পরিশিষ্ট-ক
একটি ইসলামী রাষ্ট্রের কাঠামো
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম
১. ইসলামী উম্মাহ
আর্টিকেল ১
ক. সব মুসলমান মিলে একটি একক উম্মাহ গঠিত
খ. শরীয়াহ সকল আইনের উৎস।
আর্টিকেল ২
ইসলামী উম্মাহর মধ্যে বিভিন্ন রাষ্ট্র থাকতে পারে এবং তাদের ভিন্ন ভিন্ন ধরনের সরকার ব্যবস্থা থাকতে পারে।
আর্টিকেল ৩
একটি রাষ্ট্র অন্য একটি রাষ্ট্র বা একাধিক রাষ্ট্রের সাথে ঐক্যবদ্ধ হয়ে একই রাষ্ট্র গঠন করতে পারে অথবা পারস্পরিক সম্মতিক্রমে অন্য কোনভাবে ঐক্যবদ্ধ হতে পারে।
আর্টিকেল ৪
জনগণ ইমাম, তার পরিষদবর্গ ও রাষ্ট্রের অন্যান্য কর্মকর্তা, কর্মচারীরর উপর নজর রাখবে এবং শরীয়াহর বিধান অনুযায়ী তাদের দায়ী করতে পারবে।
২. রাষ্ট্রের দায়িত্ব
আর্টিকেল ৫
পারস্পরিক সহযোগীতা ও সামাজিক নিরাপত্তা সমাজের ভিত্তি গঠন করে।
আর্টিকেল ৬
প্রত্যেক ব্যক্তিকে সৎকাজের উদ্বোধন ও মন্দকাজকে প্রতিহত করতে হবে; যে ব্যক্তি ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও দায়িত্ব পালন করবেনা সে গুনাহগার হিসাবে পরিগণিত হবে।
আর্টিকেল ৭
পরিবার হচ্ছে সমাজ ব্যবস্থার মৌলিক একক। এর অপরিহার্য উপাদান হচ্ছে দ্বীন এবং নৈতিকতা। রাষ্ট্র পরিবারকে সহায়তা প্রদান নিশ্চিত করবে, মাতৃত্ব ও শিশুদের সংরক্ষণ করবে এবং এসব উদ্দেশ্য সাধনের জন্য সর্বপ্রকার সহায়থা প্রদান করবে।
আর্টিকেল ৮
পরিবার ব্যবস্থা সংরক্ষণের জন্য রাষ্ট্র বিবাহ প্রথাকে উৎসাহিত করবে এবং তজ্জন্য বস্তুগত সহায়তা যথা বাসস্থান অন্যান্য সামগ্রী সরবরাহ করবে। বৈবাহিক জীবনকে সম্মানের চোখে দেখা হবে এবং এমন ইতিবাচক সাহায্য-সহযোগীতা প্রদান করা হবে যাতে স্ত্রী স্বামীর একজন ভালো সহযোগী হতে পারে, সন্তানদের দেখাশুনা করতে পারে, এবং পরিবারের যত্ন নেয়ার বিষয়টিতে নিজের সমস্ত শক্তি নিয়োজিত করতে পারে।
আর্টিকেল ৯
উম্মাহ তথা প্রত্যেক ব্যক্তি মানুসের স্বাস্থ্য রক্ষা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। সুস্বাস্থ্য রক্ষা ও রোগ নিরাময়ের জন্য রাষ্ট্র বিনা খরচে নাগরিকদের স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করবে।
আর্টিকেল ১০
জ্ঞানার্জনের বাধ্যবাধকতা ও সে মর্মে নির্দেশনা প্রদান রাষ্ট্রের দায়িত্ব।
আর্টিকেল ১১
ধর্মীয় শিক্ষা সকল স্তরে মৌলিক নির্দেশ হিসাবে কাজ করবে।
আর্টিকেল ১২
ছাত্রদের শিক্ষাবর্ষের মধ্যে মহানবী (সা) এবং খোলাফাফায়ে রাশেদার নৈতিক ও অন্যান্য জীবনাচরণের শিক্ষা নির্যাস প্রদান করতে হবে।
আর্টিকেল ১৩
