একশ বছরের রাজনীতি
আবুল আসাদ
স্ক্যান কপি ডাউনলোড
মুখবন্ধ
বাংলা চৌদ্দ শতক জাতীয় উদযাপন পরিষদের প্রকাশনা কর্মসূচীর অন্যতম বিষয় ছিল এই অঞ্চলের গত একশ’ বছরের রাজনীতির ওপর একটি প্রামান্য ও তথ্যবহুল গ্রন্থ প্রণয়ন করা। বিষয়টি নিঃসন্দেহে অতিশয় পরিশ্রমসাধ্য, দুরূহ কাজ। কারণ বর্তমান সময়ে ইতিহাসের উপাদান নিরাশক্তভাবে উত্থাপন করার যে ঝুঁকি রয়েছে তা অতিক্রম করতে সহজে কেউ সাহসী হয় না। তাছাড়া জাতীয় ইতিহাসের প্রতিটি পর্যায়ে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের ফলে সত্যের সপত্রপহেরও কমবেশী বিকৃতি ঘটেছে। বিকৃতি না হোক, সত্য আজ ধপলিধপসরিত। সেই আবিল অবস্থা থেকে প্রকৃত ঘটনাধারাকে আবিস্কার করে জনসাধারণের সামনে উপস্থিত করাও একান্ত দরকার। বাংলাদেশ কো-অপারেটিভ বুক সোসাইটি লিঃ সেই জাতীয় চাহিদা পূরণের জন্য বই পুনঃ মুদ্রণ দ্বিতীয় সংস্করণ করতে সচেষ্ট হয়েছে।
সেই প্রয়াসেরই প্রকৃষ্ট প্রমাণ হিসেবে প্রকাশিত হয়েছে, “একশ’ বছরের রাজনীতি” শীর্ষক প্রামাণ্য গ্রন্থটি রচনা করেছেন দৈনিক সংগ্রামের সম্পাদক জনাব আবুল আসাদ। জনাব আসাদ বহুকাল যাবত সাংবাদিকতার সাথে জড়িত। তাছাড়া তিনি একজন সুলেখক এবং চিন্তাশীল বুদ্ধিজীবী। বাংলাদেশের রাজনৈতিক উত্থান পতনের প্রত্যক্য দর্শক এবং বিশেষজ্ঞ হিসেবেও তাঁর খ্যাতি আছে। তাছাড়া দেশের দৈনন্দিন কর্মধারা পর্যবেক্ষণের জন্য যে নিরপেক্ষ ও বস্তুনিষ্ঠ দৃষ্টিভঙ্গী প্রয়োজন তা তার আছে বলে আমরা বিশ্বাস করি।
“একশ’ বছরের রাজনীতি” গ্রন্থটি রচনার জন্য আমরা জনাব আবুল আসাদের কাছে কৃতজ্ঞ। এ বই প্রকাশের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ কো-অপারেটিভ বুক সোসাইটি লিঃ তার প্রতিশ্রুতির একটা বড় শর্ত পূরণ করেছে। পরে অন্যান্য বইগুলো প্রকাশ পাবে বলে কমিটি দৃঢ় আশা পোষণ করে। বাংলাদেশ কো-অপারেটিভ বুক সোসাইটি লিঃ বইটি প্রকাশনার দায়িত্ব গ্রহণ করে একটা জাতীয় দায়িত্ব পালন করেছে। বইটির চতুর্থ সংস্করণ শেষ হওয়ার পঞ্চম সংস্করণ প্রকাশ করা হলো। আশা করি পাঠকের চাহিদা পূরণে সক্ষম হবে ইনশাআল্লাহ।
-এস. এম. রইস উদ্দিন
পরিচালক (ইনচার্জ)
বাংলাদেশ কো-অপারেটিভ বুক সোসাইটি লিঃ
প্রথম সংস্করণের ভূমিকা
