পরিশিষ্ট-১
অতীব গুরুত্বপূর্ণ একটি ফতোয়া
দিল্লী থেকে এক ব্যক্তি আমাদের কাছে একটি ছাপানো ফতোয়া পাঠিয়েছেন। এর বিষয়বস্তু আপনা থেকেই গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের বিশিষ্ট আলেমগণ অনৈসলামী পন্হায় এ বিষয়টির সমাধান করার দিকে আসক্ত বলে মনে হয়। এজন্য এ বিষয়টির গুরুত্ব আরো অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। এ ফতোয়া ও তার জবাব নীচে দেয়া হলো।
ইসলামী জ্ঞানে পারদর্শী ও শরীয়তের গভীর জ্ঞানসম্পন্ন মুফতীদের কাছ থেকে অনতিবিলম্বে কিতাব, সুন্নাত ও ফিকহের আলোকে নিম্নলিখিত প্রশ্নগুলোর প্রামাণিক ও যুক্তিপূর্ণ উত্তর হচ্ছেঃ
প্রশ্নঃ ১. যদি কোন অমুসলিম বিচারক অথবা অমুসলিম সালিস বা পঞ্চায়েত মুসলমান পুরুষ ও নারীর বিবাহ ইসলামী আইন অনুযায়ী বাতিল করে দেয় অথবা অমুসলিম বিচারক, সালিস বা পঞ্চায়েত স্ত্রীর ওপর স্বামীর অত্যাচার প্রমাণিত হয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে স্বামীর পক্ষ থেকে স্ত্রীকে তালাক দেয়, যেমন কোন কোন ক্ষেত্রে মুসলিম বিচারকের এ অধিকার আছে, তাহলে কি বিবাহ বাতিল হয়ে যাবে এবং স্ত্রীর ওপর তালাক কার্যকর হবে? শরীয়ত অনুযায়ী স্ত্রীর কি এ অধিকার অর্জিত হবে যে, অমুসলিম ব্যক্তির দেয়া তালাক এবং বাতিলকৃত বিবাহকে শরীয়তসম্মত মনে করে ইদ্দাত অতিবাহিত করার পর অথবা অন্য যে কোন অবস্থায় হোক- অন্য মুসলমানদের কাছে বিবাহ বসেত পারে?
২. উল্লিখিত প্রশ্রে জবাব যদি নেতিবাচক হয় অর্থাৎ অমুসলিম ব্যক্তির দেয়া তালাক ও বিবাহ-বাতিলকরণ শরীয়তে গ্রহণযোগ্য নয় এবং অমুসলিম ব্যক্তির দেয়া তালাক ও বিবাহ বাতিলকরণের পরও এ নারী তার স্বামীর বিবাহাধীনেই থেকে যায়- এ অবস্থঅয় যে নারী অন্য পুরুষের সাথে বিবাহ বসবে এবং দ্বিতীয় ব্যক্তির এটাও জানা আছে যে, এ নারী অমুসলিম বিচারক অথবা সালিস বা পঞ্চায়েতের মাধ্যমে তালাক অর্জন করেছে, তাহলে এ বিবাহ বাতিল বলে গণ্য হবে কি না? দ্বিতীয় স্বামীর সাথে তার বিবাহ হওয়া সত্ত্বেও এদের মধ্যে দাম্পত্য সম্পর্ক বজায় রাখা হারাম হবে কিনা এবং উভয়কে শরীয়তের দৃষ্টিতে যেনাকার মনে করা যাবে কি না?
৩. দ্বিতীয় স্বামীর সাথে তাঁর এ বিবাহ বাতিল গণ্য হওয়া অবস্থায় দি এ দ্বিতীয় ঔরসে তার কোন সন্তান জন্মগ্রহণ করে তাহলে সে ব্যভিচারজাত সন্তান গণ্য হবে কি না? এ সন্তান এ দ্বিতীয় ব্যক্তির পরিত্যক্ত সম্পত্তির ওয়ারিশ হওয়া থেকে বঞ্চিত হবে কি না?
