এক সঙ্গে চারজন স্ত্রী গ্রহণ
****************************************
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রা) হইতে বর্ণিত হইয়াছে, সাকাফী বংশের গাইলান ইবনে সালামাতা ইসলাম গ্রহণ করিল। এই ব্যক্তির ইসলামপূর্ব জাহিলিয়াতের সময়ে দশজন স্ত্রী ছিল। তাহারা ও তাহার সঙ্গে ইসলাম গ্রহণ করিল। তখন নবী করীম (স) তাহাকে স্ত্রীদের মধ্য হইতে মাত্র চারজন বাছিয়া লইবার জন্য নির্দেশ দিলেন।
(তিরমিযী, মুসনাদে আহমাদ, ইবনে মাজাহ, দারে কুতনী, বায়হাকী)
ব্যাখ্যাঃ ইসলামে এক সঙ্গে কয়জন স্ত্রী রাখা জায়েয, এই বিষয়ে ইহা একটি গুরুত্বপূর্ণ হাদীস। এই হাদীস হইতে স্পষ্ট জানা যায়, জাহিলিয়াতের যুগে গাইলান সাকাফী দশজন স্ত্রীর স্বামীত্ব গ্রহণ করিয়াছিলেন। পরে তিনি ইসলাম কবুল করিলে তাঁহার এই স্ত্রীরাও তাঁহার সঙ্গে ইসলাম গ্রহণ করেন। ইহার পর নবী করীম (স) তাঁহাকে নির্দেশ দিলেন যে, ইহাদের মধ্য হইতে মাত্র চারজন স্ত্রী বাছিয়া লও এবং স্বীয় স্ত্রীরূপে রাখ। অবশিষ্ট ছয়জন স্ত্রী তোমার স্ত্রী রূপে থাকিতে পারিবে না। কেননা ইসলামে একই সময়ে মাত্র চারজন স্ত্রী রাখা যাইতে পারে, তাহার অধিক একজনও নহে।
নাসায়ী গ্রন্হে এই হাদীসটির শেষাংশের ভাষা এইরূপঃ
****************************************
নবী করীম (স) তাহাকে স্ত্রীদের মধ্য হইতে চারজন পছন্দ করিয়া রাখার জন্য আদেশ করিলেন।
অপর এক বর্ণনায় এই হাদীসটির ভাষা হইলঃ
****************************************
ইহাদের মধ্য হইতে মাত্র চারজন বাছিয়া লও।
আর একটি বর্ণনার ভাষা এইঃ
****************************************
ইহাদের মধ্য হইতে মাত্র চারজনকে রাখিয়া দাও। আর অবশিষ্ট সকলকে বিচ্ছিন্ন করিয়া দাও।
এই পর্যায়ের আর একটি হাদীস হইলঃ
****************************************
উমাইরাতুল আসাদী বলিয়াছেন, আমি যখন ইসলাম কবুল করি, তখন আমার আটজন স্ত্রী ছিল। আমি এই কথা নবী করীম (স)- এর নিকট উল্লেখ করিলে তিনি বলিলেন, ইহাদের মধ্য হইতে মাত্র চারজন বাছিয়া লও। (আবূ দায়ূদ)
মুকাতিল বলিয়াছেন, কাইস ইবনে হারেসের আটজন স্ত্রী ছিল। এ বিষয়ে কুরআনের আয়াত নাযিল হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নবী করীম (স) তাহাকে চারজন রাখিয়া অপর চারজনকে ত্যাগ করিতে আদেশ করিলেন। (আবূ দায়ুদ) এই পর্যায়ে আর একটি হাদীস এইরূপঃ
****************************************
নওফল ইবনে মুয়াবীয়া হইতে বর্ণিত হইয়াছে, তিনি বলিয়াছেনঃ আমি যখন ইসলাম কবুল করি, তখন আমার পাঁচজন স্ত্রী ছিল। তখন নবী করীম (স) আমাকে বলিলেনঃ তোমার স্ত্রীদের মধ্যে হইতে তুমি তোমার ইচ্ছামত যে কোন চারজনকে বাচাই করিয়া লও এবং অবশিষ্টকে বিচ্ছিন্ন কর।
(মুসনাদে শাফেয়ী)
এইসব কয়টি হাদীস একত্রে পাঠ করিলে একসেঙ্গে রাখা স্ত্রীদের সংখ্যা সম্পর্কে ইসলামী শরীয়াতের বিধান স্পষ্টভাবে জানা যায়। এই ব্যাপারে ইসলামী শরীয়অতের অকাট্য বিধান হইল, এক সয়্গে চারজনের অধিক স্ত্রী রাখার সম্পূর্ণ হারাম। ইহা কেবলমাত্র কাফির থাকা অবস্থায়ই সম্ভব, মুসলমান থাকা অবস্থায় নয়। কোন কাফির যদি একসঙ্গে চারজনের অধিক স্ত্রীর স্বামী হইয়া থাকে, আর এই অবস্থায় সে নিজে এবং তাহার সবকয়জন স্ত্রীও ইসলাম গ্রহণ করেন, তবে স্বামীকে এই স্ত্রীদের মধ্য হইতে মাত্র চারজন বাছঅই করিয়া লইতে হইবে। কেননা একসঙ্গে চারজনের অধিক স্ত্রী রাখা যদি ইসলামে জায়েয হইতো, তাহা হইলে- উপরোদ্ধৃত হাদীস সমূহে যেমন বলা হইয়াছে- চারজন মাত্র স্ত্রী রাখিয়া অবশিষ্টদিগকে বিচ্ছিন্ন ও বিদায় করিয়অ দিবার জন্য রাসূলে করীম (স) কাহারকেও নির্দেশ দিতেন না। বিশেষত তাঁহারাও যখন স্বামীর সঙ্গে সঙ্গে ইসলাম গ্রহণ করিয়া ছিলেন তখন সাধারণ বিবেক বুদ্ধিতে তাহাদের সকলকেই স্ত্রীরূপে থাকিতে দেওয়াই বাঞ্ছনীয় ছিল। কিন্তু ইসলামী শরীয়াতের অকাট্য বিধানে এক সঙ্গে চারজনের অধিক স্ত্রী রাখার কোন অবস্থাতেই একবিন্দু অবকাশ নাই। এই কারণে চারজনকে রাখিয়া অবশিষ্টদিগতে ত্যাগ করার নির্দেশ দিয়াছেন।
এক সঙ্গে অনধিক চারজন স্ত্রী রাখার অনুমতি মূলত কুরআন মজীদে দেওয়া হইয়াছে। আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করিয়াছেনঃ
****************************************
তোমরা বিবাহ কর যত সংখ্যকই তোমাদের মন চাহে- দুইজন, তিনজন, চারজন।
নবী করীম (স) কোন সাহাবী- কোন মুসলমানকেই এক সঙ্গে চারজনের অধিক স্ত্রী রাখার অনুমতি দেন নাই। কোন মুসলমানই তাঁহার সময়ে চারজনের অধিক স্ত্রীর স্বামী ছিলেন না। ইহা হইতে একথাও অকাট্যভাবে প্রমাণিত হয় যে, এক সময়ে চারজন পর্যন্ত স্ত্রী রাখার জায়েয হওয়া সম্পর্কে এবং ইহার অধিক সংখ্যক স্ত্রী একসঙ্গে রাখার নাজায়েয হওয়া সম্পর্কে মুসলিম মিল্লাতে কোন কালেই কোন দ্বিমত ছিল না। ইহার উপর ইজমা অনুষ্ঠিত হইয়াছে। এই বিষয়ে বর্ণিত ও এখানে উদ্ধৃত সব কয়টি হাদীসের সনদ সম্পর্কে কঠিন প্রশ্ন উঠিয়অছে এবং তাহা তুলিয়াছেন প্রখ্যাত ও বিশেষভাবে পারদর্শী হাদীস বিশেষজ্ঞগণ; ইহা অস্বীকার করার উপায় নাই। কিন্তু তাহা সত্ত্বেও এই হাদীস সমূহ পরস্পর সম্পূরক। পরস্পর সমার্থক, কুরআনের স্পষ্ট ঘোষণায় সমর্থিত এবং রাসূলে করীম (স) কর্তক কার্যতঃ প্রতিষ্ঠিত, এই কারণে এক সঙ্গে ও এক সময়ে চারজনের অধিক স্ত্রী রাখার নাজায়েয- বরং হারাম হওয়া সম্পর্কে কোনই সন্দেহ নাই।
(*********************************)
বিবাহের পূর্বে কনে দেখা
****************************************
হযরত আবূ হুরাইরা (রা) হইতে বর্ণিত হইয়াছে, তিনি বলিয়াছেন, আমি একদিন নবী করীমের নিকট উপস্থিত ছিলাম। তখন তাহার নিকট এক ব্যক্তি আসিল। সে রাসূলে করীম (স)-কে জানাইল যে, সে আনসার বংশের একটি মেয়ে বিবাহ করিয়াছে। এই কথা শুনিয়া নবী করীম (স) তাঁহাকে জিজ্ঞাসা করিলেন, তুমি কি তাহাকে দেখিয়াছ? লোকটি বলিল, না। রাসূলে করীম (স) বলিলেনঃ তাহা হইলে এখনই চলিয়া যাও এবং তাহাকে দেখ। কেননা আনসার বংশের লোকদের চক্ষুতে একটা কিছু আছে। (মুসলিম)
ব্যাখ্যাঃ হাদীসটি হইতে মোট দুইটি কথা জানা যায়। একটি এই যে, নবী করীম (স) আনসার বংশের লোকদের চোখে একটা কিছু থাকার কথা বলিলেন এমন ব্যক্তিকে যে সেই বংশের একটি মেয়েকে বিবাহ করিয়াছে।
আর দ্বিতীয় কথা এই যে, রাসূলে করীম (স) আনসার বংশের মেয়ের স্বামীকে জিজ্ঞাসা করিলেন, তুমি সেই মেয়েটিকে দেখিয়াছ কিনা? সে যখন দেখে নাই বলিয়া জানাইল, তখন নবী করীম (স) মেয়েটিকে দেখার জন্য তাহাকে নির্দেশ দিলেন।
প্রথম কথাটি সম্পর্কে হাদীস ব্যাখ্যাকারগণ বলিয়াছেনঃ এই রূপে বলা কল্যাণকামী ব্যক্তির জন্য সম্পূর্ণ জায়েয। ইহা কোন গীবত নয়, নয় তাহারও বিষয়ে মিথ্যা দুর্নাম রটানো বা কোন রূপ বিদ্বেষ ছড়ানো বরং একটা প্রকৃত ব্যাপারের সহিত সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে পরিচিত করা মাত্র। কেননা আনসার বংশের মেয়েদের চোখে যদি এমন কিছু থাকে যা অন্য লোকদের পছন্দনীয় নাও হইতে পারে, তাহা হইলে সেই মেয়েকে লইয়া দাম্পত্য জীবন সুখের নাও হইতে পারে। তাই পূর্বাহ্নেই সে বিষয়ে জানাইয়া দেওয়া কল্যাণকামী ব্যক্তির দায়িত্বও বটে।
কিন্তু আনসার বংশের লোকদের চোখে কি জিনিস থাকার কথা রাসূলে করীম (স) বলিয়াছিলেন? কেহ কেহ বলিয়াছেন, আনসার বংশের লোকদের চক্ষু আকারে ক্ষুদ্র হইত। আর ক্ষুদ্র চোখ অনেকেই স্বাভাবিকভাবেই পছন্দ করে না। কেহ কেহ বলিয়াছেন, তাহাদের চক্ষু নীল বর্ণের হইত, যাহা অনেক লোকেরই অপছন্দ। রাসূলে করীম (স) এই দিতেই ইঙ্গিত করিয়াছেন। মোট কথা, ইহা কোন বিশেষ বংশ বা শ্রেণীর বিরুদ্ধে বিদ্বেষ প্রচারণাও নহে।
রাসূলে করীম (স)- এর দ্বিতীয় কথাটি হইতে জানা যায়, যে মেয়েকে বিবাহ করা হইবে, তাহাকে দেখিয়া লওয়া বাঞ্ছনীয়। বিবাহ করার পর স্বামীকে জিজ্ঞাসা করা যে, সে বিয়ে-করা-মেয়েটিকে দেখিয়াছে কিনা, ইহার দুইটি তাৎপর্য হইতে পারে? হয় ইহা হইবে যে, বিবাহ করার পূর্বে তাহাকে দেখিয়াছ কিনা। নতুবা এই হইবে যে, বিয়ে করার পর-পরই তাহাকে দেখিয়াছ কিনা। আলোচ্য লোকটি বিবাহ করিয়াছে, এই সংবাদ দেওয়ার পর নবী করীম (স) তাহাকে চলিয়া যাইতে ও তাহাকে দেখিতে বলিলেন- দেখিতে হুকুম করিলেন। কিন্তু মুহাদ্দিসগণ এই ঘটনা হইতে যে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করিয়াছেন, তাহা হইলঃ
****************************************
যে মেয়েকে বিবাহ করতে ইচ্ছা বা সংকল্প করা হইয়াছে বিবাহের প্রস্তাব দেওয়ার পূর্বেই তাহার মুখাবয়ব ও হস্তদ্বয় দেখিয়া লওয়া মুস্তাহাব- পছন্দীয় ও বাঞ্ছনীয়।
ইহা মুসলিম শরীফে এতদসংক্রান্ত হাদীস সমূহের শিরোনামা। কিন্তু এই শিরোনামার অধীন মাত্র দুইটি হাদীস উদ্ধৃত হইয়াছে। উহার একটি এখানে উদ্ধৃত করিয়াছি। আর দ্বিতীয়টিও হযরত আবু হুরায়রা হইতে বর্ণিত এবং তাহাতেও আনসার বংশের একটি মেয়ে বিবাহ করা সংক্রান্ত একটি ঘটনার বিবরণ বলা হইয়াছে। তবে এই দ্বিতীয় হাদীসটির ঘটনা কতকটা ভিন্নতর। তাহাতে বলা হইয়াছে, এক ব্যক্তি আসিয়া রাসূলে করীম (স) কে জানাইল, সে আনসার বংশের একটি মেয়ে বিবাহ করিয়াছে। নবী করীম (স) জিজ্ঞাসা করিলেনঃ **************************************** ‘তুমি কি সে মেয়েটিকে দেখিয়াছ?’ কেননা, আনসারদের চোখে কিছু একটা আছে? লোকটি বলিল, ***************** ‘হ্যাঁ, আমি তাহাকে দেখিয়াছি’।
কিন্তু এই দুইটি হাদীসের কোন একটিতেও একথার উল্লেখ নাই যে, বিবাহ করার পূর্বে মেয়েটিকে দেখিয়াছে কিনা, নবী করীম (স) এই কথাই জানিতে চাহিয়াছিলেন। হইতে পারে বিবাহের পর দেখিয়াছে কিনা, তাহাই তিনি জানিতে চাহিয়াছিলেন। হইতে পারে, বিবাহের পূর্বে দেখার কথা জানিতে চাহিয়াছিলেন। রাসূলের জিজ্ঞাসার জওয়াবে প্রথমোদ্ধৃত হাদীসের লোকটি জানাইল, সে মেয়েটিকে দেখে নাই। আর দ্বিতীয় হাদীসের লোকটি বলল, সে দেখিয়াছে। কিন্তু এই দেখার ব্যাপারে কি বিবাহের পূর্বের সঙ্গে জড়িত, না বিবাহের পরে দেখার সহিত এবং প্রথম ব্যক্তি না দেখার কথা বলিয়াছে তাহা কি বিবাহের পূর্বের ব্যাপার? এ সম্পর্কে স্পষ্ট কিছুই উল্লেখ করা হয় নাই?
