মানবীয় ত্রুটি-বিচ্যুতি
মানবীয় প্রকৃতির চাহিদা এবং তাহার মানবিক প্রবণতা ও শারীরিক গঠনের যাবতীয় নিদর্শনাদির প্রতি লক্ষ রাখিয়া একটা সুষ্ঠ তামাদ্দুনিক ব্যবস্থা প্রণয়ন করিতে হইলে নর-নারী সম্পর্কে তথা যৌন সম্পর্কের দিক দিয়া তাহার মূলনীতি ও শর্তাবলী কি কি হওয়া বাঞ্ছনীয়, এতদসম্পর্কে ইতিপূর্বে নিরেট জ্ঞানগর্ভ আলোচনা ও বৈজ্ঞানিক পরিক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে প্রমাণ করিবার চেষ্টা কর হইয়াছে। এতদ্সম্পর্কিত আলোচনায় যাহা কিছু বলা হইয়াছে তাহা দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বলা হইয়াছে এবং ইহাতে কোনরূপ দ্বিরুতক্তিরও অবকাশ নাই। আলোচিত বিষয়গুলি জ্ঞান-বিজ্ঞানের দিক দিয়া অত্যন্ত সুস্পষ্ট ও সাধারণত সকল সুধীবৃন্দ এ সম্পর্কে পূণ অবহিত আছেন। কিন্তু মানবীয় দুর্বলতার চরম পরাকাষ্ঠা এই যে যত প্রকার তামাদ্দুনিক ব্যবস্থা মানুষ প্রচেষ্টায় প্রণয়ন করিয়াছে, তাহা কোন একটিতেও প্রকৃতির এই সকল সুস্পষ্ট ও ন্যায়সংগত উপদেশ পরিপূর্ণ ও সুসমঞ্ছসরূপে সন্নিবেশিত করা হয় নাই। মানুষ যে তাহার প্রাকৃতিক চাহিদা সম্পর্কে অজ্ঞ নহে, ইহাও তো সুস্পষ্ট। স্বীয় মানসিক অবস্থা ও শারীরিক বৈশিষ্ট্য তাহার অজানা নাই। কিন্তু এতদ্সত্ত্বেও ইহাও অত্যন্ত সুস্পষ্ট যে, সে এ যাবত এমন কোন সুসমঞ্জস তামাদ্দুনিক ব্যবস্থা প্রণয়ন করিতে সমর্থ হয় নাই,যাহার মূলনীতির মধ্যে এই সকল দাবি, বৈশিষ্ট্য, তাৎপর্য ও উদ্দেশ্য সুসমঞ্জসরূপে সন্নিবেশিত করা হইয়াছে।
নৈরাশ্যের প্রকৃত কারণ
নৈরাশ্যের একমাত্র কারণ উহাই, যাহার প্রতি এই গ্রন্থের প্রারম্ভেই ইংগিত করা হইয়াছে। মানুষের ইহা একটি স্বাভাবিক দুর্বলতা যে, মানুষের দৃষ্টি কোন বিষয়ের সকল দিকে সামগ্রিকভাবে পতিত হয় না। সর্বদা যে কোন একটি তাহাকে আকৃষ্ট করে। অতপর যখন সে একদিকে ঝুঁকিয়া পড়ে, তখন অন্যদিকটি তাহার দৃষ্টির বহির্ভূত হইয়া পড়ে অথবা সে ইচ্ছা করিয়াই অপরদিকসমূহ উপেক্ষা করিয়া চলে; জীবনের ছোটখাট ও ব্যক্তিগত ব্যাপারে তো মানুষের দুর্বলতা সুস্পষ্ট হইয়া দেখা দেয়।
তাহযীব ও তমদ্দুনের সমস্য বহুবিধ ও ব্যাপকতর। এই সকল সম্যসার আবার অসংখ্য সুস্পষ্ট ও অস্পষ্ট দিক আছে। অতএব এই সকল সমস্যা মানুষের দুর্বলতার প্রভাব হইতে মুক্ত থাকিবে ইহা কি করিয়া সম্ভব?
