উপার্জন ও পেশা
(আরবী****************)
সেই আল্লাহই তোমাদের জন্যে জমিনকে নম্র-মসৃন বিনীত বানিয়েছেন। অতএব তোমরা তা স্কন্ধসমূহে চল এবং আল্লাহর রিযিক আহার কর।
উপার্জন পর্যায়ে এ হচ্ছে আল্লাহর মৌলিক হেদায়েত। আর তার জন্যে জমিনকে আল্লাহ তা’আলা মানুষের খেদমতের জন্যে নিয়োজিত করেছেন। কাজেই এ নিয়ামত পুরোপুরি কাজে লাগাতে হবে এবং তার পরতে পরতে চেষ্টা ও সাধনা নিয়োজিত করতে হবে। আল্লাহর অনুগ্রহের দান পাওয়ার সন্ধানে।
কর্মক্ষম ব্যক্তির নিষ্কর্মা বসে থাকা হারাম
কোন মুসলমান ইবাদত-বন্দেগীতে নিমগ্ন হওয়ার বা আল্লাহর ওপর নির্ভরতার নাম করে রিযক উপার্জন থেকে বিরত বা বেপরোয়া হয়ে থাকবে তা কিছুতেই হতে পারে না। কেননা আকাশ থেকে স্বর্ণ রৌপ্যের বর্ষণ হবার নয়।
অনুরূপ ভাবে লোকদের দান-সাদকার ওপর নির্ভরশীল হয়ে বসে থাকা এবং জীবিকা উপার্জনের উপায়-উপকরণ হস্তগত হওয়া সত্ত্বেও তা ব্যবহার করে উপার্জনে আত্মনিয়োগ না করা এ পন্থায় নিজের ও নিজ আত্মীয়-স্বজনের প্রয়োজনাবলী পূরণ করতে চেষ্টা না করা কোনক্রমেই জায়েয হতে পারে না। এ পর্যায়ে রাসূলে করীম (সা) বলেছেনঃ
(আরবী*********************)
দান-খয়রাত গ্রহণ করা কোন ধনী লোকদের জন্যে জায়েয নয়, শক্তিমান ও সুস্থ্য ব্যক্তির জন্যেও নয়।
কোন মুসলিম অপর কারো সম্মুখে ভিক্ষার হাত প্রসারিত করবে যার ফলে তার চেহারার ঔজ্জ্বল্য বিলীন হয়ে যাবে এবং স্বীয় মনুষ্যত্বের মান-মর্যাদা অকারণ ক্ষতিগ্রস্ত করবে, নবী করীম (সা) এ ব্যাপারে কঠিন ও কঠোর বাণী উচ্চারণ করেছেন। তিনি বলেছেনঃ (আরবী*****************)
যে ব্যক্তি বিনা প্রয়োজনে ভিক্ষা চায়, সে নিজ হস্তে অঙ্গার অকত্রিত করার মতো ভয়াবহ কাজ করে। (বায়হাকী, ইবনে খাযিমাহ)
তিনি আরও বলেছেনঃ (আরবী***************************)
যে লোক ধনী হওয়ার উদ্দেশ্যে লোকদের কাছে ভিক্ষা চাইবে, সে নিজের চেহারাকে কিয়ামত পর্যন্ত সময়ের জন্যে ক্ষতযুক্ত করে দিল, সে জাহান্নামের গরম পাথর ভক্ষণ করতে বাধ্য হবে। এখানে যার ইচ্ছা নিজের জন্যে এসব জিনিস বেশি পরিমাণে সংগ্রহ করুক, আর যার ইচ্ছা কম করুক। (তিরমীযী)
তাঁর আরও একটি কথাঃ (আরবী******************)
যে ব্যক্তি নিজেকে ভিক্ষা করার কাজে অভ্যস্ত বানায়, সে আল্লাহর সাথে সাক্ষাত করবে এমন অবস্থায় যে, তার মুখমণ্ডলে এক টুকরা গোশতও থাকবে না। (বুখারী, মুসলিম)
এ ভয়াবহ পরিণতি থেকে রক্ষা করার জন্যে নবী করীম (সা) মুসলমানদের ইজ্জতের হেফাযত করেছেন এবং তাদের মধ্যে আত্মসম্মান বোধ, অন্যায় কাজ থেকে নিজেকে দূরে রাখা ও ভিক্ষাবৃত্তি থেকে বিরত থাকর গুনাবলী লালনের ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন।
ভিক্ষাবৃত্তি জায়েয হয় কখন
কিন্তু তা সত্ত্বের নবী করীম (সা) লোকদের ঠেকা বাধার প্রতি পুরোপুরি লক্ষ্য রেখেছেন। কোন লোক যদি ভিক্ষা চাইতে ও সরকার বা ব্যক্তিদের কাছে সাহায্য চাইতে বাধ্যই হয়, তাহলে অবশ্য গুনাহ হবে না। নবী করীম (সা) ইরশাদ
(আরবী********************)
ভিক্ষা চাওয়া যখম করার সমার্থক। যে ব্যক্তি ভিক্ষা করে সে স্বীয় মুখমণ্ডলকে ক্ষতবিক্ষত করে। কাজেই যার ইচ্ছা নিজের মুখমণ্ডলকে সে অবস্থায় রেখে দিক, আর যার ইচ্ছা সে তা ত্যাগ করুক। তবে কেউ যদি কোন বর্তৃত্বসম্পন্ন ব্যক্তির কাছে ভিক্ষা চায় কিংবা এমন কোন ব্যাপারে চাইতে হয় যা একান্তই অপরিহার্য, তাহলে সে কথা স্বতন্ত্র। (আবূদাউদ, নিসায়ী)
আবু বাশার কুবাইসা ইবনুল মাখারিক (রা) বলেনঃ
(আরবী*************************)
আমি এক ব্যাপারে জামানতের দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলাম। এ কারণে আমি রাসূলে করীম (সা) এর খেদমতে উপস্থিত হয়ে ভিক্ষা চাইলাম। তিনি বললেনঃ অপেক্ষা কর, সাদকার মাল এসে যাবে, তা থেকে তোমাকে দিইয়ে দেব। পরে বললেন, হে কাবাইসা, ভিক্ষা চাওয়া জায়েয নয় তিন ব্যক্তি ছাড়া অন্য কারো পক্ষে। একজন, যে কারো জন্যে জামানতের দায়িত্ব গ্রহণ করেছে। তার জন্যে ভিক্ষা চাওয়া জায়েয যতক্ষণ না প্রার্থিত পরিমাণ মাল সে পাবে। তারপর তার বিরত হয়ে যাওয়া উচিত। দ্বিতীয় ব্যক্তি যার ধন-মাল কোন বিপদে পড়ার কারনে ধ্বংস হয়ে গেছে। সে ব্যক্তি ভিক্ষা করতে পারে, যতদিনে তার জীবনযাত্রা চালানর ব্যবস্থা না হয়। আর তৃতীয় ব্যক্তি হচ্ছে সে অনশনের সম্মখীন হয়ে যায়, যতক্ষণ তার পাড়ার তিনজন সমঝদার লোক বলে দেবে যে, লোকটি অনশনগ্রস্ত। এরূপ অবস্থায় তার পক্ষে ভিক্ষা চাওয়া জায়েয, যতক্ষণ না জীবনযাত্রা চালানর ব্যবস্থা হয়ে যায়।
এতদ্ব্যতীত যে ব্যক্তিই ভিক্ষা করে, তার জন্যে এ মাল হারামের, যা সে ভক্ষণ করে।
শ্রম সম্মানজনক
লোকেরা কোন কাজকে হীন জ্ঞান করে। কিন্তু নবী করীম (সা) তা সমর্থন করে নি। তিনি তাঁর সাহাবীদের শিক্ষা দিয়েছেন যে, যে কোন কাজই হোক-না-কেন, তাতেই সম্মান ও পরিপূর্ণ ইযযত নিহিত রয়েছে এবং লোকদের সাহায্য গ্রহণে ও তাঁর ওপর নির্ভরতায়ই রয়েছে সর্বপ্রকারের যিল্লাতি ও অপমান। তিনি বলেছেনঃ (আরবী*********************)
কোন ব্যক্তির রশি নিয়ে জঙ্গলে যাওয়া ও নিজের মাথায় কাষ্ঠের বোঝা বহন করে নিয়ে আসা ও তার বিক্রয় করে উপার্জন করা- যার ফলে আল্লাহ তাঁর ইযযতের সংরক্ষন করে দেবেন- লোকদের কাছে ভিক্ষা চাওয়ার তুলনায় অনেক ভাল ও কল্যাণময়- লোকেরা তাকে দেবে কিনা দেবে তারও কোন নিশ্চয়তা যখন নেই।
অতএব মুসলমান ব্যক্তির উচিত কৃষি, ব্যবসা, শিল্প ও এ ধরনের যে কোন কাজ বা চাকরি করে উপার্জন করা- যতক্ষণ না তা হারাম কাজে জড়িত হয়ে পড়ার মতো কোন কাজ হবে।
কৃষিকার্য দ্বারা উপার্জন
কুরআন মাজীদ আল্লাহ তা‘আলা মানুষের প্রতি স্বীয় ও অনুগ্রহের উল্লেখ প্রসঙ্গে কৃষিকার্য সংক্রান্ত বহু নীতিগতভাবে জরুরী হেদায়েত দিয়েচছন।
পৃথিবীর মাটি ও জমিকে আল্লাহ তা‘আলা উৎপাদন ও ফসল ফলানর কাজ করার যোগ্য বানিয়ে দিয়েছেন। তাকে বানিয়েছেন শয্যা, মেঝে, তা সৃষ্টির জন্যে আল্লাহর বড় একটা নিয়ামত। এনিয়ামতের কথা স্বরণ রাখা ও তার মূল্য বোঝা একান্তই কর্তব্য।
ইরশদ হয়েছেঃ (আরবী***********)
আল্লাহ তা‘আলা তোমাদের জন্যে জমিকে শয্যা ও মেঝে বানিয়েছেন, যেন তোমারা তার ওপর অবস্থিত উন্মুক্ত পথঘাটে চলাচল করতে পার। (সূরা নূহঃ১৯-২০
জমিকে তিনি সৃষ্টিকুলের জন্যে বানিয়েছেন। তাতে ফল, খেজুর গাছ, আবরণধারী, শস্য-ভূষিসহ ও ফুল রয়েছে সুগন্ধিযুক্ত। তাহলে তোমারা তোমাদের আল্লহর কুদরতের কোন কোন অবদানকে অস্বীকার করবে?
