নয়া শিক্ষাব্যবস্থার নীল নকশা
এই বৈপ্লবিক পরিবর্তনের প্রয়োজনীয়তা প্রমাণ করার পর আমি এই ইপ্সিত শিক্ষাব্যবস্থার একটা মোটামুটি ধারণা পেশ করছি।
প্রথম বৈশিষ্ট্যঃ
এই নয়া শিক্ষাব্যবস্থায় প্রথম বৈশিষ্ট্য হবে এতে ধর্মীয় ও দুনিয়াবী শিক্ষার স্বতন্ত্র অস্তিত্ব মুছে ফেলে উভয় শিক্ষাকে একক শিক্ষাব্যবস্থায় পরিণত করা।
জ্ঞান বিজ্ঞানকে ধর্মীয় ও দুনিয়াবী শিক্ষার নামে দুটো আলাদা ভাগে ভাগ করা হয়েছে মূলত দ্বীন দুনিয়া সম্পর্কে আলাদা ধ্যান ধারণা থাকার কারণেই। অথব এই ধারণাটা মূলতঃই অ-ইসলামী। ইসলামের পরিভাষায় যেটা ‘দ্বীন’ বা ‘ধর্ম’, সেটা দুনিয়ার জীবন হতে কোন আলাদা জিনিস নয়। দুনিয়াকে এ দৃষ্টিভঙ্গীতে দেখা যে, এটা আল্লাহর রাজ্য এবং নিজেকে আল্লাহর প্রজা মনে করে দুনিয়ার জীবনে আল্লাহর নির্দেশ ও সন্তুষ্টি অনুসারে প্রতিটি কাজ করা –এটারই নাম ‘দ্বীন’। দ্বীন সম্পর্কে এই ধারণার স্বাভাবিক দাবি হলো, সমস্ত দুনিয়াবী তথা ধর্ম নিরপেক্ষ আধুনিক জ্ঞান বিজ্ঞানকে ইসলামিক জ্ঞান বিজ্ঞানে রূপান্তরিত করা। নচেৎ কতক জ্ঞান বিজ্ঞান যদি নিছক দুনিয়াবী হয় এবং খোদার আনুগত্যের ধারণার বাইরে থাকে আর কতকগুলো জ্ঞান বিজ্ঞান যদি ইসলামী হয় এবং তা পার্থিব জ্ঞান বিজ্ঞান থেকে আলাদা ভাবে শিক্ষা দেয়া হয় তাহলে একটি শিশু তার শৈশবকাল থেকেই এমন একটি মানসিকতা নিয়ে বেড়ে উঠবে যে, তার নিকট দ্বীন ও দুনিয়া দুটি স্বতন্ত্র জিনিস। এ কারণে এ দুটো জিনিস হবে তার দৃষ্টিতে সম্পূর্ণ আলাদা বিষয় এবং এতদোভয়ের সমন্বয়ে ঘটিয়ে ভারসাম্যপূর্ণ একক জীবন গঠন করা তার পক্ষে কঠিন হবে, যে জীবনে আল্লাহর দ্বীনের (তোমরা পূর্ণাঙ্গভাবে ইসলামে প্রবেশ কর অর্থাৎ সমস্ত জীবনে ইসলামকে পরিপূর্ণভাবে রূপায়িত কর) সঠিক প্রতিফলন হবে না।
উদাহরণস্বরূপ বলা যায় যদি কোন ব্যক্তিকে ইতিহাস, ভূগোল, পদার্থবিদ্যা, রসায়নবিদ্যা, জীববিদ্যা, প্রাণীবিদ্যা; ভূবিদ্যা, মহাশূণ্যবিদ্যা, অর্থনীতি, রাষ্ট্রবিজ্ঞান এবং অন্য সমস্ত বিদ্যা এমনভাবে পড়ানো হয় যে, শুরু হতে শেষ পর্যন্ত কোথাও আল্লাহর নাম পর্যন্ত উচ্চারিত হয় না। বিশ্বপ্রকৃতির দশ দিগন্তে এবং মানুষের নিজ সত্তায় যত সচেতন ও অচেতন বস্তু রয়েছে সেসবকে আল্লাহর নির্দেশ হিসেবে দেখা হয় না। প্রাকৃতিক নিয়মাবলীকে মহাবিজ্ঞানী আল্লাহর রচিত বিধান হিসেবে উল্লেখ করা হয় না, ঐতিহাসিক ঘটনাবলীর ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ দেয়ার সময় তার পেছনে মহাপরাক্রান্ত ও সর্বশক্তিমান আল্লাহর ইচ্ছা কার্যকরী থাকার কথা বলা হয় না, ফলিত বিদ্যাসমূহের কোথাও আল্লাহর সন্তুষ্টি অনুসারে কৌশল প্রয়োগ করার উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য পোষণ করা হয় না, বাস্তব জীবনের আচার আচরণ ও কায় কারবারের আলোচনায় আল্লাহ জীবন পরিচালনার যে নিয়ম কানুন বেঁধে দিয়েছেন সে নিয়ম