১. বনু হাশিম
২. মুক্ত দাস
৩. অমুসলিম সংখ্যালঘু/যিম্মি
৪. বন্দী
বনু হাশিম
বনু উমাইয়াগণ রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা লাভ করার পর প্রাক ইসলাম যুগের আরবের সেই পারস্পরিক সংঘর্ষ সৃষ্টিকারী গোত্রীয় বিদ্বেষকে ঘৃতাহুতি দিয়ে আসছিল যা একজনকে অপর জনের বিরুদ্ধে লড়তে এবং একের রক্তে অন্যের হাত রঙ্গীন করতে তাদেরকে উৎসাহিত করত।
যদিও মহানবী (সা) বংশবিদ্বেষ ও আভিজা্য গৌরবকে নেহায়েত নীচ স্বভাব হিসেবে অবহিত করেছিলেন। যদিও তিনি বনু উমাইয়াগণকে তাঁর নৈকট্য আকর্ষণ করতেই আবু সুফিয়ানের এক কন্যাকে বিবাহ করেছিলেন। হযরত মুয়াবিয়া (রা)কে তাঁর ওহী লেখক নিযুক্ত করেছিলেন, উমাইয়া বংশীয় কোন কোন লোকে উপর বিশেষ অনুগ্রহ করেছিলেন।
হযরত ওসমান (রা)-এ শাহাদাতকে কেন্দ্র করে হাশেমী ও উমুবী গোত্রদ্বযের মধ্যে বংশবিদ্বেষের যে দুষ্ট ক্ষতের সৃষ্টি হয়েছিল, এতেই এ দুটি শিবির একে অপর হতে দূরে চলে গিয়েছিল। উমুবী খলিফাগণ মসজিদের মিম্বরে দাঁড়িয়ে হযরত আলী (রা)কে গালিগালাজ করত। তাদের মজলিসে বনু হাশিমদের কোন স্থান ছিল না। বনু হাশিমগণ রাসূলুল্লাহ (সা)-এর বংশ, আত্মীয় আহলে বাইত হওয়ার পরও তারা তাদেরকে নীচি ও অস্পৃশ্য বলে মনে করত। বায়তুল মাল হতে তাদেরকে কোন প্রকার সাহায্য কর হত না। বিশেষতঃ খলীফা আবদুল মালেক, ওয়ালীদ ও সুলায়মানের যুগে অসহায় বনু হাশিমগণ খুবই দুঃখ-কষ্টে জীন অতিবাহিত করেছিল।
পূর্বেই আলোকপাত করা হয়েছে যে, এ মিল্লাতের উপর ওমর ইবনে আবদুল আজিজ সবচেয়ে বড় অনুগ্রহ এটাই যে, তিনি বনু হাশিম এবং উমাইয়াদের মধ্যকার বংশগত ঘৃণা-বিদ্বেষকে দূর করে পারস্পরিক সদ্ভাব সৃষ্টি করতে আপ্রাণ চেষ্টা করেছেন।
মসজিদের মিম্বরে দাঁড়িয়ে হযরত আলী (রা)-কে যে অশ্লীল কথা বলা হত, হযরত ওমর ইবনে আবদুল আজিজ ওকে আইনতঃ নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছিলেন। তিতিন স্বয়ং মিম্বরে আরোহন করে গালির পরিবর্তে কুরআনের এ আয়াতটি পাঠ করতেন-
(আরবী********************)
“প্রতিপালক আমাদেরকে এবঙ আমাদের ভাইগণকে যারা আমাদের পূর্বে ঈমান এনেছেন ক্ষমা কর এবং যারা ঈমান এনেছে তাদের প্রতি আমাদের অন্তরে কোন প্রকার বিদ্বেষ সৃষ্টি করো না।”
তিনি প্রত্যেক শুক্রবারদিন মুসলমানগণকে একথাই বুঝিয়েছিলেন যে, পূর্ববর্তী মুসলমানদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করা জায়য নেই এবং তার পূর্বে তার বাপ-দাদাগণ যে কর্মপদ্ধতি গ্রহণ করেছিল উহা সম্পূরণরূপেই ভুল ছিল।
এ ব্যাপারে তিনি অত্যন্ত কঠোর নীত অবলম্বন করেছিলেন। তিনি তাঁর সাম্রাজের্যর সমস্ত শাসনকর্তাগণকে নির্দেশ দিয়েছিলেন যে, তারা হযরত আলী (রা)-এর প্রতি গালি-গালাজের স্থলে উপরিক্ত আয়াত পাঠ করে যাতে সাধারণ মানুষ বুঝতে পারে যে, এরূপ গালিগালাজ করা মোটেই জায়েয নেই।
হযরত ওমর ইবনে আবদুল আজিজ এতটুকু করেই ক্ষান্ত হননি। তিনি বনু হাশিমগণতে তার পার্শ্বে ডেকে এনে বিশেষ অনুগ্রহও প্রকাশ করতেন।