বৃষ্টিরূপে তিনি পানি বষণ করেছেন এবং দা খাল-ঝর্ণয় প্রবাহিত করেছেন আর তার সাহায্যে তিনি মৃত জমিকে জীবিত করেন।
(আরবী************)
তিনি ঊর্ধ্ধলোক থেকে পানি বর্ষণ করেছেন। পরে তার সাহায্যে সর্বপ্রকারের উদ্ভিদ, গাছপালা ইত্যাদি উৎপাদন করেছি, পরে তাতে সবুজ-শ্যামল-তাজা শাখা-প্রশাখা বের করেছি- তা থেকেই আমারা স্তরসম্পন্ন দানা বের করি।
(আরবী **************
মানুষের কর্তব্য তার খাদ্যের প্রতি দৃষ্টি দেয়া- চিন্তা করা। আমারাই প্রয়োজনমত পানি বর্ষণ করেছি। পরে জমি বিস্ময়করভাবে দীর্ণ করেছি আর তাতে শস্য, আঙ্গুর ও তরিতরকারী উৎপাদন করেছি।
বাতাসকে আল্লাহ্ সুসংবাদদাতা করে পাঠিয়ে থাকেন। তার সাহায্যে মেঘমালঅ চলাচল করে এবং উুদ্ভিদসমূহ ফলাধারী হয়।
(আরবী***************)
আর জমিকে বিস্তীর্ণ বানিয়েছি, তাতে সংস্থাপিত করেছি উচু শক্ত পর্বতমালা এবং তাতে প্রতিটি জিনিস সুপরিকল্পিত ও পরিমিতভাবে উৎপাদিত করেছি। আর আমারা তোমাদের জীবিকা তাতেই বানিয়েছি তাদের জন্যেও, যাদের তোমারা রিয্কদাতা নও। আর প্রতিটি জিনিসেরই সম্ভার-স্তপ আমাদের কাছে সংরক্ষিত, একটা জ্ঞাত পরিমাণেই আমারা তা থেকে প্রদান করে থাকি। বাতাসকে আমারা ফল ভারাক্রান্ত করেই পাঠিয়ে থাকি। পরে ঊর্ধ্ধলোক থেকে পানি বর্ষণ করি আর তোমাদেরে সিক্ত করি তা দিয়ে। নতুন তোমারা তো আর সমাহার সঞ্চয় করে রাখতে পারতে না। (সুরা হিজরঃ১৯-২২)
এ সব কটি আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা কৃষিকাজে নিয়ামত ও তার সহজ সাধ্যতার উপয়-উপকরণের দিকে মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। রাসূলে কারীম (স) বলেছেনঃ (আরবী**********)
যে মুসলমানই কোন গাছ লাগায় বা ক্ষেত করে আর তা থেকে পাখি বা মানুষ যা খায়, তা তার জন্যে দান হয়ে যায়। (বুখার, মুসলিম)
অর্থাৎ তার এই কাজের সওয়াব অব্যাহতভাবে হতে তাকে, যতদিন সেই গাছ বা ক্ষেত থেকে খাওয়ার কাজ চলতে থাকে। যদিও জমির মালিক বা বৃক্ষ রোপনকারী মরেই গিয়ে থাক না কেন কিংবা তার মালিকানা হস্তান্তরিতই হোক না কেন
বিশেষজ্ঞগণের মতে আল্লাহর দয়া ও দানশীলতার পক্ষে এটা অসম্ভব নয় যে, তিনি এরূপ ব্যাক্তিকে তার মৃত্যুর পরও সওয়াব দান করতে থাকবেন যেমন করে তার জীবদ্দশায় তাকে দিচ্ছিলেন। সাদকায়ে জারিয়া, এমন ইলম, যার দ্বারা লোকেরা উপকৃত হয় কিংবা নেক-বখ্ত সন্তান, যে তার জন্যে দো‘আ করতে থাকে অথবা কোন রোপিত বৃক্ষ, কৃষি এবং সীমান্ত প্রহরা –এই ছয়টি কাজ সম্পর্কেই উপরিউক্ত াথা প্রযোজ্য।
হাদীমে উদ্ধৃত হয়েছে, েএক ব্যক্তি হযরত আবুদ্দারদা (রাঃ) এর কাছে উপস্থিত হলো। তখন তিনি আখরোটের চারা রোপন করছেন, ওটাতে ফল ধরতে তো অনেক বছর লেগে যাবে?….জাবাবে আবুদ্দারদা (রাঃ) বললেনঃতাতে ক্ষতি কি?অন্যরা খাবে আর আমি তার সওয়াব কামাই করব?
নবী করীম (স) -এর অপর এক সাহাবী থেকে বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেছেনঃআমি আমার কান দিয়ে রাসূলে কারীম (স) কে বলতে শুনেছিঃ (আরবী ***************)
যে ব্যাক্তি কোন গাছ লাগায়, তার পরে তার হেফাযত ও দেখাশোনা করতে থাকে, যতদিন না সে গাছে ফল ধরে, এই সময়ে সে ফলের যা কিছু ক্ষুতি সাধিত হবে, তার সওয়াব সে আল্লাহর কাছ থেকে পাবে।
এ সমস্ত এবং এ ধরনের আরও বহু হাদীসকে ভিক্তি করে বিশেষজ্ঞগণ বলেছেন যে, কৃষিকাজ উপার্জনের অপরাপর উপায়ের তুলনায় অনেক উত্তম। কিন্তু অপর কিছু বিশেষজ্ঞের মতে শিল্প ও হতের কাজ অনেক ভাল। আবার কাহারও কাহারও মতে ব্যবসাই উওম উপায়।
অপর কিছু বিশেষজ্ঞ বলেছেন, বিভিন্ন অবস্থায় বিভিন্ন কাজ উত্তম বিবেচিত হতে পারে, যেমন খাদ্যের তীব্র অভাব হলে কৃষিকার্য উত্তম । কেননা তার কল্যাণ সাধরণভাবে সকলেরই প্রাপ্য। আর যখন ডাকাত পড়ার কারণে হাটে-বাজারে কম মালের আমদানী হয়, তখন ব্যবসা ভাল কাজ আর শিল্পজাত দ্রব্যদির প্রয়োজন পূরণে শিল্পকর্ম উত্তম বিবেচিত হবে। (আরবী******************)
এই শেষে উল্লিথিদ বিবরণ আধুনিক অর্থনৈতিক জ্ঞান-বিজ্ঞানের সাথে পুরোপুরিভাবে সঙ্গতিপূর্ণ।
হারাম কৃষিকার্য
ইসলাম যে সব উদ্ভিদ খাওয়া হারাম হারাম ঘোষণা করেছে কিংবা যার ব্যবহার ক্ষতিকর, তার চাষাবাদও হারাম। যেমন গাজাঁ, আফিম ইত্যাদি।
তামাক সম্পর্কেও এ কথা। তবে তা হারাম যাঁরা মনে করেন, তামাক খাওয়া হারাম তাদের মতে। অনেকে এ মতটাকেই অগ্রাধিকার দিয়েছেন। আর যাদের মতে তামাক খাওয়া মাকরূহ, তাদের মতে তার চাষাবাদও মাকরূহ।
অমুসলিমদের কাছে বিক্রয় করে অর্থ পাওয়া যাবে- এ উদ্দেশ্যে কোন হারাম জিনিসেন চাষাবাদ করা মুসলমানের পক্ষে জায়েয নয়। মুসলমান হারাম জিনিসেন প্রচলন করার কাজ কখনই করতে পারে না। তাই শূকর লালন-পালন করা ওঅমুসলমান খৃস্টান প্রভৃতির নিকট বিক্রয় করার উদ্দেশ্যে- মুসলমানদের জন্যে জায়েয নয়। আমরা পূর্বেই বলেছি ইসলামের দৃষ্টিতে হালাল আঙুর এমন ব্যক্তির কাছে বিক্রয় করা জায়েয নয়, যে তা দিয়ে সুরা (মদ) বানাবে বলে জানা যাবে।
শিল্প ইত্যাদি
ইসলম কৃষিকর্মের উৎসাহ দিয়েছে। তার সৌর্ন্দর বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করেছে। এ কাজে বিপুল সওয়াব হওয়ার কথাও কলে দিয়েছে। কিন্তু মুসলিম মিল্লাতের লোকেরা কেবল কৃষিকর্মে মগ্ন হয়ে থাকবে- যেমন ঝিনুকের পোকা (sea sell) ঝিনুকের মধ্যেই বন্দী থাকে- তা আদৌ পছন্দনীয় নয়। শুধু কৃষিকার্যকে যথেষ্ট মনে করা ও চাষের গরুর পিছনে পিছনে চলতে থাকাকে ইসলাম মুসলমানদের জন্যে পছন্দ করে না। কেননা তাই যদি হয় তাহলে সম্ভাব্য জাতীয় বিপদ-আপদের মুকাবিলা করা তাদের পক্ষে সম্ভবপর হবে না। এ কারণে নবী করীম (স) যদি কৃষিকাজরক লাঞ্ছনার কাজ বলে থাকেন, তাহলে তাতে বিস্ময়ের কিছু নেই। কেননা কালের কাস্তবতা সেই কথার সত্যতা প্রকট করে তুলেছে। তিনি বলেনঃ (আরবী***********************)