অনুগ্রহণপূর্বক এ প্রশ্নগুলোর প্রামাণিত জবাব ক্রমিক নম্বর অনুযায়ী দিয়ে বাধিক করবেন ইত্যাদ।
জবাবঃ এ প্রশ্নমালার মধ্যে মৌলিক গলদ এই যে, এর মধ্যে কেবল অমুসলিম বিচারক, সালিস ও পঞ্চায়েত সম্পর্কে প্রশ্ন করা হয়েছে। অথচ প্রশ্নটা এরূপ হওয়া উচিত ছিল যে, মানুষ আল্লাহবিমুখ হয়ে স্বয়ং যে বিচার ব্যবস্থা কায়েম করে নিয়েছে এবং যার মীমাংসা মানুষের মনগড়া আইনের ওপর ভিত্তিশীল, আল্লার আইন তা জায়েয বলে স্বীকার করে কি না? এর সাথে আরো আনুষংগিক গলদ এই যে, এখানে কেবল বিবাহ বাতিল ও বিচ্ছেদ সম্পর্কেই প্রশ্ন করা হয়েছে। অথচ মৌলিক দিক থেকে এ বিষয়গুলোর ধরন অন্যান্য বিষয়ের ধরন থেকে ভিন্নতর নয়।
কেবল বিবাহ ও তালাকের ব্যাপারেই নয়, বরং যাবতীয় ব্যাপারে অমুসলিম আদালতের ফায়সালা ইসলামী শরীয়তের দৃষ্টিকোণ থেকে স্বীকৃতি ও সমর্থনযোগ্য নয়। মহান রাজাধিরাজ আল্লাহর সাথে সম্পর্কহীন হয়ে স্বাধীনভাবে খেয়াল-খুশিমত যে রাষ্ট্র কায়েম হয়, ইসলাম তার স্বীকৃতি দেয় না। যে আইন কোন ব্যক্তি বা ব্যক্তিবর্গ নিজেদের ইচ্ছামত তৈরি করে নিয়েছে- ইসলাম তারও স্বীকৃতি দেয় না। যে আদালত তার আসল মালিক ও আইনদাতার রাষ্ট্রে তাঁর অনুমোদন ছাড়া আল্লাহদ্রোহীদের দ্বারা কায়েম হয়েছে- ইসলাম এসব আদালতের বিবাদ শ্রবণ করা ও রায় দেবার অধিকারই স্বীকার করে না। বৃটিশ রাজত্বের আওতায় ক্রাউনের (রাজ বা রাণী) অনুমতি ছাড়া প্রতিষ্ঠিত আদালতের বৃটিশ আইনের দৃষ্টিকোণ থেকে যে মর্যাদা হতে পারে, ইসলামের দৃষ্টিকোণ থেকে ঐসব আদালতের মর্যাদাও তাই। এসব বিচারালয়ের বিচারক, কর্মচারী, উকীল এবং তাদের মাধ্যমে বিচার মীমাংসাকারীগণ যেভাবে ইংরেজ আইনের দৃষ্টিতে বিদ্রোহী, অপরাধী এবং শাস্তি পাওয়ার যোগ্য বলে গণ্য হবে, অনুরূপভাবে আসমান-যমীনের মালিকের রাজত্বের মধ্যে তাঁর ‘সুলতান’ (সনদপত্র) ছাড়া যে বিচার ব্যবস্থা কায়েম করা হয়েছে এবং যেখানে তার অনুমোদিত আইন বাদ দিয়ে অন্য কারো অনুমোদিত আইনের ভিত্তিতে বিচার-ফায়সালা করা হয়, ইসলামের দৃষ্টিকোণ থেকে এ ধরনের বিচার ব্যবস্থা বিদ্রোহী, অপরাধী ও চরম শাস্তির যোগ্য বিবেচিত হয়। এর বিচারক অপরাধী, কর্মচারীবৃন্দ অপরাধী, এর উকীলগণ অপরাধী, এর সামনে বিচার প্রার্থনাকারী অপরাধী এবং এর সমস্ত আইন-কানুন চূড়ান্তভাবেই প্রত্যাখ্যাত। কোন বিশেষ ক্ষেত্রে তাদের ফায়সালা যদি ইসলামী শরীয়ত অনুযায়ী হয়েও থাকে তবুও তা মূলতই ভ্রান্ত। কেননা এর মূলে বিদ্রোহ বর্তমান রয়েছে। মনে করুন, যদি তারা চোরের হাত কাটে, যেনাকারীর ওপর বেত্রাঘাত বা রজম (পাথর মেরে হত্যা) কার্যকর করে, মদ্যপের ওপর ফৌজদারী দণ্ড কার্যকর করে, তবুও, চোর, যেনাকারী ও শরাবখোর শাস্তি ভোগের দরুন নিজ নিজ অপরাধ থেকে পবিত্র হবে না এবং এমনকি স্বয়ং এ আদালত কোন অধিকার ছাড়া কোন ব্যক্তির হাত কাটা, তার ওপর বেত্রাঘাট বা রজম করার অপরাধে অপরাধী সাব্যস্ত হবে। কেননা সে আল্লাহর প্রজাদের ওপর যে ক্ষমতার চর্চা করেছে, তাঁর দেয়া আইনের দৃষ্টিতে এ অধিকার তার ছিলো না। [এ প্রসংগে বার্মা ও মালয়ের ওপর জাপানের অধিকার বহাল থাকাকালে যেসব সামরিক