ঐতিহাসিক ইবনে সাদ বলেন, তিনি যখন মদীনার শাসনকর্তা ছিলেন, যখন তিনি খলিফা হননি,তখন হতেই এ হিংসা দ্বেষ দূর করার জন্য চেষ্টা শুরু করেছিলেন। তিনি তার আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধু বান্ধব সকলের নিকটিই হযরত আলী (রা) এবং অপরাপর আহলে বাইতের প্রশংসা করতেন।
হযরত আলী (রা)-এর গোত্র
হযরত ফাতেমার কথাই ছিল এর সাক্ষ্য, তিনি বলেন ওমর ইবনে আবদুল আজিজের খেলাফতের যুগে একদা আমি তাঁর নিকট গমন করছিলাম। তিনি তাঁর কক্ষ হতে পরিষদ ও প্রহরী সকলকে বের করে দিলেন, শুধু তার কক্ষে তিনি ও আমি ছিলাম। তিনি আমাকে বললেন, হে আলীর কন্যা! আল্লাহর কস! দুনিয়ায় তোমার বংশের চেয়ে আমার নিকট অধিক প্রিয় আর কোন বংশ নেই, এমনকি তোমার পরিবার আমার পরিবার পরিজন হতেও আমার নিকট বেশি প্রিয়।
তিনি ফাতেমার নিকট মিথ্যা বা অতিরঞ্জিত কিছুই বলেননি। তাঁর নিকট এ বংশ বাস্তবিকই তাঁর বংশের চেয়েও বেশি প্রিয় ছিল। খেলাফত লাভের পর তারা আরও অধিক প্রিয়তর হয়েছিল। তিনি তাঁদের সাথে সকল প্রকার যোগ-সূত্র রক্ষা করে তাঁদের কসল প্রকার অধিকার আদায় করে দিলেন। এমনকি ফাতাকে বাগানটিও তাদের ফিরিয়ে দিলেন- যার আমদানী ছিল বার্ষিক দশ হাজার দীনার। আর সবসময় আহলে বাইতের সদস্যগণ এটা লাভ করতে আশান্বিত ছিলেন। এর জন্যই হযরত ফাতেমা (রা) হযরত আবু বকর (রা)-এর সাথে মনোমালিন্য হয়েছিল। অবশ্য হযরত আবু বকর (রা) এ বাগান তাদেরকে অর্পন না করে তার কর্তৃত্ত্বাধিনে রাখলেন এবং মহানবী (সা) যে প্রকারে এর আমদানী ব্যয় করতেন তিনি তাই করলেন।
হযরত ফাতেমা (রা)-এর পর আহলে বাইতগণ এ ফাদাক নামক বাগানটি তাদের অধিকার বলেই মনে করতেন।
বাইতুল মাল হতে ভাতা নির্ধারণ প্রসঙ্গে আলোচনা করা হয়েছে যে, হযরত ওমর ইবনে আবদুল আজিজ খলীফার পদে আসীন হয়েই দশ হজার দীনার মদীনায় পাঠিয়ে দিলেন এবং মদীনার শাসনকর্তা ইবনে হাজমকে সমুদয় অর্থ হাশিম বংশীয়দের জন্য ব্যয় করতে নির্দেশ দিলেন।
পূর্বে এটাও উল্লেখ করা হয়েছে যে, স্ত্রী-পুরুষ, বালক-বৃদ্ধ নির্বিশেষে বনু হাশিমের প্রত্যেক ব্যক্তিই এ দশ হাজার দীনার হতে ৫০ দীনার করে পেয়েছিলেন।
হযরত ওমর ইবনে আবদুল আজিজ যখন তাঁদের প্রতি এরূপ দয়ার হাত প্রসারিত করলেন, তখন হযরত হুসাইন (রা)-এর কন্যা হযরত ফাতেমা খলিফাকের লিখলেন, আপনি আল্লাহর রাসূলের পরিবার পরিজনকে সাহায্য করে এ উপকার করেছেন যে, তাদের যার খাদেম ছিল না, সে খাদেমের ব্যবস্থা করেছে, যার কাপড়ের ব্যবস্থা ছিল না সে কাপড় খরিদ করেছে এবং যার নিকট ব্যয় করার কোন অর্থই ছিল না, এটা দিয়ে সে তার দৈনন্দিন খরচের ব্যবস্থা করেছে।
ইবনে সাদের অপর এক বর্ণনায় আছে যে, হযরত ফাতেমার এ চিঠি নিয়ে বাহক যখন হযরত ওমর ইবনে আবদুল আজিজের দরবারে আসল তখন তিন কাসেদকে দশ দীনার পুরস্কার দিলেন এবং ফাতেরম প্রয়োজনীয় খরচের জন্য আর পাঁচশত দীনার কাসেদের নিকট দিয়ে দিলেন।
