পরিশিষ্ট-খ
ইসলামী শাসনতন্ত্রের মডেল
প্রস্তাবনা
যেহেতু ইসলাম সকল যুগের সকল মানুষের জন্য পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধান এবং আল্লাহর বিধান বিশ্বজনীন ও চিরন্তন এবং মানব জীবনের সকল ক্ষেত্রে তা প্রযোজ্য;
যেহেতু প্রত্যেক ব্যক্তি মানুষের আত্মমর্যাদা রয়েছে;
যেহেতু ব্যক্তিগত ও সামষ্টিক সকল ক্ষমতা শরীয়াহর বিধান অনুযায়ী পরিচালনার জন্য অর্পিত আমানত বা দায়িত্ব, যাতে ঐশীবাণী বিধান মোতাবেক সকল অবিচার ও অভাবমুক্ত জীবন নিশ্চিত হয় এবং মানব জীবন যাতে সামঞ্জস্যশীলতা, নিরাপত্তা, স্বাস্থ্য ও পরিপূর্ণতা দ্বারা উজ্জীবিত হয়;
স্বীকৃতি প্রদান করা যাচ্ছে যে ইসলাম ও ইসলামী নীতির ভিত্তিতে সমাজ গঠন সংবিধান ও আইনে শরীয়াহর পূর্ণ বাস্তবায়ন দাবি করে এবং প্রত্যেক মানুষ তার নিজের প্রতি, দেশের প্রতি এবং সমগ্র মানবতার প্রতি দায়িত্ব পালন করবে;
আমরা,…(রাষ্ট্রের নাম)… এর নাগরিকগণ নিম্নবর্ণিত মূল্যবোধ ভিত্তিক আর্থ-সামাজিক ব্যবস্থা গঠনের জন্য অঙ্গীকারবদ্ধ হচ্ছি:
ক. একমাত্র আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পণ;
খ. শৃংখলা ও দায়িত্ব সচেতনতা দ্বারা উদ্ধুদ্ধ স্বাধীনতা;
গ. ক্ষমা ও দয়া ভিত্তিতে সমতা,
ঘ. ভ্রাতৃত্ববোধের ভিত্তিতে সমতা,
ঙ. শাসন ব্যবস্থার পদ্ধতি হিসাবে ‘শুরা’ বা পারস্পরিক পরামর্শ ব্যবস্থা।
আমরা, (রাষ্ট্রের নাম) জনগণ, তারিখে অনুষ্ঠিত গণভোটের-[অথবা পার্লামেন্ট বা অন্যকোন যথাযথ সংস্থার প্রদত্ত সিদ্ধান্ত মোতাবেক] মাধ্যমে এই সংবিধান গ্রহণ করলাম, উপরোক্ত নীতিমালায় নিজদের আবদ্ধ করলাম এবং তদনুসারে আমাদের দায়িত্ব পালনের জন্য অঙ্গীকারাবদ্ধ হলাম। এবং আল্লাহ পাক আমাদের সাক্ষী।
শাসন কর্তৃত্বের ভিত্তি ও সমাজের ভিত্তি
আর্টিকেল ১
ক. সার্বভৌমত্ব কেবলমাত্র আল্লাহর এবং শরীয়াহ হচ্ছে চূড়ান্ত বিধান;
খ. শাসন পদ্ধতি হবে ‘শুরা’ বা পারস্পরিক পরামর্শ ভিত্তিক;
গ. এই বিশ্বাস যে, এই বিশ্বের সকল কিছুর মালিকানা আল্লাহর এবং এসব কিছু মানবজাতির জন্য আল্লাহর আশীর্বাদ এবং প্রত্যেক ব্যক্তির এই ঐশী আশীর্বাদে ন্যায়সঙ্গত হিস্যা রয়েছে;
ঘ. এই বিশ্বাস যে, সমস্ত প্রাকৃতিক সম্পদ আল্লাহর পক্ষ হতে একটি আমানত এবং মানুষ ব্যক্তিগত ও সামষ্টিকভাবে এসবের আমানতদার (মুসতাখলাফ)। এই আমানতদারীর কাঠামোর মধ্যে মানুষের অর্থনৈতিক প্রচেষ্টা ও তার প্রাপ্তি নিহিত রয়েছে,
ঙ. মানবাধিকার সম্পর্কে ইসলামী বিধানের অলংঘনীয়তা এবং বিশ্বের সর্বত্র শোষিত ও নির্যাতিত মানুষেকে সহায়তা প্রদান;
চ. ইসলামী শিক্ষা, সাংস্কৃতিক প্রোগ্রাম, মিডিয়া ও অন্যান্য উপায়ে ব্যক্তি ও সমাজ জীবনে ইসলামী চরিত্রের রূপায়ণের সর্বোচ্চ গুরুত্ব;
ছ. সমাজের সকল সক্ষম সদস্যদের কাজের সুযোগ এবং অসমর্থ, পীড়িত ও বৃদ্ধাদের জীবিকার নিরাপত্তা বিধান,
জ. সবার জন্য শিক্ষা, স্বাস্থ্য, সাংস্কৃতিক ও সামাজিক সুযোগ সুবিধা সরবরাহ;
ঝ. উম্মাহর একতাবদ্ধতা ও তা বাস্তবায়নের জন্য নিরলস প্রচেষ্টা;
ঞ. ইসলামী দাওয়াত প্রদানের দায়িত্ব বাধ্যতামূলক পালন করা;
দায়িত্ব ও অধিকার
আর্টিকেল ৪
ক. মানুষের জীবন, শরীর, সম্মান ও স্বাধীনতা পবিত্র ও অলংঘনীয়। একমাত্র শরীয়াহর কর্তৃত্ব ও অনুমোদন ব্যতিরেকে প্রাণ বা দেহের ক্ষতি করা যাবে না;
