সামাজিক সম্পর্ক
ইসলাম সমাজের ব্যক্তিদের পারস্পরিক সম্পর্ককে দুটো ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত করেছে।
একটি হচ্ছে পারস্পরিক ভ্রাতৃত্বের সম্পর্ক। এ সম্পর্ক বিভিন্ন ব্যক্তির মধ্যে অত্যন্ত দৃঢ ও অবিচ্ছিন্ন বন্ধনের কাজ করে। আর দ্বিতীয়টি হচ্ছে অধিকার ও মান-মর্যাদা সংবরক্ষণ। প্রত্যেক ব্যক্তির রক্ত, মান-সম্মান ও ধন-মালের নিরাপত্তা ও সম্মানার্হতা। যেসব কথা ব্যবহার-আচরণ বা কাজ এই ভিত্তিদ্বয়কে ক্ষুণ্ণ বা ক্ষতিগ্রস্ত করে, খারাপভাবে প্রভাবিত করে তা ইসলামের দৃষ্টিতে হারাম। এ ক্ষতি বৈষয়িক দৃষ্টিতে হোক বা সাংস্কৃতিক দৃষ্টিতে, তাতে কোন পার্থক্য হয় না। তা যে ধরনের যতটা মাত্রারই হোক-না-কেন, সেই দৃষ্টিতে ততটা মাত্রায়ই তা হারাম হবে। নিম্নোদ্বৃত আয়াতে সেসব হারাম জিনিসের উল্লেখ করা হয়েছে, যা পারস্পরিক ভ্রাতৃত্ব ও মানবীয় মান-মর্যাদার পক্ষে ক্ষতিকরঃ ( আরবি*******************)
মুমিন পরস্পরের ভাই। অতএব আপন ভাইয়ের মধ্যে সন্ধি-সমঝোতা করিয়ে দাও। আর আল্লাহকে ভয় করো, যেন তোমাদের প্রতি দয়া করা যায়। হে ঈমানদার লোকেরা! না কোন পুরুষ অপর পুরুষদের অপমান সুচক ঠাট্টা-বিদ্রুপ করবে,- কেননা, তারাও তো তার তুলনায় ভাল হতে পারে! তোমরা পরস্পরকে কষ্ট বা দুঃখ দেবে না, পরস্পর খারাপ উপাধিতে ডাকবে না। ঈমান গ্রহণের পর ফাসিকী অত্যন্ত নিকৃষ্ট পর্যায়ের নাম। আর যারা তাওবা করে বিরত হবে না, তারাই জালিম।
হে ঈমানদার লোকেরা! অনেক ধরনের ভিত্তিহীন ধারণা থেকে দূরে থাক। কোন কোন ভিত্তিহীন ধারণা সুস্পষ্ট গুনাহ, আর তোমরা লোকদের দোষত্রুটি খোঁজ করে বেড়িও না, কেউ যেন কারো অনুপস্থিতিতে তার দোষ প্রচার না করে। তোমাদের কেউ কি তার মৃত ভাইর গোশত ভক্ষণ করা পছন্দ করবে? তোমরা তো তা ঘৃণাই কর। আর আল্লাহর তাকওয়া অবলম্বন কর। নিশ্চিত জানিও আল্লাহ্ বড়ই তাওবা কবুলকারী দয়াশীল। (সূরা হুজরাতঃ ১০-১২)
প্রথম আয়াতে আল্লাহ্ বলেছেন, মুমিনরা পরস্পর ভাই। এতে মানবীয় ভ্রাতৃত্বের সাথে সাথে দ্বীনী ভ্রাতৃত্বও বর্তমান। দুটো একসাথে একত্রিত ও সমম্বিত। এ ভাতৃত্বের দাবি হচ্ছে, তারা পরস্পর নিঃসম্পর্ক বা অপরিচিত হয়ে থাকবে না। পরস্পরের মধ্যে গভীর একাত্মতা থাকা একান্তই বাঞ্ছনীয়। পরস্পর বিচ্ছিন্ন নয়, ঘনিষ্ঠভাবে মিলিত হয়ে থাকবে। পরস্পর কোন শত্রুতা, হিংসা-বিদ্বেষ থাকবে না, থাকবে অকৃত্রিম ভালবাসা, দয়া-সহানুভূতি। পরস্পরের মধ্যে দ্বন্দ্ব ও মতপার্থক্য থাকবে না, সম্পূর্ণ একমত হয়ে কাজ করবে। হাদীসে তাই বলা হয়েছেঃ ( আরবি*******************)
তোমরা পরস্পর হিংসা-বিদ্বেষে লিপ্ত হবে না, কেউ কারো পিছনে পড়ে যাবে না- কেউ কারো দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে না। পারস্পরিক ক্রোধ ও অসন্তোষের প্রশ্রয় দেবে না; বরং পারস্পরিক আল্লাহর বান্দা ও ভাই হয়ে থাকবে।
মুসলমান ভাইর সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করবে না
এ কারণে কোন মুসলিম ভাইর প্রতি নির্মম ও পাষাণবৎ ব্যবহার করতে, বয়কট করতে ও তার প্রতি বিমুখ হয়ে থাকতে নিষেধ ও হারাম করা হয়েছে। দুজন মুসলমানের মধ্যে হিংসা-বিদ্বেষের সৃষ্টি হলে ক্রোধ দমনের জন্যে মাত্র তিনটি দিনের সময় দেয়া হয়েছে। অতঃপর পারস্পরিক সন্ধি সমঝোতা ও মিলমিশ সৃষ্টি ও ক্রোধ হিংসা সৃষ্টির কারণসমূহ দূর করার জন্যে চেষ্টা করা কর্তব্য। কুরআন মাজীদে মুমিন মুসলমানের গুণ স্বরূপ বলা হয়েছেঃ ( আরবি*******************)
মুমিনদের জন্যে অত্যন্ত নম্র বিনয়ী সহানুভূতি সম্পন্ন। (সূরা মায়িদাঃ ৫৪)
নবী করীম (সা) বলেছেনঃ ( আরবি*******************)
কোন মুসলমানের পক্ষে তার ভাইকে তিন দিনের অধিক সময়ের জন্যে সম্পর্কহীন করে রাখা হালাল বা জায়েয নয়। তিন দিন অতিবাহিত হয়ে গেলে তার সাথে তার সাক্ষাৎ করা ও তাকে সালাম দেয়া কর্তব্য। যদি সে সে সালামের জবাব দেয়, তাহলে দুজনই সাওয়াবে শরীক হলো। আর জবাব না দিলে সে-ই গুনাহগার হবে এবং সালামদাতা সম্পর্কচ্ছেদের গুনাহ হতে রক্ষা পেয়ে যাবে। (আবূ-দাউদ)
রক্ত সম্পর্কের আত্মীয়ের সাথে আত্মীয়তা রক্ষা করাকে ইসলাম ওয়াজিব ঘোষণা করেছেল। এ সম্পর্ক যত গভীর সেই অনুপাতে তা রক্ষা করার তাগিদও ততই বেশি ও বলিষ্ঠ। এ সম্পর্ক ছিন্ন করা কঠিনভাবে হারাম। আল্লাহ্ তা’আলা ইরশাদ করেছেনঃ ( আরবি*******************) এবং ভয় কর আল্লাহকে, যাঁর দোহাই দিয়ে তোমরা পরস্পরের কাছে নিজের হক বা অধিকারের দাবি কর। আর নিকটাত্মীয়তার সম্পর্ককেও ভয় কর-রক্ষা কর। নিঃসন্দেহে আল্লাহ্ তোমাদের পর্যবেক্ষণে রত। (আন-নিসাঃ ১)
এই নিকটাত্মীয়তার গুরুত্ব এবং আল্লহর কাছে তার মূল্য ও মর্যাদা বোঝাবার জন্যে রূপকভাবে বলেছেলঃ ( আরবি*******************) রেহম- রক্ত সম্পর্কের নিকটাত্মীয়তা আরশের সাথে ঝুলে থেকে বলেঃ যে আমাকে রক্ষা করল, আল্লাহও তাকে রক্ষা করবেন। আর যে আমাক ছিন্ন করল, আল্লাহও তাকে ছিন্ন করবেন। (বুখারী, মুসলিম)
বলেছেনঃ ( আরবি*******************)
(রক্ত সম্পর্ক) ছিন্নকারী কখনই বেহেশতে যাবে না। (বুখারী, মসলিম)
এ হাদীসটির ব্যাখ্যায় আলিমগণ দুটো কথা বলেছেন। একটি হচ্ছে রক্ত সম্পর্ক ছিন্নকারী, আর অপরটি হচ্ছে ডাকাত, ছিনতাইকারী- পথে-ঘাটে হত্যাকারী অর্থাৎ এ দুটো লোক একই পর্যায়ের অপরাধী
রক্ত সম্পর্কের ব্যাপারটি এরূপ নয় যে, একজন নিকটাত্মীয় অপর নিকটাত্মীয়ের সাথে সমতা আচরণ করবে। সে রক্ষা করলে তবে এ-ও রক্ষা করবে, সে ভাল ব্যবহার করলে এ-ও ভাল ব্যবহার করবে, এরূপ জেদাজেদি অবাঞ্ছনীয়। এটা তো স্বাভাবিক ব্যাপার। ওয়াজিব হচ্ছে, কেউ সম্পর্ক ছিন্ন করলেও সে তা রক্ষা করে চলবে। নবী করীম (সা) বলেছেনঃ (আরবি*******************) ছেলায়ে রেহমী রক্ষাকারী সে নয়, যে সমান সমান ব্যবহার করে। বরং ছেলায়ে রেহমী রক্ষাকারী হচ্ছে সে, যে তা ছিন্নকারীর সাথে তা রক্ষা করে। (বুখারী)
এ সম্পর্ক ছিন্নকরণ ও বয়কট যদি আল্লাহর জন্যে, আল্লাহর পথে এবং প্রকৃত সত্যের জন্যে না হয়, তাহলেই এ কথা। অন্যথায় ঈমানের দৃঢ়তা সাধনের বড় উপায় হচ্ছে, আল্লাহর জন্যে ভালবাসা, আল্লাহর কারণে হিংসা বিচ্ছেদ।
নবী করীম (সা) এবং তাঁর সাহাবিগণ তাবুক যুদ্ধে পিছনে পড়ে থাকা লোকদের সাথে পঞ্চাশ দিন সম্পর্কছিন্ন করে রেখেছিলেন। শেষ পর্যন্ত এ শেষোক্ত লোকদের জীবন অতিষ্ট হয়ে উঠল, প্রাণান্তকর অবস্থা দেখা দিল। কেউ তাদের সঙ্গে ওঠা-বসা করত না, কথা বলত না, সালামও দিত না। অতঃপর আল্লাহ্ তাদের তাওবা কবুল করার কথা বলে আয়াত নাযিল করেন।
নবী করীম (সা) তাঁর কোন কোন বেগমের সাথে চল্লিশ দিন পর্যন্ত সম্পর্ক ছিন্ন করে রেখেছিলেন। হযরত আবদুল্লাহ্ ইবনে উমর (রা) তার পুত্রের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করে রেখেছিলেন। শেষ পর্যন্ত সে মরেই গেল। তার কারণ ছিল এই যে, সে রাসূলে করীম (সা)-এর একটি হাদীসকে মোটেই আমল দেয়নি, যা তিনি রাসূল থেকে বর্ণনা করেছিলেন। সে হাদীসটিতে রাসূলে করীম (সা) মেয়েদেরা মসজিদে যাওয়া থেকে নিষেধ করেছিলেন। ( আরবি*******************)
কিন্তু এ পারস্পরিক দ্বন্দ্ব ও সম্পর্কচ্ছেদ যদি দুনিয়ার বৈষয়িক কোন কারণে হয়, নিতান্তই স্বার্থের দ্বন্দ্বের দরুন হয় তাহলে তা খুবই অকিঞ্চিৎকর জিনিস, একজন মুসলমান তার এক মুসলমান ভাইর সাথে কিভাবে দ্বন্দ্বে লিপ্ত হতে পারে, যখন তার ফলে আল্লাহর মাগফিরাত ও রহমত থেকে বঞ্চিত থাকার আশংকা রয়েছে? সহীহ হাদীসে বলা হয়েছেঃ ( আরবি*******************)
জান্নাতের দ্বার সোমবার ও বৃহস্পতিবার খুলে দেয়া হয়। অতঃপর আল্লাহ্ মাফ করেন এমন প্রত্যেক বান্দাকে, যে আল্লাহর সাথে একবিন্দু শিরক করে না। তবে সে ব্যক্তিকে ক্ষমা করেন না, যার মধ্যে ও তার ভাইর মধ্যে শত্রুতা ও হিংসা-বিদ্বেষ রয়েছে। তখন আল্লাহ্ বলেনঃ ওদের দুজনকে পরিহার কর, যতক্ষণ না তারা সংশোধিত হয়, ওদের দুজনকে পরিত্যাগ কর যতক্ষণ না তরা সন্ধি সমঝোতা করে নেয়, ওদের দুজনকে ছেড়ে দাও যতক্ষণ না তারা নিজেদের মধ্যে মিলমিশ করে নেয়। (মুসলিম)
আর যে লোকের ন্যায়সঙ্গত অধিকার রয়েছে তার ভাইর কাছে এসে মার্জনা চাইবে এবং তার কর্তব্য তাকে ক্ষমা করে দেয়া এবং ঝগড়া বিবাদ থেকে বিরত হওয়া। ক্ষমা চাইলে ও ওযর পেশ করলে তা প্রত্যাখ্যান করা হারাম। নবী করীম (সা) এরূপ ব্যক্তিকে এই বলে সতর্ক করে দিয়েছেন যে, কিয়ামতের দিন সে লোক তার সন্নিধানে হাওযে কাওসারে উপস্থিত হতে পারবে না। ( আরবি*******************)
পারস্পরিক সন্ধি সমঝোতাকরণ
দুই বিবাদমান ব্যক্তির কর্তব্য হচ্ছে, ভ্রাতৃসম্পর্কের দাবিতে তাদের পারস্পরিক বিবাদ বিসম্বাদ দূর করা ও সন্ধি-সমঝোতা করে নেয়া। এ যেমন সত্য, তেমনি এ ব্যাপারে সমাজেরও দায়িত্ব রয়েছে। কেননা ইসলামী সমাজ বলতে বোঝায় মানুষের পারস্পরিক সাহায্যকারী পরিপূরক মানব সমষ্টি। অতএব সমাজেরই দুই ব্যক্তিকে পরস্পর দ্বন্দ্বমান ও মারা-মারিতে লিপ্ত দেখবে অথচ সমাজ নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করবে, নিরাপদ দূরত্বে অবস্থান করবে, তা কল্পনাও করা যায় না। তা কোনক্রমেই জায়েয হতে পারে না। কেননা তাহলে তো তারা দুজন ঝগড়া-বিবাদের আগুনে দগ্ধ হতে থাকবে এবং সে আগুন ক্রমশ সম্প্রসারিত হয়ে সমগ্র সমাজটিকে জ্বালিয়ে ভস্ম করে দেবে।
বরং সুস্থ অভিমতসম্পন্ন ও প্রভাব প্রতিপত্তিসম্পন্ন লোকদের কর্তব্য হচ্ছে নিছক সত্য ও ইনসাফের খাতিরে সে বিবাদমান ব্যক্তিদ্বয়ের মধ্যে মীমাংসা করা ও মিলমিশ সৃষ্টির উদ্দেশ্যে হস্তক্ষেপ করা, চেষ্টা প্রচেষ্টা চালানো এবং তাদের লালসার দাসত্ব করা থেকে দূরে সরে থাকা। আল্লাহ্ তা’আলা এই নির্দেশ দিয়েছেনঃ ( আরবি*******************)
তোমরা তোমাদের ভাইয়ের মধ্যে সন্ধি-সমঝোতা করে দাও এবং তোমরা আল্লাহকে ভয় কর। তাহলে আশা করা যায় যে, তোমাদের প্রতি রহমত করা হবে। (সূরা হুজরাতঃ ১০)
এ সংশোধন ও মিলমিশ বিধানের উচ্চ মর্যাদা এবং পারস্পরিক বিবাদ বিসম্বাদের খারাপ পরিণতির কথা নবী করীম (সা) নিজেই বিশ্লেষণ করে বলেছেনঃ ( আরবি*******************)
নফল নমায, রোযা ও সাদকার তুলনায়ও অধিক উত্তম কাজের কথা কি আমি তোমাদের বলব? সাহাবিগণ বললেন, হ্যাঁ রাসূল, বলুল। বললেন, তা হচ্ছে পারস্পরিক সংশোধন ও মিলমিশ বিধান। কেননা পারস্পরিক বিবাদ-বিসম্বাদ মুণ্ডনকারী জিনিস। আমি বলি না যে, তা চুল মুণ্ডন করে বরং বলি, তা দ্বীনকেই নির্মূল করবে।
অন্যদের বিদ্রুপ করা ঠিক নয়
পূর্বে উদ্ধৃত আয়াতে আল্লাহ্ তা’আলা এমন সব কাজকেই হারাম ঘোষণা করেছেন, যা পারস্পরিক ভ্রাতৃত্ব সম্পর্ককে বিনষ্ট করে এবং যা মানুষের মর্যাদা হানিকর।
এ পর্যায়ের প্রথম জিনিস হচ্ছে লোকদের বিদ্রুপ অপমান করা, কাউকে হীন করতে চেষ্টা করা। অতএব আল্লাহকে চিনে-জানে এবং পরকালের মুক্তির লক্ষ্যে এমন কোন ঈমানদার ব্যক্তির পক্ষেই কোন একজন লোককেও ঠাট্টা-বিদ্রূপ অপমান লাঞ্ছিত করতে চাওয়া বা করা, কাউকে তিরষ্কার-মন্দ বলার লক্ষ্যে পরিণত করা এবং দিন-রাত তাকে জ্বালাতন করা কিছুতেই জায়েয হতে পারে না। কেননা এ কাজ যে করে তার মধ্যে একটা প্রচ্ছন্ন আত্মম্ভরিতা-অন্যদের তুলনায় নিজেকে বড় মনে করার হীন মানসিকতা রয়েছে বলে মনে করা যেতে পারে। এ লোক আল্লাহর কাছে ভালত্বের মানদণ্ড কি তা আদৌ জানে না। এ জন্যেই আল্লাহ্ তা’আলা বলেছেনঃ ( আরবি*******************)
কোন লোক অপর কোন লোককে ঠাট্টা-বিদ্রূপ-অপমান করবে না। কেননা তারা তাদের চাইতে উত্তম হতে পারে। তেমনি কোন মেয়ে অপর মেয়েদের ঠাট্টা-বিদ্রূপ অপমান করবে না, কেননা তারাও তাদের তুলনায় ভাল হতে পারে।
বস্তুত আল্লাহর কাছে ভালত্বের মানদণ্ড ঈমান, একনিষ্টতা ও আল্লাহর সাথে ভাল সম্পর্ক- এ নিয়ে গঠিত। আকার-আকৃতি, দেহ-আবয়ব, মান-সম্মান ও ধন-দৌলতের ওপর তা ভিত্তিশীল নয়। হাদীসে বলা হয়েছেঃ ( আরবি*******************)
আল্লহ্ তোমাদের আকার-আকৃতি ও ধনমালের দিকে তাকান না, তার কোন গুরুত্ব দেন না। তিনি দেখেন তোমাদের হৃদয় ও আমলের দিকে- তার কাছে এরই গুরুত্ব রয়েছে।
এমতাবস্থায় কোন পুরুষ কি অপর পুরুষকে এবং কোন নারী কি অপর নারীকে দৈহিক গঠন, আঙ্গিক ত্রুটি-কমতি কিংবা দারিদ্র্য ও অসচ্ছলতার দরুন ঠাট্টা-বিদ্রূপ-অপমান করতে পারে ? করা কি কোনক্রমে জায়েয হতে পারে ?