মানুষকে তো অবশ্য জ্ঞান-বিবেক দান করা হইয়াছে। কিন্তু সাধারণত জীবন সমস্যা সমাধানে শুধু বিবেক তাহার সহায়ক হয় না। অনুরাগ ও ঝোঁকপ্রবণতা তাহাকে একমুখো করিয়া দেয় এবং যখন সে বিশেষ একটি দিকে চলিত থাকে, তখন সে তাহার সমর্থনে জ্ঞান-বিবেকের সাহায্য গ্রহণ করে। এমতাবস্থায় তাহার জ্ঞান যদি তাহাকে অন্যদিকে চালিত করিত চায় এবং বিবেক তাহার একমুখো মনোভাবের প্রতিবাদ করে, তবুও সে তাহার অপরাধ স্বীকার করে না, বরং আকাংক্ষা-অনুরাগের সপক্ষে যুক্তিতর্ক উদ্ভাবন করিতে সে তাহার জ্ঞন-বিবেককে বাধ্য করে।
কতিপয় সুস্পষ্ট দৃষ্টান্ত
বর্তমানকালে সমাজের যে সকল সমস্যা আমাদের আলোচনার বিষয়বস্তু, তাহার মধ্যে মানুষের এই একগুঁয়েমি, চরম বাড়াবাড়ি ও ন্যূনতার ভিতর দিয়া আত্মপ্রকাশ করিয়াছে।
একদল লোক নৈতিকতা ও আধ্যাত্মিকতার প্রতি অতিমাত্রায় ঝুঁকিয়া পড়িয়া নারী-পুরুষের যৌন-সম্পর্ককে একেবারে একটি ঘৃণার্হ কাজ মনে করিল। এই অসামঞ্জস্য আমরা বৌদ্ধ, খৃষ্ট ও হিন্দু ধর্মমতে দেখিতে পাই। আমরা দেখিতে পাই যে, ইহারই প্রভাবে পৃথিবীর একটি বিরাট অংশে, পরিবারের গণ্ডির মধ্যে হউক অথবা গণ্ডিবহির্ভূত হউক-এই যৌন-সম্পর্ককে গর্হিত কাজ মনে করা হয়। ইহার পরিণাম কি হইয়ছে?সন্নাসবাদের অপ্রাকৃতিক ও তমদ্দুনবিরোধী জীবনকে নৈতিকতা ও আত্মশুদ্ধির লক্ষ্য মনে করা হইয়াছে। মানব জাতির মধ্যে নারী-পুরুষের অনেকেই প্রকৃতির বিপরীত পথে, তথা প্রকৃতির বিরুদ্ধে সংগ্রামে তাহাদের মানসিক ও দৈহিক শক্তির অপচয় করিল। যাহারা প্রকৃতির দাবি অনুযায়ী পরস্পর মিলিত হইল, তাহারা এই মন লইয়া মিলিত হইল, যেন তাহারা বাধ্য হইইয়া একটা ঘৃণিত আবশ্যক পূরণ করিল। প্রকাশ থাকে যে, এই ধরনের সম্পর্ক স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে কোন প্রেম-ভালবাসা অথবা কোন সাহায্য-সহানুভূতির সঞ্চার করিতে পারে না।ইহা দ্বারা কোন সৎ ও কোন উন্নতিশীল তমদ্দুন কেবল জম্মলাভ করিতে পারে না ইহাই নহে, বরং তথাকথিত নৈথিক ধারণার ফলেই নারীর মর্যাদা ক্ষুন্ন হয়। সন্ন্যাসবাদের অন্ধ সমর্থকরা যৌন আকর্ষণকে একটা শয়তানী প্ররচণা এবং নারীকে ‘শ্বয়তানের দালাল’ নামে অভিহিত করিয়াছে। নারীকে তাহারা এইরূপ একটা অপবিত্র সত্তা ধরিয়া লইয়াছে এবং যে ব্যক্তি মনের পবিত্রতা কামনা করে তাহার পক্ষে উক্ত নারীকে ঘৃণা করা আবশ্যক হইয়া পড়ে। খৃস্ট, বৌদ্ধ ও হিন্দু সাহিত্যে নারী সম্পর্কে এই প্রকার ধারণা দেওয়া হইয়াছে এবং এই ধারণা ও মতবাদের ভিত্তিতে যে সমাজ ব্যবস্থা প্রতিষ্টিত হইবে তাহাতে নারীর মর্যাদা কি হইতে পারে তাহা সহজেই অনুমেয়।
