জনগণের শিক্ষা ও অগ্রগতি
নির্যাতিত, নিপিড়ীত ও অধিকার বঞ্চিত মানবতার সংস্কার ও অগ্রগতি যদিও সময় সাপেক্ষ ব্যাপার। কিন্তু হযরত ওমর ইবনে আব্দুল আজিজ এর জন্য দিবারাত্র পরিশ্রম করে গিয়েছেন। ফাতেমা বিনতে আব্দুল মালেক বলেন, তাঁর অধিকাংশ দিনই এভাবে অতিক্রমত হত, সূর্যাস্ত হয়ে গিয়েছে কিন্তু সরকারী কাজ শেষ হয়নি। প্রদীপ জ্বালিয়ে তিনি বসে যেতেন এবং কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত উঠতেন না।
এ কর্মব্যস্ততা সত্ত্বেও তিনি জনগণের শিক্ষা দীক্ষার দায়িত্ব এড়িয়ে যাননি। অর্থাৎ ভগ্ন রাজপ্রাসাদের সংস্কারের সঙ্গে সঙ্গে তিনি তা সজ্জিতও করেছিলেন।
তিনি শুধু অধিকার বঞ্চিত মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা করেছেন, নির্যাতিত মানবতাকে মুক্তি দিয়েছেন শুধু তাই নয়। বরং গণচরিত্র সংশোধন করতে এবং ইসলামের ছাঁচ তাদের মন মানসিকতা গঠন করতেও অবিরাম প্রচেষ্টা করে গিয়েছেন এবং তিনি যেরূপভাবে এসব দায়িত্ব পালন করেছেন হয়ত আল্লাহর নিকটতম বান্দা ছাড়া এমন করা আর কারো পক্ষে সম্ভব হত না।
এটা কোন ছোট সাম্রাজ্য ছিল না, এ জনবসতি কোন ছোট জনবসতি ছিল না। তদুপরি এখানে শুধু একটি মাত্র জাতির বাস ছিল না বিভিন্ন জাতি বাস করত। একটি রাজ্য ছিল না বরং কয়েকটি রাজ্য নিয়ে এই সাম্রাজ্য গঠিত ছিল। এর অন্তর্ভুক্ত ছিল হেজাজের মরুভূমি, সিরিয়ার শষ্যশ্যামল কৃষিক্ষেত্র, ইরাকের ঘনবসতি অঞ্চল তত্কালীন দুনিয়ার সব চেয়ে বেশী লোকের বাস ছিল এই সাম্রাজ্যে। এখানকার শষ্যক্ষেত্র ছিল দুনিয়ার সবচেয়ে উর্বর শষ্যক্ষেত্র। তারপর ইরান, তুরস্ক, কাশগর, কেরমান, সিন্ধু, বলখ, বুখারা, কাবুল, ফরগানা মোসুল, মিশর, আফ্রিকা, স্পেন বিভিন্ন রাজ্যসহ এই রাষ্ট্র এতই বিশাল ছিল যা বৃটিশ সাম্রাজ্য হতে ও বহুগুন বিস্তৃত ছিল। তাবারী বলেন, যখন হযরত উমর ইবনে আব্দুর আজিজ খেলাফতের দায়িত্ব গ্রহণ করলেন, তখন তার সাহচর্য ও শিক্ষা সংস্কৃতির কল্যানে গণচরিত্র এমনভাবে সংশোধিত ও পরিবর্তন হয়েছিল যে, যখন তাদের একজন তাদের অপর জনের সঙ্গে সাক্ষাত করত, তখন একে অপরকে জিজ্ঞাস করত, রাত্রে তুমি কত বার দরুদ পাঠ করেছি, কত দোয়া পড়েছ, কতটুকু কোরআন পাঠ করেছ, কখন খতম করবে, এ মাসে রোজা রাখবে ইত্যাদি।
এ ব্যাপারে এমন একটি ঘটনাও বর্নিত হয়েছে, বর্ণনাকারী হয়ত তা মর্ম বুঝতে ভুল করেছে। খুরাসানের সুদৃঢ় পল্লীতে উক্ত ঘটনা সংঘটিত হয় বলে কথিত আছে। বর্ণনাকারীর বক্তব্য হলো, ক্রমাগত তিন বছর পর্যন্ত বাঘ ও বকরিতে একই ঘাটে পানি পান করছিল কিন্তু একদিন হঠাৎ একটি বাঘ একটি বকরীকে হত্যা করে ফেলল। সে দিনই খবর আসল যে, হযরত ওমর ইবনে আব্দুল আজিজ ইন্তেকাল করেছেন।
