বাড়ি হএত বাহির হইবার আইন-কানুন
পোশাক ও সতরের সীমারেখা নির্ধারণ করিবার পর শেষ নির্দেশ যাহা নারদের প্রতি দেওয়া হইয়াছে, তাহা এইঃ
(আরবী**********************************)
মর্যাদা সহকারে আপন আপন গৃহে অবস্থা কর এবং জাহিলিয়াতের যুগের ন্যায় সাজ-সজ্জা সহকারে ভ্রমণ করিও না। -সূরা আহযাবঃ ৩৩
(আরবী***************************************************)
তাহারা যেন মাটির উপরে এমনভাবে পদক্ষেপ না করে যাহাতে তাহাদের গোপন সৌন্দর্য প্রকাশিত হইয়া পড়ে। -সূরা নূরঃ ৩১
(আরবী******************************************)
চাপা গলায় কথা বলিও না নতুবা যাহাদের অন্তরে ব্যাধি আছে, তাহারা প্রলুব্ধ হইবে। -সূরা আহযাবঃ ৩২
(আরবী******) শব্দের উচ্চারণে মতভেদ আছে। সাধারণ মদীনাবাসী এবং কিছু সংখ্যক কুফাবাসী (আরবী*******) [কাফ-এর উপর যবর দিয়া ] পড়িয়াছেন। ইহা মূল (আরবী********) শব্দ হইতে উদ্ভুত হইয়াছে। এই কিদ দিয়া ইহার অর্থ দাঁড়াইবে, আপন গৃহে স্থিরভাবে অবস্থান কর। পক্ষান্তরে সাধারণ বসরা ও কূফার অধিবাসীগণ (আরবী******) [কাফ-এর নীচে যের দিয়া] পড়িয়াছেন। ইহা (আরবী********) শব্দ হইতে উৎপন্ন হইয়াছে। ইহার অর্থ দাঁড়াইবে, ‘আপন গৃহে মর্যাদা ও শান্তির সংগে অবস্থান কর’।
(আরবী***********) শব্দের দুইটি অর্থ। এক সৌন্দর্য ও সাজ-সজ্জার প্রকাশ। দ্বিতীয়, চলিবার সময় ঠাট-ঠমক দেখান, চলিতে ছলকি পড়িছে কাঁকাল’ –যেন এইভাবে চলা, কমণীয় ভাব-ভংগিমা সহকারে চলা –কুরআনের আয়াতে উভয় অর্থই বুঝান হইতেছে। প্রথম জাহিলিয়তের যুগে নারিগণ মনোহর সাজ-সজ্জায় বাহির হইত, যেমনভাবে আধুনিক জাহিলিয়াতের যুগের নারী সমাজ বাহিরে চলাফেরা করে। আবার চলিবার ধরনও ইচ্ছাকৃত এমন ছিল যে, প্রতিটি পদক্ষেপ মাটির উপর না পড়িয়া দর্শকের মনের উপরে পড়িত। প্রখ্যাত তাবেয়ী ও তাফসীর লেখক কাতাদাহ বলিয়াছেনঃ
(আরবী***************************************)
এই অবস্থা হৃদয়ংগম করিবার জন্য কোন ঐতিহাসিক বিবরণের প্রয়োজন নাই। এমন এক সমাজে আপনি গমন করুন যেখানে মেয়েরা পাশ্চাত্য সাজ-পোশাকে আগমন করে। প্রথম জাহিলিয়াতের যুগের চালচলন আপনি স্বচক্ষে দেখিতে পাইবেন। ইসলাম ইহা হইতে বিরত থাকিতে বলে। সে বলে, প্রথমত তোমার সত্যিকার থাকিবার স্থান হইতেছে তোমার গৃহ। বহির্বাটির দায়িত্ব হইতে তোমাকে এইজন্য অব্যাহতি দেওয়া হইয়াছে, যেন তুমি শান্তি ও মর্যাদা সহকারে গৃহে অবস্থান করিতে এবং পারিবারিক জীবনের দায়িত্ব পালন করিতে পার। তথাপি যদি প্রয়োজন হয়, তাহা হইলে গৃহের বাহিরে যাওয়াও তোমার জন্য জায়েয। কিন্তু বাহিরে যাইবার সময় তোমার সতীত্ব-সম্ভ্রমের প্রতি পূর্ণ দৃষ্টি রাখিও। তোমার সাজ-পোশাকে না এমন কোন জাঁকজমক ও দীপ্তি থাকিবে যাহা তোমার দিকে অপরের দৃষ্টি আকৃষ্ট করিবে না সৌন্দর্য প্রকাশের জন্য তোমার মধ্যে এমন উৎকণ্ঠা থাকিবে যে, চলিতে চলিতে কখনও বা মুখমণ্ডলের ঝলক দেখাইবে এবং কখনও বা হস্তদ্বয়ের প্রদর্শনী করিবে। তোমার চালচলনে এমন কোন কমনীয় ভাব থাকিবে যাহাতে অপরের দৃষ্টি তোমার প্রতি নিবদ্ধ হয়। এমন অলংকারসহ বাহিরে চলিবে না,যাহার ঝংকার অপরের কর্ণকুহরে মধু বর্ষণ করে। অপরকে শুনাইবার জন্য স্বেচ্ছায় কণ্ঠধ্বনি করিও না। হ্যাঁ, যদি কথা বলিবার প্রয়োজন হয় তাহা হইলে বল, কিন্তু মধুভরা কণ্ঠে বলার চেষ্টা করিও না। এই সকল নিয়ম-নীতি ও সীমারেখা মানিয়া চলিয়া তুমি গৃহের বাহিরে যাইতে পার।