ঠিক ইহার বিপরীত আর একদল আছে, যাহারা দৈহিক চাহিদার পক্ষপাতী এবং এ ব্যাপারে তাহারা এতদুর অগ্রসর হইয়াছে যে, মানব প্রকৃতি তো দূরের কথা, পশু প্রকৃতির চাহিদাকেও ছাড়াইয়া গিয়াছে। পশ্চাত্য সভ্যতায় ইহা এমনভাবে পরিষ্ফুট হইয়া পড়িয়াছে যে, তাহা আর গোপন রাখিবার উপাই নাই। তথাকার আইনে ব্যভিচার কোন অপরাধ নহে। বলপ্রয়োগ অথবা অপরের আইনানুগ অধিকারে হস্তক্ষেপ করা অপরাধ বলিয়া বিবেচিত হয়। ইহার যে কোন একটি অপরাধ না করিলে ব্যভিচার কোন শাস্তিমূলক অপরাধ তো হয়ই না, উপরন্তু ইহা কোন লজ্জাজনক অপরাধ বলিয়াও বিবেচিত হয় না। এতদুর পর্যন্ত তো তাহারা পশু প্রকৃতির গণ্ডির মধ্যে ছিল। কিন্তু পরে তাহারা অধিকতর অগ্রসর হইল। পশুদের যৌন-সম্পর্কের উদ্দেশ্য বংশ বৃদ্ধিকেও তাহারা উপেক্ষা করিল। তাহারা যৌন-সম্পর্ককে নিছক দৈহিক আনন্দ সম্ভোগের মাধ্যম করিয়া লইল। যে মানুষকে শ্রেষ্ট জীব হিসাবে সৃষ্টি করা হইল, সে এইখানে পৌছিয়া নিকৃষ্টতম জীবে পরিণত হইল। প্রথমত সে মানব প্রকৃতি হইতে বিচ্যুত হইয়া পশুর ন্যায় এমন উচ্ছৃংখল যৌন-সম্পর্ক স্থাপন করে যাহার ভিত্তিতে কোন তমদ্দুন গড়িয়া উঠিতে পারে না। অতপর সে পশুপ্রকৃতি হইতেও বিচ্যুত হইয়া যায় এবং যৌন-সম্পর্কের স্বাভাবিক পরিণাম—সন্তানের জম্মলাভও বন্ধ করিয়া দেয়।তাহার উদ্দেশ্য এই, যেন মানব জাতির অস্তিত্ব রাখিবার জন্য ভবিষ্যত বংশধর জম্মলাভ করিতে না পারে।
একটি দল পরিবারের গুরুত্ব উপলব্দি করিলে বটে, কিন্তু এমন এক বিধি বন্ধনের ভিতর দিয়া তাহার ব্যবস্থাপনা করা হইল যে, ব্যক্তির গলায় শৃংখল পরা হইল এবং অধিকার ও কর্তব্যের মধ্যে কোন ভারসাম্য রক্ষিত হইল না। হিন্দুদের পারিবারিক ব্যবস্থাই ইহার একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। এখানে নারীর ইচ্ছা ও কর্মের কোন স্বাধীনতা নাই। তমদ্দুন ও জীবিকার্জনে তাহার কোন অধিকার নাই, স্ত্রী থাকাকালীন দাসী এবং মাতা থাকাকালীনও দাসী। বৈধব্যবস্থায় তাহার জীবন দাসী অপেক্ষা নিকৃষ্ট, সে জীবিতাবস্থায় মৃতের ন্যায়। তাহার ভাগ্যে শুধু কর্তব্য পালন রহিয়াছে, অধিকার বলিতে কিছু নাই। এই সমাজ ব্যবস্থার অধীনে নারীকে প্রথম হইতেই একটি বাকহীন প্রাণী বানাইবার চেষ্টা করা হয়, যেন আপন ব্যক্তিত্ব সম্পর্কে তাহার কোন অনুভূতিরই সঞ্চার না হয়। এই পন্থায় পরিবারের ভিত্তি সুদৃঢ় হয় সন্দেহ নাই এবং উক্ত পরিবারে নারীর বিদ্রোহ করার কোন আশংকাই থাকে না।কিন্তু জাতির অর্ধাংশকে হেয়, অধপতিত করিয়া এই সমাজ ব্যবস্থা প্রকৃতপক্ষে ইহার গঠন পদ্ধতি এমন এক ভয়ানক অন্যায় করিয়াছে যাহার পরিণাম ফল এখন হিন্দু সমাজ ভোগ করিতেছে।
দ্বিতীয় দল নারীর মর্যাদা উন্নত করিবার চেষ্টা করিল এবং ইচ্ছা ও কর্মে তাহাকে পূর্ণ স্বাধীনতা দেওয়া হইল। এ ব্যাপারে এতটা সীমা লংঘন করা হইল যে, পারিবারিক শৃংখলা একেবারে বিনষ্ট হইল। সে স্ত্রী স্বাধীন, কন্যা স্বাধীন, পুত্র স্বাধীন! প্রকৃতপক্ষে পরিবারের মধ্যে মাথা-মুরব্বী বলিতে কেহ নাই। কাহাও কোন কর্তত্ব নাই। স্বামী স্ত্রীকে এ কথা জিজ্ঞাসা করিতে পারে না “তুমি রাত্রি কোথায় কাটাইলে?” পিতা তাহার কন্যাকে বলিতে পারে না, “তুমি কাহার সংগে মেলামেশা কর এবং কোথায় যাও?” স্বামী-স্ত্রী সমান সমান দুইজন বন্ধু মাত্র এবং তাহারা সমান শর্তে ঘর-সংসার করে। সন্তান এই ‘পরিবার-সংঘের’ অল্পবয়স্ক সদস্যস্বরূপ। মেজাজ ও প্রকৃতি সামান্য অনৈক্যের জন্য যে আনুগত্যের উপকরণ অত্যাবশ্যক, এই দলের মধ্যে তাহা