তোমরা যদি সুদভিত্তিক বেচা-কেনার কাজ কর ও গরু-মহিষের লেজুর ধরেই পড়ে থাক, জিহাদে মনোযোগ না দিয়ে কৃষিকার্য়য মগ্ন হয়ে থাক, তাহলে আল্লাহ তোমাদের ওপর লাঞ্ছনা চাপিয়ে দেবেন। পরে তা দূর করা যাবে না যতক্ষণ না তোমারা তোমাদের দ্বীনের প্রতি প্রত্যাবর্তন করবে । (আবূ দাউদ) এ কারণে কৃষি কার্য়ের সঙ্গে শিল্প-পেশার কাজ করাও জরুরী । এসবের সাহায্যেই সচ্ছল-স্বচ্ছন্দ জীবনের প্রয়োজন এবং একটি স্বাধীন ও শক্তিশালী উম্মত-ৈএকটি সুদৃঢ় ও স্বয়ংসম্পূর্ণ সরকার ও রাষ্ট্র ব্যবস্থার দাবিসমূহ পূরণ হতে পারে। শিল্প পেশা ইসলারে দৃষ্টিতে একটা বৈধ কাজ-ই নয়-যেমন কোন কোন আলিম ও ই, া, কলেছেন- তা ফরযে কিফায়াও অর্থাৎ মুসলিম সমাজে সর্ব প্রকারের শিল্প ব্যবসায়ে পারদর্শী এত বেশি লোকের বর্তমান থাকা আবশ্যক যেন জাতীয় প্রয়োজন পূণে হতে কোন অসুবিধাই না হয় ও তার নিজের যাবতীয় কাজ সুসম্পন্ন করা তার পক্ষে সম্ভব হয়। শিল্প পেশার কোন দিক যদি এমন অনটন দেখা দেয় যে, সে কাজ করার লোকই পাওয়া যায় না, তাহলে গোটা সমাজ ও জাতীই সেজন্যে দোষী ও গুনাহগার হবে-বিশেষ করে নেতৃবৃন্দ ও রাষ্ট্র পরিচালকবৃন্দ সেজন্যে দায়ী হবে।
ইমাম গাজালী (র) বলেছেনঃ
সেসব জ্ঞান অর্জনই ফরযে কিফায়া, যা ছাড়া মানুষের বৈষয়িক জীবন চলতে পারে না। যেমন চিকিৎসা বিদ্যা, দেহের সুস্থতা রক্ষা জন্যে তা একান্তই জরুরী। অংক বা হিসাববিদ্যা, পারস্পরিক লেন-দেন, অসীয়ত ও মীরাস বন্টনসহ যাবতীয় কাজে তা অপরিহার্য। সে সব বিদ্যা-এমন যে, তা জারা-লোক বর্তমান না থাকলে জনগণক কঠিন অসুবিধার সন্মুখীন হতে হয়। আর কেউ যখন এ ধরনের কাজে লেগে যায়, তখন অন্যরা এ কাজের দায়িত্ব থেকে মুক্তি লাভ করে। এ কারণে আমাদের মতে চিকিৎসা ও হিসাববিদ্যা ফরযে কিফায়া। বনেদী ধরনের কাজ ও শিল্পও ফরযে কিফায়া ছাড়া আর কিছু নয়। যেমন জমি চাষাবাদ, হালচষ, কাপড় বুনন, পশু পালন ইত্যাদি। ক্ষের কার্য ও দর্জীকর্ম করাও এ ফরয়ে কিফায়াই। কোন দেশে এসবের ব্যবস্থা না থাকলে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দেয়া কিছুতেই জায়েয হতে পারে না। আরবী****************)
কুরআন মজীদে বহু প্রকারের শিল্পকর্মের প্রুত ইঙ্গিত দেয়া হয়েছে এবং সেগুলো যে দুনিয়ার মানুষের প্রতি আল্লহর বড় নিয়ামত, তা স্পষ্ট করে বলা হয়েছেঃযেমন হযরত দাঊদ (আ) সম্পর্কে বলা হয়েছেঃ ইসলামে হালাল-হারামের বিধান (আরবী*******************)
আমার তার জন্যে লোহাকে নরম করে দিয়েছি, নির্দেশ দিয়েছি, বর্ম তৈয়ার করা এবং তার কড়াগুলো ঠিক পরিমাণ মতো বানাও। (সূরা সবাঃ১০-১১)
আর আমারা তাকে বর্ম য়ৈার করার শিল্পবিদ্যা শিক্ষা দিয়েছিলাম, যেন তা যুদ্ধে তোমাদের প্রতিরক্ষা করতে পারে। তাহলে তোমারা কি শোকর আদয় করবে? (সূরা আম্বিয়াঃ৮০)
হযরত সুলায়মান (আ) সম্পর্কে বলা হয়েছে।
আর আমরা তার জন্যে তামার ঘর্ণা প্রবাহিত করেছি এবং এমন জ্বিন তার অধীন করে দিয়েছি যারা তাদের আল্লাহর নির্দেশে তার সন্মুখে কাজ করত।
আর আমরা তার জন্যে তামার ঘর্ণা প্রবাহিত করেছি এবং এমন জ্বিন তার অধীনে করে দিয়েছি যারা তাদের আল্লাহর নির্দেশে তার সন্মুখে কাজ করত। তাদের মধ্যে যে যে আমার নির্দেশ অমান্য করত, তাকে আমারা জ্বলন্ত অগ্নিকুন্ডুলির আযাবের স্বাদ আস্বাদ করাতাম!তারা তার (সুলায়মানের ) জন্য যা সে চাইত, নির্মাণ করত, উঁচু উঁচু প্রাসাদ ইমারত, প্রতিষ্ঠিত ডেগসমূহ। হে দাউদ বংশধরেরা!শোরক আদায়কারী হিসেবে কাজ কর।
কুরআনের যুল-কারনাইনের সুউচ্চ সুদৃঢ় প্রাচীর নির্মাণেরও উল্লেখ করা হয়েছে। বলা হয়েছেঃ (আরবী *********************)
আমার রব্ব আমাকে যা কিছু দিয়েছেন তা অনেক। তোমারা শুধু শ্রম-মেহনত করেই আমরা সাহায্য করা। আমি তোমাদের ও তাদের মাঝখানে বাঁধ বেঁধে দেব। আমাকে লোহার চাদর এনে দাওে। শেষে দুটো পর্বতের মধ্যকার শূণ্যতাকে সে যখন ভরাট করে দিল, তখন লোকদের বলল, এখন আগুন জ্বালাও। যখন এই অগ্নি-প্রাচীর আগুনের মতো সম্পূর্ণ লাল বর্ণ ধারণ করল, তখন সে বলল, আনো এখানে আমি তার ওপর গলিত তামা ঢেলে দেব। এ বাঁধটি এতই দৃঢ় বানান হয়েছিল যে, ইয়াজুজ-মাজুজ তার ওপর চড়েও আমতে পারত না, আর তার মধ্যে সুরঙ্গ রচনাও তাদের জন্যে আরো কঠিন ছিল। (সূরা কাহাফঃ৯৫-৯৭)
হযরত নূহের নৌকা নির্মাণের কাহিনীও কুরআনে উদ্ধৃত হয়েছে। তাতে এক সুদৃঢ় জাহাজ নির্মাণের ইশারা বিধৃত, যা নদী সমুদ্রে পাহড়ের মতো উন্নত হয়ে জলতে সমক্ষম। বলা হয়েছেঃ (আরবী*************)
নদী-সমূদ্রের বুকে পর্বতের ন্যায় মাথা উঁচু করে চলমান জাহাজগুলো আল্লাহরই নিদর্শন বিশেষ। (সূরা শূরাঃ৩২)
কুরআনের বহু সংখ্যক সূরায় সর্বপ্রকারের শিকার-বিদ্যা ও কার্য়ের**** উল্লেখ হয়েছে। যেমন মৎস্য শিকার, সামুদ্রিক জন্ত শিকার, স্থলভাগের জন্ত শিকার এবং মণি-মুক্তা আহরণের উদ্দেশ্যে ডুবুরি দ্যিা ইত্যাদি।
সর্বোপরি কুরআন মাজীদ লোহার সঠিক মূল্য ও কর্যাকারিতার উল্লেখ হয়েছে।
তার পূর্বের কোন ধর্মগ্রন্থ বা মানবরচিত গ্রন্থেও তার উল্লেখ পাওয়া যায়না। কুনআনে রাসূল প্রেরণ ও কিতাব নাযিল করণের উল্লেখ করার পর বলা হয়েছেঃ (আরবী************************)
এবং আমরা লোহা সৃষ্টি করেছি। তাতে কঠিন শক্তি নিহিত রয়েছে এবং আছে জনগণের অশেষ অসীম কল্যাণ।
এ আয়াতটি যে সূরা‘লৌহ’। এ থেকে স্পষ্ট বোঝা যায়, লৌহ শিল্পের ওপর ইসলাম বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছে।
বস্তত ইসলামের দৃষ্টিতে মানব সমাজের প্রয়োজন পূরণ ও প্রকৃত কল্যাণ সাধনের উদ্দেশ্যে যে শিল্পকর্মই করা হবে , তা-ই‘আমলে সালেহ’-নেক আমল বিবেচিত হবে। যদি সে কাজে সত্যিই আন্তরিকতা রক্ষা করা হয় এবং যেরূপ নৈপূণ্য ও দক্ষতা অবলম্বন করতে ইসলাম নির্দেশ দিয়েছে, তা পুরোমাত্রায় অবলম্বিত হয়।
মানব সমাজে অত্যন্ত হীন ও নগণ্য বিবেচিত কত শিল্প-পোশাকে ইসলাম অত্যন্ত মর্যাদাবান বানিয়েছে। যেমন ছাগল চরানর রাখালকে লোকেরা সন্মানের চোখে দেখত না। কিন্ত নবী করীস (স) বলেছেনঃ (আরবী**************)
আল্লাগর প্রেরিদ প্রত্যেক নবীই ছাগল চরিয়েছেন। সাহাবিগণ জিজ্ঞেসা করলেনঃ (আরবী***********)
হে রাসুল! আপনিও কি ছাগল চরিয়েছেন?
সাহাবিগণ জিজ্ঞেস করলেনঃ (আরবী**************)
হে রাসূল!আপনিও কি ছাগল চরিয়েছেন?
