইবনে আস সাবির (র) বলেন যে, তিনি তার সমসাময়িক অনেককে ফতোয়া দিতে গিয়ে কাঁপতে দেখেছেন। তবিয়ুনদের মধ্যে সাঈদ ইবনে আল মুসাইয়েব (র) – কে কচিৎ ফতোয়া দিতে দেখা গেছে অথচ তিনি ফিকাহতে ব্যুৎপত্তি অর্জন করেছিলেন। যদি তিনি অনিচ্ছাকৃতভাবে ভুল করে থাকেন এবং তাদেরকেও রক্ষা করতে যদি তিনি অনিচ্ছাকৃতভাবে ভুল করে থাকেন এবং তাদেরকেও রক্ষা করতে যারা সেই ফতোয়া অনুসরণ করবে। মাযহাব চুষ্টয়ের ইমামগণও অনুরূপ সতর্কতা অবলম্বন করতেন। কোনো ব্যাপারে নিশ্চিত না হলে তারাও বলতেন যে, জানি না। ইমাম মালেক (র) বিশেষভাবে সতর্ক ছিলেন। তিনি বলেন, “কাউকে কোনে বিষয়ে জিজ্ঞেস করা হলে তার ‘জান্নাত ও জাহান্নম’ সম্পর্কে চিন্তা করা উচিত এবং জবাব দেয়ার আগে নিজের পারলৌকিক মুক্তি সর্ম্পকে ভাবা উচিত। ইবনে আল কাসিম (র) ইমাম মালিক (র) -কে বলতে শুনেছেন, “আমি একটা বিষয়ে দশ বছর ধরে গবেষণা করছি কিন্তু এখনো মনঃস্থির করতে পরিনি।” এবনে আবু হাসান (র) বলেন, “মালিককে ২১ টি বিষয়ে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, “তিনি মাত্র দু’টির ফতোয়া দিয়েছিলেন। তারপর বার বার বলেন, ‘আল্লাহ্ ছাড়া কোনো সাধ্য রবা ক্ষমতা নেই।” জ্ঞানের অম্বেষা থেকে তরুণদের নিরুৎসায়িত করা আমার উদ্দেশ্য নয়। দোলনা থেকে কবর পর্যন্ত জ্ঞান অন্বেষণ করা আমাদের জন্যে ফরয। আমি যা বলতে চাই তা হচ্ছে তাদের জ্হান যতোই হোক, বিশেষজ্ঞদের সাহায্য নিতে তারা বাধ্য। আশ-শারীয়াহর জ্হানে বিভিন্ন শাখা-প্রশাখা ও উসুল আছে যা জানা ও বোঝার সময় বা উপায় এই তরুণদের নেই।আমি বলতে চাই যারা কলেজে ভালো লেখাপড়া করে তাদেরকে সেটা ছেড়ে দিয়ে আশ-শারীয়ায় বিশেষজ্ঞ হতে হবে এমন প্রবণতা আমি অনুমোদন করি না। আরেকটি বিষয় বুঝতে হবে, এখন বিজ্হানে দক্ষতা অর্জনের জোর প্রতিযোগিতা চলছে। কোনো মুসলমান যদি আল্লাহ্র জন্যে বিজ্হানে বুৎপত্তি অজর্নের সাধনায় নিম্গ্ন হয় সে আসলেই ইবাদত ও জিহাদে অংশ নেয়।
এখানে স্মর্তব্য, রাসূলুল্লাহ (সা)-এর কাছে ওহী নাযিল হওয়ার কালে তাঁর সাহাবীদের
বিভিন্ন পেশা ছিল। তিনি তাদেরকে নিজ নিজ পেশা ত্যাগ করে আসলাম অধ্যয়নের তাগিদ দেননি; অবশ্য তারা বাদে যাদেরকে এরূপ দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল কিংবা যাঁদের এ ব্যাপারে স্বাভাবিক ঝোঁক ছিল। আমার ভয় হয় অনেক হয়তো জনপ্রিয়তা বা নেতৃত্ব লাভের খায়েশ শরীয়ার জ্হানে দখল চাইতে পারে। মানুষকে প্রলুব্ধ করার জন্যে শয়তানের বহু রাস্তা আছে। অতএব আমাদের চিন্তা, উদ্দেশ্য ও কৌশল সম্পর্কে সতর্ক পর্যালোচনা করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। আত্মপ্রতারণার ফাঁদে পড়ে আমরা স্বচ্ছ চিন্তাকে যেন আচ্ছন্ন করে না ফেলি। আমাদেরকে সবর্দা কুরআনের এই আয়াত স্মরণ করা উচিত: “কেউ আল্লাহ্কে দৃঢ়ভাবে অবলম্বন করলে সে পথে পরিচালিত হবে।”(৩:১০১)
যেহেতু জ্হানের প্রতিটি শাখা বিশেষজ্ঞদের দ্বারা পরিচিতি লাভ করে, অতএব তরুণদেরকে সৎ ও গভীর জ্হানের অধিকারী আলিম ও ফকীহদের কাঝ থেকে ধর্মীয় জ্হান হাসিলের উপদেশ দিচ্ছি। তাদের দেয়া ব্যাখ্যা ছাড়া সুন্নাহর ধর্মীয় জ্হানের প্রধান উৎস-জ্ঞানে সমৃদ্ধ হওয়া সম্ভব নয়। তাদেরকে অশ্রদ্ধা করা মূর্খতা ও ঔদ্ধত্য কুরআন-হাদীসে পারদর্শী হতে চান তাদের ইসলামী শিক্ষার ওপর নির্ভর করা যঅয় না। একইভাবে যারা উলামা ও ফুকাহার সিদ্ধান্তকে প্রধান অবলম্বন বানায়, কুরআন ও হাদীসকে উপেক্ষা করে, তাদের জ্হানের অবস্থাও হৃদয়বিদারক!
