ইসলামী রাষ্ট্রে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির গুরুত্ব
মানব জীবনের অর্থ- সম্পদের গুরুত্ব- অর্থনৈতিক ব্যাপারাদি গুরুত্বপূর্ণ, তাবে সফল ব্যাপারে আবর্তনবিন্দু নয়-অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও তার বিকাশ সমাধানের উদ্ধোধন- জমি আবাদকরণের নির্দেশ।
মানব জীবনে অর্থ-সম্পদের গুরুত্ব
মানব জীবনে অর্থ-সম্পদের গুরুত্ব অপরিসীম। অর্থনৈতিক ব্যাপারাদি মানুষের নিকট অত্যন্ত আবেগপূর্ণও বটে। কেননা মানব জীবনের চাকা তারই উপর আবর্তিত হয়। এ জন্য ইসলামও তার উপর যথাযথ গুরুত্ব আরোপ করেছে। ফিকহ্ শাস্ত্রের বিভিন্ন অধ্যায়ে পারস্পরিক অর্থনৈতিক লেন-দেনের বিস্তারিত বিধানের খুটিনাটি অত্যন্ত বিশদভাবে আলোচিত হয়েছে এই কারণেই এ থেকে এ কথাও অক্যট্যভাবে প্রমাণিত হয়, যে দ্বীন ইসলাম দুনিয়ার অপরাপর ধর্মের ন্যায় কতগুলি হিতো পদেশ ও আরাধনা-উপাসনার ধর্ম নয়। বরং ইসলাম হচ্ছে মানব জীবনের যাবতীয় প্রয়োজন পূরণকারী ও সমস্যার সমাধানকারী এক পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধান।
ইসলাম নির্দেশিত জীবন-বিধানের কার্যাবলী প্রধানত ও মূলত পরকালে আল্লাহর নকট সুফল পাওয়ার লক্ষ্যে সুম্পূর্ণরূপে নির্ভর করে অর্থনৈতিক প্রয়োজনাবলী যথাযথ পূরণ হওয়ার উপর। রাসূলে করীম (স) প্রায় সময়ই আল্লাহর দরবারে দোয়া করতেন এই বলেঃ [আরবি*********************]
হে আমাদের আল্লাহ, তুমি আমাদের খাদ্য বরকত দাও। আর আমাদের ও আমাদের খাদ্যের মাঝে তুমি কোন ব্যবধান সৃষ্টি করো না। কেননা যথারীতি খাদ্য না পেলে আমরা নামায-রোযা করতে পারবো না, আমাদের মহান রব্ব নির্দেশিত কর্তব্য সমূহ পালন করাও আমাদের দ্বারা সম্ভব হবে না।[আরবি টিকা*****************]
শুদু তা-ই নয় রাসূলে করীম (স) এতদূর বলেছেনঃ [আরবি***************************]
দারিদ্র্য মানুষকে ফকির বানিয়ে দিতে পারে।
এ সত্যও আমাদের সম্মুখে রাখতে হবে যে, মানুষ রূহ ও দেহের সমন্বয়। আর এই দুইটি দিকের মধ্যে মৌলিক দূরত্বও অনেক বেশী ও গভীর। এই কারণে ইসলাম এমন এক ব্যবস্থা চালু করেছে, যার ফলে রূহ ও দেহের মধ্যকার দূরত্ব দূর করে উভয়কে সংযুক্ত করে রাখা সম্ভব হয়। কেননা দেহ ও রূহের মধ্যে সম্পর্ক অটুট রাখা হলেও জীবনটাই শেষ হয়ে যাওয়া অবধারিত।