ইহাই হইতেছে কুরআন পাকের শিক্ষা। আসুন, এখন একবার হাদীসের প্রতি লক্ষ্য করিয়া দেখুন। নবী(স) ঐ শিক্ষা অনুযায়ী সমাজে নারীদের জন্য কোন পন্থা নির্ধারণ করিয়া দিয়াছেন এবং সাহাবায়ে কিরাম (রা) এবং তাঁহাদের নাগিণ কিভাবে উহা কার্যকরী করিয়াছেন।
প্রয়োজনের জন্য বাহিরে যাইবার অনুমতি
হাদীসে আছে যে, পর্দার নির্দেশাবলী অবতীর্ণ হইবার পূর্বে হযরত ওমর (রা) –এর দাবী ছিল, ‘হে আল্লাহর রসূল (স)। নারীদের পর্দা করুন’। একবার উম্মুল মুমিনীন হযরত সাওদা বিনতে খা’ময়া (রা) রাত্রিকালে ঘরের বাহির হইলে ওমর (রা) তাঁহাকে দেখিয়া ফেলিলেন। তিনি তাঁহাকে ডাকিয়া বলিলেন, ‘সাওদা! আমরা তোমাকে চিনিয়া ফেলিয়াছি’। ইহার দ্বারা তাঁহার উদ্দেশ্য এই ছিল যে, মেয়েদের কোন প্রকার গৃহের বাহিরে যাওা নিষিদ্ধ হউক। ইহার পর পর্দার আদেশ নাযিল হইলে হযরত ওমরের সুযোগ আসিল। তিনি মেয়েদের বাহিরে যাতায়াতে কঠোরভাবে বাধা দিতে লাগিলেন। পুনরায় হযরত সাওদা (রা)-এর পূর্ব ঘটনার পুনরাবৃত্তি হইল। তিনি গৃহ হইতে বাহির হইবা মাত্র হযরত ওমর (রা) বাধা দিলেন। হযরত সাওদা (রা) নবী করীম (স)-এর নিকট এ বিষয়ে অভিযোগ করিলেন। নবী বলিলেনঃ
(আরবী******************************************)
আল্লাহ তায়ালা তোমাদিগকে প্রয়োজন অনুসারে বাহিরে যাইবার অনুমতি দিয়াছেন। -সলিম, বুখারী প্রমুখ।
ইহা হইতে জানিতে পারা যায় যে,(আরবী******************) –এর কুরআনী মর্ম ইহা নহে যে, মেয়েরা গৃহের সীমারেখার বাহিরে মোটেই পা রাখিবে না, বরং প্রয়োজন মিটাইবার জন্য বাহিরে যাওয়ার পূর্ণ অনুমতি আছে। কিন্তু এই অনুমতি শর্তহীন নহে এবং সীমাহীনও নহে। মহিলাদের জন্য ইহা জায়েয নহে যে, তাহারা যত্রতত্র স্বাধীনভাবে চলাফেরা করিবে এবং পুরুষের সমাবেশে মিশিয়া যাইবে। প্রয়োজন বলিতে শরীঅতের মর্ম এই যে, বাহিরে যাওয়া মেয়েদের জন্য একেবারে অপরিহার্য হইয়া পড়ে। প্রকাশ থাকে যে, সকল নারীর জন্য সকল যুগে বাহির হওয়া না হওয়ার এক এক পদ্ধতি নির্ধারণ করা সম্ভব নহে। অবশ্য শরীয়তপ্রণেতা জীবনের সাধারণ অস্থায় মেয়েদের বাহিরে যাওয়ার যে পদ্ধতি নির্ধারণ করিয়া দিয়াছেন এব পর্দার সীমারেখার মধ্যে যেভাবে কমবেশী করিয়াছেন, উহা হইতে ইসলামী আইনের স্পিরিট এবং উহার প্রবণতা অনুমান করা যায়। উহা পূর্ণরূপে হৃদয়ংগম করত ব্যক্তিগত অবস্থঅয় এবং ছোটখাট ব্যাপারে পর্দার সীমারেখা ও পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে উহাকে বেশী-কম করিবার নীতি প্রত্যেক ব্যক্তি স্বয়ং জানিতে পারে। উহার ব্যাখ্যার জন্য আমরা দৃষ্টান্তস্বরূপ কতিপয় বিষয়ের উল্লেখ করিতেছি।
মসজিদে আসিবার অনুমতি ও উহার সীমারেখা
ইহা সর্বজনবিদিত যে সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ ফরয-নামায। নামাযের উদ্দেশ্যে মসজিদে উপস্থিত হওয়া এবং জামায়াতে শরীক হওয়ার উপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হইয়াছে। কিন্তু জামায়াতসহ নামাযের অধ্যায়ে পুরুষদর জন্য যে সকল নির্দেশ দেওয়া হইয়াছে, তাহার সম্পূর্ণ বিপরীত নির্দেশ মেয়েদের জন্য দেওয়া হইয়াছে। পুরুষের জন্য ঐ নামায উৎকৃষ্ট, যাহা গৃহে অত্যন্ত নির্জনতার মধ্যে আদায় করা হয়। ইমাম আহমদ ও তিবরানী উম্মে হুমাইদ সায়েদিয়া হইতে নিম্নের হাদীসটি বর্ণনা করিয়াছেনঃ