আবার অনেক আলিম আছেন যারা সরাসরি কুরআন হাদীসে অধ্যয়ন করেননি, কিন্তু ইসলামের ইতিহাস, দর্শন ও পূঁজিবাদ সম্পর্কে বিশেজ্ঞ। কিন্তু এরা অন্যকে শলিয়াহ শিক্ষা দেয়া অথবা ফতোয়া দেয়ার যোগ্য নন, কারণ তারা তাদের ভাষণে-বিবরণে প্রয়শ সত্যের সাথে পুরান, বিশুদ্ধকে শুদ্ধ, সারকে তারা নিজেরাও বোঝান না। এছাড়া যার আমল নেই তার শিক্ষা বা নেতৃত্ব দেয়ার অধিকার নেই। সততা, সাধুতা ও আল্লাহ্র ভীতি হচ্ছে প্রকৃত জ্ঞানের ফল। কুরআনুল কারীম বলছে, “আল্লাহ্র বান্দাদের মধ্যে যারা জ্ঞানী তারাই তাকে ভয় করে।” (৩৫:২৮)
এরূপ সাধুতা ও আল্লাহ্র ভয় একজন আলিমকে মূর্খতাসুলভ কাজ এবং শাসক অথবা সরকারের সেবাদাস হওয়া থেকে বিরত রাখে।
বিজ্হানের তৃতীয় বৈশিষ।ট্য হচ্চে ভারসাম্য। এটা ইসলামেরই অনুপম বৈশিষ্ট্য। দুর্ভাগ্যনকভাবে দু’টি প্রান্তিক প্রবণতা আমাদের রয়েছে: চরমপন্থা, শিরক, অবহেলা, গোঁড়ামি কিংবা বিচ্ছিন্নতা। আল-হাসান আল-বসরী (র) সাবধান করে দিয়ে বলেছেন, “চরমপন্থী উদাসীনদেন কার্যকলাপের দরুন দমৃ হারিয়ে যাবে।” প্রথম পক্ষ মাযহাব মানকবে কিন্তু ইজতিহাদের দরজা রুদ্ধ করে দেবে। দ্বীতিয় পক্ষ মাযহাব অস্বীকার করে তার সকল নীতি খন্ডনে প্রয়াসী হবে। এছাড়া আরেক দল কুরআন-হাদীসের আক্ষরিক অর্থ মেনে চলতে চায়। যা হোক দুই চরমের মাঝে আসল ইসলাম হারিয়ে যায়। অতএব আমাদের দরকান আরসাম্যময় সাধু ও সৎ চরিত্রের অধিকারী ফকীহ যারা সুচিন্তিতভাবে যুগের চাহিদাকে সামনে রেখে কুরআন ও সুন্নাহর আলোকে রায় দেবেন যা সাধারণ মানুষের জন্যে কল্যাণকর হবে। ইমাম সুফিয়ান আস-সাওরী বলেন, “সুস্পষ্ট যুক্তির ভিত্তিতে কোনো কিছুকে বৈধ করা জ্ঞানের পরিচায়ক, আর গোঁড়ামি তো যে কেউ নিষদ্ধ ঘোষণা করতে পারে।”
মুসলিম তরুণদেরকে গোঁড়ামি ও বাড়াবাড়ি পরিহার করতে হবে। একজন মুসলিম ঈমানে-আমলে সতর্ক হবে; কিন্তু এর অর্থ এই নয় যে, ধর্মীয় সহজ বিষয়গুলোকে উপেক্ষা করে ধর্মকে স্রেফ একটি কঠোর সতর্কবাণীতে পরিণতকরবে। কুরআন, সুন্নাহ, রাসূলুল্লাহ (সা) ও তাঁর সাহাবীরা বাড়াবাড়ির বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন; কেননা বাড়াবাড়ি আমলের বিষয়গুলোকে ঈমানদারদের জন্যে কষ্ঠকর করতে পারে। এ প্রসঙ্গে সিয়াম, পাকসাফ, বিবাহ ও কিয়াস সংক্রান্ত কুরআনের আয়াতগুলো লক্ষণীয়: “আর্লাহ্ তোমাদের জন্য যা সহজ তা চান এবং যা তোমাদের জন্য কঠিন তা চান না।” (২:১৮৫)
“আল্লাহ্ তোমাদেরকে কষ্ঠ দিতে চান না।” (৫:৬)
“আল্লাহ্ তোমাদের ভয়ের লঘু করতে চান, মানুষ সুষ্টগতভাবেই দুর্বল।” (৪:২৮) “হে ঈমানদারগণ! নিহতদের ব্যাপারে তোমাদের জন্য কিসাসের বিধান দেয়া হয়েছে। মুক্ত ব্যক্তির বদলে মুক্ত ব্যক্তি, ক্রীতদাসের পরিবর্তে ক্রীতদাস ও নারীর পরিবর্তে নারী। কিন্তু তার ভাইয়ের পক্ষ থেকে কীছুটা ক্ষমা করা হলে যথাযথ বিধির অনুসরণ করা ও সততার সাথে তার প্রাপ্য আদায় বিধেয়। এটা তোমাদের প্রভুর পক্ষ থেকে ভার লাঘব ও অনুগ্রহ।”(২:১৭৮)
রাসূলের সুন্নায়ও নমনীয়তা ও ভারসাম্যের পক্ষে ও বাড়াবাড়ির বিরুদ্ধে হুঁশিয়ার করে দেয়া হয়েছে: “ধর্মে বাড়াবাড়ি থেকে সাবধান। তোমাদের পূর্বের (জনগোষ্ঠী) বাড়াবাড়ির জন্যে ধ্বংস হয়ে গেছে। ” (আহমদ, নাসাঈ,ইবনে মাজা) তারা ধ্বংস হয়েছ যারা চুল ছেঁড়াছেঁড়িতে লিপ্ত এবং রাসূলুল্লাহ (সা) এ হাদীসটি তিনবার উচ্চারণ করেন। (মুসলিম)
এছাড়া আবু হুরায়রা (রা) বর্ণনা করেন, “একবার এক বেদুঈন মসজিদে প্রস্রাব করেছিল। লোকজন তাকে মারতে গেল, কিন্তু রাসূলুল্লাহ (সা) তাদেরকে আদেশ দিলেন, “তাকে ছেড় দাও (প্রস্রাবের জায়গায়) এক বালতি অথবা এক গামলা পানি ঢেলে দাও। তোমাদেরকে সব কিছু সহজ করার জন্য পাঠানো হয়েছে, কঠিন করার জন্য নয়।” (বুখারী)