এটা একটি রূপকথা নয়। এটা দিয়ে শুধু এ বাস্তবতার প্রতিই ইঙ্গিত করা হয়েছে যে, ওমর ইবনে আব্দুল আজিজের যুগে সাধারণ ও বিশিষ্ট লোকেরা এমন এক সূত্রে গ্রথিত হয়েছিল যে, একে অন্যের উপর তারা আর জুলুম নির্যাতন করত না। এটা বাস্তব সত্য যে, হযরত ওমর ইবনে আব্দুল আজিজ এ সংক্ষিপ্ত শাসনামলের মধ্যে ছোট বড় নির্বিশেষে মানবচরিত্র যেরূপ সংশোধন করেছিলেন এবং তাদের মন মানসিকতা যেভাবে গঠন করেছিলেন উহার ফলেই তারা ছোট বড় সকল প্রকার অন্যায়-অপকর্ম হতে বিরত থাকতে চেয়েছিল।
তিনি শাসনকর্তাদের নিকট যে সব চিঠিপত্র লিখতেন, তাতে গণচরিত্র সংস্কারের নির্দেশ অবশ্যই থাকত। যেমন শাসনকর্তাদের হিসাব নিকাশ অধ্যায়ে তার লিখিত একটি চিঠি রবাত উল্লেখ করা হয়েছে যে, তিনি মিশরের শাসনকর্তাকে লিখেছিলেন, “আমি বিশ্বস্ত সুত্রে জানতে পেরেছি যে, খাদেমগণ যখন মজলিসে আহ ধৌত করে তখন তাঁর এক ব্যক্তি হাত ধৌত করার পরই তস্তরী উঠিয়ে নেয়। এটা অনারবদের তরীকা। এটা ত্যাগ কর এবং যতক্ষণ তস্তরী পূর্ণ না হয় ততক্ষন সেটা উঠাতে নিষেধ কর।
এ ব্যাপারে ইবনে সা’দ বসরা শাসনকর্তা আরতাতকে লিখিত হযরত ওমর ইবনে আব্দুল আজিজের সেই চিঠিটিও উদ্বৃত করেছেন- যাতে তিনি মদ্য তৈরির নাবিয (এক প্রকার পানীয় বস্তু) ব্যবহার করতেও নিষেধ করেছিলেন।
সামাজিক জীবনের খুঁটিনাটি বিষয়ও হযরত ওমর ইবনে আব্দুল আজিজের দৃষ্টি এড়াত না। স্বামী বা অন্য কোন ঘনিষ্ঠ আত্মীয়ের মৃত্যুর পর স্ত্রী ও অন্যান্য আত্মীগণ খোলা মাথায় ক্রন্দন করতে করতে জানাযার পিছনে গমন করত। এটা ইসলামের দৃষ্টিতে একটি অপকর্ম ছাড়া আর কিছু নয়। হযরত ওমর ইবনে আব্দুল আজিজ সমস্ত প্রাদেশিক শাসকদেরকে এ জাতীয় অপকর্ম বন্ধ করতে নির্দেশ দিয়েছিলেন। কারণ এটা অমুসলমানের রীতি ছিল। এরূপ, নাচ-গান ও বাদ্য যন্ত্রসহ সমাজ জীবনে উশৃঙ্খল অবস্থার সৃষ্টিকারী এবং গণচরিত্র বিনষ্টকারী বিষয়সমূহ তাঁর নিকট খুবই অপছন্দনীয় ছিল। তিনি জনসাধারণকে এ সমস্ত অপকর্ম হতে বিরত করার জন্য পূর্ণ মনোযোগ দিয়েছিলেন। এ জন্যই ঐতিহাসিকগণ লিখেছেন যে, তাঁর যুগে নাচ-গানের আসর বন্ধ হয়ে গেল, কাব্যমুখর মজলিস নীরব হয়ে গেল, নাচ-গান তাঁর রাজত্ব ছেড়ে চলে গেল। কারণ তার আদেশ অমান্যকারীকে কঠোর শাস্তি দিতেন এবং তার বংশ মর্যাদার প্রতি মোটেই গুরুত্ব দেয়া হত না।
ইবনে সাদ বলেন, হযরত ওমর ইবনে আব্দুল আজিজ গণচরিত্র সংস্কারের এতই গুরুত্ব দিতেন যে, নৈতিক অপরাধীগণকে তার সামনে শাস্তি দেয়া হত। ইবনে সা’দের একটি সাক্ষ্য উল্লেখ করেছেন, তার ভাষ্য এই, আমি হযরত ওমর ইবনে আব্দুল আজিজকে মদ্যপান করার অভিযোগে এক ব্যক্তিকে শাস্তি দিতে দেখেছি। তিনি তার গায়ের কাপড় খুলে তাকে ৮০ টি বেত্রঘাত করে বললেন, যদি আবার এরূপ কর তাহলে আমি পুনরায় তোমাকে এরূপ প্রহার করব এবং তোমাকে বন্দী করে রাখব যতক্ষন না তুমি সংশোধন হও। সে ব্যক্তি নিবেদন করল, আমি তাওবা করছি। আর কখনও এরূপ করব না। অতপর হযরত ওমর ইবনে আব্দুল আজিজ তাকে ছেড়ে দিলেন।
