তালাকের ব্যবস্থা
ইসলামের দৃষ্টিতে বিয়ের আসল উদ্দেশ্য হল নারী পুরুষের যৌন জীবনকে সুসংহত শৃঙ্খলাবদ্ধ করার সঙ্গে সঙ্গে সুখী ও শান্তিপূর্ণ জীবন যাপনের সুযোগ সৃষ্টি করে দেওয়া। এজন্য স্বামী স্ত্রীর পারস্পরিক সহযোগিতা ও আন্তরিক সৌহার্দ্য অত্যন্ত জরুরী শর্ত। কিন্তু কোন কারণে যদি স্বামী স্ত্রী বনিবনা না হয়, তাহলে উভয়কে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবার অধিকার দেয়া হয়েছে, যেন প্রত্যেকেই অন্যত্র সুখ ও শান্তির সন্ধান করে নিতে পারে। শুধু যৌন শক্তি না থাকা বা সম্প্রীতি না হওয়ার দরুণই নয়, কারুর দেহে কোন ঘৃণ্য সংক্রামক ব্যাধি দেখা দিলেও পরস্পর ত্যাগ করার অধিকার রয়েছে। কেননা এ সবের কারণে পারস্পরিক সৌহার্দ্য-সম্প্রীতির অবমাননা হতে পারে। আর তাহলে বিবাহিত জীবনের লক্ষ্যই নষ্ট হয়ে যায়। তবে কোন সঙ্গত কারণ ছাড়াই বিয়ে ভেঙ্গে দেওয়াকে আদৌ সমর্থন দেয়া হয় নি। নবী করীম (সা) বলেছেনঃ
আরবী (*********)
‘যেসব স্ত্রীলোক সঙ্গত কারণ ছাড়াই স্বামী পরিত্যাগ করতে সচেষ্ট হয়, তারা মুনাফিক।’- নাসায়ী।
অপর হাদীসে ঘোষণা করা হয়েছেঃ
আরবী (*********)
‘কোন প্রকৃত কারণ ব্যতীত যে স্ত্রী লোক স্বামীর নিকট তালাক চাইবে, তার জন্যে জান্নাতের সুগন্ধীও হারাম হয়ে যাবে।’
তৃতীয় এক হাদীসে বলা হয়েছেঃ
আরবী (**********)
‘যে ব্যক্তি বিয়ে করে স্ত্রীর নিকট থেকে স্বীয় যৌন কামনা বাসনা চরিতার্থ করল এবং তার পরে বিনা কারণে তালাক দিয়ে দিল, মহরানাও মেরে দিল, সে আল্লাহর নিকট কঠিন ও অতিবড় গুনাহ করল।’-মুস্তাদরাকে হাকেম।
ইসলামী সমাজে নারী পুরুষের অবৈধ সম্পর্ক যেমন নিষিদ্ধ ও আকর্ষণীয়, তেমনি বৈধ সম্পর্ক খুবই সম্মানজনক ও শ্রদ্ধেয়। এই কারণে কুরআন মজীদে ঘোষণা করা হয়েছেঃ ‘স্বামী সম্পন্ন মেয়েলোকেরা তোমাদের জন্য হারাম।’ তা হালাল নয় এই জন্য যে, তা হালাল হলে নারী পুরুষের বৈধ সম্পর্ক অচল ও বিঘ্নিত হয়ে যাবে। নবী করীম (সা) বলেছেনঃ
আরবী (************)
‘যে লোক কোন স্ত্রীলোককে তার স্বামী প্রতি বীতশ্রদ্ধ ও বিরক্ত মুখ বানায়, সে আমার সমাজভুক্ত নয়।’
সামাজিক চেতনা
