জামায়াত অনলাইন লাইব্রেরি
  • নীড়
  • সংক্ষিপ্ত পরিচিতি
  • বিভাগ ভিত্তিক
    • আল কুরআন
    • আল হাদিস
    • ফিকাহ
    • ঈমান
    • ইসলাম
    • পারিবারিক জীবন ও সামাজিক সম্পর্ক
    • আন্দোলন ও সংগঠন
    • সীরাত ও ইতিহাস
    • সীরাতে সাহাবা
    • মহিলাদের বিশেষ বই
    • রাজনীতি
    • অর্থনীতি
    • বিবিধ
  • রুকন সিলেবাস
    • রুকন সিলেবাস (স্বল্প শিক্ষিত)
    • রুকন সিলেবাস (শিক্ষিত)
  • কর্মী সিলেবাস
  • বাৎসরিক পাঠ্যসূচি
    • বাৎসরিক পাঠ্যসূচি (শিক্ষিত)
    • বাৎসরিক পাঠ্যসূচি (স্বল্প শিক্ষিত)
  • উচ্চতর অধ্যয়ন
  • অডিও বই
  • অন্যান্য
    • দারসুল কুরআন
    • দারসুল হাদিস
    • আলোচনা নোট
    • বইনোট
    • প্রবন্ধ
    • কবিতা
    • বুলেটিন
    • স্মারক
    • ম্যাগাজিন
    • এপস
    • রিপোর্ট বই
    • ছাত্রী সিলেবাস
কোন ফলাফল নেই
সকল ফলাফল দেখুন
  • নীড়
  • সংক্ষিপ্ত পরিচিতি
  • বিভাগ ভিত্তিক
    • আল কুরআন
    • আল হাদিস
    • ফিকাহ
    • ঈমান
    • ইসলাম
    • পারিবারিক জীবন ও সামাজিক সম্পর্ক
    • আন্দোলন ও সংগঠন
    • সীরাত ও ইতিহাস
    • সীরাতে সাহাবা
    • মহিলাদের বিশেষ বই
    • রাজনীতি
    • অর্থনীতি
    • বিবিধ
  • রুকন সিলেবাস
    • রুকন সিলেবাস (স্বল্প শিক্ষিত)
    • রুকন সিলেবাস (শিক্ষিত)
  • কর্মী সিলেবাস
  • বাৎসরিক পাঠ্যসূচি
    • বাৎসরিক পাঠ্যসূচি (শিক্ষিত)
    • বাৎসরিক পাঠ্যসূচি (স্বল্প শিক্ষিত)
  • উচ্চতর অধ্যয়ন
  • অডিও বই
  • অন্যান্য
    • দারসুল কুরআন
    • দারসুল হাদিস
    • আলোচনা নোট
    • বইনোট
    • প্রবন্ধ
    • কবিতা
    • বুলেটিন
    • স্মারক
    • ম্যাগাজিন
    • এপস
    • রিপোর্ট বই
    • ছাত্রী সিলেবাস
জামায়াত অনলাইন লাইব্রেরি