কিন্তু তা শুধু ধন-সম্পদ দ্বারাই সম্ভব হতে পারে না। কেননা অর্থনৈতিক দৈন্য ও দারিদ্র্য রক্তের শূন্যতা বিশেষ।আর রক্তশূন্যতা দেহের পক্ষে মৃত্যুর আহবায়া। অর্থ-সম্পদ মানুষের জন্য সেই কাজ করে, যা রক্ত করে মানুষের গোটা দেহে। রক্তই মানুষের জীবন ও স্থিতির নিয়ামক। রক্তে স্বল্পতা দেখা দিলে মানুষের দেহ নানা দুরারোগ্য রোগের লীলাক্ষেত্রে পরিণত হয়। অনুরূপভাবে অর্থ-সম্পদ না থাকলে মানুষের জীবন অচল হয়ে যায় অনিবার্যভাবে। তা যেমন ব্যক্তিজীবনে বিপর্যয়ের সৃষ্টি করে, তেমনি করে সামষ্টিক জীবনেও। এই কারণে মানুষের আর্থীক প্রয়োজন প্রকট হয়ে দেখা দেয় তার জন্মমুহূর্ত থেকেই। অর্থ-সম্পদহীন ব্যক্তির যেমন কোন শক্তি বা মান-মর্যাদা থাকে না, তেমনি দরিদ্র জাতিও বিশ্ব জাতিসমূহের দরবারে সমস্ত ইযযত-সম্মান ও সম্ভ্রম থেকে বঞ্চিত হয় অনিবার্যভাবে।
দুনিয়ার জাতিসমূহের পরস্পরের মধ্যে সম্পর্ক গড়ে উঠে ও স্হিতি লাভ করে অর্থনৈতিক ভিত্তিতে। সরকারসমূহের পরস্পরের যোগাযোগ ও সম্পর্ক সম্বন্ধ ও অর্থনৈতিক ভিত্তি ছাড়া গড়ে উঠতে ও গভীর হতে পারে না।
অর্থনৈতিক ব্যাপারাদি গুরুত্বপূর্ণ, তবে সকল ব্যাপারের আবর্তনবিন্দু নয়
তবে ও ব্যাপারে পুঁজিবাদী ও সমাজতান্ত্রিক অর্থ ব্যবস্থার সাথে ইসলামের মৌলিক পার্থক্য রয়েছে। এ দুটি ব্যবস্থায় অর্থনীতিই মূল ও আবরর্তন-কিলক (pivot) । আর ইসলামে তা মানব জীবনের অন্যান্য বহু গুরুত্বপূর্ণ দিকের ন্যায় একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার-সন্দেহ নাই।
কুরআন মজীদে মানুষের একান্তভাবে আল্লাহর উদ্দেশ্যে নিয়োজিত সালাত (নামায) এর সঙ্গেই যাকাতের উল্লেখ ও পালনের আদেশ উদ্ধৃত হয়েছে। বলা হয়েছেঃ
[আরবী************************************]
তোমরা সকলে সালাত কায়েম কর ও যাকাতের ব্যবস্থা প্রতিষ্টিত কর। নামায ব্যক্তির সাথে আল্লাহর সম্পর্কে নিগূঢ়করণের একটি ব্যক্তিগত ইবাদত-যা অবশ্য জাম ‘আতের সাথে-ই আদায় করতে হয়। আর যাকাত ইবাদত হলেও একটি অর্থনৈতিক ব্যাপার! কুরআন মজীদে এরূপ এক সাথে দু ‘টি কাজের নির্দেশ প্রায় ৩২টি আয়াতে উদ্ধৃত হয়েছে। একটি নিছক ইবাদতের কাজের সাথে মিলিয়ে একটি অর্থনৈতিক ইবাদত ব্যবস্থার উল্লেখ করায় একথা স্পষ্ট হয়ে য, ইসলামের ‘রূহ্’-ইহকাল ও পরকাল উভয়ের উপর সমান গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। কেননা মূলত এ দুটিই ওতপ্রোত, অবিচ্ছিন্ন। একটি অপরটির পরিণতি।
ইসলাম এক পূর্ণঙ্গ জীবন-বিধান, মানব সমাজের যাবতীয় প্রয়োজন পূরণের এ অমোঘ ব্যবস্থ। তাই তার একটি অর্থ ব্যবস্থ থাকা অপরিহার্য। তা না- থাকার কোন প্রশ্নই উঠতে পারে না। আছে বলেই ইসলাম মানুষের উপযোগী ভারসম্যপূর্ণ জীবন-বিধান হতে পেরেছে।
অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও তার বিকশ বিধানের উদ্বোধন