ইবনে সা’দ অপর একটি ঘটনার কথা বর্ণনা করছেন যাতে হযরত ওমর ইবনে আব্দুল আজিজ শাস্তির সময় স্বয়ং উপস্থিত ছিলেন। বর্ননাকারী বলেন এক ব্যক্তিকে কোন চতুস্পদ জন্তুর সাথে দুস্কর্ম করার অভিযোগে হযরত ওমর ইবনে আব্দুল আজিজের নিকট আসা হলে তিনি তাকে শরিয়তের নির্ধারিত শাস্তি হতেও কঠোর শাস্তি প্রদান করলেন।
মানব চরিত্র সংস্কারের জন্য শাস্তি বিধান একটি উপায় মাত্র। এটা ছারাও অন্যান্য পন্থায় তিনি জনগণের শিক্ষা-সংস্কৃতির অগ্রগতি সাধন করেছিলেন। যুগশ্রেষ্ট মনিষীগণকে তিনি বেতন ভুক্ত কর্মচারী নিয়োগ করে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে গণচরিত্র সংস্কারের উদ্দেশ্যে প্রেরণ করেছিলেন। তারা মানুষকে শরিয়তের হুকুম আহকাম শিক্ষা দিতেন ও অন্যান্য অপকর্ম হতে বিরত থাকতে বলতেন।
এ সমস্ত বিশিষ্ট মনিষীদের মধ্যে ছিরেন হযরত নাফে, হযরত ইয়াযিদ ইবনে আবু মালেক, হযরত মেহরান, জাআসাল হাল্লাজ্জ, হযরত ইয়াযিদ ইবনে আবু হাবিব, হযরত হারেছুল আশারী এবং আছেম প্রমুখ মনিষীবৃন্দ।
এ সমস্ত মনিষীগণ দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে গিয়ে জনগণকে ইসলামী শিক্ষা দিতেন এবং তাদের ছাড়াও তিনি রাষ্ট্রের স্থানে স্থানে হাজার হাজার শিক্ষক নিযুক্ত করেছিলেন। তারা প্রাদেশিক গভর্ণরদের সমতুল্য বেতন পেতেন।
আবু বকর ইবনে হাজম (রা) একজন বিশিষ্ট আলেমও ফকীহ ছিলেন। তাকে হযরত ওমর ইবনে আব্দুল আজিজ মদীনার গভর্ণর নিয়োগ করলেন এবং এক নির্দেশ দিয়ে বললেন যে, আলেমগণকে বল, তারা যেন মসজিদকে কেন্দ্র করে এলেমের প্রসার করেন, কারণ সুন্নাতের মৃত্যু হয়েছে। অর্থাৎ মহানবী (সা) যে চরিত্র শিক্ষা দিয়েছিলেন তা দীর্ঘ দিনের কুসংস্কারে বিস্মৃত প্রায় হয়ে গিয়েছিল। হযরত ওমর ইবনে আব্দুল আজিজ যথার্থই বলেছিলেন যে, সুন্নাতের মৃত্যু ঘটেছে। সর্বত্র অন্যায় অবিচার আর কুসংস্কার আচ্ছন্ন হয়ে গিয়েছিল।
ইবনে কাছীরও এ বক্তব্যের সমর্থন করে বলেছিলেন যে, জনগণের শিক্ষা দীক্ষা ও সাংস্কৃতিক অগ্রগতি সাধনের উদ্দেশ্যে হযরত ওমর ইবনে আব্দুল আজিজ দেশের আলেম সমাজকে নিযুক্ত করেছিলেন। নিয়মিত বেতন ছাড়াও বিশেষ উপহার উপঢৌকনের মাধ্যমে তিনি তাদেরকে উত্সাহিত করতেন। তিনি হযরত মেহরানকে জাযিরার শাসনকর্তা নিয়োগ করে তাঁকে নির্দেশ দিয়েছিলেন যে, তিনি যেন সরকারী অর্থ দিয়ে আলেম সমাজের জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। অর্থাৎ হযরত ওমর ইবনে আব্দুল আজিজ গণচরিত্র গঠনের জন্য সর্বপ্রকার ব্যবস্থা গ্রহণ করেছিলেন। তিনি খেলাফতের দায়িত্ব গ্রহন করার পর প্রথম অথবা দ্বিতীয় ভাষনে বলেছিলেন যে, যদি আমি জীবিত থাকি তবে তোমাদেরকে ভালভাবে অবহিত করব যাতে তোমরা আমল করতে পার। কিন্তু যদি মারে যাই তাহলে মনে রেখ আমি তোমাদের সাহায্যের জন্য লালায়িত নই।