হাদীসে উদ্ধৃত হয়েছে, হযরত আবদুল্লাহ্ ইবনে মাসউদ (রা)-এর নলার কাপড় খুলে গেলে দেখা গেল তা খুবই সরু পাতলা। উপস্থিত কেউ কেউ তা দেখে বিদ্রূপের হাসি হেসে উঠল। তখন নবী করীম (সা) বললেনঃ ( আরবি*******************)
তোমরা ওর হালকা-পাতলা-সরু পায়ের নলা দেখে হাসছ? যার হাতে আমার প্রাণ তাঁর নামের শপথ, এ দুইখানি পা আল্লাহর দাড়ি-পাল্লায় ওহুদ পর্বতের চাইতেও অধিক ভারী।
অপরাধী মুশরিকরা মুমিন মুসলমানকে কি ভাবে ঠাট্টা-বিদ্রূপ-অপমান করত, বিশেষ করে তাদের মধ্যকার বিলাল ও আম্মারের ন্যায় দুর্বল লোকদের, তার বিবরণ কুরআন মজীদে দেয়া হয়েছে। কিয়ামতের দিন পাল্লা কিভাবে উল্টে যাবে এবং আজকের ঠাট্টা-বিদ্রূপ-অপমানকারীরাই যে সেদিন ঠাট্টা-বিদ্রূপের পাত্র হবে, তাও বলে দিয়েছে। বলা হয়েছেঃ ( আরবি*******************)
যারা অপরাধী তারা ঈমানদার লোকদের দেখে ঠাট্টা-বিদ্রূপের হাঁসি হাসত। তাদের কাছে গেলে তারা পরস্পরকে ইঙ্গিত-ইশারা করত। আর যখন নিজেদের ঘরের লোকদের কাছে ফিরে যেত, তখন খুব তৃপ্তি ও সার্থকতা প্রকাশ করত। তাদের দেখতে পেলে তারা বলত, এরা সব পথভ্রষ্ট লোক। অথচ তাদের ওপর এদেরকে রক্ষাকারী করে পাঠান হয়নি। তাই আজকের দিনে ঈমানদার লোকেরা কাফিরদের প্রতি ঠাট্টা-বিদ্রূপের হাসি হাসবে।
এ আয়াতের প্রথমাংশের কথায়ই মেয়েদের পরস্পরে ঠাট্টা-বিদ্রূপ-অপমান করার নিষেধ শামিল রেয়েছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও তাদের সম্পর্কে স্বতন্ত্রভাবে স্পষ্ট ভাষায় বলার প্রয়োজন মনে করা হয়েছে এবং বলা হয়েছে যে, কোন মেয়েলোক যেন অপর মেয়েলোকদের ঠাট্টা-বিদ্রূপ-অপমান না করে। তার কারণ এই যে, মেয়েদের পরস্পরের এ কাজ খুবই জঘন্য ও বীভৎস চরিত্র ও মন-মানসিকতার পরিচায়ক এবং তাদের মধ্যেই এটা ব্যাপক ও প্রকট লক্ষ্য করা যায়।
দুর্নাম করা, দোষী করা
এ পর্যায়ের দ্বিতীয় নিষিদ্ধ কাজ হচ্ছে অন্য লোকদের দুর্নাম করা, দোষী করা। যে লোক অন্যদের দুর্নাম করে, দোষী করে, সে যেন তাদের তীর বা তরবারির আঘাতে আহত ও জখমি করে। কিন্তু মুখের কথায় আঘাত আরও মারাত্মক। আরবী কবিতায় বলা হয়েছেঃ ( আরবি*******************)
লেজা-বল্লমের ক্ষত তো শুকিয়ে ভাল হেয়ে যায়, কিন্তু মুখের কথার আঘাত কখনই সারে না।
আয়াতে যেভাবে শব্দটি বলা হয়েছে, তা আল্লাহর ওহীর বিশেষত্ব বৈ কি। বলা হয়েছেঃ ( আরবি*******************)-তোমরা নিজেদের আহত, ক্ষত করো না।
আর্থাৎ তোমরা পরস্পরকে আহত ক্ষত-বিক্ষত করো না। এ থেকে স্পষ্ট বোঝা যায়, কুরআন মুসলিম সমাজকে ‘এক অখণ্ড ব্যক্তিত্ব’ মনে করে। কেননা তারা সকলেই পরস্পরের জন্যে দায়িত্বশীল, পরিপূরক। এক্ষণে একজন যদি তার ভাইকে আহত করে, তাহলে প্রকৃতপক্ষে সে তার নিজেকেই আহত ও ক্ষত-বিক্ষত করে।
খারাপ উপাধিতে ডাকা
অন্যকে ক্ষত-বিক্ষত করা হারাম হওয়ার সাথে সাথে পরস্পর খারাপ উপাধিতে ডাকাও হারাম। অন্যকে এমন শব্দে বা নামে ডাকা যা তার খুবরাপ লাগে, সে তা অপছন্দ করে। কেননা তাতে তাকে অপমান ও বিদ্রূপ করা হয় এবং ক্ষত-বিক্ষত করা হয়। তার অন্তরে আঘাত দেয়া হয়। কিন্তু কোন মানুষেরই উচিত নয় তার কোন ভাইকে এভাবে কষ্ট দেয়া। এতে করে মানুষের মন-মেজাজ খারাপ হয়ে যায়। ভ্রাতৃত্বের সীমা লংঘন করা হয়। সাধারণ সৌজন্য ও রুচির পরিপন্থী এ কাজ।
খারাপ ধারণা
ইসলাম চায় মুসলিম সমাজের ব্যক্তিগণ পরস্পরের প্রতি পরিচ্ছন্ন, নির্মল-নির্দোষ মন-মানসিকতা নিয়ে বসবাস করুক। পরস্পরের প্রতি পরম আস্থা ও নির্ভরতা স্থিতিশীল হোক। পরস্পরের প্রতি কোনরূপ সন্দেহ অনাস্থা ও অবিশ্বাস পোষণ না করুক। কেউ কারো প্রতি যেন খারাপ ধারণা না রাখে, মিথ্যা দোষারোপ না করে। এ কারণ পূর্বোদ্ধৃত আয়াতে চতুর্থ নিষিদ্ধ-হারাম কাজ হিসেবে এই কথার উল্লেখ করা হয়েছে। কেননা ইসলাম কোন অবস্থায়ই মানুষের মান-মর্যাদার ক্ষুণ্ণতা বরদাশত করতে প্রস্তুত নয়। বলা হয়েছেঃ ( আরবি*******************)
হে ঈমানদার লোকেরা, তোমরা লোকদের প্রতি বহু ধরনের ধারণা পোষণ এড়িয়ে চল। কেননা কোন কোন ধারণা গুনাহ হয়ে থাকে। (সূরা হুজরাতঃ ১২)
বলা বাহুল্য, ধারণা বলতে এখানে খারাপ ধারণা পোষণের কথাই বলা হয়েছে।
অতএব কোন মুসলমানেরই তার মুসলিম ভাই সম্পর্কে খারাপ ধারণা পোষণ করা উচিত নয়, যথক্ষণ না অকাট্য কোন প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে।
মানুষ সম্পর্কে মৌলিকভাবেই ধরে নিতে হবে যে, তারা নির্দোষ। খারাপ ধারণার ওয়াসওয়াসা নির্দোষ মানুষকে দোষী সাব্যস্ত করবে, তা কিছুতেই উচিত নয়। নবী করীম (সা) তাই বলেছেনঃ ( আরবি*******************)
লোকদের সম্পর্কে কু-ধারণা থেকে দূরে থাক। কেননা কুধারণা অত্যন্ত মিথ্যা কথা।
একথা ঠিক যে, মানুষ মানবীয় দুর্বলতার কারণে কুধারণা ইত্যাদি থেকে অনেক সময় নিজেকে দূরে রাখতে সমর্থ হয় না। কোন কোন লোক সম্পর্কে তাদের মনে সন্দেহ জেগে উঠে। বিশেষ করে যাদের সাথে সম্পর্ক খারাপ হয়ে গেছে তাদের বিষয়ে। কিন্তু মুসলমান মাত্রেরেই কর্তব্য সেই কু-ধারণার কাছে নতি স্বীকার না করা, মানে তাকে স্থান না দেয়া এবং তার পিছনে ছুটে না বেড়ান। এ পর্যায়েও হাদীস বর্ণিত হয়েছেঃ ( আরবি*******************)
তোমার মনে কু-ধারণার সৃষ্টি হলে তুমি তাকে সত্য মনে করে নিও না।
দোষ খুঁজে বেড়ান
অন্য লোকদের প্রতি অনাস্থা মানুষকে একটা গোপন মানসিক অবস্থার দিকে ঠেলে নেয়। আর তা হচ্ছে কু-ধারণা পোষণ। তখন সে একটা বাহ্যিক দৈহিক তৎপরতায় লিপ্ত হয়। সেটি হচ্ছে দোষ খুঁজে বেড়ান। অথচ ইসলাম মানব মসাজকে এক সাথে অন্তর-বাহির উভয় দিক দেয়ে পরিছন্ন ও নির্মল পরিবেশের মাধ্যে রাখতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ।
এ কারণে কু-ধারণা পোষণ করতে নিষেধ করার সাথে সাথে পরের দোষ খুঁজে বেড়ান থেকেও নিষেধ করেছেন। কেননা এ কু-ধারণাই দোষ খুঁজে বেড়ানর মূল কারণ হয়ে থাকে।
বস্তুত প্রতিটি মানুষের একটা সম্মান ও মর্যাদা রয়েছে। তার দোষ খুঁজে বেরিয়ে সম্মান মর্যাদার সে আচরণ ছিন্ন করা এবং তার লুকিয়ে থাকা বিষয়াদি জনসমাজে উন্মুক্ত ও উলঙ্গ করে দেয়া কিছুতেই জায়েয হতে পারে না। কেউ নিজস্বভাবে কোন দোষ বা পাপ কাজেই লিপ্ত থাক না কেন। তা যতক্ষণ গোপন থাকছে, ততক্ষণ কারো উদ্যোগী হয়ে তা প্রকাশ করে দেয়া সম্পূর্ণ অনুচিত ও অবাঞ্ছনীয় কাজ।
হযরত উকবা ইবনে আমের (রা)-এর দরবারী লেখক আবুল হায়সাম বলেন, আমি উকবা ইবনে আমেরকে বললামঃ আমার কিছু সংখ্যক প্রতিবেশী রয়েছে, তারা মদ্য পান করে, আমি পুলিশ ডেকে ওদের ধরিয়ে দিতে চাই। তখন তিনি বললেনঃ না তা করো না। তাদের বুঝাও, উপদেশ দাও, নসীহত কর। বললঃ আমি তো ওদের অনেক নিষেধ করেছি কিন্তু ওরা শুনছে না। এমতাবস্থায় পুলিশ ডেকে ওদের ধরিয়ে দেয়া ছাড়া আর কি করা যেতে পারে? তিনি বললেনঃ না, তোমার জন্যে আফসোস! তুমি তা করতে যেও না। আমি রাসূলে করীম (সা)-কে বলতে শুনেছিঃ ( আরবি*******************)
যে লোক কারো গোপন কথা গোপন রাখল- প্রকাশ করে দিল না, সে যেন কোন জীবন্ত প্রোথিতকে তার কবরে জীবিত করে দিল। (আবূ দাঊদ, নিসারী, ইবনে মাযাহ)
লোকদের গোপন দোষ খুঁজে বেড়ানকে নবী করীম (সা) মুনাফিকদের খাসলাতের মধ্যে গণ্য করেছে। আর মুনাফিক তারা, যারা মুখে বলে ঈমান এনেছি, কিন্তু প্রকৃতপক্ষে তাদের অন্তর ঈমান আনেনি। নবী করীম (সা) লোকদের সামনেই এ লোকদের কঠোর ভাষায় সমালোচনা করেছেন। হযরত ইবনে উমর (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ নবী করীম (সা) মিম্বারের ওপর দাঁড়িয়ে উচ্চতর কণ্ঠে ডাক দিয়ে বললেনঃ ( আরবি*******************)
হে সেসব লোক- যারা মুখে ঈমান ও ইসলাম কবুল করেছে, কিন্তু তাদের অন্তর পর্যন্ত ঈমান পৌঁছাতে পারে নি। তোমরা মুসলমানদের কষ্ট দিও না। এবং তদের গোপন দোষ খুঁজে বেড়িও না। কেননা যে লোক তার মুসলিম ভাইয়ের গোপন দোষ খুঁজে বেড়ায়, আল্লাহ্ তার দোষ খুঁজে বেড়াবেন। আর আল্লাহ্ যার গোপন দোষ খুঁজবেন তাকে তিনি লজ্জিত অপমানিত করবেন যদিও সে তার ঘরের কোণে বসে থাকে। (তিরমিযী, ইবনে মাযাহ)
লোকদের মান-মর্যাদার পূর্ণ সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা দানের উদ্দেশ্যেই নবী করীম (সা) কারো ঘরের লোকদের অনুমতি ব্যতিরেকে প্রবেশ করাকে কঠোরভাবে হারাম করে দিয়েছেন। এ জন্যে ঘরের লোকদের তরফ থেকে যদি কোন প্রতিঘাত আসে, তাহলে কোন অপরাধ হবে না বলে জানিয়েছে। বলেছেনঃ ( আরবি*******************)
যে লোক অপর কারো ঘরের ভিতরে উঁকি দিল তাদের অনুমতি ছাড়াই, ঘরের লোকদের জন্যে তার চক্ষু ফুটো করে দেয়া সম্পূর্ণ হালাল হয়ে গেছে।
ঘরের মধ্যে বসে লোকদের বলা কথাবার্তা তাদের অবহিত ও অনুমতি ছাড়া অপর লোকদের শোনা হারাম ঘোষণা করা হয়েছে। নবী করীম (সা) বলেছেনঃ ( আরবি*******************)
যে লোক অন্য লোকদের কথাবার্তা চুরি করে শুনবে- সেই লোকেরা কিন্তু চায় না যে, তাদের কথা কেউ লকিয়ে থেকে শুনুক- কিয়ামতের দিন তার দুই কানে গলিত সীসা ঢেলে দেয়া হবে। (বুখারী)
কেউ যদি কারো সাথে সাক্ষাত করার উদ্দেশ্যে তার বাড়িতে গমন করে, তখন তার অনুমতি ছাড়া ও সালাম করা ছাড়াই ঘরের মধ্যে ঢুকে পড়া সম্পর্ণ হারাম। সে জন্যে তাকে প্রথমে সালাম করতে হবে ও প্রবেশের অনুমতি চাইতে হবে। এইটা ওয়াজিব। ইরশাদ হয়েছেঃ ( আরবি*******************)
হে ঈমানদার লোকেরা! তোমরা অন্যদের ঘরে প্রবেশ করবে না যতক্ষণ না অনুমতি চাইবে ও ঘরের লোকদের প্রতি সালাম করবে। তোমাদের জন্যে এটাই কল্যাণকর। সম্ভবত তোমরা মনে রাখবে। সে ঘরে যদি কাউকে না-ই পাও, তাহলে তাতে তোমরা প্রবেশ করবে না, যতক্ষণ না তোমাদের জন্যে পবিত্রতর কর্মনীতি। তোমরা যা কিছু কর সে বিষয়ে আল্লাহ্ পুরাপুরি অবহিত। (সূরা নূর ২৭-২৮)
হাদীসে উদ্ধৃত হয়েছেঃ ( আরবি*******************)
যে লোকই কোন গোপনীয় জিনিস উন্মুক্ত করবে এবং অনুমতি দেয়ার আগেই তার দৃষ্টি নিক্ষেপ করল, তাহলে সে এমন সীমার মধ্যে প্রবেশ করল, যে সীমার মধ্যে প্রবেশ করা তার জন্যে হালাল নয়। (আহমদ, তিরমমিযী)
পরের দোষ খুঁজে বেড়ানো- লুকানো ত্রুটি আতিপাতি করে খুঁজে বের করা সাধারণভাবে সকলের জন্যেই হারাম। শসক-প্রশাসক এবং শাসিত জনগণ সকলের জন্যেই এই নিষেধ। কেউই এ থেকে মুক্ত নয়, কারো জন্যেই তার অনুমতি নেই। হযরত মুআবিয়া (রা) রাসূলে করীম (সা) থেকে বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেছেনঃ ( আরবি*******************)
তুমি যদি লোকদের গোপন দোষ তালাশ করে বেড়াও, তাহলে তুমি তাদের বিপর্যস্ত করবে কিংবা বিপর্যয়ের কাছে পৌঁছে দেবে। (আবূ দাউদ, ইবনে মাযাহ)
তিনি আরও বলেছেনঃ ( আরবি*******************)
শসক বা প্রশাসক যখন লোকদের মধ্যে সন্দেহ সংশয়ের কথাবার্তা খুঁজে বেড়াতে শুরু করে, তখন সে তাদের বিপর্যস্ত করে দেয়। (আবূ দাউদ)
গীবত
উপরিউক্ত আয়াত ষষ্ঠ পর্যায়ে যে জিনিস হারাম করে দিয়েছে, তা হচ্ছে গীবত। আয়াতাংশ হচ্ছেঃ ( আরবি*******************)
তোমরা যেন পরস্পরের গীবত করো না। (সূরা হুযরাতঃ ২১)
নবী করীম (সা) সওয়াল-জবাব পন্থায় তাঁর সাহাবীদের ‘গীবত’ শব্দের সংজ্ঞা বুঝিয়ে দিয়েছিলেন। তিনি তাদের লক্ষ্য করে বললেনঃ ( আরবি*******************) – তোমরা কি জান, গীবত কাকে বলে?