সর্ব ধরনের শিক্ষাব্যবস্থায় ছাত্রদের শিক্ষাজীবনের মধ্যে কুরআন অধ্যয়নের সর্ববিধ সুযোগ সুবিধা সৃষ্টি করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। অনিয়মিত ছাত্রদের কুরআন হেফজ করার জন্য বিশেষ ধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে হবে। রাষ্ট্র কুরআন প্রকাশনা ও বিতরণের ব্যবস্থা করবে।
আর্টিকেল ১৪
কারো সম্পদ, অর্থকড়ি অথবা সরকারী কর্তৃত্ব জাহির করা অবৈধ এবং এসব প্রদর্শনী হতে বিরত থাকা বাধ্যতামূলক। জনচরিত্রের পবিত্রতা রক্ষার জন্য সরকার আদেশ জারী করবে এবং শরীয়াহর নির্দেশনা অনুযায়ী আইন প্রয়োগ করবে।
আর্টিকেল ১৫
আরবী হবে সরকারী ভাষা (অনারব দেশের ক্ষেত্রে সে দেশের ভাষা) এবং সরকারী চিঠিপত্রে হিজরী সনের ব্যবস্থার বাধ্যতামূলক হবে।
আর্টিকেল ১৬
জনগণের সেবা তথা দ্বীন-ধর্মের সংরক্ষণ, চরিত্রের শুদ্ধতা, জীবন, সম্মান ও সম্পত্তির নিরাপত্তা বিধান করার মধ্যে সরকারের কর্তৃত্ব নিহিত ও নির্ভরশীল।
আর্টিকেল ১৭
কোন লক্ষ্য বৈধ এটুকুই যথেষ্ট নয়। কোন কাজের বৈধতার জন্য যে পদ্ধতিতে বা পন্থায় লক্ষ্যটি অর্জন করা হবে সে পদ্ধতি বা পন্থাও বৈধ হতে হবে।
৩.ইসলামী অর্থনীতি
আর্টিকেল ১৮
দেশের অর্থনীতি ইসলামী শরীয়াহ ভিত্তিক হবে। রাষ্ট্র মানব মর্যদা ও সামাজিক সুবিচার নিশ্চিত করবে; সংশ্লিষ্ট সবাইকে পরিশ্রম ও বুদ্ধিমত্তার সাথে জীবনের অর্থনৈতিক কার্যাদি পরিচালনার জন্য উদ্ধুদ্ধ করবে এবং হালাল (আইনসঙ্গত) উপায়ে অর্জিত জীবিকাকে সুরক্ষা প্রদান করবে।
আর্টিকেল ১৯
ব্যবসা-বাণিজ্য, শিল্প ও কৃষিকর্মের স্বাধীনতা শরীয়াহর সীমারেখা দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হবে।
আর্টিকেল ২০
রাষ্ট্র শরীয়াহর বিধান মোতাবেক অর্থনৈতিক উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রণয়ন করবে।
আর্টিকেল ২১
রাষ্ট্র একচেটিয়া ব্যবসা ও মজুতদারী বন্ধ করবে এবং প্রয়োজনে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ করবে।
আর্টিকেল ২২
রাষ্ট্র পতিত জমি আবাদ ও কর্ষণযোগ্য ভূমির পরিমাণ বৃদ্ধিকে উৎসাহিত করবে।
আর্টিকেল ২৩
রিবা বা সুদের ভিত্তিতে কোন লেনদেন সুদকে গোপন রাখার জণ্য যে কোন কার্যকে রাষ্ট্র নিষিদ্ধ ঘোষণা করবে।
আর্টিকেল ২৪
মাটির তলার সকল সম্পদ, খনি, কাঁচামাল ও অন্যান্য প্রাকৃতিক সম্পদের মালিকানা হবে রাষ্ট্রের।
আর্টিকেল ২৫
মালিকবিহীন যে কোন সম্পত্তি রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা হবে এবং আইনদ্বারা নির্ধারিত পদ্ধতিতে তা বিলিবন্দোবস্ত, বন্টন বা ব্যবহারক করা হবে।
আর্টিকেল ২৬
রাষ্ট্র জনগণ প্রদত্ত জাকাত শরীয়াহর নির্দেশ মোতাবেক ব্যয় করবে।
আর্টিকেল ২৭
জনকল্যাণের জন্য ওয়াকঠ করা বৈধ এবং এ বিষয়ে সংগঠনের জন্য প্রয়োজনীয় আইন প্রয়োগ করা হবে।