খ. জীবদ্দশার মত মৃত্যুর পরও ব্যক্তিমানুষের শরীর ও সম্মান পবিত্র ও অলংঘনীয়।
আর্টিকেল ৫
ক. কোন ব্যক্তির দেহের উপর অত্যাচার বা মানসিক নির্যাতন করা যাবে না। কোন ব্যক্তি কোন অপরাধ করেছে মর্মে জোরপূর্বক মিথ্যা স্বীকারোক্তি আদায় করা যাবে না; এমন কিছু করতে বাধ্য করা যাবেনা যা ঐ ব্যক্তির জন্য বা অন্যের জন্য ক্ষতিকর;
খ. অত্যাচার একটি অপরাধ এবং যে কোন সময়েই দণ্ডনীয়;
আর্টিকেল ৬
ক. প্রত্যেক ব্যক্তি তার ব্যক্তিগত গোপনীয়তা রক্ষার দাবীদার;
খ. বাসগৃহ, চিঠিপত্র ইত্যাদির গোপনীয়তা রক্ষার অধিকার প্রত্যেকের রয়েছে এবং আদালতের বৈধ আদেশ ছাড়া তা ভঙ্গ করার কারো অধিকার নেই।
আর্টিকেল ৭
প্রত্যেক ব্যক্তির খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবার অধিকার রয়েছে। রাষ্ট্র আয়ত্বাধীন সম্পদের মাধ্যমে এসবের ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
আর্টিকেল ৮
প্রত্যেক ব্যক্তির নিজস্ব চিন্তা, মতামত ও বিশ্বাস পোষণের অধিকার রয়েছে। আইনের সীমারেখার মধ্যে ঐসব প্রকাশ করারও তার অধিকার রয়েছে।–[এই সংবিধান অনুযায়ী কো আইন শরীয়াহর পরিপন্থী হতে পারবে না। যখনই আইনের প্রসঙ্গ উত্থাপিত হয় তখন আইন বলতে শরীয়াহ বোঝাবে তা শরীয়াহ কর্তৃক অনুমোদিত বোঝাবে]
আর্টিকেল ৯
ক. প্রত্যেক মানুষ আইনের চোখে সমান এবং প্রত্যেকে সমভাবে আইনের নিরাপত্তা পাবে;
খ. সমান যোগ্যতাসম্পন্ন প্রত্যেক ব্যক্তি সমান সুযোগ পাবার দাবীদার। ধর্মীয় বিশ্বাস বর্ণ, গোত্র, ভাষাগত ইত্যাদি কারণে কারো প্রতি কোন বৈষম্যমূলক আচরণ করা যাবে না।
আর্টিকেল ১০
ক. প্রত্যেক ব্যক্তির সাথে আইন মোতাবেক এবং কেবলমাত্র আইন মোতাবেক আচরণ করতে হবে।
খ. সকল ফৌজদারী আইন বলবৎ হবার তারিখ হতে কার্যকর হবে এবং এ আইনকে বলবৎ হবার পূর্ব কোন তারিখ থেকে কার্যকারিতা প্রদান করা যাবে না।
আর্টিকেল ১১
ক. আইনে সুনির্দিষ্টভাবে বর্ণিত এবং লিপিবদ্ধ না থাকলে কোন কাজকে অপরাধ গণ্য করা যাবে না বা তজ্জন্য শাস্তি প্রদান করা যাবে না।
খ. প্রত্যেক ব্যক্তি ব্যক্তিগতভাবে তার নিজের কাজের জন্য দায়ী। একজনের অপরাধের জন্য পরিবারের কোন সদস্য বা অন্য কাউকে দায়ী করা যাবেনা, যদি না তাতে তার প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সহযোগিতা থাকে।
গ. আদালত কর্তৃক দোষী সাব্যস্ত হবার পূর্ব পর্যন্ত প্রত্যেক ব্যক্তি নির্দোষ বলে গণ্য হবে।
ঘ. যথাযথ নিয়মে বিচার কার্য সম্পাদন এবং আসামীকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ প্রদান না করে কাউকে দোষী সাব্যস্ত করা যাবে না।
আর্টিকেল ১২
ক. কোন ব্যক্তিকে কোন সরকারী এজেন্সী কর্তৃক অহেতুক হেনস্থা করা যাবে না।
খ. কোন ব্যক্তি যখন ব্যক্তিগত বা জন অধিকার দাবী করবে তখন তাকে কোন রূপ হেনস্তা করা যাবে না।
আর্টিকেল ১৩
ক. প্রত্যেক মুসলমানের বিবাহের মাধ্যমে পরিবার গঠনের অধিকার আছে এবং শরীয়াহর নিয়ম মোতাবেক তিনি তার সন্তানদের গড়ে তুলবেন।
খ. প্রত্যেক স্বামী তার সামর্থ্য অনুযায়ী তার স্ত্রী ও সন্তানদের লালন পালন করবেন।
গ. পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্র হতে মাতৃসমাজ বিশেষ সম্মান, যত্ন ও সহায়থা প্রাপ্ত হবেন।
ঘ. প্রত্যেক শিশুর পিতামাতা কর্তৃক যথাযথভাবে প্রতিপালিত হবার অধিকার রয়েছে।
ঙ. শিশুশ্রম নিষিদ্ধ। কত বৎসর পর্যন্ত?
