কর্মক্ষেত্রে নারী
নারী সমাজের কর্মতৎপরতা কেবলমাত্র বিদ্যাশিক্ষা, জ্ঞান অর্জন ও চিন্তা গবেষণার ক্ষেত্র পর্যন্তই সীমাবদ্ধ থাকবে, ইসলাম এমন কথা বলে নি। বাস্তব কাজে যথার্থ ভূমিকা পালনের জন্যও ইসলাম এক বিস্তীর্ণ ক্ষেত্র তাদের জন্য উন্মুক্ত করে দিয়েছে। ইসলামের দৃষ্টিতে নারী যেমন জ্ঞান বিজ্ঞান শিক্ষা লাভে অগ্রসর হতে পারে, তেমনি কৃষি ও ব্যবসায়ের কাজে অংশগ্রহণ করারও তারা সম্পূর্ণ অধিকারী। জীবিকার জন্য বিভিন্ন কাজ কারবার, শিল্প কারখানা স্থাপন, পরিচালন বা তাতে কাজ করারও অধিকার নারীদের। সেই সঙ্গে সমাজ ও জাতির বহুবিধ সামষ্টিক কাজ আঞ্জাম দেয়াও তাদের জন্যে কিছুমাত্র নিষিদ্ধ নয়। কিন্তু তার অর্থ এই নয় যে, নারীদের এসব কাজে অবশ্যই নেমে যেতে হবে এবং এসব করা তাদের জন্য একান্তই জরুরী করে দেয়া হবে। বস্তুত অনুমতি এক কথা আর বাস্তবে তা চর্চা করা একান্তই জরুরী হওয়া সম্পূর্ণ ভিন্ন কথা। নারীরা এসব কাজে ঝাঁপিয়ে পড়ুক, ইসলামে তা কাম্য নয়। নারীদের মাঝেও এ ধরনের কাজে অংশগ্রহণের আগ্রহ-উৎসাহ থাকতে পারে। সেক্ষেত্রে কাউকে নিরুৎসাহিত করা ইসলামের রীতি নয়। সে উৎসাহ উদ্দীপনা নির্মুল করতে চেষ্টাও করেনি ইসলাম। বরং তার বাস্তব চরিতার্থতার অনুমতিটুকু দিয়ে রাখা হয়েছে মাত্র। তার অর্থ, একান্ত অপরিহার্য হয়ে পড়লে নারী এই অনুমতির সুযোগ গ্রহণ করতে পারে অকুন্ঠ চিত্তে।
দৃষ্টান্তস্বরূপ একটি ঘটনার উল্লেখ করা যায়। রাসূলে করীম (স) একবার জিহাদে গমনকারী লোকদেরকে সামুদ্রিক সফর করার বিরাট সওয়াব ও মর্যাদার কথা বললে উম্মে হারাম নাম্নী এক মহিলা সাহাবী বললেনঃ ‘হে রাসূল! দোয়া করুন, আমিও যেন এই জিহাদে শরীক হতে পারি।’ রাসূলে করীম (সা) ও তাই করলেন। অথচ এটা জানা কথা যে, জিহাদে গমন নারীদের জন্য ফরজ করা হয় নি। এ থেকে ইসলামী জীবন ব্যবস্থার মেজাজ প্রকৃতি স্পষ্টত ফুটে ওঠে। সামাজিক সামষ্টিক কাজ হতে নারীরা সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন থাকুক কিংবা তার প্রতি তাদের কোন কৌতুহল ও আগ্রহ উৎসাহ থাকবে না, তা ইসলামে আদৌ কাম্য নয়। তাদের জন্য স্থায়ীভাবে নির্দিষ্ট কর্মক্ষেত্রের মধ্যেই তাদেরকে চিরজীবন সীমাবদ্ধ হয়ে থাকতে হবে, তার বাইরে তারা উঁকি মেরেও তাকাবে না, ইসলামে তাও কোন পছন্দনীয় ব্যাপার নয়। কিন্তু সামাজিক-সামষ্টিক কাজকর্মে কর্মীদের যেসব মৌলিক গুণ ও যোগ্যতা ক্ষমতা স্বভাবতই থাকা দরকার, নারীদের তা খুব কমই থাকে বলে স্বভাবসম্মত জীবন ব্যবস্থা হিসেবে ইসলাম নারীদের ওপর এই কাজের দায়িত্ব চাপিয়ে দেয় নি। এই পর্যায়ের গুণ বৈশিষ্ট্য, যোগ্যতা ও কর্মক্ষমতা মানুষের মধ্যে সৃষ্টি হয় বিরোধী শক্তির সাথে নিরন্তর দ্বন্ধ ও সংগ্রামে লিপ্ত থাকার মাধ্যমে। কিন্তু নারীদের পক্ষে নিজেদের স্বাভাবিক দায়-দায়িত্ব পালন করার সঙ্গে