অফিসার ‘স্বাধীন ভারত রাষ্ট্র’ ও ‘আযাদ হিন্দু ফৌজ’ গঠন করেছিল, তাদের বিরুদ্ধে সরকার ১৯৪৫ সালের শেষদিকে এবং ১৯৪৬ সালের গোড়ার দিকে যেসব মামলা দায়ের করে, তার কার্যবিবরণী অধিক ধারণা লাভের জন্য সহায়ক হবে, বিশেষ করে শাহ নেওয়াজ, সাহগল ও ঢালওয়ানের মামলায় ভারতের এডভোকেট জেনারেল তাঁদের বিচার প্রার্থনা করে যে বক্তৃতা করেছিলেন তা মনোযোগ সহকারে পড়ার মতো। কেননা এ বক্তৃতায় সেই নামমাত্র বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে ভারত সরকারের যে আইনগত মর্যাদা ও অব্স্থান বর্ণনা করা হয়েছে, মূলত সেটাই হলো সমস্ত আসল ও প্রকৃত বিদ্রোহদের বিরুদ্ধে মহান রব্বুল আলামীদের রাজত্বের আইনগত মর্যাদা।–গ্রন্হকার।]
নামমাত্র মুসলমান বিচারক সমাসীন হয় তখনো এ আদালতের শরঈ মর্যাদা পূর্ববৎ থাকবে। আল্লাহদ্রোহী সরকারের কাছ থেকে সিদ্ধান্ত কার্যকর করার এখতিয়ার অর্জন করে যে ব্যক্তি মামলা-মোকদ্দমার শুনানী গ্রহণ করে এবং যে ব্যক্তি মানুষের মনগড়া আইনের ভিত্তিতে নির্দেশ জারী করে, সে অন্ততপক্ষে বিচারক হিসাবে তো মুসলমান নয়, বরং নিজেই বিদ্রোহী হিসাবে গণ্য হয়। সুতরাং তার নির্দেশ বাতিল গণ্য হওয়া থেকে কিভাবে রক্ষা পেতে পারে?
যখন গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ও সরকার বিদ্যমান থাকে এবং তাতে মুসলমানরাও শরীক থাকে, এ গনতান্ত্রিক রাষ্ট্রে মুসলমানরা সংখ্যালঘু হোক অথবা সংখ্যাগরিষ্ট অথবা সব বাসিন্দা মুসলমান হোক, তারা আল্লাহহীন গনতান্ত্রিক মূলনীতির ভিত্তিতে রাষ্ট্রব্যবস্থা কায়েম করেছে- এ অবস্থায়ও আইনগত অবস্থান পূর্ববৎ থাকবে। ‘দেশের জনগণই হচ্ছে সার্বভৌমত্বের মালিক এবং তারা আল্লাহর দেয়া আইনের বন্ধনমুক্ত থেকে নিজেরাই নিজেদের জন্য আইন প্রণয়নের ক্ষমতা রাখে’- যে রাষ্ট্রের ভিত্তি এ দর্শনের ওপর প্রতিষ্ঠিত- ইসলামের দৃষ্টিতে সেই রাষ্ট্রের মর্যাদা হচ্ছে সম্পূর্ণ এরূপ যে, কোন রাজার প্রজাবৃন্দ তার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে তার প্রতিকূলে নিজেদের সার্বভৌস রাষ্ট্র কায়েম করে নিল। এ বাদশাহর আইন যেভাবে এ রাষ্ট্রকে বৈধ বলে স্বীকার করতে পারে না, অনুরূপভাবে উল্লিখিত ধরনের গনতান্ত্রিক রাষ্ট্রকে আল্লাহর বিধান কখনো স্বীকৃতি দেয় না। এ ধরনের গনতান্ত্রিক সরকারের অধীনে যে বিচারব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হবে, চাই তার বিচারক জাতিগত দিক থেকে মুসলমান হোক অথবা অমুসলমান, তাদের ফায়সালাও ইসলামের দৃষ্টিতে বাতিল বলে গণ্য হবে।
ওপরে যাকিছু আলোচনা করা হলো তা সঠিক হওয়ার সপক্ষে গোটা কুরআনই দলীল। তথাপি প্রশ্নকারী যেহেতু কিতাব ও সুন্নাতের আলোকে ব্যাখ্যা দাবি করেছেন তাই কুরআন মজদি থেকে মাত্র কয়েকটি আয়াত পেশ করা হচ্ছেঃ
একঃ কুরআনের দৃষ্টিতে সার্বভৌমত্বের মালিক একমাত্র আল্লাহ। সৃষ্টি তাঁরই। সুতরাং শাসন করার স্বাভাবিক অধিকার কেবল তাঁরই থাকবে। তাঁর রাজ্যে তাঁর সৃষ্টির ওপর স্বয়ং তিনি ছাড়া অন্য কারো আদেশ জারী হওয়া এবং কার্যকর হওয়া মূলতই গলদ। [কিন্তু যদি কেউ তাঁর খলীফা বা প্রতিনিধির মর্যাদা অর্জন করে তাঁর দেয়া আইন অনুযায়ী রাষ্ট পরিচালনা ও যাবতীয় বিষয়েল মীমাংসা করে তাহলে সেটা স্বতন্ত্র কথা। এ সম্পর্কে আলোচনা সামনে আসছে।–গ্রন্হকার।] মহান আল্লাহর বাণীঃ
