৩
তাবলীগ কেন?
নবীরসূলের প্রয়োজনীয়তা
আল্লাহ তায়ালা মানুষের প্রকৃতির মধ্যে ভাল এবং মন্দকে চেনার যোগ্যতা এবং ভালকে গ্রহন করার ও মন্দ থেকে বেঁচে থাকার আকাংখা পদার্পন করেছে। সে নিজের অনুধাবন ক্ষমতার মাধ্যমে ভালকে গ্রহণ এবং মন্দকে পরিহার করে আল্লাহ তায়ালার কাছে পুরুষ্কার পাবার যোগ্য হতে পারে। অপর দিকে নিজের স্বভাবের বিরুদ্ধে কল্যাণের পরিবর্তে খারাপ পথ অবলম্বন করে স্রষ্টা পক্ষ থেকে শাস্তির যোগৎ্য হয়ে যেতে পারে। কিন্তু একদিকে যেমন তার স্বভাবে সৌন্দর্য ও পূর্ণতার দিক রয়েছে, অপর পক্ষে তার মধ্যে ত্রুটি ও অপূর্ণতাও রয়েছে। এ কারণে আল্লাহ তায়ালা দুনিয়াতেও তার হেদায়াত ও গোমরাহীর ব্যাপারটি এককভাবে তার স্বভাব প্রকৃতির হাতে ছেড়ে দেননি এবং আখেরাতেও তাকে শাস্তি অথবা পুরস্কার দেয়ার ব্যাপারে কেবল স্বভাবগত পথনির্দেশকে যথেষ্ট মনে করেননি। বরং ফিতরাতের দাবী সমূহ এবং তার লুকায়িত যোগ্যতাকে উদ্ভাসিত করার জন্য এবং সৃষ্টির সামনে নিজের চুড়ান্ত প্রমাণ পেশ করার জন্য তিনি নবী রসূলদের পাঠিয়েছেন। যাতে লোকেরা কিয়ামতের দিন এই অভিযোগ উত্থাপন করতে না পারে যে, ভাল মন্দের রাস্তা তাদের জানা ছিলনা। এজন্য তারা গোমরাহীর পংকে নিমজ্জিত হয়েছে। এই সত্যকে কুরআন মজীদের নিম্নোক্ত আয়াতে তুলে ধরা হয়েছে।
رُسُلًا مُبَشِّرِينَ وَمُنْذِرِينَ لِئَلَّا يَكُونَ لِلنَّاسِ عَلَى اللَّهِ حُجَّةٌ بَعْدَ الرُّسُلِ وَكَانَ اللَّهُ عَزِيزًا حَكِيمً
“আমরা রসূলদের পাঠিয়েছি সুসংবাদ দানকারী ও সতর্ককারী হিসেবে। যেন রসূলদের আসার পর লোকদের জন্য আল্লাহর কাছে ওজর পেশ করার আর কোন সুযোগ না থাকে। আল্লাহ সর্বশক্তিমান এবং সর্বজয়ী।”
(সূরা নিসাঃ ১৬৫)
يَا أَهْلَ الْكِتَابِ قَدْ جَاءَكُمْ رَسُولُنَا يُبَيِّنُ لَكُمْ عَلَى فَتْرَةٍ مِنَ الرُّسُلِ أَنْ تَقُولُوا مَا جَاءَنَا مِنْ بَشِيرٍ وَلَا نَذِيرٍ فَقَدْ جَاءَكُمْ بَشِيرٌ وَنَذِيرٌ وَاللَّهُ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ
“হে কিতাবধারীগণ! আমাদের এই রসূল এমন এক সময় তোমাদের কাছে এসেছে ও দীনের সুস্পষ্ট শিক্ষা তোমারেদ সামনে পেশ করছে- যখন রসূল আগমনের ক্রমিক ধারা দীর্ঘ দিনের জন্য বন্ধ ছিল। যেন তোমরা বলতে না পার যে, আমাদের কাছে কোন সুসংবাদদাতা ও ভয় প্রদর্শনকারী আসেনি। অতএব, এই সুসংবাদদাতা ও ভয় প্রদর্শনকারী এসেছে। আর আল্লাহ প্রতিটি জিনিসের ওপরেই শক্তিশালী।”- (সূরা মায়েদাঃ ১৯)
নবীদের ব্যাপারে আল্লাহর বিধান
এ উদ্দেশ্যে আল্লাহ তায়ালা প্রত্যেক জাতির মধ্যে নবী-রসূল পাঠিয়েছেন যেন লোকদের সামনে সত্য পূর্ণরূপে উদ্ভাসিত হয়ে উঠে এবং বক্রতা ও গোমরাহির পথে অবিচল থাকার মত কোন ওজর তাদের কাছে অবশিষট না থাকে।নবীদের ব্যাপারে আল্লাহর বিধান এই ছিল যে, কোন ব্যতিক্রম ছাড়াই তারা সবাই মানব-জাতির মধ্য থেকে এসেছেন, ফেরেশতা অথবা জিনদের মধ্য থেকে আসেননি। মানুষের কাছে যাতে মানব-স্বভাবের দাবীসমূহ মানুষের মাধ্যমেই পরিষ্কার করে তুলে ধরা যায়- সেজন্যই তাদের মধ্য থেকে নবী-রসূল পাঠানো হয়েছে। মানুষ যেন একথা বলার সুযোগ না পায় যে, মানুষের জন্য অ-মানবের (অন্য সৃষ্টিজীবের) জ্ঞান ও কর্ম কি করে আদর্শ হতে পারে? এজন্য আল্লাহ তায়ালা প্রত্যেক জাতির কাছে তাদের মধ্য থেকে নবী-রসূল পাঠিয়েছেন, যাতে জাতিগত অপরিচিত লোকদের জন্য সত্যকে গ্রহণ করার ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়াতে না পারে। আল্লাহর নবীগণ নিজ নিজ জাতির কাছে তাদের ভাষায়ই আল্লাহর দ্বীনের দাওয়াত দিয়েছেন, যাতে তাদের সামনে পরিষ্কার ভাব সত্য উপস্থাপিত হতে পারে। তাঁদের ভাষাও ছিল অত্যন্ত পরিচ্ছন্ন, বোধগম্য এবং চিত্তাকর্ষক। তাছাড়া রসূলগণ কেবল একবার তাদেরকে সত্যের দিকে আহ্বান করে থেমে যাননি, বরং গোটা জীবনটাই এই উদ্দেশ্যে ব্যয় করেছেন। তাঁরা যে কাজ করার জন্য লোকদের আহ্বান জানিয়েছেন, নিজেরাও তা করে দেখিয়েছেন এবং তাঁদের সাথীরাও নিজেদের কর্মময় জীবচনে তার অনুশীলন করেছেন। এই ব্যবস্থা কেবল এজন্য করা হয়েছে যে, স্রষ্টার সন্তুষ্টি অর্জন এবং দুনিয়াতে জীবন যাপনের জন্য সৃষ্টির যা কিছু জানা দরকার, তা বলে দেয়ার ক্ষেত্রে যেন কোনরূপ ত্রুটি ও অপূর্ণতা না থাকতে পারে এবং কিয়ামতের দিন লোকেরা নিজেদের দুষ্কর্মের অপবাদ আল্লাহর ওপর চাপাতে না পারে।
