নারী
মওলানা মুহাম্মাদ আবদুর রহীম
স্ক্যান কপি ডাউনলোড
পূর্ব কথাঃ
নারী ও পুরুষ অখন্ড মানব সমাজের দুটি অঙ্গ। এই দুটি অঙ্গই একে অপরের পরিপূরক। এর কোনটিকে বাদ দিয়ে মানব সমাজ পূর্ণতা অর্জন করতে পারেনা। এ কারণেই নারী পুরুষের সুষম উন্নয়ন সমাজ প্রগতির একটি অপরিহার্য পূর্বশর্ত।
কিন্তু প্রশ্ন হলো, নারী পুরুষের সুষম উন্নয়ন তথা সমাজ প্রগতিতে নারীর ভূমিকা কোথায় ও কতটুকু? এর অর্থ কি নারীকে পুরুষের বিকল্প সত্ত্বা হিসেবে গড়ে তোলা এবং তার উপর একইরূপ দায়িত্ব ও কর্তব্য ভার ন্যস্ত করা? অথবা নারীর নিজস্ব সত্তাকে পুরোপুরি অক্ষুণ্ন রেখে তাকে উন্নয়ন ও প্রগতির ধারাক্রমে সম্পৃক্ত করা? মূলতঃ এ প্রশ্নের সুষ্ঠ জবাবের উপরই নারীর সার্বিক উন্নতি ও অগ্রগতি এবং সমাজ প্রগতিতে তার কাঙ্খিত ভূমিকাটি নির্ভর করে।
মহান ইসলামী চিন্তাবিদ ও দার্শনিক হযরত মওলানা মুহাম্মাদ আবদুর রহীম (রহ) এই গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নটিরই জবাব দিয়েছেন ‘নারী’ শীর্ষক তাঁর মূল্যবান ও গবেষনাধর্মী গ্রন্থটিতে। তিনি জীববিদ্যা, সমাজতত্ত্ব ও ইতিহাস হতে অজস্র তথ্য ও তত্ত্ব উপস্থাপন করে এ সত্যে উপনীত হয়েছেন যে, নারীকে নারী রূপে গণ্য করা এবং তাকে পুরুষের বিকল্প না ভাবাই প্রকৃতি ও বাস্তবতার ঐকান্তিক দাবি। নারীকে তার স্বভাবসম্মত দায়িত্ব পালন করতে দেয়া এবং সমাজ ও প্রগতিতে তার যোগ্য ভূমিকাকে নিশ্চিত করাই মানব জাতির পক্ষে সর্বতোভাবে কল্যাণকর।
এ প্রসঙ্গে তিনি ইসলামে নারীর অধিকার ও মর্যাদা সম্পর্কেও বিস্তৃতভাবে আলোকপাত করেছেন। তিনি স্পষ্টতই বলেছেন যে, ইসলামের দৃষ্টিতে নারীর আসল কর্মক্ষেত্র পরিবার হলেও প্রয়োজনে সে নৈতিক সীমারেখা মেনে সামাজিক কর্মকান্ডেও অংশগ্রহণ করতে পারে। তবে কোন অজুহাতেই সে তার স্বভাবসম্মত দায়িত্ব ও কর্তব্য পরিহার করতে পারে না।
বস্তুতঃ নারী-পুরুষ সম্পর্ক, বিশেষতঃ নারীর অধিকার ও মর্যাদা বিষয়ে ‘নারী’ একখানি অনবদ্য গ্রন্থ। এর পাতায় পাতায় গ্রন্থকারের সংস্কারক, দার্শনিক ও সমাজতাত্ত্বিক মানসের পরিচয় বিধৃত। একজন গবেষকের মন নিয়ে তিনি সমগ্র বিষয়টি পর্যালোচনা করেছেন পুঙ্খানুপুঙ্খরূপে এবং মূল সমস্যার বাস্তবও যুক্তিগ্রাহ্য সমাধান পেশ করেছেন অকুতোভয়ে। সেই সঙ্গে গোটা বিষয়টিকে অনাবিল দৃষ্টিতে গ্রহণ করার জন্য তিনি দেশের নারী সমাজ, সমাজ সংস্কারক ও রাষ্ট্র নায়কদের কাছে রেখেছেন আকুল আবেদন।
মহান আল্লাহ গ্রন্থকারের এই দ্বীনি খেদমত কবুল করুন এবং এর বিনিময়ে তাঁকে জান্নাতুল ফেরদাউসে স্থান দিন, এটাই সানুনয় প্রার্থনা।
মুহাম্মদ হাবীবুর রহমান
চেয়ারম্যান,
মওলানা আবদুর রহীম ফাউন্ডেশন
ঢাকাঃ আগস্ট, ১৯৯৪
শুরু কথা
