চতুর্থ অধ্যায়: সুদের আন্তর্জাতিক কুফল
সুদের নৈতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক কুফল আলোচনার পর এর আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে আলোকপাত করা যেতে পারে। বলা বাহুল্য, সুদের আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া দুনিয়াব্যাপী সুদের প্রচলন তথা বৈদেশিক ঋণে সুদের লেনদেনেরই স্বাভাবিক পুরিণতি।
দোন দেশেল সরকার যখন অন্য সরকার বা ঋণদানকারী প্রতিষ্ঠন অথবা কোন আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠনের কাছ থেকে ঋণ গ্রহণ করে, সেই ঋণকেই বলা হয় বৈদেশিক ঋণ আন্তর্জাতিক বাজারের বড় বড় পুজিঁপতি, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমুহ নিজ নিজ সরকারের মধ্যস্থতায় সাধারণত অনুন্নত এবং উন্নয়নশীল দেশগুলোকে এ ধরনের ঋণ দেয়। এসব ঋনের অংক সাধারণত বড় হয় এবং কোন কোন ক্ষেত্রে তা হাজার কোটি টাকারও অধিক হয়। এরূপ ঋণে সুদের হার স্বাভাবিকভাবে ৬% থেকে ১০% পর্যন্ত হয়ে থাকে। সারা দুনিয়ার ওপর এ ধরনের সুদী ঋণের প্রভাব অত্যন্ত মারাত্মক হয়ে দেখা দেয়। ইতোপূর্বে সুদের যেসব ক্ষতিকর দিক তুলে ধরা হয়েছে আন্তর্জাতিক ঋণের ক্ষেত্রে সুদের লেনদেন সেসব কুফলকে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দিয়েছে। তাছাড়া আন্তর্জাতিক ঋণ আরও এমন কিছু বিরূপ প্রিতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে, যা অধিকতর মারাত্মক। নিম্নে সুদের এসব আন্তর্জাতিক ক্ষতির কিছু পেশ করা হলোঃ
১. সুদ বৈদেশিক ঋণ পরিশোধে সমস্যা সৃষ্টি করে
উৎপাদনের উদ্দেশ্য ছাড়াও অন্যান্য আরও অনেক কারণে বিদেশ থেকে ঋন নেওয়া হয়ে থাকে। অন্যান্য যেসব কারণে বৈদেশিক ঋণ গ্রহণ করা হয় তন্মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি কারণ হচ্ছেঃ
১) সংকট মোকাবিলাঃ দেশে কোন অস্বাভাবিক সংকট সৃষ্টি হলে এবং সে সংকট মুকাবিলার জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ দেশের বেতর থেকে সংগ্রহ করা সম্ভব না হলে সরকারকে বাধ্য হয়ে অন্য দেশ থেকে ঋণ গ্রহণ করতে হয়। এ ধরনের ঋণের অর্থ সংকট মুকাবিলা করতেই ব্যয় হয়ে যায়।। এ অর্থের দ্বারা বাড়তি কোন উৎপাদন হয় না। ফলে এরূপ ঋণের আসল অর্থ পরিশোধ করতে হলেও জনগণের ওপর বাড়তি কর ধার্য করতে হয়। এরপর আবার সুদ দিতে হলে তা জনগণের ওপর অতিরিক্ত বোঝা হয়ে দাঁড়াতে বাধ্য।
২) অত্যাবশ্যকীয় পণ্য ক্রয়ঃ দ্বিতীয়ত, জনগণের নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য, খাদ্য, বস্ত্র, ওষুধ, ইত্যাদির ঘাটতি থাকলে এবং এসব দ্রব্য আমদানির জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ অভ্যন্তরীণভাবে যোগান দেয়া সম্ভব না হলে সরকারকে বহির্বিশ্ব থেকে ঋণ গ্রহণের মাধ্যমে এসব পণ্য আমদানি করে জনগণের চাহিদা পূরণ করতে হয়। এই সব কাণে গৃহীত ঋণের অর্থ ভোগের কাজে ব্যয় করা হয় এবং এর দ্বারা কোন পণ্য উৎপাদন করা যায় না। ফলে এ ঋণের আসল ও সুদ এর আয় থেকে পরিশোধ করার কোন প্রশ্নই আসে না। সুতরাং এ ঋণের সাকুল্য সুদ এ আসল জনগণের ওপরই বোঝা হয়।