সর্বশেষ নবীর আগমন
দুনিয়া যতক্ষণ সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক জীবনের এমন সব উপায় উপকরণ সৃষ্টি করতে পারেনি- যা গোটা দুনিয়াকে একজন মাত্র আহ্বানকারীর আহ্বানে সাড়া দেয়ার জন্য একত্র করতে পারে ততক্ষণ পর্যন্ত আল্লাহ তায়ালা প্রতিটি জাতির জাছে স্বতন্ত্রভাবে নবী-রসূল পাঠানো অব্যাহত রেখেছেন। কিন্তু যখন নবীদের শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে জাতি সমূহের নৈতিক এবং সামাজিক চেতনা ও অনুভূতি এতটা সজাগ হয়ে গেল যে, তারা এখন একটি বিশ্বব্যাপক জীবন-ব্যবস্থার অধীন জীবন যাপন করতে পারবে এবং সাথে সাথে সমাজ-সাংস্কৃতির বস্তুগত উপায়-উপকরণেরও এতটা উন্নতি হল যে, একজন মাত্র পথপ্রদর্শকের আহ্বান অতি সহজেই গোটা দুনিয়ায় পৌঁছে যেতে পারে- তখন আল্লাহ তায়ালা নিজ অনুগ্রহে সর্বশেষ নবী মুহাম্মাদুর রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে দুনিয়ায় পাঠালেন। তাঁর মাধ্যমে তিনি দুনিয়ার মানুষকে একটি পরিপূর্ণ জীবন বিধান দান করলেন। এই জীবন বিধান গোত্র বর্ণ নির্বিশেষে গোটা মানব জাতির মেজাজ প্রকৃতি এবং তাদের অবস্থা, পরিবেশ ও প্রয়োজনের সাথে সম্পূর্ণ সংগতিপূর্ণ। এটাই হল খোদায়ী জীবন-বিধান, যাকে আমরা “ইসলাম” নামে জানতে পেরেছি।
ইসলাম তার প্রাণসত্তার দিক থেকে সেই দ্বীন যা নিয়ে সমস্ত নবীদের আগমন ঘটেছে। শুধু কিছু কিছু ব্যাপারে সামান্য পার্থক্য ছিল। প্রথম দিককার নবীগণ নিজ নিজ জাতির ধারণ-ক্ষমতা অনুযায়ী আকীদা বিশ্বাসের তালীম দিয়েছেন। খাতামুল আম্বিয়া সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মানব জাতির অনুধাবন ক্ষতা-যা আল্লাহ তাদের দান করেছেন তদনুযায়ী তাদের আকীদা বিশ্বাসের শিক্ষা দিয়েছেন। অপরাপর নবীগণ আইন কানুন শিক্ষা দেয়ার ক্ষেত্রে নিজ নিজ জাতির বিশেষ মেজাজ এবং বিশেষ বিশেষ রোগের দিকে লক্ষ্য রেখেছেন। কিন্তু ইসলারেম আইন বিধান কোন বিশেষ জাতিগত বা সামাজিক মেজাজ ও ঝোঁক প্রবণতাকে বিবেচনা করার পরিবর্তে শুধু মানব জাতির মেজাজকে বিবেচনা করা হয়েছে। অন্য নবীদের যে জীবন ব্যবস্থা আল্লাহর পক্ষ থেকে দান করা হয়েছিল তা কেবল নিজ নিজ জাতির প্রয়োজন অনুপাত ছিল। কিন্তু নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মাধ্যমে দুনিয়ার মানুষ যে জীবন ব্যবস্থা লাভ করেছে, তা কেবল কোন বিশেষ জাতির প্রয়োজনই পূর্ণ করেনা, বরং গোটা মানব জাতির সমস্ত ব্যক্তিগত এবং সামগ্রিক প্রয়োজন সমূহও পূরণকরে।
রসূলুল্লাহর আগমনের দুটি দিক
নবী সাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ওপর গোটা বিশ্বের হেদায়াত ও পথ প্রদর্শন এবং গোটা সৃষ্টির সামনে চুড়ান্ত প্রমাণ পেশ করার দায়িত্ব অর্পণ করা হয়েছে। তাঁর পরে আর কোন নবী আসার প্রয়োজন নেই। এজন্য আল্লাহ তায়ালা তাঁকে দুটি নবুওয়াতের দায়িত্ব দিয়ে পাঠিয়েছেন। একটি বিশেষ ভাবে প্রেরণ, অপরটি সাধারণভাবে প্রেরণ। তাঁকে বিশেষভাবে আরববাসীদের মধ্যে পাঠানো হয়েছে। আরবদের সাথে এই বিশেষ সম্পর্কের কারণে তাঁকে উম্মী নবী অথবা রসূলে আরাবী বলা হয় এবং তাঁর ওপর যে অহী নাযিল হয় তার ভাষাও আরবী। এই দৃষ্টিকোন থেকে তাঁর যে দায়িত্ব (তাবলীগ ও হুজ্জাত পূর্ণ করণ) ছিল তা তিনি সরাসরি পালন করছেন।
তাঁকে সাধারণভাবে গোটা দুনিয়ার মানুষের কাছে পাঠানো হয়েছ। এই প্রেরণের দায়িত্ব আঞ্জাম দেয়ার জন্য আল্লাহ তায়ালা তাঁকে একটি উম্মাত দান করেছেন এবং উম্মাতকে নির্দেশ দিয়েছেন যে, রসূল তোমাদের কাছে যে দীনে হকের প্রচার করছেন- তোমরা সেই দীনের প্রচার অন্যদের কাছে করতে থাকবো। মহান আল্লাহ বলেনঃ
وَكَذَلِكَ جَعَلْنَاكُمْ أُمَّةً وَسَطًا لِتَكُونُوا شُهَدَاءَ عَلَى النَّاسِ وَيَكُونَ الرَّسُولُ عَلَيْكُمْ شَهِيدًا
“আর এভাবেই আমরা তোমাদের এক মধ্যপন্থী উম্মাত বানিয়েছি যাতে তোমরা দুনিয়ার লোকদের জন্য সাক্ষী হতে পার, আর রসূল সাক্ষ্য হবে তোমাদের ওপর।” –(সূরা বাকারা ১৪৩)
وَأُوحِيَ إِلَيَّ هَذَا الْقُرْآنُ لِأُنْذِرَكُمْ بِهِ
“আর এই কুরআন অহীর মাধ্যমে আমার কাছে পাঠানো হয়েছে; যেন আমি তোমাদেরকে এবং আর যাদের কাছে তা পেীঁছুবে-তাদের সবাইকে সতর্ক করে দিতে পারি। -(সূরা আনআমঃ১৯)
দ্বীনের হেফাজতের জন্য দু্টি বিশেষ ব্যবস্থা