(আরবী******************************************)
সে বলিল, ‘হে আল্লহার রসূল (স)! আমার মন চায় যে, আমি আপনার সংগে নামায পড়ি’। নবী (স) বলিলেন, ‘আমি জানি। কিন্তু তোমর নিজের কামরায় নামায পড়া অপেক্ষা এক নিভৃত স্থানে নামায পড়া শ্রেয়। এবং তোমার বাড়ীর দালানে নামায পড়া অপেক্ষা তোমার কামরায় নামায পড়া শ্রেয়। এবং জামে মসজিদে নামায পড়া হইতে তোমার মহল্লার মসজিদে নামায পড়া শ্রেয়।–[যে কারণে মেয়েদের এমন নিভৃতে নামায পড়িবার আদেশ দেওয়া হইয়াছে তাহা মেয়েরাই ভাল বুঝিতে পারে। মাসের মধ্যে কিছুদিন তাহাদিগকে বাধ্য হইয়া নামায পরিত্যাগ করিতে হয়। অতএব এইভাবে এমন বিষয় প্রকাশ হইয়া পড়ে যাহা কোন লজ্জাশীলা নারী তাহার ভ্রাতা-ভগ্নির নিকটও প্রকাশিত হওয়া পসন্দ করে না। এই লজ্জায় অনেক মেয়েলোক নামাযই পরিত্যাগ করিয়া ফেলে। শরীয়তপ্রণেতা ইহা অনুভ করত উপদেশ দিলেন, ‘তোমরা চুপে চুপে নিভৃতে নামায পড় যেন কেহ জানিতে না পারে যে, তোমরা কখন নামায পড় এবং কখন ছাড়িয়া দাও। অবশ্য ইহা উপদেশমাত্র, আদেশ নহে। মেয়েরা গৃহের মধ্যে পৃথক জামায়াত করিতে পারে এবং নারী তাহার ইমামতি করিতে পারে। নবী (স) উম্মে ওরকা বিনতে নওফেলকে মেয়েদের জামায়াতে ইমামতি করার অনুমতি দিয়াছিলেন (আবু দাউদ)। দার কুতনী ও বায়হাকী হইতে বর্ণিত আছে যে, হযরত আয়েশা (রা) মেয়েদের ইমামতি করিয়াছিলেন এবং কাতারের মাঝখানে দাঁড়াইয়া নামায পড়িয়াছিলেন। ইহা হইতে এই মসলা জানিতে পারা যায় যে, যখন নারী নারীদের জামায়াতে নামায পড়াইবে তখন পুরুষের ন্যায় কাতারের অগ্রভাবে না দাঁড়াইয়া মাঝখানে দাঁড়াইবে।]
এই বিষয়ের উপর আবু দাউদে হযরত ইবনে মাসউদ (রা) হইতে একটি হাদীস বর্ণিত হইয়াছেঃ
(আরবী*****************************)
নারীর স্বীয় কামরায় নামায পড়া অপেক্ষা নিভৃত কক্ষে নামায পড়া উত্তম।
লক্ষ্য করিয়া দেখুন, এই ব্যাপারে পদ্ধতি একেবারে বিপরীত করিয়া দেওয়া হইয়াছে। পুরুষের জন্য একাকী নিভৃতে নামায পড়াকে নিকৃষ্টতম নাময বলা হইয়াছে এবং বৃহৎ হইতে বৃহত্তর জামায়াতে নামায পড়া তাহার জন্য উৎকৃষ্ট নামায। কিন্তু ঠিক ইহার বিপরীতে নারীর জন্য নিভৃত নামায পড়াকে উত্তম বলা হইয়াছে এবং এই নিভৃত নামাযকে শুধু জামায়াতসহ নামাযের উপরই প্রাধান্য দেওয়া হয় নাই, বরং ঐ নামায হইতেও উৎকৃষ্ট বলা হইয়াছে যাহা অপেক্ষা বৃহত্তর কোন নিয়ামত একজন মুসলমানের আর কিছু হইতে পার না অর্থাৎ মসজিদে নববীর জামায়াত-যাহা পরিচালনা করেন স্বয়ং ইমামুল আম্বিয়া হযরত মুহাম্মদ (স)। এখন এই পার্থক্য ও বৈষম্যের কারণ কি? ইহার একমাত্র কারণ এই যে, শরীয়তপ্রণেতা নারীদের বাহিরে যাওয়া পসন্দ করেন নাই এবং জামায়াতে নারী-পুরুষের একত্রে সমাবেশ রোধ করিতে চাহিয়াছেন। কিন্তু নামায একটি পবিত্র ইবাদত এবং মসজিদ একটি পবিত্র স্থান। বিজ্ঞ শরীয়তপ্রণেতা নারী-পুরুষের সংমিশ্রণ রোধ করিবার জন্য স্বীয় অভিপ্রায়-ফযীলত ও গায়ের ফযীলত বর্ণণা দ্বারা ব্যক্ত করিয়াছেন। কিন্তু এইরূপ একটি পূর্ণ কাজেরে জন্য পবিত্র স্থানে যাইতে নারীদিগকে নিষেধ করেন নাই। হাদীসে যে সকল শব্দ ব্যবহারের দ্বারা ইহার অনুমতি দেওয়া হইয়াছে, তাহা শরীয়তপ্রণেতার অনুপম বিজ্ঞতারই পরিচায়ক।