আর্টিকেল ১৪
ক. নাগরিকত্ব আইন দ্বারা নির্ধারিত হবে।
খ. প্রত্যেক মুসলমানের রাষ্ট্রের নাগরিকত্ব লাভের আবেদনের অধিকার থাকবে। আইন মোতাবেক এই আবেদন নিষ্পত্তি করা হবে।
আর্টিকেল ১৫
আইন দ্বারা কোন নিষেধাজ্ঞা আরোপিত না হলে, প্রত্যেক নাগরিকের দেশের যে কোন স্থানে বসবাসের এবং দেশের ভিতরে বাহিরে গমনাগমনের অধিকার থাকবে। কোন নাগরিককে দেশ থেকে বহিষ্কার করা যাবে না এবং দেশে প্রত্যাবর্তনে বাধা দেয়া যাবে না।
আর্টিকেল ১৬
ক. ধর্মের ব্যাপারে কোন বাধ্যবাধকতা থাকবে না।
খ. অমুসলিম সংখ্যালঘুদের তাদের ধর্ম পালনের পূর্ণ অধিকার থাকবে।
গ. পারিবারিক আইনের ক্ষেত্রে সংখ্যালঘুরা তাদের নিজস্ব আইন ও ঐতিহ্য দ্বারা পরিচালিত হবে।
আর্টিকেল ১৭
বৎসরের উর্ধ্বের প্রত্যেক নাগরিকের রাষ্ট্রের জনগণ সম্পর্কিত বিষয়াবলীতে অংশগ্রহণের দায়িত্ব ও কর্তব্য থাকবে।
আর্টিকেল ১৮
ক. শরিয়াহর কোন বিধানের সাথে সাংঘর্ষিক না হলে প্রত্যেক নাগরিকের সমবেত হবার এবং রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক, বৈজ্ঞানিক, সামাজিক বা অন্য ধরনের দল, সংগঠন, গ্রুপ, এসোসিয়েশন ইত্যাদি গঠনের অধিকার থাকবে।
খ. এ ধরনের দল, সংগঠন ও এসোসিয়েশনের গঠন ও কার্যাবলী আইন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হবে।
আর্টিকেল ১৯
আইন অনুসারে কেউ রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনা করলে রাষ্ট্র তা প্রদান করবে। এ ধরনের রাজনৈতিক শরণার্থীদের রাষ্ট্র নিরাপত্তা, প্রতিরক্ষা ও অন্যান্য সুযোগ সুবিধা প্রদান করবে এবং আবেদন করলে নিরাপদে অন্যত্র চলে যাবার অনুমতি প্রদান করবে।
মজলিসে শুরা
আর্টিকেল ২০
ক. জনগণ কর্তৃক প্রত্যক্ষভাবে নির্বাচিত একটি ‘মজলিসে শুরা’ থাকবে, যার সদস্য সংখ্যা হবে…. জন।
খ.মজলিসের মেয়াদকাল হবে ….. বৎসর।
গ. মজলিসের সদস্য নির্বাচিত হওয়ার গুণাবলী আইনের দ্বারা নির্ধারিত হবে।
আর্টিকেল ২১
‘মজলিসে শুরা’র কার্যাবলী হবে নিম্নরূপ:
ক. শরিয়াহর উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের জন্য আইন প্রণয়ন; প্রয়োজনে উলেমা কাউন্সিলের মতামত গ্রহণ;
খ. সরকার ও মজলিসে শুরা’র সদস্যদের প্রস্তাবিত আইন প্রণয়ন করা;
গ. সরকারের বাজেট অনুমোদন করা এবং সরকারী আয়-ব্যয়ের হিসাব নিরীক্ষঅ তত্ত্বাবধান করা;
ঘ. সরকার ও তার বিভিন্ন বিভাগের নীতিমালা পর্যালোচান করা, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে মন্ত্রীকে জিজ্ঞাসাবাদ করা, আইনের অধীনে গঠিত বিভিন্ন বিভাগ ও প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে প্রয়োজনে তদন্তকার্য পরিচালনা করা;
ঙ. যুদ্ধ, শান্তি বা জাতীয় জরুরী অবস্থা ঘোষণা করা;
চ. আন্তর্জাতিক চুক্তি, সমঝোতা, প্রটোকল ইত্যাদি অনুমোদন করা;
আর্টিকেল ২২
দায়িত্ব পালনকালীন সময়ে মজলিসে শুরার সদস্যবৃন্দ স্বাধীনভাবে মতামত প্রকাশ করতে পারবেন এবং তাদেরকে গ্রেফতার, তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের, হেনস্তা বা সদস্যপদ থেকে অপাসারিত করা যাবে না।
ইমাম
আর্টিকেল ২৩
ক. ইমাম হবেন দেশের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, যিনি জনগণের সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটে… বৎসরের জন্য নির্বাটিত হবেন। ‘মুজলিস আল বায়াহ’ তার হাতে ‘বায়াত’ গ্রহণ করার তারিখ হতে তার কার্যকালের মেয়াদ শুরু হবে।
খ. আইনের নির্দেশনা মোতাবেক ইমাম জনগণ ও ‘মজলিসে শুরা’র নিকট দায়ী থাকবেন।
আর্টিকেল ২৪
একজন ব্যক্তির ইমাম নির্বাচিত হবার জণ্য নিম্নবর্ণিত যোগ্যতা থাকা প্রয়োজন:
ক. মুসলিম প্রার্থীর বয়স… এর কম হবে না;
খ. তিনি নিষ্কলংক চরিত্রের অধিকারী হবেন;
গ. তিনি কুআন ও সুন্নাহর অনুশাসন মেনে চলবেন, ইসলামের প্রতি অঙ্গীকারবদ্ধ এবং শরীয়াহর বিধি বিধানের বিষয়ে সম্যকভাবে অবহিত;
ঘ. শারীরিক, মানসিক ও অনুভূতিগতভাবে তার পদের দায়িত্ব পালনে সক্ষম;
ঙ. তিনি নম্র, ভদ্র এবং সুষম আচরণের অধিকারী। জ্ঞানী, সৎ, নিষ্ঠাবান।
আর্টিকেল ২৫
