ইসলামী সমাজে নারী
মৌলিক ধারণা
বিশেষ কতকগুলো মতবাদ ও চিন্তাধারার এক একটা সামাজিক সংস্থা ও কাঠামো গড়ে উঠে। তাই কোন সমাজ-সংস্থা ও কাঠামোর প্রকৃত স্বরূপ নির্ণয়ের জন্য সর্বপ্রথম প্রয়োজন সেই বিশেষ মতবাদ ও চিন্তাধারা অনুধাবন। কেননা এই চিন্তাধারাই সেই সমাজ-কাঠামোর স্বভাব চরিত্র ও মেজাজ প্রকৃতি রূপায়িত করে। সমাজের লোকদের মধ্যে কার স্থান কোথায় এবং কার গুরুত্ব কোন দিক দিয়ে কতটা এবং কার কি অধিকার ও কর্তব্য-তা সেই চিন্তা ও মতাদর্শই নির্ধারণ করে দেয়। সেগুলোর ওপর ভিত্তি করেই গড়ে ওঠে সমাজের ও জনজীবনের ভাবধারা। সমাজের ব্যক্তিদের সাথে আচার আচরণও পরিচালিত হয় সেই চিন্তা ও মতাদর্শের দৃষ্টিতেই। ইসলামী সমাজ কাঠামোও ইসলামী আদর্শের ভিত্তিতে গড়ে ওঠে বলে এই সমাজে নারীর স্থান কোথায় , তার মন-মর্যাদা ও অধিকার কি এবং তার কর্তব্য ও দায়িত্ব কি, তা জানবার জন্য সর্বপ্রথম জানতে হবে, ইসলাম নারীদের সম্পর্কে কি ধারণা দিয়েছে। এই ধারণার কথা সঠিকভাবে জানতে পারলেই নারী সম্পর্কিত সকল প্রশ্নের জবাব পাওয়া সম্ভব ও সহজ হবে।
মানুষ সম্পর্কে ইসলামের দৃষ্টিকোণ
ইসলাম নারী সম্পর্কে কি ধারণা দিয়েছে, তা জানার জন্য মানুষ সম্পর্কে ইসলামের দৃষ্টিকোণ সর্বপ্রথম বিবেচ্য। এই পর্যায়ে সংক্ষেপে বলা যায়, ইসলামের দৃষ্টিতে মানুষ অতীব সম্মানিত ও সর্বোচ্চ মর্যাদার অধিকারী। সর্বপ্রকার নীচতা, হীনতা ও লাঞ্ছনা-অপমান থেকে ইসলামই মানুষকে মুক্ত ও উদ্ধার করেছে; তাকে পৌছে দিয়েছে মান-মর্যাদার তুঙ্গে। মানুষকে আত্মমর্যাদাবোধের শিক্ষা দিয়েছে ইসলাম। আর এ কারণেই ইসলাম উদাত্ত কন্ঠে ঘোষণা করেছে; মানুষ আল্লাহর সেরা সৃষ্টি। সৃষ্টিকুলের মধ্যে মানুষ সর্বাধিক মর্যাদাবান। সেই সঙ্গে মানুষ শুধু আল্লাহর বান্দা, অন্য কারো নয়। এক কথায়, সবার উপরে মানুষ সত্য, তার উপরে আল্লাহ। মানুষ আল্লাহ ছাড়া বিশ্বলোকের কোন কিছুরই নীচে নয়। কারুর তুলনায়ই হীন বা ছোট নয়। মানুষ মাথা নত করবে একমাত্র বিশ্বলোকের স্রষ্টা ও নিয়ন্ত্রক পরিচালক মহান আল্লাহর সামনে-আর কারুর নয়। সর্বোপরি মানুষ এই পৃথিবীতে আল্লাহর খলীফা। এর সব কিছুই মানুষের অধীন আর মানুষ অধীন হচ্ছে একমাত্র আল্লাহর। বিশ্বলোকের সবকিছুই মানুষের জন্য আর মানুষ হচ্ছে কেবলমাত্র আল্লাহর জন্যে-আল্লাহর বন্দেগীর জন্য।
বস্তুতঃ মানুষের এই সম্মান ও মর্যাদার কথা কেবল ইসলামই ঘোষণা করেছে। তাই মানুষ সম্পর্কে অমর্যাদাকর কোন ধারণা পোষণ করা চলতে পারে না। কোন অশোভন আচরণও গ্রহণ করা যাবে না মানুষ সম্পর্কে। কেউ যদি মানুষের প্রতি খোদাপ্রদত্ত মর্যাদার পরিপন্থী কোন কথা বলে বা আচার আচরণ গ্রহণ করে, তবে সে খোদার প্রতিই চ্যালেঞ্জ করে। ইসলাম এই ধরনের কোন চ্যালেঞ্জ বরদাশত করতে প্রস্তুত নয়।
