চরমপন্থার লক্ষণ
চরমপন্থার প্রথম লক্ষণ হচ্ছে অন্ধতা। চরমপন্থী বা গোঁড়া ব্যক্তি নিজের মতের প্রতি একগুঁয়ে ও অসহিষ্ণুর মতো এমন অটল থাকে যে, কোনো যুক্তিই তাকে টলাতে পারে না। অন্য মানুষের স্বার্থ, আইনের উদ্দেশ্য ও যুগের অবস্থা সম্পর্কে তার স্বচ্ছ ধারণা থাকে না। তারা অন্যের সাথে আলোচনায়ও রাজী হয় না যাতে তাদের মতামত অন্যের মতামতের সাথে তুলনামূলক পর্যালোচনা করা যায়। তাদের বিবেচনায় যা ভাল হয় কেবল তা অনুসরণেই তারা প্রবৃত্ত হয়। যারা অন্যের মতামত দাবিয়ে রাখা ও উপেক্ষা করার চেষ্টা চালায় এবং যারা এর জন্য তাদেরকে অভিযুক্ত করে, আমরা উভয়কেই সমভাবে নিন্দা করি। বস্তুতপক্ষে যারা নিজেদের মতকেই কেবল নির্ভেজাল বিশুদ্ধ এবং অন্যদেরকে ভ্রান্ত বলে মনে করে তাদেরকে কঠোরভাবে নিন্দা করা ছাড়া গত্যন্তর নেই বিশেষ করে তখন, যখন তারা কেবল ভিন্নমতের জন্যে প্রতিপক্ষকে জাহিল, স্বার্থন্বেষী, অবাধ্য তথা ফিসকের অভিযোগে অভিযুক্ত করে। তাদের আচরণে মনে হবে যেন তারাই নির্ভেজাল, খাঁটি বিশুদ্ধ এবং তাদের প্রতিটি কথাই যেন ওহী বা এলহাম! এ ধরণের একগুঁয়ে দৃষ্টিভঙ্গি উম্মাহর ইজমার পরিপন্থী। কেবলমাত্র কুরআন ও সুন্নাহ ছাড়া অন্য যে কোনো ব্যক্তির যে কোনো মত গ্রহণ বা বর্জন করা যেতে পারে। এটাই উম্মাহর সর্ববাদী সম্মত রায়। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় কিছু লোক বিভিন্ন জটিল বিষয়ে নিজেদের ইজতিহাদের অধিকার প্রয়োগ করে খেয়ালখুশী মতো রায় দিয়ে থাকেন। কিন্তু সমকালীন বিশেষজ্ঞ আলিমদেরকে একক বা যৌথভাবে ইজতিহাদের অধিকার প্রয়োগ করতে দেখলে তারা বেজায় নাখোশ হন। অথচ ঐ সব ব্যক্তি কুরআন ও সুন্নাহর এমন হাস্যকর ব্যাখ্যা দেন যা আমাদের পূর্বপুরুষ বুজুর্গানে দ্বীন এবং সমসাময়িক আলিমদের রায় বা সিদ্ধান্তের পরিপন্থী। মজার ব্যাপার হচ্ছে, তারা নিজেদেরকে হযরত আবু বকর, উমর, আলী ও ইবনে আব্বাসের (রা) সমপর্যায়ের মনে করেন। তাদের এই উদ্ভট দাবীতে তেমন ক্ষতি ছিল না যদি তারা তাদেরকে কেবল সমসাময়িক পন্ডিতদের সমপর্যায়ের মনে করতেন।
সুতরাং নিশ্চিতভাবেই বলা যায় যে, চরমপন্থা বা গোঁড়ামির পরিস্কার লক্ষণ হচ্ছে অন্ধতা। তার দাবীর সারকথা: “বলার অধিকার কেবল আমার, তুমি কেবল শুনবে। আমি পথ দেখাবো, তুমি সেই পথে চলবে। আমার মত অভ্রান্ত, তুমি ভ্রান্ত। আমার ভুল হতে পারে না, আর তোমারটা কখনো ঠিক হতেই পারে না।” অর্থাৎ একজন তার অন্ধমতানুযায়ী কোনোভাবে অন্যের সাথে সমঝোতায় আসতে পারে না। অথচ আমরা জানি, সমঝোতা ছাড়া সমাজ সংহত হতে পারে না। সমঝোতা কেবল তখনই সম্ভব যখন কেউ মধ্যপন্থায় অবস্থান নেয়। কিন্তু একজন চরমপন্থী মধ্যপন্থা সম্পর্কে সম্পূর্ণ অজ্ঞ, বিশ্বাস তো দূরের কথা। জনগণের সংগে তার সম্পর্ক পূর্ব ও পশ্চিমের সম্পর্কের মতো- যতই তুমি একটির নিকটে যাবে তুমি অন্যটি হতে দূরে সরে যাবে। বিষয়টি আরো জটিল হয়ে যায় যখন এ রকম ব্যক্তি অন্যকে বাধ্য করার মনোভাব গ্রহণ করে কেবল শক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে, অনেক সময় অভিযোগের মাধ্যমে যে প্রতিপক্ষ অবিশ্বাসী, বিপথগামী কিংবা বেদাতী। এরূপ বুদ্ধিবৃত্তিক সন্ত্রাস শারীরিক সন্ত্রাসের চেয়েও ভয়ঙ্কর।
চরমপন্থার দ্বিতীয় পরিচয় হচ্ছে, সর্বক্ষণ বাড়াবাড়ি করার নীতিতে অটল থাকা এবং সমঝোতার যুক্তিসঙ্গত কারণ থাকা সত্ত্বেও অন্যকে তার মতো আচরণে বাধ্য করতে প্রয়াসী হওয়া যদিও তার কাজটি আল্লাহর বিধানসম্মত নয়। তাকওয়া ও সতর্কতার কারণেও এক ব্যক্তি ইচ্ছা করলে কোনো কোনো বিষয়ে কখনো কখনো কঠোর মত পোষণ করতে পারে। কিন্তু এটা এমন অভ্যাসে পরিণত হওয়া উচিত নয় যাতে সে যেখানে প্রয়োজন এমন ক্ষেত্রেও সহজ সরল বিষয়গুলো পরিহার করে। এরুপ দৃষ্টিভঙ্গি কুরআন ও হাদীসের শিক্ষার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। আল্লাহ বলেন: “আল্লাহ তোমাদের জন্যে যা সহজ তা চান, যা তোমাদের জন্যে ক্লেশকর তা চান না।” (২:১৮৫)
আল্লাহ রাসূলও (সা.) ইতিপূর্বে উদ্ধৃত হাদীসে বলেছেন: “(ধর্মীয় বিষয়গুলো) সহজ করে তুলে ধরো কঠিন করো না।” (সকল প্রামাণ্য সূত্রে সমর্থিত)
তিনি আরো বলেছেন : “তাঁর প্রদত্ত সুবিধা ভোগ করলে আল্লাহ খুশী হন যেমন (লোকেরা) তাঁর অবাধ্য হলে তিনি নারাজ হন।” (আহমাদ, বায়হাকী ও তাবারী) এছাড়া রেওয়ায়েত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সা) কে যখনি দু’টি কাজের মধ্যে একটি বেছে নিতে বলা হয়েছে, গর্হিত না হলে তিনি সহজতম পথটিই সর্বদা বেছে নিয়েছেন।” (বুখারী ও তিরমিযী)