দায়িত্বভার গ্রহনের পূর্বে ইমাম ‘মজলিসে শুরা’ সমন্বয়ে গঠিত জাতীয় সংসদ (মজলিসে বায়াহ), উলেমা কাউন্সিল, সুপ্রীম সাংবিধানিক কাউন্সিল, সর্বোচ্চ আদালত, ইলেকশন কমিশন, সশস্ত্র বাহিনী প্রধানগণের সামনে ঘোষণা প্রদান করবেন যে, তিনি অক্ষরে অক্ষরে শরীয়াহর অনুশাসন অনুসরণ করবেন, ইসলামের বাণীকে যে কোন মূল্যে সর্ব ঊর্ধ্বে তুলে ধরবেন, সংবিধান সংরক্ষণ করবেন; দেশের সীমান্ত, আদর্শিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা করবেন, জনগণের অধিকার রক্ষা করবেন; ভয় বা প্রলোভন ব্যতিরেকে বৈষম্যহীনভাবে সবার প্রতি সুবিচার করবেন; জনগণের দুঃখ দুর্দশা আপনোদনের জস্য সরাসরি বা সংশ্লিষ্ট বিভাগের মাধ্যমে শুনানী শ্রবণ করবেন। তাঁর এই অঙ্গীকার ঘোষণার পর, উপস্থিত সকল অংশগ্রহণকারী তাঁদের নিজ ও জনগণের পক্ষ হতে তাঁর নিকট ‘বায়াত’ গ্রহণ করবেন।
আর্টিকেল ২৬
ইমাম সকল ব্যক্তির আনুগত্য প্রাপ্ত হবেন, যদি কারো মতামত ইমাম থেকে ভিন্নও হয়। তবে আল্লাহ ও রাসূল (সা) এর বিরুদ্ধাচরণের ক্ষেত্রে ইমাম আনুগত্য লাভ করবেন না।
আর্টিকেল ২৭
অন্যান্য নাগরিকদের ন্যায় ইমাম সমঅধিকার ভোগ করবেন। তিনি সবার ন্যায় আইন মান্য করে চলবেন; এ বিষয়ে তিনি কোন প্রকার দণ্ডমুক্তি বা বিশেষ সুবিধা ভোগ করবেন না।
আর্টিকেল ২৮
ক. ইমাম রাষ্ট্রীয় কোন সম্পত্তি ক্রয় বা ভাড়া করবেন না অথবা তিনি নিজের কোন সম্পত্তি রাষ্ট্রের নিকট বিক্রি বা ভাড়া দিতে পারবেন না। তিনি দেশের ভিতরে বা বাইরে কোন ব্যবসা পরিচালনা করবেন না।
খ. সরকারী পদাধিকার বলে ইমাম, ইমামের পরিবারের সদস্যবর্গ বা সরকারী কর্মকর্তাকে প্রদত্ত উপহার সরকারী সম্পত্তি বলে গণ্য হবে।
গ. ইমাম আদালতের কোন আদেশকে বাতিল করে দিতে পারবেন না; হুদুদ, কিসাস বা দিয়াহ এর ক্ষেত্রে দণ্ডিত কোন ব্যক্তির শাস্তি হ্রাস, রদ বা নিলম্বিত করতে পারবেন না। তবে অন্যান্য ক্ষেত্রে তার ক্ষমা প্রদানের অধিকার থাকবে।
আর্টিকেল ২৯
ইমাম বা যথাযথভাবে নিযুক্ত তার প্রতিনিধি বিদেশী সরকার এবং আন্তর্জাতিক সংস্থা সমূহের সাথে নেগোসিয়েশনের মাধ্যমে চুক্তি সম্পাদন করতে পারবেন।
আর্টিকেল ৩০
ইমাম ‘মজলিসে শুরা’ কর্তৃক অনুমোদিত আইনে সম্মতি প্রদান করবেন এবং যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে তা বাস্তবায়নের জন্য প্রেরণ করবেন। মজলিস কর্তৃক অনুমোদিত কোন আইনে তিনি ভেটো প্রয়োগ করতে পারবেন না। তবে তিনি প্রণীত আইনটি প্রাপ্তির ৩০ দিনের মধ্যে মজলিসে শুরার নিকট ফেরত পাঠাতে পারবেন। ‘মজলিসে শুরা’ পূন: আইনটি বিবেচনা করে দু’তৃতীয়াংশ ভোটে তা আবার অনুমোদন করলে, ইমাম আইনটিতে সম্মতি প্রদান করবেন।
আর্টিকেল ৩১
ইমাম উপদেষ্টা, মন্ত্রীবর্গ, রাষ্ট্রদূত এবং সশস্ত্রবাহিনী প্রধানদের নিয়োগ দান করবেন।
আর্টিকেল ৩২
ইমাম অভিশংসিত হবেন যদি তিনি ইচ্ছাকৃতভাবে সংবিধান লংঘন করেন অথবা শরীয়াহর বিধান গুরুতরভাবে ভঙ্গ করেন। মজলিসে শুরার দু’তৃতীয়াংশ ভোটে এই অভিশংসন কার্যকর হবে। ইমাম যদি ‘বায়াতের’ কোন শর্ত লংঘন করেন তবে মজলিসে বায়াহ’ এর দু’তৃতীয়াংশ প্রদত্ত ‘বায়াত’ বাতিল বলে গণ্য হবে।
খ. অভিশংসনের রীতিনীতি পদ্ধতি এবং ইমামের অপসারণ আইনের দ্বারা নির্ধারিত হবে।
আর্টিকেল ৩৩
ক. ইমাম ‘মজলিসে শুরা’র নিকট স্বহস্ত স্বাক্ষরে পদত্যাগ করতে পারেন।
খ. ইমামের পদ শূন্য থাকার ক্ষেত্রে, ইমাম নির্বাচিত না হওয়া পর্যন্ত সর্বোচ্চ….. দিন মজলিসে শুরার স্পীকার ইমামের দায়িত্ব পালন করবেন।
গ. ইমামের অক্ষমতার ক্ষেত্রে,… দিন পর্যন্ত মজলিসে শুরার স্পীকার ইমানের দায়িত্ব পালন করবেন। অন্যথায় ইমামের পদ শূণ্য বলে গণ্য হবে।
বিচার বিভাগ
আর্টিকেল ৩৪
প্রত্যেক ব্যক্তির আদালতে মালা রুজু করার অধিকার থাকবে।
আর্টিকেল ৩৫
ক. বিচার বিভাগ শাসন বিভাগ হতে স্বাধীন ও প্রভাবমুক্ত থাকবে। বিচার বিভাগ বিচারকার্য পরিচালনা করবে ও জনগণের অধিকার রক্ষায় ব্রতী থাকবে।
খ. নিচারপতিগণ স্বাধীন এবং আইনের কর্তৃত্ব ব্যতিত তাদের উপর আর কোন কর্তৃত্ব থাকবে না।
আর্টিকেল ৩৬
ন্যায়বিচার প্রয়োগ হবে স্বাধীন ও মুক্ত এবং ক্ষমতার অপব্যবহার আইন প্রতিরোধ করবে।
আর্টিকেল ৩৭