পাওয়া যায় না। ইহাই পাশ্চাত্য সমাজ ব্যবস্থা। ইহা সেই পাশ্চাত্য সমাজ ব্যবস্থা, যাহার পতাকাবাহী দাবি করিয়া থাকে যে, তমদ্দুন ও সমাজ ব্যবস্থায় তাহারা বিপ্লব আনিয়াছে। তাহাদের বিপ্লবের সঠিক স্বরূপ দেখিতে হইলে ইউরোপ-আমেরিকার কোন বিবাহ-তালাক আদালতের অথবা Juvenile Court‘১ এর বিবরণ পাঠ করিয়া দেখা দরকার। সম্প্রতি ইংলণ্ডের হোম অফিস হইতে অপরাধের যে সংখ্যা প্রকাশিত হইয়াছে, তাহা হইতে জানিতে পারা যায় যে, অল্পবয়স্ক বালক-বালিকাদের মধ্যে অপরাধের সংখ্যা দ্রুত বাড়িয়া চলিয়াছে। তাহার প্রকৃত কারণও এইরূপ বলা হইয়াছে যে, পরিবারিক শৃংখলা অত্যন্ত দুর্বল হইয়া পড়িয়াছে।২
মানব প্রকৃতি, বিশেষ করিয়া নারী প্রকৃতির মধ্যে লজ্জা ও সম্ভ্রমশীলতার যে উপাদান রক্ষিত হইয়াছে, তাহাকে সঠিক ভাবে উপলব্ধি করিতে এবং কার্যত পোশাক-পরিচ্ছদ ও সামাজিক পদ্ধতিতে উহার বাস্তবায়নে কোন মানবীয় তমদ্দুন সাফল্য আর্জন করিতে পারে নাই! লজ্জা-সম্ভ্রম মানুষের –বিশেষ করিয়া নারীর একটা পরম গুণ বলিয়া বিবেচিত হয়।কিন্তু কোন যুক্তিসংগত উপায়ে ও অনুকুল রীতিনীতির ভিতর দিয়া পোশাক-পরিচ্ছদ ও সামাজিকতায় উক্ত গুণের বহিপ্রকাশ হয় নাই। ‘সিত্রে আওরত-’ এর সঠিক সীমা নির্ধারণে এবং তাহা সমানভাবে সংরক্ষণের কোন চেষ্টা কেহ করে নাই। নারী-পুরুষের পোশাক-পরিচ্ছদ ও চাল-চলনের মধ্যে লজ্জাশিলতার রূপায়ণ কোন নীতির ভিত্তিতে নির্ধারিত হয় নাই। পুরুষে-পুরুষে, নারীতে-নারীতে এবং নারী-পুরুষের মেলামেশা ও দেখা-সাক্ষাতে শরীরের কোন্ কোন্ অংশ আবৃত ও অনাবৃত থাকিবে, তাহার কোন সঠিক ও যুক্তিসঙ্ংগসীমা নির্ধারণই করা হয় নাই।সভ্যতা, ভদ্রতা ও সাধারণ নৈতিকতার দিক দিয়া ব্যাপারটির যতটা গুরুত্ব ছিল, ততটাই উহার প্রতি উপেক্ষা প্রদর্শন করা হইয়াছে। ইহাকে কিছুটা দেশ প্রচলনের উপর ছাড়ি দেওয়া হইয়াছে, যেহেতু প্রচলিত আচার ব্যবস্থা সামগ্রিক অবস্থার সংগে বদলাইয়া যায়। বিষটি ব্যক্তিবর্গের আপন আপন ইচ্ছা ও অভিরুচি ও নির্বাচন শক্তি নাই যে, আপন ইচ্ছামত কোন সঠিক পন্থা অবলম্বন করিবে। ইহারই পরিণামস্বরূপ বিভিন্ন দলের পোশাক-পরিচ্ছেদে এবং সামাজিকতায় লজ্জাশীলতা ও লজ্জাহীনতার এক অদ্ভুত সংমিশ্রণ দেখা যায়। ইহার মধ্যে কোন যুক্তিসংগত পারস্পারিক সম্পর্ক, কোনরূপ ঐক্য, কোনরূপ আনুকূল্য অথবা নীতির বালাই দেখা যায় না। প্রাচ্যের দেশগুলিতে ইহা তো শুধু বিসদৃশ হইয়া রহিল। কিন্তু পাশ্চাত্য জাতিগুলির পোশাক-পরিচ্ছদ ও সামাজিকতায় অশ্লীলতা এত দূর সীমা অতিক্রম করিয়া গেল যে, তাহারা লজ্জা-সম্ভ্রমের মূলোৎপাটনই করিয়া ফেলিল। তাহাদের নূতন দৃষ্টিভংগী এই হইল যে, লজ্জা ও শ্লীলতা কোন প্রাকৃতিক অনুভূতি নহে, বরং বস্ত্র পরিধানের অভ্যাসের দ্বারাই ইহার সৃষ্টি হইয়াছে। নৈতিকতা ও ভদ্রতার সংগে ‘সতরে আওরত’ ও লজ্জাশীলতার কোনই সম্পর্ক নাই, বরং মানবের যৌন আবেদন জাগ্রত করিবার ইহা একটি উপকরণ বিশেষ।১ লজ্জাহীনতার এই দর্শনের বাস্তব রূপায়ণই হইতেছে অর্ধনগ্ন পোশাক, দৈহিন সৌন্দর্য প্রতিযোগিতা, নগ্ন নৃত্য, নগ্নচিত্র, রংগমঞ্চে অশ্লীল অভিনয়, নগ্নতার (Nudsim)ক্রমবর্ধ্মান আন্দোলন এবং সতীসাধ্বী, পূণ্যবতী নারীর পশুপকৃতির দিকে মানুষের প্রত্যাবর্তন।