বাংলার মুসলমানদের ইতিহাস

অন্তর্গতঃ uncategorized
Share on FacebookShare on Twitter

সূচীপত্র

  1. গ্রন্থকারের কথা
  2. প্রথম অধ্যায়
    1. বাংলায় মুসলমানদের আগমন
  3. দ্বিতীয় অধ্যায়
    1. বিজয়ীর বেশে মুসলমান
    2. বাংলায় মুসলমানদের রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠা
    3. বাংলার স্বাধীন সুলতানগণ
    4. রাজা গনেশ
    5. ইলিয়াস শাহী বংশ
    6. হিন্দুজাতির পুনরুত্থান
    7. গশেণের বংশ
    8. ইলিয়াস শাহী বংশের পুনরুত্থান
    9. বাংলার মসনদে হাবশী সুলতান
    10. হোসেন শাহ
    11. শ্রীচৈতন্য
    12. হোসেন শাহী বংশ
  4. তৃতীয় অধ্যায়
    1. ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর বাংলায় আগমন
    2. মীর জুমলা থেকে সিরাজদ্দৌলা
    3. নবাব শায়েস্তা খান
    4. ফিদা খান ও যুবরাজ মুহাম্মদ আজম
    5. সুবাদার ইব্রাহীম খান
    6. সুবাদার আজিমুশশান
    7. মুর্শিদ কুলী খান
    8. সুজাউদ্দীন
    9. সরফরাজ খান
    10. আলীবর্দী খান
    11. সিরাজদ্দৌলা
  5. চতুর্থ অধ্যায়
    1. বাংলার মুসলিম শাসন বিলুপ্তির পশ্চাৎ পটভূমি
    2. মুসলমানদের ধর্মীয়, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অবস্থা
    3. বাংলার পতনের রাজনৈতিক কারণ
    4. বাংলায় ইংরেজদের রাজনৈতিক ক্ষমতালাভের উচ্চভিলাষ
    5. ফলতার ইংরেজগণ
  6. পঞ্চম অধ্যায়
    1. ইংরেজদের আক্রমণ ও নবাবের পরাজয়
    2. সিরাজদ্দৌলার পতনের পর বাংলার অর্থনৈতিক অবস্থা
  7. ৬ষ্ঠ অধ্যায়
    1. মুসলিম সমাজের দুর্দশা
    2. ১. নবাব
    3. ২। সম্ভ্রান্ত বা উচ্চশ্রেণীর মুসলমান
    4. ৩। নিম্নশেণীর মুসলমানঃ কৃষক ও তাঁতী
    5. তাঁতী
    6. হিন্দু মুসলিম সম্পর্কঃ ধর্ম ও সংস্কৃতি
    7.  সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষ
  8. সপ্তম অধ্যায়
    1. মুসলমানদের ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাদীক্ষা
    2. ইংরেজদের আগমনের পর
    3. খৃস্টান মিশনারী ও ইংরেজী শিক্ষার সূচনা
    4. বাংলার মুসলমান ও বোধনকৃত নতুন বাংলা ভাষা
    5. আধুনিক বাংলা সাহিত্য ও সাম্প্রদায়িকতা
  9. অষ্টম অধ্যায়
    1. আধুনিক বাংলা সাহিত্য ও মুসলমান
    2. উনবিংশ শতকে মুসলমান
      1. মুসলমান চরম অগ্নি পরীক্ষার মুখে
      2. ফকীর আন্দোলন
  10. নবম অধ্যায়
    1. ফারায়েজী আন্দোলন
  11. দশম অধ্যায়
    1. শহীদ তিতুমীর
    2. কোলকাতায় জমিদারদের ষড়যন্ত্র সভা
    3. আলেকজান্ডারের রিপোর্ট ও তার প্রতিক্রিয়া
  12. একাদশ অধ্যায়
    1. সাইয়েদ আদমদ শহীদের জেহাদী আন্দোলন
    2. মুহাম্মদ বিন ওয়াহহাব
    3. শাহ ওয়ালীউল্লাহ
    4. শাহ আবদুল আযীয দেহলভী (রহ)
    5. শাহ ওয়ালিউল্লাহর বংশ তালিকা
    6. সাইয়েদ আহমদ শহীদ
    7. বালাকোট বিপর্যয়ের কারণ
    8. বালাকোটের বিপর্যয়ের পর
    9. মওলানা বেলায়েত আলী
    10. বিপ্লবী আহমদুল্লাহ
    11. মওলানা ইয়াহইয়া আলী
    12. মওলানা ইমামুদ্দীন
    13. সূফী নূর মুহাম্মদ নিযামপুরী
  13. দ্বাদশ অধ্যায়
    1. বৃটিশ ভারতে প্রথম আযাদী সংগ্রাম
  14. ত্রয়োদশ অধ্যায়
    1. স্যার সাইয়েদ আহমদ খান
    2. আর্য সমাজ
    3. ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস
    4. বাল গংগাধর তিলক
  15. চতুর্দশ অধ্যায়
    1. বংগভংগ রদ ও তার প্রতিক্রিয়া
  16. পঞ্চদশ অধ্যায়
    1. উনিশ শ’ ছয় থেকে ছত্রিশ
    2. খেলাফত আন্দোলন
    3. হিজরত আন্দোলন
    4. মোপলা বিদ্রোহ
    5. ইসলাম ধর্ম ও মুসলমানদের উপর সুপরিকল্পিত হামলা
    6. সংগঠন আন্দোলন
    7. মুসলিম অধ্যুষিত অঞ্চলের স্বাতন্ত্র দাবী
    8. সর্বদলীয় সম্মেলন
    9. মুহাম্মদ আলী জিন্নাহর ঐতিহাসিক চৌদ্দ দফা
    10. সাইমন কমিশন
    11. গোলটেবিল বৈঠক
    12. দ্বিতীয় গোলটেবিল বৈঠক
    13. তৃতীয় গোলটেবিল বৈঠক
    14. পুনাচুক্তি
    15. ভারত শাসন আইন
  17. দ্বিতীয় ভাগ
  18. প্রথম অধ্যায়
    1. ভারত শাসন আইন, ১৯৩৫ (Govt. of India Act, 1935)
    2. প্রাদেশিক পরিষদ নির্বাচন
    3. রক্ষাকবচ প্রশ্নে অচলাবস্থা সৃষ্টি
    4. নির্বাচনের ফলাফল
    5. বাংলা
    6. পাঞ্জাব
    7. সিন্ধু
    8. আসাম
  19. দ্বিতীয় অধ্যায়
    1. প্রদেশগুলোতে কংগ্রেস মন্ত্রীসভা
      1. প্রদেশগুলোতে কংগ্রেস শাসন
      2. কোয়ালিশন সরকার গঠনে অস্বীকৃতি
    2. কংগ্রেস শাসন এবং মুসলমান
      1. পীরপুর রিপোর্ট
      2. ফজলুল হক সাহেবের বিবৃতি
      3. বিভিন্ন পত্রিকার অভিমত
      4. ওয়ার্ধা শিক্ষা প্রকল্প
  20. তৃতীয় অধ্যায়
    1. মুসলিম লীগ-কংগ্রেস আলোচনা
  21. চতুর্থ অধ্যায়
    1. পাকিস্তান আন্দোলন
      1. কংগ্রেসের প্রতিষ্ঠা
      2. উপমহাদেশে ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা, তার উখান ও পতন
      3. ইসলামের সহজাত ও স্বাভাবিক বৈশিষ্ট্য
      4. মুসলমান একটি জাতি
      5. হিন্দুদের বিরোধিতা
      6. পাকিস্তানের চিন্তাভাবনা
  22. ষষ্ঠ অধ্যায়
    1. পাকিস্তান আন্দোলনের বিরোধিতা
      1. ব্রিটিশ সরকারের আগস্ট প্রস্তাব
      2.  কংগ্রেসের অসহযোগ আন্দোলন ও মুসলমান 
      3. লিবারাল পার্টি প্রস্তাব-১৯৪১
      4. গান্ধীর প্রতিক্রিয়া
      5. প্রতিরক্ষা পরিষদ (Defence Council) গঠন
  23. অষ্টম অধ্যায়
    1. ক্রিপস মিশন
      1. ভারতীয়তের প্রতিক্রিয়া
      2. ক্রিপস মিশনের ব্যর্থতার পর
      3. ক্রিপসের বেতার ভাষণ
      4. ‘ভারত ছাড়’ আন্দোলন (Quite India Movement)
      5. সি, আর ফর্মূলা
      6. সি, আর ফর্মূলার ব্যর্থতার কারণ
      7. সাপ্রু প্রস্তাব
      8. দেশাই-লিয়াকত চুক্তি
  24. নবম অধ্যায়
    1. ওয়াবেল পরিকল্পনা ১৯৪৫
      1. শিমলা সম্মেলন
      2. ব্যর্থতার কারণ
      3. সাধারণ নির্বাচন
  25. দশম অধ্যায়
    1. কেবিনেট মিশন পরিকল্পনা
      1. লীগ প্রতিক্রিয়া
  26. একাদশ অধ্যায়
    1. ডাইরেক্ট অ্যাকশন
      1. আবুল কালাম আজাদের বক্তব্য
      2. মুসলিম লীগের ডাইরেক্ট অ্যাকশনের পর
  27. দ্বাদশ অধ্যায়
    1. একজেকিউটিভ কাউন্সিলে লীগের যোগদান
      1. কংগ্রেস
      2. মুসলিম লীগ
      3. সংখ্যালঘু
      4. কোয়ালিশন সরকার
  28. ত্রয়োদশ অধ্যায়
    1. গণপরিষদ
  29. চতুর্দশ অধ্যায়
    1. মাউন্টব্যাটেন মিশন
      1. তেসরা জুন পরিকল্পনার ক্রমবিকাশ
      2. একটি প্রশ্ন যা মনকে আলোড়িত করে
  30. পঞ্চম অধ্যায়
    1. ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রক্রিয়া
      1. বড়োলাটগিরি নিয়ে ক্যানভাসিং ও বিতর্ক
      2. জুন ৩ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন
  31. ষষ্ঠদশ অধ্যায়
    1. উপসংহার
      1. ইসলামী জীবনব্যবস্থা
      2. ইসলামে জাতীয়তার ধারণা
      3. স্বাধীন সমাজ ব্যবস্থা
      4. ইসলামের সহজাত বৈশিষ্ট্য
      5. উপমহাদেশে ইসলামী আইন-শাসন প্রতিষ্ঠা
  32. তথ্যসূত্র