রসূলুল্লাহু সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাধারণ প্র্রেরণের উদ্দেশ্য পূর্ণ করার জন্য আল্লাহ তায়ালা একটি পূর্ণাংগ উম্মাতের আবির্ভাব ঘটিয়েছেন। তাদের দায়িত্ব হচ্ছে, প্রতিটি দেশ, প্রতিটি জাতি এবং দুনিয়া যাতে ভিন্ন ভিন্ন ভাষায় নাযিল হওয়ার প্রয়োজনীয়তা থেকে চিরকালের জন্য মুখাপেক্ষীহীন হয়ে যায়। যেহেতু তাঁর পরে আর কোন নবীর আগমন ঘটবেনা। তাই সৃষ্টি কুলের পথপ্রদর্শন এবং দ্বীনে হকের প্রমান চুড়ান্ত করার দায়িত্ব সম্পূর্ণরূপে এবং চিরকালের জন্য তাঁর উম্মাতের ওপর অর্পণ করা হয়েছে। এজন্য আল্লাহ তায়ালা দীনের হেফাজতের জন্য দুটি বিশেষ ব্যবস্থাকরেছেন।
একঃ কুরআন মজীদকে তিনি যে কোন ধরণের পরিবর্তন পরিবর্ধন, তাহরীফ এবং সংশোধন ও সংকোচন থেকে সম্পূর্ণ সুরক্ষিত রেখেছেন, যাতে আল্লাহর বিধান জানার জন্য দুনিয়ার মানুষ কোন নতুন নবীর প্রয়োজনীয়তা অনুভব না করে।
দুইঃ তিনি এই উম্মাতের একটি দলকে সব সময়ের জন্য হকের ওপর প্রতিষ্ঠিত করে রেখেছেন। একথা সহীহ হাদীস থেকেও প্রমাণিত। ফলে যেসব লোক সত্যের সন্ধানী হবে তাদের জন্য এদের জ্ঞান ও কর্ম আলোক-বর্তীকার কাজ দিতে থাকবে।
এ ধরণের একাটি জামাআত (তাদের সংখ্যা যত নগন্যই হোক না কেন) এই উম্মাতের মধ্যে অবশিষ্ট থাকবে। যত বিপর্যয়ই আসুক না কেন, এই পূন্যবান জামাআত’ রসূলুল্লাহ (সা) এবং তাঁর সাহাবীদের জ্ঞান ও কর্মকে জীবন্ত রাখবে। গোমরাহীর প্রভাব যখন এই উম্মাতের শিরাউপশিরায় এমন ভাবে প্রবাহিত হবে যেভাবে পাগলা কুকুরের বিষ আহত ব্যক্তির দেহে ছড়িয়ে পড়ে সে সময়ও আল্লাহ তায়ালা এই উম্মাতের একটি অংশকে গোমরাহী থেকে নিরাপদ রাখবেন। যখন দুনিয়ার মানুষের স্বভাব এতটা বিকৃত হয়ে যাবে যে, ন্যায় নিষ্ঠা অন্যায় হিসেবে গণ্য হবে এবং অন্যায়-অশ্লীলতা ন্যায় নিষ্ঠা ও ভদ্রতা হিসাবে পরিগণিত হবে; বিদআত পন্থীদের শক্তি এতটা বৃদ্ধি পাবে যে, ন্যায়ের দিকে আহ্বানকারীগণের অবস্থা দুনিয়াতে অপরিচিতজনের মত হয়ে যাবে- সে সময়ও এই লোকেরা সৃষ্টিকুলকে সত্য দীনের দিকে আহ্বান জানাতে থাকবে এবং প্রতি পদে পদে বিরোধিতার সম্মুখীন হয়েও মানুষের সৃষ্ট বিকৃতির সংশোধন করার চেষ্টা করতে থাকবে।
প্রতিটি যুগে এ ধরণের একটি আমাআতকে সক্রিয় রাখার পেছনে আল্লাহ তায়ালার উদ্দেশ্য হচ্ছে এই যে, তিনি অহীর জ্ঞানকে যেভাবে কুরআনের আকারে কিয়ামত পর্যন্ত সময়ের জন্য সুরক্ষিত করে দিয়েছেন, অনুরূপভাবে আল্লাহর রসূল এবং রসূলের সাহাবীদের জ্ঞান ও কর্ম এই জামাআতের মাধ্যমে যেন চিরকালের জন্য সংরক্ষিত থাকতে পারে এবং সৃষ্টির পথ প্রদর্শন ও রসূলের প্রমাণ (হুজ্জাত) চূড়ান্ত করার জন্য যে আলোর প্রয়োজন তা যেন কখনো নির্বাপিত হয়ে না যেতে পারে। হযরত ঈসা আলাইহিস সালামের ভাষায়-এই লোকেরা হবে পাহাড়ের প্রদীপ। এর সাহায্যে পথহারা ব্যক্তি পথ খুজে পাবে। এরা হবে জমীনের লবন যার সাহায্যে কোন জিনিস লবণাক্তকরা যেতে পারে।
রিসালাতের দায়িত্ব হিসেবে তাবলীগ
ওপরের আলোচনা থেকে একথা পরিষ্কার ভবে জানা গেল যে, লোকদের ওপর সাক্ষী হওয়া বা দীনের প্রচারকার্য চালানো শুধু একটি নেকীর কাজই নয় বা কেবল মুসলমানদের সংখ্যা বৃদ্ধিই উদ্দেশ্য নয়; বরং নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে সাধারণ ভাবে পাঠানোর যে উদ্দেশ্য এই উম্মাতের হাতে পূর্ণ হবার রয়েছে- তাবলীগের দাবীই হচ্ছে তাই। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের উম্মাতের অন্তর্ভুক্ত প্রতিটি ব্যক্তির তাবলীগের দায়িত্ব পালন করা একান্ত আপরিহার্য কর্তব্য। দ্বীনের প্রচারকার্য তাঁর উম্মাতের ওপর অর্পণ করেছেন। মুসলমানরা যদি এ দায়িত্ব পালনে কোনরূপ ত্রুটি করে, তাহলে তারা প্রকারান্তরে রিসালাতের দায়িত্ব পালনেই ত্রুটি করল। এ দায়িত্ব আল্লাহ তায়ালাই তাদের ওপর অর্পন করেছিলেন। এর অবশ্যম্ভাবী পরিণতি হচ্ছে এই যে, আল্লাহ তায়ালা তাদেরকে যে দায়িত্ব পালনের জন্য “খাইরা উম্মাত” বা সর্বশ্রেষ্ট জাতির মর্যাতায় আসীন করেছিলেন, সেই মর্যাদা থেকে তাদেরকে বঞ্চিত করে দেবেন এবং দুনিয়াবাসীর পথ ভ্রষ্টতার সমস্ত দায়দায়িত্ব তাদের মাথায় চাপবে। কেননা তারাই এখন খোদার সৃষ্টির সামনে দীনকে চুড়ান্তভাবে পেশ করার মাধ্যম। যদি তারা এ দায়িত্ব পালন না করে তাহলে দুনিয়ার মানুষ কিয়ামতের দিন আল্লাহর কাছে এই ওজরে পেশ করার সুযোগ পেয়ে যাবে যে, তুমি যাদেরকে ‘শুহাদা আলান-নাস’ বানিয়েছিলে এবং তাদের ওপর আমাদের পথ প্রদর্শনের দায়িত্ব অর্পণ করেছিলে তারা আমাদের কাছে তোমার দীনের দাওয়াত পেশ করেনি। অন্যথায় আমরা গোমরাহীর শিকার হতামনা। মুসলমানরা তখন এই অভিযোগের কোন জবাব দিতে পারবেনা।