৪. ব্যক্তিগত অধিকার ও স্বাধীনতা
আর্টিকেল ২৮
সুবিচার ও সমতা সরকারের ভিত্তি। আত্মরক্ষার মামলা রুজু করার অধিকার রাষ্ট্রকর্তৃক স্বীকৃত।
আর্টিকেল ২৯
ধর্মীয় ও বুদ্ধিবৃত্তিক বিশ্বাস পোষণ, কাজের অধিকার, লিখিত বা মৌখিকভাবে মত প্রকাশের স্বাধীনতা;দল, সংঘ বা ইউনিয়ন গঠনে ও তাতে অংশগ্রহণের অধিকার ইত্যাদি নাগরিকদের মৌলিক অধিকার।এ সমস্ত অধিকার শরিয়াহর বিধানের মধ্যে রাষ্ট্র নিশ্চিত করবে।
আর্টিকেল ৩০
বাসগৃহ, চিঠিপত্র ও অন্যান্য ব্যক্তিগত বিষয়ের গোপনীয়তা রক্ষা পবিত্র দায়িত্ব এবং রাষ্ট্র এসবের গোপনীয়তা লংঘন প্রতিরোধ ও নিষিদ্ধ করবে। তবে রাষ্ট্রদ্রোহীতা বা অনুরূপ গুরুতর অপরাধ সংঘটনের আশংকা থাকলে আদালতের আদেশে উল্লেখিত গোপনীয়তার বিষয়ে সরকারের নির্ধারিত পদ্ধতি হস্তক্ষেপ করা যাবে।
আর্টিকেল ৩১
রাষ্ট্রের সীমান্তের ভিতরে ও বাইরে চলাচল আইনত সিদ্ধ ও অনুমোদিত। বাংলাদেশের ভিতরে যে কোন স্থানে বসবাস বা বিদেশ ভ্রমণে কোনরূপ বাধা দেওয়া যাবে না। তবে এ ধরনের বিধিনিষেধ আদালতের আদেশে আরোপ করা যাবে এবং আদালত তার কারণ নিষেধাজ্ঞায় উল্লেখ করবে। কোন নাগরিককে দেশ থেকে বহিষ্কার তথা নাগিরকত্ব হরণ করা যাবে না।
আর্টিকেল ৩২
রাজনৈতিক আশ্রয়প্রার্থীদের নিজ দেশে ফেরত পাঠান নিষিদ্ধ তথা অনুমোদিত নয়। তবে সংশ্লিষ্ট দেশসমূহের মধ্যে চুক্তি বা দ্বিপাক্ষিক সমঝোতা অনুযায়ী সাধারণ অপরাধীদের বিদেশে ফেরত প্রেরণ করা যাবে। রাজনৈতিক কারণে আশ্রয়প্রার্থীদের ব্যাপারে কি হবে?
আর্টিকেল ৩৩
জনসাধারণকে নির্যানত করা অপরাধ। এ রূপ অপরাধ সংঘটনকারীদের কৃত অপরাধ ক্ষমা করা যাবে না। অপরাধী ও তার সহকারী উভয়ে অর্থদণ্ডেও দণ্ডিত হতে পারে (কারাদণ্ড ছাড়াও)। যদি কোন সরকারী কর্মকর্তার সহায়তা, সম্মতি, মৌন সমর্থনের মাধ্যমে অপরাধটি সংঘটিত হয়ে থাকে তবে তাকে অপরাধে সহায়তাকারী হিসাবে গণ্য করে ফৌজদারী বা দেওয়ানী শাস্তি প্রদান করা হবে এবং সরকার নিগৃহীত ব্যক্তিকে ক্ষতিপূরণ প্রদান করবে।
আর্টিকেল ৩৪
কোন সরকারী কর্মকর্তার অধিক্ষেত্রীয় এলাকায় কোন অপরাধ সংঘটিত হলে এবং তার জানা থাকা সত্ত্বেও যদি তিনি বিষয়টি যথাযথ কর্তৃপক্ষের গোচরীভুত না করেন, উক্ত কর্মকর্তা বা কর্মচারীকে আদালতের মাধ্যকে (তা’জীর) শাস্তি প্রদান করা হবে।
আর্টিকেল ৩৫
কোন রক্তপাত সংঘটিত হতে দেয়া যাবে না এবং সংঘটিত হলে তার অবশ্যই শাস্তি বিধান করতে হবে। নিহত ব্যক্তির পরিবারকে রাষ্ট্র ক্ষতিপূরণ প্রদান করবে। যদি অপরাধ সংঘটনকারীকে খুঁজে পাওয়া না যায় অথবা সে দেউলিয়া হয় তবে রাষ্ট্র ক্ষতিপূরণ প্রদানের দায়িত্বভার গ্রহণ করবে। তবে সাধারণত অপরাধীকেই দৈহিক বা আর্থিক অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করা হবে।