হযরত ওমর ইবনে আবদুল আজিজের সবচেয়ে বড় অনুগ্রহ এটাই যে, তিনি বনু হাশিম ও বনু উমাইয়াদের পারিবারক গোত্রীয় গোঁড়ামীর বিষময় প্রতিক্রিয়া দূর করে তাদের পারস্পরিক সম্পর্ক আরও গভীর করতে চেষ্ট করেছিলেন এবং বনু হাশিমগণকে সে জাতির শ্রেষ্ঠতর সদস্য হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে সমর্থ হয়েছিলেন।
এ অর্থ ছাড়াও প্রত্যেক হাশিম বংশীয়গণ পঞ্চাশ দীনার ভাতা পেতেন। হযরত যুল কুরবার (রাসূলের নিকট আত্মীয়) নির্ধারিত পঞ্জমাংশ হতে এ ব্যবস্থা করে তাদের দীর্ঘদিনের অভাব দূর করে তাদেরকে বিত্তশালী করে দিয়েছিলেন।
ইবনে সাদ বলেন, হযরত ওমর ইবনে আবদুল আজিজ যখন তাদের প্রতি এরূপ অনুগ্রহের হস্ত প্রসারিত করলেন, তখন বনু হাশিমগণ এক সাধারণ সমাবেশের ব্যবস্থা করে হযরত ওমর ইবনে আবদুল আজিজের এ সব কাজের কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করলেন এবং কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে খলিফার নিকট একজন দূত প্রেরণ করলেন।
হযরত ওমর ইবনে আবদুল আজিজ তাদেরকে উত্তরে লিখলেন, আমি যদি জীবিত থাকি তবে তোমাদের সকল অধিকার ফিরিয়ে দেব।
এটা বাস্তব সত্য যে, হযরত ওমর ইবনে আবদুল আজিজ তাদের সমস্ত অধিকার ফিরিয়ে দিয়েছিলেন এবং তাঁদের উপর কোন প্রকার জোর-জুলুম করেননি, এমনকি তাদের অল্প বয়স্ক বালকদের অধিকারের প্রতিও সতর্ক দৃষ্টি রাখতেন।
মুক্ত দাস
হযরত ওমর ইবনে আবদুল আজিজ মুক্ত-দাসদের অবস্থা উন্নয়নের জন্যও বিশেষ ব্যবস্থা নিয়েছিলেন। তাঁর পূর্বেকার বনু উমাইয়া খলিফাদরে যুগে এরে লক্ষ লক্ষ্য দাসদাসী অকথ্যরূপে নির্যাতিত-নিপীড়িত হয়ে আসছিল।
বনু উমাইয়ার বংশীয়গণ মুক্ত দাসদের সম্পর্কে অত্যন্ত একগুয়ে ছিলেন। ইসলাম যুগের সে অজ্ঞাতপ্রসূত আভিজাত্য অহংকার যে আভিজাত্য অহংকারে আবু জাহেল, আবু লাহাব ও অন্যান্য কুরাইশ নেতারা মত্ত ছিল, তা আবার তাদের মধ্যে মাথা চাড়া দিয়ে উঠল। তাদের মতে আরবী ব্যতীত অন্য সব লোক ছিল অভদ্র-ইতর প্রাণীর সমতুল্য। বিশেষতঃ যুগের নির্মম অত্যাচারে যারা দাসে পরিণত হয়েছিল, তাদের নিকট তারা মানুষ হিসেব গণ্য হত না।
ইসলামের মাতৃভূমি পবিত্র মক্কায় যদিও এরূপ নিপীড়িত লোকের সংখ্যা নগণ্য ছিল, তথাপি যারা ছিল, তারা মানুষ হিসেবে গণ্য ছিল না। তাদের কুরাইশ প্রভুগণ তাদের উপর যে অত্যাচার নির্যাতন করত, তাতে আলআহর আরশ পর্যন্ত কেঁপে উঠতো।
ইসলাম আরববাসীদের অন্যান্য অসৎ আচরণের মত এ নিপীড়িত জনতার মুক্তির পথও খোলাসা করে দিয়েছিল। সেই বিলাল হাবশি, সুহাইব রোমী এবং সালমান ফারসী (রা) প্রমুখতে এ বিশ্বজনীন ভ্রাতৃসংঘের অন্যান্য সদস্য গণ যারা ইসলারেম পূর্বে নির্মমভাবে নির্যাতি ও অতি নীচ বলে গণ্য ছিল, হযরত ওমর ফারুক (রা)-এর মত ব্যক্তিত্বও তাঁদেরকে প্রবু বলে সম্বোধন করতেন এবং তার দরবারে কুরাইশ নেতাদের চেয়েও উচ্চাসনে তাঁদের আসন দিতেন।
