প্রথম পরিচ্ছেদ
জীববিজ্ঞানের শিক্ষা
জীববিজ্ঞান সম্বন্ধ ডারউনের মতবাদ সর্বপ্রথমে দুনিয়ার সুধীজনের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। তাঁর ‘প্রজাতির উৎপত্তি’১ (চার্লিস ডারউইনঃ প্রজাতির উৎপত্তি) প্রথম প্রকাশিত হয় ১৮৫৯ খ্রিস্টাব্দে। উপরিউক্ত দুটি গ্রন্থ প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গে ক্রমবিকাশের নীতি জীবন-বিকাশে কার্যকরী বলে সর্বত্রই গৃহীত হয়। কাজেই ডারউইনের মতবাদ নিয়েই আলোচনা শুরু করা যাক।
ডারউইনের মতে, “ প্রাণীদের মধ্যে প্রত্যেক সৃজনের ব্যাপারে বহু সন্তান উৎপাদনে সক্ষম। তাদের প্রজনন জ্যামিতিক অনুপাতে চলে”। কডফিস নামক এক জাতীয় মাছ আছে। তারা দুই কোটি ডিম পাড়ে। ধারনা করা গেছে, যদি ডেনডিলিয়ন গাছের বীজগুলো পরিণত হয় তাহলে একটা ডেনডিলিয়ন গাছই চতুর্থ বংশানুক্রমে এত গাছ উৎপাদন করবে, যাতে যুক্তরাষ্ট্রের মত রাষ্ট্রের আয়তনের দুইশত পয়ঁতাল্লিশ গুণ বড় দেশ কেবল ঐ গাছের বংশধর দ্বারা ছেয়ে ফেলা যাবে। একটি বীজাণু একদিনেই দশ লক্ষ বীজাণুর সৃষ্টি করতে পারে। ‘লিনেয়াস’৩ বলেছিলেন, “তিনটি মাছি এবং তাদের বংশধররা একটি ঘোড়ার মৃতদেহ ঠিক একটা সিংহের মতই অল্প সময়ে ভক্ষণ করতে পারে”।
“উদ্ভিদ এবং প্রাণীরা এত অধিক পরিমাণে প্রজনন করতে সক্ষম হলেও তাদের সকলের বাসস্থানের বা খাদ্যের সংস্থান নেই। এর জন্যই (উদ্ভিদ বা প্রাণীজগতে) চলছে এক জীবন-যুদ্ধ। সেই জীবন-যুদ্ধে যোগ্যতমরাই বেঁচে থাকে। তাকে ডারউইন বলেছেন, “যোগ্যতমের উদ্বর্তন”; (এখানে প্রশ্ন ওঠে) কারা যোগ্যতম? (তার উত্তরে বলা যায়) যাদের শারীরিক গঠন পরিবেশের সঙ্গে খাপ খায়, (কেবল তারাই টিকে থাকে)। (তার কারণ) (আবার প্রশ্ন ওঠে) ব্যষ্ঠিদের মধ্যে পার্থক্য কেন দেখা দেয়? (দৈহিক গঠন ও তার ক্রিয়ার মধ্যে এক প্রজাতির৪ অন্তর্গত বিভিন্ন ব্যষ্টির মধ্যে, এমনকি একই পিতামাতার সন্তানের মধ্যে কিছুটা ব্যতিক্রম৫ দেখা যায়। একই রকমের প্রাণী থেকে একই জাতীয় সন্তানের উৎপত্তি হয় সত্যি, কিন্তু সন্তানেরা পিতামাতার অনুরুপ হয় না। যারা তাদের পিতামাতা থেকে ব্যতিক্রম হয়, তাদের মধ্যে যাদের ব্যতিক্রমগুলো প্রকৃতির অনুকূল তাদেরকেই প্রকৃতি বাঁচিয়ে রাখে এবং সংরক্ষণ করে। এর নামই প্রকৃতির মনোনয়ন৬। তারা বেঁচে থাকে, বেঁচে চলে এবং সম্ভবত তাদের ব্যতিক্রমগুলো তাদের সন্তান-সন্ততিতে বর্তে। যারা প্রকৃতির অনুগ্রহলাভে অসমর্থ তারা ধংসপ্রাপ্ত হয়। ক্রমশ এভাবে