মাধ্যমিক শিক্ষার অভীষ্ট লক্ষ্য
সাধারণঃ (১) আরবী ভাষা, ইংরেজী অথবা অন্য যে কোন ইউরোপীয় ভাষায় এতটা দক্ষ বানাতে হবে যা গবেষণামূলক অধ্যয়নের জন্য যথেষ্ট হতে পারে।
(২) কুরআনের গবেষণামূলক অধ্যয়নের জন্য প্রাথমিক প্রস্তুতি।
(৩) উসুলে হাদীস এবং কোন সংক্ষিপ্ত হাদীস গ্রন্থের গবেষণামূলক অধ্যয়ন করার যোগ্যতা সৃষ্টি , যাতে শিক্ষার্থীর জন্য ভবিষ্যতে আরো গভীর গবেষণামূলক অধ্যয়নের পথ উন্মুক্ত হয়।
সহায়ক ও প্রাথমিক স্তরের জ্ঞান দান করতে উচ্চ শিক্ষার স্তরে গিয়ে শিক্ষার্থী যেসব বিষয়ে এগুলো নিয়ে গবেষণা করবে। যেমনঃ
(১) দর্শন বিভাগের জন্য প্রাথমিক যুক্তিবিদ্যা, প্রাথমিক দর্শন, প্রাচীন ও আধুনিক উভয়টিকেই পড়াতে হবে এবং আকীদা শাস্ত্র বা ইলমে কালামের প্রত্যেকটি বিষয়ে এক একখানা বই পড়িয়ে দিতে হবে যা এতদসংক্রান্ত পরিভাষা, বাচনভঙ্গি ও মৌলিক বিষয়াবলী জানার জন্য যথেষ্ট হতে পারে। তাছাড়া মনস্তত্ব, পদার্থবিদ্যা ও ইত্যাকার প্রত্যেকটি বিষয়ে এক একখানা প্রাথমিক বই পড়াতে হবে।
(২) ইতিহাস বিভাগের জন্য পৌরবিজ্ঞান ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ইতিহাস সংক্রান্ত এমন একটা পাঠ্যসূচী থাকবে যা দ্বারা ছাত্ররা ইতিহাসে গবেষণা এবং সভ্যতা ও সভ্যতার সাথে সংশ্লিষ্ট বিষয়সমূহের গভীরে ঐ সব জ্ঞান বিজ্ঞানকে জানতে পারবে এবং এ বিষয় সম্পর্কে মোটামুটি ওয়াকিবহাল হবে।
(৩) অর্থনীতি বিভাগের জন্য এমন কোর্স থাকবে যা দ্বারা ছাত্ররা মানব সমাজের গঠন ও কাঠামো এবং তার মৌল সমস্যাগুলোকে প্রাথমিকভাবে বুঝতে পারবে। অতঃপর অর্থনীতি, আর্থিক লেনদেন, ব্যাংকিং এবং অর্থনৈতিক কায়-কারবার ও লেনদেনের মূলনীতি সম্পর্কে ওয়াকিফহাল হওয়া ছাড়াও বর্তমান যুগের অর্থব্যবস্থা ও অর্থনৈতিক মতবাদসমূহ সম্পর্কে মোটামুটি অবহিত হতে পারবে।
(৪) আইন বিভাগের জন্য আইন বিজ্ঞান, ফিকাহ শাস্ত্রের মূলনীতি (উসুলে ফিকাহ), আইনের ইতিহাস ও ইসলামী ফিকাহ শাস্ত্রের ইতিহাস সম্পর্কে একখানা প্রাথমিক বই পড়াতে হবে এবং চারটি মাযহাবের মাসলা মাসায়েলের একটি সংক্ষিপ্ত সংকলন থাকতে হবে।
(৫) ইসলামী শিক্ষা বিভাগের জন্য আরবী ভাষার একটা অতিরিক্ত পাঠ্যসূচী থাকবে, যা মাধ্যমিক শিক্ষার জন্য প্রস্তাবিত সাধারণ শিক্ষাসূচী থেকে আলাদা হবে। তা ছাড়া ফিকাহ ও ফিকাহশাস্ত্র প্রণয়নের ইতিহাস সম্পর্কে একখানা বই এবং তুলনামূলক ধর্ম অধ্যয়নের জন্য একখানা বই থাকবে যাতে বিভিন্ন ধর্মমতের উৎপত্তির ইতিহাসও সন্নিবেশিত হবে।