এই সমস্যার অপরদিকেও এই অমিতাচার দেখিতে পাওয়া যায়। যাহারা নৈতিকতা ও পবিত্রতাকে গুরুত্ব দিয়াছে, তাহারা নারীর নিরাপত্তা বিধান করিয়াছে। তাহাকে একটি জীবন্ত বিবেকসম্পন্ন সত্তা মনে করিয়া নহে, বরং একটি প্রাণহীন অলংকার অমূল্যবান রত্নের ন্যায় মনে করিয়া। তাহারা তাহার শিক্ষা-দীক্ষার প্রশ্নও এড়াইয়া চলিয়াছে। অথচ তাহযীব-তমদ্দুনের কল্যাণের জন্য এই প্রশ্ন পুরুষের বেলায় যেমন গুরুত্বপূর্ণ, নারীর বেলায়ও তদ্রুপ গুরুত্বপূর্ণ। পক্ষান্তরে যাহারা আবার নারীর শিক্ষা-দীক্ষার গুরুত্ব উপলব্ধি করিল, তাহারা নৈতিকতা ও পবিত্রতার গুরুত্ব উপেক্ষা করিয়া আর একদিক দিয়া তাহযীব-তমদ্দুন ধ্বংসের বীজ বপন করিল।
যাহারা প্রকৃতির কর্ম বন্টন (Division of Labour)ব্যবস্থার প্রতি লক্ষ্য রাখিল, তাহারা তমদ্দুন ও সমাজ সেবায় শুধু গৃহের কাজকর্ম এবং সন্তান প্রতিপালনের দায়িত্ব নারীর উপর অর্পন করিল। জীবিকা অর্জনের ভার পুরুষের উপর অর্পিত হইল।কিন্তু এই কর্ম বন্টনে তাহারা ভারসাম্য অক্ষুন্ন রাখিতে পারিল না। তাহারা নারীর সকল অর্থনৈতিক অধিকার কাড়িয়া লইল। উত্তারাধিকারে তাহাকে কোনই অধিকার দেওয়া হইল না। বিষয়-সম্পত্তির মালিকানা ষোল আনা পুরুষকে দেওয়া হঈল। এইভাবে নারীকে অর্থনৈতিক দিকদিয়া পংগু করিয়া পুরুষ ও নারীর মধ্যে প্রকৃতপক্ষে একটা প্রভু ও দাসীর সম্পর্ক স্থাপন করিয়া দেওয়া হইল। ইহার প্রতিকারকল্পে অন্য একটি দলের আবির্ভাব হইল। তাহারা নারীকে অর্থনৈতিক ও তামাদ্দুনিক অধিকার দান করিতে চাইল। কিন্তু ইহারা আবার অন্য একটি ভ্রান্তি করিয়া বসিল। জড়বাদ তাহাদের মস্তিষ্ক আচ্ছন্ন করিয়াছিল। এইজন্য তাহারা অর্থনৈতিক ও তামাদ্দুনিক দাসত্ব হইতে নারীকে মুক্ত করার অর্থ ইহা বুঝিল যে, নারীকেও পুরুষের ন্যায় পরিবারের এক উপার্জনশীল ব্যক্তি হইতে হইবে। তমুদ্দুনের যাবতীয় দায়িত্ব বহন করিবার জন্য তাহাকেও পুরুষের সমান অংশ গ্রহণ করিতে হইবে। জড়বাদের দৃষ্টিভঙ্গী অনুযায়ী এই ব্যবস্থার মধ্যে বিরাট আকর্ষণ ছিল। কারণ ইহার দ্বারা শুধু পুরুষের গুরুভার লাঘব হইল না, বরং জীবিকার্জনে নারীর অংশ গ্রহণ করার ফলে প্রায় দ্বিগুন বর্ধিতাকারে অর্থ ও বিলাসিতার উপকরণাদি অর্জিত হইতে লাগিল।
এতদ্ব্যতীত জাতির অর্থনৈতিক ও সামাজিক ব্যবস্থা পরিচালনা করিবার জন্য পূর্বের তুলনায় দ্বিগুণ হস্ত ও মস্তিষ্ক জুটিয়া গেল। তাহার ফলে হঠাৎ তামাদ্দুনিক উন্নতি দ্রুততর হইতে লাগিল। বৈষয়িক ও অর্থনৈতিক দিকে সীমাতিরিক্ত ঝুঁকিয়া পরিবার পরিমাণ এই হইল যে, তামাদ্দুনিক জীবনের অন্যান্য দিক অবহেলিত ও পরিত্যক্ত হইল অথচ অর্থনৈতিক ও বৈষয়িক দিক হইতে এই দিকগুলির গুরুত্ব কোন অংশেই কম ছিল না। এইভাবে তাহারা প্রাকৃতিক বিধি-বিধান জানিবার পরেও তাহা স্বেচ্ছায় লংঘন করিয়া চলিল। তাহাদের নিজেদের বৈজ্ঞানিক গবেষণায় তাহার