তাবলীগের শর্তাবলী
লোকদের ওপর সাক্ষী হওয়া বা সাধারণভাবে তাবলীগ ও প্রচার কার্যের এই দায়িত্ব দুনিয়াতে কেবল মুসলমান নামে একটি জাতির অস্তিত্ব বর্তমান থাকলেই আদায় হতে পারেন্-চাই তারা মানুষের ওপর সাক্ষী হওয়ার দায়িত্ব পালন করুক বা না করুক। এটা রিসালাতের একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব। এ কারণে আল্লাহ তায়ালা তাবলীগের জন্য যেসব শর্ত আরোপ করেছেন এবং নবী-রসূলগণ যেসব শর্তের প্রতি খেয়াল রেখে তাবলীগের কাজ করেছেন- সেসব শর্ত পূরা করেই আল্লাহর দীনের প্রচারকার্য আঞ্জাম দিতে হবে। এখানে আমরা এ ধরনের কতিপয় গুরুত্বপূর্ণ শর্তের উল্লেখ করব যেগুলোকে এই দায়িত্ব পালন করার ক্ষেত্রে বিবেচনা করতে হবে।
প্রথম শর্তঃ প্রচার কার্যের প্রথম শর্ত এই যে, আমরা যে দীনে হকের সাক্ষী, পথম আমাদেরকেই সেই দীনের ওপর বিশ্বস্তমন নিয়ে ঈমান আনতে হবে। নবী-রসূলগণ যে দীনের দাওয়াত দিতেন প্রথমে তাঁরা নিজেরা সেই দীনের ওপর ঈমান আনতেন। তাঁরা নিজেদেরকে এই দীনে হকের উর্ধে মনে করতেননা। “আমানার রসূলু বিমা উনযিলা ইলাইহি ওয়অল মুমিনূন”- (রসূলের ওপর যা কিছু নাযিল করা হযেছে- তিনি নিজে এবং মুমিনগণ তার ওপর ঈমান এনেছে)।
এই সত্য দীনের ওপর ঈমান আনার পর যেসব জিনিস তার পরিপন্থী মনে হল তা পরিহার করার জন্য তাঁরাই সর্বপ্রথম এগিয়ে আসলেন। চাই তা বাপ-দাদার ধর্মই হোক, অথবা গোত্র ও সাম্প্রায়িক বন্ধনই হোক, অথবা নিজের ব্যক্তিগত বা সমষ্টিগত স্বার্থই হোক। এটা করতে গিয়ে তাদের সামনে যি বিপদই এসেছে, তাঁরা বলেছেন, “আমিই প্রথম মুমিন, আমিই প্রথম মুসলমান।” এমনটি কখনো হয়নি যে, তাঁরা নিজেদেরকে বিপদ থেকে নিরাপদ দুরত্বে রেখে অন্যদেরকে উত্তেজিত করেছেন- যদি তোমরা নাজাত পেতে চাও তাহলে এই বিপদের মধ্যে লাফিয়ে পড়।
দ্বিতীয় শর্তঃ দীনে হকের প্রচার কাজের দ্বিতীয় শর্ত হচ্ছে এই যে, মানুষ যে সত্যের ওপর ঈমান এনেছে তারা মৌখিকভাবে তার সাক্ষ্য দেবে। যে ব্যক্তি কোন সত্যেল ওপর ঈমান আনার পর তা প্রকাশ করার ক্ষমতা রাখা সত্যেও যদি তা প্রকাশ না করে তাহলে সে একটি বোবা শয়তান। কিয়ামতের দিন সে সত্য গোপন করার অপরাধে অপরাধী সাব্যস্ত হবে- যেভাবে ইহুদীরা এই অপরাধে অপরাধী সাব্যস্ত হয়েছে। কুরআনের বাণীঃ
وَإِذْ أَخَذَ اللَّهُ مِيثَاقَ الَّذِينَ أُوتُوا الْكِتَابَ لَتُبَيِّنُنَّهُ لِلنَّاسِ وَلَا تَكْتُمُونَهُ فَنَبَذُوهُ وَرَاءَ ظُهُورِهِمْ وَاشْتَرَوْا بِهِ ثَمَنًا قَلِيلًا فَبِئْسَ مَا يَشْتَرُونَ “ আল্লাহ তায়ালা যখন কিতাবদের কাছ থেকে ওয়াদা গ্রহণ করেছিলেনঃ তোমরা এই কিতাবের শিক্ষা লোকদের মধ্যে প্রচার করতে থাকবে এবং তা গোপন করে রাখতে পারবেনা। কিন্তু তারা এই কিতাবকে পেছনের দিকে নিক্ষেপ করেছে এবং সামান্য স্বার্থের বিনিময়ে তা বিক্রি করেছে।”
-(সূরা আলে ইমরানঃ১৮৭)
এ ব্যাপারে যে সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত তা মূলত দীনে হকের স্বার্থেই করা উচিত। আর তা হচ্ছে এই দীনকে সঠিক পন্থায় সঠিক স্থানে এবং উপযুক্ত ব্যক্তির সামনে প্রচার করতে হবে। এতে সত্য দীনের দাওয়াত ব্যক্তির অন্তরে স্থান করে নিতে পরবে। যদি কোন ব্যক্তি সত্যকে সম্পূর্ণ উপেক্ষা করে কেবল নিজের ব্যক্তিগত স্বার্থের দিকে লক্ষ্য রেখে দীনে হকের প্রচার থেকে বিরত তাঁকে অথবা এ ব্যাপারে অনীহা প্রদর্শন করে তাহলে সে হয় মোনাফিক, অথবা ব্যক্তিত্বহীন এক কাপুরুষ। কেবল বিশেষ পরিস্থিতিতে সত্যকে প্রকাশ করা থেকে সাময়িকভাবে বিরত থাকার অনুমতি আছে। যেমন, তা করতে গেলে বাস্তবিক জীবন নাশের আশংকা রয়েছে এবং প্রচারকও মনে করে যে, এসময় দীনে হকের খেদমতের দৃষ্টিকোন থেকে নিজের জীবন রক্ষা করাটাই অধিক শ্রেয়।