সঙ্গে এই দ্বন্ধ-সংগ্রামে লিপ্ত সুযোগ খুব বেশি হওয়া কিছুমাত্র স্বাভাবিক নয়। এই কারণে তাদের পক্ষে সামাজিক সামষ্টিক কার্যাবলীতে কার্যত অংশগ্রহণ পছন্দ করা হয় নি। পছন্দ করা হয়নি এ কারণেও যে, নারীরা যদি তাই করতে যায়, তাহলে পারিবারিক দায়িত্ব, সন্তান গর্ভধারণ, প্রসব ও শিশু লালন-পালন তথা মত মানব বংশের ধারা অব্যাহত রাখার পক্ষে একান্তই জরুরী কার্যাবলী সম্পূর্ণ ব্যাহত হবে; তা থাকবে সম্পূর্ণ উপেক্ষিত ও অবহেলিত, তাতে কোনই সন্দেহ নেই। সেই সঙ্গে পারিবারিক জীবনের সব সুখ শান্তি, বিশ্বস্ততা, পবিত্রতাও নিঃসন্দেহে ক্ষুণ্ন হবে এতে। এই কারণে নারীদেরকে কঠিন অশান্তি ও দুঃখ-দুর্দশা থেকে রক্ষা করার উদ্দেশ্যেই তাদেরকে শান্তিপূর্ণ ঘর সংসার থেকে টেনে বাইরে নিয়ে এসে দুঃসহ অবস্থার সম্মুখীন করে দেয়াকে ইসলাম সমর্থন করে নি। তাই বলছিলাম, বাইরের কাজ কর্মে অংশগ্রহণ করতে নারীদের নিষেধ করা না হলেও –বরং তার অনুমতি দেয়া সত্ত্বেও –সাধারণভাবে তাদের জন্যে তা পছন্দ করা হয় নি। তবে তার অর্থ এ-ও নয় যে, নারীরা ঘরের বাইরে কখনই যাবে না, এবং বাইরের দরকারী কাজও তারা করবে না।
একজন মহিলা সাহাবী তালাকপ্রাপ্তা হয়ে ইদ্দত পালনকালে ঘরের বাইরে গিয়ে নিজের বাগানের খেজুর গাছের ডাল কেটে বিক্রী করার অনুমতি চাইলে রাসূলে করীম (স) জবাবে বললেনঃ আরবী (*******)
-ক্ষেতে যাও, অতঃপর নিজের খেজুর গাছ কাট (আর বিক্রী কর)। এই টাকা দ্বারা সম্ভবত তুমি দান খয়রাত অথবা অন্য কোন ভাল কাজ করতে পারবে। (আর এভাবে তা তোমার পরকালীন কল্যাণ লাভেরও নিমিত্ত হবে।)
একথা বলে নবী করীম(স) হযরত জাবির (রা) এর খালাম্মাকে মানবতার কল্যাণমূলক কাজ করার জন্যে উৎসাহ দিলেন। এর তাৎপর্য ইসলামী শরীয়তে নারী সমাজকেও মানবতার খেদমত ও কল্যাণমূলক কাজে নিয়োজিত দেখতে চায়। কিন্তু তাতে যেন কখনই সীমা লংঘিত না হয়, সেদিকে ইসলামের সতর্কতা কারুরই অজানা নয়।
ঘরের বাইরে কর্মতৎপরতা
উপরোদ্ধৃত হাদীসটি থেকে এও জানা যায়, সৎ ও কল্যাণমূলক কাজের উদ্দেশ্যে নারীরা ঘরের বাইরে যেতে পারে। প্রাথমিককালের মুসলিম মহিলারা প্রয়োজনের তাগিদে ঘরের বাইরে, হাটে বাজারে ও ক্ষেতে খামারেও চলে যেতেন। এই ব্যাপারে বিশেষ কোন ধরনের নিষেধ ছিল না।
পর্দার বিধান নাযিল হওয়ার পর হযরত উমার (রা) হযরত সওদা (রা) কে ঘরের বাইরে দেখতে পেয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেন। হযরত সওদা এই ব্যাপারটি নবী করীম (স) এর নিকট প্রকাশ করেন। কিছুক্ষণ পরই নবী করীম (স) এর প্রতি অহি নাজিল হয়। তখন তিনি হযরত সওদা (রা) কে ডেকে বললেনঃ আরবী (******)
-“হ্যাঁ, প্রয়োজনে ঘরের বাইরে যাওয়ার অনুমতি তোমাদের জন্য রয়েছে, এতে কোন সন্দেহ নেই।”