মানুষের জন্যে কোনো কাজকে জটিল করে তোলা কিংবা তার ওপরে চাপ সৃষ্টি করা রাসূলুল্লাহ (সা) -এর উজ্জ্বলতম গুণাবলীর পরিপন্থী। এটি পূর্ববর্তী বিভিন্ন ধর্মগ্রন্থ এবং পরবর্তীকালে কুরআনুল কারীমেও উল্লেখ করা হয়েছে: “যিনি তাদের জন্যে পবিত্র বস্তু বৈধ ও উত্তম (পবিত্র) এবং অপবিত্র বস্তু অবৈধ করেন এবং মুক্ত করেন তাদেরকে তাদের গুরুভার হতে ও শৃংখল হতে যা তাদের ওপর ছিল।” (৭:১৫৭)
এ কারণে রাসূলুল্লাহ (সা) কেবল একাকী নামযকে দীর্ঘ করতেন। আসলে তিনি পা ফুলে না ওঠা পর্যন্ত সারা রাত ধরে নামায পড়তেন। কিন্তু যখন তিনি জামায়াতে ইমামতি করতেন তখন তাঁর অনুসারীদের সহ্য ক্ষমতা ও পরিস্থিতির বিচারে নামায সংক্ষিপ্ত করতেন। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “যখন তোমাদের মধ্যে কেউ নামাযের ইমামতি করে তখন তা সংক্ষিপ্ত করা উচিত, কেননা সেখানে দুর্বল, রুগ্ন ও বৃদ্ধলোক থাকে; কিন্তু কেউ একাকী নামায পড়লে ইচ্ছা মতো দীর্ঘ করতে পারো।” (বুখারী)
আবু মাসুদ আল আনসারী বর্ণনা করেছেন যে, এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ (সা) কে বলল, “হে আল্লাহর রাসূল, আমি সালাতুল ফজরে হাযির হই না, কেননা অমুক অমুক নামাযকে দীর্ঘ করে থাকে। ” রাসূলুল্লাহ (সা) অত্যন্ত ক্রুদ্ধ হয়ে বললেন, “হে মানুষেরা তোমরা মানুষকে উত্তম কাজের (নামায) প্রতি বিতৃষ্ণ করতে চাও? যখন কেউ নামায পড়াবে তখন তা সংক্ষিপ্ত করবে, কেননা সেখানে দুর্বল, বৃদ্ধ ও ব্যস্ত লোক থকে। ” আমরা আগেই উল্লেখ করেছি, রাসূলুল্লাহ (সা) একইভাবে রাগন্বিত হয়েছিলেন যখন জানতে পারেন যে, মুয়ায (রা) বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন: “যখন আমি নামাযের জন্যে দাঁড়াই তখন আমি একে দীর্ঘ করার ইচ্ছা করি, কিন্তু শিশুর কান্না শুনে আমি নামায সংক্ষিপ্ত করি, কারণ আমি মাতাদের কষ্টে ফেলতে চাই না।”
অবশ্য করণীয় কাজগুলোর মতো ঐচ্ছিক কাজগুলো সম্পন্ন করার চাপ দেয়াটাও বাড়াবাড়ির শামিল। অনেক সময় মাকরুহাতের জন্যে এমনভাবে কৈফিয়ত তলব করা হয় যেন এগুলো মুহাররামাতের (হারাম সমূহের) অন্তর্ভূক্ত। প্রকৃতপক্ষে আল্লাহ যেসব কর্তব্য কর্মের সুষ্পষ্ট আদেশ দিয়েছেন কেবল সেসব ব্যাপারেই কৈফিয়ত তলব করা যায়। এর বাইরে অতিরিক্ত সকল ধরনের ইবাদতই ঐচ্ছিক। নিম্নোক্ত ঘটনাটি থেকে বোঝা যাবে এটাই রাসূলুল্লাহ্ (সা) -এর মত: একদা এক বেদুঈন রাসূলুল্লাহ (সা) কে অবশ্য পালনীয় কাজ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি মাত্র তিনটি কাজের কথা উল্লেখ করলেন- নামায, যাকাত ও রোযা। এছাড়া আর কিছু করার আছে কিনা জিজ্ঞাসিত হয়ে রাসূলুল্লাহ্ (সা) না-বাচক জবাব দিলেন এবং বললেন যে, বেদুঈন ইচ্ছে করলে বেশী কিছুও করতে পারে। বেদুঈন বিদায় নেয়ার আগে প্রতিজ্ঞা করলো, রাসূলুল্লাহ (সা) যা কিছু বলেছেন তার চেয়ে বেশীও করবে না, কমও করবে না। মহানবী (সা) একথা শুনে বললেন, “যদি সে সত্য কথা বলে থাকে তবে সে সফল হবে, অথবা বলেছিলেন “তাকে জান্নাত মঞ্জুর করা হবে।” (বুখারী)
আজকের যুগে একজন মুসলমান যদি অবশ্য কর্তব্য কাজগুলো সম্পন্ন করে এবং মুহাররামাতের সবচেয়ে জঘন্য কাজ থেকে দূরে থাকে তবে তাকে ইসলামের অন্তর্ভূক্ত বলে গণ্য করা যায় যতক্ষণ পর্যন্ত সে আল্লাহ ও রাসূলের প্রতি আনুগত্য বজায় রাখে। এমনকি যদি সে ছোটখাটো মুহাররামাতের কাজ করে ফেলে তবে দৈনিক পাঁচ ওয়াক্তের নামায, জুমা’র নামায ও রোযার বদৌলতে তার ছোট অন্যায়গুলোর কাফফারাহ হয়ে যাবে। কেননা কুরআন ঘোষণা করছে: “ভাল কাজ খারাপ কাজকে অবশ্যই মিটিয়ে দেয়।” (১১:১১৪)
আরেকটি আয়াতে আছে: “যদি তোমরা সবচেয়ে জঘন্য নিষিদ্ধ কাজ থেকে বিরত থাকো তবে আমরা তোমাদের সকল খারাপ কাজকে মুছে ফেলবো এবং তোমাদেরকে উচ্চ সম্মানের স্থানে আসীন করবো।” (৪:৩১)
একজন মুসলমান যদি কিছু বিতর্কমূলক বিষয় অনুসরণ করেন যার হালাল বা হারাম হওয়া সম্পর্কে আমরা নিশ্চিত নই অথবা এমন কিছু কাজ পরিত্যাগ করেন যার ওয়াজিব হওয়া বা মুবাহ হওয়া অনিশ্চিত, তাহলে কুরআন ও সুন্নাহর উপরিউক্ত প্রমাণের প্রেক্ষিতে তাকে কি আমরা ইসলাম বহির্ভূত বলে ঘোষণা করতে পারি: আর এ কারণেই আমি কিছু সাধু লোকের কঠোর মতের বিরোধী। তারা শুধু নিজেদের আচরণের মধ্যেই এই গোঁড়ামি সীমাবদ্ধ রাখেন না, অন্যকেও এতে অহেতুক প্রভাবিত করতে চান। আরো আপত্তি আছে। এসব লোক কোনো কোনো আলিমের বিরুদ্ধেও বিশেদগার করতে কুন্ঠিত হন না। অথচ এসব আলিম সত্যিকার অর্থে কুরআন ও সুন্নাহর আলোকে সাধারণ মানুষের ওপর অনর্থক চাপিয়ে দেয়া বিধি-নিষেধের বোঝা হালকা করতে চান।