তিনি তাঁর এই পবিত্র ইচ্ছা বাস্তবায়নের উদ্দেশ্যে মহাবনী (সা) এর সুন্নাত ও তার হাদীস সমুহ সংকলন করতে নির্দেশ দিলেন। তার এই নির্দেশ পালন করে সমস্ত বিশিষ্ট আলেম ও মুহাদ্দেসগণ দিবারাত্র পরিশ্রম করে হাদীসে নববীর বিরাট দফতর রচনা করতে লাগল। অতপর তিনি এ সমস্ত হাদীস নকল করিয়ে বিভিন্ন দেশে প্রেরণ করতে লাগলেন এবং সংশ্লিষ্ট প্রদেশের শাসনকর্তাকে এ সমস্ত হাদীস জনগণের মধ্যে প্রচার করতে নির্দেশ দিলেন। মদীনা যেহেতু আল্লাহর রাসূল (সা) এর আশ্রয়স্থল ছিল, তিনি এখানেই জীবন অতিবাহিত করেছেন। এ জন্য তথাকার আলেমগণকেই বিশেষত এ কাজে নিয়োগ করলেন। এ ব্যাপারে মদীনার গভর্ণর ইবনে হাজমকে লিখিত তাঁর পত্রটির মর্ম ছিল এই মহানবী (সা) এর হাদীস সমূহ অনুসন্ধান করে তা লিপিবদ্ধ কর। শুধু রাসূলুল্লাহ (সা) এর হাদীস লিপিবদ্ধ করা হবে।
উলামাদের ধারনা এই যদি হযরত ওমর ইবনে আব্দুল আজিজ এ উদ্যোগ গ্রহণ করতেন তাহলে হয়ত হাদীসে নবুবীর এ বিরাট ভান্ডার সংকলিত হতনা।
কবিদের সাথে সম্পর্কচ্ছেদ
যদিও কাব্য সাহিত্য শিক্ষার একটি অবিচ্ছিন্ন অঙ্গ। কিন্তু কবিগণ গঠনমূলক দৃষ্টিভঙ্গি ও উন্নত চরিত্রের অধিকারী হলেই তা জনসাধারনের শিক্ষা ও সংস্কারের জন্য উপযোগী হয়। দুর্ভাগ্যবশত তত্কালীন কবিরা ইসলামী চরিত্র হতে বহুদূরে সরে গিয়েছিল। তারা বংশগত বিদ্বেষ এবং গোষ্ঠী গৌরবের পতাকা বহন করে সমাজদেহে বিভিন্ন প্রকার দুষ্টক্ষতের সৃষ্টি করেছিল। তা ছাড়া হযরত ওমর ইবনে আব্দুল আজিজের পূর্ববর্তী খলীফাগণ এ জাতীয় কবিদের পৃষ্ঠপোষকতা করতেন এবং তাদের দ্বারা বংশ বিদ্বেষ প্রসারে সাহায্য গ্রহন করতেন। এমনকি এ ব্যাপারে বড় বড় পুরস্কার দিয়ে তাদেরকে উত্সাহিত করতেন। বিশেষত: সে যুগে তিনজন কবি ফারাযদাক, আখতাল ও জারীর এ ব্যাপারে বিশেষ খ্যাতি অর্জন করেছিলেন।
হযরত ওমর ইবনে আব্দুল আজিজ যেখানে আলেম সমাজের পূর্ণ পৃষ্ঠপোষকতা দান করেছেন, যেক্ষেত্রে তিনি জ্ঞান বিজ্ঞান বিজাতীয় ভাষায় অনুবাদ করতে বিপুল অর্থ ব্যয় করেছেন সে ক্ষেত্রে তিনি মাত্র একশত দেরহাম ব্যতীত বিশিষ্ট কবিদের জন্য কিছুই দেননি। ফলে কবিরা ও তাদের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন করতে বাধ্য হয়েছিল।
পরিসমাপ্তি
নেতৃত্ব, শাসনব্যবস্থা এবং ইসলামী সমাজ ব্যবস্থায় যদিও বিপ্লব জনগণের জন্য অত্যন্ত উপকারী ছিল যদিও এভাবে ইসলামী শাসন ব্যবস্থার মান উন্নত হয়েছিল বিশ্বের সকল মানুষই মনে করত যে মানুষের নিরাপত্তা মানবতার কল্যাণ এবং মুক্তির জন্যই ইসলামের আবির্ভাব ঘটেছে এবং এ জীবন ব্যবস্থা কোন বিশেষ দল বা গোষ্ঠীর আরাম আয়েশ ও জীবনে মান উন্নয়নের জন্য ছিল না, বিশ্ব মানবতার কল্যাণ কামনাই ছিল এর একমাত্র উদ্দেশ্য।