**********************************
“বলো, হে আল্লাহ! সমস্ত রাজ্য ও সাম্রাজ্যের মালিক! তুমি যাকে চাও রাজত্ব দান করো, আর যার কাছ থেকে চাও কেড়ে নাও”। -সূলা আলে ইমরানঃ ২৬
**********************************
“তিনিই তোমাদের রব; রাজত্ব তাঁরই”।–সূরা আল ফাতিরঃ ১৩
**********************************
“তাঁর রাজত্বে তাঁর কোন শরীক নেই”।– সূরা নবী ইসরাঈলঃ ১১১
**********************************
“সুতরাং হুকুম দেয়ার ক্ষমতা মহান আল্লাহর হাতেই নিবদ্ধ”।– সূরা আল মু’মিনঃ ১২
**********************************
“তিনি তাঁর সার্বভৌমত্বে কাউকে শরীক বানাননি”।– সূরা কাহফঃ ২৬
**********************************
“সাবধান! সৃষ্টিও তাঁর, হুকুমও চলবে তাঁর”।– সূরা আল আরাফঃ ৫৪
**********************************
“লোকেরা জিজ্ঞেস করে, হুকুম দেয়ার ব্যাপারে আমাদেরও কি কোন অংশ আছে? বলে দাও, নির্দেশ দেয়ার অধিকার সম্পূর্ণরূপে আল্লাহর জন্য নির্দিষ্ট”।– সূরা আল ইমারাঃ ১৫৪
দুইঃ এ মূলনীতির ভিত্তিতে আইন প্রণয়নের অধিকার মানুষের কাছ থেকে সম্পুর্ণরূপে ছিনিয়ে নেয়া হয়েছে। কেননা মানুষ হচ্ছে সৃষ্টি ও প্রজা, বান্দাহ এবং নির্দেশের অধীন। তার কাজ শুধু রাজাধিরাজ আল্লাহ যে আইন তৈরি করেছেন তার আনুগত্য করা। [আল্লাহর দেয়া বিধানের মাসয়ালা বের করা এবং ইজতিহাদ ও গবেষণার মাধ্যমে ফিকহশাস্ত্রের বিস্তারিত আইন রচনা করার ব্যাপারটি ভিন্ন জিনিস। এখানে সে সম্পর্কে আলোচনা করা হচ্ছে না। যেসব ব্যাপারে আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (স) কোন সুষ্পষ্ট নির্দেশ দেননি, সেসব ক্ষেত্রে শরীয়তের প্রাণসত্তা এবং ইসলামের মেজাজের দিকে লক্ষ রেখে আইন প্রণয়নের অধিকার ঈমানদার লোকদের রয়েছে। কেননা এসব ক্ষেত্রে সুস্পষ্ট নির্দেশ না থাকার সরাসরি অর্থ এই যে, এ সম্পর্কে আইন-কানুন ও নীতিমালা নির্ধারণ করার আইনগত অধিকার ঈমানদার লোকদের দেয়া হয়েছে।–গ্রন্হকার।] তাঁর দেয়া আইনকে বাদ দিয়ে যে ব্যক্তি অথবা সংস্থা স্বয়ং আইন রচনা করে অথবা অন্য কারো রচিত আইনের স্বীকৃতি দিয়ে তদনুযায়ী ফায়সালা করে- সে তাগূত, বিদ্রোহী এবং সত্যের আনুগত্য থেকে বাইরে অবস্থানকারী। এ আইনের অধীনে ফায়সালা প্রার্থনাকারী এবং সেই ফায়সালা মান্যকারীও বিদ্রোহের অপরাধে অপরাধী।
**********************************
“তোমরা নিজেদের মুখে যেসব জিনিসের কথা উল্লেখ করো সে সম্পর্কে মিথ্যা রচনা করে একথা বলো না যে, এটা হালাল (Lawful) এবং এটা হারাম (Unlawful)”।– সূরা আন নাহলঃ ১১৬
**********************************
“তোমাদের রবের পক্ষ থেকে যা কিছু নাযিল করা হয়েছে তোমরা তার অনুসরণ করো। তিনি ছাড়া অন্যান্য (নিজেদের বানানো কর্মকর্তা) অভিভাবকদের অনুসরণ করো না”।– সূরা আল আ’রাফঃ ৩
**********************************
“যেসব লোক আল্লাহর করা আইন অনুযায়ী ফায়সালা করে না তারা সবাই কাফের”।– সূরা আল মায়েদাঃ ৪৪