জীবের শারীরিক গঠন পরিবর্তিত হয় এবং কালে এ পরিবর্তন এতো বড় হয়ে দেখা দেয় যে, সম্পূর্ণ অভিনব একটা প্রজাতির উৎপত্তি হয়। ধারালো দাঁত, ছিন্ন করতে সক্ষম চংগল, শিঙ্গের মত শক্ত চামড়া, গরম পশম প্রভৃতি শত্রুদের বিরুদ্ধে এবং প্রাকৃতিক উপাদানের বিপক্ষে জীবনযুদ্ধে প্রয়োজনীয়। এগুলোর উৎপত্তি হয় আকস্মিক প্রকারণের৭ ফলে এবং তারা বংশজ গুনাবলিররূপে রক্ষিত হয়। যে সকল পাখি কোনদিন ভ্রমণশীল নয় তাদের মধ্যে যদি কোনটি হটাৎ তাদের আদিম আবাস ছেড়ে অন্যত্র চলে যায় এবং প্রচুর খাদ্যদ্রব্যের সন্ধান পায় তা’হলে সে নতুন স্থানে তারা বেঁচে থাকবে, তাদের বংশবৃদ্ধি হবে আর তাদের এ বিশেষত্ব তাদের সন্তানদের মধ্যেও দেখা দেবে। এর থেকেই সহজাত প্রবৃত্তির৮ উৎপত্তি। এমন যে মানব-চক্ষু যাতে অভিযোজনের৯ এতো বিস্ময় প্রকাশ পায়, তাও আলোর প্রতি সংবেদনশীল১০ একটিমাত্র কোষের গ্রুপ থেকে দেখা দিতে পারে; তার ফলে যারা (এ অঙ্গের) ভাগ্যবান অধিকারী তাদের বিপদ ও শিকার উভয় সম্বন্ধে পূর্বাহ্নে সতর্ক করতে পারে।
মানবজীবনও চলছে বিবর্তন তত্ত্বের এ নীতি অনুসরণ করে। মানুষের মাঝে যারা বাঘ-ভাল্লুক থেকে লুকিয়ে আত্মগোপন করার কৌশল আয়ত্ত করেছিল তারাই কেবল ঠিক রয়েছে; যারা পারেনি, তাদের নাম-গন্ধও দুনিয়ায় নেই। মানুষের নানা শাখা-উপশাখাও এইভাবেই লয় পেয়েছে। দুনিয়ার বুকে টিকে থাকার মত সামর্থ্য না থাকায় প্রাকৃতিক নিয়মেই নানাবিধ জাতি লোপ পেয়েছে। মানুষের বেলায় কেবল প্রকৃতির অন্য দশটি জীবের আক্রমণ থেকে বেঁচে থাকার শক্তি থাকলেই চলবে না, শক্তিশালী অপর মানুষের আক্রমণ থেকে বেঁচে থাকবার মত সামর্থ্যেরও প্রয়োজন।
চোখের সামনেই দেখা যায়, অনেকগুলো প্রাণীই বেঁচে থাকবার মত সংগঠনের অভাবে ক্রমেই নিশ্চিহ্ন হয়ে যাচ্ছে। লাল অথবা হলদে রঙের ফড়িঙের সংখ্যা খুব কম; কারণ, তারা পাখিদের চোখে সহজেই ধরা পড়ে। সবুজ রঙের ফড়িং সংখ্যায় খুব বেশি। তাদের রঙ ঘাসের রঙের মত থাকায় তারা অতি সহজেই ঘাসের সাথে লুকিয়ে আত্মরক্ষা করতে পারে। পুরাকালের যেসব জন্তু-জানোয়ারের অস্থিপঞ্জর পাওয়া যায়, তা থেকে স্পষ্টই প্রমাণিত হয়, একদিন দুনিয়ার বুকে তারা অবাধে বিহার করতো। জীবনযুদ্ধে উপযোগী শারীরিক সংগঠন তাদের না থাকায় প্রকৃতির বুকে নানাবিধ ঝড়-ঝঞ্ঝা, তুষারপাতের আক্রমণ থেকে আত্মরক্ষা করতে না পারায়, তারা স্বাভাবিকভাবেই নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে।
