পঞ্চম অধ্যায়: উপসংহার
আল্লাহ সুদকে ধ্বংস করেন
আল্লাহ নিজের মান নিয়ে নিজেই বলেছেন, “আল্লাহ সুদকে ধ্বংস করেন”। (আল-কুরআন: ২: ২৭৬)। আয়াতে আল্লাহ তা’য়ালা ‘ইয়ামাহাকু’ শব্দ ব্যবহার করেছেন যার মূল হচ্ছে ‘মাহক’। ‘মাহক’ শব্দের অর্থ হচ্ছে “decrese after decrease, a continuous process of diminishing” [সিদ্দিকী, মুহাম্মদ নাজাতুল্লাহ, পূর্বোল্লেখিত, পৃ: ৪৩।] (হ্রাসের পরে হ্রাস, ধারাবাহিক প্রক্রিয়ায় ক্রমাগত ক্ষয় হওয়া)। পূর্ণিমার পূর্ণ চাঁদ প্রতিদিন একটু একটু করে ক্ষয় হয় এবং অমাবস্যায় সম্পূর্ণ নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়। এই ক্ষয় প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নিশ্চিহ্ন হওয়াকে আরবীতে বলা হয় ‘মাহক’। সুদ এভাবেই সমাজ ও অর্থনীতিতে নিশ্চিহ্ন বা ধ্বস করে। এটাই হচ্ছে সুদের প্রবণাতা, পরিণতি বা বিধি।
বস্তুতঃ এই আয়াতে আল্লাহ তাঁর একটি প্রাকৃতিক (natural) চিরন্তন ও শাশ্বত বিধান মানবজাতিকে অবহিত করেছেন। এ হচ্ছে সুদের প্রকৃতি ও বৈশিষ্ট্যগত প্রবণতা। বিজ্ঞানের ভাষায় এ ধরনের প্রবণতাকে বলা হয় বিধি (Law)। উদাহরণস্বরূপ, অর্থনীতিতে দাম হ্রাস-বৃদ্ধির সাথে চাহিদা উঠা-নামার প্রবণতাকে বলঅ হয়েছে চাহিদা বিধি (Low lf Demand); অনুরূপভাবে যোগান বিধি (Law of Supply); গ্রেশামের বিধি ইত্যাদি আরও অনেক বিধি রয়েছে। সকল প্রাকৃতিক এ সামাজিক বিজ্ঞানেই এইরূপ বহু বিধি আছে। বিজ্ঞানীরা অনেক বিধি খুজেঁ পেয়েছেন; হয়তো এখনও অনেক বিধির কথা জানা সম্ভব হয়নি। আল্লাহ তা’য়ালা নিজেও তার নিজের অনেক বিধির কথা মানুষখে জানিয়ে দিয়েছেন। “আল্লাহ সুদকে ধ্বংস করেন” – এটা হচ্ছে সুদ সংক্রান্ত আল্লহর বিধি; বলা যায় এটা হচ্ছে সুদ বিধি বা Law of Riba/Interest। বস্তুতঃ আল্অহ সুদের মাধ্যে এমন প্রকৃতি, বৈশিষ্ট্য ও প্রবণতা রেখেছেন যা অবশ্যই মানব সমাজ ও অর্থনীতিকে ধ্বংসের মধ্যে ঠেলে দেয়।
রাসূলূল্লাহ (সাঃ) বলেন, “আপাতদৃষ্টিতে মনে হয় সুদ সমৃদ্ধি আনে; কিন্তু সুদের আসল পরিণতি হলো অভাব ও সংকোচন”। (মুসনাদে আহমদ)। তিনি স্পষ্ট করে বলেছেন, “যিনা ও সুদ জাতিকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেয়”। (মুসনাদে আহমদ)। তিনি আরও বলেছেন, “সুদের অর্থ যতই বর্ধিত হোক না কেন তার পরিণতি হবে দারিদ্র”। (উদ্ধৃত, উসমানী, শাব্বীর আহমদ।
তাফসীরকার, সমাজবিজ্ঞানী ও অর্থনীতিবিদদের আলোচনায় সুদের যে ভয়াবহ ধ্বংসকর চিত্র বিধৃত হয়েছে ওপরে তা বিস্তারিত তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে। এতে দেখা যাচ্ছে, সুদ হচ্ছে পরের সম্পদ বিনামূল্যে খাওয়া, গ্রাস করা, আত্মসাৎ করা। চুরি, ডাকাতি, জুয়া, ঘুষ-দুর্নীতির চেয়েও মারাত্মক জুলুম ও শোষণ হচ্ছে সুদ। এসব অন্যায় ভক্ষণ জাতিকে ধ্বংস বয়ে আনবে এটাই স্বাভাবিক। পূর্ববর্তী আলোচনায় একথাই প্রতীয়নাম হচ্ছে যে, সামাজিক ক্ষেত্রে সুদ মানুষকে সম্পদের মোহে আচ্ছন্ন করে ফেলে, নৈতিক মূল্যবোধের বিকৃতি সাধন করে, অর্থলিপ্সা, স্বার্থপরতা, হৃদয়হীনতার জন্ম দেয়। স্বার্থদ্বান্দ্ব, হিংসা, বিদ্বেয়, হানাহানির সয়লাব বইয়ে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে দ্বন্দ্ব-কলহ, মারামারি ও যুদ্ধ-বিগ্রহের সৃষ্টি করে। অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে পুজিঁ গঠন, বিনিয়োগ ও উৎপাদনকে কমিয়ে দেয়, ধনী-দরিদ্রের মধ্যে আকাশ-পাতাল বৈষম্য সৃষ্টির মাধ্যমে যাবতীয় সম্পদ কতিপয় হাতে কুক্ষিগত করে দেয়, ভোক্তা জনসাধারণের ক্রয়-ক্ষমতা শোষণ করে নিয়ে অর্থনীতিকে মন্দা-মহামন্দায় নিক্ষেপ করে এবং বিনিয়োগ উৎপাদনকে স্থবির করে দেয়। বেকার ও দেউলিয়াদের কাতার দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর করে তোলে। হাজার হাজার ব্যাংকে লালবাতি জ্বলে উঠে, লক্ষ লক্ষ শিল্পকারখানা বন্ধ হয়ে যায়। একদিকে ক্রয়-ক্ষমতাহীন অভুক্ত কাফেলার হাহাকারে আকাশ ভারি হয়ে উঠে অন্যদিকে সম্পদ ধ্বংসের মহাযজ্ঞ চলতে থাকে। একদিকে ক্রয়-ক্ষমতার অভাব, অন্যদিকে মুদ্রাস্ফীতি, কৃত্রিম অর্থের পিরামিড ও পণ্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি জনজীবনকে দুর্বিসহ করে তুলে। অর্থনীতি বাণিজ্য-চক্রের অস্থিরতা ও অনিশ্চয়তার মধ্যে উত্থাল-পাথাল করতে থাকে। শেয়ার বাজার, মুদ্রা বাজার, পণ্য বাজার সর্বত্রই চলতে থাকে ঠকবাজি আর ফটকাবাজির মহা-মহড়া। মুদ্রা বিনিময় হারে দেখা দেয় অস্থিরতা আর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুদ্রানীতি হয়ে পড়ে বিকল। অর্থনৈতিক ক্ষমতাও কতিপয় হাতে কেন্দ্রীভূত হয়ে পড়ে। চলে দাবী-দাওয়া, হরতাল, ধর্মঘট, লকআউট; চলে ক্ষমতার পালা বদল; অর্থনৈতিক বৈষম্য সৃষ্টি করে দরিদ্র দশেগুলোকে ঋণের জালে আবদ্ধ করে ঋণ-দাসত্ব পটপরিবর্তন, এমনকি, স্বার্থদ্বন্দ ও যুদ্ধ-বিগ্রহের মাধ্যমে চরম ধ্বংস বয়ে আনে।