কিন্তু তাহা সত্ত্বেও হাদীস ও ফিকাহবিদগণ এই সব ও এই সংক্রান্ত অন্যান্য হাদীসের ভিত্তিতেই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করিয়াছেন, যে, মেয়েকে বিবাহ করার ইচ্ছা বা সিদ্ধান্ত করা হইয়াছে, তাহাকে বিবাহ করার পূর্বে এমনকি বিবাহের প্রস্তাব দেওয়ারও পূর্বে দেখিয়া লওয়া বাঞ্ছনীয়। হানাফী, শাফেয়ী, মালিকী, মাযহাবের ইহাই মত। সমস্ত কুফী ফিকাহবিশারদ, ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল ও জমহুর হাদীসবিদগণও এই মতই সমর্থন করিয়াছেন। কাযী ইয়ায বলিয়াছেন, কোন কোন লোক বিবাহের পূর্বে কনেকে দেখা বিবাহেচ্ছু পুরুষের জন্য মকরূহ। কিন্তু ইমাম নবব লিখিয়াছেন, ইহা সঠিক মত নয়। কেননা এই মত এই হাদীসের ও সমস্ত উম্মতের ইজমা’র পরিপন্হী। বিশেষতঃ সামাজিক ও অর্থনৈতিক সর্বপ্রকার লেন-দেন কালে মূল জিনিসটিকে পূর্বেই দেখিয়া ও যাচাই পরখ করিয়া লওয়া সম্পূর্ণ জায়েয এবং ইসলামে ইহার উপর গুরুত্ব আরোপ করা হইয়াছে। বিবাহও অনুরূপ একটি সামাজিক ব্যাপার। বিবাহে সাধারণতঃ ভিন্ন এক পরিবারের আদেখা-অচেনা-অজানা একটি মেয়ে সম্পূর্ণ ভিন্ন এক পরিবারের অতীব আদব ও মর্যাদা সম্পন্ন সদস্য হইয়া যায়। মেয়েটিকে লইয়া একটি পুরুষের জীবন অতিবাহিত করিতে হইবে। তাহাকে কেন্দ্র করিয়াই ছেলেটির বংশের ধারা সম্মুখে অগ্রসর হইবে, সে হইবে তাহার সন্তানের মা- পরবর্তী বংশদরের উৎস কেন্দ্রে। কাজেই সে মেয়েটি সর্বদিক দিয়া পছন্দমত কিনা তাহা ছেলেটির ভাল ভাবে দেখিয়া লওয়া বাঞ্ছনীয়। ইহা অতীব যুক্তিপূর্ণ কথা।
বিবাহের পূর্বে কনে দেখা বাঞ্ছনীয়; কিন্তু সেই দেখার মাত্রা কতখানি? ইমাম নববী লিখিয়াছেনঃ
****************************************
মেয়েটির শুধু মুখমণ্ডল ও হস্তদ্বয় দেখাই ছেলেটির জন্য জায়েয।
ইহার কারণ বলা হইয়াছে, মুখমণ্ডল ও হস্তদ্বয় যেহেতু মেয়ের ‘সতর’ বা অবশ্য আচ্ছাদনীয় অঙ্গ’ নয়, কাজেই তাহার দিকে দৃষ্টিপাত করা বা দেখা একজন ভিন পুরুষের জন্য নাজায়েয নয়। দ্বিতীয়তঃ মুখমণ্ডল দেখিলেই তাহার রূপ ও সৌন্দর্য সম্পর্কে- মেয়েটি সুন্দরী-রূপসী, সুদর্শনা না কৃষ্ণ-কুৎসিত, তাহা বুঝিতে পারা যায়। আর হস্তদ্বয় দেখিলে সমস্ত দেহের গঠন-সংস্থা সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা করা সম্ভব। সমস্ত ফিকাহবিদের ইহাই অভিমত। ইমাম আওজায়ী বলিয়াছেন, মেয়েদের দেহের মাংসল স্থান সমূহ দেখিবে। আর দায়ূদ যাহেরী বলিয়াছেন, ******************* মেয়েটির সমস্ত দেহ ও অংগ-প্রতঙ্গ দেখিবে। কিন্তু এই দুইটি মত সম্পর্কে ইমাম নববী লিখিয়াছেন, এই মত সুন্নাত ও ইমজার মূল নীতির পরিপন্হী।
কনেকে দেখার ব্যাপারে তাহার পূর্বানুমতি গ্রহণের প্রয়োজন আছে কি? এই বিষয়ে ইমাম নববী লিখিয়াছেন, সকল মাযহাব ও জমহুর ফিকাহবিদদের মতে বিবাহের উদ্দেশ্যে মেয়েকে দেখার ব্যাপারে তাহার পূর্বানুমতির বা পূর্ব সম্মতির কোন প্রয়োজন নাই। বরং মেয়ের অজ্ঞাতসারেই তাহার অসতর্ক থাকা অবস্থায় এবং পূর্ব জানান ব্যতিরেকেই তাহাকে দেখার অধিকার বিবাহেচ্ছু ছেলের রহিয়াছে। তবে ইমাম মালিক বলিয়ানে, মেয়ের অসতর্কতাবস্থায় তাহাকে দেখা আমি পছন্দ করি না। কেননা তাহাতে মেয়ের ‘সতর- অবশ্য আচ্ছাদনীয় অংদের উপর দৃষ্টি পড়ার আশংকা রহিয়াছে। মেয়ের অনুমতিক্রমে মেয়েকে দেখিতে হইবে। এ মতও যথার্থ নয়। কেননা নবী করীম (স) দেখার অনুমতি দিয়াছেন বিনা শর্তে। তাহার পূর্বানুমতি বা সম্মতি গ্রহণ করিতে হইবে, এমন কথা রাসূলে করীম (স) বলেন নাই। আর অনুমতি চাওয়া হইলে সে হয়ত লজ্জায় অনুমতি দিবে না, ইহার আশংকা রহিয়াছে। উপরন্তু সেরূপ দেখায় প্রতারিত হওয়ারও আশংকা রহিয়াছে। অনেক সময় এমনও হয় যে, মেয়েকে রীতিমত জানান দিয়া ছেলে তাহাকে দেখিল, কিন্তু সে মেয়েকে পছন্দ করিতে পারিল না। ফলে তাহাকে বিবাহ করিতে রাযী হইতে পারিল না, তাহাকে বিবাহ করিতে অস্বীকার করিয়া বসিল। ইহাতে মেয়েটির কি পরিণতি হইতে পারে তাহা সহজেই বুঝা যায়। ইহার ফলে মেয়েটি সমাজে অবাঞ্ছিতা ও পরিত্যক্তা হইয়া যাইতে পারে। আর শেষ পর্যন্ত ইহা যে এক নিদারুণ কষ্টের কারণ হইয়া দাঁড়াইবে, তাহাতে আর সন্দেহ কি?
এই কারণেই শরীয়াত বিশেষজ্ঞগণ মত দিয়াছেন যে, কোন মেয়েকে বিবাহের আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব দেওয়ার পূর্বেই তাহাকে ছেলের দেখিয়া লওয়া বাঞ্ছনীয়। তখন যদি পছন্দ না হয়, ও বিবাহ করিতে অরাযী হয়, তাহা হইলে তাহাতে কাহারও কোন লজ্জা ও অপমান বা মনোকষ্টের কারণ ঘটিবে না।
বিশেষজ্ঞগণ আরও বলিয়াছেন, ছেলের নিজের পক্ষে কাঙ্খিতা মেয়েকে দেখা যদি সম্ভবই না হয়, তাহা হইলে সে আপনজনের মধ্য হইতে কোন এক মেয়ে লোককে পাঠাইয়া মেয়ে সম্পর্কে যাবতীয় খবরাখবর লইবে। কিন্তু এই সবই আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব দেওয়ার পূর্বে হওয়া উচিত, পরে নয়।
একালে মেয়ের ছবি দেখার একটা সাধারণ প্রচলন- বিশেষ করিয়া শহরাঞ্চলে ও আধুনিক আলোকপ্রাপ্ত ভদ্র সমাজে রহিয়াছে। তবে ছবিদ্বারা মুখ ও অবয়ব সম্পর্কে একটা ভাষা-ভাষা ও অস্পষ্ট ধারণা করা যায় বটে; কিন্তু সে সত্যই মনপুত কিনা, সে বিষয়ে নিশ্চিন্ত হওয়া যায় না। তাই কেবল মাত্র ছবি দেখিয়াই সিদ্ধান্ত গ্রহণ উচিত হইবে না।
(*****************)
****************************************
হযরত মুগীরা ইবনে শু’বা (রা) হইতে বর্ণিত হইয়াছে, তিনি একজন মেয়েলোককে বিবাহ করার জন্য প্রস্তাব দিলেন। তখন নবী করীম (স) বলিলেন, তুমি মেয়েটিকে (আগেই) দেখিয়া লও। কেননা এই দর্শন তোমাদের মধ্যে সম্পর্কের স্থায়িত্ব আনিয়া দেওয়ার জন্য অধিকতর কার্যকর ও অনুকূল হইবে। (তিরমিযী
ব্যাখ্যাঃ এই হাদীসটিতে বিবাহ করার পূর্বে কনেকে দেখার জন্য নবী করীম (স)- এর স্পষ্ট নির্দেশ উচ্চারিত হইয়াছে। এই দেখার উদ্দেশ্য ও যৌক্তিকতা নবী করীম (স) নিজেই বলিয়া দিয়াছেন। আর তাহা হইল, এই দর্শন তোমাদের দুইজনের মনে ঐকান্তিকতা, আন্তরিকতা, মনের আকর্ষণ, সংগিত, সহমর্মিতাও সংহতি জাগাইয়া দিবে। দুই জনের মধ্যে আনূকূল্য ও পারস্পরিক কল্যাণ কামনার সৃষ্টি করিবে। আর ইহার ফলে তোমাদের দাম্পত্য জীবন সুদৃঢ় ও স্থায়ী হইবে। তোমাদের স্বামী-স্ত্রী সম্পর্ক প্রেম-প্রীতি ও ভালবাসার মাধুর্যে মাদকতায় ভরপুর ও সুদৃঢ় হইয়া থাকিবে। কখনই মনোমালিন্য ও ছাড়াছাড়ির কারৰণ ঘটিবে না। কেননা পারস্পরিক পরিচিতি ও ভালবাসার ফলে বিবাহ অনুষ্ঠিত হইলে পরবর্তীকালে কোনরূপ ক্ষোভ বা অনুশোচনার কারণ দেখা দিবে না বলিয়া বেশীর ভাগ ক্ষেত্রেই আশা করা যায়।
ইমাম তিরমিযী হাদীসটি উদ্ধৃত করার পর ইহার অর্থ লিখিয়াছেনঃ
****************************************
তোমাদের দুইজনের মধ্যে প্রেম-প্রীতি ও ভালবাসা ইহার (বিবাহ পূর্বে দেখার) ফলে স্থায়ী হইয়া থাকিবে।
অতঃপর ইমাম তিরমিযী লিখিয়াছেনঃ
****************************************
বিশেষজ্ঞগণ বলিয়াছেনঃ যে মেয়ের বিবাহের প্রস্তাব দেওয়া হইয়াছে, প্রস্তাবক পুরুষ বিবাহের পূর্বে তাহাকে দেখিলে- অবশ্য তাহার দেহের হারাম অঙ্গ না দেখিলে- কোনই দোষ হইবে না।
এই পর্যায়ের্আর একটি হাদীস হযরত মুহাম্মদ ইবনে মুসলিমাতা (রা) হইতে বর্ণিত হইয়াছে। রাসূলে করীম (স) বলিয়াছেনঃ
****************************************
আল্লাহ তা’আলা যখন কোন পুরুষের দিলে কোন মেয়েকে বিবাহ করার জন্য প্রস্তাব দেয়ার ইচ্ছা জাগাইয়া দেন, তখন সে মেয়েটিকে দেখিবে তাহাতে কোনই দোষ নাই।
(ইবনে মাজাহ, মুসনাদে আহমাদ, ইবনে হাব্বান, হাকেম)
অনুরূপভাবে হযরত জাবির (রা) হইতে বর্ণিত হইয়াছে, তিনি বলিয়াছেন, আমি রাসূলে করীম (স)- কে বলিতে শুনিয়াছিঃ
****************************************
তোমাদের কেহ যখন কোন মেয়েকে বিবাহ করার প্রস্তাব দিবে, তখন সেই মেয়ের দেহের এমন কোন অংশ দেখা যদি সেই পুরুষের পক্ষে সম্ভব হয় যাহা তাহাকে বিবাহ করিতে সেই পুরুষকে উদ্বুদ্ধ ও উৎসাহী করিবে, তবে তাহা তাহার এইকাজ অবশ্যই করা উচিত।
(আবূ দায়ূদ, মুসনাদে আহমাদ)
এই হাদীসটির শেষাংশে হযরত জাবির (রা) বলিয়াছেন, রাসূলে করীমের (স) এই কথা শুনার পর আমি বনু সালমা বংশের একটি মেয়েকে বিবাহ করার প্রস্তাব দিলাম। অতঃপর আমি তাহার এমন কিছু দেখার জন্য চেষ্টা করিতে লাগিলাম যাহা তাহাকে বিবাহ করার জন্য আমাকে উৎসাহিত ও অনুপ্রাণিত করিতে পারে। এই উদ্দেশ্যে ******** আমি তাহাকে দেখিবার জন্য খেজুর গাছের ডালের আড়ালে দাঁড়াইয়া থাকিতে লাগিলাম। পরে সেই রকম কিছু দেখিতে পাওয়ায় আমি সেই মেয়েকেই বিবাহ করিলাম। (********)
রাসূলে করীম (স)-এর উপরোক্ত কথাটি আবূ হুহমাইদ এই ভাষায় বর্ণনা করিয়াছেনঃ
****************************************
তোমাদের কেহ যখন কোন মেয়েকে বিবাহ করার প্রস্তাব দিবে, তখন এই প্রস্তাব দেওয়ার উদ্দেশ্যে সেই মেয়ের দেহের কোন অংশ যদি সে দেখে- এরূপ অবস্থায় যে, সে মেয়ে তাহা টেরই পায় না, তবে তাহাতে কোনই দোষ হইবে না।
