ইসলামী রাষ্ট্রের সামরিক বিভাগ
[সামরিক শক্তি মুসলিম উম্মতে সংরক্ষক, দ্বীন ও জাতির খিদমতে সেনাবাহিনী।
………………………………………………………………………………………………….
সামরিক শক্তি মুসলিম উম্মতের সংরক্ষক
প্রত্যেক স্বাধীন জনগোষ্ঠীর স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব তার প্রতিরক্ষা শক্তির উপর নির্ভরশীর। যে-জনগোষ্ঠী শত্রুর মুকাবিলা করতে ও শত্রুর আগ্রাসন প্রতিরোধে করতে যত বেশী নিশ্চিত ও নির্ভরযোগ্য। পক্ষান্তরে সেই শক্তির দুর্বলতা প্রতিরক্ষা কজের দুর্বরতা এবং তার অস্তিত্বের উপর একটা প্রচণ্ড হুমকি বিশেষ। এ দৃষ্টিতেই প্রত্যেকটি স্বাধীন জনগোষ্ঠীর জন্য সুদক্ষ সু-সাহসী সামরিক বাহিনীর প্রয়োজনীয়না অনুধাবনীয়। জাতীয় স্বাধীূনতা ও সার্বভৌমত্ব শত্রুদের আগ্রাসন থেকে রক্ষা করা ও স্বাধীনভাবে নিশ্চিন্তে জীবন যাপনের জন্য জনগণকে নিশ্চয়তা দানই সেই জাতির সামরিক বাহিনীর একমাত্র কাজ। জনগণের ও দেশের স্বাধীনতার পাহারাদার হচ্ছে এই সামরিক বাহিনী। পাহারাদারীর উদ্দেশ্যেই তাদেরকে নিযুক্ত ও প্রয়োজনীয় অস্ত্র-শস্ত্রে সুসজ্জিত করা হয়ে থাকে।
অবশ্য একথা অস্বীকার করার উপায় নেই যে, দুনিয়ার বিভিন্ন দেশের সামরিক বাহিনীর কার্যকলাপ ইদানিং প্রচণ্ড সমালোচনার সম্মুখীন। দুনিয়ার দেশসমূহে সামরিক বাহিনীকে শত্রু দেশের মুকাবিলায় তৎপরতা গ্রহণের পরিবর্তে নিজেদের দেশটিকেই বারবার দখল করে। জনগণের সরকার সামরিক শক্তির বলে উৎখাত করে নিজেরাই ক্ষতাসীন হয়ে বসে। অন্য কথায় জাতির স্বাধীনাতর পাহারাদারীর পরিবর্তে নিজেরাই দেশের মালিক ও হর্তাকর্তা হয়ে বসে ও নিজ দেশের জনগণকে নিজেদের গোলাম বানিয়ে নেয়। রক্ষকের ভূমিকা ত্যাগ করে ভক্ষকের ভূমিকা পালন করে, জনগণের বেতনভুক্ত ‘কর্মচারী’ হওয়া অবস্থায়ই জনগণের ‘প্রভু’‘মালিক’ ও ‘মনিব’ হয়ে বসে। তখন সেই দেশের জনগণ একটি স্বাধীন দেশের নাগরিক হওয়া সত্ত্বেও নিকৃষ্টতম ‘পরাধীন’ জীবন যাপন করতে বাধ্য হয়।
পক্ষান্তরে উন্নত দেশসমূহের সামরিক বাহিনীকে দুনিয়ায় সামাজাবাদ প্রতিষ্ঠা সাম্রাজ্যের সীমা সম্প্রসারণ ও বিভিন্ন পাশ্ববর্তী স্বাধীন ক্ষুদ্র দুর্বল জাতিসমূহকে অধীন ও গোলাম বানানোর কাজে ব্যবহার করা হয়। এই সময় তারা তাদের দেশের সাম্রাজ্য লোভী সরকারের হাতিয়ার হয়ে বিভিন্ন দেশে সামরিক সর্বধ্বংসী অভিযান চালায়। নিরীহ জনগণের রক্তের বনায় শহর-নগর-গ্রাম ভাসিয়ে দেয়। এ পর্যায়ে দুনিয়ায় কত যে রক্তপাত হয়েছে, কত যে শহর-নগর-জনপদ্র ধ্বংস হয়েছে আর কত কোটি কোটি নির্দোষ মানুষের জীবনের চির অবসান ঘটেছে, তার কোন ইয়ত্তা নেই।