সাহাবিগণ বললেনঃ আল্লাহ্ এবং তাঁর রাসূলই ভাল জানে। তখন তিনি বললেনঃ ( আরবি*******************)
তোমার ভাইয়ের উল্লেখ এমনভাবে করা, যা সে নিজে পছন্দ করে না- তাই হচ্ছে গীবত। জিজ্ঞেস করা হলো, ইয়া রাসূল, আমি যা বলি তা যদি আমার সেই ভাইয়ের মধ্যে প্রকৃতপক্ষে থেকে থাকে, তাহলেও কি তা বলা গীবত হবে। বললেনঃ তুমি যা বল তা যদি তার মধ্যে থেকেই থাকে, তবেই তো গীবত হবে। আর যদি নাই থাকে, তাহলে তো বহতান- মিথ্যা দোষারোপ হবে। (মুসলিম, আবূ দাউদ, তিরমিযী, নাসায়ী)
মানুষ পছন্দ করে না- এমন কথা তার জন্য তার অনুপস্থিতিতে বলা- এ পর্যায়ে তার দৈহিক গঠন আকার-আকৃতি, চরিত্র, কাজ-কর্ম, বংশ ও তার সঙ্গে জড়িত সমস্ত বিষয়ই এর অন্তর্ভুক্ত। হযরত আয়েশা (রা) বলেছেনঃ ( আরবি*******************)
আমি রাসূলে করীম (সা)-কে বললামঃ আপনার বেগম সাফিয়ার খাঁটো হওয়াটাই যথেষ্ট। তখন নবী করীম (সা) বললেনঃ তুমি এমন একটা কথা বললে, যদি তা সমুদ্রের পানির সাথ মিলেয়ে দেয়া হয়, তাহলে সে পানির রং বদলে যাবে। (আবূ দাঊদ, তিরমিযী, বায়হাকী)
আসলে গীবত দ্বারা অন্যদের হীন পতিপন্ন করা কুপ্রবৃত্তিরই প্রকাশ ঘটে। তাদের অনুপস্থিতির সুযোগে তাদের মান-সম্মান-মর্যাদাকে ক্ষণ্ণ করার প্রবল ইচ্ছাই কাজ করে। তা গীবতকারীর হীন মন-মানসিকতা, নীচতা ও কুপ্রবৃত্তির পরিচয় দিয়ে দেয়। কেননা তা পিছন থেকে আঘাত হানার শামিল। তা প্রমাণ করে যে, গীবতকারীর নিজের কোন কাজ নেই। সে-ই তো গীবত করার কাজে পটুতা দেখায়। গীবত প্রবণতা সমাজ বিধ্বংসী কার্যক্রম, কেননা যারা গীবত করতে অভ্যস্ত তাদের জিহবার তরবারির আঘাত থেকে খুব কম লোকই রক্ষা পেতে পারে।
এমতাবস্থায় কুরআন মজীদে যদি তার বীভৎস ও জঘন্য রূপ উদঘাটিত করে থাকে এবং এমনভাবে তার চিত্র উপস্থাপিত করে থাকে, যা মানুষের মনে তীব্র ঘৃণার উদ্রেক করে, তাহলে তাতে বিস্ময়ের কোন কারণ নেই। সে চিত্রটি এইঃ ( আরবি*******************)
তোমাদের কেউ যেন অপর কারো গীবত না করে। তোমাদের কেউ কি পছন্দ করে তার মৃত ভাইয়ের গোশত খাওয়া?- তা তোমরা অপন্দ করই।
বস্তুত মানুষ মানুষের গোশত খাওয় আদৌ পছন্দ করতে পারে না। তাহলে নিজ ভাইয়ের গোশত খাওয়া- মৃত ভাইয়ের গোশাত খাওয়া কি করে তার পক্ষে সম্ভব হতে পারে?
নবী করীম (সা) যখনই সুযোগ, ক্ষেত্র ও পরিবেশ পেতেন, গীবতের এই চিত্র তখনই তিনি উদঘাটিত করতেন এবং লোকদের মনে এই বীভৎস ছবি সর্বদা জাগ্রত থাক, তাই তিনি চইতেন।
হযরত ইবনে মাসউদ (রা) বলেছেনঃ ( আরবি*******************)
আমরা রাসূলে করীম (সা)-এর দরবারে উপস্থিত ছিলাম। এক ব্যক্তি তখন মজলিসের বাইরে চলে গেল। তখন এক ব্যক্তি সে লোকটি সম্পর্কে অপমানকর কথা বলল। তখন নবী করীম (সা) এই ব্যক্তিকে বললেনঃ তুমি খেলাল কর। লোকটি বললঃ আমি কেন খেলাল করব, আমিতো কোন গোশত খাইনি? নবী করীম (সা) বললেনঃ তুমি এইমাত্র তোমান ভইয়ের গোশত খেয়েছ।
হযরত জাবির (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ ( আরবি*******************)
আমরা নবী করীম (সা)-এর কাছে উপস্থিত ছিলাম। তখন খুব দুর্গন্ধময় বাতাস প্রবাহিত হলো। নবী করীম (সা) বললেনঃ তোমরা জান, এইটা কিসের বাতাস?…এইটা হচ্ছে মুমিনদের যারা গীবত করে, তাদের বাতাস। (আহমদ)
গীবতের অনুমতি-সীমা
উপরে উদ্ধৃত সব কুরআনের আয়াত ও হাদীসে অকাট্যভাবে প্রমাণ করে যে, ইসলামে ব্যক্তির মর্যাদা অত্যন্ত পবিত্র ও সুরক্ষিত।
কিন্তু ইসলামে বিশেষজ্ঞদের মতে গীবতের কয়েকটি দিক হারাম থেকে ব্যতিক্রম। প্রয়োজনের তাগিদে যেখানে গীবত না করে কোন উপায় থাকে না, তা হচ্ছে এই ব্যতিক্রমের দিক এবং এই ব্যতিক্রমের সুযোগ প্রয়োজনের দরুনই ব্যবহার করা যেতে পারে।
যে মজলুম জালিমের বিরুদ্ধে ফরিয়াদ করে, সে জালিমের এমন সব কথা প্রকাশ করে যা তার খারাপ লাগলেও সে কথাগুলো সবই সত্য এবং তার সে অধিকারও আছে। এই জুলুমের ক্ষেত্রে ফরিয়াদ করার জন্যে কারো বিরুদ্ধে বলার প্রয়োজন দেখা দিলে তা অবশ্যই বলতে হবে। আল্লাহ্ তা’আলা ইরশাদ করেছেনঃ ( আরবি*******************)
আল্লাহ্ ত’আলা খারাপ ধরনের কথা প্রকাশ ও প্রচার করা আদৌ পছন্দ করেন না, তবে যার ওপর জুলুম হয়েছে, তার তা করা স্বতন্ত্র ব্যাপার। আর আল্লাহ্ সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞাত। (সূরা আন-নিসাঃ ১৪৮)
এক ব্যক্তি অপর এক নির্দিষ্ট ব্যক্তির সম্পর্কে জানতে চায় এই উদ্দেশ্যে যে, লোকটির ভাল চরিত্র সম্পর্কে জানতে পারলে তার সাথে ব্যবসায়ে শরীক হবে অথবা কেউ তার কন্যা বিয়ে দেবে, প্রস্তাবক ছেলে সম্পর্কে সে জানতে চায়। এ সব ক্ষেত্রে একদিকে থাকে লোকদেরকে সঠিক কথা ও প্রকৃত অবস্থা জানানর দায়িত্ব আর অপরদিকে থাকে অনুপস্থিত ব্যক্তির ইজজত-আবরু রক্ষার কর্তব্য। এ দায়িত্ব ও কর্তব্যের মধ্যে প্রবল বিরোধিতা ও সংঘর্ষ বিদ্যমান। কিন্তু প্রথম দায়িত্ব যেহেতু সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ ও পবিত্র, সেই কারণে সেটির অগ্রাধিকার অবশ্য স্বীকার করতে হবে। ফাতিমা বিনতে কাইস নবী করীম (সা)-কে তার বিয়ের জন্যে আসা দুটি প্রস্তাব সম্পর্কে অবহিত করে কোনটি গ্রহণ করবেন তার পরামর্শ চাইলেন। তখন তিনি তার একজন সম্পর্কে বললেনঃ এ লোকটি স্ত্রীকে খুব মারধোর করে। সে তার লাঠি কাঁধের ওপর থেকে কখনই নামায় না।
এ ব্যতিক্রমের মধ্যেই রয়েছে অন্যায় ও পাপকে বদলে দেয়ার উদ্দেশ্যে কথা বলা। হাদীস অনুযায়ীই এটা কর্তব্য।
কোন লোকের পরিচিতিই যদি হয় এমন নামে, যা সে নিজে পছন্দ করে না অথচ সেই নাম না বললে তাকে চেনাই যায় না- যেমন আরাজ- ‘ল্যংগরা’, আমাশ (দুর্বল দৃষ্টি শক্তিসম্পন্ন) বা অমুক মেয়ে লোকের পুত্র ইত্যাদি। তাই এ পরিচিতির উদ্দেশ্যেই তা বলতে হবে। সাক্ষী, হাদীস বর্ণনাকারী ও খবরদাতাদের জেরা করা- তাদের চারিত্রিক দোষ-গুণ আলোচনা করাও এ পর্যায়েরই কাজ।
এ পর্যায়ে ‘গীবত’ জায়েয হওয়ার দুটি ভিত্তি রয়েছেঃ
একটি, প্রয়োজন; দ্বিতীয়, নিয়ত- মনোভাব। অনুপস্থিত ব্যক্তি তার অসন্তুষ্টির বিষয়ে উল্লেখ করার প্রয়োজন তীব্র হয়ে দেখা না দেয়া পর্যন্ত এ নিষিদ্ধ ক্ষেত্রে কারোরই পদাচারণা করা উচিত নয়। যদি ইশারা-ইঙ্গিতে বললে প্রয়োজন মিটে যায়, তাহলে সুস্পষ্ট করে বলা থেকে বিরত থাকতে হবে। অথবা নির্দিষ্ট ব্যক্তির কথা না বলে সাধারণ ভাবে কথাটি বলা যেতে পারে। যেমন জিজ্ঞেস করার একটা ধরনঃ এমন ব্যক্তি সম্পর্কে আপনার বক্তব্য কি, যে এই এই কাজ করে? সেখানে ‘অমুকের পুত্র অমুকে’ বলা উচিত নয়। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির মধ্যে আছে এমন বিষয়ে বলতে গেলে শর্ত প্রযোজ্য। কিন্তু তার মধ্যে নেই তা-ই যদি বলা হয়, তাহলে তা হবে সম্পূর্ণ মিথ্যা দোষারোপ এবং তা সম্পূর্ণ হারাম।
নিয়ত, এটাই হচ্ছে এ পর্যায়ে সব ব্যাপারের চূড়ান্ত ফয়সালাকারী ব্যাপার। কি কারণে সে কথা বলছে, তা অন্যদের অপেক্ষা সে নিজেই ভাল জানেন। এ নিয়তের ভিত্তিতেই গীবত সমালোচনা, উপদেশ এবং দোষ প্রচার করা প্রভৃতির মধ্যে পার্থক্য করা সম্ভব। আর এও সত্য যে, মুমিন তার নিজের মনোভাব সম্পর্কে নিজেই খুব কড়াভাবে হিসেব-নিকেশ করতে পারে এবং করেও থাকে।
ইসলামের দৃষ্টিতে এটাও নিশ্চিত কথা যে, গীবত যে শোনে সেও গীবত কার্যে শরীক মনে করতে হবে। আর প্রত্যেকেরই কর্তব্য তার ভাইয়ের অনুপস্থিতিতে তার সাহায্য করা, তর পক্ষে কথা বলা। হাদীসে বলা হয়েছেঃ ( আরবি*******************)
যে লোক তার ভাইয়ের অনুপস্থিতিতে তার ইজ্জত সংরক্ষণ করল তার দোষ স্খালন করল, তার হক হচ্ছে আল্লাহ তাকে জাহান্নাম থেকে বাঁচাবেন। (আহমদ)
( আরবি*******************)
যে লোক তার ভাইয়ের ইজ্জত রক্ষা করল এ দুনিয়ায়, আল্লাহ্ তার থেকে কিয়ামতের দিন জাহান্নামকে ফিরিয়ে নেবেন। (তিরমিযী)
যার এরূপ সাহসিকতা নেই, ভাইয়ের মর্যাদাহানির আঘাত থেকে যে তার ভাইকে রক্ষা করতে পারল না, তার অন্ততপক্ষে সে মজলিস ত্যাগ করে চলে যাওয়া এবং সেই লোকদের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে থাকা কর্তব্য- যতক্ষণ না তারা অন্য কোন কথায় মনোনিবেশ করছে। তা-ও না করলে সে তো আল্লাহর এ বাক্যটির আওতার মধ্যে পড়ে যাবেঃ ( আরবি*******************) – তোমরাও এক্ষণে তাদের মতোই হয়ে গেলে। (সূরা নিসা ১৪০)
চোগলখোরী
গীবতের কথা যখনই বলা হয়, তখনই তার সাথে এমন আর একটি স্বভাবেরও উল্লেখ করা হয়, যা ইসলমের দৃষ্টিতে গীবতের মতোই কঠিনভাবে হারাম। আর তা হেচ্ছে চোগলখোরী। কারো মুখে একজনের বিরুদ্ধে কিছু শুনে তা সে ব্যক্তির কাছে এমনভাবে পৌঁছে দেয়া, যার ফলে দুজনের মধ্যে ঝগড়া-ঝাটি অনুষ্টিত হয় এবং পারস্পরিক মনের পরিছন্নতা দূর হয়ে গিয়ে পংকিলতা ও ময়লার সৃষ্টি হয়। অথবা পূর্ব থেকে থাকা সেই পংকিলতা ও ময়লা আরও অধিক মাত্রায় বৃদ্ধি পেয়ে যায়।
এ হীন ও মারাত্মক ধরনের খাছরতের প্রতিবাদ করে মক্কী সূরাসমূহেই আল্লাহর কথা নাযিল হয়। তাতে বলা হয়েছেঃ ( আরবি*******************)
এমন ব্যক্তির কথা তোমরা মেনে নিও না, যে খুব বেশি কিরা-কসম খায় ও গুরুত্বহীন, যে লোকদের দুঃখ দেয়, অভিশাপ বর্ষণ করে বেড়ায় এবং চোগলখোরী করে ফিরে। (সূরা আল-কালামঃ ১০-১১)
নবী করীম (সা) বলেছেনঃ ( আরবি*******************)
চোগলখোর জান্নাতে যাবে না। (বুখারী, মুসলিম)
এখানে ‘কাত্তাতুন’ শব্দটির অর্থ চোগলখোর। কেউ কেউ বলছেনঃ আসলে চোগলখোর সে, যে কথাবার্তায় মগ্ন একদল লোকের সঙ্গে শামিল থাকে, পরে তাদের বিরুদ্ধে গিয়ে চোগলখোরী করে। আর ‘কাত্তাতুন’ হচ্ছে সে, যে লোকদের অজ্ঞাহসারে তাদের কখাবার্তা শুনে তাদের বিরুদ্ধে বলতে শুরু করে।
নবী করীম (সা) বলেছেনঃ ( আরবি*******************)
আল্লাহর নিকৃষ্টতম বান্দা হচ্ছে তারা, যারা চোগলখোরী করে। বন্ধুদের পরস্পরের মধ্যে বিরোধ ও ফাটলের সৃষ্টি করে এবং নির্দোষ লোকদের দোষ বের করার জন্যে চেষ্টা করতে থাকে। (আহমদ)
পারস্পরিক বিবাদ দূর করে মীমাংসা ও মিলমিশের জন্যে যারা চেষ্টা করে ইসলাম তাদের জন্যে এটা জায়েয বলেছে যে, একজনের সম্পর্কে খারাপতম কথা জানা সত্ত্বেও সে তা প্রকাশ করবে না। উপরন্তু নিজের পক্ষ থেকে এমন কিছু ভাল ভাল কথা বাড়িয়ে বলবে যদিও তা একজন সম্পর্কে অপরজনের কাছ থেকে শুনতে পায়নি।
যারা কোন খারাপ কথা কোথাও শুনতে পায়, আর অমনি তা ষড়যন্ত্রমূলকভাবে বা বিদ্বেষ সৃষ্টির উদ্দেশ্যে অন্যদের কাছে গিয়ে বলে দেয়, তাদের ওপর ইসলামের তীব্র ক্রোধ ও আক্রোশ। কেননা এরা সমাজে ধ্বংস ও বিপর্যয় সৃষ্টি করার কুমতলবেই তা করে থাকে।
এ ধরনের লোকেরা যতটুকু শুনে ততটুকু মূলধনের ওপরই নির্ভর করে না, সমাজ-বিধ্বংসী মনোবৃত্তি যা শুনেছে তার ওপর নিজেদের পক্ষ থেকে অনেক বাড়িয়ে দিতে এবং মনগড়াভাবে রচনা করে নিতেও কৃণ্ঠিত হয় না। আর তারা যদি ভাল কিছু শুনে তাহলে গোপন রাখে। আর খারাপ কিছু শুনলে তা ব্যাপকভাবে প্রচার করে। আর না শুনলে মিথ্যা বলে।
এক ব্যক্তি হযরত উমর ইবনে আবদুল আজীজের কাছে অপর এক ব্যক্তির পক্ষ থেকে তাকে এমন কিছু শোনাল যা তিনি পছন্দ করেন নি। তখন খলীফা উমর (২য়) বললেনঃ তুমি চাইলে আমি তোমার ব্যাপারটা দেখব। আর তুমি যদি মিথ্যাবাদী হও, তাহলে তুমি কুরআনের এ আয়াতের পর্যায়ে পড়ে গেছঃ ( আরবি*******************)
তোমাদের কাছে কোন ফাসিক ব্যাক্ত এসে যদি কোন সংবাদ দেয়, তাহলে তোমরা তার সত্যতা- যথার্থতা অবশ্যই যাচাই করে দেখবে।
আর তুমে যদি সত্যবাদী হও, তাহলে তুমি এ আয়াতের আওতার মধ্যে গণ্যঃ ( আরবি*******************) আর তুমি যদি চাও, তাহলে তোমাকে আমরা মাফ করে দেব। লোকটি বললঃ ‘হে আমীরুল মুমিনিন, ক্ষমা করে দিন। আমি এ ধরনের কাজ আর করব না।’
মান-সম্মান সংরক্ষণ
ইসলাম তার উচ্চতর মানের শিক্ষার দ্বারা মানুষের মান-সম্মান ও মর্যাদা সংরক্ষণের ওপর কতখানি গুরুত্ব দিয়েুছে, তা আমরা দেখেছি। মানুষের মর্যাদা সংরক্ষণের ব্যাপারটি তার পবিত্রতা বিধানের সীমানা পর্যন্ত পৌঁছে গেছে, তাও লক্ষণীয়। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রা) একদা কাবা ঘরের দিকে তাকিয়ে বলতে লাগলেনঃ ( আরবি*******************)
হে কাবা! তোমার বিরাট মর্যাদা, তোমার মর্যাদার বিরাটত্ব বিষয়ে আর কি বলব। কিন্তু মুমিন লোকের মর্যাদা তোমার চাইতেও অনেক উচ্চ ও বড়। আর মুমিনের মর্যাদা প্রতিফলিত হয় তার ইজ্জতের, রক্তের ও ধন-মালের মধ্য দিয়ে।