উল্লেখিত উচ্চতর স্তর দুটিকে সামাল দেয়ার জন্য যেখান থেকে নির্মাণ শুরু হবে তার বিস্তারিত বিবরণগুলো খুবই চিন্তাভাবনা করে তৈরি করতে হবে যেন ভিত্তি খুব মজবুত হয় এবং ছাত্রদের মধ্যে জ্ঞানগত এবং নৈতিক উভয় ক্ষেত্রে সুসভ্য ও রুচিবান মানুষ এবং ইসলামী আন্দোলনের জন্য উন্নতমানের কর্মী সুলভ অত্যাবশ্যক গুণ-বৈশিষ্ট্য সৃষ্টি হয়। যে সব ছাত্র প্রাইমারী পর্যায়ে লেখাপড়া করেই ক্ষান্ত হবে তারা যেন মৌলিক মানবীয় ও ইসলামিক গুণাবলীর দিক দিয়ে অসম্পূর্ণ থেকে না যায় এতটা মৌলিক শিক্ষা ও ট্রেনিং দিয়ে ছাড়তে হবে। একটা সুসভ্য ও রুচিবান সমাজের সক্রিয় সদস্য হবার জন্য যেসব যোগ্যতা অপরিহার্য তাও যেন তাদের মধ্যে গড়ে উঠে এটা নিশ্চিত করা চাই। এ জন্য কত সময় দরকার বা একে কয়টা স্তরে ভাগ করা দরকার সেটা বিশেষজ্ঞরা স্থির করবেন। আমি শুধু এতটুকু বলবো যে প্রাথমিক শিক্ষার্থীদের মধ্যে যেসব গুণাবলী ও যোগ্যতা দেখতে চাই সেই কাংখিত মান সামনে রেখে সিদ্ধান্ত নিতে হবে যে ঐ মানের শিক্ষার্থী তৈরীর জন্য আমাদের কত সময় এবং কি কি সাজ সরঞ্জাম দরকার হবে।
প্রাথমিক শিক্ষার প্রয়োজনীয় মান
নৈতিক শিক্ষাঃ
(১) শিষ্ঠাচার, পবিত্রতা, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, ভালো-মন্দবোধ, সুরুচি।
(২) সচ্চরিত্র-ব্যক্তিগত, পারিবারিক ও সামাজিক ক্ষেত্রে।
(৩) শৃংখলা, সভ্য ও ভদ্রোচিত এবং স্বাধীনভাবে সমাজে বসবাস করা ও কাজ করার পদ্ধতি, আত্মসমালোচনার অভ্যাস, কর্তব্যপরায়ণতা ও দায়িত্ববোধ।
(৪) উদার মানসিকতা, দৃষ্টির প্রশস্ততা, চিন্তার ব্যাপকতা, সাহসিকতা ও আত্মমর্যাদাবোধ।
(৫) সংকল্প ও ইচ্ছার দৃঢ়তা, গাম্ভীর্য ও আন্তরিকতা, কর্তব্যনিষ্ঠা, প্রত্যেক ব্যাপারে কথা ও কাজের বৈপরীত্য ও কপটতা পরিহার।
(৬) সাহসিকতা, বীরত্ব, কষ্টসহিষ্ঞুতা, কর্মতৎপরতা ও সতর্কতা, সবধরনের কাজ করার যোগ্যতা, জীবনের সবদিক ও বিভাগ সম্পর্কে কিছু না কিছু জ্ঞান ও বাস্তব অভিজ্ঞতা।
(৭) ইসলামী লক্ষ্যের প্রতি অদম্য আগ্রহ এবং গভীর ইসলামী উদ্দীপনা যা অন্তরের অন্তঃস্থলে প্রোথিত এবং যার বহিঃপ্রকাশ ঘটে শিশু কিশোরদের প্রতিটি চাল চলনে ও হাবভাবে।
(৮) ইসলামী ওজন ও পরিমাপক দ্বারা সব জিনিস মাপা ও ওজন করার অভ্যাস।
(৯) সাংগঠনিক ও সংঘবদ্ধ জীবনের জন্য কুরআন ও হাদীসে যেসব অত্যাবশ্যক গুণাবলীর কথা বলা হয়েছে সেসব গুণাবলী।