কিন্তু ইসলাম সামরিক বাহিনীর উক্ত দ্বিবিধ ভূমিকার কোন একটিকেও সমর্থন করে না। বরং এর প্রতিবাদে ইসলাম সদা সর্বদা সোচ্চার।
সামরিক বাহিনীর প্রথম প্রকারের পদক্ষেপ –নিজ দেশের জনগণ নির্বাচিত সরকারকে উৎখাত করে তার হাত থেকে ক্ষমতা কেড়ে নেয়ার ব্যাপারটি ইসলামের দৃষ্টিতে সুস্পষ্ট বিশ্বাসঘাসকতার শামিল, ক্ষমতা লোভের নগ্ন নির্লজ্জ প্রকাশ এবং স্বাধীন জনগণকে পরাধীনতা বা দাসত্ব-শৃঙ্খলে বন্দী করা পর্যায়েরই কাজ। এ ধরনের কাজকে কুরআন মজীদে কঠোর ভাষায় নিন্দা করা হয়েছে।
কুরআন মজীদে এ পর্যায়ের বহু সংখ্যক আয়াত রয়েছে। একটি আয়াতে বলা হয়েছেঃ
(আরবী*************)
পরকালের এই ঘর –জান্নাত –আমরা কেবল সেই লোকদের জন্য নির্দিষ্ট করে দেব, যারা দুনিয়ার স্বীয় বড়ত্ব ও উচ্চত্ব-শ্রেষ্ঠত্ব চায়না, চায় না প্রশান্ত পরিবেশকে বিপর্যস্ত করতে। এই সব থেকে যারা আল্লাহকে ভয় করে দূরে থাকবে, পরকালীন কল্যাণ –জান্নাত –কেবল তাদের জন্যই হবে।
আয়াতের ‘বড়ত্ব’ উচ্চত্ব ও শ্রেষ্ঠত্ব –কর্তৃত্ব চায় ও দখল করে তারা, যাদেরকে জনগণ তা দেয়নি। জনগণ যাদেরকে তা দিয়েছে, তাদেরকে সেখান থেকে হটিয়ে দিয়ে যারা বল প্রয়োগে সেই স্থান দখল করে নেয়, আল্লাহ তাদেরকে জান্নাত পাওয়ার অধিকারী বানাবেন না।
সামরিক বাহিনীর লোক একটি দেশের প্রতিরক্ষার কাজে নিয়োজিত। এ কাজ দেশের জনগণের একটা গুরুত্বপূর্ণ খেদমতের কাজ সন্দেহ নেই। এদিক দিয়ে তারা দেশের খাদেম। আর যেহেতু জাতীয় ধন-ভাণ্ডার থেকে তারা মর্যাদা উপযোগী বেতন বাতা পেয়ে থাকে, এ কারণে তারা জাতির বেতনভুক কর্মচারী। তারা যদি এ দায়িত্ব পালন না করে দেশের সর্বোচচ ক্ষমতা দখল করে বসে, তাহলে তারা নিঃসন্দেহে নিজেদের ‘বড়ত্ব’, উচ্চত্ব ও শ্রেষ্ঠত্ব চাইল। আয়াতে তাদেরকে জান্নাতের উপযোগী লোক নয় বলে চিহ্নিত করা হয়েছে।
অপর দিকে দুনিয়ার সাম্রাজ্যবাজী রাষ্ট্রগুলির সেনাবাহিনী স্বাধীন জাতিসমূহকে গোলাম বানাবার হাতিয়ার রূপে ব্যবহৃত হয় বলে সারা দুনিয়ায় তাদের প্রতি প্রচণ্ড ঘৃণা বিরাজ করছে।
দ্বীন ও জাতির খেদমতে সেনাবাহিনী
কিন্তু ইসলামী হুকুমতের সেনাবাহিনী উপরোক্ত দুই ধরনের সেনাদের মত হবে না। কেননা ও উভয় ধরনের সেনারাই মূলত অন্যায় প্রভাব-প্রতিপত্তি বিস্তার ও প্রতিষ্ঠা, জনগণের স্বাধীন মর্যাদা ও মাবিক মৌলিক অধিকার হরণ ও জনগণের ধন-সম্পদ লুণ্ঠনের হাতিয়ার হয়ে থাকে। তারা খুব সহজেই স্বৈরতান্ত্রিক শাসকের ক্রীড়নকে পরিণত হয়। তারা যেমন ব্যক্তি বিশেষের নিরংকুশ কর্তৃত্বের সংরক্ষক হয়ে দাঁড়ায়, তেমনি নিজ জাতি স্বার্থের পরিবর্তে বৈদেশিক শক্তিগুলির স্বার্থ রক্ষার বাহন হয়ে থাকে।