সালমা ফারসী (রা) এবং তাঁর মত অন্যান্য মুক্ত দাসগণও হযরত আবু বকর (রা), ওমর ফারুক (রা), আলী (রা) ও ওসমান (রা)দের সম-মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত ছিলেন। অন্যান্য বিশিষ্ট সাহাবীদের মত তাদের অভিমতও সাদরে গ্রহণ করা হতো।
একটি স্মরণীয় ঘটনা হলো, যখন ইরাক চূড়ান্তরূপে বিজিত হল এবং মুসলিম সামরিক বাহিনীর পক্ষ হতে হযরত ওমর ফারুক (রা)-এর নিকট দাবী পেশ করা হল যে, বিজিত এলাকার ভূমি সামরিক বাহিনীর সদস্যদের মধ্যে বিতরণ করা হোক। তখন সেই সামরিক মুখপাত্র হিসেবে হযরত বিলাল দীর্ঘ তিন দিন পর্যন্ত এ ব্যাপারে হযরত ওমর ফারুক (রা)-এর সাথে বিতর্ক করেছিলেন।
হযরত খাব্বাব (রা)ও ছিলেন একজন মুক্তদাস। কিন্তু ইসলামের বদৌলতের তাঁর মর্যযাদা এরূপ উন্নীত হয়েছিল যে, একবার তিনি এবং হযরত আবু সুফিয়ান একই সময়ে হযরত ওমর ফারুক (রা)-এর দরবারে উপস্থিত হলে হযরত ফারুকে আজম হযরত খাব্বাবকেই প্রথম স্মরণ করেছিলে এবং হযরত আবু সুফিয়ানকে তারপর আহবান করেছিলেন।
হযরত ওমর ফারুক (রা) কোন কোন মুক্ত দাস ও তাদের সন্তানদেরকে নিজের সন্তানের থেকেও বেশী ভাতা প্রদান করতেন। মুক্ত দাস হযরত জায়েদের পুত্র উসামাকে একজন প্রথম শ্রেণীর নাগরিকের মর্যাদা প্রদান করেছিলেন। তাকে হযরত আলী (রা) এবং হযরত ওসমান (রা) ও অন্যান্য বিশিষ্ট সাহাবীদের মত মর্যাদা দিয়েছিলেন এবং নিজের পুত্র আবদুল্লাহকে চতুর্থ শ্রেণীর স্থান দিয়েছিলেন।
তিনি একটি সাধারণ নির্দেশের মাধ্যমে এসব নির্যাতিত মুস্ত দাসকে মানবতার কাতারে উন্নীত করেছিলেন। তাঁর নির্দেশটি ছিল এই-
“তোমরা যে সব দাসকে মুক্তি দাও, যদি তারা ঈমান আনে তবে তাদেরকে তাদের মনিবদের সমতুল্য ভাতা প্রদান করবে।”
ঐতিহাসিক আবু উবাইদ বলেন, একবার হযরত ওমর ইবনে আবদুল আজিজ জানকে পারলেন যে, তাঁর কোন শাসনকর্তা আরবী লোকদেরকে ভাতা দিয়ে মুক্ত দাসদের বঞ্চিত করেছেন। তখন তিনি তাঁকে লিখলেন, “নিজের মুসলিম ভাইদেরকে নীচু করার গ্লানি বেঁচে থাক এবং মুক্ত দাসদের আরবদের মতই ভাতা প্রদান কর।ঃ}
হযরত ওমর (রা)- সাধারণতঃ বলতেন- আল্লাহর কসম! যদি আরবী লোকদের তুলনায় অনারবী লোকেরা উত্তম আমলসহ হাজির হয়, তখন তারা রাসূলুল্লাহ (সা)-এর নিকট অধিক মর্যাদা লাভ করবে। যার আমল কম হবে বংশ মর্যাদা তার কোন উপকারে আসবে না।
হযরত ওমর ফারুক (রা) পবিত্র কুরআনের এ আয়াতের আলোকেই এই কথা বলেছিলেন- (আরবী**********)
অর্থাৎ তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি সব চেয়ে বেশি আল্লাহ ভীরু সে আল্লাহর নিকট বেশি সম্মানী।
মহানবী (সা)ও বিদায় হজ্জের ভাষণে এই ভাষায় উপরোক্ত কথাই ব্যক্ত করেছিলেন- (আবী************)
অর্থাৎ তাকওয়া তথা আল্লাহ ভীরুতা ছাড়া অনারবের উপর আরবীর কোনই বৈশিষ্ট নেই। ইসলামের এ সাম্যের নীতি হযরত মুয়াবিয়া (রা)-এর যুগ পর্যন্তই সামগ্রিকভাবে প্রতিপালিত হয়েছিল। ইসলামী রাষ্ট্র কোন প্রকারেই মুক্ত দাস বা যে সমস্ত লোক ইসলাম গ্রহণ করে দাসত্বের শৃঙ্খলা মুক্ত হল, তাদেরকে আরবীদের চেয়ে কম মূল্য দেইনি। তাদেরকেও সে মর্যাদাই প্রদান করা হয়েছে যা আরবদেরকে প্রদান করা হয়েছে।