৩) প্রতিরক্ষা ব্যয় সংকুলানঃ দেশের প্রতিরক্ষার জন্য অথবা প্রতিবেশি রাষ্ট্রের সাথে অস্ত্র প্রতিযোগিতায় এগিয়ে থাকার উদ্দেশ্যেও অনেক সময় বিদেশে থেকে ঋণ গ্রহণ করা হয়। এ অর্থের দ্বারা সম্পদের উৎপাদন বাড়ে না অথচ তার আসল ও সুদ জনগণের ওপর বোঝা হয়ে চেপে বসে।
৪) রাজনৈতিক কারণেঃ অনেক সময় জনসমর্থনহীন সরকারকে ক্ষমতায় টিকে থাকার উদ্দেশ্যে এমন সব খাতে বিপুল অর্থ ব্যয় করতে হয়, যা অভ্যন্তরীণভাবে যোগাড় করা সম্ভব নয়। এ অবস্থায় সরকারকে বিদেশের কাছে হাত বাড়াতে হয়। আর এ সকার টিকে থাকলে বিদেশীদের স্বার্থ উদ্ধার হবে, এ কারণে তারা এরূপ সরকারকে দেদার ঋণ দিয়ে থাকে। এসব ঋণও উৎপাদন বাড়ায় না, কিন্তু সুদে-আসলে জনগণের ওপর অতিরিক্ত বোঝা চাপিয়ে দেয়।
৫) বিনিয়োগ করার জন্যঃ সরকারকে অনেক সময় দেশের উৎপাদন বাড়ানো জন্য প্রয়োজনীয় পুজিঁ সরবারাহের উদ্দেশ্যেও ঋণ গ্রহণ করতে হয়। এক্ষেত্রে যেহেতু ঋণের অর্থ উৎপাদনশীল কাজে খাটানো হয়, সেহেতু এর আয় থেকে আসল ও সুদ পরিশোধ করতে পারাই স্বাভাবিক। কিন্তু অনুন্নত দেশসমূহের এই আশা সফল হচ্ছে না; বরং দরিদ্রৃ দেশগুলো ক্রমে দরিদ্রতর হচ্ছে এবং তাদের বিদেশী ঋণের পরিমাণ ক্রমেই বেড়ে চলেছে। এর প্রধান কারণ হচ্ছে সুদ।
বস্তুতঃ অনুন্নত বিশ্বের উন্নয়নের পথে সুদ এক দুরূহ বাধা হয়ে দাড়িয়েঁ আছে।ঋণের ওপর উচ্চহারে সুদ দিতে হয় বলে বহু অনুন্নত দেশ বিদেশী ঋণ ব্যবহার করে লাভবান হতে পাছে না; বিদেশী ঋণ অনুন্নত দেশসমূহের উন্নয়নে সহায়ক হচ্ছে না। ঋণ পরিশোধের সমস্যা আজ সব অনুন্নত দেশের জন্য মহাসমস্যা হয়ে দাড়িয়েঁছে। পূর্বের ঋণ পরিশোধের জন্য নতুন ঋণে জড়াতে হচ্ছে; এই নতুন ঋণ আবার সুদ আসলে আগের ঋণকে ছাড়িয়ে যাচ্ছে। দেশের উন্নয়ন ছাড়াই ঋণের বোঝা বেড়ে চলেছে। সত্য বলতে গেলে এ কথাই বলতে হয় যে, এসব ঋণগ্রহীতা দেশ তাদের প্রকৃত স্বার্থ হাসিলে ব্যর্থ হচ্ছে। তাছাড়া ধনী দেশগুলো যখন দরিদ্র দেশকে কোন ঋণ দেয়, তখন তারা নিজের কিছু শর্তও আরোপ করে থাকে। এসব শর্ত গ্রহীতা নয়, বরং দাতা দেশের স্বার্থেই আরোপ করা হয়। ঋণের ব্যবহার, প্রযুক্তি আমদানি, প্রযুক্তি নির্বাটন ইত্যাদি অনেক ব্যাপারে দাতা দেশের শর্ত মেনে চলার জন্য ঋণগ্রহীতা দেশরক বাধ্য করা হয়, যা দাতা দেশগুলোর স্বার্থই রক্ষা করে থাকে।
সুদ অনুপস্থিত হলে বা সুদ রহিত করে মুনাফার অংশের ভিত্তিতে বৈদেশিক ঋণের লেনদেন চালু হলে, অবস্থা অবশ্যই ভিন্নরূপ হবে। প্রথমতঃ ঋণগ্রহীতা দেশ প্রকৃত উৎপাদনশীল কাজে ঋণের অর্থ খাটিয়ে যত বেশি উৎপাদন বৃদ্ধি ও লাভ করতে পারবে তার অংশ ঋণদাতা দেশকে দেবে। এতে তার কোন বাড়তি বোঝা টানার দরকার হবে না। তাছাড়া কোন বিশেষ কারণে যদি লোকসান হয় এবং ঋণের অর্থের সম্পূর্ণ বা আংশিকভাবে ক্ষতি হয়, তাহলেও গ্রহীতার ওপর ক্ষতির আনুপাতিক অংশই বর্তাবে; গোটা ঋণের আসলসহ সুদ পরিশোধ করার বোঝা তাকে বহণ করতে হবে না।