তৃতীয় শর্তঃ তৃতীয় হচ্ছে এই যে, এই সাক্ষ্য কেবল মৌখিক ভাবে দিলেই চলবেনা, বরং বাস্তব কর্মের মাধ্যমেই এই সাক্ষ্য দিতে হবে। যে সাক্ষ্যের পেছনে বাস্তব কর্মের উপস্থিতি নেই- ইসলামে এ ধরনের সাক্ষ্য নির্ভরযোগ্য বিবেচিত হয়না। কোন কোন ব্যক্তি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে আসত এবং তাঁর সামনে শপথ করে বলত আমরা সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আপনি আল্লাহর রসূল। কিন্তু আল্লাহ তায়ালা তাদের এ সাক্ষ্য গহণ করেননি। তিনি বলেছেন, এরা মোনাফিক এবং মিথ্যাবাদী। এর সমর্থনে তিনি তাদের সামনে তাদের কার্যকলাপ ও বক্তব্যকে তুলে ধরেছেন। এর মাধ্যমে ইসলাম ও মুসলমানদের সম্পর্কে তাদের বিরূপধারণা ও হকের বিরুদ্ধে তাদের শত্রুতা প্রকাশ পেয়েছে।
যে ব্যক্তি একটি সত্যকে মেনে নিয়েছে এবং লোকদেরও সেদিকে আহ্বান জানাচ্ছে, তার অপরিহার্য কর্তব্য হচ্ছে তার কাজকর্মও এই সত্যের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হতে হবে। অন্যথায় সে সেই ইহুদী আলেমদেরই পদাংক অনুসারী বিবেচিত হবে- কুরআন মজীদ যাদের কঠোর সমালোচনা করেছে। তারা অন্যদেরকে আল্লাহর বিশ্বাসভাজন হওয়ার জন্য আহ্বান করত, কিন্তু নিজেদের প্রসংগটি ভুলে যেত। যে ব্যক্তি বা দলের কার্যকলাপ তাদের দাওয়াতের পরিপন্থি, তারা মূলত নিজেদের দাওয়াদ প্রত্যাখ্যান করার প্রমাণ নিজেরাই পেশ করছে। বাস্তব কর্মের মাধ্যমে যে প্রমাণ পেশ করা হয় তা মৌখিক প্রমাণের চেয়ে অধিক শক্তিশালী। তাদের নিজেদের কার্যকলাপ তাদের দাবীর বিরুদ্ধে এতটা শক্তিশালী প্রমাণ বহন করে যে, এরপর তাদের দাওয়াত প্রত্যাখ্যান করার জন্য অন্য কোন প্রমানের প্রয়োহনীয়তা অবশিষ্ট থাকেনা।
মুসলমানরা যদি আল্লাহর দীনের সাক্ষী হয়ে থাকে, তাহলে তার অত্যাবশ্যকীয় দাবী হচ্ছে এই যে, তার এই দীনের ওপর ঈমান আনবে অন্যদের কাছে এর দাওয়াত পৌঁছাবে এবং নিজেদের ব্যক্তিগত ও সমষ্টিগত জীবনের প্রতিটি দিক ও বিভাগে এই দীন অনুযায়ী আমল করবে। এছাড়া এই সাক্ষ্যের হক আদায় হতে পারেনা, যেজন্য আল্লাহ তায়ালা তাদের মনোনিত করেছেন। জীবনের বাস্তব ক্ষেত্রে এই দীনের সাথে সম্পর্ক না থাকা এবং মৌখিক ভাবে এটা সত্য দীন হওয়ার সাক্ষ্য দেয়া-সৃষ্টির সামনে হুজ্জাত (প্রমাণ) পূর্ণ করার দৃষ্টিকোণ থেকে সম্পূর্ণতই একটি হাস্যম্পদ ব্যাপার। এ ধরণের কর্মবিমুখ বক্তাদের ওয়াজের ভিত্তিতে আল্লাহ তায়ালা যদি তাঁর সৃষ্টিকে অপরাধী সাব্যস্ত করেন তাহলে এটা তাঁর ইনসাফের পরিপন্থী হবে। এর অত্যাবশ্যকীয় পরিণতি হবে এই যে, মুসলমানদের ওপর এই দীনের হুজ্জাত চূড়ান্তভাবে পূর্ণ হয়ে যাবে এবং কিয়ামতের দিন তারা নিজেদের স্বীকারোক্তির ভিত্তিতেই গ্রেপ্তার হবে।
বাস্তব কর্মক্ষেত্রে দীন থেকে পদাস্খলনে যেসব দিক ক্ষমার যোগৎ্য তা কুরআন নিজেই বর্ণনা করেছে এবং সাথে সাথে এর চিকিৎসার পদ্ধতিও বলে দিয়েছে। ক্ষমার যোগ্য পদাস্খলনের একটি দিক হচ্ছে এই যে, আবেগ-উত্তেজনা অথবা প্রবৃত্তির তাড়নায় মানুষ যদি হকের পরিপন্থী কোন কাজ করে বসে। এর চিকিৎসা হচ্ছে সাথে সাথে তওবা করা এবং আল্লাহর কাছে ক্ষমার প্রার্থনা করা। অপর একটি দিক হচ্ছে, যদি কোন ব্যক্তিকে হকের পরিপন্থী কাজ করতে বাধ্য করা হয়। এর চিকিৎসা হচ্ছে এই যে, মানুষ এই অবস্থা থেকে মুক্ত হওয়ার জন্য সাধ্যমত চেষ্টা করবে। তওবা ও সংশোধনের চেষ্টা করার পরিবর্তে মানুষ যদি নিজের ভ্রান্তিকে চাদর করবে। তওবা ও সংশোধনের চেষ্টা করার পরিবর্তে মানুষ যদি নিজের ভ্রান্তিকে চাদর করবে। তওবা ও সংশোধনের চেষ্টা করার পরিবর্তে মানুষ যদি নিজের ভ্রান্তিকে চাদর এবং বিছানা বানিয়ে নেয় এবং সংকটাপন্ন অবস্থার মধ্যে সে পতিত হয়েছে তাকে যদি নিজের ধর্মে পরিণত করে নেয়, তাহলে এই অপরাধ ক্ষমার যোগ্য নয়। তাকে জনগণের ওপর সাক্ষী হওয়ার যে পদমর্যাদায় আসীন করা হয়েছিল, বাতিলের ওপর সন্তুষ্ট থাকার কারণে তাকে সেই মর্যাদাপূর্ণ পদ থেকে হটিয়ে দেয়া হবে।
চতুর্থ শর্তঃ তাবলীগের চতুর্থ শর্ত হচ্ছে এই যে, সাক্ষ্যকে যে কোন প্রকারের জাতিগত ও গোত্রগত গোড়ামী থেকে মুক্ত রাখতে হবে। যে দীনে হকের দাওয়াত আমরা পেশ করছি তার পথ থেকে কোন জাতির শত্রুতা অথবা মিত্রতা আমাদেরকে যেন বিচ্যুত করতে না পারে। আমাদের বিরোধীদের মোকাবিলায় আমাদেরকে যেভাবে নিরপেক্ষ থাকতে হবে, তার শিক্ষা কুরআন মজীদ নিম্নোক্ত বাক্যে দিয়েছেনঃ
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا كُونُوا قَوَّامِينَ لِلَّهِ شُهَدَاءَ بِالْقِسْطِ وَلَا يَجْرِمَنَّكُمْ شَنَآنُ قَوْمٍ عَلَى أَلَّا تَعْدِلُوا اعْدِلُوا هُوَ أَقْرَبُ لِلتَّقْوَى وَاتَّقُوا اللَّهَ إِنَّ اللَّهَ خَبِيرٌ بِمَا تَعْمَلُونَ