এটা সত্য যে, রাসুলূল্লাহ (সা) সব সময় দ’টির মধ্যে সহকটিকে বেছে নিতেন যদি তা পাপ না হয়। যকন জানতে পারেন যে, মুয়াজ (রা) নামায গীর্ঘায়িত করেন, তখন তিনি মুয়াজ (রা) -কে বলেন, “হে মুয়াজক! তুমি কি মানুষকে পরীক্ষা করছ?” (বখারী)
রাসূলুল্লাহ (সা) একথা তিনবার বললেন, “কেউ যদি কঠোরতার মাধ্যমে উৎকর্ষ অর্জনে আগ্রহী হয় তবে সে করতে পারে, কিন্তু অন্যকে বাধ্য করতে পারে না। এটা করতে গিয়ে সে অবচেতনভাবে অন্যকে ধর্ম থেকে সরিয়েও দিতে পারে।” রাসূলুল্লাহ (সা) – এর ওপরেই জোর দিয়েছেন। এজন্যে রাসূলুল্লাহ (সা) একাকী নামায দীর্ঘয়িত করতেন, কিন্তু ইমামাতির সময় সংক্ষিপ্ত করতেন। এ সংক্রান্ত একটি হাদীস ইতিপূর্বেও উল্লেখ করা হয়েছে।
মুসলিম (র) বর্ণনা করেছেন, রাসূলুল্লাহ (সা) ইমামতির সময় কুরআনের চোট ছোট আয়াত পড়তেন। হযরত আয়েশা (রা) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা) সহিষ্ণুতার নির্দশন হিসেবে একাদিক্রমে রোযা রাখার বিরুদ্ধে সতর্ক করে দিয়েছেন। কিন্তু লোকেরা তাঁকে বলল, “আপনি এরূপ করেন”। তিনি বলেন, “আমি তোমাদের মতো নই, আমার ঘুমের মধ্যে আমার প্রভু আমাকে কাদ্য ও পানীয় দান করেন।” ধর্মীয় বিষয়গুলো সহজরূপে তুলে ধরা এখন আগের চেয়েও বেশি প্রয়োজন। আমরা যে যুগে বাস করছি, সে যুগটি পাপপূর্ণ বস্তুবাদে নিমজ্জিত। এর মধ্যে ধর্মপালন দুঃসাধ্য বটে। এজন্যেই ফুকাহা কঠোরতার পরিবর্তে নমনীয়তার সুপারিশ করেছেন। দাওয়াতী কাজে কি পদ্ধতি আবলম্বন করা দরকার তা আগেই উল্লেখ করেছি। কুরআন বলছে: “তুমি মানুষকে তোমার প্রভুর পথে আহবান কর হিকমত ও সদুপদেশ দ্বারা এবং তাদের সাথে আলোচনা কর সদ্ভাবে।” (১৬:১২৫)
স্পষ্টত উক্ত আয়াতে শুধু মধুর কথা নয় সদয় অভিব্যক্তি কথাও বলা হয়েছে। এই লক্ষ্যে প্রথমে মতানৌক্যে নয়, মতৈনক্যের সূত্র ধরে আলোচনা শুরু করতে হবে। আলকুরআন বলছে: “তোমরা উত্তম পন্থা ব্যতীত আহলে কিতাবদের সাথে বিতর্কে লিপ্ত হয়োনা, তবে তাদের সাথে করতে পার, যারা তাদের মধ্যেসীমাংঘনকারী এবং বলো, আমাদের প্রতি ও তোমাদের প্রতি যা অবতীর্ণ হয়েছে, তাতে আমরা বিশ্বাস করি এবং আমাদের ইলাহ ও তোমাদের ইলাহ তো একই এবং আমরা তাঁরই প্রতি আত্মসমর্পণকারী। (২৯:৪৬)
কোনো মতানৈক্যের বিষয় থেকে গেলে তা আল্লাহ্ স্বয়ং বিচার করবেন, “যদি তারা তোমার সাথে বিতণ্ডায় লিপ্ত হয় তবে বলো: “তোমরা যা কর সে ব্যাপারে আল্লাহ সম্যক অবহিত। তোমরা যে বিষয়ে মতভেদ করছ কিয়ামতের দিনে আল্লাহ্ পাক সে বিষয়ে তোমাদের মধ্যে ফয়সালা করবেন।” (২২:৬৮-৬৯)
এই যদি অমুসলমানদের সাথে আচরণের পদ্ধতি হয় তাহলে মুসলমানদের সাথে মুসলমানদের কথাবার্তা কি রকম হওয়া উচিত। আমরা তো অনেক সময় আচার-আচরণে ‘আন্তরিক’ ও কর্কশে’র তফাতও ভুলে যাই। প্রকৃত দাইয়াকে মধুর ভাষণ ও সদয় অভিব্যক্তি দিয়ে দাওয়াতী কাজ চালাতে হবে। এমন প্রমাণ আছে যে, কর্কশ আচরণের ফলে আসল বিষয় বিকৃত বা বিলীন হয়ে গেছে। এগুলো থেকে আমাদের শিক্ষা নেয়া উচিত। এজন্যেই বলা হয়েছে: “যে ভঅল পথের আদেশ করে সে যেন তা ঠিক পথে করে।’