আর্টিকেল ৩৬
কোন ব্যক্তির বিরুদ্ধে কোন অপরাধ সংঘটিত হলে তিনি আদালতে মামলা রুজু করতে পারবেন। যদি অন্য ব্যক্তির বিরুদ্ধেও কোন অপরাধ ঘটে অথবা সরকারী সম্পত্তির আত্মসাৎ বা ক্ষতিসাধন করা হয় তবে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির বিরুদ্ধে যে কোন নাগরিক আদালতের শরণাপন্ন হতে পারবেন।
আর্টিকেল ৩৭
কাজ করা, জীবিকা অর্জন করা এবং তা ভোগ বা সঞ্চয় করার নাগরিক অধিকার রাষ্ট্র সুনিশ্চিত করবে। এসব বিষয়ে কারো দ্বারা কারো অধিকার লংঘন করা যাবে না। শুধুমাত্র শরিয়ার সুনির্দিষ্ট নীতিমালা লংঘনের ক্ষেত্রে ব্যতিক্রমী ব্যবস্থা নেয়া যাবে।
আর্টিকেল ৩৮
শরীয়াহর সীমারেখার মধ্যে থেকে নারীগণ কাজ করার অধিকার পাবেন।
আর্টিকেল ৩৯
রাষ্ট্র জনগণকে ব্যক্তিগত মালিকানার অধিকার ও স্বাধীনতা নিশ্চিত করবে। কোন পন্থায় সরকার জনগণের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করতে পারবে না। তবে আদালতের আদেশে জনস্বার্থে রাষ্ট্র ব্যক্তিগত সম্পত্তি অধিগ্রহণ করতে পারে।
আর্টিকেল ৪০
ক্ষতিপূরণ প্রদানপূর্বক সরকার জনগণের সম্পত্তি জনস্বার্থে অধিগ্রহণ করতে পারবে। এ উদ্দেশ্যে প্রণীত আইন মোতাবেক সরকার ব্যক্তিগত সম্পত্তি অধিগ্রহণ করবে।
আর্টিকেল ৪১
রাষ্ট্র পত্র পত্রিকা প্রকাশের অনুমতি প্রদান করবে। জনগণের সংবাদপত্রের প্রকাশনার স্বাধীনতা থাকবে, তবে এ ক্ষেত্রে শরীয়াহর মর্ত বলবৎ থাকবে।…
আর্টিকেল ৪২
জনগণ আইনসঙ্গতভাবে দল, এসোসিয়েশন বা ইউনিয়ন গঠন করতে পারবে। কিন্তু প্রকাশিত পত্র পত্রিকার বিষয়বস্তু সমাজ বিরোধী ও অসৎ উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে ধ্বংসাত্মক নয়, অথবা শরীয়ার বিধানের সাথে সাংঘর্ষিক নয়, তবে রাষ্ট্র এ ধরনের দল, এসোসিয়েশন বা ইউনিয়ন নিষিদ্ধ ঘোষণা করতে পারবে।
আর্টিকেল ৪৩
শরীয়াহর উদ্দেশ্যের সাথে সঙ্গতি রেখে সকল অধিকার ভোগ করা যাবে।
৫. ইমাম
আর্টিকেল ৪৪
রাষ্ট্রের একজন ইমাম থাকবেন। যদি কারো মতের সাথে তার অমিল হয় তবুও তার আনুগত্য করা বাধ্যতামূলক হবে।
আর্টিকেল ৪৫
স্রষ্টার আদেশ লংঘন করলে কোন কর্তৃপক্ষের আদেশ মান্য করা যাবে না। ইমাম আনুগত্য পাবার দাবীদার হবেন না, যদি তিনি শরীয়াহর কোন বিধান অমান্য করেন।
আর্টিকেল ৪৬
আইন জনগণের ইমাম নির্বাচনের জন্য পদ্ধতি নির্ধারন করে দেবে। এ নির্বাচন পদ্ধতি শরীয়াহর বিধানের সাথে সামঞ্জস্যশীল হবে। ভোটারদের সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশের অনুকূল মতামত দ্বারা ইমামতি বা নেতৃত্ব নির্ধারিত হবে।
আর্টিকেল ৪৭
রাষ্ট্রের প্রধান পদে প্রার্থী বা ইচ্ছুক ব্যক্তিকে নিম্ন শর্তাবলী পালন করতে হবেঃ