কিন্তু উমাইয়া বংশের লোকেরা ইসলাম সম্পর্কে বিশ্বের এ শুভ ধারণার কামনা করত না। কারণ হযরত ওমর ইবনে আব্দুল আজিজের দ্বারা তারা খুব বিপদগ্রস্ত হয়ে পড়েছিল, তাদের ব্যক্তিগত সম্পদ তিনি ছিনিয়ে নিয়েছিলেন তাদের লুণ্ঠিত সম্পদ জনগনেকে ফিরিয়ে দেয়া হয়েছিল। যদি হযরত ওমর ইবনে আব্দুল আজিজ আরো কিছু দিন জীবিত থাকতেন তবে বনু উমাইয়ার লোকেরা বিপদ আরো বহুগুণ বৃদ্ধি পেত। বিশেষতঃ ইয়াযিদ ইবনে আবদুল মালেকের এ আশংকা ছিল যে, হযরত ওমর ইবনে আবদুল আজিজ তাকে পদচ্যূত করে তার পরিবর্তে অন্য কাকেও তার স্থালাভিষিক্ত করে না যান। যদিও সুলায়মানের ওছিয়ত ক্রমেই ইয়াযিদ ইবনে আবদুল মালেক যুবরাজ নিযুক্ত হয়েছিণে এবঙ পূর্ববর্তী খলিফার কৃত আহাদনামা ও প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করা যদিও খুব কঠিন কাজ ছিল কিন্তু তবুও হযরত ওমর ইবনে আবদুল আজিজ দৃষ্টিভঙ্গি অনুযায়ী এটা খুব অসম্ভব ছিল না যে, তিনি ইয়অযিদকে পদচ্যুত করে কোন সৎ ও নিষ্ঠাবন লোককে খলিফা নিযুক্ত করে যাবেন।
এ আশংকাই শেষ পর্যন্ত ইয়াযিদকে খলিফার বিরুদ্ধে এক হীন ষড়যন্ত্র করতে উদ্ধুদ্ধ করেছিল। সে তাকে খাদ্য বা পানীয়ে বিষ মিশিয়েছিল।
ইবনে কাছীরের ভাষ্যটি এই
মানুষ মনে করে যে, ইয়াযিদ খলিফার ব্যক্তিগত খাদেমকে এক হাজার দীনার দিয়ে তার সহযোগী করেছিল। সে খাদেমই তার নখের নীচে বিষ লুকিয়ে রেখে ছিল। তখন হযরত ওমর ইবনে আবদুল আজিজ পান করার জন্য পানি চাইলেন তখন পানিতে সে নখটি ডুবিয়ে সে পানি ওমর ওমর ইবনে আবদুল আজিজকে পান করতে দিল। এর ফলেই তিনি রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়লেন অবশেষে এরোগেই তিনি ইন্তেকাল করেন।
হযরত ওমর ইবনে আবদুল আজিজ পীড়িত হলে প্রথমতঃ সাধারণ লোক ও তার পরিবারের লোকদের ধারণ ছিল যে, তাঁকে যাদু করা হয়েছে। ইববে কাছীর বলেন, যখন তাঁকে বিশ প্রয়োগের কথা বলা হল তখন তিনি বললেন, আমি সে দিনিই জানতে পেরেছি যে, আমি বিষাক্রান্ত হয়েছি।
তারপর তিনি তার সে খাদেমকে ডেকে এনে জিজ্ঞেস করলেন, তুমি এরূপ করলে কেন? সে বলল, আমাকে এক হাজার দীনার দিয়ে এরূপ করতে বাধ্য করা হয়েছে।
হযত ওমর ইবনে আবদুল আজিজ নিজের প্রাণ বিসর্জন দিয়েও তার বংশের এ হীন ষড়যন্ত্রের কথা প্রকাশ করেননি। তরপর যখন চিকিৎসক তাঁর চিকিৎসার জন্য আগমন করলেন তখন তিনই তা প্রকাশ করে দিলেন।
ইবনে জওযি এ প্রসঙ্গে জনৈক ইহুদির কথা উল্লেক করেছেন যে, সর্বপ্রথম খলিফা বিষাক্রান্ত হওয়ার সংবাদ দিয়ে খলিফার খাদেমের নিকট তাঁর চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে অনুরোধ করেছিল।
হয়ত এ ইহুদি সে বিষ প্রয়োগকারী খাদেমের বন্ধু ছিল অথবা ইয়াযিদ ইবনে আবদুল মালেকের এ অপকর্মে শরীক করেছিল।