বিবাহের প্রস্তাব দেওয়ার উদ্দেশ্যে মেয়েকে দেখার জন্য ইসলামী শরীয়াতে এই যে উৎসাহ দান কর হইয়াছে- নবী করীম (স) স্পষ্ট ভাষায় নির্দেশ দিয়াছেন, ইহার মূলে একটি কারণ হইল, ইসলামী সমাজে মেয়ে পুরুষে অবাধ মেলা-মেশার কোন সুযোগ থাকিতে পারে না। তথায় সহশিক্ষার ব্যবস্থা হয় না। ছেলেরা অবাধে মেয়েদিগকে দেখার কোনই সুযোগ পাইতে পারে না। গোপন বন্ধুতা, প্রেম-ভালবাসা, সহঅভিনয় ও হোটেল-রেস্তোঁরা-পার্কে-খেলার মাঠে-ক্লাসে-সভা-সম্মেলনে পরস্পরকে প্রকাশ্যভাবে দেখার, কথাবলার, পারস্পরিক জানা-জানির কোন সুযোগ হয় না। এই কারণেই বিবাহের প্রস্তাব দেওয়ার সময় যাহাতে পরস্পরকে দেখিতে ও পছন্দ করিতে পারে এবং পারস্পরিক বুঝা-শুনার পরই বিবাহিত হইতে পারে, এই জন্যই ইসলামে এই সুযোগ রাখা হইয়াছে। বর্তমান নগ্নতা ও অবাধ মেলা-মেশার যুগেও যে সব পরিবারে শরীয়াত মুতাবিক পর্দা পালিত হয়, সে সব ক্ষেত্রে বিবাহের প্রস্তাব পূর্বে এইরূপ কনে দেখারও প্রচলন রহিয়াছে। ইহা মূলত ইসলাম প্রবর্তিত অতীব কল্যাণকর প্রচলন, তাহাতে কোনই সন্দেহ নাই।
কনের বাঞ্ছিত গুণাবলী
****************************************
হযরত আবূ হুরায়রা (রা) হইতে বর্ণিত হইয়াছে, তিনি নবী করীম (স) হইতে বর্ণনা করিয়াছেন, হযরত রাসূলে করীম (স) বলিয়াছেনঃ কনে বাছাই করার সময় চারটি বিষয়ে গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করা হইয়া থাকে। কোন মেয়েকে বিবাহ করা হয় তাহার ধান-সম্পত্তির জন্য, তাহার বিশেষ বংশীয় মর্যাদা ও বিশেষত্বের জন্য, তাহার রূপ ও সৌন্দর্যের জন্য এবং তাহার ধার্মিকতা ও ধর্মপালন প্রবণতার জন্য। অতএব তুমি অন্য সবদিক বাদ দিয়া কেবলমাত্র ধার্মিকতা ও দ্বীন-পালনকারী মেয়েকে গ্রহণ করিয়াই সাফল্য মণ্ডিত হও। …. তোমার দুই হাত মাটিতে মিশ্রিত হউক….।
ব্যাখ্যাঃ এই হাদীসটিতে চারটি গুণ ও বৈশিষ্ট্যের উল্লেখ করা হইয়াছে, লোকেরা সাধারণত কনে বাছাই করার সময় এই চার গুণের দিকেই গুরুত্ব দিয়া থাকে এবং এই গুণগুলি কিংবা ইহার কোন একটি গুণ যে মেয়ের মধ্যে দেখিতে পাওয়া যায়, সেই মেয়েকে বিবাহ করার সিদ্ধান্ত করা হয়। ইহা যেমন মানব সমাজের চিরকালের সাধারণ নিয়ম, তেমনি ইহা মানুষের রুটি ও পছন্দ বাছাইয়ের যুক্তিসম্মত মানও বটে। যে কোন ধরনের একটা মেয়ে পাওয়া গেলেই মানুষ তাহাকে বিবাহ করার জন্য আগ্রহী ও উৎসাহী হইয়া উঠে না।
এই গুণ কয়টির মধ্যে প্রথম হইতেছে ধন-সম্পত্তির অধিকারী হওয়া। মেয়ে নিজে ধন-সম্পত্তির অধিকারী হইবে; কিংবা সে কন্যা হইবে কোন ধন-সম্পত্তির অধিকারী ব্যক্তির। প্রায়ই দেখা যায়, বিবাহেচ্ছু যুবক ধন-সম্পত্তির অধিকারী কোন পরিবারের মেয়ে বিবাহ করিতে চায়। ইহার পিছনে যে কাজ করে, তাহা হইল, স্ত্রী অর্থ- সম্পদে সুখী জীবন যাত্রার ভাবনা-চিন্তাহীণ সুযোগ লাভ। উপরন্তু স্ত্রী নিজে ধন-সম্পত্তির মালিক হইলে স্বামীর উপর স্ত্রীর দাবি- দাওয়া কিংবা পরিবার পরিচালনার ব্যয় নির্বাহ করার দায়িত্ব অনেক কম চাপিবে। অথবা শ্বশুরের মৃত্যুর পর অনেক সম্পত্তি মীরাসী সূত্রে পাওয়ার আশা মানসলোকে প্রবল হইয়া থাকে। আর শ্বশুরের জীবদ্দশায় ও শ্বশুর বাড়ীর উপঢৌকনে সুখের বন্যা প্রবাহিত হইবে।
মুহাল্লাব বলিয়াছেন, হাদীসের এই কথাটি প্রমাণ করে যে, স্ত্রীর ধন-সম্পদে স্বামীর ভোগাধিকার আছে। স্ত্রী যদি নিজ খুশীতে স্বামীকে টাকা-পয়সা দেয় তবে তাহা ভোগ- ব্যবহার করা তাহার জন্য সম্পূর্ণ জায়েয। কিন্তু স্ত্রীকে স্বামীর ইচ্ছামত নিজের টাকা পয়সা ব্যয় করিতে বাধ্য করার কোন অধিকার স্বামীর নাই। ইমাম আবূ হানীফা, সওরী ও ইমাম শাফেয়ী বলিয়াছেনঃ
****************************************
স্ত্রী যাহা ক্রয় করিতে ইচ্ছুক নয়, তাহার অর্থ দ্বারা তাহাকে সেই জিনিস ক্রয় করিতে বাধ্য করা যাইবে না।
আর স্বামীর দেওয়া মহরানার নিরংকুশ মালিক স্ত্রী। মহরানা বাবত পাওয়া অর্থ বা সম্পদ লইয়া সে যাহা ইচ্ছা করিতে পারিবে। সে ব্যাপারে স্বামীর ইচ্ছা স্ত্রীর উপর প্রাধান্য বা অধিক প্রভাবশালী হওয়ার অধিকারী নয়।
দ্বিতীয় যে গুণটির জন্য একটি মেয়েকে বিবাহ করার আগ্রহ একনজ বিবাহেচ্ছু যুবকের মনে সাধারণত জাগে তাহা হইর মেয়ের বিশেষ বিশেষত্ব। মূল আরবী শব্দ হইলঃ ***** হইল সেই জিনিস যাহা মানুষ সাধারণত পৈতৃক বা বংশীয় গৌরবের বিষয় রূপে গণ্য করে। এই জন্য ইহার অর্থ হইল ********* পিতৃ পুরুষ বা বংশীয় ও নিকটাত্ময়দের সূত্রে প্রাপ্ত সামাজিক মান-মর্যাদা ও বিশেষত্ব। এই কথাটিও সাধারণ সামাজিক প্রথার দৃষ্টিতে বলা হইয়াছে। কেননা কোন লোক বা পরিবার যদি বংশীয় মর্যাদা লইয়া গৌরব করে- গৌরব করার মত বংশ মর্যাদা থাকে, তখন লোকেরা ইহাকে একটা বিশেষ গুণ ও বেশেষত্ব রূপে গণ করে। অনেক ক্ষেত্রে বেশী সংখ্যক লোক সম্পন্ন পরিবার বা বংশ বিশেষ সামাজিক মর্যাদার অধিকারী হইয়া থাকে। অনেকে মনে করিয়াছেন, এখানে *********বলিতে উত্তম ও ভাল ভাল কাজ বুঝাইয়াছে। অর্থাৎ পরিবারিক উচ্চতর ঐতিহ্য।
তৃতীয় বিষয় হইল, মেয়ের রূপ ও সৌন্দর্য। কনের রূপ ও সৌন্দর্য সাধারণভাবে প্রায় সকলের নিকটই অধিক আকর্ষণীয়। আর সব জিনিসেই রূপ ও সৌন্দর্য প্রত্যেক মানুষেরই প্রার্থিত ও কাঙ্খিত। বিশেষ করিয়া স্ত্রীর সুন্দরী ও রূপসী হওয়াটা সব বিবাহেচ্ছু যুবকের নিকটই কাম্য। কেননা স্ত্রীই হয় স্বামীর জীবন-সঙ্গিনী, চির সহচর। স্ত্রীর সুখ ও অবয়বের উপর স্বামীর দৃষ্টি সব সময়ই আকর্ষিত ও আপতিত হইয়া থাকে। কাজেই স্ত্রীর সুন্দরী রূপসী হওয়ার কামনা প্রত্যেক বিবাহেচ্ছুর মধ্যে অতি স্বাভাবিকভাবেই বর্তমান থাকে। ইহা চিরকালই মনস্তাত্বিক সত্য ও শাশ্বতরূপে বিবেচিত।
চতুর্থ বিষয় হইল, মেয়েটির ধার্মিক ও সচ্চরিত্রশীলা হওয়া। বস্তুত বিবাহেচ্ছু যুবক যদি ধর্ম বিশ্বাসী ও চরিত্রবাদী হয়, তাহা হইলে তাহার অর্ধাঙ্গিনী ও চিরসহচরীরও ধার্মিকা ও চরিত্রশীলা হওয়া স্বাভাবিক ভাবেই তাহার নিকট কাম্য হইয়া থাকে। এমন যুবক নিশ্চয়ই এমন মেয়েকে স্ত্ররূপে গ্রহণ করিতে রাযী হয় না, যে-মেয়ে ধর্মবিশ্বাসী ও ধর্মানুসারী নয়। আর ধর্মের সাথে চরিত্রের ওতোপ্রোত সম্পর্ক। যে লোক প্রকৃতপক্ষে ধর্ম বিশ্বাসী ও ধর্মানুসারী, সে অবশ্যই আদর্শ চরিত্রের অধিকারী। আর যে লোক কোন ধর্মে বিশ্বাসী নয়, তাহার চরিত্র বলিতেও কিছু নাই। কেননা ‘চরিত্র’ বলিতে যাহা বুঝায়, তাহা ধর্ম হইতেই নিঃসৃত ও উৎসারিত। এক কথায়, ধর্মই চরিত্রের উৎস। এই কারণে যে মেয়ে ধর্ম মানে না, ধর্মানুসারী নয়, তাহার চরিত্রের নিষ্কুলষতা বিশ্বোস্য নয়, নির্ভরযোগ্যও নয়। ইহা সাধারণত সমস্ত ধার্মিক সমাজেরই রুচি, প্রবণতা ও রেওয়াজ। কেননা প্রকৃত পক্ষে ইহকাল ও পরকাল- উভয় জীবনের সমস্ত কল্যাণ কেবল মাত্র দ্বীন পালনের মাধ্যমেই পাওয়া সম্ভব। তাই দুনিয়ার দ্বীনদার আত্মমর্যাদাবোধ ও সুরুচিসম্পন্ন সব লোকের দৃষ্টি সাধারণতঃ মেয়ের ধার্মিকতা- অতএব চরিত্রবতী হওয়ার উপরই অধিক গুরুত্ব নিবদ্ধ হইয়া থাকে। বিশেষত ইহা চির জীবনকালেরও বংশানুক্রমিক ব্যাপার।
আর এই কারণেই নবী করীম (স) কনের এই গুণটির উপর সর্বাধিক গুরুত্ব আরোপ করিয়াছেন এবং কথার শেষ ভাগে বলিয়াছেনঃ ************* অতএব তুমি- বিবাহেচ্ছু প্রত্যেক যুবকই- দ্বীন বিশ্বাসী ও দ্বীন পালনকারী কনে গ্রহণ করিয়া সাফল্য মণ্ডিত হও।
বস্তুত কনে বাছাই করার ব্যাপারটি অত্যন্ত দুরূহ। কনের সন্ধানে বাহির হইয়া এত বিচিত্র ধনের মেয়ের সন্ধান পাওয়া যায় যে, তন্মেধ্য কাহাকে গ্রহণ করিবে, কাহাকে অগ্রাহ্য করিবে, তাহা চূড়ান্তভাবে সিদ্ধান্ত করা খুবই কঠিন হইয়া পড়ে। তাই জীবন- সমস্যার সমাধান উপস্থাপক ও বিশ্বমানবতার শাশ্বত দিশারী হযরত মুহাম্মদ (স) এই সমস্যাটিরও নির্ভুল সমাধান পেশ করিয়াছেন। আর তাহা হইল, একটি ধার্মিকা ও দ্বীন পালনকারী মেয়ে খোঁজ করিয়া লওয়া ও তাহাকেই বিবাহ করা বাঞ্ছনীয়। কেননা, স্ত্রী যদি দ্বীন পালনকারী হয়, তাহা হইলে ইহকাল ও পরকলের সার্বিক কল্যাণ ও মঙ্গল লাভ করা সম্ভব হইবে। অবশ্য এই কথার অর্থ এই নয় যে, ধার্মিকা হইলে তাহার সুন্দরী, সম্ভ্রান্ত বংশীয়া ও ধনী কন্যা বা ধনশালিনী হওয়া চলিবে না। রাসূলের কথার আসল তাৎপর্য হইল সব কয়টি গুণের উপর এই গুণটির অগ্রাধিকার রহিয়াছে, অতএব এই গুণটির উপর অধিক গুরুত্ব আরোপ করতে হইবে, অন্য গুণ ইহার করে কাম্য, প্রথমেই নয়। মেয়েটি যদি দ্বীন-পালনকারী না হয়, আর হয় রূপে অপসরা, ধনে- মানে অতুলনীয়, তবে সে এমন কনে নয়, যাহাকে খুব আগ্রহ উৎসাহ ভরে গ্রহণ করতে হইবে। পক্ষান্তরে মেয়েটি যদি দ্বীনদার হয় এবং অন্যান্য কোন একটি গুণও না থাকে তবে তাহাকে বিবাহ করাই বাঞ্ছনীয়।
হাদীসের শেষ কথাটি হইলঃ ******* ‘ইহার শাব্দিক অর্থঃ তোমার হস্তদ্বয় মাটিযুক্ত হউক’। কিন্তু এই অর্থ এখানে লক্ষ্য নয়। এখানে ইহার অর্থ সম্পূর্ণ বাক্যরূপ হইল, ************** আমি তোমাকে এই যে আদেশ করিলাম, তুমি যদি তাহা কাজে পরিণত না কর, তাহা হইলে তোমার হস্তদ্বয় মাটি যুক্ত হউক। – অর্থাৎ তোমার দারিদ্র্য অবশ্যম্ভাবী। মুহাদ্দিস কিরমানী রাসূলে করীম (স)- এর মূল কথার শেষ বাক্যটির অর্থ করিয়াছেনঃ তোমার নিকট যখন সমস্ত ব্যাপার সবিস্তারে বলা হইল, তখন ইহার মধ্যে সর্বোত্তম কাজটি- দ্বীনদার কনে বিবাহ অবশ্যই করিবে। আর এই কথা দ্বারা জীবনের সর্বক্ষেত্রে দ্বীনদার লোকদের সাহচর্য গ্রহণের উপর সর্বাধিক গুরুত্ব আরোপ করা হইয়াছে। বস্তুত জীবন-সংগ্রামে সাফল্যের মূল চাবিকাঠি ইহাই।