অপরদিকে দাতা দেশও যথেষ্ট যাচাই-বাছাই করে প্রকৃত উৎপাদনশীল ও লাভজনক খাতে পুজিঁ দেব। একদিকে ক্ষতির আশংকা এবং অন্যদিকে উৎপাদন বেশি হলে লাভ বেশি পাওয়ার সম্ভাবনা এ অবস্থায় তারা উৎপাদন যাতে বাড়ে এবং ক্ষতি যাতে এড়ানো যায়, তার জন্য সচেষ্ট থাকবে। এভাবে উভয় পক্ষ কাজের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত প্রয়োজনীয় তদারকী ও সতর্কতা অবলম্বন করার ফলে উৎপাদন বেশি হবে। দরিদ্র দেশের উন্নয়ন দ্রুততর হতে থাকবে; ঋণদাতা দেশও বেশি লাভ পেয়ে উপকৃত হবে।
২. সুদ ঋণ–দাসত্ব প্রথার জন্ম দেয়
সুদ অনুন্নত ও দরিদ্র দেশগুলোকে চিরদিন ধনী দেশগুলোর মুখাপেক্ষী হয়ে থাকতে বাধ্য করে। দরিদ্র দেশগুলো খুব কমই নিজের পায়ে দাড়ানোর শক্তি ও সাহস পায়। যে দেশ একবার সুদী ঋণের বোঝা ঘাড়ে তুলে নেয়, তার পক্ষে এ বোঝা নামিয়ে সোজা হয়ে দাঁড়ানো আর কখনও সম্ভব হয় না। নতুন উৎপাদনের জন্য না হলেও পুরাতন ঋণ পরিশোধের প্রয়েূাজনে তাকে ধনী দেশগুলোর কাছে যেতেই হয় এবং তাদের জুড়ে দেওয়া জোয়াল কাঁধে বয়ে অবশ্যই চলতে হয় এবং যতই দিন যায় এ বোঝা ততই ভারী হতে থাকে। এ সম্পর্কে বিচারপতি তকি উসমানী তার রায়ে যে তথ্য পরিবেশন কারেছেন এখানে তা উদ্ধৃত করা হলো[উসমানী, মুহাম্মদ তকি: পূর্বোক্ত, পৃঃ ১১৮-১২২।]:
অর্থনীতিতে বিশেষজ্ঞ না হয়েও পরিস্থিতির নাজুকতা উপলদ্ধি করতে অসুবিধা হয় না যে, প্রতিনিয়ত আমরা গোটা জাতিকে বিদেশী ঋণদাতাদের দাসত্বের অধীনে ঠেলে দিচ্ছি। প্রতিবছর আমরা বড় বড় অংকের ঋণ করছি; আর এভাবে আমাদের বর্তমান ও পরবর্তী প্রজন্মের অনাগত ভবিষ্যৎ ঋণের কাছে বাঁধা (Mortgage) বাখছি। ধারণা করা হয় যে, বৈদেশিক ঋণ উন্নয়নশীল দেশের উন্নয়ন প্রকল্পে ব্যবহৃত হয় এবং এসব দেশের উন্নয়ন ও সমৃদ্ধি অর্জনে সহায়তা করে। কিন্তু তৃতীয় বিশ্বের বহু দেশের ক্ষেত্রে এ ধারণা অসত্য প্রমাণিত হয়েছে। স্বাধীন ও নিরপেক্ষ অর্থনীতিবদদের অনেকেই এ সত্য আজ মর্মে মর্মে উপলব্ধি করছেন। সুসান জর্জ একজন মার্কিন অর্থনীতিবিদ। তৃতীয় বিশ্বের ঋণের ফলাফলের ব্যাপারে তিনি বিশ্ববাসীর চোখ খুলে দিয়েছেন। এই ফলাফলের যে চিত্র তিনি তুলে ধরেছেন তার সারসংক্ষেপ পেশ করা হলো:
অর্থনৈতিক সহযোগিদা ও উন্নয়ন সংস্থা (OECD)-র মতে ১৯৮২ হতে ১৯৯০ সময়কালের মধ্যে উন্নয়নশীল দেশসমূহের প্রতি মোট সম্পদ প্রবাহের পরিমাণ ছিল ৯২৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এই সম্পদের মধ্যে ছিল ওইসিডি-এর বিভিন্ন শ্রেণীর অফিসিয়াল উন্নয়ন ফাইন্যান্স, রফতানি ঋণ ও বেসরকারী অর্থ প্রবাহ; অন্য কথায় যাবতীয় অফিসিয়াল দ্বি-পাক্ষিক ও বহুপক্ষীয় (bilateral and multilateral) সাহায্য, বেসরকারী দাতব্য অনুদান, বাণিজ্যিক ঋণ ও সরকারি বেসরকারী বিনিয়োগ এবং ব্যাংক ঋণ। এই সম্পদের বেশির ভাগই ছিল ঋণ, সাহায্য বা অনুদানা নয়; স্বাভাবিকভাবেই এ ঋণের ওপর ভবিষ্যতে লভ্যাংশ (Dividend) বা সুদ পাওনা হবে।