উপরে উল্লেখিত হাদীস স্পষ্ট করেই জানিয়ে দিচ্ছে যে, সুদের ধ্বংস আসে অভাব ও সংকোচনের মধ্য দিয়ে। সুদের সৃষ্ট উপরোক্ত বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা যায়, সুদ ক্রেতাসাধারনের ক্রয়-ক্ষমতা শোষণ করে নেয়, জনগণ চরম অভাবে নিপতিত হয়; চাহিদা পড়ে যায়, মন্দা সৃষ্টি হয় এবং অর্থনীতি বিপর্যস্ত ও স্থবির হয়ে পড়ে। হাদীসটিতে এই অবস্থার প্রতিই ইঙ্গিত করা হয়েছে।
বিশ্বে এ যাবত বিভিন্ন স্থানে ও দেশে, কখনও বা বিশ্বব্যাপী বহুবার ব্যাংকিং সংকট, মন্দা ও মহাম্দা সৃষ্টি হয়েছে যাতে সম্পদের ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে। অর্থনীতিবিদগণ প্রধানত সুদকেই এজন্য দায়ী করেছেন। এসব সংকট ও মন্দার তালিকা পরিশিষ্ট ১ ও ২-এ দেওয়া হলো।
ধ্বংসের বিবরণ
তালিকায় উল্লেখিত প্রতিটি বিপুল পরিমাণ সম্পদরে ক্ষয়-ক্ষতি ও ধ্বংস সাধিত হয়েছে, কোনটিতে কিছু খম আর কোনটিতে বেশি। এখানে পৃথক পৃথক ভাবে প্রতিটি সংকটের ক্ষতির বিবরণ অথবা সকল সংকটের ক্ষয়-ক্ষতির যোগফল তুলে ধরলে ভাল হতো। কিন্তু এখানে তা সম্ভব হচ্ছে না। সেজন্য ১৯২৯-৩৯ সালের মহামন্দা, ১৯৯৭-৯৮ সালের এশিয়ায় সৃষ্ট ব্যাপক আর্থিক সংকটি এবং ২০০৭-১০ সালে সৃষ্ট বিশ্বমন্দায় যে ব্যাপক ধ্বংস সাধিত হয়েছিল তার সংক্ষিপ্ত বিবরণ দেওয়া হচ্ছে।
ক) বিশ্ব মহামন্দাঃ ১৯২৯–৩৯ (Great Depression)
উত্তর আমেরিকা, ইউরোপ ও অন্যান্য শিল্পোন্নত দেশে ১৯২৯ সালে এই মাহমন্দ ও বিপর্যয় সৃষ্টি হয় এবং ১৯৩৩ সাল পর্যন্ত তীব্রভাবে বহাল থাকে। অতঃপর এর তীব্রতা ধীরে ধীরে কমে আসে এবং ১৯৩৯ সালে গিয়ে শেষ হয়। এটা হচ্ছে বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘস্থায়ী ও কঠোরতম মন্দা। এই মন্দার আঘাত দ্রুত বিশ্বময় ছড়িয়ে পড়ে। ১৯২৮ সালের ২৮ অক্টোবর কালো সোমবারে নিউইয়র্ক ওয়ালস্ট্রীটি শেয়ার বাজার বিপর্যয়ের মাধ্যমেই চার মাস পূর্বে শুরু হওয়া এ মন্দা মহান্দার বিভীষিকায় রূপ নেয়। এই মহামন্দার ধ্বংস যেমন বিপুল বিস্তৃতিও ছিল তেমনি ব্যাপক। এ মহামন্দায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল যুক্ত রাষ্ট্র। তার পর জার্মানী এবং যুক্তরাজ্য। মহামন্দার ক্ষয়-ক্ষতির সংক্ষিপ্ত চিত্র নিম্নরূপঃ
যুক্তরাষ্ট্র
১. শেয়ার বাজার বিপর্যয়ঃ ১৯২৯ সাল থেকে ১৯৩২ সালের মধ্যে ১৯২৯ সালে শেয়াররের মূল্য ছিল তার ৮০% হ্রাস পায়; অর্থাৎ ১৯২৯ সালের মূ্ল্যের ২০%-এ নেমে আসে। ১৯২৯ সালের অক্টোবরে, এক মাসে ক্ষতি হয় ১৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।
২. ব্যাংক দেউলিয়াঃ সে সময়ে যুক্তরাষ্ট্রে বিদ্যমান মোট ২৫,০০০ ব্যাংকের মধ্যে ১১,০০০ ব্যাংকের পতন হয়।
৩. শিল্পোৎপাদন হ্রাসঃ ১৯২৯ সালের উৎপাদন থেকে ৫৪% কমে যায়; অর্থাৎ ৩ বছরে অর্ধেকেরও বেশি উৎপাদন হ্রাস পায়।
৪. বেকারত্বঃ ১২ থেকে ১৫ মিলিয়ন অর্থাৎ মোট কর্মশক্তির ২৫-৩০% শ্রমেক বেকার হয়/কর্ম হারায়।
৫. আন্তর্জাতিক বাণিজ্যঃ ১৯৩২ সালের মধ্যে বিশ্ব বাণিজ্যের পরিমাণ ১৯২৯ সালের ২/৩ ভাগ হ্রাস পায়।
৬. ক্রয় ক্ষমতা ও চাহিদাঃ সর্বস্তরের মানুষের ক্রয় ক্ষমতা হ্রাস পাবার ফলে চহিদার ব্যাপক পতন ঘটে। এতে করে উৎপাদিত পণ্যের বেশীর ভাগই অবিক্রীত থেকে যায়।
৭. রাজনৈতিক পরিবর্তনঃ ১৯৩২ সালে ফ্রাংকলিন ডি. রুজভেল্ট যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতাসীন দলের পরাজয় হয়।
৮. অর্থনৈতিক কার্যক্রমের মৌলিক পরিবর্তনঃ মহামন্দায় প্রমাণিত হয় বাজার উপাদান (market forces) নিজেই অর্থনীতিতে বাঞ্ছিত সংশোধন/উত্তরণ আনতে পারে না। বিরাট ক্ষয়-ক্ষতির বিনিময়ে প্রাপ্ত এ অভিজ্ঞতার ফলে যুক্তাষ্ট্রের অর্থনৈতিক কাঠামোয় কর, শিল্প নিয়ন্ত্রণ, পাবলিক ওয়ার্কস, সামাজিক বীমা, সমাজ সেবা কার্যক্রম অথবা ঘাটতি ব্যয় আকারে সরকারী হস্তক্ষেপের ব্যবস্থা সংযোজন করা হয়।
৯. মুদ্রা ব্যবস্থার পতনঃ স্বর্ণমান ব্যবস্থা (gold standard) ভেঙ্গে পড়ে। অবশেষে যুক্তরাষ্ট্রে স্বর্ণমান ব্যবস্থা প্রত্যাহার করে।
১০. মোট দেশজ উৎপাদন (GNP): ১৯৩২ সালেই ১৩.৪% হ্রাস পায়। ১৯২৯ সাল থেকে ১৯৩২ পর্যন্ত ৩ বছরে হ্রাস হয় ৩১%।
১১. শিল্প পণ্যের মূল: ১৯৩০ সালের মূল্য ৮০% হ্রাস পায়।
১২. ব্যাংক ডিপোজিটের ক্ষতি: ১৯২৯ সাল থেকে ১৯৩২ সালের মধ্যে ২.০০ বি. মা. ডলার মূল্যের ডিপোজিক ক্ষতি হয়।
১৩. মুদ্রা সরবরাহঃ ১৯২৯ সালের চেয়ে ৩১% হ্রাস করা হয়।
১৪. পুজিঁ গঠন ও বিনিয়োগঃ ১৬.২ বি.মা. ডলার থেকে ১ বি. মা. ডলার হ্রাস পায় বা ১/৩ এ নেমে আসে।