নবম অধ্যায়

ফারায়েজী আন্দোলন

ইংরেজরা পলাশী ক্ষেত্রে যুদ্ধের অভিনয় করে কূট কলাকৌশলে সিরাজদ্দৌলাকে পরাতি করে এবং ১৭৬৪ সালে মীর কাসেমকে পরাজিত করে বাংলা বিহার উড়িষ্যার শাসনদন্ড লাভ করেই ক্ষান্ত হলো না। বরঞ্চ মুসলমান জাতি নির্মূল করার নতুন ফন্দি ফিকির খুঁজতে লাগলো। তাদের অদম্য অর্থলিপ্সা প্রজাপীড়নে তাদেরকে উন্মুক্ত করলো। মুসলমানদেরআয়মা, লাখেরাজ বাজেয়াপ্ত হলো। মুসলমানদের হাত থেকে খাজনা আদায়ের তারা প্রজাদের উপরে শুরু করলো নির্মম শোষণ-পীড়ন। বিলাতী বস্ত্রের বাজার সৃষ্টির জণ্যে তাঁতীদের নির্মূল করার ১৭৭০-১৮২৫) কাজ শুরু হলো। ১৭৬৬ সালে প্রতিমণ লবণের উপর দু’টাকা হারে কর ধার্য করে লবণ ব্যবসা ইউরোপীয়দের একচেটিয়া অধিকারে নেয়া হলো। এভাবে মুসলমানরা সকল অর্থনৈতিক ক্ষেত্র তেকে বিতাড়িত হয়ে দারিদ্র্যে নিষ্পেষিত হতে লাগলো।