(১০) প্রয়োজনীয় প্রশাসনিক ও ব্যবস্থাপনার যোগ্যতা।
(১১) গবেষণা, অনুসন্ধান এবং চিন্তা ও পর্যবেক্ষণের অভ্যাস, চোখ কান খোলা রেখে অর্থাৎ সদা সতর্ক ও সচকিতভাবে দুনিয়ায় বাস করা, যথাযথভাবে চিন্তা ভাবনা করা, প্রমাণ ও যুক্তি দর্শানো এবং পরখ করা।
বাস্তব ট্রেনিংঃ
(১) নৌচালনা, সাঁতার, তলোয়ার ও বন্দুক চালনা, ঘোড় সওয়ারী ও সাইকেল চালনা।
(২) খন্তি-কোদাল, হাতুড়ি-বেলচা, করাত, নির্মাণ সামগ্রী ইত্যাদির ব্যবহার করতে সক্ষম হওয়া, প্রাথমিক চিকিৎসা সম্পর্কে বাস্তব জ্ঞান লাভ করা।
(৩) বাজার থেকে মালপত্র কেনা এবং নিঃসঙ্কোচে নিজের মালপত্র বিক্রি করার যোগ্যতা অর্জন করা।
(৪) হোস্টেল ও বাসস্থানের ব্যবস্থাপনা, কোন বড় সম্মেলনের ব্যবস্থাপনা ও কোন বড় দলের ভ্রমণের ব্যবস্থাপনার যোগ্যতা।
(৫) অফিস সংক্রান্ত কাজ কর্মে অভিজ্ঞতা অর্জন ও বাণিজ্যিক চিঠিপত্র আদানপ্রদানের অনুশীলন।
(৬) বক্তৃতা, প্রবন্ধ লেখা, প্রচার কার্য্য চালানো, আলাপ আলোচনা চালানো স্বমতে আগ্রহী করার মত কথাবার্তা বলা বা ক্যানভাস করার যোগ্যতা।
(৭) খাদ্য রান্না করা, কাপড় কাটা ও সেলাই করার কিছু যোগ্যতা থাকা।
জ্ঞানগতঃ
(১) মাতৃভাষাঃ মাতৃভাষা বিশুদ্ধভাবে লিখতে ও সব ধরনের বই পুস্তক পড়তে ও বুঝতে পারা এবং লেখা ও বক্তৃতার মাধ্যমে নিজের মনোভাব ব্যক্ত করতে সক্ষম হওয়া।
(২) প্রাথমিকভাবে আরবী এতটা শেখা যেন কুরআনের অর্থ মোটামুটি বুঝতে পারে।
(৩) ফারসী গুলিস্তাঁ ও বুস্তাঁ পড়তে পারার যোগ্যতা।
(৪) ইংরেজীর প্রাথমিক জ্ঞান ও সাধারণ জ্ঞান লাভের জন্য যেসব বিদ্যা মাতৃভাষায় পড়ানো হবে, সেসব বিদ্যার প্রাথমিক বই ইংরেজীতে পড়তে, বুঝতে ও অনুবাদ করতে পারা।
(৫) প্রাথমিক অংক শাস্ত্রঃ বুদ্ধিভিত্তিক অনুশীলন এবং মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষার প্রয়োজন পূরণে যথেষ্ট হতে পারে গণিত বা অংকশাস্ত্রে এতটুকু জ্ঞান থাকা।
(৬) ভূগোলঃ প্রাকৃতিক ভূগোল, গোটা পৃথিবীর মোটামুটি ভৌগলিক জ্ঞান, কুরআনিক ভূগোল ও নিজ দেশের ভৌগলিক জ্ঞান।
(৭) ইসলাম ও মুসলমানদের ইতিহাসঃ নবীদের ও মুসলিম মনীষীদের জীবন কাহিনী, মাতৃভূমির প্রয়োজনীয় ঐতিহাসিক জ্ঞান।
(৮) ইসলামী আকীদা, আখলাক, সভ্যতা ও সংস্কৃতির সুস্পষ্ট ধারণা থাকা। অন্তুর্ভুক্ত ফিকাহ সম্পর্কে অত্যাবশ্যকীয় বিস্তারিত জ্ঞান থাকা যা একজন মুসলিমের ধর্মীয় জীবনের জন্য প্রয়োজনীয়।