**********************************
“হে নবী! তুমি কি এসব লোকদের দেখোনি যারা তোমার ওপর নাযিলকৃত এবং তোমার পূর্ববর্তী নবীদের ওপর নাযিলকৃত হেদায়াতের প্রতি ঈমান রাখার দাবি করছে? পরে তারা তাগূতের মাধ্যমে নিজেদের যাবতীয় ব্যাপারে ফায়সালা করাতে চাচ্ছে। অথচ তাদেরকে তাগূতের (আল্লাহদ্রোহী শক্তি) বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে (অর্থাৎ তাগূতের নির্দেশ না মানার হুকুম করা হয়েছে)”।– সূরা আন নিসাঃ ৬০
তিনঃ মহান আল্লাহ তাঁর নবীদের মাধ্যমে মানবজাতির জন্য যে আইন-বিধান পাঠিয়েছেন তার ভিত্তিতে যে রাষ্ট্রব্যবস্থা ও বিচারব্যবস্থা গড়ে উঠেছে, আল্লাহর যমীনে কেবল তাই সঠিক ও স্বীকৃত। এরই নাম হচ্ছে খিলাফত।
**********************************
“আমরা যে রাসূলই প্রেরণ করেছি কেবল এ উদ্দেশ্যে পাঠিয়েছি যে, আল্লাহর নির্দেশের অধীনে তাঁর আনুগত্য করতে হবে”।– সূরা আন নিসাঃ ৬৪
**********************************
“হে নবী ! আমরা তোমার ওপর সত্যতা সহকারে কিতাব নাযিল করেছি যেন তুমি লোকদের মাঝে আল্লাহর দেখানো নির্দেশের আলোকে ফায়সালা করতে পারো”।– সূরা আন নিসাঃ ১০৫
**********************************
“আল্লাহ তাআলা যে হেদায়াত নাযিল করেছেন, তুমি তদনুযায়ী তাদের মাঝে রাষ্ট্র পরিচালনা করো এবং তাদের কুপ্রবৃত্তির অনুসরণ করো না। সাবধান! তারা তোমাকে ফিতনা-ফাসাদে জড়িয়ে তোমার কাছে আল্লাহ যে বিধান নাযিল করেছেন তার কোন অংশ থেকেও যেন তোমাকে হটিয়ে দিতে না পারে। ….. তার কি জাহিলিয়াতের রাজত্ব চায়?” –সূরা আল মায়েদাঃ ৪৯-৫০
**********************************
“হে দাউদ! আমরা তোমাকে যমীনের বুকে খলীফা নিযুক্ত করেছি। অতএব তুমি ন্যায়ানুগভাবে মানুষের মাঝে রাজত্ব করো এবং নিজের প্রবৃত্তির অনুসরণ করো না। অন্যথায় তোমাকে আল্লাহর পথ থেকে বিচ্যুত করে ফেলা হবে”।– সূরা সোয়াদঃ ২৬
চার. পক্ষান্তরে যেসব রাষ্ট্রব্যবস্থা ও বিচারব্যবস্থা বিশ্বের প্রতিপালক আল্লাহর পক্ষ থেকে তাঁর নবী-রাসূলের আনীত বিধানের পরিবর্তে অন্য কোন ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত তা বিদ্রোহাত্মক রাষ্ট্রব্যবস্থা ও বিচারব্যবস্থা বলেই গণ্য হবে। এ ধরনের রাষ্ট্রব্যবস্থা ও বিচারব্যবস্থার ধরণ যতই বিভিন্ন হোক না কেন, নির্বিশেষে এর সমস্ত কার্যক্রম ভিত্তিহীন এবং বাতিল বলে গণ্য। এর সরকার ও ফায়সালার জন্য মূলত কোন বৈধ ভিত্তি নেই। প্রকৃত মালিক মহান আল্লাহ এদেরকে যখন কোন সনদই দেননি তখন তা বৈধ রাষ্ট্র, বৈধ সরকর এবং বৈধ বিচারালয় কিভাবে হতে পারে? [চার্টার বা সনদ বলতে আমদেরমতে যে ব্যক্তি আল্লাহকে রাজাধিরাজ, সার্বভ্যম ক্ষমতার মালিক এবং নিজেকে তাঁর খলীফা বা প্রতিনিধি (সার্বভৌমত্বের অধিকার নয়) বলে মেনে নেয়, নবী–রাসূলদেরকে তাঁর রাূল ও আসমানী কিতাবকে তাঁর কিতাব বলে মেন নেয় এবং শরীয়তের ইলাহীর অধীনে থেকে কাজ করে শুধু এ ধরনের রাষ্ট্র, সরকার ও বিচার ব্যবস্থাই আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে সনদপ্রাপ্ত। স্বয়ং কুরআন মজীদে এ চার্টার দেয়া হয়েছেঃ ******************** ( আল্লাহর নাযিলকৃত আইন–বিধান অনুযায়ী মানুষের মধ্যে রাষ্ট্র পরিচালনা করো, ফায়সালা করো)।