ইমাম গাজ্জালী(র) তাঁর ‘আমরু বিল মারুফ ওয়া নাহি আনিল মুনকার’ বইয়ে লিখেছেন, ‘যে ব্যক্তি ভাল কাজের আদেশ দেয় এবং নিষেধ করে খারাপ কাজ থেকে তার ধৈর্য, সহানুভূতি, জ্ঞান ও প্রজ্ঞা থাকতে হবে।‘ প্রসঙ্গত তিনি একটি ঘটনার উল্লেখ করেন। একবার এক ব্যক্তি খলীফা আল-মামুনের দরবারে এসে কর্কশ ভাষায় পাপ পূর্ণ্য বিষয়ক পরামর্শ দান শুরু করল। ফিকাহ সম্পর্কে আল-মামুনের ভাল জ্ঞান ছিল। তিনি লোকটিকে বললেন, “ভদ্রভাবে কথা বলো। স্মরণ করো আল্লাহ্ তোমার চেয়েও ভাল লোককে আমার চেয়েও একজন খারাপ শাসকের কাছে পাঠিয়েছিলেন এবং তাকে নম্রভাবে কথা বলার আদেশ দিয়েছিলেন। তিনি মূসা (আ) ও হারুন (আ)-কে যারা তোমার ভাল ফিরাউনের- যে আমার চেয়েও খারাপ ছিল-কাছে পাঠিয়েছিলেন এবং তাদেরকে আদেশ দিয়েছিলেন: ‘তোমরা দু’জন ফিরাউনের কাছে যাও, সে সকল সীমালংঘন করেছে, কিন্তু তার সাথে নম্রভাবে কথা বলো। হয়তোবা সে হুঁশিয়ারির প্রতি কর্ণপাত করবে অথবা (আল্লাহ্কে) ভয় করবে।” (২০:৪৩-৪৪)
এভাবে মামুন তর্কে জয়ী হলেন। আল্লাহ্ পাক মূসা (আ)-কে ভদ্র ভাষায় ফিরাউনের কাছ দাওয়াত পেশ করার শিক্ষা দিয়েছন।
মূসা (আ) ও ফিরাউনের মধ্যেকার সংলাপ পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, ফিরাউনের ঔদ্ধত্য, নিষ্ঠুরতা ও লাঞ্ছনা-গঞ্জনা সত্ত্বেও মূসা (আ) অত্যন্ত সতর্কতার সাথে দাওয়াত পেশ করৈছেন। সূরা আশশূরায় এ বিষয়টি লক্ষ্য করা যায়।
রাসূলুল্লাহ (সা)-এর জীবন ও সুন্নহ অধ্যয়ন করলেও দেখা, মায়া, নম্রতা-সেখানে কর্কশতা ও কঠোরতার কোনো অবকাশ নেই। তাই কুরআন বলছে: “এখন তোমাদের মধ্য বেদনাদায়ক এবং তিনি তোমাদের ব্যাপারে খুবই উদ্বিগ্ন। তিনি ঈমানদারদের প্রতি অত্যন্ত দয়ালু ও করুণাশীল।” (৯:১২৮)
সাহাবীদের সাথে রাসূলুল্লাহ (সা)-এর সম্পর্কের কথা উল্লেখ করে কুরআন বলছে : “আল্লাহ্র দয়ায় তুমি তাদের প্রতি কোমল হৃদয় হয়েছে, তুমি যদি রূঢ় ও কঠোর হৃদয় হতে তাহলে তারা আশপাশ থেকে সরে যেতো।” (৩: ১৫৯)
একদিন একদল ইহুদী এসে রাসূলুল্লাহ (সা)-কে সম্ভাষণ জানাল, “আস সামু আলাইকুম” যার আক্ষরিক অর্থ ‘আপনার মৃত্যু হোক’। হযরত আয়েশা (রা) ক্রুদ্ধ হয়ে জবাব দিলেন, “আলাইকুমুস সামু ওয়া আলানাহ” অথাৎ “তোমাদেরও মৃত্যু হোক, অভিশপ্ত হও তোমরা।” কিন্তু রাসূলুল্লাহ (সা) কেবর বললেন, ওয়া আলাইকুম (তোমাদের ওপরেও)” তারপর আয়েশা (রা)-কে লক্ষ্য করে বললেন, “যে সকল বিষয়ে দয়া করুণা করে আল্লাহ্ তাকে ভালবাসেন।” (সকল প্রামাণ্য সূত্রে সমর্থিত) তিনি আরো বললেন, দয়া সব কিছু সুন্দর করে। হিংসা সেগুলোকে ত্রুটিপূর্ণ করে।” (মুসলিম)
জুবায়ের ইবনে আবদুল্লাহ (রা) বর্ণনা করেন, তিনি রাসূলুল্লাহ (সা)-কে বলতে শুনেছেন: “যে কোমলতা থেকে বঞ্চিত সে সকল ভাল থেকে বঞ্চিত।” (মুসলিম) সকল ভাল থেকে বঞ্চিত হওয়ার চেয়ে বড় শাস্তি আর কী থাকতে পারে! আশা করা যায়, উপরের উদ্ধৃতিগুলো আমাদের বাড়াবাড়ি পরিহার করে প্রজ্ঞার পথে চালিত হওয়ার জন্যে যথেষ্ট। আমি আরো কয়েকটি বিষয়ের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই:
ক. মাতাপিতার প্রতি কর্তব্য অবশ্যই পালন করতে হবে। মাতাপিতা, ভাইবোন, কারো সাথেই এই অজুহাতে কর্কশ ব্যবহার করা যাবে না যে, তারা ধর্মের সীমালংঘনকরছে। তারা যদি এরূপ করেও তবুও তাদের সম্মান-স্নেহ পাওয়ার অধিকার ক্ষুণ্ণ হয় না। কুরআনে স্পষ্ট ভাষায় বলা হয়েছে: “তোমার পিতামাতা যদি তোমাকে পীড়াপীড়ি করে আমার সমকক্ষ দাঁড় করাতে যে বিষয়ে তোমাদর কোন জ্ঞান নেই, তুমি তাদের কথা মেন না। তবে পৃথিবীতে তাদের সাথে সদ্ভাবে বসবাস করবে এবং যে বিশুদ্ধ চিত্তে আমার অভিমুখী হয়েছে তার পথ অবলম্বন কর।” (৩১ “ ১৫)
অনুরূপভাবে পিতা ইবরাহীম (আ)-এর আচরণ থেকেও আমরা শিক্ষা নিতে পারি। কুরআনে এর বর্ণনা আছে। পিতাকে সত্য পথে আনার জন্য তিনি পিতার রূঢ়তা সত্ত্বেও তাকে কোমলতার সাথে বোঝানোর চেষ্টা করেছেন। তাহলে মুসলমান পিতামাতাদের সাথে কিরূপ আচরণ করতে হবে?