জবাবে তিনি বললেনঃ (আরবী***************)
হ্যা, আমি মজুরীর বিনিময়ে মক্কার লোকদের ছাগল চরিয়েছ। (বুখারী)
খতামুন্নবীয়ীন হযরত মুহাম্মাদ (স) ছাগল চরিয়েছেন। বড় কথা, সে ছাগল তাঁর নিজের ছিলনা। বরং তা ছিল মক্কার লোকদের এবং তিনি তা নির্দিষ্ট পরিমাণ মজুরীর বিনিময়ে চরিয়েছিলেন। এ কথার উল্লেখ করে নবী করীম (স) তাঁর সাহাবীদের শিক্ষা দিচ্ছিলেন যে, যারা কাজ করে –কাজ করে উপার্জন করে, তাদেরই গৌরব । যারা নিষ্কর্ম বসে থাকে ও উপার্জনহীন থেকে লোকদের ওপর দিয়ে খায়, তাদের কোন গৌরব বা মর্যাদা নেই।
কুরআন মজীদে হযরত ঈসা (আ) -এর কিসসা উদ্ধৃত হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, তিনি একজন বৃদ্ধ শায়খের কাছে শ্রমিক হিসেবে ক্রমাগত আটটি বছর পর্যন্ত কাজ করেছেন। তার এ শ্রমের মজুরী ছিল, বৃদ্ধের কন্যাদের একজনকে তাঁর কাছে বিয়ে দেয়া। হযরত ঈসা (আ) তার কছে খুবই ভাল শ্রমিক বলে গণ্য হচ্ছিলেন, খুবই বিশ্বস্ত কর্মী ছিলেন তিনি। বৃদ্ধের এক কন্যা অত্যন্ত বুদ্ধিমত্তা সহকারে বলেছিলঃআরবী (******************)
হে পিতা, তুমি ওকে শ্রমিক হিসেবে মজুীরীর বিনিময়ে ঠিক করে রাখ। নিজের রাখা কর্মচারী উত্তম তো সে-ই হতে পারে, যে শক্তিশালী এবং বিশ্বস্ত।
হযরত ইবনে আবাস (রা) বর্ণনা করেছেন, হযরত দাউদ বর্ম ও তৈজসপত্র নির্মাতা ছিলেন। হযরত আদম ছিলেন জমি চাষকারী। হযরত নূহ (আ) ছিলেন মিস্ত্রী, হযরত ইদরীস (আ) ছিলেন দর্জী এবং হযরত মূসা (আ) ছিলেন ছাগলের রাখাল।
অতএব মুসলমান যে কোন হালাল পেশা গ্রহণ করে সন্তষ্ট থাকতে পারে। প্রত্যেক নবীই কোন-না কোন পেশা অবশ্যই অবলম্বন করতেন। সহীহ হাদীসে বলা হয়েছে। (আরবী*****************)
নিজের শ্রমের বিনিময়ে উপার্জিত খাদ্যের তুলনায় উওম খাবার কেউ খেতে পারে না । আর আল্লাহর নবী দাউদ (আ) শ্রম করেই উপার্জন করতেন ও খাবার জোটাতেন। (বুখারী)
নিষিদ্ধ কজ ও পেশা
তবে কিছু কিছু কাজ ও পেশা ইসলাম মুসলমানদের জন্যে হারাম ঘোষণা করেছে। কেননা এসব কাজ ও পেশা লোকদের আকীদা, বিশ্বাস , চরিত্র, মান-সন্মন ও সাংস্কৃতিক মূল্যমানকে বয়ানকভাব ধ্বংস ও ক্ষতিগ্রস্ত করে।
বেশ্যাবৃত্তি
বেশ্যাবৃত্তি একটা পেশা হিসেবে পাশ্চত্যের ও পাশ্চাত্যানুসারী অনেকগুলো দেশেই স্বকৃত ও সমর্থিত। এজন্যে রীতিমত অনুমতি ও লাইসেন্স দেয়া হয়, দেয়া হয় অবাধ নির্বিরোধ সুযোগ-সুবিধা। এই বৃত্তিটিকেও দেশ চলতি অন্যান্য পেশার মতো একটা পেশার মর্যাদা দেয়া হয় এবং এ পেশা সংক্রান্ত যাবতীয় অধিকার দান করা হয়।
কিন্তু ইসলাম এ পেশার ওপর কুঠোরাঘাত করেছে এবং স্বাধীনা কিংবা ক্রীতদাস কোন রমণীকেই স্বীয় স্ত্রী-অঙ্গের দ্বার কোনরূপ উপার্জন করার অনুমতি দেয়নি।
জাহিলিয়াতের যুগে কেউ কেউ তার ক্রীতদাসীর ওপর দৈনিক হারে ‘কর’ ধার্য করত। এ ‘কর’ তাদের মালিকদের রীতেমত আদায় করে দিতে তারা বাধ্য ছিল। সেজন্যে তাঁকে যে কোন উপায়েই হোক উপার্জন করতে হতো। এ কারণে অনেক দাসীই ধার্যকৃত ‘কর’ আদায়ের নিমিত্তে বেশ্যাবৃত্তি করতে বাধ্য হতো। অনেক দাসী-মালিক আবার সরাসরি দাসীকে এ কাজে নিয়োজিত করত। আর তার বিনিময়ে সে মোটা পরিমাণ উপর্জন করত। উত্তরকালে ইসলাম এসে নারীদের এ চরম দুর্দশা ও জঘন্য কজকর্মের বাধ্যবাধকতা থেকে মুক্তি দান করে। এ সময়ই আল্লাহর ফরমান নাযিল হয়ঃ (আরবী)
তোমারা তোমাদের দাসী বা কন্যদের বেশ্যাবৃত্তি করতে বাধ্য করনা- ওরা তো পবিত্রতা ও সতীত্ব রক্ষা করে থাকতে চায়-শুধু এজন্যে যে, এরা মাধ্যমে তোমরা বৈষয়িক স্বার্থ লাভ করবে। (সূরা আন-নূরঃ৩৩)
হযরত ইবনে আব্বাস (রা) বর্ণনা করেছেনঃমুনাফিক প্রধান আবদুল্লাহ ইবনে উবাই রাসূলে করীম (স) -এর কাছে উপস্থিত হলো। তার সাথে ছিল ‘মুয়াযত’ নাম্নী এক অনিন্দ্যসুন্দরী দাসী। সে বললঃইয়া রাসূল!এই মেয়েটি অমুক ইয়াতীমের মালিকানাধীন দাসী। আপনি কি ওকে বেশ্যাবৃত্তি করার অনুমতী দেবেন?তাহলে সে ইয়াতীমরা অনেক মুনাফা লাভ করতে পারত। নবী করীম (স) জবাবে স্পষ্ট ভাষায় বললেনঃ‘না’।
নবী করীম (স) এই বীভৎস পেশার পথ চিরতরে বন্ধ করে দিলেন, তার রোজগারে যারই কোন ফায়দা হোক, বড় কোন প্রয়োজনই পূরণ হোক এবং বহু বড় মহৎ উদ্দেশ্যেই হোক-না কেন , ইসলামী সমাজকে সর্ব প্রকারের পাপ কার্জের পংকিলতা থেকে মুক্ত ও পবিত্র রাখই ইসলামের লক্ষ্য।
নৃত্য ও যৌন শিল্পকর্ম
ইসলাম যৌন উত্তেজক নৃত্য পেশা হিসেবে গ্রহণ করা আদৌ সমর্থন করে না। অনুরূপভাবে এমন কাজেও ইসলামে অনুমোদন নেই, যা মন-মেজাজে যৌন উত্তেজনা বৃদ্ধি করে। অশ্লীল গান, নির্লজ্জ অভিনয় এবং এ ধরনের অন্যান্য অর্থহীন কাজকর্ম এ পর্যায়ে পড়ে। বর্তমান কালে একে যদিও Art বা শিল্পকলা-এ লোভনীয় নামে অভিহিত করা হয় এবং তাকে উন্নতি-অগ্রগতি লাভের জন্যে অপরিহার্য মনে করা হয় কিন্তু ইসলামের দৃষ্টিতে তা চরম শুমরাহী ভিন্ন আর কিছুই নয়।
বস্তুত বৈবাহিক সম্পর্ক ভিন্ন অন্য কোনভাবেই নারী-পুরুষের যৌন সম্পর্ক ইসলামে সম্পূর্ণ হারাম ঘোষিত হয়েছে। যেসব কথা ও কাজ এ পথ উন্মুক্ত করে দেয়, ইসলামের দৃষ্টিতে তা সবাই সম্পূর্ণ হারাম। কুরআন জ্বেনা-ব্যভিচার হারাম ঘোষণার জন্যে যে মুজিযাপূর্ণ পদ্ধতি অবলম্বন করেছে, তাতেই এই তত্ত্ব নিহিত।
কুরআনের ঘোষণা হচ্ছেঃ (আরবী*****************)
জ্বেনা-ব্যভিচারের নিকটেও ঘেঁষবে না। কেননা তা অত্যন্ত নির্লজ্জতার কাজ এবং খুবই কদর্য পথ ও উপায়া। (সূরা বনী-ইসরাইলঃ৩২০)
ওপরে আমরা যা যা বলেছি, উপরন্ত যেসব কথাকে লোকেরা যৌন উত্তেজক মনে করে, তা সবাই এ ব্যভিচারের নিকটবর্তী করে দেয়ার উপকরণ। বরং তা-ই মনুষকে সেদিকে উদ্ধুদ্ধ করে, তার প্রতি আকর্ষণ তীব্র করে তোলে। কজেই এ পর্যয়ে যত কাজ আছে তা যারা করে তারা খুবই মারাত্নক কাচ করে, তাতে সন্তেহ নেই।
ভস্কর্য, প্রতিকৃতি ও ক্রুশ নির্মাণ মিল্প
ইসলামে প্রতিকৃতি হারাম। উপরে বিস্তারিতভাবে তার বিশ্লেষণ দেয়া হয়েছ। প্রতিকৃতি নির্মাণ আরো কঠিনভাবে হারাম। বুখারী শরীফে উদ্ধৃত হয়েছে, সায়ীদ ইবনুল হাসান বলেনঃ (আরবী****************)
আমি ইবনে আব্বাস (রা) -এর কাছে উপস্থিত ছিলাম। এ সময় এক ব্যক্তি এল। বললঃহে ইবনে আব্বাস!হতের কারিগরিই আমার জীবিকার উপায়। আমি এ ধরনের ছবি তৈরী করি। ইবনে আব্বস (রা) বললেনঃআমি স্বয়ং রাসূলে করীম (স) -কে যা বলতে শুনেছি, তোমাকে আমি ঠিক তাই শোরাব। আমি তাঁকে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি ছবি বা প্রতিকৃতি নির্মাণ করবে তাতে রূহ দেয়ার শাস্তি আল্লাহ তাকে দেবেন, কিন্তু সে তাতে রূহ কখনই দিতে পারবে না। এ কথা শুনে প্রতিক্রিয়ায় লোকটির মুখমন্ডল বিকৃত ও ম্লান হয়ে গেল। ইবনে আব্বাস তাকে বললেনঃতুমি যদি ছবি বা প্রতিকৃতি বানাতেই চও, তাহলে গাছ ইত্যাদি নিষ্প্রাণ জিনিসের ছবি বানাও। (বুখারী)
মূর্তি, ক্রুশ-এধরনের সব জিনিস সম্পর্কে এ একই বিধান প্রযোজ্য।
তবে ফটোগ্রাফীর ছবি সম্পর্কে তো আমারা পূর্বেই বলেছি যে, শরীয়তের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ দৃষ্টিকোণ হচ্ছে, তা জায়েয। আর খুব বেশি বললে মাকরূহই বলা যায়। তবে শর্ত এই যে, সেই কাজটা মূলতঃকোন হরাম উদ্দেশ্যে হতে পারবে না। যেমন নারীর যৌন আকর্ষণমূলক অঙ্গসমূহকে উলঙ্গ করে তোলা, নারী-পুরুষের জুম্বনরত অবস্থায় ছবি এবং যেসবের বড়ত্ব বা পবিত্রতা প্রতিষ্ঠা করা হয়, সেমবের ছবি তোলা-যেমন ফেরেশতা, নবী-রসূল ইত্যাদির ছবি।