১৫. কৃষি পণ্যের মূল্যঃ ১৯২৯ সালের চেয়ে ৫৩% হ্রাস পায়।
১৬. করের হারঃ টপ ট্যাক্সের হার ২৫% থেকে ৬৩% উন্নীত করা হয়, ১৯৩৬ সালে এ হার ৭৯% উন্নীত হয় এবং ১৯৪৫ সালে ৯১% এ উন্নীত হয়; অত:পর ১৯৬৩ সালে ৮৮% এবং ১৮৬৩ সালে ৭০% ভাগে নেমে আসে।
জার্মানী
১. বেকারত্ব: ১৯২৯ সালের শেষ ভাগ হতে ১৯৩২ সালের প্রথম ভাগ পর্যন্ত ৬ মিলিয়ন কর্মশক্তি কাজ হারিয়ে বেকার হয়ে পড়ে যা মোট শ্রমশক্তির ২৫%।
২. রাজনৈতিক: এডলফ হিটলার ক্ষমতায় আসার সুযোগ পায়।
৩. ব্যাংকিং বিপর্যয়: ব্যাংকিং পদ্ধতি ভেঙ্গে পড়ে।
যুক্তরাজ্য
১. যুক্তরাজ্যে মন্দার ক্ষয়-ক্ষতি ততটা মারাত্মক ছিল না। তবে দেশের শিল্প ও রফতানী খাতে সৃষ্ট মন্দা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পর্যন্ত বহাল ছিল।
২. রাজনৈতিকঃ চরমপন্হী শক্তিগুলোর তৎপরতা বেড়ে যায় এবং উদার গণতান্ত্রিক পদ্ধতির গুরুত্ব হেয় কারর প্রয়াস পায়।
খ) এশীয় আর্থিক বিপর্যয়– ১৯৯৭
১৯৯৭ জুলাই মাসে থাইল্যান্ডের মুদ্রা থাই বাথ-এর মূল্য পতনের মাধ্যমে বিপর্যের সূচনা হয় এবং এশিয়ার বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়ে। বিপর্যয়ে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় ইন্দোনেশিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া ও থাইল্যান্ড। হংকং, মালয়েশিয়া, লাওস ও ফিলিপাইনও বেশ ক্ষতির সম্মুখীন হয়; চায়না, ভারত, তাইওয়ান, সিঙ্গাপুর, ব্রুনাই এবং ভিয়েতনাম স্বল্প ক্ষতির মধ্য দিয়েই কাটিয়ে উঠে। নিচে ক্ষয়-ক্ষতির সংক্ষিপ্ত বিবরণ দেওয়া হলো:
থাইল্যান্ডঃ মুদ্রার মূল্য দ্রুত হ্রাস পায় এবং ৫০%-এর বেশি কমে যায়। ১৯৯৮ বাথের মূল্য সর্বনিম্ন ৫৬বাথ=১.০০ মার্কিন ডলারে নেমে আসে। স্টক বাজার ৭৫% হ্রাস পায়। দেশের বৃহত্তম ফাইন্যান্স কোম্পানী “ফাইন্যান্স ওয়ান’- এর পতন হয়। লেঅফের কারণে অর্থ, রিয়েল এস্টেট এবং নির্মাণ খাতে বিপুল সংখ্যক শ্রমিক গ্রামাঞ্চলে তাদের নিজ নিজ বাড়ীতে চলে যেতে বাধ্য হয়। ৬ লাখ বিদেশী শ্রমিককে তাদের নিজ নিজ দেশে ফেরত পাঠানো হয়। ১৯৯৭ সালে মার্কিন ডলারের মাথা পিছু নমিনাল GDP হ্রাস পায় ২১.২%। সংকট উত্তরণের জন্য আইএমএফ প্রথম দফায় (আগ: ১২, ১৯৯৭) ১৭.০০ বি, মার্কিন ডলার এবং দ্বিতীয় দফায় (আগ: ১২, ১৯৯৭) আরও ৩.৯ বি. মার্কিন ডলার উদ্ধার প্যাকেজ দেয়। সংকট রাজনৈতিক ক্ষেত্রেও আঘাত হানে এবং প্রধানমন্ত্রী জেনারেল চ্যাভালিত উংচাইওধকে পদত্যাগ করতে হয়। ২০০১ সালে দশেটি সংকটমুক্ত হয়।
ইন্দোনেশিয়াঃ সংকটের পূর্বে ১.০০ মার্কিন ডলার ক্রয় করতে ইন্দোনেশিয়ার ২,৬০০/- রূপিয়া লাগতো, সংকটে রূপিয়ার মূল্য এত হ্রাস পায় যে, ১৯৯৮ সালের ৯ জানুয়ারীতে ১.০০ মা. ডলারের দাম হয় ১১,০০০/- রূপিয়া; স্পট বাজারে তা হয় ১৪,০০০/- রূপিয়া। ইন্দোনেশিয়ার মোট দেশজ উৎপাদন (GDP) এর ক্ষতি হয় ১৩.৫%। ১৯৯৭ সালে মার্কিন ডলারে মাথাপিছু নমিনাল GDP হ্রাস পায় ৪২.৩%। গণদাবীর মুখে শেষ পর্যন্ত প্রেসিডেন্ট সুহার্তোকে তাঁর পদ থেকে ইস্তিফা দিতে হয়। পূর্ব তিমুরের স্বাধীনতা ত্বরান্বিত হয়ে আসে।
দক্ষিণ কোরিয়াঃ অতিমাত্রার ঋণের বোঝায় অর্থনীতি বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে এবং বহু সংখ্যক কর্পোরেট কোম্পানী দেউলিয়াত্ব বরণে বাধ্য হয়। দেশের তৃতীয় বৃহত্তম মোটর নির্মাতা প্রতিষ্ঠান কিয়া মোটরস্ জরুরী ঋণ চাইতে বাধ্য হয়। এদিকে এশিয়ায় বাজার পতনের প্রেক্ষাপটে ক্রেডিট রেটিং-এ সাউথ কোরিয়াকে A1 থেকে ক্রমান্বয়ে B2 তে রেটিং করা হয়। এ অবস্থা শেয়ার বাজারে বিপর্যয় ঘটায়। ১৯৯৭ সালের ৭ নভেম্বরে স্টক বাজারে ৪%, ৮ নভেম্বরে ৭% এবং ২৪ নভেম্বরে আরও ৭.২% দত পতন হয়। ১৯৯৮ সালে হুন্দাই মোটরস্ কিয়া মোটরস কিনে নেয়। স্যামসাং মোটরের ৫ .বি. মার্কিন ডলার ঋণ মওকুফ (dissolved) করতে হয় আর দায়েউহ মোটরকে মার্কিন কোম্পানীর কাছে বিক্রি করতে হয়। দেশের মুদ্রা প্রতি মার্কিন ডলার ৮০০ একক থেখে ১৭০০০ এককে নেমে যায়। দেশের ঋণের পরিমাণ GDP-এর ১৩% থেকে ৩০% উন্নীত হয়। ১৯৯৭ সালে মার্কিন ডলারের হিসাবে মাথাপিছু নমিনাল GDP হ্রাস পায় ১৮.৫%।
ফিলিপাইনঃ থাইল্যান্ড সংকটের প্রেক্ষাপটে ফিলিপাইন সেন্ট্রাল ব্যাংক তাদের মুদ্রাকে রক্ষা করার প্রয়াস হিসেবে ১৯৯৭ সালের মধ্যে জুলাইয়ে ওভার নাইট সুদের হার ১৫% থেকে ৩২% উন্নীত করে। সংকটের শুরুতে ২৬% পেসোর দাম ছিল ১.০০ মা. ডলার: ১৯৯৯ সালে এ হার হয় ১ মা. ড.= ৩৮ পেসো, ২০০১ সালে তা হয় ১ মা. ড. = ৫৪ পেসো। ১৯৯৭ সালে ফিলিপাইন স্টক এক্সচেঞ্জে ধস নামে এবং সূচক ৩০০০ পয়েন্ট থেকে ১০০০ পয়েন্টে নেমে আসে। মার্কিন ডলারে মাথাপিছু নমিনাল GDP হ্রাস পায় ১২.৫%। রাজনৈতিক ক্ষেত্রে দেশের প্রেসিডেন্ট আসট্রাদার বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্থাব দেওয়া হয়; অত:পর সংসদীয় ভোটে রক্ষা পলেও শেষ পর্যন্ত গণবিক্ষোভের মুখে তাকে পদত্যাগ করতে হয় এবং গ্লোরিয়অ ম্যাকাপ্যাগল আরোয় প্রেসিডেন্ট হন।