চরমপন্থার আরেকটি লক্ষন হচ্ছে নির্দয় কঠোরতা। চরমপন্থীদের স্থানকালের বিবেচনা জ্ঞান নেই। নও-মুসলিমদের প্রতি অন্তত প্রাথমিক অবস্থায় নম্র আচরণ করা উচিত-সেই নও-মুসলিম মুসলিম অথবা অমুসলিম যে দেশেরই হোক। এমনকি ধর্মের প্রতি সদ্য অনুরক্ত মুসলমানদের প্রতিও সহৃদয় দৃষ্টি দেয়া দরকার। নব দীক্ষিত মুসলমানদের প্রথমেই ছোটখাট বিষয়গুলো মানতে বাধ্য করানো উচিত নয়। প্রথমে তাদেরকে মৌলিক বিষয়গুলো বোঝার সুযোগ দিতে হবে। তাদের ধ্যান-ধারণা, চিন্তাধারা ইসলামের আলোকে সংশোধনের চেষ্টা করতে হবে। একবার তাদের মনে ঈমানের চেতনা বদ্ধমূল হয়ে গেলেই ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভ এবং ক্রমান্বয়ে বাস্তব জীবনে আল্লাহর বিধি বিধান রূপায়ণের তাগিদ সৃষ্টি করতে হবে। রাসূলুল্লাহ (সা)-এর জীবন থেকে আমরা এর সত্যতা খুঁজে পাই। হযরত মুয়ায (রা) কে ইয়ামেনে পাঠানোর সময় হযরত মুহাম্মদ (সা) বলেছিলেন, “তুমি আহলে কিতাবের একটি জনগোষ্ঠীর কাছে যাচ্ছ। সেখানে পৌঁছে তাদেরকে এই সাক্ষ্য দিতে বলবে যে, আল্লাহ ছাড়া কোনো মা’বুদ নেই। এবং হযরত মুহাম্মদ (সা) তাঁর প্রেরিত রাসূল। যদি তারা এটা মেনে নেয় তখন তাদেরকে বলবে যে, আল্লাহ দিনে রাতে পাঁচ বার নামায আদায়ের নির্দেশ দিয়েছেন। তারপর বলবে যে, আল্লাহ তোমাদের মধ্যে ধনীদের কাছ থেকে যাকাত আদায় করে গরীবদের মধ্যে বন্টনের আদেশ দিয়েছেন। …….. (সকল প্রামাণ্য সূত্রে সমর্থিত)
মুয়ায (রা)- এর প্রতি রাসুলুল্লাহ (সা)-এর উপদেশের মধ্যে দাওয়াতী কাজের ক্রমিক পদ্ধতি লক্ষণীয়। উত্তর আমেরিকা সফরের সময় আমি কিছু নিষ্ঠাবান মুসলিম তরুণের আচরণে ক্ষুব্ধ হয়েছিলাম। এই তরুণরা একটি মুসলিম গ্রুপের সাথে সংশ্লিষ্ট। সেখানে মুসলমানরা সাধারণত শনি ও রবিবারের ভাষণের সময় চেয়ারে বসতো। ঐ তরুণরা মনে করে মাদুরে কেবলামুখী হয়ে বসা উচিত। এছাড়া শার্ট প্যান্টের পরিবর্তে ঢিলেঢালা পোষাক পরিধান এবং ডাইনিং টেবিলের পরিবর্তে মেঝেতে বসে খাওয়া উচিত। বিষয়টির ওপর তরুণেরা বিতর্কের ঝড় তুলেছিলো। উত্তর আমেরিকার মতো জায়গায় এরূপ দৃষ্টিভঙ্গি ও আচরণ দেখে আমি ক্ষুব্ধ না হয়ে পারিনি। সুতরাং আমি আমার ভাষণে বললাম : এই বস্তুবাদী সমাজে আপনাদের প্রধান কাজে হওয়া উচিত তাওতীদ ও আল্লাহর বন্দেগীর দিকে মানুষকে আহবান করা এবং পরকাল ও মহান ইসলামী মূল্যবোধের প্রতি তাদের আগ্রহ সৃষ্টি করা। সেই সাথে বৈষয়িক উন্নতির শীর্ষে আরোহণ করেও এই দেশগুলো যে জঘন্য ক্রিয়াকলাপে নিমজ্জিত তার পরিণতি সম্পর্কেও তাদের হুঁশিয়ার করে দিতে হবে। ধর্মীয় আচার-আচরণ ও খুঁটিনাটি বিষয়ে পদ্ধতিগত উৎকর্ষ অর্জনের বিষয়টি স্থান ও কালের প্রেক্ষাপটে বিচার করা উচিত। এর আগে আমাদের নিশ্চিত করতে হবে যে, ধর্মের মৌলিক ও অত্যাবশ্যক নীতিমালা দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
আরেকটি ইসলামী কেন্দ্রের ঘটনা উল্লেখ করছি। মসজিদে ঐতিহাসিক ও শিক্ষামূলক চলচ্চিত্র প্রদর্শনী নিয়ে সেখানে বেশ হৈ চৈ হচ্ছিল। প্রদর্শনীর বিরোধীরা অভিযোগ করছেন যে, মসজিদকে সিনেমা হলে পরিণত করা হয়েছে। কিন্তু তারা একথা বেমালুম ভুলে বসেছেন যে, মসজিদের উদ্দেশ্য হচ্ছে মুসলমানদের আধ্যাত্মিক ও জাগতিক উভয় ক্ষেত্রের কর্মকান্ডের কেন্দ্রস্থল হিসেবে এক ব্যবহার করা। হযরত মুহাম্মদ (সা) -এর আমলে মসজিদ ছিলো একাধারে দাওয়া, রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক কার্যক্রমের সদর দফতর। এটা সম্ভবত সকলেরই জানার কথা, আবিসিনিয়া থেকে আগত একদল লোককে রাসূলুল্লাহ (সা) মসজিদের মধ্যস্থলে বশা দিয়ে ক্রিয়া প্রদর্শনের অনুমতি দিয়েছিলেন এবং হযরত আয়েশা (রা) তা দেখার সুযোগ পেয়েছিলেন। (বুখারী এবং অন্যান্য)
গোঁড়ামির চতুর্থ লক্ষণ হচ্ছে, মানুষের প্রতি আচার-আচরণে অশিষ্টতা, উপস্থাপনায় স্থুলতা এবং দাওয়াতী কাজে গোবেচারা ভাব। এসবই হচ্ছে কুরআন ও সুন্নাহর শিক্ষার সাথে সঙ্গতিহীন। আল্লাহ তায়ালা কুশলী ও মধুর ভাষায় ইসলামের প্রতি মানুষকে আহবান করার আদেশ দিয়েছেন: “হিকমতের সাথে ও সদুপদেশ দ্বারা তোমার প্রভুর দিকে (মানুষকে) আহবান জানাও এবং সদ্ভাবে (উৎকৃষ্টতম ও সুবিবেচনা প্রসূত পন্থায়) তাদের সাথে আলোচনা করো।”(১৬:১২৫)