(আরবী**********************************************)
আল্লাহর দাসীদিগকে আল্লাহর মসজিদে আসিতে নিষেধ করিও না। তোমাদের মধ্যে কাহারও স্ত্রী যদি মসজিদে যাওয়ার অনুমতি চায়, তাহা হইলে তাহাকে বাধা দিও না। -বুখারী, মুসলিম
(আরবী*************************************************)
তোমাদের স্ত্রীদিগকে মসজিদে যাইতে বাধা দিও না। তবে তাহাদের গৃহই তাহাদের জন্য অধিকতর ভাল। -আবু দাউদ
এই কথাগুলি দ্বারা স্পষ্ট প্রতীয়মান হয় যে, শরীয়তপ্রণেতা নারীদিগকে মসজিদে যাইতে নিষেধ করেননি। কারণ, মসজিদে নামাযের জন্য যাওয়া তো কোন মন্দ কাজ নহে যে, ইহাকে না-জায়েয বলা যাইতে পারে। কিন্তু ইহাও দাবী করা যায় না যে, মসজিদে নারী-পুরুষের মিশ্র সমাবেশ হউক। তাহাদিগকে মসজিদে গমন করিবার তো অনুমতি দেওয়া হইল। কিন্তু ইহাও বলা হইল না যে, তাহাদিগকে মসজিদে পাঠাইতে হইবে অথবা নিজেদের সংগে লইয়া যাইতে হইবে, বরং শুধু এতটুকু বলা হইল যে, যদি তাহারা উৎকৃষ্ট নামায পরিত্যাগ করিয়া নিকৃষ্ট নামায পড়িবার জন্য মসজিদে যাইতে চায় এবং ইহার জন্য অনুমতি চায়, তাহা হইেল নিষেধ করা চলিবে না। হযরত ওমর (রা) ইসলামী তত্ত্ববিদ ছিলেন এবং তিনি শরীয়তপ্রণেতার সেই তাৎপর্য উপলব্ধি করিয়াছেন। মুয়াত্তায় বর্ণিত আছে যে, তাঁহার স্ত্রী আতিকা বিনতে যায়দের সংগে তাঁহার এই ব্যাপারে বাদানুবাদ লাগিয়াই থাকিত। তাঁহার স্ত্রী মসজিদে যান –ইহা হযরত ওমর (রা) ভালবাসিতেন না। কিন্তু তিনি যাইবার জন্য জিদ করিতেন। যাইবার অনুমতি চাহিলে হযরত ওমর (রা) নবী (স) –এর নির্দেশ যথাযথ পালন করিয়া নীলব থাকিতেন। ইহার অর্থ এই যে, যাইতে বাধাও দিতেন না, আর স্পষ্ট অনুমতিও দিতেন না। তাঁহার স্ত্রীও এই ব্যাপারে বড় শক্ত ছিলেন। তিনি বলিতেন, ‘আল্লাহর কসম, আমি যাইতেই থাকিব যতক্ষণ না আপনি স্পষ্টভাষায় নিষেধ করেন। -[ইহা শুধু ওমর (রা) –এর স্ত্রীর অবস্থায় ছিল না। বরং নবী (স) –এর যুগে বহুসংখ্যক নারী জামায়াতে নামাযের জন্য মসজিদে যাইতেন। আবু দাউদে আছে যে, মসজিদে নববীতে নারীদের দুই-দুইটি সারি হইত।]
মসজিদে আগমন করিবার শর্তাবলী
মসজিদে হাযির হইবার অনুমতি দেওয়ার সাথে সাথে কিছু শর্তও আরোপ করা হইয়াছে। ইহার প্রথম শর্ত এই যে, দিনের বেলায় মসজিদে যাওয়া চলিবে না। আঁধারকালের নামাযগুলি, যথাঃ এশা এবং ফজর পড়িতে পারিবে।
(আরবী**********************************************)
হযরত ইবনে ওমর (রা) হইতে বর্ণিত আছে যে, নবী (স) বলেন, নারীদিগকে রাত্রিকালে মসজিদে আসিতে দাও। -তিরমিযী
(আরবী*************************************************)
হযরত ইবনে ওমরের বিশিষ্ট শাগরেদ হযরত নাফে’ বলেন, রাত্রিকালে এইজন্য নির্দিষ্ট করিয়া দেওয়া হইয়াছে যে, রাত্রির অন্ধকারে ভালভাবে পর্দা করা সম্ভব হইবে। -তিরমিযী
(আরবী*************************************************)
হযরত আয়েশা (রা) বলেন, নবী (স) ফজর নামায এমন সময়ে পড়িতেন যে, নামায শেষে নারিগণ যখন চাদর মুড়ি দিয়া গৃহে ফিরিতেন তখন অন্ধকারে তাহাদিগকে চিনিতে পারা যাইত না। -তিরমিযী