খ. সকল মানুষ এক, ইসলাম এই শিক্ষা দেয়। কিন্তু এ সম্পর্কে ভুল ধারণা থাকা উচিত নয়। মানুষে মানুলে অনেক ফার্থক্য আছে। তার মধ্যে বয়স একটি। এজন্যে শিষ্টতা ও সম্মানের দিকে লক্ষ্য রাখা উচিত। আত্মীয়-স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশি, শাসকের অধিকারের দিকে খেয়াল রাখতে হবে। যবক সম্মান করবে বৃদ্ধকে, ইসলাম এই শিক্ষা দেয়। এ সম্পর্কে অনেক হাদীস আছে। যেমন: “বৃদ্ধ মুসলমানের প্রতি সম্মান আল্লাহ্র গৌরব।” (আবু দাউদ)
এবং “যে ব্যক্তি ছোটদের প্রতি স্নেহ, বৃদ্ধদের প্রতি সম্মান ও জ্ঞানীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে না, সে আমার (উম্মতভুক্ত) নয়।” (আহমদ, তাবরানী, হাকিম)
গ. যারা দাওয়াতী কাজে অভিজ্ঞ, এক সময় খুব সক্রিয় ছিলেন, কোনো কারণে এখন ঝিমিয়ে পড়েছেন তাদের প্রতি সদয় দৃষ্টি রাখতে হবে। তাদের অবদানের কথা ভুলে গিয়ে তাদের নিন্দামুখের হওয়া উচিত নয়। এটাও রাসূলুল্লাহ (সা)-এর সুন্নাহ। হাতিব ইবনে আবু বালতাহ (রা) -এর ঘটনা থেকে এই শিক্ষা পাওয়া যায়। তিনি মক্কা বিজয়ের প্রস্তুতি সম্পর্কে খবর সরবরাহের বিনিময়ে মক্কায় অবস্থিত তাঁর পরিবার-পরিজনকে রক্ষার অনুরোধ করে পৌত্তলিক কুরায়েশদের কাছে বার্তা পাঠান। বার্তাটি ধরা পড়লে হাতিব স্বীকার করেন। তখন হযরত ওমর ইবনে খাত্তাব (রা) তার বিশ্বাসঘাতকতায় এতোই ক্রুদ্ধ হয়ে পড়েন যে, তিনি তার শিরচ্ছেদ করার জন্যে রাসূলুল্লাহ (সা)-কে অনুরোধ করেন। কিন্তু রাসূলুল্লাহ (সা) তা নাকচ করে দিয়ে বলেন, “তুমি কিভাবে জানো, আল্লাহ্ সম্ভবত বদরের যুদ্ধে অংশগহণকারীদের ভাল কাজ দেখেছেন এবং তাদেরকে বলেছেন: “তোমরা যা খুশী তাই করো। কেননা আমি মাফ করে দিয়েছি তোমাদেরকে (তোমাদের অতীত-ভবিষ্যতের পাপকে)।” প্রাথমিক যুগে হাতিবের ইসলাম গ্রহণ, বদরের যুদ্ধে তার শৌর্যবীর্যের কথা স্মরণ করে রাসূলুল্লাহ (সা) তাকে ক্ষমা মঞ্জুর করলেন। এভাবে তিনি বদরের যোদ্ধাদের বিশেষ মর্যদা সম্পর্কেও সচেতন করে দিলেন।
ঘ. আমি মুসলিম তরুণদেরকে দিবাস্বপ্ন ও অবাস্তব ভাববাদিতা পরিহার করার উপদেশ দিচ্ছি। তাদেরকে ধূলোর ধরণীতে নেমে বড় বড় শহরের বস্তি ও গ্রামের নিপীড়ত মানুষের সাথে মিশতে হবে। এখানেই নির্ভেজাল পুণ্য, সরলতা ও পবিত্রতার উৎস নিহিত আছে। এসব মানুষ অভাবের তীক্ষ্ণ খোঁচায় দিশেহারা হয় না। এখানে সমাজ পরিবর্তন, পুনর্গঠন ও আন্দোলনের বিপুল উপাদান ছড়িয়ে আছে। এদের সাথে মেলামেশা করে তাদের অশিক্ষা-কুশিক্ষা দূর করে এবং তাদের খারাপ দিকগুলো বর্জন ও সুকৃতির বিকাশে উদ্যেগী হতে হবে। এজন্যে সংঘবদ্ধ ও সম্মিলিত প্রয়াস চাই। নিপীড়িতদের দুঃখ-কষ্ট লাঘব করা এবং তাদেরকে সঠিক পথে এনে জিহাদের কাতারে শামিল করার প্রচেষ্টাও ইবাদাহর মধ্যে গন্য। ইসলামে দাতব্য কাজে উৎসাহ দেয়া হয়, এটি ব্যক্তিগত ও সামষ্টিক কর্তব্যের অন্তর্ভুক্ত।
আবু হুরায়রাহ (রা) একটি হাদীসে বলেন: “মানুষের প্রতিটি সন্ধির জন্যে সাদাকাহ তার কাছ থেএক প্রাপ্য, প্রতিদিন যখন সূর্য ওঠে। দুই ব্যক্তির মধ্যে মীমাংসা করে দেয়াও সাদাকাহ, পশুর পিঠে চড়তে কাউকে সাহায্য করা অথবা মাল তুলে দেয়াও সাদাকহর অন্তর্ভুক্ত এবং একটি মধুর বচনও সাদাকাহ এবং কল্যণের দিকে প্রতিটি পদক্ষেপ একটি সাদাকাহ, পথ থেকে ক্ষতিকর জিনিস সরানোও সাদাকহ।” (সকল প্রামান্য সূত্রে সমর্থিত)