রাসূলুল্লাহ (সা)-এর প্রসঙ্গ টেনে কুরআন বলছে: “এখন তোমাদের কাছে তোমাদের মধ্য থেকে একজন রাসূল এসেছেন। তোমাদেরকে যা বিপন্ন করে তা তার জন্যে বেদনাদায়ক, তিনি তোমাদের মঙ্গলকামী, ঈমানদারদের প্রতি তিনি দয়াময় ও করুণাশীল।” (৯:১২৮।
আল কুরআনুল কারীমে সাহাবীদের সাথে রাসূলুল্লাহ (সা)-এর সম্পর্কের রূপ বর্ণনা করে বলা হয়েছে: “আল্লাহর রহমতে আপনি তাদের প্রতি কোমল হৃদয় হয়েছিলেন, আপনি যদি কর্কশ ও কঠোর হৃদয়ের হতেন তাহলে তারা আপনার কাছ থেকে সরে পড়তো।” (৩:১৫৯)
আল কুরআনে মাত্র দুটি ক্ষেত্রে দৃঢ়তা ও কঠোরতার উল্লেখ করা হয়েছে। প্রথমত, যুদ্ধেক্ষেত্রে। যুদ্ধ বিজয় অর্জনের লক্ষ্য দৃঢ়তা ও কঠোরতার অত্যাবশ্যক। এক্ষেত্রে প্রয়োজনে কোমলতা পরিহার করতে হবে অন্তত যুদ্ধ শেষ না হওয়া পর্যন্ত। কুরআন বলছে, “সেসব অবিশ্বাসীর বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাও, তারা তোমাদের মধ্যে কঠোরতা দেখুক।” (৯:১২৩)
দ্বিতীয়ত, শরীয়তের বিধান অনুযায়ী অপরাধীর শাস্তি কার্যকর করার ব্যাপারে। সেক্ষেত্রে আল্লাহর আইন প্রয়োগের বেলায় নমনীয়তার কোনো অবকাশ নেই। কুরআনের ভাষায়: “ব্যভিচারী ও ব্যভিচারিণী তাদের প্রত্যেককে এক শত বেত মারো। আল্লাহর বিধান কার্যকর করতে তাদের প্রতি দয়া যেন তোমাদেরকে প্রভাবাম্বিত না করে, যদি তোমরা আল্লাহ ও কিয়ামতে বিশ্বাসী হও। ” (২৪:২)
কিন্তু দাওয়াতী কাজের ব্যাপারে সহিংসতা ও কঠোরতার কোনো অবকাশ নেই। এই হাদীসে তার প্রমাণ পাওয়া যায়: “আল্লাহ সকল ব্যাপারে দয়া পছন্দ করেন এবং দয়া সবকিছু সুন্দর করে, সহিংসতা সবকিছু ত্রুটিপূর্ণ করে।” এছাড়া আমাদের বুজর্গ পূর্বপুরুষরাও একথা বলেছেন, “যারা ভাল কাজের আদেশ দিতে চায় তারা যেন তা নম্রতার সাথে করে। ” সহিংসতা আল্লাহর পথে দাওয়াতী কাজের উদ্দেশ্যকেই পন্ড করে দেয়। দাওয়াতী কাজের লক্ষ্য হচ্ছে মানুষের হৃদয় কন্দরে আলোর রশ্মিপাত করা, যে আলোর পরশে তার ধ্যান-ধারণা, চিন্তাধারা, আবেগ-আচরণ রূপান্তরিত হয়ে তাকে একটা নতুন সত্তা হিসেবে সৃজন করবে। সে আল্লাহ্ দ্রোহী থেকে পরিণত হবে একজন আল্লাহ ভিরু ব্যক্তিত্বে। দাওয়াতী কাজ একইভাবে সমাজের প্রচলিত বিশ্বাস, ঐতিহ্য ও পদ্ধতির ভিত্তিমূলে নাড়া দিয়ে তাকে নতুনরূপে গড়তে চায়।
এসব মহান উদ্দেশ্য অর্জন করতে হলে প্রজ্ঞা ও সহৃদয়তা অত্যাবশ্যক। তদুপরি প্রয়োজনে মানুষের প্রকৃতির দিকে লক্ষ্য রাখা। মানব প্রকৃতিতে একগুঁয়েমি, পরিবর্তন বিরোধিতা ও তর্কপ্রিয়তা অন্তর্নিহিত। দাওয়াতী কাজের সময় এই প্রকৃতির মোকাবিলা করার একমাত্র হাতিয়ার হচ্ছে নম্র, কোমল ও কৌশলময় আচরণ। এই হাতিয়ার ব্যবহার করেই উদ্দিষ্ট ব্যক্তির হৃদয়ের মণিকোঠায় স্থান করে নিতে হবে।ফলত তার প্রকৃতি যতোই অনমনীয় হোক এক সময় তাকে নমনীয় হতেই হবে। তার অহঙ্কার-অহমিকা অমায়িকতায় রূপান্তরিত হবেই। আলকুরআন আমাদেরকে এই প্রক্রিয়া অবলম্বেনের দিকেই নজর দিতে বলেছে। এছাড়া পূর্ববর্তী নবী-রাসূলগণ ও তাঁদের উম্মতরা একই প্রক্রিয়ায় দাওয়াতী কাজ চালিয়েছেন। হযরত ইবরাহীম (আ) তাঁর পিতা ও জনগণের প্রতি, শুয়াইব(আ) তাঁর জনগোষ্ঠীর প্রতি, হযরত মূসা (আ) ফেরাউনের প্রতি তথা সূরা ইয়াসিনে (৩৬:২০) উল্লিখিত সাধারণ মানুষের প্রতি ঈমানদারদের দাওয়াতী কাজ একই পন্থায় সম্পন্ন হয়েছে। আর সব দাওয়াতী কাজের মূল কথা ছিলো একটি: তোমরা আল্লাহর বন্দেগী কবুল করো। একজন ঈমানদার যখন তার সমগোত্রীয়দের আল্লাহর পথে দাওয়াত দেন তখন তার মধ্যে সমমর্মিতার আকুল আবেগ প্রতিধ্বনিত হয়। ফেরাউনের প্রতি একজন ঈমানদারের দাওয়াতের মধ্যেও সেই ব্যঞ্জনা ফুটে উঠেছে: “হে আমার স্বজাতি! আজ তোমাদেরই কর্তৃত্ব, দেশে তোমরাই প্রবল; কিন্তু আল্লাহর আযাব যখন আমাদের ওপর আপতিত হবে তখন আমাদেরকে কে সাহায্য করবে? (৪০:২৯)
অতঃপর তিনি আল্লাহর বাণীর প্রতি কর্ণপাত না করার পরিণামে অতীতের জাতিসমূহকে কিভাবে আযাব ভোগ করতে হয়েছে তা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন: “হে আমার স্বজাতি! আমি তোমাদের জন্যে পূর্ববর্তী সম্প্রদায়সমূহের শাস্তির দিনের অনুরুপ দুর্দিনের আশঙ্কা করি যেমন ঘটেছিলো নূহ, আদ, সামূদ ও তাদের পূর্ববর্তীদের ক্ষেত্রে। আল্লাহ তাঁর বান্দাদের ওপর কোন অবিচার করতে চান না।” (৪০: ৩০-৩১)
