দশম অধ্যায়
কেবিনেট মিশন পরিকল্পনা
বৃটিশ সরকার ১৯শে ফেব্রুয়ারী ১৯৪৬, ঘোষণা করেন যে, ভাইসরয় লর্ড ওয়াভেল এবং ভারতীয় নেতৃবৃন্দের সাথে আলোচনান্তে শাসনতান্ত্রিক প্রশ্নে একটি সমঝোতায় উপনীত হওয়ার লক্ষ্যে তিনজন কেবিনেট মন্ত্রী সমন্বয়ে একটি বিশেষ মিশন ভারতে প্রেরণ করা হবে।
এ প্রসংগে হাউস অব কমন্সে ১৫ই মার্চ এক বিতর্ক চলাকালে প্রধানমন্ত্রী এটলী বলেন, বহু জাতি, ধর্ম ও ভাসার দেশ ভারতে যে জটিল অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে, তার অপসারণ ভারতীয়দের দ্বারাই হবে। আমরা সংখ্যালঘুদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন। ….তাই বলে আমরা সংখ্যাগুরুদের অগ্রগতিতে ভেটো প্রদান করার অনুমতি সংখ্যালঘুকে দিতে পারিনা।
প্রধানমন্ত্রীর উক্ত বক্তব্যে কংগ্রেস ভয়ানক উল্লসিত হয়। কিন্তু এতে লীগ মহলে সংশয় দেখা দেয় এবং জিন্নাহ মাকড়সার জালে মাছির আমন্ত্রণের দৃষ্টান্ত পেশ করে বলেন –If the fly refuses, it is said a veto is being exercised and the fly in intransigent (মাছি মাকড়সার আমন্ত্রণ প্রত্যাখ্যান করলে বলা হয় ভেটো প্রদান করা হচ্ছে এবং মাছি আপোসকামী নয়।)
-(Cabinet Mission and after, Muhammad Ashraf, p.1-3, Choudhury Mohammad Ali: Emergnce of Pakistan, p.52)
এর চেয়ে সুন্দর দৃষ্টান্ত কিছু হতে পারেনা। সংখ্যাগরিষ্ঠেতর একচ্ছত্র প্রাধান্য ও আধিপত্যের ফাঁদে পা দিতে সংখ্যালঘু রাজী না হলে সেটাকে ভেটোর সমতুল্য মনে করে বৃটিশ প্রধানমন্ত্র বলেন, তা করতে দেয়া যাবেনা। এতে এটলী তথা বৃটিশ সরকারের মনোভাব পরিস্ফুট হয়ে পড়ে।
যাহোক প্যাথিক লরেন্স (ভারত সচিব), স্যার স্ট্যাফোর্ড ক্রিপস (প্রেসিডেন্ট অব দি বোর্ড অব ট্রেডস) এবং মিঃ এ, ডি, আলেকজান্ডারকে (ফার্স্ট লর্ড অব দি এডমিরাল্টি) নিয়ে গঠিত কেবিনেট মিশন ২৪শে মার্চ, ১৯৪৬ নতুন দিল্লী পৌঁছেন।
মিশন সদস্যগণ রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দের সাথে প্রাদেশিক প্রধানমন্ত্রীদের সাথে এবং আরও বিভিন্ন প্রতিনিধিত্বশীল ব্যক্তির সাথে দেখাসাক্ষাৎ ও মত বিনিময় করেন। দেশীয় রাজ্যের শাসকবৃন্দ ও মন্ত্রীদের সাথেও তাঁরা আলাপ আলোচনা করেন।
কেবিটেন মিশটে ক্রিপস আছেন জেনে আবুল কালাম আজাদ গভীর সন্তোষ প্রকাশ করেন। কারণ তিনি ছিলেন কংগ্রেসীদের পুরাতন অন্তরংগ বন্ধু। ক্রিপস ইতিপূর্বে ভারতে এসে জনৈক ভারতীয় হিন্দু সুধীর চন্দ্রগুপ্তের অতিথেয়তা গ্রহণ করেন। (Moulana Abul Kalam Azad: ‘India Wins Freedom’, p.146)