বস্তুতঃ ইসলাম জন্মগতভাবে মানুষকে এ মর্যাদা দিয়েছে। তবে মানুষ নিজেই যদি তার নিজের চরিত্র ও কার্যকলাপের ফলে সাধারণ জীব-জন্তুরও নীচে নেমে যায়, তবে তা হবে সম্পূর্ণ স্বতন্ত্র কথা।
মানুষ সম্পর্কে ইসলামের এই ঘোষণা পুরুষ ও নারী উভয়ের জন্যই সমানভাবে শ্বাশত ও চিরন্তন। মানবিক সম্মান ও মর্যাদার বিচারে নারী ও পুরুষের মাঝে কোনই পার্থক্য বা ভেদাভেদ নেই। নারীকে শুধু নারী হয়ে জন্মাবার কারণে পুরুষের তুলনায় হীন ও নীচ মনে করা সম্পূর্ণ জাহেলী ধ্যান ধারণা; এরূপ চিন্তা ধারণা ইসলাম স্বীকার করে না।
তবে নারী হোক বা পুরুষ হোক, তার খোদাপ্রদত্ত এই সম্মান বা মর্যাদাকে তার নিজের বাস্তব চরিত্র ও কাজ কর্মের সাহায্যেই রক্ষা করতে হবে। কেননা মানুষের ঘোষিত মান-মর্যাদা কেবলমাত্র এই দিক দিয়েই গ্রহণীয়। আল্লাহ তায়ালা নিজের ইচ্ছা ও কুদরতে মানুষকে সৃষ্টি করে তাকেই এই মর্যাদায় অভিষিক্ত করেছেন। এখন তা রক্ষা করা মানুষের দায়িত্ব। স্বভাব-চরিত্র ও অভ্যাস আচরণের দিক দিয়ে মানুষ যদি মানবেতর পর্যায়ে পৌছে যেতে চায়, তবে ইসলাম তা রক্ষা করতেও প্রস্তুত নয়।
এই কথার প্রমাণস্বরূপ কুরআন মজীদের অসংখ্য আয়াত হতে দুটি ছোট্ট আয়াত এখানে উল্লেখ করছিঃ
وَلَقَدْ كَرَّمْنَا بَنِي آدَمَ وَحَمَلْنَاهُمْ فِي الْبَرِّ وَالْبَحْرِ وَرَزَقْنَاهُم مِّنَ الطَّيِّبَاتِ وَفَضَّلْنَاهُمْ عَلَىٰ كَثِيرٍ مِّمَّنْ خَلَقْنَا تَفْضِيلًا [١٧:٧٠]
- আর নিশ্চিত জানবে আমরা আদম বংশ মানুষকে অত্যন্ত সম্মানার্হ করেছি, জলে স্থলে তাদের করেছি কর্তৃত্ব সম্পন্ন, পবিত্র রিজিক দিয়েছি তাদের এবং আমাদের বহুসংখ্যক সৃষ্টিকূলের ওপর বিশেষ ধরনের সম্মান ও শ্রেষ্ঠত্বও তাকে দিয়েছি। (সূরা বনী ঈসরাইলঃ ৭০)।
مَنْ عَمِلَ صَالِحًا مِّن ذَكَرٍ أَوْ أُنثَىٰ وَهُوَ مُؤْمِنٌ فَلَنُحْيِيَنَّهُ حَيَاةً طَيِّبَةً ۖ وَلَنَجْزِيَنَّهُمْ أَجْرَهُم بِأَحْسَنِ مَا كَانُوا يَعْمَلُونَ [١٦:٩٧]
– পুরুষ হোক কি নারী, যে-ই পূণ্যময় কাজ করবে ঈমানদার হয়ে, তাকেই আমরা উত্তম পবিত্র জীবন যাপনের সুযোগ দিব এবং তাদের উত্তম আমল সমূহের শুভ প্রতিফলন তাদের দান করব। (সূরা নাহলঃ ৯৫)।
অর্থাৎ মানব জাতির নারী পুরুষ এই উভয় সৃষ্টির মধ্য হতে যে কেউই উত্তম স্বভাব-চরিত্র ও কাজ কর্মের ধারক হবে, সে-ই প্রকৃতপক্ষে সাফল্য লাভ করতে সক্ষম হবে। কে নারী আর কে পুরুষ, এই প্রশ্ন এখানে একেবারেই অবান্তর। পক্ষান্তরে নারী বা পুরুষ যে-ই তার আমল নামাকে কলুষ কালিমা লিপ্ত করবে, সে-ই চরমভাবে ব্যর্থ হবে। এখানে নারী পুরুষের মাঝে কোনরূপ পার্থক্য করা হবে না।