আদালতের যাবতীয় কার্যাদি জনসমুক্ষে উন্মুক্ত হবে এবং জাতীয় নিরাপত্তা, ব্যক্তিগত গোপনীয়তা, সম্মান ইত্যাদি রক্ষার ক্ষেত্র ব্যতীত গোপনে বিচার কার্য পরিচালনা করা যাবে না।
আর্টিকেল ৩৮
ক. বিশেষ আদালত বা ট্রাইব্যুনাল গঠন করা বৈধ নয়।
খ. তবে সামরিক আইনের অধীন অপরাধের জন্য সেনাবাহিনীর সদস্যদের জন্য সামরিক আদালত গঠন করা যাবে।
আর্টিকেল ৩৯
আদালতের রায় বাস্তবায়ন সংশ্লিষ্ট সকল কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব এবং এ বিষয়ে শিথিলতা বা ব্যর্থতা আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ।
আর্টিকেল ৪০
সংবিধানের নীতিমালা অনুযায়ী বিচার বিভাগের গঠন, বিচারপতিদের যোগ্যতা; তাদের নিয়োগ, বদলী, পদচ্যুতি ইত্যাদির নিয়মপদ্ধতি; আইন ও শাসন বিভাগের সাথে বিচার বিভাগের সম্পর্ক ও আনুসঙ্গিক বিষয়াদি আইন দ্বারা নির্ধারিত হবে।
আর্টিকেল ৪১
নিম্নবর্ণিত উদ্দেশ্যে একটি ‘হিসবাহ’ বিভাগ গঠিত হবে:
ক. সৎকাজ সমুন্নত রাখা ও মন্দ কাজকে নিরোধের জন্য ইসলামী মূল্যবোধ সমূহের রক্ষণাবেক্ষণ ও উজ্জীবিত করা;
খ. রাষ্ট্র ও এর অঙ্গ সংস্থার বিরুদ্ধে কোন ব্যক্তির অভিযোগ তদন্ত করা;
গ. ব্যক্তিমানুষের অধিকার রক্ষা করা;
ঘ. রাষ্ট্রের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের কার্যাবলী পর্যালোচনা করা; ভুল সিদ্ধান্ত গৃহীত হলে অথবা দায়িত্ব পালনে অবহেলা বা বিচ্যুতি ঘটলে তা সংশোধন করা;
ঙ. প্রশাসনিক সিদ্ধান্তের বৈধতা পরীক্ষা ও পরিবীক্ষণ করা;
আর্টিকেল ৪২
‘হিসবাহ’ প্রতিষ্ঠানের প্রধান হিসাবে একজন ‘মুহতাসীন আম’ থাকবেন এবং তাঁকে সহায়তা প্রদানের জন্য প্রদেশ ও নিম্নস্তরের ‘মুহতাসীব’গণ থাকবেন। এই কার্যালয়ের বিধি-বিধান ও কার্যপ্রণালী আইন দ্বারা নির্ধারিত হবে।
আর্টিকেল ৪৩
‘মুহতাসীব’গণ স্বউদ্যোগে অথবা কারো নিকট হতে আবেদন বা তথ্য পাবার পর কার্যক্রম শুরু করবেন। তারা সরকারী বিভাগ বা এজেন্সী হতে প্রয়োজনীয় তথ্য তলব করতে পারবেন এবং চাহিদা মোতাবেক সরকারী কর্মচারীগণ ত্বরিৎ ও যথাযথভাবে তথ্য সরবরাহ করবেন।
আর্টিকেল ৪৪
যদি ‘মুহতাসিব আম’ কোন আইন বা সরকারী বিধিবিধানকে নিপীড়নমূলক বা অসঙ্গত মনে করেন এবং জনগণের পক্ষে তা পালন কষ্টসাধ্য বলে মনে করেন অথবা আইন বা বিধিটি অসাংবিধানিক মর্মে বিবেচিত হয় তবে তিনি আইন বা বিধিটি বাতিল বা সংশোধনের জন্য বিচার বিভাগের নিকট প্রেরণ করতে পারবেন।
আর্টিকেল ৪৫
কোন বিষয় যথাযথ আদালত আমলে নেয়া সত্ত্বেও, অথবা আমলে নেয় প্রক্রিয়াধীন থাকা সত্ত্বেও একজন ‘মুহতাসিব’ বিষয়টি আমলে নিতে পারবেন।
অর্থনৈতিক ব্যবস্থা
আর্টিকেল ৪৬
দেশের অর্থনৈতিক ব্যবস্থা ইসলামী নীতির ন্যায়পরায়ণতা, সমতা, মানবিক মর্যাদা, উদ্যোগ গ্রহণের স্বাধীনতা, সুষম সম্পর্ক এবং অপচয় রোধের ভিত্তিতে সংস্থাপিত হবে। জনগণের বস্তুগত, সামাজিক ও আধ্যাত্মিক চাহিদা পূরণের জন্য সরকার সুপরিকল্পিত ও সুসমন্বিত পদ্ধতিতে দেশের মানব ও অন্যান্য বস্তুগত সম্পদ ব্যবহার করবেন।
আর্টিকেল ৪৭
দেশের সকল প্রকার সম্পদ ও শক্তির উৎস সমূহের উন্নয়ন করা এবং তাদের সর্বোচ্চ ও সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব এবং রাষ্ট্র লক্ষ্য রাখবে যাতে কোন সম্পদের মজুতদারী না হয়, অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে না থাকে বা অপচয় না হয়। জনগণ আইনের সীমারেখার মধ্যে বর্ণিত অর্থনৈতিক কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করতে পারবেন।
আর্টিকেল ৪৮
ক. সকল প্রাকৃতিক ও খনিজ সম্পদের মালিকানা সমাজের। সকল সরকারী ও বেসরকারী ব্যবসায়িক শিল্প প্রতিষ্ঠানের উপর সরকারী নিয়মনীতির নিয়ন্ত্রণ থাকবে।
খ. সম্পদের ব্যক্তিগত মালিকানা আইনসঙ্গত ও বৈধ যতি তা বৈধ পন্তার উপায় উপার্জিত হয়ে থাকে এবং শরীয়ার অনুশাসন মোতাবেক সমন্বিত বা ব্যয়িত হয়।
গ. সমাজের স্বার্থরক্ষার প্রয়োজন ব্যতিরেকে কোন সরকারী সম্পত্তি বন্টন করা যাবে না। জনগণের স্বার্থ রক্ষার প্রয়োজন ব্যতিরেকে কোন ব্যক্তিগত সম্পত্তি অধিগ্রহণ করা যাবে না; প্রয়োজনে করা হলে সেক্ষেত্রে ত্বরিৎগতিতে ন্যায্যা ক্ষতিপূরণ প্রদান করতে হবে।
আর্টিকেল ৪৯
ক. ব্যক্তিগত উদ্যোগ গ্রহণের স্বাধীনতা আইন দ্বারা নির্ধারণ ও নিশ্চিত করা হবে।