আজাদ তেসরা এপ্রিল মিশনের সাথে দেখা করেন। স্বাধীনতাকে ভিত্তি করে তিনি তাঁর যুক্তিতর্কের প্রাসাদ নির্মাণ করে রেখেছিলেন। তাঁর ধারণা ছিল, একটি গণপরিষদ ভবিষ্যৎ শাসনতন্ত্র তৈরী করবে এবং কংগ্রেসের দাবী হচ্ছে একটি ফেডারেল সরকার গঠনের যার হাতে থাকবে অন্ততঃ দেশ রক্ষা, যোগাযোগ এবং বৈদেশিক বিভাগ। ভারত বিভাগ কংগ্রেস কিছুতেই মেনে নেবেনা।
জিন্নাহ ৪ঠা এপ্রিল মিশনের সাথে দেখা করেন। ৭ই এপ্রিল আজাদ পুনরায় সাক্ষাৎ করেন। কংগ্রেস ও মুসলিম লীগ উভয়েই তাদের নিজ নিজ বক্তব্য পেশ করে। মুসলিম লীগের বক্তব্য কংগ্রেস সভাপতিকে জানানো হয়।
কংগ্রেস চায় যে একটি মাত্র গণপরিষদ হবে যা নিখিল ভারত ফেডারাল সরকার এবং আইন সভার জন্যে শাসনতন্ত্র প্রণয়ন করবে। কেন্দ্রীয় ফেডারাল সরকারের হাতে বৈদেশিক বিভাগ, প্রতিরক্ষা , যোগাযোগ, মৌলিক অধিকার, মুদ্রা, কাস্টম এবং পরিকল্পনা বিভাগ থাকবে।
কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক আইন সভার মুসলিম লীগ সদস্যদের নিয়ে ৯ই এপ্রিল ১৯৪৬, যে কনভেনশন দিল্লীতে অনুষ্ঠিত হয়, তাতে গৃহীত প্রস্তাবে দাবী করা হয় যে উত্তর-পূর্বাঞ্চলে বাংলা ও আসাম এবং পশ্চিমে পাঞ্জাব, সীমান্ত প্রদেশ সিন্ধু ও বেলুচিস্তান নিয়ে একটি সার্বভৌম স্বাধীন পাকিস্তান রাষ্ট্র গঠন করা হোক এবং পাকিস্তান ও হিন্দুস্থানের লোকদের নিয়ে তাদের নিজ নিজ শাসনতন্ত্র প্রণয়নের জন্য দুটি পৃথক পৃথক গণপরিষদ গঠন করা হোক। এ প্রস্তাব অনুযায়ী মুসলিম লীগ কেবিটেন মিশনের নিকটে প্রস্তাব পেশ করেন যে পাকিস্তান গ্রুপের ছয় প্রদেশের জন্যে একটি এবং হিন্দুস্থান গ্রুপের ছয় প্রদেশের জন্যে অন্য একটি গণপরিষদ গঠন করা হোক।
কংগ্রেস ও মুসলিম লীগ একে অপরের প্রস্তাব মেনে নিতে পারেনি। প্রধান বিতর্কিত বিষয়ছিল এই যে উপমহাদেশে একটি মাত্র স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র হবে, না দুটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র। উভয় অবস্থাতেই সংখ্যালঘু সমস্য রয়েছে। কেবিনেট মিশন উভয় দলের মতপার্থক্য দূর করতে অপারগ হয়।
অবশেষে কেবিটেন মিষন এবং ভাইসরয় শাসনতান্ত্রিক সমস্যার সমাধান কল্পে ১৬ই মে এক বিবৃতি প্রকাশ করে। তাঁদের বিবৃতির কেন্দ্রীয় বিষয়বস্তু ছিল ভারতে একটিমাত্র রাষ্ট্রের সংরক্ষণ। প্রশাসনিক, অর্থনৈতিক ও সামরিক কারণে বৃটিশ সরকার দুটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন।
কেবিনেট মিশস ২৪শে মার্চ ১৯৪৬, ভারতে আগমন করে এবং তিন মাসাধিক কাল অবস্থান করতঃ ২৯শে জুন ভারত ত্যাগ করে। বৃটিশ সরকারের ভারতে কেবিনেট মিশন প্রেরণের উদ্দেশ্য ছিল, উদ্ভুত পরিস্থিতিতে একটি শাসনতান্ত্রিক সমাধান পেশ করা। কেবিনেট মিষনের সদস্যগণ এ বিষয়ে চেষ্টার ত্রুটি করেন নি। তবে এ কথা সত্য যে সমস্যা সমাধানে তাঁরা বিশেষ করে সবচেয়ে প্রভাবশালী সদস্য স্টাফোর্ড ক্রিপস কংগ্রেসের অন্তরংগ বন্ধু হওয়ার কারণে সমস্যা সমাধানে কংগ্রেস তথা হিন্দুজাতির স্বার্থকে প্রাধান্য দিয়েছেন।