কুরআন মজীদের সূরা তাওবার একটি দীর্ঘ আয়াতে ঈমানদার লোকদের কতকগুলো গুণের বর্ণনা দেওয়া হয়েছে। এসব গুণ হল নিজেদের জান-মাল, কামনা-বাসনা ও আশা-আকাঙ্খা সব কিছুই আল্লাহর মর্জীর অধীন ও অনুগত বানিয়ে দেওয়া। সূরা আত-তাহরীমের একটি আয়াতে এসব গুণ অর্জনের জন্য নবী করীম (স) এর বেগমদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। স্পষ্ট ভাষায় বলা হয়েছে, এসব গুণ অর্জন না করে তাঁরা নবীর বেগম হয়ে থাকতে পারবেন না। কেননা এসব গুণের অধিকারিণী স্ত্রী লাভ নবীর জন্য কিছুমাত্র কঠিন হবে না।
এসব কথা হতে স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয়, কুরআনের দৃষ্টিতে ইহকালীন সৌন্দর্য, কল্যাণ ও তাকওয়া এবং পরকালীন সাফল্য অর্জনের উপায় ও মানদন্ড পুরুষ ও নারী উভয়ের জন্য সম্পূর্ণ এক ও অভিন্ন। তা অর্জন না করে পুরুষরা যেমন কল্যাণ লাভ করতে পারে না, তেমনি পারেনা নারীরাও।
নারী ও পুরুষ উভয়ই সভ্যতা সংস্কৃতির নির্মাতা
কুরআন মজীদ একথাও ঘোষণা করেছে যে, জীবনের সংগ্রাম সাধনায় এবং সভ্যতা সংস্কৃতি নির্মাণে নারী ও পুরুষ উভয়ই চিরকাল পরস্পরের সহযোগী ও সাহায্যকারী হয়েই রয়েছে। জীবনের দুর্বহ বোঝা উভয়ই একত্রে বহন করেছে। উভয়ের সম্মিলিত চেষ্টা-প্রচেষ্টার ফলেই সাধিত হয়েছে সমাজ ও সভ্যতার বিকাশ এবং উন্নয়ন। দুনিয়ার কোন জাতি বা আন্দোলনই নারী পুরুষ কাউকেই বিন্দুমাত্র উপেক্ষা করতে পারে না। সত্যের উৎকর্ষ ও প্রতিষ্ঠা এবং তার কর্তৃত্ব ও প্রাধান্য সংস্থাপন প্রচেষ্টায় নারী ও পুরুষের যৌথ চেষ্টা প্রচেষ্টার কাহিনী বিশ্ব ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লিপিবদ্ধ রয়েছে। বাতিল নীতি ও আদর্শ প্রতিষ্ঠা প্রচেষ্টায়ও তার বিন্দুমাত্র ব্যতিক্রম লক্ষ্য করা যায় না। কুরআন মজীদে এই উভয় শ্রেণীর লোকদের পরিচিতি উদ্ধৃতি হয়েছে। সূরা তওবার একটি আয়াতে মুনাফিকদের সম্পর্কে বলা হয়েছেঃ
الْمُنَافِقُونَ وَالْمُنَافِقَاتُ بَعْضُهُم مِّن بَعْضٍ ۚ يَأْمُرُونَ بِالْمُنكَرِ وَيَنْهَوْنَ عَنِ الْمَعْرُوفِ وَيَقْبِضُونَ أَيْدِيَهُمْ ۚ نَسُوا اللَّهَ فَنَسِيَهُمْ ۗ إِنَّ الْمُنَافِقِينَ هُمُ الْفَاسِقُونَ
[٩:٦٧]
-মুনাফিক নারী ও পুরুষ পরস্পর সংঘবদ্ধ। তারা সকলে মন্দ কাজের আদেশ করে ও ভাল কাজের নিষেধ করে। আর আল্লাহর পথে অর্থব্যয় করা হতে হাত গুটিয়ে রাখে। তারা আল্লাহকে ভুলে গেছে এবং আল্লাহও ভুলে গেছেন তাদের। প্রকৃতপক্ষে মুনাফিকরাই সীমা লংঘনকারী।
পক্ষান্তরে ঈমানদার লোকদের সম্পর্কে এই সূরা তওবায়ই বর্ণিত হয়েছেঃ
وَالْمُؤْمِنُونَ وَالْمُؤْمِنَاتُ بَعْضُهُمْ أَوْلِيَاءُ بَعْضٍ ۚ يَأْمُرُونَ بِالْمَعْرُوفِ وَيَنْهَوْنَ عَنِ الْمُنكَرِ وَيُقِيمُونَ الصَّلَاةَ وَيُؤْتُونَ الزَّكَاةَ وَيُطِيعُونَ اللَّهَ وَرَسُولَهُ ۚ أُولَٰئِكَ سَيَرْحَمُهُمُ اللَّهُ ۗ إِنَّ اللَّهَ عَزِيزٌ حَكِيمٌ [٩:٧١]