পূর্বেই আলোকপাত করা হয়েছে যে, উমাইয়া শাসন যুগে যেভাবে অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সমূহ ইসলামী আদর্শ হতে বিচ্যুত হয়ে গিয়েছিল এ রূপে এ ভাবধারাটিও বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছিল। ইসলাম মুক্ত দাসগণকে যে মর্যাদা দিয়ে মানবতার পূর্ণ অধিকা প্রদান করেছিল তারা তাদেরকে তা হতে বঞ্চিত করেছিল। বনু উমাইয়াগণ নিজেদেরকে শাহী বংশ হিসেবেই মনে করত। তারা নিজেদেরকে মুক্ত দাস হতে উন্নত স্তরের লোক বলেই বিশ্বাস করত। তাদের সঙ্গে সঙ্গে অন্যান্য আরবগণও মুক্ত দাসগণকে নীচু অভদ্র মনে করত। তারা শুধু তাদেরকে তাদের দরবারেই স্থান দিত না, বরং যুদ্ধের সময় নিজেরা অশ্বে আরোহন করে মুক্ত দাসগণকে পদব্রজে হাটিয়ে নিত এবং তাদেরকে তাদের সামনে রাখত যেন তারাই প্রথম মৃত্যু মুখে পতিত হয়।
সাহেবুল কামাল বলেন- ইবনে যিয়াদের সাথে যুদ্ধ করার সময় মুখতার ছাকাফী ইব্রাহীম ইবনে আশতারকে নির্দেশ দিয়েছিল যে, তোমাদের সৈন্য বাহিনীর অধিকাংশই মুক্তদাস। যুদ্ধের তীব্রতার সময় তারা পালিয়ে যাবে। সুতরাং আরবদেরকে অর্শ্বপৃষ্ঠে আরোহন করিয়ে মুক্ত দাসদের তাদের সামনে এগিয়ে দাও।
শুধু এতটুকুই নয়, উমাইয়া যুগ আরবরা মুক্তদাদের সাথে চলাফো করতেও পছন্দ করত না। তাদের বাহনের পশু আগে যেতে দিতনা, এমনকি কোন মজলিসে তাদেরকে আরবীদের পাশে বসতে দিত না। যদি কোন দাওয়াতে কোন আরব দলপতি উপিস্থিত থাকত তবে কোন মুক্তদাসকে তারা বসাত না। তাদের নাম বা উপনামে ডাকতেও তারা ঘৃণাবোধ করত।
যদি মুক্ত দাসগণ আরবদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে তাদের কন্যা বা ভগ্নির বিবাহ দিত তবে তারা সে বিবাহ বাতিল করে দেওয়ার ক্ষমতা রাখত।
এক সরদার খালেদ ইবনে ছফুওয়ান সম্পর্কে বর্ণিত আছে যে, কোন মুক্ত দাস তার পুত্র বা কন্যার বিবাহ দিলে পরে সে বলত এ দুই কুকুরের ববাহ আল্লাহর নাম উচ্চারণ করা উচিত নয়।
এ ব্যাপারে খলিফা আবদুল মালেক সব চেয়ে বেশি কঠোর ছিলেন। তার যুগে যদি কোন আরব কন্যার কোন মুক্তদাসের সাথে বিবাহ হতো তখন তিনি বাতি করে দিতেন এবং তাকে এ অপরাধে একশত বেত্রাঘাতের কঠোর শাস্তি প্রদান করতেন।
যদি বনু উমাইয়া খলীফাগণ এ নীতিকে উৎসাহিত না করত তাহলে হয়ত অবস্থা এত শোচনীয়রূপ ধারণ করত না, কিন্তু তারাই এ নীতির প্রতিষ্ঠাতা যারা মুক্তদাসদের নীচু মনে করেই রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে ও তাদেরকে পিছে রেখেছিল। তাদের প্রতি সবচেয়ে বড় জুলুম ছিল যখন কোন মুক্ত দাস বা অনারব ইসলাম গ্রহণ করত তখনও তার জিযিয়া ও খেরাজ বা রাজস্ব আদায় করতে হতো। অথচ শরিয়ত শুধু অমুসলিমদের উপরই জিযিয়া এবং খেরাজ ধারর্যের নির্দশ দিয়েছিল।