রাসূলের সময়কার মুসলিম মহিলাদেরকে কর্মতৎপরতা দেখে একথা বলিষ্ঠভাবেই বলা যেতে পারে যে, মুসলিম মহিলারা কাজের প্রয়োজনে ঘরের বাইরে যেতে পারেন। ইসলামী সমাজে এ ব্যাপারে কোন প্রতিবন্ধকতার অবকাশ নেই। প্রাথমিক যুগের ইসলামী সমাজে মহিলারা চাষাবাদের কাজও করতেন, গৃহপালিত জন্তু পালনের কাজও করতেন। হযরত আবু বকর সিদ্দীক (রা) এর কন্যা হযরত আসমা (রা) ছিলেন হযরত জুবাইর (রা) এর স্ত্রী। তিনি নিজেই তাঁর ঘোড়াকে খাবার দিতেন, পানি পান করাতেন। এছাড়া ঘরের যাবতীয় কাজও তাঁকেই করতে হত। তিনি নিজে বাড়ী হতে দুই মাইল দূরে অবস্থিত জমি থেকে খেজুর বীজ তুলে আনতেন। যাতায়াতের পথে রাসূলে করীম (স) এর সাথে মুখোমুখি হয়ে যেতেন অনেক সময়। কীলাহ নাম্নী এক মহিলা রাসূলে করীম (সা) এর নিকট উপস্থিত হয়ে বলেনঃ “আমি একজন স্ত্রীলোক। আমি ক্রয়-বিক্রয় অর্থাৎ ব্যবসা করি।’ পরে সে মহিলা রাসূলে করীম (স) এর নিকট ব্যবসায় সংক্রান্ত কয়েকটি মাসালাও জিজ্ঞেস করেন। হযরত উমার (রা) এর খিলাফত আমলে হযরত আসমা বিনতে মুহাররমা (রা) নাম্নী এক মহিলা সাহাবী আতরের ব্যবসা করতেন। উমর বিন তবীযা (রা) একজন দাসী সমভিব্যহারে বাজারে গিয়ে বড় আকারের একটি মাছ ক্রয় করে বাড়ি ফিরে আসছিলেন। পথিমধ্যে হযরত আলী (রা) তাঁকে দেখে জিজ্ঞেস করলেনঃ ‘কত দিয়ে কিনলে? মাছটা তো বেশ বড়। ঘরের সকলেই পেট ভরে খেতে পারবে।
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা) এর বেগম ঘরে বসে নিজে শিল্পকর্ম করতেন এবং তা বিক্রয় করে ঘর সংসারের খরচাদি চালাতেন। একদিন তিনি নবী করীম (সা) এর নিকট উপস্থিত হয়ে বললেনঃ
আরবী (********)
“আমি একজন কারিগর স্ত্রীলোক। আমি তৈরি করা দ্রব্য বিক্রয় করি। এছাড়া আমার, আমার স্বামীর এবং আমার সন্তানদের জীবিকার অন্য কোন উপায় নেই।”
রাসূলে করীম (স) বললেনঃ ‘এভাবে উপার্জন করে তুমি তোমার ঘর সংসারের প্রয়োজন পূরণ করছ। এতে তুমি বিরাট সাওয়াবের অধিকারী হবে।’
এ আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায়, উপার্জনের জন্য কাজ করা এবং ও সেজন্য ঘরের বাইরে যাওয়া নারীদের জন্য নিষিদ্ধ নয়। তবে তা যে সীমার মধ্যে থেকে করতে হবে এবং তাতে নারী পুরুষের অবাধ মেলামেশার ও বন্ধুতা সখ্যতা করার সুযোগ থাকা চলবে না, একথা খুলে বলার প্রয়োজন পড়ে না।
অধিকার সংরক্ষণঃ
ইসলামী সমাজের নারীদের যে সব অধিকার ও সুযোগ সুবিধা দেয়া হয়েছে, রাসূলের প্রতিষ্ঠিত সমাজে তা তারা পুরোপুরি ভোগ করেছে। কোথাও তাদের এ অধিকার খর্ব করলে কিংবা তাদের ওপর কোনরূপ অবিচার করা হলে তারা তার প্রতিকারের জন্য পূর্ণ বিচক্ষণতা সহকারে চেষ্টা প্রচেষ্টা চালিয়েছে। ইসলামী আইন বিধান সেসব ক্ষেত্রে তাদের চেষ্টা প্রচেষ্টাকে সর্বতোভাবে সফল করার ব্যাপারে পূর্ণ সহায়তা ও সহযোগিতা দিয়েছে।