হযরত ওমর ইবনে আবদুল আজিজকে বিষ পান করান হল, আর তিনি সে দিনেই এ বিষয় অবহিত হয়েছিলেন কিন্তু লজ্জাবোধ করে তা প্রকাশ করেননি। তারপর যখন এটা প্রকাশ হয়ে পড়ল তখন তিনি সে খাদেমকে ডেকে তার নিকট হতে এক হাজার দীনার নিয়ে নেন সে ঘুষ বাবদ গ্রহণ করেছিল সেই অর্থ বায়তুল মালে জমা করে দিলেন এবং তাকে বললেন, এখান হতে এখনই ভেগে যাও। যদি আমার পরিবারের লোকেরা জানতে পারে তাহলে তোমার প্রতিশোধ না নিয়ে ছাড়বে না। হযরত ওমর ইবনে আবদুল আজিজ তখন হেমছের দিয়াররে সামআন বস্তিতে অবস্থান করছিলেন। তিনি এখানেই দীর্ঘ বিশ দিন পর্যন্ত রোগ শয্যায় শায়িত ছিলেন।
ইবনে হাকাম বলেন, রোম সম্রাট তার অসুকের সংবাদ শুনেই তিনি তার ব্যক্তিগত চিকিৎসককে তার চিকিৎসার জন্য প্রেরণ করলেন। এ চিকিৎসক দিয়ারে সামআনে এসে খলিফাকে দেখে বললেন, সত্যিই তাকে বিষপান করান হয়েছে। এরপর চিকিৎসক তাকে চিকিৎসার প্রতি মনোযোগ দিলেন। কিন্তু খলিফা আর চিকিৎসা করাতে রাজী হলেন না।
ইবনে কাছীর বলেন, তখন ওমর ইবনে আবদুল আজিজ বলেছিলেন, আল্লাহর কসম! যদি আমার চিকিৎসার জন্য শুধু এটুকুও বলা হয় যে, আমি আমার কান স্পর্শ করব, তবুও আমি এটা করব না।
বস্তুতঃ তিনি জীবনের প্রতি বিতশ্রদ্ধ হয়ে গিয়েছিলেন। এ পরিবেশকে তিনি আর সহ্য করতে পারছিলেন না। ইবনে আবদুল হাকাম বলেন, যখন তার প্রাণপ্রিয় পুত্র আব্দুল মালেক এবং ভাই সুহাইল ও বিশ্বস্ত খাদেম মুজাহিম ইন্তেকাল করলেন, তখন হতে তিনি খুব বিমর্ষ থাকতেন এবং দুনিয়ার প্রতি তার আর কোন আকর্ষণই অবশিষ্ট ছিল না।
বিশেষতঃ প্রাণপ্রিয় পুত্র আবদুল মালেকের মৃত্যুতে তার হৃদয়ে এমন আঘাত করেছিল যে, তিনি শোকে জ্ঞানশুন্য হয়ে পড়েছিলেন। তারপর ভাই ও বিশ্বস্ত খাদেমের মৃত্যু তাঁর ব্যাথা বহুগুণে বৃদ্ধি করেছল। এরপর তিনি দামেস্কের বিশিষ্ট ওলী, আরেফ বিল্লাহ ইবনে মাকারয়াকে ডেকে আনলেন। যখন তিনি তার নিকট আসলেন, তখন খলীফা তাঁকে বললেন, আমি আপনাকে কেন ডেকেছি আপনি কি সে সম্পর্কে কিছু অবগত আছেন? তিনি বললেন, না আমি অবগত নই।
হযরত ওমর ইবনে আবদুল আজিজ বললেন, আপনাকে আমি একটি কথা বলব, কিন্তু আপনি কসম না করলে আপনাকে তা বলব না। ইবনে যাকারিয়া কসম করলেন। তারপর হযরত ওমর ইবনে আবদুল আজিজ বললেন, আপনি আল্লাহর নিকট দোয়া করুন, যাতে তিনি আমাকে মৃত্যু দান করেন। ইবনে যাকারিয়া বললেন, মুসলমানদের সাথে চরম বিশ্বাসঘাতকতা করা হবে। এটা হবে উম্মতে মুহাম্মাদির সাথে চরম শত্রুতিা। হযরত ওমর ইবনে আবদুল আজিজ তার কসমের কথা স্মরণ করে দিলেন অতঃপর ইবনে যাকারিয়া তাঁর মৃত্যুর জন্যও দোয়া করলে। হযরত ওমর ইবনে আবদুল আজিজ তার একটি ছোট ছেলেকে ডেকে আনলেন এবং ইবনে আবু যাকারিয়ার নিকট তার জন্য দোয়অ করতে অনুরোধ করলেন। কারণ একেও তিনি অতন্ত মহব্বত করতেন। ইবনে আবু যাকারিয়া তার মৃত্যুর জন্যও দোয়া করলেন।
বর্ণনাকারী বলেন, হযরত ওমর ইবনে আবদুল আজিজের মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে ইবনে আবু যাকারিয়া ও সে বালকটি মারা গেল। এ তিনজনের মৃত্যু ও এক জায়গায় হয়েছিল।