দ্বিতীয় শর্ত এই যে, মসজিদে সাজ-সজ্জা করিয়া ও সুগন্ধি প্রসাধন মাখিয়া আসা চলিবে না। হযরত আয়েশা (রা) বলেনঃ একদা নবী (স) মসজিদে উপবিষ্ট ছিলেন। এমন সময় মুযায়না গোত্রের একটি নারী সাজ-সজ্জা করত ঠাট-ঠমক সহকারে তথায় আসিল। তখন নবী (স) বলিলেন, ‘তোমরা তোমাদের নারীদিকে সাজ-সজ্জা করিয়া ঠাট-ঠমক সহকারে মসজিদে আসিতে দিও না’। -ইবনে মাজাহ
সুগন্ধি সম্পর্কে নবী(স) বলেন, ‘যে রাত্রে তোমরা নামাযে আসিবে সে রাত্রে কোন প্রকার সুগন্ধি দ্রব্য ব্যবহার করিয়া আসিবে না। একেবারে সাদাসিদা পোশাকে আসিবে। যে নারী সুগন্ধি দ্রব্য মাখিয়া আসিবে, তাহার নামায হইবে না’। -মুয়াত্তাঃ ইমাম মালিক
তৃতীয় শর্ত এই যে, পুরুষের সংগে একই সারিতে মিশিয়া অথবা সম্মুখের সারিতে দাঁড়াইবে না। তাহাদিগকে পুরুষের পিছন সারিতে দাঁড়াইতে হইবে।
(আরবী*****************************************)
নবী (স) বলেন, পুরুষের জন্য উৎকৃষ্ট স্থান সম্মুখেল সারিতে এবং নিকৃষ্ট স্থান পিছন সারিতে। নারীদের জন্য উৎকৃষ্ট স্থান পিছন সারিতে এবং নিকৃষ্ট স্থান সম্মুখ সারিতে।
জামায়াতের অধ্যায়ে নবী (স) এই পদ্ধতি নির্ধারণ করিয়া দিয়াছেন যে, নারী ও পুরুষ পাশাপাশি দাঁড়াইয়া নামায পড়িবে না, তাহার স্বামী-স্ত্রী অথবা মাতা-পুত্র হউক না কেন।
হযরত আনাস (রা) বলেন, ‘একদা আমার নানী মুলায়কা নবী (স) –কে দাওয়াত করিলেন। খাওয়ার পর তিনি [নবী] নামাযে দাঁড়াইলে আমি ও ইয়াতিন [সম্ভবত হযরত আনাসের ভাই] হুযুরের পিছনে দাঁড়াইলাম এবং মুলায়কা আমাদের পিছনে দাঁড়াইলেন’। -তিরমিযী
হযরত আনাস (রা) হইতে দ্বিতীয় রেওয়ায়েত এই যে, তিনি বলেন, ‘একদা হুযুর (স) আমাদের গৃহে নামায পড়িলেন। আমি ও ইয়াতিম তাঁহার পশ্চাতে দাঁড়াইলাম এবং আমার মাতা উম্মে সুলাইম আমাদের পশ্চাতে দাঁড়াইলেন’। -বুখারী
হযরত ইবনে আব্বাস (রা) বলেন, ‘একদা নবী (স) নামাযের জন্য দাঁড়াইলে আমি তাঁহার পার্শ্বে দাঁড়াইলাম এবং হযরত আায়েশা (রা) আমাদের পশ্চাতে দাঁড়াইলেন। -নাসায়ী
চতুর্থ শর্ত এই যে, নারিগণ নামাযে উচ্চ শব্দ করিবে না। পদ্ধতি ইহা নির্ধারিত হইল যে, নামাযের মধ্যে কোন বিষয়ে ইমামকে সাবধান করিয়া দিতে হইলে পুরুষ ‘সুবহানাল্লাহ’ বলিবে এবং নারী হস্ত দ্বারা শব্দ করিবে। -বুখারী
এতসব সীমারেখা ও বাধা-নিষেধ আরোপ করার পরেও হযরত ওমর (রা) জামায়াতে নারী-পুরুষের সংমিশ্রণ আশংকা করিলেন এবং তিনি মসজিদে নারীদের জন্য একটা পৃথক দরজা নির্দিষ্ট করিয়া দিয়া পুরুষেল জন্য সেই দরজা দিয়া যাতায়াত নিষিদ্ধ করিয়া দিলেন। -আবু দাউদ
হজ্জে নারীদের জন্য করণীয় পদ্ধতি
হজ্জ ইসলামের দ্বিতীয় সমষ্টিগত ফরয। পুরুষের ন্যায় ইহাও নারীদের জন্য ফরয। কিন্তু তাওয়াফের সময় পুরুষের সংগে মিশিয়া যাইতে নিষেধ করা হইয়াছে। বুখারী শরীফে আতা হইতে বর্ণিত আছে যে, নবী (স) –এর যুগে পুরুষের সংগে নারী তওয়াফ করিত। কিন্তু পরস্পরে মিলিত হইত না। ফতহুল বারী গ্রন্থে ইব্রাহীন নখয়ী হইতে বর্ণিত আছে, হযরত ওমর (রা) তাওয়াফের সময় নারী-পুরুষেল সংমিশ্রণ নিষিদ্ধ করিয়া দিয়াছিলেন। একবার তিনি একজন পুরুষকে নারীদের সমাবেশে দেখিলেন এবং তাহাকে ধরিয়া বেত মারিলেন। -ফতহুল বারী, ৩য় খণ্ড, পৃঃ ৩১২