একটি মেয়েকে তার পিতা আপন ধনাঢ্য ভ্রাতুষ্পুত্রের সাথে বিবাহ দিয়েছিল। কিন্তু কনে বরকে একেবারেই পছন্দ করে নি। মেয়েটি রাসূলে করীম (সা) এর নিকট এ বিষয়ে অভিযোগ তুললে তিনি বললেনঃ “এই বিবাহ রক্ষা করা না করা তোমার ইচ্ছাধীন”। মেয়েটি বললঃ বাবার দেয়া বিবাহ আমি খতম করব না বটে; তবে আমি জানিয়ে দিতে চাই যে, মেয়েদের ইচ্ছা ও পছন্দের বিপরীত তাদের বিয়ে দেয়ার কোন অধিকারই তাদের পিতাদের নেই।
বুরাইরা নাম্নী এক ক্রীতদাসীর বিয়ে হয়েছিল মুগীস নামেক এক ক্রীতদাসের সাথে। কিছুদিন পর বুরাইরা দাসত্ব হতে মুক্তি লাভ করে। তখন সে মুগীসের স্ত্রীত্বাধীন থাকতে অস্বীকৃতি জানায়। এই অস্বীকৃতি ছিল শরীয়তের শ্বাশত বিধানের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ। এই অস্বীকৃতির কথা জানতে পেরে মুগীস দুঃখ ও বেদনায় আর্তনাদ করে ওঠে। সে বুরাইরার পিছনে পিছনে দৌড়াতে থাকে এবং তাকে অনুরোধ করতে থাকে তার এই অস্বীকৃতি প্রত্যাহার করার জন্য। রাসূলে করীম (সা) এই দৃশ্য দেখে সহানুভূতির ভারে বিষন্ন হয়ে উঠেন এবং বুরাইরাকে সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করতে বলেন। বুরাইরা বললঃ এটা কি আপনার আদেশ? জবাবে তিনি বললেনঃ না, আদেশ নয়। কেননা এ ব্যাপারে আদেশ করার কোন অধিকার আমার নেই। তবে আমি মুগীসের জন্য তোমার নিকট সুপারিশ করছি। নবীর সুপারিশ এবং নির্দেশে মৌলিকভাবে কোন পার্থক্য নেই জেনেও বুরাইরা বললঃ ‘না, ওর কাছে আমার কোনই প্রয়োজন নেই।’
বুরাইরার এই অনমনীয়তার মূলে ছিল এই বিশ্বাস যে, ইসলামী শরীয়ত নারী সমাজকে যে অধিকার দিয়েছে, সে অধিকার ভোগ করার জন্য আইনের আনুকুল্যও সে লাভ করবে। এই কারণে সে সম্পূর্ণ নির্ভীকভাবে স্বীয় সিদ্ধান্তে অবিচল। শরীয়ত এ ব্যাপারে নির্বাক হয়ে গেল। –বুখারী, আবুদ দাউদ।
রাসূলে করীম (স) এর জীবনকালে মুসলিম মহিলারা মসজিদে হাজির হয়ে জামা‘আতের সাথে নামায পড়তেন। অবশ্য হযরত উমর ফারূক (রা) নিজে মেয়েদের মসজিদে উপস্থিত হওয়া পছন্দ করতেন না। তাঁর বেগম হযরত আতিকা (রা) ও নিয়মিত মসজিদে নামায পড়তে যেতেন। একদিন হযরত উমর (রা) তাঁকে বললেনঃ ‘তুমি জান যে, তোমার মসজিদে যাওয়া আমি পছন্দ করি না। কিন্তু তা সত্ত্বেও তুমি কেন বিরত থাকছ না?’ জবাবে তিনি বললেন, “খোদার শপথ, আপনি আমাকে স্পষ্টভাবে নিষেধ না করা পর্যন্ত আমি বিরত থাকব না।” বাস্তবিকই তিনি বিরত থাকেন নি। এমন কি, হযরত উমর (রা) মসজিদে আততায়ীর অস্ত্রাঘাতে যখন শহীদ হয়েছিলেন, তখনও তিনি মসজিদে উপস্থিত ছিলেন। -বুখারী।
অন্যকথায়, স্বামী হিসেবে হযরত উমার (রা) নিজের স্ত্রীকে মসজিদে যাওয়া নিষেধ করতে পারতেন এবং সে নিষেধ তিনি মেনে নিতে বাধ্য হতেন। কিন্তু শরীয়াত যেহেতু সাধারণভাবেই মহিলাদেরকে এই অধিকার দিয়েছে, তাই সে অধিকার ভোগ করারও পূর্ণ স্বাধীনতা তাঁর রয়েছে। স্বয়ং রাষ্ট্রপ্রধানও তা থেকে তাকে বঞ্ছিত করতে পারে না।
সামষ্টিকর স্বার্থরক্ষার জন্য চেষ্টা