বিদায় হজ্জের ভাষণে নবী করীম (সা) বিরাট ইসলামী জনতাকে সম্বোধন করে বলেছিলেনঃ ( আরবি*******************)
জেনে রাখো তোমাদের ধন-মাল, তোমাদের ইজ্জত-আবরু এবং তোমাদের রক্ত পরস্পরের ওপর হারাম-সম্মানার্হ, তোমাদের আজকের দিনের মর্যাদার মতো- তোমাদের এ মাসে তোমাদের এ নগরে।
ব্যক্তির ইজ্জত-আবরুও ইসলাম রক্ষা করেছে তার অনুপস্থিতিতে তার সম্পর্কে এমন কথা বলা নিষেধ করে যা সত্য অথচ সে তা অপছন্দ করে। তাহলে যে-কথা মনগড়া ভিত্তিহীন, তা বলার সুযোগ কি করে থাকতে পারে? যদি তা বলা হয়, তাহলে তো অতি বড় পাকা অপরাধ ও গুনাহ হবে। হাদীসে বলা হয়েছেঃ ( আরবি*******************)
যে লোক কারো সম্পর্কে এমন কথা বলল- যা তার মধ্যে নেই- শুধু এ উদ্দেশ্যে যে, তাকে দোষী করবে, কিয়ামতের দিন আল্লাহ্ তাকে জাহান্নামে বন্দী করে রাখবেন, যতক্ষণ না তার বলা কথার সত্যতা সে প্রমাণিত করে দেবে। (তাবারানী)
হযরত আয়েশা (রা) থেকে বর্ণিত, নবী করীম (সা) তাঁর সাহাবিগণকে বললেনঃ ( আরবি*******************)
তোমরা কি জান, আল্লাহ্ কাছে সবচেয়ে বড় সুদ কি? সাহাবিগণ বললেনঃ আল্লাহ্ এবং তাঁর রাসূলই জানেন। বললেনঃ সবচেয়ে বড় সুদ আল্লাহর কাছে মুসলমানদের ইজ্জত নষ্ট করতে চাওয়। অতঃপর তিনি কুরআনের আয়াত পাঠ করলেন, যার আর্থঃ যারা মুমিন পুরুষ ও মেয়েলোকদের তাদের নিরপরাধ হওয়া সত্ত্বেও কষ্ট ও পীড়ন দেয়, তারা মিথ্যা দোষারোপ ও সুস্পষ্ট গুনাহের অভিশপ নিজেদের মাথায় তুলে নেয়। (সূরা আহযাবঃ ৫৮)
এ পর্যায়ে সবচাইতে বড় গুনাহ হচ্ছে মনুষের ইজ্জত আবরুর ওপর আক্রমণ চালানো। যেমন পবিত্র চরিত্রা ঈমানদার মুমিন মহিলদের ওপর চরিত্রহীন কাজের দোষারোপ করা। কেননা এতে তাদের সুনাম সুখ্যাতি, তাদের বংশ ও পরিবারের মান-মর্যাদার যেমন ক্ষতি হওয়ার আশংকা, তেমনি তাদের ভবিষ্যতের জন্যেও বিপদ ঘনিয়ে আসতে পারে। উপরন্তু এরূপ করে মুমিনদের সমাজে নির্লজ্জতা ও চরিত্রহীনতার ব্যাপক প্রচার সাধনের প্রবণতাও দেখতে পাওয়া যায়।
এ কারণে নবী করীম (সা) এ কাজটিকে সাতটি ধ্বংসাত্মক কবীরা গুনাহের মধ্যে গণ্য করেছেন এবং কুরআন মজীদ এ কাজের দরুন কঠোর ভাষায় নির্মম পরিণতির ওয়াদা করেছে। বলা হয়েছেঃ ( আরবি*******************)
যেসব লোক মুমিন অসতর্ক পবিত্র চরিত্র সম্পন্না মহিলাদের ওপর চারিত্রিক দোষারোপ করে, দুনিয়া ও পরকালে তাদের ওপর অভিসম্পাত এবং তাদের জন্যে বড় আযাব রয়েছে। সেদিন তাদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেবে তাদের মুখ, হাত ও পা, তারা যা যা করেছে সে সম্পর্কে। এ দিন আল্লাহ্ তাদের সত্য প্রতিফলটা পূর্ণ করে দেবেন এবং তারা জানতে পারবে যে, আল্লাহই হচ্ছেন মহাসত্য।
আরও বলা হয়েছেঃ ( আরবি*******************)
যেসব লোক মুমিনদের সমাজে নির্লজ্জতা ও পাপ কাজের ব্যাপক প্রচলন প্রসারতা ঘটাতে ভালবাসে, তাদের জন্যে আযাব দুনিয়ায় ও আখিরাতে- সর্বত্র। আল্লাহই জানেন, তোমরা জান না। (সূরা আন-নূরঃ ১৯)
রক্তের মর্যাদা
ইসলাম মানব জীবনকে সর্বাধিক সম্মানার্হ ও মর্যাদাবান বানিয়েছে। মানবাত্মার পবিত্রতার কথা ঘোষণা করেছে। আর তার ওপর হস্তক্ষেপকে আল্লাহর কাছে কুফরের পর সবচেয়ে বড় গুনাহ রূপে চিণ্হিত করেছে। কুরআন মজীদে ঘোষণা করেছেঃ ( আরবি*******************)
কোনরূপ হত্যার বা পৃথিবীতে বিপর্যয় সৃষ্টির অপরাধ ছাড়াই যে লোক একজন মানুষকে হত্যা করে, সে যেন সমস্ত মনুষকে হত্যা হরার অপরাধ করল। তা এ জন্যে যে, ইসলামের দৃষ্টিতে সমস্ত মানুষ একই পরিবারভুক্ত। এমতাবস্থায় তাদের একজনকে হত্যা করা হলে- সীমালংঘন করা হলে সমস্ত মানব-প্রজাতির ওপরই তার আঘাত পড়ে। তার কুফল সকলেই ওপর প্রবর্তিত হয়।
কিন্তু নিহত ব্যক্তি যদি মুমিন হয় তাহলে হারাম হওয়ার ব্যাপারটি অধিকতর কঠিন ও তীব্র হয়ে দাঁড়ায়। কুরআন মজীদে এজন্যে বলা হয়েছেঃ ( আরবি*******************)
যে লোক ইচ্ছা করে কোন মুমিন ব্যক্তিকে হত্যা করবে, তার প্রতিফল হচ্ছে জাহান্নাম। তাতে সে চিরদিন থাকবে। আল্লাহ্ তার ওপর ক্রুদ্ধ হবেন, তার ওপর অভিশাপ বর্ষণ করবেন এবং তার জন্যে বড় আযাব প্রস্তুত করে রাখবেন।
রাসূলে করীম (সা) বলেছেনঃ ( আরবি*******************)
আল্লহর কাছে একজন মুসলমানের নিহত হওয়ার তুলনায় সারা দুনিয়া ধ্বংস হয়ে যাওয়াও অনেক হালকা ব্যাপার। (মুসলিম, নিসায়ী, তিরমিযী)
বলেছেনঃ ( আরবি*******************)
মুমিন দ্বীনের দিক দিয়ে প্রশস্ততার মধ্যে অবস্থান করে যতক্ষণ না হারাম নর হত্যার অপরাধ করে।
বলেছেনঃ ( আরবি*******************)
আল্লাহ্ তা’আলা সম্ভবত সমস্ত গুনহই মাফ করে দেবেন। তবে যে লোক মুশরিক অবস্থায় মরেছে অথবা কোন মুমিন ব্যক্তিকে ইচ্ছা করে হত্যা করেছে তাকে নয়।
এ সব আয়াত ও হাদীসের ভিত্তিতে হযরত ইবনে আব্বাস (রা) মনে করেছেন যে, হত্যাকারীর তওবা কবুল হবে না। অন্য কথায় তিনি মনে করেছেন, তওবা কবুলের জন্যে শর্ত হচ্ছে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের হক ফিরিয়ে দেয়া কিংবা তাকে সন্তুষ্ট কারা। কিন্তু ব্যক্তির হক কি করে ফিরিয়ে দেয়া যেতে পারে কিংবা তাকে সন্তুষ্টই বা করা যেতে পারে কিভাবে ?
অন্যরা বলেছেন, খালেস তওবা অবশ্যই কবুল হবে। এ ধরনের তওবা শিরকের গুনাহ পর্যন্ত মাফ করিয়ে দেয়। তাহলে তার চাইতে কম মাত্রার গুনাহ কেন তওবায় মাফ হবে না ?
আল্লাহ্ তা’আলা তো বলেছেনঃ ( আরবি*******************)
যেসব লোক আল্লাহর সঙ্গে দ্বিতীয় ইলাহ্ ডাকে না, কোন মানুষকে বিনা কারণে হত্যা করে না এবং জ্বেনা করে না- যে লোক এই এই কাজ করে সে তার গুনাহের বদলা পাবে। কিয়ামতের দিন তার আযাব দ্বিগুণ বাড়িয়ে দেয়া হবে এবং তার মধ্যে অপমানিত অবস্থায় চির দিন থাকবে। তবে যে লোক তাওবা করবে, ঈমান আনবে এবং নেক আমল করবে, আল্লাহ্ তাদের খারাপ কাজগুলোকে ভাল ও নেক কাজে পরিবর্তিত করে দেবেন। আর আল্লাহ্ ক্ষমাশীল দয়াবান। (সূরা আল-ফুরক্বানঃ ৬৮-৭০)
হন্তা ও নিহত উভয়েই জাহান্নামী
নবী করীম (সা) মুসলিমদের সাথে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে লিপ্ত হওয়াকে কুফরির একটা দুয়ার বলে ঘোষণা করেছেন। এটা জাহিলিয়াত যুগের কাজ বলে অভিহিত করেছেন। কেননা তখনকার লোকেরা যুদ্ধে সব সময় লিপ্ত থাকত এবং একটি উষ্ট্রী বা ঘোড়ার কারণে তারা রক্তের বন্যা প্রবাহিত করতেও দ্বিধা করত না। নবী করীম (সা) বলেছেনঃ ( আরবি*******************)
মুসলমানকে গাল দেয়া ফাসিকী কাজ এবং তার সাথে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে লিপ্ত হওয়া সুস্পষ্ট কুফরি। (বুখারী, মুসলিম)
নবী করীম (সা)-এর আর একটি কথাঃ ( আরবি*******************)
আমার চলে যাওয়ার পর তোমরা পশ্চাদপসরণ করে কাফির হয়ে যেও না ও পরস্পরের কল্লা কাটতে শুরু করে দিও না। (বুখারী, মুসলিম)
অপর এক হাদীসে বলা হয়েছেঃ দুজন মুসলমানের একজন যখন তার ভাইর ওপর অস্ত্র ধারণ করে, তখন তারা দুজনই জাহান্নামের কিনারে উপস্থিত হয়। অতঃপর একজন যখন অপরজনকে হত্যা করে, তখন দুজনই জাহান্নামে যায়। প্রশ্ন করা হলো হে রাসূল, হত্যাকারীর জাহান্নামে যাওয়া তো বোধগম্য, কিন্তু নিহত ব্যক্তি কেন জাহান্নামে যাবে? বললেনঃ ( আরবি*******************)
সেও তো তার সঙ্গীকে হত্যা করতে চেয়েছিল। (বুখারী, মুসলিম)
এ কারণে নবী করীম (সা) এমন সমস্ত কাজ করতে নিষেধ করেছেন, যার পরিণতি হত্যা বা রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ। অস্ত্রের দ্বারা ইঙ্গিত করাও এ পর্যায়ে পড়ে। তিনি বলেছেনঃ ( আরবি*******************)
তোমাদের কেউ যেন তার ভাইর প্রতি অস্ত্রের দ্বারা ইশারা না করে, কেননা শয়তান কখন তার হাত থেকে অস্ত্র কেড়ে নেবে ও সে জাহান্নামের গর্তে পড়ে যাবে, তা সে হয়ত টেরও পাবে না। (বুখারী, মুসলিম)
বলেছেনঃ ( আরবি*******************)
যেলোক তার ভাইয়ের প্রতি কোন অস্ত্র দ্বারা ইশারা করে তখন ফেরেশতা তার ওপর অভিশাপ করে, যতক্ষণ না সে তা থেকে বিরত হয়, যদিও তার আপন ভাই-ই হোক না কেন। (মুসলিম)
তিনি আরও বলেছেঃ ( আরবি*******************)
কোন মুসলমানের জন্যে জায়েয নয় আর একজন মুসলমানকে ভয় দেখান।
গুনাহ কেবলমাত্র হত্যাকারী পর্যন্তই সীমিত হয়ে থাকে না। বরং তাতে যে লোক কোনরূপ কথা বা কাজ দ্বারা শরীক হয়, সেও এ হত্যা পাপের অংশীদার হয়। তার এই অংশ গ্রহণের মাত্রা অনুযায়ীই আল্লাহর ক্রোধ রোষ ও অসন্তোষ তার ওপর পড়ে। এমন কি হত্যাকাণ্ডের অকুস্থলে যে লোক উপস্থিত থেকেও নিষ্ক্রিয় থাকবে, সেও এই পাপে শরীক হবে। হাদীসে বলা হয়েছেঃ ( আরবি*******************)
যেখানে কোন লোককে বিনা কারণে জুলুম হিসেবে হত্যা করা হয়, তথায় যেন কেউ না দাঁড়ায়। কেননা এ হত্যাকাণ্ডে যে লোক উপস্থিত থাকবে ও তাকে রক্ষা করতে চেষ্টা করবে না, তার ওপরও অভিশাপ অবতীর্ণ হবে।
চুক্তি সম্পন্ন ও যিম্মী ব্যক্তির রক্ত মর্যাদা
এসব আয়াত ও হাদীসে মুসলমানকে হত্যা ও মুসলমানের সাথে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে লিপ্ত হওয়া থেকে সাবধান করা হয়েছে। এটা শরীয়তেরই বিধান মুসলিম সমাজে বসবাসকারী মুসলমানদের জন্যে এ পথ-নির্দেশ। কিন্তু তার অর্থ এই নয় যে, অমুসলিমের রক্ত বুঝি হালাল! আসলে মানুষ মাত্রেরই রক্ত অবশ্য রক্ষণীয়। মানুষ হিসেবেই তাকে বাঁচাতে হবে যতক্ষণ পর্যন্ত কোন অমুসলিম মুসলমানদের সাথে যুদ্ধে লিপ্ত না হবে, তাকে হত্যা করা যাবে না। হ্যাঁ যদি মুসলমানদের বিরুদ্ধে অমুসলিম যুদ্ধ ঘোষণা করে, তাহলে তখন তার রক্তপাত করা যেতে পারে। আর সেই অমুসলিম যদি মুসলিম রাষ্ট্রের সাথে চুক্তিবদ্ধ হয় কিংবা হয় যিম্মী, তাহলে রক্তের নিরাপত্তা অবশ্যম্ভাবী। মুসলিমানের পক্ষে সীমালংঘন করা কিছুতেই হালাল হবে না। এ সম্পর্কে নবী করীম (সা)-এর কথা হচ্ছেঃ ( আরবি*******************)
যে লোক কোন চুক্তিবদ্ধ ব্যক্তিকে হত্যা করবে, সে জান্নাতের সুগন্ধিও পাবে না। অথচ জান্নাতের সুঘ্রাণ তো চল্লিশ চছর পথের দূরত্ব থেকেও পাওয়া যায়।
অপর বর্ণনায় বলা হয়েছেঃ ( আরবি*******************)
যে লোক কোন যিম্মীকে হত্যা করবে, সে জান্নাতের সুঘ্রাণ পাবে না।
রক্তের মর্যাদা কখন থাকে না
আল্লাহ্ তা’আলা ইরশাদ করেছেনঃ ( আরবি*******************)
তোমরা মানুষকে হত্যা করবে না, যাকে আল্লাহ্ হারাম করেছেন। তবে সত্যতা সহকারে হত্যা করার কথা স্বতন্ত্র। (সূরা আন-আমঃ১৫১)
এখানে যে সত্যতার কথা বলা হয়েছে। যার কারণে নর হত্যা করা যায়, তা হচ্ছে কোন অপরাধের দণ্ডস্বরূপ হত্যা করা। আর সেই অপরাধ তিনটিঃ
১. জুলুম করে হত্যা করা। যে লোকের হত্যাকাণ্ডের অপরাধ প্রমাণিত হবে, তার কিসাস করা ওয়াজিব এবং সেই কিসাস হচ্ছে, হত্যার দণ্ড স্বরূপ হত্যাকারীকে হত্যা করা। অর্থাৎ জানের বদলে জান। কুরআনে বলা হয়েছেঃ ( আরবি*******************)
হত্যার দণ্ডস্বরূপ হত্যা করাই তোমাদের জন্যে জীবন নিহিত।
২. প্রকাশ্যভাবে জ্বেনা করা এমনভাবে যে, চারজন ভাললোক তা নিজেদের চোখে প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে সাক্ষ্যও দেবে। তবে শর্ত এই যে, এ লোকটি হালাল পদ্ধতির বিয়ে সম্পর্কে ওয়াকিফহাল থাকতে হবে। আর সাক্ষী না পাওয়া যাওয়া সত্ত্বেও অপরাধী নিজেই যদি বিচারকের সম্মুখে নিজের অপরাধের অন্তত বারবার স্বীকারোক্তি করে তাতেও অপরাধ প্রমাণিত হবে ও সে অনুযায়ী দন্ড দেয়া হবে।
৩. ইসলাম কবুল করার পর দ্বীন-ইসলামের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করলেও শাস্তিস্বরূপ তাকে হত্যা করা যাবে। মুসলিম জাতির বিরুদ্ধে তার এ বিদ্রোহ যখন একটা চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে, তখনই এ অবস্থা দেখা দেবে। ইসলাম তো কাউকেই জবরদস্তি বধ্য করে না ইসলাম কবুল করার জন্যে। কিন্তু দ্বীন-ইসলাম নিয়ে কেউ খেলা করেবে- তা কবুল করবে, আবার তার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করবে, ইসলাম তা বরদাস্ত করতে পারে না। ইয়াহূদীরা এরূপ শরু করেছিল। কুরআন মজীদে বলা হয়েছে, তারা তাদের লোকদের বলতঃ ( আরবি*******************)
সকাল বেলা তোমরা ঈমান গ্রহণ কর সেই দ্বীনের প্রতি যা মুসলমানদের প্রতি নাযিল হয়েছে এবং দীনের শেষে তার প্রতি কুফরি কর। সম্ভবতঃ তা দেখে এ লোকেরা সে দ্বীন থেকে ফিরে যাবে। (সূরা আলে-ইমরানঃ ৭২)
কারো রক্তপাত হালাল ও মুবাহ হওয়ার জন্যে নবী করীম (সা) এ তিনটি ভিত্তিকেই সীমিত করে দিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেনঃ ( আরবি*******************)