মাওলানা আবদুল কালাম আজাদ বলেন, কেবিনেট মিশন ২৩শে মার্চ ভারতে আসেন। পূর্বে একবার স্টাফোর্ড ক্রিপস ভারতে আগমন করলে জে,সি,গুপ্ত তাঁর আতিথেয়তার ভার গ্রহণ করেন। তিনি আমাকে বলেন যে, তিনি ক্রিপসের সাথে দেখা করার জন্য দিল্লী যাচ্ছেন। আমি তাঁর হাতে পুনরায় ভারতে আসার জন্যে ক্রিপসকে মুবারকবাদ জানিয়ে একখানি পত্র পাঠাই। (Abul Kalam Azad: India Wind Freedom, p.140)
তিনি আরও বলেন, ক্রিপসের ভারতে অবস্থান কালে বরাবর তাঁর সাথে আমার পত্রের আদান প্রদান চলতে থাকে। (Abul Kalam Azad:India Wins Freedom, p.172)
ইশতিয়াক হুসেন কোরেশী তাঁর The Struggle for Pakistan গ্রন্থের ২৬৬ পৃষ্ঠার পাদটিকায় উল্লেখ করেছেন-
Sudihir Ghosh, Gandhi’s Emissary (Bombay 1967) gives a reveling account of the backdoor secret negotiation between the Cabinet Mission and the Congres leaders. There were no such intimate contacts between the Muslim League and the British government relations worked against Muslim interests at every critical stage. The British had an eye on the future advantage to be reaped from friendship with the largest and more powerful community and were willing to go very far indeed to meet its desires.
পূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে যে, যে বিষয়টি কংগ্রেস ও মুসলিম লীগের মধ্যে বিরোধের মূল কারণ হলো পাকিস্তান নামে একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র প্রতিষ্টার দাবী। এ ছিল উপমহাদেশের মুসলমানদের দাবী যা কংগ্রেস এবং বৃটিশ সরকার মেনে নিতে মোটেই রাজী ছিলনা। কেবিনেট মিশনের পরিকল্পনার ভেতর দিয়ে কংগ্রেস মুসলিম লীগকে ফাঁদে ফেলে তাদের একচ্ছত্র আধিপত্য প্রতিষ্ঠার সকল চেষ্টা করেছে। তাদের ফাঁদে ফেলার এ চক্রান্তটি সূক্ষ্মদর্শী রাজনীতিবিদ কায়েদে আযম মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ সম্যক উপলব্ধি করে কেবিনেট মিশনের প্রস্তাব শর্তসাপেক্ষে গ্রহন করতে সম্মতি জ্ঞাপন করেছেন। কিন্তু কংগ্রেসের হঠকারিতার কারণে সকলই ভেস্তে যায়।
তিন মাসাধিককালব্যাপী কেবিনেট মিশনের তৎপরতা, কংগ্রেস, মুসলিম লীগ ও ভাইসরয়ের সাথে আলোচনার দীর্ঘ ইতিহাস বর্ণনা করে সংক্ষেপে বলতে চাই যে, একটি আপোষমূলক সিদ্ধান্তে পৌঁছার ক্ষেত্রে কংগ্রেস বিরাট প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করে। কারণ কংগ্রেসের অভিলাষ ছিল, ভবিষ্যতের স্বাধীন ভারতের উপর একচেটিয়া প্রভুত্ব-কর্তৃত্ব লাভ করা। ক্ষমতার অংশিদারিত্ব মুসলিম লীগকে দিতে কংগ্রেস কিছুতেই রাজী ছিলনা। এ সময়ে ক্রিপসের কাছে লিখিত পত্রে গান্ধী বলেন, যদি তোমাদের সাহস থাকে তাহলে আমি প্রথম থেকেই যা বলে আসছি তাই কর। ….কংগ্রেস ও মুসলিম লীগের মধ্যে যে কোন একটি বেছে নাও। (Pyarelal, Mohatma Gandhi: The Lasy Phase vol.1, p.225; Chudhury Muhammad Ali: The Emergence of Pakistan, p.62)