মানুষ যেমন পরিবেশ দ্বারা প্রভাবিত, তেমনি পরিবেশের উপর প্রভাব বিস্তারকারীও। সমাজের কোন লোক উন্নত চরিত্রে ভূষিত হলে তার প্রভাবে সমাজের অন্যান্য লোকও গভীরভাবে প্রভাবিত ও অনুপ্রাণিত হয়। পক্ষান্তরে চরিত্রহীন ব্যক্তিও প্রভাবহীন থাকেনা। এই কারণে ইসলাম প্রতিটি ব্যক্তির মধ্যে এই চেতনা জাগ্রত করতে চায় যে, সে সমাজের একজন স্থপতি-সমাজের নির্মাতা। তার ভাল বা মন্দ হওয়ার উপর সমাজের ভাল-মন্দ নির্ভর করে। অতএব, তাকে শুধু ব্যক্তিগতভাবে চরিত্রবান হলেই চলবে না, চরিত্রের শিক্ষাগুরুও হতে হবে। এই পর্যায়ের নবী করীম (সা) এর একটি দীর্ঘ হাদীস বিশেষভাবে উল্লেখ্য। তিনি বলেছেনঃ
আরবী (**********)
‘জেনে রেখ হে মানুষ! তোমাদের প্রতিটি ব্যক্তিই দায়িত্বশীল এবং সে দায়িত্বের ব্যাপারে অবশ্যই জিজ্ঞাসিত হবে। জনগণের নেতা প্রশাসকও দায়িত্বশীল। প্রতিটি সাধারণ ব্যক্তি তার ঘরের লোকজনের ব্যাপারে দায়িত্বশীল। সেও এই দায়িত্বের জন্য জিজ্ঞাসিত হবে। স্ত্রী তার স্বামী ঘরে সাধারণভাবে সব লোকজনের এবং বিশেষভাবে তার সন্তানদের ব্যাপারে দায়িত্বশীলা। এ বিষয়েও তাকে জিজ্ঞাসবাদ করা হবে। প্রতিটি ব্যক্তির দাস বা চাকর (কর্মে নিয়োজিত)ও তার মনিবের ধন মালের জন্যে দায়িত্বশীল। সেও তার েএই দায়িত্বের জন্য জিজ্ঞাসিত হবে। মোটকথা, সমাজের প্রতিটি ব্যক্তিই কোন না কোন জিনিসের দায়িত্বশীল এবং তাকে সে দায়িত্বের ব্যাপারে অবশ্যই জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।’- বুখারী।
বস্তুত সমাজের চাপ খুবই সুদৃঢ় এবং অপ্রতিহত। সমাজ যদি কাউকে নৈতিকতার মূল্যমান ক্ষুণ্ন ও চূর্ণ করার অনুমতি বা সুযোগ না দেয়, তাহলে কারুর পক্ষে তেমন কোন কাজ করা সম্ভবপর হতে পারে না। কিন্তু সমাজের সাধারণ পরিবেশই যদি খারাপ হয়ে যায়, তাহলে চারিদিকে চরিত্রহীনতা তথা ফিসক ফুজুরীর প্লাবন বয়ে যাওয়াই স্বাভাবিক। কোন নারী চিত্তহারী পোশাক পরে, যৌন উত্তেজক প্রসাধন ও সুগন্ধী ব্যবহার করে যথেচ্ছ চলাফেরা করবে-ইসলামী সমাজে তার সামান্যতম সুযোগ দেয়া হয় নি। প্রতিবেশীর স্ত্রীর চরিত্র রক্ষার উপর বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হয়েছে এবং তার চরিত্র নষ্ট করা ও তার সাথে অবৈধ সম্পর্ক স্থাপনের উপর চরম অভিশাপ উচ্চারণ করা হয়েছে। নবী করীম (সা) বলেছেনঃ ‘দশজন নারীর সাথে ব্যভিচার করা অপেক্ষাও প্রতিবেশীর স্ত্রীর সাথে ব্যভিচার করা অতি বড় গুনাহ।’- মুসনাদে আহমাদ।
ইসলামী আইনের শাসন
ইসলাম নৈতিক শিক্ষা ও সামাজি পরিবেশ সৃষ্টির উদ্দেশ্যে আদর্শ চরিত্রের ব্যক্তি গঠনের মাধ্যমে গোটা সমাজকে তারই ভিত্তিতে গড়ে তুলতে চায়। এ পর্যায়ে আইনের প্রয়োগ সর্বশেষ ও চূড়ান্ত ব্যবস্থা।