স্বাক্ষ্য দিতেছে। তাহারা নারীর প্রতি সুবিচারের দাবি করিয়াছিল; কিন্তু প্রকৃতপক্ষে তাহারা যে অবিচার করিল, ইহা তাহাদের পরীক্ষা-পর্যবেক্ষণের দ্বারা প্রমাণিত হইল। তাহারা নারীকে সমান অধিকার দান করিতে চাহিয়াছিল, কিন্তু বাস্তবক্ষেত্রে নারীপুরুষের মধ্যে অসাম্যই স্থাপন করিল। তাহাদের শিল্পবিজ্ঞানই ইহার প্রমাণ দিতেছে। তাহারা চাহিল তমদ্দুন-তাহযীবের সংস্কার করিতে, কিন্তু প্রকৃতপক্ষে তাহারা ইহার ধ্বংসেরই মারাত্বক উপকরণাদি সৃষ্টি করিয়া দিল। ইহার বিশদ বিবরণ আমরা জানিতে পারি তাহাদের বর্ণিত ঘটনাসমূহ ও সংখ্যাসমূহ হইতে। প্রকাশ থাকে যে, এই সকল তথ্য সম্পর্কে তাহারা অবহিত নহে; কিন্তু যেমন পূর্বেই বর্ণিত হইয়াছে, ইহা মানবীয় দুর্বলতা যে, তাহারা জীবনের আইন-কানুন প্রণয়নের ব্যাপারে সকল তত্ত্বের সমপরিমিতি ও অনুকুল ব্যবস্থা গ্রহণ তাহার পক্ষে সম্ভব হয় না। তাহার প্রকৃতি তাহাকে কোন এক প্রান্ত সীমার দিকে ধাবিত করে এবং যখন সে সেই দিকে ধাবিত হয় তখন বহু বিষয় তাহার দৃষ্টির বহির্ভূত হইয়া পড়ে। আবার বহু তত্ত্ব তাহার গোচরীভূত হওয়া সত্ত্বেও সে তাহাদিগকে উপেক্ষা করে এবং দেখিয়াও চক্ষু বন্ধ করে। এইরূপ এক অন্ধের সাক্ষ্য এখানে বর্ণিত হইতেছে। বস্তুত ইচ্ছাকৃত অন্ধত্ত্বের ইহাপেক্ষ প্রকৃষ্ট প্রমাণ আর কি হইতে পারে?
রুশ বৈজ্ঞানিক Anton Nemilov একজন পাকা কমিউনিষ্ট। তিনি বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা দ্বারা নারী-পুরুষের প্রাকৃতিক অসাম্য প্রমাণ করিবার জন্য তাঁহার The Biological Tragedy of Woman১ নামক গ্রন্থের প্রায় দুইশত পৃষ্ঠা ব্যয় করিয়াছেন। তথাপি যাবতীয় বৈজ্ঞানিক তথ্যাদি লিপিবদ্ধ করিবার স্বয়ং লিখিতেছেনঃ
আজকাল যদি বলা হয় যে, তামাদ্দুনিক ব্যবস্থায় নারীকে সীমাবদ্ধ অধিকার দেওয়া হউক, তাহা হইলে অন্তত লোকে ইহা সমর্থন করিবে। আমরা কিন্তু এই প্রস্তাবের ঘোর বিরোধী। বাস্তব জীবনে নারী-পুরুষের সাম্য প্রতিষ্ঠিত কোন সহজ কাজ মনে করিয়া আমাদের আত্মপ্রবঞ্চিত হওয়াও উচিত নয়। নারী ও পুরুষকে সমান করিবার জন্য সোভিয়েত রাশিয়াতে যে পরিমাণ চেষ্টা-চরিত্র করা হইয়াছে, পৃথিবীর কুত্রাপিও সেই পরিমাণ করা হয় নাই। কিন্তু এতদসত্ত্বেও ব্যাপার এই যে, পরিবারের মধ্যে নারীর মর্যাদার সামন্যই পরিবর্তন হইয়াছে। -পৃ. ৭৬
শুধু পরিবারে কেন, সমাজেও কোন পরিবর্তন সুচিত হয় নাই। নারী ও পুরুষ যে সমান হইতে পারে না, এ সম্পর্কে একটা দৃঢ় ধারণা শুধূ সাধারণ শ্রেণীর মধ্যে নাই বরং সোভিয়েত রাষ্ট্রের উচ্চ শিক্ষিত লোকদের মধ্যেও দৃঢ়মূল হইয়া আছে। নারীদের মধ্যে এই ধারণা একটা দৃঢ় প্রভাব বিস্তার করিয়াছে যে, যদি তাহাদিগকে পুরুষের সমপাংক্তেয় মনে করা হয় তাহা
১. এই গ্রন্থের ইংরাজী অনুবাদ ১৯৩২ খৃষ্টাব্দে লণ্ডন হইতে প্রকাশিত
