অর্থ-সম্পদের লিপ্সা না থাকাই ঈমানের দাবী
ঈমানের আর একটি দাবী হচ্ছে এই যে, ধন-সম্পদ অর্জনের মোহ অন্তরে পোষণ করা চলবে না। যাদের মধ্যে ধন-লিপ্সা থাকে, তারা দিনরাত এ চিন্তায় বিভোর থাকে। শেষ পর্যন্ত অবৈধ উপায়ে হলেও অর্থ-সম্পদ অর্জন করতে থাকে এবং লেনদেনে লিপ্ত হয়ে পড়ে। মানুষে মানুষে শত্রুতা দ্বন্দ্ব-কলহ, হত্যাকাণ্ড প্রভৃতি অর্থ লিপ্সারই বিষময় ফল। আল্লাহ বলেনঃ
(আরবী পিডিএফ ৪৮ পৃষ্ঠায়****************************)
-তোমরা যারা ঈমান এনেছো, চড়া সুদ ভক্ষণ করো না। (আলে ইমরানঃ ১৩০)
কথাটি সুদ প্রসঙ্গে একটি নীতিগত ফরমান হলেও তা বলা হয়েছিল ওহুদ যুদ্ধের দীর্ঘ সমালোচনামূলক ভাষণে। কতিপয় সাহাবায়ে কিরামের আচরণ আল্লাহর মনঃপুত ছিল না এবং দ্বীনে হক প্রতিষ্ঠার উপযোগী ছিল না বলে কুরআন পাকে এ সবের তীব্র সমালোচনা করা হয়েছে। ওহুদ যুদ্ধের এক পর্যায়ে কতিপয় সাহাবী নবীর নির্দেশ অমান্য করে মালে গণিমত হস্তগত করতে লিপ্ত হয়েছিলেন। মানবীয় স্বাভাবিক দুর্বলতার কারণে কিছুক্ষণণের জন্য তাঁদের মধ্যে ধন-লিপ্সা জাগ্রত হয়েছিল, যে দুর্বলতার সুযোগে খালেধ বিন ওয়ালিদের নেতৃত্বে কুরাইশ কাফিরগণ তাঁদের উপর প্রচণ্ড হামলা চালায়। যার ফলে সত্তর জন সাহাবী শহীদ হন।
আল্লাহর পথে নিঃস্বার্থভাবে এবং একমাত্র তাঁর সন্তুষ্টি অর্জনের মনোভাব নিয়েই অগ্রসর হতে হবে। ব্যক্তিগত ধন-লিপ্সা এ পথে বিরাট অন্তরায়।
ইসলামে ধন অর্জন নিষিদ্ধ নয় এবং দূষণীয়ও নয়। তা করতে হবে সদুপায়ে এবং ব্যয় করতে হবে আল্লাহর নির্দেশিত পথে। সাহাবায়ে কিরামও ধন-অর্জন করেছেন। কিন্তু দ্বীন প্রতিষ্ঠার প্রয়োজনে তা সমুদয় দ্বিধাহীন চিত্তে ও সন্তুষ্টির সাথে আল্লাহর পথে বিলিয়ে দিয়েছেন। এর নজির বিহীন দৃষ্টান্ত দেখতে পাওয়া গেচে তাবুক অভিযানের প্রাক্কালে এবং যা ইসলামের ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লিখিত আছে।
ধন-সম্পদ ঈমানের অগ্নি পরীক্ষা
ধন-সম্পদ মূলত খারাপ বস্তু নয়। ধন-লিপ্সা এবং ধনকে আঁকড়ে ধরে থাকাটাই খারাপ। যেহেতু তা একটি পবিত্র আমানত, সে জন্য তার ব্যবহার হতে হবে আসল মালিক আল্লাহর মর্জি অনুযায়ী। তাই এ সম্পদ মানুসের বিরাট পরীক্ষা স্বরূপ।
আল্লাহ বলেন-
(আরবী পিডিএফ ৪৯ পৃষ্ঠায়****************************)
-হে ঈমানদারগণ! মনে রেখো তোমাদের ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি তোমাদেরকে যেন আল্লাহ থেকে ভুলিয়ে না রাখে।
(মুনাফিকুনঃ৯)
(আরবী পিডিএফ ৪৯ পৃষ্ঠায়****************************)
-এবং জেনে রাখ যে, তোমাদের ধন-সম্পদ ও সন্তানাদি তোমাদের জন্য পরীক্ষার জিনিস এবং আল্লাহর কাছে রয়েছে প্রতিদান দেবার বহু সামগ্রী।
(আনফালঃ ২৮)
মানুষের ঈমানের আন্তরিকতার মধ্যে যে জিনিস সাধারণত বিঘ্ন সৃষ্টি করে এবং যার কারণে তাদের মধ্যে মুনাফেকী, গাদ্দারী ও বিশ্বাসঘাতকতার রোগ প্রকাশ পায়, তা হলো ধন-সম্পদ এবং সন্তানাদির প্রতি ভালোবাসা যখন তা সকল সীমা অতিক্রম করে। সে জন্য বলা হচ্ছে যে এ ধন-সম্পদ ও সন্তানাদি, যার প্রতি মোহবিষ্ট হয়ে মানুষ সাধারণত সত্য পথ-থেকে বিচ্যুত হয়ে পড়ে, প্রকৃত পক্ষে মানুষের জন্য বিরাট পরীক্ষা যাকে সে পুত্র অথবা কন্যা মনে করে সে হচ্ছে আসলে তার এক প্রকারের প্রশ্নপত্র।
অনুরূপভাবে ধন-দৌলত হলো দ্বিতীয় প্রশ্নপত্র। এ সব এ জন্য মানুষকে দেয়া হয় যে, এতসব লাভ করার পর সে সত্য পথে চলতে পারে কিনা এ সবের ভালোবাসা ও লোভলালসা থেকে তার মনকে পবিত্র ও অমলিন রাখতে পারে কিতা এবং আল্লাহর নির্ধারিত সীমারেখার মধ্যে তাদের প্রতি ব্যবহার করতে পারে কিনা তার প্রমাণ তাকে দিতে হবে।
এইটাই হলো ঈমানের দাবী।
ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততিকে মানুষের জন্য বিরাট পরীক্ষা এবং আল্লাহর মর্জি পূরণের জন্য এ সব বিসর্জন দেয়াকেই এ পরীক্ষার সাফল্য বলা হয়েছে।