শুধু তাই নয়, ধর্মীয় অনুষ্ঠানাদি পালনেও মুসলমানরা বাধাগ্রস্ত হতে লাগলো। অত্যাচারী হিন্দু জমিদারদের এলাকায় গো-কুরবানী এবং আজান দেয়া নিষিদ্ধ হলো। হিন্দু জমিদারগণ মুসলমান প্রজাদের দাড়ির উপরে ট্যাক্স ধার্য করলো।তাদের পূর্জাপার্বণে মুসলমানদেরকে চাঁদা দিতে, পূজার যোগন ও বেগার দিতে বাধ্য করা হলো। মুসলমানদেরকে ধূতি পরতে  ও দাড়ি কামিয়ে গোঁফ রাখতে বাধ্য করা হলো। মুসলমানদের ধর্ম, তাহজিব-তমদ্দুনকে ধ্বংস করে হিন্দুজাতির মধ্যে একাকার করে ফেলার এক সর্বনাশা পরিকল্পনা শুরু হলো। ধর্মপ্রাণ মুসলমান হয়ে উঠলো দিশেহারা। বাংলার মুসলমানদের এ চরম দুর্দিনের সময় ১৭৮৪ খৃষ্টাব্দে ফরিদপুর ঝেলার বন্দর পরগণায় জন্মগ্রহণ করেন হাজী শরীয়তুল্লাহ। আঠার বছর বয়সে সেখানেই অবস্থান করে ধর্ম, সমাজ বিজ্ঞান ও রাজনীতিতে শিক্ষা আঠার বছর সেখানেই অবস্থান করে ধর্ম, সমাজ বিজ্ঞান ও রাজনীতিতে শিক্ষা গ্রহণ করেন। ইসলাম সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা এবং ইসলামী জীবনদর্শন সম্পর্কে জ্ঞানলাভ সম্ভবতঃ তিনি এ সময়েই করেন। ইসলাম নিছক কতিপয় ক্রিয়া অনুষ্ঠানের সমষ্টিই নয়, বরঞ্চ এ হচ্ছে একটি পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধান। ইসলামের পরিপূর্ণ অনুশাসন জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে পালন করে চলাও কিছুতেই সম্ভব নয় রাজনৈতিক ক্ষমতা ব্যতিরেকে। এ তত্ত্বজ্ঞানও তিনি লাভ করেন। অতঃপর ১৮২০ সালে তিনি স্বদেশ প্রত্যাবর্তণ করেন।

মক্কায় অবস্থানকালে মুহাম্মদ বিন আবদুল ওহাব নজদীর ইসলামী সংস্কার আন্দোলনের সাথেও তাঁর পরিচয় ঘটে এবং এ আন্দোলনের প্রতি তিনি আকৃষ্ট হন।

দিল্লীতে শাহ আবদুল আযীয দেহলভীর নেতৃত্বে ভারতভূমিতেও আবদুল ওহাব নজদীর অনুকরণে ইসলামী সংস্কার আন্দোলন শুরু হয় –ঐতিহাসিকগণ যার বিকৃত নাম দিয়েছেন ‘ওহাবী আন্দোলন’। তিনি ভারতবর্ষকে ‘দারুল হরব’ বলে ঘোষণা করেন এবং ‘দারুল হরব’কে ‘দারুল ইসলাম’ তথা একটি ইসলামী রাষ্ট্রে পরিণত করার সক্রিয় আন্দোনে আত্মনিয়োগ করেন সাইয়েদ আহমদ বেরেলভী, শাহ আবদুল আযীযের ভ্রাতুষ্পুত্র শাহ ইসমাইল ও জামাতা মাওলানা আবদুল হাই।

হাজী শরীয়তুল্লাহও এ দেশকে ‘দরুল হরব’ ঘোষণা করেন এবং যতোদিন এ দেশ ‘দারুল ইসলাম’ না হয়েছে ততোদিন এখানে ‘জুমা’ ও ঈদের নামাজ সংগত নয় বলে ঘোষণা করেন। হিন্দুর পূজাপার্বণে কোন প্রকার আর্থিক অথবা দৈহিক সাহায্য-সহযোগিতা ইসলাম-বিরুদ্ধ (শিরক ও হারাম) বলে অভিহিত করেন। তিনি আরও বলেন, মুসলমানদেরকে ধূতি ছেড়ে তহবন্দ-পায়জামা পরিধান করতে হবে, দাড়ি রাখতে হবে এবং সকল প্রকার কুসংস্কার থেকে তওবা করতে হবে। মোটকথা যাবতীয় পাপকাজ পরিত্যাগ করে নতুনভাবে ইসলামী জীবন যাপন করতে হবে।

শোষিত-বঞ্চিত ও নিষ্পেষিত মুসলমান জনসাধারণ হাজী শরীয়তুল্লাহর আহবাদে নতুন প্রাণসঞ্চারণ অনুভব করলো এবং দলে দলে তাঁর কাছে দীক্ষা গ্রহণ করতে লাগলো। অল্প সময়ের মধ্যে দশ হাজার মুসলমান তাঁর দলভুক্ত হলো। এটা হলো হিন্দু জমিদারদের পক্ষে এক মহাআতংকের ব্যাপার। এখন মুসলমান নিষ্পেষণ বন্ধ হয়ে যাবে এবং যেসব নিম্নশ্রেণীর দরিদ্র মুসলমানদেরকে তারা তাদের দাসানুদাসে পরিণত করে ইসলাম ধর্ম থেকেও দূরে নিক্ষেপ করেছে, তারাও তাদের হাতছাড়া হয়ে যাবে। অতএব, তাদের উদ্বিগ্ন ও আতংকিত হয়ে উঠারই কথা। “The Zaminders were alarmed at the spread of the new creed which bound the Mussalman peasantry toghetrer as one mai” –(Dr. James Wise; Journal of Asiatic Society of Bengal Vol. LXII, 1894 No,1)।

হাজী শরীয়তুল্লাকে দমন করার জন্যে ঐক্যবদ্ধ ও বদ্ধপরিকর হলো হিন্দু জমিদারগণ। তাঁদের দলে যোগদান করলো কিছু সংখ্যক স্বার্থান্বেষী আধা-মুসলমান যারা ছিল হিন্দু জমিদারদের দাসানুদাস। অদূরদর্শী মোল্লা-মৌলভী ও পীর, যারা মুসলমানদের মধ্যে শিরক বিদয়াত প্রভৃতি কুসংস্কারের নামে দু’পয়সা কামাই করছিল, তারাও ফারায়েজী আন্দোলনের বিরুদ্ধে দাঁড়ালো।