মাদক ও জ্ঞান-বুদ্ধির বিনষ্টকারী দ্রব্যাদি দশিল্প
পূর্বেই বলা হয়েছে, মাদক-মদ্য প্রচলনে যে কোন রকমের অংশগ্রহণ বা সাহায্য সহযোগিতাকে ইসলাম হারাম ঘোষণা করেছে। তা বানান-প্রস্তুত করণ, বন্টন বা পান করা-করান, সবই সম্পূ্র্ণরূপে নিষিদ্ধ। যে লোকই এ কাজ করবে, সে-ই রাসূলের ভাষায় অভিশপ্ত।
হাশীশও আফিমের ন্যায় বিবেক-বুদ্ধি বিলোপকারী যাবতীয় দ্রব্যাদি মাদক দ্রবের মতই হারামি। এসব জিনিসের লেন-দেন, ক্রয়-বিক্রয়, বিলি –বন্টনও তার উৎপাদন শিল্প-সবই হারাম। মুসলমানের পক্ষে এমন কোন শিল্পকর্ম বা পেশা অবলম্বন করা যা হারাম কাজের ওপর ভিত্তিশীল কিংবা যারা দ্বারা কোন হারাম কাজের প্রচলন ঘটে ইসলামের দৃষ্টিতে সম্পূর্ণ অপছন্দনীয়, অবাঞ্ছনীয়।
ব্যবসা করে উপার্জন করা
ইসলাম কুরআনী ঘোষণা ও রাসূলের সুন্নাতের মাধ্যমে ব্যবসা করার ওপর খুব বেশি গুরুত্ব আরোপ করেছে এবং তা করার জন্যে বলিষ্ঠ আহবান জানিয়েছে। এ উদ্দেশ্যে বিদেশ সফরের জন্যেও উৎসাহ দিয়েছে এবং তাকে আল্লাহর অনুগ্রহ সন্ধান বলেছে। ওপরন্ত ব্যবসায়ের জন্যে যারা বিদেশ সফর করে তাদের উল্লেখ করা হয়েছে আল্লাহর পথে জিহাদকারী লোকদের সাথে। বলা হয়েছেঃ (আরবী********************)
কিছু লোক আল্লাহর অনুগ্রহের সন্ধানে বিদেশ সফর করবে এবং অপর কিছু লোক আল্লাহর পথে যুদ্ধ-জিহাদ করবে। (সূরা মুজাম্মিলঃ২০)
আন্তর্জাতিক ব্যবসার জন্যে সামুদ্রিক যোগাযোগ ও যাতায়াত পথ অত্যন্ত গুরুত্বপূ্র্ণ। এ পথই মানুষে ও জাতিসূহের জন্যে অভ্যন্তরীন ও বৈদেশিক বাণিজ্যের অবাধ সুযোগ করে দিয়েছে। এ ব্যাপরটাকে আল্লাহ ত‘আলা মনুষের প্রতি তাঁর এক বিশেষ অনুগ্রহের অবাদান বলে উল্লেখ করেছেন। সমুদ্র নিয়ন্ত্রণ ও অনুকূল বানান ও জাহাজ চালানর সুযোগ দানের অনুগ্রহের কথা উল্লেখ করে আল্লাহ ত‘আলা নিজেই বলেছেনঃ (আরবী******************)
আর তোমারা দেখতে পা্ও, নদী-সমুদ্রে নৌকা-জহাজ পানির বক্ষ দীর্ণ করে চলাচল করছে, যেন তোমরা তাঁর অনুগ্রহের সন্ধান করতে পার একং তাঁর শোকর আদায় করতে পর। (সূর ফাতিরঃ১২)
কোন কোন আয়াতে সেই সাথে বাতাস চালাবার কথাও বলা হয়েছেঃ (আরবী*******************)
তাঁর নিদর্শনাবলীর মধ্যে এটাও যে, তিনি বাতাসসমূহকে সুসংবাদ দেয়ার ও তোমাদেরকে তাঁর রহমতের সাথে পরিচিতকরণের জন্যে পাঠান এবং এজন্যেও যে, নৌকা-জাহাজগুলো তাঁর নির্দেশে চলতে পারে এবং তোমরা তাঁর অনুগ্রহের সন্ধান করতে ও কার শোকর আদায় করতে পার।
আাল্লাহ তা‘আলা মক্কায় লোকদের প্রতি অনুগ্রহ করে তাদের জন্যে এমন সব ব্যবস্থা কর্যকর করে দিয়েছেন যে, তাদের নগর মক্কা সমগ্র আরব উপদ্বীপের মধ্যে একটি বিশেষ ও বিশিষ্ট ধরনের ব্যবসা কেন্দ্র হয়ে গিয়েছিল। হযরত ইবরাহীম (আ) দো‘আ করেছিলেনঃ (আরবী*******************)
অতএব হে আল্লাহ!তুমি লোকদের মনকে তাদের প্রতি আগ্রহী বানিয়ে দাও এবং তাদের রিযক দাও নানা প্রকারের ফলমুল দিয়ে, যেন তারা শোকর করতে পারে।
এ দো‘আও মক্কাবাসীদের জন্যে খুবই কল্যাণকর প্রমাণিত হয়েছে। অনুরুপভাবে কুরাইশদের প্রতিও আল্লাহ তা‘আলা অনুগ্রহ করেছিলেন ইয়েমেনমুখী শীতকালীন ব্যবসায়ী সফর এবং সিরিয়ামুখী গ্রীষ্মকালীন ব্যবসায়ী সফরে সুষ্ঠু ও নিরাপদ ব্যবস্থা করে দিয়ে। আর তাদের এ সফরকালীন নিরাপত্তা ছিল আল্লাহর বিশেষ অনুগ্রহ এবং তা করা হয়েছিল এজন্যে যে, তারা কাবা ঘরের খেদমতে আঞ্জাম দিত। আতএব তদের উচিত একমাত্র আল্লাহর ইবাদত করে তাঁর এ অনুগ্রহের শোকর আদায় করা। কেননা তিনিই কাবা ঘরের একমাত্র রব্ব একমাত্র অনুগ্রহকারী আল্লাহ। (আরবী******************)
যেহেতু কুরাইশরা অভ্যস্ত হয়েছে অর্থাৎ শীতকালীন ও গ্রীষ্মকালীন বিদেশ সফরে তাদের অভ্যাস রয়েছে। অতএব তাদের কর্তব্য এ ঘরে আল্লাহর ইবাদত করা, যিনি তাদের ক্ষুধা নিবৃত্তির জন্যে খেতে দিয়েছেন এবং সকল প্রকারের ভয়-ভীতি থেকে নিরাপত্তা দান করেছেন। (সূরা কুরাইশ)
ইসলাম মুসলমানকে আন্তর্জাতিক ব্যবসায়ী লেন-দেন ও যাতায়াত-যোগাযোগের বিরাট সুযোগ করে দিয়েছে। প্রত্যেক বছর হজ্জের সময় এ সুযোগ আসে। আল্লাহ তা‘আলা স্পষ্ট ভাষায় এ হজ্জকালীন সফরের কথা উল্লেখ করে বলেছেনঃ (আরবী***************)
আযাতে উল্লিথিত ‘কল্যাণকর ব্যবস্থাসূহের ‘মধ্যে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ ব্যবস্থা হচ্ছে ব্যবসা। কিন্তু মুসলমানরা হজ্জের সময় ব্যবসা করতে কুষ্ঠবোধ করত। তারা মনে করত, হজ্জের সময় ব্যবসা করলে হজ্জের খলেস নিয়তে দোষ প্রবেশ করবে এবং তাদের ইবদতের পরিচ্ছন্নতা ও নিষ্কলুষতা বিনষ্ট হবে। এ পর্যয়ে কুরআন মজীদে স্পষ্ট ভাষায় বলে দেয়া হয়েছেঃ (আরবী****************)
তোমারা যদি হজ্জকালে তোমাদের আল্লাহর কাছ থেকে অনুগ্রহ পেতে চাও, তবে তাতে তোমাদের কোন দোষ হবে না। (সূরা বাকারাঃ১৯৮)
যে সব লোক মসজিদে বসে সতাল সন্ধা আল্লাহর তসবীহ জপে কুরআন মজীদ তদের উদ্দেশ্য করে বলেছেঃ (আরবী********************)
এমন বহু লোক রয়েছে, ব্যবসা বা নগদ বেচা-কেনা যাদের আল্লাহর যিকির নামায কয়েম করা ও যাকাত দেয়ার দ্বীনী কজ-কর্ম থেকে ভুলিয়ে রাখতে পারে না। (সূরা আন-নূরঃ৩৭)
এর অর্থ কুরআনের দৃষ্টিতে মুসলমান মসজিদের মধ্যে বন্দী হয়ে থাকা লোক হতে পারে না। নয় তারা দরবেশ, পরনির্ভশীল বা দুনিয়া ত্যাগী-সন্ন্যাসী বা বৈরাগী। অনুরূপভাবে তারা দুনিয়ার কাজে একান্তভাবে মশগুল হয়ে যাওয়া লোকও নয়। আসলে তারা হচ্ছে কজের লোক। আর তাদের বিশেষত্ব হচ্ছে, তদের বৈষয়িক কজ দ্বীনী, অনুরূপভাবে তারা দুনিয়ার কজে একান্তভাবে মশগুল হয়ে যাওয়া লোকও নয়। আসলে তারা হচ্ছে কাজের লোক্। আর তদের বিশেষত্ব হচ্ছে, তাদের বৈষয়িক কাজ দ্বীনী দায়িত্ব পালন থেকে তদের বিরত ও বিস্মৃত করে রাখতে পারে না।
কুরআন মজীদে ব্যবসা সংক্রান্ত কথাবার্তার কিয়দাংশ আমরা উপরে তুলে ধরলাম।
এরপর সুন্নত ও হা্দীসের কথা। নবী করীম (স) নিজে ব্যবসায়ের কজের জন্যে বিপুলভাবে উৎসাহ দান করেছেন। এ ব্যাপারটি তাঁর কছে ছিল খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তিনি নিজে কথা ও কাজ দ্বারা এ কাজের ভিত্তি সুদৃঢ় করে দিয়েছেন।
এ পর্যায়ে তাঁরা গুরুত্বপূর্ণ কথাসমূহের মধ্য থেকে কুতিপয় নীতিকথা এখানে উল্লেখ করছিঃ (আরবী**************)
বিশ্বস্ত সত্যাশ্রয়ী ব্যবসায়ী কিয়ামতের দিন শহীদদের সাথে অবস্থান করবে। (আরবী***********)
সততা পরায়ণ বিশ্বস্ত ব্যবসায়ী নবী স্বয়ং সিদ্দীক ও শহীদদের সঙ্গী হবেন।
নবী করীম (স) ব্যবসায়ীদের মুজাহিদ ও আল্লাহর পথে শাহাদত বরণকারীদের সমান মর্যাদায় উল্লেখ করেছেন দেখেও আমাদের মনে কোন বিস্ময়ের উদ্রেক হয় না। কেননা, জীবনের অভিজ্ঞতা আমাদের সামনে প্রমাণ করেছে যে, জিহাদ কেবলমাত্র যুদ্ধের ময়দানেই অনুষ্ঠিত হয় না। অর্থনৈতিক ক্ষেত্রেও এই জিহাদ অবশ্যম্ভাবী।