পদ্ধতির বর্ণনাও কোথাও থাকে না, জীবনের উৎপত্তি ইতিবৃত্তে কোথাও জীবন স্রষ্টা আল্লাহর দেয়া সূচনা ও সমাপ্তির বিবরণ সন্নিবেশিত হয় না-তা হলে এত সব বিদ্যা শেখার পর তার মন মগজে জীবন ও বিশ্বজগত সম্পর্কে যে ধারণা জন্মাবে তাতে আল্লাহর কোন স্থান থাকবে না। প্রতিটি জিনিসের সাথে তার পরিচিত ঘটবে স্রষ্টাকে বাদ দিয়েই। প্রত্যেক ব্যাপারে সে খোদা ও তাঁর সন্তুষ্টির পরোয়া না করেই নিজের পথ রচনা করে নিবে। সকল বিদ্যা হতে এই দৃষ্টিভঙ্গী অর্জন ও অর্জিত জ্ঞানের এরূপ ধারা বিন্যাস লাভের পর সে যখন অন্য একটা বিভাগে গিয়ে হঠাৎ খোদার কথা শুনবে এবং দ্বীনিয়াত বিষয়ের আওতায় যে নৈতিক শিক্ষা, শরীয়তী বিধি-নিষেধ এবং জীবনের মহত্তর লক্ষ্য শিক্ষা দেয়া হয়, তা যখন পাবে, তখন সে বুঝতেই পারবে না যে জীবন ও জগত সম্পর্কে তার অর্জিত জ্ঞান কাঠামোতে খোদা ও তার সাথে সংশ্লিষ্ট অন্যান্য জিনিসকে কোথায় স্থান দেয়া যায়? প্রথমে খোদার অস্তিত্ব সম্পর্কেই তার প্রমাণ দরকার হবে। এরপর সে জানতে চাইবে যে, খোদার দেয়া পথ নির্দেশ সত্যিই তা প্রয়োজন কি না এবং তার নিকট হতে সত্যিই এসেছে কি না? এসে থাকলে তার প্রমাণ কি? এসবের প্রমাণ দিয়ে তাকে সন্তুষ্ট করা গেলেও তার পক্ষে দুনিয়াবী জ্ঞানের সাথে এই নতুন জিনিসের সামঞ্জস্য বিধান করা খুবই কঠিন হবে। সে যত পাকা ঈমানদারই হোক না কেন এতদসত্ত্বেও ইসলামী জীবন বিধান কখনোই তার জীবনে স্থান পাবে না-এটা হবে তার জীবনের একটা আনুসঙ্গিক বা বাড়তি ব্যাপার মাত্র।
এতসব অকল্যাণ শুধুমাত্র জ্ঞান বিজ্ঞান ও শিক্ষাকে ধর্মীয় ও দুনিয়াবী এই দুই ভাগে বিভক্ত করার ফল। আর এভাবে বিভক্ত করাটা ইসলামী দৃষ্টিভঙ্গীর সম্পূর্ণ বরখেলাফ, সেকথা আমি ইতোপূর্বেই বলেছি। নতুন শিক্ষা ব্যবস্থায় ইসলামী শিক্ষার জন্য কোন আলাদা পাঠক্রমের প্রয়োজন নেই। বরং গোটা শিক্ষাকেই ইসলামী শিক্ষায় পরিণত করা প্রয়োজন। প্রথম থেকেই একটি শিশুকে জগত সম্পর্কে এভাবে শিক্ষা দিতে হবে যে, সে আল্লাহর রাজত্বেরই একজন প্রজা। তার নিজ সত্তায় ও সারা বিশ্বজাহানে আল্লাহরই নিদর্শন দেখতে পায়। তার এবং দুনিয়ার প্রতিটা জিনিসের সম্পর্ক সরাসরি বিশ্ব প্রভুর সাথে-যিনি আকাশ থেকে সকল ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। এ বিশ্বজগতে যেসব শক্তি ও বস্তু তার আয়ত্বাধীন ও নিয়ন্ত্রণাধীণ, তা সব আল্লাহই তাকে দিয়েছেন। একমাত্র আল্লাহর মর্জি অনুসারে ও তার নির্দেশিত পথে এগুলোকে ব্যবহার করতে হবে এবং এ জন্য তাকে আল্লাহর কাছে জবাবদিহি করতে হবে।