একদিকে ব্রিটিশ এবং অপরদিকে অত্যাচারী হিন্দু জমিদার মহাজনদের উপর্যুপরি অত্যাচার-নিষ্পেষণে মুসলমানরা অনন্যোপায় হয়ে মাথানত করে সবকিছু সহ্য করে যাচ্ছিল। শরীয়হতুল্লাহর আহবানে নিপীড়িত মুসলমানগণ দলে দলে তাঁর কাছে এসে জমায়েত হতে লাগলো এবং ব্রিটিশ ও হিন্দুদের বিরুদ্ধে এক দুর্বার আন্দোলন গড়ে তোলার শপথ গ্রহণ করলো। সম্ভবতঃ ‘ফরয’ শব্দ থেকে ফরায়েজী ভুলতে বসেচিল এবং বহু অনৈসলাশী আচার-অনুষ্ঠানকে মুসলমান সমাজে প্রচলিত করেছিল। যাবতীয় ইসলাম বিরোধী রীতিনীতি পরিত্যাগ করে নবী মুহাম্মদের (সা) প্রতিষ্ঠিত ইসলামের বিরোধী রীতিনীতি পরিত্যাগ করে নভী মুহাম্মদের (সা) প্রতিষ্ঠিত ইসলামের পুনঃপ্রতিষ্ঠাই ছিল আরবের মুহাম্মদ বিন আবদুল ওহাব নজদী, সাইয়েদ আহমদ শহীদ, হাজী শরীয়তুল্লাহ, সৈয়দ নিসার আলী ওরফে তীতুমীর প্রমুখ মনীষীদের আন্দোলনের মুখ্য উদ্দেশ্য।

হাজী শরীয়াতুল্লাহর আন্দোলনে হিন্দুস্বার্থে চরম আঘাত লেগেছিল বলে তারা ইংরেজ শাসকদের সহায়তায় তাঁকে দমন করতে সকল শক্তি প্রয়োগ করলো। তৎকালীন হিন্দু  সমাজের মনোভাব হাজী শরীয়তুল্লাহর প্রতি কতখানি বিদ্বেষাত্মক ছিল, তার প্রমাণ পাওয়া যায় ১৮৩৭ সালের ২২শে এপ্রিল তারিখের ‘সমাচার দর্পণে’ প্রকাশিত একখানি পত্রে। পক্রটি নিম্নে উদ্ধৃত হলোঃ

ইদানিং জেলা ফরিদপুরের অন্তঃপতি শিবচর থানার সরহদ্দে বাহাদুরপুর গ্রামে সরিতুল্লা নামক একজন বাদশাহী লওনেচ্ছুক হইয়া নূন্যাধিক বার হাজার জোলা ও মুসলমান দলবদ্ধ করিয়া নতুন এক শরা জারি করিয়া নিজ মতাবলম্বী লোকদিগের মুখে দাড়ি, কাছা খোলা, কটিদেশে ধর্মের রজ্জুভৈল করিয়া তৎচতুর্দিগস্থ হিন্দুদিগের বাটি চড়াও হইয়া দেবদেবী পূজার প্রতি অশেষ প্রকার আঘাত জন্মাইতেছে –এই জিলা ঢাকার অন্তঃপাতি মতলবগঞ্জ থানার রাজনগর নিবাসী দেওয়ান মৃত্যুঞ্জয় রায়ের স্থাপিত দ্বাদশ শিবলিঙ্গ ভাঙ্গিয়া নদীতে বিসর্জন দিয়াছে এবং ঐ থানার সরহদ্দে পোড়াগাছা গ্রামে একজন ভদ্রলোকের বাটিতে রাত্রিযোগে চড়াও হইয়া সর্বস্ব হরণ করিয়া তাহার গৃহে অগ্নি দিয়া অবশিষ্ট যে ছিল ভস্মরাশি করিলে এজন যবন মৃত হইয়া ঢাকায় দওরায় অর্পিত হইয়াছে।