মানব জাতির নানা শাখাও এভাবেই লয় পেয়েছে। অস্ট্রেলিয়ার আদিম অধিবাসী ‘বুশম্যান’১১ বা আমাদের দেশের নানাবিধ উপজাতি-যেমন কোল, ভীল বা সাঁওতাল যেভাবে ধ্বংসের পথে চলছে, শতাধিক বছর পরে আর তাদের কোন চিহ্ন নাও থাকতে পারে। তার কারণ, জীবনযুদ্ধে ওরা বারবার পরাজিত হচ্ছে। সে পরাজয়ের ফলে বিজেতা তাদের ব্যবহার করেছে যন্ত্রপাতির মত। তাদের বংশবৃদ্ধি বা মানসিক উৎকর্ষের কোন সুযোগ দিচ্ছে না। ডারউইনের ঐ মতবাদ প্রচারিত হওয়ার পরে বিখ্যাত প্রাণীবিদ উইজম্যান১২ প্রমাণ করেছেন যে, বাচ্চাদের মধ্যে মা-বাপ থেকে প্রাপ্ত জননকোষ১৩ কোন কালেই নষ্ট হয় না। কাজেই বিভিন্ন জাতি বা প্রজাতির মধ্যে জননকোষের ধারা চিরকাল অব্যাহত থাকে। প্রকারণের দ্বারা জননকোষের তারতম্য হয় না। অন্যদিকে ডারউইনের বা লেমার্কের ১৪ ধারনা ছিল প্রকারণের দ্বারা লব্ধগুণ১৫ সন্তানদের মধ্যে দেখা দেয়। বর্তমান জীববিজ্ঞানবিদ্দের এ সব জটিল তর্কে আপাতত লিপ্ত না হয়েও ডারউইনের মতবাদের নানা ত্রুটি সহজেই ধরতে পারা যায়। আপাতত জীবজগতের সর্বত্রই জীবন-যুদ্ধের দৃশ্য হলেও ডারউইন জীবনের শত্রুতার দিকটাই লক্ষ্য করেছেন। প্রাণীজ জগৎ ও প্রকৃতির মধ্যে তিনি বৈরিতার সূত্রই আবিস্কার করেছেন, তাদের পারস্পরিক সহযোগিতার দিকটা তিনি এড়িয়ে গেছেন। তিনি জীবজগতের এ যুদ্ধকে শত্রুর বিরুদ্ধে এবং প্রাকৃতিক উপাদানের বিপক্ষে জীবের টিকে থাকার যুদ্ধ বলে অভিহিত করেছেন। কাজেই তাঁর মতানুসারে চারটে যুদ্ধই সম্ভবপর বলে ধরে নিতে হয়। জীবকে তার শত্রুর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে হয়। এ শত্রু কারা?
১। এ শত্রু একই প্রজাতির১৬ অন্তর্গত বিভিন্ন ব্যক্তি হতে পারে।
২। এক প্রজাতির বিরুদ্ধে অন্য প্রজাতিও হতে পারে।
৩। সম্পূর্ণ ভিন্ন দুই জাতিও হতে পারে।
৪। প্রাকৃতিক বিভিন্ন উপাদান১৭ যেমন-পানি, বায়ু,গ্রীষ্ম,তুষারপাত প্রভৃতিও হতে পারে।
একে একে সবকটি যুদ্ধের আলোচনা করা যাক। ডারউইনের মতবাদ অনুসারে একই পূর্বপুরুষ থেকে সকল জীবেরেই উৎপত্তি হয়েছে। কীট-পতঙ্গ থেকে শুরু করে মানবজাতি পর্যন্ত সকল জীবেরই আদি পিতা একটি মাত্র জীবকোষ। মানুষ,গরু,মহিষ,হাতি,বাঘ,ভালুককে আপাতত ভিন্ন শ্রেনী মনে হলেও তাদের আদি জনক একই জীবকোষ। আকস্মিক প্রকারণ,জীবনযুদ্ধ,উপযুক্ততমের উদবর্তন,প্রাকৃতিক নির্বাচন১৮ প্রভৃতি চিন্তার মাধ্যমে তিনি দেখিয়েছেন-এক জীব থেকেই নানাবিধ শ্রেনীর সৃষ্টি হতে পারে।