–গ্রন্হকার।] তারা যা কিছুই করে তা আল্লাহর বিধানের দৃষ্টিকোণ থেকে সম্পূর্ণরূপে বাতিল বলে গণ্য। ঈমানদার সম্প্রদায় (অর্থাৎ আল্লাহর বিশ্বস্ত প্রজা)-এর অস্তিত্বকে কার্যত একটি বাইরের ঘটনা হিসাবে স্বীকার করতে পারে, কিন্তু একটি বৈধ ব্যবস্থাপনার উপায় এবং বৈধ বিচার ব্যবস্থা হিসাবে স্বীকৃতি দিতে পারে না।
নিজেদের আসল মালিক ও আইনদাতা আল্লাহর বিরুদ্ধে বিদ্রোহকারীদের আনুগত্য করা তাদের কাজ নয় এবং এদের কাছে নিজেদের যাবতীয় বিষয়ের ফায়সালা প্রার্থনা করা নয়। যে ব্যক্তি এরূপ করবে সে ইসলাম ও ঈমানের দাবি করা সত্ত্বেও বিশ্বস্তদের (ঈমানদার) দল থেকে বহিষ্কৃত। কোন রাষ্ট্র বা সরকার একটি গোষ্ঠীকে বিদ্রোহী গণ্য করে, আবার নিজের প্রজাদের ওপর এই বিদ্রোহীদের আধিপত্যকে বৈধ বলে স্বীকারও করে এবং নিজের প্রজাদের এই সরকারের হুকুম মেনে নেয়ার অনুমতিও দেয়- এটা পরিষ্কারভাবেই বিবেক-বুদ্ধির পরিপন্হী। মহান আল্লাহর বাণীঃ
**********************************
“(হে মুহাম্মদ!) তাদের বলো, আমরা কি তোমাদের বলবো নিজেদের কার্যকলাপের দিক থেকে সবচেয়ে ব্যর্থ কারা? তারা হচ্ছে সেইসব লোক, দুনিয়ার জীবনে যাদের যাবতীয় চেষ্টা-সাধনা সঠিক পথ থেকে বিভ্রান্ত হয়ে গেছে। আর তারা মনে করতে থাকে, তারাই সঠিক কাজ করছে। এরা সেই লোক, যারা নিজেদের প্রতিপালকের আয়াতসমূহের বিরুদ্ধাচরণ করেছে এবং তাঁর সামনে উপস্থিত হওয়াকে অস্বীকার করেছে। এ কারণে তাদের যাবতীয় কার্যকলাপ নিষ্ফল হয়ে গেছে। কিয়ামকের দিন আমরা তাদের কোন গুরুত্বই দিব না”।– সূরা আল কাহফঃ ১০৩-১০৫
**********************************
“এ হলো, ‘আদ, যারা নিজেদের প্রতিপালকের আয়াতসমূহকে অমান্য করলো, তাঁর রাসূলগণের বিরোধিতা করলো এবং সত্য দীনের প্রত্যেক প্রবল পরাক্রান্ত দুশমনের অনুসরণ করলো”।– সূরা হূদঃ ৫৯
**********************************
“আর মূসাকে আমরা নিজস্ব নিদর্শন ও সুস্পষ্ট সনদসহ ফেরাউন ও তার রাজন্যবর্গের কাছে পাঠালাম। কিন্তু তারা ফেরাউনের নির্দেশই মেনে নিল। অথচ ফেরাউনের নির্দেশ সত্যনির্ভর ছিল না”।– সূরা হূদঃ ৯৬-৯৭
**********************************
“তুমি এমন কোন ব্যক্তির আনুগত্য করো না, যার অন্তরকে আমরা আমার স্মরণ (অর্থাৎ আমি যে তার রব এ অনুভুতি) থেকে গাফিল করে দিয়েছি। আর যে ব্যক্তি নিজের কুপ্রবৃত্তির অনুসরণ করে চলে এবং যার কর্মনীতি সীমালংঘনমূলক, তারও অনুসরণ করো না”।– সূরা কাহফ ২৮
**********************************
“(হে নবী!) বলে দাও, আমার রব প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য সব ধরনের অশ্লীল কার্যকলাপ, গুনাহের কাজ ও সত্যের বিরুদ্ধে বাড়াবাড়িকে হারাম করেছেন। আল্লাহর সাথে তোমরা কাউকে শরীক মনে করবে যার সপক্ষে তিনি কোন সনদ নাযিল করেননি- এও তিনি হারাম করেছেন”।– সূরা আল আ’রাফঃ ৩৩