আর শ্রুত হওয়া গেল, সরিতুল্লার দলভুক্ত দুষ্ট যবনেরা ঐ ফরিদপুরের অত্নঃপাতি পাটকান্দা গ্রামের বাবু তরিনী চরণ মজুমদারের প্রতি নানা প্রকার দৌরাত্ম্য অর্থাৎ তাহার বাটিতে দেব-দেবী পূজায় আঘাত জন্মাইয়া গোহত্যা ইত্যাদি কুকর্ম উপস্থিত করিলে মজুমদার বাবু যবনদিগের সহিত সম্মুখ যুদ্ধ অনুমতি বোধ করিয়া –ঐ সকল দৌরাত্ম্য ফরিদপুরের ম্যাজিস্ট্রেট সাহেবের হুজুরে জ্ঞাপন করিলে ঐ সাহেব বিচারপূর্বক কয়েকজন যবনকে কারাগারে বন্ধ করিয়াছেন এবং এ বিষয়ে বিলক্ষণ অনুসন্ধান করিতেছেন। হে সম্পাদক মহাশয়, দুষ্ট যবনেরা মফঃস্বলে এ সকল অত্যাচার ও দৌরাত্ম্যে ক্ষান্ত না হইয়া বরং বিচারগৃহে আক্রমণ করিতে প্রবৃত্ত হইল। শ্রুত হওয়া গেল, ফরিদপুরের ম্যাজিষ্টেট সাহেবের হুজরে জে সকল আমলা ও মোক্তার –কারেরা নিযুক্ত আছে, তাহারা সকলেই সরিতুল্লা যবনের মতাবলম্বী –তাহাদের রীতি এই যেদি কাহার নামে মিথ্যা অভিযোগ করিতে হয়, তবে কেহ ফরিয়াদী কেহ বা সাক্ষী হইয়া মোকদ্দমা উপস্থিত করে সুতরাং ১২০০০ লোক দলবদ্ধ। ইহাতে ফরিয়াদীর সাক্ষীর ত্রুটি কি আছে… আমি বোধ করি, সরিতুল্লা যবন যে প্রকার দলবদ্ধ হইয়া উত্তর উত্তর হইতেছে অল্প দিনের মধ্যে হিন্দুধর্ম লোপ পাইয়া অকালে প্রলয় হইবেক। করিতুল্লার চোটপাটের শত অংশের এক অংশ তিতুমীর করিয়ছিল না। ইতি সন ১২৪৩ সাল, তারিখ ২৪শে চৈত্র”। (“সংবাদপত্রে সেকালের কথা”-ব্রজেন্দ্রনাথ বন্দোপাধ্যয় সম্পাদিত –শতাব্দী পরিক্রমা, পৃঃ ১৯৪-৯৫)।

পত্রখানির প্রতিটি ছত্রে মুসলমানদের প্রতি হিন্দু সমাজের মানসিকতা পরিস্ফুট হয়েছে।

হাজী শরীয়তুল্লাহ সাইয়েদ আহমদ বেরেলভীর ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলনের প্রতিও আকৃষ্ট হয়ে বাংলাদেশ থেকে বহু মুজাহিদ, যাকাত, ফেৎরা, লিল্লাহ থেকে সংগৃঞীত বহু অর্থ এবং নানা প্রকার সাহায্য পশ্চিম ভারতের সিত্তানা কেন্দ্রে পাঠাতেন।

ঢাকা জেলার নয়াবাড়ী নাম স্থানে প্রথমে শরীয়তুল্লাহর নুতন কর্মক্ষেত্র স্থাপিত হয়। কিন্তু হিন্দু জমিদারদের চরম বিরোধিতার ফলে তাঁকে আপন গ্রামে ফিরে গিয়ে তাঁর প্রচারকার্য শুরু করতে হয়। তাঁর আন্দোলন ঢাকা, বরিশাল, নদিয়া, পাবনা, ময়মনসিংহ প্রভৃতি জেলায় বিস্তার লাভ করে। নিরক্ষর, চাষী, তাঁতী ও অন্যান্য সাধারণ মুসলমানদের নামাজ-রোজার প্রচলন, ধুতির পরিবর্তে তহবন্দ-টুপির ব্যবহার, মসজিদগুলির সংস্কার প্রভৃতি কাজ পূর্ণ উদ্যমে চলতে থাকে। হাজী শরীয়তুল্লাহ নিজে মাথায় প্রকান্ড পাগড়ী ও গায়ে জামার উপরে হুদরিয়া পরতেন –যে পোশাক সাধারণতঃ কোন মুসলমান ব্যবহার করতো না। ১৮৪০ সালে তিনি পরলোক গমন করার পর তাঁর যোগ্য পুত্র দুদু মিয়া তাঁর আন্দোলন অব্যাহত রাখেন।

হাজী শরীয়তুল্লাহর পুত্র মোহাম্মদ মুহসীন ওরফে দুদু মিয়া ১৮১৯ সালে জন্মগ্রহণ করেন। ১৮৩১ সালে তিনি হজ্ব পালনের জন্যে মক্কা গমন করে পাঁচ বৎসর অবস্থান করেন এবং প্রত্যাবর্তনের পর পিতার কাজে সাহায্য করেন।

পিতার ন্যায় দুদু মিয়াও অত্যাচারী জমিদারদের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করেন। জমিদারদের সংগে তাঁকে বার বার সংঘর্ষে আসতে হয়। ১৮৪২ সালে তিনি ফরিদপুরের জমিদার বাড়ী আক্রমণ করেন এবং মদন নারায়ণ ঘোষকে বন্দী ও পরে হত্যা করেন। পুলিশ তাঁকেসহ ১১৭জন ফারায়েজীকে গ্রেফতার করে। বিচারে ২২ জনের কারাদন্ড হয়। কিন্তু দুদু মিয়াকে প্রমাণের অভাবে খালাস দেয়া হয়। ১৮৪৬ সালে এনড্রিও এন্ডারসন এর গোমস্তা কালি প্রসাদ মনিবের আদেশে সাত আটশ’ লোক নিয়ে দুদু মিয়ার বাড়ী চড়াও করে এবং প্রায় দেড় লক্ষ মূল্যের অলংকারাদিসহ বহু ধনসম্পদ লুন্ঠন করে নিয়ে যায়। ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে বিচারপ্রার্থী হয়েও কোন ফল হয় না।