একই আদি পিতা থেকে উৎপত্তি হলেও বর্তমানে বিভিন্ন প্রজাতির মধ্যে কোন কোনটি সগোত্র বলে দেখা যায়। তাদের মধ্যে সাদৃশ্য বর্তমান; যেমন,বাঘ জাতীয় প্রজাতির মধ্যে বিড়াল,পুমা,চিতাবাঘ,বড় বাঘ এক গোষ্ঠী বলে পরিচিত। তেমনি গরু,মহিষ,ছাগল প্রভৃতি এক প্রজাতীয় বলে মনে হয়। পাখিদের মধ্যে শত বিভিন্নতা পরিলক্ষিত হলেও তাদের মধ্যে কতকগুলো সাধারণ গুণ বর্তমান। অপরদিকে মানবজাতি১৯ ও বাঘ জাতীয় বা গরু জাতীয় জীবের মধ্যে পার্থক্য এত বেশি যে, তাদের ভিন্ন প্রজাতি না বলে ভিন্ন জাতি নামেই অভিহিত করা ভাল। বিবর্তনবাদের সূত্রানুসারে তাই জাতির সঙ্গে জাতিরও যুদ্ধ হতে পারে।
১. একই প্রজাতির অন্তর্গত বিভিন্ন ব্যষ্টির মধ্যে যুদ্ধ হয়। যেমন গো-জাতির বিভিন্ন ব্যষ্টির মধ্যে সচারাচর মারামারি,হানাহানি হয়। যারা দূর্বল, যারা পঙ্গু, তারা সহজেই সবলের হাতে নিধনপ্রাপ্ত হয়। এ সকল ঘটনা নিত্যই আমাদের চোখে পড়ে। প্রকাণ্ড ষাড় কর্তৃক ছোট ছোট বাছুরের অকাল মৃত্যু আমাদের প্রত্যেক গ্রামেই মাঝে মাঝে দেখা যায়। পুরুষ বিড়াল সুযোগ পেলেই সদ্যোজাত বিড়াল ছানাগুলোকে মেরে ফেলে। বাড়িতে শক্তিশালী পুরুষ মোরগ থাকলে তার অত্যাচারে অনেক সময় ছানা পোষা দায় হতে পড়ে। তবু এটি জীবজগতের একটি দিক মাত্র-যে, মোরগ ছানা হত্যায় আনন্দ পায়, সে-ই আবার চিলের আক্রমণ শুরু হলে চিৎকার করে অসহায় বাচ্চাদের সাবধান করে দেয়। যূথচারী প্রাণীদের-যেমন বন্য হস্তী,বন্যমহিষ প্রভৃতি বড়দের মধ্যে অত্যন্ত স্নেহপরায়ণতা বর্তমান। নিজের বাচ্চা না হলেও গোঠের অন্যান্য প্রাণীর বাচ্চাগুলোকে তারা আগলে রাখে। যে সকল পাখি একই ঋতুতে বাচ্চা তোলে-তাদের মধ্যে বেশ সহনশীলতা ও মহানুভবতার নীতি দেখা যায়;সবেমাত্র উড়তে শিখলে অনেক সময় এক বাসা থেকে বাচ্চাগুলো অন্য বাসায় ভুলে গেলেও বুড়ো পাখিরা তাদের মেরে ফেলে না। একটু ভয় দেখিয়েই ক্ষান্ত হয়।
২. এক প্রজাতির বিরুদ্ধে অন্য প্রজাতির বা এক জাতির বিরুদ্ধে অন্য জাতির লড়াই দেখা যায়। বিড়ালের ইঁদুর শিকার, সাপ ও বেজির যুদ্ধ, পাখিদের দ্বারা কীট-পতঙ্গাদির বিনাশ সব সময়ই চোখে পড়ে। মানুষ বুদ্ধিবলে সকল জীবের সেরা হলেও তাদের বাঘ,ভালুক থেকে আরম্ভ করে কীটপতঙ্গাদির বিরুদ্ধে লড়াই করতে হয়। কাজেই প্রজাতির বিরুদ্ধে প্রজাতির অথবা জাতির যুদ্ধ জীবনে অতি সত্যিকার ঘটনা। তবু মৈত্রীর উদাহরণেরও অভাব নেই। সচরাচর এক প্রজাতির জীবের সঙ্গে যুদ্ধে লিপ্ত হলেও মাঝে মাঝে দুই প্রজাতির জীবের মধ্যে মৈত্রীর সমন্ধ দৃষ্ট