মুয়াত্তায় বর্ণিত আছে যে, হযরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা) স্বীয় পরিবার-বর্গকে মুযদালিফা হইতে মিনায় সকলের আগে রওয়ানা করিয়া দিতেন যেন তাঁহারা লোকজন আসিবার পূর্বেই নিজ নিজ নামায ও প্রস্তর নিক্ষেপ কার্য সাধা করিতে পারেন। এমন কি হযরত আবু বকর (রা) তনয়া হযরত আসমা (রা) ভোরের অন্ধকারে মিনা গমন করিতেন। নবী (স) –এর যুগে নারীদের জন্য এই ছিল নিয়ম। -মুয়াত্তা ইমাম মালিক
জুম’আ ও ঈদে নারীর অংশ গ্রহণ
জুম’আ ও ঈদের সমাবেশে ইসলামে এত গুরুত্বপূর্ণ যে, তাহার বর্ণণা নিষ্প্রয়োজন। ইহার গুরুত্বের দিকে লক্ষ্য রাখিয়া শরীয়ত-প্রণেতা, বিশেষ করিয়া এই সমাবেশগুলির জন্য ঐ সকল শর্ত রহিত করিয়া দিয়াছেন যাহা সাধারণ নামাযের বেলায় আরোপ করা হইয়াছে; যথাঃ দিবসের বেলায় জামায়াতে যোগদান করা চলিবে না। অবশ্য যদিও জুম’আর বিষয়ে স্পষ।ট করিয়া বলা হইয়াছে যে, ইহা নারীদের জন্য বাধ্যতামূলক নহে [আবু দাউদ] এবং দুই ঈদের জামায়াতেও তাহাদের যোগদান করা প্রয়োজনীয় নহে। কিন্তু যদি তাহারা ইচ্ছা করে তাহা হইলে অন্য শর্ত পালন করত এই সকল জামায়াতে শরীক হইতে পারে। হাদীস হইতে প্রমাণিত হয় যে, স্বয়ং নবী (স) আপন নারীদিগকে ঈদের নামাযে লইয়া যাইতেন।
(আরবী*********************************************************)
উম্মে আতিয়া হইতে বর্ণিত আছে যে, নবী (স) কুমারী, যুবতী, গৃহিণী ও ঋতুবতী রমণীদিগকে ঈদের মাঠে লইয়া যাইতেন। যে সকল নারী নামাযের যোগ্য হইতেন না, তাঁহারা জামায়াত হইতে পৃথক থাকিতেন এবং শুধু দোয়ায় শরীক হইতেন। -তিরমিযী
(আরবী****************************************_)
ইবনে আব্বাস (রা) বলেন যে, নবী (স) স্বীয় সহধর্মিনী ও কন্যাসহ ঈদে গমন করিতেন। -ইবনে মাজাহ
কবর যিয়ারত ও জানাযায় অংশ গ্রহণ
মুসলমানের জানাযায় যোগদান করা শরীয়তে ফরযো কিফায়া বলা হইয়াছে। এই সম্পর্কে যে সকল জরুরী নির্দেশ আছে, তাহা জ্ঞানী ব্যক্তিদের অজানা নাই। কিন্তু এই সকলই শুধু পুরুষের জন্য, নারীদিগকে জানাযায় যোগদান করিতে নিষেধ করা হইয়াছে। অবশ্য এই নিষেধাজ্ঞায় কঠোরতা প্রদর্শন করা হয় নাই, বরং কোন কোন সময়ে অনুমতিও দেওয়া হইয়াছে। কিন্তু শরীয়তপ্রণেতার নির্দেশে স্পষ্ট জানা যায় যে, নারীদের জানাযায় যোগদান করা ত্রুটি মুক্ত নয়।
বুখারী শরীফে উম্মে আতিয়া হইতে একটি হাদীস বর্ণিত আছেঃ
(আরবী************************************************)
জানাযায় অংশ গ্রহণ করিতে আমাদিগকে নিষেধ করা হইয়াছে, তবে কঠোরভাবে নয়। -বুখারী
ইবনে মাজাহ ও নাসায়ীতে বর্ণিত আছে যে, নবী (স) একদা এক জানাযায় শরীক ছিলেন। তথায় জনৈক নারীকে দেখিতে পাওয়া গেল। হযরত ওমর (রা) তাহাকে তিরস্কার করিলেন। নবী (স) বলিলেন, ‘ওমর, উহাকে ছাড়। মনেহয় স্ত্রীলোকটি মৃত ব্যক্তির নিকটাত্মীয়া ছিল। হযরত শোকে অধীর হইয়া মৃত ব্যক্তির সংগে আসিয়াছিল’। নবী (স) তাহার মানসিক অবস্থঅর প্রতি লক্ষ্য করিয়া হযরত ওমর (রা) –কে তিরস্কার করিতে নিষেধ করিলেন।
কবর যিয়ারতের অবস্থাও এইরূপ। নারী-হৃদয় বড়ই কোমল। আপন মৃত প্রিয়জনের স্মরণ তাহাদের হৃদয়ে গভীর রেখাপাত করে। তাহাদের এই শোকাবেগ উপেক্ষা করা শরীয়ত প্রণেতা ভাল মনে করেন নাই। কিন্তু একথা স্পষ্ট করিয়া বলিয়া গিয়াছেন যে,নারীদের বেশী বেশী কবরে যাওয়া নিষিদ্ধ। তিরিমিযীতে হযরত আবু হুরায়রা (রা) হইতে একটি হাদীস বর্ণিত আছেঃ