জমিদার ও নীলকরদের অত্যাচারের বিরুদ্ধে বিচারপ্রার্থী হয়ে কোন সুবিচার না পেয়ে দুদু মিয়া এবার নিজ হাতে শত্রুদের উচিত শাস্তি দিতে মনস্থ করেন। ১৮৪৬ সালর নভেম্বর মাসে, তাঁর গৃহ লুণ্ঠিত হওয়ার একমাস পরে, তিনি শত্রুদের অত্যাচার-উৎপীড়নের ইন্ধন সংযোগকারী নীলকর ডানলপের কারখানা অগ্নিসংযোগে ভস্মীভূত করে দেন এবং গোমস্তা কালী প্রসাদকে হত্যা করেন। দুই বৎসর পর্যন্ত মামলা চলার পর দুদু মিয়া তাঁর বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ থেকে অব্যাহতি পান।

জনসাধারণের মধ্যে দুদু মিয়ার অসাধারণ প্রভাব প্রতিপত্তি লক্ষ্য করে সরকার বিব্রত হয়ে পড়েন। ১৮৫৭ সালের আযাদী আন্দোলন চলাকালে দুদু মিয়া উত্তেজনা সৃষ্টি করতে পারেন এই অজুহাতে তাঁকে কারাগারে আটক করে  রাখা হয়। প্রথমে আলীপুরে এবং পরে তাঁকে ফরিদপুর জেলে রাখা হয়। ১৮৫৯ সাল মুক্তিলাভ করে তিনি ঢাকায় আসেন এবং এখানেই তাঁর মৃত্যু হয়।

দুদু মিয়া পিতার আন্দোলনকে অধিকতর শক্তিশালী করেছিলেন বটে। কিন্তু নীতির দিক দিয়ে তিনি পিতার আদর্শের কিছুটা পরিবর্তন করেছিলেন। হাজী শরীয়তুল্লাহ যে ছয়টি বিষয়ের উপর তাঁর আন্দোলনের ভিত্তি স্থাপন করেছিলেন তা হচ্ছে

>> মুসলমান শাসিত দেশ ব্যতীত অন্য কোথাও জুমা ও ঈদের নামায বৈধ নয়;

>> মহররমের পর্ব ও অনুষ্ঠান পালন ইসলাম বিরুদ্ধ এবং পাপকার্য;

>> ‘পীর’ ও ‘মুরীদ’ পরিভাষাদ্দয়ের স্থলে ‘উস্তাদ’ ও ‘শাগরেদ’ পরিভাষাদ্বয়ের ব্যবহার। কারণ ‘মুরীদ’ তার যথাসর্বস্ব ‘পীরের’ কাছে সমর্পণ করে যা ঠিক নয়। পক্ষান্তারে ‘শাগরেদকে’ তা করতে হয় না।

>> এ আন্দোলনে যারাই যোগদান করবে তাদের মধ্যে উচ্চ-নীচ, ‘আশরাফ’-‘আতরাফ’ –কোন ভেদাভেদ থাকবে না। বরঞ্চ সকলের মধ্যে সমমর্যাদা প্রতিষ্ঠিত হবে –‘পীরি-মুরীদির’ মধ্যে যার অবাব দেখা যায়।

>> পীরপূজা ও কবরপূজা ইসলাম বিগর্হিত বলে এসবের বলে তীব্র প্রতিবাদ জানান।

>> তৎকালে পীরের হাতে হাত রেখে ‘বয়আত’ করার যে প্রথা প্রচলিত ছিল, তার পরিবর্তে ‘ফারায়েজী’ আন্দোলনে যোগদানকারী শুধুমাত্র সকল পাপ কাজ থেকে খাঁটি দিলে ‘তওবা’ করে পরিপূর্ণ ইসলামী জীবন যাপন করার শপথ গ্রহণ করবে।

>> ধাত্রীকর্তৃক নব প্রসূত সন্তানের নাড়িকর্তনকেও ইসলাম বিরুদ্ধ বলে ঘোষণা করেন এবং বলেন যে, এ কাজ পিতার, বেগানা ধাত্রীর নয়।

জেমস টেইলর বলেন যে, কোরআনকে অক্ষরে অক্ষরে পালন করাই ফারায়েজী আন্দোলনের উদ্দেশ্য এবং কোরআন যেসব অনুষ্ঠানাদি সমর্থন করে না তা সবই বর্জনীয়। মহররমের অনুষ্ঠান পালনই শুধু নিষিদ্ধ নয়, এ অনুষ্ঠানের ক্রিয়াকলাপ দেখাও নিষিদ্ধ। (Dr. A. R. Mallick: British Policy & the Muslims in Bengal. P. 69)।

হাজী শরীয়তুল্লাহর মৃত্যুর পর আন্দোলনকে জোরদার করার জন্যে দুদু মিয়া সমগ্র পূর্ববাংলা কয়েকটি এলাকায় বিভক্ত করেন এবং প্রত্যেক এলাকায় একজন করে খলিফা নিযুক্ত করেন যাদের কাজ ছিল আন্দোলনের দিকে মানুষকে আহবান করা, কর্মী সংগ্রহ করা ও সংগঠন পরিচালনার জন্যে অর্থ সংগ্রহ করা। এবাবে যে সাংগঠনিক কাঠামো তৈরী হলো তার মাথায়, দুদু মিয়া, ‘পীর’ রূপে বিরাজমান হলেন যে পীরপ্রথাকে তাঁর পিতা প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। (Journal of the Asiatic Society of Bengal, Vol. LXIII, pt. 2, No.1,1894, p.50; Encyclopedia of Islam, Vol.2, p-59)।