মানুষ জন্মগতভাবেই নিজের বাপ মা, ছেলে মেয়ে ও ভাই বোন প্রভৃতি অতি আপনজনের কাছে ঘনিষ্ঠভাবে পরিচিত হয়ে থাকে এবং একত্রে জীবন যাপন করতে বাধ্য হয়। আর এটাই হল প্রতিটি মানুষের নিকটতর পরিবেশ। এই পরিবেশ কেউ নিজে রচনা করে না, স্বাভাবিকভাবেই তা লাভ করে। এই পরিবেশ ভিন্ন মানুষের জীবন যাপন সম্পূর্ণ অসম্ভব এবং কল্পনাতীত। এই পরিবেশই প্রতিটি মানব সন্তানের লালিত পালিত ও বিকশিত হওয়ার আনুকুল্য ও সহায়তা দেয়। এই কারণে এই পরিবেশে পারস্পরিক যৌন সম্পর্ক স্থাপনের আদৌ অবকাশ রাখা হয় নি। রক্ত-সম্পর্কযুক্ত এই নিকটাত্মীয়দের পারস্পরিক বিবাহ সম্পূর্ণ হারাম করে দেয়া হয়েছে, যেন মানব সন্তান জন্মকাল হতেই একটি যৌন কলুষতামুক্ত ও পবিত্র পরিবেশের মধ্যে লালিত পালিত ও বর্ধিত হয়ে উঠতে পারে। এই সীমাবদ্ধ ও নির্দিষ্ট পরিবেশের বাইরে নারী পুরুষের মধ্যে যৌন সম্পর্ক স্থাপনের অনুমতি রয়েছে কেবলমাত্র বিবাহিত হয়ে।
ইসলামী সমাজে গোপন বিয়ে কিংবা বিরামহীন যৌন সম্পর্ক স্থাপনের অবকাশ রাখা হয় নি। কুরআন মজীদে দুটি আয়াতে যৌন সম্পর্ক স্থাপনের জন্য বিয়ের উল্লেখ করে গোপন বন্ধুত্বকে সম্পূর্ণ হারাম ঘোষণা করা হয়েছে।
আরবী (*********)
‘মেয়েরা গোপন প্রণয়কারী হবে না।’-নিসা।
আরবী (**********)
‘পুরুষরা গোপন প্রণয়কারী হবে না।’- মায়েদা।
দুষ্ট প্রকৃতির মানুষ সমাজের চাপ উপেক্ষা বা পরিহার করে এইসব গোপন বন্ধূত্বে উদ্বুদ্ধ হয়ে থাকে। পরিবেশের বন্ধন ও যৌন সম্পর্ক স্থাপনের অনিবার্য পরিণতি ও দায় দায়িত্ব মেনে চলতে প্রস্তুত হয় না বলেই সে গোপন প্রণয়ে প্ররোচিত হয়। এই উচ্ছৃঙ্খলতা ইসলামে আদৌ সমর্থিত নয়। এমনকি কেবলমাত্র একজন পুরুষ ও একজন স্ত্রীলোকের সম্মুখে অনুষ্ঠিত বিয়েও ইসলামী সমাজে সমর্থনযোগ্য বিবেচিত হতে পারে না। আর এ কারণে ইসলামী সমাজে বেশ্যা প্রথারও অবকাশ নেই। ইসলাম পূর্ব জাহিলিয়াতের যুগে বেশ্যাবৃত্তির যেসব আড্ডা বানিয়ে রাখা হয়েছিল, ইসলাম তা সমূলে উৎখাত করেছে। ইসলামী সমাজে কোন লোক তার স্ত্রী কিংবা দাসীকে এই কাজে নিযুক্ত করতে পারে না। এই ধরনের লোক ইসলামী সমাজে বসবাস করারও যোগ্য বা অধিকারী নয়।