-ঈমানদার পুরুষ ও নারী পরস্পরের সহায়ক। তারা মিলিতভাবে সব ভাল ও কল্যাণকরা কাজের আদেশ করে, সব অন্যায় ও পাপ কাজ হতে নিষেধ করে। তারা নামায কায়েম করে, যাকাত দেয় এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করে চলে। আল্লাহ এদের অবশ্যই রহমত দান করবেন। নিঃসন্দেহে আল্লাহ সর্বজয়ী, মহাবিজ্ঞানী।
বস্তুতঃ সভ্যতা সংস্কৃতির সব উত্থান উন্নতিই নারী পুরুষের সম্মিলিত চেষ্টা-প্রচেষ্টার ফসল। তাহলে এ দুয়ের মাঝে একজনের প্রতি সম্মান ও মর্যাদা প্রদর্শন হবে আর অপরজনের প্রতি করা হবে ঘৃণা ও বিদ্বেষ, তার কি কারণ বা যুক্তি থাকতে পারে? কালের ভাল ও মন্দ-ভাঙন ও গড়ন যখন উভয়ের হাতেই হয়ে থাকে, তখন তাদের একজনকে সভ্যতার অঙ্গন থেকে বহিষ্কৃত করে শুধুমাত্র একজনের স্কন্ধে সবকিছু চাপিয়ে দিয়ে সভ্যতা-সংস্কৃতিকে অগ্রসর করে নিতে চাওয়া কি চরম নির্বুদ্ধিতার পরিচায়ক নয়? কোন ব্যক্তি কি নিজ দেহের এক অংশকে অক্ষম অকর্মণ্য বানিয়ে রেখে কেবলমাত্র একটি অংশ নিয়ে জীবন সংগ্রামে স্বীয় দায়িত্ব পালন করতে সক্ষম হতে পারে?
নারী সম্পর্কে ইসলামের দৃষ্টিকোণ
ইসলাম আগমনের পূর্বে দুনিয়া নারীকে অকেজো ও অকল্যাণকর-সভ্যতা সংস্কৃতির পরিপন্থী বা তার প্রতিবন্ধক মনে করে জীবনের সর্বক্ষেত্র থেকে একেবারে বাইরে ফেলে দিয়েছিল। তাকে নিক্ষেপ করা হয়েছিল নিষ্কিৃয়তার এমন এক গহবরে, যেখান হতে উঠে আসা ও উত্থান-অগ্রগতি লাভ করা কোনক্রমেই সম্ভবপর ছিল না। ইসলাম এই অবস্থার বিরুদ্ধে প্রতিবাদের আওয়াজ তুলেছে। উদাত্ত কন্ঠে ঘোষণা করেছে-মানব জীবনধারা সমানভাবে নারী ও পুরুষ উভয়েরই মুখাপেক্ষী। নারীকে সমাজের এক গুরুত্বপূর্ণ ও অপরিহার্য অংশরূপেই সৃষ্টি করা হয়েছে। জীবনের রাজপথ থেকে কাঁটার ন্যায় তুলে দূরে নিক্ষেপ করার জন্যে তাকে সৃষ্টি করা হয় নি। কেননা পুরুষকে যেমন উদ্দেশ্যমূলকভাবে সৃষ্টি করা হয়েছে-তাকে দেয়া হয়েছে একটা সুস্পষ্ট জীবন লক্ষ্য, নারীদের ব্যাপারেও ঠিক এ কথাই সত্য। তারও জীবন লক্ষ্য সুস্পষ্ট, সুনির্দিষ্ট। উভয়ের জীবন উদ্দেশ্য বাস্তবায়িত হওয়াই স্রষ্টার ইচ্ছা। বিশ্বলোকের স্রষ্টা যিনি, তিনিই সৃষ্টি করেছেন নারী ও পুরুষ। ইসলাম নারী সমাজকে হীনতার নিম্নতম পন্ক হতে অনেক উর্ধ্বে তুলেছে। ইসলাম-পূর্ব দুনিয়ায় নারী জীবনে শুধু বেঁচে থাকার অধিকার হতেও বঞ্চিত ছিল। কিন্তু কুরআন ঘোষণা করেছেঃ না, নারীও বাঁচবে। বাঁচবার মানুষের মত মান মর্যাদা নিয়ে বেঁচে থাকার অধিকার তাদেরও রয়েছে। সে অধিকার কেউ হরণ করতে পারে না, হরণ করার অধিকার কারুর নেই। নবী করীম(সা) এই উপেক্ষিত বঞ্চিত নারী সমাজের অবস্থার উন্নয়ন ও সঠিক মর্যাদায় তাদের প্রতিষ্ঠিত করা প্রসঙ্গে যে উন্নত মানের শিক্ষা পেশ করেছেন, নারী মুক্তির কোন উচ্চ কন্ঠ সমর্থকই আজ পর্যন্ত সেই মানের শিক্ষা পেশ করতে পারে নি। একটি ঘোষণায় রাসূলে করীম(স) বলেছেনঃ
আরবী(***********)