সম্পদ প্রবাহের প্রকৃত চিত্র (true picture) পেতে হলে, দক্ষিণ থেকে উত্তরে প্রবাহিত আরও অনেক কিছু যোগ করতে হবে। যেমন, রয়ালটি, লভ্যাংশ, প্রত্যাবর্তিত মুনাফা (repatriated profit), কাঁচামালের জন্য যথোচিত দামের পরিবর্তে কম দাম দেওয়া ইত্যাদি অনুরূপ আরও অনেক বিষয়। উন্নয়নশীল দেশসমূহের প্রদত্ত সম্পদ ১৩৪৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং তাদের প্রাপ্ত সম্পদ ৯২৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের মধ্যে বিত্তশালী দেশসমূহের অনুকূলে উদ্বৃত্তের পরিমাণ হচ্ছে ৪১৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। তুলনা করার জন্য, যুক্তরাষ্টের মার্শাল প্ল্যান ১৯৪৮ সালে যুদ্ধ বিধ্বস্ত ইউরোপে হস্তান্তর করেছে ১৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং ১৯৯১ সালে ৭০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এভাবে ১৯৮২-৯০ এর আট বছরে দরিদ্র দেশগুলো কেবল তাদের ঋণ পরিশোধের (debt servicing)মাধ্যমে ধনীদের জন্য ছয়টি মার্শাল প্ল্যানের অর্থ যোগান দিয়েছে।
এই অস্বাভাবিক (extraordinary) অধিক পারিমাণ অর্থ ফেরত প্রদান সত্ত্বেও উন্নয়নশীল দেশগুলোর মোট ঋণের বোঝা কি বিন্দুমাত্রও হ্রাস পেয়েছে? দুর্ভাগ্য যে তো হয়নি। বরং ঋণগ্রহীতা দেশগুলো ১৯৮২ সালের তুলনায় শতকরা পূর্ণ ৬১ ভাগ অধিক ঋণের বোঝা মাথায় নিয়ে ১৯৯০ দশকের যাত্রা শুরু করেছে। এ সময় সাব-সাহারান আফ্রিকার ঋণের পরিমাণ বেড়েছে ১১৩%; আর অতি দরিদ্র, তথাকথিত এলডিসি বা স্বল্পোন্নত দেশসমূহের ঋণের বোঝা বৃদ্ধি পেয়েছে শতকরা ১১০ ভাগ।
নিরপেক্ষ অনেক লেখকের অভিমত হচ্ছে যে, তৃতীয় বিশ্বের ঋণের বিষয়টি কেবল আর্থিক বিষয় নয়; বরং এগুলো হচ্ছে রাজনৈতিক। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (IMF) ও বিশ্ব ব্যাংকের (WB) ঋণ সর্বদাই কঠোর শর্ত সম্বলিত হয়ে থাকে। ‘প্রকল্প সহায়তা’ (Program aid) ঋণের ক্ষেত্রে যদিও ঋণগ্রহীতা দেশকে ঋণের অর্থ উন্নয়নমূলক কাজে ব্যবহার করার নিশ্চয়তা বিধান করার লক্ষ্যে আরোপিত কতিপয় অর্থনৈতিক ও সামাজিক ব্যয় কর্মসূচী গ্রহণের শর্তে (package) সম্মত হতে হয়, তবু প্রকল্প যখন ব্যর্থ হয় এবং ঋণের পরিমাণ বে[ যায় তখন প্রকল্প সহায়তা ঋণকে ‘কাঠামোগত সংস্কার (Structural Adjustment) ঋণে’ রূপান্তর করা হয়। আর এতে ঋণবদ্ধ তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোর অব্যন্তরীণ ণীতিতে হস্তক্ষেপ করার পূর্ণ অধিকারের বৈধতা প্রতিপাদন করে নিয়েছে। এতদসত্ত্বেও এসব নীতিমালা ও কর্মসূচী যখন ঋণের গতি পরিবর্তনে ব্যর্থ হয় তখন ‘কৃচ্ছ্রতা কর্মসূচি’র (Austerity Programs) আশ্রয় নেয়া হয় এবং সমাজ সেবা, সমাজ কল্যাণ ও শিক্ষাখাতের ব্যয়কে ব্যাপকভাবে হ্রাস করে দেওয়া হয়। সুসান জর্জ এবং ফ্যাব্রিযিও স্যাবেলী এই কর্মসূচী ও নীতিমালার ফলাফল সম্পর্কে মন্তব্য করেছেন যে,