এই পর্যায়ের আর একটি হাদীস এইঃ
****************************************
হযরত আবূ সায়ীদ খুদরী (রা) হইতে বর্ণিত হইয়াছে, তিনি বলিয়াছেন, হযরত রাসূলে করীম (স) ইরশাদ করিয়াছেনঃ তিনটি বিশেষত্বের যে কোন একটির কারণে একটি মেয়েকে বিবাহ করা হয়। একটি মেয়েকে বিবাহ করা হয় তাহার ধন ও ঐশ্বর্যের কারণে, একটি মেয়েকে বিবাহ করা হয়, তাহার রূপ ও সৌন্দর্য দেখিয়া, আর একটি মেয়েকে বিবাহ করা হয়, তাহার দ্বীনদারী ও ধর্মপরায়নতা দেখিয়া। কিন্তু তুমি গ্রহণ কর দ্বীনদার ধার্মিকা ও চরিত্রবতী মেয়ে। তোমার ডান হাত মাটি মুক্ত হউক।
(মুসনাদে আহমাদ, ইবনে হাবান, আবূ ইয়া’লী, বাজ্জার)
ব্যাখ্যাঃ এই হাদীসটিতেও বিবাহ ও কনে বাছাই করার ব্যাপারে সমাজে সাধারণ প্রচলিত রেওয়াজেরই উল্লেখ করা হইয়াছে। কথার ধরন এই যে, সমাজে সাধারণত এই সব দৃষ্টিকোণ ও মানদণ্ডে কনে বাছাই করা হয়। কিন্তু রাসূলে করীম (স)- এর আদর্শবাদী ও অনুসারী ব্যক্তির পক্ষে ইহার মধ্যে কোন দৃষ্টিকোন অবলম্বন করা উচিত এবং কোন ধরনের মেয়েকে জীবন সঙ্গিনীরূপে গ্রহণ করা কল্যাণকর, তাহা জানাইয়া দেওয়াই এই পর্যায়ের হাদীস সমূহের মূল ও চূড়ান্ত লক্ষ্য। সেই সঙ্গে কনে বাছাই করার ক্ষেত্রে সাধারণ প্রচলিত রেওয়াজের অসারতা দেখানোও এই লক্ষ্যের অন্তর্ভুক্ত।
স্ত্রী গ্রহণের সময় লোকেরা সাধারণত নিজ নিজ রুচি ও দৃষ্টিভংগী অনুযায়ী বিশেষ গুণ সম্পন্না মেয়ের সন্ধান করিয়া থাকে। যাহারা অর্থলোভী, তাহারা কোন মেয়ে বা কাহার মেয়ে বিবাহ করিলে ধন-সম্পত্তি লাভ করা যাইবে, তাহারই সন্ধান করিয়া বেড়ায়। অন্য কোন গুণ থাকুক আর নাই থাকুক, সেদিকে লক্ষ্য দেওয়ার তাহারা কোন প্রয়োজন বোধ করে না। তাহাদের দৃষ্টিতে ধন-সম্পত্তির মূল্য ও মর্যাদা সর্বাধিক ও সর্বোচ্চ। উহা পাইলেই অন্য সব বিষয়ে একেবারে অন্ধকার হইলেও আপত্তি বা অনিচ্ছার কোন কারণ নাই।
যাহারা কেবল রূপ ও সৌন্দর্যের পিপাসু, তাহারা শ্রেষ্ঠ সুন্দরী ও অপসরা তুল্য রূপসী কন্যার খোঁজ করে। তাহাদের মতে কন্যার চোখ ঝলসানো রূপ ও সৌন্দর্য থাকাই অধিক কাম্য। তাহা মাকাল ফলের ন্যায় লাল খোসার তলায় মলিন অভ্যন্তর হইলেও তাহাদের জন্য তাহা ক্ষতির বা অপছন্দের কারণ হয় না। রূপই তাহাদের নিকট সর্বাধিক গুরুত্বের অধিকারী। চরিত্র পশুর অপেক্ষাও খারাপ হইলে তাহাদের কিছুই আসিয়া যায় না।
অনেকে আবার উচ্চ ও অভিজাত বংশের মেয়ে বিবাহ করিয়া জাতে উঠিতে চায়। কিন্তু সে উচ্চ ও অভিজাত বংশীয় মেয়েটি নিজে কি পদার্থ, তাহার বিচার ও বিবেচনা ইহাদের নিকট নিষ্প্রয়োজন।
অবশ্য ইহার ব্যতিক্রমও লক্ষ্য করা যায়। এমন লোকও আছে, যাহারা প্রধানত দ্বীনদার চরিত্রবতী মেয়েই পাইতে চায়। অন্যান্য দিক না হইলেও ক্ষতি নাই।
ইহা যেমন সমাজের সাধারণ প্রচলন, তেমনি সমাজের লোকদের বিভিন্ন রুচি, দৃষ্টিভঙ্গী ও মূল্যমানের পার্থক্যেরও ফসল। কিন্তু রাসূলে করীম (স) তাঁহার অনুসারী আদর্শবাদী লোকদের জন্য কনে বাছাই করার একটা বিশেষ মানদণ্ড দিতে চাহিয়াছেন। তিনি বলিয়াছেন, আলোচ্য তিনটি দৃষ্টিকোন ও মূল্যমানের মধ্যে প্রথম দুইটি শুধু-সম্পত্তির কারণে বা রূপ ও সূন্দর্য বা বংশ গৌরবের দৃষ্টিতে অন্ধভাবে কোন মেয়েকে জীবন সঙ্গিনী বানানো কেন মতেই উচিত হইতে পারে না। কেননা এই কয়টি বিশেষত্ব নিতান্তই বাহ্যিক, বস্তুনিষ্ঠ ও ক্ষণস্থায়ী। ধন-সম্পত্তি যায় এবং আসে। শ্রেষ্ঠা সুন্দরীও অরূপা ও কুৎসিত হইয়া যায়। যে কোন কারণে তাহা হইতে পারে। কাজেই যে গুণ ও বিশেষত্ব স্থায়ী ও চিরন্তন, সেই বিশেষত্ব যে মেয়ের আছে, সেই মেয়েকেই বিবাহ করা রাসূলের আদর্শবাদী ও অনুসারী লোকের কর্তব্য। বিশেষত যাহার সহিত দীর্ঘ জীবন অতিবাহিত করিতে হইবে, তাহার গুণ-বিশেষত্ব ও স্থায়ী হওয়াই বাঞ্ছনীয়।
উপরে উদ্ধৃত হাদীস দুইটতে এ বিষয়ে ইতিবাচক কথাই বলা হইয়াছে। কিন্তু নবী করীম (স) এ সম্বন্ধে কেবল ইতিবাচক কথা বলিয়াই শেষ করেন নাই। তিনি এ বিষয়ে স্পষ্ট নিষেধবাণীও উচ্চারণ করিয়াছেন। হযরত ইবনে উমর (রা) হইতে বর্ণিত হইয়াছে, রাসূলে করীম (স) বলিয়াছেনঃ
****************************************
তোমরা কোন মেয়েকে কেবল তাহার বাহ্যিক রূপ ও সৌন্দর্য দেখিয়াই বিবাহ করিও না। কেননা ইহা অসম্ভব নয় যে, তাহার রূপ ও সৌন্দর্য তাহাদিগকে ধ্বংসের মুখে পৌছাইয়া দিবে। তোমরা কোন মেয়েকে এই উদ্দেশ্যেও বিবাহ করিও না যে, তাহার ফলে ধন-সম্পত্তি লাভ করা যাইবে। কেননা ইহার সম্ভাবনা অনেক বেশী যে, তাহার ধন-সম্পত্তি তাহাকে বিদ্রোহী অনমনীয়া বানাইয়া দিবে। বরং তোমরা একটি মেয়েকে বিবাহ কর তাহার দ্বীনদারীর চরিত্র দেখিয়া। বস্তুত একটি দ্বীনদার কানকাটা, নাককাটা, কৃষ্ণাঙ্গী ক্রতদাসীও উত্তম।
রাসূলে করীম (স) –এর এই বাণীটি হইতেও অধিক স্পষ্ট হইয়া উঠিয়াছে যে, কেবল রূপ ও সৌন্দর্য এবং ধন-সম্পত্তির অধিকারীণী, তবে সেত সোনায় সোহাগা। কনে বাছাই করার ব্যাপারে ইসলামের এই দৃষ্টিকোন ও মানদণ্ড বৈষয়িক ও বস্তুনিষ্ট নয়। ইহা একান্তভাবে আদর্শভিত্তিক এবং ইসলামী আদর্শবাদী লোকদের নিকট এই দৃষ্টিভঙ্গীই অধিক প্রিয় ও অগ্রাধিকার পাওয়ার যোগ্য। (****************************)
হাদীসের এই সব দ্ব্যর্থহীন ঘোষণার ভিত্তিতে আল্লামা ইবনুল হুম্মাম লিখিয়াছেন, কেহ যখন কোন মেয়ের মান- মর্যাদার জন্য, কিংবা তাহার ধনমাল পাওয়ার আশায় অথবা তাহার বংশ গৌরনের কারণে তাহাকে বিবাহ করে, তখন সে শরীয়াতের দৃষ্টিতে একটা নিষিদ্ধ কাজ করে। কেননা নবী করীম (স) বলিয়াছেনঃ
****************************************
(********************)
যে ব্যক্তি কোন নারীর সম্মান দেখিয়া তাহাকে বিবাহ করে, আল্লাহ তাহার লাঞ্ছনাই বৃদ্ধি করেন; যে তাহার সম্পদের জন্য তাহাকে বিবাহ করে, তিনি তাহার দারিদ্র্যই দৃদ্ধি করেন আর যে তাহার আভিজাত্যের কারণে তাহাকে বিবাহ করে, তিনি তাহার নীচতাই বৃদ্ধি করেন। পক্ষান্তরে, যে ব্যক্তি কোন নারীকে বিবাহ করার সময় তাহার মধ্যে এইসব চায় না; বরং সে নিজের দৃষ্টি অবনত রাখে, নিজের গুপ্তাঙ্গের পবিত্রতা রক্ষা করে ও নিজের আত্মীয়তা-সম্পর্ক বজায় রাখে, আল্লাহ তাহার কারণে ঐ নারীরও কল্যাণ করেন এবং ঐ নারীর কারণে তাহারও কল্যাণ করেন।
****************************************
(***********)
হযতর মা’কাল ইবনে ইয়াসার (রা) হইতে বর্ণিত হইয়াছে, তিনি বলিয়াছেন, রাসূলে করীম (স)-এর নিকট একব্যক্তি আসিল এবং বলিলঃ আমি একটি সুন্দরী মেয়ে পাইয়াছি। আমার ধারণা হয়, সে সন্তান প্রসব করিবে না। এমতাবস্থায় আমি কি তাহাকে বিবাহ করিব? রাসূলে করীম (স) বলিলেন, না। লোকটি আবার আসিয়া এই প্রশ্ন করিল। এই দ্বিতীয়বারেও রাসূলে করীম (স) তাহাকে নিষেধ করিলেন। লোকটি তৃতীয়বারও আসিল এবং পূর্বরূপ প্রশ্ন পেশ করিল। তখন নবী করীম (স) বলিলেনঃ তোমরা বিবাহ কর এমন মেয়ে, যে স্বামীকে খুব বেশী ভালবাসিবে, যে বেশী সংখ্যক সন্তান প্রসব করিবে। কেননা আমি তোমাদের সংখ্যাধিক্য লইয়া অন্যান্য জাতির তুলনায় বেশী অগ্রবর্তী হইয়া যাইব। (আবূ দাউদ, নাসায়ী, মুসনাদে আহমাদ)
ব্যাখ্যাঃ হাদীসটিতে মোট তিনটি আলোচনাযোগ্য বিষয় রহিয়াছে। প্রথম, একটি লোকের বার রাসুলে করীম (স)- এর নিকট উপস্থিত হইয়া তাহার নিজের বিবাহ সংক্রান্ত জটিলতায় তাঁহার পথ-নির্দেশ প্রার্থনা করা। দ্বিতীয়, লোকটির এই আশংকা প্রকাশ করা যে, মেয়েটি হয়ত সন্তান প্রসব করিবে না এবং তৃতীয় হইল, রাসূলে করীম (স)-এর সর্বশেষে দেওয়া নীতিগত নির্দেশ।
রাসূলে করীম (স) এর নিকট একটি লোক পর পর তিনবার তাহার নিজের বিবাহ সংক্রান্ত একটি সমস্যার মীমাংসা পাওয়ার উদ্দেশ্যে আসে। লোকটি কে তাহা হাদীসের মূল ভাষায় বলা হয় নাই। হাদীস বর্ণনাকারী হযরত মা’কারের কথার ধরন হইতে বুঝা যায়, তিনি লোকটিকে চিনিতে পারেন নাই এবং তাহার নামও তাঁহার জানা নাই। তবে লোকটি মুসলমান এবং রাসূলে করীমের সাহাবীদের মধ্যের কেহ, তাহা নিঃসন্দেহ। লোকটি তাহার যে সমস্যার কথা রাসূলে করীম (স)-এর নিকট প্রকাশ করে তাহা তাহার বিবাহ সংক্রান্ত ব্যাপার। সে একটি সুন্দরী মেয়ে পাইয়াছে, ইচ্ছা করিলেই সে তাহাকে বিবাহ করিয়া জীবন-সঙ্গিনী রূপে ঘরে লইয়া আসিতে পারে। কিন্তু মেয়েটি সম্পর্কে তাহার মনে ধারণা জন্মিয়াছে যে, সে হয়ত বন্ধ্যা, সন্তান প্রসব করিবে না। এখন এই বন্ধ্যা মেয়েটিকে সে বিবাহ করিবে কিনা তাহাই তাহার মনে জিজ্ঞাসা এবং ইহাই তাহার সমস্যা।
ইহার অর্থ এই দাঁড়ায় যে, রাসূলে করীম (স) তাঁহার গঠন করা সমাজে এই মর্যাদার অধিকারী যে, এই সমাজের প্রত্যেক ব্যক্তি তাহার একান্ত ব্যক্তিগত- এমনকি কোন ধরনের মেয়ে বিবাহ করিবে, আর কেন ধরনের নয়- তাহাও রাসূলে করীমের নিকট জিজ্ঞাসা করিয়া ও তাঁহার মত ও পরামর্শ লইয়া সিদ্ধান্ত করার প্রয়োজন মনে করিত। বস্তুত প্রত্যেক মুসলমানের জন্য ইহাই শাশ্বত কর্মনীতি।