ইসলামী রাষ্ট্রের সেনাবাহিনী প্রকৃতই দেশ, জাতি ও জাতীয় আদর্শের খাদেম্ তারা জাতীয় স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার কাজে সদাসর্বদা আত্মনিয়োগ করে থাকে। মূলত তারা দ্বীনের মুজাহিদ।
ইসলামের উদয়লগ্নে এই ব্যাপারটির গুরুত্ব যথাযথভাবে অনুভূত হয়েছিল। দ্বীন-ইসলাম এসেই ছিল মানুষকে গোলামী ও জাহিলিয়াতের শৃঙ্খলা থেকে মুক্ত করতে, অন্ধকার থেকে আলোকোদ্ভাসিত পরিমণ্ডলে জীবন যাপনের নিশ্চিত-নির্বিঘ্ন সুযোগ দানের জন্য। গোলামীর জিঞ্জির ছিন্ন করে মানুষকে আযাদী দান করার জন্য। ফলে স্বাভাবিকভাবেই বিপরীত শক্তির সাথে তার সংঘর্ষ অনিবার্য। বিশেষ করে যারা ইসলামের পথ রোধ করতে চায়, ইসলাম তাদের দ্বারা প্রতিরুদ্ধ হবে না, প্রতিরোধকে চূর্ণ-বিচূর্ণ করে সম্মূখের দিকে এগিয়ে যাবে।
ইসলামের প্রাথমিক কালের এবং তার পরবর্তী সময়ের ইসলামী জীবন-ধারা লক্ষ্য করলেই নিঃসেন্দহে বুঝতে পারা যায়, মুসলমানদের সামরিক তৎপরতা অনন্য ও একক ধরনের। ইসলামের শিক্ষাকে সূক্ষ্ম দৃষ্টিতে পর্যালোচনা করলেও এক দৃষ্টান্তহীন সামরিক ব্যবস্থার সন্ধান পাওয়া যাবে। বস্তুত কুরআন তো অত্যন্ত বলিষ্ঠ ভাষায় সামরিক বিষয়াদি নিয়ে কতা বলেছে এবং বিভিন্ন দিক ও দিগন্ত উম্মোচিত করেছে, যার কোন দৃষ্টন্ত অথীতে পাওয়া যায় না।
কুরআনের কতিপয় আয়াতে তীর নিক্ষেপণ ও অশ্বারোহণ ও অস্ত্র পরিচালনের শিক্ষা লাভ ও দান এবং নিরবচ্ছিন্নভাবে সামরিক চর্চা ও তৎপরতায় লিপ্ত থাকার উপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। এ ব্যাপারে দক্ষতা অর্জন প্রত্যেকটি মু’মিনের কর্তব্য বলে ঘোষিত হয়েছে। কয়েকটি আয়াত এখানে উদ্ধৃত করা যাচ্ছেঃ
(আরবী***********)
হে ঈমানদারগণ, তোমরা আল্লাহকে ভয় কর, তাঁর নৈকট্য সন্ধান কর এবং তাঁর পথে জিহাদ কর। আশা করা যায়, তোমরা কল্যাণ লাভ করতে পারবে। ঈমানের দাবি আল্লাহর তাকওয়া, তাকওয়ার দাবি আল্লাহর নৈকট্য লাভের সন্ধান করা আর এই নৈকট্য লাভর উপায় হচ্ছে আল্লাহর পথে জিহাদ (বা যুদ্ধ) করা।
(আরবী************)
তোমরা বেরিয়ে পড় –চলতে শুরু করে দাও, হালকাভাবে (ছোট ছোট বাহিনী নিয়ে) কিংবা ভারী অস্ত্র-সজ্জায় সজ্জিত হয়ে (বিরাট বাহিনী নিয়ে) এবং আল্লাহর পথে তোমরা জিহাদ কর তোমাদের জান ও মাল দিয়ে। এটাই তোমাদের জন্য প্রভূত কল্যাণের উৎস, যদি তোমরা জানো।
অর্থাৎ সর্বাবস্থায়ই আল্লাহর পথে জিহাদের জন্য বেরিয়ে পড়তে হবে। এছাড়া কল্যাণ লাভের কোন বিকল্প উপায় নেই।