(আরবী*******************************************)
নবী (স) অধিক কবর যিয়ারত কারিণীর প্রতি অভিসম্পাত করিয়াছেন।
হযরত আয়েশা (রা) তদীয় ভ্রাতা হযরত আবদুর রহমান বিন আবু বকর (রা) –এর কবরে গমন করিবার পর বলিলেন, আল্লাহর কসম, যদি আমি তোমার মৃত্যুর সময় উপস্থিত থাকিতাম, তাহা হইলে তোমার কবর যিয়ারতে আসিতাম না। -তিরমিযী
আনাস বিন মালিক বলেন যে, একদা নবী (স) একজন স্ত্রীলোককে কবরের পার্শ্বে উপবেশন করিয়া কাদিতে দেখিয়া নিষেধ করিলেন না। শুধু বলিলেন, ‘আল্লাহকে ভয় কর এবং ধৈর্য ধারণ কর’।
এই নির্দেশাবলী সম্পর্কে চিন্তা করিয়া দেখুন। নামায একটি পবিত্র ইবাদাত। মসজিদ একটি পূণ্যস্থঅন। হজ্জে মানুষ পবিত্র চিন্তাধারা সহকারে আল্লাহর দরবারে হাযির হয়। জানাযায় ও কবরের পার্শ্বে প্রত্যেক মানুষেল মনে মৃত্যুর কথা উদিত হয় এবং শোকে-দুঃখে মন অভিভূত হয়। এই সকল অবস্থায় যৌন-বাসনা একেবারে লোপ পায় অথবা থাকিলেও তাহা অন্যান্য পবিত্র ভাবাবেগ দ্বারা প্রভাবিত হয়। কিন্তু তথাপিও এই সকল সমাবেশে শরীয়ত নারী-পুরুষের সংমিশ্রণ পসন্দ করে নাই। পরিস্থিতির পবিত্রতা, উদ্দেশ্যের নির্মলতা এবং নারীদের ভাবাবেগ লক্ষ্য করিয়া নারীদের গৃহের বাহিরে যাওয়ার তো অনুমতি দিয়াছেন এবং কোন কোন সময়ে স্বয়ং সংগে করিয়া লইয়া গিয়াছেন;কিন্তু পর্দার প্রতি এত বাধা-নিষেধ আরোপ করিয়াছেন যে, অনাচার-অমংগলের ক্ষীণ আশংকাও বাকী রহিল না। অতপর হজ্জ ব্যতীত অন্যান্য ব্যাপারে ইহা ঘোষণা করা হইল যে, নারীদের এ সকল কাজে অংশ গ্রহণ না করাই অধিকতর শ্রেয়।
যে আইনের এহেন প্রবণতা, আপনি কি আশা করিতে পারেন যে, ইহা স্কুল-কলেজে, অফিস-কারখানায়, পার্ক ও প্রমোদ কাননে, সিনেমা ও রংগমঞ্চে, কফিখানায় ও নৃত্যশালায় স্ত্রী-পুরুষের মিশ্র সমাবেশ জায়েয রাখিবে?
যুদ্ধে নারীদের অংশ গ্রহণ
পর্দার সীমারেখা ও কড়াকড়ি আপনি লক্ষ্য করিলেন। এখন দেখুন কোথায় এবং কি কারণেইহা লাঘব করা হইয়াছে। মুসলমান যুদ্ধে লিপ্ত হয় সর্বসাধারণের এক বিপদ সংকুল অবস্থায়। পরিস্থিতি দাবি করে যে, জাতির সমগ্র শক্তি আত্মরক্ষায় ব্যয়িত হউক। এই অবস্থায় ইসলাম নারী জাতিকে সার্বজনীন অনুমতি দান করে যে, তাহারা সামরিক সেবায অংশ গ্রহণ করুক। কিন্তু ইহার সংগে সংগে এ সত্যকেও তুলিয়া ধরা হয় যে, যাহাকে মাতা সাজিবার জন্য সৃষ্টি করা হইয়াছে, তাহাকে শিরচ্ছেদ অথবা রক্তা প্রবাহিত করিবার জন্য সৃষ্টি করা হয় নাই। তাহার হস্তে যুদ্ধাস্ত্র তুলিয়া দেওয়ার অর্থ তাহার প্রকৃতিকে হত্যা করা। এইজন্য ইসলাম নারীদিগকে জীবন ও সম্ভ্রম-সতীত্ব রক্ষার্থে কেবল অস্ত্র ধারণ করিতে অনুমতি দিয়াছে। কিন্তু সাধারণভাবে নারীদের নিকটে সৈনিকের কাজ লওয়া এবং তাহাদিগকে সৈন্য বিভাগে ভর্তি করা ইসলামী নীতির পরিপন্থী। যুদ্ধক্ষেত্রে তাহাদের নিকট হইতে এতটুকু সেবা লওয়া যাইতে পারে যে, তাহারা আহত সৈনিকদের ব্যান্ডেজ করিবে, তৃষ্ণার্তদিগকে পানি পান করাইবে, সৈনিকদের জন্য রান্না করিবে এবং সৈনিকদের পশ্চাতে তাহাদের ক্যাম্পের রক্ষণাবেক্ষণ করিবে। এই সকল কাজের জন্য পর্দার সীমারেখা চরমভাবে লাঘব করা হইয়াছে। এই সকল সেবাকার্যের জন্য সামান্য সংশোধনী সহকারে খৃষ্টীয় মঠাধ্যক্ষাদের পোশাক শরীয়ত অনুযায়ী জায়েয হইবে।