১৯৮০ থেকে ১৯৮৯ সময়কালে আফ্রিকার তেত্রিশটি দেশ মোট ২৪১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ঋণ গ্রহণ করেছিল। কিনউ একই সময়ে দেশগুলোর মাথা পিছু মোট জাতীয় উৎপাদন বার্ষিক ২.১% হ্রাস পেয়েছে। মাথা পিছু খাদ্য উৎপাদন হ্রাসের গতি ছিল আরও বেশি হারে। সারকারী ব্যয়ের পারিমাণ ১১ বিলিয়ন মার্কিণ ডলার থেকে নেমে আসে ৭ বিলিয়নে; প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভর্তির হার ১৯৮০ সালে ৮০% থেকে ১৯৯০ সালে ৬৯%- এ কমে আসে; এসব দেশে দরিদ্র লোকের সংখ্যা ১৯৮৫ সালে ১৮৪ মিলিয়ন থেকে বৃদ্ধি পেেয় ১৯৯০ সালে ২১৬ মিলিয়িনে উন্নীত হয়।
খোদ বিশ্বব্যাংকের নিজস্ব মূল্যায়ন অনুসারে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে গৃহীত প্রকল্পসমূহের সাফল্যের হার ৫০%-এরও কম, যদিও এ হিসাবের ব্যাপারে বিশিষ্ট কয়েকজন অর্থনীতিবিদ ঘোরতর সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। এরপরেও, ১৯৮৯ সালে কৃত পর্যালোচনায় বিশ্ব ব্যাংকের কর্মকর্তাগণ এমন একটি প্রকল্পেরও উল্লেখ করতে পারেননি যেখানে প্রকল্পের প্রয়োজনে বাস্তুচ্যুত লোকদের জন্য পুনরায় বসতি স্থাপন করা হয়েছে এবং তাদের এমনভাবে পুনর্বাসিত করা হয়েছে যাতে বাস্তুচ্যুত হওয়ার পূর্বে তাদের জীবনযাত্রার যে মান ছিল কমপক্ষে সে মানে জীবনযাপন করার সুযোগ তারা আবার পেয়েছে।
এমনকি, যেসব প্রকল্পকে সফল বলে বলা হয়েছে, সে প্রকল্পগুলোও ঋণগ্রস্ত দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক কল্যাণ সাধেনে অবদান রাখতে কদাচিৎ সক্ষম হয়েছে। সে ব্যাপারে মাইকেল রোবোথাম লিখেছেন: “তৃতীয় বিশ্বের ঋণের ওপর এত বেশি লেখালেখি হয়েছে যে, এ বিষয়ে সাহিত্যের সয়লাব সৃষ্টি করা হয়েছে। এসব গ্রন্হ একটা সাধারণ বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত হয়ে আছে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল ও বিশ্বব্যাংকের যাবতীয় যুক্তি ও নীতিমালাকে বাহ্যত যুক্তিসংগত তত্ত্বের এপরই ভিত্তিশীল করা হয়েছে; কিন্তু এসব স্টাডিতে ঘটনার পার ঘটনা, দেশের পর দেশের নজীর তুলে ধরে দেখানো হয়েছে যে, বাস্তবে এ তত্ত্ব কাজ করছে না। কোথাও দেখা যাচ্ছে ঋণের দ্বারা উন্নয়ন সাধিত হয়েছে ঠিক, কিন্তু তা ঋণ পরিশোধকে অসম্ভব প্রমাণিত করেছে; কোথাও অর্থায়নকৃত প্রকল্পটি সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে এবং সংশ্লিষ্ট দেশটি বিরাট ঋণের তলায় নিমজ্জিত হয়ে পড়েছে, যা পরিশোধ করার আর কোন আশাই অবশিষ্ট নেই; কোথাও আবার পূর্ববর্তী ঋণ পরিশোধ করার জন্য বারবার নতুন ঋণ গ্রহণ করা জরুরী হয়ে পড়েছে।