লোকটি বলল, ************** আমি মনে করি, মেয়েটি সন্তান প্রসব করিবে না। অর্থাৎ মেয়েটি বন্ধ্যা। কিন্তু সে ইহা কি ভাবে জানিতে পারিল? সম্ভবত মেয়েটি ইতিপূর্বে বিবাহিতা ছিল এবং স্বামীর সহিত যথেষ্ট সময় থাকা সত্ত্বেও তাহার কোন সন্তান জন্মায় নাই। ফলে মেয়টির বন্ধা হওয়া সম্পর্কে প্রবল আশংকা হওয়া খুবই স্বাভাবিক। অথবা সে হয়ত জানিতে পারিয়াছে যে, মেয়েটির মাসিত ঋতু আসে না। আর যাহার ঋতু হয় না, তাহাকে বন্ধ্যা বলিয়া সন্দেহ করা কোনক্রমেই অমূলক নয়। এতদ্ব্যতীত আরও একটি নিদর্শন আছে। হয়ত দেখা গিয়াছে, মেয়েটির পূর্ণ বয়স্খা হওয়া সত্ত্বেও হয়ত তাহার স্তনদ্বয় উদ্ধত হইয়া উঠে নাই। আর যে মেয়ের বয়স হওয়া সত্ত্বেও স্তনদ্বয় উদ্ধত হইয়া উঠে নাই, সে মেয়ে সন্তানবতী নাও হইতে পারে, এরূপ সংশয় উদ্রেক হওয়ার যথেষ্ট কারণ আছে। মেয়েটি সম্পর্কে লোকটির উপরোক্ত উক্তির ইহাই অন্তর্নিহিত তাৎপর্য।
রাসূলে করীম (স) উপরোক্ত ধরনের একটি মেয়েকে বিবাহ করিতে ও জীবন সঙ্গিনী বানাইতে নিষেধ করিলেন এইজন্য যে, যে মেয়ে সন্তান জন্ম দিবে না, সে মেয়ের জীবন নিস্ফল ও অর্থহীন। তাহার দ্বারা কোন অধঃস্তন বংশের উদ্ভব হইবে না; বরং তাহার নিজের বংশধারা এইখানে নিঃশেষ হইয়া যাইবে। সে হইবে নির্বংশ। আর নির্বংশ হওয়ার মত দুর্ভাগ্য আর কিছুই হইতে পারে না। রাসূলে করীম (স) লোকটিকে- যিনি একজন সাহাবীই হইবেন- এই দুর্ভাগ্য হইতে রক্ষা করিতে চাহিয়াছেন। বস্তুত নির্বংশ হইতে, অধঃস্তন বংশ হইতে বঞ্চিত হ ইতে দুনিয়ার কোন মানুষই স্বাভাবিকভাবেই রাযী হইতে পারে না।
তৃতীয় প্রসঙ্গে রাসূলে করীম (স) যে কথাটি বলিয়াছেন, তাহার দুইটি অংশ প্রথমাংশে বলিয়াছেনঃ
****************************************
‘যে মেয়ে তাহার স্বামীকে গভীর তীব্র ও দৃঢ়ভাবে ভালবাসে’।
আর ****** অর্থ *********** যে মেয়ে বেশী বেশী সন্তান প্রসব করে। স্বামীকে বেশী ভালবাসে ও খুব বেশী সংখ্যায় সন্তান প্রসব করে এমন মেয়েকে বিবাহ করার জন্য রাসূলে করীমের (স) এই নির্দেশ অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। স্ত্রী লোকের এই দুইটি গুণ পরস্পর সম্পর্কযুক্ত, পরস্পর পরিপূরক, পরিপোষক। যে স্ত্রী স্বামীকে অধিক মাত্রায় ভালবাসিতে পারে না, সে স্বামীসঙ্গ ও সঙ্গম বেশী লাভ করিতে পারে না। স্বামীও তাহার প্রতি বেশী আকৃষ্ট ও ঐকান্তিক হয় না। আর স্বামীর প্রতি অধিক মাত্রায় ভালবাসা পোষণকারী স্ব্রী যদি অধিক সংখ্যক সন্তানবতী না হয়, তাহা হইলে দাম্পত্য জীবনের আসল লক্ষ্য অর্জিত হইতে পারে না। সে আসল লক্ষ্য হইল বেশী সংখ্যক সন্তান জন্মদানের ফলে রাসূলে করীম (স)-এর উম্মতের সংখ্যা বিপুলভাবে বৃদ্ধি করা।
এই কথাটি পূর্ব কতার কারণ স্বরূপ বলা হইয়াছে হাদীসের শেষ বাক্যেঃ ************ কেননা আমি তোমাদের লইয়া অন্যান্য জাতি ও নবীর উম্মতের তুলনায় অধিক সংখ্যক উম্মতশালী হওয়ার গৌরব করিব।
মুসনাদে আহমাদ গ্রন্হে হযরত আনাস (রা) বর্ণিত হাদীসে এই বাক্যটির ভাষা এইরূপঃ
****************************************
(**********)
কেননা কিয়ামতের দিন আমি তোমাদের সংখ্যাধিক্য লইয়াই অন্যান্য নবীগনের তুলনায় বেশী অগ্রবর্তী হইব।
মুসনাদে আহমদ গ্রন্হে হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রা) বর্ণিত অপর একটি বর্ণনার ভাষা এই রূপঃ
****************************************
তোমরা সকলে ‘সন্তানের মা বিবাহ কর। কেননা আমি তোমাদের লইয়া কিয়ামতের দিন গৌরব করিব।
‘সন্তানের মা বিবাহ কর’ অর্থ, সন্তানের মা বানাইবার উদ্দেশ্যে এবং সন্তানের মা হইতে ইচ্ছুক ও প্রস্তত, সন্তাতেনর মা হওয়ার যোগ্য- সন্তান গর্ভধারণে ও প্রজননে সক্ষম মহিলা বিবাহ কর। কেবল বিলাস-সঙ্গিনী ও ও অংকশায়িনী ও যৌন স্পৃহা পরিতৃস্তকারিনী বানাইবার উদ্দেশ্যে বিবাহ করিবে না। যে স্ত্রী সন্তান গর্ভে ধারণ করিতে, সন্তান প্রসব করিতে ও সন্তান লালন পালন করিতে প্রস্তুত না, সে জীবন-সঙ্গিনী হইতে পারে, সন্তানের মা হইতে পারে না। আর যে সন্তানের মা হয় না, হইতে প্রস্তুত বা ইচ্ছুক নয়, তাকে বিবাহ করা অর্থহীন। ইমাম ইবনে হাজার আল-আসকালানী লিখিয়াছেনঃ এই পর্যায়ে যতগুলি হাদীসই উদ্ধৃত হইয়াছে তাহা সবই প্রমাণ করে যে, এই হাদীসসমূহে যদিও মূলত বিবাহ করার জন্য উৎসাহদান করা হইয়াছে; কিন্তু আসল গুরুত্ব আরোপ করা হইয়াছে অধিক সন্তানাদায়িনী ও বংশ রক্ষা ও বৃদ্ধির সহায়ক স্ত্রী গ্রহণের উপর।
এই পর্যায়ের সব কয়টি কথা উপরোক্ত গুণের মেয়ে বিবাহ করার আদেশ দানের যুক্তি হিসাবে বলা হইয়াছে। এই কথাটি দ্বারা স্পষ্ট হইয়া উঠিয়াছে যে, প্রশ্নকারী ব্যক্তিকে নবী করীম (স) বন্ধা মেয়ে বিবাহ করিতে নিষেধ করিয়াছেন। এ কারণে নয় যে, বন্ধ্যা মেয়ে বিবাহ করা বুঝি হারাম। বরং এই নিষেধের একমাত্র কারণ হইল, স্ত্রী বন্ধ্যা হইলে ও সন্তান জন্ম না হইলে দুনিয়ায় মুসলমানদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাইবে না এবং কিয়ামতের দিন নবী করীমের উম্মত অন্যান্য নবী রাসূলগণের উম্মতের তুলনায় অধিক সংখ্যক হওয়ার লক্ষ্য অনর্জিত থাকিয়া যাইবে। আর তাহা কোনক্রমেই বাঞ্ছনীয় নয়। দ্বিতীয়তঃ কোন স্ত্রীর অধিক সন্তান হওয়া তাহার কোন দোষ নয়, ইহার দরুন লজ্জিত হওয়ারও কোন কারণ নাই। ইসলামের দৃষ্টিতে ইহা নারীত্বের বৈশিষ্ট্য, একটি বিশেষ প্রশংসাযোগ্য গুণ এবং এই গুণ নারী জীবনেই নয়, সামাজিক জীবনেও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। জনসংখ্যা বৃদ্ধিকে ‘বিস্ফোরণ’ বলিয়া বিদ্রুপ করা হইলেও এবং ইহাকে একালের আনবিক বোমা বিস্ফোরণের তুলনায়ও অধিক ধ্বংসাত্মক বলিয়া অভিহিত করা হইলেও রাসূলে করীম (স)- এর এই কথাটির গুরুত্ব ও মূল্য কিছূমাত্র ব্যাহত হয় না। অধিক সন্তান হওয়া বা লোক-সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়া প্রকৃত পক্ষে বিশ্বমানবতার পক্ষে কখনই অকল্যাণের কারণ হইতে পারে না। মানুষ শুধু পেট লইয়াই জন্মায় না, কাজ করিতে ও উপার্জন-উৎপাদন বৃদ্ধি করিতে সক্ষম মন-মগজ ও দুই খানি হাতও সে তাহার সঙ্গে লইয়া আসে। অতীতের দিকে তাকাইলে দেখা যাইবে, বিশ্বে জনসংখ্যা যতই বৃদ্ধি পাইয়া আসিয়াছে, খাদ্য সম্ভারও খাদ্যোপযোগী দ্রব্যাদির বিপুলতাও সেই সঙ্গে তাল মিলাইয়া চলিয়া আসিয়াছে। লোক সংখ্যা বাড়ে; কিন্তু জমির পরিমাণ বাড়ে না, ফলে লোকসংখ্যা বৃদ্ধি দারিদ্র্য ও অর্ধাশন-অনশনের কারণ হইয়া দেখা দেয় বলিয়া যুক্তি দেখানো সম্পূর্ণ অযৌক্তিক। জমি বাড়ে না একথা ঠিক নয়। বহু দেশে সমুদ্রগর্ভ হইতে বিশাল বিশাল এলাকা মাথা তুলিয়া উঠিতেছে। সল্প জমিতে বিশাল বিশাল ইমারত গড়িয়া উঠিতেছে। আর বিজ্ঞানের বিকাশ ও উৎকর্ষ এবং বিভিন্ন দিকে উহার কার্যকরতা মানুষকে নিছক জমি নির্ভর করিয়া রাখে নাই। জীবন-মান উন্নয়নের আধুনিক শ্লোগান যতই প্রবল ব্যাপক ও চিত্তাকর্ষক হউক না কেন, রাসূলে করীম (স)-এর আলোচ্য বাণীটি বিন্দু মাত্র মূল্যহীন হইতে পারে না। তাঁহার এই কথাটির গুরুত্ব কেবলমাত্র অতীত কালের স্বল্প জনসংখ্যা সম্পন্ন পৃথিবীর প্রেক্ষিতে কিংবা একালের কোন স্বল্প সংখ্যা সমন্বিত দেশের প্রেক্ষিতে স্বীকৃতব্য নয়। ইহা সর্বকালের ও সকল দেশের জন্য শাশ্বত মূল্য ও তাৎপর্যের অধিকারী। বেশী ফলন ও বেশী ফসল সকলেরই কাম্য। যে লোক হাঁস-মুরগী, গরু-ছাগল-ভেড়া পালে, সেও এসবের বেশী বেশী সন্তান কামনা করে। সেই হিসাবে মানব সংখ্যা বৃদ্ধিও কাম্য ও উৎসাহব্যঞ্জক হওয়া বাঞ্ছনীয়। অবশ্য আটকুরে ব্যক্তিদের কথা আলাদা। সংখ্যা বিপুলতাকে জাতীয় সম্পদের প্রবৃদ্ধি ও অংশীদার মনে করা হইলে এবং জাতীয় উৎপাদনকে মুষ্টিমেয় লোকদের বিলাস-সামগ্রীর মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখা না হইলে জন সংখ্যা বৃদ্ধি কোন দিনই ‘বিপজ্জনক’ প্রতীত হইবে না। পৃথিবীতে জনসংখ্যা বৃদ্ধি ও জীবিকা সামগ্রীর বিপুলতা সমান্তরালভাবে ও পাশাপাশি চলিতেছে। অনেক সময় বরং খাদ্যোৎপাদন পরিমাণ জন-সংখ্যা বৃদ্ধির হারকেও ছাড়াইয়া যায়। এ দুইটিকেই সমান উৎফুল্লতা সহকারে গ্রহণ করাই বাঞ্ছনীয়। আল্লাহর প্রতি ঈমানদার লোকেরা উভয়টিকে আল্লাহর দান বলিয়া মনে করে।
কুমারী কন্যা বিবাহ করাই উত্তম
****************************************
(*****)
মুহারিব (তাবেয়ী) আমাদের নিকট হাদীস বর্ণনা করিয়াছেন, বলিয়াছেন, আমি রাসূলের সাহাবী হযরত জাবির ইবনে আবদুল্লাহ (রা)-কে বলিতে শুনিয়াছি (তিনি বলিলেন) ‘আমি বিবাহ করিয়াছি’। এই কথা শুনিয়া নবী করীম (স) আমাকে বলিলেনঃ ‘তুমি কি ধরনের মেয়ে বিবাহ করিয়াছ?’ আমি বলিলামঃ আমি বিবাহ করিয়াছি স্বামী পরিত্যাক্তা (বা- অকুমারী Not virgin: Widow, or divorese)- বিধবা বা তালাক প্রাপ্তা) মেয়ে বিবাহ করিয়াছি। তখন নবী করীম (স) বলিলেন, তোমার কি হইয়াছে, অক্ষতা- পূর্বে বিবাহ হয় নাই এমন মেয়ে বিবাহ করিলে না কেন? তাহা করিলে তাহার সহিত তুমি খেলা করিতে?… পরে এই ঘটনাটি আমি আমর ইবনে দীনারের নিকট উল্লেখ করিলাম, তখন আমর বলিলেন, আমি হযরত জাবির ইবনে আবদুল্লাহ (রা)-কে বলিতে শুনিয়াছি, তিনি বলিয়াছিলেন, রাসূলে করীম (স) আমাকে ব লিলেন, কেন তুমি এমন যুবতী কন্যা বিবাহ করিলে না যাহার সহিত তুমি খেলা করিতে এবং সেও তোমার সহিত খেলা করিত?