“হে ঈমানদারগণ! আল্লাহর জন্য সত্যনীতির ওপর স্থায়ীভাবে দন্ডয়মান থাক এবং ইনসাফের সাক্ষ্যদাতা হও। কোন বিশেষ দলের শত্রুতা তোমাদেরকে যেন এতটা উত্তেজিত করে না দেয় যে, তোমরা ইনসাফ ত্যাগ করে ফেলবে। ন্যায় বিচার কর। এটা তাকওয়ার সাথে গভীর সামঞ্জস্যপূর্ণ।” (সূরা মায়েদাঃ৮)
নিজেদের বন্ধু ও আপনজনদের বেলায় যেভাবে নিরপেক্ষ থাকতে হবে তার শিক্ষাও কুরআন মজীদ নিম্নোক্ত আয়াতে তুলে ধরেছেঃ
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا كُونُوا قَوَّامِينَ بِالْقِسْطِ شُهَدَاءَ لِلَّهِ وَلَوْ عَلَى أَنْفُسِكُمْ أَوِ الْوَالِدَيْنِ وَالْأَقْرَبِينَ إِنْ يَكُنْ غَنِيًّا أَوْ فَقِيرًا فَاللَّهُ أَوْلَى بِهِمَا فَلَا تَتَّبِعُوا الْهَوَى أَنْ تَعْدِلُوا وَإِنْ تَلْوُوا أَوْ تُعْرِضُوا فَإِنَّ اللَّهَ كَانَ بِمَا تَعْمَلُونَ خَبِيرًا
“হে ঈমানাদারগণ! তোমরা ইনসাফের ধারক হও এবং আল্লাহর জন্য সাক্ষী হও। তোমাদের এই সুবিচার ও সাক্ষ্যের আঘাত তোমাদের নিজেদের ওপর অথবা তোমাদের পিতামাতা ও আত্মীয়-স্বজনদের ওপরই পড়ুক না কেন, আর পক্ষদ্বয় গরীব অথবা ধনীই হোকনা কেন- তাদের সকলের অপেক্ষা আল্লাহর এই অধিকার অনেক বেশী যে, তোমরা তাঁর দিকেই দৃষ্টি নিবদ্ধ রাখবে। অতএব নিজেদের প্রবৃত্তির অনুসরণ করতে গিয়ে সুবিচার থেকে বিরত থেকনা।” –(সূরা নিসাঃ ১৩৫)
পঞ্চম শর্তঃ দীন প্রচারের পঞ্চম শর্ত হচ্ছে এই যে, আল্লাহর পক্ষ থেকে যে পূর্ণাংগ ও পরিপূর্ণ দীন আমাদের কাছে এসেছে সেই গোটা দীনের সার্বিক সাক্ষ্য দান করতে হবে। কোনরূপ তিরষ্কার অথবা বিরোধিতার ভয়ে এর মধ্য থেকে কোন কিছু বাদ দেয়া যাবেনা। যেসব বিষয়ের সাক্ষ্য ব্যক্তিগত জীবনের কর্তব্যের সাথে সংশ্লিষ্ট, ব্যক্তি তার ব্যক্তিগত জীবনে সেগুলো সাক্ষ্য বহন করতে থাকবে। প্রতিটি ব্যক্তিকে নামায পড়তে হবে, রোযা রাখতে হবে, প্রতিটি ধনবান ব্যক্তিকে যাকাত দিতে হবে এবং প্রতিটি সামর্থবান ব্যক্তিকে হজ্জ করতে হবে। সৎকাজ, বিশ্বস্ততা, পবিত্র জীবন প্রত্যেক মুসলমানই অবলম্বন করবে।
কিন্তু যেসব জিনিসের সাক্ষ্য দেয়ার জন্য সমষ্টিগত জীবন শর্ত, সেখানে ব্যক্তির কর্তব্য হচ্ছে, সমষ্টিগত জীবন গঠন করার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করা। যখন তা অস্তিত্বে এসে যাবে তখন ঐসব বিষয়ের সাক্ষ্য দেবে। যেমন, সামাজিক ব্যবস্থা, অর্থনৈতিক ব্যবস্থা এবং দেশের রাজনৈতিক ভিত্তি গড়ে তোলা একক ব্যক্তির পক্ষে সম্ভব নয়। এগুলোকে ইসলামী ছাঁচে ঢেলে সাজানোর জন্য একটি সাংগঠনিক শক্তির প্রয়োজন। এজন্য সর্বাগ্রে একটি সালেহ জামাআত গঠণ করা একান্ত প্রয়োজন। এই সংগঠন কায়েম করার পর সমষ্টিগত জীবনের প্রতিটি পর্যায়ে দীনে হকের সাক্ষ্য দেয়া অত্যাবশ্যকীয় হয়ে পড়বে। নিম্নে আমরা কয়েকটি আয়াত উধৃত করছি। তা থেকে জানা যাবে যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে কোনরূপ হ্রাস-বৃদ্ধি ছাড়াই গোটা দীনের সাক্ষ্য বহন করার জন্য কতটা তাকিদ করা হয়েছে।
يَا أَيُّهَا الرَّسُولُ بَلِّغْ مَا أُنْزِلَ إِلَيْكَ مِنْ رَبِّكَ وَإِنْ لَمْ تَفْعَلْ فَمَا بَلَّغْتَ رِسَالَتَهُ وَاللَّهُ يَعْصِمُكَ مِنَ النَّاسِ إِنَّ اللَّهَ لَا يَهْدِي الْقَوْمَ الْكَافِرِينَ “হে রসূল! তোমার প্রতিপালকের পক্ষ থেকে তোমার ওপর যা কিছু নাযিল করা হয়েছে, তা লোকদের কাছে পৌঁছে দাও। তুমি যদি তা না কর, তাহলে তুমি তাঁর রিসালাতের দায়িত্ব পালন করলেন। লোকদের অনিষ্ট থেকেই আল্লাহ তোমাকের রক্ষা করবেন।” –(সূরা মায়েদাঃ৬৭)
الَّذِينَ يُبَلِّغُونَ رِسَالَاتِ اللَّهِ وَيَخْشَوْنَهُ وَلَا يَخْشَوْنَ أَحَدًا إِلَّا اللَّهَ وَكَفَى بِاللَّهِ حَسِيبًا
“যারা আল্লাহর পয়গাম সমূহ পৌঁছায়, তাঁকেই ভয় করে এবং আল্লাহ ছাড়া অন্য কাউকে ভয় করেনা।” (সূলা আহযাবঃ৩৯)
(আরবী****)
“কাফের এবং মোনাফিকদের কথায় মোটেই কর্ণপাত করোনা। তাদের নিপীড়নকে মোটেই পরোয়া করোনা। আল্লাহর ওপর ভরসা করো” (সূরা আহযাবঃ৮৮)
فَلِذَلِكَ فَادْعُ وَاسْتَقِمْ كَمَا أُمِرْتَ وَلَا تَتَّبِعْ أَهْوَاءَهُمْ وَقُلْ آمَنْتُ بِمَا أَنْزَلَ اللَّهُ مِنْ كِتَابٍ
“অতএব তুমি সেই দীনের দিকে দাওয়াত দাও এবং তোমাকে যেমন হুকুম করা হয়েছে- সেই দীনের ওপর অবিচল থাক। কিন্তু এই লোকদের কামনা বাসনার অনুসরণ করোনা। তুমি বল, আল্লাহ যে কিতাব নাযিল করেছেন, আমি তার ওপর ঈমান এনেছি।” (সূরা শূরাঃ১৫)