(৯) স্বাস্থ্য বিজ্ঞানঃ শরীরের অঙ্গ প্রত্যঙ্গের কাজ, শরীরবিদ্যা, পদার্থবিদ্যা, রসায়নবিদ্যা, জ্যোতির্বিজ্ঞান, ভূ-বিদ্যা-মোটকথা নিজ দেহ, সমাজ ও পরিবেশ সম্পর্কে অপরিহার্য জ্ঞান।
(১০) ড্রয়িং, স্কেল ড্রয়িংঃ মডেল ড্রয়িং, ফ্রিহ্যান্ড পেইন্টিং এ পরিচ্ছন্নতা, নির্ভুলতা, সুরুচি এবং মানচিত্র অংকন ও মানচিত্র পঠনের যোগ্যতা।
মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষার অন্তর্বর্তীকালীন ব্যবস্থা
যারা আধুনিক শিক্ষায় অথবা মাদ্রাসা শিক্ষায় শিক্ষিত, তাদেরকে ইসলামী দৃষ্টিভঙ্গীতে চারিত্রিক ও জ্ঞানগত উভয়দিক হতে তৈরী করার লক্ষ্যে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষার একটা অন্তর্বর্তীকালীন ব্যবস্থা প্রবর্তন করা প্রয়োজন। এতে দুটো সুফল মিলবে। প্রথমত ইসলামী আন্দোলন পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় উচ্চ মানের কর্মী ও নেতার একটা বাহিনী অল্পদিনের মধ্যেই হস্তগত হবে।
দ্বিতীয়তঃ এই অন্তর্বর্তীকালীন ব্যবস্থায় যাদের গড়ে তোলা হবে তারাই প্রস্তাবিত শিক্ষাব্যবস্থার মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষার বিভাগগুলোতে শিক্ষালাভ, শিক্ষকতা ও পাঠ্যবই প্রণয়নের কাজ করতে পারবে। পরবর্তী সময়ে এই অন্তর্বর্তীকালীন ব্যবস্থাকে সামান্য রদবদল করে উচ্চশিক্ষার একটা স্থায়ী বিভাগে পরিণত করা যাবে। যারা প্রস্তাবিত শিক্ষাব্যবস্থার প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তর এই শিক্ষাব্যবস্থার অধীনে প্রতিষ্ঠিত শিক্ষাঙ্গনে অতিবাহিত করে নি, বরং অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হতে এই দুই স্তর অতিক্রম করে এসেছে তাদেরকে উচ্চ শিক্ষার বিভাগসমূহে ভর্তি করার জন্য প্রস্তুত করা যাবে।
এই অন্তবর্তীকালীন শিক্ষার পাঠ্যসূচী, মেয়াদ ও স্তরসমূহ নির্ণয় করার কাজ আমি বিশেষজ্ঞদের হাতে ছেড়ে দিয়ে কেবল এই শিক্ষার মান সম্পর্কে কিছু বলেই শেষ করছি। এ শিক্ষা সমাপ্তির পর ছাত্রদের মধ্যে নিম্নবর্ণিত যোগ্যতা সৃষ্টি হওয়া প্রয়োজন।
প্রয়োজনীয় মানঃ
১-কুরআন ও হাদীস সম্পর্কে এতটা ব্যুৎপত্তি ও দক্ষতা সৃষ্টি হওয়া দরকার যেন শিক্ষার্থীরা জীবনের বিভিন্ন সমস্যায় আল্লাহর কিতাব ও রাসূলুল্লাহর সুন্নাত থেকে পথনির্দেশ লাভ করতে পারে।