হংকং: ১৯৯৭ সালে হংকং ডলার ফটকাবাজির শিকার হয়। এসময় দেশের মুদ্রামান সংরক্ষনে হংকং মুদ্রা কর্তৃপক্ষকে ১ বি. মা. ডলার খরচ করে নিজেদের মুদ্রা ক্রয় করতে হয়। ১৯৯৮ সালে ৫ ভাগ ওভার নাইট সুদের হার ৮% থেকে ১৫% এবং এক পর্যায়ে তা ৫০০% বৃদ্ধি করা হয়। এদিকে স্টক বাজার ক্রমেই অস্থির থেকে অস্থিতর হয়ে উঠে এবং ২০ অক্টোবর থেকে ২৩ অক্টোবরের মধ্যে হ্যাং সেং সূচক ২৩% নিচে পড়ে যায়। সরকার ১২০ বি. হ. ডলার অর্থাৎ ১৫ বি. মার্কিন ডলার মুল্যের বিভিন্ন কোম্পানীর শেয়ার ক্রয় করে এবং দেশের সবচেয়ে বড় শেয়ার হোল্ডারে পরিণত হয়।
মালয়েশিয়াঃ ১৯৯৭ সালে থাইল্যান্ড মুদ্রার অবমূল্যায়নের প্রেক্ষাপটে মালয়েশিয়ার রিঙ্গিত ফটকাবাজদের আক্রমণে পড়ে। ওভার নাইট সুদের হার ৮% থেকে এক লাফে ৪০% এ উঠে যায়। কুয়ালালামপুল স্টক এক্সচেঞ্জের সুচক ১২০০ এর ওপর থেকে ৬০০ নেমে আসে এবং রিঙ্গিতের মূল্য ৫০% অবমূল্যায়ন করতে হয়; অর্থাৎ ১ মা. ডলারের মূল্য যেখানে ছিল ২.৫০ রিঙ্গত সেখানে ১ মা. ডলারের মূল্য দাঁড়ায় ৪.৫৭ রিঙ্গিত (জানু ২৩, ১৯৯৮)। বহু বছরের মধ্যে ১৯৯৮ সালে প্রথম মন্দা দেখা দেয় এবং প্রকৃত অর্থনীতিতে (real economy) উৎপাদন, বিশেষ করে, নির্মাণ খাতে ২৩.৫%, শিল্পখাতে ৯/৫ এবং কৃষি খাতে ৫.৯% হ্রাস পায়। এ বছর রিঙ্গিতের মূল্য নেমে আসে ৪.৭; আর কুয়ালালামপুর স্টক এক্সচেঞ্জের সূচক ২৭০ এর নিচে পড়ে যায়।
সিঙ্গাপুরঃ সিঙ্গাপুর অর্থনীতির ওপর মন্দার আঘাত ছিল মৃদু ও ক্ষনস্থায়ী। দেশের মুদ্রা কর্তৃপক্ষ ক্রমান্বয়ে ২০% পর্যন্ত মুদ্রার অবমূল্যায় ন করে। শিল্প-কারখানায় শ্রম ব্যয় হ্রাসকল্পে জাতীয় মজুরী কাউন্সিল পূর্বাহ্নেউ কেন্দ্রীয় প্রভিডেন্ট ফান্ড কর্তনে সম্মত হয়। শেয়ার বাজারে সরাসরি হস্তক্ষেপ না করে Straits Times Index অনুমোদন করা হয় যাতে সূচক মাত্র ৬০% নিচে নামে। এক বছরেরও কম সময়ে অর্থনীতি সম্পূর্ণ মন্দামুক্ত হয়।
চায়নাঃ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া এবং দক্ষিণ কোরিয়ার তুলনায় সংকটকালে চায়না মোটামুটি অক্ষত ছিল বলা যায়। তবে ১৯৯৮ এবং ১৯৯৯ সালে জিডিপি প্রবৃদ্ধি সামান্য মন্হর হয়ে পড়েছিল। আর সেটাও ছিল অর্থনীতির অভ্যন্তরীণ কাঠামোগত সমস্যার দরুন।
জাপানঃ এশীয় দেশগুলোর মধ্যে জাপান সর্ববৃহৎ অর্থনীতির অধিকারী এবং প্রায় সবকটি এশীয় দেশেরই জাপানের সাথে বাণিজ্য ঘাটতি বিদ্যমান। জাপানের মোট রফতানির প্রায় ৪০% যায় এশীয় দেশগুলোতে। সুতরাং এসব দেশের সংকট জাপানকে স্পর্শ না করে পরে না।
আঘাতে জাপানী ইয়েন ১৪৭-এ নেমে আসে। কিন্তু এসময়ে জাপানের রিজার্ভ ছিল বিশ্বের সকল দেশের চেয়ে বেশি। ফলে জাপান সরকার সহজেই পরিস্থিতি সামাল দেয় এবং তা পূর্বাবস্থায় ফিরিয়ে আনে। হঠাৎ করে ১৯৯৭ সালে জিডিপির প্রকৃত প্রবৃদ্ধি হার ৫% থেকে ১.৬% নেমে আসে। এমনকি, ১৯৯৮ সালে মন্দায় রূপ নেয় এবং বহু কারবার দেউলিয়াত্বের শিকার হয়।
এশিয়ার বাইরে
যুক্তারষ্ট্রঃ এশীয় সংকটের হাওয়া যুক্তরাষ্ট্রেও লেগে যায়। এ দেশের বাজারে ধস না নামলেও ১৯৯৭ সালের ২৭ অক্টোবর ‘ডো জোনস’ শিল্প সূচক ৫৫৪ পয়েন্ট বা ৭.২% নেমে যায়। এছাড়া ভোক্তা ব্যয়ের আস্থা হ্রাস পয়। পরোক্ষভাবে এশীয় সংকটের ওপর গিয়ে পড়ে।
অন্যান্য দেশ
এশীয় আর্থিক সংকটের ফলে আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারীরা উন্নয়নশীল দেশে ঋণ প্রদানে অনাগ্রহী হয়ে পড়ে। ফলে বিশ্বের বিভিন্ন অংশে অনেক উন্নয়নশীল দেশে অর্থনৈতিক মন্হরতা নেমে আসে। এছাড়া এ সংকটের প্রভাবে ১৯৯৮ সালে তেলের দাম বেরেল প্রতি ১১.০০ মা. ডলার নেমে আসে। এতে তেল উৎপাদনকারী দেশগুলো আর্থিক চাড়ে পড়ে যায়। তাছাড়া তেলের এই মূল্য পতনের ফলে ১৯৯৮ সালে রুশীয় আর্থিক সংকট (Russian Financial Crisis) দেখা দেয় যার ফলে প্রকারান্তরে যুক্তরাষ্ট্রে দীর্ঘমেয়াদী পুজিঁ ব্যবস্থাপনা (Long-term Capital Management) প্রতি মাসে ৪.৬ বি. মা. ডলারের লোকসান দেয় এবং দেউলিয়া হয়ে পড়ে। এছাড়া এশীয় আর্থিক সংকটের ফলে অগ্রসরমান অর্থনীতি ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনাও ১৯৯০ দশকের শেষে গিয়ে সংকটে নিপতিত হয়।