ষষ্ঠ শর্তঃ দীন প্রচারের ষষ্ঠ শর্ত হচ্ছে এই যে, আল্লাহর দীনের দিকে আহ্বানকারীগণ প্রয়োজনবোধে জীবন দেয়ার জন্য প্রস্তুত থাকবে, জীবন দিয়ে দেবে। এটা সাক্ষ্যদানের সর্বোচ্চ স্তর। এ কারণেই যেসব লোক আল্লাহর দীনের জন্য জিহাদে অবতীর্ণ হয়েছেন এবং যে সত্যের ওপর ঈমান এনেছেন, তা সত্য হওয়ার সাক্ষ্য তরবারীর ছায়াতলেও দিয়েছেন, তখন তাদেরকে শীহদ করা হয়েছে। এ ধরণের প্রাণ উৎর্গকারী ব্যক্তিদের ছাড়া আর কে শহীদের এই মহান খেতাব লাভ করতে পারে। আর কার জন্য তা উপযুক্ত হতে পারে। আল্লাহ তায়ালা এই উম্মতের ওপর লোকদের জন্য সাক্ষী হওয়ার যে দায়িত্ব অর্পণ করেছেন, তা পূর্ণ করার জন্য হাজারো লাখো মানুষ দাঁড়িয়ে যেতে পারে এবং তাদের প্রত্যেকেই আল্লাহর কাছে নিজ নিজ শ্রমের প্রতিদান লাভ করবে। কিন্তু যারা এ পথে নিজেদের গোটা জীবনকে উৎসর্গ করে দিয়েছে এবং নিজেদের জীবনের বিনিময়ে সত্যের সাক্ষ্য দিয়ে গেছে মূলত সেই ব্যক্তিই ‘শহীদ’ উপাধি লাভ করার যোগ্য। কেননা কোন একটি জিনিসের সত্য হওয়ার পক্ষে এর চেয়ে আর বড় সাক্ষ্য কি হতে পারে যে, কোন ব্যক্তি সত্য দীনের সাহায্যের জন্য নিজের অমূল্য জীবনকেও বিলিয়ে দিল। যে ব্যক্তি নিজের জীবনকে বাজি রেখে সত্যের সাক্ষ্য দান করল, যার পরে সত্যের সাক্ষ্যের আর কোন পর্যায় অবশিষ্ট থাকেনা। সেই হল প্রকৃত শহীদ।
মুসলমানদের দায়িত্ব
রিসালাদের এই দায়িত্বের কারণেই মুসলিম উম্মাতকে “সর্বোত্তম জাতি” বলা হয়েছে। মুসলমানরা যদি এই দায়িত্ব বিস্মৃত হয়ে যায় তাহলে তারা দুনিয়ার অন্যান্য জাতির মত একটি জাতি মাত্র। তাদের মধ্যে না আছে কোন বিশেষ সৌন্দর্য, আর না আছে বিশেষ মর্যাদা লাভের কোন কারণ। আল্লাহ তায়ালারও দেখার প্রয়োজন নেই যে, তারা দুনিয়াতে সসম্মানে বসবাস করছে,না অপমানিত অবস্থায় জীবন যাপন করছে। বরং এই দায়িত্ব ভুলে যাবার পর তারাও আল্লাহর অভিশাপে পতিত জাতিতে পরিনত হবে। যেমন, তাদের পূর্বে অন্য জাতিকে এ দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল। কিন্তু অর্পিত দায়িত্ব পালন না করার পরিণতিতে তারা অভিশপ্ত হয়েছে। অতএব যে আয়াতে মুসলমানদের সর্বোত্তম জাতি বলে ঘোষণা করা হয়েছে তাতে তাদের দায়িত্ব ও কর্তব্যও পরিষ্কার ভাবে বলে দেয়া হয়েছে।
كُنْتُمْ خَيْرَ أُمَّةٍ أُخْرِجَتْ لِلنَّاسِ تَأْمُرُونَ بِالْمَعْرُوفِ وَتَنْهَوْنَ عَنِ الْمُنْكَرِ وَتُؤْمِنُونَ بِاللَّهِ وَلَوْ آمَنَ أَهْلُ الْكِتَابِ لَكَانَ خَيْرًا لَهُمْ مِنْهُمُ الْمُؤْمِنُونَ وَأَكْثَرُهُمُ الْفَاسِقُونَ
“তোমরা সর্বোত্তম জাতি, যাদেরকে মানুষের হেদায়াতে জন্য কর্মক্ষেত্রে উপস্থিত করা হয়েছে। তোমরা সৎকাজের নির্দেশ দাও, অন্যায় কাজ থেকে লোকদের বিরত রাখ এবং আল্লাহর ওপর ঈমান আন।” (সূরা আলে ইমরানঃ১১০)
এই সমষ্টিগত দায়িত্ব পালন করার পন্থাও আল্লাহ তায়ালা নিজেই বলে দিয়েছেনঃ (আরবী*****************)
“তোমাদের মধ্যে এমন কিছু লোক থাকতে হবে, যারা কল্যাণেল দিকে ডাকবে, ন্যায়ানুগ কাজের নির্দেশ দেবে এবং অন্যায় কাজ থেকে বিরত রাখবে। যারা এ কাজ করবে তারাই সফলকাম হবে।” (সূরা আলে ইমরানঃ১০৪)
এই নির্দেশ পালন করার ক্ষেত্রে মুসলমানরা রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পর সর্ব প্রথম যে কাজ করেছে, তা হচ্ছে এই যে, তারা অবিকল নবুওয়াতের পন্থায় খেলাফরেত ভিত্তি স্থাপন করে। এই সংস্থা কল্যাণকর কাজের দাওয়াত, ন্যায় কাজের নির্দশ এবং অন্যায় কাজ থেকে প্রতিরোধ করার জন্য একটি সাংগঠনিক সংস্থা হিসাবে কাজ করে। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পর মুসলমানদের ওপর দীনে হকের যে সমষ্টিক দায়িত্ব অর্পিত হয়, তা আঞ্জাম দেয়ার জন্যই তারা এই সংস্থা কায়েম করে। এই সংস্থা মুসলমানদের প্রতিনিধি হিসাবে তাদেরকে সত্যের ওিপর কায়েম রাখার এবং দুনিয়ার মানুষকে হকের দিকে আহ্বান করার দায়িত্ব পালন করে। খেলাফত নামক এই সংস্থা যতদিন সঠিক ভাবে কায়েম ছিল, মুসলমান-অমুসলমান সবাই নিজের দায়িত্ব পালনে সক্রিয় ছিল। এসময় পর্যন্ত তাবলীগের দায়িত্ব পালন ফরজে কিফায়ার পর্যায়ভুক্ত ছিল। খেলাফত ব্যবস্থা তা আঞ্জাম দিয়ে জামাআতের প্রতিটি সদস্যকে আল্লাহর কাছে এই ফরজের যিম্মাদারী