হইলে তাহারা পুরুষকে স্বীয় মর্যাদা হইতে বিচ্যুত মনে করিবে। উপরন্তু তাহারা পুরুষের দুর্বলতা ও পুরুষত্বহীনতা বলিয়া অভিহিত করিবে। যদি আমরা এই ব্যাপারে কোন বিজ্ঞানী, গ্রন্থকার, ছাত্র, ব্যবসায়ী ও শতকরা এক শত জন কমিউনিস্টের ধারণা জানিবার চেষ্টা করি, তাহা হইলে জানিতে পারিব যে, তাহারা নারীকে নিজেদের সমান কখনই মনে করেনা। যদি আমরা বর্তমানকালের কোন উপন্যাস পাঠ করি, আর তাহা যেমনই স্বাধীনচেতা গ্রন্থকারের হউক না কেন, তাহা হইলে উক্ত উপন্যাসের কোথাও না কোথাও এমন বিবরণ পাওয়া যাইবে, যাহা উপরিউক্ত ধারণাকে [নারী-পুরুষের সাম্য] মিথ্যা প্রমাণিত করিবে।
-পৃ. ৯৫-১৯৪
ইহার কারণ কি?
ইহার কারণ এই যে, এখানে বিপ্লবী নীতির সহিত একটা অতি গুরুত্বপূর্ণ তত্ত্বের সংঘর্ষ হয়। ‘সেই তত্ত্বটি এই যে, শরীর বিজ্ঞানের দিক দিয়া নারী-পুরুষের মধ্যে সমতা সম্ভব নহে এবং উভয়ের উপরে সমান দায়িত্ব দেওয়া হয় নাই। -পৃ. ৭৭
আরও একটি উদ্ধৃতির দ্বারা বিষয়টি অধিকতর পরিষ্কার হইবেঃ মোদ্দাকথা এই যে, সকল কর্মজারীর মধ্যে যৌন উচ্ছৃংখলা পরিষ্ফুট হইয়া পড়িয়াছে। ইহা এক ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি করিয়া সোশ্যালিস্ট ব্যবস্থা ধ্বংসের জন্য ভীতি প্রদর্শন করিতেছে। সকল প্রকার সম্ভাব্য উপায়ে ইহার প্রতিরোধ দরকার। কারণ এই ফ্রন্টের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করা সুকঠিন। আমি শত সহস্র ঘটনার উল্লেখ করিতে পারি যাহা দ্বারা প্রমাণিত হইবে যে, যৌন-উচ্ছৃংখলতা শুধু অজ্ঞ লোকদের মাঝে প্রসার লাভ করে নাই, বরং উচ্চ শিক্ষিত ও বুদ্ধিমান উর্ধ্বতন কর্মচারীদের মধ্যেও প্রসার লাভ করিয়াছে।
-পৃ. ২০২-৩
উপরের কথাগুলি কত সুস্পষ্ট ও প্রামাণিক । একদিকে সুস্পষ্ট স্বীকৃতি যে, প্রকৃতি নারী-পুরুষের মধ্যে সমতা বিধান করে নাই। ব্যবহারিক জীবনে সমতা স্থাপনের চেষ্টা ব্যর্থ হইয়াছে। প্রকৃতির বিরুদ্ধে সংগ্রাম করত এক ধরনের সমতা যে পরিমাণেই প্রতিষ্ঠিত করা হইয়াছে, তাহার ফলে সেই পরিমাণেই অশ্লীলতার স্রোত প্রবাহিত হইয়াছে এবং সমাজের সমগ্র ব্যবস্থাপনা ভাঙিয়া পড়িবার উপক্রম হইয়াছে। অপরতিকে এই দাবী যে, সামাজিক ব্যবস্থায় নারীর অধিকার নিয়ন্ত্রিত করা হইবে না এবং তাহা করা হইলে আমরা হাতার বিরোধীতা করিব। এ বিষয়ে প্রমাণ ইহা অপেক্ষা আর কি হইতে পারে যে, মানুষ অজ্ঞ নহে; বরং জ্ঞানী ও সচেতন। অথচ সে প্রকৃতির কত বড় দাস? সে নিজের উদঘাটিত তত্ত্ব ও সত্যকে মিথ্যা মনে করে, নিজের পরীক্ষা-পর্যবেক্ষণ অস্বীকার করে। সকল দিক হইতে চক্ষু বন্ধ করিয়া প্রবৃত্তির পিছনে একমুখী হইয়া চলিয়া তাহার ভ্রান্ত সীমায় উপনীত হয়। এহেন চরম প্রান্তে উপনীত হওয়ার বিরুদ্ধে তাহার নিজস্ব জ্ঞান-বুদ্ধি-বিবেক যকই অকাট্য ও বলিষ্ঠ যুক্তি-প্রমাণ পেশ করুক না কেন, তাহার চক্ষু যতই মন্দ ও বিষময় পরিণাম দর্শন করুক না কেন, সকলই বৃথা।
**********
***********
তুমি কি লক্ষ করিয়াছ তাহাকে, যে তাহার খেয়াল-খুশীকে নিজ ইলাহ্ বানাইয়া লইয়াছে? আল্লাহ জানিয়া শুনিয়াই উহাকে বিভ্রান্ত করিয়াছেন এবং উহার কর্ণ ও হৃদয় মোহর করিয়া দিয়াছেন এবং উহার চক্ষুর উপর রাখিয়াছেন আবরণ। অতএব, কে তাহাকে পথনির্দেশ করিবে? তবুও কি তোমরা উপদেশ গ্রহণ করিবেনা?