**********************************
“তোমরা আল্লাহকে বাদ দিয়ে যাদের ইবাদত করো তা তো কতকগুলো নাম ছাড়া আর কিছুই নয়- যা তোমরা ও তোমাদের পূর্বপুরুষরা রেখে দিয়েছো। এর সমর্থনে আল্লাহ কোন সনদ নাযিল করেননি। হুকুম দেয়ার অধিকারী তো একমাত্র আল্লাহ। তিনি তোমাদের নির্দেশ দিয়েছেন যে, তিনি ছাড়া তোমরা আর কারো ইবাদত করো না”।– সুরা ইউসূফঃ ৪০
**********************************
“কোন ব্যক্তির সামনে সত্য পথ সুস্পষ্টরূপে প্রতিভাত হওয়ার পরও সে রাসূলের বিরোধিতা করার জন্য কৃতসংকল্প হলে এবং মু’মিনদের বিপরীত পথের অনুসরণ করলে- আমরা তাকে সেদিকেই চালাবো যেদিকে সে নিজেই চলতে শুনরু করেছে এবং তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করবো। এটা খুবই নিকৃষ্ট স্থান”।–সূরা আন নিসাঃ ১১৫
**********************************
“না, হে মুহাম্মদ! তোমার প্রতিপালকের শপথ! তারা কিছুতেই ঈমানদার হতে পারবে না, যতক্ষণ তারা নিজেদের পারস্পরিক মতভেদের ব্যাপারসমূহে তোমাকে বিচারক হিসাবে মেনে না নিবে”।– সূরা আন নিসাঃ ৬৫
**********************************
“তাদের যখন বলা হয়, আল্লাহ যা নাযিল করেছেন তোমরা সেদিকে এসো এবং রাসূলের নীতি গ্রহণ করো, তখন এ মুনাফিকদের তুমিও দেখতে পাবে- তারা তোমার কাছে আসতে ইতস্তত করছে এবং পাশ কাটিয়ে চলে যাচ্ছে”।– সূরা আন নিসাঃ ৬১
“আর আল্লাহ মুসলমানদের (অর্থাৎ নিজের বিশ্বস্ত প্রজাদের) ওপর কাফেরদের (অর্থাৎ নিজের রাজত্বে বিদ্রোহীদের) কোন পথই অবশিষ্ট রাখেননি”।–সূরা আন নিসাঃ ১৪১
এগুলো হচ্ছে কুরআন মজীদের মুহকাম আয়াত। [শক্ত, পূর্ণাংগ ও মজবুত জিনিসকে ‘মুহকাম’ বলা হয়। ‘মুহকাম আয়াত’ বলতে যেসব আয়াতের ভাষা অত্যন্ত প্রাঞ্জল, যার অর্থ নির্ধারণ করতে কোন সন্দেহ ও সংশয়ের অবাকশ নেই, যার শব্দগুলোর অর্থ, ভাব এবং উদ্দেশ্য ও লক্ষ্ পরিষ্কারভাবে বুঝা যায়, যেসব আয়াতের অর্থ গ্রহণ করার ক্ষেতে ব্যাখ্যার ধুম্রজালে জড়ানোর সুযোগ কেউ খুব কষ্টেই পেতেপারে। এসব আয়াতই হচ্ছে কুরআনের মূল ভিত্তি অর্থাৎ কুরআন যে উদ্দেশ্যে নাযিল হয়েছে তা এ মুহকাম আয়াতের দ্বারাই পূর্ণ হয়। এসব আয়াতের মাধ্যমে দুনিয়ার মানুষকে ইসলামের দিকে আহবান করা হয়েছে, সাবধান–বাণী ও উপদেশের কথা বলা হয়েছে, গোমরাহীর প্রতিবাদ করা হয়েছে এবং সত্য পথের ব্যাখ্যা দেয়া হয়েছে। এ ধরনের আয়াতের মধ্যে দীনের মৌলিক নীতিমালা বর্ণনা করা হয়েছে। এতে আকীদা–বিশ্বাস, ইবাদত, নৈতিকতা, দায়িত্ব, কর্তব্য ও আদেশ–নিষেধ সম্পর্কিত বিধান বর্ণিত হয়েছে। অতএব যে ব্যক্তি সত্যের সন্ধাণী এবং এটা জানার জন্য কুরআনের কাছে প্রত্যাবর্তন করতে চায় যে, সে কোন পথে চলবে এবং কোনপথে চলবে না– তার পিপাসা মেটানোর জন্য মুহকাম আয়াতগুলোই তার আশ্রয়কেন্দ্র। স্বভাবতই এসব আয়াতের ওপর তার দৃষি।ট কেন্দ্রীভূত হবে এবং এ থেকে সর্বাধিক উপকৃত হতে চেষ্টা করবে।–তাফহীমুল কুরআন, ১ম খণ্ড, সূরা আলে ইমরাঃ ৫ নং টীকা।–অনুবাদক।] এসবের তাৎপর্যের মধ্যে কোনরূপ সংশয়-সন্দেহের অবকাশ নেই। যে কেন্দ্রীয় আকীদা- বিশ্বাসের ওপর ইসলামের নৈতিক ও সামাজিক ব্যবস্থার ভিত্তি রাখা হয়েছে, তা যদি সংশয়পূর্ণ থেকে যেতো তাহলে কুরআন মজীদ নাযিল হওয়াই (মা’আযাল্লাহ) নিরর্থক হতো। এজন্য কুরআন মুহকাম আয়াতগুলোকে এত পরিষ্কার ভাষায় ও অকাট্যভাবে বর্ণনা করেছে যে, এর মধ্যে দ্বিমতের কোন অবকাশ নেই। কুরআনের এরূপ সুস্পষ্ট ও ব্যাপক বর্ণনার পর হাদীস ও ফিকদের দিকে রুজু করার আমাদের কোনই প্রয়োজন নেই।