এর পর তিনি কেয়ামত দিবসের ভয়াবহতা সম্পর্কে বর্ণনা দিয়ে বলছেন–
“হে আমার স্বজাতি! আমি তোমাদের জন্যে সেই কিয়ামত দিবসের ভয় করছি যেদিন তোমরা পরস্পরকে ডাকবে (এবং বিলাপ করবে); কিন্তু সেদিন তোমরা পৃষ্ঠপ্রদর্শন করে পালাতে থাকবে। আল্লাহর তরফ থেকে সেদিন তোমাদেরকে কেউ রক্ষা করতে পারবে না। আল্লাহ যাকে বিভ্রান্ত করেন তার জন্যে কোন পথপ্রদর্শক নেই।” (৪০:৩২-৩৩)
এভাবে আমরা দেখি একজন নবী মিনতি সহকারে নম্র ও কোমল ভাষায় দাওয়াত দিয়ে চলেছেন যার মধ্যে হুঁশিয়ারি আছে, আশার প্রেরণাও আছে:
“হে আমার কওম! আমাকে অনুসরণ করো। আমি তোমাদেরকে সঠিক পথে পরিচালিত করবো। ইহকালীন জীবন (অস্থায়ী) উপভোগের বস্তু এবং একমাত্র পরকালীন আবাসই স্থায়ী- এবং হে আমার কওম! কী আশ্চর্য! আমি তোমাদেরকে মুক্তির দিকে আহবান করছি আর তোমরা আমাকে জাহান্নামের দিকে ডাকছ! তোমরা আমাকে বলছ আল্লাহকে অস্বীকার করতে এবং তাঁর সাথে শিরক করতে যার সম্পর্কে আমার কোন জ্ঞান নেই; আর আমি তোমাদেরকে সেই সর্বশক্তিমানের দিকে আহবান করছি যিনি ক্ষমাশীল।” (৪০: ৩৮-৪২)
অতঃপর তিনি উপদেশ বাণী দিয়ে শেষ করছেন: “(এখন) আমি যা বলছি অচিরেই তা তোমরা স্মরণ করবে। আমি (আমার) যাবতীয় বিষয় আল্লাহতে অর্পণ করছি; আল্লাহ তাঁর বান্দাদের উপর সর্বদা দৃষ্টি রাখেন।” (৪০:৪৪)
বস্তুত এই পদ্ধতিই সমকালীন ইসলামী কর্মীদের দাওয়াতী কাজ চালিয়ে যাওয়া উচিত যাতে তারা একগুঁয়ে ও অন্য ধর্মের লোকদের প্রতিকূল প্রকৃতির সাথে মুকাবিলা করতে পারে। ফেরাউনের কাছে প্রেরণের সময় মূসা ও হারুন (আ)-এর প্রতি আল্লাহ যে উপদেশ দিয়েছিলেন তাতেও একই সুর ধ্বনিত : “তোমরা দ’জনেই ফেরাউনের কাছে যাও। কেননা সে সকল সীমা লংঘন করেছে। তোমরা তার সাথে নম্রভাবে কথা বলবে সম্ভবত সে উপদেশ গ্রহণ করবে অথবা ভয় করবে (আল্লাহকে)।” (২০: ৪৩-৪৪)
অতএব হযরত মূসা (আ) ভদ্রভাবে ফেরাউনকে সম্বোধন করে বললেন, “তোমার কি আগ্রহ আছে যে, তুমি পবিত্র হও এবং আমি তোমাকে তোমার প্রভুর পথে পরিচালিত করি যাতে তুমি তাঁকে ভয় করো।” (৭৯: ১৮-১৯)
এই দৃষ্টিতে এতে আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই যে, দাওয়াতী কাজে অভিজ্ঞ লোকেরা ভিন্নমতাদর্শী লোকদের সাথে আলাপ-আলোচনার সময় কোনো কোনো তরুণের অসহিষ্ণু আচরণকে সুনজরে দেখেন না। মানুষকে আল্লাহর পথে ডাকার সময়ে এরা প্রায়ই কর্কশ ও ক্ষিপ্ত আচরণ করে থাকে। ছোট-বড়, মাতা-পিতা, শিক্ষক, অভিজ্ঞ বুযুর্গ প্রমুখের সাথে কথা বলা বা আচরণের ব্যাপারে তাদের মান মর্যাদার দিকেও খেয়াল করা হয় না। মেহনতি মানুষ নিরক্ষর ও বিভ্রান্ত ব্যক্তিদের সাথে সম্পর্ক ও আচরণে তেমন তারতম্য দেখা যায় না। আবার রয়েছে এমন সব ব্যক্তি যারা শুধু বিদ্বেষবশত ইসলামের বিরোধিতা করে জ্ঞানের অভাবে। মোটকথা সকল শ্রেণীর লোককে তাদের নিজস্ব অবস্থানের দিকে লক্ষ্য রেখে সুযোগ ও সুবিধা মতো দাওয়াত দিতে হবে। কিন্তু আমদের সমাজে এখন এরুপ দূরদৃষ্টিসম্পন্ন লোকের বড়ই অভাব। প্রাথমিক যুগের হাদীস বিশেষজ্ঞরা অত্যন্ত পরিষ্কারভাবে এ দিকে ইঙ্গিত করেছেন। যেসব রাবী নিজের রেওয়ায়েত নিয়ে আত্মপ্রচারে নেমে পড়তেন তাদের রেওয়ায়েত মুহাদ্দিসরা গ্রহণ করেননি। বরং তাদেরটাই গ্রহণ করেছেন যারা নিজেদের উদ্ভাবন সম্পর্কে ছিলেন প্রচারভিমুখ। সন্দেহ ও অবিশ্বাসও গোঁড়ামির একটি লক্ষণ। চরমপন্থীরা তাৎকষণিকভাবে একজনকে অভিযুক্ত করে বসে এবং সঙ্গে সঙ্গে রায় দিতেও তারা পারঙ্গম! “দোষ প্রমাণিত না হওয়া পর্যন্ত একজন নির্দোষ”-এ প্রবাদটির তারা থোড়াই পরোয়া করে। তারা সন্দেহ করা মাত্র একজনকে দোষী সাব্যস্ত করে ফেলে, ব্যাখ্যা ছাড়াই উপসংহারে উপনীত হয়। তাদের দৃষ্টিতে কারো সামন্য ত্রুটি যেন মাত্রা ছাড়িয়ে যাওয়ার শামিল! সোজা কথা, ভুলেই পাপ, পাপেই কুফরী! এ ধরণের প্রতিক্রিয়া ইসলামের শিক্ষার চরম লংঘন ছাড়া আর কিছু নয়। অথচ ইসলাম চায় এক মুসলমান আরেক মুসলমানের আয়না হয়ে পরস্পরকে সংশোধন করুক; বিনম্র ও ক্ষমাশীল ব্যবহারের মধ্য দিয়ে অন্যের আচরণ ও জীবন যাত্রায় উৎকর্ষতা আনুক।