অনেক সমালোচক তৃতীঁ বিশ্বের ঋণকে ভূমিদাস প্রথা (Peonage) বা মজুরী দাস প্রথার (Wage Slavery) সাথে তুলনা করেছেন। চেরিল পেয়ার ও বিষয়ে যে মন্তব্য করেছেন তা হলো:
এই ব্যবস্থার (বর্তমান আন্তর্জাতিক ঋণ ব্যবস্থা) এক একটি দফার সাথে ব্যক্তি পর্যায়ে ভূমিদাস প্রথার তুলনা করা যেতে পারে। ভূমিদাস প্রথা বা ঋণ দাসত্ব পদ্ধতিতে……….. নিয়োগকর্তা/ঋণদাতা/ব্যবসায়ীদের সমানে কখনও এ উদ্দেশ্য থাকত না যে, ঋণগ্রহীতার কাছ থেকে সম্পূর্ণ পাওনা ঋণ একেবারে উসূল করে ফেলবে; আবার ঋণগ্রহীতা খেতে না পেয়ে মরে যাক সেটাও তারা চাইত না; বরং তাদের আসল উদ্দেশ্য ছিল তাদের প্রদ্ত্ত ঋণের মধ্যমৈ মজুরদেরকে চিরকালের জন্য নিয়োগকারীর ঋণের দায়ে আবদ্ধ করে রাখা……..। যথাযথ অর্থে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে এ ব্যবস্থা চলছে,,,,। বস্তুত এটা হচ্ছে আন্তর্জাতিক ঋণ-দাসত্ব প্রথা। এই ব্যবস্থার অধীনে থাকলে ঋণগ্রস্ত দেশগুলো চিরকাল অনুন্নত থেকে যাবে অথবা তারা যদি উন্নয়নের মুখ কখনও দেখেও তাহলে তা হবে কেবল তাদের রফতানি খাতে যা হবে বহুজাতিক উদ্যোক্তাদের সেবায় নিয়োজিত। নিজ দেশের জনগণের প্রয়োজন পূরণে বাঞ্ছিত উন্নয়নের বিনিময়েই এ উন্নয়ন কিনতে হবে।
১৯৮৭ সালে ইন্সটিটিউট ফর আফ্রিকান অলটারনেটিভ-এর সম্মেলনে বিশ্বব্যাংক ও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের বিলুপ্তি দাবী করা হয়; তারা ব্রেটন উড আন্তর্জাতিক মুদ্রা পদ্ধতির প্রাধান্যেরও পূর্ণ অবসান দাবী করে। কনফারেন্সে কেইজ স্টাডির ফলাফল সম্পর্কে যা উল্লেখ করা হয়েছে তা হলো:
ফলত সকল ক্ষেত্রেই এসব (আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল এবং বিশ্বব্যাংক) প্রকল্পের মৌলিক প্রভাব হচ্ছে নেতিবাচক। ব্যাপক বেকারত্ব, প্রকৃত আয়-হ্রাস, মারাত্মক মুদ্রাস্ফীতি, অতিরিক্ত আমদানি, অব্যাহত বাণিজ্য ঘাটতি, নীট পুজিঁর বহির্গমন, বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ বৃদ্ধি, মৌলিক অধিকার লঙ্ঘন, কঠোর দুর্দশা এবং শিল্পায়ন ব্যাহত করা (deindustrialization) এ সবই হচ্ছে এর অশুভ ফল। এমনকি, ঘানা ও আইভরি কোস্ট সম্র্কে তথাকথিত সাফল্যের যে কাহিনী বলঅ হয়েছে তাও স্থায়ী সাফল্য হতে পারেনি; বরং সামরিক উপশম ছাড়া তা আর কিছুই দিতে পারেনি। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কৃষি, শিল্প (Manufacturing) এবং সমাজ সেবা খাতসমূহ, আর ঋণ সমন্বয়ের (Adjustment) যাবতীয় বোঝা প্রত্যাবর্তিত হয়ে গিয়ে পড়েছে দরিদ্র ও দুর্বল শ্রেণীর ওপর।