(বোখারী)
ব্যাখ্যাঃ হাদীসটি হযরত জাবির (রা)- এর বিবাহ সংক্রান্ত বিষয়ে রাসূলে করীম (স)- এর সহিত কথোপকথন সম্পর্কিত। বুখারী গ্রন্হে উপরোদ্ধৃত হাদীসের পূর্বে এই পর্যায়েরই অপর একটি হাদীস উল্লেখ করা হইয়াছে, তাহা হইতে এই কথোপকথনের একটা পটভূমি জানা যায়। তাহা এই যে, একটি যুদ্ধ হইতে ইসলামী কাফেলা মদীনায় প্রত্যাবর্তন করিতেছিল। মদীনার নিকটে পৌঁছার পর হযরত জাবির ( রা) খুব দ্রুত উষ্ট্র চালাইয়া অগ্রসর হইতে ছিলেন। তাহা দেখিয়া নবী করীম (স) তাঁহাকে জিজ্ঞাসা করিলেন ****** তুমি খুব দ্রুত যাইতেছ কেন? জওয়াবে তিনি বলিলেন ************ আমি নতুন নতুন স্ত্রী সঙ্গম শুরু করিয়াছিলাম, (সেই অবস্থায়ই আমাকে এই যুদ্ধে যাইতে হইয়াছিল।) এই কারণে আমি যত শীঘ্র সম্ভব ঘরে ফিরিয়া যাইতে চাহি। এই পর্যায়ে মুসলিম শরীফে হযরত জাবির হইতে বর্ণিত হইয়াছে, মদীনার নিকটে পৌঁছার পর রাসূলে করীম (স) ঘোষণা করিলেনঃ
****************************************
যদি কেহ খুব তাড়াতাড়ি পরিবার বর্গের নিকট চলিয়া যাইতে চাহে, তবে সে যাইতে পারে।
এই সময়ই হযরত জাবিরের সহিত রাসূলে করীম (স)-এর উপরোক্ত কথা-বার্তা হইয়াছিল।
উপরোদ্ধৃত হাদীসে রাসূলে করীমের প্রশ্নের ভাষা হইলঃ *********** তুমি কি ধরনের মেয়ে বিবাহ করিয়াছ? আর মুসলিম- এ উদ্ধৃত হাদীসে ইহার ভাষা হইল *************** কুমারী মেয়ে বিবাহ করিয়া না পূর্বে স্বামী প্রাপ্তা? এই প্রশ্নের জওয়াবে হযরত জাবির (রা) বলিলেন, ‘সইয়্যেবাহ’- ‘কুমারী মেয়ে নয়, পূর্বে স্বামীপ্রাপ্তা মেয়ে’।
এই হযরত জাবির হইতে অন্যান্য সূত্রে বর্ণিত অপর একটি হাদীসে রাসূলে করীম (স)-এর প্রশ্ন উদ্ধৃত হইয়াছে? তুমি কি বিবাহ করিয়াছ? তিনি বলিলেনঃ হ্যাঁ ইয়া রাসূলূল্লাহ’! কি ধরনের মেয়ে বিবাহ করিয়াছ, কুমারী, না পূর্বে স্বামী প্রাপ্তা?…. এই প্রশ্ন ছিল সরাসরিভাবে। তখন নবী করীম (স) বলিলেন, ************ ‘তোমার কি হইয়াছে, একজন কুমারী মেয়ে বিবাহ করিলে না কেন? তাহা হইলে তাহার সহিত তুমি ‘খেলা’ বরিতে পারিতে?’
মুসলিমে- এ উদ্ধৃত হাদীসে এই কথাটির ভাষা হইলঃ
****************************************
তুমি কেন একটি কুমারী কন্যা বিবাহ করিলে না?… তাহা হইলে তুমি তাহার সহিত খেলা করিতে এবং সে তোমার সহিত খেলা করিত?
অপর একটি বর্ণনায় ইহার সহিত অতিরিক্ত দুইটি শব্দ যুক্ত হইয়াছে, তাহা হইলঃ *************** ‘তুমি তাহার সহিত হাসাহাসি করিতে এবং সেও তোমার সহিত হাসাহাসি করিত’। আর আবূ উবাইদের বর্ণনায় ইহার ভাষা হইলঃ ********************** ‘তুমি তাহার মিষ্টতা পান করিতে ও সে তোমার মিষ্টতা পান করিত’।
কুমারী কন্যা বিবাহ করিলে স্বামী-স্ত্রীর পারস্পরিক শৃঙ্খলা পর্যায়ের বিভিন্ন কাজ বুঝাইবার জন্য উক্তরূপ বিভিন্ন শব্দ ব্যবহৃত হইয়াছে। বলা যাইতে পারে যে, ইহা সবই কাম্য ও লক্ষ্য। অর্থাৎ কুমারী কন্যা বিবাহ করিলে দাম্পত্য জীবনে যে আনন্দ সুখ ও স্ফুর্তি লাভ সম্ভব, অ-কুমারী- পূর্বে স্বামী সুখ প্রাপ্তা বা যৌনকর্মে অভ্যস্তা মেয়ে- বিবাহ করিলে তাহা পাওয়া সম্ভব নয়। রাসূলে করীম (স) তাহাই বুঝাইতে চাহিয়াছেন।
স্বামী-স্ত্রী পরস্পরে খেলা করা বুঝাইবার জন্য ব্যবহৃত হইয়াছে ****** শব্দটি। ইহার একটি রূপ ****** অর্থাৎ খেলা করা। আর ***** শব্দের সরাসরি অর্থ হইল ‘মুখের পানি’। অর্থাৎ স্বামী স্ত্রীর শৃংগায় পরস্পরের মুখের, ওষ্ঠের ও জিহিবার মিলন, চুম্বন ও চোষণ একটি জরুরী অংশ এবং ইহাও কাম্য। একটি বর্ণনায় উদ্ধৃত হইয়াছে, নবী করীম (স) বলিয়াছেনঃ
****************************************
তোমরা কুমারী মেয়ে বিবাহ কর। কেননা উহারাই অধিক মিষ্টমুখ ও গর্ভ ধারণে অধিক সক্ষম।
অপর একটি বর্ণনায় হযরত জাবিরের অ-কুমারী মেয়ে বিবাহ করার কারণ স্বরূপ কথিত উক্তি উদ্ধৃত হইয়াছে এই যে, আমার বাবা মরিয়া যাওয়ার সময় আমার কয়েকটি বোন রাখিয়া যায়।
****************************************
তখন আমি এমন একটি নারী বিবাহ করা পছন্দ করিলাম যে, আমার বোনদিগকে একত্রিত রাখিতে, তাহাদের চুল আচড়াইয়া দিতে ও সার্বিকভাবে তাদের খেদমত করিতে পারিবে।
অর্থাৎ আমার বোনদের দেখা-শুনা, লালন-পালন ও পরিচর্যা ইত্যাদি কাজ করার উদ্দেশ্যেই কুমারী মেয়ের পরিবর্তে পূর্বে স্বামীপ্রাপ্তা একটি নারীকে বিবাহ করিয়াছি।
এই কথা শুনিয়া নবী করীম (স) কি বলিলেন, তাহা উপরোক্ত বর্ণনায় উদ্ধৃত হয় নাই। মুসলিম এর বর্ণনায় উদ্ধৃত হইয়াছে, নবী করীম (স) এই কথা শুনিয়া বলিলেনঃ ************** ‘আল্লাহ তোমার এই কাজে বরকত দিন’। অথবা বলিলেন, বালই। কিতাবুল মাগাজীতে উদ্ধৃত হযরত আমর (রা)- এর কথাটির ভাষা এইঃ
****************************************
আমার পিতা ইন্তেকাল করিলে নয়টি কন্যা রাখিয়া যান, তাহারা ছিল আমারি নয়টি ভগ্নি। তখন আমি তাহাদেরই মত নিজের ও অপরের কল্যাণ সম্পর্কে অনভিজ্ঞ’ ও নিজ হাতে কাজ করিতে অক্ষম’। একটি মেয়ে বিবাহ করা অপছন্দ করিলাম। বরং একটি মহিলাকে স্ত্রী হিসাবে গ্রহণ করা পছন্দ করিলাম, যে উহাদের দেখা-শুনা পরিচর্যা ও খেদমত করিতে পারিবে এবং উহাদের মাথায় চিরুনী চালাইতে পারিবে। নবী করীম (স) ইহা শুনিয়া বলিলেন, তুমি ঠিকই করিয়াছ।
হাদীসটির মূল বর্ণনা হইতে ইসলামী সমাজে স্ত্রী গ্রহণে অনুসৃতব্য নীতি স্পষ্ট ভাষায় জানা যায়। প্রথম কথা, কুমারী কনেকেই বিবাহ করা বাঞ্ছনীয়। তাহা হইতে দাম্পত্য জীবন অধিকতর মধুময় সুখ-তৃপ্তি-স্বাচ্ছন্দ্যপূর্ণ হইবে। দ্বিতীয়, দুইটি কল্যাণময় কাজ পরস্পর সাংঘর্ষিক হইলে তন্মধ্যে অধিক গুরুত্বপূর্ণ কল্যাণকেই অগ্রাধিকার দিতে হইবে। কেননা হযরত জাবির (রা) কুমারী কন্যার পরিবর্তে এক অভিজ্ঞা স্ত্রী গ্রহণ করিলে নবী করীম (স) তাঁহার কাজ সঠিক হইয়াছে বলিয়া বরকতের জন্য দোয়া করিয়াছেন। যেহেতু তিনি নিজের দাম্পত্য সুখের উপর অগ্রাধিকার দিয়েছেন তাঁহার ইয়াতীম ভগ্নিদের লালন-পালনের প্রয়োজনের দিকটিকে। তৃতীয়, নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিদের কর্তব্য সঙ্গী-সাথী অনুসারী কর্মীদের ব্যক্তিগত ও পারিবারিকি তথা দাম্পত্য জীবন সম্পর্কে খোঁজ খবর লওয়া। চতুর্থ, কেহ কোন ভাল কাজ করিয়া থাকিলে তাহার কাজের ন্যায্যতা স্বীকার করা ও সেই কাজে বরকত হওয়ার জন্য দোয়া করা কর্তব্য। নবী করীম (স) হযরত জাবির (লা)- এর এই তুলনাহীন স্বার্থ ত্যাগ ও ইয়াতীম ভগ্নিদের কল্যাণের দিকটিকে অধিকতর গুরুত্ব দানের ব্যাপারটিকে উচ্চতর মর্যাদা দিয়াছন। সেজন্য তিনি তাঁহার প্রশংসা করিয়াছেন। ইহা হইতে সাহাবীগণের উন্নত মানবিক গুণরাশি সম্পর্কে নিঃসন্দেহে জানা যাইতেছে। রাসূলে করীম (স) –এর জিজ্ঞাসা সংক্রান্ত বর্ণনা হইতে মনে হয় যে, হয়ত হযরত জাবিরের বিবাহের অব্যাহতি পরই তাঁহাকে এই প্রশ্ন করিয়াছিলেন ও এই কথোপকথন হইয়াছির। কিন্তু আসল ঘটনা এই যে, হযরত জাবির (রা)- এর বিবাহ ও রাসূলে করীম (স)-এর এই জিজ্ঞাসার মাঝে দীর্ঘ সময়ের ব্যবধান রহিয়াছে।
(**************)
কুমারী মেয়ে বিবাহ করাই একজন নব্য যুবকের জন্য পছন্দনীয়। নবী করীম (স) বলিয়াছেনঃ
****************************************
তোমার উচিত কুমারী কন্যা নিয়ে করা। কেননা তাহাদের সুখ অধিক সুমিষ্ট হয়। তাহাদের গর্ভ সন্তান ধারণে অধিক সক্ষম হয়। ধোকা-প্রতারণায় কম পটু হয় এবং অল্পতেই ও সহজেই খুশী হইয়া যায়।
এই বিষয়টি হযরত আয়েশা (রা) অধিক স্পষ্ট করিয়া তুলিয়াছেন একটি রূপকথার মাধ্যমে। তিনি নবী করীম (স)-কে জিজ্ঞাসা করিলেনঃ হে রাসূল! আপনিই বলূন, আপনি উটে সওয়ার হইয়া কোন উপত্যকায় উপনীত হইলেন। সেখানে একটি গাছ আছে যাহার পাতা সমূহ ইতিপূর্বে খাওয়া হইয়াছে। আর একটি গাছ পাতা খাইবার জন্য চরাইবেন? জওয়াবে নবী করীম (স) বলিলেন, সেই গাছটিতেই উঠ চরাইব যাহার পাতা ইতিপূর্বে খাওয়া হয় নাই। তখন হযরত আয়েশা (রা) বলিলেন, ******** আমিই হইতেছি সেই গাছটি’। (বুখারী)
বস্তুত নবী করীম (স) হযরত আয়েশা (রা) ছাড়া আর কোন কুমারী মেয়েকেই বিবাহ করেন নাই। তাঁহার স্ত্রীগণের মধ্যে একমাত্র তিনিই ছিলেন কুমারী।
উত্তম স্ত্রীর পরিচয়
****************************************
(**********)