ইবনে আব্বাস (রা) আরেকটি হাদীসে বলেন, “প্রতিদিন একিট মানুষের প্রতিটি সন্ধির জন্যে তার কাছ থেকে প্রাপ্য।” শ্রোতাদের একজন বলল, “এটা আমাদের জন্যে কুবই কঠিন।” রাসূলুল্লাহ (সা) বললেন, তোমাদের বাল কাজের আদেশ, কারাপ ও অবাঞ্ছিত কাজ থেকে বারণ একটি সালাহ, দরিদ্রের জন্যে সাহায্য একটি সালাহ, রাস্তা থেকে ময়লা সরানোরও একটি সালাহ ও সালাহর পথে তোমার প্রতিটি পদক্ষেপ একটি সালাহ।” (ইবনে খুজায়মা)
বুরায়দা (রা) বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ (সা) বলেন, “মানুষের ৩৬০ টি অস্থি-সন্ধি আছে। তাকে অবশ্যই প্রতিটির জন্যে সাদাকাহ দিতে হবে।” তারা (সাহাবীরা) বললেন, “হে নবী, এটা কার পক্ষে সম্ভব?” তারা মনে করেছিলেন যে, এটা অর্থনৈতিক সাদাকাহ। রাসূলুল্লাহ (সা) তখন বললেন, “মসজিদে শ্ফেম্মার ওপরে কেউ যদি মাটি চাপা দেয় তাও সাদাকাহ, পথ থেকে বাধা সরানোও সাদাকাহ।” (আহমদ, আবু দাউদ, ইবনে খুজায়মা, ইবনে হাব্বান)
এ রকম তথ্য আরো বহু হাদীসে আছে। অন্ধ, বোবা, দুর্বলের ও দুস্থের প্রতি দয়া প্রদর্শনের উপদেশ রয়েছে এবং এসব কাজকে সাদাকাহ ও ইবদাহ বলে গণ্য করা হয়েছে। তাহলে দেখা যাচ্ছে মুসলমান সর্বদা পুণ্য কাজের উৎস হিসেবে বিরাজমান। এভাবে অন্যেরও উপকার করছে, নিচের মধ্যেও সদগুণের বিকাশ ঘটাচ্ছে, সেই সাথে অসৎবৃত্তি অনুপ্রবেশের আশঙ্কা থেকে নিরাপদ থাকছে। রাসূলুল্লাহ (সা) বলেন, “সেই ব্যক্তি রহমতপ্রাপ্ত যাকে আল্লাহ্ সৎকর্মের চাবি এবং অসৎকর্মের তালা বানিয়েছেন।” (ইবনে মাজা)
অবশ্য অনেক ভাববাদী মনে করতে পারেন এতে দাওয়াতী কাজ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। আমি মনে করি সামাজিক সম্পর্কটাই একটা বাস্তব দাওয়াহ। এই দাওয়াহ মানুষ আপন পরিবেশে পেয়ে থাকে। ইসলাম কেবল বুলি নয়। দাওয়াহ অর্থ মানুষের সমস্যার সাথে একাত্ম হওয়া, এর প্রতিকারের ব্যবস্থা করা। ইমাম হাসান আল বান্নাহ (র) এ ব্যাপারে সচেতন ছিলেন বলে ইসলামী আন্দোলনের সমাজ সেবা বিভাগ খুলেছিলেন সর্বত্র। তিনি মনে করতেন মুসলমানকে যেমন সালাতের শাধ্যমে ইবদতের তগিদ দেয়া হয়েছে তেমনি তাগিদ রয়েছে দাতব্য কাজেরও। কুরআনুল কারীমে বলা হয়েছে: “হে বিশ্ববাসিগণ, তোমরা রুকু কর, সিজদা কর এবং তোমাদের প্রতিপালকের ইবাদত কর ও সৎকাজ কর যাতে সফলকাম হতে পার এবং জিহাদ কর আল্লাহ্র পথে যেভাবে করা উচিত। তিনি তোমাদেরকে মনোনীত করেছেন। তিনি দ্বীনের ব্যাপারে তোমাদের ওপর কোন কঠোরতা আরোপ করেননি।” (২২ : ৭৭-৭৮)
উপরিউক্ত আয়াত মুসলিম জীবনের ত্রিমুখী ভূমিকার সংজ্ঞা দিয়েছে। আল্লাহ্র সাথে সম্পর্ক হচ্ছে ইবাদতের মাধ্যমে তার সেবা; সামাজিক ভূমিকা হচ্ছে দাতব্য কাজের মাধ্যমে সমাজের সেবা; বাতিল শক্তির সাথে সম্পর্ক হচ্ছে তার বিরুদ্ধে জিহাদ চালানো। এরপরেও হয়তো ভাববাধীরা আগে ভাগে ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্টার কথাই বলবে এই যুক্তিতে যে, এটা হয়ে গেলে তো সব সমস্যারই সমাধান অটোমেটিক হয়ে যাচ্ছে। এতে কোনো সন্দেহ নেই ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা তো সমগ্র উম্মাহর দায়িত্ব। এজন্যে তো সময় ও অধ্যবসায় প্রয়োজন। এই প্রিয়তম উদ্দেশ্য অর্জনের পূর্ব পর্যন্ত তো আমাদেরকে সমাজের সেবা ও উন্নতির চেষ্টাও করতে হবে। এই তৎপরতা একাদারে ভবিষ্যত বংশধরদের গঠন, প্রস্তুতি ও উম্মাকে নেতৃত্ব দেয়ার ক্ষমতারও পরীক্ষা। এটা হচ্ছে এই রকম যে, একজনের এক্ষুণি চিকিৎসা দরকার, কিন্তু একজন ইসলামী ডাক্তার ইসলামী রাষ্ট্রের ইসলামী হাসপাতাল ছাড়া রোগীর চিকিৎসা করতে নারাজ। অতএব ইসলামী রাষ্ট্র কায়েম না হওয়া পর্যন্ত সমাজ বা মানবতার সেবা কিংবা কোনো বিতর্কিত বিষয়ের মীমাংসা স্থাগিত রাখার যুক্তি হাস্যকর।