প্রাথমিক স্তরে শিক্ষার্থীদের সামনে ইসলামী দৃষ্টিভঙ্গী ছাড়া অন্য কোন দৃষ্টিভঙ্গীই আসাই ঠিক নয়। তবে পরবর্তী স্তরগুলোতে যাবতীয় জ্ঞান বিজ্ঞান তাকে এমনভাবে শিক্ষা দিতে হবে যে, সমস্ত তত্ত্ব ও তথ্যের বিন্যাস ও ব্যাখ্যা এবং ঘটনার পটভূমি বিশ্লেষণ সম্পূর্ণ ইসলামী আদর্শের দৃষ্টিভঙ্গীতেই হবে। কিন্তু তার পাশাপাশি অন্যান্য মতবাদগুলোও যথার্থ সমালোচনা ও যাচাই বাছাই করে তুলে ধরতে হবে এবং বলে দিতে হবে যে, এগুলো পথভ্রষ্ট ও খোদার গজবে নিপতিত লোকদের রচিত মতবাদ। অনুরূপভাবে বাস্তব জীবনের সাথে সংশ্লিষ্ট বিদ্যাগুলোর প্রাথমিক পর্যায়েই ইসলামের নির্দেশিত জীবন লক্ষ্য, নৈতিক নীতিমালা এবং কর্ম পদ্ধতির শিক্ষা দেয়া চাই। তবে অন্যান্য মতাদর্শের নীতিমালা ও কর্মপদ্ধতি এমনভাবে পড়াতে হবে যে, সে গুলোর দার্শনিক ও চিন্তাগত ভিত্তি, অভীষ্ট লক্ষ্য ও কর্মপন্থা ইসলাম থেকে কতখানি ভিন্ন এবং কোন কোন দিক দিয়ে ভিন্ন তা স্পষ্ট হয়ে যায়। সকল জ্ঞান বিজ্ঞানকে ইসলামী জ্ঞান বিজ্ঞানে রূপ দেয়ার এটাই সঠিক পদ্ধতি। এ পদ্ধতিতে শিক্ষা দিলে ইসলামী শিক্ষার জন্য যে আলাদা পাঠক্রমের প্রয়োজন হয় না, তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
দ্বিতীয় বৈশিষ্ট্যঃ
এ শিক্ষাব্যবস্থায় দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হওয়া উচিত এই যে, এতে প্রত্যেক ছাত্রকে সব বিষয়ে শিক্ষিত করে শিক্ষা সমাপ্তির পর ‘মাওলানা’ বা ‘মুফতি’ বানিয়ে প্রত্যেককে সব বিষয়ে মতামত দেবার যে রেওয়াজ আজ পর্যন্ত চলে আসছে তার সমাপ্তি ঘটানো। এর পরিবর্তে বিশেষজ্ঞ হিসেবে শিক্ষা দেয়ার ব্যবস্থা চালু করা বাঞ্চনীয়, যা বহু যুগের অভিজ্ঞতায় ও পরীক্ষা নিরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ফলপ্রসূ প্রমাণিত হয়েছে। মানুষের জ্ঞান এখন এত বেশি উন্নতি ও উৎকর্ষ লাভ করেছে এবং তার শাখা প্রশাখা এত বেরিয়েছে যে, এর সব কটা একই ব্যক্তির পক্ষে শেখা সম্ভব নয়। আর সব বিদ্যাতেই তাকে যদি মামুলি ধরনের চলনসই জ্ঞান দিয়ে ছেড়ে দেয়া হয় তাহলে সে কোনটাতেই পারদর্শিতা ও পরিপক্কতা লাভ করতে পারবে না। এর চেয়ে বরং আট দশ বছরের পাঠক্রম এমন হওয়া উচিত যে, প্রত্যেক শিশু তার জীবন, জগত ও মানুষ সম্পর্কে মোটামুটি অপরিহার্য জ্ঞান ইসলামী দৃষ্টিভঙ্গীতে লাভ করতে পারে। বিশ্ব প্রকৃতি তথা বিশ্ব জগত সম্পর্কে একজন মুসলমানের যেরূপ মনোভাব ও ধ্যান ধারণা তার জন্মানো দরকার তা যেন তার জন্মে। একজন মুসলমানের জীবন যে ধাঁচের হওয়া উচিত সে নকশা যেন তার মনে বদ্ধমূল হয়ে যেতে পারে। কর্মজীবনের জন্য যেটুকু তত্ত্ব ও তথ্য একজন মানুষের প্রয়োজন, তা যেন সে লাভ করে এবং সে এই সব তত্ত্ব ও তথ্য যেন একজন খাঁটি মুসলমানের মত প্রয়োগ করতে পারে। মাতৃভাষায় তার পর্যাপ্ত দখল থাকা চাই। সেই সাথে আরবি ভাষাও ততটা শেখা চাই যেন পরবর্তী সময়ের বাড়তি লেখাপড়ায় কাজে লাগে। যে কোন একটা ইউরোপীয় ভাষাও তার এতটুকু জানা দরকার যে এই সব ভাষায় যে বিপুল জ্ঞান ভান্ডার সঞ্চিত রয়েছে তার কিছুটা আহরণ করতে পারে। এরপর বিশেষজ্ঞ হিসেবে শিক্ষার এক আলাদা পাঠক্রম থাকবে, এতে ছয় বা সাত বছরের গভীর তত্ত্বানুসন্ধানের প্রশিক্ষণ নেয়ার পর শিক্ষার্থী সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ডক্টরেট ডিগ্রী লাভ করবে। উদাহরণ স্বরূপ কয়েকটি বিষয়ের শিক্ষা পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করছি। এতে আমি বিশেষজ্ঞীয় শিক্ষা সম্পর্কে কি ধারণা পোষণ করি তা স্পষ্ট হয়ে যাবে।