কুরআন মজীদে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি সাধনের বিশেষ আহবান জানিয়েছে। কৃষি, শিল্প, বাণিজ্য প্রভৃতি খাতে বিপুল উৎপাদনের জন্য স্পট নির্দেশ দিয়েছে, যার ফলে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে ব্যাপক প্রবৃদ্ধি লাভ সম্ভব।
জামি আবাদকরণের নির্দেশ
আল্লাহ্ তা ‘আলা জমিকে প্রধান জীবিকা উৎস বানিয়েছেন। মানুষের প্রায় সব প্রয়োজন পূরণের ব্যবস্থা আল্লাহ্ তা ‘আলা এই জমি ও জমির ফসল থেকেই করেছেন। এজন্য জমিতে ভালোভাবে আবাদ করার নির্দেশ দিয়েছেন। ইরশাদ হয়েছেঃ
অর্থাৎ মহান আল্লাহ তা ‘আলা মানুষকে মাটির মৌল উপাদান থেকে সৃষ্টি করেছেন এবং সেই জমির আবাদকরণের দায়িত্ব তিনি তোমাদের উপর অর্পণ করেছেন, তোমাদেরকে জমির আবাদকারী বানিয়েছেন। জমি আবাদ করার ক্ষমতা তোমাদেরকে তিনি দিয়েছেন। আর জামি আবাদ করার অর্থ, তাতে নিজেদের উপযোগী বাসস্থান বানানো, জমিকে বসবাসের উপযোগী করে গড়ে তোলা এবং সেই জমি থেকে নিজেদের প্রয়োজনিয় যাবতীয় ফল-ফসল-সামগ্রী আহরণ ও চাষের মাধ্যমে উৎপাদন করার জন্য তোমাদেরকেই দায়িত্বশীল বানিয়েছেন।[আরবি টিকা****************************]
যেমন অপর আয়াতে বলা হয়েছেঃ [আরবি*************************]
তোমরা পৃথিবীর সমতল ভূমির উপর সু-উচ্চ প্রসাদসমূহ নির্মাণ করছ ও তার পর্বতগাত্র খুঢ়ে ঘর-বাড়ি বানাচ্ছে।
ইরশাদ হয়েছিঃ [আরবি***********************]
সেই মহান আল্লাহ যমীনকে তোমাদের জন্য নরম-সমতল-অনুগত বানিয়ে দিয়েছেন।অতএব তোমরা সেই যমীনের সর্বদিকে ও পরতে-পরতে পৌঁছতে চেষ্টা কর আর সেখান থেকে পাওয়া আল্লাহর রিযিক তোমরা বক্ষণ কর। আর শেষ পর্যন্ত তো তাঁর দিকেই উত্থান হবে।
উৎপাদনের প্রধান উৎস যমীন চাষাবাদ ও খোদাই করে ফসল ও সম্পদ উৎপাদনের এই নির্দেশ সকলেরই জন্য। কুরআন মানুষকে অলস-নিষ্কর্মা হয়ে বসে থাকতে নিষেধ করেছে এবং সব সময়ই উৎপাদনমুখী কাজে ব্যস্ত থাকতে বলেছে, তা ব্যবসায় হোক, চাষাবাদ হোক, শিল্প হোক কিংবা এই ধরনের অন্যান্য কাজ, যা থেকে মানুষের বিভিন্নমুখী প্রয়োজন পূরণ হতে পারে, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি লাভের মাধ্যমে মানুষের জীবনে সাচ্ছন্দ্য আনা যেতে পারে। এ পর্যায়ের কয়েকটি হাদীসের উদ্ধৃত দেয়া যাচ্ছে।
রাসূলে করীম (স) বলেছেনঃ [আরবি******************************]
ইবাদতের সত্তরটি অংশ রয়েছে। তন্মধ্যে সর্বোত্তম হচ্ছে হালাল রিযিক সন্ধান। [আরবি টিকা****************]
……………………………………………………………
তোমরা ব্যবসা কর, আল্লাহ তোমাদের প্রবৃদ্দি দেবেন।
রাসূলে করীম (স) তাবুক যুদ্ধ থেকে ফিরে এলে সায়াদুল-আনসারী নামক সাহাবী (রা) তাঁকে সম্বর্ধনা জানালেন। রাসূল (স) তার সাথে ‘মুসাফাহা’ করলেন। তখন বললেনঃ তোমার হাত এত শক্ত ও অমসৃণ কেন?