উপসংহারঃ ফলাফলঃ উল্লেখিত তথ্যে প্রতীয়মান হচ্ছে এশীয় আর্থিক সংকটের ফলে সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর মুদ্রামান হ্রাস করতে হয়েছে; শেয়ার, স্টক ও অন্যান্য সম্পদ বাজারে ধস নেমেছে; এবং আসিয়ান দেশসমূহে জিডিপি ১৯৯৭ সালে ৯.২ বি.মা. ডলার এবং ১৯৯৮ সালে ২১৮.২ বি. মা. ডলার কমে গেছে। ১৯৯৭-৯৮ সালে বহু কারবার দেউলিয়ার শিকার হয়েছে, মিলিয়ন মিলিয়ন মানুষ দারিদ্র সীমার নিচে চলে এসেছে। এশিয়ার ব্যাঘ্রগুলোর থবাবা ধার নিঃশেষ হয়ে গিয়েছে।
গ) বিশ্ব আর্থিক সংকটঃ ২০০৭–২০১০
২০০৭-২০১০-এর মন্দায় কম-বেশি সকল দশই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ইন্টারন্যাশনাল ইকোনমিক্স বুলেটিনের মতে, ইউক্রেন, আর্জেন্টিনা ও জামাইকার ক্ষতি হয়েছে সবচেয়ে বেশি তার চেয়ে কম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আয়ারল্যান্ড, রাশিয়া, মেক্সিকো, হাঙ্গেকী, বাল্টিক রাষ্ট্রসমূহ; যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্য, চায়না, জাপান, ভারত, ইরান, পেরু ও অষ্ট্রেলিয়ার ক্ষতি হয়েছে কম।
অর্থনীতির এমন খাত নেই যেখানে এ মন্দা আঘাত হানেনি। ব্যবসা-বাণিজ্য, শিল্পোৎপাদন, আর্থিক বাজার, ব্যাংক, বীমা, ভ্রমণ, শ্রম বাজার, ক্ষুদ্র-ব্যবসায়িক ঋণ ইত্যাদি সকল ক্ষেত্রেই সংকোচন মন্দা ভীষণ রূপ নেয়। নিচে সংক্ষিপ্ত বিবরণ দেওয়া হলোঃ
১) ব্যবসা–বণিজ্যঃ ২০০৮ সালের মধ্য অক্টোবলে এক সপ্তাহের মধ্যে বাল্টিক ড্রাই ইন্ডেক্স (a measure of shipping volume) ৫০% নীচে নেমে যায়। এ সময়ে ব্যাংকগুলোর ঋণ সংকোচনের ফলে ব্যবসায়ীদের জন্য ঋণপত্র খোলা দুঃসাধ্য হয়ে পড়ে। ২০০৯ সালের ফেব্রুয়ারী মাসে রফতানিমুখী শিল্পসমূহে উৎপাদন ব্যাপকভাবে হ্রাস পায়। ২০০৮ জানুয়ারী থেকে ২০০৯ জানুয়ারীর মধ্যে জাপানে ৩১%, কোরিয়ায় ২৬%, রাশিয়ায় ১৬%, ব্রাজিলে ১৫%, ইটালিতে ১৪%, জার্মানীতে ১২% উৎপাদন (GDP) কম হয়। এ সময়ে ইউরোপ ও আমেরিকায় বহু কারবার ও শিল্প প্রতিষ্ঠান অতি স্বল্পমূল্যে বিক্রি করে দেওয়া হয় যা মধ্যপ্রাচ্য, এশিয়া ও চীনের ক্রেতারা কিনে নেয়।
২. চাকরীচ্যুতিঃ আন্তর্জাতিক শ্রম সংগছন (ILO)- এর মতে, এ সংকটকালে, বিশেষ করে নির্মাণ শিল্প, রিয়েল এস্টেট, আর্থিক সেবা এবং অটোখাতে ২০ মি. শ্রমজীবী তাদের চাকরী হারায়। এর ফলে প্রথম বারের মত বিশ্বে বেকারের সংখ্যা ২০০ মি. পৌছেঁ।
২০০৭ এ ডিসেম্বরে আমেরিকার বেকারত্বের হার ছিল ৪.৯%। কিন্তু ২০০৯-এর অক্টোবরে এ হার ১০.১%-এ উঠে যায়। খণ্ডকালীন ও অন্যান্য সাময়িক বেকার শ্রমিকদেরসহ এ হার দাঁড়ায় ১৬.৩%। ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলোতে বেকারত্বের হার প্রায় একই রূপ ছিল। তবে কয়েকটি দেশে মন্দার ধাক্কা বেশি লাগায় সেখানে বেশি সংখ্যক শ্রমিককে চাকরী হারাতে হয়। উদাহরণস্বরূপ, ২০০৯ সালের মে মাসে স্পেনে বেকারের হার দাড়াঁয় ১৮.৭%। মন্দায় একমাত্রৃ আমেরিকাতে মজুরীর ক্ষতি হয় ৩৬০ বি. মা. ডলার; গড়ে পরিবার প্রতি লোকসান দাঁড়ায় ৩,২৫০ মা. ডলার। [Phillip Swaget, The cost of the Financial Crisis: The Impact of the September 2008 Economic Collapse from Interest]
৩) আর্থিক বাজারঃ ২০০৮-এর ২১ জানুয়ারী সোমবার বিশ্ব শেয়ার বাজারে ধস নামে। পত্র-পত্রিকায় এ দিনটিকে কালো সোমবার আখ্যায়িত করা হয়। এই দিন যুক্তরাষ্ট্রের শেয়ার বাজারে ব্যাপক দর পতন হয় এবং পরদিন কিছুটা কম হলেও এ পতন চলতে থাকে। সাংহাই শেয়ার বাজারেও এর ধাক্কা লাগে। ফলে সাংহাই কম্পোজিট ইনডেক্স ৫.১৪% নিচে নেমে যায়। কোন কোন কোম্পানীর শেয়ারে এই পতন আরও বেশি হয়; যেমন Ping An Insurance ১০% এবং China Life ৮.৭৬% মূল্য হারায়। ২০০৮ সালে বিশ্বব্যাপী স্টক মার্কেটে কয়েকবার করে ধস নামে; একবার জানুয়ারীতে, একবার আগেস্টে, একবার সেপ্টেম্বরে এবং আর একবার অক্টোবরের প্রথম দিকে। এ সালের অক্টোবরের আঘাতে উত্তর আমেরিকায় ইউরোপ ও এশিয়া প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে প্রায় ৩০% মূল্য পতন হয়। আর Dow Jones Industrial Averages 37% দর হারায়। তেলের দাম বৃদ্ধি এবং রাজনৈতিক অস্থিরতার দরুন রাশিয়ায় পূর্ব থেকেই স্টক বাজার নেমে আসছিল; অতঃপর এ আঘাতে তা ১০% পড়ে যায়। অন্যান্য উন্নয়নশীল বাজারগুলোও লোকসান দিতে বাধ হয়। ২০০৯ সালের মার্চ মাসে ব্ল্যাকস্টোন গ্রুপের প্রধান নির্বাহী অফিসার Stephen Sehwarzman বলেন, “বিগত এক থেকে দেড় বছরে বিশ্ব সম্পদের প্রায় ৪৫% ধ্বংস (written off) য়ে গেছে”। (NEWS.com.au. , March 11. 2009)
৪. ব্যাংকিং খাতঃ ২০০৭-২০১১ সালের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে সর্বমোট ৩৯৫ টি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান দেউলিয়া হয়। এসব ব্যাংকের মোট সম্পদের (asset) পরিমাণ ছিল প্রায় ৬৭৩.১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, মোট ডিপোজিট ছিল ৪৮১.২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।