ক. তিনি একজন মুসলমান হবেন: প্রকৃত অর্থে (মোত্তাকী)
খ. তিনি একজন পুরুষ হবেন;
গ. তিনি একজন প্রাপ্তবয়স্ত ব্যক্তি হবেন;
ঘ. তিনি একজন সুস্থ মস্তিস্কের ব্যক্তি হবেন;
ঙ. তিনি একজন ন্যায়পরায়ণ ব্যক্তি হবেন;
চ. তিনি শরীয়াহর সকল বিধি বিধান ও অনুশাসন সম্পর্কে পূর্ণভাবে ওয়াকেফহাল হবেন।
আর্টিকেল ৪৮
আইন অনুসারে নির্ধারিত পদ্ধতিতে সকল প্রাপ্তবয়স্ক নর-নারীর ভোটে রাষ্ট্রের প্রধান নির্বাচিত হবেন। অন্য যে কোন পদের জন্য ভোটে মহিলারা অংশগ্রহণ করতে পারবেন, যদি তিনি নির্ধারিত আইনের নির্ধারিত বিধি বিধান ও পদ্ধতির শর্ত পূরণ করতে পারেন।
আর্টিকেল ৪৯
আদালত তলব করলে রাষ্ট্রের প্রধান বিজ্ঞ আদালতের সামনে হাজির হবেন অথবা তাঁর প্রতিনিধি আদালতে হাজিরা দেবেন।
আর্টিকেল ৫০
রাষ্ট্রের প্রধান অন্যান্য নাগরিকদের মত সকল অধিকার ভোগ করবেন এবং অন্যান্য নাগরিকদের মত সকল দায়দায়িত্ব পালন করবেন। আর্থিক বিষয়ে তিনি আইনের দ্বারা নির্ধারিত পদ্ধতি অনুসরণ করবেন।
আর্টিকেল ৫১
ইমামের অনুকুলে কোন দলিল করা যাবে না এবং তাঁর ও তাঁর আত্মীয় স্বজনের জন্য চতুর্থ ডিগ্রীর কোন ওয়াকফ গঠন করা যাবে না। তবে মিরাসী আইন অনুযায়ী তিনি উত্তরাধিকার প্রাপ্ত হবেন। ইমাম রাষ্ট্রের কোন সম্পত্তি ক্রয়, বিক্রয় বা ভাড়া দিতে পারবেন না।
আর্টিকেল ৫২
ইমামকে প্রদত্ত উপহার সামগ্রী তার হাত, পায়ের শিকল স্বরূপ এবং এসব সামগ্রী রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা দিতে হবে।
আর্টিকেল ৫৩
ইমামকে ন্যায়পরায়ণতা, ধর্মপরায়ণতা ও অন্যান্য সৎগুণাবলীতে জনগণের সাথে সম্পৃক্ত হয়ে সকল কাজ নিষ্পন্ন করতে হবে। প্রতিবছর তাঁকে মক্কায় হজ্জ্ব মিশন পাঠাতে হবে, যারা আনুষ্ঠাতিক ও অনানুষ্ঠাতিক সকল সভায় অংশগ্রহণ করবেন।
আর্টিকেল ৫৪
শত্রুর বিরুদ্ধে জিহাদে ইমাম সেনাপতিত্ব করবেন। তিনি দেশের সীমান্ত রক্ষা করবেন, হুদুদ (শরীয়ায় বর্ণিত শাস্তি) প্রতিষ্ঠা করবেন, চুক্তি সম্পাদন ও তা অনুসমর্থন করবেন।
আর্টিকেল ৫৫
ইমাম ভালো কাজ করতে এবং মন্দ কাজ থেকে দূরে থাকতে ও অন্যান্য বাধ্যতামূলক কাজ করতে জনগণকে সক্ষম করে তুলবেন।
আর্টিকেল ৫৬
ইমাম রাষ্ট্রীয় কাজে গুরুত্বপূর্ণপদে লোকবর্গকে নিয়োগ দান করবেন। তিনি তার নিয়োগ দানের কিছু ক্ষমতা অধীনস্থদের অর্পণ করবেন, যারা গুরুত্বপূর্ণ পদ ছাড়া অন্যান্য পদে নিয়োগ দান করবেন।
আর্টিকেল ৫৭
কোন অপরাধ ক্ষমা করা যাবেনা, তবে আইনে ক্ষমা প্রদানের বিধান থাকলে ক্ষমা করা যাবে। রাষ্ট্রদ্রোহীতা ও শরীয়তে বর্ণিত শাস্তি (হুদুদ) ব্যতিত অন্যান্য অপরাধ ইমাম ক্ষমা করতে পারবেন।
আর্টিকেল ৫৮