কাঙ্খিত ইসলামী রাষ্ট্রর রূপ সম্পর্কে আমার ধারণা: একটি জলপাই ও খেজুর গাছের বাগান ফল উৎপাদনমুখী কাজের চেষ্টা না করে জলপাই ও খেজুর ফলনের আশায় বসে থাকবে, এটা কি যুক্তিসঙ্গত? তাকে জীবিকার্জনের জন্যে অন্য কাজও করতে হবে, সেই সাথে কাঙ্খিত ফলের জন্যে জলপাই ও খেজুর গাছেরও যত্ন নিতে হবে।
ঙ. তরুণদের প্রতি আমার সর্বশেষ পিতৃস্নেহসুলভ উপদেশ হচ্ছে: হতাশার শৃংখল থেকে নিজেদের মুক্ত করুন এবং মুসলমানদের মধ্যে নির্মল ও সচ্চরিতের নমুনা হোন। অবশ্য এই আশাবাদের জন্যে আরো কয়েকটি বষয়ে সচেতন র্দৃষ্টি দিতে হবে: প্রথম : মানুষ ফেরেশতা নয়। পিতা আদম (আ) -এর মতো তারাও ভুল করতে পারে। আল-কুরআন আমাদের শিক্ষা দিয়েছে, “আমি তো আগেই আদমের প্রতি নির্দেশ দিয়েছিলাম, কিন্তু তিনি ভুলে গিয়েছিলেন, আমি তাকে সংকল্পে দৃঢ় পাইনি।” (২০ : ১১৫)
মানুষের ভ্রান্তি প্রবণতা ও প্রবৃত্তির প্রতি প্রলোভন স্বীকার করে নিলে আমরা অন্যের ভুলত্রুটির প্রতি সহনীয় ও সহৃদয় মনোভাব পোষণের পাশাপাশি তাদেরকে আল্লাহ্র ক্ষমারও আশা করতে পারব। আল্লাহ্ তায়ালা রাসূলুল্লাহ (সা) – কে উদ্দেশ্য করে বলছেন: “বল, হে আমার বান্দাগণ! তোমরা যারা নিজেদের ওপর যুলুম করেছ, আল্লাহ্র রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না, আল্লাহ্ সকল গুনাহ মাফ করে দেবেন। তিনি তো ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।” (৩৯ : ৫৩)
উক্ত আয়াতে ‘আমার’ বান্দা বলার মাধ্যমে বান্দাদের জন্যে আল্লাহ্র উদ্বেগ ও দয়ার চিত্রই ফুটে উঠেছে।
দ্বিতীয় : এটা বোঝা আবশ্যক যে, মানুষের মনের গহীনে কী আছে তা আল্লাহ্ ছাড়া কেউ আর জানেন না। অতএব তার বক্তব্যের আলোকে তাকে বিচার করতে হবে। তাই কেউ যদি কালিমা পাঠ করে তাহলে তাকে মুসলমান হিসেবেই গণ্য করা উচিত। এটাও রাসূলুল্লাহ (সা) এর সুন্নাহ। তিনি বলেন “আমি আদেশ প্রাপ্ত হয়েছি (আল্লাহ্র দ্বারা ) সেই সব লোকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার যতোক্ষণ না তারা স্বীকার করবে যে, আল্লাহ্ ছাড়া আর কোনো মাবুদ নেই এবং মুহাম্মাদ (সা) আল্লাহ্র রাসূল এবং সুচারুরূপে নামায পড়াবে, যাকাত দেবে। তারা সকলে যদি এরুপ করে তারা আমার কাচ থেকে (ইসলামী আইন প্রদত্ত শাস্তির বিধান ব্যতীত) জীবন ও সমাজ রক্ষাকরে এবং আল্লাহ্ তাদের হিসাব নেবেন।”
এ কারণেই তিনি মুনাফিকুনকে শাস্তি দেননি অথচ তিনি নিশ্চত ছিলেন যে, তারা তাঁর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত করছে। তাদেরকে হত্যা করার পরামর্শ এলে তিনি বলেন: “আমি ভয় করি লোকে বলবে যে, মুহাম্মদ (সা) তাঁর সাহাবীদের হত্যা করে।”
তৃতীয়: আমাদেরকে অবশ্যই স্বীকার করতে হবে যে, যে ব্যক্তি আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলের ওপর বিশ্বাস করে, সে যতো খারাপ করুক একেবারেই জন্মগতভাবে ভালোশূন্য হতে পারে না। বড় ধরনের পাপ করলে সে একেবারে ঈমানশূন্য হয়ে যায় না যতোক্ষণ না সে ইচ্ছাকৃত আল্লাহ্ কে অস্বীকার করে ও তাঁর আদেশ অবজ্ঞা করে। রাসূলুল্লাহ (সা) পাপাচারীকে চিকিৎসার দৃষ্টিতে দেখতেন যমন রোগীকে দেখা হয়। পুলিশের মতো তিনি অপরাধীকে দেখতেন না। ইনশাআল্লাহ নিচের ঘটনা থেকে বিষয়টি পরিস্কার হয়ে যাবে :