অতএব ইসলামের পূর্ণ ইমারতই যখন এ ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত যে, আল্লাহ তাআরা যে জিনিসের জন্য কোন সনদ নাযিল করেননি তা ভিত্তিহীন ও মূল্যহীন, আর আল্লাহর সনদের মুখাপেক্ষীহীন হয়ে যে জিনিসই কায়েম করা হয়েছে, তার আইনগত মর্যাদা সম্পূর্ণই বাতিল, তখন কোন বিশেষ ব্যাপারে এটা জিজ্ঞেস করার কোন প্রয়োজনই থাকে না যে, এ ব্যাপারে কোন আল্লাহহীন রাষ্ট্রের বিচার বিভাগের ফায়সালা শরীআতের দিক থেকে কার্যকর হতে পারে কি না? যে শিশু হারাম বীর্যে পয়দা হয়েছে ও বলে স্বীকৃত তার সম্পর্কে এটা কি কখনও জিজ্ঞেস করা হয় যে, তার দেহ ও চুলও হারাম কি না? শূকর যখন সম্পূর্ণই হারম তখন এর এক টকুরা গোশত সম্পর্কে কখনো কি এ প্রশ্ন দেখা দিতে পারে যে, এটা হারাম কি না? সুতরাং বিবাহ বাতিল হওয়া, স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বিচ্ধে করে দেয়া এবং তালাক অবতীর্ণ হওয়ার ব্যাপারে এ প্রশ্ন করা যে, ইসলাম বিরোধী আদালতের ফায়সালা কার্যকর হতে পারে কি না- এরূপ প্রশ করা ইসলাম সম্পর্কে অজ্ঞতার প্রমাণই বহন করে। এর চেয়েও বেশী অজ্ঞতার প্রমাণ এই যে, প্রশ্ন কেবল অমুসলিম বিচারকদের সমর্কেই করা হয়েছে। মনে হয় প্রশ্নকারীর মতে যে নামধারী মুসলমান ইসলাম বিরোধী আদালতের পরিচাল হিসাবে কাজ করে যাচ্ছে তার ফায়সালা তো কার্যকর হতে পরে বৈ কি! অথচ শূকরের গোশতের টুকরার নাম বকরীর গোশতের টুকরা রেখে দেয়ায় তাতে ঐ টুকরাটি বাস্তবিকপক্ষে না বকরীর গোশতের টুকরায় পরিণত হতে পারে, আর না হালাল হতে পারে!
এতে সন্দেহ নেই যে, ইসলামের এ মৌলনীতিকে মেনে নেয়ার পর আল্লাহবিরোধী রাষ্ট্র ও সরকারের অধীনে মুসলমানদের জীবনযাত্রা কঠিন হয়ে পড়ে। কিন্তু তাদের জীবনযাত্রাকে সহজতর করার জন্য ইসলামের চিরন্তন মূলনীতির মধ্যে রদবদল তো করা যেতে পারে না। মুসলমানরা যদি অনৈসলাশী রাষ্ট্রের অধীনে সহজতর উপায়ে জীবন যাপন করতে চায় তাহলে ইসলামের মূলনীতির মধ্যে রদবদল করা বা অন্য কথায় ইসলামকে অনৈসলাম বানানোর অধিকার তাদের নেই। অবশ্য মুরতাদ বা ধর্মত্যাগী হওয়ার সুযোগ আছে। এক্ষেত্রে তাদেরকে বাধা দেয়ার মতো কোন জিনিস নেই। উৎসাহের সাথে ইসলাম পরিত্যাগ করে জীবন যাত্রার কোন সহজ পথ তার গ্রহণ করতে পারে। কিন্তু তারা যদি মুসলমান হয়ে থাকতে চায় তাহলে তাদের জন্য সঠিক ইসলামী পন্হা এটা নয় যে, অনৈসলামী রাষ্ট্রে বসবাস করার জন্য সহজ পন্হা সৃষ্টি করার উদ্দেশ্যে এমন কূটকৌশল ও বাহানা খুঁজে বেড়াবে যা ইসলামের মৌলনীতির সাথে সংঘর্ষশীল, বরং তাদের জন্য একটি রাস্তাই খোলা আছে। আর তা হচ্ছে, তারা যেখানেই থাকুক, রাষ্ট্র ও সরকারের দৃষ্টিভংগী পরিবর্তন করার এবং রাষ্ট্র ও সরকার পরিচালনার মূলনীতিকে সংশোধন করার চেষ্টা-সাধনায় নিজেদের সমস্ত শক্তি খরচ করুক।