রাসূলে করীম (স) ওয়াদা করেছেন, ব্যসায়ীরা আল্লাহর কাছে এ উচ্চ মর্যাদা লাভ করবে এবং পরকালে তাদের জন্যে হবে এই অশেষ সওয়াব। কেননা, ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে প্রায়ই লোভ ও লালসার দাসত্ব হতে দেখা যায়। যে কোন উপায়ে মুনাফা লুন্ঠনের প্রবনতা খুবই প্রকট হয়ে থাকে এ ক্ষেত্রে । আর ধন ধন সৃষ্টি করে, মুনাফা আরও মুনাফা লাভের জন্যে মানুষকে প্ররোচিত করে। কিন্তু যে ব্যবসায়ী সততা ন্যায়পরায়ণতা ও বিশ্বস্ততা রক্ষা করে, সে তো জিহাদকারী ব্যক্তি। সে প্রতিনিয়ত লোভ-লালসার সাথে মুকাবিলা করে চলছে। অতএব মুজাহিদের মর্যাদা তার জন্যে খুবই শোভনীয় এবং বাঞ্ছনীয়।
ব্যবসায়ের ধর্ম হচ্ছে, তা মানুষকে ধন-দৌলতের স্তুপে ডুবিয়ে দেয়। সে দিন-রাত মূলধন ও মুনাফার হিসেব করতেই নিমগ্ন হয়ে থাকে। এমন কি আমরা দেখতে পাচ্ছি, নবী করীম (স) মিম্বরের ওপর দাঁড়িয়ে খোতবা দিচ্ছেন, এমন সময় একটি ব্যবসায়ী কফেলা পণ্য –দ্রব্য-সম্ভার নিয়ে তথায় উপস্থিত হয়। লোকেরা এই কফেলার পৌছার খবর পাওয়ার সাথে সাথে রাসূলের খোতবার প্রতি ভ্রুক্ষেপ না করে সেদিকে দৌড়ে গেল। এ প্রক্ষিতেই কুরআন মজীদের নিম্নোক্ত আয়াতটি নাযিল হয়। (আরবী***************)
ওরা যখন কোন ব্যবসা বা আনন্দানুষ্ঠান দেখে দখন ওরা সেদিকেই দৌড়ে যায় এবং হে নবী তোমাকে দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায় ফেলে যায়। যা কিছু আল্লাহর কাছে রেয়ছে তা এ আনন্দানষ্ঠান ও ব্যবসা অপেক্ষা অনেক ভালো ও কল্যাণময় এবং আল্লাহই হচ্ছে সর্বত্তম রিযিকদাতা। (সূরা জুমা‘আঃ১১)
কাজেই যে লোক এ ঘর্ণাবর্তে পড়েও দৃঢ় ঈমানদার ও প্রত্যয়শীল, আল্লাহর ভয়ে ভরপুর অন্তর ও আল্লাহর যিকিরে সিক্ত হয়ে থকতে পারে, সে তো নিঃসন্দেহে আল্লহর নিয়ামত প্রাপ্ত নবী, সিদ্দীক ও শহীদদের মধ্যে গণ্য হবে।
ব্যবসার ব্যাপারে আমাদের পথ-প্রদর্শনের জন্যে রাসূলে করীম (স) -এর কর্মনীতিই যথেষ্ট। তিনি যেমন আধ্যাত্মিক দিকের প্রতি পূর্ণ মাত্রায় গুরুত্বারোপ করেছেন, তেমনি মদীনায় তাকওয়ার ও আল্লাহর সন্তাষ্টির ভিত্তিতে মসজিদও কয়েম করেছিলেন। যেন তা আল্লাহর ইবাদত, ইসলামী জ্ঞান-বিজ্ঞান, শিক্ষা ও চর্চা এবং দ্বীনী দাওয়াত প্রচারের কেন্দ্র হওয়ার সাথে সাথে রাষ্ট্র এবং সরকারেরও কেন্দ্র (Head Quarter) হতে পরে। তিনি মানুষের অর্থনৈতিক দিকের ওপরও যথাযথ গুরুত্ব দিয়েছেন। তিনি খালেস ইসলামী বাজার সৃষ্টি করেছিলেন, যার ওপর ইয়াহূদীদের কোন কর্তৃত্ব বা আধিপত্য চলতে পরত না। পূর্ব থেকে চলে আসা বনূ কায়নুকা বাজার ইয়াহূদীদেরই কর্তৃত্বাধীন ছিল। নবী (স) কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত বাজারের ব্যবস্থাপনা ও নিয়ম-কানুন নিজেই পচলন করেছিলেন এবং নিজেই সেটার দেখাসোনা করতেন। এ বাজারটির বৈশিষ্ট্য এই যে তথায় কোনরুপ ধোঁকা-প্রতারণা ঠকাঠকির করবার বা মাপে-ওজনে কোনরূপ কম-বেশি করার কিংবা পণ্যদ্রব্য আটক করে লোকদের কষ্ট দেয়ার কোন সুযোগই ছিল না।
এ সবের সাথে সাথে আমার লক্ষ্য করছি, সাসূলে করীমের সাহাবিগণের মধ্যে সুবিজ্ঞ ব্যবসায়ী, সুদক্ষ কারিগর, কৃষক এবং সামাজিক জীবনের প্রয়োজনীয় সকল কাজ ও বিদ্যার দক্ষতাসম্পন্ন ও পেশাবলম্বনকারী লোক রয়েছেন।
রাসূলে করীম (স) লোকদের মধ্যে বসবাস করতেন। দাঁর ওপর আল্লাহর ফরমান – কুরআনের আয়াত নাযিল হতো। লোকদের মধ্যে তিনি তা পাঠ করে শোনাতেন। জিবরাঈল (আ) সকল-সন্ধ্যা ওহী নিয়ে তাঁর কাছে আসতেন।
সাহবিগণের অবস্থা ছিল এই যে, তাঁরা রাসূলে করীম (স) থেকে এক মুহূর্তের তররেও বিচ্ছিন্ন হওয়া পছন্দ করতেন না। এসব সত্ত্বের আমরা দেখি, মসস্ত সাহাবী নিজ নিজ কাজ ও পেশায় মগ্ন রয়েছেন। কেউ হয়ত ব্যবসায়ী সফর করেছেন, কেউ নিজের খেজুরের বাগান নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। আাবার কেউ কেউ নিজের পেশা ও কারিগরি কাজ থেকে নিয়ে মশগুল থাকার দরুন রাসূলে করীমের কাছে উপস্থিত হয়ে দ্বীন শেখার কাজ থেকে বঞ্চিত থাকছেন। ফলে তিনি কাঁর অপর এক ভাই –যিনি রাসূলের দরবারে উপস্থিত থাকতে পেরেছিলেন-থেকে সব কিছু জেনে নিচ্ছেন। এটা তাঁদের কর্তব্যও ছিল। কেননা রাসূলে করীম (স) স্থায়ী নীতি হিসাবে ঘোষণা করে দিয়েছিলেনঃ (আরবী*****************)
উপস্থিত লোক যেন অনুপস্থিত ব্যক্তির কাছে সবকিছু পৌছে দেয়।
অধিকাংশ আনসার কৃষিকাজে রত থাকতেন। আর মুহাজিররা সাধারণতঃব্যবসায়ী ছিলেন। আবদুর রহমান ইবনে আউফ (রা) মুহাজির ছিলেন। তাঁর কর্মনীতি আমাদের সন্মুখে চিরভাস্বর হয়ে আছে। তাঁর দ্বীনী ভাই সা‘দ ইবনে আনসারী তাঁকে কাঁর অর্ধেক সম্পদ, তাঁর দুটি বাড়ির একটি এবং দুই স্ত্রীর মধ্য থেকে একজন স্ত্রীকে তালাক দিয়ে তাঁর কাছে বিবাহ দেয়ার প্রস্তাব দিয়েছিলেন।
তিনি সা‘দ (রা) -কে বললেনঃ (আরবী*****************)
আল্লাহ আপনার ধন-মাল ও পরিবার-পরিজনে বরকত দিন। আমার ওসবের কোন প্রয়োজন হবে না। এখন ব্যবসা করার মতো কোন বাজার থাকলে আমাকে দেখিযে দিন, আমি ব্যবসা করব।
সা‘দ বললেন, হ্যাঁ, বনু কায়নুকার বাজার রয়েছে তো! পরের দিন তিনি পনির ও ঘি সহ বাজারে চলে গেলেন ও বিক্রি করেন। তিনি এ ব্যাবসা চলিয়ে প্রচুর সম্পদ উপার্জন করেন। , মৃত্যুকলে তিনি এক বিপুল বৈভব রেখে গিয়েছিলেন।
হযরত আবূ বকর (রা) -এর দৃষ্টান্ত আরও ভাস্বর। তিনি বরাবর ব্যবসাই করেছেন। এজন্যে প্রানপণ খাটা-খাটুনি করতেন। এমন কি খলীফা নির্বাচিত হওয়ার দিনও তিনি বাজারে যাওয়ার ইচ্ছা করলেন।
হযরত উমর (রা) নিজের সম্পর্কে বলেনঃ (আরবী*******************)
বাজারের কেনা-বেচা আমাকে এমনভাবে মশগুল করে রেখেছিল যে, আমি রাসূলে করীম (স) -এর হাদীস শ্রবণ থেকে বঞ্চিত থেকে গেলাম।
হযরত উসমান (রা) ও অপরাপর সাহাবী সম্পর্কে এই কথা।
ব্যবসা সম্পর্কে গির্জার ভূমিকা
ইসলাম পূর্বোক্তভাবে দ্বীন ইসলামের ছায়াতলে থেকে তারা জগতিক মহাযাত্রা অব্যহত রেখেছে। ইসলামে বিশ্বাসী লোকেরা ব্যবসা ও ক্রয়-বিক্রয়ের কাজ করেছে;কিন্ত এ কাজে ব্যস্ততা ও নিমগ্নতা তাদের আল্লাহর যিকির থেকে গাফিল করেনি, আল্লাহর আনুগত্যের পথ তেকে করেনি একবিন্দু বিচ্যুত। অথচ এ সময়কালে মধ্যযুগের বড় বড় দেশ ওি খ্রিস্টন ইউরোপের রাষ্ট্রসমূহের জনগণ ব্যবসা সম্পর্কে দৃষ্টি পরস্পর-বিরোধী মতের মধ্যে দ্বিধান্বিত হয়ে পড়েছিল। একদিকে ছিল‘নিষ্কৃতির’মত। ব্যবসায়ের তৎপরতায় মশগুল হলে নফস বহু প্রকরের গুনাহের আবিলতায় পংকিল হয়ে পড়বে, কাজেই নিজেকে তা থেকে রক্ষা করতে হবে এবং সে জন্যে এ ধরনের কাজকর্ম থেকে দূরে সরে থাকতে হবে। অপরদিকে ধারণা ছির, ধর্মীয় নেতৃবৃন্দের শিক্ষা ও মতের বিরুদ্ধে ব্যবসা ও শিল্পকর্মে আত্মনিয়োগ করলে মানুষ অভিশপ্ত হয়ে যাবে। কেননা এই গুনাহ কেবল একটি খারাপ কাজই নয়, তা চিরন্তন পাপ ও সর্বকালের অভিশাপ যেমন পৃথিবীতে তেমনি আকাশলোকেও; ইহকালে এবংপরকালে।
কিদ্দীস অগস্টস বলেনঃকয়-কারবার (Business) মূলতই গুনাহ। কেননা তার প্রভবে নফস বা মন মহাসত্য আল্লাহর দিক থেকে হটে যায়।
অপর একজন বলেনঃযে ব্যক্তি কোন কিছু ক্রয় করে সেই অবস্থাই সে জিনিসকে বিক্রি করার উদ্দেশ্যে, তাতে কোনরূপ পরিবর্তন আনা হয় না; তাহলে এ শেষ ব্যক্তি সেসব ক্রয়-বিক্রয়কারী গোষ্ঠীর মধ্যে শামিল হয়ে যায়, যার প্রকৃত ইবাদতের উচ্চতর ও পরিবেশ থেকে দূরে ছিটকে পড়েছে।