মুসলমানের রক্তপাত করা হালাল নয় এ তিনটি কারণ ছাড়া (১) জানের বদলে জান লওয়া (২) বিবাহিত ব্যক্তি জ্বিনাকার হলে এবং (৩) যে লোক দ্বীন-ইসলাম ত্যাগ করে মুসলিম জামায়াত থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে চলে যায়।
কিন্তু এ তিনটি অপরাধের দণ্ড হিসেবে মুসলমানের রক্তপাত করা কেবল শসনকর্তা বা প্রশাসকের পক্ষেই জায়েয ও মুবাহ। ব্যক্তিদের পক্ষে নিজস্বভাবে এ দণ্ড দানের কাজ করা আদৌ জায়েয নয়। কেননা তা হলে শাসন-শৃঙ্খলা বলতে কিছুই থাকবে না। চরম অরাজগতা দেখা দেবে। সমাজে প্রত্যেক ব্যক্তিই তখন নিজস্বভাবে বিচারক ও দণ্ডমুণ্ডের মালিক হয়ে বসবে। ইচ্ছাপূর্বক নরহত্যার ক্ষেত্রে কিসাস করা ওয়াজিব। তবে ইসলাম নিহতের উত্তরাধিকারীদের এ অধিকার দিয়েছে যে, প্রশাসক কর্তৃপক্ষ উপস্থিত থাকা সত্ত্বেও তারা নিজেদের হাতে কিসাস গ্রহণ করতে পারে। তাতে তাদের মনের দুঃখ ক্ষোভ ও আক্রোশ মিটবে, প্রতিশোধ গ্রহণের স্পৃহা চারিতার্থ এবং আল্লাহর এ কথারও বাস্তবায়ন হবেঃ ( আরবি*******************)
যে লোক অন্যায়ভাবে অকারণ নিহত হবে, তার উত্তরাধিকারীদের জন্যে আমরা (কিসাসুল ওয়ার) এ কর্তৃত্ব দিয়েছি, কিন্তু সে হত্যার কাজে সীমালংঘন করা যাবে না। সে অবশ্যই সাহায্য প্রাপ্ত হবে।
আত্মহত্যা
হত্যা অপরাধ পর্যায়ে যে বিধান এসেছে ব্যক্তির আত্মহত্যার ক্ষেত্রে তা পুরোপুরি প্রযোজ্য, যেমন অন্যকে হত্যা করার ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য । কাজেই যে লোক আত্মহত্যা করবে তা যার সাহায্যেই করুক না কেন, সে এমন একটা নরহত্যা ঘটালো যা আল্লহ্ তা’আলা বিনা কারণে অন্যায়ভাবে হত্যা করাকে হারাম করে দিয়েছেন।
বস্তুত কোন মানুষের জীবনই তার নিজের মালিকানাভুক্ত নয়। কেননা সে নিজেকে সৃষ্টি করেনি। তার দেহের একটা অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ বা একটা জীব-কোষ পর্যন্তও সে নিজে বানায়নি। তার জীবন ও প্রাণ তার কাছে একটা আমানত, আল্লাহই তার কাছে এ আমানত অর্পণ করেছেন। অতএব তার ওপর কোনরূপ হস্তক্ষেপ করার কোন অধিকারই তার থাকতে পারে না। তাহলে সে তা হত্যা করতে পারে কিভাবে? এ জীবন থেকে নিষ্কৃতি পাওয়ার জন্যে কোন নিজস্ব উদ্যোগ নিশ্চয়ই অপরাধ হবে। আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেছেনঃ ( আরবি*******************)
তোমরা নিজেদেরকে নিজেরাই হত্যা করো না। কেননা আল্লাহ্ তো তোমাদের প্রতি অতীব দয়াবান। (সূরা আন-নিসাঃ ২৯)
ইসলাম চায়, মুসলমানরা জীবনের কঠোর কঠিন বাস্তবতার মুকাবিলা করায় অত্যন্ত সাহসী, দুর্বিনীতি ও অনমনীয় হবে। জীবন থেকে পলায়ন করার কোন কেন অধিকার কোন অবস্থায়ই কাউকে দেয়া হয়নি। বিপদ দেখলেই বা কোন সংকট ও সমস্যা দেখা দিলেই জীবনের এ পরিচ্ছেদটি খুলে ফেলে পালাতে চেষ্টা করবে, কোন আশায় ব্যর্থ মনোরথ হয়ে জীবনকেই অস্বীকার করবে, এ অধিকার কারো থাকতে পারে না। মুমিনকে তো জিহাদ-প্রাণপণ চেষ্টা সাধনা করার উদ্দেশ্যে সৃষ্টি করা হয়েছে, অকর্মন্য হয়ে বসে থাকার জন্যে নয়। সম্মুখ সমরে অবতীর্ণ হওয়াই তার কর্তব্য, পলায়ন বা পশ্চাদপসরণ তার জন্যে অশোভন। তার ঈমান ও চরিত্রই তাকে জীবনের ক্ষেত্র থেকে পালিয়ে যেতে ও নিজেকে সরিয়ে নিতে অস্বীকৃতি জানায়। তার কাছে এমন হাতিয়ার রয়েছে যা কখনও পুরাতন হয় না, সম্পদের এমন অফুরন্ত ভাণ্ডার রয়েছে যা কখনই নিঃশেষ হবে না। আর তা হচ্ছে ঈমানের হাতিয়ার, যা খুবই দৃঢ় ও মযবুত এবং সে ভাণ্ডার হচ্ছে অনমনীয় নৈতিকতার ভাণ্ডার।
যে লোক আত্মহত্যার এ জঘন্য অপরাধ করতে অগ্রসর হবে, সে আল্লাহ্ তা’আলার রহমত থেকে বঞ্চিত হবে ও জাহান্নামে পড়ে আল্লাহর তীব্র রোষ ও অসন্তোষের শিকার হবে বলে নবী করীম (সা) আগে থেকেই হুঁশিয়ার করে দিয়েছেন। তিনি বলেছেনঃ ( আরবি*******************)
তোমাদের পূর্বে চলে যাওয়া লোকদের মধ্যে এক ব্যক্তি ছিল, সে আহত হয়ে গেল আর সেজন্যে সে ছটফট্ করতে শুরু করে দিল। এ অবস্থায় সে ছুরি হাতে নিয়ে নিজেই নিজের হাত কেটে ফেলল। তাতে এত বেশি রক্ত ঝরল যে, তাতে তার মৃত্যু সঙ্ঘটিত হল। আল্লাহ্ তা’আলা এ ব্যক্তি সম্পর্কে বলেছেনঃ আমার এ বান্দা নিজের ব্যাপারে খুব তাড়াহুড়া করে ফেলেছে। এ কারণে আমি তার প্রতি জান্নাত হারাম করে দিয়েছি। (বুখারী, মুসলিম)
জখমের কষ্ট সয্য করতে না পেরে নিজের হত্যাকাণ্ড নিজেই ঘটিয়েছে বেলে তার ওপর জান্নাত হারাম হয়ে গেল। এ যখন অবস্থা, তখন যারা নিজেদের ব্যবসায় সামান্য ক্ষয়-ক্ষতি, চাকুরীতে উন্নতি না হওয়া বা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে না পারা, অথবা আশায় ভঙ্গ হওয়ার দরুন আত্মহত্যা করে তাদের ব্যাপার কত কঠিন এবং আল্লাহর কাছে কতটা অমার্জনীয় হবে, তা সহজেই বোধগম্য হতে পারে। দুর্বল মনোভাবের লোকদের এ হুঁশিয়ারী শুনে নেয়া কর্তব্য, যা নবী করীম (সা)-এর হাদীসে বলা হয়েছেঃ ( আরবি*******************)
যে লোক নিজেকে পর্বতের ওপর থেকে ফেলে দিয়ে আত্মহত্যা করল, সে জাহান্নামের আগুনে চির দিনই পড়ে থাকবে- কখনই তা থেকে নিষ্কৃতি পাবে না। যে লোক বিষ পান করে আত্মহত্যা করল, সে জাহান্নামের আগুনে চিরকালই নিজ হাতে বিষ পান করতে থাকবে। আর যে লোক কোন লৌহাস্ত্র দ্বারা আত্মহত্যা করল, সে জাহান্নামে চিরদিন চিরকাল ধরে লৌহের সেই জিনিসটি দ্বারা নিজেকে আঘাত দিতে থাকবে। (বুখারী, মুসলিম)
ধন-মালের মর্যাদা
মুসলমানের পক্ষে হালাল পথে ও পন্থায় ধন-মাল উপার্জন করা ও সঞ্চয় করা এবং শরীয়তসম্মত উপায়ে তার পরিমাণ বৃদ্ধি করা কোন দুষণীয় কাজ নয়। অন্যান্য ধর্মগ্রন্থে যেখানে বলা হয়েছেঃ ধনী লোক আসমানী-সাম্রাজ্যে প্রবেশ করতে পারবে না যতক্ষণ না উষ্ট্র সুঁচের ছিদ্রের মধ্যে প্রবেশ করবে, সেখানে ইসলাম ঘোঘণা করেছেঃ ( আরবি*******************)
ইসলাম হালাল ধন-মালের ওপর ব্যক্তির ব্যক্তিগত মালিকানা জায়েয বলে ঘোষণা করেছে। তাই শরীয়তী আইনের সমর্থনে ও নৈতিক পথ নির্ধারণের সাহায্যে তার ওপর সীমালংঘনকারীদের হস্তক্ষেপ প্রতিরোধ করেছে এবং অপহরণ, চুরি বা ডাকাতি করাকে হারাম করে দিয়েছে।
ধন-মালের এই মর্যাদা, রক্তের মর্যাদা ও মান সম্মানের মর্যাদার কথা নবী করীম (সা) এক সাথে উল্লেখ করেছেন এবং চৌর্যবৃত্তিকে ঈমানের পরিপন্থী বলে ঘোষণা করেছেন। বলেছেনঃ ( আরবি*******************)
চোর যখন চুরি করে তখন সে ঈমানদরি থাকে না।
আল্লাহ্ তা’আলা বলেছেনঃ ( আরবি*******************)
পুরুষ চোর ও মেয়েলোক চোরের হাত কেটে দাও তাদের কাজের প্রতিফলস্বরূপ এবং আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রবর্তিত শাস্তিস্বরূপ। আর আল্লাহ্ দুর্জয়-শক্তিমান মহাবিজ্ঞানী। (সূরা মায়িদাঃ ৩৮)
নবী করীম (সা) বলেছেনঃ ( আরবি*******************)
কারো সন্তুষ্টি ভিত্তিক অনুমতি ছাড়া তার লাঠিখানি নেয়াও মুসলমানের জায়েয নয়।
মুসলমানের ধন-মাল মুসলমানের কাছে অত্যন্ত সম্মানার্হ এবং তা অন্যায়ভাবে গ্রহণ করা সম্পূর্ণ হারাম, এ তীব্রতা বোঝাবার উদ্দেশ্যেই নবী করীম (সা) এরূপ কথা বলেছেন। আল্লাহ্ তা’আলা আরও বলেছেনঃ ( আরবি*******************)
হে ঈমানদারা, তোমরা অন্যায়ভাবে পরস্পরের ধন-মাল ভক্ষণ করো না। তবে তোমাদের পারস্পরিক সম্মতির ভিত্তিতে ব্যবসায়ের মুনাফা হলে তাতে কোন দোষ নেই। (সূরা আন-নিসাঃ ২৯)
ঘুষ হারাম
বাতিল উপায়ে ও অন্যায়ভাবে লোকদের ধনমাল ভক্ষণ করার একটি পস্থা হচ্ছে ‘ঘুষ’। কেননা প্রভাব ও কর্তত্বসম্পন্ন বা সাধারণ দায়িত্বশীল ব্যক্তিকে এ উদ্দেশ্যে ধনমাল দেয়া যে, সে তার পক্ষে রায় দেবে, তার প্রতিপক্ষের ওপর তাকে জিতিয়ে দেবে কিংবা তাকে কোন কাজ দেবে বা তার শত্রুর কাজকে বিলম্বিত করে দেবে প্রভৃতি উদ্দেশ্যে, তা-ই ঘুষ।
শাসক-প্রশাসক বা তার সহকারীদের জন্যে ঘুষের পথ অবলম্বন করাকে ইসলাম চিরতরে হারাম করে দিয়েছে। তাদের জন্যে তা দেয়া হলে তা কবুল করা বা দাতা-গ্রহীতার মধ্যে মাধ্যম হওয়া- এ সবই হারাম। আল্লাহ্ তা’আলা বলেছেলঃ ( আরবি*******************)
তোমরা তোমাদের ধনমাল পরস্পরে বাতিল পন্থায় ভক্ষণ করো না, না প্রশাসকদের সামনে তা এ উদ্দেশ্যে পেশ কর যে, লোকদের ধন-মালের একাংশ তোমরা নিজেরা ভক্ষণ করবে পরের হক নষ্ট করে এবং জেনে-শুনে।
নবী করীম (সা) বলেছেনঃ ( আরবি*******************)
সরকারী ও রাষ্টীয় ব্যপারাদিতে যে ঘুষ দেয় এবং যে ঘুষ খায়- এ উভয় ব্যক্তির ওপরই আল্লাহর অভিশাপ। (আহমদ)
হযরত সওবান (রা) বলেছেনঃ ( আরবি*******************)
ঘুষদাতা, ঘুষ গ্রহীতা এবং উভয়ের মধ্যে যোগাযোগ স্থাপনকারী- এ সকলেরই ওপর রাসূলে করীম (সা) অভিশাপ বর্ষণ করেছেন। (আহমদ, হাকেম)
ঘুষ গ্রহণকারী যদি কারো ওপর জুলুম করার উদ্দেশ্যে ঘুষ নেয়, তাহলে তার অপরাধের মাত্রা আরও অনেক গুণ বৃদ্ধি পেয়ে যায়। আর যদি সুবিচার করার মানসে এ ঘুষ গ্রহণ করে, তাহলে সুবিচার করা তো তার দায়িত্ব, সেজন্যে কোনরূপ ধনমাল গ্রহণের কোন অধিকার থাকতে পারে না।
রাসূলে করীম (সা) হযরত আবদুল্লাহ ইবনে রাওয়াহা (রা)-কে ইয়াহূদীদের কাছে প্রেরণ করেন এ দায়িত্ব দিয়ে যে, তাদের খেজুর ফসলের খারাজ কত টাকা হয় তার পরিমাণ তিনি নির্ধারণ করবেন। তখন তারা তাঁর সামনে ঘুষ স্বরূপ কিছু ধনমাল পেশ করে। হযরত ইবনে রাওয়াহা তা দেখে তাদের বললেন, তোমরা যে ঘুষ পেশ করেছ, তা তো হারাম। আমরা তা কিছুতেই খাব না। (ইমাম মালিক)
ইসলাম ঘুষ-রিশওয়াত হারাম করেছেন, এটা কোন আশ্চর্যের ব্যাপার নয়। এতে যে যে লোক শরীক হয়, তাদের ব্যাপারেও কঠোরতা অবলম্বন করেছে, তাও বিচিত্র নয়। কেননা যে সমাজে এর ব্যাপকতা হয়, সে সমাজ জুলুমে জর্জরিত হতে বাধ্য এবং তার ধ্বংস অনিবার্য। যে লোক অন্যায়ভাবে প্রশাসন চালানো বা বিচারের রায় দিল কিংবা সত্য ও ন্যয়ভিত্তিক বিচার করতে প্রশাসন অস্বীকার করল। যে পিছনে তাকে অগ্রে এনে দিল এবং যে অগ্রবর্তী তাকে পশ্চাদবর্তী করে দিল, সে সমাজে কর্তব্যপরায়ণতার ভাবধারার পরিবর্তে স্বার্থপরতার ভাবধারা প্রবল হয়ে দেখা দেয়।
শাসক – প্রশাসকদের জন্যে উপটৌকন
ঘুষ- তা যে কোন রূপ যে কোন নামেই হোক, ইসলাম তা হারাম ঘোষণা করেছে। তাকে যদি হাদিয়া-তোহফা বা উপহার-উপটৌকন বলা হয় তবু তা হারামের গণ্ডি থেকে বের হয়ে হালালের আওতার মধ্যে পড়বে না।
হাদীসে উদ্ধৃত হয়েছে, রাসূলে করীম (সা) বলেছেনঃ ( আরবি*******************)
যে লোককে আমরা কোন কাজে নিযুক্ত করেছি ও তার বেতন নির্দিষ্ট করে ধার্য করে দিয়েছি, সে যদি তার পরও কিছু গ্রহন করে, তবে তা হবে খিয়ানত। (আবূ দাঊদ)
খলীফা উমর ইবনে আবদুল আজীজের সম্মুখে কিছু হাদিয়া পেশ করা হয়। তিনি প্রত্যাখ্যান করেন। তখন তাঁকে বলা হয়ঃ স্বয়ং রাসূলে করীম (সা) হাদিয়া-তোহফা গ্রহণ করতেন আর আপনি করছেন না? জবাবে তিনি বললেনঃ হ্যাঁ, তা তো তাঁর জন্যে ‘হাদিয়াই ছিল কিন্তু তা আমাদের জন্যে ঘুষ ছাড়া আর কিছু নয়।
রাসূলে করীম (সা) সাদকা যাকাত সংগ্রহের দায়িত্ব দিয়ে আজদ গোত্রের কাছে লোক পাঠিয়েছিলেন। সে যখন তাঁর কাছে ফিরে এল তখন কিছু ধনমাল নিজের হাতে রেখে দিয়ে বললঃ এ মাল আপনার আর এসব আমাকে উপটৌকন হিসেবে দেয়া হয়েছে। এ কথা শুনে নবী করীম (সা) খুবই রাগান্বিত হলেন এবং বললেনঃ ( আরবি*******************)
তোমার এ কথাই যদি সত্য হয়, তাহলে তুমি তোমার মা-বাবার ঘরে বসে থাকতে, তখন দেখা যেত, কে তোমাকে হাদিয়া দিচ্ছে ? পরে বলেছেনঃ ( আরবি*******************)
ব্যাপর কি, আমি তোমাদের মধ্য থেকে একজনকে সরকারী কর্মচারী নিযুক্ত করি। পরে সে বলেঃ প্রাপ্ত ধনমালের এ অংশ আপনার আর এ অংশ আমার জন্যে হাদিয়া বাবদ দেয়া? সে কেন তার মায়ের ঘরে বসে থাকেনি, তারপর যদি হাদিয়া দেয়া হতো তাহলে না হয় তার এ কথার যথার্থতা বোঝা যেত। যাঁর হাতে আমার জীবন তার শপথ, তোমাদের কেউ যদি নাহকভাবে কোন ধনমাল গ্রহণ করে তাহলে কিয়ামতের দিন তাকে তা আল্লাহর কাছে বহন করে নিয়ে উপস্থিত হতে হবে। তাই তোমরা কিয়ামতের দিন যেন নিজেদের কাঁধে করে উষ্ট্র, গরু-গাভী বা ছাগল নিয়ে আসতে বাধ্য না হও- এরূপ অবস্থায় যে, সে জন্তুটি চিৎকার করছে। পরে তিনি তাঁর দুই হস্ত ঊর্ধ্বে উত্তোলিত করলেন এতটা যে, তার দুহাতের বগলের সাদা অংশ দৃশ্যমান হয়ে উঠল। অতঃপর বললেনঃ হে আল্লাহ্! আমি কি কথা পৌঁছে দিয়েছি?