হয়। প্রাণী-বিজ্ঞানবিদেরা আবিস্কার করেছেন-মাংসাশী কুমীরের দাঁতের মাংস এক রকমের ছোট পাখি পরিস্কার করে নেয়। তাতে কুমীরের দাঁত যেমন পরিচ্ছন্ন হয়, তেমনি সেই পাখিগুলোরও আহারের সংস্থান হয়। গরু ও মহিষের শরীর থেকে পোকা বেছে নেয় শালিকেরা, তাতে তৃতীয় জাতীয় জীবের নিধন হলেও এই দুই জাতির মধ্যে প্রীতির সম্পর্ক গড়ে ওঠে।
মানুষ বুদ্ধিবলে অন্যান্য সকল প্রজাতিকেই তার জীবনযাত্রার নানা প্রয়োজনে ব্যবহার করে। বাঘ,ভালুক এমনকি বিষধর সাপকে মানুষ ব্যবহার করে তার নানাবিধ প্রয়োজনে। এতে শত্রুর দ্বারা অনেক ক্ষেত্রেই তার উপরকার হয়। বিভিন্ন জাতীয় মানুষের মধ্যে যুদ্ধ চলে সত্য,কিন্তু সে যুদ্ধে একে অপরকে সম্পূর্ণ বিনাশ করে লাভবান হতে পারে না। মানুষের বেলায় এ নিয়মের ব্যতিক্রম স্বতঃসিদ্ধের মত পরিস্কার। এক জাতি কর্তৃক বিজিত অপর জাতি যদি বিজেতার হাতে সমূলে ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়, তাহলে বিজয়ের কোন অর্থই হয় না। বিজয়ের মুখ্য উদ্দেশ্য বিজিত জাতির দ্বারা কাজ আদায় করা। আধুনিক পরিভাষায় তাকে শোষণ বলা হয়। যদি বিজিত জাতিকে ধ্বংসই করা হয় তাহলে শোষণের অবকাশ কোথায়?
৩.বিভিন্ন প্রাকৃতিক উপাদান যেমন-জল, বায়ু,শীত,গ্রীষ্ম প্রভৃতির সঙ্গে কেবল যুদ্ধ করেই জীব টেকে না; তারা জীবের বেঁচে থাকবার পক্ষেও অবশ্য প্রয়োজনীয়। জীবের দৈহিক সংগঠন উপযোগী না হলে এদের অত্যাচারে জীব লয় পায়, তেমনি দৈহিক সংগঠনের উপযুক্ত হলেও এদের অভাবে সে লয় পেতে পারে। দৈহিক সংগঠনের মাধ্যমে প্রাকৃতিক উপাদানকে গ্রহণ করেই জীব বেঁচে থাকে। তাদের পরস্পরের সহযোগিতা অনেক ক্ষেত্রেই অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।
জীবিজ্ঞানের সিদ্ধান্ত অনুসারে বিভিন্ন শ্রেণীর জীবের মধ্যে যুদ্ধ রয়েছে সত্যিই, তবে সে যুদ্ধই জীবনের একমাত্র রূপ নয়। সে যুদ্ধের মধ্যেও প্রেম,মৈত্রী ও ভালবাসা রয়েছে। সন্তানের জন্য পিতামাতার বুকে রয়েছে অপার স্নেহ,দম্পতির মধ্যে সাধারণত রয়েছে অগাধ ভালবাসা,বাচ্চাদের প্রতি বুড়োদের রয়েছে বাৎসল্যবোধ। একই প্রজাতির বিভিন্ন ব্যষ্ঠিদের মধ্যে রয়েছে সংঘবদ্ধ হয়ে আত্মরক্ষার চেষ্ঠা। মানবজীবনে কেবল যুদ্ধই একমাত্র সারসত্য নয়। সেই যুদ্ধের অন্তরালেও মানুষের যূথচারী প্রবৃত্তি তাকে সমষ্টি-চেতনায় উদ্বুদ্ধ করে। মানব-জীবনের অনেকগুলো কাজ-কর্মই নিয়ন্ত্রিত হয় প্রেম,দয়া-মায়া-স্নেহ প্রভৃতি সুকুমার বৃত্তি দ্বারা।