বললেনঃ ‘হে আল্লাহর রাসূল! আমি তো এই হাতে হাতুড়ি পিটাইঁ। তাতে যা রোজগার হয়, তা-দিয়েই আমরা পরিবারের প্রয়োজন পূরণ করি’।
তখন নবী করীম (স) তাঁর হাতে চুম্বন দিলেন এবং বললেনঃ [আরবি***************************]
এই হাত কখনই আগুনে পুড়বে না।
বলেছেনঃ [আরবি**************************]
হালাল রুজির সন্ধান করা প্রত্যেক মুসলিম নারী-পুরুষের জন্য ফরয।
রাসূলে করীম (স) ও সাহাবায়ে কিরাম (রা) নিজ হাতে শ্রম করেছেন ও হালাল রুজি উপার্জন করেছেন। তা করা সব নবী ও রাসূলের সুন্নত।
অতএব ইসলামী রাষ্ট্রের প্রত্যেক নাগরিককে হালাল রুজি উপার্জনের জন্য অবশ্যই চেষ্টা করতে হবে। যে যা উপার্জন করবে, তা দিয়ে প্রথম নিজের ও নিজ পরিবারবর্গের প্রয়োজন পূরণ করবে। তার উপার্জনে দারিদ্র্য নিকটত্নীয় ও পাড়া-প্রতিবেশীদেরও হক রয়েছে বলে তাদের প্রয়োজন পূরণের জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। এভাবে প্রত্যেক কর্মক্ষম ব্যক্তি যাতি হালাল উপার্জনে রত হয় এবং নিষ্কর্ম হয়ে বসে না থাকে, তা দেখা ইসলামী রাষ্ট্র ও সরকারের কর্তব্য।
লোকদের উপার্জীত ধন-সম্পদ যাতে বিভিন্ন ধনী ব্যক্তিদের পকেটে চলে গিয়ে সাধারণ মানুষের জন্য অর্থনৈতিক সংকটের সৃষ্টি করতে না পারে, কোন হারাম কাজে কেউ লিপ্ত না হয়-হালাল উপার্জনের সুযোগ পায় তা দেখাও ইসলামী রাষ্ট্র-সরকারের দায়িত্ব। ইসলামী রাষ্ট্র জনগণকে বেহুদা ব্যয় ও অপচয় থেকে বিরত রাখতে ও প্রত্যেক নাগরিক যেন অর্থনৈতিক দিক দিয়ে সুবিচার পেতে পারে, ধন-সম্পদের সাধারণ বন্টন কার্যকর হয়, সেদিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখবে।
তবে মনে রাখতে হবে, ইসলামের দৃষ্টিতে উপার্জন জীবিকার একটা গুরুত্বপূর্ণ উপায় বটে; কিন্তু তা চরম লক্ষ্য নয়। এ কথাই বলিষ্ট ভাষায় বলা হয়েছে কুরআন মজীদের এ আয়াতটিতেঃ [আরবি***********************]
আল্লাহ তোমাকে যে ধন-মাল দিয়েছেন, তার মাধ্যমে তুমি পরকাল লাভ করতে চাইবে, তবে দুনিয়ায় তোমার যে অংশ রয়েছে, তা পেতে ভুল করবে না। আর আল্লাহ যেমন তোমার প্রতি দয়া করেছেন তুমিও তেমনভাবে লোকদের প্রতি দয়া দেখাবে। তুমি দুনিয়ার বিপর্যয় হোক, তা কখনই চাইবে না। কেননা আল্লাহ ফাসাদকারীদের মোটেই পছন্দ করে না, ভালবাসেন না।
অর্থাৎ দুনিয়ার রুজি-রোজগারে আসল লক্ষ্য হতে হবে পরকালীন মুক্তি লাভ, কেবলমাত্র বৈষয়িক সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য অর্জন নয়। আর দুনিয়ায় প্রাপ্তব্য অংশ প্রত্যেকের জন্য রয়েছে। তা ভুলে গিয়ে বৈরাগ্য গ্রহণ কখনই উচিত হতে পারে না।