“আল্লাহ তায়ালা মায়েদের নাফরমানী, তাদের অধিকার আদায় না করা, চারদিক থেকে ধন-সম্পদ লুন্ঠন ও সঞ্চিত করা এবং মেয়ে সন্তানকে জীবন্ত প্রোথিত করাকে তোমাদের জন্য চিরতরে হারাম করে দিয়েছেন।”
তিনি আরও বলেছেনঃ যে লোকের কন্যা সন্তান হবে, সে যদি তাকে জীবন্ত প্রোথিত না করে বা তার প্রতি কোনরূপ তুচ্ছ-তাচ্ছিল্যমূলক আচরণ না দেখায় ও নিজের পুত্র সন্তানকে তার উপর অগ্রাধিকার না দেয়, তবে আল্লাহ তাকে জান্নাতে দাখিল করবেন।
বলেছেন, ‘যে লোক তিন তিনটি কন্যা সন্তানের লালন পালন করবে ও তাদের প্রতি ভাল ব্যবহার করবে, তার জন্য জান্নাত রয়েছে। কন্যা সন্তান লালন পালন গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। তাদের প্রতি ভাল আচরণ করা হলে তা জান্নাতে যাওয়ার কারণ হবে। বস্তুতঃ এ হচ্ছে নারীর প্রতি উচ্চ মর্যাদাপূর্ণ ঘোষণা। এ প্রসঙ্গেরই একটি লম্বা হাদীসের শেষভাগে রাসূল(সা) বলেছেনঃ
আরবী(**********)
-দুটি পথ এমন রয়েছে, যেখান থেকে পৃথিবীকে খুব শীঘ্র ও দ্রুতগতিতে আযাব নাজিল হয়ঃ একটি জুলুম ও সীমালঙ্ঘন এবং দ্বিতীয়টি পিতা-মাতার নাফরমানী ও তাদের সাথে সম্পর্কচ্ছেদ করা।
কথাটি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। এই কথায় এক অতীব উচ্চ ও নিগুঢ় তত্ত্বের দিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে। বস্তুতঃ জুলুম ও সীমালঙ্ঘন এমনিতেই বেশিদিন চলতে পারে না। কিন্তু তা যদি হয় নিজেরই ঔরসজাত সন্তানের ওপর কিংবা যদি হয় নিজেরই জন্মদাতা মা-বাবার ওপর, তাহলে মজলুমের বুকভাঙা দীর্ঘশ্বাসের পূর্বেই জালিমের আয়ুষ্কাল ফুরিয়ে যেতে বাধ্য।
ঠিক যে সময়কার জগতে নারীকে সর্বপ্রকার পাপের উৎস পাপ ও গুনাহর প্রতিমূর্তি মনে করা হত, সে সময়ই এমন এক মহান ব্যক্তি এই সব কথা উদাত্ত কন্ঠে ঘোষণা করেছেন, যিনি চরিত্র মাধুর্য ও পবিত্রতায় অতুলনীয় ব্যক্তিত্বসম্পন্ন ছিলেন, যিনি দুনিয়ায় তাকওয়া ও খোদাভীতির নীতি অবলম্বনের আহবান জানিয়েছেন। যার আগমনই হয়েছিল দুনিয়াকে পাপ ও নির্লজ্জতার পন্কিলতা হতে মুক্ত করার উদ্দেশ্যে।
বলেছেনঃ আরবী(*******)
-দুনিয়ার জিনিসগুলির মধ্যে নারী ও সুগন্ধীই আমার নিকট প্রিয়তর বানিয়ে দেয়া হয়েছে।
অন্য কথায়, নারীর প্রতি ঘৃণা পোষণ, নারী বর্জন এবং পবিত্রতা-পরিচ্ছন্নতা ও সুগন্ধী এড়িয়ে যাওয়া খোদা-ভীতির প্রমাণ বা লক্ষণ নয়। আল্লাহর প্রতি অকৃত্রিম ঈমান, তাঁর সাথে সম্পর্কের দৃঢ়তা ও মজবুতি, খোদার ভয় ও আনুগত্যই হল তাকওয়া। এই তাকওয়াই কাম্য। নারীর সাথে বৈধ সম্পর্ক রাখা বা নারীর প্রতি সম্মান-শ্রদ্ধাবোধ কিছুমাত্র তাকওয়া বিরোধী কাজ নয়। এসব করেও খোদার নেক ও প্রিয় বান্দাহ হওয়া সম্ভব। শুধু সম্ভবই নয়-এসবের মধ্য দিয়ে খোদার সন্তোষ অর্জন করাই ইসলামের দেখানো পথ।