ইমাম গাযযালী বলেছেনঃ ঘুষের ব্যাপারে এসব কঠোরতা ও তীব্রতা প্রচণ্ডতা দেখে বলতে হয় যে, বিচারক প্রশাসক কিংবা তাদের মতো দায়ীত্বশীল ব্যক্তিদের উচিত তাদের মা-বাবার ঘরে বসে থাকা। তাদের পদচ্যুত করে দেয়ার পর তাদের মায়ের ঘরে থাকা অবস্থায় তাদের যদি ‘হাদিয়া-তোহফ’ দেয়া হয়, তাহলে তা গ্রহণ করা তাদের জন্যে জায়েয হতে পারে, পদে অভিষিক্ত থাকা অবস্থায়ও। আর যে সম্পর্কে জানতে পারবে যে, তা তার পদে অভিষিক্ত থাকার কারণেই দেয়া হয়েছে, তা গ্রহণ করা সম্পূর্ণ হারাম। আর বন্ধু-বান্ধবদের দেয়া হাদিয়া-তোহফা যদি পদচুত হওয়ার পরও দিত বলে জানা না যায়, তাহলে তাতে সন্দেহ রয়েছে। কাজেই তা পরিহার করা কর্তব্য। ( আরবি*******************)
জুলুম বন্ধের জন্যে ঘুষ দেয়া
অবস্থা যদি এমন হয়ে দাঁড়ায় যে, নিজের ন্যায্য হকও ঘুষ না দিলে পাওয়ার কোন উপায় নেই কিংবা এমন জুলুমের মধ্যে পড়ে গেছে যে, ঘুষ না দিলে তা থেকে নিষ্কৃতি কোনক্রমেই সম্ভবপর নয়, তাহলে তার ধৈর্য ধারণ ও সবর ইখতিয়ার করা উচিত, যতক্ষণ না আল্লাহই তার জন্যে হক পাওয়া ও জুলুম মুক্তির কোন উত্তম পথ ও পন্থা করে দেন।
এ কারণে ঘুষের পথে অগ্রসর হলে ঘুষ গ্রহণকারীই গুনাগার হবে। এরূপ অবস্থায় ঘুষদাতা গুনাহগার হবে না, যদি অন্যান্য হালাল সব পথই যাচাই করে দেখে ফল না পেয়ে শেষ উপায় হিসেবে তা অবলম্বন করে ও সেই সাথে সে যদি শুধু নিজের ওপর থেকে জুলুম বিদুরণ ও ন্যায্য হক পাওয়া এবং অন্যান্যদের অধিকারে হস্তক্ষেপ না করে থাকতে পারে।
কোন কোন আলিম এই মতের সমর্থন দলিল স্বরূপ উল্লেখ করেছেন সেসব হাদীস, যাতে উল্লেখিত হয়েছে যে, একদল লোক রাসূলে করীম (সা)-কে জড়িয়ে ধরত সাদকা পাওয়ার জন্যে। তখন ওরা কিছু পাওয়ার ন্যায় অধিকারী না হওয়া সত্ত্বেও তিনি এদের কিছু দিয়ে দিতেন। হযরত উমর (রা) থেকে বর্ণিত হয়েছে, নবী করীম (সা) বলেছেনঃ ( আরবি*******************)
তোমাদের কেউ কেউ আমার কাছ থেকে সাদকার মাল নিয়ে বগলে চেপে বের হয়ে যায় অথচ তা তার জন্যে আগুন। হযরত উমর (রা) বললেনঃ আপনি নিজেই যখন জানেন যে, তা তার জন্যে আগুন, তখন আপনি তাকে দেন কেন?
জবাবে বললেনঃ আমি কি করব? ওরা এমনভাবে চাইতে থাকে ও ধরে বসে যে, ওদের ছাড়ানই যায় না। আর আল্লাহ্ মহান মহিম চান না যে, আমি কার্পণ্য করি।
বারবার ও চেপে ধরে চাওয়ার দরুন রাসূলে করীম (সা) যখন প্রার্থীকে কিছু না কিছু ধন-মাল দিতেন, একথা জেনেও দিতেন যে, তা তার জন্যে আগুন, তাহলে জুলুম বন্ধ করা ও নিজের ন্যায্য হক ও পাওনা আদায়ের প্রয়োজনে ঘুষ দেয়া জায়েয হবে না কেন?
নিজেদের ধন-মাল অপব্যয় করা
প্রত্যেকের পক্ষে অন্য লোকের ধন-মালের যেমন একটা মর্যাদা আছে, তাতে গোপনে কিংবা প্রকাশ্যে কোনরূপ সীমালংঘনমূলক হস্তক্ষেপ যেমন হারাম, অনুরূপভাবে প্রত্যেকের কাছে তার নিজের ধন-মালেরও একটা মর্যাদা রয়েছে। সেজন্যে সে ধন-মাল অপচয় অপব্যয় করা, নষ্ট করা, ধ্বংস করা, কিংবা ডান হাতে বাম হাতে ছিটানও সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।
তা এজন্যে যে, ব্যক্তিগণের ধন-মালে জাতি ও সমাজ-সমষ্টির হক রয়েছে। সব মালিকের উর্ধ্বে তার মালিকানা অধিকার অবশ্যিই স্বীকৃতব্য। এ করণেই যে নির্বোধ ধন-মালিক স্বীয় ধন-মাল বিনষ্ট করে, সমাজের অধিকার ও কর্তৃত্ব রয়েছে তার ওপর নিয়ন্ত্রণ কায়েম করার। কেননা সে ধন-মালে সমাজ সমষ্টিরও অংশ কয়েছে। এ পর্যায়ে কুরআন মজীদ বলেছেঃ ( আরবি*******************)
তোমরা নির্বোধ লোকদেরকে দিও না তোমাদের ধন-মাল, যাকে আল্লাহ্ তা’আলা তোমাদের জন্যে উপজীব্য বা প্রতিষ্ঠার বাহন বানিয়েছেন, আর তাদের রিযক দাও তা থেকে এবং তাদের জন্যে ভাল ও উত্তম প্রচলিত কথা বল।
এ আয়াতে আল্লাহ্ তা’আলা মূলত সম্বোধন করেছেন সমাজ-সমষ্টিকেঃ তোমরা দিও না তোমাদের ধন-মাল বলে। যদিও বাহ্যত এ ধন-মাল ব্যক্তিদের নিজ মালিকানার। কিন্তু প্রত্যেক ব্যক্তির ধন-মাল আসলে গোটা সমাজ সমষ্টিরই জাতীয় সম্পদ।
বস্তুত ইসলাম সুবিচার, ইনসাফ ও ভারসাম্যতার দ্বীন। আর মুসলিম উম্মত হচ্ছে মধ্যম অর্থাৎ মধ্যম নীতির ওপর প্রতিষ্ঠিত উম্মত। মুসলমানের আদর্শ হচ্ছে সর্বক্ষেত্রে সুবিচার ও ন্যায়পরতা প্রতিষ্ঠা। এ কারণেই আল্লাহ্ তা’আলা মুমিনদের স্পষ্ট ও কঠোর ভাষায় নিষেধ করেছেন ধন-মালের অপব্যয় ও অপচয় করতে যেমন নিষেধ করেছেন কার্পণ্য ও বখিলি করতে। বলেছেনঃ ( আরবি*******************)
হে আদম সন্তান! তোমরা প্রত্যেকবার মসজিদে উপস্থিতিকালে তোমাদের সৌন্দর্য-অলংকার গ্রহণ কর। আর তোমরা খাও, পান কর, কিন্তু অপব্যয়-অপচয় করবে না। কেননা আল্লাহ্ অপব্যয় অপচয়কারীকে পছন্দ করেন না।
আল্লাহর হারাম করে দেয়া কাজে ধন-সম্পদ ব্যয় করা হলেও অপচয় অপব্যয়ই হবে, যেমন মদ্যপান, বিবেক-বুদ্ধি আচ্ছন্নকারী দ্রব্যাদি, স্বর্ণ-রৌপ্যের পাত্রাদি ক্রয় ইত্যাদি এ ক্ষেত্রে ব্যয় করা ধন-মালের পরিমান কম হোক, বেশি হোক, সবই নিষিদ্ধ।
ধন-মাল নিজের জন্যে বা অন্য লোকদের জন্যে অপব্যয় কারারও কোন অনুমতি নেই ইসলামে। নবী করীম (সা) ধন-মাল বিনষ্ট করতে স্পষ্ট ভাষয় নিষেধ করেছেন। (বুখারী)
অপ্রয়োজনীয় কাজে খুব বেশি অর্থব্যয় ও অপচয় অপব্যয় ছাড়া আর কিছু নয়। এরূপ অপব্যয়-অপচয় মানুষকে সর্বস্বান্ত করে দেয়। শেষ পর্যন্ত নিজের কাছে এমন পরিমাণ সম্পদও থাকে না, যদ্বারা নিজের মৌলিক প্রয়োজনটুকুও পূরণ করা যেতে পারে।
কুরআন মজীদের আয়াতঃ ( আরবি*******************)
লোকেরা তেমার কাছে- হে নবী- জিজ্ঞেস করে, তারা কি ব্যয় করবে? বল- আল-আফওয়া। (সূরা বাকারাঃ ২১৯)
এ আয়াতের তাফসীরে ইমাম ফখরুদ্দীন রাযী লিখেছেনঃ
আল্লাহ্ তা’আলা লোকদের অর্থ সম্পদ ব্যয় করার নিয়ম-পদ্ধতি শিক্ষা দিয়েছেন। উক্ত আয়াতে নবী করীম (সা)-কে সম্বোধন করে বলেছেনঃ আত্মীয়দের তাদের হক দাও, মিসকীন ও মুসাফিরকেও এবং বেহুদা অর্থ ব্যয় করবে না। বেহুদা ব্যয়কারীরা শয়তানের ভাই পর্যায়ে গণ্য। (আল-ইমরান-২৬) এবং বলেছেনঃ তুমি তোমরা হস্ত নিজের গলার সঙ্গে বেঁধে রেখো না, আর তাকে একেবারে খুলেও দিওনা। (আল-ইমরান-২৯) বলেছেনঃ যারা ব্যয় করে, কিন্তু না অপব্যয় করে, না সংকীর্ণতার প্রশ্রয় দেয় (আল-ফুরকান-৬৭) আর নবী করীম (সা) বলেছেনঃ তোমাদের কারো কাছে ধন-মাল থাকলে তার ব্যয় শুরু করবে নিজের থেকে। পরে যারা তার ভরণ-পোষণের দায়িত্বাধীন লোক তাদের জন্যে আর তাদের পরে অন্যান্যদের জন্যে ব্যয় করবে। (মুসলিম) বলেছেনঃ সর্বোত্তম সাদকা হচ্ছে তা যা করা হলে ব্যক্তিকে সচ্ছল থাকতে দেয়। (তাবারানী) হযরত জাবীর ইবনে আবদুল্লাহ (রা) বলেনঃ আমরা রাসূলে করীম (সা)-এর দরবরে উপস্থিত ছিলাম। এক ব্যক্তি ডিমের সমান পরিমাণ স্বর্ণ নিয়ে তাথায় উপস্থিত হলো এবং বললঃ এটা দান হিসেবে কবুল করুন। আল্লাহর শপথ। আমার কাছে এ ছাড়া আর কিছু নেই। নবী করীম (সা) তার দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলেন। কিন্তু সে ব্যক্তি আবার সম্মুখে উপস্থিত হলো। তখন তিনি বললেনঃ দাও। খুব অসন্তুষ্টি ও ক্রোধ সহকারে তা গ্রহণ করে সেটি তার দিকে এমনভাবে নিক্ষেপ করলেন যে, কারো দেহে লেগে গেলে সে আঘাত পেত। পরে বললেনঃ তোমাদের এক-একজন তার সমস্ত ধন-সম্পদ নিয়ে আসে, পরে সে লোকদের সামনে হস্ত প্রসারিত করে ভিক্ষার জন্যে বসে। দান সাদকা তো তা-ই যা সচ্ছল অবস্থার ব্যক্তির সচ্ছলতাকে অক্ষুণ্ণ রেখে করা হবে। এটা নিয়ে নাও, আমার কোন প্রয়োজন নেই তাতে। (আবূ দাঊদ, হাকেম) নবী করীম (সা) তাঁর ঘরের লোকদের জন্যে এক বছরের খাবার জমা করে রাখতেন। (বুখারী)। বুদ্ধিমানরা বলেন, বেশি বাড়াবাড়ি ও প্রয়োজনের চাইতেও কম- এ দুই প্রান্তিকের মধ্যবর্তী নীতিই উত্তম। প্রয়োজনের অতিরিক্ত ব্যয় করা বেহুদা খরচ। আর কম ব্যয় করা কার্পণ্য, বখিলি। ভারসাম্যপূর্ণ নীতিই সর্বোত্তম আর ‘বল আল-আফওয়া’ বলে তা-ই বলেছেন আল্লাহ্ তা’আলা। এ সূক্ষ্ম ও নিগূঢ় তত্ত্ব অনুধাবন ও সংরক্ষণের ওপরই মুহাম্মাদী শরীয়ত নির্ভরশীল। কেননা ইয়াহূদী শরীয়ত কৃচ্ছতা কঠোরতার ওপর প্রতিষ্ঠিত। আর খ্রিস্টানদের ধর্ম-বিধান পরম ঔদার্য ও ঢিলা নীতির অনুসারী। এ সব ব্যাপারে মুহাম্মাদী শরীয়তই মধ্যম নীতির ধারক ও প্রবর্তক। এ কারণে তা অপর শরীয়তগুলোর তুলনায় অতীব পূর্ণাঙ্গ ও পূর্ণ পরিণত বিধান (তাফসীর, ফখরুদ্দীন রাযী, ৬ষ্ঠ খণ্ড)
অমুসলিমের সাথে সম্পর্ক
দ্বীন-ইমলামের বিরুদ্ধবাদীদের সাথে আচার-আচরণ অবলম্বনের ব্যাপারে ইসলামের নীতি ও আদর্শকে সংক্ষেপে বলতে হলে কুরআন মজীদের দুটি আয়াতের উল্লেখই যথেষ্ট। এ আয়াত দুটি এ পর্যাযে ব্যাপক সংবিধান হওয়ার উপযুক্ত। তা হচ্ছে, আল্লাহ্ তা’আলা ইরশাদ করেছেনঃ ( আরবি*******************)
আল্লাহ্ তা’আলা তোমাদের সেই লোকদের সাথে ভাল ও সুবিচারমূলক আচরণ গ্রহণ করতে নিষেধ করছেন না, যারা দ্বীনের ব্যাপারে তোমাদের সাথে যুদ্ধ করেনি এবং তোমাদের ঘর থেকে তোমাদের বহিষ্কৃত করেনি। আল্লাহ্ তো সুবিচারকারীদের পছন্দ করেন। তিনি তোমাদের বিরত রাখছেন শুধু এ থেকে যে, তোমরা বন্ধুতা করবে না তাদের সাথে, যারা দ্বীনের ব্যাপারে তোমাদের সাথে যুদ্ধ করেছে ও তোমাদের ঘর থেকে তোমাদের বহিষ্কৃত করেছে এবং তোমাদের বহিষ্কৃতকরণে পরস্পরের সাথে সহযোগিতা করেছে। এ লোকদের সাথে যারা বন্ধুতা করবে, তারাই জালিম।