দর্শন ও যুক্তি বিদ্যার জন্য একটা বিভাগ থাকবে। এ বিভাগে শিক্ষার্থীকে আগে কুরআনের দর্শন ও যুক্তি পড়ানো হবে। এতে সে জানতে পারবে মানুষের ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য জিনিসগুলোর নাগালের ভিতরে সত্য অনুসন্ধানের কি কি পথ আছে, মানুষের বুদ্ধি বিবেকের দৌড় কতদূর এবং তার সীমানা কি এবং শুধু যুক্তির ভিত্তিতে অনুমান করতে গিয়ে মানুষ কিভাবে সত্য ও বাস্তবতার জগত হতে বিচ্ছিন্ন হয়ে আন্দাজ অনুমানের অন্ধকার জগতে হারিয়ে যায়। সে আরো জানতে পারবে যে অতীন্দ্রিয় বিষয়গুলো সম্পর্কে বাস্তবিক পক্ষে মানুষের কতখানি জ্ঞান প্রয়োজন, এই প্রয়োজনীয় জ্ঞান লাভ করার জন্য মানুষ তার পর্যবেক্ষণ ও যুক্তি প্রণালীকে কিভাবে ব্যবহার করতে পারে, কি কি অতীন্দ্রিয় বিষয় সে নির্ণয় করতে সক্ষম এবং কি কি বিষয়ে সে সংক্ষিপ্ত ও সাধারণ সিদ্ধান্তের উর্ধ্বে অগ্রসর হতে সক্ষম নয়, আর কোন স্তরে গিয়ে ঐ সংক্ষিপ্ত সিদ্ধান্তকে বিস্তারিত সিদ্ধান্তে পরিণত করা ও সাধারণ সিদ্ধান্তকে শর্তযুক্ত সিদ্ধান্তে রূপান্তরিত করার চেষ্টা ভিত্তিহীন হয়ে যায় এবং তা মানুষকে আন্দাজ অনুমানের অসীম দিগন্তে উদভ্রান্ত করে ছেড়ে দেয়। এই মৌলিক প্রশ্নগুলোর সুরাহা হয়ে গেলেই দর্শনের ভিত্তি সুদৃঢ় হবে। এর পর শিক্ষার্থীকে দর্শনের ইতিহাস পড়াতে হবে। এই পর্যায়ে কুরআনী দর্শনের সাহায্যে তাকে সকল দার্শনিক মতবাদ পড়িয়ে দিতে হবে যেন সে নিজেই দেখতে পায় সত্যসন্ধানের খোদাপ্রদত্ত উপায় উপকরণকে কাজে না লাগিয়ে অথবা ভুল পন্থায় কাজে লাগিয়ে মানবজাতি কিভাবে বিভ্রান্ত হয়েছে। সে বুঝতে পারবে ইতিহাসের বিভিন্ন স্তরে কিভাবে সে নিজের নাগালের বাইরের জিনিস সম্পর্কে আন্দাজ অনুমানের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নিয়েছে এবং তাতে জীবনে কি পরিণতি ঘটেছে। কিভাবে সে নিজেকে পঞ্চইন্দ্রিয় ও বিবেক বুদ্ধির সীমানা না জেনে তার ক্ষমতার আওতা বহির্ভূত বিষয়গুলো নির্ধারণে সময় নষ্ট করেছে। সে জানতে পারবে কোথায় হিন্দু দার্শনিকরা ভুল করেছে, কোথায় গিয়ে গ্রীক দর্শন পথভ্রষ্ট হয়েছে, কোথায় মুসলিম দার্শনিকগণ কুরআনের নির্দেশিত পথ থেকে বিচ্যূত হয়েছেন, বিভিন্ন মতের মুসলিম দার্শনিকগণ শত শত বছর ধরে যেসব বিষয় নিয়ে চিন্তা গবেষণা ও তত্ত্বানুসন্ধান চালিয়েছেন তার কোথায় কোথায় কুরআনের সীমা লঙ্ঘিত হয়েছে এবং কতটা হয়েছে। সে বুঝতে পারবে সূফীতত্ত্বের বিভিন্ন মতবাদের প্রবক্তাগণ সংক্ষিপ্ত বিষয়কে বিস্তারিত করার এবং শর্তহীনকে শর্তযুক্ত করার জন্য