একজন কোরায়শী যুবক একদিন রাসূল্লাহ (সা)- এর কাছে এসে ব্যভিচারের অনুমতি চাইল। সাহাবীরা ক্রদ্ধ হয়ে তাকে শাস্তি দিতে উদ্যত হলেন; কিন্তু রাসূলুল্লাহ (সা) -এর দৃষ্টিভঙ্গি ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন। শান্ত সমাহিত চিত্তে তিনি যুবকটিকে তার আরো কাছে আসতে বললেন। তারপর বললেন, “তুমি কি তোমার মায়ের জন্যে এটা (ব্যভিচার) মেনে নেবে?” যুবকটি জবাব দিল, “না।” রাসূলুল্লাহ (সা) বললেন, “(অন্য) লোকেরাও এটা তাদের জন্যে অনুমোদন করবে না।” অতঃপর রাসূলুল্লাহ (সা) বারবার তাকে জিজ্ঞেস করলেন সে তার কন্যা, বোন ও চাচীর জন্যে অনুমোদন করবে কিনা? প্রতিবারই যুবক বলল, “না।” এবং প্রতিবারই রাসূলুল্লাহ (সা) বললেন, “(অন্য) লোকেরাও এটা তাদের জন্য অনুমোদন করবে না।” তারপর তিনি যুবকটির হাত ধরে বললেন, “আল্লাহ্ তার (তরুণের পাপ মার্জনা করুন, তার অন্তর পবিত্র করুন এবং তাকে সহিষ্ণু করুন (তার এই কামনার বিরুদ্ধে)।” (আহমদ, তাবরানী) এই সহৃদয় অনুবুতি সুস্পষ্ট সদিচ্ছা ও মানুষের জন্মগত সুমতির প্রতি আস্থার পরিচায়ক যা মানুষের খারাপ বৃত্তিগুলোকে বিদূরিত করতে সক্ষম। আর খারাপ প্রবৃত্তি ক্ষনস্থায়ী। সুতরাং তিনি ধৈর্যের ও যুক্তির সাতে তার সাথে আলাপ করে তার ভুল চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিলেন। চরমপন্থীরা যুক্তি দেখাতে পারে যে, যুবকটি যেহেতু ব্যভিচার করেনি তাই তার প্রতি উদারতা দেখানো হয়েছে। তাহলে আরো একটি উদাহরণ দেখা যাক : এক মহিলা ব্যভিচারিণী গর্ববতী হয়ে রাসূলূল্লাহর (সা) – এর কাছে এসে দোষ স্বীকার করে তাকে পাথর ছুঁড়ে মেরে ফেলে পাপমুক্ত করার জন্যে বারবার চাপ দিতে লাগলো। তাকে পাথর মারার সময় খালিদ ইবনে ওয়ালিদ (রা) তাকে অবভিশাপ দিচ্ছিলেন। তখন রাসূলুল্লাহ (সা) তাকে বললেন, “খালিদ নম্র হও। যাঁর হাতে আমার জীবন তাঁর শপথ, সে এমন অনুশোচনা করেছে যে, এমনকি একজন দোষী খাজনা আদায়কারীও যদি অনুতপ্ত হতো তবে তাকেও ক্ষমা করা হতো।” (মুসলিম ও অন্যান্য)
কেউ কেউ যুক্তি দেখাবেন মহিলাটি পাপ করেই অনুতাপ করেছে। তাহলে আরো একটি উদাহরণ দিচ্ছি: রাসূলুল্লাহ (সা)- এর জীবদ্দশায় একজন মদ্যপায়ীকে বার বার রাসূলুল্লাহ (সা)-এর কাছে আনা হলো এবং বার বার তাকে শাস্তি দেয়া হলো, কিন্তু সে নেশা করতেই তাকলো। একদিন যখন তাকে একই অভিযোগে আবার হাযির করে তাকে বেত্রাঘাত করা হলো তখন এক ব্যক্তি বললো, “আল্লাহ তাকে অবিশপ্ত করুন! কতোবার তাকে শাস্তি দেয়ার জন্যে আনা হলো?” রাসূলুল্লাহ (সা) বললেন, “তাকে অভিশাপ দিও না, আল্লাহ্র শপথ, আমি জানি সে আল্লাহ্ ও তাঁর রাসুলকে ভালবাসে। রাসূলুল্লাহ (সা) আরো বলেন, “তোমার ভাইয়ের বিরুদ্ধে শয়তানকে সাহায্য কোর না।” রাসূরুল্লাহ (সা) তাদেরকে অবিশাপ দেয়া থেকে বারণ করলেন এ কারণে যে, এতে ঐ মানুষটি এবং তার মুসলিম ভাইয়ের মধ্যে মনোমালিন্য ও রেষারেষি সৃষ্টি করতে পারে কারণ-তার পাপ তাকে মুসলিম ভ্রাতৃত্বের বন্ধন থেকে বিচ্ছিন্ন করেনি। উপরিউক্ত ঘটনাবলী গভীরভাবে চিন্তা করলে আমরা বুঝতে পারব যে, মানুষের অন্তর্নিহিত সুকৃতির প্রতি রাসূলুল্লাহ (সা)-এর কী গভীর অন্তর্দৃষ্টি ছিল। অতএব যেসব চরমপন্থীরা কেউ ভুল করলেই তাকে নির্বিচারে কুফর-শিরকের ফতোয়া দেয়, তা তাদের সম্পূর্ণ অজ্ঞতাপ্রসূত। একজন জ্ঞানী ব্যক্তি একদা বলেছিলেন : “অন্ধকারকে অভিশাপ দেয়ার পরিবর্তে রাস্তায় একটি মোমবাতি জ্বালানোর চেষ্টা করো।”
এই হচ্ছে আমার প্রিয় তরুণ মুসলমানদের প্রতি উপদেশ। আমার উদ্দেশ্য কুরআনুল কারীমে বর্ণিত হযরত শুয়াইব (আ) -এর ভায়ায় : ‘আমি আমার সাধ্য মতো সংস্কার করতে চাই। আল্লাহর মদদেই কিন্তু কাজসম্পন্ন হয়; আমি তাঁরই উপর নির্ভর করি এবং আমি তাঁরই অভিমুখী। (১১ : ৮৮)
পরিভষা সঙ্কেত
১. কিসা : সমতার আইন।
২. আস-সাহীহ : ছয়টি সহীহ হাদীস সংকলনের যে কোন একটি।
— সমাপ্ত —