যাদের সাথে মুসলমানদের যুদ্ধ বা কোনরূপ শত্রুতা নেই, যারা দ্বীনের ব্যাপার নিয়ে মুসলমানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেনি ও তাদের ঘর থেকে বহিষ্কৃতও করেনি, প্রথমোক্ত আয়াতে তাদের প্রতি শুধু সুবিচার ও ন্যায়পরতা গ্রহণের উৎসাহ দেয়া হয়নি; বরং তাদের প্রতি ভাল ও শুভ আচরণ করণ ও তাদের কল্যাণ সাধনের জন্যে উৎসাহিত করা হয়েছে। আয়াতে ব্যবহৃত ( আরবি*******************) শব্দটি কল্যাণ ও মঙ্গলের ব্যাপক অর্থবোধক, সুবিচার ও ন্যায়পরতারও ঊর্ধ্বে তা, মানবীয় অধিকারের সর্বোচ্চ মান বুজে থাকেন মুমলমানরা এই শব্দ থেকে। যেমন ( আরবি*******************) বলতে পিতামাতার অধিকার আদায়ে পূর্ণ মাত্রায় কল্যাণ সাধন বুঝে থাকে। এই পর্যায়ে কুরআনের কথা হলোঃ ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ্ সুবিচার ও ন্যায়পরতাকারীদের ভালবাসেল।’ আর ঈমানদার লোক মাত্রই সব সময় সে কাজ করতেই অধিক ভালবাসে, তৎপর হয়, যা আল্লাহ্ পছন্দ করেন- ভালবাসেন। এতো সর্বজনবিদিত।
‘আল্লাহ্ তোমাদের নিষেধ করছেন না’ কথায় ভাল আচরণ গ্রহণ ইপ্সিত হওয়াটার বিপরীত কিছু বোঝায় না। কথা বলার এই ধরনটি গ্রহণ করা হয়েছে এজন্যে যে, মুসলমানরা হয়ত মনে করতে পারেন যে, দ্বীনের বিরুদ্ধপন্থীরা বুঝি ভাল আচরন ও ন্যায়পরতা পাওয়ার অধিকারী নয়। এই ভুল ধারনা দূর করার উদ্দেশ্রে স্পষ্ট করে বলা হলো যে, আল্লাহ্ বিরোধীদের সাধে ভাল আচরণ গ্রহণ, বন্ধুতা ও সুবিচার করা থেকে বিরত রাখেন না- তা করতে নিষেধ করছেন না। তিনি শুধু সেসব লোকদের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রাখতে নিষেধ করেন যারা মুসলমানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত এবং তাদের বিরুদ্ধে আগ্রাসন গ্রহণ করছে।
এখানকার এ কথার ধরন ঠিক অপর একটি আয়াতের মতোই। আয়াতটি হচ্ছেঃ ( আরবি*******************)
যে লোক হজ্জ্ব করল কিংবা উমরা করল, তাদের ওপর কোন দোষ নেই যদি তারা সাফা-মারওয়ার তওয়াফ করে।
কথা বলার এ ভঙ্গির কারণ হচ্ছে কতিপয় লোক জাহিলিয়াত আমলের নিদর্শনাবলীর কারণে ইসলামের আমলেও পর্বতদ্বয়ের তওয়াফ করতে দ্বিধাবোধ করেছিলেন, সেই দ্বিধা-সংকোচ দূর করাই প্রথম লক্ষ্য। ‘দোষ নেই’ বলা হলো দ্বিধা দূর করার উদ্দেশ্যে, যদিও এ দুটো পর্বতের তাওয়াফ করা ওয়াজিব এবং হজ্জের জরুরী অনুষ্ঠানের মধ্যে গণ্য।
আহলি কিতাবের প্রতি বিশেষ সুবিধা দান
ইসলাম যখন দ্বীন-ইসলামের বিরোধীদের সাথেই সর্বোচ্চ মানের ভাল ব্যবহার ও ন্যায়পরতা গ্রহণ থেকে নিষেধ করে না, মূর্তি পূজারী মুশরিক হলেও নয়- যেমন প্রথমে উদ্ধৃত আয়াতদ্বয়ে বলা হয়েছে, যা আরবের মুশরিকদের সম্পর্কে নাযিল হয়েছিল। তখন আহলি কিতাব- ইয়াহূদী ও খ্রিস্টানদের প্রতি যে ইসলাম বিশেষ সুবিধাদি দান করবে- তারা ইসলামী দেশের অধিবাসী হোক কি তার বাইরে- তা তো অতি স্বাভাবিক।
কুরআন মজীদে এই ইয়াহূদী খ্রিস্টানদের সম্বোধন করা হয়েছে আহলি ‘কিতাব’- সেই লোক যাদের কিতাব দেয়া হয়েছে- বলে। এ থেকে বোঝাতে চেয়েছে যে, আসলে এরা আল্লাহর নাযিল করা দ্বীনের ধারক লোক। অতএব মুসলমান ও তাদের মাঝে নিকটাত্মীয়তা সম্পর্ক রয়েছে। আল্লাহ্ তা’আলা তাঁর নবী-রাসূলগণকে যে মৌল দ্বীন ও বিধান সহ পাঠিয়েছেন, আসলে তা এক ও অভিন্ন। একটি আয়াত উল্লেখ্যঃ ( আরবি*******************)
তিনি তোমাদের জন্যে সেই দ্বীনই সুনির্দিষ্ট করে দিয়েছেন, যার নির্দেশ তিনি নূহকে দিয়েছিলেন, আর যা আমরা তোমার প্রতি ওহী করে পাঠিয়েছি, আর তার পথ-নির্দেশ করেছিলাম ইবরাহীম, মূসা ও ঈসকে এই বলে যে, তোমরা সকলে এই দ্বীনকে কায়েম কর এবং এ ব্যাপারে ভিন্ন ভিন্ন ও ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন হয়ে যেও না। (সূরা শূরাঃ ১৩)
মুসলমানদের তো নির্দেশ দেয়া হয়েছে আল্লাহর নাযিল করা সমস্ত কিতাবের প্রতি ঈমান গ্রহণের জন্যে। তাই সব নবী-রাসূলের প্রতি ঈমান গ্রহণ মুসলমানের কর্তব্য। এছাড়া তাদের ঈমান সত্য ও যথার্থই হতে পারে না। বলা হয়েছেঃ ( আরবি*******************)
তোমরা বলঃ আমরা ঈমান এনেছি আল্লাহর প্রতি ও যা নাযিল হয়েছে আমাদের প্রতি, আর যা নাযিল হয়েছে ইবরাহীম, ইসমাঈল, ইসহাক, ইয়াকুব ও বংশধরদের প্রতি, আর যা দেয়া হয়েছে মূসা, ঈসা ও আল্লাহর প্রেরিত নবীগণের প্রতি- আমরা তাদের মধ্যে কোনরূপ পার্থক্য করি না, আমরা তো সেই এক আল্লাহরই অনুগত। (সূরা বাকারাঃ ১৩৬)
আহলি কিতাবের লোকেরা যখন কুরআন পাঠ করে তখন তারা দেখতে পায়, কুরআনে তাদের ধর্ম গ্রন্থের ও নবী-রাসূলগণের উচ্চ প্রশংসা করা হয়েছে। অতএব মুসলমানরা যখন আহলি কিতাবের লোকদের সাথে তর্ক-বিতর্কে অবতীর্ণ হবে, তখন অবশ্যই এমন সব কথাবার্তা বলা থেকে বিরত থাকবে যা পারস্পরিক ঘৃণা ও বিদ্বেষ বৃদ্ধি করে। বলা হয়েছেঃ ( আরবি*******************)
আহলি কিতাবের সাথে বিতর্ক করো না- তবে উত্তম পন্থায়, তাদের ছাড়া, যারা ওদের মধ্যে জালিম। আর বল, আমরা ঈমান এনেছি সেই জিনেসের প্রতি, যা আমাদের প্রতি নাযিল করা হয়েছে, সে জিনিসেরও যা তোমাদের প্রতি নাযিল হয়েছে। আমাদের ইলাহ ও তোমাদের ইলাহ এক ও অভিন্ন। আর আমরা তাঁরই অনুগত- আত্মসমর্পিত। (সূরা আনকাবুতঃ ৪৬)
আহলি কিতাবের সাথে পানাহার করা ও তাদের যবেহ করা জন্তু খাওয়া এবং তাদের মেয়ে বিয়ে করা- যদিও বিয়েটা পরম প্রীতি ও ভালবাসার লীলাকেন্দ্র- জায়েয করে দিয়ে ইসলাম যে উদার নীতি অবলম্বন করেছে তার বিস্তারিত আলোচনা আমরা করেছি। এ পর্যায়ে নিম্নোক্ত আয়াতটি উল্লেখ্যঃ ( আরবি*******************)
আহলি কিতাবের খাবার তোমাদের জন্যে হালাল, তোমাদের খাবারও হালাল তাদের জন্যে। আর সুরক্ষিতা পবিত্রা নারী মুসলমানদের ও তোমাদের পূর্বে কিতাব পাওয়া লোকদের- তাও হালাল। (সূরা মায়িদাঃ ৫)
আহলি কিতাবের ব্যাপারে এ হচ্ছে ইসলামের সাধারণ নীতি। তবে খ্রিস্টানদের প্রতি একটা বিশেষ ধরনের নীতি অবলম্বিত হয়েছে। কুরআন তো তাদের সম্পর্কে বলেছে, তারা মুসলমানদের হৃদয়ের নিবিড় নৈকট্যে অবস্থিত। বলেছেঃ ( আরবি*******************)
তোমরা ঈমানদার লোকদের বন্ধুত্বে নিকটবর্তী পাবে সেই লোকদের, যারা বলেছেঃ আমরা নাসারা-খ্রিস্টান। তা এজন্যে যে, তাদের মধ্যে বহু পণ্ডিত বিদ্বান রয়েছে, আর তারা অহংকার করে না। (সূরা মায়িদাঃ ৮২)
যিম্মি
উপরে যেসব উপদেশ উদ্ধৃত হয়েছে, তা সকল আহলি কিতাবকেই শামিল করে নেয়। তারা যেখানেই বসবাস করুক, কারো ব্যাপারে কোন ব্যতিক্রম নেই। তবে ইসলামী রাষ্ট্রের ছায়াতলে যে সব অমুসলিম বাস করে, তাদের জন্যে ইসলাম বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। মুসলিম পরিভাষায় তাদের বলা হয় ‘যিম্মী’। ‘যিম্মী’ শব্দের অর্থ ‘চুক্তি’- ওয়াদা। এ শব্দটি জানিয়ে দেয় যে, এদের জন্যে আল্লাহর এবং তার রাসূলের একটা ওয়াদা বয়েছে। মুসলিম জামায়াত সে ওয়াদা পালনে বাধ্য। আর তা হচ্ছে এই যে, তারা ইসলামের সুশীতল ছায়াতলে সম্পূর্ণ নিরাপদ ও নিশ্চিন্ত- জীবন যাপন করতে পারবে।
আধুনিক ব্যাখ্যায় এরা ইসলামী রাষ্ট্রের অধিবাসী- নাগরিক। প্রথম দিন থেকেই মুসলিম সমাজ এ সময় পর্যন্ত এ ব্যাপারে সম্পূর্ণ একমত যে, ইসলামী রাষ্ট্রে মুসলিমদের জন্যে যে অধিকার, অমুসলিমদের জন্যেও সেই অধিকার। তাদের যা দেয়-দায়িত্ব, এদেরও দায়-দায়িত্ব তা-ই। তবে শুধু আকিদা, বিশ্বাস ও দ্বীন-সংক্রান্ত ব্যাপারাদিতে তাদের সাথে কোন মিল বা সামঞ্জস্য নেই। কেননা ইসলাম তাদেরকে তাদের দ্বীন ধর্মের ওপর বহাল থাকার পূর্ণ আযাদী দিয়েছেন।
যিম্মীদের সম্পর্কে নবী করীম (সা) খুব কড়া ভাষায় মুসলমানদের নসীহত করেছেন এবং সেই নসীহতের বিরোধিতা বা লংঘন হলে আল্লাহর অসন্তোষ অবধারিত বলে জানিয়েছেন। হাদীসে নবী করীমের কথা উদ্ধৃত হয়েছেঃ ( আরবি*******************)
যে লোক কোন যিম্মীকে কষ্ট বা জ্বালা-যন্ত্রণা দিল, সে যেন আমাকে কষ্ট ও জ্বালা-যন্ত্রণা দিল। আর যে লোক আমাকে জ্বালা-যন্ত্রণা ও কষ্ট দিল, সে মহান আল্লাহকে কষ্ট দিল। (তাবারানী ফিল আওসত)
( আরবি*******************) যে লোক কোন যিম্মীকে কষ্ট দিল, আমি তার বিরুদ্ধে মামলা দায়েরকারী। আর আমি যার বিরুদ্ধে মামলা দায়েরকারী, তার বিরুদ্ধে কিয়ামতের দিন আমি মামলা লড়ব। (আল-খাতিব)
( আরবি*******************) যে লোক কোন চুক্তিবদ্ধ ব্যক্তির ওপর জুলুম করবে কিংবা তার হক নষ্ট করবে অথবা শক্তি-সামর্থ্যের অধিক বোঝা তার ওপর চাপাবে কিংবা তার ইচ্ছা ও অনুমতি ছাড়া তার কোন জিনিস নিয়ে নেবে, কিয়ামতের দিন আমি তার বিরুদ্ধে মামলা লড়ব। (আবূ-দাঊদ)
রাসূলে করীম (সা)-এর খলীফাগণ এসব অমুসলিম নাগরিকদের অধিকার আদায় ও মর্যাদা রক্ষায় সব সময় সচেতন-সতর্ক থাকতেন। ইসলামের ফিকাহবিদগণ মতপার্থক্য থাকা সত্ত্বেও এ সব অধিকার ও মর্যাদার ওপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করেছেন।
মালিকী মাযহাবের ফিকাহবিদ শিহাবুদ্দীন আল-কিরাফী বলেছেনঃ
যিম্মীদের সাথে কৃত চুক্তি আমাদের উপর তাদের কতিপয় আধিকার ওয়াজিব করে দিয়েছে। কেননা তারা আমাদের প্রতিবেশী হয়ে আমাদের সংরক্ষণ ও নিরাপত্তার অধীন এসে গেছে। আল্লাহ্, রাসূল ও দ্বীন-ইসলাম তাদের নিরাপত্তা দিয়েছে। কাজেই যে লোক তাদের ওপর কোন রকমের বাড়াবাড়ি করবে সামান্য মাত্রায় হলেও তা আল্লাহ্ তাঁর রাসূল এবং দ্বীন-ইসলামের দেয়া নিরাপত্তা বিনষ্ট করার অপরাধে অপরাধী হবে। তাদের খারাপ কথা বলা, তাদের মধ্যে থেকে কারো গীবত করা বা তাদের কোনরূপ কষ্ট জ্বালা দেয়া অথবা এ ধরনের কাজে সহযোগিতা করা ইত্যাদি সবই এ নিরাপত্তা বিনষ্টের দিক।
যাহেরী মাযহাবের ফিকাহবিদ ইবনে হাজম বলেছেনঃ
যেসব লোক যিম্মী, তাদের ওপর যদি কেউ আক্রমণ করতে আসে, তাহলে তাদের পক্ষ হয়ে সশস্ত্র যুদ্ধ করার জন্যে অগ্রসর হওয়া ও তাদের জন্যে মৃত্যুবরণ করা আমাদের কর্তব্য। তাহলেই আমরা আল্লাহ্ ও রাসূলের নিরাপত্তা দেয়া লোকদের সংরক্ষণ করতে পারব। কেননা এ রূপ অবস্থায় তাদের অসহায় ও সহজ শিকার হতে দেয়া নিরাপত্তা দেয়ার দায়িত্ব পালনের পক্ষে বড্ড ক্ষতিকারক হবে।
অমুসলিমদের সাথে সম্পর্কের রূপ
প্রশ্ন উঠতে পারে, অমুসলিমদের সাথে ভাল ব্যবহার ও সুসম্পর্ক স্থাপন কি করে সম্ভব, যখন কুরআন নিজেই কাফিরদের সাথে বন্ধুত্ব সম্পর্ক স্থাপন করতে ও তাদের নিজেদের মিত্র ও বন্ধু বানাতে নিষেধ করছে?