নারী পুরুষের যৌন চরিত্র পবিত্র রাখার উদ্দেশ্যে ইসলাম তাদের অবাধ মেলামেশাকে সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করে দিয়েছে। আগুন আর শুষ্ক কাষ্ঠের পাশাপাশি অবস্থান যে সর্বধ্বংসী প্রলয়ের সৃষ্টি করবে, তাতে কার সন্দেহ থাকতে পারে? প্রয়োজনে নারীদেরও ঘরের বাইরে যাওয়ার ও পথে ঘাটে চলাফেরা করার অধিকার আছে; কিন্তু ভিন পুরুষদের সাথে ঘনিষ্ট হয়ে চলাফেরার কোন অনুমতি নেই। হাদীসে উদ্বৃত হয়েছেঃ
আরবী (*********)
‘কোন পুরুষ দুইজন গায়র মুহাররাম মেয়েলোকের মাঝখানে বা তাদের সাথে ঘনিষ্ট হয়ে চলবে, তা নবী করীম (সা) নিষেধ করে দিয়েছেন।’-আবু দাউদ।
এই কারণে ইসলামী সমাজে নারীদের পথে ঘাটে অবাধে ও যত্রতত্র যাতায়াতকে পছন্দ করা হয় নি। হযরত আলী (রা) একবার লোকদের বলেছিলেনঃ
আরবী (*********)
‘আমি জানতে পেরেছি, তোমাদের মেয়েরা বাজারে বের হয়ে পর-পুরুষের ভিড়ের মধ্যে পড়ে যায়। এতে কি তোমাদের লজ্জা করে না?’-আবু দাউদ।
অপর এক হাদীসে বলা হয়েছেঃ
আরবী (***********)
‘যে মেয়েলোক সুগন্ধী মেখে পুরুষদের মজলিসে গিয়ে সংমিশ্রিত হয়, সে তো যা তা অর্থাৎ ব্যভিচারিণী।’- তিরমিযী।
সুগন্ধি ব্যবহার করে মজলিসে গিয়ে নামাযে শরীক হতেও নবী করীম (সা) মেয়েদের কঠোরভাবে নিষেধ করেছেন।
আল্লামা ইবনুল হুম্মাম লিখেছেনঃ
আমরা যখন বলি যে, নারীদেরও ঘরের বাইরে যাওয়ার অধিকার আছে, তখন সেই সঙ্গে এই কথাও বলি যে, তারা চিত্তহারী সাজ-সজ্জা করে বাইরে যাবে না। পুরুষদের দৃষ্টি আকর্ষণমূলক কোন ভাব-ভঙ্গিও গ্রহণ করতে পারবে না। বরং সর্বাঙ্গ ও মুখাবয়ব সম্পূর্ণ আবৃত করেই মেয়েদের ঘরের বাইরে যাওয়া উচিত।
ইমাম ইবনেল কাইয়্যেম লিখেছেনঃ
হাটে বাজারে, উন্মুক্ত স্থানে ও পুরুষদের সমাবেশে নারী পুরুষের অবাধ মেলামেশা বন্ধ করে দেয়া সরকারের কর্তব্য। অবাধে মেলামেশা করতে দিলে সরকার বা কর্তৃপক্ষকে আল্লাহর নিকট জবাবদিহি করতে হবে। কেননা তা এক কঠিন বিপদের কারণ।
নবী করীম (সা) বলেছেনঃ
পথে-ঘাটে মেয়েলোকদের কর্তব্য হচ্ছে পুরুষদের এড়িয়ে পাশ কাটিয়ে চলা। নারীদের ভূবন মোহিনী সাজ সজ্জায় সজ্জিত হয়ে এবং নগ্নপ্রায় পরিচ্ছদ পরিধান করে ঘরের বাইরে যাওয়া হতে বিরত রাখাও সরকারের কর্তব্য।–আততুরকুল হুকমিয়া।
নগ্নতা ও অশ্লীলতা বন্ধকরণ
নগ্নতা, অশ্লীলতা ও পাপাচারের ব্যাপক প্রচার নারী পুরুষের অবাধ মেলামেশার চাইতে কোন অংশেই কম মারাত্মক নয়। মানুষের সুস্থ ও পরিচ্ছন্ন চিন্তাধারাকে বিভ্রান্ত করার ব্যাপারে সিনেমা, রেডিও, টিভি, পত্র-পত্রিকা ইত্যাকার মাধ্যমগুলোর প্রচারণা খুব বেশি প্রভাবশালী হয়ে থাকে। এদের প্রচার প্রোপাগান্ডাই মানুষের মন মগজ গঠন করে, তাকে সক্রিয় রাখে। আর এই মন মগজকে কোন পথে প্রয়োগ করতে হবে, তাও নির্ধারণ করে দেয় এই প্রচার মাধ্যমসমূহ।