২-ইসলামী ফিকাহ ও আইন সম্পর্কে এতটা জ্ঞান লাভ করতে হবে যেন বিভিন্ন মাযহাবে কুরআন ও সুন্নাহর মূল উৎস থেকে যেসব মূলনীতি অনুসরণ করে শরীয়তের বিধি বিধান প্রনয়ণ করা হয়, সেসব মূলনীতি এবং তাদের যুক্তি প্রমাণ ছাত্ররা আত্মস্থ করতে পারে।
৩-প্রাচীন যুক্তিশাস্ত্র সম্পর্কে এতটা জ্ঞান লাভ করা চাই যেন ছাত্ররা প্রাচীন যুক্তি শাস্ত্রবিদদের লিখিত বই-পুস্তক পড়ে জ্ঞানোদ্ধার করতে পারে এবং আধুনিক যুক্তিশাস্ত্র সম্পর্কে এতটা জ্ঞান লাভ করা চাই যেন ছাত্ররা আধুনিক যুগের জ্ঞান বিজ্ঞানের পটভূমি ভালো করে বুঝতে পারে।
৪-সমাজ বিজ্ঞান সম্পর্কে এতটা জ্ঞান অর্জন করা চাই যেন ছাত্ররা আধুনিক যুগের সাংস্কৃতিক সমস্যাবলী এবং সাংস্কৃতিক আন্দোলনকে সমালোচকের দৃষ্টিতে ভালোভাবে বুঝতে পারে।
৫-বিশ্ব ইতিহাস সম্পর্কে সাধারণ জ্ঞানঃ নবুওয়াত যুগ ও খিলাফতে রাশেদার ইতিহাস এবং উপমহাদেশ ও ইউরোপের আধুনিক যুগের ইতিহাস সম্পর্কে বিশেষভাবে জ্ঞান লাভ করতে পারে।
শিক্ষাকমিটির দ্বিতীয় বৈঠক ও গৃহীত সিদ্ধান্তঃ
১৯৪৪ সালের ১৫ ই আগষ্ট শিক্ষা কমিটির দ্বিতীয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হয় এবং নিম্নলিখিত সিদ্ধান্তগুলি গৃহীত হয়ঃ
শিক্ষাকালঃ
(১) সর্বমোট শিক্ষাকাল হওয়া উচিত ১৪ বছর। এই চৌদ্দ বছর নিম্নলিখিত স্তরসমূহে বিভক্ত হবেঃ
(ক) প্রাথমিক স্তর-৮ বছর
(খ) মাধ্যমিক স্তর- ২ বছর
(গ) উচ্চ স্তর- ৪ বছর।
প্রাথমিক স্তরঃ
(২) আপাততঃ শুধুমাত্র প্রাথমিক স্তরের জন্য একটা পরীক্ষামূলক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা দরকার।
(৩) এই বিদ্যালয়ের প্রথম শ্রেণীতে ভর্তিচ্ছু ছাত্রদের বয়স ৬ থেকে ৮ বছরের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে।
বিঃদ্রঃ-মধ্যবর্তী শ্রেণীগুলোতে যারা ভর্তি হবে তাদেরকে পরীক্ষামূলকভাবে একটা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত (উর্ধ্বপক্ষে তিন মাস) বিশেষ শ্রেণীতে রাখা যেতে পারে। একজন সমবয়সী ছাত্রকে তার সহযোগী নিয়োগ করা হবে। সহযোগী তাকে শিক্ষা কেন্দ্রের পরিবেশ ও বিভিন্ন বিভাগের সাথে পরিচিত করাবে। এই সহযোগীকে যিনি তদারক করবেন তিনি ঐ নবাগত ছাত্রকেও তদারক করবেন এবং চেষ্টা করবেন যাতে সে যত শীঘ্র সম্ভব একটা শ্রেণীতে শিক্ষা গ্রহণ এবং শিক্ষা কেন্দ্রের পরিবেশের সাথে নিজেকে খাপ খাইয়ে নেয়ার যোগ্য হয়।
(৪) এ বিদ্যালয় অবশ্যই আবাসিক হতে হবে।
(৫) ছাত্রদের শিক্ষা ও আবাসিক ব্যয় তাদের অভিভাকরাই বহন করবেন।