যেমন কুরআনে বলা হয়েছেঃ ( আরবি*******************)
হে ঈমানদার লোকেরা! তোমরা ইয়াহূদী ও খ্রিস্টানদের বন্ধু-পৃষ্ঠপোষক রূপে গ্রহণ করো না। ওরাই পরস্পরের বন্ধু! অতএব তোমাদের যে লোকই ওদের বন্ধু-পৃষ্ঠপোষকরূপে গ্রহণ করবে, সে তাদের মধ্যে গণ্য হবে। নিশ্চেয়ই আল্লাহ্ জালিমদের হেদায়েত করেন না। তুমি লক্ষ্য করছ, যাদের অন্তরে রোগ রয়েছে, তারা তাদেরা মধ্যেই দৌড়াদৌড়ি করে।
এ প্রশ্নের জবাব হচ্ছে, এসব আয়াত সাধারণভাবে প্রযোজ্য নয়। আর সব ইয়াহূদী-খ্রিস্টান-কাফির একই রকমের নয়। যদি তা-ই মনে করা হয়, তাহলে এ পর্যায়ের অন্যান্য আয়াত ও দলিল- যাতে যে কোন ধর্মাবলম্বী লোকদের সাথে কল্যাণকামী ও সদাচারী লোকদের সাথে ভাল আচরণ ও সুসম্পর্ক রক্ষার বৈধতা ঘোষিত হয়েছে- এর সাথে বৈপরীত্য ঘটবে। আহলি কিতাবের সাথে বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপন ও তাদের মেয়ে বিয়ে কারার অনুমতিও তো রয়েছে। অথচ বিয়ে সম্পর্কে আল্লাহ্ তা’আলা বলেছেনঃ ( আরবি*******************)
তিনি তোমাদের স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে গভীর প্রেম-প্রীতি, ভালবাসা ও দয়া সহানুভূতি সম্পন্ন সম্পর্ক স্থাপন করে দিয়েছেন।
আর খ্রিস্টানদের সম্পর্কে বলেছেনঃ ( আরবি*******************)
যারা বলেছেঃ আমরা নাসারা-খ্রিস্টান- ঈমানদার লোকদের সাথে বন্ধুতার ব্যাপারে তাদেরকে তুমি নিকটবর্তী পাবে।
বস্তুত যেসব আহলি কিতাবের সাথে বন্ধুতার সম্পর্ক স্থাপন নিষেধ রয়েছে তা প্রযোজ্য হচ্ছে দ্বীন-ইসলামে দুশমন ও মুসলমানের সাথে যুদ্ধ্যমান লোকদের ব্যাপারে। এ লোকদের সাহায্য করা, পৃষ্ঠপোষকতা করা- তাদের গোপন তথ্য জানান ও জাতীয় স্বার্থের বিরুদ্ধে তাদের মিত্র বানিয়ে তাদের অতি কাছে নিয়ে আসা কোন মুসলমানের পক্ষেই আদৌ জায়েয নয়। অন্যান্য আয়াতে এ কথা স্পষ্ট করে বলা হয়েছে। একটি আয়াত উল্লেখ করা যায়ঃ ( আরবি*******************)
হে ঈমানদার লোকেরা! তোমরা তোমাদের ছাড়া অন্যদের অন্তরঙ্গ বন্ধুরূপে গ্রহণ করবে না। তারা তোমাদের ক্ষতি সাধন করতে কোন ত্রুটিই রাখবে না। যা তোমাদের জন্যে কষ্টদায়ক, ক্ষতিকর, বিপদজনক তা-ই তাদের মনপুতঃ তাদের শত্রুতা হিংসা-ক্রোধ তাদের মুক থেকেই প্রকাশিত হয়েছে। আর যা কিছু তারা নিজেদের মনে লুকিয়ে রেখেছে, তা তো তার চেয়েও অনেক বড়, ভীষণ। আমরা তোমাদের জন্যে আইন বিধান স্পষ্ট করে বলেছিলাম। এখন তোমরা যদি বুঝে শুনে কাজ কর। তোমরা সতর্ক থাকবে, তোমরা ওদের খুব ভালবাস; কিন্তু ওরা তোমাদের আদৌ পছন্দ করে না।
যাদের সাথে বন্ধুতার সম্পর্ক স্থাপন নিষিদ্ধ, উপরিউক্ত আয়াতে তাদের পরিচয় স্পষ্ট ভাষায় দিয়ে দেয়া হয়েছে। আসলে ওরা মুসলমানদের প্রতি চরম বক্রতা পোষণ করে অন্তরে লুকিয়ে রাখে। তা সত্ত্বেও তাদের মুখ থেকে তার নিদর্শনাদি প্রকাশ হয়ে পড়ে।
আল্লহ্ তা’আলা বলেছেনঃ ( আরবি*******************)
যারা আল্লাহ্ ও পরকালের প্রতি ঈমানদার, তাদের তুমি কখনও এমন লোকদের প্রতি বন্ধুতা পোষণ করতে দেখবে না, যারা আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলের সাথে শত্রুতা পোষাণ করে। এরা তাদের বাপ-দাদা, সন্তান-সন্তাতি বা বংশের লোক হলেও। (সূরা মুজাদিলাঃ ২২)
বস্তুত আল্লাহ্ ও তার রাসূলের সাথে শত্রুতা পোষণ নিছক কুফরি নয়। তা হচ্ছে ইসলাম ও মুসলমানদের বিরুদ্ধে আগ্রাসন।
আল্লাহ্ বলেছেনঃ ( আরবি*******************)
হে ঈমানদার লোকেরা! তোমরা আমার শত্রু ও তোমাদের শত্রুকে বন্ধু- পৃষ্ঠপোষকরূপে গ্রহণ করো না- বানিও না। তোমরা তো ওদের প্রতি পরম বন্ধুতা-প্রীতি দেখাও। কিন্তু তোমাদের কাছে যে মহাসত্য এসেছে, ওরা তার প্রতি কুফরি করেছে। ওরা রাসূলকে এবং তোমাদের বহিষ্কৃত করে শুধু এই অপরাধে যে, তোমরা ঈমানদার তোমাদের রব্ব আল্লাহর প্রতি।
মক্কার যেসব মুশরিক আল্লাহ্ ও রাসূলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছিল এবং মুসলমানদেরকে তারা তাদের ঘর-বাড়ি থেকে বহিষ্কৃত করেছিল। শুধু মাত্র একটুকু অপরাধে যে, তাঁরা বলেছিলেন, আমাদের রব্ব হচ্ছেন আল্লাহ্। উপরিউক্ত আয়াত তাদের সম্পর্কেই নাযিল হয়েছিল। তাই এ ধরনের লোকদের সাথে বন্ধুতা-ভালবাসা স্থাপন করা মুসলমানদের জন্যে কখনোই জায়েয নয়। কিন্তু তা সত্ত্বেও ওদের অন্তরের পরিষ্কার পরিছন্ন হওয়ার ব্যাপারে কুরআন চূড়ান্তভাবে নৈরাশ্যের কথা বলেনি। বরং ওদের এ মন-মানসিকতারও যে পরিবর্তন পতে পারে এবং এখনকার মতো শত্রুতার মনোভাব একদির না-ও থাকতে পারে, এ আশাবাদই প্রকাশ করা হয়েছে। উপরোদ্ধৃত আয়াতের পরই বলা হয়েছেঃ ( আরবি*******************)
এটা খুব একটা অসম্ভব বা বিস্ময়কর নয় যে, আল্লাহ্ তোমাদের ও যাদের প্রতি তোমরা শত্রুতা পোষণ কর- যাদের শত্রুতার তোমরা আশংকা কর, তাদের মধ্যে বন্ধুতা-প্রীতির সৃষ্টি করে দেবেন। আল্লহ্ তো মহাশক্তিমান। আর আল্লাহ্ ক্ষমাশীল, দয়াবান। (সূরা মুমতাহিনাঃ ৭)
এটা কুরআনের সতর্ক বাণী। এ থেকে স্পষ্ট বোঝা যায় যে, শত্রুতা পোষণ ও ঝগড়া-বিবাদের একটা সীমা নির্ধারণ একান্তই প্রয়োজনীয়। এর আলোকে বিচার করলে শত্রুতার মাত্রা তো অনেক হ্রাস পেয়ে যায়। হাদীসেও তাই বলা হয়েছেঃ ( আরবি*******************)
তোমার শত্রুর প্রতি বিদ্বেষ ভাবাটা খানিকটা কম করে রাখবে। কেননা সে তো একদিন তোমার একজন বন্ধুও হয়ে যেতে পারে।
শত্রু পক্ষ যখন খুব শক্তিশালী হয় যে, লোকেরা তাদের প্রতি আশাও পোষণ করে, তাদের ভয়ও করে, তাহলে এরূপ অবস্থায় তাদের সাথে বন্ধুতা-প্রীতির সম্পর্ক স্থাপন অধিকতর বেশি ও তীব্রভাবে হারাম হয়ে যায়। কেননা এরূপ অবস্থায় মুনাফিক ও অন্তরের রোগীরাই তাদের সাথে বন্ধুতা করার ব্যাপারে খুব অগ্রসর থাকবে। তাদের সাথে একটা গোপন সম্পর্ক রক্ষা করে চলবে, যেন কাল তা তাদের ফায়াদা দিতে পারে। যেমন আল্লাহ্ বলেছেনঃ ( আরবি*******************)
যাদের অন্তরে রোগ, ওদের দেখবে তারা সব সময় সেই লোকদের মধ্যে দৌড়াদৌড়ি করে- তৎপরতা দেখায়। বলে- আমরা ভয় পাই। আমরা বিপদের আবর্তে পরে না যাই। কিন্তু খুব সম্ভব আল্লাহ্ তোমাদের জয়দান করবেন কিংবা নিজের কাছ থেকে অন্য কিছু প্রকাশ করে দেবেন, তখন এরা নিজেদের অন্তরে যা কিছু লুকিয়ে রেখেছে তাতে লজ্জিত ও অনুতপ্ত হবে। (সূরা মায়িদাঃ ৫২) ( আরবি*******************)
মুনাফিকদের সুসংবাদ দও যে, তাদের জন্যে পীড়াদায়ক আযাব নির্দিষ্ট রয়েছে। ওরা তারাই, যারা মুমিনদের বাদ দিয়ে কাফিরদের সাথে বন্ধুতা করে- তাদের পৃষ্ঠপোষক বানায়। ওরা কি তাদের কাছে ইজ্জত বা শক্তি-ক্ষমতা পেতে চায়? আসলে সমস্ত ইজ্জত-শক্তি ক্ষমতা-আধিপত্য সবই আল্লাহর। (সূরা আন-নিসাঃ ১৩৮-১৩৯)
অমুসলমানের কাছে সাহায্য চাওয়া
মুসলিম অমুসলিমের কাছে দ্বীনী ব্যাপারাদি ছাড়া চিকিৎসা, শিল্প, কৃষি প্রভৃতি বৈজ্ঞানিক বিষয়াদিতে সাহায্য চাইতে পারে, তাতে কোন দোষ নেই। শাসন কর্তৃপক্ষ এবং সাধারণ মানুষ সকলের জন্যেই এ অনুমতি রয়েছে। তবে একথা অত্যধিক গুরুত্বপূর্ণ যে, এ সব ক্ষেত্রেই মুসলমানদের স্বনির্ভরতা ও স্বয়ং-সম্পূর্ণতা অর্জন করা একান্তই কর্তব্য।
নবী করীম (সা) নিজে অমুসলিমের কাছ থেকে বিভিন্ন কাজে ও ক্ষেত্রে মজুরীর বিনিময়ে সাহায্য নিয়েছেন, কাজ করিয়েছেন। হিজরত করার সময় পথ দেখানর উদ্দেশ্যে তিনি মক্কার মুশরিক আবদুল্লাহ ইবনে আরীকতের সাহায্য গ্রহণ করেছেন। আলিমগণ বলেনঃ কেউ কাফির হলে যে-কোন বিষয়েই তাকে বিশ্বাস করা যাবে না, এমন কথা জরুরী নয়। মদীনার পথে মক্কা ত্যাগ করার মতো কাজে পথ দেখিয়ে সাহায্য করার জন্যে একজন মুমরিকের সাহায্য গ্রহণ করায় এ পর্যায়ের সব দ্বিধা-দ্বন্দ্ব সহজেই দূর হয়ে যায়।
সবচেয়ে বড় কথা, মুসলমানের নেতার পক্ষে অমুসলিমের কাছে সাহায্য চাওয়া বিশেষ করে আহলিকিতাবের লোকদের কাছে- সম্পূর্ণ জায়েয বলে বিশষজ্ঞ অভিমত ব্যক্ত করেছেন। যুদ্ধে এদের শরীক করা ও বিজয় লাভ হলে মুসলমানদের ন্যায় তাদেরও গনিমতের মাল দিয়েছেন। হুনাইন যুদ্ধে ছওয়ান ইবনে উমাইয়া মুশরিক পওয়া সত্ত্বেও রাসূলে করীম (সা)-এর সঙ্গী হয়ে যুদ্ধ করেছেন।
তবে শর্ত এই যে, যে-অমুসলিমের সাহায্য গ্রহণ করা হবে, মুসলমানদের ব্যাপারে তার ভাল মত ও দৃষ্টিভঙ্গি থাকতে হবে। যদি তাদের বিশ্বাস করা না যায়, তাহলে অবশ্য সাহায্য গ্রহণ জায়েয হবে না। কেননা বিশ্বাস-অযোগ্য মুসলমানের সাহায্য গ্রহণই যখন নিষিদ্ধ, তখন বিশ্বাস-অযোগ্য কাফিরের সাহায্য গ্রহণের তো কোন প্রশ্নই উঠে না।
মুসলিম অমুসলিমকে হাদিয়া তোহফা দিতে পারে, তার দেয়া হাদিয়া তোহফা গ্রহণও করতে পারে। নবী করীম (সা) অমুসলিম রাজা-বাদশাদের দেয়া হাদিয়া-তোহফা কবুল করেছেন। এ পর্যায়ে বহু সংখ্যাক হাদীস বর্ণিত ও উদ্ধৃত হয়েছে। নবী-বেগম হযরত উম্মে সালমা (রা)-কে নবী করীম (সা) বলেছিলেনঃ ( আরবি*******************)
আমি নাজ্জাশী বাদশাকে রেশমী চাদর ইত্যাদি তোহফা পাঠিয়েছিলাম।
বস্তুত ইসলাম মানুষকে মানুষ হিসেবেই মর্যাদা দেয়, সম্মান করে। তাহেলে আহলি কিতাব, যিম্মী ও চুক্তিবদ্ধ কোন মানুষের সাথে অনুরূপ মর্যাদাপূর্ণ ব্যবহার ও আচরণ অবলম্বিত হবে না কেন?
নবী করীম (সা)-এর কাছ দিয়ে একটি জানাযা নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। তা দিখে তিনি দাঁড়িয়ে গেলেন। তখন তাঁকে বলা হল- ইয়া রাসূলুল্লাহ্, এ তো এক ইয়াহূদীর লাশ! তিনি বললেনঃ কেন, ইয়াহূদী কি মানুষ নয়? ইসলামে তো মানুষ মাত্রেরই একটা মান ও মর্যাদা আছে।
ইসলাম একটা সাধারণ রহমত
ইসলাম তো প্রত্যেক প্রাণীর প্রতি দয়া প্রদর্শন করার নির্দেশ দিয়েছেন। এমন কি বাকশক্তিহীন জন্তু-জানোয়ারের প্রতিও কোনরূপ নির্মমতা দেখাতে নিষেধ করেছে। তাহলে কোন অমুসলিম মানুষের সাথে খারাপ ব্যবহার কেমন করে জায়েয হতে পারে মুসলমানদের পক্ষে?
তেরো’শ বছর পূর্ব থেকেই ইসলাম জীব-জন্তুর প্রতি দয়া প্রদর্শন করার নির্দেশ দিয়েছে। তাদের প্রতি দয়া দেখানকে ঈমানের অঙ্গ বলেছে। আর ওদের কোনরূপ কষ্টদানকে জাহান্নামে যাওয়ার কারণ বলে ঘোষণা করেছেন।
নবী করীম (সা) তাঁর সাহাবীদের কাছে বর্ণনা করেছেন, একটি কুকুর পিপাসায় কাতর হয়ে হাঁপাচ্ছিল। তা দেখে এক ব্যক্তি কুপে অবতরণ করে পায়ের ‘মোজা’ খুলে তাতে পানি তুলে কুকুরকে পানি পান করিয়ে তৃপ্ত করে দিয়েছিল। রাসূল করীম (সা) বলেন- আল্লাহ্ তা’আলা তার এ কাজকে পছন্দ করেছেন এবং তার গুনাহ্ মাফ করে দিয়েছেন। সাহাবিগণ জিজ্ঞেস করলেনঃ ( আরবি*******************)
হে রাসূল! জন্তু-জানোয়ারের প্রতি ভাল কাজ করা হলেও কি আমরা সওয়াব পাব? বলেছেনঃ যে কোন জীবন্ত সত্তার প্রতি ভাল ব্যবহার করা হলে অবশ্যই শুভ কর্মফল পাওয়া যাবে। (বুখারী)
আল্লাহর ক্ষমা পাওয়া অনিবার্য করে তোলার এ উজ্জ্বল চিত্রের পাশাপাশি নবী করীম (সা) আর একটি চিত্র অংকিত করেছেন। তা হচ্ছে, আল্লাহর আযাব ও গযব অনিবার্য করে তোলার ছবি। তিনি বলেছেনঃ ( আরবি*******************)
একটি মেয়েলোক জাহান্নামে প্রবেশ করল একটি বিড়ালের সাথে নির্মম আচরণ গ্রহণের দরুন। সে সেটিকে বন্দী করে রেখেছিল- সেটিকে না খাবার দিত, না ছেড়ে মুক্ত করে দিত। ফলে বিড়ালটি পোকা-মাকড় খেয়েও যে বাঁচবে, তাও সম্ভব হয়নি। (বুখারী)
জন্তু-জানোয়ারের ব্যাপারে চূড়ান্ত মাত্রায় গুরুত্বারোপ দেখতে পাই নবী করীমের আচরণে। তিনি একটি গাধাকে দেখলেন, সেটির মুখাবয়বের উপর দাগ দেয়া হয়েছে। তিনি এর প্রতিবাদ করলেন এবং বললেনঃ ( আরবি*******************)
আল্লাহর কসম, এরূপ দাগ দেয়া ঠিক না। আমি তো মুখাবয়ব বাদ দিয়ে অনেক দূরে দাগ দিয়ে থাকি। (মুসলিম)
অপর একটি হাদীসে উদ্ধৃত হয়েছে, একটি গাধা তাঁর কাছ দিয়ে চলে গেল। তিনি দেখলেন, গাধাটির মুখের ওপর দাগানো হয়েছে। তখন তিনি বললেনঃ ( আরবি*******************)
তোমরা কি জানো না যে, আমি অভিশাপ দিয়েছি সেই ব্যক্তিকে, যে জন্তুর মুখের ওপর দাগায় কিংবা মুখের ওপর মারে? (আবূ দাঊদ)
পূর্বেই উল্লেখ করেছি, হযরত ইবনে উমর (রা) কতিপয় লোককে দেখলেন তারা একটি মুরগীকে লক্ষ্য করে তার ওপর তীর নিক্ষেপণ ও লক্ষ্য ভেদের প্রশিক্ষণ গ্রহণ করছে। তখন তিনি বললেনঃ ( আরবি*******************)
যে লোক কোন জীবন্ত জিনিস লক্ষ্যরূপে গ্রহণ করে নিক্ষেপ প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে, নবী করীম (সা) তার ওপর অভিশাপ করেছেন।
হযরত আবদুল্লাহ্ ইবনে আব্বাস (রা) বলেছেনঃ ( আরবি*******************)
নবী করীম (সা) জন্তুগুলোকে পারস্পরিক লড়াইয়ে নিযুক্ত করতে নিষেধ করেছেন। (আবূ দাউদ, তিরমিযী)
তিনি আরও বর্ণনা করেছেনঃ ( আরবি*******************)
নবী করীম (সা) জন্তুকে খাসি করতে তীব্র ভাষায় নিষেধ করেছেন। (বাজ্জার)
জাহিলিয়াতের যুগে লোকেরা জন্তু-জানোয়ারের কান কেটে চিরে দিত। কুরআন এ বীভৎস কাজের প্রতিবাদ জানিয়েছে এবং এটা যে নিতান্ত শয়তানী কর্ম- শয়তানের প্ররোচনাই তা করা হয়, তাও স্পষ্ট করে বলে দিয়েছে।
যবেহ সম্পর্কে আলোচনা প্রসঙ্গে আমরা দেখিয়েছি যে, যবেহর জন্তুটিকেও শান্তি ও সহজতা দানের ওপর ইসলাম যথেষ্ট গুরুত্ব আরোপ করেছে। ছুরি খুব তীক্ষ্ণ শাণিত করতে ও যবেহর পূর্বে সেটি জন্তুর নজরের আড়ালে রাখতে বলেছে।
একটি জন্তুকে দেখিয়ে আর একটিকে যবেহ করতেও নিষেধ করা হয়েছে। জন্তু- জানোয়ারের প্রতি শান্তি দানের এতটা গুরুত্ব দুনিয়ায় কোন ধর্মে বা মতাদর্শে দেয়া হয়েছে কি?