ইসলামের এই শিক্ষা তৎকালীন মানব সমাজে চিন্তা ও কর্মের ক্ষেত্রে একটি তুলনাহীন বিপ্লবের সৃষ্টি করেছিল। যে সব লোক নিষ্পাপ কন্যা সন্তানকে মাটির গর্তে জীবন্ত প্রোথিত করতে একবিন্দু দ্বিধা করত না-হৃদয় কেঁপে উঠতো না, তারাই এই পরিবর্তিত পরিবেশে তার (কন্যা সন্তানের) লালন পালনে সর্বশক্তি নিয়োগ করতেও কুন্ঠিত হয় নি। যাদের কাছে নিজেদের শিশু সন্তানদেরও একবিন্দু নিরাপত্তা ছিল না, তারাই অন্যদের অসহায় সন্তানদের লালন পালন ও রক্ষণা-বেক্ষণের দায়িত্ব গ্রহণের জন্য প্রতিযোগিতায় নেমে পড়ত। এ দায়িত্ব গ্রহণ করে নিজেদের ধন্য মনে করত, পরকালীন মহাকল্যাণ লাভে উদ্যোগী হত।
একালের উল্লেখযোগ্য একটি ঘটনা হচ্ছেঃ বিশিষ্ট সাহাবী হযরত জাবির(রা) তাঁর সাতটি পিতৃহীনা বোনের লালন পালনের জন্য কোন যুবতী কুমারী বিয়ে না করে একজন বয়স্ক বিধবাকে বিয়ে করে আনলেন; অথচ তিনি ছিলেন অল্প বয়স্ক যুবক।–বুখারী।
হযরত হামজা (রা) এর শাহাদাত প্রাপ্তির পর তাঁর কন্যার লালন-পালনের দায়িত্ব গ্রহণের জন্য হযরত আলী (রা) দাবী করলেন। বললেনঃ এ আমার চাচাতো বোন। এর লালন পালনের দায়িত্ব আমারই বহন করার অধিকার রয়েছে। হযরত জাফর (রা) বললেনঃ আমি আলীর চেয়েও বেশী অধিকারী। কেননা, এই মেয়ে আমার চাচাতো বোনই শুধু নয়, এর খালা আমার ঘরেই রয়েছে। তৃতীয় দিকে হযরত জায়েদ (রা) দাবী জানালেন, হযরত হামজা (রা) ছিলেন রাসূলের পাতিয়ে দেয়া আমার ভাই। আর এই সূত্রেই আমি চাচা হিসেবে এই মেয়ের লালন পালনের দায়িত্ব গ্রহণের সুযোগ পাওয়ার সর্বাধিক অধিকারী। (নাইলুল আওতার)।
চিন্তা ও কর্মে সৃষ্ট এই বিপ্লবের দৃষ্টান্ত দুনিয়ার অপর কোন বিপ্লব-ইতিহাসে পাওয়া যায় কি? ইসলামের এই শিক্ষা ছিল অত্যন্ত বলিষ্ঠ। ফলে সর্বপ্রকার জুলুম নির্যাতনের অক্টোপাশ অচিরেই চূর্ণ বিচূর্ণ হয়ে গেল। এই শিক্ষার ওপর সেই সমাজের লোকদের ছিল সুদৃঢ় ঈমান ও প্রত্যয়। আর এইরূপ ঈমান ও প্রত্যয় যাদের থাকে, তারা কোন সময় সুবিচার, ন্যায়পরায়নতা ও সদাচরণের সীমা লঙ্ঘন করতে পারে না।
মৌলিক অধিকারের সমতা
ইসলাম সুবিচার ও ন্যায় প্রতিষ্ঠার জন্য কেবলমাত্র উৎসাহব্যঞ্জক উপদেশ দিয়েই ক্ষান্ত হয় নি, নারী ও পুরুষ উভয়ের অধিকার আইনের ভিত্তিতে সমাজ ও রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে প্রতিষ্ঠিতও করেছে। সে আইন সর্বদিক দিয়ে ভারসাম্যপূর্ণ। তা প্রতিষ্ঠিত ও পুরোপুরি কার্যকর হলে না নারীর পক্ষে অভিযোগ তোলার একবিন্দু কারণ থাকবে, না পুরুষের। আর তাহলে না পুরুষ কোনরূপ অবিচার বা নিপীড়ন চালাবার সুযোগ পাবে, না নারীর দুঃখ দু্র্দশা বা অপমান লাঞ্ছনার থাকবে সামান্য অবকাশ।
বস্তুতঃ ইসলামী আদর্শে গঠিত সমাজই হচ্ছে মানুষের সকল প্রকার অধিকার বাস্তবায়িত করার ও কার্যকর করার জন্য দায়ী। তাই যে হাত জুলুম-অবিচারের জন্য উর্ধ্বে উঠবে, সমাজ সেই হাতটিকে অবিলম্বে চূর্ণ-বিচূর্ণ ও ধ্বংস প্রতিহত করবে।