(৬) এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কেবল মাত্র সেইসব লোকের সন্তানদের ভর্তি করা হবে যারা ইসলামী জীবন দর্শন, জীবন লক্ষ্য ও ইসলামী আন্দোলনের সমর্থক। ভর্তির সময় অভিভাবকদের নিকট থেকে এই মর্মে লিখিত অঙ্গীকার নিতে হবে যে, তারা তাদের সন্তানকে কোন ধরনের অ-ইসলামী ব্যবস্থা বা প্রতিষ্ঠানের সদস্য বানাবেন না বরং ইসলামের সেবার জন্যই তারা তাদের সন্তানদেরকে ওয়াকফ করেছে।
(৭) প্রাথমিক স্তরে ছাত্রদেরকে কোন পেশার জন্য তৈরী করার প্রশ্ন উঠে না। তথাপি বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বাস্তব ও নৈতিক প্রশিক্ষণ দ্বারা ছাত্রদের সমস্ত জন্মগত যোগ্যতা ও প্রতিভার এতটা উৎকর্ষতা এবং বিকাশ সাধনের চেষ্টা করবেন এবং তাদেরকে এতটা বাস্তব ও পর্যবেক্ষণমূলক অভিজ্ঞতা অর্জন করিয়ে দিবেন যে, আট বছরের শিক্ষা শেষ করে তারা যেন নিজেদের মধ্যে যথেষ্ট শক্তি সাহস ও মনোবল অর্জন করতে পারে। এর ফলে তারা অনুভব করবে যে, আল্লাহর এ পৃথিবীতে তাদের জন্য সর্বত্র কাজ করার এবং জীবিকা উপার্জনের সকল সুযোগ বর্তমান। তারা সে সুযোগ গ্রহণে নিজেদের সক্ষমও মনে করবে। এ ধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষা সমাপ্তকারী ছাত্রদের আর্থিক সমস্যা সমাধানের জন্য এই একটি মাত্র সমাধানই আপাতত আছে।
মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষার অন্তর্বর্তীকালীন ব্যবস্থা
(১) এ পর্যায়ের শিক্ষার জন্য আলাদা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কায়েম করতে হবে।
(২) এর শিক্ষাকাল হবে ৬ বছর-দুই বছর মাধ্যমিক এবং ৪ বছর উচ্চ স্তরের জন্য।
বি.দ্র. আরবী মাদরাসাসমূহের শিক্ষা সমাপনকারী ও বিদ্যালয়ের গ্রাজুয়েট ছাত্রদের জন্য এর চেয়েও কম সময়ে উচ্চস্তরের শিক্ষা সমাপ্ত করার সুযোগ দিতে হবে।
(৩) মাধ্যমিক স্তরে ভর্তির জন্য শিক্ষার্থীকে কমপক্ষে মেট্রিক (যা বর্তমানে এসএসসি) অথবা মাদ্রাসা শিক্ষার মাধ্যমিক মান সম্পন্ন হতে হবে।
(৪) ভর্তি পরীক্ষা বিশেষ করে মৌখিক পরীক্ষা সাপেক্ষে ভর্তির ব্যবস্থা থাকতে হবে।
(৫) শুধুমাত্র ইসলামী আন্দোলনে শরীক হতে ইচ্ছুক শিক্ষার্থীকেই এসব প্রতিষ্ঠানে ভর্তি করতে হবে।
(৬) সমস্ত ব্যয়ভার ছাত্রদের নিজেদেরই বহন করতে হবে।
(৭) বিদ্যালয়ের পাঠ্যসূচীর পাঠদান ও সব রকমের ব্যবস্থাপনার জন্য বিশেষজ্ঞদের কমিটি থাকবে। এই কমিটি বিস্তারিত খুঁটিনাটি ঠিক করবে।