আন্তর্জাতিক ঋণের অন্যতম বড় কারণ হচ্ছে যুদ্ধ। প্রথম মহাযুদ্ধের তিরিশ বছর পর বিশ্বের ২৮টি দেশের ঋণের পরিমাণ ছিল ৫৭,৭৪১,৫৪৭,০০০ আমিরিকান ডলার। এই ঋণের প্রধান দাতা ছিল আমেরিকা। এ ঋণপরিশোধ করতে না পারায় গ্রহীতা দেশের সাথে আমেরিকার সম্পর্কে তিক্ততা সৃষ্টি হয়। বিশ্ব অর্থনীতিতে এই ঋণের প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে আমেরিকার প্রখ্যাত অর্থনীতিবিদ হ্যারল্ড জি, মোল্টন এবং তার সাথী লিও পসভস্কি মন্তব্য করেছেন যে, যুদ্ধকালে প্রদত্ত আন্তঃসরকারী ঋণ আদায় করা হলে তা দাতা দেশসমূহের জন্য অর্থনৈতিক উন্নতি নয়, বরং ক্ষতি বয়ে আনবে। অপরদিকে যুদ্ধের ক্ষতিপূরণসহ যাবতীয় ঋণ মওকুফ করা হলে, তা বিশ্বের অর্থনৈতিক উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত নয়, বরং ত্বরান্বিত করবে। তারা আরও লিখেছেন যে, যুদ্ধ-ঋণের মৌলিক অর্থনৈতিক তাৎপর্য অতি স্পষ্ট। যুদ্ধ ঋণের সাকল্য অর্থ যুদ্ধের ধ্বংসাত্মক প্রক্রিয়ায় ব্যয় করা হয়েছে, এর দ্বারা উৎপাদনশীল অর্থনৈতিক উন্নয়ন আদৌ হয়নি। এমতাবস্থায় উক্ত ঋণ আদায় বিশ্বের অর্থনৈতিক ভারসাম্য পুনঃপ্রতিষ্ঠা এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নকে বিঘ্নিক করেছে।
বস্তুতঃ যুদ্ধ-ঋণ বিশ্ব অর্থনীতিতে উদ্যম ও উৎসাহ-উদ্দীপনা বিনষ্ট করে বিশ্বে সৃষ্ট নজীরবিহীন মহামন্দাকে দীর্ঘস্থায়ী করেছে। যুদ্ধ-ঋণের পরিমাণ ছিল বিরাট। ঋণগ্রহীতাদের পরিশোধ-ক্ষমতার মধ্যে আনার জন্য বারবার এ ঋণ বিন্যাস করা হয়। অবশেষে ১৯৩১ সালে প্রেসিডেন্ট হুভার এ ঋণ স্থগিত ঘোষণা করেন এবং ১৯৩৫ সালে হিটলার ক্ষমতায় এসে সকল ঋণ অস্বীকার করেন।[মোলটন ও পসভস্কি; ওয়ার ডেটস এন্ড ওয়ার্ল্ড প্রসপ্যারিটি, উদ্ধৃত করেছেন, ড. আনোয়ার ইকবাল কোরেশী, ইসলাম এন্ড দি থিওরী অব ইন্টারেস্ট, পৃঃ ১৬১।
ইতিহাস আলোচনায় দেখা যায়, সুদখোদের অর্থলিপ্সা বিশ্বের বহু সাম্রাজ্যের ধ্বংস সাধন করেছে। জি, ফেরো তাঁর ‘দি গ্রেটনেস এন্ড ডিক্লাইন অব রোম’ গ্রন্হে ব্যাখ্যা করে দেখিয়েছেন সুদখোরদের অশুভ তৎপরতা কিভাবে রোম সাম্রাজ্যকে ধ্বংস করেছে। তিনি বলেন, “Italian society had become an inextricable labyrinth of debt and credit, through the agency of “Syngraphac’ or letters of credit, which were renewed as soon as they fell due, they were negotiated in the same way as securities and bills of exchange to-day, because the scarcity of capital relative to the debt-structure and the frequent oscillation in prices should have made it ruinous for them tobe renewed frequently. The desperate competition for wealth in which all Italy was engaged ….. (all which ended) as it seems that all such competition will always end, in a gigantic accumulation of vested interests which it needed nothing less than a cataclysm, to break down. The empire was broken by usurers and usury.”[ড… আনোয়ার ইকবাল কোরেশেী; ইসলাম এন্ড থিওরী অব ইন্টারেস্ট, পৃ ১৬৬।] “ঋণপত্র সম্পাদনকারী সংস্থাগুলোর মাধ্যমে ইতারীর সমাজ ঋণ ও দায়ের অলংঘনীয় এক গোলকধাঁধার অপরিহার্য অংশে পরিণত হয়েছিল। এই এজেন্সিগুলোর কাজ ছিল মেয়াদপূর্তির সাথে সাথে সংশ্লিষ্ট পক্ষসমূহকে দিয়ে সেগুলো স্বাক্ষর করিয়ে নবায়ন করানো। আজকের দিনে সিকিউরিটিজ ও বিল অব এক্সচেঞ্জ যেভাবে লেনদেন হয় তখনকার দিনেও একইভাবে ঋণপত্রসমূহ সম্পাদিত হতো। দায় কাঠামোর সাথে সংশ্নিষ্ট মূলধনের দুষ্প্রাপ্যতা এবং ঘনঘন মূল্যস্ফীতির প্রেক্ষাপটে সময়ে সময়ে এগুলো নবায়ন না হলে অধমর্ণের জন্য তা ধ্বংসের কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারতো। ইতালীতে সকলেই সম্পদ অর্জনের বেপরোয়া প্রতিযোগিতারয় জড়িয়ে পড়েছিল। অবস্থাদৃষ্টে মনে হয় বিশাল কায়েমী স্বার্থের সন্নিবেশের মধ্য দিয়ে এ ধরনের প্রতিযোগীতার পরিসামাপ্তি ঘটতো, একটি মহা প্রলয় ছাড়া যাকে আর কোন কিছুই ধ্বংস করতে পারতো না। চড়া সুদের লেনদেন ও সম্পদের অন্যায় ভক্ষণ রোমাণ সাম্রাজ্যের পতনের অন্যতম কারণ ছিল। বস্তুতঃ সুদখোর ও সুদই এ সাম্রাজ্যকে ধ্বংস করেছে”।
সুদী ঋণের এই ব্যবস্থার কুফল সম্পর্কে কিনস্টন বলেছেন, “I am against usury in every form. Usury has been the curse of the world from the beginning; it has broken other empires than this, and it is going to break this empire. There is not a single great moral or religious teacher who has not denounced it. [উপরোক্ত, পৃ: ১৬৮-১৬৯।] “আমি সকল ধরনের সুদের (ইউসারী) বিরুদ্ধে। প্রথম থেকেই ইউসারী বিশ্বের জন্য এক মহা অভিশাপ হয়ে উঠেছে; সুদ অন্যান্য সম্রাজ্যকে ধ্বংস করেছে আর এখন এই সম্রাজ্যকেও ধ্বংস করতে যাচ্ছে। পৃথিবীতি এমন কোন নৈতিক বা ধর্মীয় বড় শিক্ষক নেই যিনি সুদের নিন্দা করেননি”।