কিভাবে চেষ্টা করেছেন এবং তা কত ভ্রান্ত ছিল। জানতে পারবে ইউরোপের দার্শনিক চিন্তা কোন কোন পথ ধরে এগিয়েছে, একই সত্য সন্ধান করতে গিয়ে কত রকমারি মত ও পথের সৃষ্টি হয়েছে এবং এসব মত ও পথে হক কতখানি আর বাতিলের মিশ্রণই বা কতখানি হয়েছে এবং তা কোন কোন পথ দিয়ে এসেছে। ইউরোপে কি কি অতীন্দ্রিয় দর্শন ও ধারণা-বিশ্বাস বদ্ধমূল হয়েছে, সেসব ধারণা বিশ্বাস মানুষের কাজ কর্ম ও স্বভাব চরিত্রের ওপর কি ধরনের প্রভাব বিস্তার করেছে এবং আল্লাহর কিতাবের নির্দেশ দ্বারা চালিত হলে কিভাবে বৃথা মানসিক পরিশ্রমে সময় নষ্ট করা ও ভ্রান্ত আদর্শের ভিত্তিতে জীবন গড়ার বিপদ থেকে দুনিয়াময় মানুষ রক্ষা পেতে পারতো সেকথাও তারা উপলব্ধি করতে পারবে। এসব বিষয় নিয়ে যথোচিত চিন্তা গবেষণা ও পড়াশোনার পর শিক্ষার্থী তার লব্ধ জ্ঞান লিপিবদ্ধ করবে। অতঃপর পন্ডিত ও বিদ্বান ব্যক্তিদের পর্যালোচনা ও পরীক্ষা নিরীক্ষায় সে যখন নিজ বিষয়ে পরিপক্ক সাব্যস্ত হবে তখন তাকে দর্শনে ডক্টরেট ডিগ্রী দিয়ে বিদায় করতে হবে।
আর একটা বিভাগ থাকবে ইতিহাসের। এতে কুরআনের ইতিহাস দর্শন, ইতিহাস অধ্যয়নের পদ্ধতি বিশ্লেষণ করে শিক্ষার্থীকে ভালো করে বুঝিয়ে দিতে হবে, যাতে তার মন যাবতীয় সংকীর্ণতা, একদেশর্শিতা ও বিদ্বেষ থেকে মুক্ত হয়ে যায়। যাতে যাবতীয় তথ্য ও তত্ত্বকে নিরপেক্ষ ও বস্তুনিষ্ঠ দৃষ্টিতে অভ্যস্ত এবং তা থেকে স্বাধীন ও নিরপেক্ষভাবে সিদ্ধান্ত ও মতামত গ্রহণের জন্য প্রস্তুত হয়ে যায়। সে যেন মানব জাতির ইতিবৃত্ত ও মানব সভ্যতার বিকাশ ও অগ্রগতির কাহিনী পড়ে মানুষের সফলতা ও ব্যর্থতা, সৌভাগ্য ও দুর্ভাগ্য এবং উত্থান পতন কিভাবে আসে, সে সম্পর্কে স্থায়ী নিয়ম বিধি উদ্ভাবন করতে পারে। মানব সমাজে ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি কি পদ্ধতিতে ও কোন বিধি অনুসারে ঘটে তা প্রত্যেক ইতিহাসের ছাত্রকে জানতে হবে। তাকে আরো জানতে হবে কি কি গুণ মানুষকে উন্নতির পথে এগিয়ে নিয়ে যায় এবং কি কি দোষ তার অধঃপতন ডেকে আনে। তাছাড়া তাকে চাক্ষুসভাবে পর্যবেক্ষণ করতে হবে যে, প্রকৃতির একটা সরলরেখা কিভাবে আদিকাল হতে বর্তমান কাল পর্যন্ত সরল সোজা করে পাতা যা মানুষের উন্নতি ও সুখ সমৃদ্ধির সঠিক পথ। এই সরল পথ থেকে যে ব্যক্তি ডানে বা বামে সরে গিয়েছে তাকে হয় চপেটাঘাত খেয়ে সেই সরল পথের দিকে আসতে হয়েছে, নয়তো এমনভাবে পরিত্যক্ত হতে হয়েছে যে, কোন চিহ্ন পর্যন্ত অবশিষ্ট থাকে নি।