(আরবী*******)
এবং আল্লাহকে লক্ষ্যরূপে নির্দিষ্ট করে তোমরা জিহাদ কর যেমন জিহাদ সেজন্য করা বাঞ্চনীয়। সেই আল্লাহ-ই তোমাদেরকে (আল্লাহর জন্য জিহাদ করার লক্ষ্যে) বাছাই করেছেন।
জিহাদের এই নির্দেশসমূহ পালন শুরু হয় আদর্শ প্রচার থেকে এবং শেষ হয় সশস্ত্র যুদ্ধ করে ইসলামের বিজয়সাধনে। আর দুনিয়ায় ইসলাম এসেছেই তো বিজয়ী আদর্শ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার জন্য। কিন্তু তা ইসলামের দুশমন শক্তির সাথে সশস্ত্র যুদ্ধ করা ছাড়া সম্পন্ন হতে পারে না। বাতিল ও কাফির শক্তিকে পর্যুদস্ত ও পরাজিত করে রাষ্ট্রক্ষমতা ইসলামের হাতে তুলে দেয়া এবং বাস্তবে তাকে প্রতিষ্ঠিত করাই এ জিহাদ ও যুদ্ধের একমাত্র লক্ষ্য।
এ জিহাদের নির্দেশ সর্বপ্রথম এসেছিল রাসূলে করীম (স) এবং তাঁর সাহাবায়ে-কিরামের প্রতি। রাসূলে করীম (স) এবং সাহাবায়ে-কিরাম ও নির্দেশ যথাযথভাবে পালন করেছেন, কিন্তু এ নির্দেশ তো ঈমানদার ব্যক্তিমাত্রের প্রতি। দুনিয়ায় যদ্দিন ঈমানদার লোকের অস্তিত্ব আছে, তদ্দিন কুরআন আছে। আর যদ্দিন কুরআরন আছে, তদ্দিন চির নতুন হয়ে আছে জিহাদ ও যুদ্ধের এ নির্দেশ, আর জিহাদকারীদের জন্য আল্লাহর ঘোষণা হলোঃ
(আরবী***********)
নিষ্ক্রিয় হয়ে বসে থাকা লোকদের তুলনায় কার্যত জিহাদকারীদের মর্যাদা অনেক বেশী করে দিয়েছেন।
স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে, ইসলামে জিহাদ কোন পেশা –জীবিকা নির্বাহের উপায় হিসেবে গ্রহণীয় নয়। জিহাদ হচ্ছে প্রত্যেক ঈমানদার ব্যক্তির ঈমানী দায়িত্ব –ঈমানের ঐকান্তিক দাবি। যারা এ জিহাদ করবে না, জিহাদ থেকে বিমুখ হয়ে থাকবে, তাদের ঈমান গ্রহণযোগ্য নয় গ্রহণযোগ্য নয় আল্লাহর নিকট, গ্রহণযোগ্য নয় মু’মিন সমাজের নিকট।
ফলে ইসলামী রাষ্ট্রের সমগ্র মুসলমানই হচ্ছে সেই রাষ্ট্রে সেনাবাহিনী। তারা যেমন সৈন্য নয়, তেমনি নয় ‘ভাড়াটে সৈন্য’! বর্তমান কালে দুনিয়ার প্রত্যেক স্বাধীন রাষ্ট্রেই একটা সুসংগঠিত সেনাবাহিনী রয়েছে।তারা দিন-রাত শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ গ্রহণে ব্যস্ত থাকে আর তাদের জন্য বরাদ্দ থাকে জাতীয় বাজেটের শতকরা আশি বাগ। এমনি একটি পেশাদার সৈন্যবাহিনী –যাদের একমাত্র কাজ যুদ্ধ করা –ইসলামের দৃষ্টিতে সাধারণভাবে কাম্য নৰয়। তবে এ যুগের চাহিদা প্রাচীন কাল থেকে যে ভিন্নতর, তাতে সন্দেহ নেই। তাই একদিকে ঈমানদার জনগণকে যোদ্ধা বানানো, অপরদিকে সামরিক ব্যাপারাদি লয়ে দিন-রাত চিন্তা-ভাবনা করা, নতুন নতুন সমর-কৌশল উদ্ভাবন ও সাধারণ লোকদের যুদ্ধবিদ্যা শিক্ষাদান এবং অস্ত্র চালানোর অভ্যস্তকরণের জন্য বিশেষ লোক অবশ্যই নিয়োজিত করতে হবে।