থেকে মুক্ত করতে থাকে। কিন্তু এই ব্যাবস্থা যখন এলোমেলো হয়ে গেল, তখন সত্যের সাক্ষ্যের এই দায়িত্ব পুনরায় সমাজের প্রতিটি সদস্যের উপর এসে পড়েছে। যেমন কোন রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা ভেংগে পড়ার পর তার বাসিন্দাদের জানমালের হেফাজদের দায়িত্ব রাষ্ট্রের পরিবর্তে তাদের নিজেদের ওপর এসে পড়ে এবং যতক্ষণ পর্যন্ত তারা পুনরায় নিজেদের রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা গড়ে তুলতে না পারে, ততক্ষন এ দায়িত্ব তাদের ওপরই ন্যস্ত থাকে। অনুরূপ ভাবে খেলাফত ব্যবস্থ ভেংগে পড়ার পার লোকদের ওপর সাক্ষ্য হওয়ার দায়িত্ব উম্মাতের প্রতিটি সদস্যের ওপর এসে পড়েছে। এই দায়িত্ব পালনের জন্য তারা যতক্ষণ ইসলামের সঠিক রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা গড়ে তুলেতে না পারবে, ততক্ষণ এ দায়িত্ব পালন না হওয়ার গুনাহ প্রতিটি মুসলমানদের ওপর বর্তাবে। কিয়ামতের দিন প্রতিটি ব্যক্তিকে এজন্য জবাবদিহি করতে হবে।
সারসংক্ষেপঃ
এই গোটা আলোচনার সংক্ষিপ্তসার হচ্ছে এই যে,
(কা) কিয়ামত পর্যন্ত গোটা বিশ্বে আল্লাহর দীন প্রচারের যে দায়িত্ব রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ওপর অর্পন করা হয়েছিল, তা পূর্ণতায় পৌঁছানোর জন্য তিনি আল্লাহর পক্ষ থেকে উম্মাতের ওপর এ দায়িত্ব ন্যস্ত করে গেছেন। এখন এই উম্মাত কিয়ামত পর্যন্ত প্রতিটি দেশ, জাতি এবং ভাষাভাষীর কাছে আল্লাহর দীনের প্রচারকার্য চালাতে থাকবে।
(খ) প্রচার কার্যের জন্য আল্লাহ তায়ালা এই শর্ত নির্ধারণ করেছেন যে, তা মৌখিক ভাবে, আন্তরিকভাবে এবং বাস্তব কর্মের মাধ্যমে করতে হবে। কোনরূপ পার্থক্য ও শ্রেণী বিভাগ না করে গোটা দীনের তাবলীগ করতে হব। নিন্দুকের নিন্দাকে উপেক্ষা করে পক্ষপাতহীন ভাবে তা করতে হবে। প্রয়োজন বোধে প্রচারক তার জীবনকে কোরবানী করে এ দায়িত্ব পালন করবে।
(গ) এই সামগ্রিক দায়িত্ব পালন করার জন্য যথারীতি খেলাফত নামক সংস্থা বর্তমান ছিল। এই সংস্থা কায়েম ছিল প্রতিটি মুসলমান এই দায়িত্ব থেকে মুক্ত ছিল।
(ঘ) এই সংস্থা অবলুপ্ত হয়ে যাওয়ার পর ইসলামের প্রচার কার্যের দায়িত্ব উম্মাতের প্রতিটি সদস্যের ওপর এসে পড়েছে। যোগ্যতা ও মর্যাদার তারতম্য অনুযায়ী এ দায়িত্ব তাদের মধ্যে বন্টিত হবে।
(ঙ) এখন এই ফরজের জবাবদিহি এবং দায়িত্ব থেকে মুক্ত হওয়ার জন্য দুটি পথ মুসলমানদের জন্য খোলা আছে। তারা হয় খেলাফত নামক এই সংস্থা পুনরায় কায়েম করবে অথবা অন্তত পক্ষে তা কায়েম করার জন্য জীবনকে বাজি রাখবে।
(চ) মুসলমনরা যদি এর কোনটিই না করে, তাহলে তাদের ওপর আল্লাহর পক্ষ থেকে রিসালাতের যে দায়িত্ব অর্পণ করা হয়েছিল- তা পালন না করার অপরাধে তারা অপরাধী সাব্যস্ত হবে। তাদেরকে কেবল নিজেদের অপরাধের বোঝাই বহন করতে হবেনা, বরং গোটা সৃষ্টির পথভ্রষ্টতার শাস্তিরও তাদের ভোগ করতে হবে।
এ আলোচনা থেকে জানা গেল যে, আল্লাহর পক্ষ থেকে মুসলমনদের ওপর দীন প্রচারের যে মহান দায়িত্ব অর্পণ করা হয়েছে- তা আঞ্জাম দেয়ার মূল চালিকা শক্তি হচ্ছে তাদের চেতনা ও অনুভূতি। কল্যাণের দিকে আবহ্বানের এই খেলাফনত ব্যবস্থা যাতে পুনরায় প্রতিষ্ঠিত হতে পারে সে দিকে তাদের দৃষ্টি নিবদ্ধ হবে। এই ব্যবস্থার মাধ্যমে আল্লাহর বান্দাদের সহজেই আল্লাহর দীনের দিকে পথ দেখানো যেতে পারে এবং দুনিয়ার সামনে চূড়ান্ত প্রমান পেশ করা যেতে পারে। দুনিয়াতে এই ব্যবস্থা যতদিন কায়েম না হবে, ততদিন মুসলমানের সবচেয়ে অগ্রগণ্য, সবচেয়ে বড় এবং সর্বশেষ্ট উদ্দেশ্য হবে এই ব্যবস্থা পুনপ্রতিষ্ঠার জন্য কিছু না কিছু করা। শয়নে-জাগরনে প্রতিটি মুসলমানের এটাই হবে একমাত্র চিন্তা। এজন্যই তাদের পানাহার, এজন্যই তাদের জীবন-মরণ। এছাড়া মুসলমানদের জীবন যদি হয় আল্লাহর ইচ্ছায় সম্পূর্ণ পরিপন্থী, আল্লাহর কাছে তারা নিজেদের এই ত্রুটির কোন গ্রহনযোগ্য ওজর পেশ করতে সক্ষম হবে না। আল্লাহর জমীনে আল্লাহর খেলাফত প্রতিষ্ঠাই তাদের জীবনের উদ্দেশ্য। যদি তারা এ উদ্দেশ্য বিস্মৃত হয়ে যায়, তাহলে তারা পৃথিবীর বুকে কীট-পতঙ্গ ও খড়কুটার চেয়ে অধিক গুরুত্ব পাবার দাবী করতে পারেনা। এবং তারা কখনো মধ্যপন্থী উম্মাত অথবা সর্বশ্রেষ্ঠ উম্মাত হওয়ার মর্যাদাও পেতে পারেনা বা আল্লাহর তরফ থেকে কোনরূপ সাহায্য সহযোগিতা লাভের আশাও করতে পারে না।