এইভাবে অধ্যয়ন করার পর ইতিহাসের ছাত্ররা যখন জানতে পারবে যে, আল্লাহর আইন কত পক্ষপাতহীন, কত নিরপেক্ষতার সাথে তিনি অতীতের জাতিসমূহের সাথে আচরণ করেছেন, তখন কোন জাতিকেই সে শত্রু বা মিত্র ভাববে না। প্রত্যেক জাতির কীর্তিকলাপে সে নিরপেক্ষ মন, আবেগমুক্ত দৃষ্টিতে পর্যবেক্ষণ করে সফলতা ও ব্যর্থতার চিরন্তন সার্বজনীন কষ্টিপাথরে যাছাই করে খাঁটি ও ভেজালকে আলাদা আলাদা করে দেখিয়ে দিবে। এরূপ মানসিক প্রশিক্ষণের পর তাকে ঐতিহাসিক দলিল-দস্তাবেজ, পুরাকীর্তি ও মূল উৎসগুলো থেকে নিজে নিজে সিদ্ধান্ত গ্রহণের সবক পুনঃ পুনঃ দিতে হবে। এভাবে তাকে এতটা দক্ষ ও পরিপক্ক করে তুলতে হবে যে, সে যেন ইসলাম বিরোধী ঐতিহাসিকদের পক্ষপাতদুষ্ট আবর্জনার স্তুপ থেকে সত্যকে খুঁজে বের করে নিজেই স্বাধীন ও নিরপেক্ষ মতামত পেশ করতে সক্ষম হবে।
আর একটা বিভাগ থাকা চাই সমাজ-বিজ্ঞানের। এ বিভাগের প্রথম কাজ হবে কুরআন ও হাদীসের আলোকে মানব সভ্যতার মৌলিক নীতিমালা তুলে ধরা। এরপর বিস্তারিতভাবে মৌলনীতি থেকে যুক্তিতর্কের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় উপবিধি রচনা করে নবীদের নেতৃত্বে যে সামাজিক ও তামুদ্দিনিক ব্যবস্থা গড়ে উঠেছিল তার উদাহরণ পেশ করে বুঝিয়ে দিতে হবে যে, ঐ মৌলনীতির (Fundamental Principles) ভিত্তিতে কিভাবে একটা সুষ্ঠ ন্যায়ভিত্তিক সমাজ ব্যবস্থা, অর্থনৈতিক ব্যবস্থা, রাজনৈতিক ব্যবস্থা, রাষ্ট্র প্রশাসন ব্যবস্থা ও আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ভিত রচিত হয়ে থাকে। শুধু তাই নয়, ঐ একই মৌল নীতিমালার ভিত্তিতে কেমন করে ঐ তামুদ্দিনিক ইমারতের আরো সম্প্রসারণ সম্ভব এবং ইজতিহাদ তথা স্বাধীন ও নিরপেক্ষ চিন্তা গবেষণা দ্বারা সম্প্রসারণের কি পরিকল্পনা তৈরী করা সম্ভব তাও দেখিয়ে দিতে হবে। সমাজ বিজ্ঞানের প্রত্যেক ছাত্রের এটাও জানা দরকার যে, মানব সমাজে জ্ঞান বিজ্ঞানের বিকাশ ও উন্নতি হওয়ার কারণে যেসব নতুন শক্তির আবিষ্কার ও উদ্ভাবন ঘটে এবং সভ্যতার স্বাভাবিক বিকাশ বৃদ্ধির ফলে যে নতুন ব্যবহারিক কর্মপদ্ধতির উৎপত্তি হয়, সেগুলোকে আল্লাহর নির্ধারিত সীমা তথা বিধি নিষেধের আওতায় ঐ ন্যায়ভিত্তিক সমাজ ব্যবস্থায় কিভাবে একান্ত করে নেয়া যায় এবং কিভাবে এগুলোকে বিকৃতির হাত হতে নিরাপদে রেখে যথাস্থানে স্থাপন করা যায়। তাতে অতীত জাতিগুলোর এবং মুসলমানদের সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক ইতিহাস পড়িয়ে দিতে হবে যেন সে বুঝতে পারে, ইসলামের এসব তামুদ্দুনিক মৌল নীতিমালারও খোদায়ী বিধানের অনুসরণ ও লংঘন কি ফল দর্শায়। অপরদিকে তাকে আধুনিক যুগের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক মতবাদ ও বাস্তব কার্যধারার সমালোচনামূলক অধ্যয়ন করতে হবে। এভাবে খোদাবিমুখ মানুষের মনগড়া মত ও পথ তার জন্য কতখানি কল্যাণকর বা ধ্বংসাত্মক তাও বুঝতে হবে।
বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখার জন্য কয়েকটা আলাদা বিভাগ থাকা দরকার। এতে কুরআনের নির্দেশের আলোকে এ যাবতকালে আহরিত সমস্ত বৈজ্ঞানিক তথ্য ও তত্ত্ব শুধু যে পর্যালোচনা করতে হবে তাই নয়, বরং কুরআনের দিক নির্দেশনা অনুযায়ী প্রাকৃতিক নির্দেশাবলী ও বিধি-বিধানের আরো পর্যালোচনা ও উদ্ভাবনের কাজও একই দৃষ্টিকোণ থেকে হতে হবে। যদিও কুরআন বিজ্ঞান গ্রন্থ নয় এবং বিজ্ঞানের সাথে তার বিষয়বস্তুরও প্রত্যক্ষ সম্পর্ক নেই; তথাপি এ কথা সত্য যে, এ গ্রন্থের রচয়িতা যিনি বিশ্ব প্রকৃতির স্রষ্টাও তিনি। তাই তিনি তাঁর একটি গ্রন্থের বিভিন্ন জায়গায় নিজেরই আরেকটি গ্রন্থ থেকে নানা দৃষ্টান্ত ও সাক্ষ্য প্রমাণ পেশ করেছেন। এ জন্য এ কিতাব গভীরভাবে অধ্যয়ন করলে বিজ্ঞানের একজন ছাত্র শুধু বিশ্ব প্রকৃতির বহু মৌলিক নিয়ম কানুন ও বিধি বিধান জানতে পারে তা-ই নয়, বরং বিজ্ঞানের প্রায় প্রত্যেকটি শাখাতেই সে একটা নির্ভুল সূচনা বিন্দু (Starting Point) এবং তত্ত্বানুসন্ধানের জন্য একটা সঠিক দিক নির্দেশনা (Direction) লাভ করে। এটি এমন একটি চাবি যার সাহায্যে তার সামনে খুলে যায় বৈজ্ঞানিক গবেষণার এক স্বচ্ছ ও সোজা রাজপথ। এই চাবির সহায়তা গ্রহণ করলে বিজ্ঞান গবেষণায় বহু জটিল সমস্যার সমাধান অল্প সময়ে সহজতর পন্থায় পাওয়া যায়। আজকের বিজ্ঞানের পথভ্রষ্টতার একটা বড় কারণ এই যে, বাস্তব ঘটনা পর্যবেক্ষণে তা নির্ভুলভাবে প্রয়োগ এবং সঠিক তথ্য উদ্ধার করে বটে, কিন্তু সংগৃহীত তথ্যাবলীর সমন্বয় ঘটিয়ে যখন সে সাধারণ নিয়ম বা মতবাদ রচনা করে তখন বিশ্ব প্রকৃতির উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য সম্পর্কে অজ্ঞতার কারণে হোঁচট খায়। এ কারণে মানবীয় শক্তির অনেক অপচয় হয়। পরিণামে এ ভ্রান্ত মতবাদগুলোকে মানব সভ্যতার সাথে সংযুক্ত ও একাত্ম করে কর্ম জীবন সংগঠিত করতে গেলে তা গোটা সভ্যতাকে বিপর্যস্ত করার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। একজন মুসলিম বিজ্ঞানী যখন কুরআনের দিক নির্দেশনার আলোকে প্রমাণিত তথ্যসমূহকে বিদ্যমান মতবাদসমূহ হতে বিচ্ছিন্ন করে নতুন করে বিন্যস্ত করবে এবং আরো তথ্য আহরণ করে তা দিয়ে শ্রেষ্ঠতর মতবাদ রচনা করবে, তখন দুনিয়াবাসী আজ যে সব বৈজ্ঞানিক বিভ্রান্তিতে লিপ্ত তা বর্জন না করে পারবে না।
যে সব জ্ঞান বিজ্ঞানকে আজকাল ইসলামী শিক্ষা বলা হয়, তার জন্যও আলাদা আলাদা বিভাগ থাকতে হবে। যেমন একটা বিভাগে থাকবে কুরআনের গবেষণামূলক অধ্যয়নের জন্য। এতে অতীতের তাফসীরকারকদের কৃত তাফসীর পর্যালোচনা করা এবং এ কাজ আরো এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা থাকবে। বিভিন্ন দিক দিয়ে কুরআনী জ্ঞান বিজ্ঞানের গভীরে প্রবেশ করতে চেষ্টা করতে হবে, মানুষের উদ্ভাসিত জ্ঞান বিজ্ঞানের সকল শাখার সাহায্যে কুরআনের আরো দক্ষতা ও পারদর্শিতা অর্জন করতে হবে। অনুরূপভাবে হাদীসের একটা বিভাগ থাকতে হবে। এ ক্ষেত্রে হাদীসবেত্তাগণ যে কাজ করে গিয়েছেন তা অধ্যয়ন করতে হবে এবং তারপর গবেষণা, সমন্বয়, সংগৃহীত জ্ঞানের সমন্বয় ও বিন্যাস এবং সিন্ধান্ত ও মতামত গ্রহণের কাজ আরো এগিয়ে নিতে হবে। ইসলামের সোনালী যুগের আরো খুঁটিনাটি তথ্য ও ঘটনা খুঁজে বের করতে হবে এবং তা থেকে এমন সব সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে যা এ যাবত আমাদের জানার বাইরে রয়ে গিয়েছে। ইসলামী আইন বিজ্ঞান নামে একটা বিভাগ থাকবে। কুরআনের আহকাম(আদেশ নিষেধ) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের হাদীসে তাত্ত্বিক ও বাস্তব ব্যাখ্যা (কওলী ও আমলী) সাহাবায়ে কিরাম ও তাবেঈনদের (সাহাবাদের অব্যবহিত উত্তরপুরুষ) ইজতিহাদ বা গবেষণালব্ধ জ্ঞান, ইজতিহাদকারী ইমামদের যুক্তি প্রণালী এবং খুঁটিনাটি বিষয়ে তাঁদের যুক্তিসিদ্ধ ব্যাখ্যানুসমূহের বিস্তারিত ও পুঙ্খানুপুঙ্খ অধ্যয়ণ করতে হবে। সাথে সাথে দুনিয়ার প্রাচীন ও আধুনিক জাতিসত্তাসমূহের আইন শাস্ত্র ও আইন বিজ্ঞানও গভীরভাবে পড়তে হবে। এভাবে জীবনের নিত্য পরিবর্তনশীল অবস্থা ও সমস্যাবলীর ক্ষেত্রে ইসলামী আইনের মূলনীতিসমূহ প্রয়োগ করে ফিকাহ শাস্ত্রে অতীত যুগের নির্জীব দেহে প্রাণসঞ্চার করতে হবে। এভাবে এই বিভাগসমূহের নিজস্ব অবদানগুলোই শুধু অত্যন্ত ব্যাপক ও মহৎ হবে না, বরং অন্যান্য বিভাগকেও তা আল্লাহর কিতাব ও রাসূলের সুন্নাহ সম্পর্কে এমন সব মূল্যবান উপকরণ ও তথ্য সরবরাহ করতে পারবে যার উপর দাঁড়িয়ে জ্ঞান বিজ্ঞানের নব দিগন্ত গভীর গবেষণা ও উদ্ভাবনের তরংগ সৃষ্টি করা যাবে।
তৃতীয় বৈশিষ্ট্যঃ
আমি কয়েকটি বিভাগের কথা উল্লেখ করলাম। উদ্দেশ্য হলো এর দ্বারা যেন পুরো শিক্ষা কাঠামোর বিস্তারিত ও ব্যাপক ধারণা ও নীল নকশা সহজেই পাওয়া যেতে পারে। এখন প্রস্তাবিত নয়া শিক্ষা ব্যবস্থার সর্বশেষ ও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করবো। সেই বৈশিষ্ট্য হলো, এতে আমাদের দেশের বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থার ন্যায় লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যহীন শিক্ষার অস্তিত্ব থাকবে না। বরং শিক্ষক ও শিক্ষার্থী উভয়ের সামনে একটি স্পষ্ট ও সুনির্দিষ্ট জীবনোদ্দেশ্য এবং তাদের চেষ্টা সাধনারও একটা চূড়ান্ত উদ্দেশ্য থাকবে। আর তা হলো খোদার আনুগত্যের আদর্শকে দুনিয়ায় বিজয়ী ও নেতৃত্বদানকারী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য তাদের সর্বাত্মক জেহাদ বা সংগ্রাম চালাতে হবে। মানব দেহের প্রতিটি শিরা উপশিরায় যেমন রক্ত প্রবাহিত হয়ে তাকে সতেজ ও কর্মতৎপর রাখে, এই শিক্ষা ব্যবস্থার মূল লক্ষ্য উদ্দেশ্যও ঠিক সেই লক্ষ্যই পূরণ করবে। শিক্ষার্থীর ব্যক্তি জীবন, তাদের পারস্পরিক যোগাযোগ ও মেলামেশায়, তাঁদের খেলাধুলা ও বিনোদন, তাদের শ্রেণীকক্ষের লেখাপড়ায় এবং গবেষণা ও অধ্যয়নের সকল তৎপরতায় জীবনের এই লক্ষ্যই সক্রিয় থাকবে। এই লক্ষ্যের আলোকেই তাদের জীবন ও জীবনের কর্মনীতি বিরচিত হবে। এই ধাঁচেই তাদের চরিত্র গড়ে তোলা হবে। মোটকথা শিক্ষা পরিবেশ এমনভাবে গড়ে তুলতে হবে যা প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে ইসলামের এক একজন নিবেদিত প্রাণ সৈনিকে পরিণত করবে।