খ. শরিয়াহর অনুশাসনের পরিপন্থী সকল প্রকার মুনাফা অর্জন বা ব্যয় নিষিদ্ধ।
গ. বৈধভাবে অর্জিত মুনাফা বা সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা যাবে না।
আর্টিকেল ৫০
টাকা যেহেতু কোন কিছুর মূল্য নির্ধারক এবং বিনিময়ের মাধ্যম, তাই এমন কোন রাজস্ব বা মুদ্রানীতি গ্রহণ করা যাবে না, যা টাকার অবমূল্যায়ন ঘটায় বা মূল্যমানকে ব্যাহত করে।
আর্টিকেল ৫১
বেসরকারী ব্যক্তি বা সংগঠন দ্বারা অর্জিত নয় এমন সব আয় ও সম্পত্তির মালিকানা হবে রাষ্ট্রের।
আর্টিকেল ৫২
রিবা (সুদ), একচেটিয়া ব্যবসা, মজুদদারী, মুনাফাখোরী এবং অর্থনৈতিক শোষণ এবং এ ধরনের যাবতীয় কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ থাকবে। ব্যাংক চলবে PLS এর মাধ্যমে।
আর্টিকেল ৫৩
বৈদেশিক অর্থনৈতিক আধিপত্য ছিন্ন বা প্রতিহত করার জন্য রাষ্ট্র সকল প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
আর্টিকেল ৫৪
আর্থ-সামাজিক বিষয় ও শরীয়াহর জ্ঞানে অভিজ্ঞ ব্যক্তিবর্গ সমন্বয়ে একটি ‘অর্থনৈতিক ও সামাজিক কাউন্সিল’ গঠন করা হবে, যা নিম্নবর্ণিত কার্যাদি সম্পাদন করবে:
ক. সংবিধানে বিধৃত আর্থ-সামাজিক লক্ষ্য পূরণের জন্য দেশের অর্থনৈতিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করবে;
খ. সরকার ও ‘মজলিসে শুরা’ কে আর্থ-সামাজিক পরিকল্পনা, বাজেট ও অন্যান্য আর্থ-সামাজিক বিষয় অবহিত করবে;
আর্টিকেল ৫৫
‘অর্থনৈতিক ও সামাজিক কাউন্সিল’ এর গঠন এবং এ সম্পর্কিত সকল নিয়মপদ্ধতি আইনের দ্বারা নির্ধারিত হবে।
প্রতিরক্ষা
আর্টিকেল ৫৬
ক. জিহাদ একটি অবিচ্ছিন্ন ও পবিত্র দায়িত্ব।
খ. প্রত্যেক মুসলমানের জন্য ইসলামী রাষ্ট্রের ভূ-খণ্ড এবং ইসলামী ব্যবস্থার প্রতিরক্ষা অবশ্য কর্তব্য।
আর্টিকেল ৫৭
ক. রাষ্ট্র দেশের সমাজের সাথে সঙ্গতিশীল একটি সক্ষম সশস্ত্রবাহিনী গড়ে তুলবে, যা জিহাদের দায়িত্ব পূর্ণভাবে পালন করবে।
খ. রাষ্ট্র জিহাদের দায়িত্ব পালনের জন্য প্রত্যেক নাগরিককে সক্ষম করে তুলবে।
গ. সামরিক প্রশিক্ষণ ছাড়াও সেনাবাহিনীর মধ্যে জিহাদের চেতনাকে উজ্জীবিত করে তোলার জন্য ইসলামী শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ কর্মসূচী থাকবে।
আর্টিকেল ৫৮
ক. ইমাম হবেন সেনাবাহিনীর সর্বাধিনায়ক।
খ. ‘মজলিসে শুরা’র অনুমোদন সাপেক্ষে তিনি যুদ্ধ, শান্তি বা জরুরী অবস্থা ঘোষণা করতে পারবেন।
আর্টিকেল ৫৯
যুদ্ধ ও শান্তির নীতি ও কৌশল প্রণয়নের জন্য একটি ‘সুপ্রীম জিহাদ কাউন্সিল’ থাকবে। কাউন্সিলের গঠন, নিয়ম ও কার্যপদ্ধতি আইনের দ্বারা নির্ধারিত হবে।
সুপ্রীম সাংবিধানিক কাউন্সিল
আর্টিকেল ৬০
‘সুপ্রীম সাংবিধানিক কাউন্সিল’ নামে একটি স্বাধীন বিচার বিভাগীয় সংস্থা থাকবে, যা রাষ্ট্রে ইসলামী চরিত্র ও সংবিধানের অভিভাবক হিসাবে কাজ করবে।
আর্টিকেল ৬১
কাউন্সিলের কার্যাবলী হবে নিম্নরূপ:
ক. শরিয়াহর সাথে কোন আইনের সংঘর্ষের বা অসামঞ্জস্যশীলতার প্রশ্ন উত্থাপিত হলে কাউন্সিল এ বিষয়ে রায় প্রদান,
খ. সংবিধান ও আইনের ব্যাখ্যা প্রদান।
গ. বিচার বিভাগীয় বিরোধের নিষ্পত্তি।
ঘ. ইলেকশন কমিশনের বিরুদ্ধে অভিযোগের শুনানী গ্রহণ ও রায় প্রদান।
আর্টিকেল ৬২
ক. ‘সুপ্রীম সংবিধানিক কাউন্সিল’ এর গঠন নিয়ম পদ্ধতি, এর সদস্যগণের যোগ্যতা, তাদের নিয়োগের শর্তাবলী, পদচ্যুতি বা অবসর গ্রহণ, সংশ্লিষ্ট বিষয়াদি এবং কাউন্সিলের পরিচালন পদ্ধতি আইনের দ্বারা নির্ধারিত হবে।
খ. উল্লেখিত আইন ‘মজলিসে শুরা’র দু’তৃতীয়াংশ ভোটে নির্ধারিত হবে।
উলেমা কাউন্সিল
আর্টিকেল ৬৩
‘উলেমা কাউন্সিল’ নামে একটি সংস্থা থাকবে। শরীয়াহর জ্ঞানে গভীরভাবে জ্ঞানী ও অভিজ্ঞ, খোদাভীতি ও ধর্মপরায়ণতার জন্য খান এবং সমকারীন ইস্যুতে চ্যালেঞ্জ ও বিষয়াদিতে যাদের গভীর অন্তর্দৃষ্টি আছে এমন সব সম্মানিত ব্যক্তিবর্গ উক্ত কাউন্সিলের সদস্য হবেন।
আর্টিকেল ৬৪
‘উলেমা কাউন্সিল’ এর কার্যাবলী হবে নিম্নরূপ:
ক. তাঁরা আইন সংক্রান্ত ইজতিহাদ পরিচালনা করবেন।
খ. ‘মজলিসে শুরা’র নিকট উপস্থাপিত বিভিন্ন আইনগত প্রস্তাবের উপর শরীয়ার অবস্থান ব্যাখ্যা করবেন।