মোটকথা, ইসলামে সামরিক কার্যক্রমের উদ্দেশ্য দেশ দখল নয়, জাতির পর জাতিকে জয় করে গোলাম বানানো নয়। এক কথায় বলতে গেলে ইসলাম ও মুসলমানের প্রতিরক্ষাই হচ্ছে সামরিক তৎপরতার একমাত্র লক্ষ্য।
এই লক্ষ্যকে দুটি ভাগে বিভক্ত করা চলেঃ
১. ইসলামী দেশ ও রাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা এবং বৈদেশিক আক্রমণকারী ও শত্রুদের হামলা থেকে মুসলিম উম্মতকে রক্ষা করা।
২. পরাধীন দুর্বল-অক্ষম (আরবী****)-দের স্বৈর শাসনের নিপীড়ন থেকে মুক্ত করা, গোলাম জনতাকে স্বাধীন করা, যেন তারা নিজেদের পছন্দানুযায়ী যে কোন জীবন-বিধান বা ধর্ম গ্রহণ করে স্বাধীনভাবে জীবন যাপন করবার সুযোগ পায়।
প্রথম প্রকারের সামরিক তৎপরতা পর্যায়ে কুরআন মজীদে আহবান হচ্ছেঃ
(আরবী***********)
হে ঈমানদারগণ! তোমরা ধৈর্য্য অবলম্বন কর, বাতিল পন্ধীদের মুকাবিলায় দৃঢ়তা ও অনমনীয়তা প্রদর্শন কর –শক্ত ও দৃঢ় হয়ে দাঁড়াও, সীমান্ত রক্ষার কাজে সর্বদা প্রস্তুত ও সদা সতর্ক-উৎকর্ণ থাক এবং আল্লাহকে ভয় কর। আশা করা যায়, তোমরা কল্যাণ লাভ করবে।
আয়াতটির তাৎপর্য নানা দিক দিয়ে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। কিন্তু ইমাম কুতুবীর মতে সহীত তাৎপর্য হচেছ, আল্লাহর পথে নিরবচ্ছিন্নভাবে আত্মনিয়োগ করে থাকা। আসল অর্থ যুদ্ধের অশ্ব সব সময় প্রস্তুত করে রাখা। ইসলামে বা ইসলামী রাষ্ট্রে অনুপ্রবেশ করার যে কোন ছিদ্রপথে সার্বকিষণ পাহারাদারী করা।
(আরবী টীকা***********)
আর (আরবী*****) অর্থ, তোমরা লেগে থাক সংরক্ষণ ও পর্যবেক্ষণে, সীমান্ত চৌকির পাহরাদারিতে। আল্লামা বাগদাদী লিখেছেনঃ (আরবী****) এর মূল কথা হলো এদিকের লোকেরা নিজেদের ঘোড়া ও ওদিকের লোক নিজেদের ঘোড়া এমনভাবে বাঁধবে, যেন উভয় পক্ষ যুদ্ধ করার জন্য প্রস্তুত হয়ে মুখোমুখি দাঁড়িয়ে গেছে। পরে এই অর্থ গ্রহণ করা হয়েছে যে, যে ব্যক্তি সীমান্তে অবস্থান গ্রহণ করে দেশের প্রতিরক্ষার দায়িত্ব পালন করে সর্বক্ষণ তর্ক হয়ে, সেই-ই (আরবী****) –তার নিকট কোন যানবাহন থাক আর না-ই থাক।
তিনি আরও লিকেছেনঃ (আরবী*********) দুই প্রকারের। এক প্রকার হচ্ছে, ইসলামী রাষ্ট্রের সীমান্তে কাফিরদের বিরুদ্ধে প্রতিরক্ষার লক্ষ্যে পাহারাদারী করা। আমরা এখানে অর্থকেই সামনে রাখছি।
গোটা আয়াতের বক্তব্য হচ্ছে ইসলামী রাষ্ট্রের প্রতিরক্ষার কাজে সদা সর্বদা সতর্ক হয়ে প্রস্তুত থাকা, এজন্য পরম দৈর্য্ ধারণ করা এবং অন্যদেরকেও ধৈর্য ধারণে প্রস্তুত করা। এটা সাধারণভাবে সকল মু’মিনেরই কর্তব্য। বিশেষভাবে মুসলমানদের সামরিক তৎপরতার এটা একটা বিশেষ দিগন্ত।