উপরোক্ত ঘটনাবলী একথা প্রমাণ করেছে যে, ইসলামী সমাজে নারী শরীয়ত প্রদত্ত সব অধিকার অবাধে, নিরুপদ্রবভাবেই ভোগ করার সুযোগ পেয়ে থাকে। ইসলামী সমাজই এই অধিকারের সংরক্ষক। প্রাথমিক কালে যেমন সেই অধিকার পেতে তাদের কোন প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হতে হয় নি, তেমনি হতে হবে না একালের প্রকৃত ইসলামী আদর্শে গঠিত কোন সমাজেও।
সমাজ গঠনে নারীর ভূমিকা
ইসলামী সমাজ গঠনে নারী সমাজের বিরাট অবদান রয়েছে। এ জন্যে তাঁরা বহু দুঃখ-কষ্ট ও ত্যাগ তিতিক্ষা বরণ করতেও কুণ্ঠিত হননি। নিকটাত্মীয়তা ও রক্তের সম্পর্কও এ জন্যে ছিন্ন করতে তাঁরা বিন্দুমাত্র দ্বিধা করেন নি। এমন কি আপন ঘর বাড়ি ত্যাগ করে চলে যেতে কিংবা বহিষ্কৃত হতেও কিছুমাত্র দুর্বলতা বা কাতরতা প্রদর্শন করেন নি। মোটকথা এ পথে যত বাধাই এসেছে, সবকিছু তাঁরা দুপায়ে দলে গেছেন।
মক্কার প্রাথমিক পর্যায়ে যেসব ভাগ্যবতী মহিলা ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন, তাঁদের নির্যাতন ভোগ করার রক্তাক্ত কাহিনী ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লিখিত রয়েছে। হযরত আম্মার (রা) এর জননী ছিলেন একজন ঈমানদার মহিলা। তিনি ছিলেন হযরত হুযাইফা ইবনে মুগিরার ক্রীতদাসী। দ্বীন ইসলাম থেকে তাঁকে বিরত রাখা ও কবুল করা দ্বীন ত্যাগে বাধ্য করার উদ্দেশ্যে তাঁর ওপর অমানুষিক নির্যাতন চালানো হয়। নর পিশাচ আবু জেহেল বল্লমের আঘাতে আঘাতে তাঁকে শহীদ করে ফেলে। ইসলামী ইতিহাসে এই ছিল প্রথম আত্মদান-প্রথম শাহাদাত বরণ। (তাবাকাতে ইবনে সায়েদ)।
হযরত উমর (রা) এর বোন হযরত ফাতিমা বিনতে খাত্তাব ঈমান গ্রহণের পর তাঁর আপন সহোদর ভাই উমর কর্তৃক এমনভাবে প্রহৃত হন যে, তাঁর সমস্ত দেহ রক্তাপ্লুত হয়ে পড়ে। কিন্তু তা সত্ত্বেও তিনি একবিন্দু বিচলিত হননি; বরং তিনি যে দ্বীন-যে কালামের প্রতি ঈমান এনেছিলেন, ভাইকে সে বিষয়ে অবহিত করে শেষ পর্যন্ত তাঁকেও ঈমান আনতে বাধ্য করেছিলেন।
আবূ সুফিয়ান ঈমান আনার পূর্বে মদীনায় রাসূলে করীম (সা) এর ঘরে উপস্থিত হয়ে রাসূলের সজ্জিত বিছানায় আসন গ্রহণ করতে গিয়ে তারই কন্যা উম্মুল মুমিনীন হযরত উম্মে হাবীবা (রা) কর্তৃক অপমানিত হয়েছিল। পিতা ক্ষুব্ধ হয়ে কন্যাকে জিজ্ঞেস করলঃ ‘আমাকে কি এই শয্যার ওপর আসন গ্রহণেরও অনুপযুক্ত মনে কর?’ কন্যা স্পষ্ট কথায় জবাব দিলেন, ‘হ্যাঁ, এটা আল্লাহর রাসূলের বিছানা। একজন মুশরিককে এর উপর বসতে দিয়ে এর পবিত্রতা নষ্ট হতে দিতে আমি প্রস্তুত নই।’
আবূ সাইফীর (রা) কন্যা রকীকা মক্কার সেই সংকটজনক পরিস্থিতিতেই ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন। কুরাইশরা নবী করীম (স) কে হত্যা করার ষড়যন্ত্র করলে তিনিই পূর্বাহ্নে এ বিষয়ে তাঁকে অবহিত করেছিলেন নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে।