গ. কোনরূপ কালক্ষেপণ না করে মুসলিম উম্মাহর স্বার্তের সাথে জড়িত বিষয়াদিতে সত্যকে তুলে ধরে কাউন্সিল তাদের সর্বোচ্চ নৈতিক দায়িত্ব পালন করবেন।
আর্টিকেল ৬৫
‘উলেমা কাউন্সিল’ গঠনের বিধি, এর গঠন, সদস্যদের যোগ্যতা এবং অন্যান্য বিষয়াদি আইনের দ্বারা নির্ধারিত হবে।
ইলেকশন কমিশন
আর্টিকেল ৬৬
… সদস্যের সমবায়ে একটি স্বাধীণ ও স্থায়ী ‘ইলেকশন কমিশন থাকবে।
আর্টিকেল ৬৭
কমিশনের কার্যাবলী হবে নিম্নরূপ:
ক. আইনের বিধান মোতাবেক ইমাম, ‘মজলিসে শুরা’র সদস্য ও অন্যাণ্য পদের নির্বাচনের আয়োজন ও তত্ত্বাবধান পরিচালনা করবে;
খ. গণভোট সংগঠন ও তত্ত্বাবধান করবেন;
গ. আইনের বিধান মোতাবেক প্রার্থীগণ যাতে যাবতীয় শর্তাবলী পূরণ করেন তা নিশ্চিত করবে;
আর্টিকেল ৬৮
ক. ইলেকশন কমিশনের সদস্যবর্গ রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আদালতের বিচারপতিগণ হতে নিয়োজিত হবেন।
খ. ইলেকশন কমিশনের সদস্য থাকাকালীন তিনি অন্যকোন পদের জন্য যোগ্য বিবেচিত হবেন না।
আর্টিকেল ৬৯
ইলেকশন কমিশন গঠনের রীতিপদ্ধতি নির্ধারিত হবে। নির্বাচন পদ্ধতি তত্ত্বাবধান, নির্বাচন এলাকা সুনির্দিষ্টকরণ, প্রার্থীতাপদ জমা দেবার পদ্ধতি, ভোট প্রদান পদ্ধতি, ব্যালটের গোপনীয়তা রক্ষণ ও নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা ইত্যাদি আইনের দ্বারা নির্ধারিত হবে।
আর্টিকেল ৭০
সকল সরকারী প্রতিষ্ঠান ও সরকারী কর্মচারী ইলেকশনকে সাংবিধানিক দায়িত্ব পালনে সর্ববিধ সহায়তা প্রদান করবে এবং অন্যকোন কর্তৃপক্ষের মতামত ছাড়াই সরাসরি ও দ্রুত ইলেকশন কমিশনের আদেশ মান্য করিবে।
উম্মাহর একত্ব ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক
আর্টিকেল ৭১
সর্ববিধ উপায়ে উম্মাহর একত্ব ও সংহতির জন্য কাজ করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব।
আর্টিকেল ৭২
বিশ্বে স্বাধীনতা, ন্যায় পরায়ণতা ও শান্তি প্রতিষ্ঠা এবং মানব জাতির সর্বাঙ্গীন কল্যাণ সাধনের নীতিমালার ভিত্তিতে পররাষ্ট্রনীতি প্রণীত ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক পরিচালিত হবে।
আর্টিকেল ৭৩
অন্যায় ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রের সকল নীতি, কর্মসূচি ও কার্য পরিচালিত হবে এবং রাষ্ট্র তার সর্বোচ্চ ক্ষমতা এতদুদ্দেশ্যে কাজ করবে।
আর্টিকেল ৭৪
উপরন্তু, ইসলামী অনুশাসনের নীতিমালা অনুযায়ী রাষ্ট্র নিম্নবর্ণিত দায়িত্বসমূহ পালন করবে:
ক. সাবাবিশ্বে মানুষের স্বাধীনতা সংরক্ষণ,
খ. বিশ্বের যে কোন স্থানে জনগণের বিরুদ্ধে নির্যাতন ও নিপীড়ন চালিত হলে তার রোধ ও অপসারণের জন্য সংগ্রাম করা;
গ. স্রষ্টার উপাসনালয় সমূহের পবিত্রতা রক্ষা করা,
আর্টিকেল ৭৫
ক. ভিন্ন ধর্মীয় বিশ্বাস, অন্য দেশের সম্পদ লুন্ঠন এবং তাদের অর্থনীতি নিয়ন্ত্রণ করার জন্য রাষ্ট্র কোন প্রকার যুদ্ধে লিপ্ত হবে না।
খ. স্বধর্মের বিশ্বাসের সংরক্ষণ, রাষ্ট্রের ভূখণ্ডগত ও আদর্শিক ঐক্য রক্ষা, বিশ্বের নির্যাতিত ও নিপীড়িত মানুষের পক্ষাবলম্বন; মানুষের মর্যাদা, সম্মান ও স্বাধীনতা রক্ষা এবং বিশ্বে শান্তি বজায় রাখার জন্য যুদ্ধে লিপ্ত হওয়া যাবে।
আর্টিকেল ৭৬
ইসলামী রাষ্ট্র দুর্বল জাতিসমূহকে শোষণ ও তাদের উপর আধিপত্য বিস্তারের জন্য কতিপয় রাষ্ট্র কর্তৃক রাষ্ট্রসংঘ বা গোষ্ঠী বা গ্রুপ গঠনের বিরোধিতা করবে।
আর্টিকেল ৭৭
রাষ্ট্র নিজ ভূখণ্ড ও অধিক্ষেত্রীয় এলাকায় বিদেশী সামরিক ঘাঁটি স্থাপনের অনুমতি প্রদান করবে না; যা নিজ রাষ্ট্র বা এলাকায় মুসলিম রাষ্ট্রের স্বার্তের পরিপন্থী হয়।
আর্টিকেল ৭৮
রাষ্ট্র শাব্দিক অর্থে ও অন্তর্নিহিত অর্তে আন্তর্জাতিক চুক্তি সমূহকে সম্মান ও বাস্তবায়ন করবে।
প্রচার মাধ্যম ও প্রকাশনা
আর্টিকেল ৭৯
প্রচার মাধ্যম ও প্রকাশনা সংস্থাসমূহ তাদের মত প্রকাশের বিষয়ে পূর্ণ স্বাধীনতা ভোগ করবে, যতক্ষণ পর্যন্ত তারা সত্য তথ্যের প্রকাশ এবং ইসলামী মূল্যবোধ ও আচরণ বিধির প্রতি অঙ্গীকারাবদ্ধ থাকে। দৈনিক পত্র পত্রিকা ও সাময়িকী ইত্যাদি এ সীমারেখার মধ্যে প্রকাশনার অধিকার থাকবে। যুদ্ধের সময় ব্যতিত অন্য সময়ে আদালতের আদেশের সংবাদপত্রের সংবাদ প্রকাশের উপর নিষেদাজ্ঞা জারী বা পত্রিকা বন্ধ করে দেয়া যাবে।