হযরত আবূ হুরায়রা (রা) হইতে বর্ণিত হইয়াছে। তিনি বলিয়াছেন, রাসূলে করীম (স)-এর নিকট জিজ্ঞাসা করা হইল, কোন মেয়ে উত্তম? জওয়াবে রাসূলে করীম (স) বলিলেন, যে মেয়ে স্বামীকে সন্তুষ্ট করিয়া দবে যখন সে তাহার দিকে তাকাইবে, অনুসরণ ও আদেশ পালন করিবে যখন সে তাহাকে কোন কাজের হুকুম করিবে এবং তাহার স্ত্রীকে নিজের ব্যবহারে এবং তাহার নিজের ধনমালের ব্যাপারে সে যাহা অপছন্দ করে তাহাতে সে স্বামীর বিরুদ্দতা করিবে না। (মুসনাদে আহমদ)
ব্যাখ্যাঃ হাদীসটিতে উত্তম স্ত্রী তিনটি গুণের কথা বলা হইয়াছে। এই তিনটি গুণ হইলঃ (১) স্ত্রীর প্রতি স্বামী যখনই তাকাইবে, তখনই সে স্ত্রীকে দেখিয়া আনন্দিত ও উৎফুল্ল হইবে, (২) স্বামী যখন তাহাকে কোন কাজ করিতে বলিবৈ তখন সে তাহা পালন করিবে এবং (৩) স্ত্রীর নিজের ব্যাপারে স্বামী যাহা অপছন্দ করে এবং তাহার ধন-মালে স্ত্রীর যে ভূমিকা পালনে স্বামী সন্তুষ্ট হয় না, তাহাতে সে স্বামীর বিরুদ্দতা করিবে না।
স্ত্রীর যে তিনটি বাঞ্ছিত গুণের উল্লেখ এখানে করা হইয়াছে, তাহা বিশেষভাবে অনুধাবন সাপেক্ষ। স্বামী যখনই স্ত্রীর দিকে তাকাইবে, স্বামী তাহার স্ত্রীকে দেখিয়া আনন্দিত ও উৎফুল্ল হইবে। স্বামীর এই আনন্দ ও উৎফুল্লতা লাভের উৎস হইতে পারে স্ত্রীর রূপ-সৌন্দর্য ও তাহার দৈহিক গঠন ও অঙ্গ সৌষ্ঠব। হইতে পারে তাহার স্বামী-প্রীতি, স্বামীর জন্য প্রাণ ভরা ভালবাসা, দরদ-মায়া, আন্তরিকতা ও ঐকান্তিক নিষ্ঠা। হইতে পারে স্বামীর আদর যত্নে তাহার সদা নিমগ্নতা। হইতে পারে দাম্পত্য ও সাংসারিক দায়িত্ব পালনে একাগ্রতা ও যোগ্যতা। হইতে পারে স্বামীর সন্তানের মা হওয়ার যোগ্যতা।
ইহার যে কোন একটা কারণে স্বামী স্ত্রীর প্রতি তাকানো মাত্রই আনন্দিত ও উৎফুল্ল হইয়া উঠিতে পারে, স্ত্রী সুকে তাহার বক্ষ স্ফীত হইয়া উঠিতে পারে।
স্বামী তার ঘর-সংসারের প্রধান। আর ঘরের রাজ্যের প্রধান কর্মাধ্যক্ষ্য হইতেছে স্ত্রী। ঘর ও সংসার প্রধানের আদেশ নিয়মিত পালিত ও কার্যকর হওয়ার উপর পারিবারিক নিয়ম শৃঙ্কলা অক্ষুণ্ন থাকা নির্ভর করে। কাজেই স্বামীর আদেশ পালনে স্ত্রীর সদা সযত্ন হইয়া থাকা বাঞ্ছনীয়।
স্ত্রী স্বামীর মান-সম্ভ্রম, স্ত্রী স্বামীর ধন-মালের রক্ষণবেক্ষণের দায়িত্ব সম্পন্না। স্ত্রীর নিজের ব্যাপারে স্বামীর খুশী-অখুশীর অনেক দিক আছে। এ ক্ষেত্রে আছে স্বামীর রুচি-অরুচির প্রশ্ন, ভাল লাগা না-লাগার প্রশ্ন এবং নীতি ও আদর্শের প্রশ্ন। স্ত্রী কর্তব্য এই সব দিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখিয়া এমনভাবে চলা ফিরা করা যাহাতে স্বামীর বিরুদ্ধতা না হয়। স্বামীর মনে কোনরূপ অনীহা অসন্তোষ বা দুঃখ ক্ষোভের সঞ্চার না হয়।
অনুরূপভাবে স্বামীর ধন-মালের ব্যয়-ব্যবহারের ক্ষেত্রেও স্বামীর ইচ্ছা অনিচ্ছা এবং সাধ্য-অসাধ্যের প্রশ্ন প্রবল হইয়া থাকে। কোন কোন কাজে অর্থব্যয় করা স্বামীর পছন্দ নয়। অনেক ব্যয় এমন আছে, যাহা স্বামীর আর্থিক সামর্থে কুলায় না। এই সব ক্ষেত্রে স্ত্রীর উচিত, সমস্ত ব্যাপারে এমন ভারসাম্যপূর্ণ নীতি অবলম্বন করা যাহাতে যাবতীয় প্রয়োজন মিটে এবং স্বামীল মতের বা সামর্থের সহিত কোনরূপ সংঘর্ষের সৃষ্টি না হয়।
বস্তুত স্ত্রীর এ ব গুণই এমন যাহা প্রত্যেকটি পরিবারের সুখ-শান্তি ও স্থায়ীত্বের নিয়ামক হইয়া থাকে এবং স্বামীর সুখানুভূতির মূল উৎস এখানেই নিহিত।
অন্য একটি হাদীসে বলা হইয়াছেঃ
****************************************
দুনিয়ার সবকিছুই ভোগ ব্যাবহারের সামগ্রী। আর দুনিয়ার এসব ভোগ-ব্যবহার সামগ্রীর মধ্যে সর্বোত্তম হইতেছে সদাচারী সৎ স্বভাব ও সুরুচি সুনীতি সম্পন্না স্ত্রী। কেননা এইরূপ স্ত্রীই স্বামীর পরকালীন সাফল্য লাভে সাহায্যকারী হইতে পারে। আর যাহা বা যেই পরকালীন সাফল্যে সাহায্যকারী, তাহা এবং সেই যে সর্বোত্তম, তাহা নিঃসন্দেহ।
(*********************)
****************************************
হযরত আবূ আমামাতা (রা) হইতে, তিনি নবী করীম (স) হইত বর্ণনা করিয়াছেন, তিনি প্রায়ই বলিতেন, মু’মিনের তাকওয়ার পক্ষে অধিক কল্যাণকর ও কল্যাণ লাভের উৎস হইতেছে সচ্চরিত্রবতী এমন একজন স্ত্রী, যাহাকে সে কোন কাজের আদেশ করিলে সে তাহা মানিবে, তাহার দিকে সে তাকাইলে সে তাহাকে সন্তুষ।ট করিয়া দিবে। সে যদি তাহার উপর কোন কীড়া-কছম দেয়, তবে সে তা হাকে কছমমুক্ত বানাইবে। সে যদি স্ত্রী হইতে দূরে চলিয়া যায়, তবে সে তাহার নিজের ব্যাপারে এবং স্বামীর ধন-সম্পত্তির ব্যাপারে তাহার কল্যাণ চাহিবে। (ইবনে মাজাহ)
ব্যাখ্যাঃ ‘তাকওয়া’ অর্থ আল্লাহকে ভয় করিয়া তাঁহার আদেশাবলী পালন করা এবং তাঁহার নিষেধ সমূহ হইতে যথাযথভাবে বিরত থাকা। বস্তুত একজন ঈমানদার ব্যক্তির জন্য ইহকাল ও পরকালের দৃষ্টিতে ইহাই সর্বাধিক কল্যাণকর জিনিস। এই জিনিস যাহার আছে সে যে অতিবড় ভাগ্যবান তাহাতে সন্দেহ নাই। কিন্তু এই গুণের পর দ্বিতীয় কোন জিনিসটি মু’মিনের পক্ষে অধিক কল্যাণকর? আলোচ্য হাদীসে ইহারই জওয়া দেওয়া হইয়াছে। ইহাতে বলা হইয়াছে, তাওয়ার পর মু’মিনের জন্য অধিক কল্যাণকর ও কল্যাণের উৎস হইতেছে একজন স্ত্রী। কিন্তু কেবল একজন যেন-তেন প্রকারের স্ত্রী নয়, সে স্ত্রীর প্রধান পরিচয় হইল, সে হইতে ‘সালেহা’- সদাচারী, সচ্চরিত্রবতী, সদগুণ সম্পন্না। আর এই গুণের স্ত্রী হইতে মু’মিনের সুখ ও কল্যাণ লাভের দিক হইল অন্ততঃচারটি। প্রথম, সে হইবে স্বামীর অনুগতা, স্বামীর আদেশ পালনে সদা প্রস্তুত। স্বামীই ঘরের কর্তা ও পরিচালক। অতএব তাহার আদেশাবলী ঘরের লোকদের দ্বারা পালিত ও অনুসৃত হওয়া আবশ্যক। নতুবা ঘরের শৃঙ্খলা রক্ষা হইতে পারে না। আর স্বামীর পর ঘরের অন্যান্য সন্তানাদি ও লোকজনের মধ্যে আভ্যন্তরীণ ক্ষেত্রে প্রধান কর্ত্রী হইল স্ত্রী। তাহাকে স্বামীর অনুগতা ও আদেশ পালনে প্রস্তুত থাকিতে হইবে। কিন্তু এই আদেশ পালন শর্তহীন নয়, নয় সীমাহীন। উহার শর্ত হইল, স্বামীর আদেশ যদি আল্লাহর আদেশ নিষেধের পরিপন্হী না হয়, তবেই তাহা পালন করা চলিবে। পরিপন্হী হইলে তাহা পালন না করাই সচ্চরিত্রবতী স্ত্রী হওয়ার প্রধান গুণ, উহা পালন করা নয়। আর স্বামীর হুকুম পালন চলিবে আল্লাহর আদেশ-নিষেধ লংঘিত না হওয়া পর্যন্ত। যখনি দেখা যাইবে, স্বামীর আদেশ পালন করিতে গেলে আল্লাহর নিষেধের অমান্যতা হয়, আল্লাহর আনুগত্য সীমা লংঘিত হইয়া যায়, তখনই সে আদেশ পালনে অস্বীকৃতি জানাইতে হইবে। কেননা নবী করীম (স) স্পষ্ট অকাট্য ভাষায় বলিয়াছেনঃ
****************************************
স্রষ্টার নাফরমানী করিয়া সৃষ্টির আনুগত্য করা চলিতে পারে না।
দ্বিতীয় দিক হইল, স্বামী যখন তাহার প্রতি তাকাইবে, তখন স্ত্রীর রূপ ও গুণ, তাহার কাছ থেকে পাওয়া অকৃত্রিম গভীর ভালবাসা, প্রেম-প্রীতি এবং তাহার সহিত একাত্মতা মিশ্রিত সুখময় জীবন যাত্রার কথা স্মরণ করিয়াই স্বামী গভীর ভাবে আনন্দিত ও উৎফুল্ল হইয়া উঠিবে।
তৃতীয়, যে কাজ করা বা না করা স্ত্রী পছন্দ করে না, সেই কাজ করিতে বা না করিতে স্বামী যদি আদেশ করেএবং সে আদেশকে বলিষ্ঠ করার উদ্দেশ্যে যদি কিড়া-কছম দেয়, তখন স্ত্রী স্বামীর কথার আনুকূল্য করিয়া ও বিরুদ্ধতা পরিহার করিয়া স্বামীকে কছমমুক্ত করিবে। ইহা হইবে স্বামীকে সন্তুষ্ট বিধানের উদ্দেশ্যে স্ত্রীর ত্যাগ স্বীকার। দাম্পত্য জীবনে সুখ-মাধুর্য, স্থিতি ও স্থায়ীত্বের জন্য স্ত্রীর এই ত্যাগ স্বীকার প্রবণতার মূল্য অনেক। এই রূপ ত্যাগ স্বীকারের প্রবৃত্তি না থাকিলে দাম্পত্য ও পারিবারিক জীবনে বিপর্যয় ও ভাঙন অনিবার্য হইয়া দেখা দেয়।
আর চতুর্থ হইল, স্বামী যখন ঘরের বাহিরে যাইবে- ঘরে অনুপস্থিত থাকিবে, তখন স্ত্রী স্বামীর প্রতি গভীর কল্যাণ কামনা সম্পন্ন থাকিবে। সে তাহার স্বামীর জন্য নিজেকেও রক্ষা করিবে। রক্ষা করিবে স্বামীর ধন-মালও। এই দুইটি ব্যাপারে সেই হইবে স্বামীর আমাদতদার। সে তাহার এই আমানতদারীত্বে কোন দিক দিয়া ক্ষুণ্ন হইতে দিবে না। বস্তুত, এইরূপ একজন স্ত্রী মু’মিন ব্যক্তিন জন্য বিরাট সৌভাগ্যের কারণ। যে লোক স্ত্রী গ্রহণ করিতে ইচ্ছুক, তাহার মনে এই রূপ স্ত্রী পাওয়ার জন্য ঐকান্তিক কামনা ও চেষ্টা থাকা বাঞ্ছনীয়। আর যাহার স্ত্রী এই সব গুণে গুণান্বিতা তাহার উচিত আল্লাহর অশেষ শোকর আদায় করা।
উদ্ধৃত হাদীস সম্পর্কিত জরুরী কথা এখানেই শেষ। কিন্তু মহানবীর এই সংক্ষিপ্ত বাণিটির অনুরনন ও চিন্তার ক্ষেত্রে সৃষ্ট আলোড়ন আরও ব্যাপক। উত্তম স্ত্রীর পরিচয় দান প্রসঙ্গে রাসূলে করীম (স)-এর বলা চারটি কথার তাৎপর্য বাস্তব জীবনের প্রেক্ষিতে বিবেচনা করিলে স্পষ্টভাবে বুঝা যাইবে, এই কয়টি কেবলমাত্র নীতি কথাই নয়। এই গুণ গুলির বাস্তবতা অবশ্য প্রয়োজনীয়। অন্যথায় দাম্পত্য সুখলাভ করা স্বামী বা স্ত্রী কাহারও পক্ষেই সম্ভব হইবে না।