ইতিহাস এবং রাজনীতির ইতিহাসের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। ইতিহাস বলতে তার মধ্যে রাজার ইতিহাস, প্রজার ইতিহাস ইত্যাদি সবই আসে। সুতরাং রাজনীতির ইতিহাসের একটা খণ্ডিত চিত্র। বাংলা চতুর্থ শতক অর্থাৎ ১৮৯৩ থেকে ১৯৯৩ পর্যন্ত একশ’ বছরের যে সময়কাল তার এই খণ্ডিত চিত্রই আমি এঁকেছি এ গ্রন্থে।
এই চিত্রে শুধু এসেছে উল্লেখিত একশ’ বছরের প্রধান রাজনৈতিক গতিপ্রবাহ। দৃশ্যে এসেছেন এই প্রধান প্রবাহের নট-নটিরা। স্বীকার করি, শতাব্দীর প্রধান রাজনৈতিক প্রবাহের আড়ালে বা আশে-পাশে খুচরো অনেক প্রবাহ ছিল, কিন্তু সে সবের প্রতি আমি দৃষ্টিপাত করিনি এবং তা সংগত কারণেই। আমি চেয়েছি, সদ্য ফেলে আসা শতাব্দীর প্রধান রাজনৈতিক প্রবাহের ছবি আঁকতে, যা আসলে শতাব্দীর রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের সবটাই জুড়ে আছে। এর বাইরে খুচরো যা কিছু ছিল, তার কোন ভূমিকা ছিল না শতাব্দীর রাজনৈতিক গতি নিয়ন্ত্রণে।
সন্দেহ নেই, সব শতাব্দীর শত-সহস্র ঘটনায় পূর্ণ। কিন্তু তার মধ্যে সদ্য ফেলে আসা শতাব্দীর আলাদাভাবে চিহ্নিত করা যায়। এই শতাব্দীতে এই অঞ্চলের প্রধান দুই জাতি মুসলমান ও হিন্দুর বিস্ময়কর জাতিগত উত্থান ঘটে। আর এই উত্থানের রাজনৈতিক বৈশিষ্ট্যই ছিল মুখ্য এবং সে কারণেই এই দুই জাতির রাজনৈতিক সংঘাতই ছিল এই শতাব্দীর প্রধান বিষয়। শতাব্দীর এই রাজনৈতিক সংঘাতের রূপটা ছিল অনেকটাই নেকড়ে ও মেষ শাবকের কাহিনীর মত। এই কাহিনীতে দেখা যাবে নেকড়ের মেষ শাবকের উত্থান দৃশ্য, দেখা যাবে দুর্বল মেষ শাবক কি করে সিংহ শাবকে পরিণত হয়ে শুধু আত্মরক্ষা নয় স্বাধীন সার্বভৌম আবাসভূমিরও প্রতিষ্ঠা করলো। আরও দেখা যাবে, শতাব্দীর এই সংঘাত গণ্ডী পেরিয়ে কোন পথে এগুচ্ছে। শতাব্দীর এই শত কাহিনী নিয়েই “একশ’ বছরের রাজনীতি” গ্রন্থটি।
গ্রন্থটিতে আলোচ্য শতাব্দীর প্রথমার্ধ যত বিস্তৃত স্থান পেয়েছে, দ্বিতীয়ার্ধ ততটা পায়নি। এর কারণ, শতাব্দীর প্রথমার্ধটাই ছিল রাজনৈতিক সংঘাতের কাল। আর দ্বিতীয়ার্ধটা সেই রাজনীতির একটা নতুন যাত্রা পথ। দ্বিতীয়ার্ধের সবচেয়ে বড় ঘঠনা স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের অভ্যুদয়। কিন্তু এই ঘটনা মুসলিম রাজনৈতিক ধারার আভ্যন্তরীণ বিষয়, শতাব্দীর প্রধান রাজনৈতিক প্রবাহের কোন ঘটনা নয়।
এই গ্রন্থ রচনার প্রেরণা পেয়েছি বাংলা চৌদ্দ শতক জাতীয় উদযাপন পরিষদের কর্মসূচী থেকে। পরিষদের শতাব্দী উদযাপন কর্মসূচীর একটা অংশ হিসেবে শতাব্দীর রাজনীতির ওপর আমার এই আলেখ্য নির্মাণ।
আবুল আসাদ
ঢাকা, ৮ মে, ১৯৯৪