-সূরা জাছিয়াঃ ২৩
ইসলামে আইনের ভারসাম্য নীতি
ভারসাম্যহীন চরম বাড়াবাড়ি ও নূন্যতার এই জগতে একটিমাত্র তামাদ্দুনিক ব্যবস্থা এমন আছে, যাহার মধ্যে পরিপূর্ণ ন্যায়নীত ও ভারসাম্য দেখিতে পাওয়া যায়, যাহার প্রতি মানব প্রকৃতির এক একটি দিকের প্রতি, এমন কি অপ্রকাশ্য দিকের প্রতিও দৃষ্টি রাখা হইয়াছে। মানুষের দৈহিক গঠন, তন্মধ্যে পাশবিক বৃত্তি, মানসিক প্রকৃতি, মানসিক বৈশিষ্ট্য এ তার স্বাভাবিক চাহিদা সম্পর্কে পরিপূর্ণ এ বিশেষ জ্ঞানের দ্বারা কাজ রওয়া হইয়াছে। ইহাদের মধ্যে এক একটি সৃষ্টির পশ্চাতে প্রকৃতির যে উদ্দেশ্য আছে, তাহা তাহা পরিপূর্ণরূপে এমন পন্থায় পূর্ণ করা হইয়াছে যে, অন্য কোন উদ্দেশ্য- তাহা যতই ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র হউক না কেন-ব্যাহত বা ক্ষতিগ্রস্ত হয় না। অবশেষে সকল উদ্দ্যেশ্যের সমন্বয়ে এক বিরাট উদ্দেশ্য অর্থাৎ মানব জীবনের উদ্দেশ্য সাধনের সহায়ক হয়। এই ন্যায়-নীতি, এই ভারসাম্য, এই সামঞ্জস্য বিধান এতই পূর্ণতাসম্পন্ন যে, কোন মানুষই স্বীয় জ্ঞান ও চেষ্টা-চরিত্রের দ্বারা তাহা তৈরী করিতে পারে না। মানুষের তৈরী আইন অথচ তাহার মধ্যে কোথাও একমুখীতা দেখা যাইবে না, ইহা সম্পূর্ণ অসম্ভব। স্বয়ং আইন তৈরী তো দুরের কথা, আসল কথা এই যে, সাধারণ লোক তো এই ন্যায়নিষ্ঠ, ভারসাম্য ও চরম বিজ্ঞানসম্মত বিধানের তাৎপর্য সম্যক উপলব্ধি করিতে পারিবেনা যতক্ষণ পর্যন্ত সে অসাধারণ ব্যুৎপত্তির অধিকারী না হয় এবং তৎসম্পর্কে বৎসরের পর বৎসর ধরিয়া গবেষণা ও পরীক্ষা-নিরীক্ষা না করে। আমি এই আইনের এই জন্য প্রশংসা করিতেছি না যে, আমি ইসলামে বিশ্বাসী, বরং আমি ইসলামে এইজন্য বিশ্বাসী যে, আমি ইহার মধ্যে পরিপূর্ণ ভারসাম্য ও সামঞ্জস্য ও প্রাকৃতিক নিয়মের সংগে ইহার পরিপূর্ণ মিল দেখিতে পাই। এই সকল দেখিয়া আমার মন সাক্ষ্য দেয় যে, এই সকল আইন কানুনের রচয়িতা অবশ্য অবশ্যই একমাত্র তিনি, যিনি আকাশ ও পৃথিবী সৃষ্টি করিয়াছেন এবং যিনি বর্তমান ও ভবিষ্যতের জ্ঞানের অধিকারী। সত্য কথা এই যে, বিভিন্ন দিকে প্রধাবিত পথভ্রষ্ট আদম সন্তানকে ন্যায়নীতি ও মধ্যপন্থার সুষ্ঠু উপায় একমাত্র তিনিই বলিয়া দিতে পারেন।
**************
**************