ঈমান প্রসঙ্গে হাদীসে রসূল
এখন নবীর হাদীস থেকে ঈমানের দাবী সম্পর্কে কয়েকটি দৃষ্টান্ত পেশ করে আলোচনা করতে চাই।
(আরবী পিডিএফ ৫৬ পৃষ্ঠায়****************************)
-ঈমানের বহু শাখা প্রশাখা আছে। তার মধ্যে সর্বোত্তম এই যে, তুমি আল্লাহ ব্যতীত আর কাউকে তোমার শাসক বা প্রভু স্বীকার করবে না। ঈমানের নিম্নতম গুরুত্বপূর্ণ শাখা হলো এই যে, রাস্তায় পথিকের কষ্টদায়ক কোন কণ্টক বড়ে থাকতে দেখলে তা সরিয়ে ফেলবে। লজ্জাশীলতাও ঈমানের একটি শাখা।
এর থেকে বুঝা গেল যে, ঈমানের নূন্যতম দাবী হলো মানুষের সকল প্রকার দুঃখ-কষ্ট দূর করার চেষ্টা করা। লজ্জাশীলতাও ঈমানের একটি দাবী।
(আরবী পিডিএফ ৫৬ পৃষ্ঠায়****************************)
মু’মিন ঐ ব্যক্তি, যার দ্বারা কারো জানমালের আশংকা হয় না।
(আরবী পিডিএফ ৫৬ পৃষ্ঠায়****************************)
“যে খোদা ও পরকালের উপর বিশ্বাস রাখে, তার উচিত মেহমানের সমাদর করা,… প্রতিবেশীকে কষ্ট না দেয়া ….. ভালো কথা বলা।
(আরবী পিডিএফ ৫৭ পৃষ্ঠায়****************************)
-খোদার কসম ঐ ব্যক্তি মু’মিন নয়, খোদার কসম ঐ ব্যক্তি মু’মিন নয়, খোদার কসম ঐ ব্যক্তি মু’মিন নয়, যার দৌরাত্মে প্রতিবেশী শান্তিতে বসবাস করতে না পারে।
(আরবী পিডিএফ ৫৭ পৃষ্ঠায়****************************)
-যে ব্যক্তি পরিতৃপ্ত হয়ে আহার করে এবং তার প্রতিবেশলী ক্ষুধার্ত থাকে, সে ঈমানদার হতে পারে না।
(আরবী পিডিএফ ৫৭ পৃষ্ঠায়****************************)
-যার মধ্যে আমানতদার নেই, তার ঈমান নেই এবং যে প্রতিজ্ঞা ভঙ্গ করে সে বে-দ্বীন।
(আরবী পিডিএফ ৫৭ পৃষ্ঠায়****************************)
-যদি নেক কাজে তোমার আত্মতৃপ্তি এবং পাপ কাজে অনুশোচনা হয়, তাহলে তুমি একজন ঈমানদার।
(আরবী পিডিএফ ৫৭ পৃষ্ঠায়****************************)
-সর্বোৎকৃষ্ট ঈমানের পরিচয় এই যে, তোমর বন্ধুত্ব এবং শত্রুতা আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য হবে। তোমার মুখে আল্লাহর যিকর জারী থাকবে। নিজের জন্য যা পছন্দ করবে অপরের জন্যও তাই করবে এবং নিজের জন্য যা অপছন্দনীয় মনে করবে অপরের জন্যও তাই করবে।
(আরবী পিডিএফ ৫৭ পৃষ্ঠায়****************************)
-শরীর ও পোশাকের পবিত্রতা ও পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা ঈমানের অর্ধেক।
(আরবী পিডিএফ ৫৮ পৃষ্ঠায়****************************)
তোমাদের মধ্যে পরিপূর্ণ ঈমানদার ঐ ব্যক্তি যার চরিত্র সবচেয়ে ভালো এবং যে আপন পরিবারবর্গের সাথে সকলের চেয়ে ভালো ব্যবহার করে।
(আরবী পিডিএফ ৫৮ পৃষ্ঠায়****************************)
-মু’মিন ব্যক্তি কখনো বিদ্রূপকারী, অভিসম্পাৎকারী অশ্লীলভাষী এবং প্রলাভকারী হতে পারে না।