তৃতীঁ বিশ্বের দেশসমূহ বিদেশী ঋণ ছাড়া বেঁচে থাকতে পারে না- এই মোহাচ্ছন্ন ধারণার ভ্রান্তি উপলব্ধি করার জন্য উল্লেখিত তথ্যাবলীই যথেষ্ট হওয়া উচিত। আসলে এই ব্যবস্থার মাধ্যমে কারা লাভবান হচ্ছে? একজন কানাডীঁ স্কলার, জ্যাকস বি. গেলিনাস অত্যন্ত গভীরভাবে এ প্রশ্নের উত্তর খুজেঁছেন এবং পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছেন। ‘ফ্রিডম ফ্রম ডেবট’ নামক গ্রন্হে তিনি এ বিষয়ে বি্স্তারিত আলোচনা করেছেন। তিনি বলেছেনঃ
বিদেশী ঋণনির্ভর উন্নয়ন মডেল কোন একটি দেশকেও অর্থনৈতিক ও আর্থিক ক্ষেত্রে পরনির্ভরশীলতা থেকে বের করে আনায় নিজেকে সম্পূর্ণ অক্ষম বলে প্রমাণ করেছে। তবে এ মডেল তৃতীঁ বিশ্বের কতিপয় সম্ভ্রান্ত লোকের জন্য অবিশ্বাস্য রকমের সম্পদ অর্জনের উৎসে পরিণত হয়েছে; ফলে এখানে নব্য এক শক্তি এবং সামাজিক রাজনৈতিক শ্রেণীর উত্থান ঘটেছে যাকে যথার্থ অর্থে সাহায্যতন্ত্র (Aidocracy) নামকরণ করা যেতে পারে।
৩. সুদ দাতা দেশের স্বার্থ হাসিল করে
বিশ্বের শিল্পোন্নত ধনী দেশগুলোই দরিদ্র ও উন্নয়নশীল দেশকে ঋণ দেয়। এই ঋণ বরাদ্দ ও বিতরণ ক্ষেত্রে প্রধান মানদণ্ড হচ্ছে, তাদের শিল্পের জন্য কাঁচামালপ্রাপ্তির নিশ্বচয়তা বিধান এবং শিল্পপণ্য রফতানীর জন্য বাজার ঠিক রাখা ও নতুন বাজার সৃষ্টি করা। এরা এমন কৌশল ও শর্ত আরোপ করে যাতে ঋণগ্রহীতা দেশ স্বাবলম্বী হওয়ার পরিবর্তে ক্রমে ঋণদাতাদের ওপর আরও বেশি নির্ভরশীল হতে বাধ্য হয় এবং দাতা দেশ যেন অধিক স্বার্থ হাসিল করতে সক্ষম হয়। উদাহরণ স্বরূপ সমরস্ত্রের কথা উল্লেখ করা যেতে পারে। উন্নত দেশসমূহ প্রতিবছল বিপুল পরিমাণ অস্ত্রশস্ত্র ও গোলাবারুদ তৈরী করে। এসব পণ্যের বিক্রয় নিশ্চিত করা জরুরী। তাই কোন অনুন্নত দেশ অস্ত্র তৈরীতে স্বয়ংসম্পূর্ণ হোক সে জন্য কোন ঋণ উন্নত দেশগুলো দেয় না, বরং তাদের বরাদ্দকৃত ঋণের এক বিরাট অংশ অস্ত্র আকারে দিয়ে থাকে। এ বিষয়ে আরও চমকপ্রদ উদাহরণ দেয়া যেতে পরে; বাংলাদেশের কথাই ধরা যাক। এদেশে জনসংখ্যা খুবই বেশি এবং শতকরা ৮০ জনই অশিক্ষিত ও অদক্ষ। এই বিরাট জনসমষ্টিকে বিভিন্ন ধরনের উন্নয়নমুখী শিক্ষা দিয়ে দক্ষ করে তুলতে পারলে এরা জনশক্তিতে পরিণত হতে পারে এবং এভাবে দেশটির পক্ষে স্বাবলম্বী হয়ে উঠে অসম্ভব নয়। কিন্তু উন্নত দেশগুলো এদেশের জনসংখ্যাকে দক্ষ করে তোলার জন্য ঋণ দেয় খুব কমই; বরং তারা কোটি কোটি টাকার মঞ্জুরী দেয় জনসংখ্যা হ্রাস করার জন্য যার এক বিরাট অংশ আবার তাদের দেশে উৎপাদিত জন্মনিয়ন্ত্রণ উপকরণ বিক্রয় করে বিরাট লাভ নিয়ে যায়। প্রকৃতপক্ষে ও বিপুল অর্থ মানব সম্পদের উন্নয়ন কাজে ব্যবহার করা হলে দেশের অবস্থা বর্তমানের তুলনায় উন্নততর হতো কিনা, তা অবশ্যই মূল্যায়নের দাবী রাখে। এমনিভাবে বৈদেশিক সুদী ঋণ আসলে দাতা দেশসমূহের স্বার্থই হাসিল করে, গ্রহীতা দেশের উপকার এর দ্বারা খুব স্বল্পই হয়।
৪. সুদ সরকারের অপ্রয়োজনীয় ব্যয় ও বিলাসিতা বাড়িয়ে দেয়