উত্তরকালে এ ঈমানদার মহিলারা দ্বীনের ব্যাপারে কাউকে ক্ষমা করেন নি। আপন গর্ভজাতও যদি দ্বীনের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে থাকে কিংবা দ্বীনের একবিন্দু ক্ষতি সাধনে উদ্যোগী হয়ে থাকে, তাহলে তার প্রতিও তাঁরা চরমভাবে কঠোর হয়েছেন এবং কোনরূপ খাতির করতে কিংবা দুর্বলতা দেখাতে প্রস্তুত হননি।
যুদ্ধক্ষেত্রে মুসলিম মহিলা
প্রসঙ্গত একটি কথা সকলেরই মনে রাখা আবশ্যক। আল্লাহ তায়ালা নারী ও পুরুষ সৃষ্টি করে সামাজিক সামষ্টিক কাজের দায়িত্ব উভয়ের মধ্যে বন্টন করে দিয়েছেন। আর এই কর্ম বন্টনে রাষ্ট্রের প্রতিরক্ষার কোন দায়িত্ব প্রত্যক্ষভাবে নারীদের ওপর অর্পণ করা হয়নি। কিন্তু তা সত্ত্বেও খোদার দ্বীনের প্রচার ও প্রতিষ্ঠা প্রচেষ্টার ব্যাপারে ঈমানদার নারী সমাজ কোনক্রমেই নিষ্ক্রিয় বা নিশ্চেষ্ট হয়ে থাকতে পারে না। আর এই কারণে তারাও ইসলামের দুশমনদের বিরুদ্ধে যুদ্ধক্ষেত্রে যেতে প্রস্তুত হয়েছেন। কেননা কুফরীর ঝান্ডা অবনমিত ও পদদলিত করে ইসলামের বিজয় পতাকা উড়ানোর কামনা বাসনা তাদের হৃদয় মনে জাগ্রত হওয়া খুবই স্বাভাবিক। তাই ইসলামের বিজয় ইতিহাসের সোনালী পৃষ্ঠায় পুরুষদের সঙ্গে সঙ্গে নারীদেরও বিরাট কীর্তিকলাপের উল্লেখ পাওয়া যায়।
উম্মে আম্মারা (রা) ছিলেন একজন মহিলা সাহাবী। ওহোদের যুদ্ধে যোগদান করে তিনি পুরুষদের মতই অতুলনীয় বীরত্ব, দুর্দমনীয় সাহসিকতা ও অসাধারণ দৃঢ়তা প্রদর্শন করতে সক্ষম হয়েছিলেন। তিনি ভোরবেলা শয্যা ত্যাগ করে উঠে যেতেন এবং মুজাহিদদের খেদমত করার উদ্দেশ্যে সরাসরি যুদ্ধক্ষেত্রে উপস্থিত হতেন। এই যুদ্ধের প্রথম দিকে মুসলিম বাহিনী বিজয়ের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিলেন। কিন্তু পরে তাদের মধ্যে ব্যাপক বিশৃঙ্খলা দেখা দিল। এই সময়ে তিনি রাসূলে করীম (স) এর নিকট উপস্থিত হয়ে তাঁর প্রতিরক্ষার উদ্দেশ্যে তীর ও তরবারি চালাতে শুরু করে দিলেন। এই সময় শত্রুপক্ষের নিক্ষিপ্ত তীর বল্লমের আঘাতে তাঁহার দেহ ক্ষত-বিক্ষত হয়ে যায়। স্বয়ং নবী করীম (সা)ও তাঁর এই বীরত্বপূর্ণ প্রতিরক্ষা যুদ্ধের কথা উল্লেখ করেছিলেন। বলেছেনঃ আমি ডানে ও বাঁয়ে তাকিয়ে দেখেছি উম্মে আমারা (রা) আমাকে রক্ষা করার জন্য প্রবল বিক্রমে যুদ্ধ করেছেন। তাঁর পুত্রকে আহত করেছিল যে ব্যক্তি, তাকে সামনে পেয়ে তিনি তার উপর ঝাঁপিয়ে পড়লেন এবং ক্রমাগত তীর নিক্ষেপ করে করে তাকে হত্যা করে স্বীয় পুত্রের ওপর আক্রমণের প্রতিশোধ নিয়েছিলেন। একজন অশ্বারোহী শত্রুসৈন্য তাঁর ওপর আক্রমণ চালালে তিনি ঢালের আড়ালে আত্মরক্ষা করেন এবং শত্রুসৈন্যটির ফিরে যাওয়ার সময় তার অশ্বের পা কেটে দিলেন। এই সময় তাঁর পুত্র মায়ের সাহায্যে এগিয়ে আসে এবং মা ও পুত্র মিলে শত্রুকে সম্পূর্ণ নিধন করলেন। নবী করীম (সা) নিজে এই দৃশ্য অবলোকন করে স্বতস্ফূর্তভাবে বলে উঠলেনঃ “আজ উম্মে আম্মারা তুলনাহীন সাহসিকতা ও দৃঢ়তা প্রদর্শন করেছেন।”