কুরআন মজীদ উদাত্ত কন্ঠে ঘোষণা করেছেঃ আরবী (*********)
-হে বিবেক বুদ্ধিসম্পন্ন লোকেরা! আইন ভিত্তিক বিচার-ব্যবস্থা শাণিতভাবে কার্যকর হওয়াতেই তোমাদের জীবন নিহিত।
হত্যাকারী নারী হোক কিংবা হোক পুরুষ, হত্যাপরাধের শাস্তি স্বরূপ তার প্রাণ হরণ করা হবে-নিহত ব্যক্তি পুরুষ হোক কিংবা নারী। কেননা মানুষ মাত্রেরই প্রাণ ও জীবন সম্মানার্হ, সে নারীর হোক কিংবা হোক পুরুষের প্রাণ। যারই হাত কারও রক্তে রঞ্চিত হবে, তার শুধু সে হাতটিই নয়, হাতের ধারক ব্যক্তির জীবনটিও নিঃশেষে বিনাশপ্রাপ্ত হবে। রাসূলে করীম (স) এর জারীকৃত আইনের একটি ধারা হচ্ছেঃ আরবী (***********)
-স্ত্রীলোকের হত্যাকারী কোন পুরুষ হলে শাস্তিস্বরূপ তাকে হত্যা করা হবে।
একজন ইয়াহুদী (অমুসলিম নাগরিক) একটি মেয়েকে হত্যা করেছিল। এই হত্যাকান্ডের বিচারে তাকে হত্যা করা হয়েছিল। হযরত উমার (রা) একজন স্ত্রীলোকের হত্যাকান্ডে কয়েকজন পুরুষ জড়িত প্রমাণিত হওয়ায় বিচারে সকলকেই মৃত্যুদন্ড দিয়েছিলেন। ইসলামী আইনে এই ব্যাপারে নারী পুরুষ কোন পার্থক্য করা হয় নি। স্ত্রীলোকের চক্ষু, কান কিংবা অন্য যে কোন অঙ্গ জখমের জন্যে পুরুষ দায়ী হলে তাকে অনুরূপ দন্ডে দন্ডিত হতে হবে। অনুরূপভাবে কোন নারী যদি তার কোন আপনজনের হত্যার শাস্তি স্বেচ্ছায় ক্ষমা করে দেয়, তাহলে সে ক্ষমাও কার্যকর হবে। কেননা ইসলামী আইনে এরূপ বিধান রয়েছে এবং এ বিধান অবশ্যই কার্যকর হবে।
ইসলামী শরীয়তের সীমার মধ্যে থেকে অর্থনৈতিক ব্যাপারে শ্রম-সাধনা করার অনুমতি রয়েছে নারী পুরুষ উভয়ের জন্যই। প্রত্যেকেই চ্টরাআপন শ্রমের মজুরী লাভ করার অধিকারী। কারও মালিকানা কউ হস্তগতও করতে পারবে না, সে মালিক নারী হোক বা পুরুষ। স্বামীও পারে না নিজ স্ত্রীর মালিকানাধীন ধন-সম্পত্তি হস্তগত করতে; স্ত্রীও পারে না স্বামীর বিত্ত-সম্পত্তি নিজ ইচ্ছামত ব্যয় ব্যবহার করতে বা উড়াতে।
পুরুষরা যেমন উত্তরাধিকার লাভ করতে পারে, তেমনি নারীর জন্যও উত্তরাধিকারের অংশ নির্দিষ্ট রয়েছে। তবে বিশেষ কারণে এ ক্ষেত্রে নারী ও পুরুষের সমান অংশ সমান রাখা হয়নি; পুরুষের তুলনায় নারীর অংশ পরিমাণে কম নির্ধারণ করা হয়েছে। এ নিয়ে কিছু স্থূল বুদ্ধির লোক ইসলামের অর্থ বন্টন রীতির সমালোচনা করতে গিয়ে ঔদ্ধত্য দেখাতে চেয়েছে। কিন্তু ইসলামের পূর্ণাঙ্গ পরিবার ব্যবস্থা বিবেচনা করে দেখলে সম্পূর্ণ ভিন্নতর রূপ প্রতিভাত হয়ে ওঠে। আসলে নারীর কতিপয় স্বভাবগত দুর্বলতা ও সীমাবদ্ধতার কারণে তাদের অর্থনৈতিক অবস্থা অত্যন্ত মজবুত ও নির্ভরযোগ্য করে দেওয়া হয়েছে, যদিও পুরুষের আর্থিক অবস্থা সর্বাবস্থায় এবং সর্বক্ষণই অনিশ্চিত, অনির্ভরযোগ্য। ইসলামী বিধান মতে নারীর উত্তরাধিকার অংশ পুরুষের তুলনায় অর্ধেক ধরা হয়। তবে দুটি দিক দিয়ে তার ক্ষতি পূরণ করে দেওয়া হয়েছে। স্ত্রী স্বামীর নিকট হতে মোহরানা পায়; পুরুষরা এ ধরনের কিছু কারোর নিকট হতে পায় না।