‘নারী’ আমার সত্তর দশকের মাঝামাঝি সময়ে লিখিত অতি গবেষণাপূর্ণ বিপুল তত্ত্ব ও তথ্যসম্বলিত একটি গ্রন্থ। এই গ্রন্থখানি বিশেষভাবে নারী সমাজের এবং সাধারণভাবে দেশের সমাজ সংস্কারক, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ও রাষ্ট্র পরিচালকদের হাতে তুলে দিয়ে নিজের দায়িত্ব পালন ও কিয়ামতের দিন মহান আল্লাহর নিকট জবাবদিহি থেকে নিষ্কৃতি লাভের উপায় হিসেবেই রচনা করেছি। কেননা বাংলাভাষী জনগণের নিকট দুনিয়ার সমস্ত প্রাচীন ও আধুনিক মতাদর্শ ও জীবন ব্যবস্থার মুকাবিলায় তুলনামুলকভাবে উন্নততর ও সার্বিক কল্যাণকর জীবন বিধান দ্বীন ইসলামকে উপস্থাপিত করা এবং তা গ্রহণ ও বাস্তবায়নের জন্য আহবান জানানোই আমার জীবনের একমাত্র সংকল্প ও সাধনা। আমার সমগ্র জীবনে আমি যা কিছু লিখেছি, যত বক্তৃতা ভাষণ দিয়েছি এবং কার্যত যা করেছি, তার সবকিছুরই অন্তর্নিহিত মুখ্য উদ্দেশ্য হচ্ছে এটাই। বর্তমান গ্রন্থখানি সে পর্যায়েই এক নতুন সংযোজন। আমার এ যাবতকালের যাবতীয় কার্যের মধ্যে যে অসম্পূর্ণতা ছিল, এই বইখানির মাধ্যমে তা পূর্ণ হচ্ছে বলে আমি মহান আল্লাহ তা’আলার শোকর আদায় করছি।
মানব সমাজে নারী পুরুষ সমস্যা যে অন্যান্য যাবতীয় সমস্যার মতই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, তা কোন সমাজতত্ত্ববিদই অস্বীকার করতে পারেন না। এই সমস্যার সঠিক, নির্ভুল ও সুষ্ঠু সমাধান না হওয়া পর্যন্ত অন্যান্য কোন সমস্যারই যে নির্ভুল ও যথার্থ সমাধান যে সম্ভব নয়, তা আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি। কিন্তু এই সমস্যার সমাধান উদ্দেশ্যে আমাদের নারী সমাজ, সমাজ সংস্কারক ও সমাজ-দার্শনিক এবং রাষ্ট্র পরিচালকগণ যে পন্থা প্রয়োগ করে আসছেন এবং যেদিকে নারী সমাজকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে, আমার বিচার বিবেচনায় তা অত্যন্ত ভ্রান্তিপূর্ণ। শুধু তাই নয়, বিশেষভাবে নারী সমাজের জন্য এবং সাধারণভাবে গোটা মানবতার জন্য তা অত্যন্ত মারাত্মক বলে আমি মনে করি। আমার ধারণা, সমাজ ও রাষ্ট্র চালকরা কথিত সমাধান দিয়ে নারী সমাজের এতটুকু কল্যাণ সাধন করছেন না; বরং তারা যে ব্যাপক ও চরম বিপর্যয়ের দিকেই সমাজকে ঠেলে দিচ্ছেন-এ কথা আমি স্পষ্ট করেই বলতে চাই। তার পরিবর্তে বিশ্বস্রষ্টা মহান আল্লাহ তায়ালা যে পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধান দিয়েছেন নবী রাসূলগণের এবং সর্বশেষ নবী রাসূল হযরত মুহাম্মদ (স) এর মাধ্যমে, যা কুরআন মজীদ ও নির্ভুল হাদীস সমূহে বিধৃত-তা-ই যে সঠিক ও নির্ভুল এবং ইহ-পরকালের দৃষ্টিতে পূর্ণমাত্রায় কল্যাণকর, এই উদাত্ত ঘোষণাই আমি দিয়েছি এই গ্রন্থখানির মাধ্যমে। দেশের জনগণ, নারীসমাজ ও রাষ্ট্র পরিচালকদের নিকট আমি এই সমাধান গ্রহণ ও বাস্তবায়নের জন্য আকুল আহবান জানাচ্ছি।
আমার উদ্দেশ্য কতটুকু সফল হয়েছে, তা পাঠকেরই বিবেচ্য।
মুহাম্মাদ আবদুর রহীম
১১ই সেপ্টেম্বর, ১৯৭৭
২০৮, নাখালপাড়া, তেজগাঁও, ঢাকা।