ওহোদ ছাড়াও খায়বর, হুনাইন ও ইয়ামামার যুদ্ধেও তিনি যোগদান করেছিলেন। ইয়ামামার যুদ্ধে লড়াই করতে করতে তাঁর হাতখানাই শহীদ হয়ে যায়। এছাড়া তাঁর সর্বাঙ্গে বহুসংখ্যক ক্ষতও দেখা দিয়েছিল। (তাবাকাতে ইবনে সায়াদ)।
রোমানদের সাথে মুসলমানদের যে যুদ্ধ হয়, তাতে হযরত ইকরাম ইবনে আবু জেহেল এর স্ত্রী হযরত উম্মে হুকাইম (রা)ও যোগ দিয়েছিলেন। আজনাদিন এর যুদ্ধে হযরত ইকরামা শহীদ হয়েছিলেন। তার কিছুদিন পর হযরত খালীদ ইবনে সায়ীদের (রা) সাথে তাঁর পুর্নবিবাহ হয়। কিন্তু ফুলশয্যার রাত্রেই রোমানদের আক্রমণ শুরু হওয়ায় উম্মে হুকাইম (রা) প্রতিরক্ষা যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন এবং শত্রুপক্ষের সাতটি সৈন্যকে খতম করতে সক্ষম হন। -আল ইস্তীয়াব।
ইয়ারমূক যুদ্ধে হযরত আসমা বিনতে ইয়াজীদ নাম্নী মহিলা সাহাবীর হাতে নয়জন রোমান সৈন্য নিহত হয়। (আল ইসাবা)। হুনাইনের যুদ্ধে ইসলামী বাহিনী যখন যুদ্ধক্ষেত্র ত্যাগ করছিলেন, তখন উম্মে হারেস নাম্নী আনসার বংশের একজন মহিলা সাহাবী অত্যন্ত দৃঢ়তা সহকারে পর্বতের মত অবিচল থেকে যুদ্ধ করে যাচ্ছিলেন।
হযরত আনাসের (রা) জননী উম্মে সুলাইম ওহোদ ও হুনাইনের যুদ্ধে সশস্ত্র হয়ে যুদ্ধ করেন।
রোমানদের সাথে জিহাদে হাবীব ইবনে সালমা অদৃষ্টপূর্ব বীরত্ব প্রদর্শন করেন। যুদ্ধ চলাকালে একদিন তাঁর স্ত্রী তাঁকে জিজ্ঞেস করেনঃ ‘আগামীকাল আপনি কোথায় থাকবেন?’ তিনি বললেন, ‘হয় শত্রুদের সাথে লড়াইয়ে ব্যস্ত, অথবা জান্নাতে ইনশা আল্লাহ।’ তাঁর স্ত্রী বললেন, ‘আপনি যেখানেই থাকবেন, আমি আশা রাখি, আমিও আপনার সঙ্গে থাকব। ’
এভাবে ইসলামের দুশমনদের ব্যর্থ করার ব্যাপারে মুসলিম নারী সমাজ সরাসরি ও প্রত্যক্ষ সংগ্রামে বহুবার যোগদান করেছেন। বাতিল শক্তির বিনাশ সাধনে তাঁরা পূর্ণ শক্তিতে এগিয়ে এসেছেন। যেখানে তাঁরা নিজেদের হাতে অস্ত্রধারণ করেন নি, সেখানে পুরুষদের অস্ত্রধারণের জন্য সাহস ও হিম্মত যুগিয়েছেন। পাশাপাশি তাঁরা জিহাদে আহত লোকদের সেবা শুশ্রুষা করেছেন। মুজাহিদরা যুদ্ধ করতে করতে পড়ে গেলে তাদের তুলে নেয়ার কাজ করেছেন; তাঁদের জন্য খাবার তৈরি করে পৌছে দিতেন। তাঁরা ক্লান্ত শ্রান্ত হয়ে পড়লে মহিলারা তাঁদের জন্য বিশ্রামের ব্যবস্থা করতেন। পিপাসায় কাতর হয়ে পড়লে মহিলারা তাঁদের পানি পান করাতেন। নবী করীম (সা) এর নেতৃত্বে ছয়টি যুদ্ধে যোগদানকারী একজন মহিলা সাহাবী বলেছেনঃ
আরবী (************)
-‘আমরা আহতদের জখমের ওপর ব্যান্ডেজ করতাম এবং রোগাক্রান্তদের চিকিৎসা বা সেবা শুশ্রুষা করতাম।’