কেউ যদি ঐসব চরমপন্থীদের সাতে দ্বিমত পোষণ করে, তবে তার ধর্ম বিশ্বাস ও চরিত্রের সাধুতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়। তার মত ইসলামের দৃষ্টিতে সঠিক হলেও তাকে সীমালংঘনকারী বিদয়াতী, এমনকি রাসূলুল্লাহ (সা)-এর সুন্নাহর অমর্যাদাকারী বলেও চিহ্নিত করা হয়। এপ্রসঙ্গে অনেক নজীর উল্লেখ করা যায়। আপনি যদি বলেন লাঠি বহন করা বা মেঝেয় বসে খাওয়ার সাতে সুন্নাহর কোনো সম্পর্ক নেই তাহলে আপনাকে রাসূলুল্লাহ (সা)-এর অমর্যাদাকারী বলতে বিন্দুমাত্র বিলম্ব হবে না। অভিজ্ঞ মুসলিম মনীষী ও আলিমরাও এ অভিযোগ থেকে রেহাই পান না। কোনো ফকীহ যদি মুসলমানদের সুবিধা হতে পারে এমন কোনো ফতোয়া দেন তবে তার বিরুদ্ধে ধর্মীয় ব্যাপারে শৈথিল্যের অভিযোগ আনা হবে। যদি কোনো মুবাল্লিক যুগোপযোগী পদ্ধতিতে মানুষকে ইসলামের দাওয়াত দেন তবে তাকে পাশ্চাত্য সভ্যতার ভক্ত বলে অপবাদ দেয়া হবে। শুধু জীবিত নয়, মৃত ব্যক্তিরাও অভিযোগের হাত থেকে রেহাই পান না। অর্থাৎ চরমপন্থীদের সাথে দ্বিমত পোষণ করলেই আর রক্ষা নেই। নির্বিচারে তাকে ফ্রিম্যাসন, জাহমী অথবা মুতাযিলী বলে কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হবে। এখানেই শেষ নয়, ইসলামের চার মহান ফকীহর বিরুদ্ধেও চরমপন্থীরা নির্দ্বিধায় বিষেদগার করতে কসুর করেনি।
প্রকৃতপক্ষে হিজরী চতুর্থ শতকের মুসলিম উম্মাহর সমগ্র ইতিহাসকে আক্রমনের লক্ষ্য বস্তু করা হয়। অথচ এ কালটা নজীরবিহীন সভ্যতা ও গৌরভময় অবদানের জন্যে অবিস্মরণীয়। চরমপন্থীরা এই যুগটাকে সমসাময়িক সকল অশুভ কর্মকান্ডের উৎসস্থল বলে মনে করে। কেউ কেউ এটাকে ব্যক্তিগত ক্ষমতা দ্বন্ধ সংঘাতের যুগ বলে বিশ্বাস করে। আবার কেউ বলে এটা অজ্ঞাত ও কুফরীর যুগ। এই ধ্বংসাত্মক প্রবনতা নতুন কিছু নয়। রাসূলুল্লাহ (সা)-এর যামানায়ও চরমপন্থীদের অস্তিত্ব ছিল। একদা জনৈক চরমপন্থী আনসার গনিমতের মাল বণ্টনে রাসূলল্লাহ (সা)-এর বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ এনেছিলো। আধুনিক চরমপন্থীদের মারত্মক দোষ হলো সংশয়। তারা যদি কুরআন ও সুন্নাহকে সঠিকভাবে হৃদয়ঙ্গম করতো তাহলে দেখতো যে, মুসলমানদের অন্তরে পারস্পারিক বিশ্বাস ও আস্থা সৃষ্টি করাই ইসলামের লক্ষ্যে। কোনো মুসলামানের উচিত নয় আরেক মুসলমানের গুণগুলো উপেক্ষা করে তার ছোট-খাট ত্রুটিগুলো বড় করে দেখা। কুরআন বলছে: “অতএব, আত্মপ্রশংসা করো না। তিনিই সবচেয়ে ভাল জানেন কে পরহেযগার।” (৫৩:৩২)
বস্তুত ইসলাম দুটি বিষয়ে মানুষকে কঠোরভাবে হুঁশিয়ার করে দিয়েছে: আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হওয়া এবং অপরকে সন্দেহ করা। আল্লাহ তায়ালা বলেন, “হে ঈমানদারগণ! বহুবিধ অনুমান থেকে দূরে থাকো, কারণ অনুমান কোনো কোনো ক্ষেত্রে পাপ।” (৪৯:১২)
রাসূলূল্লাহ (সা) এ প্রসঙ্গে বলেন, “সংশয় থেকে দূরে থাকো, কেননা সংশয় হচ্ছে কোনো কথাবার্তার মিথ্যা দিক।” (সকল প্রমাণ্য সূত্রে সমর্থিত)
ঔদ্ধত্য, অন্যকে ঠকানোর মনোবৃত্তি ও ঘৃণা থেকেই সংশয়ের উৎপত্তি। এগুলো হচেছ অবাধ্য আচরণের প্রথম ভিত্তি আর অবাধ্যতা হচ্ছে শয়তানী কাজ। শয়তান এই দাবী করেছিলো, “আমি তাঁর (আদমের) চেয়ে ভাল।” (৩৮:৭৬)
আর এজন্য সে হযরত আদম (আ) কে সিজদা করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিলো। এ ধরণের অহঙ্কারের পরিণতি সম্পর্কে হুঁশিয়ারী পাওয়া যায় এই হাদীসে:“তুমি যদি শোন যে, কেউ বলছে মানুষ ধ্বংস হয়ে গেছে তাহলে বৃথা দম্ভের জন্যে সে নিজেই ধ্বংসপ্রাপ্ত হবে।” (মুসলিম)
আরেকটি রেওয়াতে আছে : “….. সে নিজেই তাদের ধ্বংসের কারণ।” অর্থাৎ তাঁর সন্দেহ ও অহঙ্কার এবং আল্লাহর রহমত থেকে তাদেরকে নিরাশ করানোই (ধ্বংসের কারন) এমন একটি প্রবণতা যা অবয়ের সূচনা করে এবং মুসলিম মনীষীরা একে “মনের রোগ” বলে চিহ্নিত করেছেন। রাসূলুল্লাহ(সা) ও এ ব্যাপারে আমাদেরকে সতর্ক করে দিয়েছেন, “তিনটি মারাত্মক পাপ আছে- অতিরিক্ত লোভ, কামনা ও অহঙ্কার।” মুসলমান তার কোনো কাজেই অহঙ্কার করতে পারে না। কেননা সে তো এ ব্যাপারে কখনোই নিশ্চিত হতে পারে না যে, আল্লাহ তার আমল মঞ্জুর করবেন। আল্লাহ দাতা ব্যক্তিদের সম্পর্কে আলকুরআনে বলেছেন: “এসব লোক ভীতিপূর্ণ হৃদয়ে দান-খয়রাত করে। কারণ তারা তাদের প্রভুর কাছে ফিরে যাবে।” (২৩:৬০)