ইমাম বিশেষ ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারবেন যদি দেশে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়, অথবা এমন পরিস্থিতি বিরাজ করে যা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি ও শান্তি বিঘ্নিত করতে পারে, অথবা রাষ্ট্রের অস্তিত্ব বিপন্ন হতে পারে এমন অবস্থা বিরাজ করে গৃহযুদ্ধের সম্ভাবনা দেখা দেয়, অন্যরাষ্ট্রের সাথে যুদ্ধের আশংকা থাকে। তবে বিশেষ ক্ষমতা প্রয়োগের এক সপ্তাহের মধ্যে তা আইন সভার নিকট পেশ করতে হবে। নির্বাচিত নতুন আইনসভা না থাকলে, পুরান আইনসভার অধিবেশন ডাকতে হবে। সেক্ষেত্রে এ বিশেষ ক্ষমতা প্রয়োগকে আইনসঙ্গত রূপ প্রদানের জন্য নতুন আইন প্রণয়ন করত হবে এবং কোন পদ্ধতিতে এবং কোন কর্তৃপক্ষ বিশেষ ক্ষমতাবে বৈধতা প্রদান করবে আইনে তা নির্দেশিত থাকবে।
৬. বিচার বিভাগ
আর্টিকেল ৫৯
বিচার বিভাগের বিচারপতিগণ শরিয়াহর বিধি বিধান মোতাবেক বিচারকার্য পরিচালনা করবেন।
আর্টিকেল ৬০
বিচার বিভাগের সামনে আইনের চোখে সকল মানুষ সমান বলে গণ্য হবে। কোন ব্যক্তি বা দলকে বিশেষ সুবিধা প্রদানের জন্য বিশেষ বিচারালয় প্রতিষ্ঠা করা যাবে না।
আর্টিকেল ৬১
বিশেষ আদালত প্রতিষ্ঠা নিষিদ্ধ ও অবৈধ বিবেচিত হবে। কোন মামলা রুজুকারীকে প্রতিকার হতে বঞ্চিত করা যাবে না।
আর্টিকেল ৬২
ইমাম বা শাসকের বিরুদ্ধে শুনানী গ্রহণে আদালতকে নিষেধ করা যাবে না বা বিচার কার্যকে বিঘ্নিত করা যাবে না।
আর্টিকেল ৬৩
রাহমানুর রাহিম আল্লাহর নামে আদালত সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও প্রয়োগ করবে। বিচারকার্য পরিচালনায় বিচারপতিগণ শরীয়াহর আইন ছাড়া অন্য কোন আইনের আশ্রয় নেবেন না।
আর্টিকেল ৬৪
আদালতের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন রাষ্ট্রের দায়িত্ব এবং এ বিষয়ে গাফিলতি বা ব্যর্থতা দণ্ডনীয় অপরাধ হিসাবে গণ্য হবে।
আর্টিকেল ৬৫
রাষ্ট্র বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিত করবে এবং বিচার বিভাগের উপর হস্তক্ষেপ অপরাধ হিসাবে গণ্য হবে।
আর্টিকেল ৬৬
রাষ্ট্র সবচেয়ে যোগ্যতম ব্যক্তিবর্গকে বিচারপতির আসনে অধিষ্ঠিত করবে এবং সুচারু বিচার ব্যবস্থা পরিচালনা নিশ্চিত করবে।
আর্টিকেল ৬৭
শরীয়াহ’য় বর্ণিত শাস্তিযোগ্য অপরাধের (হুদুদ) ক্ষেত্রে অপরাধীকে আদালতে হাজির করতে হবে, তাকে তার মনোনীত আইনবিদ মনোনিত করতে দেয়া হবে; তার ক্ষেত্রে রাষ্ট্র তার পক্ষে উকিল নিযুক্ত করবে।
আর্টিকেল ৬৮
আদালতের কার্যক্রম হবে মুক্ত এবং জনগণ তাতে হাজির থাকতে পারবেন। গোপনে আদালতের বিচার কার্য সম্পন্ন করা যাবে না, যদি না শরীয়াহ তা অনুমোদন করে।
আর্টিকেল ৬৯