উম্মে আতীয়া (রা) নাম্নী এক মহিলা সাহাবী রাসূলে করীম (সা) এর সাথে সাতটি যুদ্ধে যোগদান করেছিলেন। তিনি বলেছেনঃ ‘আমি মুজাহিদদের জিনিসপত্র রক্ষণাবেক্ষণ করতাম। তাঁদের জন্য খাবার তৈরি করতাম, আহতদের ও রোগাক্রান্তদের সেবাশুশ্রুষা করতাম।’- মুসলিম, মুসনাদে আহমাদ।
ওহোদের যুদ্ধে বহুসংখ্যক সাহাবী আহত হয়ে পড়েছিলেন। তাঁদের খেদমত ও সেবা শুশ্রুষার জন্য মদীনা হতে বহুসংখ্যক মহিলা সাহাবী ওহোদের যুদ্ধক্ষেত্রে গমন করেছিলেন। নবী দুহিতা হযরত ফাতিমা (রা) ও এ ব্যাপারে কিছুমাত্র পশ্চাদপদ থাকেন নি। (ফতহুল বারী) হযরত আয়েশা ও উম্মে সুলাইম (রা)ও মুজাহিদদের খেদমতের কাজ করেছেন। তাঁরা এ কাজে এত তৎপরতা দেখিয়েছিলেন যে, তাঁদের দ্রুত চলাচলের ফলে তাঁদের দেহে পরিহিত অলঙ্কার পর্যন্ত দেখা যেত। তাঁরা পানির পাত্র পিঠের ওপর তুলে বহন করে আনতেন এবং মুজাহিদদের তা পান করাতেন। এ ধরনের কাজ তাঁরা বারবার করেছেন। হযরত উমর (রা) বলেছেনঃ উম্মে সুলাইম (মহিলা সাহাবী) ওহোদের দিন আমাদের জন্য পাত্র ভরে ভরে পানি নিয়ে আসতেন। হুমনা বিনতে জাহাশ (রা)ও কাজ করেছেন সেদিন। তিনি তৃষ্ঞার্তকে পানি পান করিয়েছেন এবং আহতদের চিকিৎসা ও সেবা-শুশ্রুষা করেছেন। এদের সঙ্গে শরীক ছিলেন উম্মে আয়মান নাম্মী অপর এক মহিলা সাহাবী। উম্মে আম্মারা নাম্নী মহিলা সাহাবী সকাল বেলাই আহতদের সেবা শুশ্রুষা ও প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য জরুরী জিনিসপত্র সঙ্গে নিয়ে ওহোদের যুদ্ধক্ষেত্রে চলে গিয়েছিলেন। ঐতিহাসিক ইবনে ইসহাক লিখেছেনঃ খায়বরের যুদ্ধে নবী করীম (স) এর সঙ্গে বিপুল সংখ্যক মহিলা সাহাবী যোগদান করেছিলেন। হাশর ইবনে যিয়াদের দাদী, আম্মা এবং আরও পাঁচজন মহিলাও এই যুদ্ধে যোগদান করেছিলেন। তাঁরা কি জন্যে এসেছেন জিজ্ঞেস করা হলে তাঁরা বললেনঃ
আরবী (***********)
-“হে রাসূল! আমরা এসেছি এই উদ্দেশ্য নিয়ে যে, আমরা কবিতা পাঠ করব এবং এর সাহায্যে আল্লাহর পথে জিহাদের প্রেরণা যুগিয়ে সাহায্য করব। আমাদের সঙ্গে আহতদের চিকিৎসার ঔষধপত্র রয়েছে। তীর নিক্ষেপকারীদের হাতে আমরা তীর পরিবেশন করব এবং প্রয়োজন হলে ক্ষুধার্তদের ছাতু বানিয়ে খাওয়াব।”
সবচেয়ে বড় কথা, এই মহিলারা কোন বাহ্যিক চাপে পড়ে যুদ্ধে যোগদান করেন নি এবং এসব ঝুঁকিপূর্ণ কাজ তাঁরা কোনরূপ বৈষয়িক প্রলোভনে পড়েও করেন নি। বরং তাঁরা দ্বীন ইসলামের প্রতিরক্ষা এবং যুদ্ধে অংশগ্রহণকারীদের সাহায্য, সহযোগিতা ও সাহচর্যকে নিজেদের জন্য বিশেষ সম্মানজনক ও পরকালে মহান কল্যাণ লাভের উপায় মনে করে স্বতঃস্ফূর্তভাবে এই সব কাজে অংশগ্রহণ করতেন। তাই খায়বর যুদ্ধে যাত্রাকালে গিফার গোত্রের কয়েকজন মহিলা উপস্থিত হয়ে নিবেদন করলেনঃ
আরবী (**********)
-“হে রাসূল! আমরাও আপনার সঙ্গে যুদ্ধে গমন করার উদ্দেশ্যে হাজির হয়েছি। আমরা সেখানে আহতদের ঔষধপত্র দিয়ে সেবা-শুশ্রুষা করব এবং মুজাহিদদের যতটা সম্ভব সাহায্য করব।