প্রচার মাধ্যমসমূহ যৌন উত্তেজনামূলক প্রচারণায় মশগুল ও ব্যতিব্যস্ত থাকলে সেই পরিমন্ডলে কারুর পক্ষেই সৎ ও পবিত্র জীবন যাপন করা সম্ভবপর হতে পারে না। কেননা মানুষের মন-মানসে সিনেমা, রেডিও, টেলিভিশন ও পত্র পত্রিকার প্রভাব অত্যন্ত ব্যাপক ও সুদূরপ্রসারী। যে সমাজের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহে নৈতিক চরিত্রের পবিত্রতা সম্পর্কে কোন ধারণাই পোষণ করা হয় না, বেতার যন্ত্র, টেলিভিশন ও পত্র-পত্রিকা চরিত্রহীনতা ও অশ্লীলতার প্রচারণা চালায় –সাহিত্য ও সংস্কৃতির নামে যেখানে যৌন উত্তেজক পরিবেশ অহর্নিশ গড়ে উঠছে, সেখানে মানুষ ব্যভিচারের কর্দমাক্ত খাদে নিপতিত হবে না, তা কল্পনা করাও অসম্ভব। যে সমাজে দিন রাত ঘরে বাইরে নিভৃত একাকীত্বে ও প্রকাশ্য জন-সমাবেশে লালসা চরিতার্থ করার নির্বিরোধ আহবান ও আকর্ষণ বিদ্যমান, সে সমাজে মানুষ পাশবিকতায় লিপ্ত হলে বিস্ময়ের কোন কারণ নেই।
ইসলামের পূর্বে আরব-জাহিলিয়াতের অবস্থা এমনিই ছিল। সেই পন্কিল পরিবেশকে পবিত্র ও শুচি-শুদ্ধ করার উদ্দেশ্যে কুরআন মজীদে ঘোষণা করা হলঃ
إِنَّ الَّذِينَ يُحِبُّونَ أَن تَشِيعَ الْفَاحِشَةُ فِي الَّذِينَ آمَنُوا لَهُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌ فِي الدُّنْيَا وَالْآخِرَةِ ۚ وَاللَّهُ يَعْلَمُ وَأَنتُمْ لَا تَعْلَمُونَ [٢٤:١٩]
‘যে সব লোক ঈমানদার লোকদের মধ্যে নির্লজ্জতা ও অশ্লীলতার প্রচার পছন্দ করে, তাদের জন্য ইহকাল ও পরকাল উভয় স্থানেই কষ্টকর আযাব নির্দিষ্ট হয়ে আছে। (কোনটা নির্লজ্জতা ও অশ্লীল) তা আল্লাহই জানেন, তোমরা জান না।’- সূরা নূর: ১৯।
অতএব আল্লাহ যাকে অশ্লীল ও নির্লজ্জতা বলে চিহ্নিত করে দিয়েছেন, তার প্রচার কোন ঈমানদার লোকই বরদাশত করতে পারে না-চাইতে বা পছন্দ করতেও পারে না। তাই ইসলামী সমাজে এই নির্লজ্জতা ও অশ্লীলতার প্রচারকে আদৌ সমর্থন করা হয় নি। শুধু তা-ই নয়, তার জন্য শাস্তিও নির্দিষ্ট হয়ে আছে। এমনকি স্বামী স্ত্রীর পারস্পরিক যৌন কার্যাবলীর প্রচার করাও নিষিদ্ধ।