জিনা, কাজফ (মানহানী), চুরি, দস্যুতা (হিরাবাহ), মদ্যপান ও স্বধর্মত্যাগ প্রভৃতি অপরাধের ক্ষেত্রে ‘হুদুদ আল শরীয়াহ’-এ বর্ণিত শাস্তি প্রদান করা হবে।
আর্টিকেল ৭০
হুদুদ ব্যতিত অন্যান্য অপরাধের ক্ষেত্রে আইন দ্বারা নির্ধারিত ও কাজীর বিচারবুদ্ধি (তা’জীর) অনুযায়ী শাস্তি প্রদান করা হবে।
আর্টিকেল ৭১
অপরাধকারীর অপরাধ সংঘটনে কতটুকু দায়দায়িত্ব তা আইন নির্ধারণ করবে। তবে এ দায়ভার রক্তপণের সীমা অতিক্রম করবে না।
আর্টিকেল ৭২
আইন অপরাধীর অনুতপ্ত হবার ক্ষেত্রে তা গ্রহণের মানদণ্ড ও শর্তাদি নির্ধারণ করবে।
আর্টিকেল ৭৩
(উল্লেখ করা হয় নাই)
আর্টিকেল ৭৪
(উল্লেখ করা হয় নাই)
আর্টিকেল ৭৫
নারীর ক্ষেত্রে রক্তপণ পুরুষের সমান হতে পারে।
আর্টিকেল ৭৬
‘উইসাস’ প্রয়োগের শর্তাধীনে আদালতের পূর্ণ নিশ্চয়তা ও সমতা কার্যকরী হবে।
আর্টিকেল ৭৭
কাজীর বিচারের ক্ষেত্রে বেত্রদণ্ডসুল শাস্তি হিসাবে গণ্য হবে, কতিপয় ক্ষেত্র ছাড়া কারাদণ্ড প্রদান করা যাবেনা এবং কারাদণ্ড প্রদানের ক্ষেত্রে সময়সীমা সীমিত হবে।
আর্টিকেল ৭৮
কারাবন্দীকে নির্যাতন, অত্যাচার বা মানহানি করা যাবে না।
আর্টিকেল ৭৯
একটি ‘সর্বোচ্চ সাংবিধানিক আদালত’ গঠন করা হবে যা বিধি বিধান ইত্যাদি সময় সময় পর্যালোচান ও তত্ত্বাবধান করবে এবং তা শরীয়াহর সাথে সঙ্গতিপূর্ণ কিনা তা পরীক্ষা করে দেখবে। এই সর্বোচ্চ আদালতকে আরো কি ক্ষমতা দেয়া যায় তা আইন নির্ধারণ করবে। কারা হবে এর সদস্য?
আর্টিকেল ৮০
একটি ‘দিওয়ান-আল-মুজালিম’ গঠন করা হবে এবং এ আইন সংস্থার গঠন কার্যপরিধি ও সদস্যদের ভাতা ইত্যাদি নির্ধারণ করে দেবে।
৭. শুরা, তত্ত্বাবধান ও আইন প্রণয়ন
আর্টিকেল ৮১
রাষ্ট্রের একটি ‘মজলিসে শুরা’ থাকবে, যা (আইন পরিষদ) নিম্নবর্ণিত ক্ষমতাসমূহ প্রয়োগ করবে:
১. শরীয়াহর অনুশাসন অনুযায়ী আইন প্রণয়ন করা;
২. রাষ্টের বার্ষিক বাজেট অনুমোদন করা এবং এর হিসাব নির্ধারণ ও তত্ত্বাবধান করা;
৩. সরকারের নির্বাহী বিভাগের কার্যকলাপ তত্ত্বাবধান করা;
৪. মন্ত্রীপরিষদের কার্য ও দায়িত্ব নির্ধারণ করে দেওয়া এবং প্রয়োজনে মন্ত্রীসভা হতে অনুমোদন প্রত্যাহার করা।
আর্টিকেল ৮২
আইন সমলিসে শুরার নির্বাচন পদ্ধতি, শুরার সদস্য হবার যোগ্যতা ও আনুষঙ্গিক বিষয়াদি নির্ধারণ করে দেবে। বিজ্ঞজনের আলাপ আলোচনার মাধ্যমে ও বিধানাদি নির্ধারিত হবে, যাতে প্রাপ্তবয়স্ক, সুস্থ মস্তিষ্কের এবং জ্ঞানীগুণীজন তাদের মতামত ব্যক্ত করতে পারেন। আইন শুরার সদস্যদের আর্থিক বিষয়াদিও নির্ধারণ করে দেবে। মজলিসে শুরা তার নিজস্ব অভ্যন্তরীণ পরিচালনা পদ্ধতি নিজে ঠিক করে নেবে।
৮. সরকার
আর্টিকেল ৮৩