আসলে এসব কথাবার্তা কিদ্দীস রোলসের উপস্থাপিত শিক্ষার দীর্ঘসূত্রিতা ছাড়া আর কিছুই নয়। কিদ্দীস বলেছিলেন, কোন খ্রিস্টানেরই যেহেতু তার অপর খ্রিস্টান ভাইয়ের সাথে কোনরূপ ঝগড়া –ফাসাদে লিপ্ত হওয়া উচিত নয়, এজন্যেই খ্রিস্টনদের মধ্যে কোন ব্যবসায়ী তৎপরতা থাকাও বাঞ্ছনীয় নয়।
হারাম ব্যবসা
কিন্তু ইসলামে ব্যবসা হারাম নয়। তবে যে ব্যবসায়ে জুলুম, ধোঁকাবাজি, প্রতারণা, ঠকবাজি, মুনাফাখোরী কিংবা কোন নিষিদ্ধ জিনিসের ক্রয়-বিক্রয়, উত্পাদন হয় তা নিশ্চয়ই হারাম।
যেমন মদের ব্যবসা, বিবেক-বুদ্ধি আচ্ছন্নকারী দ্রব্যাদির ক্রয়-বিক্রয় কিংবা শূকর ব্যবসা অথবা মূর্তি, প্রতিকৃতি বা অনুরূপ ধরনের ব্যবসা নিশ্চয়ই নিষিদ্ধ। কেননা এ জিনিসগুলো গ্রহন, পান, চলাচলকরণ ও তা থেকে উপকার গ্রহণ ইসলামে সম্পূর্ণরূপে হারাম করে দেয়া হয়েছে । ইসলাম এ কাজের প্রতি কোন সমর্থন দিতে আদৌ প্রস্তুত নয়। এসব পথে যা কিছুই উপার্জন হয় তা হারাম ও জঘন্য। তা খাওয়ার ফলে ব্যক্তির দেহে যে গোশত বৃদ্ধি পাবে, তার জন্যে জাহান্নামই উপযুক্ত স্থান। যেসব লোক এ সব নিষিদ্ধ জিনিসের ব্যবসায় লিপ্ত, সে সত্যবাদী, ন্যায়পরায়ণ ও বিশ্বস্ত হবে বলে মনে করার কোন কারণই থাকতে পারে না। কেননা এসব ব্যবসায়ের ভিত্তই হচ্ছে ঘৃণ্য এবং হারাম। ইসলাম তার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে এবং এ ব্যবসাকে চালু রাখতে আদৌ প্রস্তুত নয়।
তবে স্বর্ণ বা রেশমের- রেশমী কাপড়ের ব্যবসা করা হারাম নয়। কেননা এ দুটো পুরুষদের জন্যে না হলেও নারীদের জন্যে তো হালাল। তবে এসব জিনিস দ্বারা তৈরী এমন জিনিসের কারবার- যা কেবল পুরুষরাই ব্যবহার করে, তা জায়েয হবে না।
হালাল ও জায়েয ব্যবসায়ে ব্যবসায়ীর কতগুলো কর্তব্য রয়েছে। সে কর্তব্য পালন না করলে ব্যবসায়ীকে কিয়ামতের দিন গুনাহগারদের দলভুক্ত হতে হবে। আর এ গুনাহগাররা অবশ্যই জাহান্নামে যাবে।
নবী করীম (সা) একদিন নামাযের জন্যে বের হয়ে এলেন। তিনি দেখতে পেলেন, লোকেরা কেনা-বেচা করছে। তিনি দেখতে পেলেন, লোকেরা কেনা-বেচা করছে। তিনি তাদের বললেনঃ
হে ব্যবসায়ী লোকেরা ! লোকেরা রাসূলের ডাকে সাড়া দিল। তারা সেদিকে চোখ তুলে তাকিয়ে দেখল। তখন নবী করীম (সা) বললেনঃ (আরবী**********************)
কেয়ামতের দিন ব্যবসায়ীরা মহাপাপীরূপে উত্থিত হবে। তবে তারা নয় যারা আল্লাহকে ভয় করবে, নেকভাবে সততা ও সভ্যতা সহকারে ব্যবসায়ের কাজ সম্পন্ন করবে। (তিরমিযী, ইবনে মাযাহ)
ওয়াসিলা ইবনুল আসকা (রা) বলেছেন : রাসূলে করীম (সা) আমাদের কাছে আসতেন- আমরা ছিলাম ব্যবসায়ী এবং বলতেন : (আরবী*****************)
হে ব্যবসায়ীরা, তোমরা মিথ্যা কথা ও মিথ্যা কারবার থেকে অবশ্যই দূরে সরে থাকবে।
এত এব ব্যবসায়ীদের কর্তব্য এ মিথ্যাকে সম্পূরূপে পরিহার করে চলা। কেননা ব্যবসায়ীদের জন্যে তাই হচ্ছে একটি অতি বড় বিপদ। মিথ্যাই মানুষকে পাপের পথে টেনে নিয়ে যায়। আর পাপের পথের পরিণতি হচ্ছে জাহান্নাম। তাদের খুব বেশি কিরা-কসম করাও পরিহার করা কর্তব্য। বিশেষ করে মিথ্যা কসম খাওয়া খুবই মারাত্মক। কেননা নবী করীম (সা) বলেছেন:
(আরবী*****************)
কিয়ামতের দিন আল্লাহ তা’আলা তিনজনের প্রতি তাকাবেন না, তাদেরকে পবিত্রও করবেন না, তাদের জন্যে হবে পীড়াদায়ক আযাব। তাদের মধ্যে একজন হচ্ছে মিথ্যা কিরা-কসম করে যে লোক তার পণ্য বিক্রয় করে সে।
আবু সায়ীদ (রা) থেকে বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেছেন, একজন বেদুঈন একটি ছাগী নিয়ে যাচ্ছিল। আমি তাকে জিজ্ঞাস করলাম, তুমি কি ছাগীটি তিন দিরহাম বিক্রয় করবে? লোকটি বললঃ না আল্লাহ কসম। কিন্তু পরে সে সেই মূল্যেই ছাগীটি বিক্রয় করে দিল। আমি এ ব্যাপারটি রাসূলে করীম (সা) এর কাছে উল্লেখ করলাম। তিনি শুনে বললেন: (আরবী************)
লোকটি দুনিয়ার বিনিময়ে তার পরকালকে বিক্রি করে দিয়েছে।
ব্যবসায়ীর উচিত ধোঁকাবাজি ও ঠকবাজি থেকে দূরে থাকা। কেননা যে লোক ধোঁকাবাজি ও ঠকবাজি করে, সে ইসলামী উম্মতের বাইরে চলে গেছে।
ওজন ও পরিমাপে কমবেশি করা অত্যান্ত খারাপ কাজ। মুনাফাখোরী ও মজুদদারী তাকে পরিহার করে চলতে হবে। কেননা তা করলে আল্লাহ ও রাসূল তার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করে ফেলবেন।
সুদী কারবার করা চলবে না। কেননা সুদকে সুদী করবার লব্ধ মুনাফাকে আল্লাহ তা’আলা নির্মূল নিশ্চিহ্ন করে দেন, হাদীসে বলা হয়েছেঃ (আরবী****************)
কোন লোক যদি সুদের একটি দিরহামও জেনে শুনে খায় তবে তা ছত্রিশ বার জ্বেনা করার চাইতেও বড় গুনাহ। (আহম্মদ)
এসব বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা পরে করা হবে।
চাকরি
চাকরি করে রুজি-রোজগার করা মুসলিম মাত্রের জন্যেই জায়েয। তা সরকারী চাকরি, হোক, কোন প্রতিষ্ঠানের হোক কিংবা কোন ব্যক্তিগতভাবে করো কাছে। যতদিন সে চাকরি সংক্রান্ত যাবতীয় কাজের দায়ত্ব পালন করতে সক্ষম থাকবে, ততদিন এ চাকরি করা তার জন্যে বৈধ। কিন্তু যার মধ্যে যে কাজের যোগ্যতা নেই, তার পক্ষে সেকাজের নিয়োগ প্রার্থনা করা জায়েয নয়। বিশেষ করে প্রশাসনিক ও বিচার বিভাগীয় গুরুত্বপূর্ণ পদসমূহ সম্পর্কে এ শর্ত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। হযরত আবু হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত আছে, নবী করীম (সা) ইরশাদ করেছেনঃ (আরবী****************)
ধ্বংস প্রশাসকদের জন্যে, ধ্বংস নেতৃস্থনীয় লোকদের জন্যে, ধ্বংস কোষাধ্যক্ষদের জন্যে। কত না লোক কিয়ামতের দিন কামনা করবে, তাদের চুলের চুটি যদি সুরাইয়া তারকার সাথে বেঁধে দেয়া হতো এবং তাদের যদি আসমান ও জমিনের মধ্যে ঝুলিয়ে রাখা হতো, তবে কতই না ভাল হতো।
হযরত আবূ যর (রা) থেকে বর্ণিতঃ (আরবী***********************)
আমি বললাম, হে রাসূল! আপনি কি আমাকে কোন দায়িত্বপূর্ণ পদে নিযুক্ত করবেন না? এ কথা শুনে তিনি তাঁর হাত আমার কাঁধের ওপর রাখলেন এবং বললেন : হে আবু যর তুমি বড় দুর্বল ব্যক্তি। আর এ পদ হচ্ছে কঠিন আমানতের ব্যাপার। কিয়ামতের দিন তাই হবে লজ্জা ও লঞ্ছনার কারণ। কেবল সে লোক ছাড়া, যে তা পূর্ণ সততা সহকারে গ্রহণ করল এবং এ পদের যে দায়িত্ব ও কর্তব্য তার ওপর বর্তায় তা সে যথাযথ পালন করল।
নবী করীম (সা) আরও বলেছেনঃ (আরবী******************)
বিচারক তিন ধরনের। তন্মধ্যে এক ধরনের বিচারক জান্নাতে যাবে। আর অপর দুধরনের বিচারক যাবে জাহান্নামে। জান্নাতে যাবে সে বিচারক যে প্রকৃত সত্যকে জানতে পারল এবং সে অনুযায়ী ফয়সালা করল- রায় দিল। কিন্তু যে বিচারক প্রকৃত সত্য জানতে পেরে জুলুম করল, সে জাহান্নামে যাবে। আর সেও জাহান্নামে যাবে সে মূর্খতা ও অজ্ঞতার ভিত্তিতে বিচারকার্য সমাধা করল।
অতএব এসব বড় বড় দায়ত্বপূর্ণ পদের জন্যে কোনরূপ কামনা বা প্রার্থনা করা এবং তা পাওয়ার জন্যে চেষ্টা করা কোন মুসলমানেরই উচিত নয়, যদিও কোন পদের যোগ্যতা তার রয়েছে। কেননা যে ব্যক্তি কোন পদকে নিজের রব্ব বানিয়ে নেবে তার সে পদই তাকে তার গোলাম বানিয়ে নেবে। আর যে লোক পৃথিবীতে বাহ্যত প্রকাশমান ফলাফলকেই সব কিছু মনে করবে, সে আসমানী তওফীক থেকে বঞ্চিত হবে।
হযরত আবদুর রহমান ইবনে সামুরাতা (রা) বলেনঃ (আরবী****************)