Napoleon’s love story’-এর লেখক ম্যাকনায়ার ইউলসন ফরাসী সাম্রাজ্য ও নেপোলিয়নের পতনের জন্য সুদের প্রভাবকেই দায়ী করেছেন। তিনি বলেছেন, “It cannot be too strongly insisted that finance and not territorial aggrandizement is the key to Napoleon’s ruin. Had the French Emperor consented to abandon his financial system in favour of the system of London that is, in favour of the loans by the money market-he could have had peace at any time.” [উপরোক্ত, পৃ: ১১৬।] “একথা অতি জোর দিয়ে বলা যায় যে, দেশজয়ের উচ্চাভিলাষ নয়; বরং অর্থই নেপোলিয়ানের ধ্বংসের কারণ। ফরাসী সম্রাট যদি লন্ডনের অর্থ ব্যবস্থার পক্ষে তথা অর্থ বাজারে ঋণ পদ্ধতির পক্ষে নিজেদের অর্থ ব্যবস্থা প্রত্যাহার করতে সম্মত হতেন, তাহলে যে কোন সময়ে নেপোলিয়ান শান্তিচুক্তি সম্পাদনে সম্মত হতেন”।
সুদী ঋণ ব্যবস্থা আধুনিক বিশ্বের অর্থনৈতিক ভারসাম্য ধ্বংস করে দিয়েছে। আন্তর্জাতিক পর্যায়ের সুদ ধনী দেশের বিরুদ্ধে ঘৃণা-বিদ্বেষ সৃষ্টি, এমনকি, বিশ্বযুদ্ধের সূত্রপাত ঘটায়। প্রথম মহাযুদ্ধের পর তদানীন্তন ‘লীগ অব নেশনস’- এর নিয়ন্ত্রণে দানিয়ুব ও বলকান অঞ্চলের রাষ্ট্রসমূহে সুদী ঋণ দ্য়ো হয়েছিল।ত্রিশ দশকের মহামন্দার সময় সেসব দেশের সরকারকে আরও অধিক হারে ট্যাক্স ধার্য করতে বাধ্য করা হয়। মানুষের দুর্দশা ইতিহাসের জঘন্যতম অধ্যায়ের সৃষ্টি করে। বর্তমানে সুদী ঋণ ব্যবস্থার ফলে উত্তরের কয়েকটি ধনী দেশের সাথে দক্ষিণের বিপুল সংখ্যক দেশের বৈষম্য ক্রমেই বেড়েছে। এই অবস্থা বিশ্বের স্থিতিশীলতার জন্য বিরাট হুমকি হয়ে দাড়িয়েঁছে।
মন্তব্য
সমগ্র আলোচনা থেকে স্পষ্ট হয়েছে যে, আল্লাহ ‘সুদ খাওয়া’ বলেছেন। চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, রাহাজানি, জুয়া, ঘুষ, জবর দখল- এ সবই হচ্ছে পরের সম্পদ বিনামূল্যে খাওয়া, গ্রাস করা, ভক্ষণ করা, হরণ করা, আত্মসাৎ করা। মানুষ এসবকে ঘুণা করে, সামাজিক বিকাশ ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের অন্তরায় মেন করে। এসব অন্যায় ভক্ষণের বিরুদ্ধে আইন আছে, শান্তির ব্যবস্থাও আছে। সমাজে এসব অন্যায় ভক্ষণ বেড়ে গেলে জনগণ হৈচৈ করে, সুশীল সমাজ সোচ্চার হয়ে উঠে, মিডিয়া তৎপর হয়, সংবাদপত্র লেখালেখি করে, বাজনীতির মাঠ গরম হয়, মিটিং, মিছিল, শ্লোগানমুখর হয়ে উঠে, আন্দোলনে দেশ উত্তাল হয়, কখনও কখনও সকারের পতনও ঘটে। সুদ এগুলোর চেয়ে আরও মারাত্মক শোষণ ও জুলুম; সুদের ধ্বংস অধিকতর ব্যাপক, বিস্তৃত ও সাংঘাতিক। দুনিয়ায় এমন কোন ধর্ম নেই যা সুদকে নিষিদ্ধ করেনি, উল্লেখযোগ্য কোন দার্শনিক নেই যিনি সুদের নিন্দা করেননি; এমন কোন অর্থনীতিবিদ নেই যিনি সুদকে ভাল বলেছেন। জনগণ সুদকে ঘৃণা করে, সুদখোরদের গালি দেয়, শোষক বলে। এতদসত্ত্বেও সুদ চলছে, বিস্তৃত হচ্ছে, জনগণকে আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে নিচ্ছে। সুদ ছাড়া অর্থনীতি চলে না, সুদ উন্নয়নের চাবিকাঠি বলে প্রচারণা ব্যাপকতর হচ্ছে। সুদের পক্ষে নতুন নতুন আইন তৈরী হচ্ছে। কিন্তু কেন এমন বৈপরীতা-Double standard ?
কারণ চুরি-ডাকাতি, ছিনতাই-রাহাজানির মাধ্যমে বিত্তশালীদের সম্পদ খায় নিঃস্ব-গরীবরা। এদের না আছে ধনের জোর, আর না প্রভাব-প্রতিপত্তি। তাদের পক্ষে সমাজ ও আইনকে প্রভাবিত করার কোন হাতিয়ারই তাদের নেই। তাই সমাজ তাদের বিরুদ্ধে, আর আইন তাদের বিপক্ষে। কিন্তু সুদ খায় পুজিঁপতিরা। গোল্ডস্মিথ থেকে শুরু করে মহাজন, আর মহাজনদের যৌথ কোম্পানী ব্যাঙকগুলোই সুদখোর ও সুদের বড় বড় কারবারী। এদের পুজিঁ আছে, আছে পুজিঁর প্র্রভাব; রাজনীতি, রাজনৈতিক দল এদের হাতের তলায়, সরকার, মন্ত্রী, এমটি, পার্লামেন্টে তারাই। গবেষলা তাদের অর্থে, তাদের মতই চলে; মিডিয়া-পত্র-পত্রিকা তাদেরই হাতে। সুতরাং যারা সুদ খায়, শোষল করে, তারা সুদকে শোষণ বলবে, শোষণের বিরুদ্ধে আইন ও শাস্তির ব্যবস্থা করবে, তা হয় না।কিন্তু সুদের ধ্বংস পুজিঁপতিদেরও ছাড়ে না। তাই সকলকে এগিয়ে আসতে হবে। শোষণ-ধ্বংসের পথ ছেড়ে বিনিয়োগ-উৎপাদনের পথে চলতে হবে; এতেই উন্নতী, এতেই কল্যাণ। ইসলামী ব্যাংকিং আশার আলো দেখিয়েছে। কিন্তু পুজিঁর ছোবল ফণা তুলে আছে চারদিকে, ভেতরে-বাইরে, ওপরে-নিচেও। সাবধান ! সাবধান ! শোষণের অবসানে আল্লাহ সকলকে সাহায্য করুন। আমীন!