আর্টিকেল ৮০
সংবাদ মাধ্যম ও প্রকাশনা সংস্থা সমূহের দায়িত্ব ও কর্তব্য নিম্নরূপ:
ক. যার দ্বারাই সম্পাদিত হোক না কেন, সকল প্রকার নির্যাতিত, অবিচার, নিপীড়ন ইত্যাদি উৎঘাটন করাও প্রতিবাদ করা;
খ. মানুষের ব্যক্তিগত গোপনীয়তাকে সম্মান করা এবং কারো ব্যক্তিগত বিষয় প্রকাশ না করা;
গ. মানহানিকর বিষয় ও গুজব সৃষ্টি করা ও রটনা হতে বিরত থাকা;
ঘ. সত্যকে সুস্পষ্টভাবে প্রকাশ করা, দৃঢ়তার সাথে মিথ্যা প্রচারণা হতে বিরত থাকা বা সত্যের সাথে মিথ্যাকে মিশ্রিত করা অথবা সজ্ঞানে সত্যকে লুকিয়ে রাখা বা বিকৃত করা হতে বিরত থাকা।
ঙ. সুরুচিশীল ও মর্যাদাবান ভাষা ব্যবহার করা।
চ. সমাজে সু-আচরণ ও নৈতিক মূল্যবোধের উদ্বোধন ঘটান;
ছ. কুরুচিশীল, অশ্লীল ও অনৈতিক বিষয়ের প্রচারণা হতে কঠোরভাবে বিরত থাকা;
জ. ইসলাম বিরোধী অপরাধ বা কর্মকে ক্ষমার চোখে দেখা বা উৎসাহিত করা হতে বিরত থাকা;
ঝ. কোন প্রকার দুর্নীতির অস্ত্রে পরিণত হওয়া হতে বিরত থাকা;
সাধারণ ও অন্যান্য বিধান মালা
আর্টিকেল ৮১
হিজরী সন হবে রাষ্ট্রের সরকারী বর্ষপঞ্জী এবং রাষ্ট্রভাষা হবে……। যদি আরবী সরকারী ভাষা না হয় তবে তা হবে দ্বিতীয় সরকারী ভাষা
আর্টিকেল ৮২
ক. ইমাম বা ‘মজলিসে শুরা’ সংবিধানের সংশোধন প্রস্তাব করতে পারবে না। মজলিসে শুরার দু’তৃতীয়াংশ ভোটে সমর্থিত হলে সংশোধনী প্রস্তাব করতে পারবে না। মজলিসে শুরার দু’-তৃতীয়াংশ ভোটে সমর্থিত হলে সংশোধনী কার্যকর হবে।
খ. কোন সংশোধনী যদি রাষ্ট্রের ইসলামী চরিত্র বিপন্ন করে বা শরিয়ার কোন বিধান লংঘন করে, তবে সে সংশোধনী বাতিল বলে গণ্য হবে।
আর্টিকেল ৮৩
ক. এই সংবিধান কার্যকর হবার পূর্ব পর্যন্ত আইন, শাসন ও বিচার বিভাগ এবং অন্যান্য যে সব সংস্থা ও প্রতিষ্ঠান বিদ্যমান ছিল তাদের কার্যাবলী চালু থাকবে এবং তাদের কার্যাবলী সংবিধানের বিধান অনুযায়ী নতুন বিভাগ, সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানসমূহ গঠিত ও কার্যকর না হওয়া পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে।
খ. এই সংবিধান কার্যকর হওয়ার সময় যে সকল আইন, বিধান, নিয়ম বলবৎ ছিল তাদের কার্যকারিতা বলবৎ থাকবে, যতক্ষণ না পর্যন্ত এই সকল আইন, বিধান বা নিয়ম এই সংবিধানের বিধান অনুযায়ী বাতিল বা সংশোধিত না হয়।
গ. এই সংবিধান গ্রহণের পর এই সংবিধানের বিধান অনুযায়ী বর্তমামে বিদ্যমান আইনসভার মাধ্যমে আইন প্রণয়নের মাধ্যমে বিদ্যমান আইনসভা প্রথম ‘মজলিসে শুরা’, প্রথম ‘ইলেকশন কমিশন’ এবং প্রথম ‘সুপ্রীম সাংবিধানিক কাউন্সিল’ প্রতিষ্ঠার বা গঠনের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
আর্টিকেল ৮৪
সংশ্লিষ্ট সকলের আবশ্যিক কর্তব্য থাকবে যে, এই সংবিধানের বিধানাবলী দ্রুত কার্যকরভাবে বাস্তবায়িত হয় যাতে এ সংবিধান গ্রহণের পর অবিলম্বে সামগ্রিকভাবে এই সংবিধান কার্যকর হয়।
আর্টিকেল ৮৫
গণভোটের ফলাফল প্রকাশের দিন হতে (যদি গণভোটের মাধ্যমে সংবিধান গৃহীত হয়) অথবা দেশের সাংবিধানিক অন্যকোন সংস্থা কর্তৃক যে দিন সংবিধান গৃহীত হয় সেদিন হতে এ সংবিধান কার্যকর হবে।
(সূত্র: ইসলামিক কাউন্সিল, A Model of an Islamic Constitution (লন্ডন: ইসলামিক কাউন্সিল, ১৯৮৩)।
_______________________________০০______________________________
লেখক পরিচিতি
আবদুর রশিদ মতিন
আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় মালয়েশিয়া-এর রাষ্টবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক। তার উল্লেখযোগ্য গ্রন্থসমূহ-
>> INTERODUCTION TO POLITICAL SCIENCE
>> ISLAM AND REVOLITION : Contribution of Syed Maududi
>> FRONTIERS AND MECHANICS OF ISLAMIC ECONOMICS
(co-editor with R.I.Molla, S. Gusau and A. A. Gwandu)
>> NATURE AND METHODOLOGY OF ISLAMIC ECONOMICS
(co-editor with M. O. K. Bajulaiye-Shasi)
>> ISLAM IN AFRICA : Proceedings of the Islam in Africa Conference
(co-editor with Nura Alkai, Adamu Adamu, Awwal Yaduda and Ha
বাংলাদেশ ইনষ্টিটিউট অব ইসলামিক থ্যট