মানুষ যেন কখনই এ কথা ভুলে না যায় যে, সে যা কিছুই লাভ করেছে তা একমাত্র আল্লাহর অনুগ্রহের কারণে। অতএব তার-ও উচিত অন্যান্য মানুষের প্রতি দয়া-অনুগ্রহ করা। অন্যথায় দুনিয়ায় সর্বগ্রাসী বিপর্যয় সংঘটিত হবে।
বস্তুত ইসলামী অর্থনীতির দৃষ্টিতে মানুষ অতীব উচু মর্যাদার সৃষ্টি। সে ‘আশরাফুল মাখলুকাত’ নামে পরিচিত। দুনিয়ায় শুধু উৎপাদন (production) বৃদ্ধি ও ভোগ-ব্যয়-ব্যবহার (consumption) করার উদ্দেশ্যই তাকে সৃষ্টি করা হয়নি। কাজেই তাকে অর্থনৈতিক শৃঙ্খলে চব্বিশ ঘন্টা বন্দী করে রাখা যেতে পারে না। ধনশালী ও ধন-লোভিদের হাতে উৎপাদনের একটা নিষ্প্রাণ যন্ত্র হয়ে থাকা তার পক্ষে সম্ভব নয়, বাঞ্ছনীয়ও নয়। কাজেই তাদের কামনা-বাসনা ও ইচ্ছামত মানুষকে ব্যবহার করার কোন অধিকারই তাদের দেয়া যেতে পারে না। হযরত আলী (রা)-র একথাটি স্মরণ করা যেতে পারে। বলেছিলেনঃ [আরবি*******************************]
তুমি অন্য কারোর দাসানুদাস হবে না। আল্লাহ তো তোমাকে মুক্ত ও স্বাধীন বানিয়েছেন।[আরবি টীকা************************]
কিন্তু মানুষকে যখন অর্থনীতির চাকায় জুড়ে দেয়া হয়, উৎপাদন ও ভোগ সম্ভোগই হয় তাদের একমাত্র কাজ, তখন সে নিকৃষ্ট দাসেই পরিণত হয় না, সে হয় অর্থনৈতিক জীব মাত্র। জন্তু-জানোয়ার দিন-রাত যে সব কাজ করে, মানুষকে কি সেই কাজ করার জন্যই দুনিয়ায় সৃষ্টি কারা হয়েছে?
কিন্তু বর্তমান দুনিয়ার বেশীর ভাগ রাষ্ট্রে-তা হয় পুজিবাদী রাষ্ট্র, না হয় সমাজতান্ত্রিক-মানুষকে নিষ্প্রাণ যন্ত্রাংশ কিংবা জন্তু-জানোয়ারে পরিণত করা হয়েছে। আর ধন-লোভী ব্যক্তি, কোম্পানী বা রাষ্ট্র মানুষকে নির্মম পরিশ্রমের যাঁতাকলে বেঁধে দিয়ে শুধু উৎপাদনই করাচ্ছে, শুধু উৎপাদন ছাড়া এ দুনিয়ায় মানুষের যেন আর কোন কাজই নেই।
ইসলাম মানুষকে নিছক একটা উৎপাদন-মাধ্যম বা উৎপাদন যন্ত্র হতে দিতে প্রস্তুত নয়। ইসলাম মানুষের নিম্নতম প্রয়োজন পূরণের নিশ্চিন্ততা ও নিরাপত্তা দেয় মানুষের উচ্চতর মর্যাদা ও মহান মানীয় দায়িত্বের প্রতি লক্ষ্য রেখে। অতএব ইসলামের দৃষ্টিতে অর্থ-সম্পদ লক্ষ্য নয়, শুধু উপায় (means) মাত্র। এই মূল দর্শনকে রক্ষা করে ইসলামী রাষ্ট্র মানুষের বৃহত্তর কল্যাণের জন্য অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির দিকে মানুষকে উদ্ধুদ্ধ করতে থাকবে।