আর দ্বিতীয় পর্যায়ের সামরিক তৎপরতা চালাবার জন্য কুরআন মজীদে বিশেষ ভঙ্গীতে আহবান জানানো হয়েছে। মজলুম –অধীন মানুষকে মুক্ত করার লক্ষ্যে যুদ্ধ করা তো ঈমানদার লোকদের উপর আল্লাহ অর্পিত কঠিন দায়িত্ব তাই আল্লাহ প্রশ্ন তুলেছেনঃ
(আরবী**********)
তোমাদের কি হয়েছে, আল্লাহর পথে তোমরা যুদ্ধ করছ না কেন? অথচ অবস্থা এই যে, দুর্বল-অক্ষম-অধীন-অসহায় পুরুষ-নারী-শিশুরা ফরিয়াদ করছে এই বলে যে, হে আমাদের রব্ব! তুমি আমাদেরকে এই জালিমদের শাসনাধীন জনপদ থেকে মুক্তি দান কর, আমাদের জন্য তোমার নিকট থেকে একজন পৃষ্ঠপোষক –বন্ধু (মুক্তিদাতা) বানিয়ে দাও, বানিয়ে দাও একজন সাহায্যকারী।
পরাধীন মানুষ যে কি চরম কঠিন দুরবস্থার মধ্যে –অমানুষিক নির্যাতন-নিষ্পেষণ সয়ে-সয়ে তিলে তিলে নিঃশেষ হয়ে যেতে বাধ্য হয় তা আল্লাহর নিজের অকিত এ চিত্র থেকে স্পষ্ট হয়ে উঠে।
আয়াতটি এক দিকে যেমন এই রূপ অবস্থায় নিপতিত জনগোষ্ঠীর মর্মান্তিক অবস্থা তুলে ধরছে, তাদের উক্ত রূপ অবস্থা থেকে নিষ্কৃতি পাওয়ার জন্য তাদের নিজেদেরই সর্বাত্মকভাবে চেষ্টা চালানো উচিত এবং তাদের এই মুক্তি সংগ্রামে বিশ্বমানবের সাহায্য চাওয়া উচিত বলে জানিয়ে দিচ্ছে, তেমনি দুনিয়ার মানুষের –বিশেষ করে ঈমানদার লোকদের কর্তব্য হচ্ছে তাদের সাহায্যে এগিয়ে আসা এবং জালিমদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে তাদের পরাজিত ও পর্যুদস্ত করে সেখানকার মজলুম-বঞ্চিত মানুষগুলিকে মুক্ত ও স্বাধীন করে দেয়া ঈমানের ঐকাস্তিক দাবি বলে ঘোষণা করছে। এরূপ অবস্থা দেখেও তাদের মুক্তির জন্য যুদ্ধ না করা আল্লাহর নিকট চরম অনভিপ্রেত –তা আয়াতের বলার ভঙ্গী থেকে স্পষ্ট হয়ে উটছে।
ইসলামী মুজাহিদরা যখন তদানীন্তন পারস্যের উপর আক্রমণ করেছিলেন, তখন পারসিক নেতা রুস্তম তাদেঁর এই আক্রমণের কারণ বা লক্ষ্য এবং তাদেঁর ধর্মমত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে জবাবে মুসলিম বাহিনীর মুখপাত্র বললেনঃ
(আরবী*********)
আমাদের দ্বীন বা ধর্ম হচ্ছে পরম সত্য দ্বীন। তার মৌল ভাসধারা শুধু তারই জন্য মোষ্ঠনীয় ও সঙ্গতিসম্পন্ন। তা হচ্ছেঃ আল্লাহ ছাড়া কেউ ইলাহ নাই এবং মুহাম্মদ আল্লাহ রাসূল- এর সাক্ষ্য দান ……… আর আমাদের উদ্দেশ্য হচ্ছেঃ আল্লাহর বান্দাগণকে তাদের মত বান্দানের নিকৃষ্ট গোলামী থেকে মুক্ত করে একমাত্র আল্লাহর বান্দা বানিয়ে দেয়া, একমাত্র আল্লাহর বান্দা হয়েজীবন যাপনের সুযোগ করে দেয়া।