এভাবেই ইসলাম ব্যভিচারের সম্ভাব্য সব পথ বন্ধ করে দিয়েছে। এতদসত্বেও কোন ব্যক্তি যদি এই অপরাধ করার দুঃসাহস দেখায়, তাহলে পূর্ণ শক্তিতে তাকে দমন করা ও ব্যভিচারকে চিরতরে নির্মূল করে দেয়া একান্তই বিধেয়। যে সব লোক সমাজকে কলুষিত করতে বদ্ধপরিকর, সমাজ থেকেই তাদের বিতাড়িত করতে হবে। এই পথে যে লোক যতটা দৃষ্টতা দেখাবে, ইসলামের আইন তার জন্য ততটা কঠোর ও নির্মম হয়ে দেখা দিবে, এটাই স্বাভাবিক। নারী পুরুষের অবৈধ প্রেম চর্চাকারীকে নির্বাসিত করা এবং যারা কার্যত ব্যভিচারে লিপ্ত হয়, তাদের প্রকাশ্যভাবে দোররা মেরে শাস্তি দিতে হবে। আর যে লোক বিবাহিত হওয়া সত্ত্বেও যৌন কামনা পরিপূরণে অবৈধ পন্থা অবলম্বন করবে, ইসলামী সমাজে তার বেঁচে থাকারও অধিকার স্বীকৃত হতে পারে না। কুরআন মজীদে এই পর্যায়ে ঘোষণা করা হয়েছেঃ
الزَّانِيَةُ وَالزَّانِي فَاجْلِدُوا كُلَّ وَاحِدٍ مِّنْهُمَا مِائَةَ جَلْدَةٍ ۖ وَلَا تَأْخُذْكُم بِهِمَا رَأْفَةٌ فِي دِينِ اللَّهِ إِن كُنتُمْ تُؤْمِنُونَ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ ۖ وَلْيَشْهَدْ عَذَابَهُمَا طَائِفَةٌ مِّنَ الْمُؤْمِنِينَ [٢٤:٢]
‘ব্যভিচারী নারী ও পুরুষ প্রত্যেককেই একশটি করে দোররা মারো এবং আল্লাহর দ্বীনের আইন কার্য্কর করার ব্যাপারে এতদুভয়ের প্রতি কোনরূপ অনুকম্পা যেন তোমাদের বিচলিত না করে-যদি তোমরা আল্লাহ ও পরকালের প্রতি ঈমানদার হয়ে থাক। আর এই দুইজনের শাস্তি একদল মুমিন প্রত্যক্ষ করবে।’ (সূরা নূর:২)।
নবী করীম (সা) এই আয়াতের ব্যাখ্যা করে বলেছেনঃ এই শাস্তি অবিবাহিত ব্যভিচারীদের জন্য। কিন্তু যারা বিবাহিত, তারা ব্যভিচারে লিপ্ত হলে তাদের জন্যঃ
আরবী (************)
একশটি দোররা মারার পর পাথরাঘাতে জীবন হরণ।
অবশ্যই পাথর মেরে জীবন হরণের পূর্বে দোররা মারতেই হবে, এমনটা অনেকেই জরুরী মনে করেন নি।
এই দীর্ঘ ও বিস্তারিত আলোচনা হতে একথা নিঃসন্দেহে প্রমাণিত হয়েছে যে, যৌন আস্বাদনের স্বাভাবিক স্পৃহাকে ইসলাম একটা নির্দিষ্ট ক্ষেত্রের মধ্যেই সীমাবদ্ধ করে দিয়েছে। আর তা হল বিবাহিত জীবন। বিবাহহীন অবস্থায় নারী পুরুষের যৌন মিলন নিতান্ত পাশবিকতা, মানব সমাজে ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ। এই অপরাধ দমন করার জন্য তার উদ্বোধক সব পথকে রুদ্ধ করে দেয়া ঈমানদার মুসলমানের পরম দায়িত্ব।
মোট কথা, ইসলাম মানুষকে পবিত্র ও চরিত্রসম্পন্ন করেই জীবিত রাখতে চায়। যারা চরিত্রের পবিত্রতা বিনষ্ট করতে সচেষ্ট, ইসলাম তাদের আদৌ বরদাশত করতে প্রস্তুত নয়। কেননা, তারা মানবতার দুশমন।