পরিশিষ্ট–১
১. ব্যাংকিং সংকটের তালিকা
১৮শ শতক
-১৭৬৩- আমস্টারডাম ব্যাংকিং সংকট: আমস্টারডামে “Leendert Pieter de Neufville” ব্যাংক পতনের মাধ্যমে বিপর্যয় শুরু হয় এবং জার্মানী ও স্ক্যান্ডিনেভিয়ায় ছড়েয়ে পড়ে।
-১৭৭২-১৭৭৩- লন্ডন ও আমস্টারডাম ব্যাংকিং সংকট: লন্ডন ও আমস্টারডামের “Neal” James, Fordyee ও Down ব্যাংকগুলোর পতন হয়।
-১৭৯২- ব্যাংকি আতঙ্ক।
-১৭৯৬-১৭৯৭- ব্যাংকি আতঙ্ক।
১৯শ শতক
-১৮১৯- আতঙ্ক: যুক্তরাষ্ট্রে ব্যাংক পতনের সাথে মন্দা দেখা দেয়।
-১৮২৫-আতঙ্ক: যুক্তরাজ্যে ব্যাপক মন্দা দেখা দেয়; অনেকগুলো ব্যাংক দেউলিয়া হয়। এমনকি, Bank of England-ও পতনের মুখোমুখি হয়ে পড়ে।
-১৮৩৭-আতঙ্ক: যুক্তাষ্ট্রে ব্যাংক পতনের মাধ্যমে মন্দা সৃষ্টি হয়; পরবর্তী ৫ বছর মন্দা চলতে থাকে।
-১৮৪৭-ব্যাংকিং আতঙ্ক :
-১৮৫৭- ব্যাংকিং আতঙ্ক: যুক্তরাষ্ট্রে ব্যাংক পতন ও মন্দা সৃষ্টি হয়।
-১৮৬৬- ব্যাংকিং আতঙ্ক: যুক্তারাষ্ট্রে ব্যাংক পতন ও মন্দা সৃষ্টি হয়।
-১৮৭৩-ব্যাংকিং আতঙ্ক : যুক্তরাষ্ট্রে ব্যাংক পতনের সাথে মন্দা সৃষ্টি হয় এবং মন্দা ৪ বছর স্থয়ী হয়।
-১৮৮৪-ব্যাংকিং আতঙ্ক :
-১৮৯০- ব্যাংকিং আতঙ্ক:
-১৮৯৩-ব্যাংকিং আতঙ্ক: যুক্তরাষ্ট্রে ব্যাংক দেউলিয়া হয় ও মন্দা দেখা দেয়।
-১৮৯৩-ব্যাংকিং আতঙ্ক: অষ্ট্রেলিয়ায় ব্যাংকিং খাতে সংকট দেখা দেয়।
বিংশ শতক
-১৯০৭: যুক্তরাষ্ট্রে ব্যাংক পতনের সাথে অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দেয়।
-১৯২৯-১৯৩৯: বিংশ শতকের মাহমন্দা (Great Deperssion)
-১৯৭৩-১৯৭৫: যুক্তরাজ্যে সেকেন্ডারী ব্যাংকিং সংকট সৃষ্টি হয়।
-১৯৮৬-২০০৩: জাপানী asset বাজারে সৃষ্ট বুদবুদ (asset price bubble)
-১৯৮০-১৯৯০: যুক্তরাষ্ট্রে দুই দশক ব্যাপী স্থায়ী সঞ্চয় ও ঋণ সংকট দেখা দেয়।
-১৯৯০-এর দশক: ফিনল্যান্ডে ব্যাংকিং সংকট দেখা দেয়।
-১৯৯০-এর দশক: সুইডেনে ব্যাংকিং বিপর্যয় হয়।
-১৯৯৭: এশিয়ায় আর্থিক বিপর্যয় ঘটে।
-১৯৯৮: যুক্তরাষ্ট্রে দীর্ঘ মেয়াদী পুজিঁ ব্যবস্থাপনা ভেঙ্গে পড়ে।
-১৯৯৮: রাশিয়ায় আর্থিক সংকট হয়।
-১৯৯৯-২০০২:
-১৯৯৮-১৯৯৯: ইকুয়েডোরে ব্যাংকিং বিপর্যয় ঘটে।
একবিংশ শতক
-২০০২: উরুগুয়ে ব্যাংকিং সংকট।
-২০০০ দশকের শেষার্ধে নিম্নের সংকটসহ ব্যাপক আর্থিক সংকট-বিপর্যয় দেখা দেয়ঃ
-২০০৭: যুক্তরাষ্ট্রে sbprime mortgage সংকট হয়।
-২০০৮: যুক্তরাজ্যে ব্যাংক উদ্ধার প্যাকেজ (bank rescue package)
-২০০৮-২০০৯: বেলজিয়ামে আর্থিক সংকট হয়।
-২০০৮-২০০৯: আইসল্যান্ডে আর্থিক সংকট হয়।
-২০০৮-২০০৯: স্পেইনে আর্থিক সংকট হয়।
-২০০৮-২০০৯: রাশিয়ায় আর্থিক সংকট হয়।
-২০০৮-২০০৯: ইউক্রেনে আর্থিক সংকট হয়।
-২০০৮-২০১১: আয়ারল্যান্ডে ব্যাংকিং সংকট হয়।
(সূত্র: Laeven L. Valencia F (2008) (PDF). Systematic Banking Crisis: a new database.)
পরিশিষ্ট–২
অর্থনৈতিক সংকট ও মন্দার তালিকা
তৃতীয় শতক
-২৩৪-২৮৪ সাল-রোম সাম্রাজ্যের সংকট: ব্যাপক মুদ্রাস্ফীতি ও মুদ্রা ব্যবস্থার বিপর্যয় ঘটে; সাম্রাজ্যে পণ্য বিনিময় প্রথা। ভিত্তিক প্রাকৃতিক অর্থনীতিতে (natural economy) প্রত্যাবর্তন করে। শেষ পর্যন্ত সাম্রাজ্যের পতন হয়।
১৪শ শতক
-১৪শ শতকের ব্যাংকিং সংকট: (১৩৪৫ সালে পেরুজী এবং বারদি ফ্যামিলি কম্পোগনিয়া ডি বারদি-এর পতন)।
১৭শ শতক
-১৬৩৭– টিইলিপ ম্যানিয়া।
১৮শ শতক
-১৭২০–সাউথ সী বাবল (South Sea bubbles)
-১৭৭২–এর সংকট।
-১৭৯২–এর সংকট।
-১৭৯২–এর আতঙ্ক।
-১৭৯৬–১৭৯৭–এর আতঙ্ক।
১৯শ শতক
-নেপোলিয়ানোত্তর মন্দা;
-১৮১৩-ড্যানিশ রাষ্ট্রিয় দেউলিয়াত্ব;
-১৮১৯-যুক্তরাষ্ট্রে মন্দা, ব্যাংক পতন;
-১৮২৫-যুক্তরাজ্যে ব্যাপক মন্দা, বহু সংখ্যক ব্যাংকের পতন;
-১৮৩৭-যুক্তরাষ্ট্রে মন্দা, ব্যাংক পতন, ৫-বছর স্থায়ী মন্দা;
-১৮৪৭-এর আতঙ্ক;
-১৮৫৭-এর আতঙ্ক;
-১৮৬৬-এর আতঙ্ক;
-১৮৭৩-১৮৯৬-দীর্ঘ স্থায়ী মন্দা;
–১৮৭৩-যুক্তাষ্ট্রে ব্যাংক পতন, ৪ বছর স্থায়ী মন্দা;
–১৮৮৪-এর আতঙ্ক;
–১৮৯০-এর আতঙ্ক;
–১৮৯৩-যুক্তরাষ্ট্রে মন্দা, ব্যাংক পতন;
–১৮৯৩-অষ্ট্রেলিয়ায় ব্যাংকিং সংকট।
২০শ শতক
-১৯০৭: যুক্তরাষ্ট্রে অর্থনৈতিক মন্দা, ব্যাংক পতন।
-১৯২৯: ওয়ালস্ট্রীট বিপর্যয়।
-১৯২৯-১৯৩৯: বিশ্বব্যাপী মহামন্দা (Great Depression)। ওপেক তেলমূল্যাঘাত (Shock)।
-১৯৭৩-১৯৭৫: যুক্তরাজ্যে সেকেন্ডারী ব্যাংকিং সংকট।
-১৯৮৬-২০০৩: জাপানে সম্পদ বাজারে বুদবু (Asset price bubble)।
-১৯৮৭: কালো সোমবার।
-১৯৮০এর দশক-১৯৯০-এর দশক: যুক্তরাষ্ট্রে সঞ্চয় ও ঋণ সংকট।
-১৯৯০-এর দশক: ফিনল্যান্ড ব্যাংকিং সংকট।
-১৯৯০-এর দশক: সুইডেন ব্যাংকিং সংকট।
-১৯৯৪: মেক্সিকো অর্থনৈতিক সংকট।
-১৯৯৭: এশীয় আর্থি বিপর্যয়।
-১৯৯৮: যুক্তরাষ্ট্রে দীর্ঘ মেয়াদী পুজিঁ ব্যবস্থাপনা বিপর্যয়।
-১৯৯৮: রুশীয় আর্থিক সংকট।
-১৯৯৯-২০০২: আর্জেন্টিনা অর্থনৈতিক সংকট।
২১শ শতক
-২০০৭-২০১০: এশীয় আর্থিক সংকট;
-২০০৮-২০০৯: আইসল্যান্ড আর্থিক সংকট;
-২০০৮-১০: আয়ারল্যান্ড ব্যাংকিং সংকট;
-২০০৮-২০০৯: রাশিয়া আর্থিক সংকট;
-২০১০: পর্তুগাল ও গ্রীস ঋণ সংকট।
(সূত্র: Galbraith, J.K. (1990), A Short History of Financial Euphoria, New York, Penguin Books, ISBN 0-670-85028-4.)
— সমাপ্ত —