রাসূলে করীম (সা) আমাকে বললেন : হে আবদুর রহমান! কোন নেতৃত্ব তুমি চাইবে না। কেননা তুমি যদি না চাইতেই পেয়ে যাও তাহলে তোমাকে সে দায়িত্ব পালনে সাহায্য করা হবে। আর যদি প্রার্থনা ও চেষ্টার ফলে তুমি পাও, তাহলে তোমাকে তারই ওপর নির্ভরশীল বানিয়ে দেয়া হবে।
হযরত আনাস (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেছেন: (আরবী*******************)
যে লোক বিচারকের পদ লাভ করার কামনা করল, তা চাইল ও সেজন্যে সুপারিশ করল, তাকে তারই হাতে সোপর্দ করে দেয়া হবে, আর কেউ যদি এ পদ গ্রহন করত বাধ্য হলো ( নিজে চাইল না) তার সাহায্যার্থে একজন ফেরেশতা আল্লাহ নাযিল করবেন। (আবু দাউদ, তিরমিযী)
এসব কথা সে পর্যায়ে প্রযোজ্য যখন শূন্যপদ পূরণের জন্যে অন্যান্য লোক মজুদ রয়েছে। পক্ষান্তরে অবস্থা যদি এই হয় যে, শুন্য পদ পূরণ করার জন্যে সে ছাড়া আর কেউ নেই এবং দেখা যাবে যে, সেই কাজের জন্যে নিজেকে পেশ না করলে সার্বিক কল্যাণই অচল হয়ে যাবে, জাতীয় কার্যাবলী বিপর্যস্ত হয়ে পড়বে, তখন নিজেকে সেই কাজের জন্যে পেশ করায় কোন দোষ নেই। কুরআন মজীদ হযরত ইউসুফের কিসসা আমাদেরকে শুনিয়েছে। তাতে উল্লেখ হয়েছে যে, তিনি নিজেই বাদশাহকে বলেছিলেন : (আরবী********************)
সে বলল, রাজ্য ও রাষ্ট্রের ধন-ভণ্ডারসমূহের ওপর আমাকে কর্তৃত্বশীল করে নিযুক্ত করুন। আমি তো হেফাযত ও সংরক্ষণকারী এবং সব বিষয়ে জ্ঞানের অধিকারী।
রাজনৈতিক পদ লাভের জন্যে প্রার্থনা করা ব্যাপাটিকেও ইসলামের পথ-নির্দেশ এরূপ।
হারাম চাকরি
চাকরি করা জায়েয পর্যায়ে আমরা এ পর্যন্ত যা কিছু বললাম, তা কেবল সেসব চাকরির বেলায় যখন সে চাকরির কাজে মুসলিম জনগণের পক্ষে ক্ষতির কারণ নিহিত থাকবে না। অতএব মুসলমানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধরত কোন সৈন্যবাহিনীর কোন পদে চাকরি করা কোন মুসলমানের পক্ষে জায়েয হতে পারে না। অনুরূপভাবে যে প্রতিষ্ঠান বা শিল্প কারখানা মুসলমানদের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্যে অস্ত্রশস্ত্র তৈয়ার করার কাজে নিযুক্ত, তার কোন চাকরি করা মুসলমানদের জন্যে জায়েয নয়। ইসলাম ও মুসলামনদের বিরুদ্ধে প্রচার-প্রোপাগাণ্ডা চালানর প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে এ কথা।
এ রূপেই জুলুম বা হারাম কাজে সাহায্য সহায়তাকারী কোন প্রতিষ্ঠান বা সংস্থায় চাকরি গ্রহণও মুসলমানের জন্যে হারাম। যেমন কোন সুদী কারবারের প্রতিষ্ঠান, মদ্য উত্পানদের কারখানা বা মদ্য বিক্রির দোকান, কোন নৃত্যশালা, থিয়েটার, ছায়াছবি নির্মান ইত্যাদি ধরনের কাজে চাকরি গ্রহণও জায়য হতে পারে না।
এসব ক্ষেত্রে চাকরি গ্রহণকারীরা এই বলে নিষ্কৃতি পেতে পারে না যে, তারা নিজেরা তো হারাম কাজ করছে না। কেননা পূর্বেই বলেছি, ইসলামের মৌলনীতি হচ্ছে পাপ কাজের সাহায্য করাও পাপ- সে সাহায্য যে রকমেরই এবং যতটা মাত্রারই হোক না কেন। এ কারণেই নবী করীম (সা) সুদী কারবারের চুক্তি বা হিসাব লেখক এবং তার সাক্ষীদের ওপর যেমন অভিশাপ বর্ষণ করেছেন, তেমনি অভিশাপ করেছেন সুদখোরদের ওপরও। অভিশাপ করেছেন মদ্য চোলাইকারী ও মদ্য পরিবেশনাকরীর ওপর যেমন করেছেন মদ্যপের ওপর।
এ বিধান ও নির্দেশ তখনকার জন্যে, যখন এ ধরনের চাকরি বা কাজ গ্রহনের জন্যে মানুষ সাংঘাতিক অসুবিধায় পড়ে বাধ্য হবেন। কিন্তু বাস্তবিকই যদি কোন মুসলমান এরূপ অসুবিধায় পড়ে যায় এবং এ কাজ ছাড়া অন্য কোন হালাল ধরনের চাকরি না-ইপাওয়া যায়, তাহলে মনে মনে এ কাজের প্রতি ঘৃণা পোষণ সহকারে এ চাকরি নেয়া যেতে পারে। তবে এ ছাড়া হালাল কোন চাকরি পাওয়া যায় কিনা তার জন্যে অবিশ্রান্ত চেষ্টা চালাতে থাকতে হবে, যেন আল্লাহর অনুগ্রহে এ কাজ থেকে নিষ্কৃতি পেয়ে পুরোপুরি হালাল কোন পেশা বা চাকরি পাওয়া সম্ভব হয় এবং হারাম উপর্জন থেকে বেঁচে যেতে পারে।
মুসলমান সব সময় সন্দেহ বা সংশয়পূর্ণ কাজ থেকে দূরে সরে থাকতে চেষ্টা করবে। কেননা তা দ্বীন পালন ও আকীদার ক্ষেত্রে দুর্বলতার সৃষ্টি করে। তাই এ কাজে বিরাট পরিমাণ উপার্জন ও প্রচুর ধন লাভ সম্ভবপর হলেও মুসলিম ব্যক্তি তা পরিহার করে চলে। নবী করীম (সা) বলেছেন : (আরবী*****************)
যা তোমাকে সংশয়ে ফেলে তা পরিহার কর এবং যা সন্দেহমুক্ত উন্মুক্ত মনে হয়, তাই গ্রহণ করো। (আহমদ, তিরমিযী, নিসায়ী)
তিনি আরো বলেছেন : (আরবী******************)
যাতে সংশয় রয়েছে তা ছেড়ে দিয়ে যাতে কোনরূপ সংশয় নেই তা যতক্ষন না গ্রহণ করবে, ততক্ষণ মানুষ মুক্তাকীদের মর্যাদা লাভ করতে পারে না। (তিরমিযী)
(অন্য কথায় দোষ থেকে বাঁচতে গিয়ে অনেক ক্ষেত্রে দোষমুক্ত জিনিসও ত্যাগ করা মুক্তাকীদের কাজ।)
উপার্জন পর্যায়ে সাধারণ নিময়
উপার্জন পর্যায়ে সাধারণ নিময় হচ্ছে, যে কোন উপায়ে যে কোন পথ ও পন্থায় ইচ্ছা উপার্জন করতে চেষ্টা করাকে ইসলাম মুসলমানদের জন্যে জায়েয করেনি। বরং ইসলাম উপার্জনের জন্যে শরীয়তসম্মত পন্থা ও শরীয়ত অসমর্থিত পন্থার মধ্যে পার্থক্য করার নির্দেশ দিয়েছে। এ নীতির মূল কথা হচ্ছে সামাজিক-সামষ্টিক কল্যান। আর এ পার্থক্যকরণের মৌলনীতি হচ্ছে যেসব পথে উপার্জন বা মুনাফা লাভ করার ক্ষেত্রে অপরের ক্ষতি অবশ্যম্ভাবী তা শরীয়তসম্মত পন্থা নয় আর যে সব পন্থায় ব্যক্তিদের পরস্পরের মধ্যে মুনাফার বন্টন হয় পারস্পরিক সন্তুষ্টি ও অনুমতির ভিত্তিতে এবং সে বন্টন হয় সুবিচারপূর্ণ, তা অবশ্যই শরীয়ত-সমর্থিত পন্থা।
আল্লাহ তা’আলা নিজেই এ মৌলনীতি ঘোষণা করেছেন কুরআনের নিম্মোদ্ধৃত আয়াতেঃ (আরবী****************)
হে ঈমানদার লোকেরা! তোমরা বাতিল পন্থায় তোমাদের পরস্পরের মাল ভক্ষণ করবে না। তবে পারস্পরিক সন্তুষ্টির ভিত্তিতে যদি ব্যবসা করা হয়, তাহলে গ্রহন করতে পার। তেমরা নিজেদের হত্যা করো না। কেননা আল্লাহ তোমাদের প্রতি বড়ই দয়াবান। যে লোক সীমালংঘন ও জুলুম স্বরূপ এ কাজ করবে, তাকে আমরা অবশ্যই জাহান্নামে পৌঁছে দেব।
এ আয়াতে ব্যবসাকে দুটো শর্তের ভিত্তিতে জায়েয ঘোষণা করা হয়েছেঃ
প্রথম, ব্যবসায় পক্ষদ্বয়ের পূর্ণ সন্তুষ্টি ও সম্মতির ভিত্তিতে সম্পন্ন হতে হবে এবং দ্বিতীয়, তাতে এক পক্ষের মুনাফা অপর পক্ষের ক্ষতির ফলে হতে পারবে না। আয়াতের তোমরা নিজেদের হত্যা করো না অংশ থেকে তাই প্রমাণিত হয়।
তাফসীরকারগণ উপরোদ্ধৃত আয়াতের যে দুটো তাফসীর পেশ করেছেন, এক্ষেত্রে এ দুটোই প্রযোজ্য। প্রথম তাত্পর্য, লোকেরা পরস্পরকে হত্যা করবে না। আর দ্বিতীয় হচ্ছে, তোমরা নিজেদের হাত নিজেদের হত্যা করবে না। উভয় দিক দিয়েই আয়াতটির সারকথা হচ্ছে, যে লোকই তার ব্যক্তিগত মুনাফা অর্জনের জন্যে অপরকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে, সে যেন সেই দ্বিতীয় ব্যক্তির রক্ত শুঁষে নিচ্ছে। আর তার পরিণতিতে নিজেই নিজের ধ্বংসের পথ উন্মুক্ত করে। অতএব চুরি, ঘুষখোরি, জুয়া ও ধোঁকা-প্রতারণা, খারাপ জিনিস দিয়ে ভাল জিনিসের মূল্য গ্রহণ ও সুদী কারবার- এ সব ধরনের কাজেই এ দুটো কারণ প্রকটভাবে বর্তমান। আর এ করণেই তা শরীয়তে সমর্থিত নয়। কোন কোন অবস্থায় পারস্পরিক সম্মতির শর্তটি পাওয়া গেলেও অপর গুরুত্বপূর্ণ শর্ত- তোমরা নিজেদের হত্যা কর না- (অর্থাৎ অপরের ক্ষতি না হওয়ার শর্ত) অনুপস্থিত। তাই তা জায়েয নয়।
[মওলানা মওদূদী লিখিত অর্থনীতির ভিত্তি]