হাদীস শাস্ত্রে কুরআনের এই আয়াতের ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে বলা হয়েছে যে এরা হচ্ছে সেই সব সৎকর্মশীল লোক যারা এই ভয়ে সন্ত্রস্ত থাকে যে, তাদের আমল আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য নাও হতে পারে। ইবনে আতা বলেন: “আল্লাহ তোমার জন্যে আনুগত্যের দুয়ার খুলে দিতে পারেন। কিন্তু গ্রহনযোগ্যতার দ্বার নাও খুলতে পারেন। তিনি তোমাকে অবাধ্য হওয়ার পরিস্থিতির মধ্যে ফেলতে পারেন (যাতে তুমি অনুতপ্ত হয়ে) আবার সঠিক পথে ফিরে আসতে পারো। অবাধ্যতার ফলশ্রুতিতে যে বিনয়াবনত চিত্তের উন্মেষ হয় তা অহংকার ও উদ্ধতপূর্ণ সাধুতার চেয়েও উত্তম।” হযরত আলী ইবনে আবু তালিবের (রা) বাণীতে আমরা বর্ণনার প্রতিধ্বনি পাই : “ যে ভাল কাজ মানুষের মনে অহংকার আনে তার চেয়ে আল্লাহ তার উপর মুসিবতকেই পছন্দ করেন।” ইবনে মাসুদ বলেন, “ধ্বংসের দু’টি প্রধান লক্ষণ হচ্ছে অহঙ্কার ও নৈরাশ্য। অধ্যবসায় ও সংগ্রাম ছাড়া সুখ অর্জন করা যায় না। একজন অহংকারি ব্যক্তি অধ্যবসায়ী হতে পারে না। কারণ সে নিজেকে পূর্ণতাপ্রাপ্ত বলে মনে করে। আর হতাশ ব্যক্তি কোনো চেষ্টাই চালায় ন। কারণ এটাকে সে অর্থহীন মনে করে।”
আবার আসুন দেখা যাক চরমপন্থার চরম রূপ কী। চরমপন্থী গ্রুপ অন্য সকল মানুষের শান্তি ও নিরাপত্তার অধিকারী অস্বীকার করে। অতএব প্রতিপক্ষকে হত্যা এবং তার বিষয় সম্পত্তি ধ্বংস করার পন্থা বেছে নেয়। এই অবস্থা তখন সৃষ্টি হয় যখন চরমপন্থী গ্র“প তাদের বাইরে অন্য সকলকে কাফির বলে ভাবতে শুরু করে। এ ধরনের চরমপন্থার ফলে বাকী সমস্ত উম্মাহর সাথে তাদের সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে যায়। প্রাথমিক যুগে খারিজীরা ঠিক এমনিফাঁদে পড়েছিলো। অথচ তারা নামায, রোযা ও কুরআন তিলাওয়াতের মতো ধর্মীয় রীতিনীতি পালনে অত্যন্ত নিষ্ঠাবান ছিলো। কিন্তু তাদের চিন্তাধারা ছিলো বিকৃত। তাদের বিশ্বাস ও আচরণে প্রচন্ড গোঁড়ামীর দুরুন অনিচ্ছা সত্ত্বেও সহজ সরল পথ থেকে বিচ্যুত হয়েছিলো। রাসূলুল্লাহ (সা) এদের সম্পর্কে আভাস দিয়েছিলেন এভাবে: “তাদের (আলখাওয়ারিজ) নামায, কিয়াম ও তিলাওয়াতের তুলনায় তোমাদের মধ্যে কারো নামায, কিয়াম ও তিলাওয়াত অনুল্লেখযোগ্য মনে হবে।” তথাপি তিনি তাদের সম্পর্কে বলেন, “তারা কুরআন তিলাওয়াত করবে। কিন্তু গলার বাইরে যাবে না এবং কোনো রকম স্বাক্ষর ছাড়াই তারা ধর্মের পথ অতিক্রম করবে।” (মসলিম)
রাসূলুল্লাহ (সা) আরো বলেন, “তারা মুসলমানদেরকে খতম করা এবং মুশরিকদের রক্ষা করা তাদের কর্তব্য বলে মনে করবে।” (মসলিম)
এ কারণে কোনো মুসলমান খারিজীদের হাতে পড়লে নিজেকে আল্লাহর বাণী ও কিতাব সম্পর্কে জানতে আগ্রহী মুশরিক বরে পরিচয় দিতো। একথা শুনে খারিজীরা তাকে প্রাণে বাঁচাতো এবং নিরাপদে গন্তব্য স্থানে পৌঁছার ব্যবস্থা করে দিতো। তাদের কার্যকলাপের সমর্থনে তারা কুরআনের এই আয়াতকে প্রমাণ হিসেবে দাখিল করতো: “কোনো মুশরিক আশ্রয় চাইলে তাকে আশ্রয় দাও, যাতে সে আল্লাহর বাণী শুনতে পায়, তারপর তাকে তার নিরাপদ স্থানে পৌঁছে দাও। কারণ তারা জ্ঞান রাখে না।” (৯:৬)
পরিতাপের বিষয় এই যে, আটক লোকটি যদি স্বীকার করতো যে, সে মুসলমান তবে তাকে খারিজীরা হত্যা করতো। দুর্ভাগ্যজনক যে, কোনো কোনো মুসলমান এসব ঘটনা থেকে শিক্ষা নেননি। জামায়াত আত-তাকফির আল-হিজরা মনে হয় খারিজীদের পদচিহ্ন ধরেই এগোচ্ছে। যারা পাপ করে সঙ্গে সঙ্গে তওবা করে না তাদেরকে এই জামায়াত কাফির বলে মনে করে। যেসব শাসক শাসন কাজে শরীয়ত প্রয়োগ করেন না এবং যেসব শাসিত এদের আনুগত্য করে উভয়েই এদের চোখে ধিক্কৃত। আর যেসব আলিম উভয় পক্ষকে কাফির বলে নিন্দা করেন না তারাও ধিক্কৃত। যারা এই গ্রুপের কর্মসূচী প্রত্যাখ্যান করে কিংবা চার ইমামের অনুসরণ করে তাদেরকেও এরা কাফির বলে মনে করে। কেউ যদি তাদের দলে গিয়ে কোনো কারণে দল ত্যাগ করে তবে তাকে মুরতাদ বলে অবশ্যই হত্যা করা হবে। তারা ৪র্থ শতাব্দীর পরবর্তী যুগকে অজ্ঞতা ও কুফরীর যুগ বলে অভিহিত করে। এভাবে এই গ্রুপ কুফরীর অপবাদ দিতে এতোই পারঙ্গম যে, এদের হাত থেকে জীবিত মৃত কেউই রেহাই পায় না। বস্তুত এভাবে এই গ্রুপ গভীর পানিতে পড়েছে। কেননা কাউকে কুফরীর অপবাদ দেয়ার পরিণতি মারাত্মক। তার জীবন ও সম্পত্তির বাজেয়াপ্তি তখন আইনসিদ্ধ হয়ে যায়। তার সন্তান ও স্ত্রীর ওপর অধিকার থাকবে না; সে উত্তরাধিকার থেকে বঞ্চিত হবে, কেউ তার উত্তরাধিকারীও হতে পারবে না; তার দাফন ও জানাযা নিয়েও সমস্যা সৃষ্টি হবে। কেননা তাকে মুসলমানদের গোরস্তানে জায়গা দেয়া যায় না ইত্যাদি ইত্যাদি!