সরকার সকল সরকারী কার্য পরিচালনার জন্য দায়িত্বাবদ্ধ থাকবে; শরীয়াহর বিধান অনুযায়ী তা পরিচালনা করবে এবং ইমামের নিকট দায়বদ্ধ থাকবে (যে সব রাষ্ট্রে ‘মজলিসে শুরা’ থাকবে সেখানে ‘ইমাম’ শব্দটির স্থলে সেখানে ‘ইমাম’ শব্দটির স্থলে ‘মজলিসে শুরা’ শব্দটি প্রতিস্থাপিত হবে)।
আর্টিকেল ৮৪
আইন মন্ত্রীবর্গের নিয়োগের শর্ত নির্ধারণ করে দেবে, তাদের কার্যকালে যে সব তাদের জন্য নিষিদ্ধ তা উল্লেখ করবে, তাদের দায়িত্ব লংঘনের ক্ষেত্রে বিচারপদ্ধতি বর্ণনা করবে।
৯. সাধারণ অন্তর্বর্তীকালীন বিধান
আর্টিকেল ৮৫
…(শহরের নাম) হবে দেশের রাজধানী।
আর্টিকেল ৮৬
আইন রাষ্ট্রের পতাকা ও প্রতীক নির্ধারণ করে দেবে এবং এ সংক্রান্ত সকল নিয়মকানুন উল্লেখ করবে।
আর্টিকেল ৮৭
বলবৎ হবার তারিখ হতে আইনসমূহ কার্যকর হবে। বলবৎ হবার পূর্ব কোন তারিখ হতে আইনসমূহের কার্যকারিতা নির্ধারণ করা যাবে না। তবে আইনসভার দু-তৃতীয়াংশ সদস্যের ইতিবাচক ভোটে ফৌজদারী অপরাধ বিষয় ছাড়া অন্য কোন আইনের বিষয়ে পূর্বকার্যকারিতা বা ভূতাপেক্ষিক অনুমোদন প্রদান করা যাবে।
আর্টিকেল ৮৮
আইন বলবৎ হবার দু’ সপ্তাহের মধ্যে সরকারী গেজেট তা প্রকাশ করতে হবে। অন্য কোন বিধান না থাকলে গেজেটে প্রকাশের ১ মাসের মধ্যে আইন কার্যকর হবে।
আর্টিকেল ৮৯
ইমাম এবং আইনসভা উভয়ে সংবিধানের এক বা একাধিক আর্টিকেল সংশোধনের প্রস্তাব করতে পারবেন। যে বা যেসব আর্টিকেল সংশোধনের প্রস্তাব করা হবে তার যৌক্তিকতা উপস্থাপন করতে হবে। যদি আইন পরিষদ এ সংশোধনী প্রস্তাব করে তবে সে প্রস্তাব আইন পরিষদের দু’তৃতীয়াংশ সদস্য কর্তৃক সমর্থিত হতে হবে। আইন পরিষদ সংশোধন প্রস্তাব বিস্তারিতভাবে পর্যালোচনা করবেন এবং দু’তৃতীয়াংশ ভোটে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন। যতি কোন সংশোধনী প্রস্তাব প্রত্যাখ্যাত হয়, তবে এক বছরের মধ্যে ঐ সংশোধনী প্রস্তাব পুনঃ আনয়ন করা যাবে না। যদি আইনসভা প্রতম পর্যায়ে সংশোধনটি অনুমোদন করে এবং দু’-তৃতীয়াংশ সদস্য কর্তৃক সমর্থিত হয়, তবে বিষয়টি জনগণের সমর্থনের জন্য গণভোটে পেশ করা হবে।
গণভোটে সংশোধনীটি অনুমোদিত হলে গণভোটের রায় প্রকাশের দিন থেকে সংশোধনীটি কার্যকর হবে।
আর্টিকেল ৯০
এ সংবিধান বলবৎ হবার পূর্ববর্তী সকল আইন, বিধান, প্রবিধি ইত্যাদি বলবৎ ও কার্যকর থাকবে। তবে সংবিধানের আলোকে পূর্ববর্তী বিধিবিধানসমূহ সংশোধন বা বাতিল করা যাবে। যদি পূর্ববর্তী বিধি বিধান শরীয়ার সাথে সাংঘর্ষিক হয় তবে যতটুকু সাংঘর্ষিক বা অসঙ্গতিপূর্ণ ততটুকু বাতিল করা হবে।
আর্টিকেল ৯১
উম্মাহ কর্তৃক গণভোটে সমর্থিত হবার দিন থেকে এ সংবিধান কার্যকর হবে।
(সূত্র: দি মুসলিম ওয়ার্ল্ড লীগ জার্নাল, ৯ (৬), এপ্রিল, ১৯৮২ পৃষ্ঠা ২৯-৩৪)