অবশেষে কেবিনেট মিশন ও ভাইসরয়, একটি শক্তিশালী ও প্রতিনিধিত্বমূলক মধ্যবর্তী সরকার গঠনের উদ্দেশ্যে বিবৃতি দানের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। ১৬ই মে তাঁদের প্রকাশিত বিবৃতিতে চৌদ্দ জনের নাম ঘোষণা করা হয় যাঁদেরকে ভাইসরয় মধ্যবর্তী কেবিনেটের সদস্য হিসাবে যোগদান করার আমন্ত্রণ জানান। তফসিলী সম্প্রদায়ের একজনসহ এতে থাকবে কংগ্রেসের ছয়জন, মুসলিম লীগের পাঁচজন, একজন শিখ, একজন ভারতীয় খৃষ্টান এবং একজন পার্শী।
উল্লেখ্য যে ১৬ই মে প্রকাশিত বিবৃতির ৮ অনুচ্ছেদে এ নিশ্চয়তা দেয়া হয়েছিল যে, দুটি প্রধান দল অথবা দুয়ের যে কোন একটি যদি উপরোক্ত পদ্ধতিতে একটি কোয়ালিমন সরকারে যোগদান করতে রাজী না হয়, তাহলে ভাইসরয় একটি মধ্যবর্তী সরকার গঠনের জন্যে সামনে অগ্রসর হবেন। ১৬ই মে প্রকাশিত বিবৃতি মেনে নিয়ে সরকারে যোগদান করতে যারা রাজী হবে তাদেরকে নিয়ে এ সরকার যথাসম্ভব প্রতিনিধিত্বশীল হবে।
এরপর সপ্তাহব্যাপী কংগ্রেস নেতৃবৃন্দ, উচ্চপদস্থ হিন্দু কর্মচারী এবং হিন্দু প্রেসের পক্ষ থেকে কেবিটেন মিশন এবং ভাইসরয়ের বিরুদ্ধে প্রচন্ড ঝড় সৃষ্টি করা হয়। গুজব রটনা করা হয় যে, কেবিটেটে মুসলমানদের শূন্য আসনগুলোতে মুসলিম লীগ সদস্যদের নেয়া হবে। কেবিনেটে মুসলমনাদের শূন্য আসনগুলোতে মুসলিম লীগ সদস্যদের নেয়া হবে। কেবিনেটে একজন জাতীয়তাবাদী মুসলমান নেয়া না হলে গান্ধী দিল্লী ত্যাগ করবেন বলে হুমকি প্রদর্শন করেন, যদিও কংগ্রেস সভাপতি আবুল কালাম আজাদ লিখিতভাবে এ নিশ্চয়তা দান করেন যে, এ নিয়ে ওয়ার্কিং কমিটি কোন জিদ করবেনা। গান্ধী ধমকের স্বরে বলেন, তাহলে গণপরিষদ একটি বিদ্রোহী সংস্থায় পরিণত হবে। ক্রিপস দৌড়ে গান্ধীর শরণাপন্ন হলে তিনি (গান্ধী) বলেন, কেবিনেট মিশনকে দু’দলের যে কোন একটিকে বেছে নিতে হবে, সংমিশ্রণের চেষ্টা চলবেনা।
-(Pyarelal, Mohatma Gandhi: The Last Phase vol.1, p.234-37, Chodhury Muhammad Ali: The Emergence of Pakistan, p.62-63)
এক সপ্তার মধ্যেই কেবিনেট মিশন গান্ধীর কাছে আত্ম-সমর্পণ করে। ২২শে জুন ক্রিপসের বন্ধু সুধীর ঘোষ গান্ধীকে বলেন যে তিনি ক্রিপসের সাথে দেখা করেছেন। তিনি বলেন, কংগ্রেস যোগদান করতে রাজী না হলে, শুধু মুসলিম লীগের উপর নির্ভর করা যায় না।
