শেষ কথা
এ পুস্তকে ইসলামের দাম্পত্য আইনের উদ্দেশ্য ও মূলনীতি সবিস্তারে আলোচনা করা হয়েছে এবং যেসব মাসয়ালার কারণে বর্তমানে ভারতীয় মুসলমানদের জন্য সমস্যা ও জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে- কিতাব ও সুন্নাতের আলোকে তার সমাধান পেশ করার চেষ্টা করা হয়েছে। আমি এ দাবি করছি না যে, ইসলামী আইনকে আমি যতটুকু বুঝতে সক্ষম হয়েছি তাই সঠিক। আর এ ব্যাপারেও আমার কোন জেদ নেই যে, সমস্যার সমাধানের জন্য আমি যেসব পরামর্শ রেখেছি তা হুবহু গ্রহণ করতে হবে। যাই হোক, মানুষের সিদ্ধান্তের মধ্যে ভুল হওয়া এবং সঠিক হওয়া উভয়েরই সম্ভাবনা থাকে। কোন ব্যক্তিই নিজের রায় সম্পর্কে দাবি করতে পারে না যে, সে ভুলের উর্ধ্বে এবং আল্লাহর ওহীর মত এর অনুসরণ করাও অপরিহার্য।
এ দীর্ঘ আলোচনা, অনুসন্ধান ও পর্যালোচনায় আমার উদ্দেশ্য শুধু এতটুকু যে, কুরআন মজীদ ও রাসূলুল্লাহ (স)-এর সুন্নাত থেকে আমি ইসলামের দাম্পত্য আইনের যে মূলনীতি হৃদয়ংগম করতে পেরেছি তা বর্ণনা করা এবং মহান সাহাবাগণ ও মুজতাহিদ ইমামগণ এ মূলনীতি থেকে যেসব প্রাসংগিক মাসায়ালা বের করেছেন তার ওপর দৃষ্টি নিক্ষেপ করে এমন সব আনুসাংগিক মাসয়ালার বের করা, যা আমাদের মতে বর্তমান যুগের প্রয়োজনের পরিপ্রেক্ষিতে উপকারী ও উপযুক্ত হতে পারে। এখন আলেম সমাজ, চিন্তাশীল ও ব্যুৎপত্তিসম্পন্ন ব্যক্তিদের কাজ হচ্ছে, প্রশস্ত দৃষ্টিভংগী এবং কিতাব-সুন্নাতের ক্ষেত্রে চিন্তা ও দূরদর্শিতাকে কাজে লাগিয়ে আমার এ প্রস্তাব ও পরামর্শ সম্পর্কে চিন্তা করা। যদি এর মধ্যে কোন ক্রটি থেকে থাকে তাহলে এটা যেন তাঁরা সংশোধন করে দেন এবং যদি কোন জিনিস সঠিক মনে করেন তাহলে শুধু এ কারণেই যেন তা প্রত্যাখ্যান না করেন যে, দুর্ভাগ্যক্রমে এর লেখক চতুর্থ হিজরী শতকের পরিবর্তে চুতর্দশ হিজরী শতকে জন্মগ্রহণ করেছেন।
পরিশেষে হায়দরাবাদ ও বৃটিশ ভারতের কোন কোন ব্যক্তি আইনের যে খসড়া প্রণয়ন করেছেন, আমি সংক্ষেপে এ সম্পর্কে আমার অভিমত ব্যক্ত করতে চাই। [এখানে এসব খসড়ার কেবল বিষয়বস্তু নিয়েই আলোচনা, আইন পরিষদ স্বয়ং কোন ইসলামী আইন পাশ করার অধিকার রাখে কিনা– এ নিয়ে আমার আলোচনা নয়। এ পরিষদ ইসলামী দৃষ্টিকোণকে সামনে রেখে যে আইন পাশ করবে, তা অক্ষরে অক্ষরে ইসলামী শরীয়ত মোতাবেকই হোক না কেন, আর যাই হোক তা শরঈ আইন হতে পারে না।] আমার মতে এসব খসড়া অপূর্ণাংগ এবং যুগের প্রয়োজন অনুযায়ী তা যথেষ্ট নয়। ‘এ্যাংলো-মোহামেডান ল’-এর ক্রটি, অমুসলিম আদালতের শত বছরের দৃষ্টিভংগী এবং বর্তমান বিচার ব্যবস্থার অনুসৃত কর্মপন্হার মাধ্যমে যে ক্ষতি ও বিপর্যয় সৃষ্টি হয়েছে- তা এ ধরনের সংক্ষিপ্ত খসড়ার মাধ্যমে দূর করা সম্ভব নয়। যদি বিশেষ কয়েকটি ব্যাপারে এ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয় যে, এসব ক্ষেত্রে হানাফী ফিকহের পরিবর্তে মালিকী ফিকহের আইন অনুযায়ী মীমাংসা করা হবে অথবা যদি কোন কোন প্রাসংগিক মাসয়ালার সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা করে দেয়া হয়- তাহলে যেসব বিচারকের ইসলামী আইন এবং বিভিন্ন মাযহাবের আনুষাংগিক বিধান সম্পর্কে কোন ব্যাপক জ্ঞান নেই এবং যাদের মন-মগজে ‘এ্যাংলো-মোহামেডান ল’-এর ভূত চেপে আছে, তারা এর সাহায্যে ঠিক সিদ্ধান্তে পৌঁছতে সক্ষম হবে না।
এ বিপর্যস্ত পরিস্থিতির সংশোধনের জন্য, বিশেষ করে দাম্পত্য ব্যাপারসমূহের জন্যই আইনের একটি ব্যাপক সংকলন তৈরি করা একান্ত্র প্রয়োজন। এ পর্যন্ত এ বইয়ের পাতাগুলোতে একথাই আমি বলে এসেছি। এটা এত সহজ কাজ নয়, বরং এটা সময় ও শ্রমের দাবি রাখে। এটা এক ব্যক্তির পক্ষেও সহজসাধ্য নয়। এ উদ্দেশ্যে সুযোগ্য আলেমদের একটি নির্বাচিত জামাআতকে যথেষ্ট সময়হাতে নিয়ে একাগ্র মনে বসতে হবে। তাঁদেরকে এই মনে করে কাজ করতে হবে, তাঁরা কেবল পূর্ববর্তী বিশেষজ্ঞদের কিতাবসমূহ থেকে খুঁটিনাটি বিষয়গুলোকে হুবহু নকল করে নিজেদের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি লাভ করতে পারেন না, বরং উম্মতের সমস্যাসমূহের সঠিক সমাধান বের করার যোগ্যতাসম্পন্ন ব্যক্তি হওয়ার কারণে তাঁদের কর্তব্য হচ্ছে- ইসলামী আইনের এমন ব্যাখ্যা প্রদান করা যাতে শরীয়াতের আসল উদ্দেশ্যে পূর্ণ হতে পারে এবং জাতির দীন-ঈমান, আখলাক-চরিত্র ও যাবতীয় বিষয়ের হেফাযত করার দায়িত্ব যথাযথভাবে আদায় হতে পারে।