তবে হযরত ওমর ইবনে আবদুল আজিজ আবু যাকারিয়াকে এ পীড়ার সময়ই ডেকেছিলেন না এর পূর্বে তা স্পষ্ট রূপে জানা যায়নি।
ইবনে হাকামের অপর একটি ভাষ্য দ্বারা জানা যায় যে, যখন তার পুত্র আবদুল মালেক, ভাই সুহাইল এবং বিশ্বস্ত খাদেম মুজাহিম একের পর এক ইন্তেকাল করলেন তখন খলীফঅ শোকে দুঃখে মুহ্যমান হয়ে পীড়াগ্রস্ত হয়ে পড়লেন। এ পীড়িত অবস্থাই তিনি ওযু করে নামায পড়লেন এবং অত্যন্ত বিনয়ের সাথে আল্লাহর নিকট কাতর আবেদন করলেন।
আল্লাহ! তুমি সুহাইল, আবদুল মালেক ও মুজাহিমের মৃত্যু দান করেছ। এরা ছিল আমার সহকর্মী ও সঙ্গী। এখন আমাকেও মৃত্যু দান কর। অতঃপর তাঁর এই দোয়া কবুল হল এবং তিনি ইন্তেকাল করলেন।
তার এ দীর্ঘ রোগশয্যায় শ্রশ্রুসা করতেন তার প্রাণপ্রিয় পত্নী ফাতেমা ও শ্যালক মুসলিমা। এ দুই জনকেই তিনি প্রাণাধিক মহব্বত করতেন। একদিন মুসলিমান তার নিকট আবেদন করল যে, আমিরুল মুমিনিন! আপনার সন্তান সন্ততির সংখ্যা কম নয়। আপনি এদেরকে বায়তুল মাল হতে বঞ্চিত করেছেন। আপনি আমাকে অথবা আমাদের পরিবারের জন্য কাউকে বলুন যে, আপনার জীবিত অবস্থায় আমরা তাদের জন্য কিছু ব্যবস্থা করে নেই। হযরত ওমর ইবনে আবদুল আজিজ এ কথা শুনে বললেন, তোমরা আমাকে বসাও। তার তাকে বসালেন। তিনি মুসলিমাকে বললেন, হে মুসলিমা! তোমরা বলছ, আমি আমার সন্তানদের বায়তুল মাল হতে বঞ্চিত করেছি।
আল্লাহর কসম! আমি তাদের কোন অধিকার হরণ করিনি। কিন্তু আমি তাদেরকে অন্যেল সম্পদ দিতে পারি না। তোমাদের ধারণা যে, আমি তাদের জন্য ওছিয়ত করে যাব। কিন্তু আল্লাহিই তাদের হেফাযতকারী যিনি কিতাব অবতীর্ণ করেছন। যে সৎ তিনি তার বন্ধু ও সাথী। ঐতিহাসিক ইবনে কাছীর এতে এতটুকু যোগ করেছেন।
আল্লাহর কসম! আমি তাদেরকে অন্যের হক দেবনা। তাদের অবস্থা দু ব্যক্তির মতই হতে পারে। হয়ত তারা সৎকার হবে এ অবস্থায় আল্লাহ সৎকর্ম পরয়াণদের হেফাজতকারী বন্ধু অথবা তারা অসৎ পথে চলবে এ অবস্থায় আমি তাদের সাহায্যকারী হতে চাই না। আমার জানা নেই, তাদের মৃত্যু কোথায় হবে। আমি কি তারে পাপকর্মে সাহায্য করার জন্য সম্পদ রেখে যাবো। আর মৃত্যুর পর তাদের অপকর্মে অংশগ্রহণ করব? না কখনও না।
এরপর তিনি তার সন্তানদেরকে ডেকে আনলেন, তাদের নিকট হতে তিনি বিদায় গ্রহণ করলেন। তাদের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করে তাদেরকে এ সব কথা বোঝালেন এবং অবশেষে বললেন, যাও আল্লাহ তোমারেদ নেগাহবান, তোমরা সুখ শান্তিতেই জীবন কাটাবে।
ইবনে আবদুল হাকাম বলেন, তাঁর অন্তিম সময়ে যখন তাঁর সন্তানদেরকে তার নিকট আনা হল, তখন তিন তাদেরকে দেখে কাঁগতে লাগলেন। সন্তানরাও কাঁদতে ছিল। আর বাস্তবিকই তখন ক্রন্দনের সময় ছিল। হযরত ওমর ইবনে আবদুল আজিজের অন্তিম সময় ঘনিয়ে আসছিল তখন তার স্ত্রী ফাতেমা ও শ্যালক মুসলিমা তাঁর পাশে উপবিষ্ট ছিলেন। তিনি তাদেরকে বললেন, তোমরা আমার নিকট হতে সরে যাও। কারণ আমার বিপুল সংখ্যক সৃষ্টিজীব এসে ভিড় করছে, তারা মানুষ অথবা জ্বিন কিছুই নয়।