সুধীর ঘোষ পুনরায় ক্রিপসের সাথে দেখা করে গান্ধীকে গিয়ে বলেন, কেবিনেট মিশন এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন যে, কংগ্রেস যদি স্বল্পমেয়াদী প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনা মেনে নেয় তাহলে মধ্যবর্তী সরকার গঠনের জন্যে এ যাবৎ যা কিছু করা হয়েছে তা সবই নাকচ করে নতুনভাবে চেষ্টা করা হবে। তাঁরা গান্ধী এবং প্যাটেলকে দেখা করতে বলেছেন। গান্ধী প্যাটেল, (সর্দার বল্লব ভাই প্যাটেল) এবং সুধীর ঘোষকে নিয়ে কেবিনেট মিশনের সাথে দেকা করতে যান। প্যাটেল পূর্বেই প্যাথিক লরেন্সের সাথে কথা বলেছেন। প্যাথিক লরেন্স গান্ধীকে বলেন, আমি বুঝতে পেরেছি যে আপনি মধ্যবর্তী সরকারের গোটা পরিকল্পনা যা নিয়ে আমরা এ পর্যন্ত অগ্রসর হয়েছি, নাকচ করে পরিস্থিতি নতুন করে বিবেচনা করতে চান। বেশ ভালো কথা।
অতঃপর কেবিনেট মিশন ও গান্ধীর মধ্যে যে বুঝাপড়া হয় তা ওয়ার্কিং কমিটিকে অবহিত করা হয়, অতঃপর ২৫শে জুন কংগ্রেস সভাপতি ভাইসরয়ের নিকটে লিখিত পত্রে জানিয়ে দেন যে, কংগ্রেস অন্তর্বর্তী সরকারের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহন করছে।
কংগ্রেসের এবং গান্ধীর এ ধরণের মানসিকতার পরিচয় ভারত বিভাগের পূর্ব মুহুর্ত পর্যন্ত পাওয়া গেছে। উপরের সংক্ষিপ্ত আলোচনায় গান্ধী ও কেবিনেট মিশনের মনের কদর্য চেহারাটা ইতিহাসের পাতায় পরিস্ফুট হয়েছে।
লীগ প্রতিক্রিয়া
ভারতের শাসনতান্ত্রিক সমস্যা সমাধানের যে আশার আলো দেকা গিয়েছিল, তা কেবিনেট মিশন এবং ভাইসরয়ে কর্তৃক তাঁদের কৃত ওয়াদা ভংগের কারণে নির্বাপিত হয়। এ পরিস্থিতি আলোচনার জন্যে জুলাইয়ের শেষ সপ্তাহে বোম্বাইয়ে লীগ কাউন্সিল অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়। এ অধিবেশনে জিন্নাহ বলেন, মুসলিম লীগ কেবিনেট মিশনের সাথে আলোচনায় কংগ্রেসকে একটির পর একটি সুবিধা দান করেছে, (made concession after concession)। কারণ আমরা চেয়েছিলাম একটা বন্ধুত্বপূর্ণ ও শাস্তিপূর্ণ মীমাংসায় উপনীত হতে যাতে করে শুধু হিন্দু ও মুসলমানই নয়, বরঞ্চ উপমহাদেশে বসবাসকারী সকল মানুষ স্বাধীনতা লাভের দিকে অগ্রসর হতে পারে। কিন্তু কংগ্রেস তাদের নীচতাপূর্ণ বাকচাতুরী ও দরকষাকষির দ্বারা ভারতবাসীর বিরাট ক্ষতি করেছে। সমগ্র আলাপ আলোচনায় কেবিনেট মিশস কংগ্রেসের সন্ত্রাস ও ভীতির শিকারে পরিনত হয়। এসব কিচু এ কথাই নিঃসন্দেহে প্রমাণ করে যে, ভারতের সকল সমস্যার সমাধান একমাত্র পাকিস্তান।
আমি মনে করি আমরা যুক্তি প্রমাণের কিছু বাকী রাখিনী। এখন এমন কোন ট্রিবিউনাল নেই যার শরণাপন্ন আমরা হতে পারি। একন মুসলিম জাতিই আমাদের একমত্রা ট্রিবিউনাল।
অতঃপর অধিবেশনে গৃহীত প্রস্তাবে কেবিনেট মিমনের প্রস্তাব গ্রহণ প্রত্যাহার করা হয় এবং ভারত সচিবকে জানিয়ে দেয়া হয়।