হাদীস গ্রন্থাবলী হইতে প্রমাণিত আছে যে, নবী সহধর্মিণীগণ এবং অন্যান্য মুসলমান নারী-নবী(স)-এর সংগে যুদ্ধক্ষেত্রে গমন করিতেন। তাঁহারা তৃষ্ণার্তদিগকে পানি পান করাইতেন এবং আহতদের ব্যাণ্ডেজ করিতেন। পর্দার আদেশ নাযিল হওয়ার পরও এই কাজ চলিয়াছে। -[বুখারী]
তিরমিযী হাদীস গ্রন্থে আছে যে, উম্মে সুলাইম এবং অন্যান্য আনসার রমণী প্রায় যুদ্ধে নবী (স)-এর সহগামিনী হইতেন। বুখারী শরীফে আছে যে, একদা জনৈকা নারী নবী(স)-এর নিকটে আরয করিলেন, ‘আপনি দোয়া করুন আমি যেন সামুদ্রিক যোদ্ধাদের সহগামিনী হইতে পারি’। নবী (স) দোয়া করিলেন (আরবী**********) ‘হে আল্লাহ! তুমি ইহাকে তাহাদের মধ্যে একজন করিয়া দাও’।
ওহুদের যুদ্ধে মুসলমান মুজাহিদগণ দুর্বল হইয়া পড়িলে হযরত আয়েশা (রা) ও উম্মে-সুলাইম স্কন্ধে পানির মশক বহন করত সৈনিকদিগকে পানি পান করাইতেন। হযরত আনাস (রা) বলেন যে, তিনি তাহাদিগকে পায়জামা উত্তোলন করত এমনভাবে দৌড়াইয়া যাতায়াত করিতে দেখেন যে, পায়ের গোছায় নিম্নাংশ অনাবৃত দেখিতে পান। [বুখারী, মুসলিম
২৬৫ পৃষ্ঠা শেষের দিকে] উম্মে সুলাইত নাম্নী অপর এক নারী সম্পর্কে হযরত ওমর (রা) স্বয়ং নবী (স) কে এইরূপ বলিতে শুনিয়াছেন, ওহুদের যুদ্ধে ডানে ও বামে যেদিকে তাকাই,দেখিতে পাই যে, উম্মে সুলায়েত আমার রক্ষণাবেক্ষণের জন্য যুদ্ধে লিপ্ত আছে’। এই যুদ্ধেই রুবাঈ বিনতে মুয়াওয়ায ও তাঁহার সংগে একটি মহিলাদল আহতদের ব্যাণ্ডেজ করার কাজে লিপ্ত ছিলেন। তাঁহারাই আহত সৈনিকদিগকে বহন করত মদীনায় লইয়া যাইতেছিলেন। [বুখারী] হুনাইনের যুদ্ধে উম্মে সুলাইম একটি খঞ্জর হস্তে ইতস্তত ঘুরাফিরা করিতেছিলেন। হুযুর (স) জিজ্ঞাসা করিলেন, ‘একি করিতেছ? তিনি বলিলেন কোন মুশরিক আমার নিকট দিয়া গেলে তাহার পেট চিরিয়া দিব’। [মুসলিম] উম্মে আতিয়া সাতটি যুদ্ধে যোগদান করেন। ক্যাম্পের রক্ষণাবেক্ষণ, সৈনিকদের জন্য আহার রান্না করা এবং আহত ও রোগীদের পরিচর্যার দায়িত্ব তাঁহার উপরে অর্পিত ছিল। [ইবনে মাজাহ] হযরত ইবনে আব্বাস (রা) বলেন যে, যে সকল নারী যুদ্ধক্ষেত্রে এই ধরনের সেবাকার্য করিতেন তাঁহাদিগকে গনীমতের মালের অংশ দেওয়া হইত। -মুসলিম
ইহা হইতে অনুমান করা যাইতে পারে যে, ইসলামী পর্দার ধরন কোন জাহিলী প্রথার ন্যায় ছিল না যে, পরিস্থিতি ও আবশ্যকতা অনুযায়ী তাহাতে কম-বেশী করাই যাইত না। আবশ্যক হইলে উহার সীমারেখা হ্রাস করা যাইতে পারে। শুধু মুখমণ্ডল ও হস্তদ্বয়ই উন্মুক্ত করা যাইবে না; বরং যে সকল অংগ-প্রত্যঙ্গ ‘সতরে আওরাতের অন্তর্ভূক্ত তাহারও কিয়দাংশ প্রয়োজন হইলে উন্মুক্ত করা যাইতে পারে। কিন্তু প্রয়োজন শেষ হইলে পর্দাকে তাহার সেই সীমারেখার মধ্যে প্রতিষ্ঠিত করা চাই যাহা সাধারণ অবস্থায় নির্ধারিত করা হইয়াছে। এই পর্দা প্রথা যেমন কোন জাহিলী প্রথা নহে, ঠিক তেমনই ইহার হ্রাসকরণও জাহিলী-স্বাধীনতার ন্যায় নহে। যুদ্ধের প্রয়োজনে ইউরোপীয় নারিগণ আপন সীমারেখা অতিক্রম করিল। কিন্তু যুদ্ধ শেষে তাহারা পুনরায় সীমারেখার মধ্যে ফিরিয়া আসিতে অস্বীকার করি। মুসলমান নারীদের অবস্থঅ ইহাদের মত নহে।