আল মাওয়ারদি স্পষ্টই উল্লেখ করেছেন যে, জিযিয়া শুধু অমুসলিমদের উপরিই নির্ধারিত কর। যখন সে ইসলাম গ্রহণ করে তখনই তা রহিত হয়ে যায়।
জিযিয়ার মত খেরাজও অমুসলিমদের জমিতে ধার্য করা হত। যখনই সে ইসলাম গ্রহণ করত তখন তার জমির খেরাজ রহিত হয়ে যেত এবং তার নিকট হতে উশর বা দশমাংস আদায় করা হতো কিন্তু বনু উমাইয়াগণ তাদের ব্যক্তিগত ভোগ-বিলাস চরিতার্থ করার জন্যে অর্থপিচাশে পরিণত হয়ে গিয়েছিল। এ কারণেই তারা প্রতি বৎসর খেরাজের পরিমাণ বৃদ্ধি করত। তাদের ধারণায় মুক্তদাসের ক্ষেত খামার কুরাইশদের অধিকার ভুক্ত ছিল। তা হতে তারা যা ইচ্ছা গ্রহণ করত, যা ইচ্ছা পরিত্যাগ করত। তাদের ধারণায় একমাত্র আরবগণই ন্যায় ও ইনসাফ পাওয়ার অধিকারী ছিল, মুক্ত দাসগণ সে অধিকার পাওয়ার যোগ্য নয়।
বিশেষঃ হাজ্জাজের সময় মুক্তদাসদের উপর অকথ্য নির্যাতন করা হত। তারা ইসলাম গ্রহণ করলেও তাদের জিযিয়া-কর রহিত হতো না। তাদের জমির খেরাজ রহিত করে উশর গ্রহণ করা হতো না। যদি তাদের কেু গ্রাম ছেড়ে শহরে বাস করতে আসত বা সামরিক বিভাগে ভর্তি হতে যেত তখন হাজ্জাজ তার প্রতি অত্যন্ত নির্মম ব্যবহার করত। এমন কি সে তাদের হাতের নাম ঠিকানা খোদাই সীল করে মোহর লাগিয়ে দিত।
ঐতিহাসিক তাবারী বলেন-
একবার হাজ্জাজের কর্মচারীরা তার নিকট অভিযোগ করল যে, যিম্মিরা দলে দলে ইসলাম গ্রহণ করে শহরে চলে আসছে। ফলে রাজস্ব খাতে দারুণ ঘাটতি দেখা দিয়েছে। হাজ্জাজ বসরা ও অন্যান্য অঞ্চলের কর্মকর্তাদেরকে যে যিম্মি গ্রাম ছেড়ে চল এসেছে তাদেরকে তাদের নিজ নিজ গ্রামে পাঠিয়ে দিতে নির্দেশ দিল। এর ফরে সমস্ত লোক সমবেত হয়ে ইয়অ মুহাম্মদ (সা) বলে চিৎকার করে রোদন করতে লাগল। দুনিয়া তাদের জন্য সংকীর্ণ হয়ে গেল। তারা কোথায় আশ্রয়ং নিবে তাও জানে না। বসরার নারীগণ তাদের অবস্থা দেখার জন্য অস্থির হয় তাদের কাছে আগমন করল এবং তাদের দুঃখ দুর্দশা দেখে তারাও কাঁদতে লাগল।
কথিত আছে, হাজ্জাজ, এ জন্যই এ নির্মম নির্দেশ দিয়েছিল যে, যদি গ্রামের লোক ক্ষেত খামার ছেড়ে চলে যায় তাহলে দেশের শষ্য উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে খাদ্যাভাব দেখা দিতে পারে। এ অবস্থা প্রতিরোধ করতেই হাজ্জাজ এ নির্দেশ প্রদান করেছিল। কিন্তু জ্ঞানী সমাজের অবশ্যই জানা আছে যে, তৎকালে দেশের খাদ্য উৎপাদন অনেক ভাল ছিল। গ্রামবাসীদের গ্রাম ত্যাগ করা সত্ত্ওেব সর্বত্রই যথেষ্ট পরিমান খাদ্যশস্য উৎপাদন হতো। কাজেই হাজ্জজের এ কঠোর নির্দেশের কোন যৌক্তিকতা ছিল না।
শস্য উৎপাদন হ্রাস, প্রতিরোধ করার উদ্দেশ্যই তার এ নির্দেশ ছিল না, বরং জিযিয়া ও রাজস্ব ঘাটতি পতিরোধ করার উদ্দেশ্যেই সে এ নির্দেশ প্রদান করেছিল। কারণ হাজ্জাজ ও তার কর্মকর্তাগণ এবং তাদের মনিবগণ যে কোন মূল্যের বিনিময়ে রাষ্ট্রের আমদানী ঘাটতি সহ্য করতে পারত না। যেহেতু এতে উমাইয়া খলিফা এবং তাদের কর্মকর্তাদের অসাধারণ ভোগ-বিলাস চরিতার্থ করতে সবকিছু করতে প্রস্তু ছিল।