(আরবী পিডিএফ ৫৮ পৃষ্ঠায়****************************)
একজন মু’মিন সবকিছু হতে পারে। কিন্তু আত্মসাৎকারী ও মিথ্যাবাদী হতে পারে না।
(আরবী পিডিএফ ৫৮ পৃষ্ঠায়****************************)
ক্রোধাগ্নি প্রজ্জ্বলিত হবার পর যদি কেউ তা নির্বাপিত করে, কোদা তার অন্তর ঈমান এবং আত্মতৃপ্তি দ্বারা পরিপূর্ণ করে দেন।
(আরবী পিডিএফ ৫৮ পৃষ্ঠায়****************************)
জ্ঞাতসারে যে ব্যক্তি কোন জালেমের সহযোগিতা করে সে ইসলাম থেকে বেরিয়ে যায়।
অত্যাচারী জালিমের সহযোগিতা করাকে এখানে ঈমানের পরিপন্থী বলা হয়েছে। জালিমের সহযোগিতা না করাই ঈমানের অন্যতম দাবী নয়, বরঞ্চ জালিমের জুলুমের প্রতিরোধ করা, তার বিরুদ্ধে আওয়াজ বুলন্দ করাও ঈমানের দাবী। ঈমানের দাবী কি তা উপরের আলোচনায় সুস্পষ্ট হয়েছে বলে মনে করি। এখন ঈমানের দাবীসমূহ পূরণের সহজ পন্থা কি?
অবশ্যি ঈমানের দাবী পূরণ করা কাজটি মোটেই সহজ নয়। বরঞ্চ তা অত্যন্ত কঠিন। তবে একজন মু’মিন যখন ঈমানের দাবী পূরণের জন্য দৃড় সংকল্প হয় এবং তার জন্য সকল প্রকার ত্যাগ স্বীকার করতে প্রস্তুত হয়, তখন তার কিছু পন্তা অবলম্বন করা প্রয়োজন হয়। এ জন্য আমাদেরকে আবার পূর্বের কথায় ফিরে যেতে হবে। অর্থাৎ শেষ নবী মুহাম্মদুর রাসুলুল্লাহ (স) কোন পন্থায় সাহাবায়ে কিরামের চরিত্র গঠন করলেন যার দ্বারা তাঁরা ঈমানের প্রতিটি দাবী পূরণ করতে পেরেছিলেন। মনে রাখতে হবে যে, ঈমান আনার সাথে সাথেই তাঁদের ঈমানের সব দাবী পূরণ হয়ে যায়নি। এ ব্যাপারে তাদের কার্যক্রম ছিল নিম্নরূপঃ
প্রথমত, ঈমান আনার সাথে সাথে তাঁরা জাহিলিয়াত তথা ইসলাম বিরোধী আকীধাহ বিশ্বাস, মতবাদ, দর্শন ও চিন্তাধারা এবং একাধিক খোদার বন্দেগী আনুগত্যের বিরুদ্ধে সোচ্চার হলেন। ফলে তাদের উপরে নেমে এলো অত্যাচার নিষ্পেষণ।
দ্বিতীয় পর্যায়ে তাঁরা যে সমস্যার সম্মুখীন হলেন তা হলো একদিকে ঈমানের দাবী অন্যদিকে জাহেলিয়াতের দাবী। জাহেলিয়াত জুলুম নিষ্পেষণের মাধ্যমে এ দাবী তুলে ধরলো যে ঈমান পরিত্যাগ করলেই জুলুম নিষ্পেষণ বন্ধ হবে, তাদের জীবন আবার পূর্বের মতন সুখী ও সুন্দর হবে। অর্থনৈতিক ও জান-মালের নিরাপত্তা পুনঃপ্রতিষ্টিত হবে।
পক্ষান্তরে ঈমানের দাবী ছিল, ঈমানের উপরে মজবুত ও অচল অটল হয়ে থাকা, পরিণাম তার যা কিছুই হোক না কেন? স্বয়ং নবী পাক (স)-এর এবং সাহাবীদের জীবনে আমরা তাই দেখেছি। জীবনের পদে পদে ঈমান ও জাহেলিয়াতের দুই বিপরিতমুখী দাবীর সম্মুখীন তাঁরা হয়েছেন। ঈমানের দাবতে যারা অটল রয়েছেন, তাঁরাই অগ্নি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ঈমানের দাবী পূর্ণ করেছেন। কতিপয় ব্যক্তি এ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে না পেরে মুনাফিক নামে অভিহিত হয়েছেন।