রাসূলুল্লাহ(সা) বলেছেন, “যখন কোনো মুসলমান আরেক মুসলমানকে কাফির বলে তখন তাদের মধ্যে নিশ্চয় একজন তাই।” (বুখারী)
এর অর্থ, কুফরীর অভিযোগ প্রমাণিত না হলে যে অভিযোগ আনবে তার ওপরেই ঐ অভিযোগ বর্তাবে, যার মানে হচ্ছে ঐ ব্যক্তি দুনিয়া ও আখিরাতে কঠিন মুসিবতের সম্মুখীন হবে। উসামা বিন জায়িদ বলেন: “যদি কোনো ব্যক্তি বলে, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি আল্লাহ ছাড়া কোনো উপাস্য নেই, তাহলে ইসলামের মধ্যে দাখিল হলো এবং (ফলত) তার জীবন ও সম্পত্তির নিরাপত্তা পেয়ে গেলো। কিন্তু যদি সে ভয়ে কিংবা তলোয়ারের মুখে একথা বলে তবে তার জওয়াবদিহি আল্লাহÍ কাছেই তাকে করতে হবে। কেবল দৃশ্যমান ঘটনারই আমরা (বিচার) করতে পারি।” (বুখারী)
হযরত উসামা (রা) এক যুদ্ধে এক ব্যক্তি কলেমায়ে শাহদাত উচ্চারণ করার পরেও তাকে হত্যা করেছিলেন। ঐ ব্যক্তির গোত্র যুদ্ধে পরাজিত হয়েছিলো। রাসূলুল্লাহ (সা) এ কথা জানতে পেরে উসামার (রা) কাছে কৈফিয়ত তলব করেন। তখন তিনি বলেন, “আমি মনে করেছিলাম ঐ ব্যক্তি হয়তো আশ্রয়ের আশায় এবং ভীত হয়ে কলেমা পাঠ করেছে। ” রাসূলুল্লাহ (সা) জিজ্ঞেস করলেন, “আল্লাহ ছাড়া কোনো উপাস্য নেই-এই স্বীকারোক্তির পরেই কি তুমি তাকে হত্যা করেছিলে? উসামা (রা) বর্ণনা করেন, “রাসূলুল্লাহ (সা) বার বার আমাকে এই প্রশ্ন করতে লাগলেন যতোক্ষণ না আমার মনে হলো এই দিনটির আগে আমি ইসলাম গ্রহণই করিনি।”
শরীয়ত আমাদেরকে এই শিক্ষা দেয় যে, যারা সচেতনভাবে ও স্বেচ্ছায় ইসলাম গ্রহণ করেছে, সাক্ষ্য ও ঘটনাবলী দ্বারা সুপ্রমাণিত না হওয়া পর্যন্ত তাদেরকে ইসলাম থেকে বহিস্কৃত করা যাবে না। খুন, ব্যভিচার, মদ্যপান ইত্যাদির মতো কবীরা গুনাহ করলেই কারো বিরুদ্ধে কুফরীর অভিযোগ আনা যাবে না-অবশ্য এতটুকু দেখতে হবে যে, সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির শরীয়তের প্রতি অস্বীকৃতি বা অশ্রদ্ধা আছে কিনা। এ কারণে ঠান্ডা মাথায় হত্যাকারী ও নিহত ব্যক্তির আত্মীয় ব্যক্তির আত্মীয়-স্বজনের মধ্যেও কুরআন ভ্রাতৃপ্রতিম সম্পর্ক স্থাপন করতে চায়। কুরআন বলছে: “তবে তারা ভাইয়ের তরফ থেকে কাউকে কিছু মাফ করে দেয়া হলে প্রচলিত নিয়মের অনুসরণ করবে এবং সততার সাথে তাকে তা প্রদান করতে হবে।” (২:১৭৮) যারা একজন মদ্যপায়ীকে অভিশাপ দিয়েছিলো তাদের উদ্দেশ্যে রাসূলুল্লাহ (সা) বললেন: “তাকে অভিশাপ দিও না। সে আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (সা) কে ভালবাসে।” (বুখারী)
ঐ মদ্যপায়ী ইতিপূর্বে কয়েকবার মদ্যপানের অভিযোগে শাস্তি ভোগ করেছিলো। উপরন্তু খুন, ব্যভিচার ও মদ্যপানের মতো অপরাধের জন্যে শরীয়ত ভিন্ন ভিন্ন রকম শাস্তির বিধান করেছে। এগুলো যদি কুফরই হতো তবে তো তাদেরকে রিদ্দার (ইসলাম ত্যাগের) বিধি মুতাবিক দন্ড দেয়া হতো!
চরমপন্থীরা যেসব দুর্বোধ্য বায়বীয় প্রমাণের ভিত্তিতে অভিযোগ খাড়া করে, কুরআন ও সুন্নাহর মৌলিক ও দ্ব্যর্থহীন ভাষ্যে তা খন্ডন করা হয়েছে। এই বিষয়টি বহু শতাব্দী পূর্ব থেকে একটি মীমাংসিত বিষয়, অতএব এর পুনরুজ্জীবন প্রচেষ্টা নিরর্থক।
পরিভাষা সঙ্কেত
ইজমা : ইসলামী আইনের সূত্র হিসেবে সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত।
আত-তাবিঈ : রাসূলুল্লাহ (সা)-এর সাহাবীদের সান্নিধ্য লাভকারী।
হিজাব : নারীর ইসলামী পোষাক।
আওরাহ : নারী-পুরুষের দেহের সেই অংশ বা শরীয়ত মতে অবশ্যই আবৃত রাখতে হবে।
ফাসাকা : পাপের কাজ।
আল-মুন্দুব : যে আইন ও কাজ অনুমোদিত।
কিয়াস : ইসলামী আইনের উৎস, কুরআন ও হাদীসের আলোকে যুক্তিপূর্ণ সিদ্ধান্ত।
রিদ্দাহ : (বিশেষণ, মুরতাদ) আল্লাহর আনুগত্য এবং ইসলামী রাষ্ট্রের নাগরিত্ব শপথপূর্বক প্রত্যাহর।