বর্তমান দুনিয়ায় সুদসহ ঋণ পরিশোধেল প্রতিশ্রুতি দিলেই ঋণ পাওয়া যায়। ঋণের অর্থ কি কাজে ব্যবহার করা হবে এবং এর দ্বারা প্রকৃতপক্ষে কোন সম্পদ উৎপাদন করা হবে কিনা, ঋণদাতা দেশ বা সংস্থা তা খতিয়ে দেখার প্রয়োজন বোধ করে না। ফলে দরিদ্র দেশগুলো অনেক সময় তাদের ক্ষমতার অতিরিক্ত ঋণ গ্রহণ এবং ঋণের অর্থ অপ্রয়োজনীয় এবং বিলাসিতামূলক কাজে ব্যবহার করে থাকে। তারা আয় বুঝে ব্যয় করার পরিবর্তে অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে জীবনযাত্রার মান বাড়িয়ে তোলে। মিতব্যয়িতা, সঞ্চয় এবং পরিশ্রমের পথ পরিহার করে সহজ ও বলাসী জীবনযাপনে অভ্যস্ত হয়ে উঠে। আধুনিক বিশ্বে আন্তর্জাতিক ঋণ-ব্যবস্থা দরিদ্র দেশগুলোর মধ্যে ঋণ করার প্রবণতা সৃষ্টি করে। এই ব্যবস্থা অপরিণামদর্শী এবং স্বার্থান্বেষী রাজনীতিকদের ঋণ গ্রহণের সুযোগ করে দেয়। বস্তুতঃ সুদ ভিত্তিক ঋণ-ব্যবস্থার কারণেউ কোন কোন দেশ বিপুল ঋণের বোঝা ঘাড়ে নিয়ে আবার ঋণ গ্রহণ করতে পারে; পুরাতন ঋণ পরিশোধের জন্য নতুন ঋণ নেয় এবং ঋণ পরিশোধেল তারিখ বারবার পিছেয়ে বছরের পর বছর সুদসহ ঋণের বর্ধিত বোঝা বহন করে চলে।
সুদ বিলোপ করা হলে সুদ ও আসল ফেরত দানের প্রতিশ্রুতিতে ঋণ পাওয়া যাবে না। এ অবস্থায় ধনী দেশ কর্তৃক দরিদ্র দেশকে আর্থিক সহযোগিতা দানের জন্য দুটো পথই কেবল খোলা থাকবে; প্রথমত, সরাসরি সাহায্য প্রদান করা (Transfer payment) এবং দ্বিতীয়ত, লাভ-ক্ষতির অংশীদারীর ভিত্তিতে দরিদ্র দেশের উৎপাদনশীল কাজে অংশগ্রহণ করা। এ অব্স্থায় অনুৎপাদনশীল কাজে ব্যবহার বা অপ্রয়োজনীয় এবং বিলাসিতামূলক কাজে ব্যয় করার জন্য অর্থ পাওয়া যাবে না। দরিদ্র দেশের অনুৎপাদনশীল ও বিলাসিতামূলক কাজে ব্যয় হ্রাস পাবে এবং এ উদ্দেশ্যে কৃত ঋণের বোঝাপ কমে যাবে।
৫. সুদ আন্তর্জাতিক শোষণ ও বৈষম্য সৃষ্টি করে
দেশের ভেতরে সুদ যেমন অধিকাংশ মানুয়কে শোষণ এবং কতিপয় পুজিঁপতির হাতে সম্পদ কুক্ষিগত করার মাধ্যমে বৈষম্য সৃষ্টি করে, আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রেও তেমনি সুদ ঋণগ্রহীতা দেশগুলোকে শোষণ করে বিশ্বের প্রায় সব সম্পদ দাতাদেশ সমূহে এনে পুঞ্জীভূত করে দেয়। ইতোপূর্বে দেখানো হয়েছে যে, প্রতিবছর দেশের বর্তমান সম্পদের একটা অংশ সুদ আকারে ধনী ঋণদাতা দেশের কাছে হস্তান্তরিত হয়ে দেশের সম্পদ হ্রাস করে এবং ধনী দেশের সম্পদ আরও বাড়িয়ে দেয়। ব্স্তত বর্তমান বিশ্বে ধনী দেশগুলোর ক্রমে আরও ধনী হয়ে উঠা এবং দরিদ্র দেশসমূহ আরও দরিদ্র হওয়ার প্রধান কারণ সুদ। ড. নাজাতুল্লাহ সিদ্দিকী লিখেছেন, “The regime of interst has been a major factov responsible for the worseninig distribution of income and wealth within and between nations.” [ড. মুহাম্মদ নাজাতুল্লাহ সিদ্দিকী, ইস্যুজ ইন ইসলামিক ব্যাংকিং, সিলেকটেড পেপারস, দি ইসলামিক ফাউন্ডেশন, ইউ, কে, ১৯৮৩, পৃঃ ৮২।]