মহান আল্লাহই জানেন, এরা কি আল্লাহর ফেরেস্তা না অন্য কোন অদৃষ্ট সৃষ্টি যারা হযরত ওমর ইবনে আবদুল আজিজের অন্তিম মুহূর্তে তার নিকট এসে ভীড় জমাচ্ছিলেন।
অতঃপর মুসলিমা এবং স্ত্রী ফাতেমা তাঁর কথা অনুযায়ী অন্য কক্ষে চলে গেলেন, সেখান হতে তারা শুনলেন, কে যেন পাঠ করতেছে- (আরবী******************)
অর্থাৎ যারা দুনিয়ার মান মর্যাদার কামনা করে না বিপর্য় ঘটাতে চায় না, তাদের জন্য ই আমরা সেই পরলৌকিক গৃহের ব্যবস্থা করব।
এরপর সে আওয়াজ স্তব্ধ হয়ে গেল। ফাতেমা, মুসলিমা ও অন্যান্য পরিচর্যাকারীরা কক্ষে প্রবেশ করে দেখলেন যে, মুসলিম বিশ্বের মহামানব পঞ্চম খলিফা, আবু বকর, ওমর, ওসমান ও আলী (রা)-এর সত্যিকার উত্তরসূরী এবং ইসলামী জীবন ব্যবস্থায় নব প্রাণ সৃষ্টিকারী হযরত ওমর ইবনে আবদুল আজিজ (রত) দুনিয়ার মায়া ত্যাগ করে স্বীয় প্রতিপালকের নিকট চলে গিয়েছেন।
বাস্তবিক তাঁর মৃত্যু ছিল পঞ্চম খলিফাযে রাশেদের মৃত্যু। তিনি ছিলেন বিশ্বে দ্বিতীয় ওমর । তিনি ছিলেন যুগের আবু বকর ও আলী। তিনি আজ দিয়ারে সামআনের নির্জন বস্তিতে মৃত্যুর কোলে গা ভাসিয়ে দিয়েছেন।
এ দিন ছিল ১০১ হিজরীর জুমার রাত্র। তখনও রজব মাসের পাঁচদিন অথবা দশ দিন বাকী। এ সময় তাঁর বয় হয়েছিল ৩৯ বা ৪০ বছর এক মাস। তিনি সর্বমোট দু’বছর ৫ মাস খেলাফতের পবিত্র দায়িত্ব পালন করেছেন।
বাস্তবিক পক্ষে তাঁর মৃত্যুতে মুসলিম বিশ্ব একজন সর্বগুণ সম্পন্ন আলেমকে হারালো। সমগ্র মুসলিম বিশ্বে শোকের ছায়া নেমে এলো। শুধু সিরিয়া নয়, মিশর, ইরাক, ইরান ও হেজাজসহ যেখানেই তাঁর মৃত্যুর খরব পৌঁছলে সর্বত্রই ক্রন্দনের রোল উঠল।
এমনকি রোমের ঈসায়ী সম্রাটও তাঁর মৃত্যু সংবাদ পেয়ে শোকে মূহ্যমান হয়ে পড়লেন; সিংহাসন ছেড়ে চাটাইতে এসে বসলেন, কেঁদে চোখের পানিতে বুক ভাসালেন। যেহেতু প্রতিবেশী রাষ্ট্রের একজন সৎশাসক দুনিয়া থেকে চির দিনের জন্য বিদায় গ্রহন করেছেন।
কবি কাছীর এই বিশ্ব শোকের চিত্রটি এঁকে শোক গাথা রচনা করেছেন- (আরবী************)
সকল লোকেরই তাঁর মৃত্যশোকে শোকাভিভত, প্রত্যেক ঘরেই ক্রন্দন ধ্বনী (আরবী**************)
তাঁর কর্মাবলী তাঁর জীবনকে বারবার ফিরিয়ে দেয় এবং তিনি কর্মাবলীর সাথে সাথে উজ্জল হয়ে উঠেন।
তাঁর শোকগাথা রচনা করে যুগশ্রেষ্ঠ কবি জারীর লিখেছিলেন- (আরবী***************)
তোমার শোকে সূর্য ম্লান সে আর চেহারা দেখায় না। তোমার শোকে ক্রন্দন করে চাঁদ, আর নিশির সেতারা।
বাস্তবিক সেই দিন সূর্য ছিল না, কারণ তার মৃত্যু কোন সাধারণ মানুষের মৃত্যু ছিল না। তার মৃত্যু ছিল এ উম্মতের মাহদী ও দিশারীর মৃত্যু।
— সমাপ্ত —