ইতোপূর্বেই আলোকপাত করা হয়েছে যে, উমাইয়া শাসকরা তরবারীর জোরে শাসনক্ষমতা লাভ করেছিল বলেই রাজ্যের সমুদয় আমদানী তাদের ব্যক্তিগত সম্পদ বলে মনে করত। এ বিষয়ে তারা খোলাফায়ে রাশেদীনের আদর্শ পরিত্যাগ করে ইরান, মিশর ও সিরিয়ার সম্রাটদের আদর্শ গ্রহণ করেছিল। এ কারণেই তারা অতীত বিভিন্ন উৎসব অনুষ্ঠান উপলক্ষে রাজা বাদশাহদের দেয়া উপহারাদী গ্রহণ করা শুরু করেছিল। এতে তারা প্রতি বছর প্রায় দেড় কোটি দীনার লাভ করত।
এ ছিল মুক্তদাসদের অবস্থা। তারা তখন পশুর পর্যায়ভুক্ত ছিল। তারা তাদের বেতন নির্ধারণ করেছিল মাত্র ৯৫ দেরহাম।
এই ঘটনা কতই মর্মান্তিক! তারা বিশিষ্ট লোকদেরকে বার্ষিক দীনার পর্যন্ত যে ক্ষেত্রে ভাতা প্রদান করত। সেক্ষেত্রে যে সব মুক্তদাস তাদের নিজেদের জীবন বিপন্ন করে যুদ্ধ করত, তাদের জন্য মাসিক ভাতা ভিল মাত্র ১৫ দেরহাম অথচ ওমর ফারুক (রা) এ পর্যায়ে লোকদের মাসিক ভাতা দিতেন ১২৫ দেরহাম।
খলিফা আব্দুল মালেক, ওয়ালীদ ও সুলায়মানদের যুগে মুক্তদাসদেরকে যুদ্ধের বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করা হত। সর্বত্রই আক্রমণের সময় তারা অগ্রভাগে অবস্থান করত, কিন্তু তাদের জন্য কোন বেতন বা ভাতা বরাদ্দ ছিল না।
উমাইয়া শাসন পদ্ধতিতে যে সমস্ত দোষ-ত্রুটি অনুপ্রবেশ করেছিল, তা কোন ন্যায় ও ভদ্রোচিত ছিল না। হযরত ওমর ইবনে আবদুল আজিজ ক্ষমতা লাভ করার পরেই এর সংস্কার শুরু করেছিলেন।
তিনি তাঁর সকল শাসনকর্তার কাছেই সাধারণবাবে এবং বিশেষ করে হাইয়ান ইবনে শুরাইহ, আব্দুল হামিদ, আবদুর রহমান এবং জারাহ আল হাকিমতে এ ব্যাপারে পত্র লিখে এ জাতীয় নির্যাতন বন্ধ করতে কঠোর নির্দেশ প্রদান করেছিলেন।
তিনি মিশরের শাসনকর্তা হাইয়ানকে যে পত্র দিয়েছিলেন নিম্নে তার সারমর্ম উল্লেখ করা হলো।
যিম্কিদের (সংখ্যালঘু) মধ্যে যদি কেউ ইসলাম গ্রহন করে তখন তার জিযিয়া-কর রহিত করে দিবে। কারণ, আল্লাহ বলেন, “যারা তওবা করে নামায পড়তে ও যাকাত দিতে শুরু করে, তাদের পথ ছেড়ে দাও।” শুরাইহ এর উত্তরে লিখলেন, যারা ইসলা গ্রহন করে, যদি তাদের জিযিয়া-কর গ্রহণ না করা হয় তাহলে রাজস্বের ঘাটতি পড়বে এবং অর্থ দফতরের উপর এর বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দিবে। হযরত ওমর ইবনে আবদুল আজিজ তার উত্তরে কঠোর ভাষায় লিখলেন।
“আমি তোমার চিঠি পেয়েছি, তোমার দুর্বলতার কথা জানার পরও আমি তোমারেক মিশরের শাসনকর্তা নিযুক্ত করেছি। আমি আমার পত্রবাহককে এ নির্দেশ দিলাম, সে তোমার মাথায় বিশটি বেত্রাঘাত করবে। তোমার মতামতের অমঙ্গল হোক। যে ব্যক্তি ইসলাম গ্রহণ করে তার জিযিয়া-কর গ্রহণ করবে না। আল্লাহ পাক রাসূলুল্রাহ (সা) কে হাদী (সৎপথ প্রদর্শক) করে পাঠিয়েছেন, জিযিয়া আদায়কারী হিসেবে নয়। আমার জীবনে কসম! যদি আমার হাতে সমস্ত লোক মুসলমান হয়ে যায় তবে এর চেয়ে সৌভাগ্য আমর আর কি হতে পারে?”