এছাড়া বিয়ের সময় বর কনেকে যে অলংকার ও পোশাক পরিচ্ছদ দেয়, তার মালিকও সে-ই হয় এককভাবে।
এছাড়া গোটা পরিবারের অর্থনৈতিক প্রয়োজন পরিপূরণের দায়-দায়িত্ব পুরুষদের উপরই ন্যস্ত; নারী তা থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত। মেয়েরা বিয়ের পূর্বে অভিভাবকের এবং বিয়ের পর স্বামীর নিকট হতে নিশ্চিতভাবে ভরণ-পোষণ পেয়ে থাকে। এরূপ অবস্থায় নারীকে পুরুষের সমান উত্তরাধিকার দান সুবিচার নয়, নিতান্তই অবিচারের নামান্তর। আর ইসলামী সমাজ ও অর্থনৈতিক ব্যবস্থা সর্বপ্রকারের অবিচার হতে সম্পূর্ণ মুক্ত।
এই একটি দিক ছাড়া নারী ও পুরুষের মধ্যে আর কোন দিক দিয়েই এতটুকু পার্থক্য রাখা হয় নি।
জীবন ব্যবস্থা ও আইনের ভিন্নতা
প্রাচীন কালের ধর্মসমূহ নারী ও পুরুষকে অভিন্ন মর্যাদা দিতে প্রস্তুত ছিল না। তাতে উভয়ের জন্য ভিন্ন ভিন্ন আইন রচিত হয়েছে। প্রত্যেক লিঙ্গের লোকদের জন্য দেয়া হয়েছে আলাদা আলাদা জীবন ব্যবস্থা। কিন্তু ইসলাম নারী ও পুরুষ উভয়ের জন্য সমানভাবে অনুসরণীয় জীবন বিধান বিধিবদ্ধ করেছে। কুরআন মজীদে ঘোষিত হয়েছেঃ
وَمَا كَانَ لِمُؤْمِنٍ وَلَا مُؤْمِنَةٍ إِذَا قَضَى اللَّهُ وَرَسُولُهُ أَمْرًا أَن يَكُونَ لَهُمُ الْخِيَرَةُ مِنْ أَمْرِهِمْ ۗ وَمَن يَعْصِ اللَّهَ وَرَسُولَهُ فَقَدْ ضَلَّ ضَلَالًا مُّبِينًا [٣٣:٣٦]
-মুমিন পুরুষ ও মুমিন স্ত্রীলোক যেই হোক আল্লাহ বা তাঁর রাসূল কোন বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত বা নির্দেশ দিয়ে থাকলে সেই ব্যাপারে এদের কারুরই কোন ইখতিয়ার থাকে না। যে লোকই আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের নাফরমানী করবে, সে-ই সুস্পষ্ট গোমরাহীর মধ্যে নিমজ্জিত হবে।
এক কথায় বলা যায়, নারী ও পুরুষের জন্য একই জীবন বিধান বিধিবদ্ধ হয়েছে। কারুর জন্য স্বতন্ত্র বা ভিন্নতর কোন ব্যবস্থা দেয়া হয় নি ইসলামে। মানুষকে বিভিন্ন শ্রেণীতে বিভক্তও করা হয় নি, যদিও মান মর্যাদার দিক দিয়ে সাধারণভাবে বিভিন্ন পর্যায়ে বা স্তরে ভাগ করা হয়েছে মানুষকে। কিন্তু তা সত্ত্বেও নারী ও পুরুষ উভয়ে একই আদর্শের অনুসারী-একই পথের পথিক। একই জিহাদের মুজাহিদ যদিও প্রকৃতি ও স্বরূপের দিক দিয়ে নারী ও পুরুষের কর্মক্ষেত্র এক ও অভিন্ন নয়। কিন্তু ক্ষেত্র ও কর্মের এই পার্থক্য সত্ত্বেও উভয়ের কাজের উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য সর্বতোভাবে এক ও অভিন্ন। ব্যক্তিগত ও খুঁটিনাটি ব্যাপার ছাড়া সামগ্রিক বিষয়াদির যে কটি ক্ষেত্রে নারী ও পুরুষের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে, তার সংখ্যা মাত্র ৬-৭টি। এগুলোর তাৎপর্য সম্পর্কে আমরা পরে বিস্তারিত আলোচনা করব।