****************************************
আবদুল্লাহ ইবনে আমার ইবনুল আ’স (রা) হইতে বর্ণিত হইয়াছে, রাসূলে করীম (স) বলিয়াছেন, দুনিয়াটাই জীবন-উপকরণ। আর দুনিয়ার সর্বোত্তম জীবনোপকরণ হইতেছে নেককার-সচ্চরিত্রবান স্ত্রী।
(মুসলিম)
ব্যাখ্যাঃ পৃথিবী ও ইহকালীন গোটা জীবনই মানুষের ভোগ-ব্যবহার ও যাপনের ক্ষেত্র। পৃথিবীর সবকিছুই মানুষের ইহকালীন জীবন যাপনের জন্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী বিশেষ। কিন্তু এই জীবনের প্রকৃত সুখ নির্ভর করে কল্যাণময়ী উত্তম পবিত্র চরিত্রের অধিকারী স্ত্রীর উপর। আল্লাহ দুনিয়ার সব কিছু-উদ্ভিদ ও প্রাণীকুল-কে জোড়ায় জোড়ায় সৃষি।ট করিয়াছেন। মানুষের জন্যও জুড়ি ইহজীবনের অপরিহার্য অংশ। নারীর জন্য পুরুষ এবং পুরুষের জন্য নারী অবশ্যম্ভাবী। ইহা ব্যতীত মানুষের দুনিয়ার জীবন অকল্পনীয়। কিন্তু তাই বলিয়া পুরুষের জন্য যেমন-তেমন একনজ নারী এবং নারীর জন্য যেমন-তেমন একজন পুরুষ হওয়াই ইসলামের দৃষ্টিতে কল্যাণবহ হয় না। বরং পুরুষের জন্য উত্তম চরিত্রের স্ত্রী প্রয়োজন এবং স্ত্রীর জন্য প্রয়োজন উত্তম চরিত্রের পুরুষ।
অস্বীকার করার উপায় নাই যে, ইসলাম পরিকল্পিত সমাজে পুরুষ প্রধান। তাই হাদীসটিতে পুরুষকেই লক্ষ্য করিয়া কথাটি বলা হইয়াছে। কিন্তু তাহাতে নারীর দিকটি উপেক্ষিত হয় নাই। ইসলামের মানবিক দৃষ্টিকোণে পুরুষ ও নারীর মর্যাদা ও সামাজিক গুরুত্ব অভিন্ন। তাই পুরুষের জন্য যদি নেককার চরিত্রবান স্ত্রী সর্বোত্তম জীবনোপকরণ হইয়া থাকে, তাহা হইলে নারীর জন্যও অনুরূপভাবে সর্বোত্তম চরিত্রবান ও নেককার পুরুষ হইবে সর্বোত্তম জীবনোপকরণ, তাহা বলাই বাহুল্য।
হযরত সায়াদ ইবনে আবূ আক্কাস (রা) হইতে বর্ণিত অপর একটি হাদীসে রাসূলে করীম (স)- এর এই কথাটি উদ্ধৃত হইয়াছে, তিনি বলিয়াছেনঃ
****************************************
আদমের পুত্রের বড় সৌভাগ্যের বিষয় হইতেছে উত্তম চরিত্রবান স্ত্রী… এবং আদম পুত্রের চরম দুর্ভাগ্যের কারণ হইল খারাপ স্ত্রী।
আমাদের সমাজের সাধারণ ও সর্বজনবিদিত কথাঃ ‘সংসার সুখের হয় রমনীয় গুণে’। এই হাদকীস সমুহেরই নির্যাস বা প্রতিধ্বনি। কথাটির ‘রমনী’ বলিতে স্ত্রীকেই বুঝাইয়াছে, অতএব বিবাহের প্রসঙ্গে পুরুষের নিকট সর্বাধিক গুরুত্ব পাওয়া উচিত উত্তম ও নেক চরিত্রের মেয়ে, তেমনি মেয়ের নিকট উত্তম চরিত্রের ছেলে।
ইহা না হইলে নারী বা পুরুষ কাহারও জীবন সুখের হইতে পারে না।
****************************************
হযরত আনাস (রা) হইতে বর্ণিত হইয়াছে, তিনি বলিয়াছেন, হযরত রাসূলে করীম (স) বলিয়াছেনঃ একজন স্ত্রী লোক যদি পাঁচ ওয়াক্ত নামায যথাযথভাবে আদায় করে, রমযান মাসের রোযা থাকে, স্বীয় যৌন অঙ্গ সুরক্ষিত রাখে এবং তাহার স্বামীর আনুগত্য করে, তাহা হইলে সে জান্নাতে যে কোন দ্বারপথে ইচ্ছা হইবে প্রবেশ করিতে পারিবে। (আবূ নয়ীম- হুলিয়াতুল- আবরার)
ব্যাখ্যাঃ এই হাদীসটিতে মোটামুটি একজন আদর্শ স্ত্রীলোকের পূর্ণাঙ্গ চরিত্র অংকন করা হইয়াছে। সাধারণভাবে একজন লোকের- সে পুরুষ হউক বা স্ত্রীলোক- কর্তব্য হইল একদিকে আল্লাহর হক আদায় করা, আর অপর দিকে বান্দাহর হক আদায় করা। বান্দাহ যেহেতু আল্লাহর সৃষ্টি, আল্লাহ সৃষ্টি করিয়াছেন বলিয়াই তাহার পক্ষে দুনিয়ার অস্তিত্ব লাভ ও জীবন যাপন সম্ভবপর হইয়াছে। এই কারণে তাহাকে আল্লাহর হক অগ্রাধিকারভাবে অবশ্যই আদায় করিতে হইবে। কিন্তু দুনিয়ায় সে একাকী বাস করিতে পারে না। আন্যান্য বান্দাহদের সঙ্গে একত্রে সামাজিক জীবন যাপন করিতে সে বাধ্য। এই কারণে কেবল আল্লাহর হকরূপে চিহ্নিত কয়েকটি কর্তব্য করা কাহারও পক্ষে যথেষ্ট হইতে পারে না। তাহাকে সমাজের হকও আদায় করিতে হইবে। ইহাও আল্লাহর হক এর মধ্যে গণ্য।
এই দুই দিকের বাহ্যত দুই ধরনের হক পরস্পর বিপরীত নয়। এই দুই হকের মধ্যে বিরোধ ও বৈপরীত্য নাই। শুধু তহাই নয়, এই দুইটি হক পরস্পর সম্পৃক্ত। একটি অপরটির উপর নির্ভরশীল। তাই এই দুইটি এক সঙ্গে জীবনের কর্মধারা ও কর্মসূচীর মাধ্যমে আদায় করিতে হইবে। কখনও একটি হক আদায় করিবে, কখনও অপর হক, এই দ্বৈত নীতি বাস্তবে চলিতে পারে না। ইহা যেমন বিবেক বিরোধী তেমনই ইসলাম বিরোধীও। এই দিক দিয়া ইসলাম এমন এক পূর্ণাঙ্গ জীবন ধারা ও জীবন সূচী উপস্থাপিত করিয়াছে, যাহা পুরাপুরি পালন ও অনুসরণ করিয়া চলিতে ও এক সঙ্গেই এই দুই ধরনের হক যথাযথভাবে আদায় করা যাইতে পারে। ইহা সাধারণভাবে ইসলামী জীবন পদ্ধতির দার্শনিক তত্ত্ব ও সত্য।
আলোচ্য হাদীসটিতে বিশেষভাবেইসলামী আদর্শবাদী একজন স্ত্রীলোকের জন্য এমনিই এক পূর্ণাঙ্গ ও দুই ধরনের হক আদায়কারী কর্মসূচী পেশ করা হইয়াছে। স্ত্রী লোকটি প্রথমেই আল্লাহর বান্দাহ। এই জন্য তাহাকে প্রথম ও প্রধান গুরুত্বপূর্ণ কাজ হিসাবে একান্তভাবে চিহ্নিত আল্লাহর হক আদায় করিতে হইবে। এজন্য তাহাকে রীতিমত পাঁচ ওয়াক্ত নামায আদায় করিতে হইবে ও বছরে রমযানের একটি মাস রোযা থাকিতে হইবে। এই দুইটি সুনির্দিষ্টভাবে আল্লাহর ইবাদত- আল্লাহর হক আদায়ের কর্মসূচী। এই কারণে এই দুইটির কথা হাদীসে প্রথমেই বলিয়া দেওয়া হইয়াছে।
দ্বিতীয় পর্যায়ে বান্দাহর হক-এর কথা বলা হইয়াছে। বিবাহিতা স্ত্রীর অতীব নিকটবর্তী ব্যক্তি হইতেছে তাহার স্বামী। তাহার উপর অন্যান্য সকলের অপেক্ষা তাহার স্বামীর হক সর্বপ্রথম ও সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ। এই ক্ষেত্রে মাত্র দুইটি কথা বলা হইয়াছে। একটি, *************** ‘সে তাহার যৌন অঙ্গ সুরক্ষিত রাখিয়াছে’। *********** শব্দের উৎপত্তি হইয়াছে ********* হইতে। ইহার অর্থ দুর্গ। দুর্গ এক সুদৃঢ় সুরক্ষিত স্থান। সেখানে প্রবেশ করিতে পারে কেবল তাহারা যাহাদের জন্য প্রবেশানুমতি ও আইন ভিত্তিক প্রবেশাধিকার রহিযাছে। যাহাদের তাহা নাই, তাহারা উহাতে প্রবেশ করিতে পারে না। এই জন্য সশস্ত্র ব্যক্তিরা চব্বিশ ঘন্টা উহার পাহারা দিয়া থাকে। স্ত্রীর যৌন অঙ্গও দুর্গবৎ। দুর্গের মতই উহাকে সদা-সচেতন পাহারাদারীর মাধ্যমে রক্ষা করিতে হইবে। এই রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব স্ত্রীলোকটির নিজের। উহার দ্বার উদঘাটন ও অনুপ্রবেশ করার অধিকার কেবল তাহাকেই দেওয়া যাইবে ও দিতে হইবে, যাহাকে একটি বিশেষ ধরনের অনুষ্ঠান ও পারিবারিক-সামাজিক সমর্থনের মাধ্যমে তাহার স্বামীরূপে বরণ করিয়া লওয়া হইয়াছে। স্ত্রীর যৌন অঙ্গ কেবল তাহার স্বামীর জন্যই সুরক্ষিত রাখিবে। অন্য কাহারও উহার অনুপ্রবেশ বা উহা স্পর্শ তো দূরের কথা, উহা দেখিবার সুযোগও থাকিতে পারিবে না।
দ্বিতীয় বলা হইয়াছে, সে যদি তাহার স্বামীর আনুগত্য করে। আল্লাহ ও রাসূলের পরে স্ত্রীলোকের প্রধানত যাহাকে মানিতে হইবে, যাহার আনুগত্য করিতে হইবে, সে হইল তাহার স্বামী। স্বামীর আনুগত্য করিতে হইবে স্ত্রীকে, একথা ঠিক; কিন্তু সে আনুগত্য শর্তহীন ও অবাধ উন্মুক্ত নয়। আল্লাহ ও রাসূলের আনুগত্যের সীমার মধ্যেই স্বামীর আনুগত্য করিতে হইবে। আসলে ঈমানদার মানুষ আল্লাহ ও তাহার রাসূল ছাড়া আর কাহারও আনুগত্য করিতে পারে না। তবে স্বামী বা অন্য কাহারও আনুগত্য করা যাইবে- করিতে হইবে, কেননা তাহা করার নির্দেশ স্বয়ং আল্লাহ এবং তাঁহার রাসূল (স) দিয়াছেন। অতএব স্বামীর আনুগত্য আল্লাহ ও রাসূলের আনুগত্য সীমার মধ্যে দৃঢ়ভাবে সীমিত।
মোটকথা পাঁচ ওয়াক্ত নামায পড়িলে, রোযা থাকিলে, যৌন অঙ্গ কেবল স্বামীর জ্য সুরক্ষিত রাখিলে এবং স্বামীর আনুগত্য করিলে স্ত্রীর পক্ষে জান্নাতে যাওয়ার পথে অন্য কোন বাধার সম্মুখীন হইতে হইবে না। শুধু তহাই নয়, জান্নাতের দিকে তাহার গতি হইবে তীব্র ও দ্রুত এবং সে এই গতিতেই জান্নাতে চলিয়া যাইতে পারিবে। আর যে লোক দ্রুত ও তীব্র গতিতে জান্নাতে যাইতে পারিবে, তাহার মত সফল ও সার্থক অন্য কেহ হইতে পারে না। বস্তুত যে স্ত্রীর এই গুণাবলী আছে, যে স্ত্রী একই সময় ও একই জীবন ধারায় আল্লাহর হক ও স্বামী এবং সমাজের লোকদের হক পুরাপুরি আদায় করে এবং ইহার ফলে পরকালে জান্নাত লাভ করিতে পারিবে বলিয়া নিশ্চিত আশা করে, সেই উত্তম স্ত্রী।
উত্তম স্ত্রী বলিতে এইসব গুণের অধিকারী স্ত্রীকেই বুঝায়। (***************)