হাজী শরীয়তুল্লাহর জিবদ্দশায় যে আন্দোলন পরিচালিত ছিল, তা ছিল মুখ্যতঃ ধর্মীয় সংস্কার আন্দোলন। অত্যাচারী জমিদারদের প্ররোচনায় দু’একটি সংঘর্ষ ব্যতীত কায়েমী স্বার্থের বিরুদ্ধে, তাঁর আন্দোলনের সংঘর্ষ হয়নি। কিন্তু দুদু মিয়ার সময়ে আন্দোলন অনেকটা রাজনৈতিক রূপ ধারণ করে। সকল জমিদার ও নীলকরগণ তাঁর আন্দোলনের বিরুদ্ধে একতাবদ্ধ হয়। তাই দুদু মিয়ার সারা জীবন তাদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেই কেটে গেছে। একদিকে গরীব প্রজাদের উপর জমিদার-নীলকরদের নানাপ্রকার উৎপীড়ন এবং তাদের দুঃখ মোচনে দুদু মিয়ার সর্বাত্মক প্রচেষ্টা তাদেরকে দুদু মিয়ার নেতৃত্বে একতাবদ্ধ করে। দুদু মিয়ার সাংগঠনিক যোগ্যতাও  ছিল অসাধারণ। বাংলার জমিদারগণ চিল প্রায়ই হিন্দু এবং নীলকরগণ ছিল ইংরেজ খৃষ্টান ও তাদের গোমস্তা কর্মচারী ছিল সবই হিন্দু। এ কারণেও কৃষক প্রজাগণ জমিদার-নীলকরদের বিরুদ্ধে দুদু মিয়ার নেতৃত্বে একতাবদ্ধ হয়েছিল। দুদু মিয়াকে সারা জীবন জমিদার-নীলকরদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করতেই কেটে গেছে। নিত্য নতুন মিথ্যা মামলা-মোকদ্দমায় তাঁকে জড়িত করা হয়। এসবের জন্যে তাঁকে শেষ পর্যন্ত দারিদ্র্য বরণ করতে হয়।

দুদু মিয়ার মৃত্যুর পর তাঁর প্রথম ও দ্বিতীয় পুত্র যথাক্রমে গিয়াসউদ্দীন হায়দার ও নয়া মিয়া ফারায়েজী আন্দোলনের নেতৃত্ব দেন। নয়া মিয়ার মৃত্যুর পর দুদু মিয়ার তৃতীয় পুত্র আলাদীন আহমদ আন্দোলন পরিচালন করেন। তিনি ১৯০৫ সালের বংগভংগ সমর্থনে নওয়াব সলিমুল্লাহর সাথে সহযোগিতা করেন। আলাদীনের পর তাঁর পুত্র বাদশাহ মিয়া আন্দোলন পরিচালনা করেন। ১৯২২ সালে তিনি খেলাফত আন্দোলনে যোগদান করেন এবং এ সময়ে সরকার তাঁকে গ্রেফতার করে। তারপর ফারায়েজী আন্দোলন স্তিমিত হয়ে পড়ে। যে ধর্মীয় সংস্কার আন্দোলন নিয়ে এ আন্দোলনের শুরু হেয়ছিল তা ক্রমশঃ স্তিমিত হয়ে ক্রমশঃ অন্য  ধারায় প্রবাহিত হয়। যে পীর-মুরীদি হাজী শরীয়তুল্লাহ প্রত্যখ্যান করে আন্দোলনকে খাঁটি ইসলামী সংস্কার আন্দোলনের রূপ দিয়েছিলেন, অবশেষে এ আন্দোলন সেই পীর-মুরীদিতেই রূপান্তরিত হয়ে গেল। ফলে এ আন্দোলনের মাবলম্বীদের কার্যকলাপ ও কর্মপদ্দীত থেকে পূর্বের সে জেহাদী প্রেরণা ও সংগ্রামী মনোভাব বিদায় গ্রহণ করলো।

Page 10 of 31
Prev1...91011...31Next

© Bangladesh Jamaat-e-Islami

  • আমাদের সম্পর্কে
  • প্রাইভেসি পলিসি
  • যোগাযোগ
কোন ফলাফল নেই
সকল ফলাফল দেখুন
  • নীড়
  • সংক্ষিপ্ত পরিচিতি
  • বিভাগ ভিত্তিক
    • আল কুরআন
    • আল হাদিস
    • ফিকাহ
    • ঈমান
    • ইসলাম
    • পারিবারিক জীবন ও সামাজিক সম্পর্ক
    • আন্দোলন ও সংগঠন
    • সীরাত ও ইতিহাস
    • সীরাতে সাহাবা
    • মহিলাদের বিশেষ বই
    • রাজনীতি
    • অর্থনীতি
    • বিবিধ
  • রুকন সিলেবাস
    • রুকন সিলেবাস (স্বল্প শিক্ষিত)
    • রুকন সিলেবাস (শিক্ষিত)
  • কর্মী সিলেবাস
  • বাৎসরিক পাঠ্যসূচি
    • বাৎসরিক পাঠ্যসূচি (শিক্ষিত)
    • বাৎসরিক পাঠ্যসূচি (স্বল্প শিক্ষিত)
  • উচ্চতর অধ্যয়ন
  • অডিও বই
  • অন্যান্য
    • দারসুল কুরআন
    • দারসুল হাদিস
    • আলোচনা নোট
    • বইনোট
    • প্রবন্ধ
    • কবিতা
    • বুলেটিন
    • স্মারক
    • ম্যাগাজিন
    • এপস
    • রিপোর্ট বই
    • ছাত্রী সিলেবাস

@BJI Dhaka City South