চিন্তা করার বিষয় হলো, একজন শাসনকর্তা জিযিয়া আদায় করার প্রস্তাব ও এর যৌক্তিকতা প্রদর্শন করেছিল এবং এর জন্যই হযরত ওমর ইবনে আবদুল আজিজ তাকে বিশটি বেত্রাঘাত করেছিলেন।
ইরাকের শাসনকর্তা আবদুল হামিদের কাছেও তিনি অপর একটি চিঠিতে মুক্তদাসের ব্যাপারে বিস্তারিত নির্দেশ দিয়েছিলেন। তিনি তাকে লিখেছিলেন-
“তুমি আমার কাছে হীরাবাসীদের সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেছ, যে সমস্ত ইহুদী, নাছারা ও অগ্নিপূজক যাদের উপর জিযিয়া-কর ধার্য আছে, যদি তারা ইসলাম গ্রহণ করে তখন তাদের নিকট হতে জিযিয়া-কর আদায় করবে কি না? আল্লাহ পাক মুহাম্মদুর রাসূলুল্লাহ (সা) কে ইসলামের পথে আহবানকারী করে পাঠিয়েছিলেন, জিযিয়া-কর আদায় করার জন্য পাঠাননি। তাদের কেউ ইসলাম গ্রহন করলে তার সম্পদে যাকাত ওয়াজিব হবে, যেভাবে মুসলমানদের উত্তরাধিকার প্রদান করা হয়।”
হযরত ওমর ইবনে আবদুল আজিজ মুক্ত দাসদের সে সমস্ত অধিকার প্রতিষ্ঠা করেছিলেন যা মুসলমানরা পূর্বে ভোগ করছিল এবং অর্থ ভান্ডারে এর কোন প্রতিক্রিয়া পড়বে কিনা এর কোন চিন্তাও করেননি। এমন কি তিনি বসরার শাসনকর্তা আদীকে লিখলেন- আল্লাহর কসম! আমার বড় সাধ হয় যে, সমস্ত মানুষ ইসলাম গ্রহন করুক আর আমি ও তুমি কৃষি কাজ করে নিজের হাতের উপার্জন ভোগ করি।
হযরত ওমর ইবনে আবদুল আজিজ অপবিত্র আমদানী দিয়ে ধন ভান্ডার পূর্ণ করার পরিবর্তে শুন্যতা পছন্দ করতেন। কর্মচারীরা বেতন না পাক এবং তার পেটের দায়ে ক্ষেত খামারে কাজ করতে বাধ্য হোক, এটাই তিনি ইচ্ছ করতেন। হযরত ওমর ইবনে আবদুল আজিজ জিযিয়া-কর আদায়ের ব্যাপারে যে কর্মপদ্ধতি গ্রহণ করেছিলেন, মুক্তদাসদের ভাতা প্রদানেও সে নীতিই অনুসরণ করেন। তিনি নির্যাতিত মানবগোষ্ঠীকে পূর্ণ অধিকার প্রদান করে মানবতার কাতারে উন্নীত করেছিলেন, তিন ভাতা প্রদানে মুক্তদাস, আরব বা কুরাইশদের মধ্যে কোন প্রকার বৈষম্য সৃষ্টি করেননি। কোন রাজনৈতিক স্বার্থই তার নিকট অগ্রগণ্য ছিল না।
তিনি প্রত্যেককে তার যোগ্যতা ও প্রয়োজনানুপাতে ভাতা প্রদান করতেন, সে কুরাইশী হক বা মুক্তদাসই হোক অথবা উমাইয়া বংশীয় হোক।
তিনি মুক্তদাস ও অন্যান্য আরবদের মধ্যে কোন পার্থক্য করতেন না। বরং তিনি সৎ ও কর্তব্যপরায়ণ মুক্ত দাসগণকে আরবদের উপর প্রাধান দিতেন।
দৃষ্টান্ত স্বরূপ বলা যায় যে, তিনি আরবের সমস্ত আলেমদেরকে বাদ দিয়ে মিশরের প্রধান বিচারপতি হিসেবে মুক্তদাস ইবনে খুজামেরকে নিয়েঅগ করেছিলেন।
ঐতিহাসি কান্দি বলেন, সুলায়মান ইবনে আবদুল মালেকের শাসন আমলে ইবনে খুজামের একটি প্রতিনিধি দলের সাথে দামেশকে এসেছিলেন। হযরত ওমর ইবনে আবদুল আজিজ সেখানে উপস্থিত ছিলেন। এ প্রতিনিধি দল পাশ্চাত্যের নীতি অনযায়ী নীতি অনুযায়ী সুলায়মানের সাথে আলোচনা শুরু করল কিন্তু ইবনে খুজামের এই আলোচনায় অংশগ্রহণ করেননি।
সুলায়মান তাকে কিছু আলোচনা করতে বললে তিনি আলোচনা করতে অস্বীকা করলেন।
মজলিস সমাপ্ত হলে হযরত ওমর ইবনে আবদুল আজিজ তাকে জিজ্ঞেস করলেন, তুমি আলোচনা করলে না কেন? তিনি উত্তরে বললেন, “আমার ভয় হচ্ছিল যে হয়তো মিথ্যা বলে ফেলব”। এ ব্যক্তির সাথে হযরত ওমর ইবনে আবদুল আজিজের এতটুকু পরিচয় ছিল।
হযরত ওমর ইবনে আবদুল আজিজের কাছে এ ব্যক্তির কথাটি খুবই পছন্দনীয় হয়েছিল।
ইবনে খুজামের মত হাসান বসরীর সঙ্গেও তাঁর ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল এবং তিনিও মুক্তদাসদের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। তিনি তাকে বসরার সমস্ত আরবদের চেয়ে শ্রেষ্ঠ মনে করে উক্ত অঞ্চলের প্রধান বিচারপতি নিয়োগ করেছিলেন।অ
মূলতঃ ইসলামের প্রথম যুগে মুক্তদাসরা যে সব সুযোগ-সুবিধা ভোগ করত, হযরত ওমর ইবনে আবদুল আজিজ তাদেরকে আবার সে অধিকার ফিরিয়ে দিলেন।